Published using Google Docs
29 DAA
Updated automatically every 5 minutes

দ:

CONTENTS

দরূদ :

তোমরা মুহাম্মদ সা: এর প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠাও :

দল :

তোমরা জামায়াত বদ্ধ/দলবদ্ধ  হয়ে থাকো, জামায়াত/দল  থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ো না :

জামায়াতের/দলের  নিয়ম শৃংখলা সমূহ :

দল গঠনের ভিত্তি হবে কোন জিনিস ?

ফেরাউন তার জাতির লোকদিগকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে রেখেছিল :

সত্যপন্থী দল :

দলের মধ্যে খাটি লোক, দুর্বল ঈমানদার এবং মুনাফিকদের বাছাই করার জন্য পরীক্ষা নেয়া হয় :

জিহাদের ময়দানে মুনাফিকদের ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে : শত্রুরা বিজয়ী হওয়া শুরু করলে মুনাফিকরা দল বদল করে ফেলবে :

আল্লাহ  একদলকে আরেক দলের দ্বারা প্রতিহত করেন :

আপাত দৃষ্টিতে অনেকগুলি জাতি থাকলেও, কুরআনের দৃষ্টিতে দল আসলে দুটি :

তাদের অন্তর্ভূক্ত হয়ো না যারা দ্বীনের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে :

ঈমানদারদের দল ও অস্বীকারকারী দল :

দাওয়াতী কাজের ফলশ্রুতিতে যে কোন জাতি মূলত দুটি দলে বিভক্ত হয়ে যায় :

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে শাসন ও শোষণ :

দলাদলি / দলীয়  কোন্দল :

বনী ইসরাঈলীদের সমস্ত মতভেদ  ও দলাদলির ফায়সালা কিয়ামতের দিন আল্লাহ করে দেবেন  :

সালাত / স্বলাত শব্দের অর্থ কি ?

দরিদ্র :

বিবাহের ক্ষেত্রে দরিদ্রতাকে ভয় করা উচিত নয়, আল্লাহ বিবাহের পর স্বচ্ছলতা দান করবেন :

দূর্গ :

জিহাদের ময়দানে কাফিরদের অন্তরে আল্লাহ ভয় ভীতি সৃষ্টি করে দেন  এবং এভাবে মু’মিনদেরকে সহযোগিতা করেন :

দয়া ও করুনা :

দয়ালু :

আল্লাহ দয়ালু ও ক্ষমাশীল, কিন্তু কাদের প্রতি তিনি দয়ালু ও ক্ষমাশীল ?

আরো দেখুন : (ক্ষ > ক্ষমা লাভের আশায় যারা গুনাহ করতে থাকে ):

দিন :

পরকালীন জীবনে কাফেরদের আফসোস :

দিন কি দীর্ঘতর হয়ে গেল ? অর্থাৎ, তোমরা কি ধৈর্যহারা হয়ে গেলে ?

আল্লাহ যদি দিনকে দীর্ঘতর করতে থাকেন তাহলে কে তোমাদেরকে বিশ্রাম করার জন্য রাত এনে দেবে ?

দিন রাত / দিবস রজনী : আল্লাহর সৃষ্টি কৌশল তোমাদের কল্যাণের  জন্যই :

আল্লাহর কাছে একটি দিন তোমাদের গণনায় হাজার বছরের সমান :  কিভাবে ?

দিরহাম :

দ্বীন :

আল্লাহর কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য দ্বীন হচ্ছে ইসলাম :

দ্বীন প্রতিষ্ঠা কর :

দ্বীন প্রতিষ্ঠার হুকুম :

দ্বীন প্রতিষ্ঠায় ধীরে ধীরে ক্রম অনুসারে সহজ থেকে কঠিন বিভিন্ন ধাপের অনুসরণ :

যারা দ্বীনের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে তাদের অন্তর্ভূক্ত হয়ো না :

দ্বীন পালন ও পতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আল্লাহ কারো উপর কোন বোঝা বা সংকীর্ণতা আরোপ করেননি :

সত্যিকার দ্বীন প্রতিষ্ঠায় অবশ্যই বাধা আসবে, কঠোর বাধা :

দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজসমূহ তথা জিহাদ, দাওয়াতী কাজ, হিজরত ইত্যাদি কাজকে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা ও আল্লাহর জিকর বলা হয়েছে:

দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকো :

দ্বীন প্রতিষ্ঠাকারীর দৃঢ়তা প্রয়োজন : বিস্তারিত দেখুন : দ > দৃঢ়তা, নবীগণের দায়িত্ব, ই > ইস্তেক্বামাত।

সামান্য দু:খ কষ্টে বা বিপদে আপদে যারা আল্লাহর পথ থেকে পিছলে যায় :ইবাদতের ক্ষেত্রে যারা ইস্তেক্বামাত / দৃঢ়তা অবলম্বন করে না :

নিজের চেহারাকে দ্বীনের উপর নিবদ্ধ রাখো : দ্বীনের উপর অটল থাকো :

দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা আল্লাহর নিকট যে দোওয়াটি করবেন :

বক্ষ প্রশস্ত করে দেওয়ার দোয়া :

দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তির  যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে :

রিযিক দাতা আল্লাহ, কোন মানুষ নয় :

দ্বীনের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি নেই :

দ্বীনের ব্যাপারে কোনরূপ সংকীর্ণতা আরোপ করা হয়নি :

দ্বীনকে টুকরা টুকরা করা :

দ্বীনকে টুকরা টুকরা করোনা : তোমরা সকলে একই উম্মত : দ্বীনের মধ্যে মতভেদ রহমত স্বরূপ – এ কথা মিথ্যা :

দ্বীনকে যারা খেলা কৌতুক বানায় :

বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী / ধর্মের ভিত্তিতে বিভিন্ন জাতি সৃষ্টি হওয়ার কারণ কি ?:

আকাশ ও পৃথিবীর সর্বত্র আল্লাহর দীন চলছে : অর্থাত সবকিছুই আল্লাহর অনুগত :

দ্বীনের দাওয়াত পৌছানো আল্লাহর দায়িত্ব :  আরো দেখুন : দাওয়াত।

যাদের কাছে শেষপর্যন্ত দ্বীনের দাওয়াত পৌছেনি, তাদের শেষফল বা পরকালীন শেষফল কিসের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে ?

দ্বীন – শব্দের অর্থ কি ? : এর একটি অর্থ হচ্ছে রাষ্ট্রীয় আইন কানুন ও বিচার ব্যবস্থা :

লাকুম দ্বীনুকুম ওয়ালিয়া দ্বীন  এর অর্থ :

১। শীঘ্রই জানতে পারবে কার পরিণাম মঙ্গল জনক :

২। তোমরা অপেক্ষা কর, আমরাও অপেক্ষা করছি :

দ্বীন-কে (আনুগত্যকে) একমাত্র আল্লাহর জন্য খালেস করে দেওয়া :

সঠিক ভাবে দ্বীন পালন করার লাভ ও ফলাফল :

দ্বীন এর ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি নেই, কাউকে জোর করে ঈমানদার বানানোর প্রয়োজন নেই :

দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের :

দ্বীন ইসলামের মধ্যে বিভিন্ন ফির্কার উদ্ভবের কারণ :

বনী ইসরাঈল জাতির দ্বীন সম্পর্কে বিভিন্ন ফের্কায় বিভক্ত হওয়ার কারণ তাদের অজ্ঞতা নয় বরং তাদের স্বার্থান্ধতা

দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা :

(আরো দেখুন: জ >  জিহাদ > জিহাদ কেন দেওয়া হল  )

সামগ্রিক ভাবে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা ও ফিতনা নির্মূল করাই হচ্ছে জিহাদ সংগ্রামের উদ্দেশ্য :

তওরাত ইঞ্জিলও আইনের কিতাব এবং জমীনে এর হুকুম প্রতিষ্ঠার জন্যই প্রেরণ করা হয়েছিল

যিনি কুরআন নাযিল করেছেন , একে মঞ্জিলে মকসুদে পৌছানোর দায়িত্বও তাঁর :

দ্বীন গ্রহণ না করলে আল্লাহ অন্য জাতি দিয়ে তা করাবেন :

ধর্ম ব্যবসা :

দেখুন : দেখুন : স > সামেরী > সামেরীর ধর্ম ব্যবসা ।

দ্বীনী ভাই :

দ্বিগুণ / দ্বিগুন  :

দ্বিগুন আনন্দ :

মুসলমানদের বিজয় লাভ ও রোমানদের বিজয় লাভ এবং মুসলমানদের দ্বিগুণ আনন্দ :

দ্বিগুন শাস্তি :

দেখুন : শাস্তি > দ্বিগুণ শাস্তি রয়েছে কাদের জন্য ?

আলেম ওলামা সহ সমাজের যারা নেতৃস্থানীয়, যাদেরকে মানুষ অনুসরণ করে যাদের কথায় মানুষ চলে তাদের জন্য রয়েছে দ্বিগুণ শাস্তি :

শ > শাস্তি > দুবার শাস্তি ও দুবার পুরস্কারের তাৎপর্য কি ?

কুফরী ধর্মে (কুফরী দ্বীনে)ফিরে যাওয়ার জন্য কাফিরদের পক্ষ থেকে চাপ প্রয়োগ :

দান :

দান খয়রাত :  (আরো দেখুন : আল্লাহর পথে খরচ,  ক্ষমা লাভ করার শর্তাবলী ):

দান করার পদ্ধতি :

মু’মিনরা প্রতিশোধ পরায়ন মানসিকতা সম্পন্ন হবে না : ব্যক্তিগত কষ্টের কারণে দান বন্ধ করা যাবেনা:

যদি চাও আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করুক  তবে অপরকে ক্ষমা করার অভ্যাস গড়ে তোল :

দান পাবার অধিকারী : ১। আত্নীয় স্বজন, ২। গরীবমিসকীন ৩। হিজরত কারী মুহাজির :

আত্নীয় স্বজন ও অভাবীদেরকে যে দান করা হয়, এটা তাদের প্রতি অনুগ্রহ নয় বরং এটা তাদের অধিকার :

দারিদ্রতা :

দারুল ইসলাম ও দারুল কুফর :

দাড়ি :

কুরআনে কি দাড়ির কথা উল্লেখিত হয়েছে ? নবী রাসুলদের কি দাড়ি ছিল ?

দাড়িপালা / দাড়িপাল্লা  :

দাস-দাসী :

দাস-দাসীরা কি সম্পদের সমান অংশীদার হতে পারে? : শিরক এর বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রমাণ :

বিবাহ যোগ্যা দাস অথবা দাসীদেরকে বিবাহ করিয়ে দেওয়া মনিবের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব :

গোলাম ও মনিব কি একই পর্যায়ভুক্ত ? শিরক এর বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রমাণ :

দাসীর সাথে সংগম করা কি বৈধ ? হ্যাঁ, তবে মালিকানা ভুক্ত দাসী, বর্তমানকালের বেতনভুক্ত দাসী নয় :

বাঁদী / মালিকানাধীন দাসীর সাথে সহবাস করার বৈধতার কারণ কি ?

দাস মুক্ত করার প্রতি উৎসাহ প্রদান : চুক্তিভিত্তিতে তাদেরকে মুক্ত করে দাও : তাদেরকে দান করো:

দাওয়াত / আহ্বান / প্রচার / সতর্কীকরণ :

দাওয়াত দানকারীদের বিরুদ্ধে কাফেরদের/বিরোধীদের গৃহীত কর্মনীতি সমূহ:

১। আগুনে পুড়িয়ে হত্যা :

দাওয়াতী কাজের ফলশ্রুতিতে যে কোন জাতি মূলত দুটি দলে বিভক্ত হয়ে যায় :

তোমার রবের দিকে দাওয়াত দাও :

ইসলামের দাওয়াত তথা আল্লাহর দিকে দাওয়াত ফলপ্রসু হওয়ার ব্যাপারে নিরাশ হয়ো না :

দ্বীনের দাওয়াত পৌছানো আল্লাহর দায়িত্ব :  আরো দেখুন : দাওয়াত।

যাদের কাছে শেষপর্যন্ত দ্বীনের দাওয়াত পৌছেনি, তাদের শেষফল বা পরকালীন শেষফল কিসের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে ?

রাসুল সা: এর সামনে যখনই কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে, আল্লাহ তার জবাব দিয়ে দিয়েছেন :

দ্বীনের দাওয়াত পৌছানো রাসুলগণ ও মু’মিনগণের দায়িত্ব : (সাক্ষ্যদানের দায়িত্ব, সাক্ষী হওয়ার দায়িত্ব):

মৌখিক, লেখনি ও বাস্তব চরিত্রের মাধ্যমে দাওয়াত দেওয়াই মু’মিনদের কর্তব্য :

কিয়ামতের দিন রাসুলগণকে ও তাদের প্রতিনিধিদেরকে সাক্ষী বানানো হবে :

দাওয়াতী কাজ :

যে সমাজে দাওয়াতী কাজ চলতে থাকে এবং লোকেরা কিছু কিছু করে সত্যের দাওয়াতের অনুসারী হতে থাকে এরূপ সমাজে আল্লাহ আযাব নাযিল করেন না :

দাওয়াতী কাজ করতে গিয়ে হতাশ হয়ো না, মনমরা হয়ো না, আল্লাহই এতে বরকত দান করবেন :

একা একব্যাক্তির দাওয়াতী কাজ : শক্তিশালী সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে :

নবীগণ সবসময় তাদের সময়কার প্রতিষ্ঠিত সরকারের কাছে দাওয়াতী কাজ পেশ করেছেন :

শয়তান নবীদের দাওয়াতী মিশনে / কুরআন প্রচারে  বিঘ্ন সৃষ্টি করে এবং এর কারণ :

শয়তান নবীদের দাওয়াতী মিশনে বিঘ্ন সৃষ্টি করার সুযোগ দিয়েছেন দুটি কারণে :

১। মুনাফিকদেরকে ঈমানদারদের দল থেকে ছেটে বের করার জন্য :

২। ঈমানদারদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পায়, সরল পথে তারা মজবুত হয়ে চলতে পারে :

দাওয়াতী কাজ করা ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের :

দাওয়াতী কাজকে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা ও আল্লাহর জিকর বলা হয়েছে:

জোর পূর্বক ধর্ম প্রচার :

বিস্তারিত দেখুন : ম > মূর্তি > হযরত ইব্রাহিম আ: কর্তৃক মূর্তি ভাঙ্গার স্বরূপ :

মুহাম্মদ সা: ও অন্যান্য নবীগণের নবুওয়াতী পার্থক্য সমূহ :

পূর্ববর্তী নবীগণের নবুওত তাদের জাতির মধ্যে এবং একটি নির্দ্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল : সার্বজনীন ছিল না :

দ্বীনের দাওয়াত দিলে কাফেররা মনে করে হাসি তামাশা :

দাওয়াতী কাজ যারা করবেন, তারা আল্লাহর নিকট যে দোওয়া গুলো করবেন :

১। বক্ষ প্রশস্ত করে দেওয়ার দোয়া :

২। মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের বিরুদ্ধে দোয়া :

৩। দাওয়াতী কাজ করার সময় শয়তানের উস্কানি থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইতে হবে :

দাওয়াতী কাজ যারা করবেন, তাদেরকে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে :

রিযিক দাতা আল্লাহ, কোন মানুষ নয় :

দাওয়াতী কাজ করতে হবে  কুরআনের মাধ্যমে:

যদিও অস্বীকারকারীদের বাধার মুখে পড়তে হয় তবুও কুরআনের মা্ধ্যমেই দাওয়াতী কাজ করতে হবে :

কুরান পাঠ করে শুনানো (অবশ্যই অর্থ সহকারে)  নবীওয়ালা কাজ তথা দাওয়াত ও জিহাদী কাজের একটি বড় অংশ :

দাওয়াতী কাজে অবশ্যই বাধা আসবে : যদি তা সত্যিকার নবীওয়ালা ইসলামী দাওয়াত হয় :

দাওয়াতদানকারীদের দৃঢ়তা প্রয়োজন : বিস্তারিত দেখুন : দৃঢ়তা, নবীগণের দায়িত্ব।

দাওয়াতী কাজ যারা করবেন  তারা শুধুমাত্র আল্লাহকেই ভয় করবেন, আর কাউকে ভয় করার তাদের কোন প্রয়োজন নেই :

যারা আল্লাহর দাওয়াত গ্রহণ করেনা, তাদের পরিণাম :

ঈমানদারগণ কখনো মিথ্যা প্রচার করেনা, অবিশ্বাসীরা করে থাকে :

শুধু দাওয়াতী কাজই কি যথেষ্ট ?

শুধু দাওয়াতী কাজ নয়, দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষে রাষ্ট্রক্ষমতার সহায়তা লাভ অথবা রাষ্ট্রক্ষমতা লাভের জন্য প্রচেষ্টা চালানোও দায়ীর কর্তব্য : আরো দেখুন : র > রাষ্ট্রক্ষমতা,  র > রাসুলগণের দায়িত্ব :

ক্ষমতাসীনরা (যারা গায়রে ইসলামী পন্থায় রাষ্ট্র পরিচালনা করে তারা) সত্যিকারের ইসলামী দাওয়াতকে তাদের ক্ষমতার জন্য হুমকি স্বরূপ গণ্য করে :

দাওয়াতী কাজ / দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজের ঝুকি সমূহ :

দাওয়াতী কাজের নীতি  ও কৌশল সমূহ :

যারা দাওয়াতী কাজ করেন তাদেরকে যে জিনিসগুলো মনে রাখতে হবে :

অমুসলিমদের দাওয়াত দেওয়ার জন্য তাদের কিতাব গুলো মুসলমানদের পড়া উচিত :

দাওয়াতী কাজ শুরু করতে হবে যেসব ক্ষেত্রে মিল আছে সেই মিলগুলো দিয়ে, বিরোধী বিষয়গুলো দিয়ে প্রথমে দাওয়াতী কাজ শুরু করা যাবে না :

লোকেরা যদি দাওয়াত কবুল না করে সেজন্য দাওয়াতদানকারীর দু:খিত হবার কোন কারণ নেই :

লোকেরা দাওয়াত কবুল না করলে দু:খ পেওনা : কারণ :

কারণ : ১। তুমি মৃতদেরকে শুনাতে পারোনা : অর্থাৎ যাদের বিবেক মরে গেছে তারা কথা শুনবেনা এটাই স্বাভাবিক :

কারণ : ২। অন্ধদেরকে পথ দেখানো যায় না :

কারণ ৩। : যারা আল্লাহর আয়াতের  উপর ঈমান আনে তারাই তোমার কথা শুনবে :

দাওয়াতী কাজের কৌশল সমূহ  :

১। দাওয়াতী আলোচনার ক্ষেত্রে আল্লাহর ভয় দেখাতে হবে :

২: আমরা অথবা তোমরা সঠিক পথ অথবা সুষঞ্পষঞ্ট গোমরাহীতে নিমজ্জিত :

যে জাতি নবীদেরকে তথা আল্লাহর পথে আহ্বানকারীদেরকে দেশত্যাগে বাধ্য করে তারা নিজেরাও সেখানে বেশীদিন টিকতে পারে না : আরো দেখুন : মুহাম্মদ সা: এর হিজরত

দলগত ভাবে দাওয়াতী কাজ :

১। মন্দের জবাবে ভালো বলা :

ভালোর দ্বারা মন্দকে দূরীভূত কর :

২ । দাওয়াত দানের ক্ষেত্রে কোমলতা অবলম্বন করতে হবে : হয়ত এতে সে ব্যক্তি মন্দ পরিণামের ভয়ে সঠিক পথে ফিরে আসবে :

৩। জালিম বাদশার সামনে দাওয়াত নিয়ে গেলে মু’মিনদের মনে ভয় আসাটা স্বাভাবিক, তবে এ ভয়কে জয় করতে হবে, কারণ আল্লাহ দাওয়াতদানকারীদের সাথে আছেন :

৪। নবীরাও কি জালিম বাদশাহর সামনে দাওয়াতী কাজ করতে গিয়ে ভয় পেতেন ? হ্যা পেতেন, কারণ তারাও মানুষ ছিলেন, তবে তারা সে ভয় কে জয় করেছেন :

৫। দুনিয়াবী সাজ-সরঞ্জাম ও শান শওকতর প্রতি দৃষ্টি না দেওয়া :

বিতর্ক করার পদ্ধতি :

৫.১। অযথা বিতর্ক করার প্রয়োজন নেই :

৫.২। বিতর্ক করার পদ্ধতি : পূর্ববর্তী পথভ্রষ্ট  লোকেরা মুক্তি পাবে কি পাবে না, সে ব্যাপারে আমাদের বিতর্কে বা মতভেদে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়  :

৫.৩। মূর্খদের সাথে বিতর্কে জড়িওনা : তাদেরকে বলে দাও ‘সালাম’

৫.৪। লোকদের সাথে বিতর্ক করো উত্তম পন্থায় :

৫.৫। জ্ঞানহীন বিতর্ক  মানুষকে শয়তানের পথে ধাবিত করে :

৫.৬ । জ্ঞানপাপীদের সাথে বিতর্কে জড়িওনা : কারণ কিছু লোক বিতর্ক করে যাতে লোকদেরকে  আল্লাহর পথ থেকে ভ্রষ্ট করা যায় :

৫.৭ । শয়তানের উস্কানি থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইতে হবে :

৫.৮ : ইসলাম মানুষকে দীনতা ও হীনতা শিক্ষা দেয়না, তাই যে কোন জালেমের সহজ শিকারে পরিণত হওয়া যাবেনা, তাদেরকে আত্মমর্যাদাবোধের সাথে উচিত ও সামঞ্জস্যশীল যুক্তিপূর্ণ জবাব দিতে হবে :

৭। হিকমতের সাথে দাওয়াত দান করো :

৮। কোন কথা নিজেকে দিয়ে শুরু কর : মানুষের আবেগের কাছে আবেদন সৃষ্টি কর :

৯। দাওয়াত দান কারীর আফসোস / আক্ষেপ করার কোন কারণ নেই:

৯.১। লোকেরা ইসলাম ও সৎপথের দাওয়াত গ্রহণ না করলে দাওয়াতদানকারীর আফসোস করার কোন কারণ নেই:

মহিলাদের দাওয়াতী কাজ :

মুহাম্মদ সা: এর স্ত্রীগণও কি দাওয়াতী কাজ / ইসলামের হুকুম আহকাম পৌছে দেওয়ার কাজের জন্য আদিষ্ট ছিলেন ? :

দাওয়াতী কাজ করার অর্থ দুনিয়া পরিত্যাগ করা নয় :

নিজের চরিত্র দিয়ে দাওয়াত দাও :  (আরো দেখুন : চ > চরিত্র । )

দাওয়াতী কাজের ক্ষেত্রে বিনয়ের নীতি অবলম্বন করার সীমা কোন পর্যন্ত ? :

ধনী, নেতা ইত্যাদির প্রতি অতিরিক্ত বেশী গুরুত্ব না দিয়ে মু’মিনদের প্রতি ঘনিষ্ঠ হও :

দাওয়াত বনাম কাফির / ইসলাম বিরোধী / দাওয়াত প্রত্যাখ্যান কারী :

দাওয়াত প্রত্যাখ্যান কারীদের কার্যাবলী :

দাওয়াতের জবাবে কাফিরদের বক্তব্যসমূহ :

১.আমাদেরকে উপদেশ দেওয়া না দেওয়া উভয়ই সমান :

২. আমাদেরকে আযাব স্পর্শ করবে না :

জবাব : শেষ  পর্যন্ত আযাব তাদেরকে ঘিরে ধরলো :

উপহাস/বিদ্রূপ ও তার প্রতিকার : দাওয়াতদানকারীদেরকে লোকেরা উপহাস/বিদ্রুপ করে  :

মনে কষ্ট  : মনের কষ্ট :  দাওয়াতকারীদেরকে বিদ্রূপকরে উপহাস করে লোকেরা মনে কষ্ট দেয় :

যারা দাওয়াতী কাজ করেন, সেক্ষেত্রে অনেক সময় বিরোধীদের বিভিন্ন কার্যকলাপে মনে কষ্ট পেতে হয় : সেক্ষেত্রে করণীয় কি ?

এর প্রতিকার : (১) :

এর প্রতিকার : (২)

দাওয়াতী কাজের সুফল সমূহ : আরো দেখুন অসৎ কাজের নিষেধ  এর সুফলসমূহ :

দাওয়াতী কাজের ক্ষেত্রে আল্লাহর নিজের নীতি সমূহ :

যদি একজন লোকও দাওয়াত গ্রহণ না করে তাতে আল্লাহর কিছু আসে  যায় না :

মানুষকে বিপদে আপদে বা দু:খ দুর্দশায় ও দুর্ভিক্ষে নিক্ষেপ করা হয় যাতে তারা বিনম্র হয়ে সঠিক পথে ফিরে আসে  :

রাসুলগণ  চাইলেই কাউকে হেদায়েত দান করতে পারেন না, হেদায়েত দান করার মালিক আল্লাহ:

প্রত্যেক জাতির নিকট ইসলাম ও ঈমানের দাওয়াত পৌছানো হবে : এটা আল্লাহর দায়িত্ব:

ইসলামের দাওয়াতকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত বাতিল ব্যক্তিবর্গ সর্বদাই তাদের ক্ষমতার প্রতি হুমকি স্বরূপ দেখে থাকে :

ইসলামের দাওয়াতকে রাষ্ট্রক্ষমতার দাবী বলেই মনে করা হবে : রাষ্ট্রক্ষমতা লাভের দাবী ছাড়া ইসলামের দাওয়াত ভিত্তিহীন :

দাওয়াতী কাজকে পাগলামী বলা হয়েছে :

দায়িত্ব :  (বিস্তারিত দেখুন :   ব > বোঝা )

দিন সংখ্যা:

দৃষ্টিশক্তি :

দৃষ্টিবিভ্রম :

যদি অবিশ্বাসীদের জন্য আকাশের দরজা খুলে দেওয়া হতো, তবুও তারা বিশ্বাস স্থাপন করতো না :

যেদিন দৃষ্টি পাথর হয়ে যাবার উপক্রম হবে :

জ্ঞানী ও জ্ঞানহীনদের দৃষ্টি শক্তির পার্থক্য :

দৃষ্টান্ত :

দৃঢ়তা :

দ্বীন প্রতিষ্ঠাকারী ও দাওয়াতদানকারীদের দৃঢ়তা প্রয়োজন :

নবী রাসুলগণ সীরাতল মুস্তাক্বীমের উপর মজবুত ছিলেন, এটা আল্লাহরই দেওয়া অনুগ্রহের ফল :

সামান্য দু:খ কষ্টে বা বিপদে আপদে পড়লেই যারা আল্লাহর পথ থেকে দুরে সরে যায়  :ইবাদতের ক্ষেত্রে যারা ইস্তেক্বামাত / দৃঢ়তা অবলম্বন করে না : তাদের দুনিয়া আখিরাত উভয়ই বরবাদ :

আনন্দের সময় আল্লাহকে স্মরন করোনা, অথচ দু:খে পতিত হলে আল্লাহকে দোষারোপ কর :

সমগ্র জীবন ব্যবস্থার উপর ও জিহাদের ময়দানে উভয় স্থানেই ইস্তেক্বামাত অবলম্বন করার সঠিক পদ্ধতি :

জিহাদের ময়দানে দৃঢ়তা :

দরজা :

জাহান্নামের দরজা :

আকাশের দরজা :

দেখা :

আল্লাহকে প্রকাশ্যে দেখতে চাওয়া এবং তার পরিণাম :

আল্লাহ এবং ফেরেশতাদেরকে যেসব অবিশ্বাসীরা দেখতে চায়, তারা অহংকারী এবং তাদের পরিণতি :

জ্ঞানী ও জ্ঞানহীনদের দৃষ্টি শক্তির পার্থক্য :

দেখার ও শুনার শক্তি আল্লাহর কতৃত্বে রয়েছে :

আল্লাহ সবকিছু শোনেন ও দেখেন: এর প্রকৃত স্বরূপ কি ? :

আল্লাহ তার বান্দাদের সমস্ত কার্যকলাপ দেখছেন এবং তা রেকর্ড হচ্ছে:

সমস্ত কিছুই আল্লাহর দৃষ্টির আওতার মধ্যে আছে

হে মুহাম্মদ তোমাকে আল্লাহ দেখছেন :  (তুমি নিজেকে একা অথবা অসহায় ভেবোনা):

দেশ  / দেশপ্রেম

দেশের আয়তন :

নির্বাসন / দেশান্তর  / দেশত্যাগ:

দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ, কিন্তু দেশপ্রেমের সীমা কতটুকু ?

দেশ ও জাতির ইবাদত বনাম আল্লাহর ইবাদত :

দেয়াল :

ভগ্ন দেয়াল :

দেয়াল / প্রাচীর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে, ইয়াজুজ মাজুজ যেন সভ্য দুনিয়ায় না আসতে পারে :

গলিত লোহা ও তামার দ্বারা নির্মিত প্রাচীর :

দেরী :

অপরাধীদেরকে / কাফিরদিগকে শাস্তি দিতে আল্লাহর দেরী হওয়ার কারণ কি ?

দেহ :

দোয়া / দোওয়া  :  আরো দেখুন:  ড >  ডাকা,  চ  >  চাওয়া ,

দোয়া প্রার্থনার প্রয়োজনীয়তা :

আল্লাহ দোয়া কবুল করেন, আল্লাহকে ডাকলে আল্লাহ শুনেন :

ঈমানদারদের পরিচয় : তারা আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ডাকে না, আর কারো নিকট কিছু চায়  না:

আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ডেকোনা, কারণ ডাকে সাড়া দেবার ক্ষমতা তাদের নেই: এবং আল্লাহর মালিকানায় তাদের কোন অংশীদারিত্বও  নেই :

বিনয়ী লোকদের জন্য সুসংবাদ: আর বিনয়ী লোকদের পরিচয় হচ্ছে : আল্লাহর নাম স্মরণ করা হলে তাদের হৃদয় কেঁপে ওঠে:

তোমরা যেসব মিথ্যা অভিযোগ তৈরী করছো তার বিরুদ্ধে দয়াময় আল্লাহই সাহায্যকারী :

রিয়াদুস সালেহীন : আত্মসমালোচনা অধ্যায় ::

নবীদের দোওয়া কবুল হয় :  আরো দেখুন : দ > দোয়া > আল্লাহ দোয়া কবুল করেন।

আল্লাহর কাছে চেয়ে কেউ বিফল হয় না, যদি সে ঈমানদার হয় :

দোয়া কবুল হওয়ার শর্তাবলী :

১। আল্লাহর বন্দেগী কর  ২। আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো :

দোয়া করার মাধ্যমে কি নবুওয়াত লাভ করা যায় ?

উত্তর : না, যায়না, তবে একজন নবীর দোয়ায় আরেকজনকে সহযোগী হিসেবে নবুওয়াত দান করা হয়েছে : তিনি হযরত হারুন আ:

আল কুরআনে বর্ণিত দোয়াসমূহ :

পরিবার পরিজনদের জন্য দোয়া :

লূত আ: এর দোয়া : সমাজের অসৎ নিয়ম নীতি ও অভ্যাসের ছোয়া থেকে বেঁচে থাকার দোয়া :

নতুন স্থানে গমন / বিদেশ ভ্রমন / অবতরণের সময়ের দোয়া :

২। মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের বিরুদ্ধে দোয়া :

দাওয়াতদানকারী ও জিহাদকারীদের দোয়া :

তোমরা যেসব মিথ্যা অভিযোগ তৈরী করছো তার বিরুদ্ধে দয়াময় আল্লাহই আমার সাহায্যকারী :

ইসলাম বিরোধীদের বিপক্ষে নবীদের দোয়া সমূহ :

আল্লাহর কাছে দোয়া করার / কিছু চাওয়ার পদ্ধতি :

১। আল্লাহকে ডাকো ভীতি ও আশা সহকারে :

২। সৎকাজ করতে থাকো, সৎকাজকে ওসীলা বানাও :

৩। নিজের গুণাহ স্বীকার করে ক্ষমা চাও, অসৎ পথ থেকে ফিরে আসো :

৪। আল্লাহর কাছে নতযানু হয়ে যাও : আল্লাহর গুণাবলী বর্ণনা করে দোয়া কর :

৫। ধৈয্য, নামায   ও সার্বক্ষণিক আল্লাহর জিকরের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা কর :

নবীগণের দোয়া সমূহ :

হুদ আ: এর দোয়া :

হযরত ইব্রাহিম আ:  এর দোয়া সমূহ :

হযরত ইব্রাহীম আ: এর তার পিতার জন্য দোয়া করার স্বরূপ :

হযরত মূসা আ: এর দোয়া সমূহ :

বক্ষ প্রশস্ত করে দেওয়ার দোয়া :

জ্ঞান লাভ করার জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া :

আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করার তৌফিক চেয়ে আল্লাহর নিকট দোয়া করা :

গুহাবাসী যুবকদের দোয়া :

দোয়া ইউনুছ :  আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই এ কথার স্বীকৃতি :

সন্তান লাভের  জন্য  হযরত যাকারিয়া আ: এর দোয়া :

পিতা মাতার জন্য দোয়া :

সৎকাজ করার তৌফিক লাভের জন্য দোয়া : সৎ লোকদের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার জন্য দোয়া :

ইসলাম গ্রহণ করার পর সাবার রানীর দোয়া: (হযরত সুলাইমান আ: এর ঘটনায়):

দোয়ার বদৌলতে কি নবুওত লাভ করা যায় ?

ইনশাআল্লাহ বলতে ভুলে গেলে যে দোয়া পড়তে হবে :

আল্লাহ ব্যতীত অন্য  কারো নিকট কারো নিকট চাওয়া বা অন্য কাউকে ডাকার স্বরূপ  :

কাফেরদের দোয়া কি কবুল হবে ?

আল্লাহর কাছে চেয়ে কেউ বিফল হয় না, যদি সে ঈমানদার হয় :

বিপদ পড়লে আল্লাহকে ডাকে আর বিপদ কেটে গেলেই আল্লাহকে ভুলে যায় ও শিরক করতে থাকে: আরো দেখুন : বিপদ :

শয়তান আল্লাহর নিকট দোয়া করল এবং আল্লাহ শর্ত সাপেক্ষে সে দোয়া কবুল করে নিলেন :

চাইতে হবে শুধু আল্লাহর কাছেই :

আল্লাহ তার বান্দার ডাকে সাড়া দেন:

আল কুরআনে বর্ণিত দোয়া সমূহ :

রাব্বিগফির ওয়ারহাম :

রাষ্ট্র ক্ষমতার সহায়তা অথবা রাষ্ট্র ক্ষমতা লাভের জন্য দোয়া :

পিতা-মাতার জন্য দোয়া :

সন্তান লাভের জন্য দোয়া : আরো দেখুন : দ > দোয়া :

সৎ সন্তান লাভের জন্য দোয়া :

আল্লাহর পথে বাধা দানকারীদের জন্য নবীর বদদোয়া :

আ’রাফ বাসীদের দোয়া :

জান্নাত বাসীদের দোয়া :

উত্তম ফায়সালা লাভের জন্য দোয়া

গর্ভস্থিত সন্তানের জন্য দোয়া :

জিহাদকারীদের দোয়া :

মৃত্যু যেন মুসলমান অবস্থায় হয় সে জন্য দোয়া :

সবরের জন্য দোয়া :

কারাগারে যাওয়ার জন্য স্ব্প্রনোদিত দোয়া তবুও যাতে জ্বিনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়:

নূহ আ: এর দোয়া :

সুলায়মান আ: এর দোয়া সমূহ :

১। আল্লাহর অনুগ্রহের শোকর আদায় করার তৌফিক লাভের জন্য দোয়া :

২। পিতা মাতার জন্য দোয়া :

দু:খ  দুর্দশা :

অনেক সময় আল্লাহ মানুষের দু:খ দুর্দশা দুর করেন না, এটাও আল্লাহর করুনা স্বরূপ :

আনন্দের সময় আল্লাহকে স্মরন করোনা, অথচ দু:খে পতিত হলে আল্লাহকে দোষারোপ কর :

যারা সামান্য দু:খ কষ্টে পতিত হলেই আল্লাহর পথ থেকে দুরে সরে যায় : ইস্তেক্বামাত অবলম্বন করে না :

দুর্ভিক্ষ :

দুধ :

গবাদি পশুর মধ্যে দুধের সৃষ্টি, যা মানুষের পান করার জন্য আল্লাহ ব্যবস্থা করেছেন :

বুকের দুধ :

ধাত্রী প্রথা / স্তন্যপান করানোর জন্য সন্তান অন্য মহিলার নিকট সোপর্দ করা :

কিয়ামতের দিনের ভয়বহতায় মা  তার দুধপানরত শিশুকে ভুলে যাবে :

দুনিয়া :

মানুষ দুনিয়ার কেবল বাহ্যিক দিকটাই দেখে :

দুনিয়ার জীবনে অপরের শোভা সৌন্দর্য ও জাকজমক দেখে তা কামনা করা কতটুকু বৈধ?  :

কাফেরদেরকে অল্পকালেরজন্য দুনিয়া ভোগ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তারপর তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তদ শাস্তি:

দুনিয়া ও আখিরাত : উভয়েরই প্রয়োজন রয়েছে : ইসলামে বৈরাগ্যবাদ তথা দুনিয়াত্যাগী হওয়া হারাম :

দুনিয়ার জীবন একটা খেলা ও মনভুলানো সামগ্রী মাত্র, আসল জীবন হচ্ছে পরকাল:

দুনিয়ার জীবন প্রতারনা- এর অর্থ কি ? দুনিয়ার জীবন সম্পর্কে ভুল ধারাণা সমূহ :

দুনিয়ার জীবনে দীর্ঘ হায়াত পেয়ে কি কোন লাভ আছে, যদি ঈমান গ্রহণ না করা হয় ?

দুনিয়া সম্বন্ধে অবিশ্বাসীদের দৃষ্টি ভঙ্গি :

১। পরকাল অসম্ভব, দুনিয়ার জীবনেই আমরা মরি বাঁচি, সবকিছু এখানেই :

দুনিয়াতেও প্রশংসা আল্লাহর, আখিরাতেও প্রশংসা আল্লাহর:

দুনিয়ার তুলনায় আখিরাতকে প্রাধান্য দেয়া :

মুহাম্মদ সা: এর স্ত্রীগণ দুনিয়ার তুলনায় আখিরাতকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন :

দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ই বরবাদ যে ধরণের লোকের জন্য :

যারা দুনিয়াবী কল্যাণ পেলে আল্লাহর ইবাদত করতে থাকে আর দুনিয়াবী কল্যাণ না পেলে ইবাদত করা ছেড়ে দেয় :

দুনিয়াবী জীবনের শান-শওকতের দিকে প্রকৃত মু’মিনদের দৃষ্টি দেওয়া উচিত নয় : দুনিয়ার লালসা পরিত্যাজ্য :

নিষিদ্ধ গাছের ফল ভক্ষণ করার কারণেই হযরত আদম আ: ও হাওয়া আ: কে দুনিয়ায় পাঠানো হয়েছিল, এ ধারণা ভুল : বরং এ দুনিয়ার জীবন পরীক্ষা স্বরূপ :

মানব জাতিকে দুনিয়াতে প্রেরণ করা হয়েছে, শাস্তি স্বরূপ নয়, পরীক্ষা স্বরূপ : কিন্তু কী পরীক্ষা ?

দুনিয়াবী আগুন তথা হালাল রিজিক্ব / আছবাব সংগ্রহ করতে গিয়ে মুসা আ: আখেরাতের পথের সন্ধান লাভ তথা নবুওয়াত লাভ :

দুনিয়াতে মানুষের প্রথম পদার্পন :

পরকালে অবিশ্বাসী ব্যক্তি পুনরায় দুনিয়াতে ফেরত আসতে চাইবে : এবং পরীক্ষার ক্ষেত্রে এটা অযৌক্তিক :

অসৎ পন্থায় দুনিয়াবী সৌন্দর্য কামনা করা :

দুনিয়ার সাজ সরঞ্জাম পরীক্ষার বস্তু :

দুনিয়াতে মুমিনরাই পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র জীবন লাভ করবে :

দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জাহানের কল্যাণ চাও :

দুনিয়া ও আখিরাতে উভয় জাহানে যারা কল্যাণ লাভ করবে :

দুনিয়া পরিত্যাগ: দাওয়াতী কাজ করলে কি দুনিয়া পরিত্যাগ করতে হয় ? :

দুনিয়াতে কাফেরদেরও কিছুদিন সুখভোগ করার সুযোগ দেয়া হবে :

দুনিয়া জীবন ধোকা ছাড়া আর কিছুই নয়  :

যারা শুধুমাত্র দুনিয়ার জীবন কামনা করে : তাদের পরিণাম :

দুনিয়াতে শাস্তি :

তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেওয়া হয়, তারা সুপথ পায়না :

দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের জীবনের উপর প্রাধান্য দেওয়া :

দুনিয়ার জীবনের উপমা :

দুনিয়ার জীবন চিরন্তন নয় :

দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী এবং তার স্বরূপ :

দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনের তুলনামূলক আলোচনা :

দুনিয়ার চাকচিক্য শ্রেষ্ঠত্বের ও সততার মাপকাঠি নয় :

দুনিয়ার জীবন খেল তামাশা :

দুনিয়ার জীবন প্রতারণার উপকরণ ছাড়া আর কিছুই নয় :

দুনিয়ার সুখ স্বাচ্ছন্দের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়েই শয়তান মানুষকে পথভ্রষ্ট করবে, এটা শয়তানের চ্যালেঞ্জ :

আল্লাহর পক্ষ থেকে শয়তানকে দেয়া জবাব :

দুনিয়ার জীবন দুদিনের :

দুনিয়ার জীবনে কাফিরদের/ইসলামের দাওয়াতগ্রহণে অস্বীকারকারীদের আনন্দ উল্লাসের স্বরূপ :

দুনিয়ায় সংকীর্ণ জীবন হবে কাদের ? যারা আল্লাহর হুকুম মানেনা :

দুনিয়াতে বিপর্যয় সৃষ্টির কারণ সমূহ : এবং বিপর্যয় সৃষ্টি না করার জন্য নির্দেশ :

জালিমরা কেবল দুনিয়াতেই শাস্তি দিতে পারে :

জান্নাতের অবস্থান কোথায় হবে ? এ দুনিয়াটাকেই কি জান্নাতে পরিণত করা হবে ?

দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা রয়েছে কাদের জন্য ?

কিছু লোক বিতর্ক করে যাতে লোকদেরকে  আল্লাহর পথ থেকে ভ্রষ্ট করা যায় :

যারা ধনসম্পদ ও জনবলের অহংকারে ঈমান আনেনা বরং ইসলামের ক্ষতি সাধনে লিপ্ত :

দুনিয়াবী  পুরস্কার :

সৎকর্মশীলদের দুনিয়াবী পুরস্কার:

১। আল্লাহর পক্ষ থেকে জমীনের খিলাফত লাভ :

২। হযরত ইব্রাহীম আ: এর দুনিয়াবী পুরস্কার : চার হাজার বছর ধরে দুনিয়ায় তার নাম উচ্চকিত ও উচ্চারিত হচ্ছে :

৩। সততার দুনিয়াবী পুরস্কার : আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রকৃত হিকমত ও জ্ঞান লাভ করা যায় :

দুনিয়াতে পরিণাম : বিভিন্ন কাফের জাতির :

দুর্বল  / দুর্বলতা  :

জিহাদের ময়দানে কোনরূপ দুর্বলতা দেখানো যাবে না : ইস্তেক্বামাত অবলম্বন করতে হবে :

আত্মসমালোচনা অধ্যায় ::

দুর্ভাগ্য :

দৌড়াও  / দৌড়ানো :

দৌড় প্রতিযোগিতা :

দুর্বল :

দুর্বলদেরকেও তাদের ঈমান ও সৎকর্মের কারণে আল্লাহ জমিনে প্রতিষ্ঠিত করলেন এবং রাষ্ট্রক্ষমতা দান করলেন এবং সবলদেরকে তাদের বেঈমানির জন্য ক্ষমতাচ্যুত করলেন :

দ্রুতকামী :

মানুষ বড়ই ত্বরা প্রবণ :

দালান  / দালান কোঠা / ইমারত :

 1| †`vqv mg~n 2| Avjøvni Kv‡Q †`vqv/cÖv_©bv Kivi wbqg

1| `j ,  2| `vwqZ¡, 3| `ywbqv, `ywbqv‡Z wec`-Avc`, wech©q, aŸsm, kvw¯Í 4| `vIqvZ, 4.1,  `vIqvZx Kv‡Ri bxwZ mg~n, 4.2, `vIqvZx Kv‡Ri †ÿ‡Î Avjøvn&i wb‡Ri GKwU bxwZ , 4.3|   `vIqvZx KvR I wRnv` Kivi mydj mg~n  4.4| Øxb cÖwZôv Kiv ,  4.5| `viæj Bmjvg I `viæj Kzdi (Bmjvgx ivóª I Kzdix ivóª) : 4.6| Øxbx fvB ,

5| `vwi`ªZv, `vwi`ªZvi fq ,  7:155,


দরূদ :

তোমরা মুহাম্মদ সা: এর প্রতি দরূদ  সালাম পাঠাও :

(৩৩-আহযাব:৫৬.) আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি দরূদ পাঠান।১০৬ হে ঈমানদারগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠাও।১০৭

১০৬) আল্লাহর পক্ষ থেকে নবীর প্রতি দরূদের অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ‌ নবীর প্রতি সীমাহীন করুণার অধিকারী। তিনি তাঁর প্রশংসা করেন। তাঁর কাজে বরকত দেন। তাঁর নাম বুলন্দ করেন। তাঁর প্রতি নিজের রহমতের বারি বর্ষণ করেন। ফেরেশতাদের পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি দরূদের অর্থ হচ্ছে, তাঁরা তাঁকে চরমভাবে ভালোবাসেন এবং তাঁর জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, আল্লাহ‌ যেন তাঁকে সর্বাধিক উচ্চ মর্যাদা দান করেন, তাঁর শরীয়াতকে প্রসার ও বিস্তৃতি দান করেন এবং তাঁকে একমাত্র মাহমুদ তথা সবোর্চ্চ প্রশংসিত স্থানে পৌঁছিয়ে দেন। পূর্বাপর বিষয়বস্তুর প্রতি দৃষ্টি দিলে এ বর্ণনা পরম্পরায় একথা কেন বলা হয়েছ তা পরিষ্কার অনুভব করা যায়। তখন এমন একটি সময় ছিল যখন ইসলামের দুশমনরা এ সুস্পষ্ট জীবন ব্যবস্থার বিস্তার ও সম্প্রসারণের ফলে নিজেদের মনের আক্রোশ প্রকাশের জন্য নবী করীমের  বিরুদ্ধে একের পর এক অপবাদ দিয়ে চলছিল এবং তারা নিজেরা একথা মনে করছিল যে, এভাবে কাঁদা ছিটিয়ে তারা তাঁর নৈতিক প্রভাব নির্মূল করে দেবে। অথচ এ নৈতিক প্রভাবের ফলে ইসলাম ও মুসলমানরা দিনের পর দিন এগিয়ে চলছিল। এ অবস্থায় আলোচ্য আয়াত নাযিল করে আল্লাহ‌ দুনিয়াকে একথা জানিয়ে দেন যে, কাফের, মুশরিক ও মুনাফিকরা আমার নবীর দুর্নাম রটাবার এবং তাঁকে অপদস্ত করার যতই প্রচেষ্টা চালাক না কেন শেষ পর্যন্ত তারা ব্যর্থ হবে। কারণ আমি তাঁর প্রতি মেহেরবান এবং সমগ্র বিশ্ব-জাহানের আইন ও শৃংখলা ব্যবস্থা যেসব ফেরেশতার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে তারা সবাই তাঁর সহায়ক ও প্রশংসাকারী। আমি যেখানে তাঁর নাম বুলন্দ করছি এবং আমার ফেরেশতারা তার প্রশংসাবলীর আলোচনা করছে সেখানে তাঁর নিন্দাবাদ করে তারা কি লাভ করতে পারে? আমার রহমত ও বরকত তাঁর সহযোগী এবং আমার ফেরেশতারা দিনরাত দোয়া করছে, হে রব্বুল আলামীন! মুহাম্মাদের  মর্যাদা আরো বেশী উঁচু করে দাও এবং তাঁর দ্বীনকে আরো বেশী প্রসারিত ও বিকশিত করো। এ অবস্থায় তারা বাজে অস্ত্রের সাহায্যে তাঁর কি ক্ষতি করতে পারে?

