সূচীপত্রঃ
বারীনদা (কবি বারীন ঘোষাল) কবিতার নাম রেখেছেন “কূকবিতার ঋতু”। মানে নিয়ম মেনে গোড়াতেই গ্রীষ্ম নাও আসতে পারে, শোনা যেতে পারে “শিলা বৃষ্টি”র শব্দ! সে জন্যেই প্রথমেই “নাও”কে ছোট নৌকা ধরে পড়লাম এবং দুই “গা” এগোনোর পরেই নজরে এলো –
“সাঁতারে/ সংসারে/ মৃত্যুমুখে/ সবাই হাততালি দিচ্ছে আর সে ক্রমশ একা হয়ে যাচ্ছে”।
থমকে গেলাম। “সাঁতারে/ সংসারে” হাততালিটা সত্যিই স্বাভাবিক। কিন্তু তা বলে “মৃত্যুমুখে”? উত্তর পাওয়ার জন্য আর না সাঁতরে ডাঙায় উঠে দেখি অপেক্ষা করছে এক “লালৌকিক মোবাইক”। লাইনটাতে আমি কেমন যেন একটা “সিন্ডিকেট-সিন্ডিকেট” গন্ধ পাই, মৃত্যুমুখেও হাততালির শব্দ শুনতে পাই। বারীনদার কবিতায় এই ধরণের আসা-যাওয়াটা চলতেই থাকে বলে আমরা খুঁজে পাই আরও কিছু এমন লাইন -
“তুমি টগবগ করে বিছানায় গেলে আমি মেশিনটা বন্ধ করব/ চালু করব/ বন্ধ করব দেখে নিও/ দারুচিনির বনের নামে আমাকে যথেষ্ট ওই করেছ এতদিন” বা “খোনা সুরে তেতলা থেকে ছুঁড়ে ফেলছ অবোধ্য মন্তর” বা “নেই মানেই সব কিছু সাজানো মনে হচ্ছে কেন”। সত্যি বলছি “যথেষ্ট ওই করেছ”টার প্রয়োগ ব্যাপক লেগেছে।
এই কবিতার সেরা অংশ আমার কাছে “কিংবদন্তী তারাদের স্রাবে ফিরে দেখতে কুকুরেরা ঘেঁষে এল আর তাদের পা তোলা দোস্তি সারলে ঋতু এল পাতারা পড়ল...”। সব মিলিয়ে কবিতাটা ভালোই লেগেছে। আর হ্যাঁ, শেষে কে যেন কানে কানে বলল, দেখলে কবিতাটা কেমন মোলায়েম একটা রিদিম মেনটেইন করেছে – সনাতনী কবিতাগুলোর মতো।
রঞ্জনদার (কবি রঞ্জন মৈত্র) “সেবক রোডের মালকোষ”এ “হারা জুতোর জন্য” পা ডুবে গেলে “হেমন্তসমেত” পড়ে আমার কেন জানি না মনে পড়ে মালকোষ রাগে গাওয়া হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের “কী গান শোনাব বল ওগো সুচরিতা” গানটা। আমি “সুচরিতা”কে খুঁজতে যাই – দেখি এখানেও “নাও”। “বাই বাই ও আমার নাও/ নীলা আশমা শুয়ে আছে”। লক্ষ্য করার বিষয় – “নীল আকাশ” না হয়ে এখানে “নীলা আশমা”র ব্যবহার। বুঝলাম, “হারা জুতো” পায়ে না থাকলেও হোঁচটহীন যাত্রার আয়োজন করা আছে এ কবিতায়। সুচরিতাকে পাই না – কিন্তু নজরে আসে “নিবিড় তাসের পা থেকে ঝরে পড়া পা”, “চাক্কুর ডগা থেকে উড়ে যায় হর্ণবিল”। রঞ্জনদার এই “মালকোষ” বিস্তারে অনন্য। এবং সেই বিস্তারের সব থেকে উজ্জ্বল লাইনগুলো আমার কাছে, “আমাদের একমাত্র অনুলেখা/ সাই বেরিয়ার ভেঙে/ কী রকম পাখি হয়ে যায়”। হ্যাঁ, “সাই বেরিয়ার”এর ব্যবহারে একটু “শিব্রাম” গন্ধ মেনে নিয়েও বলি, “ষাট ওয়াটের জিন্দাবাদ”।