ম:
CONTENTS
ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ : একটি শয়তানী চক্রান্ত
আর নেশাগ্রস্থ অবস্থায় নামাযের কাছেও যেওনা :
মুনাফিকেরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ায় :
মন্দের মোকাবিলা কর ভালো দিয়ে :
মর্যাদা : (আরো দেখুন : স > সম্মান )
মনের কামনা বাসনার অনুসরণ করা : দেখুন : অ > অনুসরণ
ইবাদতকারীর মানসিক অবস্থা কিরূপ হওয়া উচিত ? অহমিকা নাকি নম্রতা ও ভয় ?
মনে কষ্ট দেয়া / মনে কষ্ট পাওয়া :
যারা দাওয়াতী কাজ করেন, সেক্ষেত্রে অনেক সময় বিরোধীদের বিভিন্ন কার্যকলাপে মনে কষ্ট পেতে হয় : সেক্ষেত্রে করণীয় কি ?
মনের কষ্ট দুর করার পদ্ধতি (১)আল্লাহর পবিত্রতা ও প্রশংসা ঘোষণাকরা (২)নামায পড়া(৩)আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হওয়া :
মুসা আ: তার জাতির কর্মকান্ডে মনে কষ্ট পেলেন :
কুরআন বর্ণিত বিচার প্রক্রিয়া কার্যকর করার ক্ষেত্রে মমত্ববোধ গ্রহণ যোগ্য নয় যাতে বিচারকার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে :
কাফেরদের কর্মের উপমা : মরীচিকা :
বিস্তারিত দেখুন : ন > নবীদের জীবনের ঘটনাবলী > হযরত ঈসা আ:
আল্লাহ বলেন, ঈসা আ: এর মধ্যে নিজের রূহ ফুকে দিলাম, এর অর্থ কি ?
সব সময় অনুমান বা সন্দেহ দুষনীয় নয়:
মসজিদের গোপন কক্ষে আল্লাহর ইবাদতে রত একাকিনী একটি মেয়েও রাতের বেলা একজন পুরুষের আগমনে সন্দেহ মুক্ত থাকতে পারেনি, এবং এটাই স্বাভাবিক এবং কাম্য:
বিস্তারিত দেখুন : স > সন্দেহ, অ > অনুমান, স > সতর্কতা, ধ > ধর্ষণ, জ > জ্বিনা,
কোন পুরুষের সংস্পর্শ ছাড়াই আল্লাহর ইশারায় একজন মহিলার সন্তান হওয়া সম্ভব :
মতপার্থক্য / মতভেদ / মতবিরোধ / মনোমালিন্য :
একের অধিক ইলাহ থাকলে তাদের মধ্যে অবশ্যই মতবিরোধ ও দ্বন্দ্ব দেখা দিতো :
শরীয়ত নিয়ে মতভেদ : মুসলমান ও অন্যান্য নবীদের উম্মতদের মধ্যে
অন্যান্য নবীর উম্মতেরা মুহাম্মদ সা: এর উম্মতের সাথে ইবাদত ও শরীয়তের পদ্ধতি নিয়ে ঝগড়া করলে তার জবাব :
বিভেদ ও বিপর্যয়ের আশংকায় কি বড় ধরণের অনাচার বরদাশত করা হবে ? যখন বিপর্যয় তথা ফেতনা সৃষ্টি হওয়ার আশংকা থাকে ? উত্তর : না, নিজেদের সাধ্যমত সর্বাত্নক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, ফেতনার আশংকায় চুপ করে বসে থাকলে চলবেনা:
পারস্পরিক মতপার্থক্য দুর করার একমাত্র হাতিয়ার হলো কুরআন :
ঈমানদার ও সৎলোকদের অন্তরে আল্লাহ ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেবেন :
জান্নাতে পারস্পরিক মনোমালিন্য দুর করে জান্নাতীদেরকে ভাই ভাইয়ে পরিণত করা হবে :
কিয়ামতের দিন পারস্পরিক মতভেদের সমস্ত রহস্য উন্মোচিত হয়ে যাবে :
পারস্পরিক মতভেদ অনেক সময় কুফরের দিকে ধাবিত করে :
দ্বীনের মধ্যে মতভেদ রহমত স্বরূপ – এ কথা মিথ্যা : তোমরা সকলে একই উম্মত : অতএব দ্বীনকে টুকরা টুকরা করোনা :
পূর্ববর্তী পথভ্রষ্ট লোকেরা মুক্তি পাবে কি পাবে না, সে ব্যাপারে আমাদের বিতর্কে বা মতভেদে লিপ্ত হওয়া উচিত নয় :
সততার মোকাবিলায় অসৎ লোকদের মধ্যে মতবিরোধ থাকে :
কিয়ামতের দিন সমস্ত মতভেদের ফায়সালা আল্লাহ করে দেবেন :
বনী ইসরাঈলীদের সমস্ত মতভেদ ও দলাদলির ফায়সালা কিয়ামতের দিন আল্লাহ করে দেবেন :
মহিলা / স্ত্রী / নারী/ মেয়ে/ কন্যা / কন্যা সন্তান :
তোমার মেয়েদের দিয়ে আমাদের কোন কাজ নেই :
ইসলামের দাওয়াত দানের কাজ কি মহিলাদের উপর বর্তায় ?
আরো দেখুন : অন্তরে কেন মোহর মেরে দেন আল্লাহ :
অন্তরে মোহর মেরে দেওয়ার অর্থ কি ? :
বিভিন্ন ভাবে লোকদেরকে বুঝানোর পরেও যারা বুঝতে চায়না : তখন আল্লাহ তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেন :
আল্লাহর পথে বাধা দানকারীদের জন্য নবীর বদদোয়া : যার ফলে অন্তরে মোহর মেরে দেওয়া হয় :
মুনাফিকদের অন্তরে কেন আল্লাহ মুনাফিকী বদ্ধমূল করে দিলেন :
মোহর / মহর / মোহরানা : বিবাহের ক্ষেত্রে মোহরানা
মা / মাতা : বিস্তারিত দেখুন : প > পিতা মাতা
মুহাম্মদ সা: এর স্ত্রীগণ মু’মিনদের মা : কুরআনের এ আয়াতের প্রেক্ষাপটে মুহাম্মদ সা: এর স্ত্রীগণের সহিত মু’মিনদের পর্দা সংক্রান্ত বিধান কি ?
নিজের স্ত্রীকে মা বলে দিলেই কি তালাম হয়ে যাবে ? যিহার / জিহার করা কি তালাক এর অনুরূপ ? যিহার করলেই কি তালাক হয়ে যাবে ?
যারা আল্লাহ ছাড়া অপরকে অভিভাবক বানায় তারা আসলে মাকড়সার ঘরের মত নিজেদের ঘর তৈরী করে :
কিয়ামতের দিন সকল ব্যক্তির মাথা আল্লাহর নিকট নুয়ে পড়বে :
আল্লাহকে বাদ দিয়ে মৃতদেরকে ডেকে কি কোন লাভ হবে?
আরো দেখূন : ক > কবর > কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ
মসজিদ তথা যে কোন ইবাদতগাহ ধ্বংসাকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অনুমতি :
মাজহাবের নামে দ্বন্দে লিপ্ত হওয়া কি সংগত ?
ইসলামের মধ্যে বিভিন্ন ফির্কার উদ্ভবের কারণ :
বনী ইসরাঈল জাতির দ্বীন সম্পর্কে বিভিন্ন ফের্কায় বিভক্ত হওয়ার কারণ তাদের অজ্ঞতা নয় বরং তাদের স্বার্থান্ধতা
মাস :
হযরত মরিয়ম আ: এর মানতের রোজা :
মানত পূর্ণ করা উচিত, তবে মানত অবশ্যই আল্লাহর উদ্দেশ্যে হতে হবে :
মানসিক রোগের চিকিৎসা হচ্ছে কুরআন :
কুরআন অন্তরের রোগের নিরাময় / মানসিক রোগের চিকিৎসা :
মানসিক রোগের কুরআনিক চিকিৎসা : মনের কষ্ট দুর করার পদ্ধতি :
(১)নিয়মিত কুরআন অধ্যয়ন করা : কুরআন বুঝে পড়া :
(২)আল্লাহর পবিত্রতা ও প্রশংসা ঘোষণাকরা (৩)নামায পড়া (৪)আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন হওয়া :
মানুষ :
মানব জাতিকে পৃথিবীতে প্রেরণের উদ্দেশ্যসমূহ :
শুরুতে সমস্ত মানুষ ছিল একই জাতি :
মানুষকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে সামান্য :
মানুষ অকল্যাণ চায়, যেভাবে কল্যাণ চাওয়া উচিত :
মানুষ বড়ই ত্বরা প্রবণ / দ্রুততা প্রবণ :
পৃথিবী, আকাশ, পাহাড়, পর্বত অস্বীকার করেছে, কিন্তু দুর্বল মানুষ আমানতের বোঝা মাথায় তুলে নিয়েছে, মানুষ বড়ই জালেম ও মুর্খ :
১। অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করছে না :
১। অধিকাংশ মানুষ অজ্ঞ হয়ে আছে :
৩। অধিকাংশ মানুষ না-শোকরী : শোকরগুজার নয় :
৪। অধিকাংশ মানুষ আল্লাহর সাথে সাক্ষাতে বিশ্বাস করেনা :
মানুষ দুনিয়ার কেবল বাহ্যিক দিকটাই দেখে :
মানুষ সৃষ্টি : মানুষ সৃষ্টির উপাদান সংক্রান্ত : দেখুন : স > সৃষ্টি > মানুষ সৃষ্টি :
মানুষের মধ্যে যে সব গুণাবলী দেখতে পাওয়া যায় তা আল্লাহর গুণাবলীর প্রতিচ্ছবি: কোন জড় বা নির্বোধ বস্ত থেকে মানুষের মধ্যে এসব গুণাবলী আসেনি :
মানুষ হিসেবে সৃষ্টি লাভ করার শুকরিয়া আদায় করতে হবে :
বৃদ্ধ অবস্থায় মানুষ :
কাফিরদের অভিযোগ : নবী রাসুল গণ মানুষ ছিলেন কেন ?
কাফেরদের অভিযোগ : মানুষ নবী হতে পারে কিভাবে ?
নবীগণ প্রভুত্বের ক্ষেত্রে কোন অঙশীদার নয়, বরং শুধুমাত্র আল্লাহর বাছাইকৃত বানীবাহক :
১। নবীগণের মধ্যে সার্বভৌমত্বের কোন ক্ষমতা ছিলনা : তারাও আল্লাহর নিকট অবনত মস্তকে তাদের প্রয়োজন পূরণের জন্য আবেদন করতেন :
২। মানুষকে সুপথ দেখাবার জন্য মানুষকেই নবী বানিয়ে পাঠানো হয়েছে এতে আশ্চর্য হওয়ার কি আছে ?
৩। নবীগণ আলেমুল গায়েব ছিলেন না :
কুরআন হচ্ছে বাস্তবসম্মত জীবন ঘনিষ্ঠ কিতাব : যার মধ্যে মানুষের কথাই বলা হয়েছে :
একজন মানুষ আরেকজন মানুষের অনুসরণ/পূজা করবে না : বরং সবাই সমান : এটা কাফেররাও বুঝে :
চিরন্তন জীবন লাভ করতে চাওয়া মানুষের একটি স্বভাবজাত বাসনা :
আমি জাহান্নামকে ভরে দেবো জ্বিন ও মানুষ দ্বারা :
মাতৃভাষার গুরুত্ব : কুরআন আরবী ভাষায় নাযিল করা হয়েছে
নামাযের মধ্যে মাতৃভাষায় কুরআনের অনুবাদ পড়লে নামায আদায় হয়ে যাবে ?
মাটিতে পূতে ফেলার শাস্তি : কারূনের শাস্তি :
মাটি থেকেই আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, মাটির মধ্যেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবো এবং মাটি থেকেই আবার তোমাদেরকে হাশরের ময়দানে বের করে আনবো :
পরকাল সম্বন্ধে কাফেরদের সন্দেহ : মরে মাটিতে মিশে যাবার পরও কি আমাদেরকে জীবিত করা সম্ভব ?
জাঁকালো মজলিশ ও মাহফিলই সততা ও শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি নয়:
লূত আ: এর জাতি মজলিশে উপবিষ্ট হয়ে অশ্লীল কর্ম করত : বর্তমানে যেমন আধুনিক জাতির নামে অনেক জাতির লোকেরা এধরণের মজলিশে অশ্লীল কর্মে রত হয় :
মক্কার মসজিদুল হারাম ও এর চতুর্সীমানার উপর কি আরব ও অনারব সকল মু’মিনদের অধিকার সমান ?
জান্নাতীরা কি তাদের নিজ নিজ জান্নাতের মালিক হবে ? নাকি জান্নাতের নিয়ামত সমূহ ভোগ ব্যবহার করার শুধুমাত্র অনুমতিটুকু পাবে ?
মসজিদ :
মসজিদে ইবাদতে রত থাকে কোন ধরণের লোকেরা :
কবরের উপর মসজিদ / ইবাদতখানা / মাজার নির্মাণ করা কি বৈধ :
মসজিদুল হারাম / কাবা ঘর ( ক > কাবা ঘর)
নিরাপত্তার ঘর :
হজ্বপালনকারীদের নিকট থেকে মক্কার বাড়ীঘরের ভাড়া আদায় করা কি বৈধ ?
মসজিদে হারামের চতুর্সীমায় যে কাজ গুলো হারাম:
কাবাঘর এর কারণে মক্কার অর্থনৈতিক অবস্থার বিবিরণ :
জান্নাতিদেরকে মুক্তা খচিত পোষাক পরানো হবে :
কুরআন মুখস্ত করা সহজ করে দেওয়া হয়েছে :
মুশরেক :
তোমরা যেসব কথা (মিথ্যা অভিযোগ) তৈরী করছো, তার মোকাবিলায় দয়াময় আল্লাহই আমার সাহায্যকারী :
মুহাজিরদের মর্যাদা ও তাদের জন্য সুসংবাদ সমূহ:
মুনাফিক প্রসঙ্গ:
মু’মিন ও মুনাফিক হওয়া একই সঙ্গে সম্ভব নয় :
আল্লাহতো অবশ্যই দেখবেন (দেখিয়ে দিবেন) কারা ঈমান এনেছে এবং কারা মুনাফিক :
“আমানত” তথা আল্লাহর খিলাফত- কে অস্বীকার কারী মুনাফিক :
যেসব ঈমানদাররা আল্লাহর পথে দু:খ কষ্ট সহ্য করতে চায়না, ইসলাম বিরোধীদের নির্যাতনের ভয়ে ঈমানের দাবীকে কাটছাট করে, তারা ঈমানদার নয় মুনাফিক :
যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তারা মু’মিন নয়, মুনাফিক :
আল্লাহ ও রাসুলের বিধান অনুযায়ী যারা বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করেনা তারা মুনাফিক ও যালিম :
আল্লাহ এবং রাসুল সা: এর ফায়সালা / বিচার ব্যবস্থা যারা মেনে নিতে চায়না, তারা মু’মিন নয় :
বিচার মানি তালগাছ আমার : তারা শুধুমাত্র লাভ খোজে :
মুনাফিকদের ইবাদতের স্বরূপ : কল্যাণ পেলে ঈমানদার থাকে আর বিপদে পড়লে বেঈমান হয়ে যায়:
সামান্য দু:খ কষ্টে বা বিপদে আপদে পড়লেই যারা আল্লাহর পথ থেকে দুরে সরে যায় :ইবাদতের ক্ষেত্রে যারা ইস্তেক্বামাত / দৃঢ়তা অবলম্বন করে না : তাদের দুনিয়া আখিরাত উভয়ই বরবাদ :
মুনাফিকদের সমস্ত ভালো কর্মকান্ডগুলো আল্লাহ ধ্বংস/নস্যাত করে দেবেন: তারা তাদের ভালো কর্ম গুলোর কোনই প্রতিফল পাবেনা :
প্রকৃত মুনাফিক আর গুনাহগার মু’মিনের মধ্যে পার্থক্য :
মুনাফিকদের প্রতি আল্লাহর নসীহত সমূহ :
মুনাফিকদের উপর কুরআনের আয়াতের প্রভাব : আরো দেখুন (কুরআনের একই আয়াত ঈমানদার ও কাফির/মুনাফিকদের উপর ভিন্ন ভিন্ন প্রভাব ফেলে : )
মুনাফিকদের অন্তরে কেন আল্লাহ মুনাফিকী বদ্ধমূল করে দিলেন :
কোন ধরণের মুনাফিকের জন্য গুণাহ মাফের দোয়া করা মু’মিনদের জন্য নিষিদ্ধ :
মুনাফিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা: হে মু’মিনরা তাদেরকে উৎখাত করে দাও: তাদের প্রতি কঠোর হও:
মুমিনদের দল থেকে মুনাফিকদের চিহ্নিত করা ও আলাদা করার জন্য পরীক্ষা সমূহ :
১। শয়তান নবীদের দাওয়াতী মিশনে / কুরআন প্রচারে বিঘ্ন সৃষ্টি করে এবং এর কারণ :
শয়তান নবীদের দাওয়াতী মিশনে বিঘ্ন সৃষ্টি করার সুযোগ দিয়েছেন দুটি কারণে :
১.১। মুনাফিকদেরকে ঈমানদারদের দল থেকে ছেটে বের করার জন্য :
১.২। ঈমানদারদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পায়, সরল পথে তারা মজবুত হয়ে চলতে পারে :
মুনাফিক ও জিহাদ / যুদ্ধ : মুনাফিকদের আসল পরিচয় ক্ষেত্র :
জিহাদ যুদ্ধ সম্পর্কে মুনাফিকদের দৃস্টিভঙ্গি, বক্তব্য ও গৃহীত কর্মনীতি:
মু’মিনদের দল থেকে মুনাফিক বাছাই করার আসল পরীক্ষা ক্ষেত্র হচ্ছে জিহাদের ময়দান :
জিহাদের ময়দানে শত্রুদের ভয়ে চোখ বিষ্ফোরিত হওয়া : এমতাবস্থায় আল্লাহর প্রতি কু-ধারণা পোষণ করা মুনাফিকদের কাজ :
জিহাদের ময়দান মু’মিনদের জন্য আসল পরীক্ষার স্থান : মুনাফিক বাছাই করার আসল ক্ষেত্র হচ্ছে জিহাদের ময়দান :
মৃত্যুর ভয়ে জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা বা মিথ্যা বাহানা দিয়ে ছুটি চাওয়া মুনাফিকদের কাজ :
জিহাদের ময়দানে মুনাফিকদের ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে : শত্রুরা বিজয়ী হওয়া শুরু করলে মুনাফিকরা দল বদল করে ফেলবে :
মুনাফিকরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলেও নামকাওয়াস্তে অংশগ্রহণ করে এবং সুযোগ বুঝে সটকে পড়ে, এবং যুদ্ধ থেকে অন্যান্যদেরকেও সরিয়ে ভাগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পায়তারা করে, শান্তির বানী শুনায়:
যুদ্ধে শামিল হওয়ার ক্ষেত্রে মুনাফিকরা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার রক্ষা করেনি :
মুনাফিকেরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ায় :
আল্লাহর পথে/জিহাদে খরচ করার ব্যাপারে মুনাফিকদের দৃষ্টি ভঙ্গী ও বক্তব্য :
মুনাফিকদের মৃত্যু হবে ফাসেক অবস্থায়, কাফের অবস্থায় :
মুনাফিক ও কুরআন : কুরআন সম্পর্কে মুনাফিকদের ধারণা ও বক্তব্য সমূহ :
কোন ধরণের মুনাফিকদের ক্ষমা করা হতে পারে ?
কোন ধরণের মুনাফিকদের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, যেখানেই তাদেরকে পাওয়া যাবে, হত্যা করা হবে ?
প্রকৃত মু’মিনদের পরিচয় : কারা তাদের ঈমানের দাবীতে সত্যবাদী?
প্রকৃত মু’মিনদের পরিচয় : রহমানের আসল বান্দা কারা ?
সমগ্র মানবজাতির মধ্য থেকে মু’মিনদেরকেই জিহাদের জন্য আল্লাহ বাছাই করে নিয়েছেন :
প্রকৃত মু’মিনদের পরিচয় লাভ করার আসল ক্ষেত্র হচ্ছে জিহাদের ময়দান : মুনাফিক বাছাই করার আসল ক্ষেত্র হচ্ছে জিহাদের ময়দান :
ঈমান বাড়ে কমে কিভাবে ?
মু’মিনদেরকে রহমত লাভের জন্য ও সঠিক পথ লাভের জন্য কুরআনের কাছে যেতেহবে :
প্রকৃত মুমিনদের চরিত্র হচ্ছে : কুরআনের আয়াত শুনানো হলে তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে:
কুরআন হচ্ছে রহমত, কিন্তু কাদের জন্য কুরআন রহমত? উত্তর : মুমিনদের জন্য, যারা কুরআন মেনে চলে :
মু’মিনদের প্রধান গুণ হচ্ছে আনুগত্যশীল হওয়া : শুনলাম ও মেনে নিলাম এ মনোভাবসম্পন্ন হওয়া:
মু’মিনরা সফলকাম হয়ে গেছে : যাদের মধ্যে নিম্নের গুণগুলো বিদ্যমান :
প্রকৃত মু’মিনদের রাতের ইবাদত :
নিজের পরিবারবর্গকে নামাজের হুকুম দিতে হবে এবং নিজেও নামাজ পড়তে হবে :
দুনিয়াবী সাজ-সরঞ্জাম ও শান শওকতর প্রতি দৃষ্টি না দেওয়া :
বিপদে আপদে দু:খে কষ্টে দৃঢ় ভাবে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকে :
সামান্য দু:খ কষ্টে বা বিপদে আপদে পড়লেই যারা আল্লাহর পথ থেকে দুরে সরে যায় :ইবাদতের ক্ষেত্রে যারা ইস্তেক্বামাত / দৃঢ়তা অবলম্বন করে না : তাদের দুনিয়া আখিরাত উভয়ই বরবাদ :
আনুষ্ঠানিক ইবাদত সমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে :
আল্লাহর আইনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে ও শ্রদ্ধাশীল হতে হবে :
যারা ইসলামী আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তারা মু’মিন নয় :
মু’মিনদের জীবনে পরীক্ষার স্বরূপ :
খাটি মু’মিনদের ছেটে আলাদা করার জন্যই একদলকে আরেক দলের দ্বারা পরীক্ষা এবং বিভিন্ন দুনিয়াবী পরীক্ষায় নিক্ষিপ্ত করা হয়েছে :
মু’মিন ও মুনাফিক হওয়া একই সঙ্গে সম্ভব নয় :
মু’মিনদের রক্ষা করা আল্লাহর দায়িত্ব :
প্রকৃত মু’মিনদের দুনিয়াতে পুরস্কার :
আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশতাগণ মু’মিনদের জন্য স্বলাত প্রেরণ করেন - এর অর্থ কি ?
দুনিয়াতে মুমিনরাই পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র জীবন লাভ করবে :
প্রকৃত মু’মিনদের আখিরাতে পুরস্কার : আরো দেখুন : মুত্তাকীদের শুভ পরিণাম :
প্রকৃত মু’মিনদেরকে শয়তান ধোকা দিতে পারেনা:
আল্লাহর প্রকৃত বান্দাদের নাম সবযুগে সব নবীর আমলেই ছিল “মুসলিম” :
তুমিই প্রথম মুসলমান হও / আনুগত্যকারী হও :
আমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে আমরা যাতে মুসলিম হই : এবং লোকদেরকে কুরআন পড়ে শুনাই :
কাফিরদের পরকালীন অনুশোচনা : হায় আমরা যদি মুসলমান হতাম !
আরো দেখুন : শ > শিরক । প > পূজা ।
মূর্তিপূজা করা উচিত নয় কেন ? যুক্তি সমূহ :
ইবরাহীম আ: কর্তৃক মূর্তি ভাঙ্গার স্বরূপ :
পারস্পারিক সম্পর্কের ভিত্তি যখন মূর্তি :
মূর্তিপূজার সমালোচনা করায় আল্লাহর রাসূলকে বিদ্রূপ করা হয়েছে:
মূর্তিরাও কি পথভ্রষ্ট করতে পারে ?
মূর্তিসমূহের আবর্জনা থেকে বাঁচো
মূর্তি পূজা করা হচ্চে শয়তানের ইবাদতে মগ্ন হওয়া :
শরীকরা বা মূর্তিরা কারো কোন উপকার বা ক্ষতি করার কোন ক্ষমতা রাখেনা :
মূর্তি এবং সেগুলো নির্মাণের জন্য ব্যবহৃত বাশ ইট কাঠও জাহান্নামে আগুন জ্বালানোর কাজে ব্যবহার করা হবে এবং
এবং মূর্তি, শরীক ও শিরককারী সকলেই জাহান্নামে যাবে এর ব্যাখ্যা :
মূসা আ: এর জাতি মূসা আ: কে মূর্তি বানিয়ে দেবার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিল
ইব্রাহিম আ: এর জাতি মূর্তিদেরকে ইলাহ বলেছে :
মূর্তিপূজা থেকে সন্তানরা যেন বেচে থাকে সেজন্য দোয়া :
যারা আল্লাহর দ্বীন গ্রহণ করে না, তারা মূর্খ :
মূর্খদের সাথে বিতর্কে জড়িও না : তাদেরকে বলে দাও “সালাম” :
তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে - - :
আল্লাহ কাফেরদের মুখ ফিরিয়ে দিয়েছেন, তারা বিফল হয়ে নিজেদের অন্তরজ্বালা সহকারে এমনিই ফিরে গেছে:
মুখে যা আসে তাই বলে দেয়া কি ঠিক ?
মুখ / চেহারা বিকৃত করে দেওয়া :
তোমর যেদিকেই মুখ কর, সেদিকেই আল্লাহ বিরাজমান : অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদের ঘিরে রেখেছেন :
জাহান্নামের আগুন জাহান্নামীদের চেহারা ঝলসে দেবে :
অধোমুখে আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করা হবে :
কথা বলতে হবে মুখে লাগাম দিয়ে : লাগামহীন কথাবার্তা ধ্বংসের কারণ :
মুখ ফিরিয়ে কথা বলা অহংকারের পরিচায়ক :
শোনা কথা যা বিবেকবর্জিত, তা মুখে মুখে ছড়ানো মারাত্মক অন্যায় : এক্ষেত্রে চুপ থাকা উচিত :
শোনা কথা ছড়ানো অন্যায় : এক্ষেত্রে কি বলতে হবে ?
মুখ এর আওয়াজ : গলার আওয়াজ : কথা বলার উচ্চ কন্ঠস্বর :
বিস্তারিত দেখুন : ক> কন্ঠস্বর , গ > গলার আওয়াজ ।
মুত্তাকীগণ কখনো মিথ্যা প্রচার করেনা, অবিশ্বাসীরা করে থাকে :
মুহসিন : (এ সাথে দেখুন : স > সৎকাজ, সৎকর্মশীল )
আল্লাহ তাকওয়া অবলম্বনকারীদের ও মুহসিনদের সাথে আছেন :
মুহসিনদেরকে অতিরিক্ত অনুগ্রহ দান করা হয় :
তাকওয়া পূর্ণ অন্তরের পরিচয় : আল্লাহর আইনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা ও শ্রদ্ধাশীল হওয়া :
মৃত্যু :
প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে :
মৃত্যুর চিন্তা কর : কিন্তু সে চিন্তাটা হবে কি ধরণের ?
মৃত্যুর ভয়ে জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা বা মিথ্যা বাহানা দিয়ে ছুটি চাওয়া মুনাফিকদের কাজ :
কার মৃত্যু কোথায় হবে এ গায়েবের জ্ঞানের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ : শুতরাং তোমরা কেন শিরক করো ?
জীবন ও মৃত্যু পরীক্ষা স্বরূপ :
মৃত্যু অর্থ ফেরেশতারা রূহ কবজ করে নেয় : এর প্রকৃত তাৎপর্য কি ?
মৃত্যু সহজ ও সুসংবাদ বাহী হবে কাদের জন্য :
মৃত্যু কঠিন ও দু:সংবাদবাহী হবে কাদের জন্য ?
অপরাধীদের মৃত্যূ হবে নি:স্ব অবস্থায় : কর্তিত শস্যের ন্যায় :
হে আল্লাহ আমাকে ইসলামের উপর মৃত্যু দান কর :
মৃত্যুর পর আল্লাহ পুনর্জীবীত করতে পারবেন, তার যুক্তি সমূহ : আরো দেখুন : প > পুনর্জীবন।
মৃত্যু কখন হবে সেটা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা :
ফেরেশতারা প্রাণ হরণ করার সময় বলবে, আল্লাহকে বাদ দিয়ে তোমরা যাদেরকে ডাকতে, তারা এখন কোথায় ?
মরে মাটিতে মিশে যাবার পর পুনরায় জীবিত হওয়া কি সম্ভব ? কাফেরদের প্রশ্ন ও সন্দেহ :
মৃতকে জীবিত করতে আল্লাহ সক্ষম : তার যুক্তি সমূহ :
এ বিষয়ে বিস্তারিত দেখুন : ক > কুরআন ও বিজ্ঞান > বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে আল্লাহর অস্তিত্ব ও আখিরাতের সত্যতার প্রমাণ ।
মুনাফিকদের মৃত্যু হবে ফাসেক অবস্থায়, কাফের অবস্থায় :
জাহান্নামের অধিবাসীরা মৃত্যু কামনা করবে : কিন্তু তাদের মৃত্যু হবে না :
রাসুল সা: কি মৃত্যুবরণ করেছেন ?
কুরআন ও ছহীহ হাদীছের মাধ্যমে রাসূল (সঃ) এর মৃত্যুবরণের বিষয়টি দিবালোকের ন্যয় স্পষ্ট।
মৃত জীবিত হয়ে কথা বলতে শুরু করা :
মৃত্যু যেন মুসলমান অবস্থায় হয় সে জন্য দোয়া :
আল্লাহকে বাদ দিয়ে মৃতদেরকে ডেকে কি কোন লাভ হবে?
মৃত্যুদন্ডের নীতি :
মূসা আ: যে কিবতীকে হত্যা করে ফেলেছিলেন, সেটা কি তার পথভ্রষ্টতা ছিল ?
আমিই সর্ব প্রথম মু’মিন / আমিই সর্ব প্রথম মুসলমান :
মুমিনদের প্রতিদান : (বিস্তারিত দেখুন : প > প্রতিদান / পুরস্কার )
মু’মিনদের প্রতি সু-ধারণা রাখা অবশ্য কর্তব্য :
মু’মিনদেরকে অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখা যাবে না :
সশস্ত্র যুদ্ধের ক্ষেত্রে মুমিনের হুংকার :
আল্লাহর কিতাব থেকে পথ নির্দেশনা লাভের শর্ত :
শয়তান নবীদের দাওয়াতী মিশনে বিঘ্ন সৃষ্টি করার সুযোগ দিয়েছেন দুটি কারণে :
১। মুনাফিকদেরকে ঈমানদারদের দল থেকে ছেটে বের করার জন্য :
২। ঈমানদারদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পায়, সরল পথে তারা মজবুত হয়ে চলতে পারে :
আল্লাহর জ্যোতির কারণে পাহাড় চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেল :
আল্লাহকে দেখতে চাওয়া / আল্লাহকে দুনিয়ার জীবনে দেখা সম্ভব কিনা ? :
আল্লাহ আকাশ ও পৃথিবীর আলো :
যদি এমন মু’জেযা / নিদর্শন নাযিল হতো যা দেখে সবাই ঈমান এনে ফেলতো ?
যারা আল্লাহর নিদর্শনাবলী মানে না এবং আখিরাতকে অস্বীকার করে :
গুহা ওয়ালা যুবকদের মু’জিযা – আয়াত বা নিদর্শন :
যারা শুধু মু’জেযার দাবী করতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত ঈমান আনতে প্রস্তত হয়না :
মু’জেযা প্রেরণ করা হয় মু’মিন ও নবীর অন্তরের প্রশান্তি ও নিশ্চিন্ততা লাভের জন্য :
ঈমান আনার জন্য সঠিক চিন্তা ও সঠিক মন মানসিকতাই যথেষ্ট, মু’জেযার প্রয়োজন হয় না, তবে মু’জেযা দেখেও অনেক কাফের সত্যকে বুঝতে পেরেও কুটিল মানসিকতার জন্য ইসলামকে মেনে নেয় না :
মিথ্যার ধ্বংস অনিবার্য তা যতই পরাক্রান্ত হোক এবং সত্যের জয় অব্যম্ভাবী : ফেরাউনের ডুবে মরার ঘটনা থেকে শিক্ষা :
আকাশ ও পৃথিবীতেই আল্লাহর কুদরতের অনেক মু’জেযা ছড়িয়ে রয়েছে :
কুরআনে বর্ণিত ভবিষ্যৎবানী সমূহ, যা পরবর্তীতে অক্ষরে অক্ষরে সত্য হয়েছিল :
বর্তমানে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য মু’জেযা পাঠানো বন্ধ রয়েছে কেন ?
মুহাম্মদ সা: এর সাথে যে কুরআন পাঠানো হয়েছে তা-ই হচ্ছে সবচেয়ে বড় ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য মু’জিযা:
আল্লাহর নিদর্শন সমূহের সাথে বিদ্রুপ করার শাস্তি জাহা্ন্নাম :
কাফেরদের পক্ষ থেকে মু’জিযা/নিদর্শনের দাবীসমূহ এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জবাব :
কাফিররা মু’জিযার দাবী করে : অথচ কাফিররা মু’জিযা অবলোকন করলে সেটিকে যাদু হিসেবে আখ্যা দেয় :
যদি এমন কুরআন নাযিল হতো যার শক্তিতে পাহাড় চলেতে থাকতো – তাহলে কি হত ?
যদি অবিশ্বাসীদের জন্য আকাশের দরজা খুলে দেওয়া হতো, তবুও তারা বিশ্বাস করতো না :
যদি এমন মু’জেযা / নিদর্শন নাযিল হতো যা দেখে সবাই ঈমান এনে ফেলতো ?
কাফিরদের চ্যালেঞ্জ : আকাশ ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে পারলে আমাদের উপর ফেলে দাও :
মু’জেযা একমাত্র আল্লাহর অনুমতিক্রমেই আসতে পারে :
মু’জিযা / কারামাত ইত্যাদি নবী বা বুযুর্গব্যক্তিগণের ইচ্ছায় নয়, আল্লার ইচ্ছায় সংঘটিত হয় :
মু’জিযাকে কাফিররা সব সময় যাদু বলে আখ্যায়িত করেছে :
মু’জেযা এবং যাদুর মধ্যে পার্থক্য :
হযরত যাকারিয়া আ: এর মু’জিযা সমূহ :
অত্যন্ত বৃদ্ধ অবস্থায় তিনি সন্তান লাভ করলেন, অথচ তার স্ত্রীও ছিল বৃদ্ধা এবং বন্ধ্যা :
নিদর্শন / মু’জেযা দেখার জন্য ফেরাউন প্রথমে দাবী জানিয়েছিল ? নাকি বিশ্বজাহানের রব এর শক্তির প্রমাণ দেওয়ার জন্য মূসা আ: নিদর্শন দেখিয়েছিলেন ?
মুসা আ: কে নয়টি মু’জিযা দেয়া হয়েছিল।:
লাঠি সাপ হয়ে গেল : তা কেমন সাপ ছিল ?
তুর পর্বত কোথায় অবস্থিত ? যে পাহাড়ে মূসা আ: আগুন জ্বলতে দেখেছিলেন বর্তমানে এর অবস্থান কোথায় ?
মূসা আ: যে গাছে আগুন দেখেছিলেন তার স্বরূপ এবং মূসা আ: এর সাথে আল্লাহ যে কথা বলেছিলেন তার প্রকৃত স্বরূপ কি ছিল ?
লাঠির আঘাতে সাগর দ্বিখন্ডিত হওয়া :
হাত বগলের মধ্যে রাখার পর উজ্জল হয়ে যাওয়া :
যে শত্রু শিশুটিকে হত্যা করতে চেয়েছিল তার দ্বারাই শিশুর লালন-পালন ও ভরণ পোষণ :
আল্লাহকে দেখতে চাওয়া / আল্লাহকে দুনিয়ার জীবনে দেখা সম্ভব কিনা ? :
আল্লাহকে প্রকাশ্যে দেখতে চাওয়া এবং তার পরিণাম :
আল্লাহ এবং ফেরেশতাদেরকে যেসব অবিশ্বাসীরা দেখতে চায়, তারা অহংকারী এবং তাদের পরিণতি :
আল্লাহর জ্যোতির কারণে পাহাড় চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেল :
হযরত সুলায়মান আ: এর জন্য বায়ুকে বশীভূক্ত করে দেওয়া হয়েছিল :
হযরত সুলায়মান আ: এর জন্য জ্বিন জাতি অনুগত ছিল : জ্বিনেরা তার আদেশ অনুযায়ী কাজ করতো :
সুলায়মান আ: এর সৈন্য সমাবেশে জ্বিন জাতি অন্তর্ভুক্ত ছিল :
হযরত সুলায়মান আ: কে পাখিদের ভাষা শেখানো হয়েছিল : তিনি পাখিদের সাথে কথা বলতে পারতেন :
হযরত সুলায়মান আ: কীট পতঙ্গ যেমন পিঁপড়ার ভাষাও বুঝতেন :
হযরত সুলাইমান আ: সত্যিই কি পিপড়া বাহিনীর কথা শুনতে পেয়েছিলেন, এ ঘটনা কতটুকু সত্য ?
মুহাম্মদ সা: এর মু’জিযা :
কুরআনই হচ্ছে সবচেয়ে বড় মু’জিযা :
কুরআন হচ্ছে সবচেয়ে বড় মু’জিযা, এর আরেকটি অকাট্য প্রমাণ হচ্ছে : রাসুল সা: নিরক্ষর ছিলেন :
মুহাম্মদ সা: এর মু’জেযা সংক্রান্ত হাদীস :
পথভ্রষ্ট ব্যক্তির কারামত কি গ্রহণযোগ্য ?
মূসা আ: ও ফেরাউনের ঘটনার বিস্তারিত :
মু’জেযা দেখার জন্য ফেরাউন প্রথমে দাবী জানিয়েছিল :
মূসা আ: এর বিরুদ্ধে সংগৃহীত যাদুকরেরা যারা শেষ পর্যন্ত মূসা আ: এর সত্যতার সাক্ষ্য দিয়ে ঈমান এনছিল এবং শাস্তিবরণ করেছিল :
মূসা আ: এবং ফেরাউনী যাদুকরদের সাদথ যাদু ও মু’জেযার প্রতিযোগিতা :
বনী ইসরাঈলকে ফেরাউনের কবল থেকে মুক্ত করা মূসা আ: এর নবুওতী মিশনের অন্তর্ভূক্ত ছিল : কিন্তু এটাই একমাত্র লক্ষ্য ছিল না – নবুওয়াত প্রচারের সাথে সাথে এটা একটা আনুসাঙ্গিক বিষয় ছিল মাত্র, একমাত্র মুখ্য বিষয় ছিল না :
মূসা আ: এর জাতি মূসা আ: কে মূর্তি বানিয়ে দেবার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিল
মুসা আ: এর জাতির মধ্যে সত্যপন্থী একটি দলও ছিল
আল্লাহ-ই সত্য, আল্লাহ ব্যতীত অন্য সমস্ত উপাস্য মিথ্যা:
ঈমানের দাবীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার পর অর্থাৎ কুফরী করার পর আর কোন সৎকাজ বা অসৎকাজ ধর্তব্যের মধ্যে গণ্য নয়, কারণ কুফরীই সবচেয়ে বড় অসৎকাজ :
ঈমানের দাবীতে কে সত্যবাদী আর কে মিথ্যাবাদী তা আল্লাহ অবশ্যই পরীক্ষা করে দেখবেন :
আল্লাহই সত্য এবং অন্যান্য শরীকরা মিথ্যা :
নবীদের প্রতি মিথ্যারোপ করা : নবীদের দাওয়াতের প্রতি মিথ্যারোপ করা :
নবীগণের প্রতি মিথ্যা আরোপ করার শাস্তি :
হযরত ইব্রাহিম আ: কর্তৃক তিনটি মিথ্যা বলার স্বরূপ :
শাস্তি তার জন্য যে মিথ্যা আরোপ করে, ও মুখ ফিরিয়ে নেয় :
মুত্তাকীগণ কখনো মিথ্যা প্রচার করেনা, অবিশ্বাসীরা করে থাকে :
মুহাম্মদ সা: সহ সকল নবীদের প্রতিই মিথ্যারোপ করা হয়েছে :
মিথ্যা থেকে দূরে থাকো : অর্থাৎ মিথ্যা বিধান, মিথ্যা সাক্ষ্য, মিথ্যা আইন থেকে দূরে থাকো :
“মিথ্যা” দূরীভূত ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় আর “সত্য” প্রতিষ্ঠিত ও উদ্ভাসিত হয় :
মিথ্যার ধ্বংস অনিবার্য তা যতই পরাক্রান্ত হোক এবং সত্যের জয় অব্যম্ভাবী : ফেরাউনের ডুবে মরার ঘটনা থেকে শিক্ষা :
মুহাম্মদ সা: কে মিথ্যুক বলা হয়েছে :
মিথ্যাবাদী / মিথ্যা প্রতিপন্নকারী / মিথ্যা আরোপ এর পরিণতি :
কত জাতিকে তাদের নাফরমানীর কারণে ধ্বংস করা হয়েছে : বর্তমানে তাদের ক্ষীণতম আওয়াজ শুনতে পাওকি?
কুরআনের আয়াত সমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার শাস্তি :
কাফিরদের অভিযোগ : নবীগণ মিথ্যাবাদী :
রাসুলদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের শাস্তি :
ইসলামের দাওয়াতদানকারীদের প্রতি মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের বিরুদ্ধে দোয়া :
রাসুল সা: এর মি’রাজ কি স্বপ্নে হয়েছিল, নাকি চাক্ষুষ হয়েছিল ?
মিশরের ক্ষমতাসীনদের উপাধি “আযিয” (ইউসুফ আ: এর সময়ে)
প্রশ্ন : অন্তরে মোহর মেরে দেওয়া বলতে কি বোঝানো হয়েছে ?
প্রশ্ন : অন্তরে কেন মোহর মেরে দেয়া হয় ? আরো দেখুন : অ > অন্তরে মোহর মেরে দেওয়া।
উত্তর : ১। আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনকে অগ্রাধিকার দিলে ।
উত্তর : ২। বড়াই ও অহংকার বশত: সত্য অস্বীকার করার কারণে :
উত্তর :৩। যারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করো, তাই আল্লাহ তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেন :
উত্তর : ৪। ক্রমাগত ভাবে সত্য অস্বীকার করার কারণে অন্তরে মোহর মেরে দেওয়া হয় :
উত্তর : ৫। পরকাল অস্বীকার করলে : (আরো দেখুন :পরকালে অবিশ্বাসী ব্যক্তির সৎ থাকা অসম্ভব : কারণ পরকালে অবিশ্বাস করলে অন্তরে দুষ্কৃতি বদ্ধমূল হয়ে যায়:)
প্রাচীন কালের বিনিময় মাধ্যম : রৌপ্য মুদ্রা :
1| gyÕ‡Rhv, gynv¤§` mv: Gi gyÕwRhv 2| gymv Av: Gi gy‡Rhv 3| mv‡jn Av: Gi gyÕwRhv:
4| g„Zz¨, 5| gynwmb, 6|
gymv Av: Gi NUbv
7| g~wZ© 8| g~L©/Rv‡nj 9| gyÕwgb‡`i ¸Yvejx cÖK…Z gyÕwgb Kviv 10| gybvwdK cÖm½ , 10:1| gybvwdK‡`i cwiPq 10.2| wRnv` /hy× m¤ú‡K© gybvwdK‡`i `„wófw½ I e³e¨ 10.3|
11| gyk‡iK 12| gmwR` 12.1| gmwR`yj nvivg/Kvev Ni 13| gvm
দেখুন : স > সম্মান
বিস্তারিত দেখুন : র > রব > মূসা আ: এর উত্তর : রব কি ? > ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ কি যুক্তিযুক্ত ? এ শয়তানী মতবাদ প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে ।
(১৬:৬৭) (অনুরূপভাবে) খেজুর গাছ ও আংগুর লতা থেকেও আমি একটি জিনিস তোমাদের পান করাই, যাকে তোমরা মাদকেও পরিণত করো এবং পবিত্র খাদ্যেও৷ বুদ্ধিমানদের জন্য এর মধ্যে রয়েছে একটি নিশানী৷
দেখুন : ন > নামায।
(৩৩-আহযাব: ৬০) যদি মুনাফিকরা এবং যাদের মনে গলদ ১১৩ আছে তারা আর যারা মদীনায় উত্তেজনাকর গুজব ছড়ায়, ১১৪ তারা নিজেদের তৎপরতা থেকে বিরত না হয়, তাহলে আমি তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবার জন্য তোমাকে উঠিয়ে দাঁড় করিয়ে দেবো; তারপর খুব কমই তারা এ নগরীতে তোমার সাথে থাকতে পারবে৷ ৬১) তাদের ওপর লানত বর্ষিত হবে চারদিক থেকে, যেখানেই পাওয়া যাবে তাদেরকে পাকড়াও করা হবে এবং নির্দয়ভাবে হত্যা করা হবে৷
১১৩. "মনের গলদ" বলতে এখানে দু'ধরনের গলদের কথা বলা হয়েছে। এক, মানুষ নিজেকে মুসলমানদের মধ্যে গণ্য করা সত্ত্বেও ইসলাম ও মুসলমানদের অশুভাকাংকী হয়। দুই, মানুষ অসৎ সংকল্প, লাস্পট্য ও অপরাধী মানসিকতার আশ্রয় নেয়। এবং তার পূতিগন্ধময় প্রবণতাগুলো তার উদ্যোগ, আচরণ ও কর্মকান্ড থেকে বিচ্ছুরিত হতে থাকে।
১১৪. এখানে এমন সব লোকের কথা বলা হয়েছে যারা মুসলমানদের মধ্যে ভীতি ও আতংক ছড়াবার এবং তাদের মনোবল ভেংগে দেবার জন্য সে সময় প্রতি দিন মদীনায় এ ধরনের গুজব ছড়িয়ে বেড়াতো যে, অমুক জায়গায় মুসলমানরা খুব বেশী মার খেয়ে গেছে, অমুক জাগয়ায় মুলসমানদের বিরুদ্ধে বিপুল শক্তিশালী সমাবেশ ঘটছে এবং শিগগির মদীনার ওপর অতর্কিত হামলা হবে। এই সংগে তাদের আর একটি কাজ এও ছিল যে, তারা নবীর পরিবার ও শরীফ মুসলমানদের পারিবারিক জীবন সম্পর্কে বিভিন্ন প্রকার অলীক গল্প তৈরি করে সেগুলো ছড়াতে থাকতো, যাতে এর ফলে জনগণের মধ্যে কুধারণা সৃষ্টি হয় এবং মুসলমানদের নৈতিক প্রভাব ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
(২৮-ক্বাছাছ : ৫৪) তারা এমন লোক যাদেরকে দু'বার পারিশ্রমিক দেয়া হবে এমন অবিচলতার প্রতিদানে যা তারা দেখিয়েছে৷৭৫ তারা ভালো দিয়ে মন্দের মোকাবিলা করেছে৭৬
৭৫. অর্থাৎ তাদের এ দ্বিগুণ প্রতিদান লাভ করার কারণ হচ্ছে এই যে, তারা জাতীয় , বংশীয় ,দলীয় ও স্বদেশের স্বার্থপ্রীতি মুক্ত থেকে দ্বীনের উপর অবিচল ছিল এবং নতুন নবীর আগমনে যে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাতে প্রমাণ করে দিয়েছিল যে, আসলে তারা ঈসা পূজারী নয় বরং আল্লাহর পূজারী ছিল। তারা ব্যক্তি ঈসার ভক্ত-অনুরক্ত ছিল না বরং ছিল "ইসলামের" আনুগত্যকারী। একারণে ঈসার পর যখন অন্য নবী ঈসার মত সেই একই ইসলাম নিয়ে এলেন তখন তারা দ্বিধাহীন চিত্তে তাঁর নেতৃত্বে ইসলামের পথ অবলম্বন করলো এবং যারা খৃষ্টবাদের উপর অবিচল ছিল তাদের পথ পরিহার করলো।
৭৬. অর্থাৎ তারা মন্দের জবাব মন্দ দিয়ে নয় বরং ভালো দিয়ে দেয়। মিথ্যার মোকাবিলায় মিথ্যা নয় বরং সত্য নিয়ে আসে। জুলুমকে জুলুম দিয়ে নয় বরং ইনসাফ দিয়ে প্রতিরোধ করে। দুষ্টামির মুখোমুখি দুষ্টামির সাহায্যে নয় বরং ভদ্রতার সাহায্যে হয়।
(বিস্তারিত দেখুন : ই > ইসলাম > সবযুগে সব নবীর ধর্মই কি ছিলো ইসলাম ? )
কিন্তু দেখো, দুনিয়াতেই আমি একটি দলকে অন্য একটির ওপর কেমন শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে রেখেছি এবং আখেরাতে তার মর্যাদা আরো অনেক বেশী হবে এবং তার শ্রেষ্ঠত্বও আরো অধিক হবে৷- (১৭:২১)
(১৪:৩৭) হে আমাদের রব! আমি একটি তৃণ পানিহীন উপত্যকায় নিজের বংশধরদের একটি অংশকে তোমার পবিত্র গৃহের কাছে এনে বসবাস করিয়েছি৷ পরওয়ারদিগার! এটা আমি এ জন্য করেছি যে, এরা এখানে নামায কায়েম করবে৷ কাজেই তুমি লোকদের মনকে এদের প্রতি আকৃষ্ট করো এবং ফলাদি দিয়ে এদের আহারের ব্যবস্থা করো, হয়তো এরা শোকরগুজার হবে৷
(মু’মিনুন:৬০) এবং যাদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, যা কিছুই দেয় এমন অবস্থায় দেয় যে, ৬১) তাদের অন্তর এ চিন্তায় কাঁপতে থাকে যে, তাদেরকে তাদের রবের কাছে ফিরে যেতে হবে৷ ৫৪
(৫৪ . আরবী ভাষায় ''দেয়া'' ----- শব্দটি শুধুমাত্র সম্পদ বা কোন বস্তু দেয়া অর্থেই ব্যবহার হয় না বরং বিমূর্ত জিনিস দেয়া অর্থেও বলা হয়। যেমন কোন ব্যক্তির আনুগত্য গ্রহণ করার জন্য বলা হয় ----- আবার কোন ব্যক্তির আনুগত্য অস্বীকার করার জন্য বলা হয় ----- কাজেই এ দেয়ার মানে শুধুমাত্র এই নয় যে, তারা আল্লাহর পথে অর্থ-সম্পদ দান করে বরং আল্লাহর দরবারে আনুগত্য ও বন্দেগী পেশ করাও এর অর্থের অন্তরভূক্ত।
এ অর্থের দৃষ্টিতে আয়াতের পুরোপুরি মর্ম এই দাঁড়ায় যে, আল্লাহর হুকুম পালনের ক্ষেত্রে যা কিছু সদাচার, সেবামূলক কাজ ও ত্যাগ করে সে জন্য একটুও অহংকার ও তাকওয়ার বড়াই করে না এবং আল্লাহর প্রিয়পাত্র হয়ে যাবার অহমিকায় লিপ্ত হয় না। বরং নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী সবকিছু করার পরও এ মর্মে আল্লাহর ভয়ে ভীত হতে থাকে যে, না জানি এসব তাঁর কাছে গৃহীত হবে কিনা এবং রবের কাছে মাগফেরাতের জন্য এগুলো যথেষ্ট হবে কিনা। ইমাম আহমাদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, হাকেম ও জারির বর্ণিত নিম্মোক্তা হাদীসটিই এ অর্থ প্রকাশ করে। এখানে হযরত আয়েশা (রা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেনঃ 'হে আল্লাহর রসূল! এর অর্থ কি এই যে, এক ব্যক্তি চুরি, ব্যভিচার ও শরাব পান করার সময়ও আল্লাকে ভয় করবে৷'' এ প্রশ্ন থেকে জানা যায়, হযরত আয়েশা একে ---------- অর্থে গ্রহণ করছিলেন অর্থাৎ ''যা কিছু করে করেই যায়। জবাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
------------
''না, হে সিদ্দীকের মেয়ে! এর অর্থ হচ্ছে এমন লোক, যে নামায পড়ে, রোযা রাখে, যাকাতা দেয় এবং মহান আল্লাহকে ভয় করতে থাকে।''
এ জবাব থেকে জানা যায় যে, আয়াতের সঠিক পাঠ ----- নয় বরং ----- এবং এ ----- শুধু অর্থ-সম্পদ দান করার সীমিত অর্থে নয় বরং আনুগত্য করার ব্যাপক অর্থে।
একজন মু'মিন কোন্ ধরনের মানসিক অবস্থা সহকারে আল্লাহর বন্দেগী করে এ আয়াতটি তা বর্ণনা করে। হযরত উমরের (রা) অবস্থাই এর পূর্ণ চিত্র প্রকাশ করে। তিনি সারা জীবনের অতুলনীয় কার্যক্রমের পর যখন দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে থাকেন তখন আল্লাহর জবাবদিহির ভয়ে ভীত হতে থাকেন এবং যেতে থাকেন, যদি আখেরাতে সমান সমান হয়ে মুক্তি পেয়ে যাই তাহলেও বাঁচোয়া। হযরত হাসান বাসরী (র) বড়ই চমৎকার বলেছেনঃ মু'মিন আনুগত্য করে এরপরও ভয় করে এবং মুনাফিক গোনাহ করে তারপরও নির্ভীক ও বেপরোয়া থাকে।))
(২৭.নমল: ৭০) হে নবী! তাদের অবস্থার জন্য দুঃখ করো না এবং তাদের চক্রান্তের জন্য মনঃক্ষুন্ন হয়োনা৷৮৭
(৮৭. অর্থাৎ তুমি তোমার বুঝাবার দায়িত্ব পালন করেছো। এখন যদি তারা না মেনে নেয় এবং নিজেদের নির্বোধসুলভ কর্মকাণ্ডের ওপর জিদ ধরে আল্লাহর আযাবের ভাগী হতে চায়, তাহলে অনর্থক তাদের অবস্থার জন্য হৃদয় দুঃখ ভরাক্রান্ত করে নিজেকে কষ্ট দান কেন৷ আবার তারা সত্যের সাথে লড়াই এবং তোমার সংশোধন প্রচেষ্টাবলীকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য যেসব হীন চক্রান্ত করছে সেজন্য তোমার মনঃকষ্ট পাবার কোন কারণ নেই। তোমার পেছনে আছে আল্লাহর শক্তি। তারা তোমার কথা না মানলে তাদের নিজেদেরই ক্ষতি হবে, তোমার কোন ক্ষতি হবে না। )
(১৫:৯৭) আমি জানি, এরা তোমার সম্বন্ধে যেসব কথা বানিয়ে বলে তাতে তুমি মনে ভীষণ ব্যথা পাও৷
(১৬:১২৭) ...এদের কার্যকলাপে দুঃখ করো না এবং এদের চক্রান্তের কারণে মনঃক্ষুণ্ন হয়ো না৷১২৮) আল্লাহ তাদের সাথে আছেন যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যারা সৎকর্মপরায়ণ৷
(১৫:৯৬) তোমাদের পক্ষ থেকে তাদের ব্যবস্থা করার জন্য আমিই যথেষ্ট৷ শীঘ্রই তারা জানতে পারবে৷
(১৫:৯৮) এর প্রতিকার এই যে, তুমি নিজের রবের প্রশংসা সহকারে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করতে থাকো, তাঁর সকাশে সিজ্দাবনত হও৯৯) এবং যে চূড়ান্ত সময়টি আসা অবধারিত সেই সময় পর্যন্ত নিজের রবের বন্দেগী করে যেতে থাকো৷
(৩১-লোকমান: ২৩) এরপর যে কুফরী করে তার কুফরী যেন তোমাকে বিষন্ন না করে৷ ৪৩
৪৩ . সম্বোধন করা হয়েছে নবী (সা) কে । অর্থ হচ্ছে, হে নবী ! যে ব্যক্তি তোমার কথা মেনে নিতে অস্বীকার করে, সে তো নিজের দৃষ্টিকোণ থেকে একথা মনে করে যে, ইসলামকে প্রত্যাখ্যানএবং কুফরীকে মেনে নিয়েও তার ওপর জোর দিয়ে সে তোমাকে অপমানিত করেছে কিন্তু আসলে সে নিজেই নিজেকে অপমানিত করেছে। সে তোমার কোন ক্ষতি করেনি বরং নিজেই নিজের ক্ষতি করেছে। কাজেই সে যদি তোমার কথা না মানে তাহলে তার পরোয়া করার প্রয়োজন নেই।
.
(১৫:৯৭) আমি জানি, এরা তোমার সম্বন্ধে যেসব কথা বানিয়ে বলে তাতে তুমি মনে ভীষণ ব্যথা পাও৷ ৯৮) এর প্রতিকার এই যে, তুমি নিজের রবের প্রশংসা সহকারে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করতে থাকো, তাঁর সকাশে সিজ্দাবনত হও ৯৯) এবং যে চূড়ান্ত সময়টি আসা অবধারিত সেই সময় পর্যন্ত নিজের রবের বন্দেগী করে যেতে থাকো৷
হে লোকেরা! তোমাদের কাছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে নসীহত এসে গেছে৷ এটি এমন জিনিস যা অন্তরের রোগের নিরাময়-১০:৫৭
(২০:৮৬) ভীষণ ক্রোধ ও মর্মজ্বালা নিয়ে মূসা তার সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে এলো৷ সে বললো, “হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা! তোমাদের রব কি তোমাদের সাথে ভালো ভালো ওয়াদা করেননি? তোমাদের কি দিনগুলো দীর্ঘতর মনে হয়েছে? অথবা তোমরা নিজেদের রবের গযবই নিজেদের ওপর আনতে চাচ্ছিলে, যে কারণে তোমরা আমার সাথে ওয়াদা ভংগ করলে?
(নূর:২) ব্যভিচারিনী ও ব্যভিচারী উভয়ের প্রত্যেককে এক শত বেত্রাঘাত করো৷ আর আল্লাহর দীনের ব্যাপারে তাদের প্রতি কোন মমত্ববোধ ও করুণা যেন তোমাদের মধ্যে না জাগে যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান আনো ৷ আর তাদেরকে শাস্তি দেবার সময় মু’মিনদের একটি দল যেন উপস্থিত থাকে ৷
বিস্তারিত দেখুন : ম > মসজিদে হারাম । ক > কাবাঘর ।
(১৪:৩৫) স্মরণ কর সেই সময়ের কথা যখন ইবরাহীম দোয়া করছিল, “হে আমার রব! এ শহরকে নিরাপত্তার শহরে পরিণত করো এবং আমার ও আমার সন্তানদেরকে মূর্তিপূজা থেকে বাঁচাও৷
(১৪:৩৭) হে আমাদের রব! আমি একটি তৃণ পানিহীন উপত্যকায় নিজের বংশধরদের একটি অংশকে তোমার পবিত্র গৃহের কাছে এনে বসবাস করিয়েছি৷ পরওয়ারদিগার! এটা আমি এ জন্য করেছি যে, এরা এখানে নামায কায়েম করবে৷ কাজেই তুমি লোকদের মনকে এদের প্রতি আকৃষ্ট করো এবং ফলাদি দিয়ে এদের আহারের ব্যবস্থা করো, হয়তো এরা শোকরগুজার হবে৷
(২৭-নমল:৯১) (“হে মুহাম্মদ! তাদেরকে বল) আমাকেতো হুকুম দেয়া হয়েছে, আমি এ শহরের রবের বন্দেগী করবো, যিনি একে হারামে পরিণত করেছেন
(নূর:৩৯) কিন্তু যারা কুফরী করে তাদের কর্মের উপমা হলো পানিহীন মরুপ্রান্তরে মরীচিকা, তৃঞ্চাতুর পথিক তাকে পানি মনে করেছিল, কিন্তু যখন সে সেখানে পৌঁছুলো কিছুই পেলো না বরং সেখানে সে আল্লাহকে উপস্থিত পেলো, যিনি তার পূর্ণ হিসেব মিটিয়ে দিলেন এবং আল্লাহর হিসেব নিতে দেরী হয় না ৷
(১৯:১৬) আর(হে মুহাম্মাদ)!এই কিতাবে মারয়ামের অবস্থা বর্ণনা করো৷ যখন সে নিজের লোকদের থেকে আলাদা হয়ে পূর্ব দিকে (মিহরাব কক্ষে) নির্জনবাসী হয়ে গিয়েছিল
(১৯:১৮) মারয়াম অকস্মাত বলে উঠলো, ”তুমি যদি আল্লাহকে ভয় করে থাকো তাহলে আমি তোমার হাত থেকে করুণাময়ের আশ্রয় চাচ্ছি”৷
(২১:৯১) আর সেই মহিলা যে নিজের সতীত্ব রক্ষা করেছিল, ৮৮ আমি তার মধ্যে ফুঁকে দিয়েছিলাম নিজের রূহ থেকে ৮৯ এবং তাকে ও তার পুত্রকে সারা দুনিয়ার জন্য নিদর্শনে পরিণত করেছিলাম৷৯০
(৮৮. এখানে হযরত মার্য়াম আলাইহিস সালামের কথা বলা হয়েছে।
৮৯. হযরত আদম আলাইহিস সালাম সম্পর্কেও বলা হয়েছেঃ
-------------------------
"আমি মাটি থেকে একটি মানুষ তৈরি করছি। কাজেই (হে ফেরেশতারা!) যখন আমি তাকে পূর্ণরূপে তৈরি করে নেবো এবং তার মধ্যে নিজের রূহ ফুঁকে দেবো তখন তোমরা তার সামনে সিজদায় অবনত হয়ে যাবে।"(সাদঃ ৭১-৭২)
একথাই হযরত ঈসা সম্পর্কে বিভিন্ন স্থানে বলা হয়েছে। সূরা নিসার বলা হয়েছেঃ
---------------------------------
"আল্লাহর রসূল এবং তাঁর ফরমান, যা মার্য়ামের কাছে পাঠিয়েছিলেন এবং তার পক্ষ থেকে একটি রূহ।" (১৭১ আয়াত)
সূরা তাহরীমে বলা হয়েছেঃ
-----------------------------
"আর ইমরানের মেয়ে মার্য়াম, যে নিজের লজ্জাস্থানের হেফাজত করেছিল, কাজেই ফুঁকে দিলাম আমি তার মধ্যে নিজের রূহ।" (১২ আয়াত)
এ সংগে এ বিষয়টিও সামনে থাকা দরকার যে, মহান আল্লাহর হযরত ঈসা (আ) ও হযরত আদমের (আ) জন্মকে পরস্পরের সদৃশ গণ্য করেন। তাই সূরা আলে ইমরানে বলেনঃ
------------------------
"ঈসার দৃষ্টান্ত আল্লাহর কাছে আদমের মতো, যাকে আল্লাহ মাটি থেকে তৈরি করেন তারপর বলেন, "হয়ে যাও" এবং সে হয়ে যায়। (৫৯ আয়াত)
এসব আয়াত নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করলে একথা বুঝা যায় যে, স্বাভাবিক সৃস্টি পদ্ধতির পরিবর্তে যখন আল্লাহ কাউকে নিজের হুকুমের সাহায্যে অস্তিত্বশীল করে জীবন দান করেন তখন একে "নিজের রূহ থেকে ফুঁকে দিয়েছি" শব্দাবলীর সাহায্যে বিবৃত করেন। এ রূহের সম্পর্ক আল্লাহর সাথে সম্ভবত এ জন্য করা হয়েছে যে, এর ফুঁকে দেওয়াটা অলৌকিক ধরনের। আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা নিসা, ১৭১ আয়াত, ২১২-২১৩ টীকা।
৯০. অর্থাৎ তারা মা ও ছেলে দু'জনের কেউই আল্লাহ বা আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বে শরীক ছিলেন না বরং আল্লাহর নিদর্শনাবলীর মধ্যে একটি নিদর্শন ছিলেন। তারা কোন অর্থে নিদর্শন ছিলেন৷ এর ব্যাখ্যা জানার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন সূরা মার্য়াম ২১ এবং সূরা আল মু'মিনূন ৪৩ টীকা।)
(নিসা : ১৭১) হে আহলী কিতাব ! নিজেদের দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না ২১১ আর সত্য ছাড়া কোন কথা আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত করো না৷ মারয়াম পুত্র ঈসা মসীহ আল্লাহর একজন রসূল ও একটি ফরমান ২১২ ছাড়া আর কিছুই ছিল না, যা আল্লাহ মারয়ামের দিকে পাঠিয়েছিলেন৷ আর সে একটি রূহ ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে ২১৩ ( যে মারয়ামের গর্ভে শিশুর রূপ ধারণ করেছিল) ৷ কাজেই তোমরা আল্লাহ ও তার রসূলদের প্রতি ঈমান আনো ২১৪ এবং “তিন” বলো না৷ ২১৫ নিবৃত্ত হও, এটা তোমাদের জন্যই ভালো৷ আল্লাহই তো একমাত্র ইলাই৷ কেউ তার পুত্র হবে, তিনি এর অনেক উর্ধে৷ ২১৬ পৃথিবী ও আকাশের সবকিছুই তার মালিকানাধীন ২১৭ এবং সে সবের প্রতিপালক ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তিনি নিজেই যথেষ্ট৷ ২১৮
(২১১. এখানে আহলে কিতাব খৃষ্টানদের বুঝানো হয়েছে এবং 'বাড়াবাড়ি' করা অর্থ হচ্ছে, কোন বিষয়ের সমর্থনে ও সহযোগিতায় সীমা অতিক্রম করে যাওয়া ইহুদীদের অপরাধ ছিল, তারা ঈসা আলাইহিস সালামকে অস্বীকার ও তাঁর বিরোধিতা করার ক্ষেত্রে সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। আর খৃষ্টানদের অপরাধ ছিল, তারা ঈসা আলাইহিস সালামের প্রতি ভক্তি, প্রীতি ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
২১২. মূলে 'কালেমা' শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। মারয়ামের প্রতি কালেমা (ফরমান) পাঠাবার অর্থ হচ্ছে এই যে, আল্লাহ তা'আলা মারয়াম আলাইহাস সালামের গর্ভাধারকে কোন পুরুষের শুক্রকীটের সহায়তা ছাড়াই গর্ভধারণ করার হুকুম দিলেন। ঈসা আলাইহিস সালামের বিনা বাপে জন্মগ্রহণ করার রহস্য সম্পর্কে খৃস্টানদের প্রথমে একথাই বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা গ্রীক দর্শনের প্রভাবে ভূল পথ অবলম্বন করে। ফলে প্রথমে তারা কালেমা শব্দটিকে 'কালাম' বা 'কথা' (Logos)-এর সমার্থক মনে করে। তারপর এ কালাম ও কথা থেকে আল্লাহ তা'আলার নিজ সত্তার সাথে সংশ্লিষ্ট কালাম-গুণ অর্থাৎ আল্লাহর কথা বলা বুঝানো হয়েছে। অতপর ধারণা করা হয়েছে যে, আল্লাহর সত্তার সাথে সংশ্লিষ্ট এ গুণটি মারয়াম আলাইহাস সালামের উদরে প্রবেশ করে একটি দেহাবয়র ধারণ করে এবং তাই ঈসা মসীহের রূপে আত্মপ্রকাশ করে। এভাবে খৃষ্টানদের মধ্যে ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহ মনে করার ভ্রান্ত আকীদার উদ্ভব হয়েছে। তাদের মদ্যে ভ্রান্ত বিশ্বাস শিকড় গেড়ে বসেছে যেসব, আল্লাহ নিজেই নিজেকে অথবা নিজের চিরন্ত গুনাবলী থেকে 'কালাম' ও 'বাক' গুনকে ঈসার রূপে প্রকাশ করেছেন।
২১৩. এখানে ঈসা আলাইহিস সালামকে -------------- (আল্লাহর কাছ থেকে আসা রূহ) বলা হয়েছে। সূরা আল বাকারায় একথাটিকে নিম্নোক্তভাবে বলা হয়েছে: ------------(আমি পাক রূহের সাহায্যে ঈসাকে সাহায্য করেছি) এই উভয় বাক্যের অর্থ হচ্ছে: আল্লাহ ঈসা আলাইহিস সালামকে পাক রূহ দান করেছিলেন। অন্যায় ও পাপাচারের সাথে এই পাক রূহের কোনদিন কোন পরিচয়ই হয়নি। আপাদমস্তক সত্য ও সততা এবং উন্নত নৈতিক চরিত্র ছিল এর বৈশিষ্ট। খৃষ্টানদের কাছেও হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের এই একই পরিচিতি দান করা হয়েছিল। কিন্তু তারা এর মধ্যেও বাড়াবাড়ি করেছে। --------অর্থাৎ আল্লাহার কাছ থেকে একটি রূহকে তারা বিকৃত করে সরাসরি আল্লাহ বানিয়ে নিয়েছে। আর ''রূহুল কুদুস" (Holy Ghost) –কে ধরে নিয়েছে ''আল্লাহর মুকাদ্দাস বা মহাপবিত্র রূহ", যা ঈসার মধ্যে অনুপ্রবেশ করেছিল। এভাবে আল্লাহ ও ঈসার সাথে রূহুল কুদুসকে তৃতীয় একজন মাবুদ বানিয়ে নেয়া হয়েছিল। এটা ছিল খৃষ্টানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাড়াবাড়ি এবং এর ফলে তারা গোমরাহীতে লিপ্ত হয়ে গিয়েছিল। মজার ব্যাপার এই যে, মথি লিখিত ইঞ্জীলে আজো এ বাক্যটি লেখা রয়েছে: ফেরেশতারা তাকে (অর্থাৎ ইউসুফ নাজ্জারকে) স্বপ্নে দেখা দিয়ে বললো, '''হে ইউসুফ ইবনে দাউদ! তোমার স্ত্রী মারয়ামকে তোমার কাছে নিয়ে আসতে ভয় পেয়ো না। কারণ তার পেটে যে রয়েছে সে রূহুল কুদুসের কুদরাতের সৃষ্টি হয়েছে"। (অধ্যায় ১: শ্লোক ২০)
২১৪. অর্থাৎ আল্লাহকে একমাত্র ইলাহ বলে মেনে নাও এবং সমস্ত রসূলদের রিসালাতের স্বীকৃতি দাও। ঈসা মসীও (আ) তাঁদেরই মধ্যকার একজন রসূল। এটিই ছিল হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের আসল শিক্ষা। ঈসায়ী সম্প্রদায়ের প্রত্যেক ব্যক্তিকে এই যথার্থ সত্য শিক্ষাটি মেনে নেয়া উচিত।
২১৫. অর্থাৎ তিন ইলাহের আকীদা তোমাদের মধ্যে তেমন কোন আকৃতিতে বিদ্যমান থাক না কেন তা পরিহার করো। আসলে খৃস্টানদরা একই সংগে একত্ববাদ ও ত্রিত্ববাদ উভয়টিই মানে। ইঞ্জীলগুলোতে মসহী আলাইহিস সালামের যে সমস্ত সুস্পষ্ট বানী পাওয়া যায় তার ভিত্তিতে কোন একজন খৃষ্টানও একথা অস্বীকার করতে পারবে না যে, আল্লাহ এক এবং তিনি ছাড়া আর দ্বিতীয় কোন ইলাহ নেই। তাওহীদ যে দীনের মূলকথা এটা স্বীকার না করে তাদের উপায় নেই । কিন্তু শুরুতেই তাদের মনে এই ভূল ধারণার জন্ম হয়েছিল যে, আল্লাহর কালাম ঈসার রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে এবং আল্লাহর রূহ তাঁর মধ্যে অনুপ্রবেশ করেছে। এই ভূল ধারণার কারণে তারা সমগ্র বিশ্ব-জাহানের মালিক আল্লাহর সাথে ঈসা মসীহ ও রূহুল কুদুসের (জিব্রীল) খোদায়ীকেও মেনে নেয়াকে অযথা নিজেদের জন্য অপরিহার্য গণ্য করেছেন। এভাবে জোরপূর্বক একটি আকীদা নিজেদের ঘাড়ে চাপিয়ে নেবার কারণে একত্ববাদে বিশ্বাসের সাথে সাথে ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসের সাথে সাথে একত্ববাদে বিশ্বাসকে কিতাবে একই সংগে মেনে চলা যায়। এটা যথার্থই তাদের জন্য রহস্যময় ও জটিল হয়ে উঠেছে। প্রায় আঠার শো বছর থেকে খৃষ্টান পণ্ডিতগণ নিজেদের সৃষ্টি এই জটিলতার গ্রন্থী উন্মোচন করার জন্য মাথা ঘামিয়ে চলেছেন। এরি বিভিন্ন ব্যাখ্যার ভিত্তিতে বহু দল উপদল গঠিত হয়েছে। এরি ভিত্তিতে অন্য দলকে কাফের বলে প্রচার করেছে। এই বিবাদের ফলে গীর্জার সংহতি বিনষ্ট হয়েছে। এবং বিভিন্ন গীর্জা নিজেদের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব ঘোষণা করেছে। তাদের আকায়েদ ও যুক্তি শাস্ত্রের সমস্ত শক্তি এরি পেছনে ব্যয়িত হয়েছে। অথচ এ জটিল সমস্যাটি আল্লাহ সৃষ্টি করেননি। তাঁর প্রেরিত ঈসা মসীহও এ সমস্যাটি সৃষ্টি করেননি। আবার আল্লাহকে তিন মেনে নিয়ে তাঁর একত্ববাদের গায়ে কোন আচঁড় না লাগানো কোনক্রমে সম্ভব নয়। শুধুমাত্র তাদের বাড়াবাড়ির কারণেই এই জটিল সমস্যাটির উদ্ভব হয়েছে। কাজেই বাড়াবাড়ি থেকে বিরত থাকাই এর একমাত্র সমাধান। এ জন্য তাদের পরিহার করতে হবে ঈসা মসীহ ও রূহুল কুদুসের ইলাহ ও মাবুদ হবার ধারণা। একমাত্র আল্লাহকেই একক ইলাহ হিসেবে মেনে নিতে হবে এবং মসীহকে কেবলমাত্র তার পয়গাম্বর গণ্য করতে হবে, তার খোদায়ীতে তাকে কোন প্রকার শরীক করা যাবে না।
২১৬. এটি হচ্ছে খৃষ্টানদের চতুর্থ বাড়াবাড়ির প্রতিবাদ। বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্টের বর্ণনা যদি সঠিক হয়েও থাকে তাহলে তা থেকে (বিশেষ করে প্রথম তিনটি ইঞ্জীল থেকে) বড়জোড় এতটুকুই প্রমাণিত হয় যে, মসীহ আলাইহিস সালাম আল্লাহ ও বান্দার সম্পর্ককে বাপ ও বেটার সম্পর্কের সাথে তুলনা করেছিলেন। আর 'বাপ' শব্দটি তিনি আল্লাহর জন্য নিছক উপমা ও রূপক হিসেবে ব্যবহার করেছেন, যাতে এই সম্পর্ক বুঝা যায়। আসল অর্থে এটিকে ব্যবহার করেননি। এটা কেবলমাত্র ঈসা আলাইহিস সালামের একার বৈশিষ্ট নয়। প্রাচীন যুগ থেকে বনী ইসরাঈলরা আল্লাহর জন্য বাপ প্রতিশব্দটি ব্যবহার করে আসছে। বাইবেলের ওল্ড এটস্টামেন্টে এর অসংখ্য দৃষ্টান্ত পাওয়া যাবে। ঈসা আলাইহিস সালাম নিজের কওমের মধ্যে প্রচলিত বাকধারা অনুযায়ী এ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। তিনি আল্লাহকে কেবলমাত্র নিজের নয় বরং সমস্ত মানুষের বাপ বলতেন। কিন্তু খৃষ্টানরা এখানে এসে আবার বাড়াবাড়ি করেছেন। তারা মসীহকে আল্লাহর একমাত্র পুত্র গণ্য করেছে। এ ক্ষেত্রে তারা যে অদ্ভুত মতবাদ পোষণ করে তার সারনির্যাস হচ্ছে: যেহেতু মসীহ আল্লাহর বহি:প্রকাশ এবং তার কালেমা ও তাঁর রূহের শারীরিক উদ্দেশ্য দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন যে, তিনি মানুষের গোনাহের নিজের মাথায় নিয়ে শূলে চড়ে প্রাণ দেবেন এবং নিজের রক্তের বিনিময়ে মানুষের গোনাহের কাফ্ফারা আদায় করবেন। অথচ মসীহ আলাইহিস সালামের কোন বাণী থেকে তারা এর কোন প্রমাণ পেশ করতে পারেব না। এ আকীদাটি তাদের নিজেদের তৈরী করা। তারা নিজেদের পয়গাম্বরের মহান ব্যক্তিত্বে প্রভাবিত হয়ে যে বাড়াবাড়ি করেছে এটি তারই ফলশ্রুতি।
আল্লাহ এখানে কাফ্ফারা সম্পকির্ত বিশ্বাসের প্রতিবাদ করেননি। কারণ এটা খৃস্টানদের কোন স্বতন্ত্র ও স্থায়ী বিশ্বাস নয়। বরং এটা হচ্ছে মসীহকে (আ) আল্লাহর পুত্র গণ্য করার পরিণতি এবং 'যদি মসীহ আল্লাহর একমাত্র পুত্রই হন তাহলে তিনি শূলবিদ্ধ হয়ে লাঞ্ছিতের মৃত্যুবরণ করলেন কেন' এ প্রশ্নের একটি দার্শনিক ও মরমীয় ব্যাখ্যা। কাজেই যদি মসীহ আলাইহিস সালামের আল্লাহর পুত্র হবার ধারণার প্রতিবাদ করা হয় এবং তাঁর শূলবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করা সম্পকির্ত ভুল ধারণা দূর করা যায় তাহলে আপনা আপনিই এ বিশ্বাসের প্রতিবাদ হয়ে যায়।
২১৭. অর্থাৎ পৃথিবী ও আকাশের অস্তিত্ব সম্পন্ন কোন জিনিসের সাথেও আল্লাহর পিতা-পুত্রের সম্পর্ক নেই। বরং এ সম্পর্ক হচ্ছে মালিক ও তার মালিকানাধীন বস্তুর।
২১৮. অর্থাৎ নিজের খোদায়ীর ব্যবস্থাপনা করার জন্য আল্লাহ নিজেই যথেষ্ট। তার কারো কাছ থেকে সাহায্য গ্রহণ করার কোন প্রয়োজন নেই। কাজেই এ জন্য কাউকে পুত্র বানাবারও তার কোন দরকার নেই।)
(নিসা: ১৭২) মসীহ কখনো নিজের আল্লাহর এক বান্দা হবার ব্যাপারে লজ্জা অনুভব করে না এবং ঘনিষ্ঠতর ফেরেশতারাও একে নিজেদের জন্য লজ্জাকর মনে করে না৷ যদি কেউ আল্লাহর বন্দেগীকে নিজের জন্য লজ্জাকর মনে করে এবং অহংকার করতে থাকে তাহলে এক সময় আসবে যখন আল্লাহ সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে নিজের সামনে হাযির করবেন৷
(মারিয়াম : ৩৩) শান্তি আমার প্রতি যখন আমি জন্ম নিয়েছি ও যখন আমি মরবো এবং যখন আমাকে জীবিত করে উঠানো হবে”৷২১ ৩৪) এ হচ্ছে মারয়ামের পুত্র ঈসা এবং এ হচ্ছে তার সম্পর্কে সত্য কথা, যে ব্যাপারে লোকেরা সন্দেহ করছে৷
(২১. এটিই সেই নিদর্শন হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের সত্তার মাধ্যমে যা বনী ইসরাঈলদের সামনে পেশ করা হয়েছিল। বনী ইসরাঈলের অব্যাহত দুষ্কৃতির কারণে আল্লহ তাদেরকে কঠোর শাস্তি দেবার আগে তাদের সামনে সত্যকে পুরোপুরি ও চূড়ান্তভাবে পেশ করতে চাচ্ছিলেন। এ জন্য তিনি যে কৌশল অবলম্বন করেন তা হচ্ছে এই যে, হারুন গোত্রের এমন এক মুত্তাকী, ধর্মনিষ্ঠ ও ইবাদতগুজার মেয়েকে, যিনি বাইতুল মাকদিসে ই'তিকাফরত এবং হযরত যাকারিয়ার প্রশিক্ষণাধীন ছিলেন, তাঁর কুমারী অবস্থায় গর্ভবতী করে দিলেন। এটা এ জন্য করলেন যে, যখন সে শিশু সন্তান কোলে করে নিয়ে আসবে তখন সমগ্র জাতির মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়ে যাবে। এবং অকস্মিকভাবে সবার দৃষ্টি তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হবে। তারপর এ কৌশল অবলম্বন করার ফলে বিপুল সংখ্য লোক যখন হযরত মারয়ামের চারদিকে ঘিরে দাঁড়ালো তখন আল্লাহ এই নবজাত শিশুর মুখ দিয়ে কথা বলালেন, যাতে শিশু বড় হয়ে যখন নবুওয়াতের দায়িত্ব পালন করবে তখন জাতির হাজার হাজার লোক এ মর্মে সাক্ষ দেবার জন্য উপস্থিত থাকে যে, এর ব্যক্তিত্বের মধ্যে তারা আল্লাহর একটি বিস্ময়কর অলৌকিকত্ব দেখেছিল। এরপরও এ জাতি যখন তার নবুওয়াত অস্বীকার করবে এবং তার আনুগত্য করার পরিবর্তে তাকে অপরাধী সাজিয়ে শুলবিদ্ধ করার চেষ্টা করবে তখন তাদেরকে এমন কঠোর শাস্তি দেয়া হবে যা দুনিয়ায় কোন জাতিকে দেয়া হয়নি। (আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, আলে ইমরান ৪৪ ও ৫৩, আন নিসা ২১২ ও ২১৩, আল আম্বিয়া ৮৮, ৮৯, ও ৯০ এবং আল মু'মিনুন ৪৩ টীকা)।
(আলে ইমরান : ৪২) তারপর এক সময় এলো, ফেরেশতারা মারয়ামের কাছে এসে বললোঃ হে মারয়াম! আল্লাহ তোমাকে মনোনীত করেছেন, তোমাকে পবিত্রতা দান করেছেন এবং সারা বিশ্বের নারী সমাজের মধ্যে তোমাকে অগ্রাধিকার দিয়ে নিজের সেবার জন্য বাছাই করে নিয়েছেন৷৪৩) হে মারয়াম! তোমার রবের ফরমানের অনুগত হয়ে থাকো৷ তাঁর সামনে সিজদানত হও এবং যেসব বান্দা তাঁর সামনে অবনত হয় তুমিও তাদের সাথে অবনত হও৷
(আলে ইমরান : ৪৭) একথা শুনে মারয়াম বললোঃ ‘‘হে আমার প্রতিপালক ! আমার সন্তান কেমন করে হবে? আমাকে তো কোন পুরুষ স্পর্শও করেনি৷’’ জবাব এলোঃ ‘‘এমনটিই হবে ৷৪৪ আল্লাহ যা চান সৃষ্টি করেন ৷ তিনি যখন কোন কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন তখন কেবল এতটুকুই বলেন, হয়ে যাও, তাহলেই তা হয়ে যায়৷’’
(৪৪. অর্থাৎ কোন পুরুষ তোমাকে স্পর্শ না করলেও তোমার সন্তান হবে। এখানে যে 'এমনটি হবে' (--------) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালামের জবাবেও এই একই শব্দ ব্যবহার করা হয়েছিল। সেখানে এর যে অর্থ ছিল এখানেও সেই একই অর্থ হওয়াই উচিত। তা ছাড়া পরবর্তী বাক্য বরং পূর্বাপর সমস্ত বর্ণনাই এই অর্থ সমর্থন করে যে, কোন প্রকার যৌন সংযোগ ছাড়াই হযরত মারয়ামকে সন্তান জন্মের সুসংবাদ দেয়া হয়েছিল। আর আসলে এভাবেই হযরত ঈসার (আ) জন্ম হয়েছিল। নয়তো দুনিয়ার আর দশটি স্ত্রীলোক যেভাবে সন্তান জন্ম দেয় সেভাবে পরিচিত স্বাভাবিক পদ্ধতিতে যদি হযরত মারয়ামের গর্ভে সন্তান জন্ম নেবার ব্যাপারটি ঘটে থাকতো এবং যদি প্রকৃতপক্ষে হযরত ঈসা (আ) ঐভাবেই জন্মগ্রহণ করে থাকতেন , তাহলে ৪ রুকূ' থেকে ৬ রুকূ' পর্যন্ত যে বর্ণনা চলে আসছে তা পুরোপুরি অর্থহীন হয়ে যায় এবং ঈসা আলাইহিস সালামের জন্ম সংক্রান্ত আর যে সমস্ত বর্ণনা আমরা কুরআনের আরো বিভিন্ন স্থানে পাই তাও নিরর্থক হয়ে পড়ে । পিতার ঔরস ছাড়াই অস্বাভাবিক পদ্ধতিতে হযরত ঈসার (আ) জন্ম হয়েছিল বলেই না খৃষ্টানরা তাঁকে 'আল্লাহর পুত্র' ও ইলাহ মনে করেছিল। আর একজন কুমারী মেয়ে সন্তান প্রসব করেছে, এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করেই তো ইহুদীরা তাঁর প্রতি দোষারোপ করেছিল। যদি এটা আদতে কোন সত্য ঘটন্ই না হয়ে থাকে, তাহলে ঐ দু'টি দলের চিন্তার প্রতিবাদ প্রসংগে কেবল এতটুকু বলে দেয়াই যথেষ্ট হতো যে, তোমরা ভুল বলছো, সে মেয়েটি ছিল বিবাহিতা, ওমুক ব্যক্তি ছিল তার স্বামী এবং তারই ঔরসে ঈসার জন্ম হয়েছিল। এই সংক্ষিপ্ত চুম্বক কথা ক'টি বলার পরিবর্তে এতো দীর্ঘ ভূমিকা ফাঁদার, পেঁচিয়ে কথা বলার এবং সোজাসুজি উমুক ব্যক্তির পুত্র ঈসা বলার পরিবর্তে মারয়ামের পুত্র ঈসা বলার কি প্রয়োজন ছিল৷ এর ফলে তো বিষয়টি সহজে মীমাংসা হওয়ার পরিবর্তে আরো জটিল হয়ে পড়েছে। কাজেই যারা কুরআনকে আল্লাহর কালাম বলে মানে এবং এরপর ঈসা আল্লাইহিস সালাম সম্পর্কে একথা প্রমাণ করার চেষ্টা করে যে, স্বাভাবিকভাবে মাতা পিতার মিলনের ফলে তাঁর জন্ম হয়েছিল, তারা আসলে একথা প্রমাণ করেন যে, মনের কথা প্রকাশ করা ও নিজের বক্তব্য সুস্পষ্ট করে তুলে ধরার যতটুকু ক্ষমতা তাদের আছে, আল্লাহর ততটুকু নেই (মা'আযাল্লাহ)।
(আলে ইমরান : ৫৯) আল্লাহর কাছে ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের মতো৷ কেননা আল্লাহ তাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেন এবং হুকুম দেন , হয়ে যাও, আর তা হয়ে যায়৷৫৩
(৫৩. অর্থাৎ যদি নিছক অলৌকিক জন্মলাভ কারো খোদা বা খোদার পুত্র হবার যথেষ্ট প্রমাণ বলে বিবেচিত হয়ে থাকে, তাহলে সর্বপ্রথম তোমাদের আদম সম্পর্কেই এহেন আকীদা পোষণ করা উচিত ছিল। কারণ ঈসা কেবল বিনা পিতায় জন্মলাভ করেছিলেন কিন্তু আদম জন্মলাভ করেছিলেন পিতা ও মাতা উভয়ের সাহায্য ছাড়াই।)
(আলে ইমরান : ৪৯) এবং নিজের রসূল বানিয়ে ইসরাঈলদের কাছে পাঠাবেন৷’’ ( আর বনী ইসরাঈলদের কাছে রসূল হিসেবে এসে ঈসা আ: বললোঃ ) ‘‘আমি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে নিশানী নিয়ে এসেছি ৷ আমি তোমাদের সামনে মাটি থেকে পাখির আকৃতি বিশিষ্ট একটি মূর্তি তৈরী করছি এবং তাতে ফুৎকার দিচ্ছি, আল্লাহর হুকুমে সেটি পাখি হয়ে যাবে৷ আল্লাহর হুকুমে আমি জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে নিরাময় করি এবং মৃতকে জীবিত করি৷ আমি তোমাদের জানিয়ে দিচ্ছি, তোমরা নিজেদের গৃহে কি খাও ও কি মওজুদ করো৷ এর মধ্যে তোমাদের জন্য যথেষ্ঠ নিশানী রয়েছে, যদি তোমরা ঈমানদার হও৷৪৫
(৪৫. অর্থাৎ যদি তোমরা হককে মেনে নিতে প্রস্তুত হয়ে যাও এবং হঠধর্মী না হও, তাহলে সমগ্র বিশ্ব-জাহানের স্রষ্টা ও সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহ যে আমাকে পাঠিয়েছেন, এ বিষয়টি মেনে নেবার এবং এ ব্যাপারে তোমাদের নিশ্চিন্ত করার জন্য এই নিশানীগুলোই যথেষ্ট।)
.