১০৭) অন্য কথায় এর অর্থ হচ্ছে, হে লোকেরা! মুহাম্মাদ রসূলুল্লাহর বদৌলতে তোমরা যারা সঠিক পথের সন্ধান পেয়েছো তারা তাঁর মর্যাদা অনুধাবন করো এবং তাঁর মহা অনুগ্রহের হক আদায় করো। তোমরা মূর্খতার অন্ধকারে পথ ভুলে বিপথে চলছিলে, এ ব্যক্তি তোমাদের জ্ঞানের আলোক বর্তিকা দান করেছেন। তোমরা নৈতিক অধঃপতনের মধ্যে ডুবেছিলে, এ ব্যক্তি তোমাদের সেখান থেকে উঠিয়েছেন এবং তোমাদের মধ্যে যোগ্যতা সৃষ্টি করে দিয়েছেন, যার ফলে আজ মানুষ তোমাদেরকে ঈর্ষা করে। তোমরা বর্বর ও পাশবিক জীবন যাপন করছিলে, এ ব্যক্তি তোমাদের সর্বোত্তম মানবিক সভ্যতা ও সংস্কৃতির সাজে সুসজ্জিত করেছেন। তিনি তোমাদের ওপর এসব অনুগ্রহ করেছেন বলেই দুনিয়ার কাফের ও মুশরিকরা এ ব্যক্তির বিরুদ্ধে আক্রোশে ফেটে পড়ছে। নয়তো দেখো, তিনি কারো সাথে ব্যক্তিগতভাবে কোন দুর্ব্যবহার করেননি। তাই এখনি তোমাদের কৃতজ্ঞতার অনিবার্য দাবী হচ্ছে এই যে, তারা এ আপাদমস্তক কল্যাণ ব্রতী ব্যক্তিত্বের প্রতি যে পরিমাণ হিংসা ও বিদ্বেষ পোষণ করে ঠিক একই পরিমাণ বরং তার চেয়ে বেশী ভালোবাসা তোমরা তাঁর প্রতি পোষণ করো। তারা তাঁকে যে পরিমাণ ঘৃণা করে ঠিক ততটাই বরং তার চেয়ে বেশীই তোমরা তাঁর প্রতি অনুরক্ত হবে। তারা তাঁর যতটা নিন্দা করে ঠিক ততটাই বরং তার চেয়ে বেশী তোমরা তাঁর প্রশংসা করো। তারা তাঁর যতটা অশুভাকাংখী হয় তোমরা তার ঠিক ততটাই বরং তার চেয়ে বেশী শুভাকাংখী হয়ে যাও এবং তাঁর পক্ষে সেই একই দোয়া করো যা আল্লাহর ফেরেশতারা দিনরাত তাঁর জন্য করে যাচ্ছে, হে দোজাহানের রব! তোমার নবী যেমন আমাদের প্রতি বিপুল অনুগ্রহ করেছেন তেমনি তুমিও তাঁর প্রতি অসীম ও অগণিত রহমত বর্ষণ করো, তাঁর মর্যাদা দুনিয়াতেও সবচেয়ে বেশী উন্নত করো এবং আখেরাতেও তাঁকে সকল নৈকট্য লাভকারীদের চাইতেও বেশী নৈকট্য দান করো।

এ আয়াতে মুসলমানদেরকে দুটো জিনিসের হুকুম দেয়া হয়েছে। একটি হচ্ছে, সাল্লু আলাইহে অর্থাৎ তাঁর প্রতি দরূদ পড়ো। অন্যটি হচ্ছে, ওয়া সাল্লিমূ তাসলীমা অর্থাৎ তাঁর প্রতি সালাম ও প্রশান্তি পাঠাও।

সালাত শব্দটি যখন আলা অব্যয় সহকারে বলা হয় তখন এর তিনটি অর্থ হয়ঃ এক, কারো অনুরক্ত হয়ে পড়া। দুই, কারো প্রশংসা করা। তিন, কারো পক্ষে দোয়া করা। এ শব্দটি যখন আল্লাহর জন্য বলা হবে তখন একথা সুস্পষ্ট যে, তৃতীয় অর্থটির জন্য এটি বলা হবে না। কারণ আল্লাহর অন্য কারো কাছে দোয়া করার ব্যাপারটি একেবারেই অকল্পনীয়। তাই সেখানে অবশ্যই তা হবে শুধুমাত্র প্রথম দুটি অর্থের জন্য। কিন্তু যখন এ শব্দ বান্দাদের তথা মানুষ ও ফেরেশতাদের জন্য বলা হবে তখন তা তিনটি অর্থেই বলা হবে। তার মধ্যে ভালোবাসার অর্থও থাকবে, প্রশংসার অর্থও থাকবে এবং দোয়া ও রহমতের অর্থও থাকবে। কাজেই মুমিনদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষে সাল্লু আলাইহে-এর হুকুম দেয়ার অর্থ হচ্ছে এই যে, তোমরা তাঁর ভক্ত-অনুরক্ত হয়ে যাও তাঁর প্রশংসা করো এবং তাঁর জন্য দোয়া করো।

সালাম শব্দেরও দুটি অর্থ হয়। এক সবরকমের আপদ-বিপদ ও অভাব অনটন মুক্ত থাকা। এর প্রতিশব্দ হিসেবে আমাদের এখানে সালামতি বা নিরাপত্তা শব্দের ব্যবহার আছে, দুই, শান্তি, সন্ধি ও অবিরোধিতা। কাজেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষে সাল্লিমূ তাসলিমা বলার একটি অর্থ হচ্ছে, তোমরা তাঁর জন্য পূর্ণ নিরাপত্তার দোয়া করো। আর এর দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, তোমরা পুরোপুরি মনে প্রাণে তাঁর সাথে সহযোগিতা করো, তাঁর বিরোধিতা করা থেকে দূরে থাকো এবং তাঁর যথার্থ আদেশ পালনকারীতে পরিণত হও।

এ হুকুমটি নাযিল হবার পর বহু সাহাবী রসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেন, হে আল্লাহর রসূল! সালামের পদ্ধতি তো আপনি আমাদের বলে দিয়েছেন। (অর্থাৎ নামাযে আসসালামু আলাইকা আইয়ূহান নাবীয্যু ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ এবং দেখা সাক্ষাত হলে আসসালামু আলাইকা ইয়া রসূলুল্লাহ বলা।) কিন্তু আপনার প্রতি সালাত পাঠাবার পদ্ধতিটা কি? এর জবাবে নবী করীম  বিভিন্ন লোককে বিভিন্ন সময় যেসব দরূদ শিখিয়েছেন তা আমি নিচে উদ্ধৃত করছিঃ

কাব ইবনে উজরাহ (রা.) থেকেঃ

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ

এ দরূদটি সামান্য শাব্দিক বিভিন্নতা সহকারে হযরত কাব ইবনে উজ্ রাহ (রাঃ) থেকে বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে ইমাম আহমাদ, ইবনে আবী শাইবাহ, আবদুর রাজ্জাক, ইবনে আবী হাতেম ও ইবনে জারীরে উদ্ধৃত হয়েছে। ‌‍

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকেঃ তাঁর থেকেও হালকা পার্থক্য সহকারে ওপরে বর্ণিত একই দরূদ উদ্ধৃত হয়েছে। (ইবনে জারীর)

আবু হুমাইদ সায়েদী (রাঃ ) থেকেঃ

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ أَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ أَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ

(মুআত্তা ইমাম মালেক, মুসনাদে আহমাদ, বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ, আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ)

আবু মাসউদ বদরী (রাঃ) থেকেঃ

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ فَى الْعَالَمِينَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ

(মালেক, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, আহমদ, ইবনে জারীর, ইবনে হাব্বান ও হাকেম)

আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকেঃ

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَرَسُولِكَ ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ-

(আহমাদ, বুখারী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ)

বুরাইদাতাল খুযাঈ থেকেঃ

اللَّهُمَّ اجْعَلْ صَلَوَاتِكَ وَرَحْمَتَكَ وَبَرَكَاتِكَ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا جَعَلْتَهَا عَلَى إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ-

(আহমাদ, আবদ ইবনে হুমাইদ ও ইবনে মারদুইয়া)

হযরত আবু হুরাইরাহ (রাঃ ) থেকেঃ

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ وَبَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ آلِ إِبْرَاهِيمَ فِى الْعَالَمِينَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ- (নাসাঈ)

হযরত তালহা (রাঃ) থেকেঃ

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ (ইবনে জারীর)

এ দরূদগুলো শব্দের পার্থক্য সত্ত্বেও অর্থ সবগুলোর একই। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। এ বিষয়গুলো ভালোভাবে অনুধাবন করতে হবে।

প্রথমত, এসবগুলোতে নবী করীম  মুসলমানদেরকে বলেছেন, আমার ওপর দরূদ পাঠ করার সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হচ্ছে এই যে, তোমরা আল্লাহর কাছে এ মর্মে দোয়া করো, হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদের  ওপর দরূদ পাঠাও। অজ্ঞ লোকেরা, যাদের অর্থজ্ঞান নেই, তারা সঙ্গে সঙ্গেই আপত্তি করে বসে যে, এতো বড়ই অদ্ভূত ব্যাপার যে, আল্লাহ‌ তো আমাদের বলছেন তোমরা আমার নবীর ওপর দরূদ পাঠ করো কিন্তু অপর দিকে আমরা আল্লাহকে বলছি তুমি দরূদ পাঠাও। অথচ এভাবে নবী  লোকদেরকে একথা বলেছেন যে, তোমরা আমার প্রতি সালাতের হক আদায় করতে চাইলেও করতে পারো না, তাই আল্লাহরই কাছে দোয়া চাও যেন তিনি আমার প্রতি দরূদ পাঠান। একথা বলা নিষ্প্রয়োজন, আমরা নবী করীমের  মর্যাদা বুলন্দ করতে পারি না। আল্লাহই বুলন্দ করতে পারেন। আমরা নবী করীমের  অনুগ্রহের প্রতিদান দিতে পারি না। আল্লাহই তার প্রতিদান দিতে পারেন। আমরা নবী করীমের  কথা আলোচনাকে উচ্চমাপে পৌঁছাবার এবং তাঁর দ্বীনকে সম্প্রসারিত করার জন্য যতই প্রচেষ্টা চালাই না কেন আল্লাহর মেহেরবানী এবং তাঁর সুযোগ ও সহায়তা দান ছাড়া তাতে কোন প্রকার সাফল্য অর্জন করতে পারি না। এমন কি নবী করীমের  প্রতি ভক্তি ভালোবাসাও আমাদের অন্তরে আল্লাহরই সাহায্যে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। অন্যথায় শয়তান নাজানি কত রকম প্ররোচনা দিয়ে আমাদের তাঁর প্রতি বিরূপ করে তুলতে পারে। اعاذنا الله من ذلك- ---আল্লাহ‌ আমাদের তা থেকে বাঁচান। কাজেই নবী করীমের  ওপর দরূদের হক আদায় করার জন্য আল্লাহর কাছে তাঁর প্রতি সালাত বা দরূদের দোয়া করা ছাড়া আর কোন পথ নেই। যে ব্যক্তি আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মাদিন বলে সে যেন আল্লাহ‌ সমীপে নিজের অক্ষমতা স্বীকার করতে গিয়ে বলে, হে আল্লাহ! তোমার নবীর ওপর সালাত বা দরূদ পাঠানোর যে কর্তব্য আমার ওপর চাপানো আছে তা যথাযথভাবে সম্পন্ন করার সামর্থ্য আমার নেই, আমার পক্ষ থেকে তুমিই তা সম্পন্ন করে দাও এবং তা করার জন্য আমাকে যেভাবে কাজে নিয়োগ করতে হয় তা তুমি নিয়োগ করো।

দ্বিতীয়ত, নবী করীমের  ভদ্রতা ও মহানুভবতার ফলে তিনি কেবল নিজেকেই এ দোয়ার জন্য নির্দিষ্ট করে নেননি। বরং নিজের সাথে তিনি নিজের পরিজন স্ত্রী ও পরিবারকেও শামিল করে নিয়েছেন। স্ত্রী ও পরিবার অর্থ সুস্পষ্ট আর পরিজন শব্দটি নিছক নবী করীমের  পরিবারের লোকদের জন্য নির্দিষ্ট নয়। বরং এর মধ্যে এমনসব লোকও এসে যায় যারা তাঁর অনুসারী এবং তাঁর পথে চলেন। পরিজন অর্থে মূলে আল শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আরবী ভাষার দৃষ্টিতে আল ও আহল --এর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে এই যে, কোন ব্যক্তির আল হচ্ছে এমন সব লোক যারা হয় তার সাথী, সাহায্যকারী ও অনুসারী, তারা তার আত্মীয় বা অনাত্মীয় হোক বা না হোক অবশ্যই তার আত্মীয়। কুরআন মজীদের ১৪টি স্থানে আলে ফেরাউন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে কোন জায়গায়ও আহল মানে ফেরাউনের পরিবারের লোকেরা নয়। বরং এমন সমস্ত লোক যারা হযরত মূসার মোকাবিলায় ফেরাউনের সমর্থক ও সহযোগী ছিল। (দৃষ্টান্ত স্বরূপ দেখুন সূরা বাকারার ৪৯-৫০, আলে ইমরানের ১১, আল আরাফের ১৩০ ও আল মুমিনূনের ৪৬ আয়াতসমুহ) কাজেই এমন সমস্ত লোকই আলে মুহাম্মাদ  এর বহির্ভূত হয়ে যায় যারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শের অনুসারী নয়। চাই, তারা নবীর পরিবারের লোকই হোক না কেন। পক্ষান্তরে এমন সমস্ত লোক ও এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় যারা নবী করীমের  পদাংক অনুসরণ করে চলে, চাই তারা নবী করীমের  কোন দূরবর্তী রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয় নাই হোক। তবে নবী পরিবারের এমন প্রত্যেকটি লোক সর্বতোভাবেই আলে মুহাম্মাদের  অন্তর্ভুক্ত হবে যারা তাঁর সাথে রক্ত সম্পর্কও রাখে আবার তাঁর অনুসারীও।

তৃতীয়, তিনি যেসব দরূদ শিখিয়েছেন তার প্রত্যেকটিতেই অবশ্যই একথা রয়েছে যে, তাঁর প্রতি এমন অনুগ্রহ করা হোক যা ইবরাহীম ও ইবরাহীমের পরিজনদের ওপর করা হয়েছিল। এ বিষয়টি বুঝতে লোকদের বিরাট সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। আলেমগণ এর বিভিন্ন জটিল ব্যাখ্যা (তাবীল) করেছেন। কিন্তু কোন একটি ব্যাখ্যাও ঠিকমতো গ্রহণীয় নয়। আমার মতে এর সঠিক ব্যাখ্যা হচ্ছে এই যে, (অবশ্য আল্লাহই সঠিক জানেন) আল্লাহ‌ হযরত ইবরাহীমের প্রতি একটি বিশেষ করুণা করেন। আজ পর্যন্ত কারো প্রতি এ ধরনের করুণা প্রদর্শন করেননি। আর তা হচ্ছে এই যে, যারা নবুওয়াত, অহী ও কিতাবকে হিদায়াতের উৎস বলে মেনে নেয় তারা সবাই হযরত ইবরাহীমের (আ) নেতৃত্বের প্রশ্নে একমত। এ ব্যাপারে মুসলমান, খৃস্টান ও ইহুদির মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই। কাজেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বক্তব্যের অর্থ হচ্ছে এই যে, যেভাবে হযরত ইবরাহীমকে মহান আল্লাহ‌ সমস্ত নবীর অনুসারীদের নেতায় পরিণত করেছেন। অনুরূপভাবে আমাকেও পরিণত করুন। এমন কোন ব্যক্তি যে নবুওয়াত মেনে নিয়েছে সে যেন আমার নবুওয়াতের প্রতি ঈমান আনা থেকে বঞ্চিত না হয়।

নবী করীমের  প্রতি দরূদ পড়া ইসলামের সুন্নাত। তাঁর নাম উচ্চারিত হলে তাঁর প্রতি দরূদ পাঠ করা মুস্তাহাব। বিশেষ করে নামাযে দরূদ পড়া সুন্নাত। এ বিষয়ে সমগ্র আলেম সমাজ একমত। সমগ্র জীবনে নবী (সা.) এর প্রতি একবার দরূদ পড়া ফরয, এ ব্যাপারে ইজমা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কারণ আল্লাহ‌ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এর হুকুম দিয়েছেন। কিন্তু এরপর দরূদের ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের মধ্যে বিভিন্ন মত দেখা দিয়েছে।

ইমাম শায়েঈ (র.) বলেন, নামাযে একজন মুসল্লী যখন শেষ বার তাশাহ্হুদ পড়ে তখন সেখানে সালাতুন আলান নবী (صلوة على النبى)পড়া ফরয। কোন ব্যক্তি এভাবে না পড়লে তার নামায হবে না। সাহাবীগণের মধ্য থেকে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.), হযরত আবু মাসউদ আনসারী (রা.), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) ও হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.), তাবেঈদের মধ্য থেকে শাবী, ইমাম মুহাম্মাদ বাকের, মুহাম্মাদ ইবনে কাব কুরযী ও মুকাতিল ইবনে হাউয়ান এবং ফকীহগণের মধ্য থেকে ইসহাক ইবনে রাহওয়াইহও এ মতের প্রবক্তা ছিলেন। শেষের দিকে ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বালও মত অবলম্বন করেন।

ইমাম আবু হানীফা (র), ইমাম মালেক (র) ও অধিকাংশ উলামা এ মত পোষণ করেন যে, দরূদ সারা জীবনে শুধুমাত্র একবার পড়া ফরয। এটি কালেমায়ে শাহাদাতের মতো। যে ব্যক্তি একবার আল্লাহকে ইলাহ বলে মেনে নিয়েছে এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রিসালাতের স্বীকৃতি দিয়েছে সে ফরয আদায় করে দিয়েছে। অনুরূপভাবে যে একবার দরূদ পড়ে নিয়েছে সে নবীর ওপর সালাত পাঠ করার ফরয আদায়ের দায়িত্ব মুক্ত হয়ে গেছে। এরপর তার ওপর আর কালেমা পড়া ফরয নয় এবং দরূদ পড়াও ফরয নয়।

একটি দল নামাযে দরূদ পড়াকে সকল অবস্থায় ওয়াজিব গণ্য করেন। কিন্তু তারা তাশাহহুদের সাথে তাকে শৃংখলিত করেন না।

অন্য একটি দলের মতে প্রত্যেক দোয়ায় দরূদ পড়া ওয়াজিব। আরো কিছু লোক নবী করীমের  নাম এলে দরূদ পড়া ওয়াজিব বলে অভিমত পোষণ করেন। অন্য একটি দলের মতে এক মজলিসে নবী করীমের  নাম যতবারই আসুক না কেন দরূদ পড়া কেবলমাত্র একবারই ওয়াজিব।

কেবলমাত্র ওয়াজিব হবার ব্যাপারে এ মতবিরোধ। তবে দরূদের ফযীলত, তা পাঠ করলে প্রতিদান ও সওয়াব পাওয়া এবং তার একটি অনেক বড় সৎকাজ হবার ব্যাপারে তো সমস্ত মুসলিম উম্মাত একমত। যে ব্যক্তি ঈমানের সামান্যতম স্পর্শও লাভ করেছে তার এ ব্যাপারে কোন প্রশ্ন থাকতে পারে না। এমন প্রত্যেকটি মুসলমানের অন্তর থেকেই তো স্বাভাবিকভাবে দরূদ বের হবে যার মধ্যে এ অনুভূতি থাকবে যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর পরে আমাদের প্রতি সবচেয়ে বড় অনুগ্রহকারী। মানুষের দিলে ঈমান ও ইসলামের মর্যাদা যত বেশী হবে তত বেশী মর্যাদা হবে তার দিলে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুগ্রহেরও। আর মানুষ যত বেশী এ অনুগ্রহের কদর করতে শিখবে তত বেশীই সে নবী করীমের  ওপর দরূদ পাঠ করবে। কাজেই বেশী বেশী দরূদ পড়া হচ্ছে একটি মাপকাঠি। এটি পরিমাপ করে জানিয়ে দেয় মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দ্বীনের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক কতটা গভীর এবং ঈমানের নিয়ামতের কতটা কদর তার অন্তরে আছে। এ কারণেই নবী  বলেছেনঃ

مَنْ صَلَّى عَلَىَّ صَلاَةً لَمْ تَزَلِ الْمَلاَئِكَةُ تُصَلِّى عَلَيْهِ مَا صَلَّى عَلَىَّ

যে ব্যক্তি আমার প্রতি দরূদ পাঠ করে ফেরেশতারা তার প্রতি দরূদ পাঠ করে যতক্ষণ সে দরূদ পাঠ করতে থাকে। (আহমাদ ও ইবনে মাজাহ)

مَنْ صَلَّى عَلَىَّ وَاحِدَةً صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ عَشْرًا

যে আমার ওপর একবার দরূদ পড়ে আল্লাহ‌ তার ওপর দশবার দরূদ পড়েন। (মুসলিম)

أَوْلَى النَّاسِ بِى يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَكْثَرُهُمْ عَلَىَّ صَلاَةً(ترمذى)

কিয়ামতের দিন আমার সাথে থাকার সবচেয়ে বেশী হকদার হবে সেই ব্যক্তি যে আমার ওপর সবচেয়ে বেশী দরূদ পড়বে। (তিরযিমী)

الْبَخِيلُ الَّذِى مَنْ ذُكِرْتُ عِنْدَهُ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَىَّ(ترمذى)

আমার কথা যে ব্যক্তির সামনে আলোচনা করা হয় এবং সে আমার ওপর দরূদ পাঠ করে না সে কৃপণ। (তিরযিমী)

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম ছাড়া অন্যের জন্য اللهم صل على فلان অথবা صلى الله عليه وسلم কিংবা এ ধরনের অন্য শব্দ সহকারে সালাত পেশ করা জায়েয কিনা, এ ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। একটি দল, কাযী ঈয়াযের নাম এ দলের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, একে সাধারণভাবে জায়েয মনে করে। এদের যুক্তি হচ্ছে, কুরআনে আল্লাহ‌ নিজেই অ-নবীদের ওপর একাধিক জায়গায় সালাতের কথা সুস্পষ্টভাবে বলেছেন। যেমন

أُولَئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِنْ رَبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ (البقرة-157) خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِمْ بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ (التوبة-103)هُوَ الَّذِي يُصَلِّي عَلَيْكُمْ وَمَلَائِكَتُهُ (الاحزاب-43)

এভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামাও একাধিকবার অ-নবীদের জন্য সালাত শব্দ সহকারে দোয়া করেন। যেমন একজন সাহাবীর জন্য তিনি দোয়া করেন الهم صل على ال ابى اوفى (যে আল্লাহ! আবু আওফার পরিজনদের ওপর সালাত পাঠাও) হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহর (রা.) স্ত্রীর আবেদনের জবাবে বলেন, صلى الله عليك وعلى زوجك (আল্লাহ তোমার ও তোমার স্বামীর ওপর সালাত পাঠান)। যারা যাকাত নিয়ে আসতেন তাদের পক্ষে তিনি বলতেন, الهم صل عليهم (হে আল্লাহ!‌ ওদের ওপর সালাত পাঠাও)। হযরত সাদ ইবনে উবাদার পক্ষে তিনি বলেন, الهم اجعل صلوتك ورحمتك على ال سعدبن عباده (হে আল্লাহ!‌ সাদ ইবনে উবাদার (রা.) পরিজনদের ওপর তোমার সালাত ও রহমত পাঠাও)। আবার মুমিনের রূহ সম্পর্কে নবী করীম  খবর দিয়েছেন যে, ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করেঃصلى الله عليك وعلى جسدك কিন্তু মুসলিম উম্মাহর অধিকাংশের মতে এমনটি করা আল্লাহ‌ ও তাঁর রসূলে জন্য তো সঠিক ছিল কিন্তু আমাদের জন্য সঠিক নয়। তারা বলেন, সালাত ও সালামকে মুসলমানরা আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। এটি বর্তমানে তাদের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। তাই নবীদের ছাড়া অন্যদের জন্য এগুলো ব্যবহার না করা উচিত। এজন্যই হযরত উমর ইবনে আবদুল আযীয একবার নিজের একজন শাসন কর্তাকে লিখেছিলেন, আমি শুনেছি কিছু বক্তা এ নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করতে শুরু করেছেন যে, তারা সালাতু আলান নাবী --এর মতো নিজেদের পৃষ্ঠপোষক ও সাহায্য কারীদের জন্যও সালাত শব্দ ব্যবহার করছেন। আমার এ পত্র পৌঁছে যাবার পরপরই তাদেরকে এ কাজ থেকে নিরস্ত করো এবং সালাতকে একমাত্র নবীদের জন্য নির্দিষ্ট করে অন্য মুসলমানদের জন্য দোয়া করেই ক্ষান্ত হবার নিদের্শ দাও। (রুহুল মাআনী) অধিকাংশ আলেম এ মতও পোষণ করেন যে, নবী করীম  ছাড়া অন্য কোন নবীর জন্যও সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যবহার করা সঠিক নয়

দল :

বিভিন্ন দল : ৬:৫৩, ১৫৯,

জামায়াত বদ্ধ হয়ে / দলবদ্ধ হয়ে দাওয়াতী কাজ  : ৩:১০৪, ১০৫, ৫:৫৪,

এক দলকে আরেক দলের দ্বারা পরীক্ষা করা : ৬:৫৩, ৬:৬৫, (এক দলকে আরেক দলের দ্বারা পরাভূত করা) ।

জাহান্নামে প্রবেশকারী প্রতিটি দল তার অনুসরণকৃত পূর্ববর্তী দলের উপর অভিশাপ করতে করতে জাহান্নামে প্রবেশ করবে : ৭:৩৮,

কিন্তু দেখো, দুনিয়াতেই আমি একটি দলকে অন্য একটির ওপর কেমন শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে রেখেছি এবং আখেরাতে তার মর্যাদা আরো অনেক বেশী হবে এবং তার শ্রেষ্ঠত্বও আরো অধিক হবে৷- (১৭:২১)

(১২:৮) এ ঘটনা এভাবে শুরু হয় : তার ভাইয়েরা পরস্পর বলাবলি করলো, “এ ইউসুফ ও তার ভাই, এরা দু’জন আমাদের বাপের কাছে আমাদের সবার চাইতে বেশী প্রিয়, অথচ আমরা একটি পূর্ণ সংঘবদ্ধ দল৷ সত্যি বলতে কি আমাদের পিতা একেবারেই বিভ্রান্ত হয়ে গেছেন৷

(১৬:৯২) তোমরা নিজেদের কসমকে পারস্পরিক ব্যাপারে ধোঁকা ও প্রতারণার হাতিয়ারে পরিণত করে থাকো, যাতে এক দল অন্য দলের তুলনায় বেশী ফায়দা হাসিল করতে পারো৷ অথচ আল্লাহ এ অংগীকারের মাধ্যমে তোমাদেরকে পরীক্ষার মুখোমুখি করেন৷

(এখানে বিশেষ করে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ধরনের অংগীকার ভংগের নিন্দা করা হয়েছে । এ ধরনের অংগীকার ভংগ দুনিয়ায় বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায় । উচ্চ পর্যায়ের বড় বড় লোকেরাও একে সৎ কাজ মনে করে এবং এর মাধ্যমে নিজেদের জাতি ও সম্পদায়ের কাছ থেকে বাহবা কুড়ায় । জাতি ও দলের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় সংঘাতের ক্ষেত্রে প্রায়ই এমনটি হতে দেখা যায় । এক জাতির নেতা এক সময় অন্য জাতির সাথে একটি চুক্তি করে এবং অন্য সময় শুধুমাত্র নিজের জাতীয় স্বার্থের খাতিরে তা প্রকাশ্যে ভংগ করে অথবা পর্দান্তরালে তার বিরুদ্ধাচরণ করে অবৈধ স্বার্থ উদ্ধার করে নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনে খুবই সত্যনিষ্ঠ বলে যারা পরিচিত, তারাই সচরাচর এমনি ধরনের কাজ করে থাকে । তাদের এসব কাজের বিরুদ্ধে শুধু যে সমগ্র জাতির মধ্য থেকে কোন নিন্দাবাদের ধ্বনি ওঠে না তা নয় বরং সব দিক থেকে তাদেরকে বাহবা দেয়া হয় এবং এ ধরনের ঠগবাজী ও ধুর্তামীকে পাকাপোক্ত ডিপ্লোমেসী মনে করা হয় । আল্লাহ এ ব্যাপারে চরিত্র ও বিশ্বস্ততার পরীক্ষা স্বরূপ । যারা এ পরীক্ষায় ব্যর্থ হবে তারা আল্লাহর আদালতে জবাবদিহির হাত থেকে বাঁচতে পারবে না । )

(১৭:৫) শেষ পর্যন্ত যখন এদের মধ্য থেকে প্রথম বিদ্রোহের সময়টি এলো তখন হে বনী ইসরাঈল! আমি তোমাদের মুকাবিলায় নিজের এমন একদল বান্দার আবির্ভাব ঘটালাম, যারা ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী এবং তারা তোমাদের দেশে প্রবেশ করে সবদিকে ছড়িয়ে পড়ে৷ এক একটি প্রতিশ্রুতি ছিল, যা পূর্ণ হওয়াই ছিল অবধারিত৷

তোমরা জামায়াত বদ্ধ/দলবদ্ধ  হয়ে থাকো, জামায়াত/দল  থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ো না :

আল্লাহর রজ্জুকে শক্ত করে ধর : ৩:১০৩,

জামায়াতের সাথে নামাজ আদায় কর : ২:৪৩,

জামায়াত বদ্ধ হয়ে দাওয়াতী কাজ : ৩:১০৪, ১০৫

জামায়াতের সাথে নামাজ আদায় করার হুকুম : ২:৪৩,

জামায়াতের/দলের  নিয়ম শৃংখলা সমূহ :

বিস্তারিত দেখুন :

১। অ > অনুমতি

২। জ > জিহাদে নেতৃত্বের আনুগত্য

৩। ন > নেতা

৪। আ > আনুগত্য

৫। দ > দল

৬। স > সামাজিকতা

দল গঠনের ভিত্তি হবে কোন জিনিস ?

(৩০-রূম: ১৪) যেদিন সেই সময়টি সমাগত হবে সেদিন (সমস্ত মানুষ) পৃথক পৃথক দলে বিভক্ত হয়ে যাবে৷ ১৮  

১৮ . অর্থাৎ দুনিয়ায় আজ জাতি, বংশ , গোত্র, স্বদেশ, ভাষা, পরিবার এবং অর্থনৈতিক রাজনৈতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট যতগুলো দলীয় বিভক্তি রয়েছে এসবই সেদিন ভেঙ্গে পড়বে। নির্ভেজাল আকীদা- বিশ্বাস ও নৈতিক কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে নতুন করে এখন ভিন্নতর দল গঠিত হবে। একদিকে সমগ্র মানব জাতির পূর্বের ও পরের সমগ্র প্রজন্মের মধ্য থেকে মুমিন ও সৎ লোকদেরকে ছেঁটে আলাদা করে নেয়া হবে এবং তাদের সবাই হবে একটি দলভুক্ত। অন্যদিকে এক ধরনের ভ্রান্ত মতবাদ ও বিশ্বাস পোষণকারী এবং এক এক ধরনের অপরাধজীবী মানুষদেরকে সেই বিশাল জনসমুদ্র থেকে ছাঁটাই বাছাই করে আলাদা করে নেয়া হবে এবং তাদের পৃথক পৃথক দল সৃষ্টি হয়ে যাবে। অন্য কথায় এভাবে বলা যায়, ইসলাম যেসব জিনিসকে এ দুনিয়ায় বিভেদ অথবা ঐক্যের ভিত্তি গণ্য করে এবং যেগুলোকে জাহেলিয়াত পন্থীরা এখানে মেনে নিতে অস্বীকার করেছে, আখেরাতে তাঁরই ভিত্তিতে বিভেদও হবে আবার ঐক্যও।

ইসলাম বলে , মানুষদেরকে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করার এবং পরস্পরের সাথে জুড়ে দেবার আসল জিনিস হচ্ছে তাঁর আকীদা- বিশ্বাস ও নৈতিক চরিত্র। যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর নির্দেশের ওপর তাদের জীবন ব্যবস্থার ভিত গড়ে তোলে তারা সবাই একই দলভূক্ত। তাদের সম্পর্ক বিভিন্ন বংশ ও দেশের সাথেও হতে পারে। অন্যদিকে কুফরী ও ফাসেকীর পথ অবলম্বনকারীরা অন্য একটি দলভুক্ত । তাদের সম্পর্ক যে কোন বংশ ও দেশের সাথেও হতে পারে। এদের উভয়ের জাতীয়তা এক হতে পারে না। এরা দুনিয়ায় সম্মিলিতভাবে একক জীবনপথ নির্মাণ করে তাঁর ওপর একসাথে চলতে পারে না। ওদিকে আখেরাতেও তাদের পরিণাম একই রকম হতে পারে না। দুনিয়া থেকে আখেরাত পর্যন্ত তাদের পথ ও মনযিল পরস্পর থেকে আলাদা হয়। পক্ষান্তরে জাহেলিয়াতপন্থীরা প্রত্যেক যুগে এ ব্যাপারে জোর দিতে থেকেছে এবং আজো তারা এ ব্যাপারে অবিচল যে, বংশ, দেশ ও ভাষার ভিত্তিতে মানুষের দলবদ্ধ হওয়া উচিত। যাদের মধ্যে এ ভিত্তিগুলোর ব্যাপারে একাত্মতা রয়েছে তাদের ধর্ম ও আকীদা- বিশ্বাসের বিভিন্নতা সত্ত্বেও এক জাতিতে পরিণত হয়ে এমনি ধরনের অন্যান্য জাতির বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হওয়া উচিত এবং জাতীয়তাবাদের এমন একটি জীবন ব্যবস্থা থাকা উচিত যেখানে তাওহীদ , শিরক ও নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাসীরা সবাই একসাথে চলতে পারে। এটিই ছিল আবু জেহেল, আবু লাহাব ও কুরাইশ সরদারদের চিন্তাধারা। তারা বারবার মুহাম্মদ (সা) এর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনছিল যে, এ ব্যক্তি এসে আমাদের জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে দিয়েছে। এ প্রেক্ষিতে কুরআন মাজীদ এখানে সতর্ক বাণী উচ্চারণ করছে যে, এ দুনিয়ার মিথ্যার ভি্ত্তিতে তোমরা এই যেসব দল গঠন করেছো এগুলো সবই শেষ পর্যন্ত ভেঙ্গে পড়বে। ইসলাম দুনিয়ার এ জীবনে যে বিশ্বাস জীবনাদর্শ ও নৈতিক চরিত্রের ভিত্তিতে পার্থক্য সৃষ্টি করতে চায় মানব জাতির মধ্যে তারি ভিত্তিতে স্থায়ী পার্থক্য গড়ে উঠবে । যাদের গন্তব্য এক নয় তাদের জীবনের পথই বা কেমন করে এক হতে পারে।

ফেরাউন তার জাতির লোকদিগকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে রেখেছিল :

(২৮-ক্বাছাছ : ৪) প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, ফেরাউন পৃথিবীতে বিদ্রোহ করে এবং তার অধিবাসীদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে দেয়৷ তাদের মধ্য থেকে একটি দলকে সে লাঞ্ছিত করতো

 (তার রাজ্য শাসনের নীতি অনুযায়ী আইনের চোখে দেশের সকল অধিবাসী সমান থাকেনি এবং সবাইকে সমান অধিকারও দেয়া হয়নি। বরং সে সভ্যতা- সংস্কৃতি ও রাজনীতির এমন পদ্ধতি অবলম্বন করেছে যার মাধ্যমে রাজ্যের অধিবাসীদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে দেয়া হয়। একদলকে সুযোগ সুবিধা ও বিশেষ অধিকার দিয়ে শাসক দলে পরিণত করা হয় এবং অন্যদলকে অধীন করে পদানত, পর্যুদস্ত , নিষ্পেষিত ও ছিন্নবিচ্ছিন্ন করা হয়।)

(আরো  দেখুন : জ > ইসলামী রাষ্ট্রে জিম্মীদের গণতান্ত্রিক অধিকার । )

সত্যপন্থী দল :

যারা যথার্থ সত্য অনুযায়ী পথনির্দেশ দেয় এবং সত্য অনুযায়ী বিচার করে : ৭:১৮০,

অপরাধীর দল জাহান্নামে প্রবেশ করার সময় প্রতিটি দল তার অনুসরণকৃত পূর্ববর্তী অপরাধী দলের উপর অভিশাপ করতে করতে জাহান্নামে প্রবেশ করবে : ৭:৩৮,

দলের মধ্যে খাটি লোক, দুর্বল ঈমানদার এবং মুনাফিকদের বাছাই করার জন্য পরীক্ষা নেয়া হয় :  

আর মূসা (তার সাথে) আমার নির্ধারিত সময়ে হাযির হবার জন্যে নিজের জাতির সত্তর জন লোককে নির্বাচিত করলো৷ যখন তারা একটি ভয়াবহ ভূমিকম্পে আক্রান্ত হলো তখন মূসা বললোঃ হে প্রভূ! তুমি চাইলে আগেই এদেরকে ও আমাকে ধ্বংস করে দিতে পারতে৷ আমাদের মধ্য থেকে কিছু নির্বোধ লোক যে অপরাধ করেছিল সে জন্যে কি তুমি আমাদের সবাইকে ধ্বংস করে দেবে? এটি তো ছিল তোমার পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা, এর মাধ্যমে তুমি যাকে চাও পথভ্রষ্ট করো আবার যাকে চাও হেদায়াত দান করো-৭:১৫৫, (এর অর্থ হচ্ছে, প্রত্যেকটি পরীক্ষাকাল মানুষের জন্যে চূড়ান্তই হয়ে থাকে। এ পরীক্ষা চালুনীর মত একটি মিশ্রিত দল থেকে কর্মঠ লোকগুলোকে বাছাই করে নিয়ে অকর্মন্য লোকগুলোকে দূরে নিক্ষেপ করে দল থেকে আলাদা করে দেয়। এই ধরনের পরীক্ষা মাঝে মাঝে আসতে থাকে, এটা আল্লাহর একটি কর্ম কৌশল। এসব পরীক্ষায় যারা সফলকাম হয় তারা মূলত আল্লাহর সাহায্য ও পথনির্দশেই সাফল্য লাভ করে থাকে। আর যারা ব্যর্থ হয় তারা আল্লাহর সাহায্য ও পথনির্দেশ থেকে বঞ্চিত হবার কারণেই ব্যর্থতার সম্মুখীন হয়। যদিও আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও পথনির্দেশনা লাভ করার ও একটি নিয়ম আছে এবং এ নিয়মটি সম্পূর্ণরূপে প্রজ্ঞা ও ইনসাফের ওপর নির্ভরশীল)  

জিহাদের ময়দানে মুনাফিকদের ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে : শত্রুরা বিজয়ী হওয়া শুরু করলে মুনাফিকরা দল বদল করে ফেলবে :

(৩৩-আহযাব: ১৪) যদি শহরের বিভিন্ন দিক থেকে শত্রুরা ঢুকে পড়তো এবং সেসময় তাদেরকে ফিতনা সৃষ্টি করার জন্য আহবান জানানো হতো, ২৬ তাহলে তারা তাতেই লিপ্ত হয়ে যেতো এবং ফিতনায় শরীক হবার ব্যাপারে তারা খুব কমই ইতস্তত করতো৷  

২৬. অর্থাৎ যদি নগরে প্রবেশ করে কাফেররা বিজয়ীর বেশে এ মুনাফিকদেরকে এই বলে আহবান জানাতো, এসো আমাদের সাথে মিলে মুসলমানদেরকে খতম করো। 

আল্লাহ  একদলকে আরেক দলের দ্বারা প্রতিহত করেন :

(হাজ্ব:৪০) .........যদি আল্লাহ লোকদেরকে একের মাধ্যমে অন্যকে প্রতিহত করার ব্যবস্থা না করতেন, তাহলে যেখানে আল্লাহর নাম বেশী করে উচ্চারণ করা হয় সেসব আশ্রম, গীর্জা, ইবাদাতখানা ৮২ ও মসজিদ ধ্বংস করে দেয়া হতো৷৮৩ 

(৮২. মূলে (আরবী) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। (আরবী) ও (আরবী) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। (আরবী) এমন জায়গাকে বলা হয় যেখানে খৃষ্টান রাহেব যোগী, সন্ন্যাসী, সংসার বিরাগী সাধুরা থাকেন। (আরবী) শব্দটি আরবী ভাষায় খৃষ্টানদের ইবাদাতগাহের জন্য ব্যবহার করা হয়। (আরবী) শব্দের অর্থ হচ্ছে ইহুদীদের নামায পড়ার জায়গা। ইহুদীরা নিজেদের ভাষায় একে বলে (আরবী) "সালওয়াতা"। এটি আরামীয় ভাষার শব্দ। বিচিত্র নয় যে, ইংরেজী ভাষার (Salute  Salutation) শব্দ এর থেকে বের হয়ে প্রথম ল্যাটিন ও পরে ইংরেজী ভাষায় পৌঁছে গেছে। 

৮৩. অর্থাৎ আল্লাহ কোন একটি গোত্র বা জাতিকে স্থায়ী কর্তৃত্ব দান কেরননি, এটি তাঁর বিরাট অনুগ্রহ। বরং বিভিন্ন সময় দুনিয়ায় একটি দলকে দিয়ে তিনি অন্য একটি দলকে প্রতিহত করতে থেকেছেন। নয়তো কোন এটি নির্দিষ্ট দল যদি কোথাও স্থায়ী কর্তৃত্ব লাভ করতো তাহলে শুধু দূর্গ, প্রাসাদ এবং রাজনীতি, শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানই ধ্বংস করে দেয়া হতো না বরং ইবাদাতগাহগুলোও বিধ্বস্ত হওয়ার হাত থেকে রেহাই পেতো না। সূরা বাকারায় এ বিষয়বস্তুকে এভাবে বলা হয়েছেঃ 

"যদি আল্লাহ লোকদেরকে একজনের সাহায্যে অন্যজনকে প্রতিহত না করতে থাকতেন তাহলে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়ে যেতো। কিন্তু আল্লাহ দুনিয়াবাসীদের প্রতি বড়ই করুণাময়।" (২৫১ আয়াত)

(বিস্তারিত দেখুন : জ > জিহাদ > সশস্ত্র যুদ্ধের অনুমতি দেওয়ার কারণ)

আপাত দৃষ্টিতে অনেকগুলি জাতি থাকলেও, কুরআনের দৃষ্টিতে দল আসলে দুটি :

(হাজ্ব:১৯) এ দুটি পক্ষ, এদের মধ্যে রয়েছে এদের রবের ব্যাপারে বিরোধ৷

(এখানে আল্লাহ সম্পর্কে বিরোধকারী সমস্ত দলগুলোকে তাদের সংখ্যাধিক্য সত্ত্বেও দু'টি পক্ষে বিভক্ত করা হয়েছে। একটি পক্ষ নবীদের কথা মেনে নিয়ে আল্লাহর সঠিক বন্দেগীর পথ অবলম্বন করে। দ্বিতীয় পক্ষ নবীদের কথা মানে না এবং তারা কুফরীর পথ অবলম্বন করে। তাদের মধ্যে বহু মতবিরোধ রয়েছে এবং তাদের কুফরী বিভিন্ন বিচিত্র রূপও পরিগ্রহ করেছে। )

তাদের অন্তর্ভূক্ত হয়ো না যারা দ্বীনের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে :

(৩০-রূম: ৩১).............এমন মুশরিকদের অন্তরভুক্ত হয়ে যেয়ো না,   (৩০-রূম: ৩২) যারা নিজেদের আলাদা আলাদা দীন তৈরি করে নিয়েছে আর বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে ৷ প্রত্যেক দলের কাছে যা আছে তাতেই তারা মশগুল হয়ে আছে৷

ঈমানদারদের দল  অস্বীকারকারী দল :

(৭:৭) যে শিক্ষা সহকারে আমাকে পাঠানো হয়েছে , তোমাদের মধ্য থেকে কোন একটি দল যদি তার প্রতি ঈমান আনে এবং অন্য একটি দল যদি তার প্রতি ঈমান না আনে তাহলে ধৈর্যসহকারে দেখতে থাকো, যতক্ষণ না আল্লাহ আমাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেন৷

দাওয়াতী কাজের ফলশ্রুতিতে যে কোন জাতি মূলত দুটি দলে বিভক্ত হয়ে যায় :

(২৭.নমল : ৪৫) আর আমি  সামূদ জাতির কাছে তাদের ভাই সালেহকে (এ পয়গাম সহকারে) পাঠালাম যে, আল্লাহর বন্দেগী করো এমন সময় সহসা তারা দু’টি বিবাদমান দলে বিভক্ত হয়ে গেলো৷৫৮ 

৫৮. অর্থাৎ সালেহ আলাইহিস সালামের দাওয়াত শুরু হবার সাথে সাথেই তাঁর জাতি দু'টি দলে বিভক্ত হয়ে গেলো। একটি দল মু'মিনদের এবং অন্যটি অস্বীকারকারীদের। এ বিভক্তির সাথে সাথেই তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাতও শুরু হয়ে গেলো। যেমন কুরআন মজীদে বলা হয়েছে :

قَالَ الْمَلَأُ الَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا مِنْ قَوْمِهِ لِلَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا لِمَنْ آَمَنَ مِنْهُمْ أَتَعْلَمُونَ أَنَّ صَالِحًا مُرْسَلٌ مِنْ رَبِّهِ قَالُوا إِنَّا بِمَا أُرْسِلَ بِهِ مُؤْمِنُونَ * قَالَ الَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا إِنَّا بِالَّذِي آَمَنْتُمْ بِهِ كَافِرُونَ -

"তার জাতির শ্রেষ্ঠত্বের গর্বে গর্বিত সরদাররা দলিত ও নিষ্পেষিত জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে বললো, সত্যই কি তোমরা জানো, সালেহ তার রবের পক্ষ থেকে পাঠানো একজন নবী৷ তারা জবাব দিল, তাকে যে জিনিস সহকারে পাঠানো হয়েছে আমরা অবশ্যই তার প্রতি ঈমান রাখি। এ অহংকারীরা বললো, তোমরা যে জিনিসের প্রতি ঈমান এনেছো আমরা তা মানি না।" (আ'রাফ ৭৫-৭৬ আয়াত)

মনে রাখতে হবে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আবির্ভাবের সাথে সাথে মক্কায়ও এ একই ধরনের অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। তখনও জাতি দু'ভাগে বিভক্ত হয়েছিল এবং সাথে সাথেই তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত শুরু হয়ে গিয়েছিল। তাই যে অবস্থার প্রেক্ষিতে এ আয়াত নাযিল হয়েছিল তার সাথে এ কাহিনী আপনা থেকেই খাপ খেয়ে যাচ্ছিল।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে শাসন  শোষণ :

(২৮-ক্বাছাছ:৪) প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, ফেরাউন পৃথিবীতে বিদ্রোহ করে  এবং তার অধিবাসীদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে দেয়৷

৪. অর্থাৎ তার রাজ্য শাসনের নীতি অনুযায়ী আইনের চোখে দেশের সকল অধিবাসী সমান থাকেনি এবং সবাইকে সমান অধিকারও দেয়া হয়নি। বরং সে সভ্যতা- সংস্কৃতি ও রাজনীতির এমন পদ্ধতি অবলম্বন করেছে যার মাধ্যমে রাজ্যের অধিবাসীদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে দেয়া হয়। একদলকে সুযোগ সুবিধা ও বিশেষ অধিকার দিয়ে শাসক দলে পরিণত করা হয় এবং অন্যদলকে অধীন করে পদানত, পর্যুদস্ত , নিষ্পেষিত ও ছিন্নবিচ্ছিন্ন করা হয়।

দলাদলি / দলীয়  কোন্দল :

 (২৭-নমল:৭৮) নিশ্চয় (এভাবে) তোমার রব তাদের মধ্যেও নিজের হুকুমের মাধ্যমে ফায়সালা করে দিবেন, তিনি পরাক্রমশালী ও সব কিছুই জানেন৷

বনী ইসরাঈলীদের সমস্ত মতভেদ   দলাদলির ফায়সালা কিয়ামতের দিন আল্লাহ করে দেবেন  :

(৩২- আস-সাজদা : ২৫) নিশ্চিতই তোমার রবই কিয়ামতের দিন সেসব কথার ফায়সালা করে দেবেন যেগুলোর ব্যাপারে তারা (বনী ইসরাঈল ) পরস্পর মতবিরোধে লিপ্ত থেকেছে৷ ৩৮  

৩৮ . এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে বনী ইসরাঈলের সর্বব্যাপী কোন্দল ও দলাদলির প্রতি। এসব কোন্দলে তারা লিপ্ত হয়েছিল ঈমান ও প্রত্যয়ের সম্পদ থেকে বঞ্চিত হবার, নিজেদের সত্যপন্থী নেতাদের আনুগত্য পরিত্যাগ করার ও বৈষয়িক স্বাথপূজারী হয়ে যাবার পর। এ অবস্থার একটি ফল তো সুস্পষ্ট। বনী ইসরাঈল কোন ধরনের লাঞ্ছনা ও অবমাননার শিকার হয়েছিল, তা সারা দুনিয়া দেখছে। দ্বিতীয় ফলটি এখন দুনিয়াবাসীরা জানে না এবং তা কিয়ামতের দিন প্রকাশিত হবে।

সালাত / স্বলাত শব্দের অর্থ কি ?