(১৯:২০) মারয়াম বললো, “আমার পুত্র হবে কেমন করে যখন কোন পুরুষ আমাকে স্পর্শও করেনি এবং আমি ব্যভিচারিনীও নই?” ২১) ফেরেশতা বললো, “এমনটিই হবে, তোমার রব বলেন, এমনটি করা আমার জন্য অতি সহজ আর আমি এটা এ জন্য করবো যে, এই ছেলেকে আমি লোকদের জন্য একটি নির্দশন ও নিজের পক্ষ থেকে একটি অনুগ্রহে পরিণত করবো এবং এ কাজটি হবেই।
কিতাবের মধ্যে মতবিরোধ করার কুফল : ২:১৭৬,
(১১:১১০) আমি এরা আগে মূসাকেও কিতাব দিয়েছি এবং সে সম্পর্কে মতভেদ করা হয়েছিল (যেমন আজ তোমাদের এই যে কিতাব দেয়া হয়েছে এ সম্পর্কে করা হচ্ছে) ৷ যদি তোমার রবের পক্ষ থেকে একটি কথা প্রথমেই স্থির করে না দেয়া হতো তাহলে এ মতভেদকারীদের মধ্যে কবেই ফায়সালা করে দেয়া হয়ে যেতো৷ একথা সত্যি যে, এরা তার ব্যাপারে সন্দেহ ও পেরেশানীর মধ্যে পড়ে রয়েছে৷
তোমার পালনকর্তা যাদের উপর রহমত করেছেন, তারা ব্যতীত সবাই চিরদিন মতভেদ করতেই থাকবে এবং এজন্যই তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। আর তোমার আল্লাহর কথাই পূর্ণ হল যে, অবশ্যই আমি জাহান্নামকে জ্বিন ও মানুষ দ্বারা একযোগে ভর্তি করব। ১১:১১৯,
(১৯:৩৭) কিন্তু তারপর (খ্রিষ্টানদের) বিভিন্ন দল পরস্পর মতবিরোধ করতে থাকলো৷ যারা কুফরী করলো তাদের জন্য সে সময়টি হবে বড়ই ধ্বংসকর যখন তারা একটি মহাবিদস দেখবে৷
(১১:১১৮) অবশ্যি তোমার রব চাইলে সমগ্র মানব জাতিকে একই গোষ্ঠীভুক্ত করতে পারতেন, কিন্তু এখন তারা বিভিন্ন পথেই চলতে থাকবে৷
(১৬:৩৮) এরা আল্লাহর নামে শক্ত কসম খেয়ে বলে, “আল্লাহ কোনো মৃতকে পুনর্বার জীবিত করে উঠাবেন না৷”-কেন উঠাবেন না ? এতো একটি ওয়াদা, যেটি পুরা করা তিনি নিজের ওপর ওয়াজিব করে নিয়েছেন, কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না(১৬:৩৯) আর এটি এজন্য প্রয়োজন যে, এরা যে সত্যটি সম্পর্কে মতবিরোধ করছে আল্লাহ সেটি এদের সামনে উন্মুক্ত করে দেবেন এবং সত্য অস্বীকারকারীরা জানতে পারবে যে, তারাই ছিল মিথ্যাবাদী৷
(১৬:১২৪) বাকী রইলো শনিবারের ব্যাপারটি, সেটি আসলে আমি এমনসব লোকের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিলাম যারা এর বিধানের মধ্যে মতবিরোধ করেছিল৷
(মু’মিনুন:৯১) আল্লাহ কাউকে নিজের সন্তানে পরিণত করেননি এবং তাঁর সাথে অন্য কোন ইলাহও নেই৷ যদি থাকতো তাহলে প্রত্যেক ইলাহ নিজের সৃষ্টি নিয়ে আলাদা হয়ে যেতো ৷এবং তারপর একজন অন্যজনের ওপর চড়াও হতো৷ এরা যেসব কথা তৈরী করে তা থেকে আল্লাহ পাক-পবিত্র৷
(অর্থাৎ বিশ্ব-জাহানের বিভিন্ন শক্তির ও বিভিন্ন অংশের স্রষ্টা ও প্রভু হতো আলাদা আলাদা ইলাহ এবং এরপর তাদের মধ্যে পূর্ণ সহযোগীতা বজায় থাকতো যেমন তোমরা এ সমগ্র বিশ্ব ব্যবস্থার অসংখ্য শক্তি ও বস্তু এবং অগণিত গ্রহ-নক্ষত্রের মধ্যে দেখতে পাচ্ছো , এটা কোনক্রমেই সম্ভব ছিল না । বিশ্ব-জাহানের নিয়ম শৃংখলা ও তার বিভিন্ন অংশের পারস্পারিক একাত্মতা স্পষ্টতই প্রমাণ করছে যে, এর ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব একজন একক আল্লাহর হাতে কেন্দ্রীভূত । যদি কর্তৃত্ব বিভক্ত হতো তাহলে কর্তৃত্বশীলদের মধ্যে অনিবার্যভাবে মতবিরোধ সৃষ্টি হতো। আর এ মতবিরোধ তাদের মধ্যে সংঘর্ষ ও যুদ্ধ পর্যন্ত না পৌছে ছাড়তো না । এ বক্তব্যই সূরা আম্বিয়ায় এভাবে বর্ণিত হয়েছে :
---------------
''যদি পৃথিবী ও আকাশে আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ থাকতো তাহলে এ উভয়ের ব্যবস্থা লন্ডভন্ড হয়ে যেতো ।'' (২২ আয়াত)
সূরা বনী ইসরাঈলেও এ একই যুক্তির অবতারণা করা হয়েছে: --------------- ''যদি আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহও থাকতো , যেমন লোকেরা বলে, তাহলে নিশ্চয়ই তারা আরশের মালিকের স্থানে পৌছুবার চেষ্টা করতো ।''
(ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল করআন বনী ইসরাঈল, ৪৭ এবং আল আম্বিয়া , ২২ টীকা )।
(বিস্তারিত দেখুন : ই > ইলাহ, শ > শিরক, স > সার্বভৌমত্ব )
(হাজ্ব:৬৭) প্রত্যেক (নবীর) উম্মতের জন্য আমি একটি ইবাদাতের পদ্ধতি নির্দিষ্ট করেছি, যা তারা অনুসরণ করে; কাজেই হে মুহাম্মাদ! এ ব্যাপারে তারা (ঐ সব নবীর মিথ্যা অনুসরনকারীরা*) যেন তোমার সাথে ঝগড়া না করে৷ তুমি তোমার রবের দিকে দাওয়াত দাও৷ অবশ্যই তুমি সঠিক সরল পথে আছো৷৬৮) আর যদি তারা তোমার সাথে ঝগড়া করে তাহলে বলে দাও, “যাকিছু তোমরা করছো আল্লাহ তা খুব ভালোই জানেন৷ তোমরা যেসব বিষয়ে মতভেদ করছো ৬৯) আল্লাহ কিয়ামতের দিন তোমাদের মধ্যে সেসব বিষয়ে ফায়সালা করে দেবেন৷”
(*তারা যদি সত্যিকার অর্থে ঐ নবীর শিক্ষার অনুসরণ করতো তবে অবশ্যই মুহাম্মদ সা: এর অনুসরণকারী হতো, কারণ পূর্ববর্তী সকল নবীই এ ভবিষ্যৎবানী করে গেছেন যে, পরবর্তীতে মুহাম্মদ সা: এর আগমন ঘটলে তোমরা তার অনুসরণ করবে । বর্তমানে প্রচলিত অন্যান্য ধর্মগ্রন্থগুলিতেও মুহাম্মদ সা: এর আগমনবানী ও পরিচয় সবিস্তারে বিধৃত রয়েছে। )
(২০:৯৪) হারুন জবাব দিল, “হে আমার সহোদর ভাই! আমার দাড়ি ও মাথার চুল ধরে টেনো না৷ আমার আশংকা ছিল, তুমি এসে বলবে যে, তুমি বনী ইসরাঈলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছো এবং আমার কথা রক্ষা করোনি৷”
(সামেরী গোবৎস নির্মাণ করে লোকদের নিয়ে পূজা শুরু করেছিল। তখন (২০:৯২) মূসা (তার সম্প্রদায়কে ধমকাবার পর হরুনের দিকে ফিরে) বললো, “হে হারুন! তুমি যখন দেখলে এরা পথভ্রষ্ট হয়ে যাচ্ছে তখন আমার পথে চলা থেকে কিসে তোমাকে বিরত রেখেছিল? এ প্রশ্নের জবাবে হযরত হারুন উপরোক্ত কথা গুলো বলেন। হযরত হারুনের জবাবের অর্থ কখনোই এই নয় যে, জাতির ঐক্যবদ্ধ থাকা তার সঠিক পথে থাকার চাইতে বেশী গুরুত্বপূর্ণ এবং শিরকের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ থাকা তার এমন অনৈক্যের চেয়ে ভালো যার ভিত্তি গড়ে ওঠে হক ও বাতিলের বিরোধের ওপর। কোন ব্যক্তি যদি এ আয়াতের এ অর্থ করে তাহলে সে কুরআন থেকে গোমরাহী গ্রহণ করবে। হযরত হারুনের পুরো কথাটা বুঝতে হলে এ আয়াতটিকে সূরা আ'রাফের ১৫০ আয়াতের সাথে মিলিয়ে পড়তে হবে। সেখানে বলা হয়েছেঃ
"হে আমার সহোদর ভাই! এ লোকেরা আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিল এবং আমাকে মেরে ফেলার উপক্রম করেছিল। কাজেই তুমি দুশমনদেরকে আমার প্রতি হাসবার সুযোগ দিয়ো না এবং ঐ জালেম দলের মধ্যে আমাকে গণ্য করো না"।
এখন এ উভয় আয়াত একত্র করে দেখলে যথার্থ ঘটনার এ ছবি সামনে আসে যে, হযরত হারুন লোকদেরকে এ গোমরাহী থেকে রুখবার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন কিন্তু তারা তাঁর বিরোদ্ধে মহা বিপর্যয় সৃষ্টি করে এবং তাঁকে মেরে ফেলতে উদ্যত হয়। বাধ্য হয়ে তিনি এই আশংকায় নীরব হয়ে যান যে, হযরত মূসার ফিরে আমার আগেই গৃহযুদ্ধ শুরু না হয়ে যায় এবং তিনি পরে এসে এ অভিযোগ না করে বসেন যে, তোমার যখন পরিস্থিতির মোকাবিলা করার ক্ষমতা ছিল না তখন তুমি পরিস্থিতিকে এতদূর গড়াতে দিলে কেন৷ আমার আসার অপেক্ষা করলে না কেন৷ সূরা আ'রাফের আয়াতের শেষ বাক্য থেকেও একথাই প্রতিভাত হয় যে, বনী ইসরাঈলের মধ্যে উভয় ভাইয়ের একদল শত্রু ছিল।)
(১৬:৬৪) আমি তোমার প্রতি এ কিতাব এজন্য অবতীর্ণ করেছি যাতে তুমি এ মতভেদের তাৎপর্য এদের কাছে সুস্পষ্ট করে তুলে ধরো৷ যার মধ্যে এরা ডুবে আছে৷
(২৭.নামল:৭৬) যথার্থই এই কোরআন বনীইসরাইলকে বেশিরভাগ এমন সব কথার স্বরূপ বর্ণনা করে যেগুলোতে তারা মতভেদ করে৷
(২৭.নামল:৭৬) যথার্থই এই কোরআন বনীইসরাইলকে বেশিরভাগ এমন সব কথার স্বরূপ বর্ণনা করে যেগুলোতে তারা মতভেদ করে৷
(অদৃশ্যজ্ঞানী আল্লাহর জ্ঞানের একটি প্রকাশ হচ্ছে এই যে, একজন নিরক্ষর ব্যক্তির মুখ থেকে এ কুরআনে এমন সব ঘটনার স্বরূপ উদ্ঘাটন করা হচ্ছে যা বনী ইসরাঈলের ইতিহাসে ঘটেছে। অথচ বনী ইসরাঈলদের আলেমদের মধ্যেও তাদের নিজেদের ইতিহাসের এসব ঘটনার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে (এর নজির সূরা নমলের প্রথম দিকের রুকূগুলোতেই পাওয়া যাবে, যেমন আমরা টীকায় বলেছি)।)
(১৯:৯৬) নিসন্দেহে যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে শ্রীঘ্রই রহমান তাদের জন্য অন্তরে ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেবেন৷
(১৫:৪৭) তাদের মনে যে সামান্য কিছু মনোমালিন্য থাকবে তা আমি বের করে দেবো, তারা পরস্পর ভাই ভাইয়ে পরিণত হয়ে মুখোমুখি আসনে বসবে৷৪৮) সেখানে তাদের না কোনো পরিশ্রম করতে হবে আর না তারা সেখান থেকে বহিষ্কৃত হবে৷
কলংক কালিমা বা লাঞ্ছনা তাদের চেহারাকে আবৃত করবে না৷ তারা জান্নাতের হকদার, সেখানে তারা থাকবে চিরকাল -১০:২৬,
আর কিয়ামতের দিন অবশ্যই তিনি তোমাদের সমস্ত মতবিরোধের রহস্য উন্মোচিত করে দেবেন (১৬:৯২)
(১৬:১২৪)..আর নিশ্চয়ই তারা যেসব ব্যাপারে মতবিরোধ করেছে তোমার রব কিয়ামতের দিন সেসব ব্যাপারে ফায়সালা দিয়ে দেবেন৷
(১৮:২১)এভাবে আমি নগরবাসীদেরকে তাদের অবস্থা জানালাম, যাতে লোকেরা জানতে পারে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য এবং কিয়ামতের দিন নিশ্চিতভাবেই আসবে৷ (কিন্তু একটু ভেবে দেখো, যখন এটিই ছিল চিন্তার আসল বিষয়) সে সময় তারা পরস্পর এ বিষয়টি নিয়ে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়েছিল যে, এদের (আসহাবে কাহফ) সাথে কি করা যায়৷ কিছু লোক বললো, “এদের ওপর একটি প্রাচীর নির্মাণ করো, এদের রবই এদের ব্যাপারটি ভালো জানেন৷” কিন্তু তাদের বিষয়াবলীর ওপর যারা প্রবল ছিল তারা বললো, “আমরা অবশ্যি এদের ওপর একটি ইবাদাতখানা নির্মাণ করবো”৷
(প্রায় তিনশ বছর কয়েক জন যুবককে ঘুম পাড়িয়ে রাখার পর তাদেরকে জাগিয়ে তোলা আল্লাহর পক্ষ থেকে ছিল একটি নিদর্শন। যার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, মৃত্যুর পর মানুষকে জগিয়ে তোলা আল্লাহর পক্ষে সম্ভব এবং কিয়ামতের হিসাব নিকাশ অবশ্যম্ভাবী। এরপর আসহাবে কাহাফ মৃত্যুবরণ করলেন। কিন্তু এ দিকটির প্রতি দৃষ্টিপাত না করে বেশীর ভাগ লোক এই চিন্তা করতে লাগলো যে, তাদের কবরের উপর প্রাচীর নির্মাণ করবেন নাকি মসজিদ নির্মাণ করবেন। তারা এই মতভেদে জড়িয়ে পড়ে ঝগড়ায় প্রবৃত্ত হলো। আর এ মতভেদ ও ঝগড়ার কারণে এ ঘটনার আসল নিদর্শন পুনরুত্থান ও পরকালীন হিসাব নিকাশের সত্যতার বিষয়টি তাদের দৃষ্টিতে ধরা পড়ল না। )
(২১:৯২) তোমাদের এ উম্মত আসলে একই উম্মত৷ আর আমি তোমাদের রব৷ কাজেই তোমরা আমার ইবাদাত করো৷ ৯৩) কিন্তু (নিজেদের কার্যকলাপের মাধ্যমে) লোকেরা পরস্পরের মধ্যে নিজেদের দীনকে টুকরো টুকরো করে ফেলেছে৷ সবাইকে আমার দিকে ফিরে আসতে হবে৷
(আরো দেখুন : দ > দ্বীন > দ্বীনকে টুকরা টুকরা করা)
(২০:৫১) ফেরাউন বললো, “আর পূর্ববর্তী বংশধর যারা অতীত হয়ে গেছে তাদের তাহলে কি অবস্থা ছিল?”৫২) মূসা বললো “সেজ্ঞান আমার রবের কাছে লিপিবদ্ধ অবস্থায় সংরক্ষিত আছে৷ আমার রব ভুলও করেন না, বিস্মৃতও হন না”৷
(ব্যাখ্যা:রএটি হযরত মূসার সে সময় প্রদত্ত একটি অত্যন্ত জ্ঞানগর্ভ জবাব। এ থেকে প্রচার কৌশল সম্পর্কে ভালো শিক্ষা লাভ করা যায়। উপরের বর্ণনা অনুসারে ফেরাউনের উদ্দেশ্য ছিল শ্রোতাদের এবং তাদের মাধ্যমে সমগ্র জাতির মনে বিদ্বেষের আগুন জ্বালানো। যদি হযরত মূসা বলতেন, হাঁ, তারা সবাই মুর্খ ও পথভ্রষ্ট ছিল এবং সবাই জাহান্নামের ইন্ধন হবে, তাহলে এটা সত্য কথনের বিরাট আদর্শ হলেও এ জবাব হযরত মূসার পরিবর্তে ফেরাউনের উদ্দেশ্য সাধনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতো। তাই তিনি পূর্ণ বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষনতা সহকারে এমন জবাব দেন যা ছিল একদিকে যথার্থ সত্য এবং অন্যদিকে ফেরাউনের বিষ দাঁতও উঁপরে ফেলতে সক্ষম। তিনি বলেন, তারা যাই কিছু ছিল, নিজেদের কাজ করে আল্লাহর কাছে পৌছে গেছে। তাদের কার্যাবলী এবং কাজের পেছনে নিহিত অন্তরের ইচ্ছাসমূহ জানার কোন উপায় নেই। কাজেই তাদের ব্যাপারে আমি কোন সিদ্ধান্ত দিই কেমন করে৷ তাদের সমস্ত রেকর্ড আল্লাহর কাছে সংরক্ষিত আছে। তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ ও তার কারণসমূহের খবর আল্লাহই জানেন। কোন জিনিস আল্লাহর দৃষ্টির বাইরে থাকেনি এবং তাঁর স্মৃতি থেকেও কোন জিনিস বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। আল্লাহই জানেন তাদের সাথে কি ব্যবহার করতে হবে। তাদের ভূমিকা কি ছিল এবং তাদের পরিণাম কি হবে, তোমার ও আমার এ কথা চিন্তা করা উচিত নয়। আমাদের চিন্তা করা উচিত আমাদের ভূমিকা কি এবং আমরা কোন ধরনের পরিণামের সম্মুখীন হবো।)
(২০:৬২) একথা শুনে তাদের মধে মতবিরোধ হয়ে গেলো এবং তারা চুপিচুপি পরামর্শ করতে লাগলো৷
( ব্যাখ্যা : মুসা আ: এর ঘটনায় : সম্ভবত তারা এ বিষয়ে মতবিরোধ করে থাকবে যে, এত বড় উৎসব, যেখানে সারা দেশের লোক জমা হয়ে গছে সেখানে খোলা ময়দানে দিনের উজ্জ্বল আলোকে এ প্রতিযোগিতায় নামা ঠিক হবে কি না। যদি এখানে আমরা পরাজিত হয়ে যাই এবং সবার সামনে যাদু ও মু'জিযার ফারাক প্রকাশ হয়ে যায় তাহলে তখন আর করার কিছুই থাকবে না।, বিস্তারিত দেখুন : র > রাষ্ট্রক্ষমতা, দ >দাওয়াত, য > যাদু )
(২০:৬৩) শেষ কিছু লোক বললো, “এরা দু’জন তো নিছক যাদুকর, নিজেদের যাদুর জোরে তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে উৎখাত করা এবং তোমাদের আদর্শ জীবন যাপন পদ্ধতি ধ্বংস করে দেয়াই এদের উদ্দেশ্য৷৬৪) আজ নিজেদের সমস্ত কলাকৌশল একত্র করে নাও এবং একজোট হয়ে ময়দানে এসো৷ ব্যস, জেনে রাখো, আজকে যে প্রাধান্য লাভ করবে সেই জিতে গেছে”৷
(২৭-নমল:৭৮) নিশ্চয় (এভাবে) তোমার রব তাদের মধ্যেও নিজের হুকুমের মাধ্যমে ফায়সালা করে দিবেন, তিনি পরাক্রমশালী ও সব কিছুই জানেন৷
(৩২- আস-সাজদা : ২৫) নিশ্চিতই তোমার রবই কিয়ামতের দিন সেসব কথার ফায়সালা করে দেবেন যেগুলোর ব্যাপারে তারা (বনী ইসরাঈল ) পরস্পর মতবিরোধে লিপ্ত থেকেছে৷ ৩৮
৩৮ . এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে বনী ইসরাঈলের সর্বব্যাপী কোন্দল ও দলাদলির প্রতি। এসব কোন্দলে তারা লিপ্ত হয়েছিল ঈমান ও প্রত্যয়ের সম্পদ থেকে বঞ্চিত হবার, নিজেদের সত্যপন্থী নেতাদের আনুগত্য পরিত্যাগ করার ও বৈষয়িক স্বাথপূজারী হয়ে যাবার পর। এ অবস্থার একটি ফল তো সুস্পষ্ট। বনী ইসরাঈল কোন ধরনের লাঞ্ছনা ও অবমাননার শিকার হয়েছিল, তা সারা দুনিয়া দেখছে। দ্বিতীয় ফলটি এখন দুনিয়াবাসীরা জানে না এবং তা কিয়ামতের দিন প্রকাশিত হবে।
ক্লিক করুন :
পারিশ্রমিক :
আরো দেখুন : ন > নারী ।
(১৫:৬০) তার স্ত্রী ছাড়া, যার জন্য (আল্লাহ বলেনঃ) আমি স্থির করেছি, সে পেছনে অবস্থানকারীদের সাথে থাকবে৷
(১৬:৭২) আর আল্লাহই তোমাদের জন্য তোমাদের সমজাতীয় স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, তিনিই এ স্ত্রীদের থেকে তোমাদের পুত্র-পৌত্রাদি দান করেছেন এবং ভালো ভালো জিনিস তোমাদের খেতে দিয়েছেন৷ তারপর কি এরা (সবকিছু দেখার ও জানার পরও) বাতিলকে মেনে নেবে এবং আল্লাহর নিয়ামত অস্বীকার করে ?
বই ১ :: হাদিস ৬৮
হযরত উমর (রা) রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেনঃ ‘কোন সঙ্গত কারণে স্ত্রীকে প্রহার করা হলে স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না অর্থ্যাৎ, সে তার স্ত্রীকে কোন কারণে মেরেছে।’ (আবু দাউদ)
দেখুন : স > সন্তান > কন্যা সন্তান ।
(১৫:৬৭) ইত্যবসরে নগরবাসীরা মহা উল্লাসে উচ্ছ্বসিত হয়ে লূতের বাড়ি চড়াও হলো৷৬৮) লূত বললো, ভাইয়েরা আমার ! এরা হচ্ছে আমার মেহমান, আমাকে বে-ইজ্জত করো না৷৬৯) আল্লাহকে ভয় করো, আমাকে লাঞ্ছিত করো না৷৭০) তারা বললো, আমরা না তোমাকে বারবার মানা করেছি, সারা দুনিয়ার ঠিকেদারী নিয়ো না ? ৭১) লূত লাচার হয়ে বললো, যদি তোমাদের একান্তই কিছু করতেই হয় তাহলে এই যে আমার মেয়েরা রয়েছে৷৭২) তোমার জীবনের কসম হে নবী ! সে সময় তারা যেন একটি নেশায় বিভোর হয়ে মাতালের মতো আচরণ করে চলছিল৷
(১৫:৭১) লূত লাচার হয়ে বললো, যদি তোমাদের একান্তই কিছু করতেই হয় তাহলে এই যে আমার মেয়েরা রয়েছে৷
(১১:৭৮) (এ মেহমানদের আসার সাথে সাথেই) তার সম্প্রদায়ের লোকেরা নির্দ্বিধায় তার ঘরের দিকে ছুটে আসতে লাগলো৷ আগে থেকেই তারা এমনি ধরনের কুকর্মে অভ্যন্ত ছিল৷ লূত তাদেরকে বললোঃ “ভাইয়েরা ! এই যে, এখানে আমার মেয়েরা আছে, এরা তোমাদের জন্য পবিত্রতর৷ আল্লাহর ভয়-ডর কিছু করো, এবং আমার মেহমানদের ব্যাপারে আমাকে লাঞ্ছিত করো না, তোমাদের মধ্যে কি একজনও ভালো লোক নেই?” (১১:৭৯) তারা জবাব দিলঃ “তুমি তো জানোই, তোমার মেয়েদের দিয়ে আমাদের কোন কাজ নেই এবং আমরা কি চাই তাও তুমি জানো৷”
(ব্যাখ্যা : এ বাক্যটি তাদের মানসিক অবস্থার পূর্ণচিত্র এঁকে দেয়। বুঝা যায় লাম্পট্যের ক্ষেত্রে তারা কত নিচে নেমে গিয়েছিল। তারা স্বভাব-প্রকৃতি ও পবিত্রতার পথ পরিহার করে একটি পূতিগন্ধময় প্রকৃতি বিরোধী পথে চলতে শুরু করেছিল, ব্যাপার শুধুমাত্র এতটুকুই ছিল না বরং অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছিল যে, এখন শুধুমাত্র এ একটি নোংরা পথের প্রতিই ছিল তাদের সমস্ত ঝোঁক-প্রবণতা, আকর্ষণ ও অনুরাগ। তাদের প্রবৃত্তি এখন শুধুমাত্র এ নোংরামিরই অনুসন্ধান করে ফিরছিল। প্রকৃতি ও পবিত্রতার পথ তো আমাদের জন্য তৈরীই হয়নি একথা বলতে তারা কোন লজ্জা অনুভব করতো না। এটা হচ্ছে নৈতিক অধপতন ও চারিত্রিক বিকৃতির চূড়ান্ত পর্যায়। এর চেয়ে বেশী নিম্নগামিতার কথা কল্পনাই করা যেতে পারে না। যে ব্যক্তি নিছক নফস ও প্রবৃত্তির দুর্বলতার কারণে হারাম কাজে লিপ্ত হয়ে যায়, এ সত্ত্বেও হালালকে কাংখিত এবং হারামকে পরিত্যাজ্য মনে করে, তার বিষয়টি খুবই হালকা। এমন ব্যক্তি কখনো সংশোধিত হয়ে যেতে পারে। আর সংশোধিত হয়ে না গেলেও তার সম্পর্কে বড় জোর এতটুকু বলা যেতে পারে যে, সে একজন বিকৃত চরিত্রসম্পন্ন ব্যক্তি। কিন্তু যখন কোন ব্যক্তির সমস্ত আগ্রহ হারামের মধ্যেই কেন্দ্রীভূত হয়ে যায় এবং সে মনে করতে থাকে হালাল তার জন্য তৈরীই হয়নি তখন তাকে মানুষের মধ্যেই গণ্য করা যেতে পারে না। সে আসলে একটি নোংরা কীট। মুলমূত্র ও দুর্গুন্ধের মধ্যেই সে প্রতিপালিত হয় এবং পাক-পবিত্রতার সাথে তার প্রকৃতিগত কোন সম্পর্কেই নেই। এ ধরনের কীট যদি কোন পরিচ্ছন্নতার প্রিয় মানুষের ঘরে জন্ম নেয় তাহেল প্রথম সুযোগেই সে ফিনাইল ঢেলে দিয়ে তার অস্তিত্ব থেকে নিজের গৃহকে মুক্ত করে নেয়। তাহলে আল্লাহ তার যমীনে এ ধরনের নোংরা কীটদের সামবেশকে কতদিন বরদাশত করতে পারতেন।)
(২৮-ক্বাছাছ : ২৩) আর যখন সে মাদয়ানের কুয়ার কাছে পৌঁছুল, সে দেখলো, অনেক লোক তাদের পশুদের পানি পান করাচ্ছে এবং তাদের থেকে আলাদা হয়ে একদিকে দু'টি মেয়ে নিজেদের পশুগুলো আগলে রাখছে৷ মূসা মেয়ে দু'টিকে জিজ্ঞেস করলো, "তোমাদের সমস্যা কি?" তারা বললো, "আমরা আমাদের জানোয়ারগুলোকে পানি পান করাতে পারি না যতক্ষণ না এ রাখালেরা তাদের জানোয়ারগুলো সরিয়ে নিয়ে যায়, আর আমাদের পিতা একজন অতি বৃদ্ধ ব্যক্তি৷"
দেখুন : ক্লিক করুন : দ > দাওয়াতী কাজ >
মহিলাদের দাওয়াতী কাজ :
দ > দাওয়াতী কাজ > মুহাম্মদ সা: এর স্ত্রীগণও দাওয়াতী কাজ / ইসলামের হুকুম আহকাম পৌছে দেওয়ার কাজের জন্য আদিষ্ট ছিলেন :
ক্রমাগত ভাবে সত্য অস্বীকার করার কারণে এবং বিভিন্ন ভাবে বুঝানোর পরও যখন কোন ব্যক্তি কুফরীতে শক্ত হয়ে বসে থাকে তখন আল্লাহ তার অন্তরে মোহর মেরে দেন : (আরো দেখুন: হেদায়েত ও ঈমান লাভের তৌফিক কেন ছিনিয়ে নেয়া হয়) :
যাদের অন্তর আছে কিন্তু উপলদ্ধি করেনা, চোখ আছে কিন্তু দেখেনা, কান আছে কিন্তু শুনেনা, তারা পশুর ন্যায়, বরং তার চেয়েও নিকৃষ্ট: ৭:১৭৯, ৮:২২ (যারা বিবেক বুদ্ধি কাজে লাগায় না)।
যখনই জিহাদের হুকুম নাযিল হয়েছে তখনই মুনাফিকরা ঘরে বসে থাকা মহিলাদের সাথে শামিল হয়ে ঘরে বসে থাকতে চেয়েছে, তাই আল্লাহর তাদের অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছেন : ৯:৮৬-৮৭,
(১৮:৫৭) আর কে তার চেয়ে বড় জালেম, যাকে তার রবের আয়াত শুনিয়ে উপদেশ দেয়ার পর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং সেই খারাপ পরিণতির কথা ভুলে যায় যার সাজ-সরঞ্জাম সে নিজের জন্য নিজের হাতে তৈরি করেছে ? (যারা এ কর্মনীতি অবলম্বন করেছে) তাদের অন্তরের ওপর আমি আবরণ টেনে দিয়েছি, যা তাদেরকে কুরআনের কথা বুঝতে দেয় না এবং তাদের কানে বধিরতা সৃষ্টি করে দিয়েছি৷ তুমি তাদেরকে সৎপথের দিকে যতই আহ্বান কর না কেন তারা এ অবস্থায় কখনো সৎপথে আসবে না৷
যারা বিত্তশালী হবার পরও জিহাদে যেতে চায়না ও জিহাদে খরচ করতে চায়না এবং ঘরের মহিলাদের সাথে বসে থাকার জন্য জিহাদ থেকে অব্যহতি চায় আল্লাহ তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেন : ৯:৯৩,
তারপর নূহের পর আমি বিভিন্ন পয়গম্বরকে তাদের কওমের কাছে পাঠাই এবং তারা সুষ্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে তাদের কাছে আসে৷ কিন্তু যে জিনিসকে তারা আগেই মিথ্যা বলেছিল তাকে আর মেনে নিতে প্রস্তুত হলো না৷ এভাবে আমি সীমা অতিক্রমকারীদের দিলে মোহর মেরে দেই৷-১০:৭৪,
(১১:৩৪) এখন যদি আমি তোমাদের কিছু মংগল করতে চাইও তাহলে আমার মংগলাকাংখা তোমাদের কোন কাজে লাগবে না যখন আল্লাহ নিজেই তোমাদের বিভ্রান্ত করার এরাদা করে ফেলেছেন
( অর্থাৎ আল্লাহ যদি তোমাদের হঠকারিতা, দুর্মতি এবং সদাচারে আগ্রহহীনতা দেখে এ ফায়সালা করে থাকেন যে, তোমাদের সঠিক পথে চলার সুযোগ আর দেবেন না এবং যেসব পথে তোমরা উদভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়াতে চাও সেসব পথে তোমাদের ছেড়ে দেবেন তাহলে এখন আর তোমাদের কল্যাণের জন্য আমার কোন প্রচেষ্টা সফলকাম হতে পারে না।)
(৩০-রূম: ২৯) কিন্তু এ জালেমরা না জেনে বুঝে নিজেদের চিন্তা-ধারণার পেছনে ছুটে চলছে৷ এখন আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেছেন কে তাকে পথ দেখাতে পারে? ৪১ এ ধরনের লোকদের কোন সাহায্যকারী হতে পারে না৷
৪১ . অর্থাৎ যখন কোন ব্যক্তি সহজ- সরল বুদ্ধির কথা নিজেও চিন্তা করে না এবং অন্যের বুঝাবার পরও বুঝতে চায় না তখন তাঁর বুদ্ধির ওপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হয়। এরপর এমন প্রত্যেকটি জিনিস, যা কোন নিষ্ঠাবান ও বিবেকবান ব্যক্তিকে সত্যকথা পর্যন্ত পৌঁছাতে সাহায্য করে, তা এ হঠকারী মূর্খতাপ্রিয় ব্যক্তিকে আরো বেশি গোমরাহীতে লিপ্ত করতে থাকে। এ অবস্থাটিকেই প্রকাশ করা হয়েছে "পথ ভ্রষ্টতা" শব্দের মাধ্যমে। সত্যপ্রিয় মানুষ যখন আল্লাহর কাছে সঠিক পথনির্দেশ লাভের সুযোগ চায় তখন আল্লাহ তাঁর সত্য আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী তাঁর জন্য বেশি করে সঠিক পথনির্দেশের কার্যকারণসমূহ সৃষ্টি করে দেন। আর গোমরাহী প্রিয় মানুষ যখন গোমরাহীর ওপর টিকে থাকার জন্য জোর দিতে থাকে তখন আল্লাহ তাঁর জন্য আবার এমন সব কার্যকারণ সৃষ্টি করে যেতে থাকেন যা তাকে বিপথগামী করে দিনের পর দিন সত্য থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যেতে থাকে।
(৩০-রূম: ৫৮) আমি এ কুরআনে বিভিন্নভাবে লোকদেরকে বুঝিয়েছি৷ তুমি যে কোন নিদর্শনই আনো না কেন, অবিশ্বাসীরা একথাই বলবে, তোমরা মিথ্যাশ্রয়ী৷৫৯) এভাবে যারা জ্ঞানহীন তাদের অন্তরে আল্লাহ মোহর মেরে দেন৷
(৩০-রূম: ৫২) (হে নবী!) তুমি মৃতদেরকে শুনাতে পারো না, ৭৬ এমন বধিরদেরকেও নিজের আহ্বান শুনাতে পারো না যারা মুখ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছে ৭৭ ৫৩) এবং অন্ধদেরকেও তাদের ভ্রষ্টতা থেকে বের করে সঠিক পথ দেখাতে পারো না৷ ৭৮ তুমি তো একমাত্র তাদেরকেই শুনাতে পারো যারা আমার আয়াতের প্রতি ঈমান আনে এবং আনুগত্যের শির নত করে৷
৭৬ . এখানে এমনসব লোককে মৃত বলা হয়েছে । যাদের বিবেক মরে গেছে, যাদের মধ্যে নৈতিক জীবনের ছিটেফোটাও নেই এবং যাদের আপন প্রবৃত্তির দাসত্ব , জিদ ও একগুয়েমি সেই মানবীয় গুণপনার অবসান ঘটিয়েছে যা মানুষকে হক কথা বুঝার ও গ্রহণ করার যোগ্য করে তোলে ।
৭৭ . বধির হচ্ছে এমনসব লোক যারা নিজেদের মনের দুয়ার এমনভাবে অর্গলবদ্ধ করেছে যে, সবকিছু শুনেও তারা কিছুই শুনে না। তাঁরপর এ ধরনের লোকেরা যখন এমন প্রচেষ্টাও চালায় যাতে সত্যের আহ্বানের ধ্বনি তাদের কানে পৌঁছতেই না পারে এবং আহ্বায়কদের চেহারা দেখতেই দূরে-সরে যেতে থাকে তখন আর কে তাদেরকে শুনাবে এবং কী-ই বা শুনাবে ৷
৭৮ . অর্থাৎ অন্ধদের হাত ধরে তাদেরকে সারা জীবন সঠিক পথে চালানো তো নবীর কাজ নয়। তিনি তো কেবল সঠিক পথ দেখিয়ে দিতে পারেন।কিন্তু যাদের দেখার চোখ অন্ধ হয়ে গেছে এবং নবী তাদেরকে যে পথ দেখাতে চাচ্ছেন তা যারা দেখতেই পায় না তাদেরকে পথ দেখানোর ক্ষমতা নবীর নেই।
১০: ৮৮) মুসা দোয়া করলো, হে আমাদের রব! তুমি ফেরাউন ও তার সরদারদেরকে দুনিয়ার জীবনের শোভা -সৌন্দর্য ও ধন-সম্পদ দান করেছো৷ হে আমাদের রব! একি এ জন্য যে, তারা মনুষকে তোমার পথ থেকে বিপথে সরিয়ে দেবে? হে আমাদের রব! এদের ধন-সম্পদ ধ্বংস করে দাও এবং এদের অন্তরে এমনভাবে মোহর মেরে দাও যাতে মর্মন্তুদ শাস্তি ভোগ না করা পর্যন্ত যেন এরা ঈমান না আনে , ৮৯) আল্লাহ জবাবে বললেন, ,তোমাদের দুজনের দোয়া কবূল করা হলো৷ তোমরা দুজন অবিচল থাকো এবং মুর্খতাদের পথ কখনো অনুসরণ করো না৷
যেহেতু তারা ক্রমাগত ভাবে আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার সমূহ ভঙ্গ করে যাচ্ছিল, এবং মিথ্যা বলে যাচ্ছিল, তাই আল্লাহ তাদের অন্তরে মুনাফিকী বদ্ধমুল করে দিলেন, কিয়ামত পর্যন্ত তা তাদের পিছু ছাড়বে না : ৭:৭৫-৭৭,
যখনই জিহাদের হুকুম নাযিল হয়েছে তখনই মুনাফিকরা ঘরে বসে থাকা মহিলাদের সাথে শামিল হয়ে ঘরে বসে থাকতে চেয়েছে, তাই আল্লাহর তাদের অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছেন : ৯:৮৬-৮৭,
দেখুন : ব > বিবাহ > বিবাহের ক্ষেত্রে মোহরানা।
ক্লিক করুন : বিবাহের ক্ষেত্রে মোহরানা
(২০:৩৮) (হে মূসা) সে সময়ের কথা মনে করো যখন আমি তোমার মাকে ইশারা করেছিলাম, এমন ইশারা যা অহীর মাধ্যমে করা হয়, এই মর্মে এই এ শিশুকে সিন্দুকের মধ্যে রেখে দাও এবং সিন্দুকটি দরিয়ায় ভাসিয়ে দাও, দরিয়া তাকে তীরে নিক্ষেপ করবে এবং আমার শত্রু ও এ শিশুর শত্রু একে তুলে নেবে৷৩৯) আমি নিজের পক্ষ থেকে তোমার প্রতি ভালোবাসা সঞ্চার করেছিলাম এবং এমন ব্যবস্থা করেছিলাম যাতে তুমি আমার তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হও৷৪০) স্মরণ করো, যখন তোমার বোন চলছিল, তারপর গিয়ে বললো, “আমি কি তোমাদের তার সন্ধান দেবো যে এ শিশুকে ভালোভাবে লালন করবে?”এভাবে আমি তোমাকে আবার তোমার মায়ের কাছে পৌছিয়ে দিয়েছি, যাতে তার চোখ শীতল থাকে এবং সে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ না হয়৷ এবং (এটাও স্মরণ করো) তুমি একজনকে হত্যা করে ফেলেছিলে, আমি তোমাকে এ ফাঁদ থেকে বের করেছি এবং তোমাকে বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে এসেছি, আর তুমি মাদ্য়ানবাসীদের মধ্যে কয়েক বছর অবস্থান করেছিলে৷ তারপর এখন তুমি এখন তুমি ঠিক সময়েই এসে গেছো৷ হে মূসা!
বিস্তারিত দেখুন : ম > মুহাম্মদ সা: > মুহাম্মদ সা: এর সাথে মু’মিনদের সম্পর্ক > ২। মুহাম্মদ সা: এর স্ত্রীগণ মু’মিনদের মা ।
বিস্তারিত দেখুন : ত > তালাক।
(২৯-আনকাবুত:৪১) যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে পৃষ্ঠপোষক বানিয়ে নিয়েছে তাদের দৃষ্টান্ত হলো মাকড়সা৷ সে নিজের একটি ঘর তৈরি করে এবং সব ঘরের চেয়ে বেশি দুর্বল হয় মাকড়সার ঘর৷ হায় যদি এরা জানতো! ৭৩ ৪২) এরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যে জিনিসকেই ডাকে আল্লাহ তাকে খুব ভালোভাবেই জানেন এবং তিনিই পরাক্রান্ত ও জ্ঞানী৷
৭৩ . ওপরে যতগুলো জাতির কথা বলা হয়েছে তারা সবাই শিরকে লিপ্ত ছিল। নিজেদের উপাস্যেও ব্যাপারে তাদের আকীদা ছিলঃ এরা আমাদের সহায়ক সাহায্যকারী ও পৃষ্ঠপোষক এরা আমাদের ভাগ্য ভাঙ্গা গড়ার ক্ষমতা রাখে। এদের পূজা করে এবং এদেরকে মানত ও নজরানা পেশ করে যখন আমরা এদের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করবো তখন এরা আমাদের কাজ করে দেবে এবং সব ধরনের বিপদ-আপদ থেকে আমাদের বাঁচাবে। কিন্তু যেমন ওপরের ঐতিহাসিক ঘটনাবলীতে দেখানো হয়েছে, মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে যখন তাদের ধ্বংসের ফায়সালা করা হয় তখন তাদের উপরোল্লিখিত সমস্ত আকীদা-বিশ্বাস ও ধারণা-কল্পনা ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়। সে সময় তারা যেসব দেব-দেবী, অবতার ,অলী, আত্মা, জ্বিন বা ফেরেশতাদের পূজা করতো তাদের একজনও তাদেরকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি এবং নিজেদের মিথ্যা আশার ব্যর্থতায় হতাশ হয়ে তারা মাটির সাথে মিশে গেছে। এসব ঘটনা বর্ণনা করার পর এখন মহান আল্লাহ মুশরিকদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, বিশ্ব-জাহানের প্রকৃত মালিক ও শাসনকর্তাকে বাদ দিয়ে একেবারে অক্ষম বান্দা ও সম্পূর্ণ কাল্পনিক উপাস্যদের ওপর নির্ভর করে যে আশার আকাশ কুসুম তোমরা রচনা করেছো তার প্রকৃত অবস্থা মাকড়শার জালের চাইতে বেশি কিছু নয়। মাকড়শার জাল যেমন আঙ্গুলের সামান্য একটি টোকাও বরদাশত করতে পারে না তেমনি তোমাদের আশার অট্টালিকাও আল্লাহর ব্যবস্থার সাথে প্রথম সংঘাতেই চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে। তোমরা যে কল্পনা বিলাসের এমন এক চক্করের মধ্যে পড়ে আছো, এটা নিছক তোমাদের মূর্খতার কারসাজি ছাড়া আর কিছুই নয়।সত্যের যদি সামান্যতম জ্ঞানও তোমাদের থাকতো, তাহলে তোমরা এসব ভিত্তিহীন সহায় ও নির্ভরের ওপর কখনো জীবন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে না। সত্য কেবলমাত্র এতটুকুই , এ বিশ্ব-জাহানে ক্ষমতার মালিক একমাত্র রব্বুল আলামীন ছাড়া আর কেউ নেই এবং একমাত্র তারই ওপর নির্ভও করা যেতে পারে।
----------------------------
" যে ব্যক্তি তাগুতকে (আল্লাহ বিরোধী শক্তিকে) অস্বীকার ও প্রত্যাখান করে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে সে মজবুত নির্ভরকে আঁকড়ে ধরেছে যা কখনো ছিন্ন হবার নয়। বস্তুত আল্লাহ সব কিছু শোনেন ও জানেন।" (আল বাকারাহ ২৫৬ আয়াত। )
(২০:১১১) -লোকদের মাথা চিরঞ্জীব ও চির প্রতিষ্ঠিত সত্তার সামনে ঝুঁকে পড়বে, সে সময় যে জুলুমের গোনাহের ভার বহন করবে সে ব্যর্থ হবে৷
(১৮:৬১) সে অনুসারে যখন তারা তাদের সংগমস্থলে পৌঁছে গেলো তখন নিজেদের মাছের ব্যাপারে গাফেল হয়ে গেলো এবং সেটি বের হয়ে সুড়ংগের মতো পথ তৈরি করে দরিয়ার মধ্যে চলে গেলো৷
আরো দেখুন : ১৮:৬১, ৬৩,
(বিস্তারিত দেখুন : খ > খিজির আ: এর ঘটনা )
(১৬:২০) আর আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য যেসব সত্তাকে লোকেরা ডাকে, তারা কোনো একটি জিনিসেরও স্রষ্টা নয় বরং তারা নিজেরাই সৃষ্টি৷২১) তারা মৃত, জীবিত নয় এবং তারা কিছুই জানে না তাদেরকে কবে (পুনর্বার জীবিত করে) উঠানো হবে৷
(২৭-নমল:৮০) তুমি মৃতদেরকে শুনাতে পারোনা৷
(১৮:২১) এভাবে আমি নগরবাসীদেরকে তাদের অবস্থা জানালাম, যাতে লোকেরা জানতে পারে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য এবং কিয়ামতের দিন নিশ্চিতভাবেই আসবে৷ (কিন্তু একটু ভেবে দেখো, যখন এটিই ছিল চিন্তার আসল বিষয়) সে সময় তারা পরস্পর এ বিষয়টি নিয়ে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়েছিল যে, এদের (আসহাবে কাহফ) সাথে কি করা যায়৷ কিছু লোক বললো, “এদের ওপর একটি প্রাচীর নির্মাণ করো, এদের রবই এদের ব্যাপারটি ভালো জানেন৷” কিন্তু তাদের বিষয়াবলীর ওপর যারা প্রবল ছিল তারা বললো, “আমরা অবশ্যি এদের (কবরের) ওপর একটি ইবাদাতখানা নির্মাণ করবো”৷
(ব্যাখ্যা : আসহাবে কাহাফ অর্থাৎ সেই গুহাবাসী যুবকদেরকে প্রায় তিনশত বছর পর ঘুমিয়ে রাখার পর আল্লাহ তাদেরকে আবার জাগ্রত করে দেখালেন, এটা ছিল একটা প্রমাণ, যার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ মানুষকে মৃত্যুর পর আবার জীবিত করতে পারবেন, কিন্তু এ বিষয়টি অনুধাবন না করে ঐ সময়কার কিছু কিছু লোক এটা চাইল যে, আসহাবে কাহাফের মৃতদের কবরের উপর একটি সমাধি সৌধ নির্মাণ করতে। আল্লাহ এ বিষয়টি উল্লেখ করে কবরের উপর সমাধিসৌধ বা ইবাদতখানা নির্মাণ করতে চাওয়ার সমালোচনা করেছেন। )
(হাজ্ব:৪০) .........যদি আল্লাহ লোকদেরকে একের মাধ্যমে অন্যকে প্রতিহত করার ব্যবস্থা না করতেন, তাহলে যেখানে আল্লাহর নাম বেশী করে উচ্চারণ করা হয় সেসব আশ্রম, গীর্জা, ইবাদাতখানা ৮২ ও মসজিদ ধ্বংস করে দেয়া হতো৷৮৩
(৮২. মূলে (আরবী) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। (আরবী) ও (আরবী) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। (আরবী) এমন জায়গাকে বলা হয় যেখানে খৃষ্টান রাহেব যোগী, সন্ন্যাসী, সংসার বিরাগী সাধুরা থাকেন। (আরবী) শব্দটি আরবী ভাষায় খৃষ্টানদের ইবাদাতগাহের জন্য ব্যবহার করা হয়। (আরবী) শব্দের অর্থ হচ্ছে ইহুদীদের নামায পড়ার জায়গা। ইহুদীরা নিজেদের ভাষায় একে বলে (আরবী) "সালওয়াতা"। এটি আরামীয় ভাষার শব্দ। বিচিত্র নয় যে, ইংরেজী ভাষার (Salute ও Salutation) শব্দ এর থেকে বের হয়ে প্রথম ল্যাটিন ও পরে ইংরেজী ভাষায় পৌঁছে গেছে।
৮৩. অর্থাৎ আল্লাহ কোন একটি গোত্র বা জাতিকে স্থায়ী কর্তৃত্ব দান কেরননি, এটি তাঁর বিরাট অনুগ্রহ। বরং বিভিন্ন সময় দুনিয়ায় একটি দলকে দিয়ে তিনি অন্য একটি দলকে প্রতিহত করতে থেকেছেন। নয়তো কোন এটি নির্দিষ্ট দল যদি কোথাও স্থায়ী কর্তৃত্ব লাভ করতো তাহলে শুধু দূর্গ, প্রাসাদ এবং রাজনীতি, শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানই ধ্বংস করে দেয়া হতো না বরং ইবাদাতগাহগুলোও বিধ্বস্ত হওয়ার হাত থেকে রেহাই পেতো না। সূরা বাকারায় এ বিষয়বস্তুকে এভাবে বলা হয়েছেঃ
"যদি আল্লাহ লোকদেরকে একজনের সাহায্যে অন্যজনকে প্রতিহত না করতে থাকতেন তাহলে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়ে যেতো। কিন্তু আল্লাহ দুনিয়াবাসীদের প্রতি বড়ই করুণাময়।" (২৫১ আয়াত)
(বিস্তারিত দেখুন : জ > জিহাদ > সশস্ত্র যুদ্ধের অনুমতি দেওয়ার কারণ)
(১০: ৯৩) তারপর যখন তাদের কাছে জ্ঞান এসে গেলো, তাখনই তারা পরষ্পরে মতভেদ করলো৷ নিশ্চয়ই তোমার রব কিয়ামতের দিন তাদের মধ্যে সেই জিনিসের ফায়সালা করে দেবেন, যে ব্যাপারে তারা মতভেদে লিপ্ত ছিল৷
(ব্যাখ্য : এর অর্থ হচ্ছে, পরবর্তী পর্যায়ে তারা নিজেদের দীনের মধ্যে যে দলাদলী শুরু করে এবং নতুন নতুন মাযহাব তথা ধর্মীয় চিন্তাগোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটায় তার কারণ এ ছিল না যে, তারা প্রকৃত সত্য জানতো না এবং না জানার কারণে তারা বাধ্য হয়ে এমনটি করে। বরং আসলে এসব কিছুই ছিল তাদের দুর্বৃত্তসূলভ চরিত্রের ফসল। আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদেরকে সুষ্প্ষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছিলঃ এ হচ্ছে, সত্য দীন, এ হচ্ছে তার মূলনীতি, এগুলো- এর দাবী ও চাহিদা, এগুলো হচ্ছে কুফর, ও ইসলামের পার্থক্য সীমা, একে বলে আনুগত্য। আর এর নাম হচ্ছে গোনাহ, এসব জিনিসের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে জবাবদিহে করতে হবে এবং এসব নিয়মনীতির ভিত্তিতে দুনিয়ায় তোমাদের জীবন প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। কিন্তু এ সুষ্পষ্ট হেদায়াত সত্ত্বেও তারা একটি দীনকে অসংখ্য দীনে পরিণত করে এবং আল্লাহর দেয়া বুনিয়াদগুলো বাদ দিয়ে অন্য বুনিয়াদের ওপর নিজেদের ধর্মীয় ফেরকার প্রসাদ নির্মাণ করে।)
(১৮:৫২) তাহলে সেদিন এরা কি করবে যেদিন এদের রব এদেরকে বলবে, ডাকো সেই সব সত্তাকে যাদেরকে তোমরা আমার শরীক মনে করে বসেছিলে ? এরা তাদেরকে ডাকবে কিন্তু তারা এদেরকে সাহায্য করতে আসবে না এবং আমি তাদের মাঝখানে একটি মাত্র ধ্বংস গহ্বর তাদের সবার জন্য বানিয়ে দেবো৷
gvm :
Avjøvn hLb †_‡K c„w_ex I AvKvk m„wó K‡i‡Qb ZLb †_‡KB gv‡mi msL¨v ev‡iv P‡j Avm‡Q, Ges nvivg gv‡mi msL¨v 4 wU (wRjK¡`, wRjnR¡, gniig I iRe gv‡m hy× Kiv mvaviYZ: wbwl×) : 9:36, 2:194, nvivg gvm mg~n‡K (bvmx-‡K) wcwQ‡q †`qv Kzdixi Ici Av‡iKwU Kzdix :9:37,
মাস :
(১৭:১২) দেখো, আমি রাত ও দিনকে দুটি নিদর্শন বানিয়েছি৷ রাতের নিদর্শনকে বানিয়েছি আলোহীন এবং দিনের নিদর্শনকে করেছি আলোকোজ্জ্বল, যাতে তোমরা তোমাদের রবের অনুগ্রহ তালাশ করতে পারো এবং মাস ও বছরের হিসেব জানতে সক্ষম হও৷ এভাবে আমি প্রত্যেকটি জিনিসকে আলাদাভাবে পৃথক করে রেখেছি৷
(২০:৮০) হে বনী ইসরাঈল! আমি তোমাদের শত্রুদের হাত থেকে তোমাদের মুক্তি দিয়েছি, এবং তূরের ডান পাশে তোমাদের উপস্থিতির জন্য সময় নির্ধারণ করেছি আর তোমাদের প্রতি মান্না ও সালওয়া অবতীর্ণ করেছি
(১৯:২৬) তারপর তুমি খাও, পান করো এবং নিজের চোখ জুড়াও৷ তারপর যদি তুমি মানুষের দেখা পাও তাহলে তাকে বলে দাও, আমি করুণাময়ের জন্য রোযার মানত মেনেছি, তাই আজ আমি কারোর সাথে কথা বলবো না”৷
(হাজ্ব:২৯) তারপর নিজেদের ময়লা দূর করে, নিজেদের মানত পূর্ণ করে।
হে লোকেরা! তোমাদের কাছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে নসীহত এসে গেছে৷ এটি এমন জিনিস যা অন্তরের রোগের নিরাময়-১০:৫৭
হে লোকেরা! তোমাদের কাছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে নসীহত এসে গেছে৷ এটি এমন জিনিস যা অন্তরের রোগের নিরাময়-১০:৫৭
(১৫:৯৭) আমি জানি, এরা তোমার সম্বন্ধে যেসব কথা বানিয়ে বলে তাতে তুমি মনে ভীষণ ব্যথা পাও৷ ৯৮) এর প্রতিকার এই যে, তুমি নিজের রবের প্রশংসা সহকারে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করতে থাকো, তাঁর সকাশে সিজ্দাবনত হও ৯৯) এবং যে চূড়ান্ত সময়টি আসা অবধারিত সেই সময় পর্যন্ত নিজের রবের বন্দেগী করে যেতে থাকো৷
(১৭:৮৮) বলে দাও, যদি মানুষ ও জিন সবাই মিলে কুরআনের মতো কোনো একটি জিনিস আনার চেষ্টা করে তাহলে তারা আনতে পারবে না, তারা পরস্পরের সাহায্যকারী হয়ে গেলেও৷
(১১:১১৯)আর তোমার রবের একথা পূর্ণ হয়ে গেছে যা তিনি বলেছিলেন- “আমি জাহান্নামকে জিন ও মানুষ উভয়কে দিয়ে ভরে দেবো৷”
(১৭:৮৩) মানুষের অবস্থা হচ্ছে এই যে, যখন আমি তাকে নিয়ামত দান করি তখন সে গর্ব করে ও পিঠ ফিরিয়ে নেয় এবং যখন সামান্য বিপদের মুখোমুখি হয় তখন হতাশ হয়ে যেতে থাকে৷
(১৭:৮৫) ..কিন্তু তোমরা সামান্য জ্ঞানই লাভ করেছো।
(১৮:৪৭) ..আর আমি সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে এমনভাবে ঘিরে এনে একত্র করবো যে, (পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের মধ্য থেকে) একজনও বাকি থাকবে না৷
(১৭:৭০) এতো আমার অনুগ্রহ, আমি বনী আদমকে মর্যাদা দিয়েছি এবং তাদেরকে জলে স্থলে সওয়ারী দান করেছি, তাদেরকে পাক-পবিত্র জিনিস থেকে রিযিক দিয়েছি এবং নিজের বহু সৃষ্টির ওপর তাদেরকে সুস্পষ্ট প্রাধান্য দিয়েছি৷
(১২:১৯) ওদিকে একটি কাফেলা এলো৷ তারা তাদের পানি সংগ্রাহককে পানি নেবার জন্য পাঠালো৷ সে কূয়ার মধ্যে পানির ডোল নামিয়ে দিল৷ সে (ইউসুফকে দেখে) বলে উঠলো, “কী সুখবর! এখানে তো দেখছি একটি বালক৷” তারা তাকে পণ্য দ্রব্য হিসেবে লুকিয়ে ফেললো৷ অথচ তারা যা কিছু করছিল সে সম্পর্কে আল্লাহ অবহিত ছিলেন৷ ২০) শেষে তারা তাকে সামান্য দামে কয়েক দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করে দিল৷ আর তার দামের ব্যাপারে তারা বেশী আশা করছিল না৷
এখন তাদের (পূর্ববর্তী বহু অসৎ জাতির ) পরে আমি পৃথিবীতে তোমাদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করেছি , তোমরা কেমন আচরণ করো তা দেখার জন্য – ১০:১৪,
শুরুতে সমস্ত মানুষ ছিল একই জাতি৷ পরবর্তীকালে তারা বিভিন্ন আকীদা-বিশ্বাস ও মত পথ তৈরী করে নেয়৷ আর যদি তোমর রবের পক্ষ থেকে আগেভাগেই একই কথা স্থিরীকৃত না হতো তাহলো যে বিষয়ে তারা পরষ্পর মতবিরোধ করেছে তার মীমাংসা হয়ে যেতো : ১০:১৯,
আসলে মানুষ বড়ই বে-ইনসাফ ও অকৃতজ্ঞ৷ -১৪:৩৪,
মানুষ সত্যিই বড়ই অকৃতজ্ঞ৷ – ১৭:৬৭,
(হাজ্ব:৬৬) ...সত্য বলতে কি, মানুষ বড়ই সত্য অস্বীকারকারী৷
(১৭:৮৫) এরা তোমাকে রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করছে৷ বলে দাও, “এ রূহ আমার রবের হুকুমে আসে কিন্তু তোমরা সামান্য জ্ঞানই লাভ করেছো৷
(১৬:৪) তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন ছোট্ট একটি ফোঁটা থেকে৷ তারপর দেখতে দেখতে সে এক কলহপ্রিয় ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছে৷
(১৮:৫৪) আমি এ কুরআনে লোকদেরকে বিভিন্নভাবে বুঝিয়েছি কিন্তু মানুষ বড়ই বিবাদপ্রিয়৷
(১৭:১১) মানুষ অকল্যাণ কামনা করে সেভাবে-যেভাবে কল্যাণ কামনা করা উচিত....।
(১৭:১১) ... মানুষ বড়ই দ্রুতকামী৷
(২১:৩৭) মানুষ দ্রুততাপ্রবণ সৃষ্টি৷
(১৭:১০০) ..যদি আমার রবের রহমতের ভাণ্ডার তোমাদের অধীনে থাকতো তাহলে তোমরা ব্যয় হয়ে যাবার আশংকায় নিশ্চিতভাবেই তা ধরে রাখতে৷ সত্যিই মানুষ বড়ই সংকীর্ণমনা৷
(৩৩-আহযাব: ৭২) আমি এ আমানতকে আকাশসমূহ, পৃথিবী ও পর্বতরাজির ওপর পেশ করি, তারা একে বহন করতে রাজি হয়নি এবং তা থেকে ভীত হয়ে পড়ে৷ কিন্তু মানুষ একে বহন করেছে, নিসন্দেহে সে বড় জালেম ও অজ্ঞ৷১২০ ৭৩) এ আমানতের বোঝা উঠাবার অনির্বায ফল হচ্ছে এই যে, আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ ও নারী এবং মুশরিক পুরুষ ও নারীদেরকে সাজা দেবেন এবং মু’মিন পুরুষ ও নারীদের তাওবা কবুল করবেন, আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়৷
(ব্যখ্যার জন্য দেখুন : আ > আমানত > আমনত কে খিলাফত বলা হয়েছে )
ক্লিক করুন : আমানত” শব্দের অর্থ যেখানে খিলাফত
আর তোমরা রবের পক্ষ থেকে তোমার প্রতি যাকিছু নাযিল হয়েছে তা প্রকৃত সত্য কিন্তু (তোমার কওমের) অধিকাংশ লোক তা বিশ্বাস করে না৷-১৩:১,
(৩০-রূম:৬) আল্লাহ এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, আল্লাহ কখনো নিজের প্রতিশ্রুতির বিরুদ্ধাচরণ করেন না৷ কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না৷
(২৭.নামল:৭৩) .আসলে তোমার রব তো মানুষের প্রতি বড়ই অনুগ্রহ কারী৷ কিন্তু অধিকাংশ লোক শোকর গুজারি করে না৷
(৩০-রূম: ৮) .....কিন্তু অনেকেই তাদের রবের সাক্ষাতে বিশ্বাস করে না৷ ৭
৭ . অর্থাৎ মৃত্যুর পর নিজের রবের সামনে হাজির হতে হবে, একথা বিশ্বাস করে না।
(৩০-রূম: ৭) লোকেরা দুনিয়ায় কেবল বাহ্যিক দিকটাই জানে এবং আখেরাত থেকে তারা নিজেরাই গাফেল৷ ৪
৪ . অর্থাৎ যদিও আখেরাতের প্রমাণ পেশ করার মত বহু সাক্ষ্য ও নিদর্শন রয়েছে এবং সেগুলো থেকে গাফিল হবার কোন যুক্তি সঙ্গত কারণ নেই। তবুও এরা নিজেরাই গাফিল থেকেছে। অন্য কথায় এটা তাদের নিজেদের ত্রুটি । দুনিয়ার জীবনের এই বাহ্যিক পর্দার উপর দৃষ্টি নিবন্ধ করে তারা বসে রয়েছে । এর পিছনে যা কিছু আসছে সে সম্পর্কে তারা কিছুই জানেনা। নয় তো আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদেরকে জানাবার ব্যাপারে কোন প্রকার ত্রুটি করা হয়নি।
(হাজ্ব:৫) ......এবং কাউকে হীনতম বয়সের দিকে ফিরিয়ে দেয়া হয়, যাতে সবকিছু জানার পর আবার কিছুই না জানে৷
(অর্থাৎ এমন বৃদ্ধাবস্থা যখন মানুষের নিজের শরীরের ও অংগ-প্রত্যংগের কোন খোঁজ-খবর থাকে না। যে ব্যক্তি অন্যদেরকে জ্ঞান দিতো বুড়ো হয়ে সে এমন অবস্থায় পৌঁছে যায়, যাকে শিশুদের অবস্থার সাথে তুলনা করা যায়। যে জ্ঞান, জানা শোনা, অভিজ্ঞাতা ও দুরদর্শিতা ছিল তার গর্বের বস্তু তা এমনই অজ্ঞতায় পরিবর্তিত হয়ে যায় যে, একটি ছোট ছেলেও তার কথায় হাসতে থাকে।)
(৩০-রূম: ৫৪) আল্লাহই দুর্বল অবস্থা থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেন তাঁরপর এ দুর্বলতাঁর পরে তোমাদের শক্তি দান করেন, এ শক্তির পরে তোমাদেরকে আবার দুর্বল ও বৃদ্ধ করে দেন, তিনি যা চান সৃষ্টি করেন৷ ৭৯ আর তিনি সবকিছু জানেন, সব জিনিসের ওপর তিনি শক্তিশালী৷
৭৯ . অর্থাৎ শৈশব, যৌবন ও বার্ধক্য। এসব অবস্থা তাঁরই সৃষ্ট। তিনি যাকে চান দুর্বল করে সৃষ্টি করেন, যাকে চান তাকে শক্তিশালী করেন, যাকে চান তাকে শৈশব থেকে যৌবনে পদার্পণ করতে দেন না, যাকে চান তাকে যৌবনে মৃত্যু দান করেন, যাকে চান তাকে দীর্ঘ বয়স দান করার পরও সুস্থ সবল রাখেন, যাকে চান তাকে গৌরবান্বিত যৌবনকালের পরে বার্ধক্যে এমন কষ্টকর পরিণতির দান করেন যার ফলে দুনিয়াবাসী শিক্ষালাভ করে, এসবই তাঁর ইচ্ছা। মানুষ নিজের জায়গায় বসে যতই অহংকারে মত্ত হয়ে উঠুক না কেন আল্লাহর শক্তির শৃঙ্খলে সে এমনভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা যে, আল্লাহ তাকে যে অবস্থায়ই রাখুন না কেন তাঁর মধ্যে কোন পরিবর্তন আনা তাঁর পক্ষে কোনক্রমেই সম্ভবপর নয়।
দেখুন : স > সৃষ্টি > মানুষ সৃষ্টি :
(৩২- আস-সাজদা : ৯) তারপর তাকে সর্বাঙ্গ সুন্দর করেছেন এবং তার মধ্যে নিজের রূহ ফুঁকে দিয়েছেন , ১৬ আর তোমাদের কান, চোখ ও হৃদয় দিয়েছেন, তোমরা খুব কমই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো৷
১৬ . রূহ বলতে নিছক যে জীবন প্রবাহের বদৌলতে একটি জীবের দেহ যন্ত্র সচল ও সক্রিয় হয় তাকে বুঝানো হয়নি। বরং এমন বিশেষ সার সত্তা ও সার উপাদান বুঝানো হয়েছে যা চিন্তা, চেতনা, বুদ্ধি, বিবেক , সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও স্বাধীন ক্ষমতার অধিকারী হয় এবং যার বদৌলতে মানুষ পৃথিবীর অন্য সমস্ত সৃষ্টি থেকে পৃথক একটি ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন, অহংবোধের অধিকারী এবং প্রতিনিধিত্ব ক্ষমতা সম্পন্ন সত্তার পরিণত হয়। এ রূহ কে মহান আল্লাহ নিজের রূহ এ অর্থে বলেছেন যে, তা তারই মালিকানাধীন এবং তার পবিত্র সত্তার সাথে তাকে সম্পর্কিত করণ ঠিক তেমনি ধরনের যেমন একটি জিনিস তার মালিকের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে তার জিনিস হিসেবে আখ্যায়িত হয়। অথবা এর অর্থ হচ্ছে , মানুষের মধ্যে জ্ঞান, চিন্তা চেতনা, ইচ্ছা, সংকল্প, সিদ্ধান্ত ইখতিয়ার এবং এ ধরনের আরো যেসব গুণাবলীর উদ্ভব হয়েছে এসবই মহান আল্লাহর গুণাবলীর প্রতিচ্ছায়া। বস্তুর কোন যৌগিক উপাদান এদের উৎস নয় বরং এদের উৎস হচ্ছে আল্লাহর সত্তা। আল্লাহর তত্ত্বজ্ঞান থেকে সে জ্ঞান লাভ করেছে। আল্লাহর প্রজ্ঞা থেকে সে লাভ করেছে জ্ঞানবত্তা ও বিচক্ষণতা । আল্লাহর ক্ষমতা থেকে সে লাভ করেছে স্বাধীন ক্ষমতা। এসব গুণাবলী মানুষের মধ্যে কোন অজ্ঞান, নির্বোধ ও অক্ষম উৎস থেকে আসেনি। (আরো বেশি ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, সূরা আল হিজর , ১৭ ও ১৯ টীকা।)
(৩২- আস-সাজদা : ৯) তারপর তাকে সর্বাঙ্গ সুন্দর করেছেন এবং তার মধ্যে নিজের রূহ ফুঁকে দিয়েছেন , আর তোমাদের কান, চোখ ও হৃদয় দিয়েছেন, তোমরা খুব কমই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো৷ ১৮
১৮ . অর্থাৎ এ মহান মর্যাদাসম্পন্ন মানবিক রূহ এত উন্নত পর্যায়ের গুণাবলী সহকারে তোমাকে তো এ জন্য দেয়া হয়নি যে, তুমি দুনিয়ায় পশুদের মতো অবস্থান করবে এবং পশুরা নিজেদের জীবনের যে চিত্র তৈরি করতে পারে তুমি তোমার জীবনের জন্য তেমনি ধরনের একটি চিত্র তৈরি করে নেবে। এ চোখ দু'টি তোমাকে দেয়া হয়েছিল অন্তরদৃষ্টি দিয়ে দেখার জন্য , অন্ধ হয়ে থাকার জন্য দেয়া হয়নি। এ কান দুটি তোমাকে দেয়া হয়েছিল পূর্ণ মনোযোগ সহকারে শোনার জন্য, বধির হয়ে বসে থাকার জন্য নয়। এ জন্য দেয়া হয়নি যে, তোমার সমস্ত যোগ্যতা কেবলমাত্র নিজের পাশবিক প্রবৃত্তি লালনের উপকরণ সংগ্রহে ব্যয় করবে এবং এর চাইতে যদি কিছুটা ওপরে ওঠো তাহলে নিজের স্রষ্টার বিরূদ্ধে বিদ্রোহের দর্শন ও কর্মসূচি তৈরি করতে লেগে যাবে। আল্লাহর কাছ থেকে এ মহামূল্যবান নিয়ামত লাভ করার পর যখন তুমি নাস্তিক্যবাদ বা শিরকের পথ অবলম্বন করো, যখন তুমি নিজেই খোদা বা অন্য খোদাদের বান্দা হয়ে বসো, যখন তুমি প্রবৃত্তির দাস হয়ে দেহ ও কামনার ভোগ-লালসায় ডুবে থাকো তখন যেন নিজের খোদাকে একথা বলো যে, আমি এসব নিয়ামতের যোগ্য ছিলাম না, আমাকে মানুষ সৃষ্টি না করে একটি বানর, নেকড়ে, কুমীর বা কাক হিসেবে সৃষ্টি করা উচিত ছিল।
(হাজ্ব:৫) ......এবং কাউকে হীনতম বয়সের দিকে ফিরিয়ে দেয়া হয়, যাতে সবকিছু জানার পর আবার কিছুই না জানে৷
(অর্থাৎ এমন বৃদ্ধাবস্থা যখন মানুষের নিজের শরীরের ও অংগ-প্রত্যংগের কোন খোঁজ-খবর থাকে না। যে ব্যক্তি অন্যদেরকে জ্ঞান দিতো বুড়ো হয়ে সে এমন অবস্থায় পৌঁছে যায়, যাকে শিশুদের অবস্থার সাথে তুলনা করা যায়। যে জ্ঞান, জানা শোনা, অভিজ্ঞাতা ও দুরদর্শিতা ছিল তার গর্বের বস্তু তা এমনই অজ্ঞতায় পরিবর্তিত হয়ে যায় যে, একটি ছোট ছেলেও তার কথায় হাসতে থাকে।)
(২০:১১৬) স্মরণ করো সে সময়ের কথা যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম, আদমকে সিজদা করো, তারা সবাই সিজদা করলো কিন্তু একমাত্র ইবলীস অস্বীকার করে বসলো৷১১৭) এ ঘটনায় আমি আদমকে বললাম, “দেখো, এ তোমার ও তোমার স্ত্রীর শত্রু, এমন যেন না হয় যে, এ তোমাদেরকে জান্নাত থেকে বের করে দেয় এবং তোমরা বিপদে পড়ে যাও৷১১৮) এখানে তো তুমি এ সুবিধে পাচ্ছো যে, তুমি না অভুক্ত ও উলংগ থাকছো ১১৯) এবং না পিপাসার্ত ও রৌদ্রক্লান্ত হচ্ছো৷
বিস্তারিত দেখুন : ন > নবী > নবীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সমূহ ।
(২৬.শুআরা:১৮৬) এবং তুমি আমাদের মতো মানুষ ছাড়া আর কিছুই নও৷
(মু’মিনুন:৩৩) তার সম্প্রদায়ের যেসব সরদার ঈমান আনতে অস্বীকার করেছিল এবং আখেরাতের সাক্ষাতকারকে মিথ্যা বলেছিল, যাদেরকে আমি দুনিয়ার জীবনে প্রাচুর্য দান করেছিলাম, তারা বলতে লাগলো , ‘‘এ ব্যক্তি তোমাদেরই মতো একজন মানুষ ছাড়া আর কিছুই নয়৷ তোমরা যা কিছু খাও তা-ই সে খায় এবং তোমরা যা কিছু পান করো তা-ই সে পান করে ৷৩৪) এখন যদি তোমরা নিজেদেরই মতো একজন মানু্ষের আনুগত্য করো তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷
(মু’মিনুন:২৪) তার সম্প্রদায়ের যেসব সরদার তার কথা মেনে নিতে অস্বীকার করলো তারা বলতে লাগলো, ‘‘এ ব্যক্তি আর কিছুই নয় কিন্তু তোমাদেরই মতো একজন মানুষ৷ এর লক্ষ্য হচ্ছে তোমাদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা৷ আল্লাহ পাঠাতে চাইলে ফেরেশতা পাঠাতেন ৷ একথা তো আমরা আমাদের বাপদাদাদের আমলে কখনো শুনিনি (যে,মানুষ রসূল হয়ে আসে) ৷
(মানুষ নবী হতে পারে না এবং নবী মানুষ হতে পারে না, এ চিন্তাটি সর্বকালের পথভ্রষ্ট লোকদের একটি সম্মিলিত ভ্রান্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। কুরআন বারবার এ জাহেলী ধারণাটির উল্লেখ করে এর প্রতিবাদ করেছে এবং পুরোপুরি জোর দিয়ে একথা বর্ণনা করেছে যে, সকল নবীই মানুষ ছিলেন এবং মানুষদের জন্য মানুষের নবী হওয়া উচিত। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, আল আরাফ, ৬৩-৬৯; ইউনুস, ২; হূদ ২৭-৩১; ইউসুফ, ১০৯; আর রা'দ, ৩৮; ইবরাহীম, ১০-১১; আন নাম্ল, ৪৩; বনী ইসরাঈল, ৯৪-৯৫; আল কাহাফ, ১১০; আল আম্বিয়া ৩-৩৪; আল মু'মিনূন, ৩৩-৩৪ ও ৪৭; আল ফুরকান, ৭-২০; আশ্শুআরা, ১৫৪-১৮৪; ইয়াসীন, ১৫ ও হা-মীম আস্ সাজ্দাহ, ৬ আয়াত)
(২৬.শুআরা:১৫৪) তুমি আমাদের মতো একজন মানুষ ছাড়া আর কি? কোন নিদর্শন আনো, যদি তুমি সত্যবাদী হয়ে থাকো৷
(১৮:১১০) হে মুহাম্মাদ! বলো, আমি তো একজন মানুষ তোমাদেরই মতো, আমার প্রতি অহী করা হয় এ মর্মে যে, এক আল্লাহ তোমাদের ইলাহ,
(২১:৪) আর জালেমরা পরস্পরের মধ্যে কানাকানি করে যে, “এ ব্যক্তি মূলত তোমাদের মতোই একজন মানুষ ছাড়া আর কি, তাহলে কি তোমরা দেখে শুনে যাদুর ফাঁদে পড়বে ?