هُوَ ٱلَّذِى يُصَلِّى عَلَيْكُمْ وَمَلَـٰٓئِكَتُهُۥ لِيُخْرِجَكُم مِّنَ ٱلظُّلُمَـٰتِ إِلَى ٱلنُّورِ ۚ وَكَانَ بِٱلْمُؤْمِنِينَ رَحِيمًۭا [٣٣:٤٣] 

(৩৩-আহযাব: ৪৩) তিনিই তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁর ফেরেশতারা তোমাদের জন্য দোয়া করে, যাতে তিনি তোমাদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোকের মধ্যে নিয়ে আসেন, তিনি মুমিনদের প্রতি বড়ই মেহেরবান৷৭৯ 

৭৯) মুসলমানদের মনে এ অনুভূতি সৃষ্টি করাই এর উদ্দেশ্য যে, কাফের ও মুনাফিকদের মনের সমস্ত জ্বালা ও আক্রোশের কারণ হচ্ছে আল্লাহর রহমত, যা তাঁর রসূলের বদৌলতে তোমাদের ওপর বর্ষিত হয়েছে। এরই মাধ্যমে তোমরা ঈমানী সম্পদ লাভ করেছো, কুফরী ও জাহেলিয়াতের অন্ধকার ভেদ করে ইসলামের আলোকে চলে এসেছো এবং তোমাদের মধ্যে এমন উন্নত নৈতিক বৃত্তি ও গুণাবলীর সৃষ্টি হয়েছে যেগুলোর কারণে অন্যদের থেকে তোমাদের সুস্পষ্ট শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিভাত হচ্ছে। হিংসুটেরা রসূলের ওপর এরই ঝাল ঝাড়ছে। এ অবস্থায় এমন কোন নীতি অবলম্বন করো না যার ফলে তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে যাও।

অনুগ্রহের ভাব প্রকাশ করার জন্য মূলে সালাত (يصلى-صلوة) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। সালাত শব্দটি যখন আরো (على) অব্যয় সহকারে আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দাদের জন্য ব্যবহার করা হয় তখন এর অর্থ হয় রহমত, অনুগ্রহ, করুণা ও স্নেহশীষ। আর যখন এটি ফেরেশতাদের পক্ষ থেকে মানুষের জন্য ব্যবহৃত হয় তখন এর অর্থ হয় রহমতের দোয়া করা। অর্থাৎ ফেরেশতারা আল্লাহর কাছে মানুষের জন্য এই মর্মে দোয়া করে যে, হে আল্লাহ‌, তুমি এদের প্রতি অনুগ্রহ করো এবং তোমার দানে এদেরকে আপ্লুত করে দাও। এভাবে يُصَلِّي عَلَيْكُمْএর অর্থ এও হয় যে, يشيع عنكم الذكر الجميل فى عباد الله অর্থাৎ আল্লাহ‌ তাঁর বান্দাদের মধ্যে তোমাদেরকে খ্যাতি দান করেন এবং এমন পর্যায়ে উন্নীত করেন যার ফলে আল্লাহর সমুদয় সৃষ্টি তোমাদের প্রশংসা করতে থাকে এবং ফেরেশতারা তোমাদের প্রশংসা ও সুনামের আলোচনা করতে থাকে।

দরিদ্র :

বিবাহের ক্ষেত্রে দরিদ্রতাকে ভয় করা উচিত নয়, আল্লাহ বিবাহের পর স্বচ্ছলতা দান করবেন :

(নূর:৩২)  .....যদি তারা গরীব হয়ে থাকে , তাহলে আল্লাহ আপন মেহেরবানীতে তাদেরকে ধনী করে দেবেন, আল্লাহর বড়ই প্রাচুর্যময় ও সবজ্ঞ৷

দূর্গ :

জিহাদের ময়দানে কাফিরদের অন্তরে আল্লাহ ভয় ভীতি সৃষ্টি করে দেন  এবং এভাবে মুমিনদেরকে সহযোগিতা করেন :

(৩৩-আহযাব: ২৬) তারপর আহলি কিতাবদের মধ্য থেকে যারাই এর আক্রমণকারীদের সাথে সহযোগিতা করেছিল ৪০  তাদের দুর্গ থেকে আল্লাহ তাদেরকে নামিয়ে এনেছেন এবং তাদের অন্তরে তিনি এমন ভীতি সঞ্চার করেছেন যার ফলে আজ তাদের একটি দলকে তোমরা হত্যা করছো এবং অন্য একটি দলকে করছো বন্দী৷  ২৭) তিনি তোমাদেরকে তাদের জায়গা-জমি, ঘর-বাড়ি  ধন-সম্পদের ওয়ারিস করে দিয়েছেন এবং এমন এলাকা তোমাদের দিয়েছেন যাকে তোমরা কখনো পদানত করোনি৷ আল্লাহ সর্বময় ক্ষমতা সম্পন্ন৷

৪০. অর্থাৎ ইহুদি গোত্র বনী কুরাইযা। 

(বিস্তারিত দেখুন : জ > জিহাদ > জিহাদের ময়দানে আল্লাহর সাহায্য)


দয়া  করুনা :

(২৭) তাদের পর আমি একের পর এক আমার রসূলগণকে পাঠিয়েছি৷ তাদের সবার শেষে মারয়ামের পুত্র ঈসাকে পাঠিয়েছি, তাকে ইনজীল দিয়েছি এবং তার অনুসারীদের মনে দয়া ও করুণার সৃষ্টি করেছি৷

দয়ালু :

আল্লাহ দয়ালু  ক্ষমাশীল, কিন্তু কাদের প্রতি তিনি দয়ালু ও ক্ষমাশীল ?  

৩:৩০, ১৩৫, ১৩৬, ১৫২,

আরো দেখুন : (ক্ষ > ক্ষমা লাভের আশায় যারা গুনাহ করতে থাকে ):

(৬:১৪৭) এখন তারা যদি তোমরা কথা না মানে তাহলে তাদেরকে বলে দাও, তোমাদের রবের অনুগ্রহ সর্বব্যাপী এবং অপরাধীদের ওপর থেকে তাঁর আযাব রদ করা যেতে পারে না৷ 

(ব্যাখ্যা:  অর্থাৎ এখনো যদি তোমরা নিজেদের নাফরমানীর নীতি ও কার্যক্রম পরিহার করে বন্দেগীর সঠিক দৃষ্টিভংগী গ্রহণ করো,তাহলে তোমাদের রবের অনুগ্রহের ক্ষেত্র নিজেদের জন্য অনেক বেশী বিস্তৃত পাবে। কিন্তু যদি তোমরা নিজেদের এই অপরাধ বৃত্তি ও বিদ্রোহী মানসিকতার ওপর অবিচল থাকো তাহলে ভালভাবে জেনে রাখো, তাঁর গযব থেকে তোমাদের কেউ বাঁচাতে পারবে না।)

দিন :

আরো দেখুন : স > সংখ্যা, গ > গণনা ।

তিনিই আকাশ ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন, -যখন এর আগে তাঁর আরশ পানির ওপর ছিল,- যাতে তোমাদের পরীক্ষা করে দেখেন তোমাদের মধ্যে কে ভালো কাজ করে৷ এখন যদি হে মুহাম্মদ! তুমি বলো, হে লোকেরা, মরার পর তোমাদের পুনরুজ্জীবিত করা হবে, তাহলে অস্বীকারকারীরা সংগে সংগেই বলে উঠবে৷ এতো সুস্পষ্ট যাদু৷-১১:৭,

(১৪:৩৩) যিনি সূর্য ও চন্দ্রকে তোমাদের অনুগত করে দিয়েছেন, তারা অবিরাম চলছে এবং রাত ও দিনকে তোমাদের জন্য অনুগত করে দিয়েছেন৷

("তোমাদের জন্য অনুগত করে দিয়েছেন"কে সাধারণত লোকেরা ভুল করে "তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন"-এর অর্থে গ্রহণ করে থাকেন। তারপর এ বিষয়বস্তু সম্বলিত আয়াত থেকে বিভিন্ন অদ্ভুত ধরনের অর্থ বের করে থাকেন। এমন কি কোন কোন লোক এ থেকে এ ধারণা করে নিয়েছেন যে, পৃথিবী ও আকাশ জয় করা হচ্ছে মানুষের জীবনের মূল লক্ষ। অথচ মানুষের জন্য এসবকে অনুগত করে দেয়ার অর্থ এ ছাড়া আর কিচুই নয় যে, মহান আল্লাহ এদেরকে এমন সব আইনের অধীন করে রেখেছেন যেগুলোর বদৌলতে তারা মানুষের জন্য উপকারী হয়েছে। নৌযান যদি প্রকৃতির কতিপয় আইনের অনুসারী না হতো, তাহেলে মানুষ কখনো সামুদ্রিক সফর করতে পারতো না। নদ-নদীগুলো যদি কতিপয় বিশেষ আইনের জালে আবদ্ধ না থাকতো, তাহলে কখনো তা থেকে খাল কাটা যেতো না। সূর্য, চন্দ্র, এবং দিন ও রাত যদি বিশেষ নিয়ম কানুনের অধীনে শক্ত করে বাঁধা না থাকতো তাহলে এ বিকাশমান মানব সভ্যতা সংস্কৃতির উদ্ভব তো দূরের কথা, এখানে জীবনের ষ্ফূরণই সম্ভবপর হতো না।–তাফহিমুল কুরআন)

পরকালীন জীবনে কাফেরদের আফসোস :

(২০:১০৩) তারা পরস্পর চুপিচুপি বলাবলি করবে, দুনিয়ায় বড়জোর তোমরা দশটা দিন অতিবাহিত করেছো”

দিন কি দীর্ঘতর হয়ে গেল ? অর্থাৎ, তোমরা কি ধৈর্যহারা হয়ে গেলে ?

(২০:৮৬) ভীষণ ক্রোধ ও মর্মজ্বালা নিয়ে মূসা তার সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে এলো৷ সে বললো, “হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা! তোমাদের রব কি তোমাদের সাথে ভালো ভালো ওয়াদা করেননি?৬৪ তোমাদের কি দিনগুলো দীর্ঘতর মনে হয়েছে?অথবা তোমরা নিজেদের রবের গযবই নিজেদের ওপর আনতে চাচ্ছিলে, যে কারণে তোমরা আমার সাথে ওয়াদা ভংগ করলে?

 (বিস্তারিত: স > সবর)

আল্লাহ যদি দিনকে দীর্ঘতর করতে থাকেন তাহলে কে তোমাদেরকে বিশ্রাম করার জন্য রাত এনে দেবে ?

(২৮-ক্বাছাছ : ৭২) তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, তোমরা কি কখনো ভেবে দেখেছো, আল্লাহ যদি কিয়ামত পর্যন্ত তোমাদের ওপর চিরকালের জন্য দিবস অব্যাহত রাখেন তাহলে আল্লাহ ছাড়া আর কোন্ মাবুদ আছে তোমাদের রাত্রি এনে দেবে, যাতে তোমরা তার মধ্যে বিশ্রাম করতে পারো? তোমরা কি ভেবে দেখছো না?

দিন রাত / দিবস রজনী : আল্লাহর সৃষ্টি কৌশল তোমাদের কল্যাণের  জন্যই :

(২১:২০) দিন রাত তাঁর প্রশংসা ও মহিমা ঘোষণা করতে থাকে, বিরাম-বিশ্রাম নেয় না৷ 

(২৭-নমল:৮৬) তারা কি অনুধাবন করতে পারেনি, আমি তাদের প্রশান্তি অর্জন করার জন্য রাত তৈরী করেছিলাম এবং দিনকে উজ্জ্বল করেছিলাম? এরই মধ্যে ছিল অনেকগুলি নিদর্শন যারা ঈমান আনত তাদের জন্য৷

(২৮-ক্বাছাছ : ৭৩) তাঁরই অনুগ্রহ, তিনি তোমাদের জন্য তৈরী করেছেন রাত ও দিন, যাতে তোমরা (রাতে) শান্তি এবং (দিনে) নিজের রবের অনুগ্রহ সন্ধান করতে পারো, হয়তো তোমরা শোকরগুজার হবে৷  

আল্লাহর কাছে একটি দিন তোমাদের গণনায় হাজার বছরের সমান :  কিভাবে ?

(হাজ্ব:৪৭) .....কিন্তু তোমার রবের কাছের একটি দিন তোমাদের গণনার হাজার বছরের সমান হয়৷ ৯৩ 

(৯৩. অর্থাৎ মানুষের ইতিহাসে আল্লাহর ফায়সালা তোমাদের সময় নির্ধারক ও পঞ্জিকার হিসেব অনুযায়ী হয় না। যেমন আজকে একটি ভুল বা সঠিক নীতি অবলম্বন করা হলো এবং কালই তার মন্দ বা ভালো ফলাফল প্রকাশ হয়ে গেলো, এমন নয়। কোন জাতিকে বলা হয়, অমুক কর্মপদ্ধতি অবলম্বনের ফল দাঁড়াবে তোমাদের ধ্বংস। এর জবাবে তারা যদি এ যুক্তি পেশ করে যে, এ কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করার পর আমাদের দশ বিশ-পঞ্চাশ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে, এখনো তো আমাদের কোন ক্ষতি হয়নি, তাহলে তারা হবে বড়ই নির্বোধ। ঐতিহাসিক ফলাফলের জন্য দিন, মাস ও বছর তো সামান্য ব্যাপার শতাব্দীও কোন বিরাট ব্যাপার নয়।)

দিরহাম :

(১২:২০) শেষে তারা তাকে সামান্য দামে কয়েক দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করে দিল৷ ১৫ আর তার দামের ব্যাপারে তারা বেশী আশা করছিল না৷

দ্বীন :

এ আরব বেদুইনরা কুফরী ও মুনাফিকীতে বেশ কঠোর, তারা আল্লাহর দ্বীনের সীমারেখা সম্পর্কে অজ্ঞতার মধ্যে আছে, এবং এ ধরণের ঈমানের দাবীদার মুনাফিকরা সুযোগের অপেক্ষায় আছে : ৯:৯৭-৯৮,

আল্লাহর কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য দ্বীন হচ্ছে ইসলাম :

৩:১৯,  ৩:৩৮ (তারা কি আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য কোন দ্বীন তালাশ করে ? ) ৩:৮৫, ৫:৩ ( আজ তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম), ৫:৪৭, ৪৮, ৬:৭০ (দ্বীনকে খেলতামাশায় পরিণত করা) ,  

৯:৫, ১১ (নামাজ পড় নিয়মিত, নামাজীরা তোমাদের দ্বীনী ভাই),

দ্বীন প্রতিষ্ঠা কর :

দ্বীন প্রতিষ্ঠার হুকুম :

২:১৯৩, ২১৭ (দ্বীনের ব্যাপারে ফেতনা সৃষ্টি করা নরহত্যার চেয়েও মারাত্মক),

(নুর: ৫৫) আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঈমান আনবে ও সৎ কাজ করবে তাদেরকে তিনি পৃথিবীতে ঠিক তেমনিভাবে খিলাফত দান করবেন যেমন তাদের পূর্বে অতিক্রান্ত লোকদেরকে দান করেছিলেন, তাদের জন্য তাদের দীনকে মজবুত ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করে দেবেন, যাকে আল্লাহ তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তাদের (বর্তমান) ভয়-ভীতির অবস্থাকে নিরাপত্তায় পরিবর্তিত করে দেবেন ৷ তারা শুধু আমার বন্দেগী করুক এবং আমার সাথে কাউকে যেন শরীক না করে৷  আর যারা এরপর কুফরী করবে  তারাই ফাসেক ৷

দ্বীন প্রতিষ্ঠায় ধীরে ধীরে ক্রম অনুসারে সহজ থেকে কঠিন বিভিন্ন ধাপের অনুসরণ :

(৩০-রূম: ৩৯) যে সূদ তোমরা দিয়ে থাকো, যাতে মানুষের সম্পদের সাথে মিশে তা বেড়ে যায়, আল্লাহর কাছে তা বাড়ে না ৷ ৫৯   আর যে যাকাত তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে দিয়ে থাকো, তা প্রদানকারী আসলে নিজের সম্পদ বৃদ্ধি করে৷ ৬০  

৫৯ . সুদের প্রতি নিন্দা জ্ঞাপনসূচক এটিই প্রথম আয়াত। এখানে শুধুমাত্র এতটুকু কথা বলা হয়েছে যে, তোমরা তো একথা মনে করে সুদ দিয়ে থাকো যে, যাকে আমি এ অতিরিক্ত সম্পদ দিচ্ছি তাঁর ধন- দৌলত বেড়ে যাবে।কিন্তু আসলে আল্লাহর কাছে সুদের মাধ্যমে ধন- দৌলত বৃদ্ধি হয় না বরং যাকাতের মাধ্যমে বৃদ্ধি হয়। সামনের দিকে এগিয়ে যখন মদিনা তাইয়েবায় সুদ হারাম হবার হুকুম নাযিল করা হয তখন সেখানে অতিরিক্ত একথা বলা হয় ------------------" আল্লাহ সুদকে ক্ষতিগ্রস্ত করেন এবং সাদকাকে বিকশিত করেন।" (পরবর্তী বিধানের জন্য দেখুন সূরা আলে ইমরান , ১৩০ আয়াত এবং আল বাকারাহ ২৭৫ আয়াত থেকে ২৮১ আয়াত। 

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ দু'দলে বিভক্ত হয়ে গেছেন। একদল বলেন, এখানে রিবা শব্দের এমন সুদের কথা বলা হয়নি যাকে শরীয়াতের দৃষ্টিতে হারাম করা হয়েছে বরং এমন ধরনের দান, তোহফা ও হাদিয়াকে সুদ বলা হয়েছে যা গ্রহীতা পরবর্তীকালে ফেরত দেবার সময় তা বর্ধিত আকারে ফেরত দেবে, এরূপ সংকল্প সহকারে দেয়া হয়। অথবা একথা মনে করে দেয়া হয় যে, তা দাতাঁর কোন ভাল কাজে লাগবে অথবা তাঁর আর্থিক সচ্ছলতা অর্জন করা দাতাঁর নিজের জন্য ভালো হবে। এটি ইবনে আব্বাস (রা), মুজাহিদ (রা), দ্বাহহাক (রা), কাতাদাহ, ইকরামাহ, মুহাম্মদ ইবনে কা'ব আল কুরাযী ও শা'বীর উক্তি। আর সম্ভবত তারা এ ব্যাখ্যা এ জন্য করেছেন যে, আয়াতে এ কর্মের ফল হিসেবে কেবলমাত্র এতটুকু বলা হয়েছে যে, আল্লাহর কাছে ব্যাপারটি তাঁর সাথে সংশ্লিষ্ট হতো তাহলে ইতিবাচকভাবে বলা হতো, আল্লাহর দরবারে তাকে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। 

দ্বিতীয় দলটি বলেন, না, শরীয়াত যে রিবাকে হারাম গণ্য করেছে এখানে তাঁর কথাই বলা হয়েছে। এ মত প্রকাশ করেছেন হযরত হাসান বাসরী ও সুদ্দী এবং আল্লামা আলূসীর মতে আয়াতের বাহ্যিক অর্থ এটিই । কারণ আরবী ভাষায় রিবা শব্দটি এ অর্থেই ব্যবহৃত হয়। মুফাসসির নিশাপুরীও এ ব্যাখ্যাটি গ্রহণ করেছেন।

আমার মতে এ দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটিই সঠিক। কারণ পরিচিত অর্থ পরিত্যাগ করার জন্য ওপরে প্রথম ব্যাখ্যার স্বপক্ষে যে যুক্তি দেখানো হয়েছে তা যথেষ্ঠ নয়। সূরা রুম যে সময় নাযিল হয় সে সময় কুরআন মজীদ সুদ হারাম হওয়ার কথা ঘোষণা করেনি। তাঁর কয়েক বছর পর একথা ঘোষিত হয়। এ জন্য সে পূর্ব থেকেই মন- মানসিকতা তৈরি করার কাজে লিপ্ত হয়। মদের ব্যাপারেও পূর্বে শুধুমাত্র এতটুকু বলা হয়েছিল যে, এটা পবিত্র রিযিক নয় (আন নাহল ,৬৭ আয়াত) তাঁরপর বলা হয়, এর ক্ষতি এর লাভের চেয়ে বেশি। ( আল বাকারাহ ,২১৯) এরপর হুকুম দেয়া হয়, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামাযের ধারে কাছে যেয়ো না। (আন নিসা ,৪৩) তাঁরপর এটিকে পুরোপুরি হারাম করার ঘোষণা দেয়া হয়। অনুরূপভাবে এখানে সুদের ব্যাপারেও কেবলমাত্র এতটুকু বলেই থেমে যাওয়া হয়েছে যে, এটা এমন জিনিস নয় যার মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধি বরং সম্পদ প্রকৃতপক্ষে বৃদ্ধি হয় যাকাতের মাধ্যমে। এরপর চক্রবৃদ্ধি হারে সুদকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে (আল ইমরান, ১৩০ ) এবং সবশেষে সুদকেই চূড়ান্তভাবে হারাম বলে ঘোষণা করা হয়েছে (আল বাকারাহ ,২৭৫)

৬০ . এ বুদ্ধির কোন সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। যে ধরনের ঐকান্তিক সংকল্প, গভীর ত্যাগের অনুভূতি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের প্রবল আকাঙ্ক্ষা সহকারে কোন ব্যক্তি আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করবে অনুরূপভাবেই আল্লাহ তাকে বেশি বেশি প্রতিদানও দেবেন। তাই একটি সহীহ হাদীসে বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি আল্লাহর পথে একটি খেজুরও দান করে তাহলে আল্লাহ তাকে বাড়িয়ে ওহোদ পাহাড়ের সমান করে দেন।

যারা দ্বীনের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে তাদের অন্তর্ভূক্ত হয়ো না :

(৩০-রূম: ৩১).............এমন মুশরিকদের অন্তরভুক্ত হয়ে যেয়ো না,   (৩০-রূম: ৩২) যারা নিজেদের আলাদা আলাদা দীন তৈরি করে নিয়েছে আর বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে ৷ প্রত্যেক দলের কাছে যা আছে তাতেই তারা মশগুল হয়ে আছে৷

দ্বীন পালন  পতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আল্লাহ কারো উপর কোন বোঝা বা সংকীর্ণতা আরোপ করেননি :

(হাজ্ব:৭৮) .....এবং দীনের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোনো সংকীর্ণতা আরোপ করেননি৷

(অর্থাৎ পূর্ববর্তী উম্মতদের ফকীহ, ফরিশী ও পাদরীরা তাদের ওপর যেসব অপ্রয়োজনীয় ও অযথা নীতি-নিয়ম চাপিয়ে দিয়েছিল সেগুলো থেকে তোমাদেরকে মুক্ত করে দিয়েছেন। এখানে চিন্তা-গবেষণার ওপর এমন কোন বাধা নিষেধ আরোপ করা হয়নি যা তাত্ত্বিক উন্নয়নে বাধার সৃষ্টি করতে পারে। আবার বাস্তবে কর্মজীবনেও এমন বিধি নিষেধের পাহাড় দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়নি যা সমাজ ও সংস্কৃতির উন্নয়নের পথ রুদ্ধ করে দেয়। তোমাদেরকে দেয়া হয়েছে একটি সহজ সরল বিশ্বাস ও আইন। এ নিয়ে তোমরা যতদূর এগিয়ে যেতে চাও এগিয়ে যেতে পারো। এখানে যে বিষয়বস্তুটিকে ইতিবাচক ভংগীতে বর্ণনা করা হয়েছে সেটি আবার অন্যত্র উপস্থাপিত হয়েছে নেতিবাচক ভংগীতে। যেমন- 

(আরবী) 

"এ রসূল তাদেরকে পরিচিত সৎকাজের হুকুম দেয় এবং এমন সব অসৎ কাজ করতে তাদেরকে নিষেধ করেন যেগুলো করতে মানবিক প্রকৃতি অস্বীকার করে আর এমন সব জিনিস তাদের জন্য হালাল করে যেগুলো পাক পবিত্র এবং এমন সব জিনিস হারাম করে যেগুলো নাপাক ও অপবিত্র আর তাদের ওপর থেকে এমন ভারী বোঝা নামিয়ে দেয়, যা তাদের ওপর চাপানো ছিল এবং এমন সব শৃংখল থেকে তাদেরকে মুক্ত করে যেগুলোয় তারা আটকে ছিল।" (আ'রাফঃ১৫৭)

সত্যিকার দ্বীন প্রতিষ্ঠায় অবশ্যই বাধা আসবে, কঠোর বাধা :

(হাজ্ব:৭২) আর যখন তাদেরকে আমার পরিষ্কার আয়াত শুনিয়ে দেয়া হয় তখন তোমরা দেখো সত্য অস্বীকারকারীদের চেহারা বিকৃত হয়ে যাচ্ছে এবং মনে হতে থাকে এ-ই বুঝি যারা তাদেরকে আমার আয়াত শুনায় তাদের ওপর তারা ঝাঁপিয়ে পড়বে৷ তাদেরকে বলো, “আমি কি তোমাদের বলবো, এর চেয়ে খারাপ জিনিস কি? আগুন৷ আল্লাহ এরি প্রতিশ্রুতি তাদের জন্য দিয়ে রেখেছেন, যারা সত্য গ্রহণ করতে অস্বীকার করে এবং তা বড়ই খারাপ আবাস৷

দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজসমূহ তথা জিহাদ, দাওয়াতী কাজ, হিজরত ইত্যাদি কাজকে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা  আল্লাহর জিকর বলা হয়েছে:

(২০:২৪) এখন তুমি যাও ফেরাউনের কাছে, সে বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে”৷...... (২০:৩৩)(এর জবাবে হযরত মুসা আ: বক্ষ প্রশস্ত করে দেওয়ার জন্য ও হারুন আ: কে নবী বানিয়ে তার সহযোগী করে দেওয়ার জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করলেন এবং পরিশেষে বললেন – হে আল্লাহ, আমার এ দোয়াগুলো কবুল করো-) যাতে আমরা খুব বেশী করে তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করতে পারি,  ৩৪) এবং খুব বেশী করে তোমার চর্চা করি৷  ৩৫) তুমি সব সময় আমাদের অবস্থার পর্যবেক্ষক”৷

(২০:৪২) যাও, তুমি ও তোমার ভাই আমার নিদর্শনগুলোসহ এবং দেখো আমার স্মরণে ভুল করো না৷৪৩) যাও, তোমরা দু’জন ফেরাউনের কাছে, সে বিদ্রোহী হয়ে গেছে৷

দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকো :

দ্বীন প্রতিষ্ঠাকারীর দৃঢ়তা প্রয়োজন : বিস্তারিত দেখুন : দ > দৃঢ়তা, নবীগণের দায়িত্ব, ই > ইস্তেক্বামাত। 

(১৭:৭৪) আর যদি (হে মুহাম্মদ !) আমি তোমাকে মজবুত না রাখতাম তাহলে তোমার পক্ষে তাদের দিকে কিছু না কিছু ঝুঁকে পড়া অসম্ভব ব্যাপার ছিলো না৷৭৫) কিন্তু যদি তুমি এমনটি করতে তাহলে আমি এ দুনিয়ায় তোমাকে দ্বিগুণ শাস্তির মজা টের পাইয়ে দিতাম এবং আখেরাতেও, তারপর আমার মুকাবিলায় তুমি কোনো সাহায্যকারী পেতে না৷

( ব্যাখ্যা :  এক, যদি তুমি সত্যকে সত্য জানার পর মিথ্যার সাথে কোন আপোস করে নিতে তাহলে বিক্ষুব্ধ জাতি তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যেতো ঠিকই কিন্তু আল্লাহর গযব তোমার ওপর নেমে পড়তো এবং তোমাকে দুনিয়ায় ও আখেরাত উভয় স্থানেই দ্বিগুণ সাজা দেয়া হতো । দুই মানুষ নবী হলেও আল্লাহর সাহায্য ও সুযোগ - সুবিধা তার সহযোগী না হলে শুধুমাত্র নিজের শক্তির ওপর নির্ভর করে সে মিথ্যার তুফানের মোকাবিলা করতে পারে না । শুধুমাত্র আল্লাহ প্রদত্ত ধৈর্য ও অবিচলতার সাহায্যেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্য ও ন্যায়ের ওপর পাহাড়ের মতো অটল থাকেন এবং বিপদের সয়লাব স্রোত তাঁকে একচুলও স্থানচ্যুত করতে পারেনি ।)

সামান্য দু: কষ্টে বা বিপদে আপদে যারা আল্লাহর পথ থেকে পিছলে যায় :ইবাদতের ক্ষেত্রে যারা ইস্তেক্বামাত / দৃঢ়তা অবলম্বন করে না :

(হাজ্ব:১১) আর মানুষের মধ্যে এমনও কেউ আছে, যে এক কিনারায় দাঁড়িয়ে আল্লাহর বন্দেগী করে, যদি তাতে তার উপকার হয় তাহলে নিশ্চিন্ত হয়ে যায় আর যদি কোনো বিপদ আসে তাহলে পিছনের দিকে ফিরে যায় তার দুনিয়াও গেলো এবং আখেরাতও৷ এ হচ্ছে সুস্পষ্ট ক্ষতি৷ ১২) তারপর সে আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদেরকে ডাকে যারা তার না ক্ষতি করতে পারে, না উপকার, এ হচ্ছে ভ্রষ্টতার চূড়ান্ত৷  ১৩) সে তাদেরকে ডাকে যাদের ক্ষতি তাদের উপকারের চাইতে নিকটতর নিকৃষ্ট তার অভিভাবক এবং নিকৃষ্ট তার সহযোগী৷

নিজের চেহারাকে দ্বীনের উপর নিবদ্ধ রাখো : দ্বীনের উপর অটল থাকো :

(৩০-রূম: ৩০) কাজেই  ( হে নবী এবং নবীর অনুসারীবৃন্দ ) একনিষ্ঠ হয়ে নিজের চেহারা এ দীনের  দিকে স্থির নিবদ্ধ করে দাও৷   আল্লাহ মানুষকে যে প্রকৃতির ওপর সৃষ্টি করেছেন তাঁর ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাও৷ ৪৫   আল্লাহ তৈরি সৃষ্টি কাঠামো পরিবর্তন করা যেতে পারে না৷ ৪৬   এটিই পুরোপুরি সঠিক ও যথার্থ দীন৷ ৪৭   কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না৷

৪৫ . অর্থাৎ সমগ্র মানব জাতিকে এ প্রকৃতির ওপর সৃষ্টি করা হয়েছে যে, এক আল্লাহ ছাড়া তাদের আর কোন স্রষ্টা , রব, মাবুদ ও আনুগত্য গ্রহণকারী নেই। এ প্রকৃতির ওপর তোমাদের প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়া উচিত। যদি স্বেচ্ছাচারীভাবে চলার নীতি অবলম্বন করো তাহলে প্রকৃতির বিরুদ্ধাচরণ করবে। আর যদি অন্যের বন্দেগীর শিকল নিজের গলায় পরে নাও তাহলেও নিজের প্রকৃতির বিরুদ্ধে কাজ করবে। এ বিষয়টি নবী (সা) বহু হাদীসে সুস্পষ্ট করে বর্ণনা করেছেন। যেমনঃ 

--------------------------

" মাতৃগর্ভ থেকে জন্মলাভকারী প্রত্যেকটি শিশু আসলে মানবিক প্রকৃতির ওপরই জন্ম লাভ করে। তাঁরপর তাঁর মা-বাপই তাকে পরবর্তীকালে ইহুদী, খৃষ্টান ও অগ্নিপূজারী হিসেবে গড়ে তোলে।" 

এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে, যেমন প্রত্যেকটি পশুর পেট থেকে পুরোপুরি নিখুঁত ও সুস্থ পশুই বের হয়ে আসে। কোন একটা বাচ্চাও কান কাটা অবস্থায় বের হয়ে আসে না। পরে মুশরিকরা নিজেদের জাহিলী কুসংস্কারের কারণে তাঁর কান কেটে দেয়। 

মুসনাদে আহমাদ ও নাসায়ীতে আর একটি হাদীস আছে, তাতে বলা হয়েছেঃ এক যুদ্ধে মুসলমানরা শত্রুদের শিশু সন্তানদেরকেও হত্যা করে। নবী (সা) এর কাছে এ খবর পৌঁছে যায়। তিনি ভীষণ অসন্তুষ্ট হন এবং বলেনঃ

--------------------------

" লোকদের কি হয়ে গেছে, আজ তারা সীমা ছাড়িয়ে গেছে এবং শিশুদেরকেও হত্যা করেছে ৷ " 

একজন জিজ্ঞেস করলো, এরা কি মুশরিকদের সন্তান ছিল না। জবাবে তিনি বলেনঃ 

-----------------------------------------

"তোমাদের সর্বোত্ততম লোকেরা তো মুশরিকদেরই আওলাদ।" তাঁরপর বলেনঃ 

-----------------------

" প্রত্যেক প্রাণসত্তা প্রকৃতির ওপর জন্ম নেয়, এমনকি যখন কথা বলতে শেখে তখন তাঁর বাপ- মা তাকে ইহুদী খৃষ্টানে পরিণত করে।"

অন্য একটি হাদীসে ইমাম আহমাদ (রা) ঈযায ইবনে হিমার আল মুজাশি'য়ী থেকে উদ্ধৃত করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, একদিন নবী (সা) নিজের ভাষণের মাঝখানে বলেনঃ 

-------------------------------------

" আমার রব বলেন, আমার সমস্ত বান্দাদেরকে আমি একনিষ্ঠ সত্যপথাশ্রয়ী করে সৃষ্টি করেছিলাম, তাঁরপর শয়তানরা এসে তাদেরকে দ্বীন থেকে বিপথগামী করে এবং তাদের জন্য আমি যা কিছু হালাল করে দিয়েছিলাম সেগুলোকে হারাম করে নেয় এবং তাদেরকে হুকুম দেয়, আমার সাথে এ জিনিসগুলোকে শরীক গণ্য করো , যেগুলোকে শরীক করার জন্য আমি কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করিনি। "

৪৬ . অর্থাৎ আল্লাহ মানুষকে নিজের বান্দায় পরিণত করেছেন। কেউ চাইলেও এ কাঠামোয় কোন পরিবর্তন সাধন করতে পারে না। মানুষ বান্দা থেকে অ- বান্দা হতে পারে না এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ইলাহ বানিয়ে নিলেও প্রকৃতপক্ষে সে মানুষের ইলাহ হতে পারে না। মানুষ নিজের জন্য যতগুলো উপাস্য তৈরি করে নিক না কেন, মানুষ যে, এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো বান্দা নয় এ বাস্তব সত্যটি অকাট্য ও অবিচল রয়ে গেছে। মানুষ নিজের মূর্খতা ও অজ্ঞতাঁর কারণে যাকে ইচ্ছা আল্লাহর গুণাবলী ও ক্ষমতাঁর ধারক গণ্য করতে পারে এবং যাকে চায় তাকে নিজের ভাগ্য ভাঙা- গড়ার মালিক মনে করতে পারে।কিন্তু প্রকৃত ও বাস্তব সত্য এটিই যে, সার্বভৌম কর্তৃত্বের গুণাবলীর অধিকারী একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নয়। কেউ তাঁর মতো ক্ষমতাঁর অধিকারী নয় এবং মানুষের ভাগ্য ভাঙা-গড়ার শক্তিও আল্লাহ ছাড়া কারো নেই। 

এ আয়াতটির আর একটি অনুবাদ এও হতে পারেঃ " আল্লাহর তৈরি কাঠামোয় পরিবর্তন করা যাবে না।" অর্থাৎ আল্লাহ যে প্রকৃতির ওপর মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাকে বিকৃত করা ও ভেঙ্গে ফেলা উচিত নয়। 

৪৭ . অর্থাৎ শান্ত সমাহিত ভারসাম্যপূর্ণ প্রকৃতির ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকাই সঠিক ও সহজ পথ। 

(৩০-রূম: ৪৩) কাজেই (হে নবী !) এই সত্য দীনে নিজের চেহারাকে মজবুতভাবে প্রতিষ্ঠিত করো আল্লাহর পক্ষ থেকে যে দিনের হটে যাওয়ার কোন পথ নেই তাঁর আগমনের পূর্বে, ৬৬   সেদিন লোকেরা বিভক্ত হয়ে পরস্পর থেকে আলাদা হয়ে যাবে৷  

৬৬ . অর্থাৎ আল্লাহ নিজে যাকে হটাবেন না এবং তিনি কারো জন্য এমন কোন কিছু করার অবকাশও রাখেননি যার ফলে তা হটে যেতে পারে।

দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা আল্লাহর নিকট যে দোওয়াটি করবেন :

বক্ষ প্রশস্ত করে দেওয়ার দোয়া :

(২০:২৫) মূসা বললো, “হে আমার রব!  ২৬) আমার বুক প্রশস্ত করে দাও৷২৭) আমার কাজ আমার জন্য সহজ করে দাও, ২৮) এবং আমার জিভের জড়তা দূর করে দাও, যাতে লোকেরা আমার কথা বুঝতে পারে৷

(বক্ষ প্রশস্ত করার অর্থ : অর্থাৎ আমার মনে এ মহান দায়িত্বভার বহন করার মতো হিম্মত সৃষ্টি করে দাও। আমার উৎসাহ-উদ্দীপনা বাড়িয়ে দাও। যেহেতু হযরত মূসাকে (আ) একটি অনেক বড় কাজের দায়িত্ব সোপর্দ করা হচ্ছিল যা করার জন্য দুরন্ত সাহসের প্রয়োজন তাই তিনি দোয়া করেন, আমাকে এমন ধৈর্য, দৃঢ়তা, সংযম, সহনশীলতা, নির্ভীকতা ও দুর্জয় সংকল্প দান করো যা এ কাজের জন্য প্রয়োজন।)

(আরো দেখুন : দ  > দাওয়াতী কাজ > দাওয়াতী কাজ যারা করবেন তারা যে দোয়াগুলো করবেন )

দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তির  যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে :

রিযিক দাতা আল্লাহ, কোন মানুষ নয় :

(মু’মিনুন:৭২) তুমি কি তাদের কাছে কিছু চাচ্ছো ? তোমার জন্য তোমার রব যা দিয়েছেন, সেটাই ভালো এবং তিনি সবচেয়ে ভালো রিযিকদাতা ৷

দ্বীনের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি নেই :

২:২৫৬, ২:২৭২,  ৪:১৭১, ৫:৬৮, ৭৭ , ৬:১০৭, ১১১ (আল্লাহ চাইলে সব মানুষ ঈমানদার হয়ে যেত),

দ্বীনের ব্যাপারে কোনরূপ সংকীর্ণতা আরোপ করা হয়নি :

(হাজ্ব:৭৮) .....এবং দীনের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোনো সংকীর্ণতা আরোপ করেননি৷

(অর্থাৎ পূর্ববর্তী উম্মতদের ফকীহ, ফরিশী ও পাদরীরা তাদের ওপর যেসব অপ্রয়োজনীয় ও অযথা নীতি-নিয়ম চাপিয়ে দিয়েছিল সেগুলো থেকে তোমাদেরকে মুক্ত করে দিয়েছেন। এখানে চিন্তা-গবেষণার ওপর এমন কোন বাধা নিষেধ আরোপ করা হয়নি যা তাত্ত্বিক উন্নয়নে বাধার সৃষ্টি করতে পারে। আবার বাস্তবে কর্মজীবনেও এমন বিধি নিষেধের পাহাড় দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়নি যা সমাজ ও সংস্কৃতির উন্নয়নের পথ রুদ্ধ করে দেয়। তোমাদেরকে দেয়া হয়েছে একটি সহজ সরল বিশ্বাস ও আইন। এ নিয়ে তোমরা যতদূর এগিয়ে যেতে চাও এগিয়ে যেতে পারো। এখানে যে বিষয়বস্তুটিকে ইতিবাচক ভংগীতে বর্ণনা করা হয়েছে সেটি আবার অন্যত্র উপস্থাপিত হয়েছে নেতিবাচক ভংগীতে। যেমন- 

(আরবী) 

দ্বীনকে টুকরা টুকরা করা :

৬:১৫৯,

৩:১৪৬, ৪:১৩৩, ৬:১৩৩, (আল্লাহ  তোমাদের স্থলে অন্যকে নিয়ে আসবেন ও তাদের দ্বারা দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ করাবেন)

৫:৮-৯, ৫৪, ৬৬, ৪৪-৪৭, ৬৭-৬৮,

৬:১৩৩ (তোমাদের পরিবর্তে অন্যদের বসাতে পারেন)

৭:২৯,

(২৫.ফুরকান:৫১) যদি আমি চাইতাম তাহলে এক একটি জনবসতিতে এক একজন ভীতিপ্রদর্শনকারী পাঠাতে পারতাম৷”

(বরং, তা না করে সারা দুনিয়ার জন্য সর্বশেষ মাত্র একজন রাসুল মুহাম্মদ সা: কে প্রেরণ করেছি)

(৩০-রূম: ৩০) .....এমন মুশরিকদের অন্তরভুক্ত হয়ে যেয়ো না, ৩২) যারা নিজেদের আলাদা আলাদা দীন তৈরি করে নিয়েছে আর বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে ৷ প্রত্যেক দলের কাছে যা আছে তাতেই তারা মশগুল হয়ে আছে৷ ৫১  

৫১ . ওপরে যে প্রাকৃতিক দীনের কথা বলা হয়েছে মানব জাতির আসল দীনই হচ্ছে সেই প্রাকৃতিক দীন, এখানে এদিকেই ইশারা করা হয়েছে। এ দীন মুশরিকী ধর্ম থেকে ক্রম- বিবর্তনের মাধ্যমে তাওহীদ পর্যন্ত পৌঁছে নি। যেমন আন্দাজ অনুমানের মাধ্যমে একটি ধর্মীয় দর্শন রচনাকারীরা মনে করে থাকেন। বরং দুনিয়ায় যতগুলো ধর্ম পাওয়া যায় এ সবেরই উৎপত্তি হয়েছে এ আসল দীনের মধ্যে বিকৃতি সাধনের মাধ্যমে। এ বিকৃতি আসার কারণ হলো এই যে, বিভিন্ন ব্যক্তি প্রাকৃতিক সত্যের ওপর নিজেদের নতুন নতুন কথা বাড়িয়ে দিয়ে নিজেদের জন্য এক একটি আলাদা ধর্ম বানিয়ে নিয়েছে। তাদের প্রত্যেকেই মূল সত্যের পরিবর্তে এ বর্ধিত জিনিসেরই ভক্ত অনুরক্ত হয়ে গেছে। যার ফলে তারা অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে গিয়ে একটি স্বতন্ত্র ফিরকায় পরিণত হয়েছে। এখন সঠিক পথনির্দেশনা লাভ করতে চাইলে যে প্রকৃত সত্য ছিল দীনের মূল ভিত্তি , প্রত্যেক ব্যক্তিকেই সেদিকে ফিরে যেতে হবে। পরবর্তীকালের যাবতীয় বর্ধিত অংশ থেকে এবং তাদের ভক্ত-অনুরক্তদের দল থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে একেবারেই আলাদা হয়ে যেতে হবে। তাদের সাথে তারা যে সম্পর্ক সূত্রই কায়েম রাখবে সেটিই তাদের দীনের মধ্যে বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কারণ হবে।

দ্বীনকে টুকরা টুকরা করোনা : তোমরা সকলে একই উম্মত : দ্বীনের মধ্যে মতভেদ রহমত স্বরূপ –  কথা মিথ্যা :

(২১:৯২) তোমাদের এ উম্মত আসলে একই উম্মত৷ আর আমি তোমাদের রব৷ কাজেই তোমরা আমার ইবাদাত করো৷ ৯৩) কিন্তু (নিজেদের কার্যকলাপের মাধ্যমে) লোকেরা পরস্পরের মধ্যে নিজেদের দীনকে টুকরো টুকরো করে ফেলেছে৷ সবাইকে আমার দিকে ফিরে আসতে হবে৷ 

দ্বীনকে যারা খেলা কৌতুক বানায় :

দ্বীনকে যারা খেলা কৌতুক বানায় : ৭:৫১ (তাদের পরিণাম : কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদেরকে ভুলে যাবেন )

বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠী / ধর্মের ভিত্তিতে বিভিন্ন জাতি সৃষ্টি হওয়ার কারণ কি ?:

(মু’মিনুন:৫৩) কিন্তু পরে লোকেরা নিজেদের দীনকে পরস্পরের মধ্যে টুকরো করে নিয়েছে ৷ প্রত্যেক দলের কাছে যা কিছু আছে তার মধ্যেই নিমগ্ন হয়ে গেছে৷ ৪৮  

(৪৮ . এটা নিছক ঘটনার বর্ণনা নয় বরং সূরার শুরু থেকে যে যুক্তিধারা চলে আসছে তার একটি পর্যায়। যুক্তির সারসংক্ষেপ হচ্ছে, নূহ আলাইহিস সালাম থেকে নিয়ে ঈসা আলাইহিস সালাম পর্যন্ত সকল নবী যখন এ তাওহীদ ও আখেরাত বিশ্বাসের শিক্ষা দিয়ে এসেছেন তখন অনিবার্যভাবে এ থেকে প্রমাণ হয়, এ ইসলামই মানব জাতির আসল দীন বা ধর্ম। অন্যান্য যেসব ধর্মের অস্তিত্ব আজ দুনিয়ার বুকে পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো এ দীনেরই বিকৃত রূপ। এর কোন কোন নির্ভূল অংশের চেহারা বিকৃত করে এবং তার মধ্যে অনেক মনগড়া কথা বাড়িয়ে দিয়ে সেগুলো তৈরী করা হয়েছে। এখন যারা এসব ধর্মের উক্ত-অনুরক্ত তারাই ভ্রষ্টতার মধ্যে অবস্থান করছে। অন্যদিকে যারা এগুলো ত্যাগ করে আসল দীনের দিকে আহবান জানাচ্ছে তারা মোটেই বিভ্রান্তি ও ভ্রষ্টতার মধ্যে অবস্থান করছে না।)

(২১:৯২) তোমাদের এ উম্মত আসলে একই উম্মত৷ আর আমি তোমাদের রব৷ কাজেই তোমরা আমার ইবাদাত করো৷ ৯৩) কিন্তু (নিজেদের কার্যকলাপের মাধ্যমে) লোকেরা পরস্পরের মধ্যে নিজেদের দীনকে টুকরো টুকরো করে ফেলেছে৷ সবাইকে আমার দিকে ফিরে আসতে হবে৷ 

(আরো দেখুন : দ > দ্বীন > দ্বীনকে টুকরা টুকরা করা)

(মু’মিনুন:৫২) আর তোমাদের এ উম্মত হচ্ছে একই উম্মত এবং আমি তোমাদের রব, কাজেই আমাকেই তোমরা ভয় করো ৷ ৪৭  

(৪৭ . ''তোমাদের উম্মত একই উম্মত'' – অর্থাৎ তোমরা একই দলের লোক। ''উম্মত'' শব্দটি এমন ব্যক্তি সমষ্টির জন্য বলা হয় যারা কোন সম্মিলিত মৌলিক বিষয়ের জন্য একতাবদ্ধ হয়। নবীগণ যেহেতু স্থান-কালেরর বিভিন্নত সত্ত্বেও একই বিশ্বাস, একই জীবন বিধান ও একই দাওয়াতের ওপর একতাবদ্ধ ছিলেন, তাই বলা হয়েছে, তাঁদের সবাই একই উম্মত। পরবর্তী বাক্য নিজেই সে মৌলিক বিষয়ের কথা বলে দিচ্ছে যার ওপর সকল নবী একতাবদ্ধ ও একমত ছিলেন। (অতিরিক্ত ব্যাখ্যার জন্য দেখুন সূরা আল বাকারাহ, ১৩০ থেকে ১৩৩; আলে ইমরান, ১৯, ২০, ৩৩, ৩৪, ৬৪ ও ৭৯ থেকে ৮৫; আন নিসা, ১৫০ থেকে ১৫২; আল আ'রাফ, ৫৯, ৬৫, ৭৩, ৮৫; ইউসুফ, ৩৭ থেকে ৪০; মার্‌য়াম, ৪৯ থেকে ৫৯এবং আল আম্বিয়া, ৭১ থেকে ৯৩ আয়াত।))

আকাশ  পৃথিবীর সর্বত্র আল্লাহর দীন চলছে : অর্থাত সবকিছুই আল্লাহর অনুগত :

(১৬:৫২) সবকিছুই তাঁরই, যা আকাশে আছে এবং যা আছে পৃথিবীতে এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে একমাত্র তাঁরই দীন চলছে৷

-

দ্বীনের দাওয়াত পৌছানো আল্লাহর দায়িত্ব :  আরো দেখুন : দাওয়াত।

৫:১৯,

(১৭:৬০) আমি এদেরকে অনবরত সতর্ক করে যাচ্ছি কিন্তু প্রতিটি সতর্ক সংকেত এদের অবাধ্যতা বাড়িয়ে চলছে৷

প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর জন্য রয়েছে একজন পথপ্রদর্শক৷-(১৩:৭)

(১৬:৬৩) আল্লাহর কসম, হে মুহাম্মাদ ! তোমার আগেও বহু জাতির মধ্যে আমি রসূল পাঠিয়েছি৷

(১৬:৩৬) প্রত্যেক জাতির মধ্যে আমি একজন রসূল পাঠিয়েছি এবং তার মাধ্যমে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি যে, “আল্লাহর বন্দেগী করো এবং তাগূতের বন্দেগী পরিহার করো৷”

(২৮-ক্বাছাছ : ৮৫) হে নবী! নিশ্চিত জেনো, যিনি এ কুরআন তোমার ওপর ন্যস্ত করেছেন  তিনি তোমাকে একটি উত্তম পরিণতিতে পৌঁছিয়ে দেবেন৷

যাদের কাছে শেষপর্যন্ত দ্বীনের দাওয়াত পৌছেনি, তাদের শেষফল বা পরকালীন শেষফল কিসের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে ?