(২১:৭) আর হে মুহাম্মাদ! তোমার পূর্বেও আমি মানুষদেরকেই রসূল বানিয়ে পাঠিয়েছিলাম, যাদের কাছে আমি অহী পাঠাতাম৷ তোমরা যদি না জেনে থাকো তাহলে আহলে কিতাবদেরকে জিজ্ঞেস করো৷৮) সেই রসূলদেরকে আমি এমন দেহবিশিষ্ট করিনি যে, তারা খেতো না এবং তারা চিরজীবিও ছিল না৷ ৯) তারপর দেখে নাও আমি তাদের সাথে আমার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছি এবং তাদেরকে ও যাকে যাকে আমি চেয়েছি রক্ষা করেছি এবং সীমালংঘনকারীদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছি৷
(হাজ্ব:৭৫) আসলে আল্লাহ (নিজের ফরমান পাঠাবার জন্য) ফেরেশতাদের মধ্য থেকেও বাণীবাহক বাছাই করেন এবং মানুষদের মধ্য থেকেও৷ তিনি সবকিছু শোনেন ও দেখেন৷
(মু’মিনুন:৪৭) তারা (ফেরাউন ও তার দলবল) বলতে লাগলো, ‘‘আমরা কি আমাদেরই মতো দু’জন মানুষের প্রতি ঈমান আনবো? আর তারা আবার এমন লোক যাদের সম্প্রদায় আমাদের দাস ?৷’’
(আরো দেখুন : ন > নবী > নবীগণের বিরুদ্ধে কাফিরদের অভিযোগ > নবী রাসুলগণ মানুষ ছিলেন কেন ?)
(হাজ্ব:৭৫) আসলে আল্লাহ (নিজের ফরমান পাঠাবার জন্য) ফেরেশতাদের মধ্য থেকেও বাণীবাহক বাছাই করেন এবং মানুষদের মধ্য থেকেও৷ তিনি সবকিছু শোনেন ও দেখেন৷
(আরো দেখুন : ন > নবী > নবীগণের বিরুদ্ধে কাফিরদের অভিযোগ > নবী রাসুলগণ মানুষ ছিলেন কেন ?)
(২১:৮৯) আর যাকারিয়ার কথা (স্মরণ করো), যখন সে তার রবকে ডেকে বলেছিল : “হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একাকী ছেড়ে দিয়ো না এবং সবচেয়ে ভালো উত্তরাধিকারী তো তুমিই৷” ৯০) কাজেই আমি তার দোয়া কবুল করেছিলাম এবং তাকে ইয়াহ্ইয়া দান করেছিলাম, আর তার স্ত্রীকে তার জন্য যোগ্য করে দিয়েছিলাম৷ ৮৬ তারা সৎকাজে আপ্রাণ চেষ্টা করতো, আমাকে ডাকতো আশা ও ভীতি সহকারে এবং আমার সামনে ছিল অবনত হয়ে৷৮৭
(৮৬. ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা আলে ইমরান ৩৭ থেকে ৪১ আয়াত টীকা সহ, সূরা মার্য়াম ২ থেকে ১৫ আয়াত টীকাসহ। স্ত্রীকে যোগ্য করে দেয়ার অর্থ হচ্ছে, তার বন্ধ্যাত্ব দূর করে দেয়া এবং বার্ধক্য সত্ত্বেও তাকে গর্ভধারণের উপযোগী করা। "সবচেয়ে ভালো উত্তরাধিকারী তুমিই" মানে হচ্ছে, তুমি সন্তান না দিলে কোন দুঃখ নেই। তোমার পবিত্র সত্তা-উত্তরাধিকারী হবার জন্য যথেষ্ট।
৮৭. এই প্রেক্ষাপটে যে উদ্দেশ্যে নবীদের উল্লেখ করা হয়েছে তা আবার স্মৃতিপটে জাগিয়ে তুলুন। হযরত যাকারিয়ার (আ) ঘটনা উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে একথা হৃদয়ংগম করানো যে, এসকল নবীই ছিলেন নিছক বান্দা ও মানুষ ইলাহী সার্বভৌমত্বের সামান্যতম গন্ধও তাদের মধ্যে ছিল না। তারা অন্যদেরকে সন্তান দান করতেন না বরং নিজেরাই আল্লাহর সামনে সন্তানের জন্য হাত পাততেন। হযরত ইউনুসের কথা এ জন্য বলা হয়েছে যে, একজন মহিমান্বিত নবী হওয়া সত্ত্বেও যখন তিনি ভুল করে বসলেন তখন তাকে পাকড়াও করা হলো এবং যখন তিনি নিজের রবের সামনে অবনত হলেন তখন তাঁর প্রতি অনুগ্রহও এমনভাবে করা হয়েছে যে, মাছের পেট থেকে তাঁকে জীবিত বের করে আনা হয়েছে। হযরত আইয়ুবের উল্লেখ এ জন্য করা হয়েছে যে, নবীর বিপদে পড়া কোন অভিনব ব্যাপার নয় এবং নবীও যখন বিপদে পড়েন তখন একমাত্র আল্লাহরই সামনে ত্রাণের জন্য হাত বাড়িয়ে দেন। তিনি অন্যের ত্রাণকারী নন বরং আল্লাহর কাছে ত্রাণ ভিক্ষাকারী। তারপর এসব কথার সাথে সাথে একদিকে এ সত্যটি মনে বদ্ধমূল করতে চাওয়া হয়েছে যে, এ সকল নবীই ছিলেন তাওহীদের প্রবক্তা এবং নিজেদের প্রয়োজন তাঁরা এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো সামনে পেশ করতেন না আবার অন্যদিকে একথাও বুঝিয়ে দেয়া কাম্য যে, আল্লাহ হামেশা অস্বাভাবিকভাবে নিজের নবীদেরকে সাহায্য করতে থেকেছেন। শুরুতে তাঁর যতই পরীক্ষার সম্মুখীন হোন না কেন শেষ পর্যন্ত অলৌকিক পদ্ধতিতে তাঁদের প্রার্থনা পূর্ণ হয়েছে।)
মানুষের জন্য এটা কি একটা আশ্চর্যের ব্যাপার হয়ে গেছে যে, আমি তাদেরই মধ্যে থেকে একজনকে নির্দেশ দিয়েছি (গাফলতিতে ডুবে থাকা) লোকদেরকে সজাগ করে দাও এবং যারা মেনে নেবে তাদেরকে এ মর্মে সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য রয়েছে তাদের রবের কাছে যথার্থ সম্মান ও মর্যাদা? (একথায় ভিত্তিতেই কি) অস্বীকারকারীরা বলেছে, এ ব্যক্তি তো একজন সুষ্পষ্ট যাদুকর? -১০:০২
(১৬:৪৩) হে মুহাম্মাদ ! তোমার আগে আমি যখনই রসূল পাঠিয়েছি, মানুষই পাঠিয়েছি, যাদের কাছে আমি নিজের অহী প্রেরণ করতাম৷ যদি তোমরা নিজেরা না জেনে থাকো তাহলে বাণীওয়ালাদেরকে জিজ্ঞেস করো৷
(১৭:৯৩) ” হে মুহাম্মাদ ! এদেরকে বলো, পাক-পবিত্র আমার পরওয়ারদিগার, আমি কি একজন বাণীবাহক মানুষ ছাড়া অন্য কিছু।
দেখুন : আ > আলেমুল গায়েব > নবীগণ আলেমুল গায়েব ছিলেন না।
(২১:১০) হে লোকেরা ! আমি তোমাদের প্রতি এমন একটি কিতাব অবতীর্ণ করেছি যার মধ্যে তোমাদেরই কথা আছে, তোমরা কি বুঝ না ?
(মু’মিনুন:৩৪) এখন যদি তোমরা নিজেদেরই মতো একজন মানু্ষের আনুগত্য করো তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷
(২০:১২০) কিন্তু শয়তান তাকে কুমন্ত্রণা দিল, বলতে থাকলো, “হে আদম! তোমাকে কি এমন গাছের কথা বলে দেবো যা থেকে অনন্ত জীবন ও অক্ষয় রাজ্য লাভ করা যায়?১২১) শেষ পর্যন্ত দু’জন (স্বামী-স্ত্রী) সে গাছের ফল খেয়ে বসলো৷ ফলে তখনই তাদের লজ্জাস্থান পরস্পরের সামনে প্রকাশ হয়ে পড়লো এবং দু’জনাই জান্নাতের পাতা দিয়ে নিজেকে ঢাকতে লাগলো৷ আদম নিজের রবের নাফরমানী করলো এবং সে সঠিক পথ থেকে সরে গেল৷*
(*এখানে আদম আলাইহিস সালামের মাধ্যমে যে মানবিক দুর্বলতার প্রকাশ ঘটেছিল তার প্রকৃত স্বারূপ অনুধাবন করা উচিত। তিনি আল্লাহকে নিজের স্রষ্টা ও রব বলে জানতেন এবং অন্তর দিয়ে তা মানতেন। জান্নাতে তিনি যেসব জীবনোপকরণ লাভ করেছিলেন সেগুলো সব সময় তার সামনে ছিল। শয়তানের হিংসা ও শত্রুতার জ্ঞানও তিনি সরাসরি লাভ করেছিলেন। আল্লাহ তাঁকে হুকুম দেবার সাথে সাথেই বলে দিয়েছিলেন, এ হচ্ছে তোমার শত্রু, তোমাকে নাফরমানী করতে উদ্ধুদ্ধ করার চেষ্টা করবে ফলে এজন্য তোমাকে এ ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। শয়তান তাঁর সামনে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল যে, আমি তাকে পথভ্রষ্ট করবো এবং তার শিকড় উপড়ে ফেলবো। এসব সত্ত্বেও শয়তান যখন তার সামনে স্নেহশীল উপদেশ দাতা ও কল্যাণকামী বন্ধুর বেশে এসে তাঁকে একটি অপেক্ষাকৃত উন্নত অবস্থার (চিরন্তন জীবন ও অন্তহীন শাসন কর্তৃত্ব ) লোভ দেখালো তখন তার লোভ দেখানোর মোকাবিলায় তিনি নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারলেন না। তার পা পিছলে গেলো। অথচ এখানে আল্লাহর প্রতি তাঁর বিশ্বাসে কোন পার্থক্য দেখা দেয়নি। এবং তাঁর ফরমান আদৌ বিশ্বাসযোগ্য নয়, এ ধরনের কোন ভাবনাও তার মনে জাগেনি। শয়তানী লালসাবৃত্তির আওতাধীনে যে একটি তাৎক্ষণিক আবেগ তাঁর মধ্যে সৃষ্টি হয়েছিল তা তাঁকে ভুলের মধ্যে নিক্ষেপ করলো এবং আত্মসংযমের বাঁধন ঢিলে হবার সাথে সাথেই তিনি আনুগত্যের উন্নত স্থান থেকে গোনাহের নিম্নপংকে নেমে গেলেন। এ "ভুল" ও সংকল্প বিহীনতার উল্লেখ কাহিনীর শুরুতেই করা হয়েছিল। এ আয়াতের শুরুতে এরি ফলশ্রুতি হিসেবে নাফরমানী ও ভ্রষ্টতার কথা বলা হয়েছে। সৃষ্টির সূচনাতেই মানুষের এ দুর্বলতার প্রকাশ ঘটেছিল এবং পরবর্তীতে এমন কোন যুগ আসেনি যখন তার মধ্যে এ দুর্বলতা পাওয়া যায়নি।)
(৩২- আস-সাজদা : ১৩) (জবাবে বলা হবে ) “ যদি আমি চাইতাম তাহলে পূর্বাহ্নেই প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার হিদায়াত দিয়ে দিতাম৷ কিন্তু আমার সে কথা পূর্ণ হয়ে গেছে, যা আমি বলেছিলাম যে, আমি জাহান্নাম জিন ও মানুষ দিয়ে ভরে দেবো৷ ২৪
২৪ . মহান আল্লাহ আদম সৃষ্টির সময় ইবলিসকে সম্বোধন করে যে উক্তি করেছিলেন সেদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। সূরা সাদের শেষ রূকুতে সে সময়ের পুরো ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে । ইবলিস আদমকে সিজদাহ করতে অস্বীকার করে এবং আদমের বংশধরদেরকে পথভ্রষ্ট করার জন্য কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের অবকাশ চায়। জবাবে আল্লাহ বলেন
----------------------------
"কাজেই এ হচ্ছে সত্য এবং আমি সত্যই বলি যে, আমি জাহান্নাম ভরে দেবো তোমার এবং মানুষদের মধ্য থেকে যারা তোমার অনুসরণ করবে তাদের দ্বারা। "
'আজমাঈন' শব্দটি এখানে এ অর্থে ব্যবহার করা হয়নি যে, সকল জিন ও সমস্ত মানুষকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। বরং এর অর্থ হচ্ছে, শয়তানরা এবং শয়তানদের অনুসারী মানুষরা সবাই এক সাথে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
(বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য দেখুন : ফ > ফিরে যাওয়া > মানুষ পুনরায় দুনিয়াতে ফিরে যেতে চাইবে সৎ কাজ করার জন্য > আল্লাহর পক্ষ থেকে জবাব)
(১৭:৭৯) আর রাতে তাহাজ্জুদ পড়ো এটি তোমার জন্য নফল৷ অচিরেই তোমার রব তোমাকে “প্রশংসিত স্থানে” প্রতিষ্ঠিত করবেন৷
(ব্যাখ্যা : অর্থাৎ দুনিয়ায় ও আখেরাতে তোমাদেরকে এমন মার্যাদায় পৌঁছে দেবেন যেখানে তোমরা মানুষের কাছে প্রশংসিত হয়ে থাকবে । তোমাদের অস্তিত্ব দুনিয়ায় একটি প্রশংসণীয় অস্তিত্বে পরিণত হবে । আজ তোমাদের বিরোধীরা গালাগালি ও নিন্দাবাদের মাধ্যমে তোমাদের অভ্যর্থনা করছে এবং সারাদেশে তোমাদের বদনাম করার জন্য তোমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদের তুফান সৃষ্টি করে রেখেছে । কিন্তু সে সময় দূরে নয় যখন সারা দুনিয়ায় তোমাদের প্রশংসা শ্রুত হবে এবং আখেরাতেও তোমরা সমগ্র সৃষ্টির প্রশংসার অধিকারী হবে । কিয়ামতের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শাফায়াতকারীর মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হওয়াও এ প্রশংসনীয় মর্যাদারই একটি অংশ ।)
৩:৯৭,
(১২:২) আমি একে আরবী ভাষায় কুরআন বানিয়ে নাযিল করেছি, ১ যাতে তোমরা (আরববাসীরা) একে ভালোভাবে বুঝতে পারো৷
(অতএব, যার যার মাতৃভাষায় কুরআন বুঝে নেয়া জরুরী)
(১৪:৪) আমি নিজের বাণী পৌছাবার জন্য যখনই কোন রসূল পাঠিয়েছি, সে তার নিজের সম্প্রদায়েরই ভাষায় বাণী পৌছিয়েছে, যাতে সে তাদেরকে খুব ভালো করে পরিষ্কারভাবে বুঝাতে পারে৷
(এর দু'টি অর্থ হয়ঃ এক, আল্লাহ যে সম্প্রদায়ের মধ্যে যে নবী পাঠিয়েছেন তার ওপর তার ভাষায়ই নিজের বাণী অবতীর্ণ করেছেন। এর উদ্দেশ্য ছিল, সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায় যেন তা ভালোভাবে বুঝতে পারে এবং পরবর্তী পর্যায়ে তারা এ ধরনের কোন ওজর পেশ করতে না পারে যে, আপনার পাঠানো শিক্ষা তো আমরা বুঝতে পারিনি কাজেই কেমন করে তার প্রতি ঈমান আনতে পারতাম। দুই, আল্লাহ কখনো নিছক অলৌকিক ক্ষমতা দেখাবার জন্য আরব দেশে নবী পাঠিয়ে তাদের মুখ দিয়ে জাপানী বা চৈনিক ভায়ায় নিজের কালাম শুনাননি। এ ধরনের তেলেসমাতি দেখিয়ে লোকদের অভিনবত্ব প্রিয়তাকে পরিতৃপ্ত করার তুলনায় আল্লাহর দৃষ্টিতে শিক্ষা ও উপদেশ দান এবং বুঝিয়ে বলা ও সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করাই বেশী গুরুত্বের অধিকারী। এ উদ্দেশ্যে কোন জাতিকে তার নিজের ভাষায়, যে ভাষা সে বোঝে, পয়গাম পৌঁছানো প্রয়োজন।)
(১৯:৯৭) বস্তুত হে মুহাম্মাদ! এ বাণীকে আমি সহজ করে তোমার ভাষায় এজন্য নাযিল করেছি যাতে তুমি মুত্তাকীদেরকে সুখবর দিতে ও হঠকারীদেরকে ভয় দেখাতে পারো৷
(বিস্তারিত দেখুন : আ > আরবী ভাষা )
(২০:১১৩) আর হে মুহাম্মাদ! এভাবে আমি একে আরবী কুরআন বানিয়ে নাযিল করেছি এবং এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সতর্কবাণী করেছি হয়তো এরা বক্রতা থেকে বাঁচবে বা এদের মধ্যে এর বদৌলতে কিছু সচেতনতার নিদর্শন ফুটে উঠবে৷
(২৬.শুআরা:১৯৩) একে নিয়ে আমানতদার রূহ ১৯৪) অবতরন করেছে তোমার হৃদয়ে, যাতে তুমি তাদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাও যারা (আল্লাহর পক্ষ থেকে আল্লাহর সৃষ্টির জন্য) সতর্ককারী হয়। ১৯৫) পরিস্কার আরবী ভাষায়৷১২১
(১২১. এ বাক্যটির সম্পর্ক "আমানতদার রূহ অবতরণ করেছে" এর সাথেও হতে পারে আবার "যারা সতর্ককারী হয়" এর সাথেও হতে পারে। প্রথম অবস্থায় এর অর্থ হবে, সেই আমানতদার রূহ তাকে এনেছেন পরিষ্কার আরবী ভাষায় এবং দ্বিতীয় অবস্থায় এর অর্থ হবে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন সব নবীদের অর্ন্তভূক্ত যাদেরকে আরবী ভাষার মাধ্যমে মানুষকে সতর্ক করার জন্য পাঠানো হয়েছিল। এ নবীগণ ছিলেন হূদ, সালেহ, ইসমাঈল ও শো'আইব আলাইহিমুস সালাম। উভয় অবস্থায় বক্তব্যের উদ্দেশ্য একই এবং তা হচ্ছে রব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে এ শিক্ষা যেন কোন মৃত ভাষায় বা জ্বীনদের ভাষায় আসেনি এবং এর মধ্যে ধাঁধাঁ বা হেঁয়ালী মার্কা কোন গোলমেলে ভাষা ব্যবহার করা হয়নি। বরং এটা এমন প্রাঞ্জল, পরিষ্কার ও উন্নত বাগধারা সম্পন্ন আরবী ভাষায় রচিত, যার অর্থ ও বক্তব্য প্রত্যেক আরবী ভাষাভাষী ও আরবী জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি অতি সহজে ও স্বাভাবিকভাবে অনুধাবন করতে পারে। তাই যার এর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে তারা এর শিক্ষা বুঝতে পারেনি তাদের দিক থেকে এ ধরণের ওজর পেশ করার কোন সুযোগ নেই। বরং তাদের মুখ ফিরিয়ে নেয়া ও অস্বীকার করার কারণ হচ্ছে শুধুমাত্র এই যে, তারা মিসরের ফেরাউন, ইব্রাহীমের জাতি, নূহের জাতি, লূতের জাতি, আদ ও সামূদ জাতি এবং আইকাবাসীদের মতো একই রোগে ভূগছিল।)
কুরআন সম্পর্কে বার বার দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলা হয়েছে তার প্রতিটি শব্দ আরবী ভাষায় হুবহু নাযিল হয়েছেঃ انِّا انْزَلناه قُرانًا عَرَبِيًّا (يوسف : ২) "নিশ্চিতভাবে আমি তা নাযিল করেছি আরবী ভাষায় কুরআন আকারে।" وكذالك انزلناه حكمًا عَرَبِيًّا "আর এভাবে আমি তা নাযিল করেছি একটি নির্দেশ আরবী ভাষায়।" (আর রা'দঃ ৩৭) قرعنًا عربيًّأ غير ذى عِوَجٍ ( الزُّمر : ২৮) "আরবী ভাষায় এ কুরআন বক্রতা মুক্ত।" (আয্ যুমারঃ ২৮)
(২৬.শুআরা:১৯৬) আর আগের লোকদের কিতাবেও এ কুরআনের কথা আছে৷১২২
(১২২. অর্থাৎ একথা, এ অবতীর্ণ বিষয় এবং এ আল্লাহ প্রদত্ত শিক্ষা ইতিপূর্বেকার আসমানী কিতাবগুলোতে রয়েছে। এক আল্লাহর বন্দেগীর একই আহ্বান, পরকালের জীবনের এই একই বিশ্বাস নবীদের পথ অনুসরণের একই পদ্ধতি সেসব কিতাবেও পেশ করা হয়েছে। আল্লাহর পক্ষ থেকে যেসব কিতাব এসেছে সেগুলো শিরকের নিন্দাই করে। সেগুলো বস্তুবাদী জীবনাদর্শ ত্যাগ করে এমন সত্য জীবনাদর্শ গ্রহণের আহ্বান জানায় যেগুলোর ভিত্তি আল্লাহর সামনে মানুষের জবাবদিহিতার ধারণার ওপর প্রতিষ্ঠিত। সে সকল কিতাবের অভিন্ন দাবী এই যে, মানুষ নিজের স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি ও ক্ষমতা পরিত্যাগ করে নবীদের আনীত আল্লাহর বিধান অনুসরণ করে চলুক। এসব কথার মধ্যে কোনটাই নতুন নয়। দুনিয়ায় কুরআনই প্রথমবার একথাগুলো পেশ করছে না। কোন ব্যক্তি বলতে পারবে না, তোমরা এমনসব কথা বলছো যা পূর্বের ও পরের কেউ কখনো বলেনি।
ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহির একটি পুরাতন অভিমতের সপক্ষে যেসব যুক্তি দেখানো হয়ে থাকে এ আয়াতটি তার অন্যতম। ইমাম সাহেবের মতটি হচ্ছেঃ
যদি কোন ব্যক্তি নামাজে কুরআনের অনুবাদ পড়ে নেয় সে আরবীতে কুরআন পড়তে সক্ষম হলেও বা না হলেও, তার নামাজ হয়ে যায়। আল্লামা আবু বকর জাস্সাসের ভাষায় এ যুক্তির ভিত্তি হলো, আল্লাহ এখানে বলেছেন, এ কুরআন পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবগুলোর মধ্যেও ছিল। আর একথা সুস্পষ্ট, সে কিতাবগুলোতে কুরআন আরবী ভাষার শব্দ সমন্বয়ে ছিল না। অন্য ভাষায় কুরআনের বিষয়বস্তু উদ্ধৃত করে দেয়া সত্ত্বেও তা কুরআনই থাকে। কুরআন হওয়াকে বাতিল করে দেয় না। (আহকামুল কুরআন, তৃতীয় খণ্ড, ৪২৯ পৃষ্ঠা) কিন্তু এ যুক্তির দুর্বলতা একেবারেই সুস্পষ্ট। কুরআন মজীদ বা অন্য কোন আসমানী কিতাবের কোনটিরও নাযিল হবার ধরণ এমন ছিল না যে, আল্লাহ নবীর অন্তরে কেবল অর্থই সঞ্চার করে দিয়েছেন এবং তারপর নবী তাকে নিজের ভাষায় বর্ণনা করেছেন। বরং প্রত্যেকটি কিতাব যে ভাষায় এসেছে আল্লাহর পক্ষ থেকে শব্দ ও বিষয়বস্তু উভয়টি সহকারেই এসেছে। পূর্ববর্তী যেসব কিতাবে কুরআনের শিক্ষা ছিল মানবিক ভাষা সহকারে নয় বরং আল্লাহর ভাষা সহকারেই ছিল এবং সেগুলোর কোনটির অনুবাদকেও আল্লাহর কিতাব বলা যেতে পারে না এবং তাকে আসলের স্থলাভিষিক্ত করাও সম্ভব নয়। আর কুরআন সম্পর্কে বার বার দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলা হয়েছে তার প্রতিটি শব্দ আরবী ভাষায় হুবহু নাযিল হয়েছেঃ انِّا انْزَلناه قُرانًا عَرَبِيًّا (يوسف : ২) "নিশ্চিতভাবে আমি তা নাযিল করেছি আরবী ভাষায় কুরআন আকারে।" وكذالك انزلناه حكمًا عَرَبِيًّا "আর এভাবে আমি তা নাযিল করেছি একটি নির্দেশ আরবী ভাষায়।" (আর রা'দঃ ৩৭) قرعنًا عربيًّأ غير ذى عِوَجٍ ( الزُّمر : ২৮) "আরবী ভাষায় এ কুরআন বক্রতা মুক্ত।" (আয্ যুমারঃ ২৮) তারপর আলোচ্য আয়াতের সাথে সংযুক্ত পূর্ববর্তী আয়াতেই বলা হয়েছে, রূহুল আমীন আরবী ভাষায় একে নিয়ে নাযিল হয়েছেন। এখন তাঁর সম্পর্কে কেমন করে এ কথা বলা যেতে পারে যে, কোন মানুষ অন্য ভাষায় তার যে অনুবাদ করেছে তাও কুরআনই হবে এবং এবং তার শব্দাবলী আল্লাহর শব্দাবলীর স্থলাভিষিক্ত হবে। মনে হচ্ছে যুক্তির এ দুর্বলতাটি মহান ইমাম পরবর্তী সময়ে উপলব্ধি করে থাকতে পারেন। তাই নির্ভরযোগ্য বর্ণনায় এ কথা উদ্ধৃত হয়েছে যে, এ বিষয়ে নিজের অভিমত পরিবর্তন করে তিনি ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদের মত গ্রহণ করে নিয়েছিলেন অর্থাৎ যে ব্যক্তি আরবী ভাষায় ক্বিরাত তথা কুরআন পড়তে সক্ষম নয় সে ততক্ষণ পর্যন্ত নামাজে কুরআনের অনুবাদ পড়তে পারে যতক্ষণ সে আরবী শব্দ উচ্চারণ করার যোগ্যতা অর্জন না করে। কিন্তু যে ব্যক্তি আরবীতে কুরআন পড়তে পারে যে যদি কুরআনের অনুবাদ পড়ে তাহলে তার নামাজ হবে না। আসলে ইমামদ্বয় এমন সব আজমী তথা অনারব নওমুসলিমকে এ সুযোগটি দেবার প্রস্তাব করেছিলেন যারা ইসলাম গ্রহণ করার পরপরই আরবী ভাষায় নামাজ পড়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারতো না। এ ব্যাপারে কুরআনের অনুবাদও কুরআন এটা তাদের যুক্তির ভিত্তি ছিল না। বরং তাদের যুক্তি ছিল, ইশারায় রুকু সিজদা করা যেমন রুকু সিজদা করতে অক্ষম ব্যক্তির জন্য জায়েয ঠিক তেমনি আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় নামাজ পড়াও এমন ব্যক্তির জন্য জায়েয যে আরবী হরফ উচ্চারণ করতে অক্ষম। অনুরূপভাবে যেমন অক্ষমতা দূর হবার ইশারায় রুকু সিজদাকারীর নামাজ হবে না ঠিক তেমনি কুরআন পড়ার ক্ষমতা অর্জন করার পর অনুবাদ পাঠকারীর নামাজও হবে না। (এ বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন সারখসী লিখিত মাব্সূত, প্রথম খণ্ড, ৩৭ পৃষ্ঠা এবং ফাতহুল কাদীর ও শারহে ইনায়াহ আলাল হিদায়াহ প্রথম খণ্ড, ১৯০-২০১ পৃষ্ঠা)
(১৬:৫৯) লোকদের থেকে লুকিয়ে ফিরতে থাকে, কারণ এ দুঃসংবাদের পর সে লোকদের মুখ দেখাবে কেমন করে৷ ভাবতে থাকে, অবমাননার সাথে মেয়েকে রেখে দেবে, না তাকে মাটিতে পুঁতে ফেলবে ?
(১৭:৪৯) তারা বলে, “আমরা যখন শুধুমাত্র হাড় ও মাটি হয়ে যাবো তখন কি আমাদের আবার নতুন করে পয়দা করে ওঠানো হবে ?
(১৭:৬১) আর স্মরণ করো, যখন আমি ফেরেশতাদের বললাম, আদমকে সিজদা করো, তখন সবাই সিজদা করলো কিন্তু ইবলীস করলো না৷ সে বললো, “আমি কি তাকে সিজদা করবো যাকে তুমি বানিয়েছো মাটি দিয়ে ?
(১৫:৩৩) সে (ইবলীস শয়তান) জবাব দিল, “এমন একটি মানুষকে সিজদা করা আমার মনোপূত নয় যাকে তুমি শুকনো ঠন্ঠনে পচা মাটি থেকে সৃষ্টি করেছো৷”
(১৭:৬৮) আচ্ছা, তাহলে তোমরা কি এ ব্যাপারে একেবারেই নির্ভীক যে, আল্লাহ কখনো স্থলদেশেই তোমাদেরকে যমীনের মধ্যে প্রোথিত করে দেবেন না অথবা তোমাদের ওপর পাথর বর্ষণকারী ঘূর্ণি পাঠাবেন না এবং তোমরা তার হাত থেকে বাঁচার জন্য কোনো সহায়ক পাবে না ?
(২৮-ক্বাছাছ : ৮১) শেষ পর্যন্ত আমি তাকে ও তার গৃহকে ভূগর্ভে পুতে ফেললাম৷ তখন আল্লাহর মোকাবিলায় তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসার মতো সাহায্যকারীদের কোন দল ছিল না এবং সে নিজেও নিজেকে সাহায্য করতে পারলো না৷
(২০:৫৫) এ মাটি থেকেই আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, এরি মধ্যে তোমাদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবো এবং এ থেকেই আবার তোমাদেরকে বের করবো৷
(হাজ্ব:৫) হে লোকেরা! যদি তোমাদের মৃত্যু পরের জীবনের ব্যাপারে কোনো সন্দেহ থাকে, তাহলে তোমরা জেনে রাখো, আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি মাটি থেকে, তারপর শুক্র থেকে, তারপর রক্তপিণ্ড থেকে, তারপর গোশতের টুকরা থেকে, যা আকৃতি বিশিষ্টও হয় এবং আকৃতিহীনও৷
(মু’মিনুন:১২) আমি মানুষকে তৈরী করেছি মাটির উপাদান থেকে, ১৩) তারপর তাকে একটি সংরক্ষিত স্থানে টপ্কে পড়া ফোঁটায় পরিবর্তত করেছি,
বিস্তারিত দেখুন : স > সৃষ্টি > মানুষ সৃষ্টি।
ম > মানুষ > মানুষ সৃষ্টি ।
ক > কুরআন ও বিজ্ঞান > বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে আল্লাহর অস্তিত্ব ও আখিরাতের সত্যতার প্রমাণ।
(মু’মিনুন:৩৫) সে কি তোমাদেরকে একথা জানায় যে, যখন তোমরা সবার পরে মাটিতে মিশে যাবে এবং হাড়গোড়ে পরিণত হবে তখন তোমাদেরকে (কবর থেকে) বের করা হবে?
(মু’মিনুন:৮২) তারা বলে, ‘‘যখন আমরা মরে মাটি হয়ে যাবো এবং অস্থি পঞ্জরে পরিণত হবো তখন কি আমাদের পুনরায় জীবিত করে উঠানো হবে ?
(বিস্তারিত দেখুন : প > পরকাল)
(৩০-রূম: ২০) তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে, তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে তাঁরপর সহসা তোমরা হলে মানুষ, (পৃথিবীর বুকে) ছড়িয়ে পড়ছো৷ ২৭
২৭ . অর্থাৎ মানুষের সৃষ্টি রহস্য এ ছাড়া আর কি যে, কয়েকটি নিষ্প্রাণ উপাদানের সমাহার, যেগুলো এ পৃথিবীর বুকে পাওয়া যায়। যেমন কিছু কার্বন, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম এবং এ ধরনের আরো কিছু উপাদান। এগুলোর রাসায়নিক সংযোগের মাধ্যমে মানুষ নামক একটি বিস্ময়কর সত্ত্বা সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তাঁর মধ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে আবেগ, অনুভূতি, চেতনা, বুদ্ধিবৃত্তি ও চিন্তা- কল্পনার এমন সব অদ্ভূত শক্তি যাদের কোন একটির উৎসও তাঁর মৌলিক উপাদানগুলোর মধ্যে খূঁজে পাওয়া যেতে পারে না। তাঁরপর শুধু এতটুকুই নয় যে, হঠাৎ একজন মানুষ এমনি ধরনের এক ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে বরং তাঁর মধ্যে এমন সব অদ্ভুত প্রজনন শক্তিও সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছে যার বদৌলতে কোটি কোটি মানুষ সে একই কাঠামো এবং যোগ্যতাঁর অধিকারী হয়ে অসংখ্য উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত এবং সীমাসংখ্যাহীন ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের ধারক হিসেবে বের হয়ে আসছে । তোমার বুদ্ধি কি এ সাক্ষ্য দেয়, এ চূড়ান্ত জ্ঞানময় সৃষ্টি কোন জ্ঞানী স্রষ্টার সৃষ্টিকর্ম ছাড়াই আপনা আপনিই অস্তিত্বশীল হয়েছে ৷ তুমি কি সজ্ঞানে ও সচেতন অবস্থায় একথা বলতে পারো, মানুষ সৃষ্টির মতো মহত্তম পরিকল্পনা ,তাকে বাস্তব কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করা এবং পৃথিবী ও আকাশের সংখ্যাব্যতীত শক্তিকে মানব জীবন গঠনের উপযোগী করে দেয়া, এগুলো কি বহু ইলাহর চিন্তা ও ব্যবস্থাপনার ফল হতে পারে ৷ আর তোমরা যখন মনে করতে থাকো, যে আল্লাহ মানুষকে নিরেট অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্ব দান করেছেন তিনি সেই মানুষকে মৃত্যু দান করার পর পুনরায় জীবিত করতে পারবেন না, তখন তোমাদের মস্তিষ্ক কি সঠিক অবস্থায় থাকে ৷
(১৯:৭৩) এদেরকে যখন আমার সুস্পষ্ট আয়াত শুনানো হয় তখন অস্বীকারকারীরা ঈমানদারদেরকে বলে, ”বলো, আমাদের দু’দলের মধ্যে কে ভালো অবস্থায় আছে এবং কার মজলিসগুলো বেশী জাঁকালো। ৭৪) অথচ এদের আগে আমি এমন কত জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছি যারা এদের চাইতে বেশী সাজ-সরঞ্জামের অধিকারী ছিল এরা বাহ্যিক শান শওকতের দিক দিয়েও ছিল এদের চেয়ে বেশী অগ্রসর৷
(২৯-আনকাবুত:২৯) তোমাদের অবস্থা কি এ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, তোমরা পুরুষদের কাছে যাচ্ছো, ৫১ রাহাজানি করছো এবং নিজেদের মজলিসে খারাপ কাজ করছো? ৫২ তারপর তার সম্প্রদায়ের কাছে এ ছাড়া আর কোন জবাব ছিল না যে, তারা বললো , “নিয়ে এসো আল্লাহর আযাব যদি তুমি সত্যবাদী হও” ৷
৫১ . অর্থাৎ তাদের সাথে যৌন কর্মে লিপ্ত হচ্ছো, যেমন সূরা আ'রাফে বলা হয়েছেঃ
"তোমরা যৌন কামনা পূর্ণ করার জন্য মহিলাদেরকে বাদ দিয়ে পুরুষদের কাছে গিয়ে থাকো।"
৫২ . অর্থাৎ এ অশ্লীল কাজটি লুকিয়ে চাপিয়েও করো না বরং প্রকাশ্যে নিজেদের মজলিসে পরস্পরের সামনে বসে করে থাকো। একথাটিই সূরা আন নামলে এভাবে বলা হয়েছেঃ
"তোমরা কি এমনই বিগড়ে গিয়েছো যে, প্রকাশ্যে দর্শকমণ্ডলীর সমক্ষেই অশ্লীল কাজ করে থাকো ৷
(বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য : ন > নবীদের জীবনের ঘটনাবলী > হযরত লূত আ: । )
বিস্তারিত দেখুন : ম > মসজিদ > মসজিদুল হারাম > হজ্বপালনকারীদের নিকট থেকে মক্কার বাড়ীঘরের ভাড়া আদায় করা কি বৈধ ?
(৩১-লোকমান: ৮) তবে যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে তাদের জন্য রয়েছে নিয়ামতে পরিপূর্ণ জান্নাত, ১০
১০ . তাদের জন্য জান্নাতের নিয়ামতসমূহ রয়েছে, একথা বলেননি। বরং বলেছেন, তাদের জন্য রয়েছে নিয়ামতে পরিপূর্ণ জান্নাত। যদি প্রথম কথাটি বলা হতো, তাহলে এর অর্থ হতো, তারা এ নিয়ামতসমূহ উপভোগ করবে ঠিকই কিন্তু এ জান্নাতগুলো তাদের নিজেদের হবে না। এর পরিবর্তে " তাদের জন্য রয়েছে নিয়ামতে পরিপূর্ণ জান্নাতসমূহ" একথা বলায় আপনা-আপনি একথা প্রকাশ হয়ে গেছে যে, জান্নাত পুরোটাই তাদের হাওয়ালা করে দেয়া হবে এবং তারা তার নিয়ামতসমুহ এমনভাবে ভোগ করতে থাকবে যেমন একজন মালিক তার মালিকানাধীন জিনিস ভোগ করে থাকে। মালিকানা অধিকার ছাড়াই কাউকে কোন জিনিস থেকে নিছক লাভবান হবার সুযোগ দিলে যেভাবে তা ভোগ করা হয় সেভাবে নয়।
১0:৮৭) আর আমি মূসা ও তার ভাইকে ইশারা করলাম এই বলে যে, মিসরে নিজের কওমের জন্য কতিপয় গৃহের সংস্থান করো, নিজেদের ঐ গৃহগুলোকে কিবলায় পরিণত করো এবং নামায কায়েম করো৷ আর ঈমানদারদেরকে সুখবর দাও৷
(ব্যাখ্যা : এ আয়াতটির অর্থের ব্যাপারে মুফাস্সিরদের মধ্যে মতভেদ ঘটেছিল। এর শব্দাবলী এবং যে পরিবেশে এ শব্দাবলী উচ্চারিত হয়েছিল তা বিশ্লেষণ করে আমি একথা বুঝেছি যে, সম্ভবত মিসরে সরকারের কঠোর নীতি ও নির্যাতন এবং বনী ইসরাঈলের নিজের দুর্বল ঈমানের কারণে ইসরাঈলী ও মিসরীয় মুসলমানদের মধ্যে জামায়াতের সাথে নামায পড়ার ব্যবস্থা খতম হয়ে গিয়েছিল। এর ফলে তাদের ঐক্যগ্রন্থী ছিন্নভিন্ন এবং তাদের দীনী প্রাণসত্তর মৃত্যু ঘটেছিল। এ জন্য এ অবস্থাটিকে নতুন কর কায়েম করারা জন্য হযরত মূসাকে হুকুম দেয়া হয়েছিল। তাকে বলা হয়েছিল জামায়াতবদ্ধভাবে নামায পড়ার জন্য মিসরে কয়েকটি গৃহ নির্মাণ করো, অথবাগৃহের ব্যবস্থা করে নাও। কারণ একটি বিকৃত ও বিক্ষিপ্ত মুসলিম জাতির দীনী প্রাণসত্তার পুনরুজ্জীবন এবং তার ইতস্তত ছড়ানো শক্তিকে নতুন করে একত্র করার উদ্দেশ্যে ইসলামী পদ্ধতিতে যে কোন প্রচেষ্টাই চালানো হবে তার প্রথম পদক্ষেপেই অনিবার্যভাবে জামায়াতের সাথে নামায কায়েম করার ব্যবস্থা করতে হবে। এ গৃহগুলোকে কিবলাহ গন্য করার যে অর্থ আমি বুঝেছি তা হচ্ছে এই যে, এ গৃহগুলোকে সমগ্র জাতির জন্য কেন্দ্রীয় গুরুত্বের অধিকারী এবং তাদের কেন্দ্রীয় সম্মিলন স্থলে পরিণত করতে হবে। আর এরপরই নামায কায়েম করো, কথাগুলো বলার মানে হচ্ছে এই যে, পৃথক পৃথকভাবে যার যার জায়গয় নামায পড়ে নেয়ার পরিবর্তে লোকদের এ নির্ধারিত স্থানগুলোয় জামায়াতে হয়ে নামায পড়তে হবে। কারণ কুরাআন পরিভাষায় যাকে ইকামাতে সালাত বলা হয় জামায়াতের সাথে নামায পড়া অনিবার্যভাবে তার অন্তরভুক্ত রয়েছে।)
(নূর:৩৬) (তাঁর আলোর পথ অবলম্বনকারী )ঐ সব ঘরে পাওয়া যায়, যেগুলোকে উন্নত করার ও যেগুলোর মধ্যে নিজের নাম স্মরণ করার হুকুম আল্লাহ দিয়েছেন ৷সেগুলোতে এমন সব লোক সকাল সাঁঝে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে৷৩৭) যারা ব্যবসায় ও বেচাকেনার ব্যস্ততার মধ্যেও আল্লাহর স্মরণ এবং নামায কায়েম ও যাকাত আদায় করা থেকে গাফিল হয়ে যায় না ৷ তারা সেদিনকে ভয় করতে থাকে যেদিন হৃদয় বিপর্যস্ত ও দৃষ্টি পাথর হয়ে যাবার উপক্রম হবে ৷৩৮) (আর তারা এসব কিছু এ জন্য করে) যাতে আল্লাহ তাদেরকে তাদের সর্বোত্তম কর্মের প্রতিদান দেন এবং তদুপরি নিজ অনুগ্রহ দান করেন ৷ আল্লাহ যাকে চান বেহিসেব দান করেন৷
দেখুন : ম > মাজার নির্মাণ ।
মসজিদুল হারাম / কাবাঘর :
২:১২৫, ১২৬, ৩:৯৬ (সর্বপ্রথম ঘর হচ্ছে কাবা), ৩:৯৭ ( মাকামে ইব্রাহিম),
কিবলা পরিবর্তন প্রসঙ্গ : ২:১৪২, ১৪৪, ১৪৫, (কিবলা পরিবর্তনের আদেশ ছিল পরীক্ষা স্বরুপ : রাসুলের কে কতটুকু অনুসারী)২:১৪৭, ১৪৮,
কিবলা হচ্ছে মসজিদে হারাম তথা কাবা ঘর : ২:১৪৯,
(হাজ্ব:৩০) এ ছিল (কাবা নির্মাণের উদ্দেশ্য) এবং যে কেউ আল্লাহ প্রতিষ্ঠিত পবিত্রত অনুষ্ঠানগুলোকে সম্মান করবে, তার রবের কাছে এ হবে তারই জন্য ভালো৷
(হাজ্ব:২৯) তারপর নিজেদের ময়লা দূর করে, নিজেদের মানত পূর্ণ করে এবং এ প্রাচীন গৃহের তাওয়াফ করে৷৫৩
(৫৩. কাবাঘরের জন্য (আতীক) শব্দ অত্যন্ত অর্থবহ। "আতীক" শব্দটি আরবী ভাষায় তিনটি অর্থে ব্যবহৃত হয়। একটি অর্থ হচ্ছে প্রাচীন। দ্বিতীয় অর্থ স্বাধীন, যার ওপর কারোর মালিকানা নেই। তৃতীয় অর্থ সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ। এ তিনটি অর্থই এ পবিত্র ঘরটির বেলায় প্রযোজ্য।
তাওয়াফ বলতে "তাওয়াফে ইফাদাহ" অর্থাৎ তাওয়াফে যিয়ারত বুঝানো হয়েছে। ইয়াওমুন নাহরে (কুরবানীর দিন) কুরবানী করার ও ইহরাম খুলে ফেলার পর এ তাওয়াফ করা হয়। এটি হজ্জের রোকন তথা ফরযের অন্তরভুক্ত। আর যেহেতু ধূলা-ময়লা দূর করার হুকুমের সাথে সাথেই এর উল্লেখ করা হয়েছে তাই এ বক্তব্য একথা প্রকাশ করে যে, কুরবানী করার এবং ইহরাম খুলে গোসল করে নেবার পর এ তাওয়াফ করা উচিত।)
৩:৯৭ (মাকামে ইব্রাহিম) ,
৫:২, ৫:৯৭, (যারা কাবা ঘরে যতে বাধা দেয়)
ইসলামের পথে যারা বাধা হয়ে দাড়ায় আল্রাহ অবশ্যই তাদেরকে আযাব দেবেন : ৮:৩৪ (যারা মসজিদুল হারামে প্রবেশে বাধা দিয়েছিল),
মসজিদে হারামের বৈধ মুতাওয়াল্লী কাফেররা হতে পারেনা, হতে পারে একমাত্র তাকওয়াধারীরাই :৮:৩৪, কারণ তারা আল্লাহকে এবং পরকালকে বিশ্বাস করে এবং নামায পড়ে যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় করেনা, এবং আশা করা যায় তারা সঠিক পথে চলবে : ৯:১৮, মুশরিকরা যখন নিজেরাই কুফরীর সাক্ষ্য দিচ্ছে সুতরাং মসজিদুল হারামের খাদেম হওয়ার কোন অধিকার তাদের নেই:৯:১৭, বরং তারা নামায পড়েনা, বরং তালি বাজায় ও সিশ দেয়:৮:৩৫, মুশরিকরা তো অপবিত্র :৯:২৮, (সুতরাং তারা যেন মসজিদুল হারামের কাছে না আসে) ,
মসজিদুল হারামের রক্ষণাবেক্ষণ করা অথবা হাজীদের পানি পান করানো এমন ব্যক্তিদের কাজের সমান যারা হিজরত করে ও জান মাল বিসর্জন দিয়ে জিহাদ করে,এ ধরণের জিহাদ কারীদের জন্য আল্লাহর কাছে রয়েছে উচ্চ মর্যাদা, তাদের প্রতিদানে রয়েছে চিরকালীন জান্নাত ও আরো অনেক কিছু, আর আল্লাহ জালেমদের পথ দেখান না : ৯:১৯-২২,
(১৭:১) পবিত্র তিনি যিনি নিয়ে গেছেন এক রাতে নিজের বান্দাকে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আক্সা পর্যন্ত, যার পরিবেশকে তিনি বরকতময় করেছেন, যাতে তাকে নিজের কিছু নিদর্শন দেখান৷
(হাজ্ব:২৫) যারা কুফরী করেছে এবং যারা (আজ) আল্লাহর পথে চলতে বাধা দিচ্ছে আর সেই মসজিদে হারামের যিয়ারতে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে যাকে আমি তৈরি করেছি সব লোকের জন্য যাতে স্থানীয় বাসিন্দা ও বহিরাগতদের অধিকার সমান৷ ৪৩ (তাদের নীতি অবশ্যই শাস্তিযোগ্য) এখানে (মসজিদে হারামে) যে-ই সত্যতা থেকে সরে গিয়ে জুলুমের পথ অবলম্বন করবে তাকেই আমি যন্ত্রণাদায়ক আযাবের স্বাদ আস্বাদান করাবো৷
(৪৩. অর্থাৎ যা কোন ব্যক্তি, পরিবার বা গোত্রের নিজস্ব সম্পত্তি নয়। বরং সর্বসাধারণের জন্য ওয়াকফকৃত, যার যিয়ারত থেকে বাধা দেবার অধিকার কারো নেই।
এখানে ফিকাহর দৃষ্টিতে দু'টি প্রশ্ন দেখা দেয়। ফকীহদের মধ্যে এ ব্যাপারে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছেঃ
প্রথমত মসজিদে হারাম অর্থ কি৷ এটা কি শুধু মসজিদকে বুঝাচ্ছে না সমগ্র মক্কা নগরীকে৷
দ্বিতীয়ত এখানে "আকিফ" (অবস্থানকারী) ও "বাদ"(বহিরাগত)-এর অধিকার সমান হবার অর্থ কি৷
এক দলের মতে এর অর্থ শুধু মসজিদ, সমগ্র মক্কা নগরী নয়। কুরআনের শব্দাবলীর বাহ্যিক অর্থ থেকেই এটা সুস্পষ্ট হয়। এখানে অধিকার সমান হবার অর্থ ইবাদাত করার সমান অধিকার। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিম্নোক্ত উক্তি থেকে জানা যায়ঃ
(আরবী)
"হে আবদে মান্নাফের সন্তানগণ! তোমাদের যে কেউ জনগণের বিষয়াদির ওপর কোন প্রকার কর্তৃত্বের অধিকারী হবে তার পক্ষে রাতে ও দিনের কোন সময় কোন ব্যক্তির কাবাগৃহের তাওয়াফ করা অথবা নামায পড়ায় বাধা দেয়া উচিত নয়।"
এ অভিমতের সমর্থকরা বলেন, মসজিদে হারাম বলতে পুরা হারাম শরীফ মনে করা এবং তারপর সেখানে সবদিক দিয়ে স্থানীয় অধিবাসী ও বাইর থেকে আগতদের অধিকার সমান গণ্য করা ভুল। কারণ মক্কার ঘরবাড়ি ও জমি জমার ওপর লোকদের মালিকানা অধিকার, উত্তরাধিকার এবং কেনা-বেচা ও ইজারা দেবার অধিকার ইসলামপূর্ব যুগ থেকে প্রতিষ্ঠিত এবং ইসলামের আগমনের পরও প্রতিষ্ঠিত ছিল। এমন কি হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর আমলে মক্কায় কারাগার নির্মাণের জন্য সাফওয়ান ইবনে উমাইয়ার গৃহ চার হাজার দিরহাম কিনে নেয়া হয়। কাজেই এ সাম্য শুধুমাত্র ইবাদাতের ব্যাপারে, অন্য কোন বিষয়ে নয়। এটি ইমাম শাফেঈ ও তাঁর সমমনা লোকদের উক্তি।
দ্বিতীয় দলটির মতে, মসজিদে হারাম বলতে মক্কার সমগ্র হারাম শরীফকে বুঝানো হয়েছে। এর প্রথম যুক্তি হচ্ছে, এ সংশ্লিষ্ট আয়াতটিতেই মক্কার মুশরিকদেরকে যে বিষয়ে তিরস্কার করা হয়েছে সেটি হচ্ছে মুসলমানদের হজ্জে বাধা হওয়া তাদের এ কাজকে এ বলে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে যে, সেখানে সবার অধিকার সমান। এখন এ কথা সুষ্পষ্ট যে, হজ্জ কেবল সমজিদে হয় না বরং সাফা ও মারওয়া থেকে নিয়ে মিনা, মুযদালিফা, আরাফাত সবই হজ্জ অনুষ্ঠানের স্থানের অন্তরভুক্ত। তারপর কুরআনে শুধু এক জায়গায়ই নয় অসংখ্য জায়গায় সমজিদে হারাম বলে সমগ্র হারাম শরীফ ধরা হয়েছে যেমন বলা হয়েছেঃ
(আরবী)
"মসজিদে হারাম থেকে বাধা দেয়া এবং তার অধিবাসীদেরকে সেখান থেকে বের করে দেয়া আল্লাহর কাছে হারাম মাসে যুদ্ধ করার চাইতে বড় গুনাহ।" (আল বাকারাহঃ ২১৭ আয়াত)
বলাবাহুল্য, এখানে মসজিদে হারামে যারা নামায পড়ায় রত তাদেরকে বের করা নয় বরং মক্কা থেকে মুসলমান অধিবাসীদেরকে বের করা বুঝানো হয়েছে। অন্য জায়গায় বলা হয়েছেঃ
(আরবী)
"এ সুবিধা তার জন্য যার পরিবারবর্গ মসজিদে হারামের বাসিন্দা নয়।" (আল বাকারাহঃ ১৯৬)
এখানেও মসজিদে হারাম বলতে সমগ্র মক্কার হারাম শরীফ, নিছক মসজিদ নয়। কাজেই "মসজিদে হারামে" সাম্যকে শুধুমমাত্র মসজিদের মধ্যে সাম্য গণ্য করা যেতে পারে না বরং এটি হচ্ছে মক্কার হারমের মধ্যে সাম্য।
তারপর এ দলটি আরো বলে, সাম্য ও সমান অধিকার শুধুমাত্র ইবাদাত, সম্মান ও মর্যাদার ক্ষেত্রে নয় বরং মক্কার হারমে সকল প্রকার অধিকারের ক্ষেত্রে রয়েছে। এ দেশটি আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বসাধারণের জন্য ওয়াকফকৃত। কাজেই এর এবং এর ইমারাতসমূহের ওপর কারো মালিকানা অধিকার নেই। প্রত্যেক ব্যক্তি প্রত্যেক জায়গায় অবস্থান করতে পারে। কেউ কাউকে বাধা দিকে পারে না এবং কোন উপবেশনকারীকে উঠিয়ে দিতেও পারে না। এর প্রমাণ স্বরূপ তারা অসংখ্য হাদীস ও সাহাবায়ে কেরামের বাণী ও কর্ম পেশ করে থাকেন। যেমন, আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) বর্ণনা করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
(আরবী)
"মক্কা মুসাফিরদের অবতরণস্থল, এর জমি বিক্রি করা যাবে না এবং এর গৃহসমূহের ভাড়া আদায় করাও যাবে না। ইবরাহীম নাখঈ সাহাবীর নাম উল্লেখ ছাড়াই একটি (মুরসাল) হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
(আরবী)
"মক্কাকে আল্লাহ হারাম গণ্য করেছেন। এর জমি বিক্রি করা এবং এর গৃহসূহের ভাড়া আদায় করা হালাল নয়।
(উল্লেখ করা যেত পারে, ইবরাহীম নাখঈর মুরসাল তথা সাহাবীর নাম উল্লেখ ছাড়া বর্ণিত হাদীস মারফু' তথা সাহাবীর নাম উল্লেখ সহ বর্ণিত হাদীসের পর্যায়ভুক্ত। কারণ, তাঁর সর্বজন পরিচিত নিয়ম হচ্ছে, যখন তিনি সাহাবীর নাম উল্লেখ ছাড়াই (মুরসাল) কোন হাদীস বর্ণনা করেন তখন আসলে আবুদুল্লাহ ইবনে মাসউদের (রা) মাধ্যমেই বর্ণনা করেন। মুজাহিদও প্রায় এ একই শব্দাবলীর মাধ্যমে একটি হাদীস উদ্ধৃত করেছেন। 'আলকামাহ ইবনে ফাদলাহ বর্ণনা করেছেন, "নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং আবুবকর, উমর ও উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুমের আমলে মক্কার জমিকে পতিত জমি মনে করা হতো । যার প্রয়োজন হতো এখানে থাকতো এবং প্রয়োজন ফুরালে অন্য কাউকে বসিয়ে দিতো।"
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) বর্ণনা করেছেন, হযরত উমর (রা) হুকুম দিয়েছিলেন যে, হজ্জের সময় মক্কার কোন লোক নিজের দরজা বন্ধ করতে পারবে না। বরং মুজাহিদ বর্ণনা করেন, হযরত উমর (রা) মক্কাবাসীদেরকে নিজেদের বাড়ির আঙিনা খোলা রাখার হুকুম দিয়ে রেখেছিলেন এবং আগমণকারীদেরকে তাদের ইচ্ছামত স্থানে অবস্থান করতে দেয়ার জন্য আঙিনায় দরজা বসাতে নিষেধ করতেন। আতাও এ একই কথা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, হযরত উমর (রা) একমাত্র সোহাইল ইবনে আমরকে আঙিনায় দরজা বসাবার অনুমতি দিয়েছিলেন। কারণ, ব্যবসায় ব্যাপদেশে তাঁকে নিজের উট সেখানে আটকে রাখতে হতো।
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) বলেন, যে ব্যক্তি মক্কার গৃহের ভাড়া নেয় সে নিজের পেট আগুন দিয়ে ভরে।
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাসের (রা) উক্তি হচ্ছে, আল্লাহ মক্কার সমগ্র হারমকে মসজিদ বানিয়ে দিয়েছেন। সেখানে সবার অধিকার সমান। বাইরের লোকদের থেকে ভাড়া আদায় করার কোন অধিকার মক্কার লোকদের নেই।
উমর ইবনে আবদুল আযীয (র) মক্কার গভর্নরের নামে ফরমান জারি করেন যে, মক্কার গৃহের ভাড়া নেয়া যাবে না করণ, এটা হারাম এসব রেওয়ায়াতের ভিত্তিতে বিপুল সংখ্যক তাবেঈ এমত পোষণ করেন এবং ফকীহগণের মধ্যে ইমাম মালেক (র), ইমাম আবু হানীফা (র), সুফিয়ান সওরী (র), আহমদ ইবনে হাম্বল (র) ও ইসহাক ইবনে রাহাওয়াইয়াহও এ মতো অনুসারী হয়েছিলেন যে, মক্কার জমি বেচা-কেনা করা এবং কমপক্ষে হজ্জ মওসূমে মক্কার গৃহের ভাড়া আদায় করা জায়েয নয়। তবে অধিকাংশ ফকীহ মক্কার গৃহসমূহের ওপর জনগণের মালিকানা অধিকার স্বীকার করেছেন এবং জমি হিসেবে নয়, গৃহ হিসেবে সেগুলো বেচা-কেনা বৈধ গণ্য করেছেন।
এ অভিমতটিই আল্লাহর কিতাব, রসূলের সুন্নাত ও খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতের কাছাকাছি মনে হয়। কারণ, আল্লাহ দুনিয়ার সমস্ত মুসলমানদের ওপর হজ্জ এজন্য ফরয করেননি যে, এটা মক্কার মুসলমানদের উপার্জনের একটা উপায় হবে এবং যেসব মুসলমান ফরয পালনের জন্য বাধ্য হয়ে সেখানে যাবে তাদের কাছ থেকে সেখানকার গৃহমালিক ও জমি মালিকগণ ভাড়া আদায় করে লুটের বাজার গরম করবেন। বরং সেগুলো সকল ঈমানদারের জন্য ব্যাপকভাবে ওয়াকফকৃত। তার জমির ওপর কারোর মালিকানা নেই। প্রত্যেক যিয়ারতকারী তার ইচ্ছামতো যে কোন জায়গায় অবস্থান করতে হবে।)
(হাজ্ব:২৫) ....(তাদের নীতি অবশ্যই শাস্তিযোগ্য) এখানে (মসজিদে হারামে) যে-ই সত্যতা থেকে সরে গিয়ে জুলুমের পথ অবলম্বন করবে তাকেই আমি যন্ত্রণাদায়ক আযাবের স্বাদ আস্বাদান করাবো৷
(এখানে নিছক কোন বিশেষ কাজ নয় বরং এমন প্রত্যেক কাজই বুঝানো হয়েছে যা সত্য থেকে বিচ্যুত এবং জুলুমের সংজ্ঞায় আওতায় পড়ে। যদিও সকল অবস্থায় এ ধরণের কাজ করা পাপ কিন্তু হারাম শরীফে একাজ করা আরো অনেক বেশী মারাত্মক পাপ। মুফাসসিরগণ বিনা প্রয়োজনে কসম খাওয়াকে পর্যন্ত হারাম শরীফের মধ্যে বেদীনী গণ্য করেছেন এবং একে এ আয়াতের ক্ষেত্রে হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এ সমস্ত সাধারণ গোনাহ ছাড়া হারাম শরীফের মর্যাদার সাথে জড়িত যে বিশেষ বিধানগুলো আছে সেগুলোর বিরুদ্ধাচরণ করা সুস্পষ্টভাবে গোনাহের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে। যেমনঃ
হারমের বাইরে যদি কোন ব্যক্তি কাউকে হত্যা করে অথবা এমন কোন অপরাধ করে যার ফলে তার ওপর শরীয়াত নির্ধারিত শাস্তি অনিবার্য হয়ে পড়ে এবং তারপর সে হারম শরীফে আশ্রয় নেয়, তাহলে যতক্ষণ সে সেখানে থাকে তার ওপর হস্তক্ষেপ করা যাবে না। হারমের এ মর্যাদা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সময় থেকে চলে আসছে। মক্কা বিজয়ের দিন শুধুমাত্র কিছুক্ষণের জন্য এ হুরমত উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল তারপর আবার চিরকালের জন্য তা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। কুরআন বলেছেঃ (আরবী) "যে এর মধ্যে প্রবেশ করলো সে নিরাপত্তাধীন হয়ে গেলো।" বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়াতে হযরত উমর হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর ও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের এ উক্তি উদ্ধৃত হয়েছে যে, যদি আমরা নিজেদের পিতৃহন্তাকেও সেখানে পাই তাহলে তার গায়েও হাত দেবো না। এ কারণে অধিকাংশ তাবেঈ, হানাফী, হাম্বলী ও আহলে হাদীস উলামা হারমের বাইরে অনুষ্ঠিত অপরাধের শাস্তি হারমের মধ্যে দেয়া যেতে পারে না বলে মত পোষণ করেন।
সেখানে যুদ্ধ ও রক্তপাত হারাম। মক্কা বিজয়ের পর দ্বিতীয় দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ভাষণ দিয়েছিলেন তাতে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, "হে লোকেরা! আল্লাহ সৃষ্টির শুরু থেকেই মক্কাকে হারাম করেছেন এবং আল্লাহর মর্যাদাদানের কারণে কিয়ামত পর্যন্ত এটি মর্যাদাসম্পন্ন তথা হারাম। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে তার জন্য এখানে রক্ত প্রবাহিত করা হালাল নয়।" তারপর তিনি বলেছিলেন, "যদি আমার এ যুদ্ধকে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করে কোন ব্যক্তি এখানে রক্তপাত বৈধ করে নেয় তাহলে তাকে বলে দাও, আল্লাহ তাঁর রসূলের জন্য এটা বৈধ করেছিলেন, তোমার জন্য নয়। আর আমার জন্যও এটা মাত্র একটি দিনের একটি সময়ের জন্য হালাল করা হয়েছিল, আবার আজ গতকালের মতই তার হারাম হওয়ার হুকুম সেই একইভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।"
সেখানকার প্রাকৃতিক গাছপালা কাটা যেতে পারে না। জমিতে স্বতঃ উৎপাদিত ঘাস তুলে ফেলা যেতে পারে না এবং পাখ-পাখালী ও অন্যান্য জন্তু জানোয়ার শিকার করাও যেতে পারে না। হারমের বাইরে শিকার করার জন্য সেখান থেকে প্রাণীদের তাড়িয়ে বাইরে আনাও যেতে পারে না। শুধুমাত্র সাপ, বিছা ইত্যাদি অনিষ্টকারী প্রাণীগুলো এর অন্তরভুক্ত নয়। আর ইযখির (এক ধরনের সুগন্ধি ঘাস) ও শুকনা ঘাসকে স্বতঃউৎপাদিত ঘাস থেকে আলাদা করা হয়েছে। এসব ব্যাপারে সহী হাদীসসমূহে পরিষ্কার বিধান রয়েছে।
সেখানকার পড়ে থাকা জিনিস উঠানো নিষেধ। যেমন আবু দাউদে বলা হয়েছেঃ
(আরবী)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাজীদের পড়ে থাকা জিনিস উঠাতে নিষেধ করে দিয়েছেন।"
যে ব্যক্তি হজ্জ বা উমরাহর নিয়তে আসে সে ইহরাম না বেঁধে সেখানে প্রবেশ করতে পারে না। তবে অন্য কোন নিয়তে সেখানে প্রবেশ কারীর জন্য ইহরাম বাঁধা অপরিহার্য কিনা এ ব্যাপারে মতবিরোধ আছে। ইবনে আব্বাসের মত হচ্ছে, কোন অবস্থায়ই ইহরাম না বেঁধে সেখানে প্রবেশ করা যেতে পারে না। ইমাম আহমদ ও ইমাম শাফেঈর একটি করে উক্তিও এ মতের সপক্ষে পাওয়া যায়। দ্বিতীয় মতটি হচ্ছে এই যে, একমাত্র তাদের এই ইহরাম বাঁধতে হবে না যাদের নিজেদের কাজের জন্য বারবার সেখানে যাওয়া-আসা করতে হয়। বাকি সবাইকে ইহরাম বাঁধতে হবে। এটি হচ্ছে ইমাম আহমদ ও ইমাম শাফেঈ'র দ্বিতীয় উক্তি। তৃতীয় মতটি হচ্ছে এই যে, যে ব্যক্তি মীকাতের (হারাম শরীফের মধ্যে প্রবেশের সময় সেখান থেকে ইহরাম বাঁধতে হয়) সীমানার মধ্যে বাস করে সে ইহরাম না বেঁধে মক্কায় প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু মীকাতের সীমানার বাইরে অবস্থানকারীরা বিনা ইহরামে মক্কায় প্রবেশ করতে পারবে না। এটি ইমাম আবু হানীফার উক্তি।)
আরো বিস্তারিত : ন > নবীদের জীবনের ঘটনাবলী > ইব্রাহিম আ: > ইব্রাহিম আ: ও কাবাঘর।
(১৭:১) পবিত্র তিনি যিনি নিয়ে গেছেন এক রাতে নিজের বান্দাকে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আক্সা পর্যন্ত, যার পরিবেশকে তিনি বরকতময় করেছেন, যাতে তাকে নিজের কিছু নিদর্শন দেখান৷
(১৬:৭) ..... তারপর যখন পরবর্তী প্রতিশ্রুতির সময় এসেছে তখন আমি অন্য শত্রুদেরকে তোমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছি, যাতে তারা তোমাদের চেহারা বিকৃত করে দেয় এবং (বায়তুল মাকদিসের) মসজিদে এমনভাবে ঢুকে পড়ে যেমন প্রথমবার শত্রুরা ঢুকে পড়েছিল আর যে জিনিসের ওপরই তাদের হাত পড়ে তাকে ধ্বংস করে রেখে দেয়৷
যারা আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে তাদের সহযোগিতা করার জন্য, মু’মিনদের ক্ষতি করার জন্য এবং মু’মিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে মুনাফিকরা মদীনায় একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিল, যেন এ মসজিদের মধ্যে তারা মুসলমানদের ক্ষতি করার জন্য গোপন শলাপরামর্শ করতে পারে : ৯:১০৭,
আল্লাহ তার রাসূলকে উক্ত মসজিদে নামাজ আদায় করতে নিষেধ করে দেন, এবং শুধমাত্র মসজিদে নববীতে নামাজ আদায় করার পরামর্শ দেন, (রাসূল সা: তাবুক অভিযান থেকে ফিরে এসে মুনাফিকদের নির্মিত মসজিদ ধুলিসাৎ করে দেন) : ৯:১০৮,
(ইহুদীদের একটি আপত্তি ছিল এই যে, মুসলমানরা বাইতুল মাকদিসকে বাদ দিয়ে কাবাকে কিবলাহ হিসেবে গ্রহণ করেছে কেন৷ অথচ এ বাইতুল মাকদিসই ছিল পূর্ববর্তী নবীদের কিবলাহ। সূরা বাকারায় এ আপত্তির জবাব দেয়া হয়েছে। কিন্তু ইহুদীরা এরপর ও নিজেদের আপত্তির ওপর জোর দিয়ে আসছিল। তাই এখানে আবার এর জবাব দেয়া হয়েছে। বাইতুল মাকিদস সম্পর্কে বাইবেল নিজেই সাক্ষ দিচ্ছে যে, হযরত মূসা আলাইহিস সালামের সাড়ে চারশো বছর পর হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম এটি নির্মান করেছিলেন। (১-রাজাবলী, ৬:১) আর হযরত সুলাইমানের (আ) আমলেই এটি তাওহীদবাদীদের কিবলাহ গণ্য হয়। (১-রাজাবলী, ৮:২৯-৩০) বিপরীত পক্ষে সমগ্র আরববাসীর একযোগে সুদীর্ঘকালীন ধারাবাহিক বর্ণনায় একথা প্রমাণিত যে, কাবা নির্মাণ করেছিলেন হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম। তিনি হযরত মূসার (আ) আট নয়শো বছর আগে এ দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। কাজেই কাবার অগ্রবর্তী অবস্থান ও নির্মান সন্দেহাতীতভাবে সত্য।)
(নূর:৩৬) (তাঁর আলোর পথ অবলম্বনকারী )ঐ সব ঘরে পাওয়া যায়, যেগুলোকে উন্নত করার ও যেগুলোর মধ্যে নিজের নাম স্মরণ করার হুকুম আল্লাহ দিয়েছেন ৷ সেগুলোতে এমন সব লোক সকাল সাঁঝে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে৷
(২০:৮০) হে বনী ইসরাঈল! আমি তোমাদের শত্রুদের হাত থেকে তোমাদের মুক্তি দিয়েছি, এবং তূরের ডান পাশে তোমাদের উপস্থিতির জন্য সময় নির্ধারণ করেছি আর তোমাদের প্রতি মান্না ও সালওয়া অবতীর্ণ করেছি
(১৩:১৮) যারা নিজেদের রবের দাওয়াত গ্রহণ করেছে তাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে আর যারা তা গ্রহণ করেনি তারা যদি পৃথিবীর সমস্ত সম্পদের মালিক হয়ে যায় এবং এ পরিমাণ আরো সংগ্রহ করে নেয় তাহলেও তারা আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাচাঁর জন্য এ সমস্তকে মুক্তিপণ হিসেবে দিয়ে দিতে তৈরী হয়ে যাবে৷ এদের হিসেব নেয়া হবে নিকৃষ্টভাবে এবং এদের আবাস হয়ে জাহান্নাম, বড়ই নিকৃষ্ট আবাস৷
(হাজ্ব:২৩) (অন্যদিকে) যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে আল্লাহ তাদেরকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত হতে থাকবে৷ সেখানে তাদেরকে সোনার কাঁকন ও মুক্তো দিয়ে সাজানো হবে এবং তাদের পোশাক হবে রেশমের৷
বিস্তারিত দেখুন : জ > জান্নাত > জান্নাত কেমন হবে ।
আরো দেখুন : প > পোষাক > জান্নাতিদের পোষাক কেমন হবে ।
(২০:১১৪).......আর দেখো, কুরআন পড়ার ব্যাপারে দ্রুততা অবলম্বন করো না যতক্ষণ না তোমার প্রতি তার অহী পূর্ণ হয়ে যায় এবং দোয়া করো, হে আমার পরওয়ারদিগার! আমাকে আরো জ্ঞান দাও৷
ঈমান আনার পর পুনরায় কুফরী করার পরিণাম : ৪:৩৭, ৩:৮৬, ৮৮, ৯০, ৯১, ৯৮, ১০৬
(নুর:৪৭) তারা বলে, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহ ও রসূলের প্রতি এবং আমরা আনুগত্য স্বীকার করেছি কিন্তু এরপর তাদের মধ্য থেকে একটি দল (আনুগত্য থেকে ) মুখ ফিরিয়ে নেয় ৷ এ ধরনের লোকেরা কখনোই মু’মিন নয় ৷৭৬
(৭৬ . অর্থাৎ আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়াই তাদের ঈমানের দাবী মিথ্যা প্রমাণ করে দেয়। তাদের এহেন কার্যকলাপ থেকে বুঝা যায় যে, তারা যখন বলেছে আমরা ঈমান এনেছি ও আনুগত্য স্বীকার করেছি তখন তারা অসত্য বলেছে।)
Zviv gy‡Li K_vq †Zvgv‡`i mš‘ó K‡i wKš‘ Zv‡`i gb Zv A¯^xKvi K‡i, Zv‡`i AwaKvskB dv‡mK : 9:8 (Pzw³ f½Kvix gyk‡iK‡`i m¤ú‡K© ejv n‡q‡Q),
gykwiK‡`i mv‡_ m¤úK© wQbœ Kiv n‡q‡Q Ges Zv‡`i mv‡_ K…Z mKj cÖKvi Pzw³ evwZj Kiv n‡q‡Q : 9:1,
gykwiK‡`i‡K Pvigvm mgq †`qv nj, nq Zviv hy× Ki‡e, bq Bmjvg MÖnY Ki‡e bq‡Zv †`k Z¨vM Ki‡e : 9:2-3,
‡Zvgiv Avjøvn‡K Aÿg I kw³ nxb Ki‡Z cvi‡e bv Avi mZ¨ A¯^xKviKvix‡`i‡K Avjøvn Aek¨B jvwÃZ Ki‡eb : 9:2-3,
gyk‡iK‡`i‡K †`qv Pvigv‡mi AeKvk †kl n‡q †M‡j Pzw³ f½Kvix gyk‡iK‡`i‡K †hLv‡b cvI nZ¨v Ki, Zv‡`i ai, †NivI Ki Ges cÖ‡Z¨K NvuwU‡Z Zv‡`i Rb¨ IuZ †c‡Z e‡m _v‡K: 9:5,
Avjøvn I ivm~‡ji cÿ †_‡K gyk‡iK‡`i Rb¨ †Kvb wbivcËvi A½xKvi †bB, Z‡e gymjgvb‡`i mv‡_ Pzw³e× gyk‡iKiv hviv Pzw³i A½xKvi h_vh_fv‡e cvjb Ki‡Q Zv‡`i K_v ¯^Zš¿ : 9:7-8,
Pzw³f½Kvix dvwmK gykwiKiv gymjgvb‡`i mv‡_ kÎæZvi †ÿ‡Î AvZœxqZvi †Kvb †Lqvj iv‡Lwb: 9:8, 10,
নবী ও যারা ঈমান এনেছে তাদের পক্ষে মুশরিকদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করা, সংগত নয়, তারা তাদের আত্মীয়-স্বজন হলেই বা কি এসে যায়, যখন একথা সুষ্পষ্ট হয়ে গেছে যে, তারা জাহান্নামেরই উপযুক্ত : ৯:১১৩,
ইবরাহীম তার বাপের জন্য যে মাগফিরাতের দোয়া করেছিল তা তো সেই ওয়াদার কারণে ছিল যা সে তার বাপের সাথে করেছিল্ কিন্তু যখন তার কাছে একথা পরিস্কার হয়ে গেছে যে, তার বাপ আল্লাহর দুশমন তখন সে তার প্রতি বিমুখ হয়ে গেছে৷ যথার্থই ইবরাহীম কোমল হৃদয়, আল্লাহভীরু ও ধৈর্যশীল ছিল:৯:১১৪,
(বিস্তারিত দেখুন : শ > শিরক )
﴿قَالَ رَبِّ احْكُم بِالْحَقِّ ۗ وَرَبُّنَا الرَّحْمَٰنُ الْمُسْتَعَانُ عَلَىٰ مَا تَصِفُونَ﴾
(২১:১১২) (শেষে) রসূল বললো : হে আমার রব! তুমি ন্যায়ের সাথে ফায়সালা করে দাও৷ আর হে লোকেরা ! তোমরা যেসব কথা তৈরি করছো তার মুকাবিলায় আমাদের দয়াময় রবই আমাদের সাহায্যকারী সহায়ক৷”
(বিস্তারিত: স > সাহায্য, দ > দোয়া > আল কুরআনে বরর্ণিত দোয়া সমূহ)
তাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট :৯:১০০ (عَنْهُ وَرَضُوا عَنْهُمْ اللَّهُ رَّضِيَ) ,
আল্লাহ নবীকে মাফ করে দিয়েছেন এবং অত্যন্ত কঠিন সময়ে যে মুহাজির ও আনসারগণ নবীর সাথে সহযোগীতা করেন তাদেরকেও মাফ করে দিয়েছেন৷ যদিও তাদের মধ্যে থেকে কিছু লোকের দিল বক্রতার দিকে আকৃষ্ট হতে যাচ্ছিল (কিন্তু তারা এ বক্রতার অনুগামী না হয়ে নবীর সহযোগী হয়েছেন৷ফলে) আল্লাহ তাদেরকে মাফ করে দিয়েছেন৷ নিসন্দেহে এ লোকদের প্রতি তিনি স্নেহশীল ও মেহেরবান : ৯:১১৭,
(৩৩-আহযাব: ৪) আল্লাহ কোন ব্যক্তির দেহাভ্যন্তরে দু’টি হৃদয় রাখেননি৷৫
৫. অর্থাৎ একজন লোক একই সংগে মু'মিন ও মুনাফিক, সত্যবাদী ও মিথ্যাবাদী এবং সৎ ও অসৎ হতে পারে না। তার বক্ষ দেশে দু'টি হৃদয় নেই যে, একটি হৃদয়ে থাকবে আন্তরিকতা এবং অন্যটিতে থাকবে আল্লাহর প্রতি বেপরোয়া ভাব। কাজেই একজন লোক এক সময় একটি মর্যাদারই অধিকারী হতে পারে। সে মু'মিন হবে অথবা হবে মুনাফিক। সে কাফের হবে অথবা হবে মুসলিম। এখন যদি তোমরা কোন মু'মিনকে মুনাফিক বলো অথবা মুনাফিককে মু'মিন, তাহলে তাতে প্রকৃত সত্যের কোন পরিবর্তন হবে না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আসল মর্যাদা অবশ্যই একটিই থাকবে।
(২৯-আনকাবুত:১১)আর আল্লাহতো অবশ্যই দেখবেন কারা ঈমান এনেছে এবং কারা মুনাফিক৷ ১৬
১৬ . অর্থাৎ মু'মিনদের ঈমান ও মুনাফিকদের মুনাফিকির অবস্থা যাতে উন্মুক্ত হয়ে যায় এবং যার মধ্যে যা কিছু লূকিয়ে আছে সব সামনে এসে যায় সে জন্য আল্লাহ বারবার পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন। একথাটিই সূরা আলে ইমরানে বলা হয়েছেঃ
"আল্লাহ মু'মিনদেরকে কখনো এমন অবস্থায় থাকতে দেবেন না , যে অবস্থায় এখন তোমরা আছো (অর্থাৎ সাচ্চা ঈমানদার ও মুনাফিক সবাই মিশ্রিত হয়ে আছো।) তিনি পবিত্র লোকদেরকে অপবিত্র লোকদের থেকে সুস্পষ্ট ভাবে আলাদা করে দেবেন।"( আলে-ইমরান : আয়াতঃ১৭৯)
( মুনাফিকদের আল্লাহর পথে খরচের স্বরূপ , মুনাফিকদের নামায
(আরো দেখুন : ক > কসম ।)
মুনাফিকেরা ভয় পায় কোরানের মাধ্যমে না আবার তাদের মনের কথা প্রকাশ হয়ে যায় : ৯:৬৪, তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা বলে “আমরা শুনলাম” অথচ তারা শোনে না : ৮:২১,
মুনাফিকদের পরিচয় :
তারা বিবেক বুদ্ধিকে কাজে লাগায় না : ৮:২২-২৩,
তারা সত্য বলেনা, মিথ্যা কথা বলে :৮:২২-২৩
তারা সত্য শুনতেও প্রস্তুত নয় :৮:২২-২৩
মুনাফিকেরা আল্লাহর পথে খরচ করে অনিচ্ছাকৃত ভাবে : ৯:৫৪,
তারা ফাসিক গোষ্ঠী : ৯:৫৩, ৯:৬৮, ৯:৯৬,
মুনাফিকরা কাফির : ৯:৫৪, ৫৫, ৮৫, ৮৪,
তাদেরকে ধনসম্পদ দেয়া হয়েছে শাস্তি স্বরূপ : ৯:৫৫, ৯:৮৫,
তারা যদি আল্লাহর পথে প্রাণও দিয়ে দেয় তখনও তারা থাকবে সত্য অস্বীকার করার অবস্থায় : ৯:৫৫,
তারা আল্লাহ ও রাসুলের সাথে কুফরী করেছে : ৯:৫৪, ৯:৮৪ (আল্লাহ ও রাসূলকে অস্বীকার করে),
তারা যখন নামাযে আসে তখন আসে আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে : ৯:৫৪,
তার মু’মিনদেরকে কসম করে বলে “আমরা তোমাদের দল ভুক্ত”:৯:৫৬ (অথচ তারা তোমাদের দলভূক্ত নয়),
মুনাফিকরা মু’মিনদেরকে ভয় পায় :৯:৫৭ (এ কারণেই তারা বলে আমরা তোমাদের দল ভূক্ত), মুনাফিকরা কসম খেয়ে খেয়ে মু’মিনদেরকে সন্তুষ্ট করতে চায় : ৯:৯৬,
তারা যদি লুকানোর জন্য কোন গিরিগুহা পায় তাহলে দৌড়ে গিয়ে সেখানে লুকিয়ে থাকবে :৯:৫৭,
মুনাফিকর অত্যন্ত লোভী, তাদেরকে কিছু দেয়া হলে তারা খুশি হয়, আর না দেয়া হলে বিগড়ে যেতে থাকে : ৯:৫৮,
মুনাফিকেরা নিজেদের কথার দ্বারা রাসুলকে কষ্ট দেয় : ৯:৬১ (তারা বলেছে : এ ব্যক্তি তো অতিশয় কান কথা শোনে) ,
মুনাফিকেরা মু’মিনদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য মু’মিনদের সামনে কসম খায়৷ অথচ যদি তারা যদি মুমিন হয়ে থাকে তাহলে তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে সন্তুষ্ট করার কথা চিন্তা করবে, কারণ তারাই এর বেশী হকদার -৯:৬২
মুনাফিক পুরুষ ও নারী পরস্পরের বন্ধু : ৯:৬৭,
তারা অসৎ কাজের আদেশ দেয় ও সৎ কাজে নিষেধ করে :৯:৬৭
মুনাফিকেরা কল্যাণকর কাজ থেকে নিজেদের হাত গুটিয়ে রাখে : ৯:৬৭,
তারা আল্লাহকে ভূলে গেছে ,ফলে আল্লাহও তাদেরকে ভুলে গেছেন : ৯:৬৭
মুনাফিকেরা ঠাট্টার ছলে মুসলমানদেরকে/রাসুল মুহাম্মদ সা: কে অনেক কটুকথা/ কুফরী কথা বলতো : ৯:৭৪,
আল্লাহ ও তাঁর রসূল নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দিয়েছেন বলেই কি মুনাফিকদের এত ক্রোধ ও আক্রোশ? : ৯:৭৪,
মুনাফিকদের গোপন কথা ও সলাপরামর্শসমূহ আল্লাহ জানেন : ৯:৭৮,
কিছু কিছু গ্রামীণ আরবের লোকেরা (আরব বেদুইনরা) জিহাদে না গিয়ে মুনাফিকীর পরিচয় দিয়েছিল, তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি : ৯:৯০,
এ আরব বেদুইনরা কুফরী ও মুনাফিকীতে বেশ কঠোর, তারা সুযোগের অপেক্ষায় আছে : ৯:৯৭-৯৮,
আরব বেদুইনদের মধ্যে এবং মদীনাবাসীদের মধ্যেও মুনাফিক রয়েছে, যারা মুনাফিকীতে অত্যন্ত পাকাপোক্ত, তোমরা তাদের চিননা কিন্তু আমি তাদেরকে চিনি: ৯:১০১ (তোমরা যাতে তাদেরকে চিনতে পারো তাই এ কুরআনের মাধ্যমে তাদের পরিচয় জানিয়ে দিচ্ছি),
মুনাফিকরা যদি মসজিদও নির্মাণ করে তবুও তা নির্মাণ করে মু’মিনদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ও মু’মিনদের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে ও নিজেদের মুনাফিকী কার্যকলাপের জন্য গোপন ঘাটি তৈরীর উদ্দেশ্যে : ৯:১০৭,
যখন কোন সূরা নাযিল হয়, এরা চোখের ইশারায় একে অন্যকে জিজ্ঞেস করে, তোমাদের কেউ দেখতে পায়নি তো? তারপর চুপে চুপে সরে পড়ে৷ আল্লাহ তাদের মন বিমুখ করে দিয়েছেন কারণ তারা এমন একদল লোক যাদের বোধশক্তি নেই-৯:১২৭
মুনাফিকেরা মু’মিনদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য মু’মিনদের সামনে কসম খায়৷ অথচ যদি তারা যদি মুমিন হয়ে থাকে তাহলে তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে সন্তুষ্ট করার কথা চিন্তা করবে, কারণ তারাই এর বেশী হকদার -৯:৬২
(১৬:৩৮) এরা আল্লাহর নামে শক্ত কসম খেয়ে বলে, “আল্লাহ কোনো মৃতকে পুনর্বার জীবিত করে উঠাবেন না৷”-কেন উঠাবেন না ? এতো একটি ওয়াদা, যেটি পুরা করা তিনি নিজের ওপর ওয়াজিব করে নিয়েছেন, কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না।
(৩৩-আহযাব: ৭২) আমি এ আমানতকে আকাশসমূহ, পৃথিবী ও পর্বতরাজির ওপর পেশ করি, তারা একে বহন করতে রাজি হয়নি এবং তা থেকে ভীত হয়ে পড়ে৷ কিন্তু মানুষ একে বহন করেছে, নিসন্দেহে সে বড় জালেম ও অজ্ঞ৷১২০ ৭৩) এ আমানতের বোঝা উঠাবার অনির্বায ফল হচ্ছে এই যে, আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ ও নারী এবং মুশরিক পুরুষ ও নারীদেরকে সাজা দেবেন এবং মু’মিন পুরুষ ও নারীদের তাওবা কবুল করবেন, আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়৷
(ব্যখ্যার জন্য দেখুন : আ > আমানত > আমনত কে খিলাফত বলা হয়েছে )
ক্লিক করুন : আমানত” শব্দের অর্থ যেখানে খিলাফত
(২৯-আনকাবুত:১০) লোকদের মধ্যে এমন কেউ আছে যে বলে, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি ১৩ কিন্তু যখন সে আল্লাহর ব্যাপারে নিগৃহীত হয়েছে তখন লোকদের চাপিয়ে দেয়া পরীক্ষাকে আল্লাহর আযাবের মতো মনে করে নিয়েছে৷ এখন যদি তোমার রবের পক্ষ থেকে বিজয় ও সাহায্য এসে যায় , তাহলে এ ব্যক্তিই বলবে, “আমরা তো তোমাদের সাথে ছিলাম”৷ বিশ্ববাসীদের মনের অবস্থা কি আল্লাহ ভালোভাবে জানেন না?
১৩ . যদিও বক্তা এক ব্যক্তিমাত্র কিন্তু সে "আমি ঈমান এনেছি" বলার পরিবর্তে বলছে, "আমরা ঈমান এনেছি"। ইমাম রাযী এর মধ্যে একটি সূক্ষ্ণ অর্থেও প্রতি ইঙ্গিত করেছেন । তিনি বলেন, মুনাফিক সবসময় নিজেকে মু'মিনদের মধ্যে শামিল করার চেষ্টা করে থাকে এবং নিজের ঈমানের উল্লেখ এমনভাবে করে থাকে যাতে মনে হয় সেও ঠিক অন্যদের মতই মু'মিন । এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে, যেমন কোন কাপুরুষ যদি কোন সেনাদলের সাথে গিয়ে থাকে এবং সেনাদলের অসম সাহসী সৈনিকেরা লড়াই করে শত্রুদলকে বিতাড়িত করে দিয়ে থাকে তাহলে কাপুরুষটি নিজে কোন কাজে অংশ গ্রহণ না করে থাকলেও সে এসে লোকদেরকে বলবে, আমরা গিয়েছি, আমরা ভীষণ যুদ্ধ করেছি এবং শত্রুকে পরাস্ত করেছি। অর্থাৎ সেও যেন সেই অমিত সাহসী যোদ্ধাদের সাথে মিলে যুদ্ধ করেছিল।
"এরা হচ্ছে এমন সব লোক যারা তোমাদের ব্যাপারে অপেক্ষা করছে (অর্থাৎ দেখছে, অবস্থা কোনদিকে মোড় নেয়)। যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের বিজয় হয়, তাহলে এসে বলবে, আমরা কি তোমাদের সাথে ছিলাম না ৷ আর যদি কাফেরদের পাল্লা ভারী থাকে, তাহলে তাদেরকে বলবে, আমরা কি তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সক্ষম ছিলাম না এবং এরপরও তোমাদেরকে মুসলমানদের হাত থেকে বাঁচাইনি ৷ (আন নিসাঃ১৪১)
(নুর:৪৭) তারা বলে, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহ ও রসূলের প্রতি এবং আমরা আনুগত্য স্বীকার করেছি কিন্তু এরপর তাদের মধ্য থেকে একটি দল (আনুগত্য থেকে ) মুখ ফিরিয়ে নেয় ৷ এ ধরনের লোকেরা কখনোই মু’মিন নয় ৷
(নুর:৪৮) যখন তাদেরকে ডাকা হয় আল্লাহ ও তাঁর রসূলের দিকে, যাতে রসূল তাদের পরস্পররে মোকদ্দমার ফায়সালা করে দেন তখন তাদের মধ্যকার একটি দল পাশ কাটিয়ে যায় ৷৪৯) তবে যদি সত্য তাদের অনুকূল থাকে, তাহলে বড়ই বিনীত হয়ে রসূলের কাছে আসে ৷৫০) তাদের মনে কি (মুনাফিকীর ) রোগ আছে ? না তারা সন্দেহের শিকার হয়েছে ? না তারা ভয় করছে আল্লাহ ও তাঁর রসূল তাদের প্রতি যুলুম করবেন ? আসলে তারা নিজেরাই যালেম ৷
(নুর:৪৭) তারা বলে, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহ ও রসূলের প্রতি এবং আমরা আনুগত্য স্বীকার করেছি কিন্তু এরপর তাদের মধ্য থেকে একটি দল (আনুগত্য থেকে ) মুখ ফিরিয়ে নেয় ৷ এ ধরনের লোকেরা কখনোই মু’মিন নয় ৷৪৮) যখন তাদেরকে ডাকা হয় আল্লাহ ও তাঁর রসূলের দিকে, যাতে রসূল তাদের পরস্পররে মোকদ্দমার ফায়সালা করে দেন তখন তাদের মধ্যকার একটি দল পাশ কাটিয়ে যায় ৷৪৯) তবে যদি সত্য তাদের অনুকূল থাকে, তাহলে বড়ই বিনীত হয়ে রসূলের কাছে আসে ৷৫০) তাদের মনে কি (মুনাফিকীর ) রোগ আছে ? না তারা সন্দেহের শিকার হয়েছে ? না তারা ভয় করছে আল্লাহ ও তাঁর রসূল তাদের প্রতি যুলুম করবেন ? আসলে তারা নিজেরাই যালেম ৷
(৩৩-আহযাব: ৩৬) যখন আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোনো বিষয়ের ফায়সালা দিয়ে দেন তখ কোনো মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীর সেই ব্যাপারে নিজে ফায়সালা করার কোনো অধিকার নেই৷ আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নাফরমানী করে সে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত হয়৷৬৬
এ আয়াত যদিও একটি বিশেষ সময়ে নাযিল হয় কিন্তু এর মধ্যে যে হুকুম বর্ণনা করা হয় তা ইসলামী আইনের একটি বড় মূলনীতি এবং সমগ্র ইসলামী জীবন ব্যবস্থার ওপর এটি প্রযুক্ত হয়। এর দৃষ্টিতে যে বিষয়ে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে কোন হুকুম প্রমাণিত হয় সে বিষয়ে কোন মুসলিম ব্যক্তি, জাতি, প্রতিষ্ঠান, আদালত, পার্লামেন্ট বা রাষ্ট্রের নিজের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা ব্যবহাম করার কোন অধিকার নেই। মুসলমান হবার অর্থই হচ্ছে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সামনে নিজের স্বাধীন ইখতিয়ার বিসর্জন দেয়া। কোন ব্যক্তি বা জাতি মুসলমানও হবে আবার নিজের জন্য এ ইখতিয়ারটিও সংরক্ষিত রাখবে। এ দু'টি বিষয় পরস্পর বিরোধী-এ দুটি কাজ এক সাথে হতে পারে না। কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি এ দু'টি দৃষ্টিভংগীকে একত্র করার ধারণা করতে পারে না। যে ব্যক্তি মুসলমান হিসেবে বেঁচে থাকতে চায় তাকে অবশ্যই আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সামনে আনুগত্যের শির নত করতে হবে। আর যে মুসলমান নয়। যদি সে না মানে তাহলে নিজেকে মুসলমান বলে যত জোরে গলা ফটিয়ে চিৎকার করুক না কেন আল্লাহ ও বান্দা উভয়ের দৃষ্টিতে সে মুনাফিকই গণ্য হবে।
(নুর:৪৯) তবে যদি সত্য তাদের অনুকূল থাকে, তাহলে বড়ই বিনীত হয়ে রসূলের কাছে আসে ৷৫০) তাদের মনে কি (মুনাফিকীর ) রোগ আছে ? না তারা সন্দেহের শিকার হয়েছে ? না তারা ভয় করছে আল্লাহ ও তাঁর রসূল তাদের প্রতি যুলুম করবেন ? আসলে তারা নিজেরাই যালেম ৷
(হাজ্ব:১১) আর মানুষের মধ্যে এমনও কেউ আছে, যে এক কিনারায় দাঁড়িয়ে আল্লাহর বন্দেগী করে,১৫ যদি তাতে তার উপকার হয় তাহলে নিশ্চিন্ত হয়ে যায় আর যদি কোনো বিপদ আসে তাহলে পিছনের দিকে ফিরে যায় ১৬ তার দুনিয়াও গেলো এবং আখেরাতও৷ এ হচ্ছে সুস্পষ্ট ক্ষতি৷১৭ ১২) তারপর সে আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদেরকে ডাকে যারা তার না ক্ষতি করতে পারে, না উপকার, এ হচ্ছে ভ্রষ্টতার চূড়ান্ত৷১৩) সে তাদেরকে ডাকে যাদের ক্ষতি তাদের উপকারের চাইতে নিকটতর১৮ নিকৃষ্ট তার অভিভাবক এবং নিকৃষ্ট তার সহযোগী৷১৯ ১৪) (পক্ষান্তরে) যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে ২০ আল্লাহ তাদেরকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত হবে; আল্লাহ যা চান তাই করেন৷২১
(১৫. অর্থাৎ দীনী বৃত্তের মধ্যখানে নয় বরং তার এক প্রান্তে বা কিনারায় অথবা অন্য কথায় কুফর ও ইসলামের সীমান্তে দাঁড়িয়ে বন্দেগী করে। যেমন কোন দো-মনা ব্যক্তি কোন সেনাবাহিনীর এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকে। যদি দেখে সেনাদল বিজয়লাভ করছে তাহলে তাদের সাথে মিলে যায় আর যদি দেখে পরাজিত হচ্ছে তাহলে আস্তে আস্তে কেটে পড়ে।
১৬. এখানে এমন সব লোকের কথা বলা হয়েছে যাদের মানসিক গঠন অপরিপক্ক, আকীদা-বিশ্বাস নড়বড়ে এবং যারা প্রবৃত্তির পূজা করে। তারা ইসলাম গ্রহণ করে লাভের শর্তে। তাদের ঈমান এ শর্তের সাথে জড়িত হয় যে, তাদের আকাংখা পূর্ণ হতে হবে, সব ধরণের নিশ্চিন্ততা অর্জিত হতে হবে, আল্লাহর দীন তাদের কাছে কোন স্বার্থ ত্যাগ দাবী করতে পারবে না এবং দুনিয়াতে তাদের কোন ইচ্ছা ও আশা অপূর্ণ থাকতে পারবে না। এসব হলে তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট এবং তার দীন তাদের কাছে খুবই ভালো। কিন্তু যখনই কোন আপদ বলাই নেমে আসে অথবা আল্লাহর পথে কোন বিপদ, কষ্ট ও ক্ষতির শিকার হতে হয় কিংবা কোন আকাংখা পূর্ণ হয় না তখনই আর আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতা, রসূলের রিসালাত ও দীনের সত্যতা কোনটাই ওপরই তারা নিশ্চিন্ত থাকে না। এরপর তারা এমন প্রতিটি বেদীমূলে মাথা নোয়াতে উদ্যেগী হয় যেখানে তাদের লাভের আশা ও লোকসান থেকে বেঁচে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
১৭. এখানে একটি অনেক বড় সত্যকে কয়েকটি কথায় প্রকাশ করে দেয়া হয়েছে। আসলে দো-মনা মুসলমানের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ হয়। কাফের যখন নিজের রবের মুখাপেক্ষী না হয়ে এবং পরকাল থেকে বেপরোয়া ও আল্লাহর আইনের অনুগত্য মুক্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে বস্তুগত স্বার্থের পেচনে দৌঁড়াতে থাকে তখন সে নিজের পরকাল হারালেও দুনিয়ার স্বার্থ কিছু না কিছু হাসিল করেই নেয়। আর মু'মিন যখন পূর্ণ ধৈর্য, অবিচলতা, দৃঢ় সংকল্প ও স্থৈর্য সহকারে আল্লাহর দীনের আনুগত্য করে তখন যদিও পার্থিব সাফল্য শেষ পর্যন্ত তার পদ-চুম্বন করেই থাকে, তবুও যদি দুনিয়া একেবারেই তার নাগালের বাইরে চলে যেতেই থাকে, আখেরাতে তার সাফল্য সুনিশ্চিত হয়। কিন্তু এ দো-মনা মুসলমান নিজের দুনিয়ার স্বার্থ লাভ করতে পারে না এবং আখেরাতেও তার সাফল্যের কোন সম্ভবনা থাকে না। তার মন ও মস্তিষ্কের কোন এক প্রকোষ্ঠ আল্লাহ ও আখেরাতের অস্তিত্বের যে ধারণা রয়েছে এবং ইসলামের সাথে সম্পর্ক তার মধ্যে নৈতিক সীমারেখা কিছু না কিছু মেনে চলার যে প্রবণতা সৃষ্টি করেছে, দুনিয়ার দিকে দৌড়াতে থাকলে এগুলো তার হাত টেনে ধরে। ফলে নিছক দুনিয়াবী ও বৈষয়িক স্বার্থ অন্বেষার জন্য যে ধরনের দৃঢ়তা ও একনিষ্ঠতার প্রয়োজন তা একজন কাফেরের মতো তার মধ্যে সৃষ্টি হয় না। আখেরাতের কথা চিন্তা করলে দুনিয়ার লাভ ও স্বার্থের লোভ, ক্ষতির ভয় এবং প্রবৃত্তির কামনা বাসনাকে বিধিনিষেধের শৃংখলে বেঁধে রাখার ব্যাপারে মানসিক অস্বীকৃতি সেদিকে যেতে দেয় না বরং বৈষয়িক স্বার্থ পূজা তার বিশ্বাস ও কর্মকে এমনভাবে বিকৃত করে দেয় যে, আখেরাতে তার শাস্তি থেকে নিষ্কৃতিলাভের সম্ভাবনা থাকে না। এভাবে সে দুনিয়া ও আখেরাত দুটোই হারায়।
১৮. প্রথম আয়াতে আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য মাবুদদের উপকার ও ক্ষতি করার ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করা হয়েছে। কারণ, মূলত ও যথার্থই তাদের উপকার ও ক্ষতি করার কোন ক্ষমতা নেই। দ্বিতীয় আয়াতে তাদের ক্ষতিকে উপকারের চেয়ে নিকটতর বলা হয়েছে। কারণ, তাদের কাছে দোয়া চেয়ে এবং অভাব ও প্রয়োজন পূরণের জন্য তাদের সামনে হাত পাতার মাধ্যমে সে নিজের ঈমান সংগে সংগেই ও নিশ্চিতভাবেই হারিয়ে বসে। তবে যে লাভের আশায় সে তাদেরকে ডেকেছিল তা অর্জিত হবার ব্যাপারে বলা যায়, প্রকৃত সত্যের কথা বাদ দিলেও প্রকাশ্য অবস্থার দৃষ্টিতে সে নিজেও একথা স্বীকার করবে যে, তা অর্জিত হওয়াটা নিশ্চিত নয় এবং বাস্তবে তা সংঘটিত হবার নিকটতর সম্ভাবনাও নেই । হতে পারে, আল্লাহ তাতে আরো বেশী পরিক্ষার সম্মুখীন করার জন্য কোন আস্তানায় তার মনোবাঞ্চনা পূর্ণ করেছেন। আবার এও হতে পারে যে, সে আস্তানায় সে নিজের ঈমানও বিকিয়ে দিয়ে এসেছে এবং মনোবাঞ্চনা পূর্ণ হয়নি।
১৯. অর্থাৎ মানুষ বা শয়তান যে-ই হোক না কেন, যে তাকে এ পথে এনেছে সে নিকৃষ্টতম কর্মসম্পাদক ও অভিভাবক এবং নিকৃষ্টতম বন্ধু ও সাথী।
২০. অর্থাৎ যাদের অবস্থা উল্লেখিত মতলবী, ধান্দাবাজ, দো-মনা ও দৃঢ় বিশ্বাসহীন মুসলমানের মতো নয় বরং যারা ঠান্ডা মাথায় খুব ভালোভাবে ভেবে চিন্তে আল্লাহ, রসূল ও আখেরাতকে মেনে নেবার ফায়সালা করে তারপর ভালো মন্দ যে কোন অবস্থার সম্মুখীন হতে হোক এবং বিপদের পাহাড় মাথায় ভেঙে পড়ুক বা বৃষ্টিধারার মতো পুরস্কার ঝড়ে পড়ুক সবাবস্থায় দৃঢ়পদে সত্যের পথে এগিয়ে চলে।
২১. অর্থাৎ আল্লাহ ক্ষমতা অসীম। দুনিয়ায় বা আখেরাতে অথবা উভয় স্থানে তিনি যাকে যা চান দিয়ে দেন এবং যার থেকে যা চান চিনিয়ে নেন। তিনি দিতে চাইলে বাধা দেবার কেউ নেই। না দিতে চাইলে আদায় করার ও কেউ নেই।)
(নুর:৪৯) তবে যদি সত্য তাদের অনুকূল থাকে, তাহলে বড়ই বিনীত হয়ে রসূলের কাছে আসে ৷৫০) তাদের মনে কি (মুনাফিকীর ) রোগ আছে ? না তারা সন্দেহের শিকার হয়েছে ? না তারা ভয় করছে আল্লাহ ও তাঁর রসূল তাদের প্রতি যুলুম করবেন ? আসলে তারা নিজেরাই যালেম ৷
(৩৩-আহযাব: ১৯) ……তারা কখনো ঈমান আনেনি, তাই আল্লাহ তাদের সমস্ত কর্মকাণ্ড ধ্বংস করে দিয়েছেন ৩২ এবং এমনটি করা আল্লাহর জন্য অত্যন্ত সহজ৷৩৩
৩২. অর্থাৎ ইসলাম গ্রহণ করার পর তারা যেসব নামায পড়েছে, রোযা রেখেছে, যাকাত দিয়েছে এবং বাহ্যত যেসব সৎকাজ করেছে সবকিছুকে মহান আল্লাহ নাকচ করে দেবেন এবং সেগুলোর কোন প্রতিদান তাদেরকে দেবেন না। কারণ আল্লাহর দরবারে কাজের বাহ্যিক চেহারার ভিত্তিতে ফায়সালা করা হয় না বরং এ বাহ্য চেহারার গভীরতম প্রদেশে বিশ্বাস ও আন্তরিকতা আছে কিনা তার ভিত্তিতে ফায়সালা করা হয়। যখন এ জিনিস আদতে তাদের মধ্যে নেই তখন এ লোক দেখানো কাজ একেবারেই অর্থহীন। এখানে এ বিষয়টি গভীরভাবে প্রণিধানযোগ্য যে, যেসব লোক আল্লাহ ও রসূলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল, নামায পড়ছিল, রোযা রাখছিল, যাকাতও দিচ্ছিল এবং মুসলমানদের সাথে তাদের অন্যান্য সৎকাজে শামিলও হচ্ছিল, তাদের সম্পর্কে পরিষ্কার ফায়সালা শুনিয়ে দেয়া হলো যে, তারা আদতে ঈমানই আনেনি। আর এ ফায়সালা কেবলমাত্র এরি ভিত্তিতে করা হলো যে, কুফর ও ইসলামের দ্বন্দে যখন কঠিন পরীক্ষার সময় এলো তখন তারা দোমনা হবার প্রমাণ দিল, দীনের স্বার্থের ওপর নিজের স্বার্থের প্রার্ধন্য প্রতিষ্ঠিত করলো এবং ইসলামের হেফাজতের জন্য নিজের প্রাণ, ধন-সম্পদ ও শ্রম নিয়োজিত করতে অস্বীকৃতি জানালো। এ থেকে জানা গেলো, ফায়সালার আসল ভিত্তি এসব বাহ্যিক কাজ-কর্ম নয়। বরং মানুষের বিশ্বস্ততা কার সাথে সম্পর্কিত তারি ভিত্তিতে এর ফায়সালা সূচিত হয়। যেখানে আল্লাহ ও তাঁর দীনের প্রতি বিশ্বস্ততা নেই সেখানে ঈমানের স্বীকৃতি এবং ইবাদাত ও অন্যান্য সৎকাজের কোন মূল্য নেই।
৩৩. অর্থাৎ তাদের কার্যাবলীর কোন গুরুত্ব ও মূল্য নেই। ফলে সেগুলো নষ্ট করে দেয়া আল্লাহর কাছে মোটেই কষ্টকর হবে না। তাছাড়া তারা এমন কোন শক্তিই রাখে না যার ফলে তাদের কার্যাবলী ধ্বংস করে দেয়া তার জন্য কঠিন হতে পারে।
তারা যদি মু’মিন হয় তবে নিজেদের গুণাহর জন্য লজ্জিত হয়ে অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে সঠিক পথে ফিরে আসবে, আর যদি প্রকৃতই মুনাফিক হয় তবেতো মুনাফিকী কার্যকলাপ চালিয়ে যেতে থাকবে: ৯:১০৫ (এখন থেকে তোমাদের কার্য কলাপ পর্যবেক্ষণ করবেন রাসূল সা: ও মুমিনরা)
যদি কেউ দুনিয়াতে নিজেদের মুনাফিকী লুকিয়েও রাখতে সক্ষম হয়, তবুও আদালতে আখিরাতে সে মুনাফিক হিসাবেই ধরা পড়বে : ৯:১০৫(তারপর তোমাদেরকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে নেয়া হবে যিনি প্রকাশ্যে ও গোপনে সবকিছু জানেন এবং তোমরা কি করতে তা তিনি তোমাদের বলে দেবেন ) ,
কোন গুণাহগার মুমিনের আচরণ থেকে যতক্ষণ পর্যন্ত সুষ্পষ্টভাবে প্রমাণিত না হবে যে, সে পরিস্কার মুনাফিক ততক্ষণ পর্যন্ত তার সাথে মু’মিনরা এমন কোন ব্যবহার করবে না যে ধরণের ব্যবহার (দেখুন মুনাফিকদের দুনিয়াতে শাস্তি) মুনাফিকদের সাথে করার জন্য মু’মিনদেরকে আল্লাহ হুকুম দিয়েছেন : ৯:১০৬ (অপর কিছু লোকের ব্যাপার এখনো আল্লাহর হুকুমের অপেক্ষায় আছে , তিনি চাইলে তাদেরকে শাস্তি দেবেন, আবার চাইলে তাদের প্রতি নতুন করে অনুগ্রহ করবেন৷ আল্লাহ সবকিছু জানেন তিনি জ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ)
তারা লোকদেরকে বললো, “এ প্রচণ্ড গরমের মধ্যে বের হয়ো না”৷ তাদেরকে বলে দাও,জাহান্নামের আগুন এর চেয়েও বেশী গরম , হায়! যদি তাদের সেই চেতনা থাকতো! - ৯:৮১,
এখন তাদের কম হাসা ও বেশী কাঁদা উচিত৷ কারণ তারা যে গুনাহ উপার্জন করেছে তার প্রতিদান এ ধরনেরই হয়ে থাকে: ৯:৮২,
(নুর:৫৪) বলো, ‘‘ আল্লাহর অনুগত হও এবং রসূলের হুকুম মেনে চলো ৷ কিন্তু যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও ৷ তাহলো ভালোভাবে জেনে রাখো, রসূলের ওপর যে দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে সে জন্য রাসূল দায়ী এবং তোমাদের ওপর যে দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে সে জন্য তোমরাই দায়ী ৷ তাঁর আনুগত্য করলে তোমরা নিজেরাই সৎ পথ পেয়ে যাবে, অন্যথায় পরিষ্কার ও দ্ব্যর্থহীন হুকুম শুনিয়ে দেয়া ছাড়া রসূলের আর কোন দায়িত্ব নেই ৷’’
যখন কোন নতুন সূরা নাযিল হয় তখন তাদের কেউ কেউ (ঠাট্রা করে মুসলমানদের ) জিজ্ঞেস করে, বলো, এর ফলে তোমাদের কার ঈমান বেড়ে গেছে? (এর জবাব হচ্ছে) যারা ঈমান এনেছে (প্রত্যেকটি অবতীর্ণ সুরা) যথার্থই ঈমান বাড়িয়েই দিয়েছে এবং তারা এর ফলে আনন্দিত৷ তবে যাদের অন্তরে (মুনাফিকী) রোগ বাসা বেঁধেছিল তাদের পূর্ব কলুষতার ওপর (প্রত্যেকটি নতুন সূরা) আরো একটি কলুষতা বাড়িয়ে দিয়েছে এবং তারা মৃত্যু পর্যন্ত কুফরীতে লিপ্ত রয়েছে- ৯:১২৪, ১২৫,
যখন কোন সূরা নাযিল হয়, এরা চোখের ইশারায় একে অন্যকে জিজ্ঞেস করে, তোমাদের কেউ দেখতে পায়নি তো? তারপর চুপে চুপে সরে পড়ে৷ আল্লাহ তাদের মন বিমুখ করে দিয়েছেন কারণ তারা এমন একদল লোক যাদের বোধশক্তি নেই -৯:১২৭
যেহেতু তারা ক্রমাগত ভাবে আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার সমূহ ভঙ্গ করে যাচ্ছিল, তাই আল্লাহ তাদের অন্তরে মুনাফিকী বদ্ধমুল করে দিলেন, তা কিয়ামত পর্যন্ত তাদের পিছু ছাড়বে না : ৭:৭৫-৭৭,
যখনই জিহাদের হুকুম নাযিল হয়েছে তখনই মুনাফিকরা ঘরে বসে থাকা মহিলাদের সাথে শামিল হয়ে ঘরে বসে থাকতে চেয়েছে, তাই আল্লাহর তাদের অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছেন : ৯:৮৬-৮৭, ৯:৯৩,
এ আরব বেদুইনরা কুফরী ও মুনাফিকীতে বেশ কঠোর, তারা সুযোগের অপেক্ষায় আছে : ৯:৯৭-৯৮,
মুনাফিকরা যদি মসজিদও নির্মাণ করে তবুও তা নির্মাণ করে মু’মিনদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ও মু’মিনদের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে ও নিজেদের মুনাফিকী কার্যকলাপের জন্য গোপন ঘাটি তৈরীর উদ্দেশ্যে : ৯:১০৭,
মুনাফিকদের জন্য রয়েছে অভিশাপ, মুনাফিকরা অভিশপ্ত : ৯:৬৮,
মুনাফিকরা মু’মিনদেরকে ভয় পায় :৯:৫৭ (এ কারণেই তারা বলে আমরা তোমাদের দল ভূক্ত), মুনাফিকরা কসম খেয়ে খেয়ে মু’মিনদেরকে সন্তুষ্ট করতে চায় : ৯:৯৬ (মু’মিনরা তুষ্ট হলেও আল্লাহ তুষ্ট হবেন না),
মুনাফিকদের কসম গ্রহণযোগ্য নয় :
তারা মু’মিনদেরকে কসম করে বলে “আমরা তোমাদের দল ভুক্ত”:৯:৫৬ (অথচ তারা তোমাদের দলভূক্ত নয়), ৯:১০৭ (তারা কসম করে বলে যে, ভালো ছাড়া আর কোন উদ্দেশ্যেই আমাদের ছিলনা, অথচ আল্লাহ স্বাক্ষী যে, তারা মিথ্যাবাদী), ৯:৭৪, ৯:৯৫, ৯:৯৪, (মুনাফিকদের কোন কথাই বিশ্বাস করা হবে না),
দুনিয়াতে মু’মিনরা তাদেরকে উপেক্ষা করে চলবে : ৯:৯৫, ৯:৯৬ (আল্লাহ কখনোই তাদের প্রতি তুষ্ট হবেন না),
মুনাফিকরা মিথ্যাবাদী : ৯:১০৭ (আল্লাহ স্বাক্ষী যে, তারা মিথ্যাবাদী)
মুনাফিকদের কার্যকলাপ আল্লাহ পর্যবেক্ষণ করছেন : ৯:৯৪,
ইসলামের বিরুদ্ধে মুনাফিকদের কোন কর্মপ্রচেষ্টা/ষড়যন্ত্র সফল হবে না : ৯:৭৪,
দুনিয়াতে তাদের পক্ষ অবলম্বনকারী ও সাহায্যকারী কেউ থাকবেনা : ৯:৭৪,
আল্লাহ দুনিয়ায় ও আখিরাতে মুনাফিকদের কঠোর যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি দিবেন : ৯:৭৪(যদি তারা তওবা করে তাদের মুনাফিকী কার্যকলাপ বন্ধ না করে) ,
তারা যেমন ঠাট্টা করছে, আল্লাহও তাদের সাথে ঠাট্টা করছেন, অর্থাৎ তাদেরকে ঈমানের তৌফিক দিচ্ছেন না এবং পরকলে তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তদ শাস্তি : ৯:৭৯,
কৃপণ ধনী মুনাফিক যারা নিজেরাতো আল্লাহর পথে ব্যয় করে না বরং যেসব মু’মিনরা আল্লাহর পথে জিহাদে ব্যয় করে তাদেরকে বিদ্রুপ করে, এ ধরণের মুনাফিকদের জন্য যদি রাসুল সা:ও সত্তর বার ক্ষমা প্রার্থনা করেন, তবুও তাদের ক্ষমা করা হবে না : ৯:৭৯-৮০,
মুনাফিকদের আল্লাহর পথে দান মু’মিনরা গ্রহণ করবে না, বরং প্রত্যাখ্যান করবে : (আরো দেখুন – মুনাফিকদের আল্লাহর পথে খরচের স্বরূপ অধ্যায় ) :
মুনাফিকেরা আল্লাহর পথে খরচ করে অনিচ্ছাকৃত ভাবে : ৯:৫৪, আরব বেদুইন মুনাফিকরা আল্লাহর পথে কিছু খরচকে জোরপূর্বক অর্থদন্ড মনে করে ৯:৯৮, মুনাফিকেরা স্বেচ্ছায় ব্যয় করুক অথবা অনিচ্ছাকৃতভাবে ব্যয় করুক তা কবুল করা হবে না, কেননা তারা ফাসিক : ৯:৫৩,
মুনাফিকরা ভবিষ্যতে কখনও নবীর সাথে জিহাদে যাওয়ার সুযোগ পাবে না : ৯:৮৩ (তোমরা তো প্রথমে বসে থাকাই পছন্দ করেছিলে, তাহলে এখন যারা ঘরে বসে আছে তাদের সাথে তোমারাও বসে থাকো),
মুনাফিকদের জানাযার নামায পড়ানো রাসূল সা: এর জন্য নিষেধ : ৯:৮৪,
মুনাফিকদের মৃত্যু হয় ফাসেক অবস্থায় : ৯:৮৪,
তাদের ধন সম্পদ ও সন্তান সন্ততি তাদের জন্য শাস্তি স্বরূপ : ৯:৫৫, ৯:৮৫,
আল্লাহ তাদের জন্য এটা অবধারিত করে দিয়েছেন যে, মুনাফিকদের মৃত্যু হবে কাফের অবস্থায় :৯:৮৫,
মুনাফিকেরা ভয় পায় কোরানের মাধ্যমে না আবার তাদের মনের কথা প্রকাশ হয়ে যায় : ৯:৬৪, অথচ আল্লাহ মু’মিনদেরকে মুনাফিকদের সম্পর্কে জানিয়ে দিয়েছেন : ৯:৯৪,
মুনাফিকরা অপবিত্র : ৯:৯৫
মুনাফিকদের জন্য রয়েছে দ্বিগুন শাস্তি : ৯:১০১ (এক: দুনিয়াতে তারা যে ধন সম্পদ ও মান মর্যাদার জন্য মুনাফিকী করেছিল, তার পরিবর্তে তারা পাবে লাঞ্ছনা আর অপমান, দুই : তোমাদেরকে তারা ব্যর্থ দেখতে চেয়েছিল, কিন্তু তাদের চোখের সামনেই তোমাদের উন্নতি ও বিকাশ লাভ ঘটতে থাকবে)
মুনাফিকেরা তাদের ইমারতের ভিত্তি স্থাপন করে ফাঁপা প্রান্তরে : ৯:১০৯, তারা এই যে ইমারত নির্মাণ করেছে এটা সবসময় তাদের মনে সন্দেহের কারণ হয়ে থাকবে (যার বের হয়ে যাওয়ার আর কোন উপায়ই এখন নেই) যে পর্যন্ত না তাদের অন্তর ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় (অর্থাৎ তারা বেঁচে থাকতে আর তাদের ঈমান আনার তৌফিক হয়ত নাও হতে পারে, মুনাফিকী কার্যকলাপের জন্যই এমনটি হয়) : ৯:১১০,
এ ধরনের জালেমদের কে আল্লাহ কখনো সোজা পথ দেখান না- ৯:১০৯,
হে ঈমানদারগণ! সত্য অস্বীকারকারীদের মধ্যে যারা তোমাদের নিকটবর্তী তাদের সাথে যুদ্ধ করো৷তারা যেন তোমাদের মধ্যে কঠোরতা দেখতে পায়৷ জেনে রাখো আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন – ৯:১২৩,
মুনাফিক ও কাফেরদের জন্য রয়েছে চিরকালীন জাহান্নামের আগুন : ৯:৬৮, ৭৯, ৯৫,
মুনাফিকদের জন্য রয়েছে অভিশাপ, মুনাফিকরা অভিশপ্ত : ৯:৬৮,
আল্লাহ দুনিয়ায় ও আখিরাতে মুনাফিকদের কঠোর যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি দিবেন : ৯:৭৪(যদি তারা তওবা করে তাদের মুনাফিকী কার্যকলাপ বন্ধ না করে) ,
কৃপণ ধনী মুনাফিক যারা নিজেরাতো আল্লাহর পথে ব্যয় করে না বরং যেসব মু’মিনরা আল্লাহর পথে জিহাদে ব্যয় করে তাদেরকে বিদ্রুপ করে, এ ধরণের মুনাফিকদের জন্য যদি রাসুল সা:ও সত্তর বার ক্ষমা প্রার্থনা করেন, তবুও তাদের ক্ষমা করা হবে না : ৯:৭৯-৮০,
তারপর আরো বেশী বড় শাস্তির জন্য তাদেরকে ফিরিয়া আনা হবে – ৯:১০১,
মুনাফিকেরা তাদের ইমারতের ভিত্তি স্থাপন করে ফাঁপা প্রান্তরে এবং এ ইমারত নিয়ে তারা সোজা জাহান্নামে গিয়ে পড়বে: ৯:১০৯,
(৫৭:১২) যেদিন তোমরা ঈমানদার নারী ও পুরুষদের দেখবে, তাদের ‘নূর’ তাদের সামনে ও ডান দিকে দৌড়াচ্ছে৷ (তাদেরকে বলা হবে) “আজ তোমাদের জন্য সুসংবাদ৷” জান্নাতসমূহ থাকবে যার পাদদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারাসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে৷ যেখানে তারা চিরকাল থাকবে৷ এটাই বড় সফলতা৷(৫৭:১৩) সেদিন মুনাফিক নারী পুরুষের অবস্থা হবে এই যে, তারা মু’মিনদের বলবেঃ আমাদের প্রতি একটু লক্ষ কর যাতে তোমাদের ‘নূর’ থেকে আমরা কিছু উপকৃত হতে পারি৷ কিন্তু তাদের বলা হবেঃ পেছনে চলে যাও৷ অন্য কোথাও নিজেদের ‘নূর’ তালাশ কর৷ অতপর একটি প্রাচীর দিয়ে তাদের মাঝে আড়াল করে দেয়া হবে৷ তাতে একটি দরজা থাকবে৷ সে দরজার ভেতরে থাকবে রহমত আর বাইরে থাকবে আযাব৷(৫৭:১৪) তারা ঈমানদারদের ডেকে ডেকে বলবে আমরা কি তোমাদের সাথে ছিলাম না? ঈমানদাররা জওয়াব দেবে হাঁ, তবে তোমরা নিজেরাই নিজেদেরকে ফিতনার মধ্যে নিক্ষেপ করেছিলে , সুযোগের সন্ধানে ছিলে, সন্দেহে নিপতিত ছিলে এবং মিথ্যা আশা-আকাংখা তোমাদেরকে প্রতারিত করেছিলো৷ শেষ পর্যন্ত আল্লাহর ফায়সালা এসে হাজির হলো এবং শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত সে বড় প্রতারক আল্লাহর ব্যাপারে প্রতারণা করে চললো৷ (৫৭: ১৫) অতএব, তোমাদের নিকট থেকে আর কোন বিনিময় গ্রহণ করা হবে না৷ আর তাদের নিকট থেকেও গ্রহণ করা হবে না যারা সুস্পষ্টভাবে কুফরীরতে লিপ্ত ছিল৷ তোমাদের ঠিকানা জাহান্নাম ৷ সে (জাহান্নাম) তোমাদের খোঁজ খবর নেবে৷ এটা অত্যন্ত নিকৃষ্ট পরিণতি৷
(হাজ্ব:৫২) আর হে মুহাম্মাদ! তোমার পূর্বে আমি এমন কোনো রসূল ও নবী পাঠাইনি (যার সাথে এমন ঘটনা ঘটেনি যে) যখন সে তামান্না করেছে৷ শয়তান তার তামান্নায় বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে৷৯৮ এভাবে শয়তান যাকিছু বিঘ্ন সৃষ্টি করে আল্লাহ তা দূর করে দেন এবং নিজের আয়াতসমূহকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন, আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়৷
(৯৮. অর্থাৎ, যখনই নবী রাসুলগণ লোকদেরকে আল্লাহর বাণী শুনিয়েছেন তখনই শয়তান সে সম্পর্কে লোকদের মনে নানা সন্দেহ-সংশয় ও আপত্তি সৃষ্টি করে দিয়েছে, সেগুলোর অদ্ভুত অদ্ভুত অর্থ তাদের সামনে তুলে ধরেছে এবং একমাত্র সঠিক অর্থটি ছাড়া বাকি সব ধরনের উলটা-পালটা অর্থ লোকদেরকে বুঝিয়েছে।)
(হাজ্ব:৫৩) (তিনি এজন্য এমনটি হতে দেন) যাতে শয়তানের নিক্ষিপ্ত অনিষ্টকে পরীক্ষায় পরিণত করেন তাদের জন্য যাদের অন্তরে (মুনাফিকীর) রোগ রয়েছে এবং যাদের হৃদয়বৃত্তি মিথ্যা-কলূষিত-আসলে এ জালেমরা শত্রুতায় অনেক দূরে পৌঁছে গেছে।
(হাজ্ব:৫৫) অস্বীকারকারীরা তো তার পক্ষ থেকে সন্দেহের মধ্যেই পড়ে থাকবে যতক্ষণ না তাদের ওপর কিয়ামত এসে পড়বে অকস্মাত অথবা নাযিল হয়ে যাবে একটি ভাগ্যাহত দিনের শাস্তি৷
(২৯-আনকাবুত:১১) আর আল্লাহ তো অবশ্যই দেখবেন কারা ঈমান এনেছে এবং কারা মুনাফিক৷ ১৬
১৬ . অর্থাৎ মু'মিনদের ঈমান ও মুনাফিকদের মুনাফিকির অবস্থা যাতে উন্মুক্ত হয়ে যায় এবং যার মধ্যে যা কিছু লূকিয়ে আছে সব সামনে এসে যায় সে জন্য আল্লাহ বারবার পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন। একথাটিই সূরা আলে ইমরানে বলা হয়েছেঃ
------------------------------------
"আল্লাহ মু'মিনদেরকে কখনো এমন অবস্থায় থাকতে দেবেন না , যে অবস্থায় এখন তোমরা আছো (অর্থাৎ সাচ্চা ঈমানদার ও মুনাফিক সবাই মিশ্রিত হয়ে আছো।) তিনি পবিত্র লোকদেরকে অপবিত্র লোকদের থেকে সুস্পষ্ট ভাবে আলাদা করে দেবেন।"(আয়াতঃ১৭৯)
(হাজ্ব:৫৪) --এবং যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে তারা জেনে নেয় যে, তোমার রবের পক্ষ থেকে এটা সত্য এবং তারা এর প্রতি ঈমান আনে এবং এর সামনে তাদের অন্তর ঝুঁকে পড়ে; যারা ঈমান আনে তাদেরকে অবশ্যই আল্লাহ চিরকাল সত্য-সরল পথ দেখিয়ে থাকেন৷
(নুর:৬৩) ...আল্লাহ তাদেরকে ভালো করেই জানেন যারা তোমাদের মধ্যে একে অন্যের আড়ালে চুপিসারে সটকে পড়ে৷১০৩
(১০৩ . মুনাফিকদের আর একটি আলামত হিসেবে একথাটি বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, ইসলামী সামগ্রীক কাজের জন্য যখন ডাকা হয় তখন তারা এসে যায় ঠিকই কিন্তু এ উপস্থিতি তাদের কাছে অত্যন্ত বিরক্তিকর ও অপছন্দনীয় হয়, ফলে কোন রকম গা ঢাকা দিয়ে তারা সরে পড়ে।)
(নুর:৫৩) এ মুনাফিকরা আল্লাহর নামে শক্ত কসম খেয়ে, বলে, ‘‘ আপনি হুকুম দিলে আমরা অবশ্যই ঘর থেকে বের হয়ে পড়বো ৷ ’’ তাদেরকে বলো, ‘‘ কসম খেয়ো না , তোমাদের আনুগত্যের অবস্থা জানা আছে ৷ তোমাদের কার্যকালাপ সম্বন্ধে আল্লাহ বেখবর নন৷
মুনাফিকরা ইসলাম তথা আল্লাহ রাসূল ও কুরআনকে নিয়ে হাসি তামাশা করে : ৯:৬৫,
মুসলমানদের ধর্মই মুসলমানদের মাথা বিগড়ে দিয়েছে, (তাই তরা জিহাদ করে এবং সামনে মৃত্যুগুহা দেখেও যুদ্ধে ঝপিয়ে পড়ে) - ৮:৪৯ (বদর যুদ্ধের সময় মদীনার মুনাফিকদের বক্তব্য),
তারা মুখের কথা মু’মিনদের সন্তুষ্ট করে কিন্তু তাদের মন তা অস্বীকার করে তাদের অধিকাংশই ফাসেক: ৯:৮ (চুক্তিভঙ্গকারী মুশরিকদের সম্পর্কে বলা হয়েছে),
যুদ্ধে যদি সহজ ভাবে কিছু লাভ করার সম্ভাবনা থাকতো এবং ভ্রমন যদি সহজ হতো তাহলেই শুধুমাত্র মুনাফিকরা জিহাদে যোগদান করতো : ৯:৪২,
মুনাফিকদের জন্য জিহাদের পথ বড়ই কঠিন : ৯:৪২ (তারা নিজেরাই নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে),
মুনাফিকেরা কসম করে বলে যদি আমরা চলতে পারতাম তবে অবশ্যই মু’মিনদের সাথে জিহাদে বের হতাম: ৯:৪২ (যদি আমরা চলতে পারতাম তবে অবশ্যই তোমাদের সাথে চলতাম),
মুনাফিকেরা মিথ্যাবাদী আল্লাহ তা জানেন : ৯:৪২,
মুনাফিকেরা জিহাদে যাওয়া থেকে অব্যাহতি চাইলে আল্লাহর রাসূল সা; তাদেরকে অব্যাহতি কেন দিলেন – আল্লাহর প্রশ্ন : ৯:৪৩ (যদি অব্যহতি না দিতেন তাহলে মুনাফিকদের মিথ্যা ঈমানের দাবী প্রমাণিত হয়ে যেত),
যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে তারা কখনো জান মাল বিসর্জন দিয়ে জিহাদ/যুদ্ধ থেকে অব্যহতি চাইতে পারেনা : ৯:৪৪,
জিহাদ / যুদ্ধ থেকে তো অব্যহতি চায় তারাই যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখেনা, বরং সন্দেহ পোষণ করে : ৯:৪৫
জিহাদে যেতে ইচ্ছুক কিনা তা বোঝা যাবে ব্যক্তির প্রস্ততি দেখে : ৯:৪৬,
যারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী নয় বরং সন্দেহ পোষণ করে এবং মিথ্যা ঈমানের দাবী করে ও জিহাদে যেতে মোটেও ইচ্ছুক নয়, আল্লাহ শেষ পর্যন্ত এ ধরণের লোকদের থেকে জিহাদে যাবার তৌফিক ছিনিয়ে নেন : ৯:৪৬ (বসে থাকো, যারা বসে আছে তাদের সাথে ),
আসলে মুনাফিকদেরকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে যুদ্ধে নেয়া উচিত নয়, তাহলে তারা বরং আরো মু’মিনদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করবে : ৯:৪৭ (আল্লাহ জালিমদের ভালোভাবেই চিনেন)।
ইতিপূর্বেও মুনাফিকরা যুদ্ধ সম্পর্কিত ফিতনা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল : ৯:৪৮ (কিন্তু আল্লাহ তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন),
মুনাফিকরা জিহাদ থেকে অব্যাহতি চাওয়ার জন্য বলে যে, “আমাকে পাপের ঝুঁকির মধ্যে ফেলবেন না” - ৯:৪৯ ( শুনে রাখো, এরা তো ঝুঁকির মধ্যেই পড়ে আছে এবং জাহান্নাম এ কাফেরদের ঘিরে রেখেছে৷)
মু’মিনদের কোন কল্যাণ হলে মুনাফিকরা কষ্ট পায় আর মু’মিনদের উপর কোন বিপদ এলে বা কোন বিপরযয় এলে মুনাফিকেরা বলে আমরা যুদ্ধে না গিয়ে ভালোই করেছি : ৯:৫০ (“ভালোই হয়েছে” আমরা তো আগেই আমাদের ব্যাপার সেরে নিয়েছি )
এবং মুনাফিকেরা আল্লাহর পথে খরচ করে অনিচ্ছাকৃত ভাবে : ৯:৫৪,
মু’মিনদের বক্তব্য : আমরা তোমাদের ব্যাপারে যে জিনিসের অপেক্ষায় আছি তা হচ্চে এই যে আল্লাহ হয় নিজেই তোমাদের শাস্তি দেবেন, না হয় আমাদের হাত দিয়ে দেয়াবেন (জিহাদ যুদ্ধের মাধ্যমে), তাহলে এখন তোমরা অপেক্ষা করোএবং আমরা ও তোমাদের সাথে অপেক্ষায় থাকছি”-৯:৫২,
মু’মিনদের বক্তব্য “তোমরা আমাদের ব্যাপারে যে জিনিসের অপেক্ষায় আছো তা দু’টি ভালোর মধ্যে একটি ভালো ছাড়া আর কি ? “ – ৯:৫২,
(ব্যাখ্যা : মুনাফিকরা তাদের অভাস অনুযায়ী এ সময়ও কুফর ও ইসলামের সংঘাতে অংশ না নিয়ে নিজেরা চরম বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিচ্ছে বলে মনে করেছিল।এ সংঘাতের পরিণামে রসূল ও তার সাহাবীরা বিজয়ীর বেশে ফিরে আসেন , না রোমীদের সামরিক শক্তির সাথে সংঘর্ষে ছিন্নভিন্ন হয়ে যান, দূরে বসে তারা তা দেখতে চাচ্ছিল। এখানে তাদের প্রত্যাশার জবাব দেয়া হয়েছিল। বলা হয়েছে , দুটি ফলাফলের মধ্যে তোমরা একটির প্রকাশের অপেক্ষা করছো। অথচ ঈমানদারদের জন্য উভয় ফলাফলই যথার্থ ভাল ও কল্যাণ ছাড়া আর কিছুই নয়। তারা বিজয়ী হলে, এটা যে তাদের জন্য ভাল একথা সবার জানা । কিন্তু নিজেদের উদ্দেশ্য সম্পাদনের পথে প্রাণ দান করে যদি তারা মাটিতে বিলীন হয়ে যায়, তাহলে দুনিয়াবাসীরা তাদের চরম ব্যর্থ বলে মনে করলেও প্রকৃতপক্ষে এটিও আর এক রকমের সাফল্য। কারণ মুমিন একটি দেশ জয় করলো কি করলো না অথবা কোন সরকার প্রতিষ্ঠিত করলো কি না, এটা তার সাফল্য ও ব্যর্থতার মাপকাঠি নয়। বরং মুমিন তার আল্লাহর কালেমা বুলন্দ করার জন্য নিজের মন, মস্তিস্ক ,দেহ ও প্রাণের সমুদয় শক্তি নিয়োজিত করেছে কিনা, এটাই তার মাপকাঠি । এ কাজ যদি সে করে থাকে তাহলে দুনিয়ার বিচারে তার ফলাফল শূণ্য হলেও আসলে সে সফলকাম )
(২৯-আনকাবুত:১১) আর আল্লাহ তো অবশ্যই দেখবেন কারা ঈমান এনেছে এবং কারা মুনাফিক৷ ১৬
১৬ . অর্থাৎ মু'মিনদের ঈমান ও মুনাফিকদের মুনাফিকির অবস্থা যাতে উন্মুক্ত হয়ে যায় এবং যার মধ্যে যা কিছু লূকিয়ে আছে সব সামনে এসে যায় সে জন্য আল্লাহ বারবার পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন। একথাটিই সূরা আলে ইমরানে বলা হয়েছেঃ
------------------------------------
"আল্লাহ মু'মিনদেরকে কখনো এমন অবস্থায় থাকতে দেবেন না , যে অবস্থায় এখন তোমরা আছো (অর্থাৎ সাচ্চা ঈমানদার ও মুনাফিক সবাই মিশ্রিত হয়ে আছো।) তিনি পবিত্র লোকদেরকে অপবিত্র লোকদের থেকে সুস্পষ্ট ভাবে আলাদা করে দেবেন।"(আয়াতঃ১৭৯)
(৩৩-আহযাব: ১২) স্মরণ করো যখন মুনাফিকরা এবং যাদের অন্তরে রোগ ছিল তারা পরিস্কার বলছিল, আল্লাহ ও তাঁর রসূল আমাদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন২২ তা ধোঁকা ছাড়া আর কিছুই ছিল না৷
২২. অর্থাৎ এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি যে, ঈমানদাররা আল্লাহর সাহায্য -সমর্থন লাভ করবে এবং তাদেরকে চূড়ান্ত বিজয় দান করা হবে।
(৩৩-আহযাব: ১৩) যখন তাদের মধ্য থেকে একটি দল বললো, হে ইয়াসরিববাসীরা! তোমাদের জন্য এখন অবস্থান করার কোন সুযোগ নেই, ফিরে চলো৷২৩ যখন তাদের একপক্ষ নবীর কাছে এই বলে ছুটি চাচ্ছিল যে, আমাদের গৃহ বিপদাপন্ন,২৪ অথচ তা বিপদাপন্ন ছিল না২৫ আসলে তারা (যুদ্ধক্ষেত্র থেকে) পালাতে চাচ্ছিল৷ ১৪) যদি শহরের বিভিন্ন দিক থেকে শত্রুরা ঢুকে পড়তো এবং সেসময় তাদেরকে ফিতনা সৃষ্টি করার জন্য আহবান জানানো হতো, ২৬ তাহলে তারা তাতেই লিপ্ত হয়ে যেতো এবং ফিতনায় শরীক হবার ব্যাপারে তারা খুব কমই ইতস্তত করতো৷ ১৫) তারা ইতিপূর্বে আল্লাহর সাথে অংগীকার করেছিল যে, তারা পৃষ্টপ্রদর্শন করবে না এবং আল্লাহর সাথে করা অংগীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা তো হবেই৷২৭ ১৬) হে নবী! তাদেরকে বলো, যদি তোমরা মৃত্যু বা হত্যা থেকে পলায়ন করো, তাহলে এ পলায়নে তোমাদের কোনো লাভ হবে না৷ এরপর জীবন উপভোগ করার সামান্য সুযোগই তোমরা পাবে৷২৮ ১৭) তাদেরকে বলো, কে তোমাদের রক্ষা করতে পারে আল্লাহর হাত থেকে যদি তিনি তোমাদের ক্ষতি করতে চান ? আর কে তাঁর রহমতকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে যদি তিনি চান তোমাদের প্রতি মেহেরবাণী করতে ? আল্লাহর মুকাবিলায় তো তারা কোনো পৃষ্ঠপোষক ও সাহায্যকারী লাভ করতে পারে না৷১৮) আল্লাহ তোমাদের মধ্য থেকে তাদেরকে খুব ভালো করেই জানেন যারা (যুদ্ধের কাজে) বাধা দেয়, যারা নিজেদের ভাইদেরকে বলে, “এসো আমাদের দিকে,”২৯ যারা যুদ্ধে অংশ নিলেও নিয়ে থাকে শুধুমাত্র নামকাওয়াস্তে৷ ১৯) যারা তোমাদের সাথে সহযোগিতা করার ব্যাপারে বড়ই কৃপণ৷ ৩০ বিপদের সময় এমনভাবে চোখ উলটিয়ে তোমাদের দিকে তাকাতে থাকে যেন কোনো মৃত্যুপথযাত্রী মূর্ছিত হয়ে যাচ্ছে কিন্তু বিপদ চলে গেলে এ লোকেরাই আবার স্বার্থলোভী হয়ে তীক্ষ্ণ ভাষায় তোমাদেরকে বিদ্ধ করতে থাকে৷ ৩১ তারা কখনো ঈমান আনেনি, তাই আল্লাহ তাদের সমস্ত কর্মকাণ্ড ধ্বংস করে দিয়েছেন ৩২ এবং এমনটি করা আল্লাহর জন্য অত্যন্ত সহজ৷৩৩ ২০) তারা মনে করছে আক্রমণকারী দল এখনো চলে যায়নি৷ আর যদি আক্রমণকারীরা আবার এসে যায়, তাহলে তাদের মন চায় এ সময় তারা কোথাও মরুভূমিতে বেদুইনের মধ্যে গিয়ে বসতো এবং সেখান থেকে তোমাদের খবরাখবর নিতো৷ তবুও যদি তারা তোমাদের মধ্যে থাকেও তাহলে যুদ্ধে খুব কমই অংশ নেবে৷
২৩. এ বাক্যটি দুটি অর্থে বলা হয়েছে । এর বাহ্যিক অর্থ হচ্ছে, খন্দকের সামনে কাফেরদের মোকাবিলায় অবস্থান করার কোন অবকাশ নেই। শহরের দিকে চলো । আর এর গূঢ় অর্থ হচ্ছে, ইসলামের ওপর অবস্থান করার কোন অবকাশ নেই। এখন নিজেদের পৈতৃক ধর্মে ফিরে যাওয়া উচিত। এর ফলে সমস্ত আরব জাতির শক্রতার মুখে আমরা যেভাবে নিজেদেরকে সপেঁ দিয়েছি তা থেকে রক্ষা পেয়ে যাবো। মুনাফিকরা নিজ মুখে এসব কথা এ জন্য বলতো যে, তাদের ফাঁদে যে পা দেবে তাকে নিজেদের গূঢ় উদ্দেশ্য বুঝিয়ে দেবে এবং যে তাদের কথা শুনে সর্তক হয়ে যাবে এবং তাদেরকে পাকড়াও করবে নিজেদের শব্দের বাহ্যিক আবরনের আড়ালে গিয়ে তাদের পাকড়াও থেকে বেঁচে যাবে ।
২৪. অর্থাৎ যখন বনু কুরাইযাও হানাদারদের সাথে হাত মিলালো তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সেনাদল থেকে কেটে পড়ার জন্য মুনাফিকরা একটি চমৎকার বাহানা পেয়ে গেলো এবং তারা এই বলে ছুটি চাইতে লাগলো যে, এখন তো আমাদের ঘরই বিপদের মুখে পড়ে গিয়েছে, কাজেই ঘরে ফিরে গিয়ে আমাদের নিজেদের পরিবার ও সন্তানদের হেফাজত করার সুযোগ দেয়া উচিত। অথচ সেসময় সমগ্র মদীনাবাসীদের হেফাজতের দায়িত্ব ছিল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর। বনী কুরাইযার চুক্তি ভংগের ফলে যে বিপদ দেখা দিয়েছিল তার হাত থেকে শহর ও শরহরবাসীদেরকে রক্ষা করার ব্যবস্থা করা ছিল রসূলের (সা) কাজ, পৃথক পৃথকভাবে একেকজন সৈনিকের কাজ ছিল না।
২৫. অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই তো এ বিপদ থেকে উদ্ধার করার ব্যবস্থা করেছিলেন। এ ব্যবস্থাপনাও তাঁর প্রতিরক্ষা পরিকল্পনার একট অংশ ছিল এবং সেনাপতি হিসেবে তিনি এ ব্যবস্থা কার্যকর করার কাজে ব্যাপৃত ছিলেন। কাজেই সে সময় কোন তাৎক্ষণিক বিপদ দেখা দেয়নি। এ কারণে তাদের এ ধরনের ওজর পেশ করা কোন পর্যায়েও যুক্তিসংগত ছিল না।
২৬. অর্থাৎ যদি নগরে প্রবেশ করে কাফেররা বিজয়ীর বেশে এ মুনাফিকদেরকে এই বলে আহবান জানাতো, এসো আমাদের সাথে মিলে মুসলমানদেরকে খতম করো।
২৭. অর্থাৎ ওহোদ যুদ্ধের সময় তারা যে দুর্বলতা দেখিয়েছিল তারপর লজ্জা ও অনুতাপ প্রকাশ করে তারা আল্লাহর কাছে অংগীকার করেছিল যে, এবার যদি পরীক্ষার কোন সুযোগ আসে তাহলে তারা নিজেদের এ ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করবে। কিন্তু আল্লাহকে নিছক কথা দিয়ে প্রতারণা করা যেতে পারে না। যে ব্যক্তিই তাঁর সাথে কোন অংগীকার করে তাঁর সামনে তিনি পরীক্ষার কোন না কোন সুযোগ এনে দেন। এর মাধ্যমে তার সত্য ও মিথ্যা যাচাই হয়ে যায়। তাই ওহোদ যুদ্ধের মাত্র দু'বছর পরেই তিনি তার চাইতেও বেশী বড় বিপদ সামনে নিয়ে এলেন এবং এভাবে তারা তাঁর সাথে কেমন ও কতটুকু সাচ্চা অংগীকার করেছিল তা যাচাই করে নিলেন।
২৮. অর্থাৎ এভাবে পলায়ন করার ফলে তোমাদের আয়ু বেড়ে যাবে না। এর ফলে কখনোই তোমরা কিয়ামত পর্যন্ত বেঁচে থাকতে এবং সারা দুনিয়া জাহানের ধন-দৌলত হস্তগত করতে পারবে না। পালিয়ে বাঁচলে বড় জোর কয়েক বছরই বাঁচবে এবং তোমাদের জন্য যতটুকু নির্ধারিত হয়ে আছে ততটুকুই জীবনের আয়েশ-আরাম ভোগ করতে পারবে।
২৯. অর্থাৎ এ নবীর দল ত্যাগ করো। কেন তোমরা দীন, ঈমান, সত্য ও সততার চক্করে পড়ে আছো৷ নিজেদেরকে বিপদ-আপদ, ভীতি ও আশংকার মধ্যে নিক্ষেপ করার পরিবর্তে আমাদের মতো নিরাপদে অবস্থান করার নীতি অবলম্বন করার নীতি অবলম্বন করো।
৩০. অর্থাৎ সাচ্চা মু'মিনরা যে পথে তাদের সবকিছু উৎসর্গ করে দিচ্ছে সেপথে তারা নিজেদের শ্রম, সময়, চিন্তা ও সহায়-সম্পদ স্বেচ্ছায় ও সানন্দে ব্যয় করতে প্রস্তুত নয়। প্রাণপাত করা ও বিপদ মাথা পেতে নেয়া তো দূরের কথা কোন কাজেও তারা নির্দ্বধায় মু'মিনদের সাথে সহযোগিতা করতে চায় না।
৩১. আভিধানিক দিক দিয়ে আয়াতটির দু'টি অর্থ হয়। এক, যুদ্ধের ময়দান থেকে সাফল্য লাভ করে যখন তোমরা ফিলে আসো তখন তারা বড়ই হৃদ্যতা সহকারে ও সাড়ম্বরে তোমাদেরকে স্বাগত জানায় এবং বড় বড় বুলি আউড়িয়ে এই বলে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করে যে, আমরাও পাক্কা মু'মিন এবং এ কাজ সম্প্রসারণে আমরাও অংশ নিয়েছি কাজেই আমরাও গনীমাতের মালের হকদার। দুই, বিজয় অর্জিত হলে গনীমাতের মাল ভাগ করার সময় তাদের কন্ঠ বড়ই তীক্ষ্ণ ও ধারাল হয়ে যায় এবং তারা অগ্রবর্তী হয়ে দাবী করতে থাকে, আমাদের বাগ দাও, আমরাও কাজ করেছি, সবকিছু তোমরাই লুটে নিয়ে যেয়ো না।
৩২. অর্থাৎ ইসলাম গ্রহণ করার পর তারা যেসব নামায পড়েছে, রোযা রেখেছে, যাকাত দিয়েছে এবং বাহ্যত যেসব সৎকাজ করেছে সবকিছুকে মহান আল্লাহ নাকচ করে দেবেন এবং সেগুলোর কোন প্রতিদান তাদেরকে দেবেন না। কারণ আল্লাহর দরবারে কাজের বাহ্যিক চেহারার ভিত্তিতে ফায়সালা করা হয় না বরং এ বাহ্য চেহারার গভীরতম প্রদেশে বিশ্বাস ও আন্তরিকতা আছে কিনা তার ভিত্তিতে ফায়সালা করা হয়। যখন এ জিনিস আদতে তাদের মধ্যে নেই তখন এ লোক দেখানো কাজ একেবারেই অর্থহীন। এখানে এ বিষয়টি গভীরভাবে প্রণিধানযোগ্য যে, যেসব লোক আল্লাহ ও রসূলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল, নামায পড়ছিল, রোযা রাখছিল, যাকাতও দিচ্ছিল এবং মুসলমানদের সাথে তাদের অন্যান্য সৎকাজে শামিলও হচ্ছিল, তাদের সম্পর্কে পরিষ্কার ফায়সালা শুনিয়ে দেয়া হলো যে, তারা আদতে ঈমানই আনেনি। আর এ ফায়সালা কেবলমাত্র এরি ভিত্তিতে করা হলো যে, কুফর ও ইসলামের দ্বন্দে যখন কঠিন পরীক্ষার সময় এলো তখন তারা দোমনা হবার প্রমাণ দিল, দীনের স্বার্থের ওপর নিজের স্বার্থের প্রার্ধন্য প্রতিষ্ঠিত করলো এবং ইসলামের হেফাজতের জন্য নিজের প্রাণ, ধন-সম্পদ ও শ্রম নিয়োজিত করতে অস্বীকৃতি জানালো। এ থেকে জানা গেলো, ফায়সালার আসল ভিত্তি এসব বাহ্যিক কাজ-কর্ম নয়। বরং মানুষের বিশ্বস্ততা কার সাথে সম্পর্কিত তারি ভিত্তিতে এর ফায়সালা সূচিত হয়। যেখানে আল্লাহ ও তাঁর দীনের প্রতি বিশ্বস্ততা নেই সেখানে ঈমানের স্বীকৃতি এবং ইবাদাত ও অন্যান্য সৎকাজের কোন মূল্য নেই।
৩৩. অর্থাৎ তাদের কার্যাবলীর কোন গুরুত্ব ও মূল্য নেই। ফলে সেগুলো নষ্ট করে দেয়া আল্লাহর কাছে মোটেই কষ্টকর হবে না। তাছাড়া তারা এমন কোন শক্তিই রাখে না যার ফলে তাদের কার্যাবলী ধ্বংস করে দেয়া তার জন্য কঠিন হতে পারে।
(আরো বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য দেখুন : য > যুদ্ধ > আহযাব এর যুদ্ধ)
(৩৩-আহযাব: ১১) তখন মু’মিনদেরকে নিদারুণ পরীক্ষা করা হলো এবং ভীষণভাবে নাড়িয়ে দেয়া হলো৷২১
২১. এখানে মুমিন তাদেরকে বলা হয়েছে যারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রসূল বলে মেনে নিয়ে নিজেকে তাঁর অনুসারীদের অন্তরভুক্ত করেছিলেন এদের মধ্যে সাচ্চা ঈমানদার ও মুনাফিক উভয়ই ছিল। এ প্যারাগ্রাফে মুসলমানদের দলের উল্লেখ করেছেন সামগ্রিকভাবে, এরপরের তিনটি প্যারাগ্রাফে মুনাফিকদের নীতির ওপর মন্তব্য করা হয়েছে। তারপর শেষ দুটি প্যারাগ্রাফে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাচ্চা মুমিনদের সম্পর্কে বলা হয়েছে।
(৩৩-আহযাব: ২২) আর সাচ্চা মুমিনদের (অবস্থা সে সময় এমন ছিল,)৩৬ যখন আক্রমণকারী সেনাদলকে দেখলো তারা চিৎকার করে উঠলো, “এতো সেই জিনিসই যার প্রতিশ্রুতি আল্লাহ ও তাঁর রসূল আমাদের দিয়েছিলেন, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কথা পুরোপুরি সত্য ছিল৷” ৩৭ এ ঘটনা তাদের ঈমান ও আত্মসমর্পণ আরো বেশী বাড়িয়ে দিল৷৩৮
৩৬. রসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করার প্রতি দৃষ্টি আর্কষণ করার পর এবার আল্লাহ সাহাবায়ে কেরামের কর্মধারাকে আদর্শ হিসেবে তুলে ধরছেন, যাতে ঈমানের মিথ্যা দাবীদার এবং আন্তরিকতা সহাকারে রসূলের আনুগত্যকারীদের কার্যাবলীকে পরস্পরের মোকাবেলায় পুরোপুরিভাবে সুস্পষ্ট করে দেয়া যায়। যদিও বাহ্যিক ঈমানের স্বীকারোক্তির ব্যাপারে তারা এবং এরা একই পর্যায়ভুক্ত ছিল, উভয়কেই মুসলমানদের দলভুক্ত গণ্য করা হতো এবং নামাযে উভয়ই শরীক হতো কিন্তু পরীক্ষার মুহূর্তে আসার পর উভয়ই পরস্পর থেকে ছাঁটাই হয়ে আলাদা হয়ে যায় এবং পরিস্কার জানা যায় আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঐকান্তিক বিশ্বস্ত কে এবং কে কেবল নিছক নামের মুসলমান৷
৩৭. এ প্রসঙ্গে ১২ আয়াতটি দৃষ্টিসমক্ষে রাখা উচিত। সেখানে বলা হয়েছেল, যারা ছিল মুনাফিক ও হৃদয়ের রোগে আক্রান্ত, তারা দশ বারো হাজার সৈন্যকে সামনে থেকে এবং বনী কুরাইযাকে পিছন থেকে আক্রমণ করতে দেখে চিৎকার করে বলতে থাকে, " আল্লাহ ও তার রসূল (সা) আমাদের সাথে যেসব অংগীকার করেছিলেন সেগুলো ডাহা মিথ্যা ও প্রতারণা প্রমানিত হলো। আমাদের বলা তো হয়েছিল, আল্লাহর দীনের প্রতি ঈমান আনলে আল্লাহর সাহায্য ও সমর্থন পেছনে থাকবে, আরবে ও আজমে তোমাদের ডংকা বাজবে এবং রোম ও ইরানের সম্পদ তোমাদের করায়ত্ত হবে কিন্তু এখন দেখছি সমগ্র আরব আমাদের খতম করে দেবার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে এবং আমাদেরকে এ বিপদ সাগর থেকে উদ্ধার করার জন্য কোথাও ফেরেশতাদের সৈন্যদলের টিকিটিও দেখা যাচ্ছে না।" এখন বলা হচ্ছে ঐ সব মিথ্যা ঈমানের দাবীদার আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অংগীকারের যে অর্থ বুঝেছিল এর একটি তাই ছিল। সাচ্চা ঈমানদাররা এর যে অর্থ বুঝেছে সেটি এর দ্বিতীয় অর্থ বুঝেছিল। বিপদের ঘনঘটা দেখে আল্লাহর অংগীকারের কথা তাদেরও মনে পড়েছে কিন্তু এ অংগীকার নয় যে, ঈমান আনার সাথে সাথেই কুটোটিও নাড়ার দরকার হবে না সোজা তোমরা দুনিয়ার শাসন কর্তৃত্ব লাভ করে যাবে এবং ফেরেশতারা এসে তোমাদের মাথায় রাজমুকুট পরিয়ে দেবে। বরং এ অংগীকার যে, কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে তোমাদের এগিয়ে যেতে হবে, বিপদের পাহাড় তোমাদের মাথায় ভেঙ্গে পড়বে, তোমাদের চরম ত্যাগ স্বীকার করতে হবে, তবেই কোন পর্যায়ে আল্লাহর অনুগ্রহ তোমাদের প্রতি বর্ষিত হবে এবং তোমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতের এমনসব সাফল্য দান করা হবে যেগুলো দেবার অংগীকার আল্লাহ মু'মিন বান্দাদের সাথে করেছেনঃ
----------------------------------------------------
"তোমরা কি একথা মনে করে নিয়েছো যে, তোমরা জান্নাতে এমনিই প্রবেশ করে যাবে৷ অথচ তোমাদের পূর্বে যারা ঈমান এনেছিল তারা যে অবস্থার মধ্য দিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল এখনো তোমরা সে অবস্থার সম্মুখীন হওনি। তারা কঠিন্য ও বিপদের মুখোমুখি হয়েছিল এবং তাদেরকে নাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল, এমনকি রসূল ও তার সংগীসাথীরা চিৎকার করে উঠেছিল আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে! -শোনো আল্লাহর সাহায্য নিকটেই আছে।" ( আল বাকারাহ্ ২১৪)
-----------------------------------------------------------
"লোকেরা কি একথা মনে করে নিয়েছে, 'আমরা ঈমান এনেছি' একথা বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে এবং তাদেরকে আর পরীক্ষা করা হবে না৷ অথচ এদের আগে যারা অতিক্রান্ত হয়েছে তাদের সবাইকে আমি পরীক্ষা করেছি। আল্লাহকে অবশ্যই দেখতে হবে কে সত্যবাদী এবং কে মিথ্যাবাদী" (আল আনকাবূত, ২-৩)
৩৮. অর্থাৎ বিপদ আপদের এ পাহাড় দেখে তাদের ঈমান নড়ে যাবার পরিবর্তে আরো বেশি বেড়ে গেলো এবং আল্লাহর হুকুম পালন করা থেকে দূরে পালিয়ে যাবার পরিবর্তে তারা আরো বেশ প্রত্যয় ও নিশ্চিতন্তা সহকারে সবকিছু তাঁর হাতে সোপর্দ করতে উদ্যোগী হয়ে উঠলো।
এ প্রসঙ্গে একথা ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে যে, ঈমান ও আত্মসমর্পণ আসলে মনের এমন একটি অবস্থা যা দীনের প্রত্যেকটি হুকুম ও দাবীর মুখে পরীক্ষার সম্মুখীন হয়। দুনিয়ার জীবনে প্রতি পদে পদে মানুষ এমন অবস্থার মুখোমুখি হয় যখন দীন কোন কাজের আদেশ দেয় অথবা তা করতে নিষেধ করে অথবা প্রাণ, ধন-সম্পদ, সময়, শ্রম ও প্রবৃত্তির কামনা-বাসনা ত্যাগ করার দাবী করে। এ ধরনের প্রত্যেক সময়ে যে ব্যক্তি আনুগত্য থেকে সরে আসবে তার ঈমান ও আত্মসমর্পণ কমতি দেখা দেবে এবং যে ব্যক্তিই আদেশের সামনে মাথা নত করে দেবে তার ঈমান ও আত্মসমর্পণ বেড়ে যাবে যদিও শুরুতে মানুষ কেবলমাত্র ইসলাম গ্রহণ করতেই ম'মিন ও মুসলিম রূপে গণ্য হয়ে যায় কিন্তু এটা কোন স্থির ও স্থবির নয় । এ অবস্থা কেবল এক স্থানে দাঁড়িয়ে থাকে না। বরং এর মধ্যে উন্নতি ও অবনতি উভয়েরই সম্ভাবনা থাকে। অনুগত্য ও আন্তরিকতার অভাব ও স্বল্পতা এর অবনতির কারণ হয়। এমনকি এক ব্যক্তির পেছনে হটতে হটতে ঈমানের শেষ সীমানায় পৌছে যায়, যেখান থেকে চুল পরিমান পেছনে হটলেই সে মু'মিনের পরিবর্তে মুনাফিক হয়ে যায়। পক্ষান্তরে আন্তরিকতা যত বেশী হতে থাকে, আনুগত্য যত পূর্ণতা লাভ করে এবং আল্লাহর সত্য দীনের ঝান্ডা বুলন্দ করার ফিকির, আকাংখা ও আত্মনিমগ্নতা যত বেড়ে যেতে থাকে সেই অনুপাতে ঈমানও বেড়ে যেতে থাকে । এভাবে এক সময় মানুষ 'সিদ্দীক' তথা পূর্ণ সত্যবাদীর মর্যাদায় উন্নীত হয়। কিন্তু এই তারতম্য ও হ্রাসবৃদ্ধি কেবল নৈতিক মর্যাদার মধ্যেই সীমিত থাকে । আল্লাহ ছাড়া আর কারো পক্ষে এর হিসেব করা সম্ভব নয় । বান্দাদের জন্য একটি স্বীকারোক্তি ও সত্যতার ঘোষণাই ঈমান । এর মাধ্যমে প্রত্যেক মুসলমান ইসলামে প্রবেশ করে এবং যতদিন সে এর উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে ততদিন তাকে মুসলমান বলে মেনে নেয়া হয়। তার সম্পর্কে আমরা এ কথা বলতে পারি না যে, সে আধা মুসলমান বা সিকি মুসলমান কিংবা দ্বিগুন মুসলমান বা ত্রিগুন মুসলমান। এ ধরনের আইনগত অধিকারের ক্ষেত্রে সকল মুসলমান সমান। কাউকে আমরা বেশী মুমিন বলতে পারি না এবং তার অধিকারও বেশী হতে পারে না। আবার কাউকে কম মুমিন গন্য করে তার অধিকার কম করতে পারি না। এসব দিক দিয়ে ঈমান কম-বেশী হওয়ার কোন প্রশ্ন দেখা দেয় না । আসলে এ অর্থেই ইমাম আবু হানীফা(র) বলেছেন:
-----------------
অর্থাৎ "ঈমান কম-বেশী হয় না"(আরো বেশী জানার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, আল আনফাল ২ এবং আল ফাতহ ৭ টীকা)
(৩৩-আহযাব: ১০) যখন তারা ওপর ও নিচে থেকে তোমাদের ওপর চড়াও হলো, যখন ভয়ে চোখ বিস্ফারিত হয়ে গিয়েছিল, প্রাণ হয়ে পড়েছিল ওষ্ঠাগত এবং তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে নানা প্রকার ধারণা পোষণ করতে শুরু করেছিলে।
ব্যাখ্যার জন্য : ওপরে দেখুন ।
(৩৩-আহযাব: ১১) তখন মু’মিনদেরকে নিদারুণ পরীক্ষা করা হলো এবং ভীষণভাবে নাড়িয়ে দেয়া হলো৷২১
২১. এখানে মুমিন তাদেরকে বলা হয়েছে যারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রসূল বলে মেনে নিয়ে নিজেকে তাঁর অনুসারীদের অন্তরভুক্ত করেছিলেন এদের মধ্যে সাচ্চা ঈমানদার ও মুনাফিক উভয়ই ছিল। এ প্যারাগ্রাফে মুসলমানদের দলের উল্লেখ করেছেন সামগ্রিকভাবে, এরপরের তিনটি প্যারাগ্রাফে মুনাফিকদের নীতির ওপর মন্তব্য করা হয়েছে। তারপর শেষ দুটি প্যারাগ্রাফে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাচ্চা মুমিনদের সম্পর্কে বলা হয়েছে।
ব্যাখ্যার জন্য : ওপরে দেখুন ।
(৩৩-আহযাব: ১৩) যখন তাদের মধ্য থেকে একটি দল বললো, হে ইয়াসরিববাসীরা! তোমাদের জন্য এখন অবস্থান করার কোন সুযোগ নেই, ফিরে চলো৷২৩ যখন তাদের একপক্ষ নবীর কাছে এই বলে ছুটি চাচ্ছিল যে, আমাদের গৃহ বিপদাপন্ন,২৪ অথচ তা বিপদাপন্ন ছিল না২৫ আসলে তারা (যুদ্ধক্ষেত্র থেকে) পালাতে চাচ্ছিল৷
ব্যাখ্যার জন্য : ওপরে দেখুন ।
(৩৩-আহযাব: ১৬) হে নবী! তাদেরকে বলো, যদি তোমরা মৃত্যু বা হত্যা থেকে পলায়ন করো, তাহলে এ পলায়নে তোমাদের কোনো লাভ হবে না৷ এরপর জীবন উপভোগ করার সামান্য সুযোগই তোমরা পাবে৷২৮
২৮. অর্থাৎ এভাবে পলায়ন করার ফলে তোমাদের আয়ু বেড়ে যাবে না। এর ফলে কখনোই তোমরা কিয়ামত পর্যন্ত বেঁচে থাকতে এবং সারা দুনিয়া জাহানের ধন-দৌলত হস্তগত করতে পারবে না। পালিয়ে বাঁচলে বড় জোর কয়েক বছরই বাঁচবে এবং তোমাদের জন্য যতটুকু নির্ধারিত হয়ে আছে ততটুকুই জীবনের আয়েশ-আরাম ভোগ করতে পারবে।
(৩৩-আহযাব: ১৭) তাদেরকে বলো, কে তোমাদের রক্ষা করতে পারে আল্লাহর হাত থেকে যদি তিনি তোমাদের ক্ষতি করতে চান ? আর কে তাঁর রহমতকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে যদি তিনি চান তোমাদের প্রতি মেহেরবাণী করতে ? আল্লাহর মুকাবিলায় তো তারা কোনো পৃষ্ঠপোষক ও সাহায্যকারী লাভ করতে পারে না৷
(৩৩-আহযাব: ১৪) যদি শহরের বিভিন্ন দিক থেকে শত্রুরা ঢুকে পড়তো এবং সেসময় তাদেরকে ফিতনা সৃষ্টি করার জন্য আহবান জানানো হতো, ২৬ তাহলে তারা তাতেই লিপ্ত হয়ে যেতো এবং ফিতনায় শরীক হবার ব্যাপারে তারা খুব কমই ইতস্তত করতো৷
২৬. অর্থাৎ যদি নগরে প্রবেশ করে কাফেররা বিজয়ীর বেশে এ মুনাফিকদেরকে এই বলে আহবান জানাতো, এসো আমাদের সাথে মিলে মুসলমানদেরকে খতম করো।
(৩৩-আহযাব: ১৮) আল্লাহ তোমাদের মধ্য থেকে তাদেরকে খুব ভালো করেই জানেন যারা (যুদ্ধের কাজে) বাধা দেয়, যারা নিজেদের ভাইদেরকে বলে, “এসো আমাদের দিকে,”২৯ যারা যুদ্ধে অংশ নিলেও নিয়ে থাকে শুধুমাত্র নামকাওয়াস্তে৷
২৯. অর্থাৎ এ নবীর দল ত্যাগ করো। কেন তোমরা দীন, ঈমান, সত্য ও সততার চক্করে পড়ে আছো৷ নিজেদেরকে বিপদ-আপদ, ভীতি ও আশংকার মধ্যে নিক্ষেপ করার পরিবর্তে আমাদের মতো নিরাপদে অবস্থান করার নীতি অবলম্বন করার নীতি অবলম্বন করো।
(৩৩-আহযাব: ১৫) তারা ইতিপূর্বে আল্লাহর সাথে অংগীকার করেছিল যে, তারা পৃষ্টপ্রদর্শন করবে না এবং আল্লাহর সাথে করা অংগীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা তো হবেই৷২৭
২৭. অর্থাৎ ওহোদ যুদ্ধের সময় তারা যে দুর্বলতা দেখিয়েছিল তারপর লজ্জা ও অনুতাপ প্রকাশ করে তারা আল্লাহর কাছে অংগীকার করেছিল যে, এবার যদি পরীক্ষার কোন সুযোগ আসে তাহলে তারা নিজেদের এ ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করবে। কিন্তু আল্লাহকে নিছক কথা দিয়ে প্রতারণা করা যেতে পারে না। যে ব্যক্তিই তাঁর সাথে কোন অংগীকার করে তাঁর সামনে তিনি পরীক্ষার কোন না কোন সুযোগ এনে দেন। এর মাধ্যমে তার সত্য ও মিথ্যা যাচাই হয়ে যায়। তাই ওহোদ যুদ্ধের মাত্র দু'বছর পরেই তিনি তার চাইতেও বেশী বড় বিপদ সামনে নিয়ে এলেন এবং এভাবে তারা তাঁর সাথে কেমন ও কতটুকু সাচ্চা অংগীকার করেছিল তা যাচাই করে নিলেন।
(৩৩-আহযাব: ৬০) যদি মুনাফিকরা এবং যাদের মনে গলদ ১১৩ আছে তারা আর যারা মদীনায় উত্তেজনাকর গুজব ছড়ায়, ১১৪ তারা নিজেদের তৎপরতা থেকে বিরত না হয়, তাহলে আমি তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবার জন্য তোমাকে উঠিয়ে দাঁড় করিয়ে দেবো; তারপর খুব কমই তারা এ নগরীতে তোমার সাথে থাকতে পারবে৷
১১৩. "মনের গলদ" বলতে এখানে দু'ধরনের গলদের কথা বলা হয়েছে। এক, মানুষ নিজেকে মুসলমানদের মধ্যে গণ্য করা সত্ত্বেও ইসলাম ও মুসলমানদের অশুভাকাংকী হয়। দুই, মানুষ অসৎ সংকল্প, লাস্পট্য ও অপরাধী মানসিকতার আশ্রয় নেয়। এবং তার পূতিগন্ধময় প্রবণতাগুলো তার উদ্যোগ, আচরণ ও কর্মকান্ড থেকে বিচ্ছুরিত হতে থাকে।
১১৪. এখানে এমন সব লোকের কথা বলা হয়েছে যারা মুসলমানদের মধ্যে ভীতি ও আতংক ছড়াবার এবং তাদের মনোবল ভেংগে দেবার জন্য সে সময় প্রতি দিন মদীনায় এ ধরনের গুজব ছড়িয়ে বেড়াতো যে, অমুক জায়গায় মুসলমানরা খুব বেশী মার খেয়ে গেছে, অমুক জাগয়ায় মুলসমানদের বিরুদ্ধে বিপুল শক্তিশালী সমাবেশ ঘটছে এবং শিগগির মদীনার ওপর অতর্কিত হামলা হবে। এই সংগে তাদের আর একটি কাজ এও ছিল যে, তারা নবীর পরিবার ও শরীফ মুসলমানদের পারিবারিক জীবন সম্পর্কে বিভিন্ন প্রকার অলীক গল্প তৈরি করে সেগুলো ছড়াতে থাকতো, যাতে এর ফলে জনগণের মধ্যে কুধারণা সৃষ্টি হয় এবং মুসলমানদের নৈতিক প্রভাব ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
(আরো দেখুন : মুনাফিদের আল্লাহর পথে খরচ )
মুনাফিকেরা নিজেরাতো আল্লাহর পথে জিহাদে ব্যয় করেইনা বরং যেসব ঈমানদাররা নিজেদের কষ্টার্জিত সম্পদ জিহাদের পথে ব্যয় করে তাদেরকেও বিদ্রুপ করে, এজন্য আল্লাহও তাদের সাথে বিদ্রুপ করছেন অর্থাৎ তাদেরকে ঈমানের তৌফিক দেবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তদ শাস্তি : ৯:৭৯,
(৩৩-আহযাব: ১৯) যারা তোমাদের সাথে সহযোগিতা করার ব্যাপারে বড়ই কৃপণ৷ ৩০ বিপদের সময় এমনভাবে চোখ উলটিয়ে তোমাদের দিকে তাকাতে থাকে যেন কোনো মৃত্যুপথযাত্রী মূর্ছিত হয়ে যাচ্ছে কিন্তু বিপদ চলে গেলে এ লোকেরাই আবার স্বার্থলোভী হয়ে তীক্ষ্ণ ভাষায় তোমাদেরকে বিদ্ধ করতে থাকে৷ ৩১ তারা কখনো ঈমান আনেনি, তাই আল্লাহ তাদের সমস্ত কর্মকাণ্ড ধ্বংস করে দিয়েছেন ৩২ এবং এমনটি করা আল্লাহর জন্য অত্যন্ত সহজ৷৩৩