(৩২-আস সাজদা:৩)...... যাতে তুমি সতর্ক করতে পারো এমন একটি জাতিকে যাদের কাছে তোমার পূর্বে কোন সতর্ককারী আসে নি, হয়তো তারা সৎপথে চলবে৷

৫ . অর্থাৎ যেমন এর সত্য হওয়া ও আল্লাহর পক্ষ থেকে হওয়াটা নিশ্চিত ও সন্দেহাতীত বিষয় ঠিক তেমনি এর পেছনে সদুদ্দেশ্য থাকা এবং তোমাদের জন্য এর আল্লাহর রহমত হওয়াটাও সুস্পষ্ট । তোমরা নিজেরাই জানো শত শত বছর থেকে তোমাদের মধ্যে কোন নবী আসেননি। তোমরা নিজেরাই জানো তোমাদের সমগ্র জাতিটাই মূর্খতা, অজ্ঞতা, নৈতিক অধঃপতন ও মারাত্মক ধরনের পশ্চাদপদতায় ভুগছে। এ মূর্খতার মধ্যে যদি তোমাদেরকে জাগ্রত করার ও সঠিক পথ দেখাবার জন্য তোমাদের মধ্যে একজন নবী পাঠানো হয়ে থাকে, তাহলে এতে তোমরা অবাক হচ্ছো কেন ৷ এটা তো একটি মস্ত বড় প্রয়োজন এবং তোমাদের কল্যাণার্থে আল্লাহ এ প্রয়োজন পূর্ণ করে দিয়েছেন। 

উল্লেখ্য, আরবে সত্য দীনের আলো সর্বপ্রথম পৌঁছেছিল হযরত হূদ ও হযরত সালেহ আলাইহিস সালামের মাধ্যমে। এটা ছিল প্রাগৈতিহাসিক যুগের ঘটনা । তারপর আসেন হযরত ইবরাহীম ও হযরত ইসমাঈল (আ) । নবী (সা) এর যুগের আড়াই হাজার বছর আগে অতিক্রান্ত হয়েছিল তাদের যুগ। এরপর নবী (সা) এর পূর্বে আরবের যমীনে যে সর্বশেষ নবী পাঠানো হয় তিনি ছিলেন হযরত শো'আইব (আ) । তার আগমনের পরও প্রায় দু'হাজার বছর অতিক্রান্ত হয়েছিল। এ সময়টা এত দীর্ঘ ছিল যে, এ প্রেক্ষিতে এ জাতির মধ্যে কোন সতর্ককারী আসেনি একথা বলা একেবারেই যথার্থ ছিল। এ উক্তির অর্থ এ নয় যে, এ জাতি একজন সতর্ককারীর প্রত্যাশী ছিল। 

এখানে আর একটা প্রশ্ন সামনে এসে যায়। সেটাও পরিষ্কার করে দেয়া দরকার। এ আয়াতটি পড়তে গিয়ে মানুষের মনে সংশয় জাগে, নবী (সা) এর পূর্বে শত শত বছর পর্যন্ত আরবে যখন কোন নবী আসেননি তখন সে জাহেলী যুগে যেসব লোক অতিক্রান্ত হয়ে গেছে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কিসের ভিত্তিতে ৷ সৎপথ কোনটা এবং অসৎপথ তথা পথভ্রষ্টতা কোনটা তা কি তারা জানতো ৷ তারপর যদি তারা পথভ্রষ্ট হয়ে থাকে তাহলে তাদের এ পথভ্রষ্টতার জন্য তাদেরকে দায়ী করা যেতে পারে কেমন করে ৷ এর জবাব হচ্ছে, সেকালের লোকদের দীনের বিস্তারিত জ্ঞান না থাকলেও আসল দীন যে তাওহীদ তথা আল্লাহর একত্ববাদ এবং নবীগণ কখনো মূর্তিপূজা শিখান নি, একথা সেকালেও লোকদের অজানা ছিল না । আরবের লোকেরা তাদের দেশে আবির্ভূত নবীদের যেসব বাণী ও ঐত্যিহের অধিকারী হয়েছিল তার মধ্যেও এ সত্য সংরক্ষিত ছিল । নিকটতম দেশগুলোয় আগত নবীগণ যথা হযরত মূসা, হযরত দাউদ, হযরত সুলাইমান ও হযরত ঈসা (আ) এর শিক্ষার মাধ্যমেও তারা এ সত্যের সন্ধান পেয়েছিল। আরবী প্রবাদসমূহের মাধ্যমে একথা ব্যাপকভাবে প্রচারিত ও সর্বজন পরিচিত ছিল যে, প্রাচীনযুগে আরববাসীদের আসল ধর্ম ছিল ইবরাহীমের ধর্ম এবং মূর্তিপূজার ব্যাপক প্রচলন সত্ত্বেও আরবের বিভিন্ন অংশে স্থানে স্থানে এমন সব লোক ছিল যারা শিরক অস্বীকার করতো, তাওহীদের ঘোষণা দিতো এবং মূর্তির বেদীমূলে বলিদান করার প্রকাশ্যে নিন্দা করতো। নবী (সা) এর আমলের একেবারেই কাছাকাছি সময়ে কুসসা ইবনে সায়েদাতিল ইয়াদী, উমাইয়াহ ইবনে আবিস সালত, সুওয়াইদ ইবনে আমরিল মুসতালেকী, ওকী ইবনে সালামাহ ইবনে যুহাইরিল ইয়াদী, আমর ইবনে জুনদুবিল জুহানী, আবু কায়েস সারমাহ ইবনে আবী আনাস,যায়েদ ইবনে শিহাবিত তামিমী, আলমুতালামমিস ইবনে উমাইয়াহ আলকিনানী, যুহাইর ইবনে আবী সুলমা, খালেদ ইবনে সিনান ইবনে গাইসিল আবসী, আবদুল্লাহ আলকুদ্বাঈ এবং এ ধরনের আরো বহু লোকের অবস্থা আমরা ইতিহাস থেকে জানতে পারি। ইতিহাসে এদেরকে 'হুনাফা' তথা সঠিক সত্যপন্থী নামে স্মরণ করা হয়। এরা সবাই প্রকাশ্যে তাওহীদকে আসল দীন বলে ঘোষণা করতেন এবং মুশরিকদের ধর্মের সাথে নিজেদের সম্পর্কহীনতার কথা পরিস্কারভাবে প্রকাশ করতেন। একথা সুস্পষ্ট , পূর্ববর্তী নবীগণের যেসব শিক্ষা সমাজে তখনো প্রচলিত ছিল তার প্রভাব থেকেই তাদের মনে এ চিন্তার জন্ম হয়েছিল। তাছাড়া ইয়ামনে খৃষ্টীয় চতুর্থ-পঞ্চম শতকের প্রাচীন ধ্বংসাবশেষের যে শিলালিপির আধুনিক প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার মাধ্যমে আবিষ্কৃত হয়েছে তা থেকে জানা যায় , সেকালে সেখানে একটি তাওহীদী ধর্মের অস্তিত্ব ছিল। তার অনুসারীদের আকাশ ও পৃথিবীর করুণাময় রবকেই একক ইলাহ ও উপাস্যে স্বীকার করতো। ৩৭৮ খৃষ্টাব্দের একটি শিলালিপি পাওয়া গেছে একটি প্রাচীন উপাসনালয়ের ধ্বংসাবশেষে থেকে। তাতে লিখিত আছে,  উপাসনালয়টি " যু-সামাওয়া"র "ইলাহ" অর্থাৎ আকাশের ইলাহি অথবা আকাশের রবের ইবাদাত করার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। ৪৬৫ খৃষ্টাব্দের একটি শিলালিপিতে লিখিত হয়েছেঃ 

----------------------

এ কথাগুলো সুস্পষ্টভাবে তাওহীদ বিশ্বাসের কথা ব্যক্ত করছে। একটি করবগাত্রে সে যুগের আর একটি শিলালিপি পাওয়া গেছে। তাতে লেখা আছেঃ 

----------------------------------

অনুরূপভাবে দক্ষিণ আরবে ফোরাত নদী ও কিন্নাসিরীনের মাঝখানে যাবাদ নামক স্থানে ৫১২ খৃষ্টাব্দের একটি শিলালিপি পাওয়া গেছে। তাতে লেখা আছেঃ 

---------------------------------

এ সমস্ত কথাই প্রকাশ করছে যে, নবী (সা) এর নবুওয়াতলাভের পূর্বে পূর্ববর্তী নবীগণের শিক্ষার প্রভাব আরব ভূখণ্ড থেকে একেবারে নির্মূল হয়ে যায়নি। কমপক্ষে " তোমাদের আল্লাহ এক ও একক" একথাটুকু স্মরণ করিয়ে দেবার মতো বহু উপায় ও উপকরণ বিদ্যমান ছিল। (আরো বেশি ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, সূরা আল ফুরকান, ৮৪ টীকা। ) 

(ফুরক্বান : ৬৮) তারা আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্যকে ডাকে না, আল্লাহ যে প্রানকে হারাম করেছেন কেআন সংগত কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে নাএবং ব্যভিচার করে না৷ ৮৪ 

৮৪. "অর্থাৎ আরববাসীরা যে তিনটি বড় গোনাহের সাথে বেশী করে জড়িত থাকে সেগুলো থেকে তারা দূরে থাকে। একটি হলো শির্ক, দ্বিতীয়টি অন্যায়ভাবে হত্যা করা এবং তৃতীয়টি যিনা। এ বিষয়বস্তুটিই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিপুল সংখ্যক হাদীসে বর্ণনা করেছেন। যেমন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বর্ণিত হাদীস। তাতে বলা হয়েছেঃ একবার নবীকে (সা) জিজ্ঞেস করা হলো, সবচেয়ে বড় গোনাহ কি৷ তিনি বললেন: أَنْ تَجْعَلَ لِلَّهِ نِدًّا وَهُوَ خَلَقَكَ "তুমি যদি কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ প্রতিদ্বন্দী দাঁড় করাও। অথচ আল্লাহই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।" জিজ্ঞেস করা হলো, তারপর৷ বললেন: َأَنْ تَقْتُلَ وَلَدَكَ تَخَافُ أَنْ يَطْعَمَ مَعَكَ"তুমি যদি তোমার সন্তানকে হত্যা কর এই ভয়ে যে সে তোমার সাথে আহারে অংশ নেবে।" জিজ্ঞেস করা হলো, তারপর৷ বললেন: أَنْ تُزَانِيَ حَلِيلَةَ جَارِكَ "তুমি যদি তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে যিনা কর।" (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ, আহমদ) যদিও আরো অনেক কবীরা গোনাহ আছে কিন্তু সেকালের আরব সমাজে এ তিনটি গোনাহই সবচেয়ে বেশী জেঁকে বসেছিল। তাই এক্ষেত্রে মুসলমানদের এ বৈশিষ্ট্য সুস্পষ্ট করে তুলে ধরা হয়েছিল যে, সমগ্র আরব সমাজে মাত্র এ গুটিকয় লোকই এ পাপগুলো থেকে মুক্ত আছে। 

এখানে প্রশ্ন করা যেতে পারে, মুশরিকদের দৃষ্টিতে তো শির্ক থেকে দূরে থাকা ছিল একটি মস্ত বড় দোষ, এক্ষেত্রে একে মুসলমানদের একটি প্রধান গুণ হিসেবে তাদের সামনে তুলে ধরার যৌক্তিকতা কি ছিল৷ এর জবাব হচ্ছে আরববাসীরা যদিও শিরকে লিপ্ত ছিল এবং এ ব্যাপারে তারা অত্যন্ত বিদ্বিষ্ট মনোভাবের অধিকারী ছিল কিন্তু আসলে এর শিকড় উপরিভাগেই সীমাবদ্ধ ছিল, গভীর তলদেশে পৌঁছেনি। দুনিয়ার কোথাও কখনো শিরকের শিকড় মানব প্রকৃতির গভীরে প্রবিষ্ট থাকে না। বরঞ্চ নির্ভেজাল আল্লাহ বিশ্বাসের মহত্ব তাদের মনের গভীরে শিকড় গেড়ে বসেছিল। তাকে উদ্দীপিত করার জন্য শুধুমাত্র উপরিভাগে একটুখানি আঁচড় কাটার প্রয়োজন ছিল। জাহেলিয়াতের ইতিহাসের বহুতর ঘটনাবলী এ দু'টি কথার সাক্ষ্য দিয়ে থাকে। যেমন আবরাহার হামলার সময় কুরাইশদের প্রত্যেকটি শিশুও জানতো যে, কাবাগৃহে রক্ষিত মূর্তিগুলো এ বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারবে না বরং একমাত্র এ গৃহের মালিক আল্লাহই এ বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারেন। হাতি সেনাদের ধ্বংসের পর সমকালীন কবিরা যে সব কবিতা ও কাসীদা পাঠ করেছিলেন এখনো সেগুলো সংরক্ষিত আছে। সেগুলোর প্রতিটি শব্দ সাক্ষ্য দিচ্ছে, তারা এ ঘটনাকে নিছক মহান আল্লাহর শক্তির প্রকাশ মনে করতো এবং এতে তাদের উপাস্যদের কোন কৃতিত্ব আছে বলে ভুলেও মনে করতো না। এ সময় কুরাইশ ও আরবের সমগ্র মুশরিক সমাজের সামনে শিরকের নিকৃষ্টতম পরাকাষ্ঠাও প্রদর্শিত হয়েছিল। আবরাহা মক্কা যাওয়ার পথে তায়েফের কাছাকাছি পৌঁছে গেলে তায়েফবাসীরা আবরাহা কর্তৃক তাদের "লাত" দেবতার মন্দির বিধ্বস্থ হওয়ার আশংকায় তাকে কাবা ধ্বংসের কাজে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছিল এবং পার্বত্য পথে তার সৈন্যদের নিরাপদে মক্কায় পৌঁছিয়ে দেবার জন্য পথ প্রদর্শকও দিয়েছিল। এ ঘটনার তিক্ত স্মৃতি কুরাইশদেরকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত মানসিকভাবে পীড়ন করতে থাকে এবং বছরের পর বছর তারা তায়েফের পথ প্রদর্শকের কবরে প্রস্তর নিক্ষেপ করতে থাকে। তাছাড়া কুরাইশ ও অন্যান্য আরববাসীরা নিজেদের দ্বীনকে হযরত ইবরাহীমের আনীত দ্বীন মনে করতো। নিজেদের বহু ধর্মীয় ও সামাজিক রীতিনীতি এবং বিশেষ করে হজ্জ্বের নিয়মকানুন ও রসম রেওয়াজকে ইবরাহীমের দ্বীনের অংশ গণ্য করতো। তারা একথাও মানতো যে, হযরত ইবরাহীম একমাত্র আল্লাহর বন্দেগী করতেন এবং তিনি কখনো মূর্তিপূজা করেননি। তাদের মধ্যে যেসব কথা ও কাহিনী প্রচলিত ছিল তাতে মূর্তি পূজার প্রচলন তাদের দেশে কবে থেকে শুরু হয়েছিল এবং কোন্ মূর্তিটি কে কবে কোথায় থেকে এনেছিলেন তার বিস্তারিত বিবরণ সংরক্ষিত ছিল। একজন সাধারণ আরবের মনে নিজের উপাস্য দেবতাদের প্রতি যে ধরনের ভক্তি-শ্রদ্ধা ছিল তা এভাবে অনুমান করা যেতে পারে যে, কখনো তার প্রার্থনা ও আশা-আকাংখা বিরোধী কোন ঘটনা ঘটে গেলে অনেক সময় নিজের উপাস্য দেবতাদেরকেই সে তিরষ্কার করতো, তাদেরকে অপমান করতো এবং তাদের সামনে নযরানা পেশ করতো না। একজন আরব নিজের পিতার হত্যাকারী থেকে প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছিল। 'যুল খালাসাহ' নামক ঠাকুরের আস্তানায় গিয়ে সে ধর্না দেয় এবং এ ব্যাপারে তার ভবিষ্যত কর্মপন্থা জানতে চায়। সেখান থেকে এ ধরনের কাজ না করার জবাব আসে। এত আরবটি ক্রুব্ধ হয়ে বলতে থাকে :

لو كنتَ يا ذا الخَلَص الموتورا ... مِثْلي وكان شيخُك المقبورا

لَمْ تنهَ عن قتل العُداة زُوراً ...

অর্থাৎ "হে যুল খালাস! তুমি যদি হতে আমার জায়গায় 
   
নিহত হতো যদি তোমার পিতা
   
তাহলে কখনো তুমি মিথ্যাচারী হতে না
 
বলতে না প্রতিশোধ নিয়ো না জালেমদের থেকে।"

অন্য একজন আরব তার উটের পাল নিয়ে যায় সা'দ নামক দেবতার আস্তানায় তাদের জন্য বরকত লাভ করার উদ্দেশ্যে। এটি ছিল একটি লম্বা ও দীর্ঘ মূর্তি। বলির পশুর চাপ চাপ রক্ত তার গায়ে লেপ্টেছিল। উটেরা তা দেখে লাফিয়ে ওঠে এবং চারিদিকে ছুটে পালিয়ে যেতে থাকে। আরবটি তার উটগুলো এভাবে চারিদিকে বিশৃংখলভাবে ছুটে যেতে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। সে মূর্তিটির গায়ে পাথর মারতে মারতে বলতে থাকে : "আল্লাহ তোর সর্বনাশ করুক। আমি এসেছিলাম বরকত নেবার জন্য কিন্তু তুই তো আমার এই বাকি উটগুলোকেও ভাগিয়ে দিয়েছিস।" অনেক মূর্তি ছিল যেগুলো সম্পকে বহু ন্যাক্কারজনক গল্প প্রচলিত ছিল। যেমন ছিল আসাফ ও নায়েলার ব্যাপার। এ দু'টি মূর্তি রতি ছিল সাফা ও মারওয়াও ওপর। এদের সম্পর্কে প্রচলিত ছিল যে, এরা দু'জন ছিল মূলত একজন পুরুষ ও একজন স্ত্রীলোক। এরা কাবাঘরের মধ্যে যিনা করে। ফলে আল্লাহ তাদেরকে পাথরে পরিণত করে দেন। যেসব দেবতার এ হচ্ছে আসল রূপ, তাদের পূজারী ও ভক্তদের মনে তাদের কোন যথার্থ মর্যাদা থাকতে পারে না। এসব দিক সামনে রাখলে এ কথা সহজে অনুধাবন করা যায় যে, আল্লাহর প্রতি নির্ভেজাল আনুগত্যের একটি সুগভীর মূল্যবোধ তাদের অন্তরের অন্তস্থলে বিরাজিত ছিল। কিন্তু একদিকে অন্ধ রক্ষণশীলতা তাকে দমিয়ে রেখেছিল এবং অন্যদিকে কুরাইশ পুরোহিতরা এর বিরুদ্ধে হিংসা ও বিদ্বেষ উদ্দীপিত করে তুলছিল। কারণ তারা আশংকা করছিল দেবতাদের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা খতম হয়ে গেলে আরবে তাদের যে কেন্দ্রীয় প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে তা খতম হয়ে যাবে এবং তাদের অর্থোপার্জনও বাধাগ্রস্থ হবে। এসব উপাদানের ভিত্তিতে যে মুশরিকী প্রতিষ্ঠিত ছিল তা তাওহীদের দাওয়াতের মোকাবিলায় কোন গুরুত্ব ও মর্যাদা সহকারে দাঁড়াতে পারতো না। তাই কুরআন নিজেই মুশরিদেরকে সম্বোধন করে উদাত্ত কণ্ঠে বলেছে : তোমাদের সমাজে যেসব কারণে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসারীরা শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে, তারা শির্কমুক্ত এবং নির্ভেজাল আল্লাহর বন্দেগী ও আনুগত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এদিক থেকে মুসলমানদের শ্রেষ্ঠত্বকে মুশরিকরা মুখে মেনে নিতে না চাইলেও মনে মনে তারা এর ভারীত্ব অনুভব করতো ।"

.

দ্বীন – শব্দের অর্থ কি ? : এর একটি অর্থ হচ্ছে রাষ্ট্রীয় আইন কানুন  বিচার ব্যবস্থা :

(১২:৭৬) তখন ইউসুফ নিজের ভাইয়ের আগে তাদের থলের তল্লাশী শুরু করে দিল৷ তারপর নিজের ভাইয়ের থলের মধ্য থেকে হারানো জিনিস বের করে ফেললো৷ - এভাবে আমি নিজের কৌশলের মাধ্যমে ইউসুফকে সহায়তা করলাম৷ বাদশাহর দীন (অর্থাৎ মিসরের বাদশাহর আইন) অনুযায়ী নিজের ভাইক পাকড়াও করা তার পক্ষে সংগত ছিল না, তবে যদি আল্লাহই এমনটি চান৷ যাকে চাই তার মর্তবা আমি বুলন্দ করে দেই আর একজন জ্ঞানবান এমন আছে যে প্রত্যেক জ্ঞানবানের চেয়ে জ্ঞানী৷

(ব্যাখ্যা:দেশীয় আইনের (Law of the land) জন্য "দীন" শব্দ ব্যবহার করে আল্লাহর দীনের অর্থের ব্যাপকতা পুরোপুরি প্রকাশ করে দিয়েছেন।  থেকে দীন সম্পর্কে এক ধরনের লোকদের ধারণার মূল উৎপাটিত হয়ে গেছে। তারা ধারণা করেন, নবীগণের দাওয়াত শুধুমাত্র সাধারণ ধর্মীয় অর্থে এক আল্লাহর পূজা উপাসনা-আরাধনা করা এবং নিচক কতিপয় ধর্মীয় আকীদা-বিশ্বাস  রসম-রেওয়াজ মেনে চলাম মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তারা এও মনে করেন, মানুষের সমাজ-সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি আইন-আদালত এবং  ধরনের অন্যান্য পার্থিব বিষয়াদির সাথে দীনের কোন সম্পর্ক নেই। অথবা যদি সম্পর্ক থাকে তাহলে উল্লেখিত বিষয়াদি সম্পর্কে দীনের নির্দেশাবলী নিছক ঐচ্ছিক সুপারিশের পর্যায়ভুক্ত। এগুলো কার্যকর করতে পারলে ভালো, অন্যথায় মানুষের নিজের হাতে গড়া বিধান মেনে চলায় কোন ক্ষতি নেই। এটি পুরোপুরি দীন সম্পর্কে একটি বিভ্রান্ত চিন্তা ছাড়া আর কিছুই নয়। দীর্ঘদিন থেকে মুসলমানদের মধ্যে এর অনুশীলন চলছে। মুসলমানদেরকে ইসলামী জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা  সংগ্রাম থেকে গাফেল করে দেবার ক্ষেত্রে এটিই বেশীরভাগ দায়ী। এরি বদৌলতে মুসলমানরা কুফরী  জাহেলী জীবন ব্যবস্থায় কেবল সন্তুষ্টই হয়নি বরং একজন নবীর সুন্নাত মনে করে  ব্যাবস্থার কল-কব্জায় পরিণত হতে এবং নিজেরাই তাকে পরিচালিত করতেও উদ্যোগী হয়েছে।  আয়াতের দৃষ্টিতে  চিন্তা  কর্মনীতি পুরোপুরি ভুল প্রমাণিত হচ্ছে। এখানে সর্বশক্তিমান আল্লাহ পরিষ্কার ভাষায় বলছেনঃ যেভাবে নামায, রোযা  হ্জ্জ দীনের অন্তরভুক্ত ঠিক তেমনি যে আইনের ভিত্তিতে দেশ  সমাজ ব্যবস্থা পরিচালনা করা হয় তাও দীনের অন্তরভুক্ত। কাজেই (আরবী) এবং (আরবী) ইত্যাদি আয়াতগুলোতে যে দীনের প্রতি আনুগত্যের দাবী জানানো হয়েছে তার অর্থ শুধু নামায-রোযাই নয় বরং ইসলামের সমগ্র সমাজ ব্যবস্থাও তার আওতায় এসে যায়।  ক্ষেত্রে আল্লাহর মনোনীত  ব্যবস্থার প্রতি আনুগত্য পরিহার করে অন্য কোন ব্যবস্থার প্রতি আনুগত্য করা কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। 

চারঃ প্রশ্ন করা যেতে পারে, অন্ততপক্ষে এতটুকুন তো প্রমাণিত যে,  সময পর্যন্ত মিসের রাষ্ট্রীয় পুর্যায়ে "বাদশাহর দীন"  জারী ছিল। যদি  সরকারের প্রধান শাসনকর্তা হযরত ইউসুফই হয়ে থাকেন যেমন এর আগে আপনি প্রমাণ করেছেন, তাহলে তো দেখা যায় আল্লাহর নবী হযরত ইউসুফ নিজেই নিজের হাতে বাদশাহর দীন জারী করছিলেন। এরপর হযরত ইউসুফ যদি নিজের ব্যক্তিগত ব্যাপারে বাদশাহরদীন এর পরিবর্তে ইবরাহীমের শরীয়াতকে কার্যকর করেন তাহলে তাতেই বা কি পার্থক্য হয়৷ এর জবাব হচ্ছে, হযরত ইউসুফ তো আল্লাহর দীন জারী করার জন্য নিযুক্ত হয়েছিলেন। এটিই ছিল তাঁর নবুওয়াতী মিশন এবং তার শাসনের উদ্দেশ্য। কিন্তু একটি দেশের ব্যবস্থা কার্যত এক দিনেই বদলে দেয়া যায় না আজ যদি কোন দেশ সম্পূর্ণভাবে আমাদের কর্তৃত্বাধীনে থাকে এবং আমরা সেখানে ইসলামী জীবন বিধান প্রতিষ্ঠার ঐকান্তিক সংকল্প সহকারে তার সামগ্রিক ব্যাবস্থাপনা নিজের হাতে নেই, তাহলেও তার সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক  অর্থনেতিক এবং আইন  আদালত ব্যবস্থা বাস্তবে পরিবর্তিত করতে কয়েক বছর লেগে যাবে।  অবস্থায় কিছুকাল পর্যন্ত আমাদের ব্যবস্থাপনায়ও পূর্বের আইন বহাল রাখতে হবে। ইতিহাস কি একথার সাক্ষ দেয় না যে, আরবের জীবন ব্যবস্থায় পূর্ণ ইসলামী বিপ্লব সাধনের জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নয়-দশ বছর সময় লেগেছিল৷  সময় শেষ নবীর নিজের রাষ্ট্রেই কয়েক বছর মদ পান চলতে থাকে। সূদের লেন দেন জারী থাকে। জাহেলী যুগের মীরাসী আইন জারী থাকে। পুরাতন বিয়ে তালাকের আইন চালু থাকে। অনেক ধরনের অবৈধ ব্যবসায় কার্যকর হতে থাকে। প্রথম দিনেই ইসলামের দেওয়ানী  ফৌজদারী আইন পুরোপুরি  সর্বতোভাবে প্রবর্তিত হয়নি। কাজই হযরত ইউসুফের রাষ্ট্রে যদি প্রথম আট-নয় বছর পর্যন্ত সাবেক মিসরীয় রাজতন্ত্রের কিছু আইন চালু থাকে তাহলে তাতে অবাক হবোর কি আছে৷ আর  থেকে আল্লাহর নবীকে মিসরে আল্লাহর দীন প্রবর্তনের জন্য নয় বরং বাদশাহর দীন প্রবর্তনের জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল,  যুক্তির উদ্ভব হয় কেমন করে৷ তবে দেশে যখন বাদশাহর দীন জারী ছিলই তখন হযরত ইউসুফের নিজের ব্যক্তিগত ব্যাপারে তাকে কার্যকর করা তাঁর মর্যাদার সাথে সামঞ্জস্যশীল ছিল না কেন,  প্রশ্নের জবাবও নবী (সাঃ) এর পদ্ধতি সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করলে সহজেই পাওয়া যায়। নবী (সাঃ) এর শাসন কালের প্রথম যুগে যতদিন ইসলামী আইন জারি হয়নি ততদিন লোকেরা পুরাতন পদ্ধতি অনুযায়ী শরাব পান করতে থাকে। কিন্তু নবী (সাঃ) নিজেও কি শরাব পান করেন৷ লোকেরা সুদী লেনদেন করতো। কিন্তু তিনি নিজেও কি সুদী লেনদেন করেন৷ লোকেরা মুতা বিয়ে করতে থাকে এবং দুই সহোদরা বোনকে একসাথে বিয়ে করতে থাকে। কিন্তু নবী (সাঃ)  কি এমনটি করেন৷  থেকে জানা যায়, বাস্তব অক্ষমতার কারণে ইসলামের আহবায়কের ইসলামী বিধান জারি করার জন্য পর্যায়ক্রমে অগ্রসর হওয়া একটি ভিন্ন ব্যাপার এবং  পর্যায়ক্রমে অগ্রসর হওয়ার যুগে তাঁর নিজের জাহেলী পদ্ধতিকে কার্যকর করা এর থেকে একটি সম্পূর্ণ ভিন্নতর ব্যাপার। পর্যায়ক্রমের কারণে যে ছুট দেয়া হয় তা অন্যদের জন্য। আহবায়ক নিজে এমন সব পদ্ধতির মধ্যে থেকে কোন একটিকে বাস্তবায়িত করবেন যেগুলোকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য তাঁর নিযুক্ত করা হয়েছে, এটা আসলে তাঁর নিজের কাজ নয়।)

লাকুম দ্বীনুকুম ওয়ালিয়া দ্বীন  এর অর্থ :

(বিস্তারিত দেখূন : অ > অপেক্ষা, ধ > ধর্ম > তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম, আমাদের জন্য আমাদের ধর্ম – এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা ।  )

২:১৩৯, ১৪১, ৬:৬৯,

১। শীঘ্রই জানতে পারবে কার পরিণাম মঙ্গল জনক :

৬:১৩৫,

২। তোমরা অপেক্ষা কর, আমরাও অপেক্ষা করছি :

দেখুন : অ > অপেক্ষা ।  

(২০:১৩৫) হে মুহাম্মাদ! এদেরকে বলো, সবাই কাজে পরিণামের প্রতীক্ষায় রয়েছে৷কাজেই এখন প্রতিক্ষারত থাকো৷ শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে, কার সোজা-সঠিক পথ অবলম্বনকারী এবং কারা সৎপথ পেয়ে গেছে৷

(৩২- আস-সাজদা : ২৮) কাফেররা মুসলমানদেরকে বলে, “ যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তাহলে বলো এ ফায়সালা কবে হবে ? ২৯) এদেরকে বলে দাও, “ যারা কুফরী করেছে ফায়সালার দিন ঈমান আনা তাদের জন্য মোটেই লাভজনক হবে না এবং এরপর এদের কোন অবকাশ দেয়া হবে না ৪২  ৩০) বেশ, এদেরকে এদের অবস্থার ওপর ছেড়ে দাও এবং অপেক্ষা করো,এরাও অপেক্ষায় আছে৷

৪২ . অর্থাৎ এটা এমন কি জিনিস যে জন্য তোমরা অস্থির হয়ে পড়েছো ৷ আল্লাহর আযাব একবার এসে গেলে তখন তো আর তোমরা সংযত হবার সুযোগ পাবে না। আযাব আসার আগে তোমরা যে অবকাশটা পাচ্ছো এটাকে দুর্লভ মনে করো । আযাবকে সরাসরি সামনে দেখার পর ঈমান আনলে কোন লাভ হবে না। 

দ্বীন-কে (আনুগত্যকে) একমাত্র আল্লাহর জন্য খালেস করে দেওয়া :

১০:২১,

(১০:১০৫) আমাকে মুমিনদের অন্তরভুক্ত হবার জন্য হুকুম দেয়া হয়েছে৷ আর আমাকে বলা হয়েছে, তুমি একনিষ্ঠ হয়ে নিজেকে ঠিকভাবে এ দীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত কারো৷   এবং কখখোন মুশরিকদের অন্তরভুক্ত হয়ো না৷

(১০:১০৪) হে নবী! বলে দাও, হে লোকেরা! যদি তোমরা এখনো পর্যন্ত আমার দীনের ব্যাপারে কোন সন্দেহের মধ্যে থাকো তাহলে শুনে রাখো, তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের বন্দেগী করো আমি তাদের বন্দেগী করি না বরং আমি কেবলমাত্র এমন আল্লাহর বন্দেগী করি যার করতলে রয়েছে তোমাদের মৃত্যু৷

(১২:৪০) শাসন কর্তৃত্ব আল্লাহ ছাড়া আর কারোর নেই৷ তাঁর হুকুম- তোমরা তাঁর ছাড়া আর কারোর বন্দেগী করবে না৷ এটিই সরল সঠিক জীবন পদ্ধতি (দ্বীনুল কাইয়্যেম), কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না৷

সঠিক ভাবে দ্বীন পালন করার লাভ  ফলাফল :

(১১:৫২) আর হে আমার কওমের লোকেরা! মাফ চাও তোমাদের রবের কাছে তারপর তাঁর দিকেই ফিরে এসো৷ তিনি তোমাদের জন্য আকাশের মুখ খুলে দেবেন এবং তোমাদের বর্তমান শক্তির ওপর আরো শক্তি বৃদ্ধি করবেন৷ অপরাধীদের মতো মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না৷” 

দ্বীন এর ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি নেই, কাউকে জোর করে ঈমানদার বানানোর প্রয়োজন নেই :

(১১:২৮) সে বললো, “হে আমার কওম! একটু ভেবে দেখো, যদি আমি আমার রবের পক্ষ থেকে একটি স্পষ্ট সাক্ষ-প্রমাণের ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকে থাকি এবং তারপর তিনি আমাকে তাঁর বিশেষ রহমত দান করে থাকেন  কিন্তু তা তোমাদের নজরে পড়েনি, তাহলে আমার কাছে এমন কি উপায় আছে যার সাহায্যে তোমরা মানতে না চাইলেও আমি জবরদস্তি তোমাদের ঘাড়ে তা চাপিয়ে দিবো ?  

দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের :  

(হাজ্ব:৪১) এরা এমন সব লোক যাদেরকে আমি যদি পৃথিবীতে কর্তৃত্ব দান করি তাহলে এরা নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে, ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং খারাপ কাজ নিষেধ করবে৷৮৫ 

(৮৫. অর্থাৎ আল্লাহকে সাহায্যকারী এবং তাঁর সাহায্য ও সহায়তালাভের অধিকরী লোকদের গুণাবলী হচ্ছে এই যে, যদি দুনিয়ায় তাদেরকে রাষ্ট্র ও শাসন ক্ষমতা দান করা হয় তাহলে তারা ব্যক্তিগত জীবনে ফাসেকী, দুষ্কৃতি, অহংকার ও আত্মম্ভরিতার শিকার হবার পরিবর্তে নামায কায়েম করবে। তাদের ধন-সম্পদ বিলাসিতা ও প্রবৃত্তি পূজার পরিবর্তে যাকাত দানে ব্যয়িত হবে। তাদের রাষ্ট্রযন্ত্র সৎকাজকে দাবিয়ে দেবার পরিবর্তে তাকে বিকশিত ও সম্প্রসারিত করার দায়িত্ব সম্পন্ন করবে। তাদের শক্তি অসৎকাজকে ছড়াবার পরিবর্তে দমন করার কাছে ব্যবহৃত হবে। এ একটি বাক্যের মধ্যে ইসলামী রাষ্ট্রের লক্ষ এবং তার কর্মী ও কর্মকর্তাদের বৈশিষ্টের নির্যাস বের করে দেয়া হয়েছে। কেউ যদি বুঝতে চায় ইসলামী রাষ্ট আসলে কোন জিনিসের নাম তাহলে এ একটি বাক্য থেকেই তা বুঝে নিতে পারে।

দ্বীন ইসলামের মধ্যে বিভিন্ন ফির্কার উদ্ভবের কারণ :

বনী ইসরাঈল জাতির দ্বীন সম্পর্কে বিভিন্ন ফের্কায় বিভক্ত হওয়ার কারণ তাদের অজ্ঞতা নয় বরং তাদের স্বার্থান্ধতা

.

১০: ৯৩) তারপর যখন তাদের কাছে জ্ঞান এসে গেলো, তাখনই তারা পরষ্পরে মতভেদ করলো৷  নিশ্চয়ই তোমার রব কিয়ামতের দিন তাদের মধ্যে সেই জিনিসের ফায়সালা করে দেবেন, যে ব্যাপারে তারা মতভেদে লিপ্ত ছিল৷  

(ব্যাখ্য : এর অর্থ হচ্ছে, পরবর্তী পর্যায়ে তারা নিজেদের দীনের মধ্যে যে দলাদলী শুরু করে এবং নতুন নতুন মাযহাব তথা ধর্মীয় চিন্তাগোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটায় তার কারণ এ ছিল না যে, তারা প্রকৃত সত্য জানতো না এবং না জানার কারণে তার বাধ্য হয়ে এমনটি করে। বরং আসলে এসব কিছুই ছিল তাদের দুর্বৃত্তসূলভ চরিত্রের ফসল। আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদেরকে সুষ্প্ষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছিলঃ এ হচ্ছে, সত্য দীন, এ হচ্ছে তার মূলনীতি, এগুলো- এর দাবী ও চাহিদা, এগুলো হচ্ছে কুফর, ও ইসলামের পার্থক্য সীমা, একে বলে আনুগত্য। আর এর নাম হচ্ছে গোনাহ, এসব জিনিসের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে জবাবদিহে করতে হবে এবং এসব নিয়মনীতির ভিত্তিতে দুনিয়ায় তোমরা জীবন প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। কিন্তু এ সুষ্পষ্ট হেদায়াত সত্ত্বেও তারা একটি দীনকে অসংখ্য দীনে পরিণত করে এবং আল্লাহর দেয়া বুনিয়াদগুলো বাদ দিয়ে অন্য বুনিয়াদের ওপর নিজেদের ধর্মীয় ফেরকার প্রসাদ নির্মাণ করে।)

দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা :

আরো দেখুন : ক > কুরআন প্রতিষ্ঠা।

(আরো দেখুন:  >  জিহাদ > জিহাদ কেন দেওয়া হল  )

সামগ্রিক ভাবে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা  ফিতনা নির্মূল করাই হচ্ছে জিহাদ সংগ্রামের উদ্দেশ্য :

৮:৩৯, ৭:১৬৬,  

তওরাত ইঞ্জিলও আইনের কিতাব এবং জমীনে এর হুকুম প্রতিষ্ঠার জন্যই প্রেরণ করা হয়েছিল

 ৫:৪৪-৪৭, ৬৬,  ৫:৬৮, ৬:৯১, ১৫৪

তারা (কাফেররা/ইসলাম বিরোধীরা) চায় মুখের ফু দিয়েই ইসলামের আলো নিভিযে দেবে, কিন্তু আল্লাহ তার আলোকে পরিপূর্ণতা দান করবেনই: ৯:৩২,

আল্লাহ তার রাসূলকে পথনির্দেশ ও সত্য দীন সহকারে পাঠিয়েছেন, যাতে তিনি অপরাপর দ্বীনের উপর একে বিজয়ী করেন, কাফের/মুশরিকদের কাছে তা যতই অপছন্দনীয় হোক না কেন : ৯:৩৩

(১১:৫৭) যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিতে চাও তাহলে ফিরিয়ে নাও, কিন্তু যে পয়গাম দিয়ে আমাকে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল তা আমি তোমাদের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছি৷ এখন আমার রব তোমাদের জায়গায় অন্য জাতিকে বসাবেন এবং তোমরা তাঁর কোনই ক্ষতি করতে পারবে না৷  অবশ্যি আমার রব প্রতিটি জিনিসের সংরক্ষক৷ 

যিনি কুরআন নাযিল করেছেন , একে মঞ্জিলে মকসুদে পৌছানোর দায়িত্বও তাঁর :

(২৮-ক্বাছাছ : ৮৫) হে নবী! নিশ্চিত জেনো, যিনি এ কুরআন তোমার ওপর ন্যস্ত করেছেন  তিনি তোমাকে একটি উত্তম পরিণতিতে পৌঁছিয়ে দেবেন৷  

আরো দেখুন : দ > দ্বীন প্রতিষ্ঠা ।

দ্বীন গ্রহণ না করলে আল্লাহ অন্য জাতি দিয়ে তা করাবেন :

(১১:৫৭) যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিতে চাও তাহলে ফিরিয়ে নাও, কিন্তু যে পয়গাম দিয়ে আমাকে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল তা আমি তোমাদের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছি৷ এখন আমার রব তোমাদের জায়গায় অন্য জাতিকে বসাবেন এবং তোমরা তাঁর কোনই ক্ষতি করতে পারবে না৷  অবশ্যি আমার রব প্রতিটি জিনিসের সংরক্ষক৷ 

ধর্ম ব্যবসা :

দেখুন : দেখুন :  > সামেরী > সামেরীর ধর্ম ব্যবসা  

 

দ্বীনী ভাই :

Øxbx fvB :

hviv ZIev K‡i myc‡_ wd‡i Av‡m AZ:ci wbqwgZ bvgvR c‡o I hvKvZ †`q, ZvivB †Zvgv‡`i Øxbx fvB :9:11,

দ্বিগুণ / দ্বিগুন  :

দ্বিগুন আনন্দ :

মুসলমানদের বিজয় লাভ  রোমানদের বিজয় লাভ এবং মুসলমানদের দ্বিগুণ আনন্দ :

(৩০-রূম: ৪) আর সেদিনটি হবে এমন দিন যেদিন আল্লাহ প্রদত্ত বিজয়ে মুসলমানরা আনন্দে উৎফুল্ল হবে৷   

৩ . ইবনে আব্বাস (রা) আবু সাঈদ খুদরী (রা) , সুফিয়ান সওরী (রা), সুদ্দী প্রমুখ মনীষীগণ বর্ণনা করেন , ইরানীদের ওপর রোমীয়রা এবং বদরের যুদ্ধে মুশরিকদের ওপর মুসলমানরা একই সময় বিজয় লাভ করেন। এ জন্য মুসলমানরা দ্বিগুণ আনন্দিত হয়। ইরান ও রোমের ইতিহাস থেকেও একথাই প্রমাণিত হয়। ৬২৪ সালে বদরের যুদ্ধ হয়। এ বছরই রোমের কায়সার অগ্নি উপাসনাবাদের প্রবর্তক জরথুষ্ট্রের জন্মস্থান ধ্বংস করেন এবং ইরানের সবচেয়ে বড় অগ্নিকুণ্ড বিধ্বস্ত করেন। 

(বিস্তারিত দেখুন : ভ > ভবিষ্যৎবানী)

দ্বিগুন শাস্তি :

দেখুন : শাস্তি > দ্বিগুণ শাস্তি রয়েছে কাদের জন্য ?

দেখুন : শ > শাস্তি > দ্বিগুণ শাস্তি কাদের জন্য ?

শ > শাস্তি > দ্বিগুণ শাস্তি ও দ্বিগুণ পুরস্কারের তাৎপর্য কি ?

ক্লিক করুন :

আলেম ওলামা সহ সমাজের যারা নেতৃস্থানীয়, যাদেরকে মানুষ অনুসরণ করে যাদের কথায় মানুষ চলে তাদের জন্য রয়েছে দ্বিগুণ শাস্তি :

শ > শাস্তি > দুবার শাস্তি  দুবার পুরস্কারের তাৎপর্য কি ? 

কুফরী ধর্মে (কুফরী দ্বীনে)ফিরে যাওয়ার জন্য কাফিরদের পক্ষ থেকে চাপ প্রয়োগ :

(১৪:১৩) শেষ পর্যন্ত অস্বীকারকারীরা তাদের রসূলদের বলে দিল, “হয় তোমাদের ফিরে আসতে হবে আমাদের মিল্লাতে আর নয়তো আমরা তোমাদের বের করে দেবো আমাদের দেশ থেকে৷”

দান :

দান খয়রাত :  (আরো দেখুন : আল্লাহর পথে খরচ,  ক্ষমা লাভ করার শর্তাবলী ):

আল্লাহই তার বান্দাদের দান খয়রাত গ্রহণ করেন : ৯:১০৪,

আল্লাহ দানকারীদেরকে প্রতিদান দেন৷ (১২:৮৮)  

এদেরকেও (যারা দুনিয়ার জীবন কামনা করে) এবং ওদেরকেও (যারা আখিরাতের জীবন কামনা করে), দু দলকেই আমি (দুনিয়ায়) জীবন উপকরণ দিয়ে যাচ্ছি, এ হচ্ছে তোমার রবের দান এবং তোমার রবের দান রুখে দেবার কেউ নেই- (১৭:২০)

দান করার পদ্ধতি :

(মুমিনুন:৬০) এবং যাদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, যা কিছুই দেয় এমন অবস্থায় দেয় যে,  ৬১) তাদের অন্তর এ চিন্তায় কাঁপতে থাকে যে, তাদেরকে তাদের রবের কাছে ফিরে যেতে হবে৷ ৫৪  

৫৪ . আরবী ভাষায় ''দেয়া'' ----- শব্দটি শুধুমাত্র সম্পদ বা কোন বস্তু দেয়া অর্থেই ব্যবহার হয় না বরং বিমূর্ত জিনিস দেয়া অর্থেও বলা হয়। যেমন কোন ব্যক্তির আনুগত্য গ্রহণ করার জন্য বলা হয় ----- আবার কোন ব্যক্তির আনুগত্য অস্বীকার করার জন্য বলা হয় ----- কাজেই এ দেয়ার মানে শুধুমাত্র এই নয় যে, তারা আল্লাহর পথে অর্থ-সম্পদ দান করে বরং আল্লাহর দরবারে আনুগত্য ও বন্দেগী পেশ করাও এর অর্থের অন্তরভূক্ত।

এ অর্থের দৃষ্টিতে আয়াতের পুরোপুরি মর্ম এই দাঁড়ায় যে, আল্লাহর হুকুম পালনের ক্ষেত্রে যা কিছু সদাচার, সেবামূলক কাজ ও ত্যাগ করে সে জন্য একটুও অহংকার ও তাকওয়ার বড়াই করে না এবং আল্লাহর প্রিয়পাত্র হয়ে যাবার অহমিকায় লিপ্ত হয় না। বরং নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী সবকিছু করার পরও এ মর্মে আল্লাহর ভয়ে ভীত হতে থাকে যে, না জানি এসব তাঁর কাছে গৃহীত হবে কিনা এবং রবের কাছে মাগফেরাতের জন্য এগুলো যথেষ্ট হবে কিনা। ইমাম আহমাদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, হাকেম ও জারির বর্ণিত নিম্মোক্তা হাদীসটিই এ অর্থ প্রকাশ করে। এখানে হযরত আয়েশা (রা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেনঃ 'হে আল্লাহর রসূল! এর অর্থ কি এই যে, এক ব্যক্তি চুরি, ব্যভিচার ও শরাব পান করার সময়ও আল্লাকে ভয় করবে৷'' এ প্রশ্ন থেকে জানা যায়, হযরত আয়েশা একে ---------- অর্থে গ্রহণ করছিলেন অর্থাৎ ''যা কিছু করে করেই যায়। জবাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

------------

''না, হে সিদ্দীকের মেয়ে! এর অর্থ হচ্ছে এমন লোক, যে নামায পড়ে, রোযা রাখে, যাকাতা দেয় এবং মহান আল্লাহকে ভয় করতে থাকে।''

এ জবাব থেকে জানা যায় যে, আয়াতের সঠিক পাঠ ----- নয় বরং ----- এবং এ ----- শুধু অর্থ-সম্পদ দান করার সীমিত অর্থে নয় বরং আনুগত্য করার ব্যাপক অর্থে।

একজন মু'মিন কোন্‌ ধরনের মানসিক অবস্থা সহকারে আল্লাহর বন্দেগী করে এ আয়াতটি তা বর্ণনা করে। হযরত উমরের (রা) অবস্থাই এর পূর্ণ চিত্র প্রকাশ করে। তিনি সারা জীবনের অতুলনীয় কার্যক্রমের পর যখন দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে থাকেন তখন আল্লাহর জবাবদিহির ভয়ে ভীত হতে থাকেন এবং যেতে থাকেন, যদি আখেরাতে সমান সমান হয়ে মুক্তি পেয়ে যাই তাহলেও বাঁচোয়া। হযরত হাসান বাসরী (র) বড়ই চমৎকার বলেছেনঃ মু'মিন আনুগত্য করে এরপরও ভয় করে এবং মুনাফিক গোনাহ করে তারপরও নির্ভীক ও বেপরোয়া থাকে।)

মুমিনরা প্রতিশোধ পরায়ন মানসিকতা সম্পন্ন হবে না : ব্যক্তিগত কষ্টের কারণে দান বন্ধ করা যাবেনা:

 

যদি চাও আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করুক  তবে অপরকে ক্ষমা করার অভ্যাস গড়ে তোল :

(নূর:২২) তোমাদের মধ্য থেকে যারা প্রাচুর্য ও সামর্থের অধিকারী তারা যেন এ মর্মে কসম খেয়ে না বসে যে, তারা নিজেদের আত্মীয়-স্বজন, গরীব-মিসকীন ও আল্লাহর পথে গৃহত্যাগকারীদেরকে সাহায্য করবে না ৷ তাদেরকে ক্ষমা করা ও তাদের দোষ-ক্রটি উপেক্ষা করা উচিত ৷ তোমরা কি চাও না আল্লাহ তোমাদের মাফ করেন? আর আল্লাহ ক্ষমাশীলতা ও দয়া গুণে গুণান্বিত ৷

(হযরত আবুবকরে কন্যা ও হযরত মুহাম্মদ সা: এর স্ত্রী হযরত আয়শা রা: এর বিরুদ্ধে যারা অপবাদ রটনা করেছিল, নবীর পরিবার ও হযরত আবু বকরকে চরম কষ্ট দিয়েছিল, তথাপি হযরত আবু বকর তাদের প্রতি তার দানের হাত বন্ধ করেননি। )

দান পাবার অধিকারী : ১। আত্নীয় স্বজন, ২। গরীবমিসকীন ৩। হিজরত কারী মুহাজির :

(নূর:২২) তোমাদের মধ্য থেকে যারা প্রাচুর্য ও সামর্থের অধিকারী তারা যেন এ মর্মে কসম খেয়ে না বসে যে, তারা নিজেদের আত্মীয়-স্বজন, গরীব-মিসকীন ও আল্লাহর পথে গৃহত্যাগকারীদেরকে সাহায্য করবে না ৷

আত্নীয় স্বজন  অভাবীদেরকে যে দান করা হয়, এটা তাদের প্রতি অনুগ্রহ নয় বরং এটা তাদের অধিকার :

(৩০-রূম: ৩৮) কাজেই (হে মুমিন!) আত্মীয়দেরকে তাদের অধিকার দাও এবং মিসকীন ও মুসাফির কে (দাও তাদের অধিকার)৷ ৫৭   এ পদ্ধতি এমন লোকদের জন্য ভালো যারা চায় আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং তারাই সফলকাম হবে৷ ৫৮  

৫৭ . আত্মীয়-স্বজন, মিসকিন ও মুসাফিরদেরকে দান করার কথা বলা হয়নি। বরং বলা হচ্ছে, এ তাঁর অধিকার এবং অধিকার মনে করেই তোমাদের এটা দেয়া উচিত। এ অধিকার দিতে গিয়ে তোমার মনে এ ধারণা না জন্মে যে, তাঁর প্রতি তুমি অনুগ্রহ করছো এবং তুমি কোন মহান দানশীল সত্ত্বা আর সে কোন একটি সামান্য ও নগণ্য সৃষ্টি, তোমার অনুগ্রহের কণা ভক্ষণ করেই সে জীবিকা নির্বাহ করে। বরং একথা ভালোভাবে তোমার মনে গেঁথে যাওয়া উচিত যে, সম্পদের আসল মালিক যদি তোমাকে বেশি এবং অন্য বান্দাদেরকে কম দিয়ে থাকেন , তাহলে এ বর্ধিত সম্পদ হচ্ছে এমন সব লোকের অধিকার যাদেরকে তোমার আওতাধীনে তোমাকে পরীক্ষা করার জন্য দেয়া হয়েছে। তুমি তাদেরকে এ অধিকার দান করছো কি করছো না এটা তোমার মালিক দেখতে চান।

৫৮ . এর দ্বারা একথা বুঝানো হচ্ছে না যে, কেবলমাত্র মিসকীন, মুসাফির ও আত্মীয়-স্বজনদের অধিকার দিয়ে দিলেই সাফল্য লাভ করা যাবে এবং এ ছাড়া সাফল্য লাভ করার জন্য আর কোন জিনিসের প্রয়োজন নেই। বরং এর অর্থ হচ্ছে, যেসব লোক এ অধিকারগুলো জানে না এবং এ অধিকারগুলো প্রদান করে না তারা সাফল্য লাভ করবে না। বরং সাফল্য লাভ করবে এমনসব লোক যারা একান্তভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য অধিকার গুলো জানে এবং এগুলো প্রদান করে। 

 

দারিদ্রতা :

 

তোমরা আল্লাহর বিধান পালনের ওপর অবিচল থাকো, যদি দারিদ্রতার ভয় করো, তাহলে জেনে রাখো, আল্লাহ তার নিজ অনুগ্রহে তোমাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন : ৯:২৮,

(৭)দারিদ্রের আশংকায় নিজেদের সন্তান হত্যা করো না৷ আমি তাদেরকেও রিযিক দেবো এবং তোমাদেরকেও৷ আসলে তাদেরকে হত্যা করা একটি মহাপাপ৷-(১৭:৩১),

দারুল ইসলাম  দারুল কুফর :

দারুল ইসলাম ও দারুল কুফর (ইসলামী রাষ্ট্র ও কুফরী রাষ্ট্র) : (আরো দেখূন : eÜz I AwffveK)

দারুল হরব ও দারুল কুফরে অবস্থিত মুসলমানদের সম্বন্ধে এবং যুদ্ধবন্দীদের সম্বন্ধে দারুল ইসলামে অবস্থিত মুসলমানদের জন্য পালনীয় বিধি বিধান : ৮:৭০-৭৩ (তোমরা যদি এই বিধিবিধান গুলো পালন না করো তবে পৃথিবীতে ফিতনা ও বিপর্যয় সৃষ্টি হবে)।

দাড়ি :

কুরআনে কি দাড়ির কথা উল্লেখিত হয়েছে ? নবী রাসুলদের কি দাড়ি ছিল ?  

(২০:৯৪) হারুন জবাব দিল, “হে আমার সহোদর ভাই! আমার দাড়ি ও মাথার চুল ধরে টেনো না৷ আমার আশংকা ছিল, তুমি এসে বলবে যে, তুমি বনী ইসরাঈলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছো এবং আমার কথা রক্ষা করোনি৷

দাড়িপালা / দাড়িপাল্লা  :

(২১:৪৭) কিয়ামতের দিন আমি যথাযথ ওজন করার দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করবো৷ ফলে কোনো ব্যক্তির প্রতি সামান্যতম জুলুম হবে না৷ যার তিল পরিমাণও কোনো কর্ম থাকবে তাও আমি সামনে আনবো এবং হিসেব করার জন্য আমি যথেষ্ট

(এই দাঁড়িপাল্লা কোন ধরনের হবে তা অনুধাবন করা আমাদের জন্য কঠিন। মোটকথা সেটি এমন কোন জিনিস হবে যা বস্তু ওজন করার পরিবর্তে মানুষের নৈতিক গুণাবলী, কর্মকাণ্ড ও তার পাপ-পূন্য ওজন করবে এবং যথাযথ ওজন করার পর নৈতিক দিক দিয়ে কোন ব্যক্তি কোন ধরনের মর্যাদার অধিকারী তা জানিয়ে দেবে। পূণ্যবান হলে কি পরিমাণ পূণ্যবান এবং পাপী হলে কি পরিমাণ পাপী। মহান আল্লাহর এর জন্য আমাদের ভাষার অন্যান্য শব্দ বাদ দিয়ে "দাঁড়িপাল্লা" শব্দ এ জন্য নির্বাচিত করেছেন যে, এর ধরনটি হবে দাঁড়িপাল্লার সাথে সামঞ্জস্যশীল অথবা এ নির্বাচনের উদ্দেশ্য হচ্ছে একথা বুঝিয়ে দেয়া যে, একটি দাঁড়িপাল্লার পাল্লা যেমন দুটি জিনিসের ওজনের পার্থক্য সঠিকভাবে জানিয়ে দেয়, ঠিক তেমনি আমার ন্যায় বিচারের দাঁড়িপাল্লাও প্রত্যেক ব্যক্তির জীবনের কাজকর্ম যাচাই করে কোন প্রকার কমবেশী না করে তার মধ্যে পূণ্যের না পাপের কোন দিকটি প্রবল তা একদম হুবহু বলে দেয়।)

(৭:৮) আর ওজন হবে সেদিন যথার্থ সত্য৷

(আল্লাহর ন্যায় তুলাদণ্ডে সেদিন ওজন ও সত্য হবে পরস্পরের সমার্থক। সত্য বা হক ছাড়া কোন জিনিসের সেখানে কোন ওজন থাকবে না। আর ওজন ছাড়াও কোন জিনিস সত্য সাব্যস্ত হবে না। যার সাথে যতটুকু সত্য থাকবে সে হবে ততটুকু ওজনদান ও ভারী। ওজনের পরিপ্রক্ষিতেই সব কিছু ফায়সালা হবে। অন্য কোন জিনিসের বিন্দুমাত্রও মর্যাদা ও মূল্য দেয়া হবে না। মিথ্যা ও বাতিলের স্থিতিকাল দুনিয়ায় যতই দীর্ঘ ও বিস্তৃত থাকুক না কেন এবং আপাতদৃষ্টিতে তার পেছনে যতই জাঁকজমক, শান-শওকত ও আড়ম্বর শোভা পাক না কেন, এ তুলাদণ্ডে তা একেবারেই ওজনহীন প্রমাণিত হবে। বাতিলপন্থীদেরকে যখন এ তুলাদণ্ডে ওজন করা হবে, তারা নিজেদের চোখেই দেখে নেবে দুনিয়ায় দীর্ঘকাল ধরে তারা যা কিছু করেছিল তার ওজন একটি মাছির ডানার সমানও নয়। সূরা কাহাফের শেষ তিনটি আয়াতে একথাটিই বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যারা দুনিয়ার জীবনে সবকিছু দুনিয়ারই জন্যে করে গেছে এবং আল্লাহর আয়াত অস্বীকার করে এ ভেবে কাজ করেছে যে, পরকাল বলে কিছু নেই, কাজেই কারোর কাছে নিজের কাজের হিসেব দিতে হবে না, আখেরাতে আমি তাদের কার্যকলাপের কোন ওজন দেবো না।)

(৭:৯) যাদের পাল্লা ভারী হবে তারাই হবে সফলকাম এবং যাদের পাল্লা হালকা হবে তারা নিজেরাই হবে নিজেদের ক্ষতি সাধনকারী৷  কারণ তারা আমার আয়াতের সাথে জালেম সূলভ আচরণ চালিয়ে গিয়েছিল৷  

(এ বিষয়টিকে এভাবে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে যে, মানুষের জীবনের সমগ্র কার্যাবলী দুটি অংশে বিভক্ত হবে। একটি ইতিবাচক বা সৎ কাজ এবং অন্যটি নেতিবাচক বা অসৎ কাজ। ইতিবাচক অংশের অন্তর্ভুক্ত হবে সত্যকে জানা ও মেনে নেয়া এবং সত্যের অনুসরণ করে সত্যের খাতিরে কাজ করা। আখেরাতে একমাত্র এটিই হবে ওজনদান , ভারী ও মূল্যবান ।অন্যদিকে সত্য থেকে গাফিল হয়ে অথবা সত্য থেকে বিচ্যূত হয়ে মানুষ নিজের নফস- প্রবৃত্তি বা অন্য মানুসের ও শয়তানের অনুসরণ করে অসত্য অংশটি কেবল যে, মূল্যহীনই হবে তাই নয় বরং এটাই মানুষের ইতিবাচক অংশের মর্যাদাও কমিয়ে দেবে। 

কাজেই মানুষের জীবনের সমুদয় কার্যাবলীর ভাল অংশ যদি তার মন্দ অংশের ওপর বিজয় লাভ করে ক্ষতিপূরণ হিসেবে অনেক কিছু দেবার পরও তার হিসেবে কিছু না কিছু অবশিষ্ট থাকে , তবেই আখেরাতে তার সাফল্য লাভ করা সম্ভব  আর যে ব্যক্তির জীবনের মন্দ কাজ সমস্ত ভাল কাজকে মূল্যহীন করে দেবে তার অবস্থা হবে সেই দেউলিয়া ব্যবসায়ীর মত যার সমুদয় পূঁজি ক্ষতিপূরণ  দাবী পূরণ করতে করতেই শেষ হয়ে যায় এবং এরপরও কিছু কিছু দাবী তার জিম্মায় অনাদায়ী থেকে যায়।)

(মু’মিনুন:১০২) সে সময় যাদের পাল্লা ভারী হবে তারাই সফলকাম হবে ৷১০৩) আর যাদের পাল্লা হাল্কা হবে তারাই হবে এমনসব লোক যারা নিজেদেরকে ক্ষতির মধ্যে নিক্ষেপ করেছে ৷ তারা জাহান্নামে থাকবে চিরকাল৷

দাস-দাসী :

৪:৩৬, ২৪, ২৫, ৯২ (দাস মুক্ত করা)

দাস-দাসীরা কি সম্পদের সমান অংশীদার হতে পারে? : শিরক এর বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রমাণ :

(১৬:৭১) আর দেখো, আল্লাহ তোমাদের একজনকে আর একজনের ওপর রিযিকের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন৷ তারপর যাদেরকে এ শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে তারা এমন নয় যে নিজেদের রিযিক নিজেদের গোলামদের দিকে ফিরিয়ে দিয়ে থাকে, যাতে উভয় এ রিযিকে সমান অংশীদার হয়ে যায়৷ তাহলে কি এরা শুধু আল্লাহরই অনুগ্রহ মেনে নিতে অস্বীকার করে ?

বিবাহ যোগ্যা দাস অথবা দাসীদেরকে বিবাহ করিয়ে দেওয়া মনিবের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব :  

(নূর:৩২) তোমাদের মধ্যে যারা একা ও নিসংগ এবং তোমাদের গোলাম ও বাঁদীদের মধ্যে যারা সৎ ও বিয়ের যোগ্য তাদের বিয়ে দাও

গোলাম  মনিব কি একই পর্যায়ভুক্ত ? শিরক এর বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রমাণ :

(১৬:৭৫) আল্লাহ একটি উপমা দিচ্ছেন৷ একজন হচ্ছে গোলাম, যে অন্যের অধিকারভুক্ত এবং নিজেও কোনো ক্ষমতা রাখে না৷ দ্বিতীয়জন এমন এক ব্যক্তি যাকে আমি নিজের পক্ষ থেকে ভালো রিযিক দান করেছি এবং সে তা থেকে প্রকাশ্যে ও গোপনে খুব খরচ করে৷ বলো, এরা দুজন কি সমান ?-আলহামদুলিল্লাহ,  কিন্তু অধিকাংশ লোক (এ সোজা কথাটি) জানে না৷

(৩০-রূম: ২৮) তিনি নিজেই তোমাদের জন্য  তোমাদের আপন সত্তা থেকে একটি দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন৷ তোমাদের যেসব গোলাম তোমাদের মালিকানাধীন আছে তাদের মধ্যে কি এমন কিছু গোলাম আছে যারা আমার দেয়া ধন- সম্পদে তোমাদের সাথে সমান অংশীদার এবং তোমরা তাদেরকে এমন ভয় করো যেমন পরস্পরের মধ্যে সমকক্ষদেরকে ভয় করে থাকে ?   - যারা বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করে তাদের জন্য আমি এভাবে আয়াতগুলো সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করি৷  

(বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য দেখুন : শ > শিরক )

দাসীর সাথে সংগম করা কি বৈধ ? হ্যাঁ, তবে মালিকানা ভুক্ত দাসী, বর্তমানকালের বেতনভুক্ত দাসী নয় :

 (মু’মিনুন:৫) ( মু’মিনরা) নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে, ৬) নিজেদের স্ত্রীদের ও অধিকারভুক্ত বাঁদীদের ছাড়া, এদের কাছে (হেফাজত না করলে) তারা তিরষ্কৃত হবে না,  ৭) তবে যারা এর বাইরে আরো কিছু চাইবে তারাই হবে সীমালংঘনকারী

(কাফেরদের সাথে যুদ্ধের ফলে যেসব মহিলা হস্তগত হয়, তাদেরকে মুসলিম সৈন্যদের মধ্যে দাসী হিসেবে বন্টন করে দেওয়া হয়, সেসব দাসীদের সাথে সংগম করা বৈধ, আবার সেসব দাসীদেরকে বিক্রয় করা হয়, যে ব্যক্তি ক্রয় করে সেও তার সাথে সংগম করতে পারে, কিন্তু বর্তমান সময়কালে কাজের মহিলা, বা বেতনভুক্ত যেসব দাসী বাঁদী রাখা হয় তাদের সাথে কোন ক্রমেই ঐ রূপ দাসীদের ন্যায় আচরণ করার কোনই অবকাশ নেই। )

বাঁদী / মালিকানাধীন দাসীর সাথে সহবাস করার বৈধতার কারণ কি ?

(মু’মিনুন: ৫) (যারা) নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে, ৬) নিজেদের স্ত্রীদের ও অধিকারভুক্ত বাঁদীদের ছাড়া, এদের কাছে (হেফাজত না করলে) তারা তিরষ্কৃত হবে না,  

(৩৩-আহযাব:৫২) এরপর তোমার জন্য অন্য নারীরা হালাল নয় এবং এদের জায়গায় অন্য স্ত্রীদের আনবে  অনুমতিও নেই, তাদের সৌন্দর্য তোমাকে যতই মুগ্ধ করুক না কেন, তবে বাঁদীদের মধ্য থেকে তোমার অনুমতি আছে৷৯৪ আল্লাহ সবকিছু দেখাশুনা করছেন৷  

৯৪.  আয়াতটির পরিষ্কার করে একথা বর্ণনা করছে যে, বিবাহিতা স্ত্রীগণ ছাড়া মালিকানাধীন নারীদের সাথেও মিলনের অনুমতি রয়েছে এবং তাদের ব্যাপারে কোন সংখ্যা-সীমা নেই। সূরা নিসার  আয়াতে, সূরা মু'মিনুনের  আয়াতে এবং সূরা মা'আরিজের ৩০ আয়াতে  বিষয়বস্তুটি পরিষ্কার করে বলে দেয়া হয়েছে।  সমস্ত আয়াতে মালিকানাধীন মহিলাদেরকে বিবাহিতা নারীদের মোকাবিলায় একটি আলাদা গোষ্ঠী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে এবং তারপর তাদের সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপনকে বৈধ গণ্য করা হয়েছে।  ছাড়াও সূরা নিসার  আয়াত বিবাহিতা স্ত্রীদের জন্য  জনের সীমারেখা নির্ধারণ করে  কিন্তু সেখানে আল্লাহ মালিকানাধীন মহিলাদের কোন সংখ্যাসীমা বেঁধে দেননি এবং এতদসংক্রান্ত অন্য আয়াতগুলোতেও কোথাও  ধরনের কোন সীমার প্রতি ইংগিতও করেননি। বরং এখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করে বলা হচ্ছে, আপনার জন্য এরপর অন্য মহিলাদেরকে বিয়ে করা অথবা কাউকে তালাক দিয়ে অন্য স্ত্রী নিয়ে আসা হালাল নয়। তবে মালিকানাধীন মহিলারা হালাল।  থেকে পরিষ্কার প্রকাশ হয় মালিকানাধীন মহিলাদের ব্যাপারে কোন সংখ্যা-সীমা নির্ধারিত নেই। 

কিন্তু এর অর্থ  নয়, ইসলামী শরীয়াত ধনীদের অসংখ্য বাঁদী কিনে আয়েশ করার জন্য  সুযোগ দিয়েছে। বরং আসলে প্রবৃত্তি পূজারী লোকেরা  আইনটি থেকে অযথা সুযোগ গ্রহণ করেছে। আইন তৈরি করা হয়েছিল মানুষের সুবিধার জন্য। আইন থেকে  ধরনের সুযোগ গ্রহণের জন্যও তা তৈরি করা হয়নি। এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঠিক তেমনি যেমন শরীয়াত একজন পুরুষকে চারজন পর্যন্ত মহিলাকে বিয়ে করার অনুমতি দেয় এবং তাকে নিজের স্ত্রীকে তালাক দিয়ে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করারও অনুমতি দেয়। মানুষের প্রয়োজন সামনে রেখে  আইন তৈরি করা হয়েছিল। এখন যদি কোন ব্যক্তি নিছক আয়েশ করার জন্য চারটি মহিলাকে বিয়ে করে কিছুদিন তাদের সাথে থাকার পর তাদেরকে তালাক দিয়ে আবার নতুন করে চারটি বউ ঘরে আনার ধারা চালু করে, তাহলে এটা তো আইনের অবকাশের সুযোগ গ্রহণ করাই হয়। এর পুরো দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ওপরই বর্তাবে, আল্লাহর শরীয়াতের ওপর নয়। অনুরূপভাবে যুদ্ধে গ্রেফতারকৃত মহিলাদেরকে যখন তাদের জাতি মুসলিম বন্দীদের বিনিময়ে ফিরিয়ে নিতে অথবা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে এগিয়ে আসে না তখন ইসলামী শরীয়াত তাদেরকে বাঁদী হিসেবে গ্রহণ করার অনুমতি দিয়েছে। তাদেরকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যেসব ব্যক্তির মালিকানায় দিয়ে দেয়া হয় তাদের  সব মহিলার সাথে সংগম করার অধিকার দিয়েছে। এর ফলে তাদের অস্তিত্ব সমাজে নৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়ায় না। তারপর যেহেতু বিভিন্ন যুদ্ধে গ্রেফতার হয়ে আসা লোকদের কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা থাকতে পারে না, তাই আইনগতভাবে এক ব্যক্তি একই সংগে 'জন গোলাম বা বাঁদী রাখতে পারে, এরও কোন সীমা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। গোলাম  বাঁদীদের বেচাকেনাও  জন্য বৈধ রাখা হয়েছে যে, যদি কোন গোলাম বা বাঁদীর তার মালিকের সাথে বনিবনা না হয় তাহলে সে অন্য মালিকের অধীনে চলে যেতে পারবে এবং এক ব্যক্তির চিরন্তন মালিকানা মালিক  অধীনস্থ উভয়ের জন্য আযাবে পনিণত হবে না। শরীয়াত  সমস্ত নিয়ম  বিধান তৈরি করেছিল মানুষের অবস্থা  প্রয়োজন সামনে রেখে তার সুবিধার জন্য। যদি ধনী লোকেরা একে বিলাসিতার মাধ্যমে পরিণত করে নিয়ে থাকে তাহলে  জন্য শরীয়াত নয়, তারাই অভিযুক্ত হবে। 

দাস মুক্ত করার প্রতি উৎসাহ প্রদান : চুক্তিভিত্তিতে তাদেরকে মুক্ত করে দাও : তাদেরকে দান করো:

(নূর:৩) ...আর তোমাদের মালিকানাধীনদের মধ্যে থেকে যারা মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তির আবেদন করে তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হও যদি তাদের মধ্যে কল্যাণের সন্ধান পাও৷ আর আল্লাহ তোমাদের যে সম্পদ দিয়েছেন তা থেকে তাদেরকে দাও৷আর তোমাদের বাঁদীরা যখন নিজেরাই সতী সাধ্বী থাকতে চায় তখন দুনিয়াবী স্বার্থলাভের উদ্দেশ্যে তাদেরকে দেহ বিক্রয়ে বাধ্য করো না ৷আর যে তাদেরকে বাধ্য করে, তবে এ জোর-জবরদস্তির পর আল্লাহ তাদের জন্য ক্ষমাশীল ও করুণাময় ৷

(মূল শব্দ হচ্ছে ----- এর শাব্দিক অর্থ লিপিবদ্ধ। কিন্তু পারিভাষিক দিক দিয়ে এ শব্দটি তখন বলা হয় যখন কোন গোলাম বা বাঁদী নিজের মুক্তির জন্য নিজের প্রভুকে একটি মূল্য দেবার প্রস্তার দেয় এবং প্রভু সে প্রস্তাব গ্রহণ করে নেয় তখন উভয়ের মধ্যে এর শর্তাবলি লিপিবদ্ধ হয়ে যায়। ইসলামে গোলামদের মুক্ত করার জন্য যেসব পথ তৈরী করা হয়েছে এটি তার অন্যতম । এ মূল্য অর্থ বা সম্পদের আকারে দেয়া অপরিহার্য নয়। উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে প্রভুর জন্য কোন বিশেষ কাজ করে দেয়াও মূল্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। চুক্তি হয়ে যাবার পর কর্মচারীর স্বাধীনতায় অনর্থক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার অধিকার প্রভুর থাকে না। মূল্য বাবদ দেয় অর্থ সংগ্রহের জন্য সে তাকে কাজ করার সুযোগ দেবে। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে গোলাম যখনই তার দেয় অর্থ বা তার ওপর আরোপিত কাজ সম্পন্ন করে দেবে তখনই সে তাকে মুক্ত করে দেবে। হযরত উমরের আমলের ঘটনার। একটি গোলাম তার কর্ত্রীর সাথে নিজের মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তি করে এবং নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে চুক্তিতে উল্লেখিত পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করে তার কাছে নিয়ে যায়। কর্ত্রী বলে, আমিতো সমুদয় অর্থ এক সাথে নেবো না। বরং বছরে বছরে মাসে মাসে বিভিন্ন কিস্তিতে নেবো। গোলাম হযরত উমরের (রা) কাছে অভিযোগ করে। তিনি বলেন, এ অর্থ বায়তুল মালে দাখিল করে দাও এবং চলে যাও তুমি স্বাধীন। তারপর কর্ত্রীকে বলে পাঠান,তোমার অর্থ এখানে জমা হয়ে গেছে, এখন তুমি চাইলে এক সাথেই নিয়ে নিতে পারো অথবা আমরা বছরে বছরে মাসে মাসে তোমাকে দিতে থাকবো। (দারুকুত্‌নী, আবু সাঈদ মুকবেরীর রেওয়ায়াতের মাধ্যমে)।)

দাওয়াত / আহ্বান / প্রচার / সতর্কীকরণ :

(২৮-ক্বাছাছ : 87)....নিজের রবের দিকে দাওয়াত দাও এবং কখনো মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না

কুরআন অস্বীকারকারীদের জন্য রয়েছে কঠিন আযাব : ৩:৪, ৫:৮৬,

কুরআন বিরোধী / কুরআনের দাওয়াত রোধকারীদের বর্ণনা : ৬:২৫-২৯, ৯১,

(হাজ্ব:৪৯) হে মুহাম্মাদ! বলে দাও, “ওহে লোকেরা, আমি তো তোমাদের জন্য শুধুমাত্র (খারাপ সময় আসার আগেই) একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী৷

(১৪:৫২) এটি একটি পয়গাম সব মানুষের জন্য এবং এটি পাঠানো হয়েছে এ জন্য যাতে এর মাধ্যমে তাদেরকে সতর্ক করা যায় এবং তারা জেনে নেয় যে, আসলে আল্লাহ মাত্র একজনই আর যারা বুদ্ধি-বিবেচনা রাখে তারা সচেতন হয়ে যায়৷

(১৮:৫৭) ..তুমি তাদেরকে সৎপথের দিকে যতই আহ্বান কর না কেন তারা এ অবস্থায় কখনো সৎপথে আসবে না৷

দাওয়াত দানকারীদের বিরুদ্ধে কাফেরদের/বিরোধীদের গৃহীত কর্মনীতি সমূহ:

১। আগুনে পুড়িয়ে হত্যা :

(২৯-আনকাবুত:২৪) তারপর  সেই জাতির জবাব এ ছাড়া আর কিছুই ছিল না যে, তারা বললো , “ একে হত্যা করো অথবা পুড়িয়ে ফেলো৷ ” ৩৮   শেষ পর্য্‌ন্ত আল্লাহ তাকে (হযরত ইব্রাহিম আ: কে ) আগুন থেকে রক্ষা করেন৷

৩৮ . অর্থাৎ হযরত ইবরাহীমের ন্যায়সঙ্গত যুক্তির কোন জবাব তাদের কাছে ছিল না। তাদের যদি কোন জবাব থেকে থাকে তাহলে তা এই ছিল যে, হক কথা বলছে যে কণ্ঠটি সেটি স্তব্ধ করে দাও এবং যে ব্যক্তি আমাদের ভুল আমাদের চোখের সামনে তুলে ধরছে এবং তা থেকে আমাদের বিরত থাকতে বলছে তাকে জীবন্ত রেখো না। "হত্যা করো ও জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারো" শব্দাবলী থেকে একথা প্রকাশিত হচ্ছে যে, সমগ্র জনতা হযরত ইবরাহীমকে মেরে ফেলার ব্যাপারে একমত ছিল তবে মেরে ফেলার পদ্ধতির ব্যাপারে ছিল বিভিন্ন মত। কিছু লোকের মত ছিল , তাকে হত্যা করা হোক। আবার কিছু লোকের মত ছিল, জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হোক, এর ফলে ভবিষ্যতে যারা এ ভূখণ্ডে হক কথা বলার পাগলামী করতে চাইবে এটা তাদের জন্য একটা শিক্ষা হয়ে থাকবে। 

(আরো ব্যাখ্যার জন্য দেখুন : ম > মু’জেযা > ইব্রাহীম আ: এর মু’জেযা সমুহ।)  

দাওয়াতী কাজের ফলশ্রুতিতে যে কোন জাতি মূলত দুটি দলে বিভক্ত হয়ে যায় :

(২৭.নমল : ৪৫) আর আমি  সামূদ জাতির কাছে তাদের ভাই সালেহকে (এ পয়গাম সহকারে) পাঠালাম যে, আল্লাহর বন্দেগী করো এমন সময় সহসা তারা দু’টি বিবাদমান দলে বিভক্ত হয়ে গেলো৷৫৮ 

৫৮. অর্থাৎ সালেহ আলাইহিস সালামের দাওয়াত শুরু হবার সাথে সাথেই তাঁর জাতি দু'টি দলে বিভক্ত হয়ে গেলো। একটি দল মু'মিনদের এবং অন্যটি অস্বীকারকারীদের। এ বিভক্তির সাথে সাথেই তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাতও শুরু হয়ে গেলো। যেমন কুরআন মজীদে বলা হয়েছে :

قَالَ الْمَلَأُ الَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا مِنْ قَوْمِهِ لِلَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا لِمَنْ آَمَنَ مِنْهُمْ أَتَعْلَمُونَ أَنَّ صَالِحًا مُرْسَلٌ مِنْ رَبِّهِ قَالُوا إِنَّا بِمَا أُرْسِلَ بِهِ مُؤْمِنُونَ * قَالَ الَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا إِنَّا بِالَّذِي آَمَنْتُمْ بِهِ كَافِرُونَ -

"তার জাতির শ্রেষ্ঠত্বের গর্বে গর্বিত সরদাররা দলিত ও নিষ্পেষিত জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে বললো, সত্যই কি তোমরা জানো, সালেহ তার রবের পক্ষ থেকে পাঠানো একজন নবী৷ তারা জবাব দিল, তাকে যে জিনিস সহকারে পাঠানো হয়েছে আমরা অবশ্যই তার প্রতি ঈমান রাখি। এ অহংকারীরা বললো, তোমরা যে জিনিসের প্রতি ঈমান এনেছো আমরা তা মানি না।" (আ'রাফ ৭৫-৭৬ আয়াত)

মনে রাখতে হবে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আবির্ভাবের সাথে সাথে মক্কায়ও এ একই ধরনের অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। তখনও জাতি দু'ভাগে বিভক্ত হয়েছিল এবং সাথে সাথেই তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত শুরু হয়ে গিয়েছিল। তাই যে অবস্থার প্রেক্ষিতে এ আয়াত নাযিল হয়েছিল তার সাথে এ কাহিনী আপনা থেকেই খাপ খেয়ে যাচ্ছিল।

তোমার রবের দিকে দাওয়াত দাও :

(হাজ্ব:৬৭) ...তুমি তোমার রবের দিকে দাওয়াত দাও৷

ইসলামের দাওয়াত তথা আল্লাহর দিকে দাওয়াত ফলপ্রসু হওয়ার ব্যাপারে নিরাশ হয়ো না :

(৩২- আস-সাজদা : ২৭) আর এরা কি কখনো এ দৃশ্য দেখেনি যে, আমি ঊষর ভূমির ওপর পানির ধারা প্রবাহিত করি এবং তারপর এমন জমি থেকে ফসল উৎপন্ন করি যেখান থেকে তাদের পশুরাও খাদ্য লাভ করে এবং তারা নিজেরাও খায় ? তবুও কি এরা কিছুই দেখে না ? ৪০  

৪০ . পূর্বাপর আলোচনা সামনে রাখলে পরিষ্কার অনুভূত হয়, এখানে মৃত্যুপরের জীবনের স্বপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করার জন্য এ প্রসঙ্গ উত্থাপন করা হয়নি যেমন কুরআনে বিভিন্ন জায়গায় সাধারণভাবে করা হয়েছে বরং এ প্রসঙ্গে অন্য একটি উদ্দেশ্যে একথা বলা হয়েছে। আসলে এর মধ্যে একটি সূক্ষ্ণ ইঙ্গিত রয়েছে এ বিষয়ের প্রতি যে, একটি অনুর্বর পতিত জমি দেখে যেমন কেউ ধারণা করতে পারে না যে, এটিও কোনদিন সবুজ-শ্যামল ক্ষেতে পরিণত হবে। কিন্তু আল্লাহর পাঠানো এক পশলা বৃষ্টিধারাই এর কায়া পাল্টে দেয়। ঠিক তেমনি ইসলামের দাওয়াতও তোমাদের চোখে বর্তমানে একটি অচল জিনিস বলে প্রতিভাত হচ্ছে কিন্তু আল্লাহর কুদরাতের একটি ঝলকানি তাকে এমন উন্নতি ও অগ্রগতি দান করবে যে, তোমরা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাবে।

দ্বীনের দাওয়াত পৌছানো আল্লাহর দায়িত্ব :  আরো দেখুন : দাওয়াত।

(১৭:৬০) আমি এদেরকে অনবরত সতর্ক করে যাচ্ছি কিন্তু প্রতিটি সতর্ক সংকেত এদের অবাধ্যতা বাড়িয়ে চলছে৷

প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর জন্য রয়েছে একজন পথপ্রদর্শক৷-(১৩:৭)

(১৬:৬৩) আল্লাহর কসম, হে মুহাম্মাদ ! তোমার আগেও বহু জাতির মধ্যে আমি রসূল পাঠিয়েছি৷

(১৬:৩৬) প্রত্যেক জাতির মধ্যে আমি একজন রসূল পাঠিয়েছি এবং তার মাধ্যমে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি যে, “আল্লাহর বন্দেগী করো এবং তাগূতের বন্দেগী পরিহার করো৷”

তারা (কাফেররা/ইসলাম বিরোধীরা)চায় মুখের ফু দিয়েই ইসলামের আলো নিভিয়ে দেবে, কিন্তু আল্লাহ তার আলোকে পরিপূর্ণতা দান করবেনই :৯:৩২,

আল্লাহ তারা রাসুলকে পথ নির্দেশ ও সত্য দ্বীন সহকারে পাঠিয়েছেন, যাতে তিনি অপরাপর দ্বীনের উপর একে বিজয়ী করেন, কাফের/মুশরিকদের কাছে তা যতই অপছন্দনীয় হোক না কেন :৯:৩৩,

(২৮-ক্বাছাছ : ৪৭) (আর আমি এজন্য করেছি যাতে) এমনটি যেন না হয় যে, তাদের নিজেদের কৃতকর্মের বদৌলতে কোন বিপদ তাদের ওপর এসে যায়, আর তারা বলে, "হে আমাদের রব! তুমি কেন আমাদের কাছে কোন রসূল পাঠাওনি? তাহলে তো আমরা তোমার আয়াত মেনে চলতাম এবং ঈমানদারদের অন্তর্ভুক্ত হতাম৷৬৬ 

৬৬. এ জিনিসটিকেই কুরআন মজীদ বিভিন্ন স্থানে রসূল পাঠাবার কারণ হিসেবে বর্ণনা করেছে। কিন্তু এ থেকে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সঠিক হবে না যে, এ উদ্দেশ্যে সব সময় প্রত্যেক জায়গায় একজন রসূল আসা উচিত। যতক্ষণ পর্যন্ত দুনিয়ায় একজন রসূলের পয়গাম তার সঠিক আকৃতিতে বিদ্যমান থাকে এবং লোকদের কাছে তা পৌঁছে যাবার মাধ্যমও অপরিবর্তিত থাকে ততক্ষণ কোন নতুন রসূলের প্রয়োজন হয় না। তবে যদি আগের নবীর আনীত শরীয়াতের মধ্যে কোন কিছু বৃদ্ধি করার এবং কোন নতুন বিধান দেবার প্রয়োজন হয়, তাহলে নতুন রসূল আসেন। অবশ্যই যখন নবীদের পয়গাম বিলুপ্ত হয়ে যায় অথবা গোমরাহীর মধ্যে এমনভাবে মিশ্রিত হয়ে যায় যে, তা থেকে হেদায়াত লাভের কোন উপায় থাকে না। তখন লোকদের জন্য এ ওজর পেশ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়ে যায যে, আমাদের হক ও বাতিলের পার্থক্য সম্পর্কে সচেতন করার ও সঠিক পথ দেখাবার কোন ব্যবস্থাই আদতে ছিল না, এ অবস্থায় আমরা কেমন করে হেদায়াত লাভ করতে পারতাম! এ অজুহাত দেখানোর পথ বন্ধ করার জন্য মহান আল্লাহ্ এ ধরনের অবস্থায় নবী পাঠান, যাতে এর পর যে ব্যক্তিই ভুল পথে চলবে তাকে সে জন্য দায়ী করা সম্ভব না হয়।

(২৮-ক্বাছাছ : ৫১) আর আমি তো অনবরত তাদের কাছে (উপদেশ বাণী) পৌঁছিয়ে দিয়েছি, যাতে তারা গাফলতি থেকে সজাগ হয়ে যায়৷৭১ 

৭১. অর্থাৎ উপদেশের ব্যাপারে আমি কোন কসুর করিনি। এ কুরআনে আমি অনবরত উপদেশ বিতরন করে এসেছি। কিন্তু যে জিদ ও একগুয়েমি পরিহার করে হৃদয়কে বিদ্বেষমুক্ত রেখে সত্যকে সোজাসুজি গ্রহন করতে প্রস্তুত হয়ে যায় সে-ই একমাত্র হিদায়াত লাভ করতে পারে।

যাদের কাছে শেষপর্যন্ত দ্বীনের দাওয়াত পৌছেনি, তাদের শেষফল বা পরকালীন শেষফল কিসের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে ?

(৩- আস সাজদা:  ৩).....যাতে তুমি সতর্ক করতে পারো এমন একটি জাতিকে যাদের কাছে তোমার পূর্বে কোন সতর্ককারী আসে নি, হয়তো তারা সৎপথে চলবে৷

বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য দেখুন : দ > দ্বীন > যাদের কাছে শেষপর্যন্ত দ্বীনের দাওয়াত পৌছেনি, তাদের শেষফল বা পরকালীন শেষফল কিসের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে ?

রাসুল সা: এর সামনে যখনই কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে, আল্লাহ তার জবাব দিয়ে দিয়েছেন :

(২৫.ফুরকান:৩২) অস্বীকারকারীরা বলে, “এ ব্যক্তির কাছে সমগ্র কুরআন একই সাথে নাযিল করা হলো না কেন?” হ্যাঁ, এমন করা হয়েছে এজন্য, যাতে আমি একে ভালোভাবে তোমার মনে গেঁথে দিতে থাকি এবং (এ উদ্দেশ্যে) একে একটি বিশেষ ক্রমধারা অনুযায়ী আলাদা আলাদা অংশে সাজিয়ে দিয়েছি৷ ৩৩) আর (এর মধ্যে এ কল্যাণকর উদ্দেশ্যও রয়েছে যে) যখনই তারা তোমার সামনে কোন অবিনব কথা (অথবা অদ্ভুত ধরনের প্রশ্ন) নিয়ে এসেছে তার সঠিক জবাব যথাসময়ে আমি তোমাকে দিয়েছি এবং সর্বোত্তম পদ্ধতিতে বক্তব্য স্পষ্ট করে দিয়েছি৷

দ্বীনের দাওয়াত পৌছানো রাসুলগণ  মুমিনগণের দায়িত্ব : (সাক্ষ্যদানের দায়িত্ব, সাক্ষী হওয়ার দায়িত্ব):

মৌখিক, লেখনি  বাস্তব চরিত্রের মাধ্যমে দাওয়াত দেওয়াই মুমিনদের কর্তব্য :

(হাজ্ব:৭৮) ..যাতে রসূল তোমাদের ওপর সাক্ষী হন এবং তোমরা সাক্ষী হও লোকদের ওপর৷

কিয়ামতের দিন রাসুলগণকে  তাদের প্রতিনিধিদেরকে সাক্ষী বানানো হবে :

(২৮-ক্বাছাছ : ৭৫) আর আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্য থেকে একজন সাক্ষী বের করে আনবো৯২ 

৯২. অর্থাৎ নবী, যিনি সংশ্লিষ্ট উম্মতকে সতর্ক করেছিলেন। অথবা নবীদের অনুসারীদের মধ্য থেকে এমন কোন হিদায়াত প্রাপ্ত ব্যক্তি যিনি সংশ্লিষ্ট উম্মতের মধ্যে সত্য প্রচারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কিংবা কোন প্রচার মাধ্যম যার সাহায্যে সংশ্লিষ্ট উম্মতের কাছে সত্যের পয়গাম পৌঁছেছিল।

(বিস্তারিত দেখুন : স > সাক্ষী,  প > পরকাল > সাক্ষী)

দাওয়াতী কাজ :

তারা (কাফেররা / ইসলাম বিরোধীরা) চায় মুখের ফু দিয়েই ইসলামের আলো নিভিয়ে দেবে, কিন্তু আল্লাহ তার আলোকে পরিপূর্ণতা দান করবেনই : ৯:৩২,

আল্লাহ তার রাসুলকে পথনির্দেশ ও সত্য দ্বীন সহকারে পাঠিয়েছেন, যাতে তিনি অপরাপর দ্বীনের উপর একে বিজয়ী করেন, কাফের / মুশরিকদের কাছে তা যতই অপছন্দনীয় হোক না কেন  : ৯:৩৩,

জামায়াত বদ্ধ হয়ে / দলবদ্ধ হয়ে দাওয়াতী কাজ  : ৩:১০৪, ১০৫, ৫:৫৪,

(২৮-ক্বাছাছ : ৪৬) আর তুমি তূর পাহাড়ের পাশেও তখন উপস্থিত ছিলে না যখন আমি (মূসাকে প্রথমবার) ডেকেছিলাম৷ কিন্তু এটা তোমার রবের অনুগ্রহ (যার ফলে তোমাকে এসব তথ্য দেয়া হচ্ছে )৬৪ যাতে তুমি তাদেরকে সতর্ক করো যাদের কাছে তোমার পূর্বে কোন সতর্ককারী আসেনি,৬৫ হয়েতা তারা সচেতন হয়ে যাবে৷

৬৫. আরবে হযরত ইসমাঈল ও হযরত শো'আইব আলাইহিমাস সালাম ছাড়া আর কোন নবী আসেননি। প্রায় দু'হাজার বছরের এ সুদীর্ঘ সময়ে বাইরের নবীদের দাওয়াত অবশ্যই সেখানে পৌঁছেছে। যেমন হযরত মূসা, হযরত সুলাইমান ও হযরত ঈসা আলাইহিমুস সালামের দাওয়াত। কিন্তু নির্দিষ্টভাবে কোন নবীর আবির্ভাব সেখানে ঘটেনি। (বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য দেখুন : উ > উপস্থিত > তুমি তো সেখানে উপস্থিত ছিলেনা।)


যে সমাজে দাওয়াতী কাজ চলতে থাকে এবং লোকেরা কিছু কিছু করে সত্যের দাওয়াতের অনুসারী হতে থাকে এরূপ সমাজে আল্লাহ আযাব নাযিল করেন না :

যে সমাজে দাওয়াতী কাজ চলতে থাকে এবং লোকেরা কিছু কিছু করে সত্যের দাওয়াতের অনুসারী হতে থাকে এরূপ সমাজে আল্লাহ আযাব নাযিল করেন না : ৮:৩৩,

 

দাওয়াতী কাজ করতে গিয়ে হতাশ হয়ো না, মনমরা হয়ো না, আল্লাহই এতে বরকত দান করবেন :

(৩২- আস-সাজদা : ২৭) আর এরা কি কখনো এ দৃশ্য দেখেনি যে, আমি ঊষর ভূমির ওপর পানির ধারা প্রবাহিত করি এবং তারপর এমন জমি থেকে ফসল উৎপন্ন করি যেখান থেকে তাদের পশুরাও খাদ্য লাভ করে এবং তারা নিজেরাও খায় ? তবুও কি এরা কিছুই দেখে না ? ৪০  

৪০ . পূর্বাপর আলোচনা সামনে রাখলে পরিষ্কার অনুভূত হয়, এখানে মৃত্যুপরের জীবনের স্বপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করার জন্য এ প্রসঙ্গ উত্থাপন করা হয়নি যেমন কুরআনে বিভিন্ন জায়গায় সাধারণভাবে করা হয়েছে বরং এ প্রসঙ্গে অন্য একটি উদ্দেশ্যে একথা বলা হয়েছে। আসলে এর মধ্যে একটি সূক্ষ্ণ ইঙ্গিত রয়েছে এ বিষয়ের প্রতি যে, একটি অনুর্বর পতিত জমি দেখে যেমন কেউ ধারণা করতে পারে না যে, এটিও কোনদিন সবুজ-শ্যামল ক্ষেতে পরিণত হবে। কিন্তু আল্লাহর পাঠানো এক পশলা বৃষ্টিধারাই এর কায়া পাল্টে দেয়। ঠিক তেমনি ইসলামের দাওয়াতও তোমাদের চোখে বর্তমানে একটি অচল জিনিস বলে প্রতিভাত হচ্ছে কিন্তু আল্লাহর কুদরাতের একটি ঝলকানি তাকে এমন উন্নতি ও অগ্রগতি দান করবে যে, তোমরা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাবে।

একা একব্যাক্তির দাওয়াতী কাজ : শক্তিশালী সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে :

নবীগণ সবসময় তাদের সময়কার প্রতিষ্ঠিত সরকারের কাছে দাওয়াতী কাজ পেশ করেছেন :

বিস্তারিত জানার জন্য ক্লিক করুন : জ > জিহাদ > (ক্লিক করুন): একা এক ব্যক্তির জিহাদ : শক্তিশালী সম্রাজ্যোর রাজার বিরুদ্ধে :

শয়তান নবীদের দাওয়াতী মিশনে / কুরআন প্রচারে  বিঘ্ন সৃষ্টি করে এবং এর কারণ :

(হাজ্ব:৫২) আর হে মুহাম্মাদ! তোমার পূর্বে আমি এমন কোনো রসূল ও নবী পাঠাইনি (যার সাথে এমন ঘটনা ঘটেনি যে) যখন সে তামান্না করেছে৷ শয়তান তার তামান্নায় বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে৷৯৮ এভাবে শয়তান যাকিছু বিঘ্ন সৃষ্টি করে আল্লাহ তা দূর করে দেন এবং নিজের আয়াতসমূহকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন, আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়৷

(৯৮. অর্থাৎ, যখনই নবী রাসুলগণ লোকদেরকে আল্লাহর বাণী শুনিয়েছেন তখনই শয়তান সে সম্পর্কে লোকদের মনে নানা সন্দেহ-সংশয় ও আপত্তি সৃষ্টি করে দিয়েছে, সেগুলোর অদ্ভুত অদ্ভুত অর্থ তাদের সামনে তুলে ধরেছে এবং একমাত্র সঠিক অর্থটি ছাড়া বাকি সব ধরনের উলটা-পালটা অর্থ লোকদেরকে বুঝিয়েছে।)

শয়তান নবীদের দাওয়াতী মিশনে বিঘ্ন সৃষ্টি করার সুযোগ দিয়েছেন দুটি কারণে :

মুনাফিকদেরকে ঈমানদারদের দল থেকে ছেটে বের করার জন্য :  

(হাজ্ব:৫৩) (তিনি এজন্য এমনটি হতে দেন) যাতে শয়তানের নিক্ষিপ্ত অনিষ্টকে পরীক্ষায় পরিণত করেন তাদের জন্য যাদের অন্তরে (মুনাফিকীর) রোগ রয়েছে এবং যাদের হৃদয়বৃত্তি মিথ্যা-কলূষিত-আসলে এ জালেমরা শত্রুতায় অনেক দূরে পৌঁছে গেছে

(হাজ্ব:৫৫) অস্বীকারকারীরা তো তার পক্ষ থেকে সন্দেহের মধ্যেই পড়ে থাকবে যতক্ষণ না তাদের ওপর কিয়ামত এসে পড়বে অকস্মাত অথবা নাযিল হয়ে যাবে একটি ভাগ্যাহত দিনের শাস্তি৷

২। ঈমানদারদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পায়, সরল পথে তারা মজবুত হয়ে চলতে পারে :

(হাজ্ব:৫৪) --এবং যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে তারা জেনে নেয় যে, তোমার রবের পক্ষ থেকে এটা সত্য এবং তারা এর প্রতি ঈমান আনে এবং এর সামনে তাদের অন্তর ঝুঁকে পড়ে; যারা ঈমান আনে তাদেরকে অবশ্যই আল্লাহ চিরকাল সত্য-সরল পথ দেখিয়ে থাকেন৷

দাওয়াতী কাজ করা ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের :  

(হাজ্ব:৪১) এরা এমন সব লোক যাদেরকে আমি যদি পৃথিবীতে কর্তৃত্ব দান করি তাহলে এরা নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে, ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং খারাপ কাজ নিষেধ করবে৷৮৫ 

(৮৫. অর্থাৎ আল্লাহকে সাহায্যকারী এবং তাঁর সাহায্য ও সহায়তালাভের অধিকরী লোকদের গুণাবলী হচ্ছে এই যে, যদি দুনিয়ায় তাদেরকে রাষ্ট্র ও শাসন ক্ষমতা দান করা হয় তাহলে তারা ব্যক্তিগত জীবনে ফাসেকী, দুষ্কৃতি, অহংকার ও আত্মম্ভরিতার শিকার হবার পরিবর্তে নামায কায়েম করবে। তাদের ধন-সম্পদ বিলাসিতা ও প্রবৃত্তি পূজার পরিবর্তে যাকাত দানে ব্যয়িত হবে। তাদের রাষ্ট্রযন্ত্র সৎকাজকে দাবিয়ে দেবার পরিবর্তে তাকে বিকশিত ও সম্প্রসারিত করার দায়িত্ব সম্পন্ন করবে। তাদের শক্তি অসৎকাজকে ছড়াবার পরিবর্তে দমন করার কাছে ব্যবহৃত হবে। এ একটি বাক্যের মধ্যে ইসলামী রাষ্ট্রের লক্ষ এবং তার কর্মী ও কর্মকর্তাদের বৈশিষ্টের নির্যাস বের করে দেয়া হয়েছে। কেউ যদি বুঝতে চায় ইসলামী রাষ্ট আসলে কোন জিনিসের নাম তাহলে এ একটি বাক্য থেকেই তা বুঝে নিতে পারে।)

দাওয়াতী কাজকে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা ও আল্লাহর জিকর বলা হয়েছে:

(২০:৩৩) যাতে আমরা খুব বেশী করে তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করতে পারি,  ৩৪) এবং খুব বেশী করে তোমার চর্চা করি৷  ৩৫) তুমি সব সময় আমাদের অবস্থার পর্যবেক্ষক”৷

(২০:২৪) এখন তুমি যাও ফেরাউনের কাছে, সে বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে”৷...... (২০:৩৩)(এর জবাবে হযরত মুসা আ: বক্ষ প্রশস্ত করে দেওয়ার জন্য ও হারুন আ: কে তার সহযোগী নবী করে দেওয়ার জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করলেন এবং পরিশেষে আল্লাহর কাছে তৌফিক চাইলেন-) যাতে আমরা খুব বেশী করে তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করতে পারি,  ৩৪) এবং খুব বেশী করে তোমার চর্চা করি৷  ৩৫) তুমি সব সময় আমাদের অবস্থার পর্যবেক্ষক”৷

(২০:৪২) যাও, তুমি ও তোমার ভাই আমার নিদর্শনগুলোসহ এবং দেখো আমার স্মরণে ভুল করো না৷৪৩) যাও, তোমরা দু’জন ফেরাউনের কাছে, সে বিদ্রোহী হয়ে গেছে৷

জোর পূর্বক ধর্ম প্রচার :

বিস্তারিত দেখুন :  > মূর্তি > হযরত ইব্রাহিম : কর্তৃক মূর্তি ভাঙ্গার স্বরূপ :

(২১:৫৭) আর আল্লাহর কসম, তোমাদের অনুপস্থিতিতে আমি তোমাদের মূর্তিগুলোর ব্যাপারে অবশ্যি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো৷

মুহাম্মদ সা:  অন্যান্য নবীগণের নবুওয়াতী পার্থক্য সমূহ :

পূর্ববর্তী নবীগণের নবুওত তাদের জাতির মধ্যে এবং একটি নির্দ্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল : সার্বজনীন ছিল না :

(১১: ২৫) আমি নূহকে তার কওমের কাছে পাঠিয়েছিলাম৷ (সে বললোঃ) “আমি তোমাদের পরিষ্কার ভাষায় সাবধান করে দিচ্ছি

(মু’মিনুন:৩২) তারপর তাদের মধ্যে স্বয়ং তাদের সম্প্রদায়ের একজন রসূল পাঠালাম (যে তাদেরকে দাওয়াত দিল এ মর্মে যে,) আল্লাহর বন্দেগী করো, তোমাদের জন্য তিনি ছাড়া আর কোন মাবূদ নেই, তোমরা কি ভয় করো না?