৩০. অর্থাৎ সাচ্চা মু'মিনরা যে পথে তাদের সবকিছু উৎসর্গ করে দিচ্ছে সেপথে তারা নিজেদের শ্রম, সময়, চিন্তা ও সহায়-সম্পদ স্বেচ্ছায় ও সানন্দে ব্যয় করতে প্রস্তুত নয়। প্রাণপাত করা ও বিপদ মাথা পেতে নেয়া তো দূরের কথা কোন কাজেও তারা নির্দ্বধায় মু'মিনদের সাথে সহযোগিতা করতে চায় না।
৩১. আভিধানিক দিক দিয়ে আয়াতটির দু'টি অর্থ হয়। এক, যুদ্ধের ময়দান থেকে সাফল্য লাভ করে যখন তোমরা ফিলে আসো তখন তারা বড়ই হৃদ্যতা সহকারে ও সাড়ম্বরে তোমাদেরকে স্বাগত জানায় এবং বড় বড় বুলি আউড়িয়ে এই বলে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করে যে, আমরাও পাক্কা মু'মিন এবং এ কাজ সম্প্রসারণে আমরাও অংশ নিয়েছি কাজেই আমরাও গনীমাতের মালের হকদার। দুই, বিজয় অর্জিত হলে গনীমাতের মাল ভাগ করার সময় তাদের কন্ঠ বড়ই তীক্ষ্ণ ও ধারাল হয়ে যায় এবং তারা অগ্রবর্তী হয়ে দাবী করতে থাকে, আমাদের বাগ দাও, আমরাও কাজ করেছি, সবকিছু তোমরাই লুটে নিয়ে যেয়ো না।
৩২. অর্থাৎ ইসলাম গ্রহণ করার পর তারা যেসব নামায পড়েছে, রোযা রেখেছে, যাকাত দিয়েছে এবং বাহ্যত যেসব সৎকাজ করেছে সবকিছুকে মহান আল্লাহ নাকচ করে দেবেন এবং সেগুলোর কোন প্রতিদান তাদেরকে দেবেন না। কারণ আল্লাহর দরবারে কাজের বাহ্যিক চেহারার ভিত্তিতে ফায়সালা করা হয় না বরং এ বাহ্য চেহারার গভীরতম প্রদেশে বিশ্বাস ও আন্তরিকতা আছে কিনা তার ভিত্তিতে ফায়সালা করা হয়। যখন এ জিনিস আদতে তাদের মধ্যে নেই তখন এ লোক দেখানো কাজ একেবারেই অর্থহীন। এখানে এ বিষয়টি গভীরভাবে প্রণিধানযোগ্য যে, যেসব লোক আল্লাহ ও রসূলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল, নামায পড়ছিল, রোযা রাখছিল, যাকাতও দিচ্ছিল এবং মুসলমানদের সাথে তাদের অন্যান্য সৎকাজে শামিলও হচ্ছিল, তাদের সম্পর্কে পরিষ্কার ফায়সালা শুনিয়ে দেয়া হলো যে, তারা আদতে ঈমানই আনেনি। আর এ ফায়সালা কেবলমাত্র এরি ভিত্তিতে করা হলো যে, কুফর ও ইসলামের দ্বন্দে যখন কঠিন পরীক্ষার সময় এলো তখন তারা দোমনা হবার প্রমাণ দিল, দীনের স্বার্থের ওপর নিজের স্বার্থের প্রার্ধন্য প্রতিষ্ঠিত করলো এবং ইসলামের হেফাজতের জন্য নিজের প্রাণ, ধন-সম্পদ ও শ্রম নিয়োজিত করতে অস্বীকৃতি জানালো। এ থেকে জানা গেলো, ফায়সালার আসল ভিত্তি এসব বাহ্যিক কাজ-কর্ম নয়। বরং মানুষের বিশ্বস্ততা কার সাথে সম্পর্কিত তারি ভিত্তিতে এর ফায়সালা সূচিত হয়। যেখানে আল্লাহ ও তাঁর দীনের প্রতি বিশ্বস্ততা নেই সেখানে ঈমানের স্বীকৃতি এবং ইবাদাত ও অন্যান্য সৎকাজের কোন মূল্য নেই।
৩৩. অর্থাৎ তাদের কার্যাবলীর কোন গুরুত্ব ও মূল্য নেই। ফলে সেগুলো নষ্ট করে দেয়া আল্লাহর কাছে মোটেই কষ্টকর হবে না। তাছাড়া তারা এমন কোন শক্তিই রাখে না যার ফলে তাদের কার্যাবলী ধ্বংস করে দেয়া তার জন্য কঠিন হতে পারে।
৯:৮৪ (ফাসেক অবস্থায়), ৯:৮৫ (কাফের অবস্থায়),
মুনাফিকেরা ভয় পায় কোরানের মাধ্যমে না আবার তাদের মনের গোপন কথা প্রকাশ হয়ে যায় : ৯:৬৪,
যারা প্রকৃত পক্ষেই আহাম্মক প্রকৃতির লোক, দুনিয়ার কোন জিনিসেরই যাদের কাছে কোন গুরুত্ব নেই, সেই ধরণের ভাঁড় ও আহাম্মক প্রকৃতির মুনাফিকদের হয়ত আল্লাহ ক্ষমা করে দিতে পারেন, আর যারা প্রকৃত পক্ষে মুনাফিক ইসলাম কে জেনে বুঝে শুধুমাত্র স্বার্থ রক্ষার জন্য ঈমান আনে আর জেনে বুঝে শুধুমাত্র মুসলমানদের জিহাদি জযবা কে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য ইসলামেরসাথে ঠাট্টা করে সেই ধরণের মুনাফিকদের আল্লাহ কখনোই মাফ করবেন না : ৯:৬৬,
(৩৩-আহযাব: ২৩) ঈমানদারদের মধ্যে এমন লোক আছে যারা আল্লাহর সাথে কৃত অংগীকার পূর্ণ করে দেখালো৷ তাদের কেউ নিজের নজরানা পূর্ণ করেছে এবং কেউ সময় আসার প্রতীক্ষায় আছে৷ ৩৯ তারা তাদের নীতি পরিবর্তন করেনি৷ (২৪) (এসব কিছু হলো এজন্য) যাতে আল্লাহ সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যতার পুরস্কার দেন এবং মুনাফিকদেরকে চাইলে শাস্তি দেন এবং চাইলে তাদের তাওবা কবুল করে নেন৷ অবশ্যই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়৷
৩৯. অর্থাৎ কেউ আল্লাহর পথে প্রাণ উৎসর্গ করে দিয়েছে এবং কেউ তাঁর দীনের খাতিরে নিজের খুনের নজরানা পেশ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে রয়েছে।
(অর্থাৎ: খাঁটি ভাবে নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে যদি আল্লাহর পথে ফিরে আসে এবং আল্লাহ ও রাসূলের পক্ষ হয়ে ইসলামবিরোধীদের মোকাবিলায় পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাহলে আশা করা যায় তাদের তওবা কবুল করা হবে )
(৩৩-আহযাব:৬০) যদি মুনাফিকরা এবং যাদের মনে গলদ ১১৩ আছে তারা আর যারা মদীনায় উত্তেজনাকর গুজব ছড়ায়, ১১৪ তারা নিজেদের তৎপরতা থেকে বিরত না হয়, তাহলে আমি তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবার জন্য তোমাকে উঠিয়ে দাঁড় করিয়ে দেবো; তারপর খুব কমই তারা এ নগরীতে তোমার সাথে থাকতে পারবে৷ ৬১) তাদের ওপর লানত বর্ষিত হবে চারদিক থেকে, যেখানেই পাওয়া যাবে তাদেরকে পাকড়াও করা হবে এবং নির্দয়ভাবে হত্যা করা হবে৷
১১৩. "মনের গলদ" বলতে এখানে দু'ধরনের গলদের কথা বলা হয়েছে। এক, মানুষ নিজেকে মুসলমানদের মধ্যে গণ্য করা সত্ত্বেও ইসলাম ও মুসলমানদের অশুভাকাংকী হয়। দুই, মানুষ অসৎ সংকল্প, লাস্পট্য ও অপরাধী মানসিকতার আশ্রয় নেয়। এবং তার পূতিগন্ধময় প্রবণতাগুলো তার উদ্যোগ, আচরণ ও কর্মকান্ড থেকে বিচ্ছুরিত হতে থাকে।
১১৪. এখানে এমন সব লোকের কথা বলা হয়েছে যারা মুসলমানদের মধ্যে ভীতি ও আতংক ছড়াবার এবং তাদের মনোবল ভেংগে দেবার জন্য সে সময় প্রতি দিন মদীনায় এ ধরনের গুজব ছড়িয়ে বেড়াতো যে, অমুক জায়গায় মুসলমানরা খুব বেশী মার খেয়ে গেছে, অমুক জাগয়ায় মুলসমানদের বিরুদ্ধে বিপুল শক্তিশালী সমাবেশ ঘটছে এবং শিগগির মদীনার ওপর অতর্কিত হামলা হবে। এই সংগে তাদের আর একটি কাজ এও ছিল যে, তারা নবীর পরিবার ও শরীফ মুসলমানদের পারিবারিক জীবন সম্পর্কে বিভিন্ন প্রকার অলীক গল্প তৈরি করে সেগুলো ছড়াতে থাকতো, যাতে এর ফলে জনগণের মধ্যে কুধারণা সৃষ্টি হয় এবং মুসলমানদের নৈতিক প্রভাব ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
মু’মিনরা আল্লাহ এবং রাসুলের আনুগত্য করে :৮:১, ৯:৭১, নুর:৫১,
যখন আল্লাহর কথা বলা হয়, তখন মুমিনদের অন্তর ভয়ে কেঁপে উঠে: ৮:২,
আল্লাহর বানী যখন মু’মিনদের সামনেপড়া হয় তখন তাদের ঈমান আরো বেড়ে যায় :৮:২,
মু’মিনরা ভরসা করে শুধুমাত্র আল্লাহর উপর :৮:২,
মু’মিন পুরুষ ও নারী পরস্পরের সহযোগী ও বন্ধু : ৯:৭১
মু’মিনরা সৎ কাজের আদেশ দেয় ও অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখে : ৯:৭১,
মু’মিনরা নামায কায়েম করে ও যাকাত দেয় : ৯:৭১,
যারা ঈমান এনেছে অত:পর হিজরত করে এবং যারা আশ্রয় দিয়েছে এবং যারা জিহাদ করে তারাই প্রকৃত মু’মিন, অর্থাৎ তারা তাদের ঈমানের দাবীতে সত্যবাদী, তাদের জন্যই রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক রিজিক্ব :৮:৭৪ (নবী সা: এর সঙ্গীসাথীগণ)
আর যারা পরবর্তীতে ঈমান আনবে এবং হিজরত করবে ও জিহাদ করবে তারাও নবী সা: এর সঙ্গী সাথীদের দলভুক্ত হিসেবে গন্য হবে : ৮:৭৫,
যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে তারা কখনো জান মাল বিসর্জন দিয়ে জিহাদ/যুদ্ধ থেকে অব্যহতি চাইতে পারেনা, তারাই প্রকৃত মু’মিন, তারাই প্রকৃত পক্ষে আল্লাহকে ভয় করে (মুত্তাকী) : ৯:৪৪,
ধন সম্পদ প্রাপ্তির ব্যাপারে প্রকৃত মু’মিনরা বলে : “আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ঠ৷ তিনি নিজের অনুগ্রহ থেকে আমাদের আরো অনেক কিছু দেবেন এবং তাঁর রসূলও আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন৷ আমরা আল্লাহরই প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রেখেছি” -৯:৫৯
প্রকৃত মু’মিনদের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে সন্তুষ্ট করার কথা চিন্তা করা-৯:৬২
যারা পাক -পবিত্র থাকা পছন্দ করে-৯:১০৮,
যারা আল্লাহ ভীতি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উপর নিজের ইমারতের ভীত্তি স্থাপন করলো – ৯:১০৯,
আল্লাহর দিকে বারবার প্রত্যাগমনকারী , তার ইবাদতকারী, তার প্রশংসা বানী উচ্চারণকারী, তার জন্য যমীনে বিচরণকারী , তার সামনে রুকূ ও সিজদাকারী, সৎকাজের আদেশকারী , অসৎকাজ থেকে বিরতকারী, এবং আল্লাহর সীমারেখা সংরক্ষণকারী , (সেই সব মুমিন হয়ে থাকে যারা আল্লাহর সাথে জান-মাল এর বিনিময়ে জান্নাত কেনার সওদা করে) আর হে নবী! এ মুমিনদেরকে সুখবর দাও! – ৯:১১২,
আল্লাহর পথে মু’মিনরা যখনই ক্ষুধা-তৃষ্ণা ও শারীরিক কষ্ট ভোগ করবে, যখনই এমন পথ অবলম্বন করবে যা সত্য অমান্যকারীদের কাছে অসহনীয় এবং যখনই কোন দুশমনের ওপর (সত্যের প্রতি দুশমনির) প্রতিশোধ নেবে তৎক্ষনাৎ তার বদলে তাদের জন্য একটি সৎকাজ লেখা হবেই৷ এর ব্যতিক্রম কখনো হবে না৷ অবশ্যি আল্লাহর দরবারে সৎ কর্মশীলদের পরিশ্রম বিফল যায় না – ৯:১২০,
মদীনাবাসী ও তাদের আশপাশে বেদুইনদের জন্য আল্লাহর রসূলকে ছেড়ে দিয়ে ঘরে বসে থাকা এবং তার ব্যাপারে বেপরোয়া হয়ে নিজেদের জীবনের চিন্তায় মশগুল হয়ে যাওয়া কোনক্রমেই সমীচীন ছিল না-৯:১২০,
(৩৩-আহযাব: ৩৬) যখন আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোনো বিষয়ের ফায়সালা দিয়ে দেন তখ কোনো মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীর৬৫ সেই ব্যাপারে নিজে ফায়সালা করার কোনো অধিকার নেই৷ আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নাফরমানী করে সে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত হয়৷
৮৩) (তারপর দেখো) মুসাকে তার কওমের কতিপয় নওজোয়ান ছাড়া কেউ মেনে নেয়নি, ফেরাউনের ভয়ে এবং তাদের নিজেদেরই কওমের নেতৃস্থানীয় লোকদের ভয়ে৷ (তাদের আশংকা ছিল) ফেরাউন তাদের ওপর নির্যাতন চালাবে৷ আর প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে এই যে, ফেরাউন দুনিয়ায় পরাক্রমশালী ছিল এবং সে এমন লোকদের অন্তরভুক্ত ছিল যারা কোন সীমানা মানে না৷৮৪) মুসা তার কওমকে বললো, হে লোকেরা! যদি তোমরা সত্যিই আল্লাহর প্রতি ঈমান রেখে থাকো তাহলে তার ওপর ভরসা করো, যদি তোমরা মুসলিম -আত্মসমপূর্ণকারী হও৷৮৫) তারা জবাব দিল, আমরা আল্লাহরই ওপর ভরসা করলাম্৷ হে আমাদের রব! আমাদেরকে জালেমদের নির্যাতনের শিকারে পরিণত করো না৷৮৬) এবং তোমার রহমতের সাহায্যে কাফেরদের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করো৷- ১০:৮৩-৮৬,
(১৬:১২০) প্রকৃতপক্ষে ইবরাহীম নিজেই ছিল একটি পরিপূর্ণ উম্মত, আল্লাহর হুকুমের অনুগত এবং একনিষ্ঠ৷ সে কখনো মুশরিক ছিল না৷ ১২১) সে ছিল আল্লাহর নিয়ামতের শোকরকারী৷ আল্লাহ তাকে বাছাই করে নেন এবং সরল সঠিক পথ দেখান৷
(৩৩-আহযাব: ৩৫) একথা সুনিশ্চিত যে, ৫৩ যে পুরুষ ও নারী মুসলিম,৫৪ মুমিন, ৫৫ হুকুমের অনুগত, ৫৬ সত্যবাদী, ৫৭ সবরকারী,৫৮ আল্লাহর সামনে বিনত,৫৯ সাদকাদানকারী, ৬০ রোযা পালনকারী, ৬১ নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজতকারী ৬২ এবং আল্লাহকে বেশী বেশী স্মরণকারী ৬৩ আল্লাহ তাদের জন্য মাগফিরাত এবং প্রতিদানের ব্যবস্থা করে রেখেছেন৷৬৪
৫৩. পিছনের প্যারাগ্রাফের পরপরই এ বিষয়বস্তু উপস্থাপন করে এই মর্মে একটি সূক্ষ্ম ইংগিত করা হয়েছে যে, ওপরে রসূলের (সাঃ) পবিত্র স্ত্রীগণকে যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা কেবলমাত্র তাঁদের জন্যই নির্দিষ্ট নয় বরং মুসলিম সমাজরে সামগ্রিক সংশোধন কাজ সাধারণভাবে এসব নির্দেশ অনুযায়ীই করতে হবে।
৫৪. অর্থাৎ যারা নিজেদের জন্য ইসলামকে জীবন বিধান হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে এবং এখন জীবন যাপনের ক্ষেত্রে এ বিধানের অনুসারী হবার ব্যাপারে স্থির সিদ্ধান্ত করে নিয়েছে। অন্য কথায়, যাদের মধ্যে ইসলাম প্রদত্ত চিন্তাপদ্ধতি ও জীবনধারার বিরুদ্ধে কোন রকমের বিরোধিতা ও প্রতিবন্ধকতার লেশমাত্র নেই। বরং তারা তার পরিপূর্ণ আনুগত্য ও অনুসরণের পথ অবলম্বন করেছে।
৫৫. অর্থাৎ যাদের এ আনুগত্য নিছক বাহ্যিক নয়, গত্যন্তর নেই, মন চায় না তবুও করছি, এমন নয়। বরং মন থেকেই তারা ইসলামের নেতৃত্বকে সত্য বলে মেনে নিয়েছে। চিন্তা ও কর্মের যে পথ কুরআন ও মুহাম্মাদ (সাঃ) দেখিয়েছেন সেটিই সোজা ও সঠিক পথ এবং তারই অনুসরণের মধ্যে আমাদের সাফল্য নিহিত, এটিই তাদের ঈমান। যে জিনিসকে আল্লাহ ও তাঁর রসূল ভুল বলে দিয়েছেন তাদের নিজেদের মতেও সেটি নিশ্চিতই ভুল। আর থাকে আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সাঃ) সত্য বলে বলে দিয়েছেন তাদের নিজেদের মন-মস্তিষ্কও তাকেই সত্য বলে নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করে। তাদের চিন্তা ও মানসিক অবস্থা এমন নয়। কুরআন ও সুন্নাত থেকে যে হুকুম প্রমাণিত হয় তাকে। তারা অসংগত মনে করতে পারে এবং এ চিন্তার বেড়াজালে এমনভাবে আটকে যেতে পারে যে, কোন প্রকারে তাকে পরিবর্তিত করে নিজেদের মন মাফিক করে নেবে অথবা দুনিয়ার প্রচলিত পদ্ধতি অনুসারে তাকে ঢালাইও করে নেবে আবার এ অভিযোগও নিজেদের মাথায় নেবে না যে, আমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের হুকুম কাটছাঁট করে নিয়েছি। হাদীসে নবী (সাঃ) ঈমানের সঠিক অবস্থা এভাবে বর্ণনা করেছেনঃ
(আরবী)
"ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করেছে সেই ব্যক্তি যে আল্লাহকে তার রব, ইসলামকে তার দীন এবং মুহাম্মাদকে তার রসূল বলে মেনে নিতে রাজি হয়ে গেছে।" (মুসলিম)
অন্য একটি হাদীসে তিনি এর ব্যাখ্যা এভাবে করেছেনঃ
()
"তোমাদের কোন ব্যক্তি মু'মিন হয় না যতক্ষণ না তার প্রবৃত্তি আমি যা এনেছি তার অনুগত হয়ে যায়।"(শারহুস সুন্নাহ)
৫৬. অর্থাৎ তারা নিছক মেনে নিয়ে বসে থাকার লোক নয়। বরং কার্যত আনুগত্যকারী। তাদের অবস্থা এমন নয় যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূল যে কাজের হুকুম দিয়েছেন তাকে সত্য বলে মেনে নেবে ঠিকই কিন্তু কার্যত তার বিরুদ্ধাচরণ করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূল যেসব কাজ করতে নিষেধ করেছেন নিজেরা আন্তরিকভাবে সেগুলোকে খারাপ মনে করবে কিন্তু নিজেদের বাস্তব জীবনে সেগুলোই করে যেতে থাকবে।
৫৭. অর্থাৎ নিজেদের কথায় যেমন সত্য তেমনি ব্যবহারিক কার্যকলাপেও সত্য । মিথ্যা, প্রতারণা, অসৎ উদ্দেশ্য, ঠগবৃত্তি ও ছলনা তাদের জীবনে পাওয়া যায় না । তাদের বিবেক যা সত্য বলে জানে মুখে তারা তাই উচ্চারণ করে । তাদের মতে যে কাজ ঈমানদারীর সাথে সত্য ও সততা অনুযায়ী হয় সে কাজই তারা করে । যার সাথেই তারা কোন কাজ করে বিশ্বস্ততা ও ঈমানদারীর সাথে করে ।
৫৮. অর্থাৎ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশিত সোজা সত্য পথে চলার এবং আল্লাহর দীনকে প্রতিষ্ঠত করার পথে যে বাধাই আসে, যে বিপদই দেখা দেয়, যে কষ্টই সহ্য করতে হয় এবং যে সমস্ত ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়, দৃঢ়ভাবে তারা তার মোকাবিলা করে। কোনপ্রকার ভীতি, লোক ও প্রবৃত্তির কামনার কোন দাবী তাদেরকে সোজা পথ থেকে হটিয়ে দিতে সক্ষম হয় না।
৫৯. অর্থাৎ তারা দম্ভ, অহংকার ও আত্মম্ভরীতামুক্ত। তারা এ সত্যের পূর্ণ সচেতন অনুভূতি রাখে যে, তারা বান্দা এবং বন্দেগীর বাইরে তাদের কোন মর্যাদা নেই। তাই তাদের দেহ ও অন্তরাত্মা উভয়ই আল্লাহর সামনে নত থাকে। আল্লাহ ভীতি তাদের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করে থাকে। আত্মঅহমিকায় ম্ত্ত আল্লাহভীতি শূন্য লোকদের থেকে যে ধরনের মনোভাব প্রকাশিত হয় এমন কোন মনোভাব কখনো তাদের থেকে প্রকাশিত হয় না। আয়াতের বিন্যাসের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে জানা যায়, এখানে এ সাধারণ আল্লাহভীতি মূলক মনোভাবের সাথে বিশেষ ভাবে "খুশু" বা বিনত হওয়া শব্দ ব্যবহার করায় এর অর্থ হয় নামায। কারণ এরপরই সাদকাহ ও রোযার কথা বলা হয়েছে।
৬০. এর অর্থ কেবল ফরয যাকাত আদায় করাই নয় বরং সাধারণ দান-খয়রাতও এর অন্তরভুক্ত। অর্থাৎ তারা আল্লাহর পথে উন্মুক্ত হৃদয়ে নিজেদের অর্থ ব্যয় করে। আল্লাহর বান্দাদের সাহার্য্য করার ব্যাপারে নিদের সামর্থ অনুযায়ী প্রচেষ্টা চালাতে তারা কসুর করে না। কোন এতিম, রুগ্ন, বিপদাপন্ন, দুর্বল, অক্ষম, গরীব ও অভাবী ব্যক্তি তাদের লোকালয়ে তাদের সাহায্য থেকে বঞ্চিত থাকে না। আর আল্লাহর দীনকে সুউচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রয়োজন হলে তার জন্য অর্থ-সম্পদ ব্যয় করতে তারা কখনো কার্পণ্য করে না।
৬১. ফরয ও নফল উভয় ধরনের রোযা এর অন্তরভুক্ত হবে।
৬২. এর দু'টি অর্থ হয়। একটি হচ্ছে, তারা যিনা থেকে দূরে থাকে এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে, তারা উলংগতাকে এড়িয়ে চলে। এই সাথে এটাও বুঝে নিতে হবে যে, কেবলমাত্র মানুষের পোশাক না পরে উলংগ হয়ে থাকাকে উলংগতা বলে না বরং এমন ধরনের পোশাক পরাও উলংগতার অন্তরভুক্ত, যা এতটা সূক্ষ্ম হয় যে, তার মধ্য দিয়ে শরীর দেখা যায় অথবা এমন চোস্ত ও আটসাঁট হয় যার ফলে তার সাহায্যে দৈহিক কাঠামো ও দেহের উঁচু-নীচু অংগ সবই সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে।
৬৩. আল্লাহকে বেশী বেশী স্মরণ করার অর্থ হচ্ছে, জীবনের সকল কাজেকর্মে সমস্ত ব্যাপারেই সবসময় যেন মানুষের মুখে আল্লাহর নাম এসে যায়। মানুষের মনে আল্লাহর চিন্তা পুরোপুরি ও সর্বব্যাপী আসন গেঁড়ে না বসা পর্যন্ত এ ধরনের অবস্থা তার মধ্যে সৃষ্টি হয় না। মানুসের চেতনার জগত অতিক্রম করে যখন অচেতন মনের গভীরদেশেও এ চিন্তা বিস্তৃত হয়ে যায় তখনই তার অবস্থা এমন হয় যে, সে কোন কথা বললে বা কোন কাজ করলে তার মধ্যে আল্লাহর নাম অবশ্যই এসে যাবে। আহার করলে "বিসমিল্লাহ" বলে শুরু করবে। আহার শেষ করবে 'আলহামদুলিল্লাহ' বলে। আল্লাহকে স্মরণ করে ঘুমাবে এবং ঘুম ভাঙবে আল্লাহর নাম নিতে নিতে। কথাবার্তায় তার মুখে বারবার বিসমিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, ইনশাআল্লাহ, মাশাআল্লাহ এবং এ ধরনের অন্য শব্দ ও বাক্য বারবার উচ্চারিত হতে থাকবে। প্রত্যেক ব্যাপারে বারবার সে আল্লাহর সাহায্য চাইবে। প্রত্যেকটি নিয়ামত লাভ করার পর আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। প্রত্যেকটি বিপদ আসার পর তার রহমতের প্রত্যাশী হবে। প্রত্যেক সংকটে তার দিকে মুখ ফিরাবে। কোন খারাপ কাজের সুযোগ এল তাঁকে ভয় করবে। কোন ভুল বা অপরাধ করলে তাঁর কাছে মাফ চাইবে। প্রত্যেকটি প্রয়োজন ও অভাবের মুহূহর্তে তাঁর কাছে প্রার্থনা করবে। মোটকথা উঠতে বসতে এবং দুনিয়ার সমস্ত কাজকর্মে আল্লাহর স্মরণ হয়ে থাকবে তার কণ্ঠলগ্ন্ এ জিনিসটি আসলে ইসলামী জীবনের প্রাণ । অন্য যে কোন ইবাদাতের জন্য কোন না কোন সময় নির্ধাতির থাকে এবং তখনই তা পালন করা হয়ে থাকে এবং তা পালন করার পর মানুষ তা থেকে আলাদা হয়ে যায়। কিন্তু এ ইবাদাতটি সর্বক্ষণ জারী থাকে এবং এটিই আল্লাহ ও তাঁর বন্দেগীর সাথে মানুষের জীবনের স্থায়ী সম্পর্ক জুড়ে রাখে। মানুষের মন কেবলমাত্র এসব বিশেষ কাজের সময়েই নয় বরং সর্বক্ষণ আল্লাহর প্রতি আকৃষ্ট এবং তার কণ্ঠ সর্বক্ষণ তাঁর স্মরণে সিক্ত থাকলেই এরি মাধ্যমেই ইবাদাত ও অন্যান্য দীনী কাজে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয় । মানুষের মধ্যে যদি এ অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাহলে তার জীবনে ইবাদাত ও দীনী কাজ ঠিক তেমনিভাবে বুদ্ধি ও বিকাশ লাভ করে যেমন একটি চারাগাছকে তার প্রকৃতির অনুকূল আবহাওয়ায় রোপণ করা হলে তা বেড়ে উঠে । পক্ষান্তরে যে জীব্ন আল্লাহর এ সার্বক্ষণিক স্মরণ শূন্য থাকে সেখানে নিছক বিশেষ সময়ে অথবা বিশেষ সুযোগে অনুষ্ঠিত ইবাদাত ও দীনী কাজের দৃষ্টান্ত এমন একটি চারাগাছের মতো যাকে তার প্রকৃতির প্রতিকূল আবহাওয়ায় রোপণ করা হয় এবং নিছক বাগানের মালির বিশেষ তত্ত্বাবধানের কারণ এ বেঁচে থাকে। একথাটিই নবী (সাঃ) একটি হাদীসে এভাবে বর্ণনা করেছেন।
(আরবী)
"মু'আয ইবনে আনাস জুহানী বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রসূল! জিহাদকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রতিদান লাভ করবে কে৷ জবাব দিলেন, যে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী আল্লাহকে স্মরণ করবে। তিনি নিবেদন করেন, রোযা পালনকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী প্রতিদান পাবে কে৷ জবাব দিলেন, যে তাদের মধ্যে আল্লাহকে সবচেয়ে বেশী স্মরণ করবে। আবার তিনি একই ভাবে নামায, যাকাত, হ্জ্জ ও সাদকা আদায়কারীদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। জাবাবে নবী করীম (সাঃ) বলেণ, " যে আল্লাহকে সবচেয়ে বেশী স্মরণ করে।" (মুসনাদে আহমাদ)
৬৪. আল্লাহর দরবারে কোন গুণাবলীকে আসল মূল্য ও মর্যাদা দেয়া হয় এ আয়াতে তা বলে দেয়া হয়েছে। এগুলো ইসলামের মৌলিক মূল্যবোধ । একটি বাক্যে নারীর মধ্যে কোন ফারাক নেই। কাজের ভিত্তিতে নিসন্দেহে উভয় দলের কর্মক্ষেত্রে আলাদা। পুরুষদের জীবনের কিছু বিভাগে কাজ করতে হয়। নারীদের কাজ করতে হয় ভিন্ন কিছু বিভাগে। কিন্তু এ গুণাবলী যদি উভয়ের মধ্যে সমান থাকে তাহলে আল্লাহর কাছে উভয়ের মর্যাদা সমান এবং উভয়ের প্রতিদানও সমান হবে। একজন রান্নঘর ও গৃহস্থালী সামলালো এবং অন্যজন খেলাফতের মসনদে বসে শরীয়তের বিধান জারী করলো আবার একজন গৃহে সন্তান লালন-পালন করলো এবং অন্যজন যুদ্ধের ময়দানে গিয়ে আল্লাহ তাঁর দীনের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করলেঅ এ জন্যে উভয়ের মর্যাদা ও প্রতিদানে কোন পার্থক্য দেখা দেবে না।
(২৫.ফুরকান:৬৩) রহমানের (আসল) বান্দা তারাই যারা পৃথিবীর বুকে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং মূর্খরা তাদের সাথে কথা বলতে থাকলে বলে দেয়, ৬৪) তোমাদের সালাম৷ তারা নিজেদের রবের সামনে সিজদায় অবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে রাত কাটিয়ে দেয়৷৬৫) তারা দোয়া করতে থাকেঃ “হে আমাদের রব ! জাহান্নামের আযাব থেকে আমাদের বাঁচাও, তার আযাব তো সর্বনাশা৷৬৬) আশ্রয়স্থল ও আবাস হি্সেবে তা বড়ই নিকৃষ্ট জায়গা৷৬৭) তারা যখন ব্যয় করে তখন অযথা ব্যয় করে না এবং কার্পণ্যও করেনা বরং উভয় প্রান্তিকের মাঝামাঝি তাদের ব্যয় ভারসাম্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে৷৬৮) তারা আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্যকে ডাকে না, আল্লাহ যে প্রানকে হারাম করেছেন কোন সংগত কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে নাএবং ব্যভিচার করে না৷এসব যে-ই করে সে তার গোনাহের শাস্তি ভোগ করবে৷৬৯) কিয়ামতের দিন তাকে উপর্যুপরি শাস্তি দেয়া হবে এবং সেখানেই সে পড়ে থাকবে চিরকাল লাঞ্ছিত অবস্থায়৷৭২) (আর রহমানের বান্দা হচ্ছে তারা) যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না এবং কোন বাজে জিনিসের কাছ দিয়ে পথ অতিক্রম করতে থাকলে ভদ্রলোকের মত অতিক্রম করে যায়৷৭৩) তাদের যদি তাদের রবের আয়াত শুনিয়ে উপদেশ দেয় হয় তাহলে তারা তার প্রতি অন্ধ বধির হয়ে থাকে না৷৭৫) (এরাই নিজেদের সবরের ফল উন্নত মনজিলের আকারে পাবে৷ অভিবাদন ও সালাম সহকারে তাদের সেখানে অভ্যর্থনা করা হবে৷৭৬) তারা সেখানে থাকবে চিরকাল৷ কী চমৎকার সেই আশ্রয় এবং সেই আবাস!
(হাজ্ব:৭৮) আল্লাহর পথে জিহাদ করো যেমন জিহাদ করলে তার হক আদায় হয়৷তিনি নিজের কাজের জন্য তোমাদেরকে বাছাই করে নিয়েছেন।
(বিস্তারিত দেখুন : জ > জিহাদ)
(৩৩-আহযাব: ১১) তখন মু’মিনদেরকে নিদারুণ পরীক্ষা করা হলো এবং ভীষণভাবে নাড়িয়ে দেয়া হলো৷২১
২১. এখানে মুমিন তাদেরকে বলা হয়েছে যারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রসূল বলে মেনে নিয়ে নিজেকে তাঁর অনুসারীদের অন্তরভুক্ত করেছিলেন এদের মধ্যে সাচ্চা ঈমানদার ও মুনাফিক উভয়ই ছিল। এ প্যারাগ্রাফে মুসলমানদের দলের উল্লেখ করেছেন সামগ্রিকভাবে, এরপরের তিনটি প্যারাগ্রাফে মুনাফিকদের নীতির ওপর মন্তব্য করা হয়েছে। তারপর শেষ দুটি প্যারাগ্রাফে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাচ্চা মুমিনদের সম্পর্কে বলা হয়েছে।
(৩৩-আহযাব: ২২) আর সাচ্চা মুমিনদের (অবস্থা সে সময় এমন ছিল,)৩৬ যখন আক্রমণকারী সেনাদলকে দেখলো তারা চিৎকার করে উঠলো, “এতো সেই জিনিসই যার প্রতিশ্রুতি আল্লাহ ও তাঁর রসূল আমাদের দিয়েছিলেন, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কথা পুরোপুরি সত্য ছিল৷” ৩৭ এ ঘটনা তাদের ঈমান ও আত্মসমর্পণ আরো বেশী বাড়িয়ে দিল৷৩৮
(বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য অবশ্যই দেখুন : ম > মুনাফিক > মুনাফিক ও জিহাদ )
দেখুন : ঈ > ঈমান > ঈমান বাড়ে কমে কিভাবে ?
(২৭-নমল:৭৭) আর এ হচ্ছে পথ নির্দেশনা ও রহমত মুমিনদের জন্য৷৯৪
(৯৪. অর্থাৎ তাদের জন্য যারা এ কুরআনের দাওয়াত গ্রহণ করে এবং কুরআন যা পেশ করেছ তা মেনে নেয়। এ ধরণের লোকেরা তাদের জাতি যে গোমরাহীতে লিপ্ত রয়েছে তা থেকে রক্ষা পাবে। এ কুরআনের বদৌলতে তারা জীবনের সহজ সরল পথ লাভ করবে এবং তাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ বর্ষিত হবে। কুরাইশ বংশীয় কাফেররা এর কল্পনাও আজ করতে পারে না। এ অনুগ্রহের বারিধারাও মাত্র কয়েক বছর পরই দুনিয়াবাসী দেখে নিয়েছে। দুনিয়াবাসী দেখেছে, যেসব লোক আরব মরুর এক অখ্যাত অজ্ঞাত এলাকায় অবহেলিত জীবন যাপন করছিল এবং কুফুরী জীবনে বড়জোর একদল সফল নিশাচর দস্যু হতে পারতো তারাই এ কুরআনের প্রতি ঈমান আনার পর সহসাই সারা দুনিয়ার একটি বিশাল ভূখণ্ডের শাসনকর্তায় পরিণত হয়ে গেছে।)
(১৯:৫৮) এদের অবস্থা এই ছিল যে, যখন করুণাময়ের আয়াত এদেরকে শুনানো হতো তখন কান্নারত অবস্থায় সিজদায় লুটিয়ে পড়তো৷
(বিস্তারিত : ক > কুরআন)
(২৭.নামল:৭৭) আর এ হচ্ছে পথ নির্দেশনা ও রহমত মুমিনদের জন্য৷৯৪
(৯৪. অর্থাৎ তাদের জন্য যারা এ কুরআনের দাওয়াত গ্রহণ করে এবং কুরআন যা পেশ করেছ তা মেনে নেয়। এ ধরণের লোকেরা তাদের জাতি যে গোমরাহীতে লিপ্ত রয়েছে তা থেকে রক্ষা পাবে। এ কুরআনের বদৌলতে তারা জীবনের সহজ সরল পথ লাভ করবে এবং তাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ বর্ষিত হবে। কুরাইশ বংশীয় কাফেররা এর কল্পনাও আজ করতে পারে না। এ অনুগ্রহের বারিধারাও মাত্র কয়েক বছর পরই দুনিয়াবাসী দেখে নিয়েছে। দুনিয়াবাসী দেখেছে, যেসব লোক আরব মরুর এক অখ্যাত অজ্ঞাত এলাকায় অবহেলিত জীবন যাপন করছিল এবং কুফুরী জীবনে বড়জোর একদল সফল নিশাচর দস্যু হতে পারতো তারাই এ কুরআনের প্রতি ঈমান আনার পর সহসাই সারা দুনিয়ার একটি বিশাল ভূখণ্ডের শাসনকর্তায় পরিণত হয়ে গেছে। )
(নুর:৫১) মু’মিনদের কাজই হচ্ছে, যখন তাদেরকে আল্লাহ ও রসূলের দিকে ডাকা হয়, যাতে রসূল তাদের মোকদ্দমার ফায়সালা করেন, তখন তারা বলেন, আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম৷ এ ধরনের লোকেরাই সফলকাম হবে ৷৫২) আর সফলকাম তারাই যারা আল্লাহ ও রসূলের হুকুম মেনে চলে এবং আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর নাফরমানী করা থেকে দূরে থাকে ৷
(মু’মিনুন:১) নিশ্চিতভাবে সফলকাম হয়েছে মু’মিনরা, ২) যারাঃ নিজেদের নামাযে বিনয়াবনত হয়, ৩) বাজে কাজ থেকে দূরে থাকে, ৪) যাকাতের পথে সক্রিয় থাকে, ৫) নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে, ৬) নিজেদের স্ত্রীদের ও অধিকারভুক্ত বাঁদীদের ছাড়া, এদের কাছে (হেফাজত না করলে) তারা তিরষ্কৃত হবে না, ৭) তবে যারা এর বাইরে আরো কিছু চাইবে তারাই হবে সীমালংঘনকারী, ৮) নিজেদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে, ৯) এবং নিজেদের নামাযগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করে, ১০) তারাই এমন ধরনের উত্তরাধিকারী যারা নিজেদের উত্তরাধিকার হিসেবে ফিরদাউস লাভ করবে, ১১) এবং সেখানে তারা থাকবে চিরকাল৷
(বিস্তারিত দেখুন : স > সফলতা > সফলতা লাভের অর্থ কি ? / সফলতা লাভ করার শর্তাবলী )
(২৮-ক্বাছাছ : ৫১) আর আমি তো অনবরত তাদের কাছে (উপদেশ বাণী) পৌঁছিয়ে দিয়েছি, যাতে তারা গাফলতি থেকে সজাগ হয়ে যায়৷৫২) যাদেরকে আমি এর আগে কিতাব দিয়েছিলাম তারা এর (কুরআন ) প্রতি ঈমান আনে৷৫৩) আর যখন তাদেরকে এটা শুনানো হয়, তারা বলো, "আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি, এটি যথার্থই সত্য আমাদের রবের পক্ষ থেকে, আমরা তো আগে থেকেই মুসলিম৷"৫৪) তারা এমন লোক যাদেরকে দু'বার পারিশ্রমিক দেয়া হবে এমন অবিচলতার প্রতিদানে যা তারা দেখিয়েছে৷ তারা ভালো দিয়ে মন্দের মোকাবিলা করেছে এবং আমি তাদেরকে যা কিছু রিযিক দিয়েছি তা ব্যয় করে৷৫৫) আর যখন তারা বাজে কথা শুনেছে, একথা বলে তা থেকে আলাদা হয়ে গেছে যে, "আমাদের কর্মকাণ্ড আমাদের জন্য এবং তোমাদের কর্মকাণ্ড তোমাদের জন্য, তোমাদের প্রতি সালাম, আমরা মূর্খদের মতো পথ অবলম্বন করতে চাই না৷" (ব্যাখ্যার জন্য দেখুন : ই > ইসলাম > সব যুগে সব নবীর ধর্মই কি ছিলো ইসলাম ? )
দেখুন : ই > ইবাদত > রাতের ইবাদত।
(১৯:৫৪) আর এ কিতাবে ইসমাঈলের কথা স্মরণ করো৷ সে ছিল ওয়াদা পালনে সত্যনিষ্ঠ এবং ছিল রসূল নবী৷৫৫) সে নিজের পরিবারবর্গকে নামায ও যাকাতের হুকুম দিতো এবং নিজের রবের কাছে ছিল একজন পছন্দনীয় ব্যক্তি৷
(২০:১৩২) নিজের পরিবার পরিজনকে নামায পড়ার হুকুম দাও এবং নিজেও তা নিয়মিত পালন করতে থাকো৷ আমি তোমার কাছে কোন রিযিক চাই না, রিযিক তো আমিই তোমাকে দিচ্ছি এবং শুভ পরিণাম তাকওয়ার জন্যই৷
(বিস্তারিত দেখুন : ন > নামাজ )
(২০:১৩১) আর চোখ তুলেও তাকাবে না দুনিয়াবী জীবনের শান-শওকতের দিকে, যা আমি এদের মধ্য থেকে বিভিন্ন ধরনের লোকদেরকে দিয়ে রেখেছি৷ এসব তো আমি এদেরকে পরীক্ষার মুখোমুখি করার জন্য দিয়েছি এবং তোমার রবের দেয়া হালাল রিযিকই উত্তম ও অধিকতর স্থায়ী৷
(বিস্তারিত দেখুন : স > সম্পদ, র > রিযিক্ব)
(হাজ্ব:৩৪) ...আর হে নবী! সুসংবাদ দিয়ে দাও বিনয়ের নীতি অবলম্বন কারীদেরকে।
(মূলে (مُخْبِتِينَ) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কোন একটি মাত্র শব্দের সাহায্যে এর অন্তরনিহিত অর্থ পুরোপুরি প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এর মধ্যে রয়েছে তিনটি অর্থঃ অহংকার ও আত্মম্ভরিতা পরিহার করে আল্লাহর সামনে অক্ষমতা ও বিনয়াবনত ভাব অবলম্বন করা। তাঁর বন্দেগী ও দাসত্বে একাগ্র ও একনিষ্ঠ হয়ে যাওয়া। তাঁর ফায়সালায় সন্তুষ্ট হওয়া।)
(২০:৬৫) যাদুকররা বললো, “হে মূসা! তুমি নিক্ষেপ করবে, না কি আমরাই আগে নিক্ষেপ করবো?”মূসা বললো, “না তোমরাই নিক্ষেপ করো”৷
( কোন কোন তাফসীরবিদ এর মতে যাদুকরেরা মুসা আ: এর শানে এ সম্মান টুকু জানানোর কারণেই হয়তো আল্লাহ পরবর্তীতে তাদের ঈমান আনার তৌফিক দান করেন) ।
(হাজ্ব:১১) আর মানুষের মধ্যে এমনও কেউ আছে, যে এক কিনারায় দাঁড়িয়ে আল্লাহর বন্দেগী করে,১৫ যদি তাতে তার উপকার হয় তাহলে নিশ্চিন্ত হয়ে যায় আর যদি কোনো বিপদ আসে তাহলে পিছনের দিকে ফিরে যায় ১৬ তার দুনিয়াও গেলো এবং আখেরাতও৷ এ হচ্ছে সুস্পষ্ট ক্ষতি৷১৭ ১২) তারপর সে আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদেরকে ডাকে যারা তার না ক্ষতি করতে পারে, না উপকার, এ হচ্ছে ভ্রষ্টতার চূড়ান্ত৷১৩) সে তাদেরকে ডাকে যাদের ক্ষতি তাদের উপকারের চাইতে নিকটতর১৮ নিকৃষ্ট তার অভিভাবক এবং নিকৃষ্ট তার সহযোগী৷১৯ ১৪) (পক্ষান্তরে) যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে ২০ আল্লাহ তাদেরকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত হবে; আল্লাহ যা চান তাই করেন৷২১
(১৫. অর্থাৎ দীনী বৃত্তের মধ্যখানে নয় বরং তার এক প্রান্তে বা কিনারায় অথবা অন্য কথায় কুফর ও ইসলামের সীমান্তে দাঁড়িয়ে বন্দেগী করে। যেমন কোন দো-মনা ব্যক্তি কোন সেনাবাহিনীর এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকে। যদি দেখে সেনাদল বিজয়লাভ করছে তাহলে তাদের সাথে মিলে যায় আর যদি দেখে পরাজিত হচ্ছে তাহলে আস্তে আস্তে কেটে পড়ে।
১৬. এখানে এমন সব লোকের কথা বলা হয়েছে যাদের মানসিক গঠন অপরিপক্ক, আকীদা-বিশ্বাস নড়বড়ে এবং যারা প্রবৃত্তির পূজা করে। তারা ইসলাম গ্রহণ করে লাভের শর্তে। তাদের ঈমান এ শর্তের সাথে জড়িত হয় যে, তাদের আকাংখা পূর্ণ হতে হবে, সব ধরণের নিশ্চিন্ততা অর্জিত হতে হবে, আল্লাহর দীন তাদের কাছে কোন স্বার্থ ত্যাগ দাবী করতে পারবে না এবং দুনিয়াতে তাদের কোন ইচ্ছা ও আশা অপূর্ণ থাকতে পারবে না। এসব হলে তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট এবং তার দীন তাদের কাছে খুবই ভালো। কিন্তু যখনই কোন আপদ বলাই নেমে আসে অথবা আল্লাহর পথে কোন বিপদ, কষ্ট ও ক্ষতির শিকার হতে হয় কিংবা কোন আকাংখা পূর্ণ হয় না তখনই আর আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতা, রসূলের রিসালাত ও দীনের সত্যতা কোনটাই ওপরই তারা নিশ্চিন্ত থাকে না। এরপর তারা এমন প্রতিটি বেদীমূলে মাথা নোয়াতে উদ্যেগী হয় যেখানে তাদের লাভের আশা ও লোকসান থেকে বেঁচে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
১৭. এখানে একটি অনেক বড় সত্যকে কয়েকটি কথায় প্রকাশ করে দেয়া হয়েছে। আসলে দো-মনা মুসলমানের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ হয়। কাফের যখন নিজের রবের মুখাপেক্ষী না হয়ে এবং পরকাল থেকে বেপরোয়া ও আল্লাহর আইনের অনুগত্য মুক্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে বস্তুগত স্বার্থের পেচনে দৌঁড়াতে থাকে তখন সে নিজের পরকাল হারালেও দুনিয়ার স্বার্থ কিছু না কিছু হাসিল করেই নেয়। আর মু'মিন যখন পূর্ণ ধৈর্য, অবিচলতা, দৃঢ় সংকল্প ও স্থৈর্য সহকারে আল্লাহর দীনের আনুগত্য করে তখন যদিও পার্থিব সাফল্য শেষ পর্যন্ত তার পদ-চুম্বন করেই থাকে, তবুও যদি দুনিয়া একেবারেই তার নাগালের বাইরে চলে যেতেই থাকে, আখেরাতে তার সাফল্য সুনিশ্চিত হয়। কিন্তু এ দো-মনা মুসলমান নিজের দুনিয়ার স্বার্থ লাভ করতে পারে না এবং আখেরাতেও তার সাফল্যের কোন সম্ভবনা থাকে না। তার মন ও মস্তিষ্কের কোন এক প্রকোষ্ঠ আল্লাহ ও আখেরাতের অস্তিত্বের যে ধারণা রয়েছে এবং ইসলামের সাথে সম্পর্ক তার মধ্যে নৈতিক সীমারেখা কিছু না কিছু মেনে চলার যে প্রবণতা সৃষ্টি করেছে, দুনিয়ার দিকে দৌড়াতে থাকলে এগুলো তার হাত টেনে ধরে। ফলে নিছক দুনিয়াবী ও বৈষয়িক স্বার্থ অন্বেষার জন্য যে ধরনের দৃঢ়তা ও একনিষ্ঠতার প্রয়োজন তা একজন কাফেরের মতো তার মধ্যে সৃষ্টি হয় না। আখেরাতের কথা চিন্তা করলে দুনিয়ার লাভ ও স্বার্থের লোভ, ক্ষতির ভয় এবং প্রবৃত্তির কামনা বাসনাকে বিধিনিষেধের শৃংখলে বেঁধে রাখার ব্যাপারে মানসিক অস্বীকৃতি সেদিকে যেতে দেয় না বরং বৈষয়িক স্বার্থ পূজা তার বিশ্বাস ও কর্মকে এমনভাবে বিকৃত করে দেয় যে, আখেরাতে তার শাস্তি থেকে নিষ্কৃতিলাভের সম্ভাবনা থাকে না। এভাবে সে দুনিয়া ও আখেরাত দুটোই হারায়।
১৮. প্রথম আয়াতে আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য মাবুদদের উপকার ও ক্ষতি করার ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করা হয়েছে। কারণ, মূলত ও যথার্থই তাদের উপকার ও ক্ষতি করার কোন ক্ষমতা নেই। দ্বিতীয় আয়াতে তাদের ক্ষতিকে উপকারের চেয়ে নিকটতর বলা হয়েছে। কারণ, তাদের কাছে দোয়া চেয়ে এবং অভাব ও প্রয়োজন পূরণের জন্য তাদের সামনে হাত পাতার মাধ্যমে সে নিজের ঈমান সংগে সংগেই ও নিশ্চিতভাবেই হারিয়ে বসে। তবে যে লাভের আশায় সে তাদেরকে ডেকেছিল তা অর্জিত হবার ব্যাপারে বলা যায়, প্রকৃত সত্যের কথা বাদ দিলেও প্রকাশ্য অবস্থার দৃষ্টিতে সে নিজেও একথা স্বীকার করবে যে, তা অর্জিত হওয়াটা নিশ্চিত নয় এবং বাস্তবে তা সংঘটিত হবার নিকটতর সম্ভাবনাও নেই । হতে পারে, আল্লাহ তাতে আরো বেশী পরিক্ষার সম্মুখীন করার জন্য কোন আস্তানায় তার মনোবাঞ্চনা পূর্ণ করেছেন। আবার এও হতে পারে যে, সে আস্তানায় সে নিজের ঈমানও বিকিয়ে দিয়ে এসেছে এবং মনোবাঞ্চনা পূর্ণ হয়নি।
১৯. অর্থাৎ মানুষ বা শয়তান যে-ই হোক না কেন, যে তাকে এ পথে এনেছে সে নিকৃষ্টতম কর্মসম্পাদক ও অভিভাবক এবং নিকৃষ্টতম বন্ধু ও সাথী।
২০. অর্থাৎ যাদের অবস্থা উল্লেখিত মতলবী, ধান্দাবাজ, দো-মনা ও দৃঢ় বিশ্বাসহীন মুসলমানের মতো নয় বরং যারা ঠান্ডা মাথায় খুব ভালোভাবে ভেবে চিন্তে আল্লাহ, রসূল ও আখেরাতকে মেনে নেবার ফায়সালা করে তারপর ভালো মন্দ যে কোন অবস্থার সম্মুখীন হতে হোক এবং বিপদের পাহাড় মাথায় ভেঙে পড়ুক বা বৃষ্টিধারার মতো পুরস্কার ঝড়ে পড়ুক সবাবস্থায় দৃঢ়পদে সত্যের পথে এগিয়ে চলে।
২১. অর্থাৎ আল্লাহ ক্ষমতা অসীম। দুনিয়ায় বা আখেরাতে অথবা উভয় স্থানে তিনি যাকে যা চান দিয়ে দেন এবং যার থেকে যা চান চিনিয়ে নেন। তিনি দিতে চাইলে বাধা দেবার কেউ নেই। না দিতে চাইলে আদায় করার ও কেউ নেই।)
(হাজ্ব:৩০) এ ছিল (কাবা নির্মাণের উদ্দেশ্য) এবং যে কেউ আল্লাহ প্রতিষ্ঠিত পবিত্র অনুষ্ঠানগুলোকে সম্মান করবে, তার রবের কাছে এ হবে তারই জন্য ভালো৷
(হাজ্ব:৩২) এ হচ্ছে আসল ব্যাপার (এটি বুঝে নাও), আর যে ব্যক্তি আল্লাহ নির্ধারিত রীতিনীতির প্রতি সম্মান দেখায়, তার সে কাজ তার অন্তরের আল্লাহভীতির পরিচায়ক৷
(নুর:৪৭) তারা বলে, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহ ও রসূলের প্রতি এবং আমরা আনুগত্য স্বীকার করেছি কিন্তু এরপর তাদের মধ্য থেকে একটি দল (আনুগত্য থেকে ) মুখ ফিরিয়ে নেয় ৷ এ ধরনের লোকেরা কখনোই মু’মিন নয় ৷৭৬
(৭৬ . অর্থাৎ আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়াই তাদের ঈমানের দাবী মিথ্যা প্রমাণ করে দেয়। তাদের এহেন কার্যকলাপ থেকে বুঝা যায় যে, তারা যখন বলেছে আমরা ঈমান এনেছি ও আনুগত্য স্বীকার করেছি তখন তারা অসত্য বলেছে।)
(নুর:৪৮) যখন তাদেরকে ডাকা হয় আল্লাহ ও তাঁর রসূলের দিকে, যাতে রসূল তাদের পরস্পররে মোকদ্দমার ফায়সালা করে দেন তখন তাদের মধ্যকার একটি দল পাশ কাটিয়ে যায় ৷৪৯) তবে যদি সত্য তাদের অনুকূল থাকে, তাহলে বড়ই বিনীত হয়ে রসূলের কাছে আসে ৷৫০) তাদের মনে কি (মুনাফিকীর ) রোগ আছে ? না তারা সন্দেহের শিকার হয়েছে ? না তারা ভয় করছে আল্লাহ ও তাঁর রসূল তাদের প্রতি যুলুম করবেন ? আসলে তারা নিজেরাই যালেম ৷
(ফুরকান:৭-২০).... আসলে আমি তোমাদের পরস্পরকে পরস্পরের জন্য পরীক্ষার মাধ্যমে পরিণত করেছি৷
(অর্থাৎ অস্বীকারকারীরা রসূল ও মু'মিনদের জন্য পরীক্ষা এবং রসূল ও মু'মিনরা অস্বীকারকারীদের জন্য । অস্বীকারকারীরা জুলুম , নিপীড়ন ও জাহেলী শত্রুতার যে আগুনের কুণ্ড জ্বালিয়ে রেখেছে সেটিই এমন একটি মাধ্যম যা থেকে প্রমাণ হবে রসূল ও তাঁর সাচ্চা ঈমানদার অনুসারীরা খাঁটি সোনা। যার মধ্যে ভেজাল থাকবে সে সেই আগুনের কুণ্ড নিরাপদে অতিক্রম করতে পারবে না। এভাবে নির্ভেজাল ঈমানদারদের একটি ছাঁটাই বাছাই করা গ্রুপ বের হয়ে আসবে। তাদের মোকাবিলায় এরপর দুনিয়ার আর কোন শক্তিই দাঁড়াতে পারবে না। এ আগুনের কুণ্ড জ্বলতে না থাকলে সব রকমের খাঁটি ও ভেজাল লোক নবীর চারদিকে জমা হতে থাকবে এবং দীনের সূচনাই হবে একটি অপরিপক্ক দল থেকে। অন্যদিকে অস্বীকারকারীদের জন্যও রসূল ও রসূলের সাহাবীগণ হবেন একটি পরীক্ষা । নিজেদেরই বংশ-গোত্রের মধ্য থেকে একজন সাধারণ লোককে হঠাৎ নবী বানিয়ে দাঁড় করিয়ে দেয়া , তাঁর অধীনে কোন বিরাট সেনাদল ও ধন-সম্পদ না থাকা , আল্লাহর বাণী ও নির্মল চরিত্র ছাড়া তাঁর কাছে বিস্ময়কর কিছু না থাকা , বেশীরভাগ গরীব-মিসকীন , গোলাম ও নব্য কিশোর যুবাদের তাঁর প্রাথমিক অনুসারী দলের অন্তর্ভুক্ত হওয়া এবং আল্লাহর এ মুষ্টিমেয় কয়েকজন লোককে যেন নেকড়ে ও হায়েনাদের মধ্যে অসহায়ভাবে ছেড়ে দেয়া- এ সবই হচ্ছে এমন একটি ছাঁকনি যা অসৎ ও অনভিপ্রেত লোকদের দীনের দিকে আসতে বাধা দেয় এবং কেবলমাত্র এমন সব লোককে ছাঁটাই বাছাই করে সামনের দিকে নিয়ে চলে যারা সত্যকে জানে , চেনে ও মেনে চলে। এ ছাঁকনি যদি না বসানো হতো এবং রসূল বিরাট শান-শওকতের সাথে এসে সিংহাসনে বসে যেতেন , অর্থভাণ্ডারের মুখ তাঁর অনুসারীদের জন্য খুলে দেয়া হতো এবং সবার আগে বড় বড় সরদার ও সমাজপতির অগ্রসর হয়ে তাঁর আনুগত্য গ্রহণ করতো , তাহলে দুনিয়া পূজারী ও স্বার্থবাদী মানুষদের মধ্যে তাঁর প্রতি ঈমান এনে তাঁর অনুগত ভক্তের দলে শামিল হতো না এমন নির্বোধ কোন লোক পাওয়া সম্ভব ছিল কি ৷ এ অবস্থায় তো সত্যপ্রিয় লোকেরা সবার পেছনে থেকে যেতো এবং বৈষয়িক স্বার্থ পুজারীরা এগিয়ে যেতো। )
(৩৩-আহযাব: ৪) আল্লাহ কোন ব্যক্তির দেহাভ্যন্তরে দু’টি হৃদয় রাখেননি৷৫
৫. অর্থাৎ একজন লোক একই সংগে মু'মিন ও মুনাফিক, সত্যবাদী ও মিথ্যাবাদী এবং সৎ ও অসৎ হতে পারে না। তার বক্ষ দেশে দু'টি হৃদয় নেই যে, একটি হৃদয়ে থাকবে আন্তরিকতা এবং অন্যটিতে থাকবে আল্লাহর প্রতি বেপরোয়া ভাব। কাজেই একজন লোক এক সময় একটি মর্যাদারই অধিকারী হতে পারে। সে মু'মিন হবে অথবা হবে মুনাফিক। সে কাফের হবে অথবা হবে মুসলিম। এখন যদি তোমরা কোন মু'মিনকে মুনাফিক বলো অথবা মুনাফিককে মু'মিন, তাহলে তাতে প্রকৃত সত্যের কোন পরিবর্তন হবে না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আসল মর্যাদা অবশ্যই একটিই থাকবে।
(১০:১০৩) তারপর (যখন এমন সময আসে তখন) আমি নিজের রসূলদের এবং যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে রক্ষা করি৷ এটিই আমার রীতি৷ মুমিনদের রক্ষা করা আমার দায়িত্ব ৷
(১৫:৫৮) তারা বললো, আমাদের একটি অপরাধী সম্প্রদায়ের দিকে (তাদেরকে ধ্বংস করার জন্য) পাঠানো হয়েছে৷৫৯) তবে শুধুমাত্র লূতের পরিবারবর্গ এর অন্তরভুক্ত নয়৷ তাদের সবাইকে আমরা বাঁচিয়ে নেবো, ৬০) তার স্ত্রী ছাড়া, যার জন্য (আল্লাহ বলেনঃ) আমি স্থির করেছি, সে পেছনে অবস্থানকারীদের সাথে থাকবে৷
(২১:৮৮) তখন আমি তার দোয়া কবুল করেছিলাম এবং দুঃখ থেকে তাকে মুক্তি দিয়েছিলাম, আর এভাবেই আমি মুমিনদেরকে উদ্ধার করে থাকি৷
(২১:৭৬) আর এ একই নিয়ামত আমি নূহকে দান করেছিলাম৷ স্মরণ করো যখন এদের সবার আগে সে আমাকে ডেকেছিল, আমি তার দোয়া কবুল করেছিলাম এবং তাকে ও তার পরিবারবর্গকে মহাবিপদ থেকে বাঁচিয়েছিলাম৷
(২১:৮৩) আর (এ একই বুদ্ধিমত্তা, প্রজ্ঞা ও জ্ঞান) আমি আইয়ুবকে দিয়েছিলাম৷ স্মরণ করো, যখন সে তার রবকে ডাকলো, “আমি রোগগ্রস্ত হয়ে গেছি এবং তুমি করুণাকারীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ করুণাকারী৷৮৪) আমি তার দোয়া কবুল করেছিলাম, তার যে কষ্ট ছিল তার দূর করে দিয়েছিলাম এবং শুধুমাত্র তার পরিবার পরিজনই তাকে দেইনি বরং এই সাথে এ পরিমাণ আরো দিয়েছিলাম, নিজের বিশেষ করুণা হিসেবে এবং এজন্য যে, এটা একটা শিক্ষা হবে ইবাদাতকারীদের জন্য৷
(২৭.নমল:৫৩) আর যারা ঈমান এনেছিল এবং নাফরমানী থেকে দূরে অবস্থান করতো তাদেরকে আমি উদ্ধার করেছি৷
(২৭.নমল:৫৭) শেষ পর্যন্ত আমরা তাকে (নবী লূত আ: কে) এবং তার পরিবারবর্গকে বাঁচিয়ে নিলাম তবে তার স্ত্রীকে নয়৷
তাদের জন্য রয়েছে তাদের রবের কাছে রয়েছে বিরাট মর্যাদা, উত্তম রিজিক্ব এবং ভুল ত্রুটির ক্ষমা : ৮:৪,
যারা ঈমান এনেছে অত:পর হিজরত করে এবং যারা আশ্রয় দিয়েছে এবং যারা জিহাদ করে তারাই প্রকৃত মু’মিন অর্থাৎ তারা তাদের ঈমানের দাবীতে সত্যবাদী, তাদের জন্যই রয়েছে ক্ষমা ও সম্মান জনক রিজিক্ব : ৮:৭৪ (নবী সা: এর সঙ্গী সাথীগণ),
আর যারা পরবর্তীতে ঈমান আনবে এবং হিজরত করবে ও জিহাদ করবে তারাও নবী সা: এর সঙ্গী সাথীদের দলভুক্ত হিসেবে গণ্য হবে :৮:৭৫
هُوَ ٱلَّذِى يُصَلِّى عَلَيْكُمْ وَمَلَـٰٓئِكَتُهُۥ لِيُخْرِجَكُم مِّنَ ٱلظُّلُمَـٰتِ إِلَى ٱلنُّورِ ۚ وَكَانَ بِٱلْمُؤْمِنِينَ رَحِيمًۭا [٣٣:٤٣]
(৩৩-আহযাব: ৪৩) তিনিই তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর ফেরেশতারা তোমাদের জন্য দোয়া করে, যাতে তিনি তোমাদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোকের মধ্যে নিয়ে আসেন, তিনি মুমিনদের প্রতি বড়ই মেহেরবান৷৭৯
৭৯) মুসলমানদের মনে এ অনুভূতি সৃষ্টি করাই এর উদ্দেশ্য যে, কাফের ও মুনাফিকদের মনের সমস্ত জ্বালা ও আক্রোশের কারণ হচ্ছে আল্লাহর রহমত, যা তাঁর রসূলের বদৌলতে তোমাদের ওপর বর্ষিত হয়েছে। এরই মাধ্যমে তোমরা ঈমানী সম্পদ লাভ করেছো, কুফরী ও জাহেলিয়াতের অন্ধকার ভেদ করে ইসলামের আলোকে চলে এসেছো এবং তোমাদের মধ্যে এমন উন্নত নৈতিক বৃত্তি ও গুণাবলীর সৃষ্টি হয়েছে যেগুলোর কারণে অন্যদের থেকে তোমাদের সুস্পষ্ট শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিভাত হচ্ছে। হিংসুটেরা রসূলের ওপর এরই ঝাল ঝাড়ছে। এ অবস্থায় এমন কোন নীতি অবলম্বন করো না যার ফলে তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে যাও।
অনুগ্রহের ভাব প্রকাশ করার জন্য মূলে সালাত (يصلى-صلوة) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। “সালাত” শব্দটি যখন আরো (على) অব্যয় সহকারে আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দাদের জন্য ব্যবহার করা হয় তখন এর অর্থ হয় রহমত, অনুগ্রহ, করুণা ও স্নেহশীষ। আর যখন এটি ফেরেশতাদের পক্ষ থেকে মানুষের জন্য ব্যবহৃত হয় তখন এর অর্থ হয় রহমতের দোয়া করা। অর্থাৎ ফেরেশতারা আল্লাহর কাছে মানুষের জন্য এই মর্মে দোয়া করে যে, হে আল্লাহ, তুমি এদের প্রতি অনুগ্রহ করো এবং তোমার দানে এদেরকে আপ্লুত করে দাও। এভাবে يُصَلِّي عَلَيْكُمْএর অর্থ এও হয় যে, يشيع عنكم الذكر الجميل فى عباد الله অর্থাৎ আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে তোমাদেরকে খ্যাতি দান করেন এবং এমন পর্যায়ে উন্নীত করেন যার ফলে আল্লাহর সমুদয় সৃষ্টি তোমাদের প্রশংসা করতে থাকে এবং ফেরেশতারা তোমাদের প্রশংসা ও সুনামের আলোচনা করতে থাকে।
(১৬:৯৭) পুরুষ বা নারী যে-ই সৎকাজ করবে, সে যদি মুমিন হয়, তাহলে তাকে আমি দুনিয়ায় পবিত্র-পরিচ্ছন্ন জীবন দান করবে এবং (আখেরাতে) তাদের প্রতিদান দেবো তাদের সর্বোত্তম কাজ অনুসারে৷
এ মুমিন পুরুষ ও নারীকে আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তাদেরকে তিনি এমন বাগান দান করবেন যার নিম্নদেশে ঝরণাধারা প্রবাহমান হবে এবং তারা তার মধ্যে চিরকাল বাস করবে৷ এসব চির সবুজ বাগানে তাদের জন্য থাকবে বাসগৃহ এবং সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করবে৷ এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্য : ৯:৭২,
আর যে ব্যক্তি আখেরাতের প্রত্যাশী হয় এবং সে জন্য প্রচেষ্টা চালায়, যেমন সে জন্য প্রচেষ্টা চালানো উচিত এবং সে হয় মুমিন, এ ক্ষেত্রে এমন প্রত্যেক ব্যক্তির প্রচেষ্টার যথোচিত মর্যাদা দেয়া হবে৷- (১৭:১৯)
(১৫:৩৯) সে বললো, “হে আমার রব! তুমি যেমন আমাকে বিপথগামী করলে ঠিক তেমনিভাবে আমি পৃথিবীতে এদের জন্য প্রলোভন সৃষ্টি করে এদের সবাইকে বিপথগামী করবো(১৫:৪০) তবে এদের মধ্য থেকে তোমার যেসব বান্দাকে তুমি নিজের জন্য নির্বাচিত করে নিয়েছো তাদের ছাড়া৷(১৫:৪১) বললেন, এটিই আমার নিকট পৌঁছুবার সোজা পথ৷
(১৫:৪২) অবশ্যি যারা আমার প্রকৃত বান্দা হবে তাদের ওপর তোমার কোনো জোর খাটবে না৷ তোমার জোর খাটবে শুধুমাত্র এমন বিপথগামীদের ওপর যারা তোমার অনুসরণ করবে
(১১:১৪) এখন যদি তোমাদের মাবুদরা তোমাদের সাহায্যে না পৌঁছে থাকে তাহলে জেনে রাখো এ আল্লাহর ইল্ম থেকে নাযিল হয়েছে এবং তিনি ছাড়া আর কোন সত্যিকার মাবুদ নেই৷ তাহলে কি তোমরা (এ সত্যের সামনে) আনুগত্যের শির নত করছো ?
এভাবে তিনি তোমাদের প্রতি তাঁর নিয়ামতসমূহ সম্পূর্ণ করেন, হয়তো তোমরা অনুগত হবে৷-১৬:৮১,
(২৭-নমল:৪২) রাণী যখন হাজির হলো, তাকে বলা হলো তোমার সিংহাসন কি এরূপই? সে বলতে লাগলো, “এ তো যেন সেটিই আমরা তো আগেই জেনেছিলাম এবং আমরা আনুগত্যের শির নত করে দিয়েছিলাম৷ (অথবা আমরা মুসলিম হয়ে গিয়েছিলাম৷)” (বিস্তারিত দেখুন : স > সিংহাসন)
(হাজ্ব:৭৮) ..আল্লাহ আগেও তোমাদের নাম রেখেছিলেন “মুসলিম” এবং এর (কুরআন) মধ্যেও (তোমাদের নাম এটিই)
("তোমাদের" সম্বোধনটি শুধূমাত্র এ আয়াতটি নাযিল হবার সময় যেসব লোক ঈমান এনেছিল অথবা তারপর ঈমানদারদের দলভুক্ত হয়েছিল তাদের উদ্দেশে করা হয়নি বরং মানব ইতিহাসের সূচনা লগ্ন থেকেই যারা তাওহীদ, আখেরাত, রিসালাত ও আসমানী কিতাবের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী দলভুক্ত থেকেছে তাদের সবাইকেই এখানে সম্বোধন করা হয়েছে। এখানে মূল বক্তব্য হচ্ছে, এ সত্য মিল্লাতের অনুসারীদেরকে কোনদিন "নূহী" "ইবরাহিমী", "মুসাবী" ইত্যাদি বলা হয়নি বরং তাদের নাম "মুসলিম (আল্লাহর ফরমানের অনুগত) ছিল এবং আজো তারা "মুহাম্মাদী" নয় বরং মুসলিম। একথাটি না বুঝার কারণে লোকদের জন্য এ প্রশ্নটি একটি ধাঁধার সৃষ্টি করে রেখেছে যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসারীদেরকে কুরআনের পূর্বে কোন কিতাবে মুসলিম নামে আখ্যায়িত করা হয়েছিল৷)
৬:১৪, ১৫, ১৬২, ১৬৩,
(২৭-নমল:৯১)...আমরা মুসলিম হয়ে থাকার ৯২) এবং এ কুরআন পড়ে শুনাবার হুকুম দেয়া হয়েছে”৷
(১৫:২) এমন এক সময় আসা বিচিত্র নয় যখন আজ যারা (ইসলামের দাওয়াত গ্রহণ করতে) অস্বীকার করছে, তারা অনুশোচনা করে বলবে, হায়, যদি আমরা আনুগত্যের শির নত করে দিতাম !
g~L©/Rv‡nj :
g~L©‡`i mv‡_ weZ‡K© RwoIbv : 7:199,
(২১:৬৬) ইবরাহীম বললো, “তাহলে তোমরা কি আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমনসব জিনিসের পূজা করছো যারা তোমাদের না উপকার করতে পারে, না ক্ষতি ? ৬৭) ধিক তোমাদেরকে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে যেসব উপাস্যের তোমরা পূজা করছো তাদেরকে৷ তোমাদের কি একটুও বুদ্ধি নেই ?”
.
(২১:৫২) সে সময়ের কথা স্মরণ করো যখন সে তার নিজের বাপকে ও জাতিকে বলেছিল, “এ মূর্তিগুলো কেমন, যেগুলোর প্রতি তোমরা ভক্তিতে গদগদ হচ্ছো ?”
(১৯:৪২) (এদেরকে সেই সময়ের কথা একটু স্মরণ করিয়ে দাও) যখন সে নিজের বাপকে বললো, “আব্বাজান! আপনি কেন এমন জিনিসের ইবাদত করেন, যা শোনেও না দেখেও না এবং আপনার কোন কাজও করতে পারে না?
(২১:২১) এদের তৈরি মাটির দেবতাগুলো কি এমন পর্যায়ের যে, তারা (প্রাণহীনকে প্রাণ দান করে) দাঁড় করিয়ে দিতে পারে ?
(২১:২২) যদি আকাশে ও পৃথিবীতে এক আল্লাহ ছাড়া দ্বিতীয় কোনো ইলাহ হতো তাহলে (পৃথিবী ও আকাশ) উভয়ের ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যেতো৷ কাজেই এরা যেসব কথা বলে বেড়াচ্ছে আরশের প্রভুব আল্লাহ তা থেকে পাক-পবিত্র৷
এ লোকেরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের ইবাদত করছে তারা তাদের ক্ষতিও করতে পারে না, উপকারও করতে পারে না৷ আর তারা বলে এরা আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী ৷ হে মুহাম্মাদ ! ওদেরকে বলে দাও, “তোমরা কি আল্লাহকে এমন বিষয়ের খবর দিচ্ছো যার অস্তিত্বের কথা তিনি আকাশেও জানেন না এবং যমিনেও না!” তারা যে শিরক করে তা থেকে তিনি পাক -পবিত্র এবং তার উর্ধে -১০:১৮,
দোয়ায় সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা শরীকদের নেই, তোমরা তাদের সামনে চুপ থাকো বা কথা বল উভয়ই সমান : ৭:১৯৪,
হেদায়েতের পথে ডাকলে শরীকরা ডাকে সাড়া দেয়না : ৭:১৯৩, ১৯৮,
শরীকরা তোমাদেরকে সাহায্য করতে পারেনা, এমনকি নিজেরাও নিজেদের সাহায্য করতে পারে না : ৭:১৯৭, ১০:১৮,
শরীকদের কি অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো তারা নিজেরা ব্যবহার করতে পারে না, তাদের কি হাত আছে যা দ্বারা তারা ধরতে পারে ? তাদের কি পা আছে যা দ্বারা তারা চলতে পারে ? তাদের কি কান আছে? যা দ্বারা শুনতে পারে ? তাদের কি চোখ আছে যা দ্বারা তারা দেখতে পারে ? – ৭:১৯৫, ৭:১৯৮
আরো দেখুন : শ > শিরক > শিরক করা উচিত নয় কেন ।
(২৯-আনকাবুত:১৭) তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে পূজা করছো তারাতো নিছক মূর্তি আর তোমরা একটি মিথ্যা তৈরি করছো৷ ২৮ আসলে আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে তোমরা পূজা করো তারা তোমাদের কোন রিযিকও দেবার ক্ষমতা রাখে না, আল্লাহর কাছে রিযিক চাও, তাঁরই বন্দেগী করো এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, তারই দিকে তোমাদের ফিরে যেতে হবে৷ ২৯
২৮ . অর্থাৎ তোমরা এ মূর্তি তৈরি করছো না বরং মিথ্যা তৈরি করছো। এ মূর্তিগুলোর অস্তিত্ব নিজেই একটি মূর্তিমান মিথ্যা। তার ওপর তোমাদের এ আকীদা-বিশ্বাস যে,এরা দেব-দেবী, আল্লাহর অবতার, তাঁর সন্তান, আল্লাহর সান্নিধ্যে অবস্থানকারী ও তাঁর কাছে শাফা'আতকারী অথবা এদের মধ্য থেকে কেউ রোগ নিরাময়কারী আবার কেউ সন্তান-দাতা এবং কেউ রিযিকদাতা- এসবই মিথ্যা কথা। তোমরা নিজেদের ধারণা ও কল্পনার মাধ্যমে এসব রচনা করেছো। আসল সত্য এছাড়া আর কিছূই নয় যে, এগুলো নিছক হাতে গড়া নিষ্প্রাণ মূর্তি এবং এদের কোন ক্ষমতা ও প্রভাব নেই।
২৯ . এ কয়েকটি বাক্যেও মধ্যে হযরত ইবরাহীম (আ) মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে সমস্ত যুক্তি একত্র করেছেন। কাউকে মাবুদ বা আরাধ্য করতে হলে এ জন্য যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকতে হবে।একটি যুক্তিসঙ্গত কারণ এ হতে পারে , তার নিজের সত্তার মধ্যে মাবুদ হবার কোন অধিকার থাকে। দ্বিতীয় কারণ হতে পারে , সে মানুষের স্রষ্টা এবং মানুষ নিজের অস্তিত্বেও জন্য তার কাছে অনুগৃহীত । তৃতীয় কারণ হতে পারে , সে মানুষের লালন-পালনের ব্যবস্থা করে। তাকে রিযিক তথা জীবন ধারণের উপকরণ সরবরাহ করে। চতুর্থ কারণ হতে পারে , মানুষের ভবিষ্যত তার অনুগ্রহের ওপর নির্ভরশীল এবং মানুষ আশঙ্কা করে তার অসন্তুষ্টি অর্জন করলে তার নিজের পরিণাম অশুভ হবে। হযরত ইবরাহীম বলেন, এ চারটি কারণের কোন একটিও মূর্তি পূজার পক্ষে নয়। বরং এর প্রত্যেকটিই নির্ভেজাল আল্লাহর প্রতি আনুগত্যেও দাবী কর। "এ নিছক মূর্তিপূজা" বলে তিনি প্রথম কারণটিকে বিলুপ্ত করে দেন। কারণ নিছক মূর্তি মাবুদ হবার ব্যক্তিগত কি অধিকার বিলুপ্ত করেন। তারপর "তোমরা তাদের স্রষ্টা" একথা বলে দ্বিতীয় কারণটিকে বিলুপ্ত করেন। এরপর তারা তোমাদের কোন প্রকারের কোন রিযিক দান করতে পারে না, একথা বলে তৃতীয় কারণটিকে বিলুপ্ত করেন। আর সবশেষে বলেন, তোমাদের তো আল্লাহর দিকে ফিরে যেতেই হবে, এ মূর্তিগুলোর দিকে ফিরে যেতে হবে না। কাজেই তোমাদের পরিণাম ও পরকালকে সমৃদ্ধ বা ধ্বংস করার ক্ষমতাও এদের নেই। এ ক্ষমতা আছে একমাত্র আল্লাহর হাতে। এভাবে শিরককে পুরোপুরি বাতিল করে দিয়ে তিনি তাদের ওপর একথা সুস্পষ্ট করে দেন যে, মানুষ যে সমস্ত কারণে কাউকে মাবুদ বা আরাধ্য গণ্য করতে পারে তার কোনটাই এক ও লা-শারীক আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ইবাদাত করার দাবী করে না।
(২১:৫৭) আর আল্লাহর কসম, * তোমাদের অনুপস্থিতিতে আমি তোমাদের মূর্তিগুলোর ব্যাপারে অবশ্যি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।১
(২১:৫৮) সে অনুসারে সে সেগুলোকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেললো ২ এবং শুধুমাত্র বড়টিকে ছেড়ে দিল, যাতে তারা হয়তো তার দিকে ফিরে আসতে পারে৷৩
(২১:৫৯) (তারা এসে মূর্তিগুলোর এ অবস্থা দেখে) বলতে লাগলো, “আমাদের ইলাহদের এ অবস্থা করলো কে, বড়ই জালেম সে৷” ৬০) (কেউ কেউ) বললো, “আমরা এক যুবককে এদের কথা বলতে শুনেছিলাম, তার নাম ইবরাহীম৷” ৬১) তারা বললো, “তাহলে তাকে ধরে নিয়ে এসো সবার সামনে, যাতে লোকেরা দেখে নেয়” (কিভাবে তাকে শাস্তি দেয়া হয়)৷৪
(২১:৬২) (ইবরাহীমকে নিয়ে আসার পর) তারা জিজ্ঞেস করলো, “ওহে ইবরাহীম! তুমি কি আমাদের ইলাহদের সাথে এ কাণ্ড করেছো ?” ৬৩) সে জবাব দিল, “বরং এসব কিছু এদের এ সরদারটি করেছে, এদেরকেই জিজ্ঞেস করো, যদি এরা কথা বলতে পারে৷৫
.
ব্যাখ্যা সমূহ :
(*সামনের দিকে যে ঘটনার কথা বলা হচ্ছে, তা পড়ার আগে একথাগুলো মনের মধ্যে তাজা করে নিতে হবে যে, কুরাইশরা হযরত ইবরাহীমের সন্তান ছিল। কাবাঘর তিনিই নির্মাণ করেছিলেন। আর ইবরাহীমের আওলাদও ইবরাহীমী কাবার খাদেম হবার কারণেই কুরাইশরা যাবতীয় সম্মান ও প্রতিপত্তি লাভ করেছিল। আজ এ যুগে এবং আরবের বহু দুরবর্তী এলাকার পরিবেশে হযরত ইবরাহীমের এ কাহিনী শুধুমাত্র একটি শিক্ষণীয় ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবেই দেখা যায় কিন্তু যে যুগে ও পরিবেশে প্রথম প্রথম একথা বলা হয়েছিল, তা দৃষ্টি সমক্ষে রাখলে অনুভূত হবে যে, কুরাইশদের ধর্ম ও তাদের পৌরহিত্যের ওপর এটা এমন একটা তীক্ষ্ণ কশাঘাত ছিল, যা একেবারে তার মর্মমূলে আঘাত হানতো।
১। অর্থাৎ যদি তোমরা যুক্তির সাহায্যে কথা বুঝতে অপারগ হয়ে থাকো তাহলে আমি তোমাদেরকে কার্যত দেখিয়ে দেবো যে, এরা অসহায়, সামান্যতম ক্ষমতাও এদের নেই এবং এদেরকে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করা ঠিক নয়। তবে বাস্তব, অভিজ্ঞতাও প্রত্যক্ষ দর্শনের মধ্যে একথা তাদের সামনে কেমন করে প্রমাণ করবেন, এর কোন বিস্তারিত বিবরণ হযরত ইবরাহীম (আ) এ সময় দেননি)।
২। অর্থাৎ যে সময় পূজারী ও রক্ষণাবেক্ষণকারীরা উপস্থিত ছিল না সে সময় সুযোগ পেয়েই হযরত ইবরাহীম (আ) তাদের কেন্দ্রীয় ঠাকুরঘরে প্রবেশ করলেন এবং মূর্তিগুলো ভেঙ্গে ফেললেন।
৩।"তার দিকে"কথাটির মধ্যে যে ইংগিত রয়েছ তা বড় মূর্তির দিকেও হতে পারে আবার হযরত ইবরাহীমের দিকেও। যদি প্রথমটি হয় তাহলে এটি হবে হযরত ইবরাহীমের পক্ষ থেকে তাদের আকীদা বিশ্বাসের প্রতি একটি বিদ্রূপাত্মক কটাক্ষের সমার্থক। অর্থাৎ যদি তারা মনে করে থাকে সত্যিই এরা ইলাহ, তাহলে তাদের এ বড় ইলাহটির ব্যাপারে সন্দেহ হওয়া উচিত যে, সম্ভবত বড় ইলাহ কোন কারণে ছোট ইলাহদের প্রতি বিরূপ হয়ে গিয়ে তাদের সবাইকে কচুকাটা করে ফেলেছেন। অথবা বড় ইলাহটিকে জিজ্ঞেস করো যে, হুযুর! আপনার উপস্থিতিতে একি ঘটে গেলো৷ কে এ কাজ করলো৷ আপনি তাকে বাধা দিলেন না কে৷ আর যদি দ্বিতীয় অর্থটি গ্রহণ করা হয় তাহলে বুঝা যাবে যে, এ কাজের মাধ্যমে হযরত ইবরাহীমের উদ্দেশ্য এই ছিল যে, নিজেদের মূর্তিগুলোর এ দুরবস্থা দেখে হয়তো তাদের দৃষ্টি আমার দিকে ফিরে আসবে এবং তারা আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে, তখন তাদের সাথে স্পষ্ট ভাষায় কথা বলার সুযোগ আমি পেয়ে যাবো। )
৪। এভাবে হযরত ইবরাহীমের মনের আশাই যেন পূরণ হলো। কারণ তিনি এটিই চাচ্ছিলেন। ব্যাপরটিকে তিনি শুধু পুরোহিত ও পূজারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চাচ্ছিলেন না। বরং তিনি চাচ্ছিলেন, ব্যাপারটি সাধারণ মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ুক। তারাও আসুক, দেখে নিক এই যে মূর্তিগুলোকে তাদের অভাব পূরণকারী হিসেবে রাখা হয়েছে এরা কতটা অসহায় এবং স্বয়ং পুরোহিতরাই এদের সম্পর্কে কি ধারণা পোষণ করে। এভাবে এ পুরোহিতরাও ফেরাউনের মতো একই ভুল করলো। ফেরাউন যাদুকরদের সাথে হযরত মূসাকে (আ) প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ করার জন্য সারা দেশের মানুষকে একত্র করেছিলো, এরাও হযরত ইবরাহীমের মামলা শোনার জন্য সারা দেশের মানুষকে একত্র করলো। সেখানে হযরত মূসা সবার সামনে একথা প্রমাণ করার সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন যে, তিনি যা কিছু এনেছেন তা যাদু নয় বরং মু'জিযা। এখানে হযরত ইবরাহীমকেও তার শত্রুরাই সুযোগ দিয়ে দিল যেন জনগণের সামনে তাদের ধোকাবাজীর তেলেসমাতি ছিন্নভিন্ন করতে পারেন।
৫। এ শেষ বাক্যটি স্বতই একথা প্রকাশ করছে যে, প্রথম বাক্যে হযরত ইবরাহীম মূর্তি ভাঙ্গার দায় যে বড় মূর্তিটির ঘাড়ে চাপিয়েছেন, তার দ্বারা মিথ্যা বলা তার উদ্দেশ্য ছিল না। বরং তিনি নিজের বিরোধীদেরকে প্রমাণ দর্শাতে চাচ্ছিলেন। তারা যাতে জবাবে নিজেরাই একথা স্বীকার করে নেয় যে, এ উপাস্যরা একেবারেই অসহায় এবং এদের দ্বারা কোন উপকারের আশাই করা যায় না, তাই তিনি একথা বলেছিলেন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কোন ব্যক্তি পমাণ উপস্থাপনের জন্য যে বস্তব ঘটনা বিরোধী কথা বলে তাকে মিথ্যা গণ্য করা যেতে পারে না। বক্তা প্রমাণ নির্দেশ করার জন্য একথা বলে এবং স্রোতাও একে সেই অর্থেই গ্রহণ করে।
দুর্ভাগ্যক্রমে হাদীসের এক বর্ণনায় একথা এসেছে যে, হযরত ইরাহীম (আ) তাঁর জীবনে তিনবার মিথ্যা কথা বলেছিলেন। তার মধ্যে এটি একটি "মিথ্যা"। দ্বিতীয় "মিথ্যা" হচ্ছে, সূরা সাফ্ফাতে হযরত ইবরাহীমের (আমি অসুস্থ) কথাটি। আর তৃতীয় "মিথ্যাটি" হচ্ছে তাঁর নিজের স্ত্রীকে বোন বলে পরিচিত করানো। একথাটি কুরআনে নয় বরং বাইবেলের আদি পুস্তকে বলা হয়েছে। এক শ্রেনীর বিদ্বানদের "রেওয়াত" প্রীতির ব্যাপারে সীমাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি এমন পর্যায়ে পৌছে গিয়েছে যে, তাদের কাছে বুখারী ও মুসলিমের কতিপয় বর্ণনাকারীর সত্যবাদিতাই বেশী প্রিয় এবং এর ফলে যে একজন নবীর ওপর মিথ্যা বলা অভিযোগ আরোপিত হচ্ছে, তার কোন পরোয়াই তাদের নেই। অপর একটি শ্রেনী এই একটিমাত্র হাদীসকে ভিত্তি করে সমগ্র হাদীস শাস্ত্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনা শুরু করে দেয় এবং বলতে থাকে, সমস্ত হাদীসের স্তুপ উঠিয়ে দূরে ছূঁড়ে দাও। কারণ এর মধ্যে যতো আজেবাজে ধরনের রেওয়ায়াত পাওয়া যায়। অথচ কোন একটি বা কতিপয় হাদীসের মধ্যে কোন ত্রুটি পাওয়া যাবার কারণে সমস্ত হাদীস অনির্ভরযোগ্য হয়ে যাবে- এমন কোন কথা হতে পারে না। আর হাদীস শাস্ত্রের দৃষ্টিতে কোন হাদীসের বর্ণনা পরম্পরা মজবুত হওয়ার ফলে এটা অপরিহার্য হয়ে ওঠে না যে, তার "মতন" (মুল হাদীস) যতই আপত্তিকর হোক না কেন তাকে চোখ বন্ধ করে "সহী" বলে মেনে নিতে হবে। বর্ণনা পরম্পরা সহীহ ও নির্ভরযোগ্য হবার পরও এমন অনেক কারণ থাকতে পারে, যার ফলে এমন "মতন" ত্রুটিপূর্ণ আকারে উদ্ধৃত হয়ে যায় এবং এমন সব বিষয়বস্তু সম্বলিত হয় যে, তা থেকে স্পষ্টতই বুঝা যায় যে, একথাগুলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুখ নিসৃত হতে পারে না। তাই সনদ তথা বর্ণনা পরস্পরার সাথে সাথে "মতন"ও দেখা অপরিহার্য। যদি মতনের মধ্যে সত্যিই কোন দোষ থেকে থাকে তাহলে এরপরও অযথা তার নির্ভূলতার ওপর জোর দেয়া মোটেই ঠিক নয়।
যে হাদীসটিতে হযরত ইবরাহীমের তিনটি "মিথ্যা কথা" বর্ণনা করা হয়েছে সেটি কেবলমাত্র এ কারণে আপত্তিকর নয় যে, এটি একজন নবীকে মিথ্যাবাদী গণ্য করেছে বরং এ কারণেও এটি ত্রুটিপূর্ণ যে, এখানে যে তিনটি ঘটনার কথার বলা হয়েছে সেগুলো সবই বিতর্কিত। এর মধ্যে "মিথ্যা"র অবস্থা তো পাঠক এইমাত্র দেখলেন। সামান্য বুদ্ধি জ্ঞানও যার আছে তিনি কখনো এই প্রেক্ষাপটে হযরত ইবরাহীমের এই বক্তব্যকে "মিথ্যা" বলে আখ্যায়িত করতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে নাউযুবিল্লাহ আমরা এমন ধারণা তো করতেই পারি না যে, তিনি এই বক্তব্যের তাৎপর্য বুঝাবেন না। এবং খামাখাই একে মিথ্যা ভাষণ বলে আখ্যায়িত করবেন। আর (আমি অসুস্থ এ কথাটি ) সংক্রান্ত ঘটনাটির ব্যাপারে বলা যায়, এটিকে মিথ্যা প্রমাণ করা যেতে পারে না যতক্ষণ না একথা প্রমাণিত হয় যে, হযরত ইবরাহীম সে সময় সম্পূর্ণ সুস্থ, সবল, রোগমুক্ত ছিলেন এবং তিনি সামান্যতম অসুস্থতায়ও ভুগছিলেন না। একথা কুরআনে কোথাও বলা হয়নি এবং আলোচ্য হাদীসটি ছাড়া আর কোন নির্ভরযোগ্য হাদীসও এ আলোচনা আসেনি। এখন বাকী থাকে স্ত্রীকে বোন বলার ঘটনাটি। এ ব্যাপারটি এত বেশী উদ্ভট যে, কাহিনীটি শোনার পর কোন ব্যক্তি প্রথমেই বলে বসবে এটা কোন ঘটনাই হতে পারে না। এটি বলা হচ্ছে তখনকার কাহিনী যখন হযরত ইবরাহীম নিজের স্ত্রী সারাকে নিয়ে মিসরে যান। বাইবেলের বর্ণনামতে তখন হযরত ইবরাহীমের বয়স ৭৫ বছর ও হযরত সারার বয়স ৬৫ বছরের কিছু বেশী ছিল। এ বয়সে হযরত ইবরাহীম ভীত হলেন মিসরের বাদশাহ এ সুন্দরীকে লাভ করার জন্য তাকে হত্যা করবেন। কাজেই তিনি স্ত্রীকে বললেন, যখন মিসরীয়রা তোমাকে ধরে বাদশাহর কাছে নিয়ে যেতে থাকবে তখন তুমি আমাকে নিজের ভাই বলবে এবং আমিও তোমাকে বোন বলবো, এর ফলে আমি প্রাণে বেঁচে যাবো। (আদি পুস্তকঃ১২ অধ্যায়) হাদীসে বর্ণিত তৃতীয় মিথ্যাটির ভিত্তি এই সুস্পষ্ট বাজে ও উদ্ভট ইসরাঈলী বর্ণনার ওপর প্রতিষ্ঠিত। যে হাদীসের 'মতন' এ ধরনের উদ্ভট বক্তব্য সম্বলিত তাকেও আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উক্তি বলে মেনে নেবো কেমন করে-তা তার 'সনদ' যতই ক্রুটিমুক্ত হোক না কেন৷ এ ধরনের একপেশে চিন্তা বিষয়টিকে বিকৃত করে অন্য এক বিভ্রান্তির উদ্ভব ঘটায় যার প্রকাশ ঘটাচ্ছে হাদীস অস্বীকারকারী গোষ্ঠী। (আরো বেশী জানার জন্য দেখুন, আমার লিখিত বই রাসায়েল ও মাসায়েল ২ খন্ড, কতিপয় হাদীসের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও তার জবাব নিবন্ধের ১২নং জবাব)।
(২৯-আনকাবুত:২৫) আর সে বললো , “ তোমরা দুনিয়ার জীবনের তো আল্লাহকে বাদ দিয়ে মূর্তিগুলোকে নিজেদের মধ্যে প্রীতি- ভালোবাসার মাধ্যমে পরিণত করে নিয়েছো৷ ৪২ কিন্তু কিয়ামতের দিন তোমরা পরস্পরকে অস্বীকার এবং পরস্পরের প্রতি অভিসম্পাত করবে ৪৩ আর আগুন তোমাদের আবাস হবে এবং তোমাদের কোন সাহায্যকারী হবে না৷”
৪২ . অর্থাৎ তোমরা আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের পরিবর্তে মূর্তিপূজার ভিত্তিতে নিজেদের সামাজিক জীবন গড়ে তুলেছো। এ ব্যবস্থা দুনিয়ার জীবনের সীমানা পর্যন্ত তোমাদের জাতীয় সত্ত্বাকে একত্র করে রাখতে পারে। কারণ এখানে সত্য-মিথ্যা নির্বিশেষে যে কোন আকীদার ভিত্তিতে লোকেরা একত্র হতে পারে। আর যত বড় মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর আকীদার ভিত্তিতেই যে কোন ঐক্য ও সমাজ গড়ে উঠুক না কেন তা পারস্পরিক বন্ধত্ব, আত্মীয়তা , ভ্রাতৃত্ব ও অন্যান্য সকল ধর্মীয়, সামাজিক, তামাদ্দুনিক , অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যম হতে পারে।
৪৩ . অর্থাৎ মিথ্যা আকীদার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত তোমাদের এ সামাজিক কাঠামোর আখেরাতে প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারে না। সেখানে পারস্পরিক প্রীতি-ভালোবাসা , সহযোগিতা, আত্মীয়তা এবং আকীদা-বিশ্বাস ও কামনা-বাসনার কেবলমাত্র এমন ধরনের সম্পর্ক বজায় থাকতে পারে যা দুনিয়ায় এক আল্লাহর বন্দেগী এবং সৎকর্মশীলতা ও আল্লাহভীতির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। কুফরী ও শিরক এবং ভুল পথ ও কুপথের সাথে জড়িত যাবতীয় সম্পর্ক সেখানে ছিন্ন হয়ে যাবে। সকল ভালোবাসা শত্রুতায় পরিণত হবে। সমস্ত শ্রদ্ধা-ভক্তি ঘৃণায় রুপান্তরিত হবে। পিতা-পুত্র, স্বামী-স্ত্রী, পীর-মুরীদ পর্যন্ত একে অন্যেও ওপর লানত বর্ষণ করবে এবং প্রত্যেকে নিজের গোমরাহীর দায়-দায়িত্ব অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে বলবে, এই জালেম আমাকে ধ্বংস করেছে, কাজেই একে দ্বিগুণ শাস্তি দেয়া হোক। একথা কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বলা হয়েছে। যেমন সূরা যুখরুফে বলা হয়েছেঃ
----------------
"বন্ধুরা সেদিন পরস্পরের শত্রু হয়ে যাবে, মুত্তাকীরা ছাড়া।"
সূরা আ'রাফে বলা হয়েছেঃ
------------------
"প্রত্যেকটি দল যখন জাহান্নামে প্রবেশ করবে তখন তার কাছের দলের প্রতি লানত বর্ষণ করতে করতে প্রবেশ করবে, এমনকি শেষ পর্যন্ত যখন সবাই সেখানে একত্র হয়ে যাবে তখন প্রত্যেক পরবর্তী দল পূর্ববর্তী দলের পক্ষে বলবেঃ হে আমাদের রব! এ লোকেরাই আমাদের পথভ্রষ্ট করে , কাজেই এদেরকে দ্বিগুণ আগুনের শাস্তি দিন।" (আয়াতঃ৩৮)
সূরা আহযাবে বলা হয়েছেঃ
---------------
"আর তারা বলবে , হে আমাদের রব! আমরা নিজেদের সরদারদেরও বড়দের আনুগত্য করেছি এবং তারা আমাদের বিপথগামী করেছে। হে আমাদের রব! তুমি তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দাও এবং তাদের ওপর বড় রকমের লানত বর্ষণ করো। "
(২১:৩৬) এ সত্য অস্বীকারকারীরা যখন তোমাকে দেখে, তোমাকে বিদ্রূপের পাত্রে পরিণত করে৷ বলে, “এ কি সেই ব্যক্তি যে তোমাদের দেবদেবীদের সমালোচনা করে ?” অথচ তাদের (কাফেরদের) নিজেদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, তারা (কাফেররা) করুণাময়ের যিকরের অস্বীকারকারী৷
(১৪:৩৬) হে আমার রব! এ মূর্তিগুলো অনেককে ভ্রষ্টতার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে, (হয়তো আমার সন্তানদেরকেও এরা পথভ্রষ্ট করতে পারে, তাই তাদের মধ্য থেকে) যে আমার পথে চলবে সে আমার অন্তরগত আর যে আমার বিপরীত পথ অবলম্বন করবে, সে ক্ষেত্রে অবশ্যি তুমি ক্ষমাশীল ও মেহেরবান৷
(১১:১০৯) কাজেই হে নবী! এরা যেসব মাবুদের ইবাদাত কাছে তাদের ব্যাপারে তুমি কোন প্রকার সন্দেহের মধ্যে থেকো না৷ এরা তো (নিছক গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসে চলেছে৷) ঠিক তেমনিভাবে পূজা-অর্চনা করে যাচ্ছে যেমন পূর্বে এদের বাপ-দাদারা করতো৷ আর আমি কিছু কাটাছাঁটা না করেই তাদের অংশ তাদেরকে পুরোপুরি দিয়ে দোবো৷
(২০:৮৮) এবং আমরা স্রেফ সেগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলাম৷ তারপর এভাবে সামেরীও কিছু ছুঁড়ে ফেললো এবং তাদের একটি বাছুরের মূর্তি বানিয়ে নিয়ে এলো, যার মধ্যে থেকে গরুর মতো আওয়াজ বের হতো৷ লোকেরা বলে উঠলো, “এ-ই তোমাদের ইলাহ এবং মূসারও ইলাহ, মূসা একে ভুলে গিয়েছে”৷
বিস্তারিত দেখুন : স > সামেরী > সামেরীর ধর্ম ব্যবসা ।
(২১:৬৩) সে জবাব দিল, “বরং এসব কিছু এদের এ সরদারটি করেছে, এদেরকেই জিজ্ঞেস করো, যদি এরা কথা বলতে পারে৷”৬৪) একথা শুনে তারা নিজেদের বিবেকের দিকে ফিরলো এবং (মনে মনে) বলতে লাগলো, “সত্যিই তোমরা নিজেরাই জালেম৷” ৬৫) কিন্তু আবার তাদের মত পাল্টে গেলো এবং বলতে থাকলো, “তুমি জানো, মূর্তিরা কথা বলে না৷”
বিস্তারিত দেখুন : ম > মূর্তি > ইব্রাহিম আ: কর্তৃক মূর্তি ভাঙ্গার স্বরূপ।
(হাজ্ব:৩০).....কাজেই মূর্তিসমূহের আবর্জনা থেকে বাঁচো,৫৭
(৫৭.অর্থাৎ মূর্তিপূজা থেকে এমনভাবে দূরে থাকো যেমন দুর্গন্ধময় ময়লা আবর্জনা থেকে মানুষ নাকে কাপড় দিয়ে দূরে সরে আসে। অন্য কথায় বলা যায়, তা যেন নাপাক ও ময়লা আবর্জনায় পরিপূর্ণ এবং কাছে যাবার সাথে সাথেই মানুষ তার সংস্পর্শ লাভ করে নাপাক ও নোংরা হয়ে যাবে।)
(১৯:৪৪) আব্বাজান!আপনি শয়তানের বন্দেগী করবেন না৷ শয়তান তো করুণাময়ের অবাধ্য৷
(১১:১০৯) কাজেই হে নবী! এরা যেসব মাবুদের ইবাদাত কাছে তাদের ব্যাপারে তুমি কোন প্রকার সন্দেহের মধ্যে থেকো না৷ এরা তো (নিছক গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসে চলেছে৷) ঠিক তেমনিভাবে পূজা-অর্চনা করে যাচ্ছে যেমন পূর্বে এদের বাপ-দাদারা করতো৷ আর আমি কিছু কাটাছাঁটা না করেই তাদের অংশ তাদেরকে পুরোপুরি দিয়ে দোবো৷
(২০:৯১) কিন্তু তারা তাকে বলে দিল, “মূসার না আসা পর্যন্ত আমরা তো এরি (এ বাছুরের মূর্তিরই) পূজা করতে থাকবো”৷
(২০:৮৯) তারা কি দেখছিল না যে, সে (বাছুরের মূর্তি) তাদের কথারও জবাব দেয় না৷ এবং তাদের উপকার ও ক্ষতি করার কোন ক্ষমতাও রাখে না?
(বিস্তারিত দেখূন : শ > শিরক > শিরক করা উচিত নয় কেন ? )
(২১:৯৮) অবশ্যই তোমরা এবং তোমাদের যেসব মাবুদকে তোমরা পূজা করো, সবাই জাহান্নামের ইন্ধন, সেখানেই তোমাদের যেতে হবে৷৯৫ ৯৯) যদি তারা সত্যিই আল্লাহ হতো, তাহলে সেখানে যেতো না৷ এখন সবাইকে চিরদিন তারই মধ্যে থাকতে হবে৷১০০) সেখানে তারা হাঁসফাঁস করতে থাকবে এবং তাদের অবস্থা এমন হবে যে, তারা কোনো কথা শুনতে পাবে না৷
(৯৫. হাদীসে বলা হয়েছে, এ আয়াতের ব্যাপারে আবদুল্লাহ ইবনুয যাবা'রা আপত্তি করে বলেন যে, এভাবে তো কোবলমাত্র আমাদেরই মাবুদরা জাহান্নামে যাবে না বরং ঈসা, উযাইর ও ফেরেশতারাও জাহান্নামে যাবে, কারণ দুনিয়ায় তাদেরও ইবাদাত করা হয়। এর জবাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
"হাঁ, এমন প্রত্যেক ব্যক্তি যে নিজে একথা পছন্দ করে যে, আল্লাহকে বাদ দিয়ে তার বন্দেগী করা হোক সে তাদেরকে সাথে হবে যারা তার বন্দেগী করেছে।"
এ থেকে জানা যায়, যারা দুনিয়ায় মানুষকে আল্লাহর বন্দেগী করার শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং লোকেরা তাদেরকেই উপাস্যে পরিণত করে অথবা যারা এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ বেখবর যে, দুনিয়ায় তাদের বন্দেগী ও পূজা করা হচ্ছে এবং এ কর্মে তাদের ইচ্ছা ও আকাংখার কোন দখল নেই, তাদের জাহান্নামে যাবার কোন কারণ নেই। কারণ, তারা এ শিরকের জন্য দায়ী নয়। তবে যারা নিজেরাই উপাস্য ও পূজনীয় হবার চেষ্টা করে এবং মানুষের এ শিরকে যাদের সত্যি সত্যিই দখল আছে তারা সবাই নিজেদের পূজারী ও উপাসকদের সাথে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অনুরূপভাবে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যকে মাবুদ হিসেবে দাঁড় করায় তারাও জাহান্নামে যাবে। কারণ, এ অবস্থায় তারাই মুশরিকদের আসল মাবুদ হিসেবে গণ্য হবে, এ দুর্বৃত্তরা বাহ্যত যাদেরকে মাবুদ হিসেবে দাঁড় করিয়েছিল তারা নয়। শয়তানও এর আওতায় এসে যায়। কারণ, তার উদ্যোগে যেসব সত্তাকে উপাস্যে পরিণত করা হয় আসল উপাস্য তারা হয় না। বরং আসল উপাস্য হয় শয়তান নিজেই। কারণ, তার হুকুমের আনুগত্য করে এ কাজটি করা হয়। এ ছাড়াও পাথর, কাঠের মূর্তি ও অন্যান্য পূজা সামগ্রীও মুশরিকদের সাথে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে যাতে তারা তাদের ওপর জাহান্নামের আগুন আরো বেশী করে জ্বালিয়ে দিতে সাহায্য করে। যাদের ব্যাপারে তারা আশা পোষণ করছিল যে, তারা তাদের সুপারিশকারী হবে, তারা উলটো তাদের আযাব কঠোরতর করার কারণে পরিণত হয়েছে দেখে তাদের কষ্ট আরো বেড়ে যাবে।)
তারা চলতে চলতে এমন একটি জাতির কাছে উপস্থিত হলো যারা নিজেদের কতিপয় মূর্তির পূজায় লিপ্ত ছিল৷ বনী ইসরাঈল বলতে লাগলোঃ হে মূসা! এদের মাবূদের মত আমাদের জন্যো একটা মাবূদ বানিয়ে -৭:১৩৮
(২১:৫৯) (তারা এসে মূর্তিগুলোর এ অবস্থা দেখে) বলতে লাগলো, “আমাদের ইলাহদের এ অবস্থা করলো কে, বড়ই জালেম সে৷”
(২১:৬২) (ইবরাহীমকে নিয়ে আসার পর) তারা জিজ্ঞেস করলো, “ওহে ইবরাহীম! তুমি কি আমাদের ইলাহদের সাথে এ কাণ্ড করেছো ৬৩) সে জবাব দিল, “বরং এসব কিছু এদের এ সরদারটি করেছে, এদেরকেই জিজ্ঞেস করো, যদি এরা কথা বলতে পারে৷ ৬৪) একথা শুনে তারা নিজেদের বিবেকের দিকে ফিরলো এবং (মনে মনে) বলতে লাগলো, “সত্যিই তোমরা নিজেরাই জালেম৷”
(১৪:৩৫) স্মরণ কর সেই সময়ের কথা যখন ইবরাহীম দোয়া করছিল, “হে আমার রব! এ শহরকে নিরাপত্তার শহরে পরিণত করো এবং আমার ও আমার সন্তানদেরকে মূর্তিপূজা থেকে বাঁচাও৷
(নূর:৩) ব্যভিচারী যেন ব্যভিচারিনী বা মুশরিক নারী ছাড়া কাউকে বিয়ে না করে এবং ব্যভিচারিনীকে যেন ব্যভিচারী বা মুশরিক ছাড়া আর কেউ বিয়ে না করে ৷ আর এটা হারাম করে দেয়া হয়েছে মু’মিনদের জন্য৷
(অনুরূপভাবে এ আয়াত থেকে এ সিদ্ধান্তও টানা যায় না যে, যিনাকারী মুসলিম পুরুষের বিয়ে মুশরিক নারীর সাথে এবং যিনাকারিনী মুসলিম নারীর বিয়ে মুশরিক পুরুষের সাথে সঠিক হবে । আয়াতের উদ্দেশ্য হচ্ছে একথা বলা যে, যিনা একটি চরম নিকৃষ্ট কুকর্ম। যে ব্যক্তি মুসলমান হয়েও এ কাজ করে সে মুসলিম সমাজের সৎ ও পাক-পবিত্র লোকদের সাথে আত্মীয় সম্পর্ক গড়ে তোলার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে । তান নিজের মতো যিনাকারীদের সাথে আত্মীয় সম্পর্ক গড়ে তোলার উচিত অথবা মুশরিকদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত , যারা আদৌ আল্লাহর বিধানের প্রতি বিশ্বাসই রাখেনা ।)
৬:১১,
তোমরা দুজন অবিচল থাকো এবং মুর্খতাদের পথ কখনো অনুসরণ করো না৷ ১০:৮৯।
কিন্তু আমি দেখছি তোমার মূর্খতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছ৷-১১:২৯,
(২৫.ফুরকান:৬৩) রহমানের (আসল) বান্দা তারাই যারা পৃথিবীর বুকে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং মূর্খরা তাদের সাথে কথা বলতে থাকলে বলে দেয়, ৬৪) তোমাদের সালাম৷ তারা নিজেদের রবের সামনে সিজদায় অবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে রাত কাটিয়ে দেয়৷
(বিস্তারিত দেখুন : র > রহমান > রহমানের বান্দা কারা ? )
(মূর্খ মানে অশিক্ষিত বা লেখাপড়া না জানা লোক নয় বরং এমন লোক যারা জাহেলী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হবার উদ্যোগ নিয়েছে এবং কোন ভদ্রলোকের সাথে অশালীন ব্যবহার করতে শুরু করেছে। রহমানের বান্দাদের পদ্ধতি হচ্ছে, তারা গালির জবাবে গালি এবং দোষারোপের জবাবে দোষারোপ করে না। এভাবে প্রত্যেক বেহুদাপনার জবাবে তারাও সমানে বেহুদাপনা করে না। বরং যারাই তাদের সাথে এহেন আচরণ করে তাদের সালাম দিয়ে তারা অগ্রসর হয়ে যায় , যেমন কুরআনের অন্য জায়গায় বলা হয়েছে :
وَإِذَا سَمِعُوا اللَّغْوَ أَعْرَضُوا عَنْهُ وَقَالُوا لَنَا أَعْمَالُنَا وَلَكُمْ أَعْمَالُكُمْ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ لَا نَبْتَغِي الْجَاهِلِينَ
"আর যখন তারা কোন বেহুদা কথা কথা শোনে , তা উপেক্ষা করে যায় । বলে, আরে ভাই , আমাদের কাজের ফল আমরা পাবো এবং তোমাদের কাজের ফল তোমরা পাবে। সালাম তোমাদের , আমরা জাহেলদের সাথে কথা বলি না।"(আল কাসাস : ৫৫) [ব্যাখ্যার জন্য দেখুন- তাফহীমুল কুরআন, আল কাসাস ৭২ ও ৭৮ টীকা])
(২৬.শুআরা:৫) তাদের কাছে দয়াময়ের পক্ষ থেকে যে নতুন নসীহতই আসে, তা থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়৷
তবে যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে আমি তোমাদের ব্যাপারে একটি অতীব ভয়াবহ দিনের আযাবের ভয় করছি৷১১:৩। (১১:৫) দেখো, এরা তাঁর কাছ থেকে আত্মগোপন করার জন্য বুক ভাঁজ করছে৷ সাবধান! যখন এরা কাপড় দিয়ে নিজেদেরকে ঢাকে তখন তারা যা গোপন করে এবং যা প্রকাশ করে তা সবই আল্লাহ জানেন৷ তিনি তো অন্তরে যা সংগোপন আছে তাও জানেন৷
(১৬:৮২) এখন যদি এরা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে হে মুহাম্মাদ ! পরিষ্কারভাবে সত্যের পয়গাম পৌঁছিয়ে দেয়া ছাড়া তোমার আর কোনো দায়িত্ব নেই৷
(২০:৪৮) ... শাস্তি তার জন্য যে মিথ্যা আরোপ করে, ও মুখ ফিরিয়ে নেয়”৷
(২০:৯৯) ... এবং আমি বিশেষ করে নিজের কাছ থেকে তোমাকে একটি ‘যিকির’(উপদেশমালা) দান করেছি৷১০০) যে ব্যক্তি এ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে সে কিয়ামতের দিন কঠিন গোনাহের বোঝা উঠাবে৷১০১) আর এ ধরনের লোকেরা চিরকাল এ দুর্ভাগ্য পীড়িত থাকবে এবং কিয়ামতের দিন তাদের জন্য (এই অপরাধের দায়ভার) বড়ই কষ্টকর বোঝা হবে৷
(২১:১) মানুষের হিসেব-নিকেশের সময় কাছে এসে গেছে, অথচ সে গাফলতির মধ্যে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আছে৷
(আরো দেখুন : গ > গাফেল)
(২১:১০৮) এদেরকে বলো, “আমার কাছে যে অহী আসে তা হচ্ছে এই যে, কেবলমাত্র এক ইলাহই তোমাদের ইলাহ, তারপর কি তোমরা আনুগত্যের শির নত করছো ?” ১০৯) যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে বলে দাও, “আমি সোচ্চার কণ্ঠে তোমাদের জানিয়ে দিয়েছি৷ এখন আমি জানি না, তোমাদের সাথে যে বিষয়ের ওয়াদা করা হচ্ছে ১ তা আসন্ন, না দূরবর্তী৷
(১. অর্থাৎ আল্লাহর পাকড়াও। রিসালাতের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করার কারণে যে কোন ধরনের আযাবের আকারে আল্লাহর যে পাকড়াও আসবে।)
(নুর:৫৪) বলো, ‘‘ আল্লাহর অনুগত হও এবং রসূলের হুকুম মেনে চলো ৷ কিন্তু যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও ৷ তাহলো ভালোভাবে জেনে রাখো, রসূলের ওপর যে দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে সে জন্য রাসূল দায়ী এবং তোমাদের ওপর যে দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে সে জন্য তোমরাই দায়ী ৷ তাঁর আনুগত্য করলে তোমরা নিজেরাই সৎ পথ পেয়ে যাবে, অন্যথায় পরিষ্কার ও দ্ব্যর্থহীন হুকুম শুনিয়ে দেয়া ছাড়া রসূলের আর কোন দায়িত্ব নেই ৷’’
(নুর:৫৪) ...কিন্তু যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও ৷ তাহলো ভালোভাবে জেনে রাখো, রসূলের ওপর যে দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে সে জন্য রাসূল দায়ী এবং তোমাদের ওপর যে দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে সে জন্য তোমরাই দায়ী ৷
( ব্যাখ্যার জন্য আরো দেখুন : ঈ > ঈমান > জোর পূর্বক ঈমান গ্রহণ করানো আল্লাহর রীতি নয় । আরো দেখতে পারেন : ন > নবী > রাসুলগণকে হাবিলদার বানিয়ে পাঠানো হয়নি। )
(৩০-রূম: ৫২) (হে নবী!) তুমি মৃতদেরকে শুনাতে পারো না, এমন বধিরদেরকেও নিজের আহ্বান শুনাতে পারো না যারা মুখ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছে ৫৩) এবং অন্ধদেরকেও তাদের ভ্রষ্টতা থেকে বের করে সঠিক পথ দেখাতে পারো না৷ তুমি তো একমাত্র তাদেরকেই শুনাতে পারো যারা আমার আয়াতের প্রতি ঈমান আনে এবং আনুগত্যের শির নত করে৷
(৩৩-আহযাব: ২৫) আল্লাহ কাফেরদের মুখ ফিরিয়ে দিয়েছেন, তারা বিফল হয়ে নিজেদের অন্তরজ্বালা সহকারে এমনিই ফিরে গেছে এবং মুমিনদের পক্ষ থেকে লড়াই করার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট হয়ে গেছেন৷ আল্লাহ বড়ই শক্তিশালী ও পরাক্রান্ত৷
অথবা তোমরা এমনি যা মুখে আসে বলে দাও ?-১৩:৩৩,
(১৬:৭) ..... তারপর যখন পরবর্তী প্রতিশ্রুতির সময় এসেছে তখন আমি অন্য শত্রুদেরকে তোমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছি, যাতে তারা তোমাদের চেহারা বিকৃত করে দেয় এবং (বায়তুল মাকদিসের) মসজিদে এমনভাবে ঢুকে পড়ে যেমন প্রথমবার শত্রুরা ঢুকে পড়েছিল আর যে জিনিসের ওপরই তাদের হাত পড়ে তাকে ধ্বংস করে রেখে দেয়৷
তোমরা যেদিকেই মুখ ফিরাও সেদিকেই আল্লাহ বিরাজমান : ২:১১৫, ৬:৩,
(১৮:২৯) ... আমি (অস্বীকারকারী) জালেমদের জন্য একটি আগুন তৈরি করে রেখেছি যার শিখাগুলো তাদেরকে ঘেরাও করে ফেলেছে৷ সেখানে তারা পানি চাইলে এমন পানি দিয়ে তাদের আপ্যায়ন করা হবে, যা হবে তেলের তলানির মতো৷ এবং যা তাদের চেহারা দগ্ধ করে দেবে৷ কত নিকৃষ্ট পানীয় এবং কি জঘন্য আবাস !
(বিস্তারিত দেখুন : জ > জাহান্নাম > জাহান্নাম কেমন হবে / জাহান্নামের শাস্তি কেমন হবে ? )
(২১:৩৯) হায়! যদি এ কাফেরদের সেই সময়ের কিছু জ্ঞান থাকতো যখন এরা নিজেদের মুখ ও পিঠ আগুন থেকে বাঁচাতে পারবে না এবং এদেরকে কোথাও থেকে সাহায্যও করা হবে না৷
(মু’মিনুন:১০৪) আগুন তাদের মুখের চামড়া জ্বালিয়ে দেবে এবং তাদের চোয়াল বাইরে বের হয়ে আসবে ৷
(২৭-নমল:৯০) আর যারা অসৎ কাজ নিয়ে আসবে, তাদের সবাইকে অধোমুখে আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করা হবে৷ তোমরা কি যেমন কর্ম তেমন ফল - ছাড়া অন্য কোন প্রতিদান পেতে পার?
(নূর:১৪) যদি তোমাদের প্রতি দুনিয়ায় ও আখেরাতে আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণা না হতো তাহলে যেসব কথায় তোমরা লিপ্ত হয়ে গিয়েছিলে সেগুলোর কারণে তোমাদের ওপরে মহাশাস্তি নেমে আসতো৷
(৩১-লোকমান: ১৮) আর মানুষের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কথা বলো না, ৩১ পৃথিবীর বুকে চলো না উদ্ধত ভঙ্গিতে, আল্লাহ পছন্দ করেন না আত্মম্ভরী ও অহংকারীকে৷ ৩২
৩১ . মূল শব্দগুলো হচ্ছে, -------"সা'আর" বলা হয় আরবী ভাষায় একটি রোগকে। এ রোগটি হয় উটের ঘাড়ে। এ রোগের কারণে উট তার ঘাড় সবসময় একদিকে ফিরিয়ে রাখে। এ থেকেই -------"অমুক ব্যক্তি উটের মতো তার মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।" অর্থাৎ অহংকারপূর্ণ ব্যবহার করলো এবং মুখ ফিরিয়ে কথা বললো। এ ব্যাপারেই তাগলাব গোত্রের কবি আমর ইবনে হাই বলেনঃ
-----------------------------
" আমরা এমন ছিলাম কোন দাম্ভিক স্বৈরাচারী আমাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কথা বললো তখন আমরা তার বক্রতার এমন দফারফা করলাম যে একেবারে সোজা হয়ে গেলো ।"
৩২ . মূল শব্দগুলো হচ্ছে ---------ও -------"মুখতাল" মানে হচ্ছে, এমন ব্যক্তি যে নিজেই নিজেকে কোন বড় কিছু মনে করে। আর ফাখূর তাকে বলে ,যে নিজের বড়াই করে অন্যের কাছে। মানুষের চালচলনে অহংকার, দম্ভ ও ঔদ্ধত্যের প্রকাশ তখনই অনিবার্য হয়ে উঠে , যখন তার মাথায় নিজের শ্রেষ্ঠত্বের বিশ্বাস ঢুকে যায় এবং সে অন্যদেরকে নিজের বড়াই ও শ্রেষ্ঠত্ব অনুভব করাতে চায়।
(নূর:১৫) (একটু ভেবে দেখো তো¸ সে সময় তোমরা কেমন মারাত্মক ভুল করেছিলে) যখন তোমরা এক মুখ থেকে আর এক মুখে এ মিথ্যা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছিলে এবং তোমরা নিজেদের মুখে এমন সব কথা বলে যাচ্ছিলে যা সম্পর্কে তোমাদের কিছুই জানা ছিল না ৷ তোমরা একে একটা মামুলি কথা মনে করেছিলে অথচ আল্লাহর কাছে এটা ছিল্ গুরুতর বিষয়৷
(নূর:১৬) একথা শোনার সাথে সাথেই তোমরা বলে দিলে না কেন, ‘‘এমন কথা মুখ দিয়ে বের করা আমাদের শোভা পায় না , সুব্হানাল্লাহ! এ তো একটি জঘন্য অপবাদ৷’’
(বিস্তারিত দেখুন : ক > কথা)
(১৯:১৩) এবং (ইয়াহ্ইয়া আ: কে) নিজের পক্ষ থেকে হৃদয়ের কোমলতা ও পবিত্রতা দান করেছি, আর সে ছিল খুবই আল্লাহভীরু ।
(১৬:৩০) অন্যদিকে যখন মুত্তাকীদেরকে জিজ্ঞেস করা হয়, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে কী নাযিল হয়েছে, তারা জবাব দেয়, “সর্বোত্তম জিনিস নাযিল হয়েছে৷”
(অথচ অবিশ্বাসীদের জবাব হয় ভিন্নতর)
(১৬:৩০)......ধরনের সৎকর্মশীলদের জন্য এ দুনিয়াতেও মংগল রয়েছে এবং আখেরাতের আবাস তো তাদের জন্য অবশ্যি উত্তম৷ বড়ই ভালো আবাস মুত্তাকীদের, ৩১) চিরন্তন অবস্থানের জান্নাত, যার মধ্যে তারা প্রবেশ করবে, পাদদেশে প্রবাহিত হতে থাকবে নদী এবং সবকিছুই সেখানে তাদের কামনা অনুযায়ী থাকবে৷ এ পুরস্কার দেন আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে৷৩২) এমন মুত্তাকীদেরকে, যাদের পবিত্র থাকা অবস্থায় ফেরেশতারা যখন মৃত্যু ঘটায় তখন বলে, “তোমাদের প্রতি শান্তি, যাও নিজেদের কর্মকাণ্ডের বদৌলতে জান্নাতে প্রবেশ করো৷”
(১৯:৯৭) বস্তুত হে মুহাম্মাদ! এ বাণীকে আমি সহজ করে তোমার ভাষায় এজন্য নাযিল করেছি যাতে তুমি মুত্তাকীদেরকে সুখবর দিতে ও হঠকারীদেরকে ভয় দেখাতে পারো৷
(নূর:৩৪) আমি দ্ব্যর্থহীন পথনির্দেশক আয়াত তোমাদের কাছে পাঠিয়েছি, তোমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত জাতিদের শিক্ষণীয় দৃষ্টান্তও তোমাদের সামনে উপস্থাপন করেছি এবং মুত্তাকীদের জন্য উপদেশও দিয়েছি৷
(২৮-ক্বাছাছ : ৮৩) সে আখেরাতের১০৩ গৃহ তো আমি তাদের জন্য নির্দিষ্ট করে দেবো যারা পৃথিবীতে নিজেদের বড়াই চায় না১০৪ এবং চায় না বিপর্যয় সৃষ্টি করতে৷১০৫ আর শুভ পরিণাম রয়েছে মুত্তাকীদের জন্যই৷১০৬
১০৩. এখানে জান্নাতের কথা বলা হয়েছে, যা প্রকৃত সাফল্যের স্থান হিসেবে চিহ্নিত।
১০৪. অর্থাৎ, যারা আল্লাহর যমীনে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশী নয়। যারা বিদ্রোহী, স্বৈরাচারী ও দাম্ভিক হয়ে নয় বরং বান্দা হয়ে থাকে এবং আল্লাহর বান্দাদেরকে নিজেদের বান্দা করে রাখার চেষ্টা করে না।
১০৫. 'ফাসাদ' বা বিপর্যয় হচ্ছে মানব জীবন ব্যবস্থার এমন একটি বিকৃতি যা সত্য বিচ্যুত হবার ফলে অনিবার্যভাবে দেখা দেয়। আল্লাহর বন্দেগী এবং তাঁর আইন কানুনের আনুগত্যের সীমানা অতিক্রম করে মানুষ যা কিছুই করে সবই হয় প্রথম থেকে শেষ পর্যন্তই বিপর্যয়। এর একটি অংশ হচ্ছে এমন ধরনের বিপর্যয়, যা হারাম পথে ধন আহরণ এবং হারাম পথে তা ব্যয় করার ফলে সৃষ্টি হয়।
১০৬. অর্থাৎ, তাদের জন্য যারা আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর নাফরমানী করা থেকে দূরে থাকে।
ক্লিক করুন : ন > নবীদের জীবনের ঘটনাবলী >
হযরত মুহাম্মদ সা:
(১২:২২) আর যখন সে তার পূর্ণ যৌবনে উপনীত হলো, আমি তাকে ফায়সালা করার শক্তি ও জ্ঞান দান করলাম৷ এভাবে আমি নেক লোকদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি৷
(১৬:১২৮) আল্লাহ তাদের সাথে আছেন যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যারা সৎকর্মপরায়ণ৷
(১১:৪৯) হে মুহাম্মদ! এসব গায়েবের খবর, যা আমি তোমাকে অহীর মাধ্যমে জানাচ্ছি৷ এর আগে তুমি এসব জানতে না এবং তোমার কওমও জানতো না৷ কাজেই সবর করো৷ মুত্তাকীদের জন্য রয়েছে শুভ পরিণাম৷
(১৫:৪৫) অন্যদিকে মুত্তাকীরা থাকবে বাগানে ও নির্ঝরিণীসমূহে ।
(১৯:৮৫) সেদিনটি অচিরেই আসবে যেদিন মুত্তাকীদেরকে মেহমান হিসেবে রহমানের সামনে পেশ করবো
(ফুরকান:১৫) এদের বলো, এ পরিণাম ভলো অথবা সেই চিরন্তন জান্নাত যার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছ মুত্তাকীদেরকে? সেটি হবে তাদের কর্মফল এবং তাদের সফরের শেষ মনযিল৷
(বিস্তারিত দেখুন : ভ > আল্লাহর ভয়, ত > তাকওয়া, জ > জান্নাত, )
(হাজ্ব:৩২) এ হচ্ছে আসল ব্যাপার (এটি বুঝে নাও), আর যে ব্যক্তি আল্লাহ নির্ধারিত রীতিনীতির প্রতি সম্মান দেখায়, তার সে কাজ তার অন্তরের আল্লাহভীতির পরিচায়ক৷
(হাজ্ব:৩০) এ ছিল (কাবা নির্মাণের উদ্দেশ্য) এবং যে কেউ আল্লাহ প্রতিষ্ঠিত পবিত্র অনুষ্ঠানগুলোকে সম্মান করবে, তার রবের কাছে এ হবে তারই জন্য ভালো৷
(মু’মিনুন:১৫) .... তোমাদের অবশ্যই মরতে হবে।
(২১:৩৫) প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে৷
(২৯-আনকাবুত:৫৭) প্রত্যেক জীবকেই মৃত্যুর স্বাদ পেতে হবে৷ তারপর তোমাদের সবাইকে আমার দিকে ফিরিয়ে আনা হবে ৯৫
৯৫ . অর্থাৎ প্রাণের কথা ভেবো না। এ তো কখনো না কখনো চলে যাবেই। চিরকাল থাকার জন্য কেউই দুনিয়ায় আসেনি। কাজেই এ দুনিয়ায় কিভাবে প্রাণ বাঁচিয়ে চলতে হবে এটা তোমাদের জন্য কোন চিন্তাযোগ্য বিষয় নয়। বরং আসল চিন্তাযোগ্য বিষয় হচ্ছে, ঈমান কেমন করে বাঁচানো যাবে এবং আল্লাহর আনুগত্যের দাবী কিভাবে পূরণ করা যাবে। শেষ পর্যন্ত তোমাদের ফিরে আমার দিকে আসতে হবে। যদি দুনিয়ায় প্রাণ বাঁচাবার জন্য ঈমান হারিয়ে চলে আসো তাহলে এর ফল হবে ভিন্ন কিছু। আর ঈমান বাঁচাবার জন্য যদি প্রাণ হারিয়ে চলে আসো তাহলে এর পরিণাম হবে অন্য রকম। কাজেই আমার কাছে যখন ফিরে আসবে তখন কি নিয়ে ফিরে আসবে, কেবল একথাটিই চিন্তা করো। প্রাণের জন্য উৎসর্গীত ঈমান, না ঈমানের জন্য উৎসর্গীত প্রাণ নিয়ে ৷
(৩০-রূম: ৪০) ........তাঁরপর তিনি তো তোমাদের মৃত্যু দান করেন, এরপর তিনি তোমাদের জীবিত করবেন৷
(আস-সাজদাহ: ১১) এদেরকে বলে দাও, “মৃত্যুর যে ফেরেশতাকে তোমাদের ওপর নিযুক্ত করা হয়েছে সে তোমাদেরকে পুরোপুরি তার কবজায় নিয়ে নেবে এবং তারপর তোমাদেরকে তোমাদের রবের কাছে ফিরিয়ে আনা হবে৷ ২১
২১ . অর্থাৎ তোমাদের সেই "আমরা" মাটিতে মিশে একাকার হয়ে যাবে না বরং তার কর্মসময় শেষ হতেই আল্লাহর মউতের ফেরেশতা আসবে এবং তাকে দেহ থেকে বের করে পুরোপুরি নিজের কবজায় নিয়ে নেবে। তাকে সম্পূর্ণত এবং একেবারে অবিকৃত ও অটুট অবস্থায় তত্ত্বাবধানে (custody) নিয়ে নেয়া হবে এবং তার রবের সামনে পেশ করা হবে।
এ সংক্ষিপ্ত আয়াতে অনেকগুলো সত্যের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে । এগুলোকে হালকা দৃষ্টিতে দেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া ঠিক নয়।
একঃ এখানে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে, মৃত্যু এমনভাবে আসে না যেমন নাকি একটি ঘড়ি চলতে চলতে হঠাৎ দম শেষ হয়ে যাবা কারণে বন্ধ হয়ে যায়। বরং এ কাজের জন্য আসলে আল্লাহ একজন বিশিষ্ট ফেরেশতা নিযুক্ত করে রেখেছেন। তিনি এসে যথারীতি রূহকে ঠিক তেমনিভাবে গ্রহণ করেন যেমন একজন সরকারী আমীন (official Receiver) কোন জিনিস নিজের কবজায় নিয়ে নেয়। কুরআনের অন্যান্য স্থানে এর আরো যে বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে তা থেকে জানা যায়, মৃত্যু বিভাগীয় এ অফিসারের অধীনে পুরোপুরি একটি আমলা বাহিনী রয়েছে ।তারা মৃত্যু দান করা, রূহকে দেহ থেকে বের করে আনা এবং তাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেবার বহুতর দায়িত্ব পালন করেন। তাছাড়া এ আমলারা অপরাধী রূহ ও সৎ মু'মিন রূহদের সাথে ভিন্ন ভিন্ন ব্যবহার করেন। (এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য সূরা নিসা , ৯৭ ; আন'আম, ৯৩ ; আন নাহল, ২৮; এবং ওয়াকি'আহ ৮৩ ও ৯৪ আয়াত দেখুন। )
দুইঃ এ থেকে একথাও জানা যায় যে, মৃত্যুর ফলে মানুষের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যায় না। বরং তার রূহ দেহ থেকে বের হয়ে সঞ্জীবিত থাকে। কুরআনের "মৃত্যুর ফেরেশতা তোমাদেরকে পুরোপুরি তার কবজায নিয়ে নেবে" শব্দগুলো এ সত্যটির প্রকাশ করে। কারণ কোন বিলুপ্ত জিনিসকে কবজায় নেয়া বা নিয়ন্ত্রণাধীন করা হয় না। কবজায় বা অধিকারে নিয়ে নেবার অর্থই হচ্ছে অধিকৃত জিনিস অধিকারকারীর কাছে রয়েছে।
তিনঃ এ থেকেও জানা যায় যে, মৃত্যুকালে যে জিনিসটি অধিকারে নিয়ে নেয়া হয় তা মানুষের জৈবিক জীবন (Biological life ) নয় বরং তার সেই অহম (Ego) যাকে "আমরা" "তুমি" "তোমরা" শব্দাবলীর সাহায্যে চিত্রিত করা হয়। এ অহম দুনিয়ার কাজ করে যে ধরনের ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয় তার সবটুকুই পুরোপুরি (Intact) বের করে নেয়া হয়। এমনভাবে বের করে নেয়া হয় যার ফলে তার গুণাবলীতে কোন প্রকার কমবেশি দেখা দেয় না। মৃত্যুর পরে এ জিনিসই তার রবের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়। একেই পরকালে নবজন্ম ও নতুন দেহ দান করা হবে। এরি বিরূদ্ধে 'মোকদ্দমা' চালানো হবে। এর কাছ থেকেই হিসেব নেয়া হবে এবং একেই পুরস্কার ও শাস্তি দেয়া হবে।
(৩৩-আহযাব: ১৩) যখন তাদের মধ্য থেকে একটি দল বললো, হে ইয়াসরিববাসীরা! তোমাদের জন্য এখন অবস্থান করার কোন সুযোগ নেই, ফিরে চলো৷২৩ যখন তাদের একপক্ষ নবীর কাছে এই বলে ছুটি চাচ্ছিল যে, আমাদের গৃহ বিপদাপন্ন,২৪ অথচ তা বিপদাপন্ন ছিল না২৫ আসলে তারা (যুদ্ধক্ষেত্র থেকে) পালাতে চাচ্ছিল৷
বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য দেখুন : ম > মুনাফিক ও জিহাদ।
(৩৩-আহযাব: ১৬) হে নবী! তাদেরকে বলো, যদি তোমরা মৃত্যু বা হত্যা থেকে পলায়ন করো, তাহলে এ পলায়নে তোমাদের কোনো লাভ হবে না৷ এরপর জীবন উপভোগ করার সামান্য সুযোগই তোমরা পাবে৷২৮
২৮. অর্থাৎ এভাবে পলায়ন করার ফলে তোমাদের আয়ু বেড়ে যাবে না। এর ফলে কখনোই তোমরা কিয়ামত পর্যন্ত বেঁচে থাকতে এবং সারা দুনিয়া জাহানের ধন-দৌলত হস্তগত করতে পারবে না। পালিয়ে বাঁচলে বড় জোর কয়েক বছরই বাঁচবে এবং তোমাদের জন্য যতটুকু নির্ধারিত হয়ে আছে ততটুকুই জীবনের আয়েশ-আরাম ভোগ করতে পারবে।
১৭) তাদেরকে বলো, কে তোমাদের রক্ষা করতে পারে আল্লাহর হাত থেকে যদি তিনি তোমাদের ক্ষতি করতে চান ? আর কে তাঁর রহমতকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে যদি তিনি চান তোমাদের প্রতি মেহেরবাণী করতে ? আল্লাহর মুকাবিলায় তো তারা কোনো পৃষ্ঠপোষক ও সাহায্যকারী লাভ করতে পারে না৷
(৩১-লোকমান: ৩৪) একমাত্র আল্লাহই সেই সময়ের জ্ঞান রাখেন ৷ তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন৷ তিনিই জানেন মাতৃগর্ভে কি লালিত হচ্ছে৷ কোন প্রাণসত্তা জানে না আগামীকাল সে কি উপার্জন করবে এবং কোন ব্যক্তির জানা নেই তার মৃত্যু হবে কোন যমীনে৷ আল্লাহই সকল জ্ঞানের অধিকারী এবং তিনি সবকিছু জানেন৷
(৩৪-সাবা: ১৪) তারপর যখন সুলাইমানের ওপর আমি মৃত্যুর ফায়সালা প্রয়োগ করলাম তখন জিনদেরকে তার মৃত্যুর খবর দেবার মতো সেই ঘুণ ছাড়া আর কোন জিনিস ছিল না যা তার লাঠিকে খেয়ে চলছিল৷ এভাবে যখন সুলাইমান পড়ে গেলো, জিনদের কাছে একথা পরিষ্কার হয়ে গেলো ২৩ যে, যদি তারা অদৃশ্যের কথা জানতো তাহলে এ লাঞ্জনাকর শাস্তিতে আবদ্ধ থাকতো না৷
২৩. মুল শব্দ হচ্ছে, (....)- এ ব্যাক্যাংশের একটি অনুবাদ আমি ওপরে করেছি। এর আরেকটি অনুবাদ এও হতে পারে- জিনদের অবস্থা পরিষ্কার হয়ে গেলো অথবা উন্মুক্ত হয়ে গেল। প্রথম অবস্থায় এর অর্থ হবে, খোদ জিনেরাই জানতে পারবে যে, অদৃশ্য বিষয় জানার ব্যাপারে তাদের ধারণা ভুল। দ্বিতীয় অবস্থায় এর অর্থ হবে, সাধারণ মানুষেরা যারা জিনদেরকে অদৃশ্যজ্ঞানী মনে করতো তাদের কাছে একথা পরিষ্কার হয়ে গেল যে, জিনেরা কোন অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখে না।
(বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য দেখুন : আ > আলেমুল গায়েব > ৫ টি গায়েবের বিষয়ও আল্লাহর নিয়ন্ত্রাণাধীন । )
(২১:৩৪) আর (হে মুহাম্মাদ!) অনন্ত জীবন তো আমি তোমার পূর্বেও কোনো মানুষকে দেইনি ; যদি তুমি মরে যাও তাহলে এরা কি চিরকাল বেঁচে থাকবে ? ৩৫) প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে৷ আর আমি ভালো ও মন্দ অবস্থার মধ্যে ফেলে তোমাদের সবাইকে পরীক্ষা করছি, শেষ পর্যন্ত তোমাদের আমার দিকে ফিরে আসতে হবে৷
( যে সমস্ত হুকমি ধমকি, বদদোয়া ও হত্যার ষড়যন্ত্রের সাহায্যে সর্বক্ষণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্বাগত জানানো হতো এ হচ্ছে তার সংক্ষিপ্ত জবাব। একদিকে ছিল কুরাইশ নেতারা। তারা প্রতিদিন তাঁর এই প্রচার কার্যের জন্য তাকে হুকমি দিতে থাকতো এবং তাদের মধ্য থেকে কিছু সংখ্যক বিরোধী আবার বসে বসে যে কোনভাবে তাঁকে খতম করে দেবার কথাও ভাবতো। অন্যদিকে যে গৃহের কোন একজন ইসলাম গ্রহণ করতো সে গৃহের সবাই তার শত্রু হয়ে যেতো। মেয়েরা দাঁতে দাঁত পিশে তাঁকে অভিশাপ দিতো এবং বদদোয়া করতো। আর গৃহের পুরুষরা তাঁকে ভয় দেখাতো। বিশেষ করে হাবশায় হিজরাতের পরে মক্কার ঘরে ঘরে বিলাপ শুরু হয়ে গিয়েছিল। কারণ এমন একটি বাড়ি পাওয়াও কঠিন ছিল যেখান থেকে একজন পুরুষ বা মেয়ে হিজরাত করেনি। এরা সবাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামে অভিযোগ করে বলতো, এ লোকটি আমাদের পরিবার ধ্বংস করে দিয়েছে। এসব কথার জবাব এ আয়াতে দেয়া হয়েছে এবং একই সংগে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেও উপদেশ দেয়া হয়েছে যে, ওদের কোন পরোয়া না করে তুমি নির্ভয়ে নিজের কাজ করে যাও।
অর্থাৎ দুঃখ-আনন্দ, দারিদ্র-ধনাঢ্যতা, জয়-পরাজয়, শক্তিমত্তা-দুর্বলতা, সুস্থতা-রুগ্নতা ইত্যাদি সকল অবস্থায় তোমাদেরকে পরীক্ষা করা হচ্ছে। দেখা হচ্ছে, ভালো অবস্থায় তোমরা অহংকারী, জালেম, আল্লাহ বিস্মৃত ও প্রবৃত্তির দাস হয়ে যাও কিনা। খারাপ অবস্থায় হিম্মত ও সাহস কমে যাওয়ায় নিম্নমানের ও অবমাননাকর পদ্ধতি এবং অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে বসো কি না। কাজেই কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তির এ রকমারি অবস্থা বুঝার ব্যাপারে ভুল করা উচিত নয়। সে যে অবস্থারই সম্মুখীন হোক, তাকে অবশ্যই পরীক্ষার এ দিকটি সামনে রাখতে হবে এবং সাফল্যের সাথে একে অতিক্রম করতে হবে। কেবলমাত্র একজন বোকা ও সংকীর্ণমনা লোকই ভাল অবস্থায় ফেরাউনে পরিণত হয় এবং খারাপ অবস্থা দেখা দিলে মাটিতে নাক-খত দিতে থাকে। )
--আরো দেখুন : জ > জীবন, প > পরীক্ষা।
(৩২- আস-সাজদা : ১১) এদেরকে বলে দাও, “মৃত্যুর যে ফেরেশতাকে তোমাদের ওপর নিযুক্ত করা হয়েছে সে তোমাদেরকে পুরোপুরি তার কবজায় নিয়ে নেবে এবং তারপর তোমাদেরকে তোমাদের রবের কাছে ফিরিয়ে আনা হবে৷ ২১
২১ . অর্থাৎ তোমাদের সেই "আমরা" মাটিতে মিশে একাকার হয়ে যাবে না বরং তার কর্মসময় শেষ হতেই আল্লাহর মউতের ফেরেশতা আসবে এবং তাকে দেহ থেকে বের করে পুরোপুরি নিজের কবজায় নিয়ে নেবে। তাকে সম্পূর্ণত এবং একেবারে অবিকৃত ও অটুট অবস্থায় তত্ত্বাবধানে (custody) নিয়ে নেয়া হবে এবং তার রবের সামনে পেশ করা হবে।
এ সংক্ষিপ্ত আয়াতে অনেকগুলো সত্যের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে । এগুলোকে হালকা দৃষ্টিতে দেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া ঠিক নয়।
একঃ এখানে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে, মৃত্যু এমনভাবে আসে না যেমন নাকি একটি ঘড়ি চলতে চলতে হঠাৎ দম শেষ হয়ে যাবা কারণে বন্ধ হয়ে যায়। বরং এ কাজের জন্য আসলে আল্লাহ একজন বিশিষ্ট ফেরেশতা নিযুক্ত করে রেখেছেন। তিনি এসে যথারীতি রূহকে ঠিক তেমনিভাবে গ্রহণ করেন যেমন একজন সরকারী আমীন (official Receiver) কোন জিনিস নিজের কবজায় নিয়ে নেয়। কুরআনের অন্যান্য স্থানে এর আরো যে বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে তা থেকে জানা যায়, মৃত্যু বিভাগীয় এ অফিসারের অধীনে পুরোপুরি একটি আমলা বাহিনী রয়েছে ।তারা মৃত্যু দান করা, রূহকে দেহ থেকে বের করে আনা এবং তাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেবার বহুতর দায়িত্ব পালন করেন। তাছাড়া এ আমলারা অপরাধী রূহ ও সৎ মু'মিন রূহদের সাথে ভিন্ন ভিন্ন ব্যবহার করেন। (এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য সূরা নিসা , ৯৭ ; আন'আম, ৯৩ ; আন নাহল, ২৮; এবং ওয়াকি'আহ ৮৩ ও ৯৪ আয়াত দেখুন। )
দুইঃ এ থেকে একথাও জানা যায় যে, মৃত্যুর ফলে মানুষের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যায় না। বরং তার রূহ দেহ থেকে বের হয়ে সঞ্জীবিত থাকে। কুরআনের "মৃত্যুর ফেরেশতা তোমাদেরকে পুরোপুরি তার কবজায নিয়ে নেবে" শব্দগুলো এ সত্যটির প্রকাশ করে। কারণ কোন বিলুপ্ত জিনিসকে কবজায় নেয়া বা নিয়ন্ত্রণাধীন করা হয় না। কবজায় বা অধিকারে নিয়ে নেবার অর্থই হচ্ছে অধিকৃত জিনিস অধিকারকারীর কাছে রয়েছে।
তিনঃ এ থেকেও জানা যায় যে, মৃত্যুকালে যে জিনিসটি অধিকারে নিয়ে নেয়া হয় তা মানুষের জৈবিক জীবন (Biological life ) নয় বরং তার সেই অহম (Ego) যাকে "আমরা" "তুমি" "তোমরা" শব্দাবলীর সাহায্যে চিত্রিত করা হয়। এ অহম দুনিয়ার কাজ করে যে ধরনের ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয় তার সবটুকুই পুরোপুরি (Intact) বের করে নেয়া হয়। এমনভাবে বের করে নেয়া হয় যার ফলে তার গুণাবলীতে কোন প্রকার কমবেশি দেখা দেয় না। মৃত্যুর পরে এ জিনিসই তার রবের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়। একেই পরকালে নবজন্ম ও নতুন দেহ দান করা হবে। এরি বিরূদ্ধে 'মোকদ্দমা' চালানো হবে। এর কাছ থেকেই হিসেব নেয়া হবে এবং একেই পুরস্কার ও শাস্তি দেয়া হবে।
(১৬:৩২) এমন মুত্তাকীদেরকে, যাদের পবিত্র থাকা অবস্থায় ফেরেশতারা যখন মৃত্যু ঘটায় তখন বলে, “তোমাদের প্রতি শান্তি, যাও নিজেদের কর্মকাণ্ডের বদৌলতে জান্নাতে প্রবেশ করো৷”
(১৬:৩০) অন্যদিকে যখন মুত্তাকীদেরকে জিজ্ঞেস করা হয়, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে কী নাযিল হয়েছে, তারা জবাব দেয়, “সর্বোত্তম জিনিস নাযিল হয়েছে৷” এ ধরনের সৎকর্মশীলদের জন্য এ দুনিয়াতেও মংগল রয়েছে এবং আখেরাতের আবাস তো তাদের জন্য অবশ্যি উত্তম৷ বড়ই ভালো আবাস মুত্তাকীদের,
(সেই সমস্ত মুত্তাকীদের জন্য যারা কুরআনকে সর্বোত্তম জিনিস মনে করে এবং কুরআন প্রচার ও প্রতিষ্ঠার খিদমতে নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখে, এবং সাথে সাথে তারা সৎকর্মশীলও, ১৬:২০-৩২ দ্রষ্টব্য)।
(১৬:২৮) হ্যাঁ, এমন কাফেরদের জন্য, যারা নিজেদের ওপর জুলুম করতে থাকা অবস্থায় যখন ফেরেশতাদের হাতে পাকড়াও হয় তখন সাথে সাথেই (অবাধ্যতা ত্যাগ করে) আত্মসমর্পণ করে এবং বলে, “আমরা তো কোনো দোষ করছিলাম না৷” ফেরেশতারা জবাব দেয়, “কেমন করে দোষ করছিলে না ! তোমাদের কার্যকলাপ আল্লাহ খুব ভালো করেই জানেন৷২৯) এখন যাও, জাহান্নামের দরযা দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ো, ওখানেই তোমাদের থাকতে হবে চিরকাল৷ সত্য বলতে কি, অহংকারীদের এ ঠিকানা বড়ই নিকৃষ্ট৷
(১৬:২৪) আর যখন কেউ তাদেরকে জিজ্ঞেস করে, তোমাদের রব এ কী জিনিস নাযিল করেছেন ? তারা বলে, “জ্বী, ওগুলো তো আগের কালের বস্তাপচা গপ্পো৷
(সেই সমস্ত ব্যক্তিদের জন্য যারা কুরআনকে অস্বীকার করে, অথবা কুরআনকে স্বীকার করলেও তার হুকুম আহকাম অনুযায়ী চলতে চায়না, ১৬:২০-৩২, দ্রষ্টব্য। )
(২১:১৪) বলতে লাগলো, “হায়, আমাদের দুর্ভাগ্য! নিশ্চয়ই আমরা অপরাধী ছিলাম৷” ১৫) আর তারা এ আর্তনাদ করতেই থাকে যতক্ষণ আমি তাদেরকে কাটা শস্যে পরিণত না করি, জীবনের একটি স্ফুলিংগও তাদের মধ্যে থাকেনি৷
ইসলামের ওপর আমাকে মৃত্যু দান করো এবং পরিণামে আমাকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তরভূক্ত করো৷-১২:১০১,
(১৬:৭০) আর দেখো, আল্লাহ তোমাদের সৃষ্টি করেছেন তারপর তিনি তোমাদের মৃত্যুদান করেন।
৭: ১৫৮,
তিনিই জীবন দেন, তিনিই মৃত্যু দেন এবং তারই দিকে সবাইকে ফিরে যেতে হবে৷-১০:৫৬,
(১০:১০৪)বরং আমি কেবলমাত্র এমন আল্লাহর বন্দেগী করি যার করতলে রয়েছে তোমাদের মৃত্যু৷
(১৫:২৩) জীবন ও মৃত্যু আমিই দান করি এবং আমিই হবো সবার উত্তরাধিকারী৷
(৭:১৫৮)
(হাজ্ব:৬) এসব কিছু এজন্য যে, আল্লাহ সত্য, তিনি মৃতদেরকে জীবিত করেন এবং তিনি সব জিনিসের ওপর শক্তিশালী৷ ৭) আর এ (একথার প্রমাণ) যে, কিয়ামতের সময় অবশ্যই আসবে, এতে কোনো প্রকার সন্দেহের অবকাশ নেই এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদেরকে উঠাবেন যারা কবরে চলে গেছে৷
(হাজ্ব:৬৬) তিনিই তোমাদের জীবন দান করেছেন, তিনিই তোমাদের মৃত্যু দান করেন এবং তিনিই আবার তোমাদের জীবিত করবেন;
(ফুরকান:৩) লোকেরা তাঁকে বাদ দিয়ে এমন সব উপাস্য তৈরি করে নিয়েছে যারা কোন জিনিস সৃষ্টি করে না বরং নিজেরাই সৃষ্ট, যারা নিজেদের জন্যও কোন উপকার বা অপকার করার ক্ষমতা রাখে না, যারা না জীবন -মৃত্যু দান করতে পারে আর না মৃতদেরকে আবার জীবিত করতে পারে৷
এ বিষয়ে বিস্তারিত দেখুন : ক > কুরআন ও বিজ্ঞান > বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে আল্লাহর অস্তিত্ব ও আখিরাতের সত্যতার প্রমাণ ।
(২৭-নমল:৬৫)......এবং তারা জানেনা কবে তাদেরকে উঠিয়ে নেয়া হবে ৷
(১৯:২৩) তারপর প্রসববেদনা তাকে একটি খেজুর গাছের তলে পৌছে দিল৷ সে বলতে থাকলো, “হায়! যদি আমি এর আগেই মরে যেতাম এবং আমার নাম-নিশানাই না থাকতো”৷
৭:৩৭,
৭:১৮৫,
(২৭-নমল:৬৭) এ অস্বীকারকারীরা বলে থাকে “ যখন আমরা ও আমাদের বাব দাদীরা মাটি হয়ে যাব তখন তাদের সত্যিই কবর থেকে বের করা হবে নাকি?৬৮) এখবর আমাদেরও অনেক দেয়া হয়েছে এবং ইতিপূর্বে আমাদের বাব দাদাদেরকেও অনেক দেয়া হয়েছিল, কিন্তু এসব নিছক কল্পকাহিনী ছাড়া আর কিছুই নয়, যা আগের জামানা থেকে শুনে আসছি৷”
৭:৫৭
মৃত্যু সকল দিক দিয়ে তার ওপর ছেয়ে থাকবে কিন্তু তার মৃত্যু হবে না এবং সামনের দিকে একটি কঠোর শাস্তি তাকে ভোগ করতে হবে৷—১৪:১৭,
৯:৮৪ (ফাসেক অবস্থায়), ৯:৮৫ (কাফের অবস্থায়),
(৩৩-আহযাব: ১৯) যারা তোমাদের সাথে সহযোগিতা করার ব্যাপারে বড়ই কৃপণ৷ ৩০ বিপদের সময় এমনভাবে চোখ উলটিয়ে তোমাদের দিকে তাকাতে থাকে যেন কোনো মৃত্যুপথযাত্রী মূর্ছিত হয়ে যাচ্ছে কিন্তু বিপদ চলে গেলে এ লোকেরাই আবার স্বার্থলোভী হয়ে তীক্ষ্ণ ভাষায় তোমাদেরকে বিদ্ধ করতে থাকে৷ ৩১ তারা কখনো ঈমান আনেনি, তাই আল্লাহ তাদের সমস্ত কর্মকাণ্ড ধ্বংস করে দিয়েছেন ৩২ এবং এমনটি করা আল্লাহর জন্য অত্যন্ত সহজ৷৩৩
(ব্যাখ্যার জন্য দেখুন : ম > মুনাফিক > মুনাফিক ও আল্লাহর পথে খরচ। )
(ফুরকান:১৩) আর যখন এরা শৃংখলিত অবস্থায় জাহান্নামের মধ্যে একটি সংকীর্ণ স্থানে নিক্ষিপ্ত হবে তখন নিজেদের মৃত্যুকে ডাকতে থাকবে৷১৪) (তখন তাদের বলা হবে) আজ একটি মৃত্যুকে নয় বরং বহু মৃত্যুকে ডাকো৷
(২০:৭৪)...প্রকৃতপক্ষে যে ব্যক্তি অপরাধী হয়ে নিজের রবের সামনে হাযির হবে তার জন্য আছে জাহান্নাম, যার মধ্যে সে না জীবিত থাকবে, না মরবে৷
আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই তুমি মরণশীল এবং তারাও মরণশীল’। [সূরা যুমারঃ ৩০]
আমি তাদেরকে (পূর্বের নবীদেরকে) এমন দেহ বিশিষ্ট করিনি যে, তারা খাদ্য ভক্ষণ করত না এবং তারা চিরস্থায়ীও ছিল না। [সূরা আম্বিয়াঃ ৮]
তিনি আরও বলেন, (হে রাসুল সঃ) বলুনঃ আমি ও তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহই একমাত্র ইলাহ। [সূরা কাহফঃ ১১]
তিনি অন্যত্র বলেন, ‘আমরা তোমার পূর্বেও কোন মানুষকে অনন্ত জীবন দান করিনি। সুতরাং তোমার মৃত্যু হলে তারা কি চিরজীবী হয়ে থাকবে?’ [আম্বিয়াঃ ৩৪]
তিনি আরো বলেন, ‘মুহাম্মাদ একজন রাসূল মাত্র। তার পূর্বে বহু রাসূল গত হয়ে গেছে। সুতরাং যদি সে মারা যায় অথবা নিহত হয়, তবে কি তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে? [আলে-ইমরানঃ ১৪৪]
রাসূল (সঃ) যখন মৃত্যুবরণ করেছিলেন তখন তাঁর এই মৃত্যু সংবাদ ওমর (রাঃ) কোন মতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। ফলে তিনি অশান্ত হয়ে পড়েছিলেন। তখন আবু বকর (রাঃ) বলেছিলেন, ‘যারা মুহাম্মাদের (সঃ) ইবাদত করে তারা জেনে রাখুক যে, মুহাম্মাদ (সঃ) মারা গেছেন। আর যারা আল্লাহর ইবাদত করে তারা জেনে রাখুক যে, আল্লাহ চিরঞ্জীব, তিনি মরেন না’। [বুখারীঃ ৩৬৬৮]
অন্য হাদীছে এসেছে, আয়েশা (রাঃ) রাসূল (সঃ) এর মৃত্যুকালীন আযাব সম্পর্কে বলেন যে, তাঁর সামনে একটি পাত্রে পানি রাখা ছিল। তিনি (সঃ) তাতে হাত প্রবেশ করাচ্ছিলেন। আর মুখমন্ডল ধৌত করছিলেন এবং বলছিলেন, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। নিশ্চয়ই মৃত্যু যন্ত্রণা খুবই কঠিন। এরপর দু’হাত তুলে বলতে লাগলেন, আমাকে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন বন্ধুর সাথে মিলিত কর। এ অবস্থাতেই তাঁর (সঃ) জান কবয হয়ে গেল এবং তাঁর হাত এলিয়ে পড়ল’। [বুখারীঃ ৬৫১০; মিশকাতঃ ৫৯৫৯]
উমার (রাঃ) বলেন, আমি নবী মুহাম্মাদ (সঃ) হতে বলতে শুনেছি, তিনি (সঃ) বলেন, তোমরা আমার প্রশংসা নিয়ে বাড়াবাড়ি করোনা যেভাবে খ্রিস্টানরা ঈসা ইবনে মারিয়াম (আঃ) কে নিয়ে বাড়াবাড়ি করেছে। তোমরা আমাকে বল আল্লাহর বান্দা ও রাসুল। [বুখারীঃ ইঃ ফাঃ ৩১৯৯]
রিয়াদুস সালেহীন : ধৈর্যশীলতা (সবর) অধ্যায় :: বই ১ :: হাদিস ২৮
হযরত আনাস (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব বেশি রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লে রোগ যন্ত্রণায় তিনি অজ্ঞান হতে লাগলেন। এতে হযরত ফাতেমা (রা) বললেনঃ আহ্, আমার বাবার কি কষ্ট হচ্ছে! রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেনঃ ‘আজকের দিনের পর তোমার বাবার আর কষ্ট হবে না।’ তিনি (নবী করীম) যখন ইন্তেকাল করলেন, তখন ফাতেমা (রা) বললেনঃ ‘হায়! বাবা আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন। হে বাবা! জান্নাতুল ফিরদৌস আপনার বাসস্থান! হায়! হযরত জিব্রীলকে আপনার ইন্তেকালের সংবাদ দিচ্ছি।’ তাঁর দাফনের কাজ শেষ হলে তিনি বললেনঃ “রাসূলে আকরাম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর মাটি নিক্ষেপ করতে কি তোমাদের ইচ্ছা হলো?” (বুখারী)
(১৩:৩১) আর কী হতো, যদি এমন কোন কুরআন নাযিল করা হতো যার শক্তিতে পাহাড় চলতে থাকতো অথবা পৃথিবী বিদীর্ণ হতো কিংবা মৃত কবর থেকে বের হয়ে কথা বলতে থাকতো ?”