(মু’মিনুন:২৩) আমি নূহকে পাঠালাম তার সম্প্রদায়ের কাছে৷ সে বললো, ‘‘হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা ! আল্লাহর বন্দেগী করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন মাবুদ নেই, তোমরা কি ভয় করো না?

দ্বীনের দাওয়াত দিলে কাফেররা মনে করে হাসি তামাশা :

(২১:৫৫) তারা বললো, তুমি কি আমাদের সামনে তোমার প্রকৃত মনের কথা বলছো, না নিছক কৌতুক করছো ?

(এ বাক্যটির শাব্দিক অনুবাদ হবে, "তুমি কি আমাদের সামনে সত্য পেশ করছো, না খেলা, করছো৷" কিন্তু এর আসল অর্থ ওটাই যা উপরে অনুবাদে বলা হয়েছে। নিজেদের ধর্মের সত্যতার প্রতি তাদের বিশ্বাস এত বেশী ছিল যে, তারা গুরুত্ব সহকারে কেউ এ কথা বলতে পারে বলে কল্পনাও করতে প্রস্তুত ছিল না। তাই তারা বললো, তুমি নিছক ঠাট্টা-বিদ্রূপ ও খেলা-তামাশা করছো, না কি প্রকৃতপক্ষে এটাই তোমার চিন্তাধারা৷)

দাওয়াতী কাজ যারা করবেন, তারা আল্লাহর নিকট যে দোওয়া গুলো করবেন :

১। বক্ষ প্রশস্ত করে দেওয়ার দোয়া :

(২০:২৫) মূসা বললো, “হে আমার রব!  ২৬) আমার বুক প্রশস্ত করে দাও৷২৭) আমার কাজ আমার জন্য সহজ করে দাও, ২৮) এবং আমার জিভের জড়তা দূর করে দাও, যাতে লোকেরা আমার কথা বুঝতে পারে৷

(বক্ষ প্রশস্ত করার অর্থ : অর্থাৎ আমার মনে এ মহান দায়িত্বভার বহন করার মতো হিম্মত সৃষ্টি করে দাও। আমার উৎসাহ-উদ্দীপনা বাড়িয়ে দাও। যেহেতু হযরত মূসাকে (আ) একটি অনেক বড় কাজের দায়িত্ব সোপর্দ করা হচ্ছিল যা করার জন্য দুরন্ত সাহসের প্রয়োজন তাই তিনি দোয়া করেন, আমাকে এমন ধৈর্য, দৃঢ়তা, সংযম, সহনশীলতা, নির্ভীকতা ও দুর্জয় সংকল্প দান করো যা এ কাজের জন্য প্রয়োজন।)

২। মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের বিরুদ্ধে দোয়া :

(মুমিনুন:২৬) নূহ বললো, ‘‘হে পরওয়ারদিগার ! এরা যে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করছে এ জন্য তুমিই আমাকে সাহায্য করো৷’’ ২৮  

(২৮ . অর্থাৎ আমার প্রতি এভাবে মিথ্যা আরোপ করার প্রতিশোধ নাও। যেমন অন্যত্র বলা হয়েছেঃ 

''কাজেই নূহ নিজের রবকে ডেকে বললোঃ আমাকে দমিত করা হয়েছে, এমন তুমিই এর বদ্‌লা নাও।'' (আল কামার, ১০) 

সূরা নূহে বলা হয়েছেঃ 

''আর নূহ বললোঃ হে আমার পরওয়ারদিগার! এ পৃথিবীতে কাফেরদের মধ্য থেকে একজন অধিবাসীকেও ছেড়ে দিও না। যদি তুমি তাদেরকে থাকতে দাও তাহলে তারা তোমার বান্দাদেরকে গোমরাহ করে দেবে এবং তাদের বংশ থেকে কেবল দূষ্কৃতকারী ও সত্য অস্বীকারকারীরই জন্ম হবে।''´(২৭ আয়াত) )

৩। দাওয়াতী কাজ করার সময় শয়তানের উস্কানি থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইতে হবে :

(মু’মিনুন:৯৭) আর দোয়া করো, ‘‘হে আমার রব! আমি শয়তানদের উস্কানি থেকে তোমার আশ্রয় চাই৷  ৯৮) এমনকি হে ! পরওয়ারদিগার, সে আমার কাছে আসুক এ থেকেও তো আমি তোমার আশ্রয় চাই” ৷

দাওয়াতী কাজ যারা করবেন, তাদেরকে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে :

রিযিক দাতা আল্লাহ, কোন মানুষ নয় :

(মু’মিনুন:৭২) তুমি কি তাদের কাছে কিছু চাচ্ছো ? তোমার জন্য তোমার রব যা দিয়েছেন, সেটাই ভালো এবং তিনি সবচেয়ে ভালো রিযিকদাতা ৷

দাওয়াতী কাজ করতে হবে  কুরআনের মাধ্যমে:

৭:২,

যদিও অস্বীকারকারীদের বাধার মুখে পড়তে হয় তবুও কুরআনের মা্ধ্যমেই দাওয়াতী কাজ করতে হবে :

(হাজ্ব:৭২) আর যখন তাদেরকে আমার পরিষ্কার আয়াত শুনিয়ে দেয়া হয় তখন তোমরা দেখো সত্য অস্বীকারকারীদের চেহারা বিকৃত হয়ে যাচ্ছে এবং মনে হতে থাকে এ-ই বুঝি যারা তাদেরকে আমার আয়াত শুনায় তাদের ওপর তারা ঝাঁপিয়ে পড়বে৷ তাদেরকে বলো, “আমি কি তোমাদের বলবো, এর চেয়ে খারাপ জিনিস কি? আগুন৷ আল্লাহ এরি প্রতিশ্রুতি তাদের জন্য দিয়ে রেখেছেন, যারা সত্য গ্রহণ করতে অস্বীকার করে এবং তা বড়ই খারাপ আবাস৷ 

(মু’মিনুন: ৬৫) ---এখন বন্ধ করো  তোমাদের আর্তচিৎকার আমার পক্ষ থেকে এখন কোন সাহায্য দেয়া হবে না ৷৬৬)আমার আয়াত তোমাদের শোনানো হতো, তোমরা তো (রসূলের আওয়াজ শুনতেই ) পিছন ফিরে কেটে পড়তে,৬৭) অহংকারের সাথে তা অগ্রাহ্য করতে, নিজেদের আড্ডায় বসে তার সম্পর্কে গল্প দিতে ও আজেবাজে কথা বলতে

কুরআন অস্বীকারকারীদের জন্য রয়েছে কঠিন আযাব : ৩:৪, ৫:৮৬,

কুরআন বিরোধী / কুরআনের দাওয়াত রোধকারীদের বর্ণনা : ৬:২৫-২৯, ৯১,

(২৭-নমল:৯২) এবং এ কুরআন পড়ে শুনাবার হুকুম দেয়া হয়েছে”৷ এখন যে হেদায়াত অবলম্বন করবে সে নিজেরই ভালোর জন্য হেদায়েত অলম্বন করবে৷ এবং যে গোমরাহ হবে তাকে বলে দাও আমিতো কেবল মাত্র লোকজন সতর্ককারী৷  

কুরান পাঠ করে শুনানো (অবশ্যই অর্থ সহকারে)  নবীওয়ালা কাজ তথা দাওয়াত  জিহাদী কাজের একটি বড় অংশ :

(২৯-আনকাবুত:৫১) আর এদের জন্য কি এ (নিদর্শন ) যথেষ্ঠ নয় যে, আমি তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি, যা তাদেরকে পড়ে শুনানো হয়?

 

দাওয়াতী কাজে অবশ্যই বাধা আসবে : যদি তা সত্যিকার নবীওয়ালা ইসলামী দাওয়াত হয় :

(হাজ্ব:৭২) আর যখন তাদেরকে আমার পরিষ্কার আয়াত শুনিয়ে দেয়া হয় তখন তোমরা দেখো সত্য অস্বীকারকারীদের চেহারা বিকৃত হয়ে যাচ্ছে এবং মনে হতে থাকে এ-ই বুঝি যারা তাদেরকে আমার আয়াত শুনায় তাদের ওপর তারা ঝাঁপিয়ে পড়বে৷ তাদেরকে বলো, “আমি কি তোমাদের বলবো, এর চেয়ে খারাপ জিনিস কি? আগুন৷ আল্লাহ এরি প্রতিশ্রুতি তাদের জন্য দিয়ে রেখেছেন, যারা সত্য গ্রহণ করতে অস্বীকার করে এবং তা বড়ই খারাপ আবাস৷

দাওয়াতদানকারীদের দৃঢ়তা প্রয়োজন : বিস্তারিত দেখুন : দৃঢ়তা, নবীগণের দায়িত্ব। 

(১৭:৭৪) আর যদি (হে মুহাম্মদ !) আমি তোমাকে মজবুত না রাখতাম তাহলে তোমার পক্ষে তাদের দিকে কিছু না কিছু ঝুঁকে পড়া অসম্ভব ব্যাপার ছিলো না৷৭৫) কিন্তু যদি তুমি এমনটি করতে তাহলে আমি এ দুনিয়ায় তোমাকে দ্বিগুণ শাস্তির মজা টের পাইয়ে দিতাম এবং আখেরাতেও, তারপর আমার মুকাবিলায় তুমি কোনো সাহায্যকারী পেতে না৷

( ব্যাখ্যা :  এক, যদি তুমি সত্যকে সত্য জানার পর মিথ্যার সাথে কোন আপোস করে নিতে তাহলে বিক্ষুব্ধ জাতি তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যেতো ঠিকই কিন্তু আল্লাহর গযব তোমার ওপর নেমে পড়তো এবং তোমাকে দুনিয়ায় ও আখেরাত উভয় স্থানেই দ্বিগুণ সাজা দেয়া হতো । দুই মানুষ নবী হলেও আল্লাহর সাহায্য ও সুযোগ - সুবিধা তার সহযোগী না হলে শুধুমাত্র নিজের শক্তির ওপর নির্ভর করে সে মিথ্যার তুফানের মোকাবিলা করতে পারে না । শুধুমাত্র আল্লাহ প্রদত্ত ধৈর্য ও অবিচলতার সাহায্যেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্য ও ন্যায়ের ওপর পাহাড়ের মতো অটল থাকেন এবং বিপদের সয়লাব স্রোত তাঁকে একচুলও স্থানচ্যুত করতে পারেনি ।)

দাওয়াতী কাজ যারা করবেন  তারা শুধুমাত্র আল্লাহকেই ভয় করবেন, আর কাউকে ভয় করার তাদের কোন প্রয়োজন নেই :

(৩৩-আহযাব: ৩৯) ( হচ্ছে আল্লাহর নিয়ম তাদের জন্য) যারা আল্লাহর বাণী পৌঁছিয়ে থাকে, তাঁকেই ভয় করে এবং এক আল্লাহকে ছাড়া আর কাউকে ভয় করে না আর হিসেব গ্রহণের জন্য কেবলমাত্র আল্লাহই যথেষ্ট৷৭৬ 

৭৬. মূল শব্দগুলো হচ্ছে, ......আরবী ........ এর দু'টি অর্থ। এক, প্রত্যেকটি ভয়  বিপদের মোকাবিলায় আল্লাহই যথেষ্টে। দুই, হিসেব নেবার জন্য আল্লাহ যথেষ্ট। তাঁর ছাড়া আর কারো কাছে জবাবদিহির ভয় করার কোন প্রয়োজন নেই

আরো বিস্তারিত দেখুন : ভ > ভয় > আল্লাহর ভয়।

আ > আল্লাহর গুণাবলী কার্যাবালী ও ক্ষমতা >  আল্লাহর ভয় ।

যারা আল্লাহর দাওয়াত গ্রহণ করেনা, তাদের পরিণাম :

(১৩:১৮) যারা নিজেদের রবের দাওয়াত গ্রহণ করেছে তাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে আর যারা তা গ্রহণ করেনি তারা যদি পৃথিবীর সমস্ত সম্পদের মালিক হয়ে যায় এবং এ পরিমাণ আরো সংগ্রহ করে নেয় তাহলেও তারা আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাচাঁর জন্য এ সমস্তকে মুক্তিপণ হিসেবে দিয়ে দিতে তৈরী হয়ে যাবে৷ এদের হিসেব নেয়া হবে নিকৃষ্টভাবে  এবং এদের আবাস হয়ে জাহান্নাম, বড়ই নিকৃষ্ট আবাস৷  

`vIqvZx KvR I wRnv` Kivi mydj mg~n :

Avjøvn Zvui mvnvh¨ Øviv kw³kvjx Ki‡eb, DËg Rxe‡bvcKib `vb Ki‡eb: 8:26,  

`vIqvZx KvR bv Kivi Kzdj mg~n :

mvgvwRK I ivóªxq AbvPv‡ii Kvi‡Y ‡h Avhve Av‡m Zv‡Z ïay †MvbvnMviivB mxgve× _v‡K bv : 8:25, 7:163-166 (kwbevi Iqvjv‡`i NUbv),

ঈমানদারগণ কখনো মিথ্যা প্রচার করেনা, অবিশ্বাসীরা করে থাকে :

(১৬:৩০) অন্যদিকে যখন মুত্তাকীদেরকে জিজ্ঞেস করা হয়, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে কী নাযিল হয়েছে, তারা জবাব দেয়, “সর্বোত্তম জিনিস নাযিল হয়েছে৷”

(অথচ অবিশ্বাসীদের জবাব হয় ভিন্নতর)

তিনি তোমাদের ডাকছেন তোমাদের গুনাহ মাফ করার এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদের অবকাশ দেয়ার জন্য৷”-১৪:১০,

শুধু দাওয়াতী কাজই কি যথেষ্ট ?

শুধু দাওয়াতী কাজ নয়, দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষে রাষ্ট্রক্ষমতার সহায়তা লাভ অথবা রাষ্ট্রক্ষমতা লাভের জন্য প্রচেষ্টা চালানোও দায়ীর কর্তব্য : আরো দেখুন : র > রাষ্ট্রক্ষমতা,  র > রাসুলগণের দায়িত্ব :

(১৭:৮০) আর দোয়া করোঃ হে আমার পরওয়ারদিগার ! আমাকে যেখানেই তুমি নিয়ে যাও সত্যতার সাথে নিয়ে যাও এবং যেখান থেকেই বের করো সত্যতার সাথে বের করো৷ এবং তোমার পক্ষ থেকে একটি কর্তৃত্বশীল পরাক্রান্ত শক্তিকে আমার সাহায্যকারী বানিয়ে দাও৷

(ব্যাখ্যা :অর্থাৎ তুমি নিজেই আমাকে কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা দান করো অথবা কোন রাষ্ট্র ক্ষমতাকে আমার সাহায্যকারী বানিয়ে দাও, যাতে তার ক্ষমতা ব্যবহার করে আমি দুনিয়ার বিকৃত ব্যবস্থার পরিবর্তন সাধন করতে পারি, অশ্লীলতা ও পাপের সয়লাব রুখে দিতে পারি এবং তোমার ন্যায় বিধান জারি করতে সক্ষম হই । হাসান বাসরীও কাতাদাহ এ আয়াতের এ ব্যাখ্যাই করেছেন । ইবনে জারীর ও ইবনে কাসীরের ন্যায় মহান তাফসীরকারগণ এ ব্যাখ্যাই গ্রহণ করেছেন । নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিম্নোক্ত হাদীস থেকেও এরি সমর্থন পাওয়া যায়:

"আল্লাহ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বলে এমনসব জিনিসের উচ্ছেদ ঘটান কুরআনের মাধ্যমে যেগুলোর উচ্ছেদ ঘটান না" ।

এ থেকে জানা যায়, ইসলাম দুনিয়ায় যে সংশোধন চায় তা শুধু ওয়াজ নসিহতের মাধ্যমে হতে পারে না বরং তাকে কার্যকর করার জন্য রাজনৈতিক ক্ষমতারও প্রয়োজন হয় । তারপর আল্লাহ নিজেই যখন তাঁর নবীকে এ দোয়া শিখিয়েছেন তখন এ থেকে একথাও প্রমাণ হয় যে, দীন প্রতিষ্ঠা ও শরীয়তী আইন প্রবর্তন এবং আল্লাহ প্রদত্ত দণ্ডবিধি জারী করার জন্য রাষ্ট্র ক্ষমতা হাসিল করার প্রত্যাশা করা এবং এ জন্য প্রচেষ্টা চলানো শুধু জায়েযই নয় বরং কাংখিত ও প্রশংসিতও এবং অন্যদিকে যারা এ প্রচেষ্টা ও প্রত্যাশাকে বৈষয়িক স্বার্থ পূজা ও দুনিয়াদারী বলে আখ্যায়িত করে তারা ভুলের মধ্যে অবস্থান করছে । কোন ব্যক্তি যদি নিজের জন্য রাষ্ট্র ক্ষমতা লাভ করতে চায় তাহলে তাকে বৈষয়িক স্বার্থ পূজা বলা যায় । কিন্তু আল্লাহর দীনের জন্য রাষ্ট্র ক্ষমতা লাভের প্রত্যাশা করা বৈষয়িক স্বার্থ পূজা নয় বরং আল্লাহর আনুগত্যের প্রত্যক্ষ দাবী ।)

ক্ষমতাসীনরা (যারা গায়রে ইসলামী পন্থায় রাষ্ট্র পরিচালনা করে তারা) সত্যিকারের ইসলামী দাওয়াতকে তাদের ক্ষমতার জন্য হুমকি স্বরূপ গণ্য করে :

(২০:৫৭) ফেরাউন বলতে লাগলো, “হে মূসা! তুমি কি আমাদের কাছে এ জন্য এসেছো যে, নিজের যাদুর জোরে আমাদের দেশ থেকে আমাদের বের করে দেবে ?

(ব্যাখ্যা :যাদু বলতে এখানে বুঝানো হয়েছে লাঠি ও সাদা হাতকে। সূরা আ'রাফ ও সূরা শূ'আরায় বিস্তারিতভাবে একথা বর্ণনা করা হয়েছে যে, হযরত মূসা প্রথম সাক্ষাতের সময় প্রকাশ্য দরবারে একথা পেশ করেছিলেন। এ মু'জিযা দেখে ফেরাউন যে রকম দিশেহারা হয়ে পড়েছিল তা কেবলমাত্র তার এ একটি বাক্য থেকেই আন্দাজ করা যেতে পারে যে, "তোমার যাদুর জোরে তুমি আমাদের দেশ থেকে আমাদের বের করে দিতে চাও"। কোন যাদুকর যাদুর জোরে কোন দেশ জয় করে নিয়েছে, দুনিয়ার ইতিহাসে পূর্বে কখনো এ ধরনের ঘটনা ঘটতে এবং পরবর্তী কালেও ঘটতে দেখা যায়নি। ফেরাউনের নিজের দেশে শত শত যাদুকর ছিল, যারা যাদুর খেলা দেখিয়ে পুরস্কার নেবার জন্য হাত পাততো। এ জন্য ফেরাউনের একদিকে হযরত মূসাকে যাদুকর বলা এবং অন্যদিকে তিনি তার রাজ্য ছিনিয়ে নিতে চান বলে আশংকা প্রকাশ করা তার স্পষ্ট দিশেহারা হয়ে যাবার আলামত পেশ করে। আসলে হযরত মূসার ন্যায়সংগত ও যুক্তিপূর্ণ বক্তৃতা এবং মু'জিযাগুলো দেখে সে বুঝতে পেরেছিল যে, শুধুমাত্র তার সভাসদরাই নয় বরং তার সাধারণ অসাধারণ নির্বিশেষে সকল প্রজাই এ থেকে প্রভাবিত না হয়ে পারবে না। তাই সে মিথ্যা, প্রতারণা ও হিংসার পথে কার্যোদ্ধারের চেষ্টা শুরু করলো। সে বললো, এসব মু'জিযা নয়, যাদু এবং আমার রাজ্যের প্রত্যেক যাদুকরই এভাবে লাঠিকে সাপ বানিয়ে দেখাতে পারে। সে বললোঃ হে জনতা! ভেবে দেখো, এ ব্যক্তি তোমাদের বাপ-দাদাদেরকে পথভ্রষ্ট ও জাহান্নামী গণ্য করছে। সে আরো বললোঃ হে জনতা! সাবধান হয়ে যাও, এ ব্যাক্তি নবী-টবী কিছুই নয়, এ আসলে ক্ষমতালোভী। এ ব্যক্তি ইউসুফের যামানার মতো আবার বনী ইসরাঈলকে এখানে শাসন কর্তৃত্বে বসিয়ে দিতে এবং কিবতীদের হাত থেকে কর্তৃত্ব ক্ষমতা কেড়ে নিতে চায়। এসব অস্ত্র ব্যবহার করে ফেরাউন সত্যের দাওয়াতকে হেয় প্রতিপন্ন করতে চাচ্ছিল। (আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা আ'রাফ ৮৭, ৮৮, ৮৯ টীকা, সূরা ইউনুস ৭৫ টীকা)। এ প্রসংগে একথাটিও সামনে রাখতে হবে যে, প্রতি যুগে ক্ষমতাসীন লোকেরা সত্যের আহ্বায়কদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগই এনেছে যে, তারা ক্ষমতালোভী এবং এ উদ্দেশ্যই সব কথা বলছে। এর দৃষ্টান্ত দেখুন সূরা আ'রাফের ১১০ ও ১৩৩, সূরা ইউনুসের ৭৮ এবং সূরা আল মু'মিনের ২৪ আয়াতসমূহে।)

এ দৃশ্য দেখে ফেরাউনের সম্প্রদায়ের প্রধানরা পরষ্পরকে বললোঃ নিশ্চয়ই এ ব্যক্তি একজন অত্যন্ত দক্ষ যাদুকর, তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বে-দখল করতে চায়৷এখন তোমরা কি বলবে বলো? -৭:১০৯-১১০,

( এখানে প্রশ্ন দেখা দেয় যে, একটি পরাধীন জাতির এক সহায় -সম্বলহীন ব্যক্তি যদি হঠিৎ একদিন ফেরাউনের মত মহা পরাক্রান্ত বাদশাহর কাছে চলে যান। সিরিয়া থেকে লিবিয়া পর্যন্ত এবং ভুমধ্যসাগরের উপকূল থেকে ইথিয়োপিয়া পর্যন্ত বিশাল ভূভাগের ওপর যার একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তৃত , অধিকন্তু সে নিজেকে জনগণের ঘাড়ের ওপর দেবতা হিসেবেও সওয়ার হয়ে আছে। তাহলে নিছক তার একটি লাঠিকে অজগরে পরিণত করে দেয়ার কাজটি কেমন করে এত বড় একটি সাম্রাজ্যকে আতংকিত করে তোলে। কিভাবেই বা এ ধারণা সৃষ্টি হয় যে,এ ধরনের একজন মানুষ একাকীই মিসর রাজাকে সিংহাসনচ্যুত করে দেবেন এবং শাসক সম্প্রদায়সহ সমগ্র রাজ পরিবারকে রাষ্ট্র ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে দেবেন৷তারপর ঐ ব্যক্তি যখন কেবলমাত্র নবুওয়াতের দাবী এবং বনী ইসরাঈলকে মুক্তি দেবার দাবী উত্থাপন করেছিলেন আর এ ছাড়া অন্য কোন প্রকার রাজনৈতিক আলোচনাই করেননি তখন এ রাজনৈতিক বিপ্লবের আশংকা দেখা দিয়েছিল কেমন করে৷ 

এ প্রশ্নের জবাব হচ্ছে, মূসা আলাইহিস সালামের নবুওয়াতের দাবীর মধ্যেই এ তাৎপর্য নিহিত ছিল যে, তিনি আসলে গোটা জীবন ব্যবস্থাকে সামগ্রীক ভাবে পরিবর্তিত করতে চান। দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থাও নিশ্চিতভাবে এর অন্তর্ভুক্ত। কোন ব্যক্তির নিজেকে বিশ্ব প্রভু আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থাপন করার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি এ দাঁড়ায় যে, তিনি মানুষের কাছে নিজের প্রতি পূর্ণ আনুগত্যের দাবী জানাচ্ছে। কারণ রব্বুল আলামীনের প্রতিনিধি কখনো অন্যের আনুগত ও অন্যের প্রজা হয়ে থাকতে আসে না।বরং তিনি আসেন অন্যকে প্রজায় পরিণত করতে। কোন কাফেরের শাসনাধিকার মেনে নেয়া তার রিসালাতের মর্যাদার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এ কারণেই হযরত মূসার মুখ থেকে রিসালাতের দাবী শুনার সাথে সাথেই ফেরাউন ও তার রাষ্ট্র পরিচালকবর্গের মনে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক,  সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের আশংকা দেখা দেয়। তবে হযরত মূসা আলাইহিস সালামের সাথে যখন তার এক ভাই ছাড়া আর কোন সাহায্যকারী ছিল না এবং কেবল মাত্র একটি সর্পে রূপান্তরিত হবার ক্ষমতা সম্পন্ন লাঠি ও একটাই ঔজ্জ্বল্য বিকীরণকারী হাত ছাড়া তাঁর রসূল হিসেবে নিযুক্তির আর কোন প্রমাণ ছিল না তখন মিসরের রাজ দরবারে তাঁর এ দাবীকে এত গুরুত্ব দেয়া হলো কেন ? আমার মতে এর দুটি বড় বড় কারণ রয়েছে।এক, হযরত মূসা আলাইহিস সালামের ব্যক্তিত্বের ব্যাপারে ফেরাউন ও তার সভাসদরা পুরোপুরি অবগত ছিল। তার পবিত্র -পরিচ্ছন ও অনমনীয় চরিত্র। তাঁর অসাধারণ প্রতিভা ও যোগ্যতা এবং জন্মগত নেতৃত্ব ও শাসন ক্ষমতার কথা তাদের সবার জানা ছিল।তালমূদ ও ইউসীফূসের বর্ণনা যদি সঠিক হয়ে থাকে তাহলে বলতে হয়, হযরত মূসা (আ) এসব জন্মগত যোগ্যতা ছাড়াও ফেরাউনের গৃহে লাভ করেছিলেন বিভিন্ন জাগতিক বিদ্যা, দেশ শাসন ও সমর বিধ্যায় পারদর্শিতা। রাজপরিবারের সদস্যদের এসব শিক্ষা দেয়ার রেওয়াজ ছিল। তাছাড়া ফেরাউনের গৃহে যুবরাজ হিসেবে অবস্থান করার সময় আবিসিনিয়ার সামরিক অভিযানে গিয়েও তিনি নিজেকে একজন সেনাপতি প্রমাণ করতে সক্ষত হয়েছিলেন। তদুপরি রাজ প্রসাদে জীবন যাপন এবং ফেরাউনী রাষ্ট্র ব্যবস্থার আওতাধীনে নির্বাহী কর্তৃত্বের আসনে বসার কারণে যে সামান্য পরিমাণ দুর্বলতা তাঁর মধ্যে সৃস্টি হয়ে গিয়েছিল।তাও মাদায়েন এলাকায় আট দশ বছর মরুচারী জীবন যাপন ও ছাগল চরাবার কঠোর দায়িত্ব পালনের করণে দূর হয়ে গিয়েছিল। কাজেই আজ যিনি ফেরাউনের দরবারে দন্ডায়মান, তিনি আসলে এক বয়স্ক , বিচক্ষণ ও তেজোদ্দীপ্ত দরবেশে সম্রাট। তিনি নবুওয়াতের দাবীদার হিসেবে তার সমানে উপস্থিত। এরূপ ব্যক্তির কথাকে হাওয়াই ফানুস মনে করে উড়িয়ে দেয়া সম্ভব ছিল না। এর দ্বিতীয় কারণটি ছিল এই যে, লাঠি ও শ্বেতহস্তের মুজিযা দেখে ফেরাউন ও তার সভাসদরা অত্যন্ত অভিভূত, বিচলিত ও ভীত হয়ে পড়েছিল। তাদের প্রায় নিশ্চিত বিশ্বাস জন্মে গিয়েছিল যে, এ ব্যক্তির পেছনে নিশ্চয়ই কোন অতিপ্রাকৃতিক শক্তির সহায়তা রয়েছে।তাদের একদিকে হযরত মূসাকে যাদুকর বলা আবার অন্যদিকে তিনি তাদেরকে এ দেশের শাসন কর্তৃত্ব থেকে উৎখাত করতে চান বলে আশংকা প্রকাশ করা- এ দুটি বিষয় পরষ্পরের বিপরীত । আসলে নবুওয়াতের প্রথম প্রকাশ তাদেরকে কিংকর্তব্য বিমূঢ় করে দিয়েছিল।তাদের উল্লেখিত মনোভাব, বক্তব্য ও কার্যক্রম তারই প্রমাণ। সত্যই যদি তারা হযরত মূসাকে যাদুকর মনে করতো, তাহলে তিনি কোন রাজনৈতিক বিপ্লব ঘটাবেন এ আশংকা তারা কখনো করতো না। কারণ যাদুর জোরে আর যাই হোক- দুনিয়ার কোথাও কখনো কোন রাজনৈতিক বিপ্লব সাধিত হয়নি।)

(২০:৬০) ফেরাউন পেছনে ফিরে নিজের সমস্ত কলাকৌশল একত্র করলো এবং তারপর মোকাবিলায় এসে গেলো 

(ফেরাউন ও তার সভাসদদের দৃষ্টিতে এই প্রতিযোগিতার গুরুত্ব ছিল অনেক বেশী। তারা এর ফায়সালার সাথে নিজেদের ভাগ্যের ফায়সালা জড়িত মনে করছিল। সারা দেশে লোক পাঠানো হয়। যেখানে যে অভিজ্ঞ--পারদর্শী যাদুকর পাওয়া যায় তাকেই সংগে করে নিয়ে আসার হুকুম দেয়া হয়। এভাবে জনগণকে হাযির করার জন্যও বিশেষভাবে প্রেরণা দান করা হয়। এভাবে বেশী বেশী লোক একত্র হয়ে যাবে এবং তারা স্বচক্ষে যাদুর তেলেসমতি দেখে মূসার লাঠির ভয় ও প্রভাব থেকে নিজেদেরকে সংরক্ষিত রাখতে পারবে। প্রকাশ্য বলা হতে লাগলো, আমাদের ধর্ম এখন যাদুকরদের তেলেসমতির ওপর নির্ভর করছে। তারা জিতলে আমাদের ধর্ম বেঁচে যাবে, নয়তো মূসার ধর্ম চারদিকে ছেয়ে যাবেই। (দেখুন সূরা শূ'আরা ৩ রুকু) 

এ ক্ষেত্রে এ সত্যটিও সামনে থাকা দরকার যে, মিসরের রাজ পরিবার ও অভিজাত শ্রেণীর ধর্ম জনগণের ধর্ম থেকে যথেস্ট ভিন্ন ছিল। উভয়ের দেবতা ও মন্দির আলাদা ছিল। ধর্মীয় অনুষ্ঠানও এক ধরনের ছিল না। আর মৃত্যুপরের জীবনের ব্যাপারেও মিসরে যার গুরুত্ব ছিল অনেক বেশী, উভয়ের কার্যকর পদ্ধতি ও আদর্শিক পরিণাম অনেক বড় ফারাক পাওয়া যেতো। (দেখুন টয়েনবির লেখা (A Study Of History) বইয়ের ৩১-৩২ পৃষ্টা) তাছাড়া মিসরে ইতিপূর্বে যে ধর্মীয় বিপ্লব অনুষ্ঠিত হয়েছিল তার ফলে সেখানকার জনগণের মধ্যে এমন একাধিক গ্রুপ তৈরী হয়ে গিয়েছিল যারা মুশরিকী ধর্মের তুলানায় একটি তাওহীদী ধর্মকে প্রাদান্য দিচ্ছিল অথবা দিতে পারতো। যেমন বনী ইসরাঈল এবং তাদের স্বধর্মীয় লোকেরা। এরা জনসংখ্যার প্রায় এক দশামাংশ ছিল। এছাড়াও রাষ্ট্রশক্তির সহযোগিতায় ফেরাউন আমিনোফিস বা আখনাতুন (খৃঃপূঃ ১৩৭৭-১৩৬০) যে ধর্ম বিপ্লব অনুষ্ঠান করেছিলেন তারপর তখনো পুরো দেড়শ' বছরও অতিক্রান্ত হয়নি। এ বিপ্লবের মাধ্যমে সমস্ত উপাস্যদেরকে খতম করে একমাত্র একক উপাস্য "অতুন"কে প্রতিষ্ঠিত রাখা হয়েছিল। যদিও পরবর্তী পর্যায়ে রাষ্ট্রশক্তির জোরেই এ বিপ্লবের কণ্ঠরোধ করা হয়েছিল তবুও সে তার কিছু না কিছু প্রভাব রেখে গিয়েছিল। এসব অবস্থা সামনে রাখলে সে সময় ফেরাউনের মনে যে ভীতি ও আশংকা জাগছিল তা পুরোপুরি অনুধাবন করা যাবে।)

দাওয়াতী কাজ / দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজের ঝুকি সমূহ :

(২১:৬৮) তারা বললো, “পুড়িয়ে ফেলো একে এবং সাহায্য করো তোমাদের উপাস্যদেরকে, যদি তোমরা কিছু করতে চাও৷” ৬৯) আমি বললামঃ “হে আগুন! ঠাণ্ডা হয়ে যাও এবং নিরাপদ হয়ে যাও ইবরাহীমের জন্য৷”

বিস্তারিত দেখুন : প > পরীক্ষা > বিভিন্ন নবীদের জীবনের পরীক্ষা সমূহ,   ন > নবীদের জীবনের ঘটনাবলী,

দাওয়াতী কাজের নীতি  ও কৌশল সমূহ :

যারা দাওয়াতী কাজ করেন তাদেরকে যে জিনিসগুলো মনে রাখতে হবে :

অমুসলিমদের দাওয়াত দেওয়ার জন্য তাদের কিতাব গুলো মুসলমানদের পড়া উচিত :

(২৯-আনকাবুত:৪৬) আর  উত্তম পদ্ধতিতে ছাড়া আহলে কিতাবের সাথে বিতর্ক করো না,  তবে তাদের মধ্যে যারা জালেম  তাদেরকে বলে, “আমরা ঈমান এনেছি আমাদের প্রতি যা পাঠানো হয়েছে তার প্রতি এবং তোমাদের প্রতি যা পাঠানো হয়েছিল তার প্রতিও”

৩:৬৪, ৯৩, ৯৪, ৭৮, ৭৯, ৮০-৮৩, ৮৪-৯১,

৩:১০৪ (দাওয়াত দানের দল)

৩:১১০,

৪:৬৩, ১৪০,

৫:৬৭,

৬:৩৪, ৩৫, ৩৬, ৫২, ৫৩,

৬:৬৮ (যখন লোকেরা ইসলামী দাওয়াতের দোষ খুজতে থাকে তখন কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে) ,  

৬:৬৯,

৬:৭০ (দাওয়াতী কাজে কুরআন শুনানোর আদেশ, কুরআন দ্বারা দাওয়াতী কাজ করতে হবে, দাওয়াতী কাজে শয়তানের হস্তক্ষেপ, কর্তর্ব শুধু নসীহত করা, অমনোযোগী ও আমলহীন মুসলমানদেরকে দাওয়াত দানের পদ্ধতি),

৬:৬৮-৭০,

দাওয়াতী কাজ শুরু করতে হবে যেসব ক্ষেত্রে মিল আছে সেই মিলগুলো দিয়ে, বিরোধী বিষয়গুলো দিয়ে প্রথমে দাওয়াতী কাজ শুরু করা যাবে না :

(২৯-আনকাবুত:৪৬) আর  উত্তম পদ্ধতিতে ছাড়া আহলে কিতাবের সাথে বিতর্ক করো না,  তবে তাদের মধ্যে যারা জালেম  তাদেরকে বলে, “আমরা ঈমান এনেছি আমাদের প্রতি যা পাঠানো হয়েছে তার প্রতি এবং তোমাদের প্রতি যা পাঠানো হয়েছিল তার প্রতিও, আমাদের ইলাহ ও তোমাদের ইলাহ একজনই এবং আমরা তারই আদেশ পালনকারী” ৷ ৮৩  

৮৩ . এ বাক্যগুলোতে মহান আল্লাহ নিজেই উৎকৃষ্ট পদ্ধতিতে বিতর্ক-আলোচনার পথ-নির্দেশ দিয়েছেন। সত্য প্রচারের দায়িত্ব যারা গ্রহণ করেছেন তাদের এ পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত। এখানে শেখানো হয়েছে, যে ব্যক্তির সাথে তোমাকে বিতর্ক করতে হবে তার ভ্রষ্টতাকে আলোচনার সূচনা বিন্দুতে পরিণত করো না। বরং সত্য ও ন্যায়-নীতির যে অংশগুলো তোমার ও তার মধ্যে সমভাবে বিরাজ করছে সেগুলোর থেকে আলোচনা শুরু করো। অর্থাৎ বিরোধীয় বিন্দু থেকে আলোচনা শুরু না করে ঐক্যেও বিন্দু থেকে শুরু করতে হবে। তারপর সেই সর্বসম্মত বিষয়াবলী থেকে যুক্তি পেশ করে শ্রোতাকে একথা বুঝাবার চেষ্টা করতে হবে যে, তোমার ও তার মধ্যে যেসব বিষয়ে বিরোধ রয়েছে সেগুলোতে তোমার অভিমত সর্বসম্মত ভিত্তিগুলোর সাথে সামঞ্জস্য রাখে এবং তার অভিমত হচ্ছে তার বিপরীতধর্মী। 

এ প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে , আহলি কিতাব আরবের মুশরিকদের মতো অহী, রিসালাত ও তাওহীদ অস্বীকারকারী ছিল না। বরং তারা মুসলমানদের মতো এ সত্যগুলো স্বীকার করতো। এ মৌলিক বিষয়গুলোর ব্যাপারে ঐক্যমত্য পোষণ করার পর যদি তাদের মধ্যে মতবিরোধের বড় কোন ভিত্তি হতে পারতো তাহলে তা হতো এই যে, তাদের কাছে যেসব আসমানী কিতাব এসেছে মুসলমানরা সেগুলো মানছে না এবং মুসলমানদের নিজেদের কাছে যে আসমানী কিতাব এসেছে তাদেরকে তার প্রতি ঈমান আনার দাওয়াত দিচ্ছে আর তা গ্রহণ না করলে তাদেরকে কাফের বলে গণ্য করছে। বিরোধের জন্য এটি খুবই শক্তিশালী ভিত্তি হতে পারতো। কিন্তু মুসলমানদের অবস্থান ছিল এ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা । আহলি কিতাবের কাছে যেসব কিতাব ছিল সেসবকেই তারা সত্য বলে মানতো এবং এ সঙ্গে মুহাম্মদ (সা) এর প্রতি যে অহী নাযিল হয়েছিল তার প্রতি তারা ঈমান এনেছিল।এরপর কোন যুক্তিসঙ্গত কারণে আহলি কিতাব এক আল্লাহরই নাযিল করা একটি কিতাব মানে এবং অন্যটি মানে না একথা বলার দায়িত্ব ছিল তাদের নিজেদেরই। এ জন্য আল্লাহ এখানে মুসলমানদের নির্দেশ দিয়েছেন, যখনই আহলি কিতাবদের মুখোমুখি হবে সবার আগে তাদের কাছে ইতিবাচকভাবে নিজেদের এ অবস্থানটি তুলে ধরো। তাদেরকে বলো, তোমরা যে আল্লাহকে মানো আমরাও তাকেই মানি এবং আমরা তার হুকুম পালন করি। তার পক্ষ থেকে যে বিধান , নির্দেশ ও শিক্ষাবলীই এসেছে, তা তোমাদের ওখানে বা আমাদের এখানে যেখানেই আসুক না কেন, সেসবের সামনে আমরা মাথা নত করে দেই। আমরা তো হুকুমের দাস। দেশ, জাতি ও বংশের দাস নই। আল্লাহর হুকুম এক জায়গায় এলে আমরা মেনে নেবো এবং এই একই আল্লাহর হুকুম অন্য জায়গায় এলে আমরা তা মানবো না, এটা আমাদের রীতি নয়। একথা কুরআন মাজীদের বিভিন্ন স্থানে বার বার বলা হয়েছে। বিশেষ করে আহলি কিতাবের সাথে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলোতে তো জোর দিয়ে এ বিষয়টি বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন দেখুন, সূরা আল বাকারার , ১৩৬ , ১৭৭; আল ইমরানের ৮৪; আন নিসার ১৩৬, ১৫০-১৫২,১৬২-১৬৪ এবং আশ শু'আরার ১৩ আয়াত।

লোকেরা যদি দাওয়াত কবুল না করে সেজন্য দাওয়াতদানকারীর দু:খিত হবার কোন কারণ নেই :

(২৭-নমল:৭০) হে নবী! তাদের অবস্থার জন্য দুঃখ করো না এবং তাদের চক্রান্তের জন্য মনঃক্ষুন্ন হয়োনা৷৮৭ 

(৮৭. অর্থাৎ তুমি তোমার বুঝাবার দায়িত্ব পালন করেছো। এখন যদি তারা না মেনে নেয় এবং নিজেদের নির্বোধসুলভ কর্মকাণ্ডের ওপর জিদ ধরে আল্লাহর আযাবের ভাগী হতে চায়, তাহলে অনর্থক তাদের অবস্থার জন্য হৃদয় দুঃখ ভরাক্রান্ত করে নিজেকে কষ্ট দান কেন৷ আবার তারা সত্যের সাথে লড়াই এবং তোমার সংশোধন প্রচেষ্টাবলীকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য যেসব হীন চক্রান্ত করছে সেজন্য তোমার মনঃকষ্ট পাবার কোন কারণ নেই। তোমার পেছনে আছে আল্লাহর শক্তি। তারা তোমার কথা না মানলে তাদের নিজেদেরই ক্ষতি হবে, তোমার কোন ক্ষতি হবে না।)

লোকেরা দাওয়াত কবুল না করলে দু: পেওনা : কারণ :

কারণ : ১। তুমি মৃতদেরকে শুনাতে পারোনা : অর্থাৎ যাদের বিবেক মরে গেছে তারা কথা শুনবেনা এটাই স্বাভাবিক :

(২৭-নমল:৮০) তুমি মৃতদেরকে শুনাতে পারোনা৷৯৭ যেসব বধির পিছন ফিরে দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছে তাদের কাছে নিজের আহবান পৌছাতে পারনা৷

(৯৭. অর্থাৎ এমন ধরণের লোকদেরকে, যাদের বিবেক মরে গেছে এবং জিদ, একগুয়েমী ও রসমপূজা যাদের মধ্যে সত্য মিথ্যার পার্থক্য উপলব্ধি করার কোন প্রকার যোগ্যতাই বাকি রাখেনি।)

(৩০-রূম: ৫২) (হে নবী!) তুমি মৃতদেরকে শুনাতে পারো না, ৭৬   এমন বধিরদেরকেও নিজের আহ্বান শুনাতে পারো না যারা মুখ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছে ৭৭  

৭৬ . এখানে এমনসব লোককে মৃত বলা হয়েছে । যাদের বিবেক মরে গেছে, যাদের মধ্যে নৈতিক জীবনের ছিটেফোটাও নেই এবং যাদের আপন প্রবৃত্তির দাসত্ব , জিদ ও একগুয়েমি সেই মানবীয় গুণপনার অবসান ঘটিয়েছে যা মানুষকে হক কথা বুঝার ও গ্রহণ করার যোগ্য করে তোলে ।

৭৭ . বধির হচ্ছে এমনসব লোক যারা নিজেদের মনের দুয়ার এমনভাবে অর্গলবদ্ধ করেছে যে, সবকিছু শুনেও তারা কিছুই শুনে না। তাঁরপর এ ধরনের লোকেরা যখন এমন প্রচেষ্টাও চালায় যাতে সত্যের আহ্বানের ধ্বনি তাদের কানে পৌঁছতেই না পারে এবং আহ্বায়কদের চেহারা দেখতেই দূরে-সরে যেতে থাকে তখন আর কে তাদেরকে শুনাবে এবং কী-ই বা শুনাবে ৷

কারণ : ২। অন্ধদেরকে পথ দেখানো যায় না :

(২৭-নমল:৮১) এবং অন্ধদেরকে পথ বাতলে দিয়ে বিপথগামী হওয়া থেকে বাঁচাতে পারোনা৷

(৯৯. অর্থাৎ তাদের হাত ধরে জোর করে সোজা পথে টেনে আনা এবং তাদেরকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে চলা তোমার কাজ নয়। তুমি তো কেবলমাত্র মুখের কথা এবং নিজের চারিত্রিক উদাহরণের মাধ্যমেই জানাতে পারো যে, এটি সোজা পথ এবং এসব লোক যে পথে চলছে সেটি ভুল পথ। কিন্তু যে নিজের চোখ বন্ধ করে নিয়েছে এবং যে একদম দেখতেই চায় না তাকে তুমি কেমন করে পথ দেখাতে পারো!)

(৩০-রূম: ৫৩) এবং অন্ধদেরকেও তাদের ভ্রষ্টতা থেকে বের করে সঠিক পথ দেখাতে পারো না৷ ৭৮   তুমি তো একমাত্র তাদেরকেই শুনাতে পারো যারা আমার আয়াতের প্রতি ঈমান আনে এবং আনুগত্যের শির নত করে৷

৭৮ . অর্থাৎ অন্ধদের হাত ধরে তাদেরকে সারা জীবন সঠিক পথে চালানো তো নবীর কাজ নয়। তিনি তো কেবল সঠিক পথ দেখিয়ে দিতে পারেন।কিন্তু যাদের দেখার চোখ অন্ধ হয়ে গেছে এবং নবী তাদেরকে যে পথ দেখাতে চাচ্ছেন তা যারা দেখতেই পায় না তাদেরকে পথ দেখানোর ক্ষমতা নবীর নেই।

কারণ ৩। : যারা আল্লাহর আয়াতের  উপর ঈমান আনে তারাই তোমার কথা শুনবে :

(২৭-নমল:৮১) ....তুমি তো নিজের কথা তাদেরকে শুনাতে পারো যারা আমার আয়াতর প্রতি ঈমান আনে এবং তারপর অনুগত হয়ে যায়৷

(৩০-রূম: ৫৩).....তুমি তো একমাত্র তাদেরকেই শুনাতে পারো যারা আমার আয়াতের প্রতি ঈমান আনে এবং আনুগত্যের শির নত করে৷  

দাওয়াতী কাজের কৌশল সমূহ  :

 ১। দাওয়াতী আলোচনার ক্ষেত্রে আল্লাহর ভয় দেখাতে হবে :

(২৬.শুআরা:১০৬) স্মরণ কর যখন তাদের ভাই নূহ তাদেরকে বলেছিল, "তোমরা কি ভয় কর না ?