(৩০-রূম: ৫২) (হে নবী!) তুমি মৃতদেরকে শুনাতে পারো না, এমন বধিরদেরকেও নিজের আহ্বান শুনাতে পারো না যারা মুখ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছে ৫৩) এবং অন্ধদেরকেও তাদের ভ্রষ্টতা থেকে বের করে সঠিক পথ দেখাতে পারো না৷ তুমি তো একমাত্র তাদেরকেই শুনাতে পারো যারা আমার আয়াতের প্রতি ঈমান আনে এবং আনুগত্যের শির নত করে৷
হে আমাদের রব! আমাদের সবর দান করোএবং তোমার আনুগত্য থাকা অবস্থায় আমাদের দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নাও-৭:১২৬,
(১৬:২০) আর আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য যেসব সত্তাকে লোকেরা ডাকে, তারা কোনো একটি জিনিসেরও স্রষ্টা নয় বরং তারা নিজেরাই সৃষ্টি৷২১) তারা মৃত, জীবিত নয় এবং তারা কিছুই জানে না তাদেরকে কবে (পুনর্বার জীবিত করে) উঠানো হবে৷
(২৭-নমল:৮০) তুমি মৃতদেরকে শুনাতে পারোনা৷
(৩০-রূম: ৫২) (হে নবী!) তুমি মৃতদেরকে শুনাতে পারো না,
ব্যাখ্যার জন্য দেখুন : দ > দাওয়াতী কাজ > (ক্লিক করুন) লোকেরা দাওয়াত কবুল না করলে দু:খ পেওনা : কারণ
(১৬:১১৫) আল্লাহ যাকিছু তোমাদের ওপর হারাম করেছেন তা হচ্ছে , মৃতদেহ, রক্ত, শূয়োরের গোশত এবং যে প্রাণীর ওপর আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর নাম নেয়া হয়েছে৷
(১৬:১১৫) ...তবে যদি কেউ আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধাচরণ করার ইচ্ছা পোষণ না করে অথবা প্রয়োজনের সীমা না ছাড়িয়ে ক্ষুধার জ্বালায় বাধ্য হয়ে এসব খেয়ে নেয় তাহলে নিশ্চিতই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়৷
(২৫.ফুরকান:৬৮) .....(রহমানের বান্দা তারাই যারা ) আল্লাহ যে প্রানকে হারাম করেছেন কোন সংগত কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না ।
(২৬.শুআরা:১৪) আর আমার বিরুদ্ধে তো তাদের একটি অভিযোগও আছে৷ তাই আমার আশংকা হয় তারা আমাকে হত্যা করে ফেলবে৷".....(২৬.শুআরা:১৯) এবং তারপর তুমি যে কর্মটি করেছ তাতো করেছোই; তুমি বড়ই অকৃতজ্ঞ৷"২০) মূসা জবাব দিল, "সে সময় অজ্ঞতার মধ্যে আমি সে কাজ করেছিলাম৷২১) তারপর তোমাদের ভয়ে আমি পালিয়ে গেলাম৷
(সূরা কাসাসের ২ রুকুতে যে ঘটনার কথা বলা হয়েছে এখানে সেদিকে ইংগিত করা হয়েছে। হযরত মূসা ফেরাউনের সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তিকে একজন ইসরাঈলীর সাথে লড়তে দেখে একটি ঘুঁষি মেরেছিলেন। এতে সে মারা গিয়েছিল। তারপর হযরত মূসা যখন জানতে পারলেন, এ ঘটনার খবর ফেরাউনের লোকেরা জানতে পেরেছে এবং তারা প্রতিশোধ নেবার প্রস্তুতি চালাচ্ছে তখন তিনি দেশ ছেড়ে মাদ্য়ানের দিকে পালিয়ে গেলেন। এখানে আট-দশ বছর আত্মগোপন করে থাকার পর যখন তাঁকে হুকুম দেয়া হলো তুমি রিসালাতের বার্তা নিয়ে সেই ফেরাউনের দরবারে চলে যাও, যার ওখানে আগে থেকেই তোমার বিরুদ্ধে হত্যার মামলা ঝুলছে, তখন যথার্থই হযরত মূসা আশংকা করলেন, বার্তা শুনাবার সুযোগ আসার আগেই তারা তাঁকে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার করে ফেলবে।
মূলে “দ্বোয়াল্লিন” বলা হয়েছে।অর্থাৎ "আমি তখন গোমরাহীর মধ্যে অবস্খান করছিলাম।" অথবা "আমি সে সময় এ কাজ করেছিলাম পথভ্রষ্ট থাকা অবস্থায়। " এ ................ শব্দটি অবশ্যই গোমরাহী বা পথভ্রষ্টতারই সমার্থক । বরং আরবী ভাষায় এ শব্দটি অজ্ঞতা , অজ্ঞানতা , ভুল , ভ্রান্তি, বিস্মৃতি ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়। সূরা কাসাসে যে ঘটনা বর্ণিত হয়েছে সে সম্পর্কে চিন্তা করলে এখানে ........ শব্দটিকে অজ্ঞতা অর্থে গ্রহণ করাই বেশী সঠিক হবে। মূসা সেই কিবতীকে একজন ইসরাঈলীর উপর জুলুম করতে দেখে শুধুমাত্র একটি ঘুঁষি মেরেছিলেন । সবাই জানে , ঘুঁষিতে সাধারণত মানুষ মরে না। আর তিনি হত্যা করার উদ্দেশ্যেও ঘুঁষি মারেননি। ঘটনাক্রমে এতেই সে মরে গিয়েছিল । তাই সঠিক এ ছিল যে , এটি ইচ্ছাকৃত হত্যা ছিল না বরং ছিল ভুলক্রমে হত্যা। হত্যা নিশ্চয়ই হয়েছে কিন্তু ইচ্ছা করে হত্যা করার সংকল্প করে হত্যা করা হয়নি। হত্যা করার জন্য যেসব অস্ত্র বা উপায় কায়দা ব্যবহার করা হয় অথবা যেগুলোর সাহায্যে হত্যাকার্য সংঘটিত হতে পারে তেমন কোন অস্ত্র , উপায় বা কায়দাও ব্যবহার করা হয়নি।)
তার সম্প্রদায়ের স্বঘোষিত প্রতাপশালী নেতারা দুর্বল শ্রেনীর মুমিনদেরকে বললোঃ “তোমরা কি সত্যি জানো, সালেহ তার রবের প্রেরিত নবী? ” তারা জবাব দিলোঃ “নিশ্চয়ই, যে বাণী সহকারে তাঁকে পাঠানো হয়েছে আমরা তা বিশ্বাস করি৷”-৭:৭৫,
মূসা বললোঃ পাক-পবিত্র তোমার সত্তা৷ আমি তোমার কাছে তাওবা করছি এবং আমিই সর্বপ্রথম মুমিন৷-৭:১৪৩।
(১৮:৩৮) আর আমার ব্যাপারে বলবো, আমার রব তো সেই আল্লাহই এবং আমি তার সাথে কাউকে শরীক করি না৷
(১৮:৩০) তবে যারা মেনে নেবে এবং সৎকাজ করবে, সেসব সৎকর্মশীলদের প্রতিদান আমি কখনো নষ্ট করি না৷
(নূর:১২) যখন তোমরা এটা শুনেছিলে তখনই কেন মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারীরা নিজেদের সম্পর্কে সুধারণা করেনি এবং কেন বলে দাওনি এটা সুস্পষ্ট মিথ্যা দোষারোপ?
(অর্থাৎ, হযরত আয়শা রা: এর প্রতি মিথ্যা অপবাদের অভিযোগ তথা ইফকের ঘটনা)
আর আমি একথাও বলতে পারি না যে, তোমরা যাদেরকে অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখো তাদেরকে আল্লাহ কখনো কোন কল্যাণ দান করবেন না৷ তাদের মনের অবস্থা আল্লাহই ভালো জানেন৷ যদি আমি এমনটি বলি তাহলে আমি হবো জালেম” (১১:৩১),
(২৭-নমল:৩৭) (হে দূত!) ফিরে যাও নিজের প্রেরণকারীদের কাছে আমি তাদের বিরুদ্ধে এমন সেনাদল নিয়ে আসবো ৪২ যাদের তারা মোকাবিলা করতে পারবে না এবং আমি তাদেরকে এমন লাঞ্ছিত করে সেখান থেকে বিতাড়িত করবো যে, তারা ধিকৃত ও অপমানিত হবে৷”
(অর্থাৎ পুরো বক্তব্যটি এমনঃ হে দূত এ উপহার এর প্রেরকের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যাও। তাকে হয় আমার প্রথম কথাটি মেনে নিতে হবে অর্থাৎ মুসলিম হয়ে আমার কাছে হাজির হয়ে যেতে হবে আর নয়তো আমি সেনাদল নিয়ে তার ওপর আক্রমণ করবো।)
(বিস্তারিত দেখুন : জ > জিহাদ)
নিশ্চিতভাবেই আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীল লোকদের নিকবর্তী৷- ৭:৫৬,
(হাজ্ব:৫৪) --এবং যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে তারা জেনে নেয় যে, তোমার রবের পক্ষ থেকে এটা সত্য এবং তারা এর প্রতি ঈমান আনে এবং এর সামনে তাদের অন্তর ঝুঁকে পড়ে; যারা ঈমান আনে তাদেরকে অবশ্যই আল্লাহ চিরকাল সত্য-সরল পথ দেখিয়ে থাকেন৷
(নূর:৩৪) আমি দ্ব্যর্থহীন পথনির্দেশক আয়াত তোমাদের কাছে পাঠিয়েছি, তোমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত জাতিদের শিক্ষণীয় দৃষ্টান্তও তোমাদের সামনে উপস্থাপন করেছি এবং মুত্তাকীদের জন্য উপদেশও দিয়েছি৷
“এগুলো শক্ত হাতে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো এবং তোমার জাতিকে এর উত্তম তাৎপর্যের অনুসরণ করার হুকুম দাও৷-৭:১৪৫,
(অর্থাৎ আল্লাহর বিধানের সরল, সোজা, ও সুষ্পষ্ট মর্ম ও তাৎপর্য গ্রহণ করো। একজন সহজ সরল বিবেক সম্পন্ন মানুষ , যার মনে কোন অসৎ উদ্দেশ্য ও বক্রতা নেই, সে সাধারণ বুদ্ধি দ্বারা যে অর্থ বোঝে , এখানে তার কথাই বলা হয়েছে। যারা আল্লাহর বিধানের সরল সোজা অর্থবোধক শব্দগুলো থেকে জটিল আইনগত মার প্যাঁচ এবং বিভ্রাট বিভ্রান্তি ও কলহ কোন্দাল সৃষ্টির পথ খুঁজে বের করে তাদের সেই সব কূটতর্ককে যাতে আল্লাহর কিতাবের অনুমোদিত বিষয় মনে না করা হয় তাই এ শর্ত আরোপ করা হয়েছে।)
(হাজ্ব:৫৩) (তিনি এজন্য এমনটি হতে দেন) যাতে শয়তানের নিক্ষিপ্ত অনিষ্টকে পরীক্ষায় পরিণত করেন তাদের জন্য যাদের অন্তরে (মুনাফিকীর) রোগ রয়েছে এবং যাদের হৃদয়বৃত্তি মিথ্যা-কলূষিত-আসলে এ জালেমরা শত্রুতায় অনেক দূরে পৌঁছে গেছে।
(হাজ্ব:৫৫) অস্বীকারকারীরা তো তার পক্ষ থেকে সন্দেহের মধ্যেই পড়ে থাকবে যতক্ষণ না তাদের ওপর কিয়ামত এসে পড়বে অকস্মাত অথবা নাযিল হয়ে যাবে একটি ভাগ্যাহত দিনের শাস্তি৷
(হাজ্ব:৫৪) --এবং যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে তারা জেনে নেয় যে, তোমার রবের পক্ষ থেকে এটা সত্য এবং তারা এর প্রতি ঈমান আনে এবং এর সামনে তাদের অন্তর ঝুঁকে পড়ে; যারা ঈমান আনে তাদেরকে অবশ্যই আল্লাহ চিরকাল সত্য-সরল পথ দেখিয়ে থাকেন৷
দেখুন : ম > মু’জিযা ।
দেখুন : ম > মু’জিযা।
(নূর:৩৫) আল্লাহ আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীর আলো ৷ (বিশ্ব-জাহানে) তাঁর আলোর উপমা যেন একটি তাকে একটি প্রদীপ রাখা আছে, প্রদীপটি আছে একটি চিমনির মধ্যে, চিমনিটি দেখতে এমন যেন মুক্তোর মতো ঝকঝকে নক্ষত্র, আর এ প্রদীপটি যয়তুনের এমন একটি মুবারক গাছের তেল দিয়ে উজ্জল করা হয়, যা পূর্বেরও নয়, পশ্চিমেরও নয়৷ যার তেল আপনা আপনিই জ্বলে ওঠে, চাই আগুন তাকে স্পর্শ করুক বা না করুক ৷ (এভাবে ) আলোর ওপরে আলো (বৃদ্ধির সমস্ত উপকরণ একত্র হয়ে গেছে) আল্লাহ যাকে চান নিজের আলোর দিকে পথনির্দেশ করেন ৷ তিনি উপমার সাহায্যে লোকদের কথা বুঝান৷ তিনি প্রত্যেকটি জিনিস খুব ভালো করেই জানেন ৷
( আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী শব্দ সাধারণভাবে কুরআন মজীদে ''বিশ্ব-জাহান'' অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। কাজেই অন্য কথায় আয়াতের অনুবাদ এও হতে পারেঃ আল্লাহ সমগ্র বিশ্ব-জাহানের আলো।
আলো বলতে এমন জিনিস বুঝানো হয়েছে যার বদৌলতে দ্রব্যের প্রকাশ ঘটে। অর্থাৎ যে নিজে নিজে প্রকাশিত হয় এবং অন্য জিনিসকেও প্রকাশ করে দেয়। মানুষের চিন্তায় নূর ও আলোর এটিই আসল অর্থ। কিছুই না দেখা যাওয়ার অবস্থাকে মানুষ অন্ধকার নাম দিয়েছে। আর এ বিপরীতে যখন সবকিছু দেখা যেতে থাকে এবং প্রত্যেকটি জিনিস প্রকাশ হয়ে যায় তখন মানুষ বলে আলো হয়ে গেছে। আল্লাহ তা'আলার জন্য ''নূর'' তথা আলো শব্দটির ব্যবহার ও মৌলিক অর্থের দিক দিয়েই করা হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ তিনি এমন কোন আলোকরশ্মি নন যা সেকেণ্ডে ১ লাখ ৮৬ হাজার মাইল বেগে চলে এবং আমাদের চোখের পরদায় পড়ে মস্তিষ্কের দৃষ্টি কেন্দ্রকে প্রভাবিত করে, আলোর এ ধরণের কোন অর্থ এখানে নেই। মানুষের মস্তিষ্ক এ অর্থের জন্য এ শব্দটি উদ্ভাবন করেছে, আলোর এ বিশেষ অবস্থা সে অর্থের মৌল তত্বের অন্তরভক্ত নয়। বরং তার ওপর এ শব্দটি আমরা এ বস্তুজগতে আমাদের অভিজ্ঞতায় যে আলো ধরা দেয় তার দৃষ্টিতে প্রয়োগ করি। মানুষের ভাষায় প্রচলিত যতগুলো শব্দ আল্লাহর জন্য বলা হয়ে থাকে সেগুলো তাদের আসল মৌলিক অর্থের দৃষ্টিতে বলা হয়ে থাকে, তাদের বস্তুগত অর্থের দৃষ্টিতে বলা হয় না। যেমন আমরা তাঁর জন্য দেখা শব্দটি ব্যবহার করি। এর অর্থ এ হয় না যে, তিনি মানুষ ও পশুর মতো চোখ নামক একটি অংগের মাধ্যমে দেখেন। আমরা তাঁর জন্য শোনা শব্দ ব্যবহার করি। এর মানে এ নয় যে, তিনি আমাদের মতো কানের সাহায্যে শোনেন। তাঁর জন্য আমরা পাকড়াও ধরা শব্দ ব্যবহার করি। এর অর্থ এ নয় যে, তিনি হাত নামক একটি অংগের সাহায্যে ধরেন । এসব শব্দ সবসময় তাঁর জন্য একটি প্রায়োগিক মর্যাদায় বলা হয়ে থাকে এবং একমাত্র একজন স্বল্প বুদ্ধিমান ব্যক্তিই এ ভুল ধারণা করতে পারে যে, আমাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতায় শোনা, দেখা ও ধরার যে সীমাবদ্ধ ও বিশেষ আকৃতি রয়েছে তার বাইরে এগুলোর অন্য কোন আকৃতি ও ধরন হওয়া অসম্ভব। অনুরূপভাবে ''নূর'' বা আলো সম্পর্কেও একথা মনে করা নিছক একটি সংর্কণ চিন্তা ছাড়া আর কিছুই নয় যে, এর অর্থের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র এমন রশ্মিরই আকারে পাওয়া যেতে পারে যা কোন উজ্জ্বল অবয়ব থেকে বের হয়ে এসে চোখের পরদায় প্রতিফলিত হয়। এ সীমিত অর্থে আল্লাহ আলো নন বরং ব্যাপক, সার্বিক ও আসল অর্থে আলো। অর্থাৎ এ বিশ্ব-জাহানে তিনিই এক আসল ''প্রকাশের কার্যকারণ'', বাকি সবই এখানে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই নয়। অন্যান্য আলোক বিতরণকারী জিনিসগুলোও তাঁরই দেয়া আলো থেকে আলোকিত হয় ও আলো দান করে। নয়তো তাদের কাছে নিজের এমন কিছু নেই যার সাহায্যে তারা এ ধরনের বিস্ময়কর কাণ্ড করতে পারে।
আলো শব্দের ব্যবহার জ্ঞান অর্থেও হয় এবং এর বিপরীতে অজ্ঞতা ও অজ্ঞানতাকে অন্ধকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। এ অর্থেও আল্লাহ বিশ্ব-জাহানের আলো। কেননা, এখানে সত্যের সন্ধান ও সঠিক পথের জ্ঞান একমাত্র তাঁর মাধ্যমেই এবং তার কাছ থেকেই পাওয়া যেতে পারে। তাঁর দান গ্রহণ করা ছাড়া মূর্খতা ও অজ্ঞতার অন্ধকার এবং তার ফলশ্রুতিতে ভ্রষ্টতা ও গোমরাহী ছাড়া আর কিছুই পাওয়া সম্ভব নয়।)
(১৮:১৭) তুমি যদি তাদেরকে গুহায় দেখতে, তাহলে দেখতে সূর্য উদয়ের সময় তাদের গুহা ছেড়ে ডান দিক থেকে ওঠে এবং অস্ত যাওয়ার সময় তাদেরকে এড়িয়ে বাম দিকে নেমে যায় আর তারা গুহার মধ্যে একটি বিস্তৃত জায়গায় পড়ে আছে৷ এ হচ্ছে আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন৷
(১৮:১৮) তোমরা তাদেরকে দেখে মনে করতে তারা জেগে আছে, অথচ তারা ঘুমুচ্ছিল৷ আমি তাদের ডাইনে বাঁয়ে পার্শ্ব পরিবর্তন করাচ্ছিলাম৷ এবং তাদের কুকুর গুহা মুখে সামনের দু পা ছড়িয়ে বসেছিল৷ যদি তুমি কখনো উঁকি দিয়ে তাদেরকে দেখতে তাহলে পিছন ফিরে পালাতে থাকতে এবং তাদের দৃশ্য তোমাকে আতংকিত করতো৷
(১৮:১৯) আর এমনি বিস্ময়করভাবে আমি তাদেরকে উঠিয়ে বসালাম যাতে তারা পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে৷ তাদের একজন জিজ্ঞেস করলোঃ “বলোতো, কতক্ষণ এ অবস্থায় থেকেছো ?” অন্যেরা বললো, “হয়তো একদিন বা এর থেকে কিছু কম সময় হবে৷” তারপর তারা বললো, “আল্লাহই ভালো জানেন আমাদের কতটা সময় এ অবস্থায় অতিবাহিত হয়েছে৷
(১৭:১) পবিত্র তিনি যিনি নিয়ে গেছেন এক রাতে নিজের বান্দাকে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আক্সা পর্যন্ত, যার পরিবেশকে তিনি বরকতময় করেছেন, যাতে তাকে নিজের কিছু নিদর্শন দেখান৷
(১৭:১০১) আমি মূসাকে নয়টি নিদর্শন দিয়েছিলাম, সেগুলো সুস্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল৷ এখন নিজেরাই তোমরা বনী ইসরাঈলকে জিজ্ঞেস করে দেখে নাও যখন সেগুলো তাদের সামনে এলো তখন ফেরাউন তো একথাই বলেছিল, “হে মূসা ! আমার মতে তুমি অবশ্যই একজন যাদুগ্রস্ত ব্যক্তি৷
(২৬.শুআরা:৪) আমি চাইলে আকাশ থেকে এমন নিদর্শন অবতীর্ণ করতে পারতাম যার ফলে তাদের ঘাড় তার সামনে নত হয়ে যেতো৷
দেখুন : ঈ > ঈমান > জোর পূর্বক ঈমান গ্রহণ করানো আল্লাহর রীতি নয় ।
(২৬.শুআরা:১৯৮) (কিন্তু এদের হঠকারিতা ও গোয়ার্তুমি এতদূর গড়িয়েছে যে) যদি আমি এটা কোন অনারব ব্যক্তির উপর নাযিল করে দিতাম ১৯৯) এবং সে এই (প্রাঞ্জল আরবীয় বাণী) তাদেরকে পড়ে শোনাত তবুও এরা মেনে নিত না৷
বিস্তারিত দেখুন : ব > বাহানা > ঈমান না আনার জন্য বাহানার অনুসরণ ।
ولو نزَّلنا عليك كتابا فى قرطاسٍ فلمسوه بِايْديهم لَقَالَ الَّذِين كفروا ان هذا الاَّ سحرٌ مُّبِيْنٌ-
"যদি আমি তোমাদের ওপর কোন কাগজে লেখা কিতাব নাযিল করে দিতাম এবং এরা হাত দিয়ে তা ছুঁয়েও দেখে নিতো, তাহলেও যাদের না মানার তারা বলতো, এতো পরিষ্কার যাদু।" (আল আনআমঃ ৭ আয়াত)
ولو فتحنا عليهم بابا من السَّمَاء فظلُّوا فيه يَعرجون لقالَوا انَّما سُكِّرت ابصارنا بل نحن قَومٌ مَّسحورون-
"আর যদি আমি তাদের ওপর আকাশের কোন দরজাও খুলে দিতাম এবং তারা তার মধ্যে চড়ে থাকতো, তাহলে তারা বলতো আমাদের চোখ প্রতারিত হচ্ছে বরং আমাদের ওপর যাদু করা হয়েছে।" (আল হিজরঃ ১৪-১৫)
(৩৪-সাবা: ৯) তারা কি কখনো আকাশ ও পৃথিবী দেখেনি যা তাদেরকে সামনে এবং পেছনে থেকে ঘিরে রেখেছে ? আমি চাইলে তাদেরকে যমীনে ধসিয়ে দিতে অথবা আকাশের কিছু অংশ তাদের ওপর নিক্ষেপ করতে পারি ৷১২ আসলে তার মধ্যে রয়েছে একটি নির্দশন এমন প্রত্যেক বান্দার জন্য যে আল্লাহ অভিমুখী হয় ৷১৩
১৩. অর্থাৎ যে ব্যক্তি কোন ধরেনের বিদ্বেষ ও অন্ধ স্বার্থপ্রীতি দুষ্ট নয়, যার মধ্যে কোন জিদ ও হঠকারিতা নেই বরং যে আন্তরিকতা সহকারে তার মহান প্রতিপালকের কাছে পথনিদের্শনার প্রত্যাশী হয়, সে তো আকাশ ও পৃথিবীর এ ব্যবস্থা দেখে বড় রকমের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু যার মন আল্লাহর প্রতি বিমুখ সে বিশ্ব- জাহানে সবকিছু দেখবে তবে প্রকৃত সত্যের প্রতি ইংগিতকারী কোন নিদর্শন সে অনুভব করবে না।
(১৮:১০৫) এরা এমন সব লোক যারা নিজেদের রবের নিদর্শনাবলী মেনে নিতে অস্বীকার করেছে এবং তাঁর সামনে হাযির হবার ব্যাপারটি বিশ্বাস করেনি৷ তাই তাদের সমস্ত কর্ম নষ্ট হয়ে গেছে, কিয়ামতের দিন তাদেরকে কোনো গুরুত্ব দেবো না৷
(১৮:৯) তুমি কি মনে করো গূহা ও ফলক ওয়ালারা আমার বিস্ময়কর নিদর্শনাবলীর অন্তরভুক্ত ছিলো ?
(ব্যাখ্যা : যিনি এ ভূ পৃষ্ঠ সৌরজগৎ চন্দ্র সূর্য সৃষ্টি করেছেন, এ মানব দানব সব কিছু যার সৃষ্টি সেই আল্লাহর পক্ষে কয়েকজন যুবককে দু তিনশ বছর ঘুম পাড়িয়ে রাখা এবং এরপর জাগিয়ে দেয়া কোন বিশ্ময়কর ব্যাপার নয়, বিস্তারিত দেখুন : গ > গুহাবাসীদের ঘটনা ) ।
(১৬:৩৩) হে মুহাম্মদ ! এখন যে এরা অপেক্ষা করছে, এ ক্ষেত্রে এখন ফেরেশতাদের এসে যাওয়া অথবা তোমার রবের ফায়সালা প্রকাশিত হওয়া ছাড়া আর কী বাকি রয়ে গেছে ? এ ধরনের হঠকারিতা এদের আগে আরো অনেক লোক করেছে৷ তারপর তাদের সাথে যা কিছু হয়েছে তা তাদের ওপর আল্লাহর জুলুম ছিল না বরং তাদের নিজেদেরই জুলুম ছিল যা তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর করেছিল৷
(ব্যাখ্যা :উপদেশ ও সতর্কবাণী হিসেবে একথা কয়টি বলা হচ্ছে । এর অর্থ হচ্ছে, যতদূর বুঝাবার ব্যাপার ছিল তুমি তো প্রত্যেকটি সত্যকে উন্মুক্ত করে বুঝিয়ে দিয়েছো । যুক্তির সাহায্যে তার সত্যতা প্রমাণ করে দিয়েছো । বিশ্বজাহানের সমগ্র ব্যবস্থা থেকে এর পক্ষে সাক্ষ উপস্থাপন করেছে । কোন বিবেক - বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তির জন্য শিরকের ওপর অবিচল থাকার কোন অবকাশই রাখোনি । এখন এরাই একটি সরল সোজা কথা মেনে নেবার ব্যাপারে ইতস্তত করছে কেন ৷ এরা কি মউতের ফেরেশতার অপেক্ষায় আছে ৷ এ ফেরেশতা সামনে এসে গেলে তখন জীবনের শেষ মুহূর্তে কি এরা তা মেনে নেবে ৷ অথবা আল্লাহর আযাব সামনে এসে গেলে তার প্রথম আঘাতের পর তা মেনে নেবে ৷ )
.
(১১:৩১) আমি তোমাদের একথা বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ধনভাণ্ডার আছে৷ একথাও বলি না যে, আমি অদৃশ্যের জ্ঞান রাখি এবং আমি ফেরেশ্তা এ দাবীও করি না৷ আর আমি একথাও বলতে পারি না যে, তোমরা যাদেরকে অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখো তাদেরকে আল্লাহ কখনো কোন কল্যাণ দান করবেন না৷ তাদের মনের অবস্থা আল্লাহই ভালো জানেন৷ যদি আমি এমনটি বলি তাহলে আমি হবো জালেম” ।
(২৮-ক্বাছাছ : ৩২) তোমার হাত বগলে রাখো উজ্জল হয়ে বের হয়ে আসবে কোন প্রকার কষ্ট ছাড়াই৷ ৪৪ এবং ভীতিমুক্ত হবার জন্য নিজের হাত দু'টি চেপে ধরো৷ ৪৫ এ দু'টি উজ্জল নিদর্শন তোমার রবের পক্ষ থেকে ফেরাউন ও তার সভাসদদের সামনে পেশ করার জন্য, তারা বড়ই নাফরমান৷" ৪৬
৪৪. এ মু'জিযা দু'টি তখন মূসাকে দেখানোর কারণ হচ্ছে, প্রথমত যাতে তার মনে পূর্ণ বিশ্বাস জন্মে যে প্রকৃতপক্ষে যে সত্তা বিশ্ব-জাহানের সমগ্র ব্যবস্থার স্রষ্টা , অধিপতি , শাসক ও পরিচালক তিনিই তাঁর সাথে কথা বলছেন। দ্বিতীয়ত এ মু'জিযাগুলো দেখে তিনি এ মর্মে নিশ্চিন্ত হয়ে যাবেন যে, তাঁকে ফেরাউনের কাছে যে ভয়াবহ দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হচ্ছে সেখানে তিনি একেবারে খালি হাতে তার মুখোমুখি হবেন না বরং প্রচণ্ড শক্তিশালী অস্ত্র নিয়ে যাবেন।
৪৫. অর্থাৎ যখন কোন ভয়াবহ মুহূর্ত আসে, যার ফলে তোমার মনে ভীতির সঞ্চার হয় তখন নিজের বাহু চেপে ধরো। এর ফলে তোমার মন শক্তিশালী হবে এবং ভীতি ও আশংকার কোন রেশই তোমার মধ্যে থাকবে না।
বাহু বা হাত বলতে সম্ভবত ডান হাত বুঝানো হয়েছে। কারন সাধারনভাবে হাত বললে ডান হাতই বুঝানো হয়। চেপে ধরা দু'রকম হতে পারে। এক, হাত পার্শ্বদেশের সাথে লাপিয়ে চাপ দেওয়া। দুই, এক হাতকে অন্য হাতের বগলের মধ্যে রেখে চাপ দেয়া। এখানে প্রথম অবস্থাটি প্রযোজ্য হবার সম্ভাবনা বেশি। কারন এ অবস্থায় অন্য কোন ব্যক্তি অনুভব করতে পারবে না যে, এ ব্যক্তি মনের ভয় দূর করার জন্য কোন বিশেষ কাজ করছে।
হযরত মূসাকে যেহেতু একটি জালেম সরকারের মোকাবিলা করার জন্য কোন সৈন্য সামন্ত ও পার্থিব সাজ-সরঞ্জাম ছাড়াই পাঠানো হচ্ছিলো তাই তাকে এ ব্যবস্থা অবলম্বন করতে বলা হয়। বার বার এমন ভয়ানক ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিলো যাতে একজন মহান দৃঢ়চেতা নবীও আতংকমুক্ত থাকতে পারতেন না। মহান আল্লাহ বলেন, এ ধরনের কোন অবস্থা দেখা দিলে তুমি স্রেফ এ কাজটি করো, ফেরাউন তার সমগ্র রাষ্ট্রশক্তি ব্যবহার করেও তোমার মনের জোর শিথিল করতে পারবে না।
৪৬. এ শব্দগুলোর মধ্যে এ বক্তব্য নিহিত রয়েছে যে, এ নিদর্শনগুলো নিয়ে ফেরাউনের কাছে যাও এবং আল্লাহর রসূল হিসেবে নিজেকে পেশ করে তাকে ও তার রাষ্ট্রীয় প্রশাসকবৃন্দকে আল্লাহ রব্বুল আলামীনের আনুগত্য ও বন্দেগীর দিকে আহবান জানাও। তাই এখানে তাঁর ও নিযুক্তির বিষয়টি সুস্পষ্ট ও বিস্তারিত বলা হয়নি। তবে কুরআনের অন্যান্য স্থানে এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন সূরা ত্ব-হা ও সূরা নাযি'আতে বলা হয়েছে -------------------- ফেরাউনের কাছে যাও, সে বিদ্রোহী হয়ে গেছে"
সূরা আশ শূরায় বলা হয়েছে :
"যখন তোমার রব মূসাকে ডেকে বললেন, যাও জালেম জাতির কাছে, ফেরাউনের জাতির কাছে।"
তারা মূসাকে বললোঃ আমাদের যাদু করার জন্যে তুমি যে কোন নিদর্শনই আনো না কেন, আমরা তোমার কথা মেনে নেবো না-৭:১৩২
(ফেরাউনের সভাসদরা এমন একটি জিনিসকে যাদু গণ্য করছিল, যে সম্পর্কে তারা নিজেরাও নিশ্চিতভাবে জানতো যে, তা যাদুর ফল হতে পারে না। এটা তাদের চরম হঠকারীতা ও বাগড়ম্বর ছাড়া আর কিছুই ছিল না। একটি দেশের সমগ্র এলাকায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়া এবং একনাগাড়ে কয়েক বছর কম ফসল উৎপাদন ও ফসলহানি হওয়া কোন যাদুর কারসাজি হতে পারে বলে সম্ভবত কোন নির্বোধ ও বিশ্বাস করবে না। এ জন্যেই কুরআন মজীদে বলছেঃ "যখন আমার নিদর্শনসমূহ প্রকশ্যের তাদের দৃষ্টি সমক্ষে এসে গেলো তখন তারা বললো, এটা তো সুষ্পষ্ট যাদু। অথচ তাদের মন ভিতর থেকে স্বীকার করে নিয়েছিল, কিন্তু তারা নিছক জুলুম ও বিদ্রোহের কারণে তা অস্বীকার করলো"। (আন নামল ১৩-১৪আয়াত।) যখনই তাদের ওপর বিপদ আসতো তারা বলতোঃ হে মূসা ! তোমার রবের কাছে তুমি যে মর্যাদার অধিকারী তার ভিত্তিতে তুমি আমাদের জন্য দোয়া করো৷ যদি এবার তুমি আমাদের ওপর থেকে ও দুর্যোগ হটিয়ে দাও, তাহলে আমরা তোমার কথা মেনে নেবো এবং বনী ইসরাঈলকে তোমার সাথে পাঠিয়ে দেবো৷ -৭:১৩৪,
(২৬.শুআরা:৬৭) এ ঘটনার মধ্যে আছে একটি নিদর্শন৷ কিন্তু এদের অধিকাংশ মান্যকারী নয়৷
(অর্থাৎ কুরাইশদের জন্য রয়েছে এর মধ্যে শিক্ষা । এ শিক্ষাটি হচ্ছেঃ হঠকারী লোকেরা প্রকাশ্য ও সুস্পষ্ট মু'জিযা সমূহ দেখেও কিভাবে ঈমান আনতে অস্বীকার করে যেতে থাকে এবং তারপর এ হঠকারিতার ফল কেমন ভয়াবহ হয়। ফেরাউন ও তার জাতির সমস্ত সরদার ও হাজার হাজার সেনার চোখে এমন পট্টি বাঁধা ছিল যে, বছরের পর বছর ধরে যেসব নিদর্শন তাদেরকে দেখিয়ে আসা হয়েছে সেগুলো তারা উপেক্ষা করে এসেছে , সবশেষে পানিতে ডুবে যাবার সময়ও তারা একথা বুঝলো না যে, সমুদ্র ঐ কাফেলার জন্য ফাঁক হয়ে গেছে , পানি পাহাড়ের মতো দু'দিকে খাড়া হয়ে আছে এবং মাঝখানে শুকনা রাস্তা তৈরী হয়ে গেছে। এ সুস্পষ্ট নিদর্শন দেখেও তাদের জ্ঞানোদয় হলো না যে, মূসা আলাইহিস সালামের সাথে আল্লাহর সাহায্য রয়েছে এবং এহেন শক্তির সাথে তারা লড়াই করতে যাচ্ছে। তাদের চেতনা জাগ্রত হলো এমন এক সময় যখন পানি দু'দিক থেকে তাদেরকে চেপে ধরেছিল এবং তারা আল্লাহর গযবের মধ্যে ঘেরাও হয়ে গিয়েছিল। সে সময় ফেরাউন চিৎকার করে উঠলঃ
-----------------------------------------
"আমি ঈমান আনলান এই মর্মে যে,বনী ইসরাইল যে আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই এবং আমি মুসলমানদের অন্তরভুক্ত ।"(ইউনুস ৯০ আয়াত)
অন্যদিকে ঈমানদারদের জন্যও এর মধ্যে রয়েছে নিদর্শন। সেটি হচ্ছে, জুলুম ও তার শক্তিগুলো বাহ্যত যতই সর্বব্যাপী ও সর্বগ্রাসী হয়ে দেখা দিক না কেন শেষ পর্যন্ত আল্লাহর সাহায্য-সহায়তায় সত্য এভাবেই বিজয়ী এবং মিথ্যার শির এভাবেই নত হয়ে যায়।)
(১0:১০১) তাদেরকে বলো, “পৃথিবী ও আকাশে যা কিছু আছে চোখ মেলে দেখো”৷ আর যারা ঈমান আনতেই চায় না তাদের জন্য নির্দশন ও উপদেশ তিরষ্কার কী ইবা উপকারে আসতে পারে৷(10:101)
দেখুন : ভ > ভবিষ্যত বানী।
(১০-ইউনুস:১০১) তাদেরকে বলো, “পৃথিবী ও আকাশে যা কিছু আছে চোখ মেলে দেখো”৷ আর যারা ঈমান আনতেই চায় না তাদের জন্য নির্দশন ও উপদেশ তিরষ্কার কীইবা উপকারে আসতে পারে৷ ১০৫
১০৫ . ঈমান আনার জন্য তারা যে দাবীটিকে শর্ত হিসেবে পেশ করতো এটি হচ্ছে তার শেষ ও চুড়ান্ত জবাব। তাদের এ দাবীটি ছিল, আমাদের এমন কোন নিদর্শন দেখাও যার ফলে তোমার নবুওয়াতকে আমরা সত্য বলে বিশ্বাস করতে পারি। এর জবাবে বলা হচ্ছে যদি তোমাদের মধ্যে সত্যের আকাংখা এবং সত্য গ্রহণ করার আগ্রহ থাকে তাহলে পৃথিবী ও আকাশের চারদিকে যে অসংখ্য নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে এগুলো মুহাম্মাদের বাণীর সত্যতার ব্যাপারে তোমাদের নিশ্চিন্ত করার জন্য শুধু যথেষ্ট নয় বরং তার চাইতেও বেশী। শুধুমাত্র চোখ খুলে সেগুলো দেখার প্রয়োজন। কিন্তু যদি এ চাহিদা ও আগ্রহই তোমাদের মধ্যে না থাকে, তাহলে অন্য কোন নিদর্শন তা যতই অলৌকিক ,অটল ও চিরন্তন রীতি ভংগকারী এবং বিস্মকর ও অত্যাশ্চর্য হোক না কেন,তোমাদেরকে ঈমানের নিয়ামত দান করতে পারে না। প্রত্যেকটি মুজিযা দেখে তোমরা ফেরাউন ও তার কওমের সরদারদের মতই বলবে, এ তো যাদু ছাড়া আর কিছুই নয়। এ রোগে যারা আক্রন্ত হয় তাদের চোখ কেবলমাত্র তখনই খুলে থাকে যখন ক্রোধ, রোষাবহ্নি ও গযব তার বিভীষিকাময় কঠোরতা সহকারে তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। >(১০-ইউনুস:১০২) এখন তারা এছাড়া আর কিসের প্রতীক্ষায় আছে যে, তাদের আগে চলে যাওয়া লোকেরা যে দুঃসময় দেখেছে তারাও তাই দেখবে? তাদেরকে বলো, “ঠিক আছে, অপেক্ষা করো৷ আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষা করছি”৷
(২৮-ক্বাছাছ : ৪৮) কিন্তু যখন আমার কাছ থেকে সত্য তাদের কাছে পৌঁছে গেলো তখন তারা বলতে লাগলো, মূসাকে যা দেয়া হয়েছিল কেন তাকে সে সব দেয়া হলো না?৬৭ এর আগে মূসাকে যা দেয়া হয়েছিল তা কি তারা অস্বীকার করেনি?৬৮ তারা বললো, "দু'টোই যাদু,৬৯ যা একে অন্যকে সাহায্য করে৷" আর বললো, "আমরা কোনটাই মানি না৷"
৬৭. অর্থাৎ হযরত মূসাকে (আ) যেসব মু'জিযা দেয়া হয়েছিল হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সে সবগুলো দেয়া হলো না কেন৷ ইনিও লাঠিকে সাপ বানিয়ে আমাদের দেখাতেন। এঁর হাতও বগল থেকে বের করার পর সূর্যের মত উজ্জ্বল বিকিরণ করতো। এঁর ইশারায়ও অস্বীকারকারীদের উপর একের পর এক তুফান এবং আকাশ ও পৃথিবীর বালা-মুসীবত নাযিল হতো। ইনিও পাথরের গায়ে লিখিত বিধান এনে আমাদের দিতেন।
৬৮. এ হচ্ছে তাদের অভিযোগের জবাব। এর অর্থ হচ্ছে মুজিজা সত্ত্বেও তোমরা কি মূসা (আঃ) প্রতি ঈমান এনেছিলে৷ তাহলে আজ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লামের কাছে সেগুলোর দাবী করছো কেন৷ তোমরা নিজেরাই বলছো, মূসাকে এসব মুজিজা দেয়া হয়েছিল কিন্তু তার পরও তোমরা তাকে নবী বলে মেনে নিয়ে কোনদিন তার আনুগত্য গ্রহণ করোনি। সূরা সাবার ৩১ আয়াতেও মক্কার কাফেরদের এ উক্তি উদ্বৃত করা হয়েছেঃ "আমরা এই কুরআনও মানবো না, এর আগের কিতাবগুলোকেও মানবো না।"
৬৯. অর্থাৎ কুরআন ও তাওরাত।
(১৭:৫৯) আর এদের পূর্ববর্তী লোকেরা নিদর্শনসমূহ অস্বীকার করেছে বলেই তো আমি নিদর্শন পাঠানো থেকে বিরত রয়েছি৷
(১০:৭৬) পরে যখন আমার কাছ থেকে সত্য তাদের সামনে আসে, তারা বলে দেয়, এ তো সুষ্পষ্ট যাদু-১০:৭৬,
(১৭:১০১) আমি মূসাকে নয়টি নিদর্শন দিয়েছিলাম, সেগুলো সুস্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল৷ এখন নিজেরাই তোমরা বনী ইসরাঈলকে জিজ্ঞেস করে দেখে নাও যখন সেগুলো তাদের সামনে এলো তখন ফেরাউন তো একথাই বলেছিল, “হে মূসা ! আমার মতে তুমি অবশ্যই একজন যাদুগ্রস্ত ব্যক্তি৷
(১৫:১৪) যদি আমি তাদের সামনে আকাশের কোনো দরজা খুলে দিতাম এবং তারা দিন দুপুরে তাতে আরোহণও করতে থাকতো৷১৫) তবুও তারা একথাই বলতো, আমাদের দৃষ্টি বিভ্রম হচ্ছে বরং আমাদের ওপর যাদু করা হয়েছে৷
(২৯-আনকাবুত:৫০) এরা বলে “ কেনই বা এই ব্যক্তির ওপর নিদর্শনাবলী অবর্তীর্ণ করা হয়নি এর রবের পক্ষ থেকে?” বলো, “নিদর্শনাবলী তো রয়েছে আল্লাহর কাছে এবং আমি কেবলমাত্র পরিষ্কারভাবে সতর্ককারী ৷” ৫১) আর এদের জন্য কি এ (নিদর্শন ) যথেষ্ঠ নয় যে, আমি তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি, যা তাদেরকে পড়ে শুনানো হয়? আসলে যারা ঈমান আনে তাদের জন্য এর মধ্যে রয়েছে রহমত ও নসিহত৷
৯০ . অর্থাৎ মু'জিযা, যেগুলো দেখে বিশ্বাস করা যায় সত্যই মুহাম্মদ (সা) আল্লাহর নবী।
৯১ . অর্থাৎ নিরক্ষর হওয়া সত্ত্বেও তোমাদের প্রতি কুরআনের মতো একটি কিতাব নাযিল হওয়া, এটি তোমাদের রিসালাতে বিশ্বাস স্থাপন করার জন্য যথেষ্ঠ হবার মতো বড় মু'জিযা নয় কি ৷ এর পরও কি আর কোন মু'জিযা থাকে ৷ অন্য মু'জিযাগুলোতো যারা দেখেছে তাদের জন্য মু'জিযা ছিল কিন্তু এ মু'জিযাটি তো সর্বক্ষণ তোমাদের সামনে রয়েছে, প্রতিদিন তোমাদের পড়ে শুনানো হচ্ছে। তোমরা সবসময় তা দেখতে পারো।
(বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য দেখুন : ম > মু’জিযা > কুরআনই হচ্ছে সবচেয়ে বড় মু’জিযা। এবং আরো দেখুন : ন > নিরক্ষর > মুহাম্মদ সা: কি সত্যিই নিরক্ষর ছিলেন ? )
(১৮:১০৬) যে কুফরী তারা করেছে তার প্রতিফল স্বরূপ এবং আমার নিদর্শনাবলী ও রসূলদের সাথে যে বিদ্রূপ তারা করতো তার প্রতিফল হিসেবে তাদের প্রতিদান জাহান্নাম৷
(১৭:৯০) তারা বলে, “আমরা তোমার কথা মানবো না যতক্ষণ না তুমি ভূমি বিদীর্ণ করে আমাদের জন্য একটি ঝরণাধারা উৎসারিত করে দেবে৷ ৯১) অথবা তোমার খেজুর ও আংগুরের একটি বাগান হবে এবং তুমি তার মধ্যে প্রবাহিত করে দেবে নদী-নালা৷৯২) অথবা তুমি আকাশ ভেংগে টুকরো টুকরো করে তোমার হুমকি অনুযায়ী আমাদের ওপর ফেলে দেবে৷ অথবা আল্লাহ ও ফেরেশতাদেরকে আমাদের সামনে নিয়ে আসবে৷৯৩) অথবা তোমার জন্য সোনার একটি ঘর তৈরি হবে৷ অথবা তুমি আকাশে আরোহণ করবে এবং তোমার আরোহণ করার কথাও আমরা বিশ্বাস করবো না যতক্ষণ না তুমি আমাদের প্রতি একটি লিখিত পত্র আনবে, যা আমরা পড়বো৷” হে মুহাম্মাদ ! এদেরকে বলো, পাক-পবিত্র আমার পরওয়ারদিগার, আমি কি একজন বাণীবাহক মানুষ ছাড়া অন্য কিছু
আর এই যে তারা বলে যে, এ নবীর প্রতি তার রবের পক্ষ থেকে কোন নির্দশন অবতির্ণ করা হয়নি কেন? এর জবাবে তুমি তাদেরকে বলে দাও, “গায়েবের মালিক তো একমাত্র আল্লাহ, ঠিক আছে, তোমরা অপেক্ষা করো, আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষা করবো” -১০:২০, (কেননা রাসূল সা: এর ব্যক্তিত্ব ও কুরআনই ছিল সবচেয়ে বড় মু’জেযা -১০:১৬, ৭:২০৩),
(১৩:৭) যারা তোমার কথা মেনে নিতে অস্বীকার করেছে তারা বলে, “এ ব্যক্তির ওপর এর রবের পক্ষ থেকে কোন নিদর্শন অবতীর্ণ হয়নি কেন ?”- তুমি তো শুধুমাত্র একজন সতর্ককারী, আর প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর জন্য রয়েছে একজন পথপ্রদর্শক৷
ঠিক আছে তাহলে আনো কোন সুস্পষ্ট প্রমাণ৷-১৪:১০,
(১১:১২) কাজেই হে নবী এমন যেন না হয়, তোমার প্রতি যে জিনিসের অহি করা হচ্ছে তুমি তার মধ্য থেকে কোন জিনিস (বর্ণনা করা) বাদ দেবে এবং একথায় তোমার মন সংকুচিত হবে এজন্য যে, তারা বলবে, “এ ব্যক্তির ওপর কোন ধনভাণ্ডার অবতীর্ণ হয়নি কেন” অথবা “এর সাথে কোন ফেরেশতা আসেনি কেন ?” তুমি তো নিছক সতর্ককারী৷ এরপর আল্লাহই সব কাজের ব্যবস্থাপক৷
(১১:৫৩) তারা জবাব দিলঃ “হে হূদ! তুমি আমাদের কাছে কোন সুস্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে আসোনি৷ তোমার কথায় আমরা আমাদের মাবুদদেরকে ত্যাগ করতে পারি না৷ আমরা তোমার প্রতি ঈমান আনছি না৷
(২৮-ক্বাছাছ : ৩৬) তারপর মূসা যখন তাদের কাছে আমার সুস্পষ্ট নিদর্শনগুলো নিয়ে পৌঁছুলো তখন তারা বললো, এসব বানোয়াট যাদু ছাড়া আর কিছুই নয়৷ আর এসব কথা তো আমরা আমাদের বাপ দাদার কালে কখনো শুনিনি৷৩৭) মূসা জবাব দিল, "আমার রব তার অবস্থা ভালো জানেন, যে তার পক্ষ থেকে পথ নির্দেশনা নিয়ে এসেছে এবং কার শেষ পরিণতি ভালো হবে তাও তিনিই ভালো জানেন, আসলে জালেম কখনো সফলকাম হয় না৷"
(১৩:৩১) আর কী হতো, যদি এমন কোন কুরআন নাযিল করা হতো যার শক্তিতে পাহাড় চলতে থাকতো অথবা পৃথিবী বিদীর্ণ হতো কিংবা মৃত কবর থেকে বের হয়ে কথা বলতে থাকতো ?”
(১৫:১৪) যদি আমি তাদের সামনে আকাশের কোনো দরজা খুলে দিতাম এবং তারা দিন দুপুরে তাতে আরোহণও করতে থাকতো৷১৫) তবুও তারা একথাই বলতো, আমাদের দৃষ্টি বিভ্রম হচ্ছে বরং আমাদের ওপর যাদু করা হয়েছে৷
(২৬.শুআরা:৪) আমি চাইলে আকাশ থেকে এমন নিদর্শন অবতীর্ণ করতে পারতাম যার ফলে তাদের ঘাড় তার সামনে নত হয়ে যেতো৷
দেখুন : ঈ > ঈমান > জোর পূর্বক ঈমান গ্রহণ করানো আল্লাহর রীতি নয় ।
(১৭:৯২) অথবা তুমি আকাশ ভেংগে টুকরো টুকরো করে তোমার হুমকি অনুযায়ী আমাদের ওপর ফেলে দেবে৷ অথবা আল্লাহ ও ফেরেশতাদেরকে আমাদের সামনে নিয়ে আসবে৷
(২৬.শুআরা:১৮৭) যদি তুমি সত্যবাদী হও তাহলে আকাশের একটি টুকরো ভেঙ্গে আমাদের ওপর ফেলে দাও৷”
আর তোমাদের কোন প্রমাণ এনে দেবো, এ ক্ষমতা আমাদের নেই৷ প্রমাণ তো আল্লাহরই অনুমতিক্রমে আসতে পারে এবং ঈমানদারদের আল্লাহরই ওপর ভরসা রাখা উচিত৷ -১৪:১১,
প্রমাণ তো আল্লাহরই অনুমতিক্রমে আসতে পারে -১৪:১১,
(১৭:১০২) মূসা এর জবাবে বললো, “তুমি খুব ভাল করেই জানো এ প্রজ্ঞাময় নিদর্শনগুলো আকাশ ও পৃথিবীর রব ছাড়া আর কেউ নাযিল করেননি
দেখুন : ক > কারামত।
(১৭:৫৯) আর এদের পূর্ববর্তী লোকেরা নিদর্শনসমূহ অস্বীকার করেছে বলেই তো আমি নিদর্শন পাঠানো থেকে বিরত রয়েছি৷ (যেমন দেখে নাও) সামূদকে আমি প্রকাশ্যে উটনী এনে দিলাম এবং তারা তার ওপর জুলুম করলো৷ আমি নিদর্শন তো এজন্য পাঠাই যাতে লোকেরা তা দেখে ভয় পায়৷
(২৭-নমল:১৩) কিন্তু যখন আমার সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ তাদের সামনে এসে গেলো তখন তারা বলল, এতো সুস্পষ্ট যাদু৷
মুসা বললো, সত্য, যখন তোমাদের সামনে এলো তখন তোমরা তার সম্পর্কে এমন (কথা) বলছো? এ কি যাদু ? অথচ যাদুকর সফলকাম হয় না৷-১০:৭৭,
(২০:৬৯) ছুঁড়ে দাও তোমার হাতে যাকিছু আছে, এখনি এদের সব বানোয়াট জিনিসগুলোকে গ্রাস করে ফেলবে, এরা যাকিছু বানিয়ে এনেছে এতো যাদুকরের প্রতারণা এবং যাদুকর যেভাবেই আসুক না কেন কখনো সফল হতে পারে না”৷
(২০:৭০) শেষ পর্যন্ত এই হলো যে, সমস্ত যাদুকরকে সিজদাবনত করে দেয়া হলো এবং তারা বলে উঠলোঃ “আমরা মেনে নিলাম হারুন ও মূসার রবকে”৷
(এর মানে হচ্ছে, সেখানে সবাই জানতো কিসের ভিত্তিতে প্রতিযোগিতা হচ্ছে। সমগ্র জনসমাবেশে একজন ও এ ভুল ধারণা পোষণ করতো না যে, মূসার ও যাদুকরদের কলাকৌশলের মধ্যে প্রতিযোগিতা হচ্ছে এবং কার কৌশল শক্তিশালী সেটিই এখন দেখার বিষয়। সবাই জানতো, একদিকে মূসা নিজেকে আকাশ ও পৃথিবীর স্রষ্টা আল্লাহর নবী হিসেবে পেশ করছেন এবং নিজের নবুওয়াতের প্রমাণ স্বরূপ দাবী করছেন যে, তাঁর লাঠি অলৌকিকভাবে অজগরে পরিণত হয়। অন্যদিকে যাদুকরদেরকে জনসমক্ষে আহ্বান করে ফেরাউন একথা প্রমাণ করতে চায় যে, লাঠির অজগরে হওয়া অলৌকিক কর্ম নয় বরং নিছক যাদুর তেলেসমাতি। অন্যকথায়, সেখানে ফেরাউন ও যাদুকর এবং সাধারণ অসাধারণ নির্বিশেষে সমগ্র দর্শকমণ্ডলী মু'জিযা ও যাদুর পার্থক্য অবগত ছিল। কাজেই সেখানে এ মর্মে পরীক্ষা চলছিল যে, মূসা যা কিছু দেখাচ্ছেন তা যাদুর পর্যায়ভুক্ত, না রব্বুল আলামীনের অসীম ক্ষমতা ছাড়া অন্য কোন ক্ষমতার সাহয্যে যে মু'জিযা দেখানো যেতে পারে না তার পর্যায়ভুক্ত৷ এ কারণে যাদুকররা নিজেদের যাদুকে পরাভূত হতে দেখে একথা বলেনি, আমরা মেনে নিলাম, মূসা আমাদের চাইতে বড় যাদুকর। বরং সংগে সংগেই তাদের বিশ্বাস জন্মে গেছে যে, মুসা যথার্থই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সাচ্চা পয়গম্বর। তারা চিৎকার করে বলে উঠেছে, আমরা সে আল্লাহকে মেনে নিয়েছি, যার পয়গম্বর হিসেবে মূসা ও হারুন এসেছেন।
এ থেকে সাধারণ জন সমাবেশে এ পরাজয়ের কি প্রভাব পড়ে থাকবে এবং সারা দেশবাসী এর দ্বারা কি সাংঘাতিকভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকবে তা অনুমান করা যেতে পারে। ফেরাউন দেশের সবচেয়ে বড় কেন্দ্রীয় মেলায় এ প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান করেছিল এ আশায় যে, মিশরের সব এলাকা থেকে আগত লোকেরা স্বচক্ষে দেখে নেবে লাঠি দিয়ে সাপ তৈরী করা মূসার একার কোন অভিনব কৃতিত্ব নয়, প্রত্যেক যাদুকরই এটা করতে পারে। ফলে মূসার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাবে। কিন্তু তার এ কৌশলের ফাঁদে সে নিজেই আটকে গেছে এবং গ্রাম গ্রামান্তর থেকে আগত লোকদের সামনে যাদুকররাই একযোগে একথার সত্যতা প্রকাশ করেছে যে, মূসা যা কিছু দেখাচ্ছেন তা যাদু নয়, তা হচ্ছে মূলত মু'জিযা। কেবলমাত্র আল্লাহর নবীগণই এ মু'জিযা দেখাতে পারেন।)
রাসুলগণ সুষ্পষ্ট নিদর্শন সহ আগমন করেন : ৯:৭০, ১০:১৩, আর অপরাধীদের কাছে যতই বিরক্তিকর হোক না কেন আল্লাহ তার ফরমানের সাহায্যে সত্যকে সত্য করেই দেখিয়ে দেন৷-১০:৮২,
(১১:৩৭) এবং আমার তত্ত্বাবধানে আমার অহী অনুযায়ী একটি নৌকা বানানো শুরু করে দাও৷ আর দেখো যারা জুলুম করেছে তাদের জন্য আমার কাছে কোন সুপারিশ করো না, এরা সবাই এখন ডুবে যাবে৷
(১১:৬৪) আর হে আমার কওমের লোকরা! দেখো, এ আল্লাহর উটনীটি তোমাদের জন্য একটি নিদর্শন৷ একে আল্লাহর যমীনে স্বাধীনভাবে চরে চেড়াবার জন্য ছেড়ে দাও৷ একে পীড়া দিয়ো না৷ অন্যথায় তোমাদের ওপর আল্লাহর আযাব আসতে বেশী দেরী হবে না৷”
(১১:৬৫) কিন্তু তারা উটনীটিকে মেরে ফেললো৷ এর ফলে সালেহ তাদরেকে সাবধান করে দিলো এই বলে, “ব্যাস, আর তিন দিন তোমাদের গৃহে অবস্থান করে নাও৷ এটি এমন একটি মেয়াদ, যা মিথ্যা প্রমাণিত হবে না৷”
(১৯:৮) সে বললো, “হে আমার রব! আমার ছেলে হবে কেমন করে যখন আমার স্ত্রী বন্ধ্যা এবং আমি বুড়ো হয়ে শুকিয়ে গেছি?”৯) জবাব এলো, ”এমনটিই হবে” তোমার রব বলেন, এ তো আমার জন্য সামান্য ব্যাপার মাত্র, এর আগে আমি তোমাকে সৃষ্টি করেছি যখন তুমি কিছুই ছিলে না।
(১৯:২০) মারয়াম বললো, “আমার পুত্র হবে কেমন করে যখন কোন পুরুষ আমাকে স্পর্শও করেনি এবং আমি ব্যভিচারিনীও নই?” ২১) ফেরেশতা বললো, “এমনটিই হবে, তোমার রব বলেন, এমনটি করা আমার জন্য অতি সহজ আর আমি এটা এ জন্য করবো যে, এই ছেলেকে আমি লোকদের জন্য একটি নির্দশন ও নিজের পক্ষ থেকে একটি অনুগ্রহে পরিণত করবো এবং এ কাজটি হবেই।
(১৯:২৯) মারয়াম শিশুর প্রতি ইশারা করলো৷ লোকেরা বললো, “কোলের শিশুর সাথে আমরা কি কথা বলবো? ৩০) শিশু বলে উঠলো, “আমি আল্লাহর বান্দা, তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন ও নবী করেছেন ৩১) এবং রবকতময় করেছেন যেখানেই আমি থাকি না কেন আর যতদিন আমি বেঁচে থাকবো ততদিন নামায ও যাকাত আদায়ের হুকুম দিয়েছেন৷ ৩২) আর নিজের মায়ের হক আদায়কারী করেছেন, এবং আমাকে অহংকারী ও হতভাগা করেননি৷ ৩৩) শান্তি আমার প্রতি যখন আমি জন্ম নিয়েছি ও যখন আমি মরবো এবং যখন আমাকে জীবিত করে উঠানো হবে”৷৩৪) এ হচ্ছে মারয়ামের পুত্র ঈসা এবং এ হচ্ছে তার সম্পর্কে সত্য কথা, যে ব্যাপারে লোকেরা সন্দেহ করছে৷
(১২:৯৩) যাও, আমার এ জামাটি নিয়ে যাও এবং এটি আমার পিতার চেহারার ওপর রেখো, তিনি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন৷ আর তোমাদের সমস্ত পরিবার পরিজনকে আমার কাছে নিয়ে এসো৷”
(১২:৯৬) তারপর যখন সুখবর বহনকারী এলো তখন সে ইউসুফের জামা ইয়াকূবের চেহারার ওপর রাখলো এবং অকস্মাত তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে এলো৷ তখন সে বললো, “আমি না তোমাদের বলেছিলাম, আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন সব কথা জানি যা তোমরা জানো না ?”
(১২:৯৪) কাফেলাটি যখন (মিসর থেকে) রওয়ানা দিল তখন তাদের বাপ (কেনানে) বললো, “আমি ইউসুফের গন্ধ পাচ্ছি, তোমরা যেন আমাকে একথা বলো না যে, বুড়ো বয়সে আমার বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়েছে৷” ৯৫) ঘরের লোকরো বললো, “আল্লাহর কসম, আপনি এখনো নিজের সেই পুরাতন পাগলামি নিয়েই আছেন৷
(১২:৯৬) ....তখন সে বললো, “আমি না তোমাদের বলেছিলাম, আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন সব কথা জানি যা তোমরা জানো না ?”
(২৯-আনকাবুত:২৪) তারপর সেই জাতির জবাব এ ছাড়া আর কিছুই ছিল না যে, তারা বললো , “ একে হত্যা করো অথবা পুড়িয়ে ফেলো৷ ” ৩৮ শেষ পর্য্ন্ত আল্লাহ তাকে (হযরত ইব্রাহিম আ: কে ) আগুন থেকে রক্ষা করেন৷ ৩৯ অবশ্যই এর মধ্যে নিদর্শন রয়েছে এমন লোকদের জন্য যারা ঈমান আনে৷৪০
৩৮ . অর্থাৎ হযরত ইবরাহীমের ন্যায়সঙ্গত যুক্তির কোন জবাব তাদের কাছে ছিল না। তাদের যদি কোন জবাব থেকে থাকে তাহলে তা এই ছিল যে, হক কথা বলছে যে কণ্ঠটি সেটি স্তব্ধ করে দাও এবং যে ব্যক্তি আমাদের ভুল আমাদের চোখের সামনে তুলে ধরছে এবং তা থেকে আমাদের বিরত থাকতে বলছে তাকে জীবন্ত রেখো না। "হত্যা করো ও জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারো" শব্দাবলী থেকে একথা প্রকাশিত হচ্ছে যে, সমগ্র জনতা হযরত ইবরাহীমকে মেরে ফেলার ব্যাপারে একমত ছিল তবে মেরে ফেলার পদ্ধতির ব্যাপারে ছিল বিভিন্ন মত। কিছু লোকের মত ছিল , তাকে হত্যা করা হোক। আবার কিছু লোকের মত ছিল, জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হোক, এর ফলে ভবিষ্যতে যারা এ ভূখণ্ডে হক কথা বলার পাগলামী করতে চাইবে এটা তাদের জন্য একটা শিক্ষা হয়ে থাকবে।
৩৯ . এ থেকে স্বতষ্ফুর্তভাবে একথা প্রকাশ হয় যে, তারা শেষ পর্যন্ত হযরত ইবরাহীমকে পুড়িয়ে মারার সিদ্ধান্ত করেছিল। তাকে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এখানে শুধুমাত্র এতটুকু কথা বলা হয়েছে, মহান আল্লাহ তাকে আগুনের হাত থেকে রক্ষা করেন। কিন্তু সূরা আল আম্বিয়ায় পরিষ্কার করে বলা হয়েছেঃ আল্লাহর নির্দেশে আগুন হযরত ইবরাহীমের জন্য ঠাণ্ডা ও নিরাপদ বস্তু হয়ে যায়, -----------"আমি বললাম, হে আগুন !ঠাণ্ডা হয়ে যাও এবং শান্তি ও নিরাপত্তা হয়ে যাও ইবরাহীমের প্রতি।" (৬৯ আয়াত)একথা বলা নিষ্প্রয়োজন , তাকে যদি আগুনের মধ্যে নিক্ষেপই না করা হয়ে থাকতো তাহলে আগুনকে ঠাণ্ডা হয়ে যাও এবং তার প্রতি শান্তি ও নিরাপত্তা হয়ে যাও এ হুকুম দেবার কোন অর্থই হয় না। এ থেকে এ কথা পরিষ্কার প্রমাণিত হয় যে, সমস্ত বস্তুও ধর্ম বা প্রকৃতি মহান আল্লাহর হুকুমের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত এবং তিনি যখনই চান যে কোন বস্তুও ধর্ম ও বিশেষত্ব পরিবর্তন করতে পারেন। সাধারণভাবে আগুনের ধর্ম হচ্ছে জ্বালানো এবং দগ্ধীভূত হবার মতো প্রত্যেকটি জিনিসকে পুড়িয়ে ফেলা। কিন্তু আগুনের এ ধর্ম তার নিজের প্রতিষ্ঠিত নয় বরং আল্লাহ প্রতিষ্ঠিত। তার এ ধর্ম আল্লাহকে এমনভাবে বেঁধে ফেলেনি যে, তিনি এর বিরুদ্ধে কোন হুকুম দিতে পারেন না। তিনি নিজের আগুনের মালিক। যে কোন সময় তিনি তাকে জ্বালাবার কাজ পরিত্যাগ করার হুকুম দিতে পারেন। কোন সময় নিজের এক ইঙ্গিতে তিনি অগ্নিকুণ্ডকে ফুল বাগানে পরিণত করতে পারেন। এ অস্বাভাবিক নিয়মের ব্যত্যয় তার রাজ্যে প্রতিদিন হয় না। কোন বড় রকমের তাৎপর্যবহ শিক্ষা ও প্রয়োজনের খাতিরেই হয়ে থাকে। কিন্তু নিয়মমাফিক যেসব জিনিস প্রতিদিন দেখতে আমরা অভ্যস্ত সেগুলোকে কোনক্রমেই এর স্বপক্ষে যুক্তি হিসেবে খাড়া করা যেতে পারে না যে, সেগুলোর মধ্যে তার শক্তি আবদ্ধ হয়ে গেছে এবং নিয়ম বিরোধী কোন ঘটনা আল্লাহর হুকুমেও সংঘটিত হতে পারে না।
৪০ . এর মধ্যে ঈমানদারদের জন্য এ মর্মে নিদর্শন রয়েছে যে, হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম পরিবার, বংশ, জাতি ও দেশের ধর্ম পরিত্যাগ করে যে সত্য জ্ঞানের ভিত্তিতে তিনি শিরকের অসারতা ও তাওহীদের সত্যতা জানতে পেরেছিলেন তারই অনুসরণ করেন। আবার এ মর্মেও নিদর্শন রয়েছে যে, তিনি নিজ জাতির হঠকারিতা ও কঠোর জাতীয় স্বার্থ প্রীতি ও বিদ্বেষ অগ্রাহ্য করে তাকে মিথ্যার পথ থেকে সরিয়ে আনার ও সত্য গ্রহণ করার জন্য অনবরত প্রচার কার্য চালিয়ে যেতে থাকেন। তাছাড়া এ ব্যাপারেও নিদর্শন রয়েছে যে, তিনি আগুনের ভয়াবহ শাস্তি মেনে নিতে প্রস্তুত হয়ে যান এবং সত্য ও ন্যায়ের পথ পরিহার করতে প্রস্তুত হননি। নিদর্শন এ ব্যাপারেও রয়েছে যে, মহান আল্লাহ হযরত ইবরাহীম আলাইহিম সালামকেও পরীক্ষার পুলসেরাত পার না করিয়ে ছাড়েননি। আবার এ ব্যাপারেও যে, হযরত ইবরাহীমকে আল্লাহ যে পরীক্ষার সম্মুখীন করেন তাতে তিনি সাফল্যেও সাথে উত্তীর্ণ হন, তবেই আল্লাহর সাহায্য তার জন্য আসে এবং এমন অলৌকিক পদ্ধতিতে আসে যে, জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ড তার জন্য ঠাণ্ডা করে দেয়া হয়।
(২৬.শুআরা:১৫) আল্লাহ্ বললেন, "কখ্খনো না, তোমরা দু'জন যাও আমার নিদর্শনগুলো নিয়ে।
(নিদর্শনাদি বলতে এখানে লাঠি ও সাদা হাতের কথা বলা হয়েছে। সূরা আ'রাফ ১৩, ১৪, তা-হা ১, নামল ১ ও কাসাসের ৪ রুকুতে এর বিস্তারিত বিবরণ এসেছে।)
তারপর এ জাতিগুলোর পর আমার নিদর্শনসমূহ সহকারে মূসাকে পাঠাই ফেরাউন ও তার জাতির প্রধানদের কাছে৷ কিন্তু তারাও আমার নিদর্শনসমূহের ওপর জুলুম করে৷ ফলতঃ এ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কি হয়েছিল একবার দেখো৷-৭:১০৩,
মূসা নিজের লাঠিটি ছুড়ে দিল৷ অমনি তা একটি জ্বলজ্যান্ত অজগরের রূপ ধারণ করলো৷ সে নিজের হাত বের করলো তৎক্ষণাত দেখা গেলো সেটি দর্শকদের সামনে চমকাচ্ছে৷-৭:১০৭-১০৮,
অবশেষে আমি তাদের ওপর দুর্যোগ পাঠালাম, পংগপাল ছেড়ে দিলাম, উকুন ছড়িয়ে দিলাম, ব্যাংগের উপদ্রব সৃষ্টি করলাম, এবং রক্ত বর্ষণ করলাম৷ এসব নিদর্শন আলাদা আলাদা করে দেখালাম ৷কিন্তু তারা অহংকারে মেতে রইলো এবং তারা ছিল বড়ই অপরাধপ্রবণ সম্প্রদায়-৭:১৩৩
মুসা আ: তার লাঠি দিয়ে পাথরে আঘাত করলে উক্ত পাথর থেকে বারোটি ঝর্ণা ধারা প্রবাহিত হলো : ৭:১৬০,
মেঘমালার ছায়া : ৭:১৬০,
মান্না ও সালওয়া : ৭:১৬০,
ফেরাউন বললোঃ “তুমি যদি কোন প্রমাণ এনে থাকো এবং নিজের দাবীর ব্যাপারে সত্যবাদী হও, তাহলে তা পেশ করো৷”-৭:১০৬,
(২৬.শুআরা:২৯) ফেরাউন বললো, "যদি তুমি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে মাবুদ বলে মেনে নাও, তাহলে কারাগারে যারা পচে মরছে তোমাকেও তাদের দলে ভিড়িয়ে দেবো৷৩০) মূসা বললো, "আমি যদি তোমার সামনে একটি সুস্পষ্ট জিনিস আনি তবুও?"৩১) ফেরাউন বললো, "বেশ তুমি আনো যদি তুমি সত্যবাদী হও৷"৩২) (তার মুখ থেকে একথা বের হতেই) মূসা নিজের লাঠিটি ছুঁড়ে মারলো৷ তৎক্ষনাৎ সেটি হলো একটি সাক্ষাৎ অজগর৷"৩৩) তারপর সে নিজের হাত (বগলের ভেতর থেকে) টেনে বের করলো এবং তা সকল প্রত্যক্ষদর্শীর সামনে চকমক্ করছিল৷
(১৭:১০১) আমি মূসাকে নয়টি নিদর্শন দিয়েছিলাম, সেগুলো সুস্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল৷ এখন নিজেরাই তোমরা বনী ইসরাঈলকে জিজ্ঞেস করে দেখে নাও যখন সেগুলো তাদের সামনে এলো তখন ফেরাউন তো একথাই বলেছিল, “হে মূসা ! আমার মতে তুমি অবশ্যই একজন যাদুগ্রস্ত ব্যক্তি৷
(ব্যাখ্যা : এখানে যে ন'টি নিদর্শনের বা মু’জেযার কথা বলা হয়েছে এর আগে সূরা আরাফেও সেগুলোর উল্লেখ করা হয়েছে । সেগুলো হচ্ছে: (১) লাঠি, যা সাপে পরিণতি হতো । (২) সাদা হাত ও যা বগলের ভেতর থেকে বের করার পর সূর্যের মতো চমকাতে থাকতো । (৩) যাদুকরদের যাদুকে প্রকাশ্য জনসমক্ষে পরাভূত করা । (৪) এক ঘোষণা অনুযায়ী সারা দেশ দুর্ভিক্ষ কবলিত হওয়া এবং তারপর একের পর এক (৫) তুফান, (৬) পংগপাল, (৭) শস্যকীট, (৮) ব্যাং এবং (৯) রক্তের আপদ নাযিল হওয়া ।)
(২০:১৭) - আর হে মূসা! এ তোমার হাতে এটা কি?” (২০:১৮) মূসা জবাব দিল, ”এ আমার লাঠি৷ এর ওপর ভর দিয়ে আমি চলি, নিজের ছাগলগুলোর জন্য এর সাহায্যে পাতা পাড়ি এবং এর সাহায্যে আরো অনেক কাজ করি”(২০:১৯) (আল্লাহ ) বললেন, একে (তোমার হাতের লাঠিটিকে ) ছুঁড়ে দাও হে মূসা”! ২০) সে ছূঁড়ে দিল এবং অকস্মাত সেটা হয়ে গেলো একটা সাপ, যা দৌড়াচ্ছিল৷ ২১) বললেন, ”ধরে ফেলো ওটা এবং ভয় করো না, আমি ওকে আবার ঠিক তেমনটিই করে দেবা যেমনটি সে আগে ছিল৷
(২০:৬৬) অকস্মাত তাদের যাদুর প্রভাবে তাদের দড়িদড়া ও লাঠিগুলো ছুটাছুটি করছে বলে মূসার মনে হতে লাগলো৬৭) এবং মূসার মনে ভীতির সঞ্চার হলো৬৮) আমি বললাম, “ভয় পেয়ো না, তুমিই প্রাধান্য লাভ করবে৷৬৯) ছুঁড়ে দাও তোমার হাতে যাকিছু আছে, এখনি এদের সব বানোয়াট জিনিসগুলোকে গ্রাস করে ফেলবে, এরা যাকিছু বানিয়ে এনেছে এতো যাদুকরের প্রতারণা এবং যাদুকর যেভাবেই আসুক না কেন কখনো সফল হতে পারে না”৷৭০) শেষ পর্যন্ত এই হলো যে, সমস্ত যাদুকরকে সিজদাবনত করে দেয়া হলো এবং তারা বলে উঠলোঃ “আমরা মেনে নিলাম হারুন ও মূসার রবকে”৷
(২৬.শুআরা:৩২) (তার মুখ থেকে একথা বের হতেই) মূসা নিজের লাঠিটি ছুঁড়ে মারলো৷ তৎক্ষনাৎ সেটি হলো একটি সাক্ষাৎ অজগর৷"
বিস্তারিত ব্যখ্যার জন্য দেখুন : ন > নবীদের জীবনের ঘটনাবলী > হযরত মূসা আ: ।
(২৭-নমল:১০) এবং তুমি তোমার লাঠিটি একটু ছুঁড়ে দাও৷” যখনই মূসা দেখলো লাঠি সাপের মত মোচড় খাচ্ছে ১২ তখনই পেছন ফিরে ছুটতে লাগলো এবং পেছন দিকে ফিরেও দেখলো না৷ “ হে মূসা! ভয় পেয়ো না, আমার সামনে রাসূলরা ভয় পায় না৷ ১৩
(১২. সূরা আ'রাফে ও সূরা শু'আরাতে এ জন্য ثعبانٌ (অজগর) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু এখানে একে جانٌ শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করা হচ্ছে। "জান" শব্দটি বলা হয় ছোট সাপ অর্থে। এখানে "জান" শব্দ ব্যবহার করার কারণ হচ্ছে এই যে, দৈহিক দিক দিয়ে সাপটি ছিল অজগর কিন্তু তার চলার দ্রুততা ছিল ছোট সাপদের মতো। সূরা তা-হা-য় حيَّة تَسْعَى (ছুটন্ত সাপ) এর মধ্যেও এ অর্থই বর্ণনা করা হয়েছে।
১৩. অর্থাৎ আমার কাছে রাসূলদের ক্ষতি হবার কোন ভয় নেই। রিসালাতের মহান মর্যাদায় অভিসিক্ত করার জন্য যখন আমি কাউকে নিজের কাছে ডেকে আনি তখন আমি নিজেই তার নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়ে থাকি। তাই যে কোন প্রকার অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটলেও রাসুলকে নির্ভীক ও নিশ্চিন্ত থাকা উচিত। আমি তার জন্য কোন প্রকার ক্ষতিকারক হবো না।)
বিস্তারিত ব্যখ্যার জন্য দেখুন : ন > নবীদের জীবনের ঘটনাবলী > হযরত মূসা আ: ।
বিস্তারিত ব্যখ্যার জন্য দেখুন : ন > নবীদের জীবনের ঘটনাবলী > হযরত মূসা আ: ।
(২৬.শুআরা:৬৩) আমি মূসাকে ওহীর মাধ্যমে হুকুম দিলাম, "মারো তোমার লাঠি সাগরের বুকে৷" সহসাই সাগর দীর্ণ হয়ে গেল এবং তার প্রত্যেকটি টুকরা হয়ে গেলো এক একটি বিশাল পাহাড়ের মতো৷...৬৫) মূসা ও তার সমস্ত লোককে যারা তার সঙ্গে ছিল আমি উদ্ধার করলাম৬৬) এবং অন্যদেরকে ডুবিয়ে দিলাম৷
(মূলে ........ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আরবী ভাষায় বড় পাহাড়কে ... (তওদ) বলা হয়। লিসানুল আরব গ্রন্থে বলা হয়েছে ........ অর্থাৎ 'তওদ' মানে বিশাল পাহাড়। কাজেই এর পরে আবার ........ গুণবাচক শব্দটি ব্যবহার করার অর্থ দাঁড়ায়-পানি উভয় দিকে খুব উঁচু উঁচু পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। তারপর আমরা এ বিষয়টিও চিন্তা করি যে, মূসার লাঠির আঘাতে সমুদ্রে ফাটল সৃষ্টি হয়েছিল । এ কাজটি একদিকে বনী ইসরাঈলের সমগ্র কাফেলাটির সাগর অতিক্রম করার জন্য করা হয়েছিল এবং অন্যদিকে এর উদ্দেশ্য ছিল ফেরাউনের সমস্ত সৈন্য সামন্তকে ডুবিয়ে দেয়া। এ থেকে পরিষ্কার বুঝা যায় যে, লাঠির আঘাতে পানি বিশাল উঁচু পাহাড়ের আকারে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল এবং এতটা সময় পর্যন্ত দাঁড়িয়ে ছিল, যতটা সময় লেগেছিল হাজার হাজার লাখো লাখো বনী ইসরাঈল তার মধ্য দিয়ে সাগর সাগর অতিক্রম করতে। তারপর ফেরাউনের সমগ্র সেনাবাহিনী তার মাঝখানে পৌঁছে গিয়েছিল। একথা সুস্পষ্ট , সাধারণ প্রাকৃতিক নিয়মে যে ঝড়ো বাতাস প্রবাহিত হয় তা যতই তীব্র ও বেগবান হোক না কেন তার প্রভাবে কখনো সাগরের পানি এভাবে বিশাল পাহাড়ের মতো এত দীর্ঘ সময় পর্যন্ত খাড়াভাবে দাঁড়িয়ে থাকে না। এরপর আরো সূরা তা-হা-এ বলা হয়েছেঃ----------------- "তাদের জন্য সমুদ্রের বুকে শুকনো পথ তৈরী করে দাও।"
এর অর্থ দাঁড়ায় , সাগরের উপর লাঠির আঘাত করার কারণে কেবল সাগরের পানি ফাঁক হয়ে গিয়ে দু'দিকে পাহাড় সমান উঁচু হয়ে যায়নি বরং মাঝখানে যে পথ বের হয় তা শুকনো খটখটেও হয়ে যায় এবং কোথাও এমন কোন কাদা থাকেনি যার উপর দিয়ে হেঁটে চলা সম্ভব নয়। এ সংগে সূরা দু'খানের ২৪ আয়াতের এ শব্দগুলোও প্রণিধানযোগ্য যেখানে আল্লাহ মূসাকে নির্দেশ দেন , সমুদ্র অতিক্রম করার পর "তাকে এ অবস্থার উপর ছেড়ে দাও , ফেরাউনের সেনাদল এখানে নিমজ্জিত হবে।" এ থেকে বুঝা যায় যে, মূসা সমুদ্রের অপর পাড়ে উঠে যদি সমুদ্রের উপর লাঠির আঘাত করতেন ,তাহলে উভয় দিকে খাড়া পানির দেয়াল ভেংগে পড়তো এবং সাগর সমান হয়ে যেতো। তাই আল্লাহ তাঁকে এরূপ করতে নিষেধ করেন, যাতে ফেরাউনের সেনাদল এ পথে নেমে আসে এবং তারপর পানি দু'দিক থেকে এসে তাদেরকে ডুবিয়ে দেয়। এটি একটি সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন মু'জিযার বর্ণনা । যারা সাধারণ প্রাকৃতিক নিয়মের আওতায় এ ঘটনাটির ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন তাদের চিন্তার গলদ এ থেকে একেবারেই সুস্পষ্ট হয়ে যায়।
(আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন,সূরা তা-হা, ৫৩ টীকা।))
(২৬.শুআরা:৩৩) তারপর সে নিজের হাত (বগলের ভেতর থেকে) টেনে বের করলো এবং তা সকল প্রত্যক্ষদর্শীর সামনে চকমক্ করছিল৷
(২০:২২) আর (হে মূসা) তোমার হাতটি একটু বগলের মধ্যে রাখো, তা কোনপ্রকার ক্লেশ ছাড়াই উজ্জ্বল হয়ে বের হয়ে আসবে, এটা দ্বিতীয় নিদর্শন৷২৩) এজন্য যে, আমি তোমাকে নিজের বৃহৎ নিদর্শনগুলো দেখাবো৷
(২৭.নামল:১২) আর তোমার হাতটি একটু তোমার বক্ষস্থলের মধ্যে ঢুকাও তো, তা উজ্জ্বল হয়ে বের হয়ে আসবে কোন প্রকার ক্ষতি ছাড়াই৷ এ (দু’টি নিদর্শন) ন’টি নিদর্শনের অন্তরভুক্ত ফেরাউন ও তার জাতির কাছে (নিয়ে যাবার জন্য) ১৬ তারা বড়ই বদকার৷”
(১৬. সূরা বনী ইসরাঈলে বলা হয়েছে মূসাকে আমি সুস্পষ্টভাবে দৃষ্টিগোচর হয় এমন ধরনের নয়টি নিদর্শন (تِسْعَ آَيَاتٍ بَيِّنَاتٍ) দিয়ে পাঠিয়েছিলাম। সূরা আ'রাফে এগুলোর বিস্তারিত বিবরণ এভাবে বর্ণনা করা হয়েছেঃ (১) লাঠি, যা অজগর হয়ে যেতো (২) হাত, যা বগলে রেখে বের করে আনলে সূর্যের মতো ঝিকমিক করতো। (৩) যাদুকরদের প্রকাশ্য জনসমে পরাজিত করা (৪) মূসার পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সারা দেশে দুর্ভি দেখা দেয়া। (৫) বন্যা ও ঝড় (৬) পংগপাল (৭) সমস্ত শস্য গুদামে শস্যকীট এবং মানুষ-পশু নির্বিশেষে সবার গায়ে উকুন । (৮) ব্যাঙয়ের আধিক্য (৯) রক্ত । (আরো ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা আয্ যুখরুফ, ৪৩ টীকা)
(২০:৩৮) সে সময়ের কথা মনে করো যখন আমি তোমার মাকে ইশারা করেছিলাম, এমন ইশারা যা অহীর মাধ্যমে করা হয়, এই মর্মে এই এ শিশুকে সিন্দুকের মধ্যে রেখে দাও এবং সিন্দুকটি দরিয়ায় ভাসিয়ে দাও, দরিয়া তাকে তীরে নিক্ষেপ করবে এবং আমার শত্রু ও এ শিশুর শত্রু একে তুলে নেবে, ৩৯) আমি নিজের পক্ষ থেকে তোমার প্রতি ভালোবাসা সঞ্চার করেছিলাম এবং এমন ব্যবস্থা করেছিলাম যাতে তুমি আমার তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হও৷
মূসা আকূল আবেদন জানালো, হে প্রভু! আমাকে দর্শনের শক্তি দাও, আমি তোমাকে দেখবো৷তিনি বললেনঃ তুমি আমাকে দেখতেপারো না৷-৭:১৪৩,
(১৭:৯২) অথবা তুমি আকাশ ভেংগে টুকরো টুকরো করে তোমার হুমকি অনুযায়ী আমাদের ওপর ফেলে দেবে৷ অথবা আল্লাহ ও ফেরেশতাদেরকে আমাদের সামনে নিয়ে আসবে৷
২:৫৫, (মুসা আ: এর উম্মতের),
২:৫৬, ২১০,
৪:১৫৩
৬:১০৩, ১৫৮,
(ফুরকান:২১) যারা আমার সামনে হাজির হবার আশা করে না তারা বলে, “ কেন আমাদের কাছে ফেরেশতা পাঠানো হয় না ? অথবা আমরা আমাদের রবকে দেখি না কেন ? বড়ই অহংকার করে তারা নিজেদের মনে মনে এবং সীমা অতিক্রম করে গেছে তারা অবাধ্যতায়৷২২) যেদিন তারা ফেরেশতাদের দেখবে সেটা অপরাধীদের জন্য কোন সুসংবাদের দিন হবে না৷ চিৎকার করে উঠবে তারা, “হে আল্লাহ ! বাচাও বাচাও” ২৩) এবং তাদের সমস্ত কৃতকর্ম নিয়ে আমি ধূলোর মতো উড়িয়ে দেবো৷
(এ একই বিষয়বস্তু সূরা আন'আমের ৮ আয়াতে এবং সূরা হিজরের ৭-৮ এবং ৫১-৬৪ আয়াতে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। এছাড়াও সূরা বনী ইসরাঈলের ৯০ থেকে ৯৫ পর্যন্ত আয়াতেও কাফেরদের অনেকগুলো অদ্ভুত এ অভিনব দাবীর সাথে এগুলোর উল্লেখ করে তার জবাব দেয়া হয়েছে। ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা ইবরাহীম ৩৫ ও ৩৬ টীকা।)
হাঁ সামনের পাহাড়ের দিকে তাকাও ৷ সেটি যদি নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারে তাহলে অবশ্যি তুমি আমাকে দেখতে পাবে৷ কাজেই তার রব যখন পাহাড়ে জ্যোতি প্রকাশ করলেন তখন তা তাকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিল এবং মূসা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে গেলো৷ সংজ্ঞা ফিরে পেয়ে মূসা বললোঃ পাক-পবিত্র তোমার সত্তা৷ আমি তোমার কাছে তাওবা করছি এবং আমিই সর্বপ্রথম মুমিন৷-৭:১৪৩,
আল্লাহর সাথে কথা বলা : অতপর মূসা যখন আমার নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হলো এবং তার রব তার সাথে কথা বললেন -৭:১৪৩, বললেন হে মূসা! আমি সমস্ত লোকদের ওপর অগ্রাধিকার দিয়ে তোমাকে নির্বাচিত করেছি যেন আমার নবুওয়াতের দায়িত্ব পালন করতে পারো এবং আমার সাথে কথা বলতে পারো - ৭:১৪৪,
সালেহ আ: এর উট ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে নিদর্শন : ৭:৭৩,
(২১:৭৯) দাউদের সাথে আমি পর্বতরাজী ও পক্ষীকূলকে অনুগত করে দিয়েছিলাম, যারা পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতো, এ কাজের কর্তা আমিই ছিলাম৷
(মূলে () শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, ( ) বলা হয়নি। অর্থাৎ দাউদ আলাইহিস সালামের জন্য নয় বরং "তার সাথে" পাহাড় ও পাখীদেরকে অনুগত করা হয়েছিল এবং সে কারণে তারাও হযরত দাউদের (আ) সাথে আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করতো। একথাটিই সূরা সাদ-এ বলা হয়েছেঃ
-------------------------
"আমি তার সাথে পাহাড়গুলোকে অনুগত করে দিয়েছিলাম। সকাল-সাঁজে তারা আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতো। আর পাখিদেরকেও অনুগত করা হয়েছিল। তারা একত্র হতো, সবাই তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করতো"।
সূরা সাবায় এর ওপর অতিরিক্ত বলা হয়েছেঃ ()"পাহাড়গুলোকে আমি হুকুম দিয়েছিলাম যে, তার সাথে সাথে পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করো এবং এই একই হুকুম পাখিদেরকেও দিয়েছিলাম। এ বক্তব্যগুলো থেকে যেকথা বুঝা যায় তা হচ্ছে এই যে, হযরত দাউদ যখন আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা গীতি গাইতেন তখন তাঁর উচ্চতর ও সুরেলা আওয়াজ পাহাড় গুঞ্জরিত হতো, পাখিরা থেমে যেতো এবং একটা অপূর্ব মূর্ছনার সৃষ্টি হতো। এ অর্থের সমর্থন একটি হাদীস থেকে পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, একবার হযরত আবু মূসা আশ'আরী (রা) কুরআন তেলাওয়াত করেছিলেন। তাঁর কণ্ঠ ছিল অসাধারণ সুরেলা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেদিক দিয়ে যাচ্ছিলেন। তার আওয়াজ শুনে তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন এবং অনেকক্ষণ শুনতে থাকলেন। তার পড়া শেষ হলে তিনি বললেনঃ () অর্থাৎ এ ব্যক্তি দাউদের সুরেলা কণ্ঠের একটা অংশ পেয়েছে। )
(২১:৮১) আর সুলায়মানের জন্য আমি প্রবল বায়ু প্রবাহকে বশীভূত করে দিয়েছিলাম, যা তার হুকুম এমন দেশের দিকে প্রবাহিত হতো যার মধ্যে আমি বরকত রেখেছিলাম।
বিস্তারিত দেখুন : ন > নবীদের জীবনের ঘটনাবলী > হযরত সুলায়মান আ: >হযরত সুলায়মান আ: এর জন্য বায়ুকে বশীভূক্ত করে দেওয়া হয়েছিল
বিস্তারিত দেখুন : ন > নবীদের জীবনের ঘটনাবলী > হযরত সুলায়মান আ: >হযরত সুলায়মান আ: এর জন্য জ্বিন জাতির অনুগত হওয়ার বর্ণনা।
দেখুন : স > সেনাবাহিনী । (বিস্তারিত দেখুন : ন > নবীদের জীবনের ঘটনাবলী > হযরত সুলায়মান আ: > সুলায়মান আ: এর সৈন্যদের মধ্যে কি জ্বিনেরা অন্তর্ভূক্ত ছিল ? এবং আরো দেখুন : ন > নবীদের জীবনের ঘটনাবলী > হযরত সুলায়মান আ: এর অনুগত জ্বিনদের সম্পর্কে বর্ণনা)
বিস্তারিত দেখুন : ন > নবীদের জীবনের ঘটনাবলী > হযরত সুলায়মান আ: > হযরত সুলায়মান আ: কে পাখিদের ভাষা শেখানো হয়েছিল : তিনি পাখিদের সাথে কথা বলতে পারতেন ।
(২৭.নামল:১৮) (একবার সে তাদের সাথে চলছিল) এমন কি যখন তারা সবাই পিঁপড়ের উপত্যকায় পৌঁছুল তখন একটি পিঁপড়ে বললো, “হে পিঁপেড়েরা! তোমাদের গর্তে ঢুকে পড়ো৷ যেন এমন না হয় যে, সুলাইমান ও তার সৈন্যরা তোমাদের পিশে ফেলবে এবং তারা টেরও পাবে না৷”১৯) সুলাইমান তার কথায় মৃদু হাসলো এবং বললো- “হে আমার রব! আমাকে নিয়ন্ত্রণে রাখো, আমি যেন তোমার এ অনুগ্রহের শোকর আদায় করতে থাকি যা তুমি আমার প্রতি ও আমার পিতা-মাতার প্রতি করেছো এবং এমন সৎকাজ করি যা তুমি পছন্দ করো এবং নিজ অনুগ্রহে আমাকে তোমার সৎকর্মশীল বান্দাদের দলভুক্ত করো৷
(বিস্তারিত দেখুন : ন > নবীদের জীবনের ঘটনাবলী > হযরত সুলায়মান আ: > হযরত সুলায়মান আ: এর সাথে যে পিঁপড়ার দলের কথোপকথন হয়েছিল তারা কি সত্যিকার অর্থেই পিঁপড়া ছিল নাকি পিঁপড়া নামের কোন মানব গোত্র ছিল ? )
বিস্তারিত দেখুন : প > পিপড়া।
(২১:৮৪) আমি তার দোয়া কবুল করেছিলাম, তার যে কষ্ট ছিল তার দূর করে দিয়েছিলাম।
(বিস্তারিত দেখুন : ন > নবীদের জীবনের ঘটনাবলী > হযরত আইয়ুব আ: । )
Kv‡diiv ejj Ò‡n bex Zzwg GKwU gyÕ‡Rhv wb‡q Avm‡j bv †Kb?Ó Rev‡e ivmyj mv: ej‡jb, Avgvi Kv‡Q KziAvb cvVv‡bv n‡q‡Q| A_v©r KziAvbB n‡”Q me‡P‡q eo gyÕwRhv - 7:203,
(১৫:৯) আর এ বাণী (জিকর) , একে তো আমিই অবতীর্ণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক৷
(একারণেই আজ দেড় সহস্রাব্দ পার হয়ে যাওয়ার পরও কুরআনের একটি নুকতারও কেউ পরিবর্তণ করতে পারেনি, কুরআন কেহ বিশ্বাস করুক বা না করুক সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার , কিন্তু মুহাম্মদ সা: এর উপর যে কুরআন নাযিল হয়েছে, সেটি সম্পূর্ন অবিকৃত অবস্থায় এখনো আমাদের কাছে, পৃথিবীর কাছে বিদ্যমান আছে, এটা অস্বীকার করার কোন উপায় কারো নেই, এটা কুরআনের একটি বাস্তব ও জ্বলন্ত মু’জেযা, এ বিষয়টি পৃথিবীর দ্বিতীয় কোন গ্রন্থের ক্ষেত্রে ভাবাও অকল্পনীয়)
(২০:১৩৩) তারা বলে, এ ব্যক্তি নিজের রবের পক্ষ থেকে কোন নিশানী (মুজিযা) আনে না কেন? আর এদের কাছে কি আগের সহীফাগুলোর সমস্ত শিক্ষার সুস্পষ্ট বর্ণনা এসে যায়নি?