 (ব্যাখ্যা : অন্যান্য স্থানে হযরত নূহ তাঁর নিজের জাতিকে যে প্রাথমিক সম্বোধন করেছিলেন তার শব্দাবলী নিম্নরূপঃ 

اُعْبدوا الله ما لكم من الهٍ غَيْره افلا تَتَّقونَ-

" আল্লাহর বন্দেগী করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই, তাহলে তোমরা কি ভয় করো৷"(আল মু'মিনুন ২৩ আয়াত) 

اُعْبوا الله واتَّقُوه واطِيْعونِ-

"আল্লাহর বন্দেগী করো, তাঁকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।" (নূহ ৩ আয়াত) 

তাই এখানে হযরত নূহের এ উক্তির অর্থ নিছক ভীতি নয় বরং আল্লাহ ভীতি। অর্থাৎ তোমাদেরও কি আল্লাহর ভয় নেই৷ তাঁকে বাদ দিয়ে অন্যের বন্দেগী করার সময় তোমরা একটুও ভেবে দেখো না, এ বিদ্রোহাত্মক নীতির পরিণাম কি হবে৷ দাওয়াতের সূচনায় ভয় দেখাবার কারণ হচ্ছে এই যে, যতক্ষণ না কোন ব্যক্তি বা দলকে তার ভুল নীতির অশুভ পরিণামের ভীতি অনুভব করানো যায় ততণ সে সঠিক কথা ও তার যুক্তির প্রতি ভ্রুক্ষেপ করতে উদ্যোগী হয় না, মানুষের মনে সঠিক পথের অনুসন্ধিৎসা তখনই জন্ম নেয় যখন তার মনে এ চিন্তা জাগে যে, সে কোন বাঁকা পথে যাচ্ছে না তো, যেখানে ধ্বংসের কোন আশংকা আছে।)

২: আমরা অথবা তোমরা সঠিক পথ অথবা সুষঞ্পষঞ্ট গোমরাহীতে নিমজ্জিত :  

(৩৪-সাবা: ২৪) (হে নবী) তাদেরকে জিজ্ঞেস কর, “কে তোমাদের আকাশ সমূহ ও পৃথিবী থেকে জীবিকা দান করে”? বল, “আল্লাহ,৪২ এখন অবশ্যই আমরা অথবা তোমরা সঠিক পথে অথবা সুষ্পষ্ট গোমরাহীর মধ্যে নিপতিত ৪৩

(এখানে দাওয়াত দানের একটি কৌশণের কথা আলোচনা করা হয়েছে :  ক্লিক করুন : টিকনং : ৪৩

যে জাতি নবীদেরকে তথা আল্লাহর পথে আহ্বানকারীদেরকে দেশত্যাগে বাধ্য করে তারা নিজেরাও সেখানে বেশীদিন টিকতে পারে না : আরো দেখুন : মুহাম্মদ সা: এর হিজরত

(১৭:৭৬) আর এরা এ দেশ থেকে তোমাকে উৎখাত করার এবং এখান থেকে তোমাকে বের করে দেবার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছিল৷ কিন্তু যদি এরা এমনটি করে তাহলে তোমার পর এরা নিজেরাই এখানে বেশীক্ষণ থাকতে পারবে না

(ব্যাখ্যা : এটি একটি সুস্পষ্ট ভবিষ্যদ্বাণী । সে সময় এটি তো নিছক হুমকি মনে হচ্ছিল । কিন্তু দশ বারো বছরের মধ্যেই এর সত্যতা অক্ষরে অক্ষরে প্রমাণ হয়ে গেলো । কাফেররা মুহাম্মদ সা: কে নিজের জন্মভূমি থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য করলো এবং এরপর ৮ বছরের বেশী সময় অতিবাহিত হতে না হতেই তিনি বিজয়ীর বেশে মক্কা মুয়াযযমায় প্রবেশ করলেন । তারপর দু'বছরের মধ্যেই সমগ্র আরব ভূখণ্ড মুশরিক শূন্য করা হলো । এরপর যারাই এ দেশে বসবাস করেছে মুসলমান হিসেবেই বসবাস করেছে, মুশরিক হিসেবে কেউ সেখানে টিকতে পারেনি ।)

দলগত ভাবে দাওয়াতী কাজ :

তোমাদের মধ্যে দাওয়াত / সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করবে এমন দল থাকতে হবে : ৩:১০৪, ১১০,

(২০:২৯) (মূসা আ: বললেন, হে আল্লাহ) আর আমার জন্য আমার নিজের পরিবার থেকে সাহায্যকারী হিসেবে নিযুক্ত করে দাও,৩০) আমার ভাই হরুনকে৷৩১) তার মাধ্যমে আমার হাত মজবুত করো  ৩২) এবং তাকে আমার কাজে শরীক করে দাও

কাফেররা পুনরায় দুনিয়াতে ফেরত আসতে চাইবে : ৬:২৬-২৮।                                                                                                                        ‘‘

১। মন্দের জবাবে ভালো বলা :

(১৯:৪৬) বাপ বললো, “ইবরাহীম! তুমি কি আমার মাবুদদের থেকে বিমুখ হয়েছো?যদি তুমি বিরত না হও তাহলে আমি পাথরের আঘাতে তোমাকে শেষ করে দেবো;ব্যস তুমি চিরদিনের জন্য আমার থেকে আলাদা হয়ে যাও”৷  (১৯:৪৭) ইবরাহীম বললো, “আপনাকে সালাম৷ আমি আমার রবের কাছে আপনাকে মাফ করে দেবার জন্য দোয়া করবো৷আমার রব আমার প্রতি বড়ই মেহেরবান৷  

(১৮:৫৭) আর কে তার চেয়ে বড় জালেম, যাকে তার রবের আয়াত শুনিয়ে উপদেশ দেয়ার পর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং সেই খারাপ পরিণতির কথা ভুলে যায় যার সাজ-সরঞ্জাম সে নিজের জন্য নিজের হাতে তৈরি করেছে ? (যারা এ কর্মনীতি অবলম্বন করেছে) তাদের অন্তরের ওপর আমি আবরণ টেনে দিয়েছি, যা তাদেরকে কুরআনের কথা বুঝতে দেয় না এবং তাদের কানে বধিরতা সৃষ্টি করে দিয়েছি৷ তুমি তাদেরকে সৎপথের দিকে যতই আহ্বান কর না কেন তারা এ অবস্থায় কখনো সৎপথে আসবে না৷

(১৮:২৯) পরিষ্কার বলে দাও, এ হচ্ছে সত্য তোমাদের রবের পক্ষ থেকে, এখন যে চায় মেনে নিক এবং যে চায় অস্বীকার করুক৷  

তাহলে ঈমানদাররা কি (এখানো পর্যন্ত কাফেরদের চাওয়ার জবাবে কোন নিদর্শন প্রকাশের আশায় বসে আছে এবং তারা একথা জেনে) হতাশ হয়ে যায়নি যে, যদি আল্লাহ চাইতেন তাহলে সমগ্র মানব জাতিকে হেয়াদাত দিয়ে দিতেন ?-১৩:৩১,

(১৪:৮) আর মূসা বললো, “যদি তোমরা কুফরী করো এবং পৃথিবীর সমস্ত অধিবাসীও কাফের হয়ে যায় তাহলে আল্লাহর কিছুই আসে যায় না এবং তিনি আপন সত্তায় আপনি প্রশংসিত৷

(১৫:৩) ছেড়ে দাও এদেরকে, খানাপিনা করুক, আমোদ ফূর্তি করুক এবং মিথ্যা প্রত্যাশা এদেরকে ভুলিয়ে রাখুক৷ শিগ্‌গির এরা জানতে পারবে৷  (ইসলামের দাওয়াত গ্রহণে ক্রমাগত ভাবে যারা অস্বীকার করতে থাকে তাদের সম্বন্ধে বলা হয়েছে)

সৎ কাজের উপদেশ দিতে থাকো : ৭:১৯৯,

(১৬:৮২) এখন যদি এরা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে হে মুহাম্মাদ ! পরিষ্কারভাবে সত্যের পয়গাম পৌঁছিয়ে দেয়া ছাড়া তোমার আর কোনো দায়িত্ব নেই৷  

(১৬:১২৫) হে নবী! প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তা এবং সদুপদেশ সহকারে তোমার রবের পথের দিকে দাওয়াত দাও এবং লোকদের সাথে বিতর্ক করো সর্বোত্তম পদ্ধতিতে৷

দাওয়াতদানকারীগণকে শয়তানী ওয়াস ওয়াসা তথা ক্রোধ ও বাহুল্য থেকে দুরে থাকতে হবে

(১০:৯৬) আসলে যাদের ব্যাপারে তোমার রবের কথা সত্য সাব্যস্ত হয়েছে ৯৭) তাদের সামনে যতই নিদর্শন এসে যাক না কেন তারা কখনই ঈমান আনবে না যতক্ষণ না যন্ত্রনাদায়ক আযাব চাক্ষুস দেখে নেবে৷  

(১৬:৮৫) জালেমরা যখন একবার আযাব দেখে নেবে তখন তাদের আযাব আর হালকা করা হবে না এবং তাদেরকে এক মুহূর্তের জন্য বিরামও দেয়া হবে না৷

(১৭:৫৩) আর হে মুহাম্মাদ! আমার বান্দাদেরকে  বলে দাও, তারা যেন মুখে এমন কথা বলে যা সর্বোত্তম৷ আসলে শয়তান মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করে৷ প্রকৃতপক্ষে শয়তান হচ্ছে মানুষের প্রকাশ্য শত্রু৷

(অর্থাৎ কাফের ও মুশরিক এবং ইসলাম বিরোধীদের সাথে আলাপ আলোচনা ও তর্ক-বিতর্ক করার সময় কড়া কথা, বাড়াবাড়ি ও বাহুল্য বর্জন করবে । বিরোধী পক্ষ যতই অপ্রীতিকর কথা বলুক না কেন মুসলামানদের মুখ থেকে কোন ন্যায় ও সত্য বিরোধী কথা বের হওয়া উচিত নয় । ক্রোধ আত্মহারা হয়ে তাদের আজে বাজে বথা বলা শোভা পায় না । ঠাণ্ডা মাথায় তাদের এমন সব কথা বলতে হবে, যা যাচাই বাছাই করা, মাপাজোকা, ওজন করা, সত্য এবং তাদের দাওয়াতের মর্যাদার সাথে সংগতিশীল ।

* যখনই তোমরা বিরোধীদের কথার জবাব দিতে গিয়ে নিজেদের মধ্যে ক্রোধের আগুন জ্বলে উঠছে বলে মনে করবে এবং মন মেজাজ আকস্মিকভাবে আবেগ - উত্তেজনায় ভরে যেতে দেখতে পাবে তখনই তোমাদের বুঝতে হবে, তোমাদের বুঝতে হবে, তোমাদের দীনের দাওয়াতের কাজ নষ্ট করার জন্য এটা শয়তানের উস্কানী ছাড়া আর কিছুই নয় । তার চেষ্টা হচ্ছে, তোমরাও নিজেদের বিরোধীদের মতো সংস্কারের কাজ ত্যাগ করে সে যেভাবে মানব গোষ্ঠীকে বিতর্ক -কলহ ও ফিতনা -ফাসাদে মশগুল করে রাখতে চায় সেভাবে তোমরাও তার মধ্যে মশগুল হয়ে যাও ।)

ভালোর দ্বারা মন্দকে দূরীভূত কর :

(মু’মিনুন:৯৬) হে মুহাম্মদ (সা) ! মন্দকে দূর করো সর্বোত্তম পদ্ধতিতে ৷ তারা তোমার সম্পর্কে যেসব কথা বলে তা আমি খুব ভালো করেই জানি৷

  দাওয়াত দানের ক্ষেত্রে কোমলতা অবলম্বন করতে হবে : হয়ত এতে সে ব্যক্তি মন্দ পরিণামের ভয়ে সঠিক পথে ফিরে আসবে :

(২০:৪৪) তার (অর্থাৎ, ফেরাউনের)  সাথে কোমলভাবে কথা বলো, হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভীত হবে”৷

(ব্যাখ্যা:  তবে অতিরিক্ত বিনয়ী হলে চলবে না, ব্যাখ্যার জন্য দেখুন : ব > বিনয় > বিনয়ের নীতি অবলম্বনের সীমা কোন পর্ন্ত)

৩। জালিম বাদশার সামনে দাওয়াত নিয়ে গেলে মুমিনদের মনে ভয় আসাটা স্বাভাবিক, তবে  ভয়কে জয় করতে হবে, কারণ আল্লাহ দাওয়াতদানকারীদের সাথে আছেন :

(২০:৪৫) (মূসা ও হারুন ) উভয়েই  বললো, "হে আমাদের রব! আমাদের ভয় হয়, সে (ফেরাউন) আমাদের সাথে বাড়াবাড়ি করবে অথবা আমাদের ওপর চড়াও হবে”৷৪৬) আল্লাহ বললেন, “ভয় করো না, আমি তোমাদের সাথে আছি, সবকিছু শুনছি ও দেখছি৷  

৪। নবীরাও কি জালিম বাদশাহর সামনে দাওয়াতী কাজ করতে গিয়ে ভয় পেতেন ? হ্যা পেতেন, কারণ তারাও মানুষ ছিলেন, তবে তারা সে ভয় কে জয় করেছেন :

(২০:৪৫) (মূসা ও হারুন ) উভয়েই  বললো, "হে আমাদের রব! আমাদের ভয় হয়, সে (ফেরাউন) আমাদের সাথে বাড়াবাড়ি করবে অথবা আমাদের ওপর চড়াও হবে”৷৪৬) আল্লাহ বললেন, “ভয় করো না, আমি তোমাদের সাথে আছি, সবকিছু শুনছি ও দেখছি৷  

(২৬.শুআরা:১২) সে বললো, "হে আমার রব! আমার ভয় হয় তারা আমাকে মিথ্যা বলবে১৩) আমার বক্ষ সংকুচিত হচ্ছে এবং আমার জিহ্বা সঞ্চালিত হচ্ছে না৷ আপনি হারুনের প্রতি রিসালাত পাঠান৷১৪) আর আমার বিরুদ্ধে তো তাদের একটি অভিযোগও আছে৷ তাই আমার আশংকা হয় তারা আমাকে হত্যা করে ফেলবে৷

(ব্যাখ্যার জন্য দেখুন : দ > দোয়া > দোয়া করার মাধ্যমে কি নবুওয়াত লাভ করা যায় ? )

৫। দুনিয়াবী সাজ-সরঞ্জাম  শান শওকতর প্রতি দৃষ্টি না দেওয়া :

(২০:১৩১) আর চোখ তুলেও তাকাবে না দুনিয়াবী জীবনের শান-শওকতের দিকে, যা আমি এদের মধ্য থেকে বিভিন্ন ধরনের লোকদেরকে দিয়ে রেখেছি৷ এসব তো আমি এদেরকে পরীক্ষার মুখোমুখি করার জন্য দিয়েছি এবং তোমার রবের দেয়া হালাল রিযিকই উত্তম ও অধিকতর স্থায়ী৷

বিতর্ক করার পদ্ধতি :

৫.১। অযথা বিতর্ক করার প্রয়োজন নেই :

(১৮:২২) কিছু লোক বলবে, তারা ছিল তিনজন আর চতুর্থজন ছিল তাদের কুকুরটি৷ আবার অন্য কিছু লোক বলবে, তারা পাঁচজন ছিল এবং তাদের কুকুরটি ছিল ষষ্ঠ, এরা সব আন্দাজে কথা বলে৷ অন্যকিছু লোক বলে, তারা ছিল সাতজন এবং অষ্টমটি তাদের কুকুর৷ বলো, আমার রবই ভালো জানেন তারা কজন ছিল, অল্প লোকই তাদের সঠিক সংখ্যা জানে৷ কাজেই তুমি সাধারণ কথা ছাড়া তাদের সংখ্যা নিয়ে লোকদের সাথে বিতর্ক করো না এবং তাদের সম্পর্কে কাউকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদও করো না৷

৫.২। বিতর্ক করার পদ্ধতি : পূর্ববর্তী পথভ্রষ্ট  লোকেরা মুক্তি পাবে কি পাবে না, সে ব্যাপারে আমাদের বিতর্কে বা মতভেদে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়  :

(২০:৫১) ফেরাউন বললো, “আর পূর্ববর্তী বংশধর যারা অতীত হয়ে গেছে তাদের তাহলে কি অবস্থা ছিল?”৫২) মূসা বললো “সেজ্ঞান আমার রবের কাছে লিপিবদ্ধ অবস্থায় সংরক্ষিত আছে৷ আমার রব ভুলও করেন না, বিস্মৃতও হন না”৷

(ব্যাখ্যা:এটি হযরত মূসার সে সময় প্রদত্ত একটি অত্যন্ত জ্ঞানগর্ভ জবাব। এ থেকে প্রচার কৌশল সম্পর্কে ভালো শিক্ষা লাভ করা যায়। উপরের বর্ণনা অনুসারে ফেরাউনের উদ্দেশ্য ছিল শ্রোতাদের এবং তাদের মাধ্যমে সমগ্র জাতির মনে বিদ্বেষের আগুন জ্বালানো। যদি হযরত মূসা বলতেন, হাঁ, তারা সবাই মুর্খ ও পথভ্রষ্ট ছিল এবং সবাই জাহান্নামের ইন্ধন হবে, তাহলে এটা সত্য কথনের বিরাট আদর্শ হলেও এ জবাব হযরত মূসার পরিবর্তে ফেরাউনের উদ্দেশ্য সাধনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতো। তাই তিনি পূর্ণ বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষনতা সহকারে এমন জবাব দেন যা ছিল একদিকে যথার্থ সত্য এবং অন্যদিকে ফেরাউনের বিষ দাঁতও উঁপরে ফেলতে সক্ষম। তিনি বলেন, তারা যাই কিছু ছিল, নিজেদের কাজ করে আল্লাহর কাছে পৌছে গেছে। তাদের কার্যাবলী এবং কাজের পেছনে নিহিত অন্তরের ইচ্ছাসমূহ জানার কোন উপায় নেই। কাজেই তাদের ব্যাপারে আমি কোন সিদ্ধান্ত দিই কেমন করে৷ তাদের সমস্ত রেকর্ড আল্লাহর কাছে সংরক্ষিত আছে। তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ ও তার কারণসমূহের খবর আল্লাহই জানেন। কোন জিনিস আল্লাহর দৃষ্টির বাইরে থাকেনি এবং তাঁর স্মৃতি থেকেও কোন জিনিস বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। আল্লাহই জানেন তাদের সাথে কি ব্যবহার করতে হবে। তাদের ভূমিকা কি ছিল এবং তাদের পরিণাম কি হবে, তোমার ও আমার এ কথা চিন্তা করা উচিত নয়। আমাদের চিন্তা করা উচিত আমাদের ভূমিকা কি এবং আমরা কোন ধরনের পরিণামের সম্মুখীন হবো।)

৫.৩। মূর্খদের সাথে বিতর্কে জড়িওনা : তাদেরকে বলে দাও ‘সালাম’

মূর্খদের সাথে বিতর্কে জড়িওনা : ৭:১৯৯,

(২৫.ফুরকান:৬৩) রহমানের (আসল) বান্দা তারাই   যারা পৃথিবীর বুকে নম্রভাবে চলাফেরা করে  এবং মূর্খরা তাদের সাথে কথা বলতে থাকলে বলে দেয়, ৬৪) তোমাদের সালাম৷ তারা নিজেদের রবের সামনে সিজদায় অবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে রাত কাটিয়ে দেয়৷

(বিস্তারিত দেখুন : ব > বিতর্ক,  র > রহমান > রহমানের বান্দা কারা ? )

(মূর্খ মানে অশিক্ষিত বা লেখাপড়া না জানা লোক নয় বরং এমন লোক যারা জাহেলী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হবার উদ্যোগ নিয়েছে এবং কোন ভদ্রলোকের সাথে অশালীন ব্যবহার করতে শুরু করেছে। রহমানের বান্দাদের পদ্ধতি হচ্ছে, তারা গালির জবাবে গালি এবং দোষারোপের জবাবে দোষারোপ করে না। এভাবে প্রত্যেক বেহুদাপনার জবাবে তারাও সমানে বেহুদাপনা করে না। বরং যারাই তাদের সাথে এহেন আচরণ করে তাদের সালাম দিয়ে তারা অগ্রসর হয়ে যায় , যেমন কুরআনের অন্য জায়গায় বলা হয়েছে :

وَإِذَا سَمِعُوا اللَّغْوَ أَعْرَضُوا عَنْهُ وَقَالُوا لَنَا أَعْمَالُنَا وَلَكُمْ أَعْمَالُكُمْ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ لَا نَبْتَغِي الْجَاهِلِينَ

"আর যখন তারা কোন বেহুদা কথা কথা শোনে , তা উপেক্ষা করে যায় । বলে, আরে ভাই , আমাদের কাজের ফল আমরা পাবো এবং তোমাদের কাজের ফল তোমরা পাবে। সালাম তোমাদের , আমরা জাহেলদের সাথে কথা বলি না।"(আল কাসাস : ৫৫) [ব্যাখ্যার জন্য দেখুন- তাফহীমুল কুরআন, আল কাসাস ৭২ ও ৭৮ টীকা])

(২৮-ক্বাছাছ : ৫৫) আর যখন তারা বাজে কথা শুনেছে, একথা বলে তা থেকে আলাদা হয়ে গেছে যে, "আমাদের কর্মকাণ্ড আমাদের জন্য এবং তোমাদের কর্মকাণ্ড তোমাদের জন্য, তোমাদের প্রতি সালাম, আমরা মূর্খদের মতো পথ অবলম্বন করতে চাই না৷"  

(ইবনে হিশাম ও বাইহাকী এবং অন্যরা এ ঘটনাকে মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাকের বরাত দিয়ে নিন্মোক্তভাবে বর্ণনা করেছেন : আবিসিনিয়ায় হিজরাতের পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াত প্রাপ্তি এবং তার দাওয়াতের খবর যখন সেই দেশে ছড়িয়ে পড়লো তখন সেখান থেকে প্রায় ২০ জনের একটি খৃষ্টান প্রতিনিধি দল প্রকৃত অবস্থা অনুসন্ধানের জন্য মক্কা মু'আয্যামায় এলো। তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে মসজিদে হারামে সাক্ষাৎ করলো। কুরাইশদের বহু লোকও এ ব্যাপারে দেখে আশপাশে দাঁড়িয়ে গেলো। প্রতিনিধি দলের লোকেরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কিছু প্রশ্ন করলেন। তিনি সেগুলোর জবাব দিলেন। তারপর তিনি তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন এবং কুরআন মজীদের আয়াত তাদের সামনে পাঠ করলেন। কুরআন শুনে তাদের চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হতে লাগলো। তারা একে আল্লাহর বাণী বলে অকুণ্ঠভাবে স্বীকার করলেন এবং নবীর (সা) প্রতি ঈমান আনলেন। মজলিস শেষ হবার পর আবু জেহেল ও তার কয়েকজন সাথী প্রতিনিধিদলের লোকদেরকে পথে ধরলো এবং তাদেরকে যাচ্ছে তাই বলে তিরস্কার করলো। তাদেরকে বললো, "তোমাদের সফরটাতো বৃথাই হলো। তোমাদের স্বধর্মীয়রা তোমাদেরকে এজন্য পাঠিয়েছিল যে, এ ব্যক্তির অবস্থা সম্পর্কে তোমরা যথাযথ অনুসন্ধান চালিয়ে প্রকৃত ও যথার্থ ঘটনা তাদেরকে জানাবে। কিন্তু তোমরা সবেমাত্র তার কাছে বসেছিলে আর এরি মধ্যেই নিজেদের ধর্ম ত্যাগ করে তার প্রতি ঈমান আনলে ৷ তোমাদের চেয়ে বেশী নির্বোধ কখনো আমরা দেখিনি।" একথায় তারা জবাব দিল , "ভাইয়েরা , তোমাদের প্রতি সালাম। আমরা তোমাদের সাথে জাহেলী বিতর্ক করতে চাই না। আমাদের পথে আমাদের চলতে দাও একং তোমাদের পথে চলতে থাকো। আমরা জেনেবুঝে কল্যাণ থেকে নিজেদেরকে বঞ্চিত করতে পারি না।" (সীরাতে ইবনে হিশাম, ২ খণ্ড, ৩২ পৃষ্ঠা এবং আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ৩ খণ্ড , ৮২ পৃষ্ঠা। আরো বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা শূ'আরা, ১২৩ টীকা।)

৫.৪। লোকদের সাথে বিতর্ক করো উত্তম পন্থায় :

(১৬:১২৫) ... এবং লোকদের সাথে বিতর্ক করো সর্বোত্তম পদ্ধতিতে৷

(আরো দেখুন : ব > বিতর্ক)

(২৯-আনকাবুত:৪৬) আর  উত্তম পদ্ধতিতে ছাড়া আহলে কিতাবের সাথে বিতর্ক করো না, ৮১   তবে তাদের মধ্যে যারা জালেম   তাদেরকে বলো, “আমরা ঈমান এনেছি আমাদের প্রতি যা পাঠানো হয়েছে তার প্রতি এবং তোমাদের প্রতি যা পাঠানো হয়েছিল তার প্রতিও, আমাদের ইলাহ ও তোমাদের ইলাহ একজনই এবং আমরা তারই আদেশ পালনকারী ৮৩  

৮১ . অর্থাৎ বিতর্ক ও আলাপ-আলোচনা উপযুক্ত যুক্তি-প্রমাণ সহকারে , ভদ্র ও শালীন ভাষায় এবং বুঝবার ও বুঝাবার ভাবধারায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে করতে হবে। এর ফলে যার সাথে আলোচনা হয় তার চিন্তার সংশোধন হবে। প্রচারকের চিন্তা করা উচিত , তিনি শ্রোতার হৃদয় দুয়ার উন্মুক্ত করে সত্যকথা তার মধ্যে বসিয়ে দেবেন এবং তাকে সঠিক পথে আনবেন। একজন পাহলোয়ানের মতো তার লড়াই করা উচিত নয়, যার উদ্দেশ্যই হয় প্রতিপক্ষকে হারিয়ে দেয়া। বরং একজন ডাক্তারের মতো তাকে সবসময় উদ্বিগ্ন থাকতে হবে, যিনি তার রোগীর চিকিৎসা করার সময় একথাকে গুরুত্ব দেন যে, তার নিজের কোন ভূলের দরুন রোগীর রোগ যেন আরো বেশি বেড়ে না যায় এবং সর্বাধিক কম কষ্ট সহ্য করে যাতে তার রোগীর রোগ নিরাময় হওয়া সম্ভব হয় এ জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। পরিস্থিতি র সাথে সামঞ্জস্য রেখে আহলি কিতাবের সাথে বিতর্ক-আলোচনা করার ব্যাপারে এ নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু এটা কেবলমাত্র বিশেষভাবে আহলি কিতাবদের জন্য নয় বরং দ্বীনের প্রচারের ক্ষেত্রে এটি একটি সাধারণ নির্দেশ। কুরআন মাজীদের বিভিন্ন স্থানে এর উল্লেখ রয়েছে। যেমনঃ 

------------------------

"আহ্বান করো নিজের রবের পথের দিকে প্রজ্ঞা ও উৎকৃষ্ট উপদেশের মাধ্যমে এবং লোকদের সাথে উত্তম পদ্ধতিতে বিতর্ক-আলোচনা করো।" (আন নাহল -১২৫)

-------------------------------

"সুকৃতি ও দুষ্কৃতি সমান নয়। (বিরোধীদের আক্রমণ) প্রতিরোধ করো উৎকৃষ্ট পদ্ধতিতে। তুমি দেখবে এমন এক ব্যক্তি যার সাথে তোমার শত্রুতা ছিল সে এমন হয়ে গেছে যেমন তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু।" (হা-মীম আস সাজদাহ ৩৪) 

--------------------------------

"তুমি উত্তম পদ্ধতিতে দুষ্কৃতি নির্মুল করো। আমি জানি (তোমার বিরুদ্ধে )তারা যেসব কিছু তৈরি করে।" (আল মু'মিনুন ৯৬)

---------------------------------

"ক্ষমার পথ অবলম্বন করো, ভালো কাজ করার নির্দেশ দাও এবং মূর্খদেরকে এড়িয়ে চলো। আর যদি (মুখে মুখে জবাব দেবার জন্য) শয়তান তোমাকে উসকানী দেয় তাহলে আল্লাহর আশ্রয় চাও।" (আল আ'রাফ ১৯৯-২০০)

৮৩ . এ বাক্যগুলোতে মহান আল্লাহ নিজেই উৎকৃষ্ট পদ্ধতিতে বিতর্ক-আলোচনার পথ-নির্দেশ দিয়েছেন। সত্য প্রচারের দায়িত্ব যারা গ্রহণ করেছেন তাদের এ পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত। এখানে শেখানো হয়েছে, যে ব্যক্তির সাথে তোমাকে বিতর্ক করতে হবে তার ভ্রষ্টতাকে আলোচনার সূচনা বিন্দুতে পরিণত করো না। বরং সত্য ও ন্যায়-নীতির যে অংশগুলো তোমার ও তার মধ্যে সমভাবে বিরাজ করছে সেগুলোর থেকে আলোচনা শুরু করো। অর্থাৎ বিরোধীয় বিন্দু থেকে আলোচনা শুরু না করে ঐক্যেও বিন্দু থেকে শুরু করতে হবে। তারপর সেই সর্বসম্মত বিষয়াবলী থেকে যুক্তি পেশ করে শ্রোতাকে একথা বুঝাবার চেষ্টা করতে হবে যে, তোমার ও তার মধ্যে যেসব বিষয়ে বিরোধ রয়েছে সেগুলোতে তোমার অভিমত সর্বসম্মত ভিত্তিগুলোর সাথে সামঞ্জস্য রাখে এবং তার অভিমত হচ্ছে তার বিপরীতধর্মী। 

এ প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে , আহলি কিতাব আরবের মুশরিকদের মতো অহী, রিসালাত ও তাওহীদ অস্বীকারকারী ছিল না। বরং তারা মুসলমানদের মতো এ সত্যগুলো স্বীকার করতো। এ মৌলিক বিষয়গুলোর ব্যাপারে ঐক্যমত্য পোষণ করার পর যদি তাদের মধ্যে মতবিরোধের বড় কোন ভিত্তি হতে পারতো তাহলে তা হতো এই যে, তাদের কাছে যেসব আসমানী কিতাব এসেছে মুসলমানরা সেগুলো মানছে না এবং মুসলমানদের নিজেদের কাছে যে আসমানী কিতাব এসেছে তাদেরকে তার প্রতি ঈমান আনার দাওয়াত দিচ্ছে আর তা গ্রহণ না করলে তাদেরকে কাফের বলে গণ্য করছে। বিরোধের জন্য এটি খুবই শক্তিশালী ভিত্তি হতে পারতো। কিন্তু মুসলমানদের অবস্থান ছিল এ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা । আহলি কিতাবের কাছে যেসব কিতাব ছিল সেসবকেই তারা সত্য বলে মানতো এবং এ সঙ্গে মুহাম্মদ (সা) এর প্রতি যে অহী নাযিল হয়েছিল তার প্রতি তারা ঈমান এনেছিল।এরপর কোন যুক্তিসঙ্গত কারণে আহলি কিতাব এক আল্লাহরই নাযিল করা একটি কিতাব মানে এবং অন্যটি মানে না একথা বলার দায়িত্ব ছিল তাদের নিজেদেরই। এ জন্য আল্লাহ এখানে মুসলমানদের নির্দেশ দিয়েছেন, যখনই আহলি কিতাবদের মুখোমুখি হবে সবার আগে তাদের কাছে ইতিবাচকভাবে নিজেদের এ অবস্থানটি তুলে ধরো। তাদেরকে বলো, তোমরা যে আল্লাহকে মানো আমরাও তাকেই মানি এবং আমরা তার হুকুম পালন করি। তার পক্ষ থেকে যে বিধান , নির্দেশ ও শিক্ষাবলীই এসেছে, তা তোমাদের ওখানে বা আমাদের এখানে যেখানেই আসুক না কেন, সেসবের সামনে আমরা মাথা নত করে দেই। আমরা তো হুকুমের দাস। দেশ, জাতি ও বংশের দাস নই। আল্লাহর হুকুম এক জায়গায় এলে আমরা মেনে নেবো এবং এই একই আল্লাহর হুকুম অন্য জায়গায় এলে আমরা তা মানবো না, এটা আমাদের রীতি নয়। একথা কুরআন মাজীদের বিভিন্ন স্থানে বার বার বলা হয়েছে। বিশেষ করে আহলি কিতাবের সাথে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলোতে তো জোর দিয়ে এ বিষয়টি বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন দেখুন, সূরা আল বাকারার , ১৩৬ , ১৭৭; আল ইমরানের ৮৪; আন নিসার ১৩৬, ১৫০-১৫২,১৬২-১৬৪ এবং আশ শু'আরার ১৩ আয়াত।

.৫। জ্ঞানহীন বিতর্ক  মানুষকে শয়তানের পথে ধাবিত করে :

(হাজ্ব:৩) কতক লোক এমন আছে যারা জ্ঞান ছাড়াই আল্লাহর ব্যাপারে বিতর্ক করে  এবং প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তানের অনুসরণ করতে থাকে৷  

.  জ্ঞানপাপীদের সাথে বিতর্কে জড়িওনা : কারণ কিছু লোক বিতর্ক করে যাতে লোকদেরকে  আল্লাহর পথ থেকে ভ্রষ্ট করা যায় :    

(হাজ্ব:৯) তারা আল্লাহর ব্যাপারে বিতর্ক করে, যাতে লোকদেরকে আল্লাহর পথ থেকে ভ্রষ্ট করা যায়৷  এমন ব্যক্তির জন্য রয়েছে দুনিয়ায় লাঞ্ছনা এবং কিয়ামতের দিন আমি তাকে আগুনের আযাবের জ্বালা আস্বাদন করাবো৷

.  শয়তানের উস্কানি থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইতে হবে :

(মু’মিনুন:৯৭) আর দোয়া করো, ‘‘হে আমার রব! আমি শয়তানদের উস্কানি থেকে তোমার আশ্রয় চাই৷  ৯৮) এমনকি হে ! পরওয়ারদিগার, সে আমার কাছে আসুক এ থেকেও তো আমি তোমার আশ্রয় চাই” ৷

. : ইসলাম মানুষকে দীনতা  হীনতা শিক্ষা দেয়না, তাই যে কোন জালেমের সহজ শিকারে পরিণত হওয়া যাবেনা, তাদেরকে আত্মমর্যাদাবোধের সাথে উচিত  সামঞ্জস্যশীল যুক্তিপূর্ণ জবাব দিতে হবে :

(২৯-আনকাবুত:৪৬) আর  উত্তম পদ্ধতিতে ছাড়া আহলে কিতাবের সাথে বিতর্ক করো না, তবে তাদের মধ্যে যারা জালেম৮২  

 ৮২ . অর্থাৎ যারা জুলুমের নীতি অবলম্বন করে তাদের সাথে তাদের জুলুমের প্রকৃতি বিবেচনা করে ভিন্ন নীতিও অবলম্বন করা যেতে পারে। এর অর্থ হচ্ছে, সবসময় সব অবস্থায় সব ধরনের লোকদের মোকাবিলায় নরম ও সুমিষ্ট স্বভাবের হয়ে থাকলে চলবে না। যেন মানুষ সত্যের আহ্বায়কের ভদ্রতাকে দুর্বলতা ও অসহায়তা মনে না করে বসে। ইসলাম তার অনুসারীদেরকে অবশ্যই ভদ্রতা , বিনয়, শালীনতা যুক্তিবাদিতার শিক্ষা দেয় কিন্তু হীনতা ও দীনতার শিক্ষা দেয় না। তাদেরকে প্রত্যেক জালেমের জুলূমের সহজ শিকারে পরিণত হবার শিক্ষা দেয় না। 

৭। হিকমতের সাথে দাওয়াত দান করো :

(১৬:১২৫) হে নবী! প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তা এবং সদুপদেশ সহকারে তোমার রবের পথের দিকে দাওয়াত দাও এবং লোকদের সাথে বিতর্ক করো সর্বোত্তম পদ্ধতিতে৷

৮। কোন কথা নিজেকে দিয়ে শুরু কর : মানুষের আবেগের কাছে আবেদন সৃষ্টি কর :

(২৬.শুআরা:৭৭) এরা তো সবাই আমার দুশমন -  একমাত্র রাব্বুল আলামীন ছাড়া

(এখানে প্রচারের কৌশলের একটি বিষয়ও প্রণিধানযোগ্য। হযরত ইব্রাহীম এ কথা বলেননি যে, এরা (এই মূর্তিরা) তোমাদের শত্রু বরং বলেছেন এরা (এ মূর্তিরা) আমার শত্রু। যদি তিনি বলতেন এরা তোমাদের শত্রু, তাহলে প্রতিপক্ষের হঠকারী হয়ে ওঠার বেশী সুযোগ থাকতো। তারা তখন বিতর্ক শুরু করতো এরা কেমন করে আমাদের শত্রু হয় বলো। পক্ষান্তরে যখন তিনি বললেন তারা আমার শত্রু তখন প্রতিপক্ষের জন্যও চিন্তা করার সুযোগ হলো। তারাও ভাবতে পারলো, ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম যেমন নিজের ভাল-মন্দের চিন্তা করছেন তেমনি আমাদের নিজেদের ভাল-মন্দের চিন্তা করা উচিত। এভাবে হযরত ইব্রাহীম (আ.) যেন প্রত্যেক ব্যক্তির স্বভাবজাত আবেগ-অনুভূতির কাছে আবেদন জানিয়েছেন, যার ভিত্তিতে তারা নিজেরাই হয় নিজেদের শুভাকাঙ্খী এবং জেনে শুনে কখনো নিজেদের মন্দ চায় না। তিনি তাদেরকে বললেন, আমি তো এদের ইবাদত করার মধ্যে আগাগোড়াই ক্ষতি দেখি এবং জেনে বুঝে আমি নিজেই নিজের পায়ে কুড়াল মারতে পারি না। কাজেই দেখে নাও আমি নিজে তাদের ইবাদত-পূজা-অর্চনা থেকে পুরোপুরি দূরে থাকছি। এরপর প্রতিপক্ষ স্বাভাবিকভাবেই একথা চিন্তা করতে বাধ্য ছিল যে, তাদের লাভ কিসে এবং জেনে বুঝে তারা নিজেদের অমঙ্গল চাচ্ছে না তো।

৯। দাওয়াত দান কারীর আফসোস / আক্ষেপ করার কোন কারণ নেই:

৯.১। লোকেরা ইসলাম  সৎপথের দাওয়াত গ্রহণ না করলে দাওয়াতদানকারীর আফসোস করার কোন কারণ নেই:

(২৭.নামল:৭০) হে নবী! তাদের অবস্থার জন্য দুঃখ করো না এবং তাদের চক্রান্তের জন্য মনঃক্ষুন্ন হয়োনা

( অর্থাৎ তুমি তোমার বুঝাবার দায়িত্ব পালন করেছো। এখন যদি তারা না মেনে নেয় এবং নিজেদের নির্বোধসুলভ কর্মকাণ্ডের ওপর জিদ ধরে আল্লাহর আযাবের ভাগী হতে চায়, তাহলে অনর্থক তাদের অবস্থার জন্য হৃদয় দুঃখ ভরাক্রান্ত করে নিজেকে কষ্ট দান কেন৷ আবার তারা সত্যের সাথে লড়াই এবং তোমার সংশোধন প্রচেষ্টাবলীকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য যেসব হীন চক্রান্ত করছে সেজন্য তোমার মনঃকষ্ট পাবার কোন কারণ নেই। তোমার পেছনে আছে আল্লাহর শক্তি। তারা তোমার কথা না মানলে তাদের নিজেদেরই ক্ষতি হবে, তোমার কোন ক্ষতি হবে না।)

মহিলাদের দাওয়াতী কাজ :

মুহাম্মদ সা: এর স্ত্রীগণও কি দাওয়াতী কাজ / ইসলামের হুকুম আহকাম পৌছে দেওয়ার কাজের জন্য আদিষ্ট ছিলেন ? :

(৩৩-আহযাব: ৩৪) আল্লাহর আয়াত  জ্ঞানের যেসব কথা তোমাদের গৃহে শুনানো হয়  ৫১ তা মনে রেখো৷ অবশ্যই আল্লাহ সূক্ষ্মদর্শী ৫২  সর্ব অবহিত৷ 

৫১. মূলে (আরবী) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর দু'টি অর্থঃ মনে রেখো এবং বর্ণনা করো। প্রথম অর্থের দৃষ্টিতে এর তাৎপর্য এই দাঁড়ায়ঃ হে নবীর স্ত্রীগণ। তোমরা কখনো ভুলে যেয়ো না যে, যেখান থেকে সারা দুনিয়াকে আল্লাহর আয়াত, জ্ঞান  প্রজ্ঞার শিক্ষা দেয়া হয় সেটিই তোমাদের আসল গৃহ। তাই তোমদের দায়িত্ব বড়ই কঠিন। লোকেরা  গৃহে জাহিলিয়াতের আদর্শ দেখতে থাকে, এমন যেন না হয়। দ্বিতীয় অর্থটির দৃষ্টিতে এর তাৎপর্য হয়ঃ হে নবীর স্ত্রীগণ ! তোমরা যা কিছু শোনো এবং দেখো তা লোকদের সামনে বর্ণনা করতে থাকো। কারণ রসূলের সাথে সার্বক্ষণিক অবস্থানের কারণে এমন অনেক বিধান তোমাদের গোচরীভূত হবে যা তোমাদের ছাড়া অন্য কোন মাধ্যমে লোকদের জানা সম্ভব হবে না।  আয়াতে দু'টি জিনিসের কথা বলা হয়েছে। এক আল্লাহর আয়াত, দুই, হিকমাত বা জ্ঞান  প্রজ্ঞা। আল্লাহর আয়াত অর্থ হচেছ, আল্লাহর কিতাবের আয়াত। কিন্তু হিকমাত শব্দটি অত্যন্ত ব্যপক অর্থবোধক। সকল প্রকার জ্ঞানের কথা এর অন্তরভুক্ত, যেগুলো নবী (সাঃ) লোকদেরকে শেখাতেন। আল্লাহর কিতাবের শিক্ষর ওপরও  শব্দটি প্রযোজ্য হতে পারে। কিন্তু কেবলমাত্র তার মধ্যেই এক সীমিত করে দেবার সপক্ষে কোন প্রমাণ নেই। কুরআনের আয়াত শুনানো ছাড়াও নবী (সাঃ) নিজের পবিত্র জীবন  নৈতিক চরিত্র এবং নিজের কথার মাধ্যমে যে হিকমাতের শিক্ষা দিতেন তাও অপরিহার্যভাবে এর অন্তরভুক্ত। কেউ কেউ কেবলমাত্র এরি ভিত্তিতে যে আয়াতে . যা তেলাওয়াত করা হয়ে  শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে,  দাবী করেন যে আল্লাহরর আয়াত  হিকমাত মানে হচ্ছে কেবলমাত্র কুরআন। কারণ "তেলাওয়াত" শব্দটি একমাত্র কুরআন তেলাওয়াতের সাথেই সংশ্লিষ্ট। কিন্তু  যুক্তি একবারেই ভ্রান্ত। তেলাওয়াতের সাথে সংশ্লিষ্ট করে দেয়া পরবর্তীকালের লোকদের কাজ। কুরআনে  শব্দটিকে পারিভাষিক অর্থে ব্যবহার করা হয়নি। সূরা বাকারার ১০২ আয়াতে  শব্দটিকেই যাদুমন্ত্রের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। শয়তানরা হযরত সুলাইমানের নামের সাথে জড়িত করে  মন্ত্রগুলো লোকদেরকে তেলাওয়াত করে শুনাতোঃ 

(আরবী )

"তারা অনুসরণ করে এমন এক জিনিসের যা তেলাওয়াত করতো অর্থাৎ যা শুনাতো শয়তানরা সুলাইমানের বাদশাহীর সাথে জড়িত করে" -থেকে স্পষ্টত প্রমাণিত হয়, কুরআন  শব্দটিকে এর শাব্দিক অর্থে ব্যবহার করে। আল্লাহর কিতাবের আয়াত শুনাবার জন্য পারিভাষিকভাবে এক নির্দিষ্ট করে না

৫২. আল্লাহ সূক্ষ্ণদর্শী অর্থাৎ গোপনে এবং অতিসংগোপনে রাখা কথাও তিনি জানতে পারেন। কোন জিনিসই তাঁর কাছ থেকে লুকিয়ে রাখ যেতে পারে না

দাওয়াতী কাজ করার অর্থ দুনিয়া পরিত্যাগ করা নয় :

(১৭:৫৫) তোমার রব পৃথিবী ও আকাশের সৃষ্টিসমূহকে বেশী জানেন৷ আমি কতক নবীকে কতক নবীর ওপর মর্যাদা দিয়েছি *এবং আমি দাউদকে যাবুর দিয়েছিলাম৷**)

(ব্যাখ্যা : *এ বাক্যটি আসলে মক্কার কাফেরদেরকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে, যদিও আপাতদৃষ্টিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করা হয়েছে । যেমন সমকালীন লোকদের সাধারণ নিয়ম হয়ে থাকে ঠিক সেই একই নিয়মে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সমকালীন ও সমগোত্রীয় লোকেরা তাঁর মধ্যে কোন শ্রেষ্টত্ব ও মহত্ব দেখতে পাচ্ছিল না । তাঁর তাকে নিজেদের জনপদের একজন সাধারণ মানুষ মনে করছিল । আর যেসব খ্যাতনামা ব্যক্তি কয়েক শতাব্দী আগে অতীত হয়ে গিয়েছিলেন তাদের সম্পর্কে মনে করতো যে, শ্রেষ্টত্ব ও মহত্ব কেবল তাদের মধ্যেই ছিল । তাই তাঁর মুখে নবুওয়াতের দাবী শুনে তারা এ বলে আপত্তি জানাতো যে,এ লোকাটি তো বেশ লম্ফ ঝম্প মারছে । না জানি নিজেকে কী মনে করে বসেছে । বড় বড় পয়গম্বররা, যাদের শ্রেষ্ঠত্ব সারা দুনিয়ার লোকেরা মানে, তাদের সাথে এ ব্যক্তির কি কোন তুলানাই করা যেতে পারে৷ আল্লাহ এর সংক্ষিপ্ত জবাব দিয়ে বলছেন: পৃথিবী ও আকাশের সমস্ত সৃষ্টি আমার চোখের সামনে আছে । তোমরা জানো না তাদেরকে কোন পর্যায়ের এবং কে কোন ধরনের মর্যাদার অধিকারী । নিজের শ্রেষ্ঠত্বের মালিক আমি নিজেই এবং ইতিপূর্বেও আমি বহু নবী পয়দা করেছি যাদের একজন অন্যজনের চাইতে শ্রেষ্ঠ মর্যাদা সম্পন্ন ।

** এখানে বিশেষভাবে দাউদ আলাইহিস সালামকে যাবুর দান করার কথা সম্ভবত এ জন্য উল্লেখ করা হয়েছে যে, দাউদ আলাইহিস সালাম বাদশাহ ছিলেন এবং বাদশাহ সাধারণত আল্লাহর কাছ থেকে বেশী দূরে অবস্থান করে । নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সমকালীন লোকেরা যে কারণে তাঁর পয়গম্বরী ও আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার বিষয়টি মেনে নিতে অস্বীকার করতো তা তাদের নিজেদের বর্ণনা অনুযায়ী এ ছিল যে, সাধারণ মানুষের মতো তাঁর স্ত্রী - সন্তান ছিল, তিনি পানাহর করতেন, হাটে বাজারে চলাফেরা করে কেনাবেচা করতেন এবং একজন দুনিয়াদার ব্যক্তি নিজের দুনিয়াবী প্রয়োজনাদি পূরণ করার জন্য যেসব কাজ করতো তিনি তা সব করতেন । মক্কার কাফেরদের বক্তব্য ছিল, তুমি একজন দুনিয়াদার ব্যক্তি, আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার সাথে তোমার কি সম্পর্ক৷ আল্লাহর নৈকট্য লাভকারীরা তো হচ্ছে এমন সব লোক, নিজেদের দৈহিক ও মানসিক চাহিদার ব্যাপারে যাদের কোন জ্ঞান থাকে না । তারা তো একটি নির্জন জায়গায় বসে দিনরাত আল্লাহর ধ্যানে ও স্মরণে মশগুল থাকে । ঘর সংসারের চাল- ডালের কথা ভাববার সময় ও মানসিকতা তাদের কোথায় ! এর জবাবে বলা হচ্ছে, পুরোপুরি একটি রাজ্যের ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করার চাইতে বড় দুনিয়াদারী আর কি হতে পারে, কিন্তু এরপরও হযরত দাউদ আলাইহিস সালামকে নবুওয়াত ও কিতাবের নিয়ামত দান করা হয়োছিল । )

নিজের চরিত্র দিয়ে দাওয়াত দাও :  (আরো দেখুন : চ > চরিত্র । )

(১৬:৯৪) (আর হে মুসলমানরা!) তোমরা নিজেদের কসমসমূহকে পরস্পরকে ধোঁকা দেবার মাধ্যমে পরিণত করো না৷ কোনো পদক্ষেপ একবার দৃঢ় হবার পর আবার যেন পিছলে না যায় এবং তোমরা লোকদেরকে আল্লাহর পথ থেকে নিবৃত্ত করেছো এ অপরাধে যেন তোমরা অশুভ পরিণামের সম্মুখীন না হও এবং কঠিন শাস্তি ভোগ না করো৷

(ব্যাখ্যা : অর্থাৎ, ওয়াদা পালনে লেনদেনে এবং চারিত্রিক দৃঢ়তায় অটুট থাকো। তোমাদের চরিত্র যেন এমন না হয় যা দেখে অন্যদের মনে এ ইসলাম ধর্মের প্রতি বিতৃষ্ণা জাগে এবং তারা যেন মুখ বাকিয়ে ঠোট উল্টিয়ে না বলে : হেহ, অনেক দেখেছি, এরই নাম মুসলমান? আর এ ধরণের লোকদের ধর্মই ইসলাম ধর্ম ? )

দাওয়াতী কাজের ক্ষেত্রে বিনয়ের নীতি অবলম্বন করার সীমা কোন পর্যন্ত ? :

(বিস্তারিত ব্যাখ্যাসহ দেখুন : ব > বিনয় > বিনয়ের নীতি অবলম্বন করার সীমা কোন পর্যন্ত ? )

mr Kv‡Ri Dc‡`k w`‡Z _v‡Kv : 7:199,

g~L©‡`i mv‡_ weZ‡K© RwoIbv : 7:199,

‡KvgjZv I ÿgvi c_ Aej¤^b Ki: 7:199,

whwb (Avjøvn )wKZve bvwhj K‡i‡Qb, mvnvh¨Kvix wZwbB : 7:196,

দেখো, এরা তাঁর কাছ থেকে আত্মগোপন করার জন্য বুক ভাঁজ করছে৷ সাবধান! যখন এরা কাপড় দিয়ে নিজেদেরকে ঢাকে তখন তারা যা গোপন করে এবং যা প্রকাশ করে তা সবই আল্লাহ জানেন৷ তিনি তো অন্তরে যা সংগোপন আছে তাও জানেন৷ ১১:৫।

`vIqvZ †`qv n‡”Q `vwqZ¡ :

hw` `„p wek¦vmI nq †h, †hB e¨w³‡K `vIqvZ †`qv n‡”Q †m ïb‡e bv Zvi aŸsm Awbevh© n‡q †M‡Q ZeyI Zv‡K `vIqvZ w`‡Z n‡e, hv‡Z `vIqvZ `vbKvix e¨w³ Avjøvni wbKU `vIqvZ `v‡bi `vwqZ¡ gy³ n‡Z cv‡i, Avevi GI n‡Z cv‡i †h, †jvKwU nqZ mrc‡_ wd‡i Avm‡Z cv‡i : 7:163, 164, 165,

(১৬:১২৫) .... তোমার রবই বেশী ভালো জানেন কে তাঁর পথচ্যুত হয়ে আছে এবং কে আছে সঠিক পথে৷

(১২:১০৮) তাদেরকে পরিষ্কার বলে দাও : আমার পথতো এটাই, আমি আল্লাহর দিকে ডাকি, আমি নিজেও পূর্ণ আলোকে নিজের পথ দেখছি এবং আমার সাথীরাও৷ আর আল্লাহ পাক-পবিত্র  এবং শিরককারীদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই৷  

(১৩:৩০) হে মুহাম্মদ! এহেন মাহাত্ম সহকারে আমি তোমাকে নবী বানিয়ে পাঠিয়েছি এমন এক জাতির মধ্যে যার আগে বহু জাতি অতিক্রান্ত হয়ে গেছে, যাতে তোমার কাছে আমি যে পয়গাম অবতীর্ণ করেছি তা তুমি এদেরকে শুনিয়ে দাও, এমন অবস্থায় যখন এরা নিজেদের পরম দয়াময় আল্লাহকে অস্বীকার করছে৷ এদেরকে বলে দাও, তিনিই আমার রব, তিনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই, তাঁরই ওপর আমি ভরসা করেছি এবং তাঁরই কাছে আমাকে ফিরে যেতে হবে৷

(১৫:৮৮) আমি তাদের মধ্য থেকে বিভিন্ন শ্রেণীর লোকদের দুনিয়ার যে সম্পদ দিয়েছি সেদিকে তুমি চোখ উঠিয়ে দেখো না এবং তাদের অবস্থা দেখে মুনঃক্ষুন্নও হয়ো না৷ তাদেরকে বাদ দিয়ে মুমিনদের প্রতি ঘনিষ্ঠ হও 

ধনী, নেতা ইত্যাদির প্রতি অতিরিক্ত বেশী গুরুত্ব না দিয়ে মুমিনদের প্রতি ঘনিষ্ঠ হও :

(১৫:৮৮) তাদেরকে বাদ দিয়ে মুমিনদের প্রতি ঘনিষ্ঠ হও।

দাওয়াত বনাম কাফির / ইসলাম বিরোধী / দাওয়াত প্রত্যাখ্যান কারী :

দাওয়াত প্রত্যাখ্যান কারীদের কার্যাবলী :

দেখো, এরা তাঁর কাছ থেকে আত্মগোপন করার জন্য বুক ভাঁজ করছে৷ সাবধান! যখন এরা কাপড় দিয়ে নিজেদেরকে ঢাকে তখন তারা যা গোপন করে এবং যা প্রকাশ করে তা সবই আল্লাহ জানেন৷ তিনি তো অন্তরে যা সংগোপন আছে তাও জানেন৷ ১১:৫।

দাওয়াতের জবাবে কাফিরদের বক্তব্যসমূহ :

.আমাদেরকে উপদেশ দেওয়া না দেওয়া উভয়ই সমান :

(২৬.শুআরা:১৩৬) তারা জবাব দিল, “তুমি উপদেশ দাও বা না দাও, আমাদের জন্য এ সবই সমান৷১৩৭) এ ব্যাপারগুলো তো এমনিই ঘটে চলে আসছে

(. এর দুটি অর্থ হতে পারে। এক. যা কিছু আমরা করছি এগুলো কোন নতুন জিনিস নয়, শত শত বছর থেকে আমাদের বাপ-দাদারা এসব করে আসছে। এসবই ছিল তাদের ধর্ম, সংস্কৃতি, চরিত্রনীতি ও ব্যবহারিক জীবনধারা। তাদের ওপর এমন কি বিপদ নেমে এসেছিল যে, আজ আমাদের ওপর তা নেমে আসার আশংকা করবো৷ এ জীবন ধারায় যদি কোন অন্যায় ও দুষ্কৃতির অংশ থাকতো, তাহলে তুমি যে আযাবের ভয় দেখাচ্ছো তা আগেই নেমে আসতো। দুই. তুমি যেসব কথা বলছো এমনি ধারার কথা ইতিপূর্বেও বহু ধর্মীয় উম্মাদ ও এবং যারা নৈতিকতার বুলি আওড়ায় তারা আওড়িয়ে এসেছে। কিন্তু দুনিয়ার রীতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তোমাদের মত লোকদের কথা না মানার ফলে কখনো এক ধাক্কায় এ রীতির মধ্যে ওলট-পালট হয়ে যায়নি।)

. আমাদেরকে আযাব স্পর্শ করবে না :

(২৬.শুআরা:১৩৮) এবং আমরা আযাবের শিকার হবো না৷”

জবাব : শেষ  পর্যন্ত আযাব তাদেরকে ঘিরে ধরলো :

(২৬.শুআরা:১৩৯) শেষ পর্যন্ত তারা তাকে প্রত্যাখ্যান করলো এবং আমি তাদেরকে ধ্বংস করে দিলাম৷ নিশ্চিতভাবেই এর মধ্যে আছে একটি নিদর্শন৷ কিন্তু তাদের অধিকাংশই মেনে নেয়নি৷

উপহাস/বিদ্রূপ ও তার প্রতিকার : দাওয়াতদানকারীদেরকে লোকেরা উপহাস/বিদ্রুপ করে  :

(১৫:৯৪) কাজেই হে নবী ! তোমাকে যে বিষয়ের হুকুম দেয়া হচ্ছে তা সরবে প্রকাশ্যে ঘোষণা করো এবং শিরককারীদের মোটেই পরোয়া করো না৷  ৯৫) যেসব বিদ্রূপকারী আল্লাহর সাথে অন্য কাউকেও ইলাহ বলে গণ্য করে  ৯৬) তোমাদের পক্ষ থেকে তাদের ব্যবস্থা করার জন্য আমিই যথেষ্ট৷ শীঘ্রই তারা জানতে পারবে৷  

মনে কষ্ট  : মনের কষ্ট :  দাওয়াতকারীদেরকে বিদ্রূপকরে উপহাস করে লোকেরা মনে কষ্ট দেয় :

(১৫:৯৭) আমি জানি, এরা তোমার সম্বন্ধে যেসব কথা বানিয়ে বলে তাতে তুমি মনে ভীষণ ব্যথা পাও৷  

যারা দাওয়াতী কাজ করেন, সেক্ষেত্রে অনেক সময় বিরোধীদের বিভিন্ন কার্যকলাপে মনে কষ্ট পেতে হয় : সেক্ষেত্রে করণীয় কি ?