( অর্থাৎ এটা কি কোন ছোটখাটো মু'জিযা যে, তাদের মধ্য থেকে এক নিরক্ষর ব্যক্তি এমন একটি কিতাব পেশ করেছেন, যাতে শুরু থেকে নিয়ে এ পর্যন্তকার সমস্ত আসমানী কিতাবের বিষয়বস্তু ও শিক্ষাবলীর নির্যাস বের করে রেখে দেয়া হয়েছে৷ মানুষের পথ নির্দেশনার জন্য ঐ সমস্ত কিতাবের মধ্যে যা কিছু ছিল তা কেবলমাত্র তার মধ্যে একত্রই করা হয়নি বরং তা এমন উন্মুক্ত করে সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করে দেয়া হয়েছে যে, একজন মরুচারী বেদুইনও তা অনুধাবন করে লাভবান হতে পারে।)
উপরে যান :
(২৯-আনকাবুত:৪৮) (হে নবী ) ইতিপূর্বে তুমি কোন কিতাব পড়তে না এবং স্বহস্তে লিখতেও না, যদি এমনটি হতো, তাহলে মিথ্যাচারীরা সন্দেহ পোষণ করতে পারতো৷৪৯) আসলে এগুলো হচ্ছে উজ্জ্বল নিদর্শন এমন লোকদের মনের মধ্যে যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে এবং জালেমরা ছাড়া আর কেউ আমার আয়াত অস্বীকার করে না৷৫০) এরা বলে “ কেনই বা এই ব্যক্তির ওপর নিদর্শনাবলী অবর্তীর্ণ করা হয়নি ৯০ এর রবের পক্ষ থেকে?” বলো, “নিদর্শনাবলী তো রয়েছে আল্লাহর কাছে এবং আমি কেবলমাত্র পরিষ্কারভাবে সতর্ককারী ৷৫১) আর এদের জন্য কি এ (নিদর্শন ) যথেষ্ঠ নয় যে, আমি তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি, যা তাদেরকে পড়ে শুনানো হয়? ৯১ আসলে যারা ঈমান আনে তাদের জন্য এর মধ্যে রয়েছে রহমত ও নসিহত৷ ৯২
(বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য দেখুন : ন > নিরক্ষর > রাসুল সা: কি সত্যিই নিরক্ষর ছিলেন ? : )
রিয়াদুস সালেহীন : বই ৩ :: হাদিস ৭৭৪
Book 3 :: Hadith 774
Anas bin Malik (May Allah be pleased with him) reported: Once the time for As-Salat (the prayer) approached. Those whose houses were near, went to their houses to perform Wudu' while some of the people remained with Messenger of Allah (sallallaahu ’alayhi wa sallam). A stone (containing some water) bowl was brought for him. It was too small for him to spread his hand over it. He performed his Wudu' and it (the water) sufficed for all the others also. Anas was asked: "How many of you were present there?'' He said: "Eighty or more.''
[Al-Bukhari and Muslim].
Another narration in Muslim is: The Prophet (sallallaahu ’alayhi wa sallam) called for a vessel containing water. A wide shallow vessel with a little water in it was brought for him. He put his fingers in it. Anas says: "I kept looking at the water pouring from between his fingers. I estimated that the number of people who made their Wudu' with it was from seventy to eighty.''
Commentary: This Hadith mentions a miracle of Messenger of Allah (sallallaahu ’alayhi wa sallam) and also provides for the use of a stoneware.
(২০:৯৫) মূসা বললো, “আর হে সামেরী তোমার কি ব্যাপার? ৯৬) সে জবাব দিল, “আমি এমন জিনিস দেখেছি যা এরা দেখেনি, কাজেই আমি রসূলের পদাংক থেকে এক মুঠো তুলে নিয়েছি এবং তা নিক্ষেপ করেছি, আমার মন আমাকে এমনি ধারাই কিছু বুঝিয়েছে৷
( এ আয়াতের ব্যাখ্যায় দুটি দলের পক্ষ থেকে অদ্ভুত ধরনের টানা হেঁচড়া করা হয়েছে।
একটি দলে আছেন প্রাচীন তাফসীরকারগণ এবং প্রাচীন পদ্ধতিতে তাফসীরকারীদের বৃহত্তম অংশ। তারা এর অর্থ বর্ণনা করেন, "সামেরী রসূল অর্থাৎ জিব্রীলকে যেতে দেখে নিয়েছিল এবং তাঁর পদাংক থেকে এক মুঠো মাটি উঠিয়ে নিয়েছিল। আর এই মাটি যখন বাছুরের মূর্তির মধ্যে রাখা হয়েছিল তখন তার অলৌকিক মহিমায় তার মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছিল প্রাণ স্পন্দন এবং একটি জীবন্ত বাছুরের মত হাম্বা রব তার মুখ থেকে বের হতে শুরু হয়েছিল"। অথচ সত্যিই যে এমনটি হয়েছিল তা অবশ্যি কুরআন বলছে না। কুরআন স্রেফ এতটুকু বলছে যে, হযরত মূসার প্রশ্নের জবাবে সামেরী একথা বানিয়ে বলেছিল। এ অবস্থায় আমরা বুঝতে পারছি না, মুফাসিরগণ কেমন করে একে একটি সত্য ঘটনা এবং কুরআন বর্ণিত যথার্থ সত্য মনে করে বসলেন।
দ্বিতীয় দলটি সামেরীর কথার অন্য একটি অর্থ করেন। তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী সামেরী আসলে বলেছিল, "আমি রসুল অর্থাৎ মূসার দীনের মধ্যে এমন দুর্বলতা দেখেছিলাম যা অন্যেরা দেখতে পায়নি। তাই আমি একদিক থেকে তাঁর পদাংক অনুসরণ করেছিলাম কিন্তু পরে তা ত্যাগ করেছিলাম"। এ ব্যাখ্যাটি সম্ভবত সর্বপ্রথম করেন আবু মুসলিম ইসফাহানী। তারপর ইমাম রাযী একে নিজের তাফসীরে উদ্ধৃত করে এর প্রতি নিজের সমর্থন প্রকাশ করেন। বর্তমানে আধুনিক তাফসীরকারদের অধিকাংশই এ অর্থটিকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন। কিন্তু তারা এ কথা ভুলে গেছেন যে, কুরআন ধাঁ ধাঁ ও হেঁয়ালির ভাষায় নাযিল হয়নি। বরং পরিস্কার ও সাধারণের বোধগম্য সহজ সরল আরবী ভাষায় নাযিল হয়েছে। একজন সাধারণ আরববাসী নিজের ভাষায় প্রচলিত স্বাভাবিক বাগধারা অনুযায়ী এর বক্তব্য বুঝতে সক্ষম। আরবী ভাষায় সাধারণ প্রচলিত বাকরীতি ও দৈনন্দিন কথোপকথনের শব্দাবলী সম্পর্কে অবগত কোন ব্যক্তি কখনো একথা মেনে নিতে পারে না যে, সামেরীর এ সামেরীর এ মনোভাব প্রকাশ করার জন্য সহজ সরল আরবী ভাষায় এমন সব শব্দ ব্যবহার করা হবে যা এ আয়াতের তাফসীরকারগণ বলেছেন। অথবা একজন সাধারণ আরবীয় একথাগুলো শুনে কখনো এমন অর্থ গহণ করতে পারে না যা এ তাফসীরকারগণ বর্ণনা করেছেন। অভিধান গ্রন্থ থেকে কোন একটি শব্দের এমন একাধিক অর্থ গ্রহণ করা যা বিভিন্ন প্রবাদে ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং তার মধ্য থেকে কোন একটি অর্থ নিয়ে এমন একটি বাক্যের সাথে সম্পৃক্ত করে দেয়া যেখানে একজন সাধারণ আরব কখনোই এ শব্দটিকে এ অর্থে ব্যবহার করে না-এটাতো ভাষাজ্ঞান হতে পারে না, তবে বাগাড়ম্বর হিসেবে মেনে নিতে আপত্তি নেই। 'ফরহংগে আসেফীয়া' নামক উর্দু অভিধান খানি অথবা 'অক্সফোর্ড ডিকশনারী' হাতে নিয়ে যদি কোন ব্যক্তি যথাক্রমে তাদের উর্দু ও ইংরেজী রচনাগুলো মধ্যে এ ধরনের কৃতিত্ব ফলাতে থাকেন, তাহলে সম্ভবত নিজেদের কথার দু-চারটি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ শুনেই তাদের লেখকরা চিৎকার করে উঠবেন। সাধারণত কুরআনের এ ধরনের ব্যাখ্যা এমন সময় করা হয় যখন এক ব্যক্তি কোন আয়াতের সহজ সরল অর্থ দেখে নিজে নিজেই একথা মনে করে থাকে যে, এখানে তো আল্লাহ তা'আলা বড়ই অসাবধান হয়ে গেছেন, এসো আমি তাঁর কথা এমনভাবে পেশ করে দিই যার ফলে তাঁর ভুলের পরদা ঢেকে যাবে এবং তাঁর বক্তব্য নিয়ে লোকদের হাসাহাসি করার সুযোগ থাকবে না।
এ বিবৃত চিন্তা পরিহার করে যে ব্যক্তিই এ বক্তব্য পরম্পরায় এ আয়াতটি পড়বে সে সহজে বুঝতে পারবে যে, সামেরী ছিল একজন ফিতনাবাজ ব্যক্তি। সে ভালোভাবে ভেবেচিন্তে ধোকা ও প্রতারণার একটি বিরাট পরিকল্পনা তৈরী করেছিল। সে কেবল একটি সোনার বাছুর তৈরী করে যে কোন কৌশলে তার মধ্যে গো-বৎসের হামবা রব সৃষ্টি করে দেয়নি এবং সমগ্র জাতি অজ্ঞ ও নির্বোধ লোকদের প্রতারিত করেনি বরং সে আরো দুঃসাহসী হয়ে খোদ হযরত মূসা আলাইহিস সালামকেও এমটি প্রতারণাপূর্ণ গল্প শুনিয়ে দিল। সে দাবী করলো, আমি এমন কিছু দেখেছি যা অন্যেরা দেখেনি। সাথে সাথে এ গল্পও শুনিয়ে দিল যে, রসুলের পদাংকের এক মুঠো মাটিই এ কেরামতি দেখিয়েছে। রসূল বলে সে জিব্রীলকেও নির্দেশ করতে পরে, যেমন প্রাচীন তাফসীরকারগণ মনে করেছেন। কিন্তু যদি একথা মনে করা হয় যে, রসূল শব্দটি বলে সে হযরত মূসাকে নির্দেশ করেছে, তাহলে এটা তার আর একটা প্রতারণা। সে এভাবে হযরত মূসাকে মানসিক উৎকোচ দিতে চাচ্ছিল, যাতে তিনি এটাকে তাঁর নিজের পদাংকের অলৌকিকতা মনে করে গর্বিত হন এবং নিজের অন্যান্য কেরামতির প্রচারণার জন্য সামেরীর প্রতারণা হিসেবেই পেশ করছে, নিজের পক্ষ থেকে প্রকৃত ঘটনা হিসেবে পেশ করছে না। তাই এতে এমন দুষনীয় কিছু ঘটেনি যে, তা প্রক্ষালনের জন্য অভিধান গ্রন্থগুলোর সাহায্যে অযথা বাগাড়ম্বর করার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। বরং পরবর্তী বাক্যগুলোতে হযরত মূসা যেভাবে তাকে ধিক্কার ও অভিশাপ দিয়েছেন এবং তার জন্য শাস্তি নির্ধারণ করেছেন তা থেকে পরিস্কার প্রতীয়মান হয় যে, তার বানানো এ প্রতারণাপূর্ণ গল্প শোনার সাথে সাথেই তিনি তা তার মুখের উপর ছুঁড়ে মেরেছিলেন।)
মূর্তিপূজা :
বনী ইসরাঈলকে আমি সাগর পার করে দিয়েছি৷ তারপর তারা চলতে চলতে এমন একটি জাতির কাছে উপস্থিত হলো যারা নিজেদের কতিপয় মূর্তির পূজায় লিপ্ত ছিল৷ বনী ইসরাঈল বলতে লাগলোঃ হে মূসা! এদের মাবূদের মত আমাদের জন্যো একটা মাবূদ বানিয়ে দাও৷ মূসা বললোঃ তোমরা বড়ই অজ্ঞের মত কথা বলছো৷এরা যে পদ্ধতির অনুসরণ করছে তাতে ধ্বংস হবে এবং যে কাজ এরা করেছে তা সম্পূর্ণ বাতিল৷ মূসা আরো বললোঃ আমি কি তোমাদের জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ খুজবো? অথচ আল্লাহই সারা দুনিয়ার সমস্ত জাতি গোষ্ঠির ওপর তোমাদের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন-৭:১৩৮-১৪০,
মূর্তিপূজা করা ভুল কেন ?
মূসার অনুপস্থিতিতে তার জাতির লোকেরা নিজেদের অলংকার দিয়ে বাছুরের মুর্তি তৈরী করলো৷ তার মুখ দিয়ে গরুর মত হাম্বা রব বের হতো৷ তারা কি দেখতে পেতো না যে, ঐ বাছুর তাদের সাথে কথাও বলে না আর কোন ব্যাপারে তাদের কে পথনির্দেশনাও দেয় না? কিন্তু এরপর ও বাছুরের মুর্তিকে মাবুদে পরিণত করলো৷ বস্তুত তারা ছিল বড়ই জালেম৷-৭:১৪৮,
বিস্তারিত দেখুন : ন > নবীদের জীবনের ঘটনাবলী > মুসা আ:
৭:১০৩-১৭১,
১০:৭৫-৯৩,
৭৫) তারপর মুসা ও হারুনকে আমি তাদের পরে আমার নিদর্শনসহ ফেরাউন ও তার সরদারদের কাছে পাঠাই৷ কিন্তু তারা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের অহংকারে মত্ত হয় এবং তারা ছিল অপরাধী সম্প্রদায়৷ ৭৬) পরে যখন আমার কাছ থেকে সত্য তাদের সামনে আসে, তারা বলে দেয়, এ তো সুষ্পষ্ট যাদু। ৭৭) মুসা বললো, সত্য, যখন তোমাদের সামনে এলো তখন তোমরা তার সম্পর্কে এমন (কথা) বলছো? এ কি যাদু ? অথচ যাদুকর সফলকাম হয় না৷৭৮) তারা জববে বললো, “তুমি কি যে পথে আমরা আমাদের বাপ -দাদাদের পেয়েছি সে পথ থেকে আমাদের ফিরিয়ে দিতে এবং যাতে যমীনে তোমাদের দুজনের প্রধান্য কায়েম হয়ে যায়, সে জন্য এসেছো? তোমাদের কথা তো আমরা মেনে নিতে প্রস্তুত নই”৷৭৯) আর ফেরাউন (নিজের লোকদের )বললো, সকল দক্ষ ও অভিজ্ঞ যাদুকরকে আমার কাছে হাযির করো৷৮০) -যখন যাদুকররা সে গেলো, মুসা তাদরেকে বললো, যা কিছু তোমাদের নিক্ষেপ করার আছে নিক্ষেপ করো৷৮১) তারপর যখন তারা নিজেদের ভোজবাজি, নিক্ষেপ করলো, মুসা, বললো, তোমরা এই যা কিছু নিক্ষেপ করেছো এগুলো যাদু৷ আল্লাহ এখনই একে ব্যর্থ করে দেবেন৷ ফাসাদ সৃষ্টিকরীদের কাজকে আল্লাহ সার্থক হতে দেন না৷ ৮২) আর অপরাধীদের কাছে যতই বিরক্তিকর হোক না কেন আল্লাহ তার ফরমানের সাহায্যে সত্যকে সত্য করেই দেখিয়ে দেন৷,৮৩) (তারপর দেখো) মুসাকে তার কওমের কতিপয় নওজোয়ান ছাড়া কেউ মেনে নেয়নি, ফেরাউনের ভয়ে এবং তাদের নিজেদেরই কওমের নেতৃস্থানীয় লোকদের ভয়ে৷ (তাদের আশংকা ছিল) ফেরাউন তাদের ওপর নির্যাতন চালাবে৷ আর প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে এই যে, ফেরাউন দুনিয়ায় পরাক্রমশালী ছিল এবং সে এমন লোকদের অন্তরভুক্ত ছিল যারা কোন সীমানা মানে না৷৮৪) মুসা তার কওমকে বললো, হে লোকেরা! যদি তোমরা সত্যিই আল্লাহর প্রতি ঈমান রেখে থাকো তাহলে তার ওপর ভরসা করো, যদি তোমরা মুসলিম -আত্মসমপূর্ণকারী হও৷৮৫) তারা জবাব দিল, আমরা আল্লাহরই ওপর ভরসা করলাম্৷ হে আমাদের রব! আমাদেরকে জালেমদের নির্যাতনের শিকারে পরিণত করো না৷৮৬) এবং তোমার রহমতের সাহায্যে কাফেরদের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করো৷৮৭) আর আমি মূসা ও তার ভাইকে ইশারা করলাম এই বলে যে, মিসরে নিজের কওমের জন্য কতিপয় গৃহের সংস্থান করো, নিজেদের ঐ গৃহগুলোকে কিবলায় পরিণত করো এবং নামায কায়েম করো৷ আর ঈমানদারদেরকে সুখবর দাও৷৮৮) মুসা দোয়া করলো, হে আমাদের রব! তুমি ফেরাউন ও তার সরদারদেরকে দুনিয়ার জীবনের শোভা -সৌন্দর্য ও ধন-সম্পদ দান করেছো৷ হে আমাদের রব! একি এ জন্য যে, তারা মনুষকে তোমার পথ থেকে বিপথে সরিয়ে দেবে? হে আমাদের রব! এদের ধন-সম্পদ ধ্বংস করে দাও এবং এদের অন্তরে এমনভাবে মোহর মেরে দাও যাতে মর্মন্তুদ শাস্তি ভোগ না করা পর্যন্ত যেন এরা ঈমান না আনে ৮৯) আল্লাহ জবাবে বললেন, ,তোমাদের দুজনের দোয়া কবূল করা হলো৷ তোমরা দুজন অবিচল থাকো এবং মুর্খতাদের পথ কখনো অনুসরণ করো না৷৯০) আর আমি বনী ইসরাঈলকে সাগর পার করে নিয়ে গেলাম৷ তারপর ফেরাউন ও তার সেনাদল জুলূম নির্যতন ও সীমালংঘন করার উদ্দেশ্য তাদের পেছনে চললো৷ অবশেষে যখন ফেরাউন ডুবতে থাকলো তখন বলে উঠলো, আমি মেনে নিলাম, নবী ইসরাঈল যার উপর ঈমান এনেছে তিনি ছাড়া আর কোন প্রকৃত ইলাহ নেই, এবং আমিও আনুগত্যের শির নতকারীদের অন্তরভুক্ত৷ ৯১) (জবাব দেয়া হলো) এখন ঈমান আনছো! অথচ এর আগে পর্যন্ত তুমি নাফরমানী চালিয়ে এসেছো এবং তুমি বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের একজন ছিলে৷৯২) এখন তো আমি কেবল তোমার লাশটাকেই রক্ষা করবো যাতে তুমি পরবর্তীদের জন্য শিক্ষনীয় নিদর্শন হয়ে থাকো৷ যদিও অনেক মানুষ এমন আছে যারা আমার নিদর্শনসমূহ থেকে উদাসীন৷৯৩) বনী ইসরাঈলকে আমি খুব ভালো আবাসভূমি দিয়েছি এবং অতি উৎকৃষ্ট জীবনোপকরণ তাদেরকে দান করেছি৷ তারপর যখন তাদের কাছে জ্ঞান এসে গেলো, তাখনই তারা পরষ্পরে মতভেদ করলো৷ নিশ্চয়ই তোমার রব কিয়ামতের দিন তাদের মধ্যে সেই জিনিসের ফায়সালা করে দেবেন, যে ব্যাপারে তারা মতভেদে লিপ্ত ছিল৷
(বাইবেলে এ ঘটনার কোন উল্লেখ নেই। তবে তালমূদে বলা হয়েছে ডুবে যাওয়ার সময় ফেরাউন বলেছিলঃ আমি তোমার ওপর ঈমান আনছি। হে প্রভূ! তুমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই।)
(১৪:৫) আমি এর আগে মূসাকেও নিজের নিদর্শনাবলী সহকারে পাঠিয়েছিলাম৷ তাকেও আমি হুকুম দিয়েছিলাম, নিজের সম্প্রদায়কে অন্ধকার থেকে বের করে আলোকের মধ্যে নিয়ে এসো এবং তাদেরকে ইতিহাসের শিক্ষণীয় ঘটনাবলী শুনিয়ে উপদেশ দাও৷
ফেরাউন বললোঃ “তুমি যদি কোন প্রমাণ এনে থাকো এবং নিজের দাবীর ব্যাপারে সত্যবাদী হও, তাহলে তা পেশ করো৷”-৭:১০৬,
ফেরাউন বললোঃ “আমার অনুমতি দেবার আগেই তোমরা তার প্রতি ঈমান আনলে? নিশ্চয়ই এটা কোন গোপন চক্রান্ত ছিল৷ তোমরা এ রাজধানীতে বসে এ চক্রান্ত এঁটেছো এর মালিক
দেরকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্যে৷ বেশ, এখন এর পরিণাম তোমরা জানতে পারবে৷ তোমাদের হাত -পা আমি কেটে ফেলবো বিপরীত দিক থেকে এবং তারপর তোমাদের সবাইকে শূলে চড়িয়ে হত্যা করবো৷” তারা জবাব দিলোঃ “সে যাই হোক আমাদের রবের দিকেই তো আমাদের ফিরতে হবে৷ তুমি যে ব্যাপারে আমাদের ওপর প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছো, তা এ ছাড়া আর কিছুই নয় যে , আমাদের রবের নিদর্শসমূহ যখন আমাদের সামনে এসেছে তখন আমরা তা মেনে নিয়েছি৷ হে আমাদের রব! আমাদের সবর দান করোএবং তোমার আনুগত্য থাকা অবস্থায় আমাদের দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নাও-৭:১২৩-১২৬,
তখন তারা মূসাকে বললোঃ “তুমি ছুড়ঁবে না, না আমরা ছুঁড়বো? ” মূসা জবাব দিলোঃ “তোমরাই ছোঁড়ো৷” তারা যখনই নিজেদের যাদুর বাণ ছুঁড়লো তখনই তা লোকদের চোখে যাদু করলো, মনে আতংক ছড়ালো এবং তারা বড়ই জবরদস্ত যাদু দেখালো৷ মূসাকে আমি ইংগিত করলাম, তোমর লাঠিটা ছুঁড়ে দাও৷ তার লাঠি ছোঁড়ার সাথে সাথেই তা এক নিমিষেই তাদের মিথ্যা যাদু কর্মগুলোকে গিলে ফেলতে লাগলো৷এভাবে যা সত্য ছিল তা সত্য প্রমাণিত হলো এবং যা কিছু তারা বানিয়ে রেখেছিল তা মিথ্যা প্রতিপন্ন হলো৷ফেরাউন ও তার সাথীরা মোকাবিলার ময়দানে পরাজিত হলো এবং (বিজয়ী হবার পরিবর্তে) উল্টো তারা লাঞ্ছিত হলো, আর যাদুকরদের অবস্থা হলো এই -যেন কোন জিনিস ভিতর থেকে তাদেরকে সিজদানত করে দিলো৷ তারা বলতে লাগলোঃ “আমরা ঈমান আনলাম বিশ্বজাহানের রবের প্রতি, যিনি মূসা ও হারুণেরও রব-৭:১১৫-১২২
মূসা বললোঃ “হে ফেরাউন! আমি বিশ্বজাহানের প্রভুর নিকট থেকে প্রেরিত৷ আমার দায়িত্বই হচ্ছে,আল্লাহর নামে সত্য ছাড়া আর কিছুই বলবো না৷ আমি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে নিযুক্তির সুষ্পষ্ট প্রমাণসহ এসেছি৷ কাজেই তুমি বনী ইসরাঈলকে আমার সাথে পাঠিয়ে দাও-৭:১০৪, ১০৫,
যখনই তাদের ওপর বিপদ আসতো তারা বলতোঃ হে মূসা ! তোমার রবের কাছে তুমি যে মর্যাদার অধিকারী তার ভিত্তিতে তুমি আমাদের জন্য দোয়া করো৷ যদি এবার তুমি আমাদের ওপর থেকে ও দুর্যোগ হটিয়ে দাও, তাহলে আমরা তোমার কথা মেনে নেবো এবং বনী ইসরাঈলকে তোমার সাথে পাঠিয়ে দেবো৷ -৭:১৩৪,
তারা চলতে চলতে এমন একটি জাতির কাছে উপস্থিত হলো যারা নিজেদের কতিপয় মূর্তির পূজায় লিপ্ত ছিল৷ বনী ইসরাঈল বলতে লাগলোঃ হে মূসা! এদের মাবূদের মত আমাদের জন্যো একটা মাবূদ বানিয়ে -৭:১৩৮
মুসা আ: এর জাতির মধ্যে সত্যপন্থী একটি দলও ছিল : ৭:১৫৯,
(২৭-নমল:২৭) সুলাইমান বললো: “এখনই আমি দেখছি তুমি সত্য বলছো অথবা মিথ্যাবাদীদের অন্তরভুক্ত৷
(১৭:৪০) কেমন অদ্ভূত কথা, তোমাদের রব তোমাদের পুত্র সন্তান দিয়ে অনুগৃহীত করেছেন এবং নিজের জন্য ফেরেশতাদেরকে কন্যা সন্তান বানিয়ে নিয়েছেন ? এটা ভয়ানক মিথ্যা কথা, যা তোমরা নিজেদের মুখে উচ্চারণ করছো৷
(১২:১৭) বললো, “আব্বাজান! আমরা দৌঁড় প্রতিযোগিতা করছিলাম এবং ইউসুফকে আমাদের জিনিসপত্রের কাছে রেখে গিয়েছিলাম, ইতিমধ্যে নেকড়েবাঘ এসে তাকে খেয়ে ফেলেছে৷ আপনি তো আমাদের কথা বিশ্বাস করবেন না, যদিও আমরা সত্যবাদী৷”
(১২:১৮) তারা ইউসূফের জামায় মিথ্যা রক্ত লাগিয়ে নিয়ে এসেছিল৷ একথা শুনে তাদের বাপ বললো, “বরং তোমাদের মন তোমাদের জন্য একটি বড় কাজকে সহজ করে দিয়েছে৷ ঠিক আছে, আমি সবর করবো এবং খুব ভালো করেই সবর করবো৷ তোমরা যে কথা সাজাচ্ছো তার ওপর একমাত্র আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাওয়া যেতে পারে৷
(১৮:১৫) ..যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হতে পারে ?
(২৬.শুআরা:১২৩) আদ জাতি রাসূলদের প্রতি মিথ্যারোপ করলো৷
(২৬.শুআরা:১৪১) সামূদ জাতি রাসূলদের প্রতি মিথ্যারোপ করলো৷
(২৬.শুআরা:১৬০) লূতের জাতি রাসূলদের প্রতি মিথ্যারোপ করলো৷
(৩০-রূম: ১০) শেষ পর্যন্ত যারা অসৎকাজ করেছিল তাদের পরিণাম হয়েছিল বড়ই অশুভ, কারণ তারা আল্লাহর আয়াতকে মিথ্যা বলেছিল এবং তারা সেগুলোকে বিদ্রুপ করতো৷
(৩২- আস-সাজদা : ২০) আর যারা ফাসেকীর পথ অবলম্বন করেছে তাদের আবাস হচ্ছে জাহান্নাম৷ যখনই তারা তা থেকে বের হতে চাইবে তার মধ্যেই ঠেলে দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, আস্বাদন করো এখন সেই আগুনের শাস্তির স্বাদ যাকে তোমরা মিথ্যা বলতে৷
(৩১-লোকমান: ৩০) এ সবকিছু এ কারণে যে, আল্লাহই হচ্ছেন সত্য ৫২ এবং তাকে বাদ দিয়ে অন্য যেসব জিনিসকে এরা ডাকে তা সবই মিথ্যা, ৫৩ আর ( এ কারণে যে, ) আল্লাহই সমুচ্চ ও শ্রেষ্ঠ৷ ৫৪
৫২ . অর্থাৎ প্রকৃত সার্বভৌম ক্ষমতাধর কর্তা , সৃষ্টি ও পরিচালনা ব্যবস্থাপনার আসল ও একচ্ছত্র মালিক।
৫৩ . অর্থাৎ তারা সবাই নিছক তোমাদের কাল্পনিক খোদা। তোমরা কল্পনার জগতে বসে ধারণা করে নিয়েছো যে, অমুকজন আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতার অংশীদার এবং অমুক মহাত্মা সংকট নিরসন ও অভাব মোচন করার ক্ষমতা রাখেন। অথচ প্রকৃতপক্ষে তাদের কেউ কোন কিছুই করার ক্ষমতা রাখে না।
৫৪ . অর্থাৎ প্রত্যেকটি জিনিসের উর্ধে এবং সবার শ্রেষ্ঠ । তার সামনে সব জিনিসই নিচু। প্রত্যেকের চেয়ে তিনি বড় এবং সবাই তার সামনে ছোট।
(আরো দেখুন : স > সত্য > আল্লাহ সত্য>
(৩০-রূম: ১৬) আর যারা কুফরী করেছে এবং আমার নিদর্শনাবলী ও পরলোকের সাক্ষাতকারকে মিথ্যা বলেছে ২১ তাদেরকে আযাবে হাজির রাখা হবে৷
২১ . একথাটি অবশ্যই প্রণিধানযোগ্য যে, ঈমানের সাথে সৎকাজের কথা বলা হয়েছে, যার ফলে মানুষ মহান মর্যাদা সম্পন্ন পরিণামফল ভোগ করবে।কিন্তু কুফরীর অশুভ পরিণাম বর্ণনা প্রসঙ্গে অসৎকাজের কোন বর্ণনা দেয়া হয়নি। এ থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয় যে, মানুষের পরিণাম নষ্ট করার জন্য কুফরীই যথেষ্ঠ। অসৎকাজের সাথে তাঁর শামিল হওয়ায় বা না হওয়ায় কিছু যায় আসে না।
(২৯-আনকাবুত: ২) লোকেরা কি মনে করে রেখেছে, “আমরা ঈমান এনেছি” কেবলমাত্র একথাটুকু বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে, আর পরীক্ষা করা হবে না? ৩) অথচ আমি তাদের পূর্ববর্তীদের সবাইকে পরীক্ষা করে নিয়েছি আল্লাহ অবশ্যই দেখবেন কে সত্যবাদী এবং কে মিথ্যুক৷
(বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য দেখুন : প > পরীক্ষা)
(হাজ্ব:৬২) এসব এজন্য যে, আল্লাহই সত্য এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে এরা যাদেরকে ডাকে তারা সবাই মিথ্যা৷
(বিস্তারিত দেখুন : স > সত্য , শ > শিরক )
(মু’মিনুন:৯০) যা সত্য তা আমি তাদের সামনে এনেছি এবং এরা যে মিথ্যেবাদী এতে কোন সন্দেহ নেই ৷
(২৯-আনকাবুত:১৮) আর যদি তোমরা মিথ্যা আরোপ করো, তাহলে পূর্বে বহু জাতি মিথ্যা আরোপ করেছে ৩০ এবং রাসূলের ওপর পরিষ্কারভাবে পয়গাম পৌঁছিয়ে দেয়া ছাড়া আর কোন দায়িত্ব নেই৷”
৩০ . অর্থাৎ যদি তোমরা আমার তাওহীদের দাওয়াতকে এবং তোমাদের নিজেদের রবের দিকে ফিরে যেতে হবে এবং নিজেদের সমস্ত কাজের হিসেব দিতে হবে - এসব কথাকে মিথ্যা বলো , তাহলে এটা কোন নতুন কথা নয়। ইতিহাসে এর পূর্বেও বহু নবী (যেমন নূহ, হূদ, সালেহ আলাইহিমুস সালাম প্রমুখগণ) এ একই দাওয়াত নিয়ে এসেছিলেন এবং তাদের জাতিরাও তাদেরকে এমনিভাবেই মিথ্যুক বলেছে। এখন তারা এ নবীদেরকে মিথ্যুক বলে তাদের কোন ক্ষতি করতে পেরেছে, না নিজেদের পরিণাম ধ্বংস করেছে, এটা তোমরা নিজেরাই দেখে নাও।
(৩০-রূম: ৫৮) আমি এ কুরআনে বিভিন্নভাবে লোকদেরকে বুঝিয়েছি৷ তুমি যে কোন নিদর্শনই আনো না কেন, অবিশ্বাসীরা একথাই বলবে, তোমরা মিথ্যাশ্রয়ী৷৫৯) এভাবে যারা জ্ঞানহীন তাদের অন্তরে আল্লাহ মোহর মেরে দেন৷
(মু’মিনুন:৪৪) তারপর আমি একের পর এক নিজের রসূল পাঠিয়েছি ৷ যে জাতির কাছেই তার রসূল এসেছে সে-ই তার প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছে,আর আমি একের পর এক জাতিকে ধ্বংস করে গেছি এমনকি তাদেরকে স্রেফ কাহিনীই বানিয়ে ছেড়েছি, --অভিসম্পাত তাদের প্রতি যারা ঈমান আনে না ৷
(২৯-আনকাবুত:৩৭) কিন্তু তারা তার প্রতি মিথ্যা আরোপ করলো৷ শেষে একটি প্রচণ্ড ভূমিকম্প তাদেরকে পাকড়াও করলো এবং তারা নিজেদের ঘরের মধ্যে মরে পড়ে থাকলো৷
(বিস্তারিত দেখুন : ধ > ধ্বংস > বিভিন্ন জাতিকে ধ্বংসের প্রক্রিয়া।
(৩০-রূম: ৪৭) আমি তোমার পূর্বে রসূলদেরকে তাদের সম্প্রদায়ের কাছে পাঠাই এবং তারা তাদের কাছে আসে উজ্জ্বল নিদর্শনাবলী নিয়ে৷ তারপর যারা অপরাধ করে তাদের থেকে আমি প্রতিশোধ নিই আর মুমিনদেরকে সাহায্য করা ছিল আমার দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত৷
(২১:৬২) (ইবরাহীমকে নিয়ে আসার পর) তারা জিজ্ঞেস করলো, “ওহে ইবরাহীম! তুমি কি আমাদের ইলাহদের সাথে এ কাণ্ড করেছো ?” ৬৩) সে জবাব দিল, “বরং এসব কিছু এদের এ সরদারটি করেছে, এদেরকেই জিজ্ঞেস করো, যদি এরা কথা বলতে পারে৷১
(এ শেষ বাক্যটি স্বতই একথা প্রকাশ করছে যে, প্রথম বাক্যে হযরত ইবরাহীম মূর্তি ভাঙ্গার দায় যে বড় মূর্তিটির ঘাড়ে চাপিয়েছেন, তার দ্বারা মিথ্যা বলা তার উদ্দেশ্য ছিল না। বরং তিনি নিজের বিরোধীদেরকে প্রমাণ দর্শাতে চাচ্ছিলেন। তারা যাতে জবাবে নিজেরাই একথা স্বীকার করে নেয় যে, এ উপাস্যরা একেবারেই অসহায় এবং এদের দ্বারা কোন উপকারের আশাই করা যায় না, তাই তিনি একথা বলেছিলেন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কোন ব্যক্তি পমাণ উপস্থাপনের জন্য যে বস্তব ঘটনা বিরোধী কথা বলে তাকে মিথ্যা গণ্য করা যেতে পারে না। বক্তা প্রমাণ নির্দেশ করার জন্য একথা বলে এবং স্রোতাও একে সেই অর্থেই গ্রহণ করে।
দুর্ভাগ্যক্রমে হাদীসের এক বর্ণনায় একথা এসেছে যে, হযরত ইরাহীম (আ) তাঁর জীবনে তিনবার মিথ্যা কথা বলেছিলেন। তার মধ্যে এটি একটি "মিথ্যা"। দ্বিতীয় "মিথ্যা" হচ্ছে, সূরা সাফ্ফাতে হযরত ইবরাহীমের (আমি অসুস্থ) কথাটি। আর তৃতীয় "মিথ্যাটি" হচ্ছে তাঁর নিজের স্ত্রীকে বোন বলে পরিচিত করানো। একথাটি কুরআনে নয় বরং বাইবেলের আদি পুস্তকে বলা হয়েছে। এক শ্রেনীর বিদ্বানদের "রেওয়াত" প্রীতির ব্যাপারে সীমাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি এমন পর্যায়ে পৌছে গিয়েছে যে, তাদের কাছে বুখারী ও মুসলিমের কতিপয় বর্ণনাকারীর সত্যবাদিতাই বেশী প্রিয় এবং এর ফলে যে একজন নবীর ওপর মিথ্যা বলা অভিযোগ আরোপিত হচ্ছে, তার কোন পরোয়াই তাদের নেই। অপর একটি শ্রেনী এই একটিমাত্র হাদীসকে ভিত্তি করে সমগ্র হাদীস শাস্ত্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনা শুরু করে দেয় এবং বলতে থাকে, সমস্ত হাদীসের স্তুপ উঠিয়ে দূরে ছূঁড়ে দাও। কারণ এর মধ্যে যতো আজেবাজে ধরনের রেওয়ায়াত পাওয়া যায়। অথচ কোন একটি বা কতিপয় হাদীসের মধ্যে কোন ত্রুটি পাওয়া যাবার কারণে সমস্ত হাদীস অনির্ভরযোগ্য হয়ে যাবে- এমন কোন কথা হতে পারে না। আর হাদীস শাস্ত্রের দৃষ্টিতে কোন হাদীসের বর্ণনা পরম্পরা মজবুত হওয়ার ফলে এটা অপরিহার্য হয়ে ওঠে না যে, তার "মতন" (মুল হাদীস) যতই আপত্তিকর হোক না কেন তাকে চোখ বন্ধ করে "সহী" বলে মেনে নিতে হবে। বর্ণনা পরম্পরা সহীহ ও নির্ভরযোগ্য হবার পরও এমন অনেক কারণ থাকতে পারে, যার ফলে এমন "মতন" ত্রুটিপূর্ণ আকারে উদ্ধৃত হয়ে যায় এবং এমন সব বিষয়বস্তু সম্বলিত হয় যে, তা থেকে স্পষ্টতই বুঝা যায় যে, একথাগুলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুখ নিসৃত হতে পারে না। তাই সনদ তথা বর্ণনা পরস্পরার সাথে সাথে "মতন"ও দেখা অপরিহার্য। যদি মতনের মধ্যে সত্যিই কোন দোষ থেকে থাকে তাহলে এরপরও অযথা তার নির্ভূলতার ওপর জোর দেয়া মোটেই ঠিক নয়।
যে হাদীসটিতে হযরত ইবরাহীমের তিনটি "মিথ্যা কথা" বর্ণনা করা হয়েছে সেটি কেবলমাত্র এ কারণে আপত্তিকর নয় যে, এটি একজন নবীকে মিথ্যাবাদী গণ্য করেছে বরং এ কারণেও এটি ত্রুটিপূর্ণ যে, এখানে যে তিনটি ঘটনার কথার বলা হয়েছে সেগুলো সবই বিতর্কিত। এর মধ্যে "মিথ্যা"র অবস্থা তো পাঠক এইমাত্র দেখলেন। সামান্য বুদ্ধি জ্ঞানও যার আছে তিনি কখনো এই প্রেক্ষাপটে হযরত ইবরাহীমের এই বক্তব্যকে "মিথ্যা" বলে আখ্যায়িত করতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে নাউযুবিল্লাহ আমরা এমন ধারণা তো করতেই পারি না যে, তিনি এই বক্তব্যের তাৎপর্য বুঝাবেন না। এবং খামাখাই একে মিথ্যা ভাষণ বলে আখ্যায়িত করবেন। আর (আমি অসুস্থ এ কথাটি ) সংক্রান্ত ঘটনাটির ব্যাপারে বলা যায়, এটিকে মিথ্যা প্রমাণ করা যেতে পারে না যতক্ষণ না একথা প্রমাণিত হয় যে, হযরত ইবরাহীম সে সময় সম্পূর্ণ সুস্থ, সবল, রোগমুক্ত ছিলেন এবং তিনি সামান্যতম অসুস্থতায়ও ভুগছিলেন না। একথা কুরআনে কোথাও বলা হয়নি এবং আলোচ্য হাদীসটি ছাড়া আর কোন নির্ভরযোগ্য হাদীসও এ আলোচনা আসেনি। এখন বাকী থাকে স্ত্রীকে বোন বলার ঘটনাটি। এ ব্যাপারটি এত বেশী উদ্ভট যে, কাহিনীটি শোনার পর কোন ব্যক্তি প্রথমেই বলে বসবে এটা কোন ঘটনাই হতে পারে না। এটি বলা হচ্ছে তখনকার কাহিনী যখন হযরত ইবরাহীম নিজের স্ত্রী সারাকে নিয়ে মিসরে যান। বাইবেলের বর্ণনামতে তখন হযরত ইবরাহীমের বয়স ৭৫ বছর ও হযরত সারার বয়স ৬৫ বছরের কিছু বেশী ছিল। এ বয়সে হযরত ইবরাহীম ভীত হলেন মিসরের বাদশাহ এ সুন্দরীকে লাভ করার জন্য তাকে হত্যা করবেন। কাজেই তিনি স্ত্রীকে বললেন, যখন মিসরীয়রা তোমাকে ধরে বাদশাহর কাছে নিয়ে যেতে থাকবে তখন তুমি আমাকে নিজের ভাই বলবে এবং আমিও তোমাকে বোন বলবো, এর ফলে আমি প্রাণে বেঁচে যাবো। (আদি পুস্তকঃ১২ অধ্যায়) হাদীসে বর্ণিত তৃতীয় মিথ্যাটির ভিত্তি এই সুস্পষ্ট বাজে ও উদ্ভট ইসরাঈলী বর্ণনার ওপর প্রতিষ্ঠিত। যে হাদীসের 'মতন' এ ধরনের উদ্ভট বক্তব্য সম্বলিত তাকেও আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উক্তি বলে মেনে নেবো কেমন করে-তা তার 'সনদ' যতই ক্রুটিমুক্ত হোক না কেন৷ এ ধরনের একপেশে চিন্তা বিষয়টিকে বিকৃত করে অন্য এক বিভ্রান্তির উদ্ভব ঘটায় যার প্রকাশ ঘটাচ্ছে হাদীস অস্বীকারকারী গোষ্ঠী। (আরো বেশী জানার জন্য দেখুন, আমার লিখিত বই রাসায়েল ও মাসায়েল ২ খন্ড, কতিপয় হাদীসের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও তার জবাব নিবন্ধের ১২নং জবাব)।
(২০:৪৮) ... শাস্তি তার জন্য যে মিথ্যা আরোপ করে, ও মুখ ফিরিয়ে নেয়”৷
(১৬:৩০) অন্যদিকে যখন মুত্তাকীদেরকে জিজ্ঞেস করা হয়, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে কী নাযিল হয়েছে, তারা জবাব দেয়, “সর্বোত্তম জিনিস নাযিল হয়েছে৷”
(অথচ অবিশ্বাসীদের জবাব হয় ভিন্নতর)
হে মুহাম্মাদ ! বলো, যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে তারা কখনো সফলকাম হতে পারে না৷-১০:৬৯ (যেমন একথা বলা যে, আল্লাহর পুত্র সন্তান রয়েছে (নাউজুবিল্লাহ)।
(১১:১৮) আর যে ব্যক্তি আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা রটনা করে তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হবে ? এ ধরনের লোকদের তাদের রবের সামনে উপস্থিত করা হবে এবং সাক্ষীরা সাক্ষ দেবে, এরাই নিজেদের রবের বিরুদ্ধে মিথ্যা রটনা করেছিল৷ শোনো, জালেমদের ওপর আল্লাহর লানত
(১৫:১১৬) আর এই যে, তোমাদের কণ্ঠ ভুয়া হুকুম জারী করে বলতে থাকে এটি হালাল এবং ওটি হারাম, এভাবে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করো না৷ যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে তারা কখনোই সফলকাম হবে না৷
আল্লাহর আয়াত সমূহকে মিথ্যা বলা : ৫:১০, ৬:১৫৭,
(২০:৬১) মূসা (যথা সময় পতিপক্ষ দলকে সম্বোধন করে) বললো, “দুর্ভাগ্য পীড়িতরা! আল্লাহর প্রতি মিথ্যা অপবাদ দিয়ো না, অন্যথায় তিনি কঠিন আযাব দিয়ে তোমাদের ধ্বংস করে দেবেন৷ যে-ই মিথ্যা রটনা করেছে সে-ই ব্যর্থ হয়েছে”৷
(হাজ্ব:৪২) হে নবী! যদি তারা তোমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে, তাহলে ইতিপূর্বে নূহের জাতি, আদ, সামূদ, ইবরাহীমের জাতি, লূতের জাতি ও মাদয়ানবাসীরাও মিথ্যা আরোপ করেছিল ৪৩) এবং মূসার প্রতিও মিথ্যা আরোপ করা হয়েছিল৷ এসব সত্য অস্বীকারকারীকে আমি প্রথমে অবকাশ দিয়েছি তারপর পাকড়াও করেছি৷৪৪) এখন দেখে নাও আমার শাস্তি কেমন ছিল৷
(২৯-আনকাবুত:৩৭) কিন্তু তারা তার প্রতি মিথ্যা আরোপ করলো৷
(১৬:১০৫) (নবী মিথ্যা কথা তৈরি করে না বরং) মিথ্যা তারাই তৈরি করছে যারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহ মানে না, তারাই আসলে মিথ্যেবাদী৷
(১৮:৫) ..তাদের মুখ থেকে বেরুনো একথা অত্যন্ত সাংঘাতিক ! তারা নিছক মিথ্যাই বলে৷
(হাজ্ব:৩০)......মিথ্যা কথা থেকে দূরে থাকো।
(যদিও শব্দগুলো এখানে ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে এবং এ থেকে প্রত্যেকটি মিথ্যা, অপবাদ ও মিথ্যা সাক্ষের হারাম হওয়া প্রমাণ হয় তবুও এ সূরার এ পর্যায়ের আলোচনায় বিশেষভাবে এমনসব বাতিল আকিদা-বিশ্বাস বিধি-বিধান, রীতি-রেওয়াজ ও কল্পনা-কুসংস্কারের প্রতি ইংগিত করা হয়েছে যেগুলোর ওপর কুফরী ও শিরকের ভিত গড়ে উঠেছে। আল্লাহর সাথে অন্যদেরকে শরীক করা এবং তাঁর সত্তা, গুণাবলী, ক্ষমতা ও অধিকারে তাঁর বান্দাদেরকে অংশীদার করা সবচেয়ে বড় মিথ্যা। এ থেকে এখানে নিষেধ করা হয়েছে। আবার আরবের মুশরিকরা যে মিথ্যার ভিত্তিতে "বাহীরা", "সায়েবা" ও "হাম" ইত্যাদিকে হারাম গণ্য করতো তাও এ ফরমানের সরাসরি আওতাধীনে এসে যায়। যেমন সূরা আন্ নাহল-এ বলা হয়েছেঃ
(আরবী)
"আর তোমাদের কন্ঠ যে মিথ্যা বিধান দিয়ে থাকে যে, এটা হলাল এবং এটা হারাম, এ ধরনের বিধান দিয়ে আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরোপ করো না।" (১১৬ আয়াত)
এ সংগে মিথ্যা সাক্ষ ও মিথ্যা কসমও একই বিধানের আওতায় আসে। যেমন বিভিন্ন সহীহ হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে উদ্ধৃত হয়েছে। তিনি বলেছেনঃ
(আরবী)
"মিথ্যা সাক্ষ দেওয়াকে আল্লাহর সাথে শিরক করার সমান পর্যায়ে রাখা হয়েছে।"
এরপর তিনি প্রমাণ হিসেবে এ আয়াতটি পেশ করছেন। ইসলামী আইনে এ অপরাধটি শাস্তিযোগ্য। ইমাম আবু ইউসুফ (র) ও ইমাম মুহাম্মাদের (র) ফতোয়া হচ্ছে, যে ব্যক্তি আদালতে মিথ্যা সাক্ষদাতা প্রমাণিত হয়ে যাবে তার নাম চারদিকে প্রচার করে দিতে হবে এবং তাকে দীর্ঘ কাল অন্তরীণ রাখার শাস্তি দিতে হবে। হযরত উমর ও (রা) একথাই বলেছেন এবং কার্যত এ পদক্ষেপই নিয়েছেন। মাকহূলের বর্ণনা হচ্ছে, হযরত উমর (রা) বলেছেন এবং কার্যত এ পদক্ষেপই নিয়েছেন। মাকহূলের বর্ণনা হচ্ছে, হযরত উমর (রা) বলেন,
(আরবী)
"তার পিঠে চাবুক মারতে হবে, মাথা ন্যাড়া করে দিতে হবে, মুখ কালো করে দিতে হবে এবং দীর্ঘকাল অন্তরীণ রাখার শাস্তি দিতে হবে।"
আবদুল্লাহ ইবনে আমের নিজের পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেনঃ হযরত উমরের (রা) আদালতে এক ব্যক্তি সাক্ষ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। ফলে তিনি তাকে একদিন প্রকাশ্য জনসমাগমের স্থানে দাঁড় করিয়ে রাখেন এবং ঘোষণা করে দেন যে, এ ব্যক্তি হচ্ছে ওমুকের ছেলে ওমুক এ মিথ্যা সাক্ষ দিয়েছে, একে চিনে রাখো। তারপর তাকে কারাগারে আটক করেন। বর্তমান কালে এ ধরনের লোকের নাম খবরের কাগজে ছেপে দিলেই ব্যাপক প্রচারের উদ্দেশ্য হাসিল হতে পারে।)
(২১:১৬) এ আকাশ ও পৃথিবী এবং এদের মধ্যে যা কিছুই আছে এগুলো আমি খেলাচ্ছলে তৈরি করিনি৷১৭) যদি আমি কোনো খেলনা তৈরি করতে চাইতাম এবং এমনি ধরনের কিছু আমাকে করতে হতো তাহলে নিজেরই কাছ থেকে করে নিতাম৷১৮) কিন্তু আমি তো মিথ্যার ওপর সত্যের আঘাত হানি, যা মিথ্যার মাথা গুঁড়িয়ে দেয় এবং সে দেখতে দেখতে নিশ্চিহ্ন হয়৷ আর তোমাদের জন্য ধ্বংস! যেসব কথা তোমরা তৈরি করো সেগুলোর বদৌলতে৷
(২৬.শুআরা:৬৭) এ ঘটনার মধ্যে আছে একটি নিদর্শন৷ কিন্তু এদের অধিকাংশ মান্যকারী নয়৷
(অর্থাৎ কুরাইশদের জন্য রয়েছে এর মধ্যে শিক্ষা । এ শিক্ষাটি হচ্ছেঃ হঠকারী লোকেরা প্রকাশ্য ও সুস্পষ্ট মু'জিযা সমূহ দেখেও কিভাবে ঈমান আনতে অস্বীকার করে যেতে থাকে এবং তারপর এ হঠকারিতার ফল কেমন ভয়াবহ হয়। ফেরাউন ও তার জাতির সমস্ত সরদার ও হাজার হাজার সেনার চোখে এমন পট্টি বাঁধা ছিল যে, বছরের পর বছর ধরে যেসব নিদর্শন তাদেরকে দেখিয়ে আসা হয়েছে সেগুলো তারা উপেক্ষা করে এসেছে , সবশেষে পানিতে ডুবে যাবার সময়ও তারা একথা বুঝলো না যে, সমুদ্র ঐ কাফেলার জন্য ফাঁক হয়ে গেছে , পানি পাহাড়ের মতো দু'দিকে খাড়া হয়ে আছে এবং মাঝখানে শুকনা রাস্তা তৈরী হয়ে গেছে। এ সুস্পষ্ট নিদর্শন দেখেও তাদের জ্ঞানোদয় হলো না যে, মূসা আলাইহিস সালামের সাথে আল্লাহর সাহায্য রয়েছে এবং এহেন শক্তির সাথে তারা লড়াই করতে যাচ্ছে। তাদের চেতনা জাগ্রত হলো এমন এক সময় যখন পানি দু'দিক থেকে তাদেরকে চেপে ধরেছিল এবং তারা আল্লাহর গযবের মধ্যে ঘেরাও হয়ে গিয়েছিল। সে সময় ফেরাউন চিৎকার করে উঠলঃ
-----------------------------------------
"আমি ঈমান আনলান এই মর্মে যে,বনী ইসরাইল যে আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই এবং আমি মুসলমানদের অন্তরভুক্ত ।"(ইউনুস ৯০ আয়াত)
অন্যদিকে ঈমানদারদের জন্যও এর মধ্যে রয়েছে নিদর্শন। সেটি হচ্ছে, জুলুম ও তার শক্তিগুলো বাহ্যত যতই সর্বব্যাপী ও সর্বগ্রাসী হয়ে দেখা দিক না কেন শেষ পর্যন্ত আল্লাহর সাহায্য-সহায়তায় সত্য এভাবেই বিজয়ী এবং মিথ্যার শির এভাবেই নত হয়ে যায়।)
(ফুরকান:১১) আসল কথা হচ্ছে, এরা “ সে সময়টিকে” মিথ্যা বলেছে এবং যে সে সময়কে মিথ্যা বলে তার জন্য আমি জ্বলন্ত আগুন তৈরি করে রেখেছি।১২) আগুন যখন দূর থেকে এদের দেখবে তখন এরা তার ক্রুদ্ধ ও উত্তেজিত চিৎকার শুনতে পাবে৷১৩) আর যখন এরা শৃংখলিত অবস্থায় তার মধ্যে একটি সংকীর্ণ স্থানে নিক্ষিপ্ত হবে তখন নিজেদের মৃত্যুকে ডাকতে থাকবে৷১৪) (তখন তাদের বলা হবে) আজ একটি মৃত্যুকে নয় বরং বহু মৃত্যুকে ডাকে৷
(১১:৯৩) হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা নিজেদের পথে কাজ করে যাও এবং আমি আমার পথে কাজ করে যেতে থাকবো৷ শিগগীরই তোমরা জানতে পারবে কার ওপর লাঞ্ছনার আযাব আসছে এবং কে মিথ্যুক ? তোমরা প্রতীক্ষা করতে থাকো এবং আমিও তোমাদের সাথে প্রতীক্ষারত রইলাম৷”
(৩৪-সাবা: ৮).... নাজানি এ ব্যক্তি আল্লাহর নামে মিথ্যা তৈরি করে ।
(২৫.ফুরকান:৭৭)...এখন যে তোমরা মিথ্যা আরোপ করেছো, শিগগীর এমন শাস্তি পাবে যে, তার হাত থেকে নিস্তার পাওয়া সম্ভব হবে না৷”
(২৬.শুআরা:৬) এখন যখন তারা মিথ্যা আরোপ করেছে৷ তখন তারা যে জিনিসের প্রতি বিদ্রূপ করে চলেছে, অচিরেই তার প্রকৃত স্বরূপ (বিভিন্ন পদ্ধতিতে) তারা অবগত হবে৷
(১৯:৯৮) এদের পূর্বে আমি কত জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছি৷ আজ কি কোথাও তাদের নাম-নিশানা দেখতে পাও অথবা কোথাও শুনতে পাও তাদের ক্ষীণতম আওয়াজ?
(মু’মিনুন:১০৪) আগুন তাদের মুখের চামড়া জ্বালিয়ে দেবে এবং তাদের চোয়াল বাইরে বের হয়ে আসবে ৷ ৯৭ ১০৫) ----‘‘তোমরা কি সেসব লোক নও যাদের কাছে আমার আয়াত শুনানো হলেই বলতে এটা মিথ্যা?’’
(৯৭ . মূলে-----শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। ----- আরবী ভায়ায় এমন চেহারাকে বলা হয় যার চামড়া আলাদা হয়ে গেছে এবং দাঁত বাইরে বের হয়ে এসেছে । যেমন খাশির ভুনা মাথা । আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদকে (রা) এক ব্যক্তি ''কালেহ''-এর অর্থ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন :---------------অর্থাৎ ''তুমি কি ভুনা খাশির কল্লা দেখোনি৷'')
আরো দেখুন : ন > নবী > নবীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সমূহ ।
(২৬.শুআরা:১০৫) নূহের সম্প্রদায় রাসূলদেরকে মিথ্যুক বললো৷
(২৬.শুআরা:১৮৬) ....আর আমরা তো তোমাকে একেবারেই মিথ্যুক মনে করি৷
(মু’মিনুন:৪৪) তারপর আমি একের পর এক নিজের রসূল পাঠিয়েছি ৷ যে জাতির কাছেই তার রসূল এসেছে সে-ই তার প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছে, আর আমি একের পর এক জাতিকে ধ্বংস করে গেছি এমনকি তাদেরকে স্রেফ কাহিনীই বানিয়ে ছেড়েছি, --অভিসম্পাত তাদের প্রতি যারা ঈমান আনে না ৷
(মু’মিনুন:২৬) নূহ বললো, ‘‘হে পরওয়ারদিগার ! এরা যে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করছে এ জন্য তুমিই আমাকে সাহায্য করো৷’’ ২৮
(২৮ . অর্থাৎ আমার প্রতি এভাবে মিথ্যা আরোপ করার প্রতিশোধ নাও। যেমন অন্যত্র বলা হয়েছেঃ
''কাজেই নূহ নিজের রবকে ডেকে বললোঃ আমাকে দমিত করা হয়েছে, এমন তুমিই এর বদ্লা নাও।'' (আল কামার, ১০)
সূরা নূহে বলা হয়েছেঃ
''আর নূহ বললোঃ হে আমার পরওয়ারদিগার! এ পৃথিবীতে কাফেরদের মধ্য থেকে একজন অধিবাসীকেও ছেড়ে দিও না। যদি তুমি তাদেরকে থাকতে দাও তাহলে তারা তোমার বান্দাদেরকে গোমরাহ করে দেবে এবং তাদের বংশ থেকে কেবল দূষ্কৃতকারী ও সত্য অস্বীকারকারীরই জন্ম হবে।''´(২৭ আয়াত) )
(৫৭:২৫) আমি আমার রসূলদের সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ এবং হিদায়াত দিয়ে পাঠিয়েছি৷ তাদের সাথে কিতাব ও মিযান নাযিল করেছি যাতে মানুষ ইনসাফের ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারে৷
(১৭:১) পবিত্র তিনি যিনি নিয়ে গেছেন এক রাতে নিজের বান্দাকে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আক্সা পর্যন্ত, যার পরিবেশকে তিনি বরকতময় করেছেন, যাতে তাকে নিজের কিছু নিদর্শন দেখান৷
(১৭:৬০) স্মরণ করো হে মুহাম্মাদ! আমি তোমাকে বলে দিয়েছিলাম, তোমার রব এ লোকদেরকে ঘিরে রেখেছেন৷ আর এই যাকিছু এখনই আমি তোমাকে দেখিয়েছি একে এবং কুরআনে অভিশপ্ত গাছকে আমি এদের জন্য একটি ফিতনা বানিয়ে রেখে দিয়েছি৷ আমি এদেরকে অনবরত সতর্ক করে যাচ্ছি কিন্তু প্রতিটি সতর্ক সংকেত এদের অবাধ্যতা বাড়িয়ে চলছে৷
(ব্যাখ্যা: এখানে মি'রাজের দিকে ইংগিত করা হয়েছে । তাই এখানে রু'ইয়া শব্দটি ব্যবহৃত হলেও এর মানে এখানে স্বপ্ন নয় বরং এখানে এর মানে হচ্ছে চোখ দেখা । এটা নিছক স্বপ্ন হলে এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাফেরদের সামনে এটাকে স্বপ্ন হিসেবেই বর্ণনা করলে এটা তাদের জন্য ফিতনা হবার কোন কারণই ছিল না । একটার চাইতে একটা বেশী অদ্ভুত স্বপ্ন দেখা হয় এবং লোকদের সামনে বর্ণনাও করা হয় কিন্তু তা কখনো কারো জন্য এমন সমস্যা হয়ে দেখা দেয় না যে, লোকেরা এ জন্য যে স্বপ্ন দেখেছে তাকে বিদ্রূপ করতে থেকেছে এবং তার প্রতি মিথ্যাচার ও পাগলপনার অপবাদ দিয়েছে ।)
(১৯:১১) কাজেই সে মিহরাব থেকে বের হয়ে নিজের সম্প্রদায়ের সামনে এলো এবং ইশারায় তাদেরকে সাঁঝে আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করার নির্দেশ দিল৷
(১২:৯৯) তারপর যখন তারা ইউসুফের কাছে পৌঁছুলো তখন সে নিজের বাপ-মাকে নিজের কাছে বসালো এবং (নিজের সমগ্র পরিবার পরিজনকে) বললো, “চলো, এবার মিশর শহরে চলো, আল্লাহ চাহেতো শান্তি ও নিরপত্তার মধ্যে বসবাস করবে৷”
.
(১২:৭৮) তারা (ইউসুফকে) বললো, “হে ক্ষমাতাসীন সরদার (আযীয)! এর বাপ অত্যন্ত বৃদ্ধ, এর জায়গায় আপনি আমাদের কাউকে রেখে দিন৷ আমরা আপনাকে বড়ই সদাচারী ব্যক্তি হিসেবে পেয়েছি৷”
অন্তর অর্ধাবৃত, ঢেকে দেওয়া হয়েছে : ২:৮৮, মোহরমারা হয়েছে : ২:৬-৮,
কাফেরদের কান, চোখ ও অন্তর আল্লাহ ঢেকে দিয়েছেন : ২:৬-৮,
যেসব জাতির কাহিনী আমি তোমাদের শুনাচ্ছি (যাদের দৃষ্টান্ত তোমাদের সামনে রয়েছে) তাদের রসূলগণ সুষ্পষ্ট প্রমাণসহ তাদের কাছে আসে , কিন্তু যে জিনিসকে তারাএকবার মিথ্যা বলেছিল তাকে আবার মেনে নেবার পাত্র তারা ছিল না৷ দেখো, এভাবে আমি সত্য অস্বীকারকারীদের দিলে মোহর মেরে দেই*-৭:১০১-১০২,
* আগের আয়াতে বলা হয়েছিলঃ আমি তাদের দিলে মোহর মেরে দেই, তারপর তারা কিছুই শুনতে পায় না- এর ব্যাখ্যা আল্লাহ নিজেই এ আয়াতটিতে করে দিয়েছেন।এ ব্যাখ্যা থেকে একথা সুষ্পষ্ট হয়ে যায় যে, দিলে মোহর মারার অর্থ হচ্ছেঃ মানবিক বুদ্ধিবৃত্তির এমন একটি মনস্তাত্বিক নিয়মের আওতাধিন হয়ে যাওয়া যার দৃষ্টিতে একবার জাহেলী বিদ্বেষ বা হীন ব্যক্তি স্বার্থের ভিত্তিতে সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবার পর মানুষ নিজের জিদ ও হঠকারিতার শৃংখলে এমনভাবে আবদ্ধ হয়ে যেতে থাকে যে, তারপর কোন প্রকার যুক্তি-প্রমাণ প্রত্যক্ত পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা- নিরীক্ষাই সত্যকে গ্রহণ করার জন্যে তার মনের দুয়ার খুলে দেয় না।
(১৬:১০৭) এটা এজন্য যে, তারা আখেরাতের মুকাবিলায় দুনিয়ার জীবন পছন্দ করে নিয়েছে এবং আল্লাহর নিয়ম হলো, তিনি এমনসব লোককে মুক্তির পথ দেখান না যারা তাঁর নিয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়৷১০৮) এরা হচ্ছে এমনসব লোক যাদের অন্তর, কান ও চোখের ওপর আল্লাহ মোহর মেরে দিয়েছেন৷ এরা গাফলতির মধ্যে ডুবে গেছে৷
কোন প্রকার অধিকার ছাড়াই যারা পৃথিবীতে বড়াই করে বেড়ায়, শীঘ্রই আমার নিদর্শনসমূহ থেকে আমি তাদের দৃষ্টি ফিরিয়ে দেবো৷ তারা আমার যে কোন নিদর্শন দেখলেও তার প্রতি ঈমান আনবে না৷ তাদের সামনে যদি সোজা পথ এসে যায় তাহলে তারা তা গ্রহণ করবেনা৷ আর যদি বাঁকা পথ দেখতে পায় তাহলে তারা ওপর চলতে আরম্ভ করবে৷ কারণ তারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা বলেছে এবং সেগুলোর ব্যাপারে বেপরোয়া থেকেছে৷ আমার নিদর্শনসমূহকে যারাই মিথ্যা বলছে এবং আখেরাতের সাক্ষাতের কথা অস্বীকার করেছে তাদের সমস্ত কর্মকাণ্ড ব্যর্থ হয়ে গেছে ৷ যেমন কর্ম তেমন ফল- এ ছাড়া লোকেরা কি আর কোন প্রতিদান পেতে পারে? ৭:১৪৬, ১৪৭,
পৃথিবীর পূর্ববর্তী অধিবাসীদের পর যারা তার উত্তরাধিকারী হয়, তারা কি এ বাস্তবতা থেকে ততটুকুও শেখেনি যে আমি চাইলে তাদের অপরাধের দরুন তাদেরকে পাকড়াও করতে পারি-আর আমি তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেই৷ ফলে তার কিছুই শোনে না-৭:১০০,
যেসব জাতির কাহিনী আমি তোমাদের শুনাচ্ছি (যাদের দৃষ্টান্ত তোমাদের সামনে রয়েছে) তাদের রসূলগণ সুষ্পষ্ট প্রমাণসহ তাদের কাছে আসে , কিন্তু যে জিনিসকে তারাএকবার মিথ্যা বলেছিল তাকে আবার মেনে নেবার পাত্র তারা ছিল না৷ দেখো, এভাবে আমি সত্য অস্বীকারকারীদের দিলে মোহর মেরে দেই-৭:১০১-১০২,
(১৬:২২) কিন্তু যারা আখেরাত মানে না তাদের অন্তরে অস্বীকৃতি বদ্ধমূল হয়ে গেছে এবং তারা অহংকারে ডুবে গেছে৷
(১৭:৪৫) যখন তুমি কুরআন পড়ো তখন আমি তোমার ও যারা আখেরাতের প্রতি ঈমান আনে না তাদের মাঝখানে একটি পর্দা ঝুলিয়ে দেই৷ ৪৬) এবং তাদের মনের ওপর এমন আবরণ চড়িয়ে দেই যেন তারা কিছুই বুঝে না এবং তাদের কানে তালা লাগিয়ে দেই৷
(হাজ্ব:৭৩) হে লোকেরা! একটি উপমা দেয়া হচ্ছে, মনোযোগ দিয়ে শোনো৷ আল্লাহকে বাদ দিয়ে যেসব উপাস্যকে তোমরা ডাকো তারা সবাই মিলে একটি মাছি সৃষ্টি করতে চাইলেও করতে পারবে না৷ বরং যদি মাছি তাদের কাছ থেকে কোনো জিনিস ছিনিয়ে নিয়ে যায় তাহলে তারা তা ছাড়িয়েও নিতে পারবে না৷ সাহায্য প্রার্থীও দুর্বল এবং যার কাছে সাহায্য চাওয়া হচ্ছে সেও দুর্বল৷
(১৬:৬৮) আর দেখো তোমার রব মৌমাছিদেরকে একথা অহীর মাধ্যমে বলে দিয়েছেনঃ তোমরা পাহাড়-পর্বত, গাছপালা ও মাচার ওপর ছড়ানো লতাগুল্মে নিজেদের চাক নির্মাণ করো৷৬৯) তারপর সব রকমের ফলের রস চোসো এবং নিজের রবের তৈরি করা পথে চলতে থাকো৷ এ মাছির ভেতর থেকে একটি বিচিত্র রংগের শরবত বের হয়, যার মধ্যে রয়েছে নিরাময় মানুষের জন্য৷ অবশ্যি এর মধ্যেও একটি নিশানী রয়েছে তাদের জন্য যারা চিন্তা-ভাবনা করে৷
(১৮:১৯) ..চলো এবার আমাদের মধ্য থেকে কাউকে রূপার এ মুদ্রা দিয়ে শহরে পাঠাই এবং সে দেখুক সবচেয়ে ভালো খাবার কোথায় পাওয়া যায়৷ সেখান থেকে সে কিছু খাবার নিয়ে আসুক ; আর তাকে একটু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, আমাদের এখানে থাকার ব্যাপারটা সে যেন কাউকে জানিয়ে না দেয়৷
(১৮:৭৭) তারপর তারা সামনের দিকে চললো৷ চলতে চলতে একটি জনবসতিতে প্রবেশ করলো এবং সেখানে লোকদের কাছে খাবার চাইলো৷ কিন্তু তারা তাদের দুজনের মেহমানদারী করতে অস্বীকৃতি জানালো৷ সেখানে তারা একটি দেয়াল দেখলো, সেটি পড়ে যাবার উপক্রম হয়েছিল৷ সে দেয়ালটি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে দিল৷ মূসা বললো, “আপনি চাইলেএ কাজের পারিশ্রমিক নিতে পারতেন৷”
(১৯:৮৫) সেদিনটি অচিরেই আসবে যেদিন মুত্তাকীদেরকে মেহমান হিসেবে রহমানের সামনে পেশ করবো
(নূর:৪০) অথবা তার উপমা যেমন একটি গভীর সাগর বুকে অন্ধকার ৷ ওপরে ছেয়ে আছে একটি তরংগ, তার ওপরে আর একটি তরংগ আর তার ওপরে মেঘমালা অন্ধকারের ওপর অন্ধকার আচ্ছন্ন ৷ মানুষ নিজের হাত বের করলে তাও দেখতে পায় না ৷ যাকে আল্লাহ আলো দেন না তার জন্য আর কোন আলো নেই ৷