(৩১-লোকমান: ২৩) এরপর যে কুফরী করে তার কুফরী যেন তোমাকে বিষন্ন না করে৷ ৪৩  

৪৩ . সম্বোধন করা হয়েছে নবী (সা) কে । অর্থ হচ্ছে, হে নবী ! যে ব্যক্তি তোমার কথা মেনে নিতে অস্বীকার করে, সে তো নিজের দৃষ্টিকোণ থেকে একথা মনে করে যে, ইসলামকে প্রত্যাখ্যানএবং কুফরীকে মেনে নিয়েও তার ওপর জোর দিয়ে সে তোমাকে অপমানিত করেছে কিন্তু আসলে সে নিজেই নিজেকে অপমানিত করেছে। সে তোমার কোন ক্ষতি করেনি বরং নিজেই নিজের ক্ষতি করেছে। কাজেই সে যদি তোমার কথা না মানে তাহলে তার পরোয়া করার প্রয়োজন নেই। 

এর প্রতিকার : (১) :

(১৫:৯৬) তোমাদের পক্ষ থেকে তাদের ব্যবস্থা করার জন্য আমিই যথেষ্ট৷ শীঘ্রই তারা জানতে পারবে৷  

(২৭.নমল: ৭০) হে নবী! তাদের অবস্থার জন্য দুঃখ করো না এবং তাদের চক্রান্তের জন্য মনঃক্ষুন্ন হয়োনা৷৮৭ 

(৮৭. অর্থাৎ তুমি তোমার বুঝাবার দায়িত্ব পালন করেছো। এখন যদি তারা না মেনে নেয় এবং নিজেদের নির্বোধসুলভ কর্মকাণ্ডের ওপর জিদ ধরে আল্লাহর আযাবের ভাগী হতে চায়, তাহলে অনর্থক তাদের অবস্থার জন্য হৃদয় দুঃখ ভরাক্রান্ত করে নিজেকে কষ্ট দান কেন৷ আবার তারা সত্যের সাথে লড়াই এবং তোমার সংশোধন প্রচেষ্টাবলীকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য যেসব হীন চক্রান্ত করছে সেজন্য তোমার মনঃকষ্ট পাবার কোন কারণ নেই। তোমার পেছনে আছে আল্লাহর শক্তি। তারা তোমার কথা না মানলে তাদের নিজেদেরই ক্ষতি হবে, তোমার কোন ক্ষতি হবে না। )

এর প্রতিকার : ()

(১৫:৯৮) এর প্রতিকার এই যে, তুমি নিজের রবের প্রশংসা সহকারে তাঁর পবিত্রতা  মহিমা বর্ণনা করতে থাকো, তাঁর সকাশে সিজ্দাবনত হও  ৯৯) এবং যে চূড়ান্ত সময়টি আসা অবধারিত সেই সময় পর্যন্ত নিজের রবের বন্দেগী করে যেতে থাকো৷

(ব্যাখ্যা : অর্থাৎ সত্যের বাণী প্রচার এবং সংস্কার প্রচেষ্টা চালাবার ক্ষেত্রে তোমাকে অশেষ কষ্ট  বিপদের সম্মুখীন হতে হয়  এগুলোর মোকাবিলা করার শক্তি তুমি একমাত্র নামায  আল্লাহর বন্দেগী করার ক্ষেত্রে অবিচল দৃঢ়তার পথ অবলম্বন করার মাধ্যমেই অর্জন করতে পারো   জিনিসটি তোমার মনকে প্রশান্তিতে ভরে তুলবে , তোমার মধ্যে ধৈর্য  সহিষ্ণুতার জন্ম দেবে , তোমার সাহস  হিম্মত বাড়িয়ে দেবে এবং তোমাকে এমন যোগ্যতাসম্পন্ন করে গড়ে তুলবে যার ফলে সারা দুনিয়ার মানুষের গালিগালাজ নিন্দাবাদ  প্রতিরোধের মুখে তুমি দৃঢ়ভাবে এমন দায়িত্ব পালন করে যেতে থাকবে যার মধ্যে তোমার রবের রেজামন্দি রয়েছে ।)

দাওয়াতী কাজের সুফল সমূহ : আরো দেখুন অসৎ কাজের নিষেধ  এর সুফলসমূহ :

দাওয়াতী কাজের ক্ষেত্রে আল্লাহর নিজের নীতি সমূহ :

যদি একজন লোকও দাওয়াত গ্রহণ না করে তাতে আল্লাহর কিছু আসে  যায় না :

(১৪:৮) আর মূসা বললো, “যদি তোমরা কুফরী করো এবং পৃথিবীর সমস্ত অধিবাসীও কাফের হয়ে যায় তাহলে আল্লাহর কিছুই আসে যায় না এবং তিনি আপন সত্তায় আপনি প্রশংসিত৷

মানুষকে বিপদে আপদে বা দু:খ দুর্দশায় ও দুর্ভিক্ষে নিক্ষেপ করা হয় যাতে তারা বিনম্র হয়ে সঠিক পথে ফিরে আসে  :

 (Av‡iv †`Lyb : ব > 1| `ywbqvex wec` Avc`,    2| cixÿv)

আমি যখনই কোন জনপদে নবী পাঠিয়েছি, সেখানকার লোকেদেরকে প্রথমে অর্থকষ্ট ও দুঃখ -দুর্দশায় সম্মুখীন করেছি, একথা ভেবে যে, হয়তো তারা বিনম্র হবে ও নতি স্বীকার করবে-৭:১৯৪,

ফেরাউনের লোকদেরকে আমি কয়েক বছর পর্যন্ত দুর্ভিক্ষ ও ফসলহানিতে আক্রান্ত করেছি এ উদ্দেশ্যে যে, হয়তো তাদের চেতনা ফিরে আসবে৷-৭:১৩০,

আর আমি ভাল ও খারাপ অবস্থায় নিক্ষেপ করার মাধ্যমে তাদেরকে পরীক্ষা করতে থাকি, হয়তো তারা ফিরে আসবে-৭:১৬৮,  

লোকদেরকে হেদায়াত দান করার পর আবার তাদেরকে পথভ্রষ্ট করা আল্লাহর রীতি নয়, যতক্ষন না তিনি তাদেরকে কোন জিনিস থেকে সংযত হয়ে চলতে হবে তা পরিস্কার করে জানিয়ে দেন৷  আসলে আল্লাহ প্রত্যেকটি জিনিসের জ্ঞান রাখেন :৯:১১৫,

এরা কি দেখে না, প্রতি বছর এদেরকে দুএকটি পরীক্ষার মুখোমুখি করা হয়?  কিন্তু এরপরও এরা তাওবাও করে না কোন শিক্ষাও গ্রহণ করে না -৯:১২৬,

(৩২:২১) সেই বড় শাস্তির পূর্বে আমি এ দুনিয়াতেই (কোন না কোন ) ছোট শাস্তির স্বাদ তাদেরকে আস্বাদন করাতে থাকবো, হয়তো তারা (নিজেদের বিদ্রোহাত্মক নীতি থেকে ) বিরত হবে৷

 ("বড় শাস্তি" বলতে আখেরাতের শাস্তিকে বুঝানো হয়েছে। কুফরী ও ফাসেকীর অপরাধে এ শাস্তি দেয়া হবে। এর মোকাবিলায় "ছোট শাস্তি" শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে । এর অর্থ হচ্ছে এ দুনিয়ায় মানুষ যেসব কষ্ট পায় সেগুলো। যেমন ব্যক্তিগত জীবনে কঠিন রোগ, নিজের প্রিয়তম লোকদের মৃত্যু, ভয়াবহ দুর্ঘটনা, মারাত্মক ক্ষতি, ব্যর্থতা ইত্যাদি। সামাজিক জীবনে ঝড়-তুফান, ভূমিকম্প, বন্যা, মহামারী, দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গা, যুদ্ধ এবং আরো বহু আপদ-বিপদ, যা লাখো লাখো কোটি কোটি মানুষকে প্রভাবিত করে। এসব বিপদ অবতীর্ণ হওয়ার প্রয়োজন ও কল্যাণকর দিক বর্ণনা করে বলা হয়েছে, এর ফলে বড় শাস্তি ভোগ করার আগেই যেন মানুষ সচেতন হয়ে যায় এবং এমন চিন্তা ও অন্যকথায় এর অর্থ হবে , দুনিয়ায় আল্লাহ মানুষকে একেবারেই পরমানন্দে রাখেননি। নিশ্চিন্তে ও আরামে জীবনের গাড়ি চলতে থাকলে মানুষ এ ভুল ধারণায় লিপ্ত হয়ে পড়বে যে, তার চেয়ে বড় আর কোন শক্তি নেই যে, তার কোন ক্ষতি করতে পারে। বরং আল্লাহ এমন ব্যবস্থা করে রেখেছেন যার ফলে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন ব্যক্তি , জাতি ও দেশের ওপর এমন সব বিপদ-আপদ পাঠাতে থাকেন, যা তাদেরকে একদিকে নিজেদের অসহায়তা এবং অন্যদিকে নিজেদের চেয়ে বড় ও উর্ধ্বে একটি মহাপরাক্রমশালী সর্বব্যাপী শাসন ব্যবস্থার অনুভূতি দান করে। এ বিপদ প্রত্যেকটি ব্যক্তি, দল ও জাতিকে একথা স্মরণ করিয়ে দেয় যে, তোমাদের ভাগ্য ওপরে অন্য একজন নিয়ন্ত্রণ করছেন। সবকিছু তোমাদের হাতে দিয়ে দেয়া হয়নি। আসল ক্ষমতা রয়েছে তার হাতে যিনি কর্তৃত্ব সহকারে এসব কিছু করে চলছেন। তার পক্ষ থেকে যখনই কোন বিপদ তোমাদের ওপর আসে , তার বিরূদ্ধে কোন প্রতিরোধ তোমরা গড়ে তুলতে পারো না এবং কোন জিন, রূহ ,দেব-দেবী, নবী বা অলীর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেও তার পথ রোধ করতে সক্ষম ও না। 

এদিক দিয়ে বিচার করলে এ বিপদ নিছক বিপদ নয় বরং আল্লাহর সতর্ক সংকেত। মানুষকে সত্য জানাবার এবং তার বিভ্রান্তি দূর করার জন্য একে পাঠানো হয়। এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে যদি মানুষ দুনিয়াতেই নিজের বিশ্বাস ও কর্ম শুধরে নেয় তাহলে আখেরাতে আল্লাহর বড় শাস্তির মুখোমুখি হবার তার কোন প্রয়োজনই দেখা দেবে না।)

(মু’মিনুন:৭৫) যদি আমি তাদের প্রতি করুণা করি এবং বর্তমানে তারা যে দুঃখ-কষ্টে ভুগছে তা দূর করে দেই, তাহলে তারা নিজেদের অবাধ্যতার স্রোতে একেবারেই ভেসে যাবে৷৭৬) তাদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, আমি তাদের দুঃখ-কষ্টে ফেলে দিয়েছি, তারপরও তারা নিজেদের রবের সামনে নত হয়নি এবং বিনয় ও দীনতাও অবলম্বন করে না ৷  

(তওবা: ১২৬) এরা কি দেখে না, প্রতি বছর এদেরকে দুএকটি পরীক্ষার মুখোমুখি করা হয়? ১২৫   কিন্তু এরপরও এরা তাওবাও করে না কোন শিক্ষাও গ্রহণ করে না৷  

১২৫ . অর্থাৎ এমন কোন বছর অতিবাহিত হয় না যখন তাদের ঈমানের দাবী এক দুবার পরীক্ষার সম্মুখীন হয় না এবং এভাবে তার অন্তসারশূন্যতা প্রকাশ হয়ে যায় না। কখনো কুরআনে এমন কোন হুকুম আসে যার মাধ্যমে তাদের ইচ্ছা ও প্রবৃত্তির আশা আকাংখার ওপর কোন নতুন বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়। কখনো দীনের এমন কোন দাবী সামনে এসে যায় যার ফলে তাদের স্বার্থ ক্ষুন্ন হয়। কখনো এমন কোন আভ্যন্তরীণ , সংকট সৃষ্টি হয় যার মাধ্যমে তারা নিজেদের পার্থিব সম্পর্ক এবং নিজেদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও গোত্রীয় স্বার্থের মোকাবিলায় আল্লাহর ও তার রসূলের দীনকে কি পরিমাণ ভালবাসে তার পরীক্ষা করাই উদ্দেশ্য হয়। কখনো এমন কোন যুদ্ধ সংঘটিত হয় যার মাধ্যমে তারা যে দীনের ওপর ঈমান আনার দাবী করছে তার জন্য ধন, প্রাণ , সময় ও শ্রম ব্যয় করতে তারা কতটুকু আগ্রহী তার পরীক্ষা হয়ে যায়। এ ধরনের সকল অবস্থায় কেবল তাদের মিথ্যা অংগীকারের মধ্যে যে মুনাফিকীর আবর্জনা চাপা পড়ে আছে তা শুধু উন্মুক্ত হয়ে সামনে চলে আসে না বরং যখন তারা ঈমানদের দাবী থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে পালাতে থাকে তখন তাদের ভেতরের ময়লা আবর্জনা আগের চাইতে আরো বেশী বেড়ে যায়।

(৩০-রূম: ৪১) মানুষের কৃতকর্মের দরুন জলে-স্থলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, যার ফলে তাদেরকে তাদের কিছু কৃতকর্মের স্বাদ আস্বাদন করানো যায়, হয়তো তারা বিরত হবে৷ ৬৪  

৬৪ . এখানে আবার রোম ও ইরানের মধ্যে যে যুদ্ধ চলছিল এবং যার আগুন সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল সেদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। "লোকদের স্বহস্তের উপার্জন" বাক্যাংশের অর্থ হচ্ছে, ফাসেকী , অশ্লীলতা, জুলুম ও নিপীড়নের এমন একটি ধারা যা শিরক ও নাস্তিক্যবাদের আকীদা- বিশ্বাস অবলম্বন ও আখেরাতকে উপেক্ষা করার ফলে অনিবার্যভাবে মানবিক নৈতিক গুণাবলী ও চরিত্রের মধ্যে সৃষ্টি হয়ে থাকে। " হয়তো তারা বিরত হবে" এর অর্থ হচ্ছে, আখেরাতে শাস্তি লাভ করার পূর্বে আল্লাহ এ দুনিয়ায় মানুষের সমস্ত নয় বরং কিছু খারাপ কাজের ফল এজন্য ভোগ করান যে, এর ফলে সে প্রকৃত সত্য উপলব্ধি করবে এবং নিজের চিন্তাধারার ভ্রান্তি অনুধাবন করে নবীগণ সবসময় মানুষের সামনে যে সঠিক বিশ্বাস উপস্থাপন করে এসেছেন এবং যা গ্রহণ না করলে মানুষের কর্মধারাকে সঠিক বুনিয়াদের ওপর প্রতিষ্ঠিত করার দ্বিতীয় কোন পথ নেই সেদিকে ফিরে আসবে। কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানে, এ বিষয়টি বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন দেখুন, আত তাওবা, ১২৬; আর রা'আদ, ২১ ; আস সাজদাহ, ২১ এবং আত তূর, ৪৭ আয়াত। 

(ত্বুর : ৪৭) আর সেদিনটি আসার আগেও জালেমদের জন্য একটা আযাব আছে৷ কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না ৷ ৩৭ 

৩৭. এটি সূরা আস সাজদার ২১ আয়াতের বিষয়বস্তুর পুনরাবৃত্তি । সেখানে বলা হয়েছে "সেই বড় আযাবের পূর্বে আমি দুনিয়াতেই তাদেরকে কোন না কোন ছোট আযাবের স্বাদ ভোগ করাতে থাকবো । হয়তো এরা তাদের বিদ্রোহত্মক আচরণ থেকে বিরত হবে" । অর্থাৎ দুনিয়াতে মাঝে মাঝে ব্যক্তিগত ও জাতিগত পর্যায়ে আযাব নাযিল করে আমি তাদের একথা স্বরণ করিয়ে দিতে থাকবো যে, ওপরে কোন এক উচ্চতর শক্তি তাদের ভাগ্যের ফায়সালা করছে । তাঁর ফায়সালা পরিবর্তন করার শক্তি কেউ রাখে না । তবে যারা জাহেলিয়াতের মধ্যে ডুবে আছে তারা এ ঘটনাবলী থেকে পূর্বেও কোন শিক্ষা গ্রহণ করেনি এবং ভবিষ্যতেও কখনো করবে না । দুনিয়াতে যেসব বিপর্যয় আসে তারা তার অর্থ বুঝে না । তাই তারা এসব বিপর্যয়ের এমন এমন সব ব্যাখ্যা করে যা তাদেরকে সত্য উপলব্ধি করা থেকে আরো দূরে নিয়ে যায় । নিজেদের নাস্তিকতা বা শিরকের ক্রুটি ধরা পড়ে তাদের মেধা ও মস্তিষ্ক এমন ব্যাখ্যার দিকে কখনো আকৃষ্ট হয় না । একটি হাদীসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ বিষয়টি ব্যক্ত করেছেন । তিনি বলেছেনঃ 

------------------------------

"মুনাফিক যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং পরে যখন সুস্থ হয়ে যায় তখন তার অবস্থা হয় সেই উটের মত যাকে তার মালিক বেঁধে রাখলো কিন্তু সে বুঝলো না তাকে কেন বেঁধে রাখা হয়েছিল এবং তারপর আবার যখন খুলে দিল তখনও সে কিছু বুঝলো না তাকে কেন ছেড়ে দেয়া হলো" । ( আরো ব্যাখ্যার দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, আল আম্বিয়া, টীকা ৪৫; আন নামল, টীকা ৬৬; আল আনকাবূত, টীকা ৭২ ও ৭৩) ।

রাসুলগণ  চাইলেই কাউকে হেদায়েত দান করতে পারেন না, হেদায়েত দান করার মালিক আল্লাহ:

(১৬:৩৭) হে মুহাম্মাদ ! তুমি এদেরকে সঠিক পথের সন্ধান দেবার জন্য যতই আগ্রহী হও না কেন, আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তাকে আর সঠিক পথে পরিচালিত করেন না আর এ ধরনের লোকদের সাহায্য কেউ করতে পারে না৷


প্রত্যেক জাতির নিকট ইসলাম  ঈমানের দাওয়াত পৌছানো হবে : এটা আল্লাহর দায়িত্ব:

(আরো দেখুন : রাসুলদের দায়িত্ব ও কর্তব্য, প্রত্যেক  উম্মতের জন্য রাসুল রয়েছেন,)

প্রত্যেক উম্মতের জন্য একজন রসূল রয়েছে   -১০:৪৭,

(১৫:১০) হে মুহাম্মাদ ! তোমার পূর্বে আমি অতীতের অনেক সম্প্রদায়ের মধ্যে রসূল পাঠিয়েছিলাম৷

প্রত্যেক উম্মতের জন্য একজন রসূল রয়েছে   যখন কোন উম্মতের কাছে তাদের রসূল এসে যায় তখন পূর্ণ ইনসাফ সহকারে তাদের বিষয়ের ফায়সালা করে দেয়া হয় এবং তাদের প্রতি সামান্য পরিমাণও জুলুম করা হয় না-১০:৪৭,

(ব্যাখ্যা:এর অর্থ হচ্ছে , রসূলের দাওয়াত কোন মানব গোষ্ঠীর কাছে পৌছে যাওয়ার পর ধরে নিতে হবে যে, সেই গোষ্ঠীর হেদায়াতের জন্য আল্লাহর যা কিছু করণীয় ছিল, তা করা হয়ে গেছে। এরপর কেবল ফায়সালা করাই বাকি থেকে যায়। অতিরিক্ত কোন যুক্তি বা সাক্ষ -প্রমাণের অবকাশ থাকে না। আর চূড়ান্ত ইনসাফ সহকারে  ফায়সালা করা হয়ে থাকে। যারা রসূলের কথা মেনে নেয় এবং নিজেদের নীতি  মনোভাব পরিবর্তন করে তারা আল্লাহর রহমত লাভের অধিকারী হয়। আর যারা তার কথা মেনে নেয় না তারা শাস্তি লাভের যোগ্য হয়। তাদেরকে  শাস্তি দুনিয়া  আখেরাত উভয় জায়গায় দেয়া যেতে পারে বা এক জায়গায়।)

প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর জন্য রয়েছে একজন পথপ্রদর্শক৷-(১৩:৭)

(১৬:৩৬) প্রত্যেক জাতির মধ্যে আমি একজন রসূল পাঠিয়েছি এবং তার মাধ্যমে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি যে, “আল্লাহর বন্দেগী করো এবং তাগূতের বন্দেগী পরিহার করো৷”

ইসলামের দাওয়াতকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত বাতিল ব্যক্তিবর্গ সর্বদাই তাদের ক্ষমতার প্রতি হুমকি স্বরূপ দেখে থাকে :

এ দৃশ্য দেখে ফেরাউনের সম্প্রদায়ের প্রধানরা পরষ্পরকে বললোঃ নিশ্চয়ই এ ব্যক্তি একজন অত্যন্ত দক্ষ যাদুকর, তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বে-দখল করতে চায়৷এখন তোমরা কি বলবে বলো?-৭:১০৯-১১০,    

( এখানে প্রশ্ন দেখা দেয় যে, একটি পরাধীন জাতির এক সহায় -সম্বলহীন ব্যক্তি যদি হঠিৎ একদিন ফেরাউনের মত মহা পরাক্রান্ত বাদশাহর কাছে চলে যান। সিরিয়া থেকে লিবিয়া পর্যন্ত এবং ভুমধ্যসাগরের উপকূল থেকে ইথিয়োপিয়া পর্যন্ত বিশাল ভূভাগের ওপর যার একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তৃত , অধিকন্তু সে নিজেকে জনগণের ঘাড়ের ওপর দেবতা হিসেবেও সওয়ার হয়ে আছে। তাহলে নিছক তার একটি লাঠিকে অজগরে পরিণত করে দেয়ার কাজটি কেমন করে এত বড় একটি সাম্রাজ্যকে আতংকিত করে তোলে। কিভাবেই বা এ ধারণা সৃষ্টি হয় যে,এ ধরনের একজন মানুষ একাকীই মিসর রাজাকে সিংহাসনচ্যুত করে দেবেন এবং শাসক সম্প্রদায়সহ সমগ্র রাজ পরিবারকে রাষ্ট্র ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে দেবেন৷তারপর ঐ ব্যক্তি যখন কেবলমাত্র নবুওয়াতের দাবী এবং বনী ইসরাঈলকে মুক্তি দেবার দাবী উত্থাপন করেছিলেন আর এ ছাড়া অন্য কোন প্রকার রাজনৈতিক আলোচনাই করেননি তখন এ রাজনৈতিক বিপ্লবের আশংকা দেখা দিয়েছিল কেমন করে৷ 

এ প্রশ্নের জবাব হচ্ছে, মূসা আলাইহিস সালামের নবুওয়াতের দাবীর মধ্যেই এ তাৎপর্য নিহিত ছিল যে, তিনি আসলে গোটা জীবন ব্যবস্থাকে সামগ্রীক ভাবে পরিবর্তিত করতে চান। দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থাও নিশ্চিতভাবে এর অন্তর্ভুক্ত। কোন ব্যক্তির নিজেকে বিশ্ব প্রভু আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থাপন করার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি এ দাঁড়ায় যে, তিনি মানুষের কাছে নিজের প্রতি পূর্ণ আনুগত্যের দাবী জানাচ্ছে। কারণ রব্বুল আলামীনের প্রতিনিধি কখনো অন্যের আনুগত ও অন্যের প্রজা হয়ে থাকতে আসে না।বরং তিনি আসেন অন্যকে ও প্রজায় পরিণত করতে। কোন কাফেরের শাসনাধিকার মেনে নেয়া তার রিসালাতের মর্যাদার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এ কারণেই হযরত মূসার মুখ থেকে রিসালাতের দাবী শুনার সাথে সাথেই ফেরাউন ও তার রাষ্ট্র পরিচালকবর্গের মনে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক,  সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের আশংকা দেখা দেয়। তবে হযরত মূসা আলাইহিস সালামের সাথে যখন তার এক ভাই ছাড়া আর কোন সাহায্যকারী ছিল না এবং কেবল মাত্র একটি সর্পে রূপান্তরিত হবার ক্ষমতা সম্পন্ন লাঠি ও একটাই ঔজ্জ্বল্য বিকীরণকারী হাত ছাড়া তাঁর রসূল হিসেবে নিযুক্তির আর কোন প্রমাণ ছিল না তখন মিসরের রাজ দরবারে তাঁর এ দাবীকে এত গুরুত্ব দেয়া হলো কে৷ আমার মতে এর দুটি বড় বড় কারণ রয়েছে।এক, হযরত মূসা আলাইহিস সালামের ব্যক্তিত্বের ব্যাপারে ফেরাউন ও তার সভাসদরা পুরোপুরি অবগত ছিল। তার পবিত্র -পরিচ্ছন ও অনমনীয় চরিত্র। তাঁর অসাধারণ প্রতিভা ও যোগ্যতা এবং জন্মগত নেতৃত্ব ও শাসন ক্ষমতার কথা তাদের সবার জানা ছিল।তালমূদ ও ইউসীফূসের বর্ণনা যদি সঠিক হয়ে থাকে তাহলে বলতে হয়, হযরত মূসা (আ) এসব জন্মগত যোগ্যতা ছাড়াও ফেরাউনের গৃহে লাভ করেছিলেন বিভিন্ন জাগতিক বিদ্যা, দেশ শাসন ও সমর বিধ্যায় পারদর্শিতা। রাজপরিবারের সদস্যদের এসব শিক্ষা দেয়ার রেওয়াজ ছিল। তাছাড়া ফেরাউনের গৃহে যুবরাজ হিসেবে অবস্থান করার সময় আবিসিনিয়ার সামরিক অভিযানে গিয়েও তিনি নিজেকে একজন সেনাপতি প্রমাণ করতে সক্ষত হয়েছিলেন। তদুপরি রাজ প্রসাদে জীবন যাপন এবং ফেরাউনী রাষ্ট্র ব্যবস্থার আওতাধীনে নির্বাহী কর্তৃত্বের আসনে বসার কারণে যে সামান্য পরিমাণ দুর্বলতা তাঁর মধ্যে সৃস্টি হয়ে গিয়েছিল।তাও মাদায়েন এলাকায় আট দশ বছর মরুচারী জীবন যাপন ও ছাগল চরাবার কঠোর দায়িত্ব পালনের করণে দূর হয়ে গিয়েছিল। কাজেই আজ যিনি ফেরাউনের দরবারে দন্ডায়মান, তিনি আসলে এক বয়স্ক , বিচক্ষণ ও তেজোদ্দীপ্ত দরবেশে সম্রাট। তিনি নবুওয়াতের দাবীদার হিসেবে তার সমানে উপস্থিত। এরূপ ব্যক্তির কথাকে হাওয়াই ফানুস মনে করে উড়িয়ে দেয়া সম্ভব ছিল না। এর দ্বিতীয় কারণটি ছিল এই যে, লাঠি ও শ্বেতহস্তের মুজিযা দেখে ফেরাউন ও তার সভাসদরা অত্যন্ত অভিভূত, বিচলিত ও ভীত হয়ে পড়েছিল। তাদের প্রায় নিশ্চিত বিশ্বাস জন্মে গিয়েছিল যে, এ ব্যক্তির পেছনে নিশ্চয়ই কোন অতিপ্রাকৃতিক শক্তির সহায়তা রয়েছে।তাদের একদিকে হযরত মূসাকে যাদুকর বলা আবার অন্যদিকে তিনি তাদেরকে এ দেশের শাসন কর্তৃত্ব থেকে উৎখাত করতে চান বলে আশংকা প্রকাশ করা- এ দুটি বিষয় পরষ্পরের বিপরীত । আসলে নবুওয়াতের প্রথম প্রকাশ তাদেরকে কিংকর্তব্য বিমূঢ় করে দিয়েছিল।তাদের উল্লেখিত মনোভাব, বক্তব্য ও কার্যক্রম তারই প্রমাণ। সত্যই যদি তারা হযরত মূসাকে যাদুকর মনে করতো, তাহলে তিনি কোন রাজনৈতিক বিপ্লব ঘটাবেন এ আশংকা তারা কখনো করতো না। কারণ যাদুর জোরে আর যাই হোক- দুনিয়ার কোথাও কখনো কোন রাজনৈতিক বিপ্লব সাধিত হয়নি।)

(২০:৬৩) শেষ কিছু লোক বললো,  “এরা দু’জন তো নিছক যাদুকর, নিজেদের যাদুর জোরে তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে উৎখাত করা এবং তোমাদের আদর্শ জীবন যাপন পদ্ধতি ধ্বংস করে দেয়াই এদের উদ্দেশ্য৷৬৪) আজ নিজেদের সমস্ত কলাকৌশল একত্র করে নাও এবং একজোট হয়ে ময়দানে এসো৷  ব্যস, জেনে রাখো, আজকে যে প্রাধান্য লাভ করবে সেই জিতে গেছে”৷

 ইসলামের দাওয়াতকে রাষ্ট্রক্ষমতার দাবী বলেই মনে করা হবে : রাষ্ট্রক্ষমতা লাভের দাবী ছাড়া ইসলামের দাওয়াত ভিত্তিহীন :

(মু’মিনুন:২৪) তার সম্প্রদায়ের যেসব সরদার তার কথা মেনে নিতে অস্বীকার করলো তারা বলতে লাগলো, ‘‘এ ব্যক্তি আর কিছুই নয় কিন্তু তোমাদেরই মতো একজন মানুষ৷ এর লক্ষ্য হচ্ছে তোমাদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা৷  

এ দৃশ্য দেখে ফেরাউনের সম্প্রদায়ের প্রধানরা পরষ্পরকে বললোঃ নিশ্চয়ই এ ব্যক্তি ...তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বে-দখল করতে চায়৷-৭:১০৯-১১০,

তারা জববে বললো, “তুমি কি …যাতে যমীনে তোমাদের দুজনের প্রধান্য কায়েম হয়ে যায়, সে জন্য এসেছো?  তোমাদের কথা তো আমরা মেনে নিতে প্রস্তুত নই৷-১০:৭৮,

এ পৃথীবী তো আল্লাহরই৷ তিনি নিজের বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে চান তাকে এর উত্তরাধিকারী করেন৷ আর যারা তাঁকে ভয় করে কাজ করে চুড়ান্ত সাফল্য তাদের জন্যে নির্ধারিত|-৭:১২৮-১২৯,

(২৭ . এটাও সত্য বিরোধীদের একটি পুরাতন অস্ত্র । যে কেউ সংস্কারমূলক কাজের কর্মসূচী নিয়ে এগিয়ে আসার চেষ্টা করে সংগে সংগেই তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা হয় । বলা হয়, এর উদ্দেশ্য শুধু ক্ষমতা দখল করা । এ অভিযোগটিই ফেরাউন হযরত মূসা ও হারুনের বিরুদ্ধে এনেছিল । সে বলেছিল , তোমরা দেশে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করার জন্য এসেছো: ------------ এ অভিযোগ হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের বিরুদ্ধে আনা হয়েছিল । বলা হয়েছিলঃ এ ব্যক্তি ইহুদিদের বাদশাই হতে চায় । আর কুরাইশ সরদাররাও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কেও এ একই সন্দেহ পোষণ করতো। এ জন্য কয়েকবারই তারা তাঁর সাথে এভাবে সওদাবাজী করতে চেয়েছে যে, যদি তুমি কর্তৃত্ব লাভ করতে চাও, তাহলে ''বিরোধী'' দল ছেড়ে দিয়ে ''সরকারী'' দলে এসে যাও। তোমাকে আমরা বাদশাহ বানিয়ে নেবো। আসলে যারা সারা জীবন দুনিয়া ও তার বৈষয়িক স্বার্থ এবং তার গৌরব ও বাহ্যিক চাকচিক্য লাভ করার জন্য প্রচেষ্টা চালাতে থাকে তাদের পক্ষে একথা কল্পনা করা কঠিন বরং অসম্ভব হয় দাঁড়ায় যে, এ দুনিয়ায় এমন কোন মানুষ থাকতে পারে। তারা নিজেরাই যেহেতু নিজেদের প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তারের জন্য প্রতিদিন হৃদয়গ্রাহী শ্লোগান ও সংস্কারের মিথ্যা দাবী পেশ করতে থাকে তাই এ প্রতারণা ও জালিয়াতী তাদের দৃষ্টিতে হয় একবারেই একটি স্বাভাবিক জিনিস। তারা মনে করে সংস্কার কথাটা প্রতারণা ও জালিয়াতি ছাড়া কিছু নয়। সততা ও আন্তরিকতার সাথে কখনো সংস্কারমূলক কোন কাজ করা যেতে পারে না। যে ব্যক্তিই এ নামটি উচ্চারণ করে সে নিশ্চয়ই তাদেরই মত ধোঁকাবাজ। আর মজার ব্যাপার হচ্ছে সংস্কারকদের বিরুদ্ধে ''ক্ষমতা লোভের'' এ অপবাদ চিরকাল ক্ষমতাসীন লোকেরা ও তাদের তোষামোদী গোষ্ঠীই লাগিয়ে এসেছে। অর্থাৎ তারা যেন একথা বলতে চায় যে, তারা নিজেরা ও তাদের মহান প্রভুরা যে ক্ষমতা লাভ করেছে তা যেন তাদের জন্মগত অধিকার। তা অর্জন করার ও তা দখল করে রাখার জন্য তারা কোনক্রমে অভিযুক্ত হতে পারে না। তবে এ ''খাদ্যে'' যাদের জন্মগত অধিকার ছিল না এবং এখন যারা নিজেদের মধ্যে এর ''ক্ষুধা'' অনুভব করছে তারা চরমভাবে নিন্দাবাদ লাভের যোগ্য। (আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য ৩৬ টীকা দেখুন)। 

এখানে একথাটিও ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে যে, প্রচলিত জীবন ব্যবস্থার দোষ ত্রুটিগুলো দূর করার জন্য যে ব্যক্তিই অগ্রসর হবে এবং এর মোকাবিলায় সংস্কারমূলক মতাদর্শ ও ব্যবস্থা পেশ করবে তার জন্য অবশ্যই সংস্কারের পথে যেসব শক্তিই প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে তাদেরকে সরিয়ে দেবার জন্য প্রচেষ্টা চালানো এবং যেসব শক্তি সংস্কারমূলক মতাদর্শ ও ব্যবস্থাকে কার্যত প্রবর্তিত করতে পারবে তাদেরকে ক্ষমতাসীন করা অপিরহার্য হয়ে পড়বে। তাছাড়া এ ধরনের লোকের দাওয়াত যখনই সফল হবে, তার স্বাভাবিক পরিণতিতে সে জনগণের ইমাম ও নেতায় পরিণত হবে এবং নতুন ব্যবস্থায় ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের চাবিকাঠি হয় তার নিজের হাতে থাকবে নয়তো তার সমর্থক ও অনুসারীরা জনগণের ওপর কর্তৃত্বশীল হবে। দুনিয়ায় এমন কোন্‌ নবী ও সংস্কারক ছিলেন যিনি নিজের দাওয়াতকে কার্যত প্রতিষ্ঠিত করা যার প্রচেষ্টার উদ্দেশ্য ছিল না৷ আর এমন কে আছেন যার দাওয়াতের সাফল্য তাঁকে যথার্থই নেতায় পরিণত করেনি৷ তারপর এ বিষয়টি কি সত্যিই কারো বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উত্থাপন করার জন্য যথেষ্ট যে, সে আসলে ক্ষমতালোভী ছিল এবং তার আসল উদ্দেশ্য ছিল নেতৃত্ব লাভ এবং তা সে অর্জন করেছিল৷ অসৎ প্রকৃতির সত্যের দুশমনরা ছাড়া কেউ এ প্রশ্নের জবাবে হাঁ বলবে না। আসলে ক্ষমতার জন্যই ক্ষমতা কাংখিত হওয়া এবং কোন সৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতা কাংখিত হওয়ার মধ্যে রয়েছে যমীন আসমান ফারাক। এটা এত বড় ফারাক যেমন ফারাক আছে ডাক্তারের ছুরির ও ডাকাতের ছুরির মধ্যে। ডাক্তার ও ডাকাত উভয়ই ইচ্ছাকৃতভাবে মানুষের পেটে ছুরি চালায় এবং এর ফলে অর্থ লাভ করে যদি কোন ব্যক্তি শুধুমাত্র এ কারণে উভয়কে একাকার করে ফেলে তাহলে এটা হবে নিছক তার নিজেরই চিন্তা বা মনের ভুল। নয়তো উভয়ের নিয়ত, কর্মপদ্ধিত ও সামগ্রীক কর্মকাণ্ডের মধ্যে এত বেশী পার্থক্য থাকে যে, কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি ডাকাতকে ডাক্তার এবং ডাক্তারকে ডাকাত মনে করার মতো ভুল করতে পারে না।)

(মু’মিনুন:৩৪) এখন যদি তোমরা নিজেদেরই মতো একজন মানু্ষের আনুগত্য করো তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ ৩৬  

(৩৬ . কেউ কেউ ভুল বুঝেছেন যে, তারা নিজেদের মধ্যে এসব কথা বলাবলি করতো। না, বরং সাধারণ লোকদেরেক সম্বোধন করে তারা একথা বলতো। জাতির সরদাররা যখন আশংকা করলো, জনগণ নবীর পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্ব এবং হৃদয়গ্রাহী কথায় প্রভাবিত হয়ে যাবে এবং তাদের প্রভাবিত হয় যাবার পর আমাদের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব আর কাদের ওপর চলবে তখন তারা নিজেদের বক্তৃতার মাধ্যমে এসব কথা জনগনের সামনে তুলে ধরে তাদেরেক বিভ্রান্ত করতে থাকলো। ওপরে নূহের জাতির আলোচনায় যে কথা বলা হয়েছিল। এটি তারই দ্বিতীয় একটি দিক। তারা বলতো, আল্লাহর পক্ষ থেকে এসব নবুয়ত টবুয়ত কিছুই দেয়া হয়নি এটা হচ্ছে আসলে ক্ষমতা লিপ্সা, এরি মোহে অন্ধ হয়ে এ ব্যক্তি এসব আবোল তাবোল বলছে। তারা বলেঃ ভাইসব! একটু ভেবে দেখো, এ ব্যক্তি কোন্‌ ব্যাপারে তোমাদের থেকে আলাদা৷ তোমাদের শরীর যেমন রক্ত-মাংসের তারও তাই। তোমাদের ও তার মধ্যে কোন ফারাক নেই। তাহলে কেন সে বড় হবে এবং তোমরা তার ফরমানের আনুগত্য করবে৷ তাদের এসব ভাষণের মধ্য যেন একথা নির্বিবাদে স্বীকৃত ছিল যে, তারা যে তাদের নেতা এ নেতৃত্ব তো তাদের লাভ করারই কথা, তাদের শরীরের রক্ত মাংস ও তাদের পানাহারের ধরণ ধারণের প্রতি দৃষ্টি দেবার প্রশ্নই দেখা দেয় না, তাদের নেতৃত্ব আলোচ্য বিষয় নয়। কারণ এটা তো আপনা-আপনিই প্রতিষ্ঠিত এবং সর্বজন স্বীকৃত বিষয়। আসলে আলোচ্য বিষয় হচ্ছে এ নতুন নেতৃত্ব, যা এখন প্রতিষ্ঠা লাভের পথে। এভাবে তাদের কথাগুলো নূহের জাতির নেতাদের কথা থেকে কিছু বেশী ভিন্নতর ছিল না। তাদের মতে কোন নতুন আগমনকারীর মধ্যে যে ''ক্ষমতা লিপ্সা'' অনুভূত হয় অথবা তার মধ্যে এ লিপ্সা থাকার যে সন্দেহ পোষন করার যেতে পারে সেটিই হচ্ছে নিন্দনীয় ও অপবাদযোগ্য। আর নিজেদর ব্যাপারে তারা মনে করতো যে, কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা তাদের প্রকৃতিগত অধিকার, এ অধিকারের ক্ষেত্রে তারা সীমা ছাড়িয়ে গেলেও তা কোন ক্রমেই নিন্দনীয় ও আপত্তিকর হবার কথা নয়।)

দাওয়াতী কাজকে পাগলামী বলা হয়েছে :

(মু’মিনুন:২৫) কিছুই নয়, শুধুমাত্র এ লোকটিকে একটু পাগলামিতে পেয়ে বসেছে, কিছু দিন আরো দেখে নাও (হয়তো পাগলামি ছেড়ে যাবে)”৷

অনেক সময় আল্লাহ শাস্তি দেবার পর আবার তওবার তওফীকও দান করেন : ৯:২৭,  

দায়িত্ব :  (বিস্তারিত দেখুন :   ব > বোঝা )

আল্লাহ সামর্থ্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব কাউকে দেন না :৭:৪২

র > রাসুলগণের দায়িত্ব ।

ন > নবীগণের দায়িত্ব।

(নুর:৫৪) বলো, ‘‘ আল্লাহর অনুগত হও এবং রসূলের হুকুম মেনে চলো ৷ কিন্তু যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও ৷ তাহলো ভালোভাবে জেনে রাখো, রসূলের ওপর যে দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে সে জন্য রাসূল দায়ী এবং তোমাদের ওপর যে দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে সে জন্য তোমরাই দায়ী ৷ তাঁর আনুগত্য করলে তোমরা নিজেরাই সৎ পথ পেয়ে যাবে, অন্যথায় পরিষ্কার ও দ্ব্যর্থহীন হুকুম শুনিয়ে দেয়া ছাড়া রসূলের আর কোন দায়িত্ব নেই ৷’’

দিন সংখ্যা:

(৭:১৪২) মূসাকে আমি তিরিশ রাত-দিনের জন্য (সিনাই পর্বতের ওপর) ডাকলাম এবং পরে দশ দিন আরো বাড়িয়ে দিলাম৷ এভাবে তার রবের নির্ধারিত সময় পূর্ণ চল্লিশ দিন হয়ে গেলো  

দৃষ্টিশক্তি :

আরো দেখুন : দ > দেখা ।

(১২:৯৩) যাও, আমার  জামাটি নিয়ে যাও এবং এটি আমার পিতার চেহারার ওপর রেখো, তিনি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন৷ আর তোমাদের সমস্ত পরিবার পরিজনকে আমার কাছে নিয়ে এসো৷”  

দৃষ্টিবিভ্রম :

যদি অবিশ্বাসীদের জন্য আকাশের দরজা খুলে দেওয়া হতো, তবুও তারা বিশ্বাস স্থাপন করতো না :

(১৫:১৪) যদি আমি তাদের সামনে আকাশের কোনো দরজা খুলে দিতাম এবং তারা দিন দুপুরে তাতে আরোহণও করতে থাকতো৷১৫) তবুও তারা একথাই বলতো, আমাদের দৃষ্টি বিভ্রম হচ্ছে বরং আমাদের ওপর যাদু করা হয়েছে৷

যেদিন দৃষ্টি পাথর হয়ে যাবার উপক্রম হবে :

(নূর:৩৭) ... যেদিন হৃদয় বিপর্যস্ত ও দৃষ্টি পাথর হয়ে যাবার উপক্রম হবে ৷

জ্ঞানী  জ্ঞানহীনদের দৃষ্টি শক্তির পার্থক্য :

(২৫.ফুরকান:৪০) আর সেই জনপদের ওপর দিয়ে তো তারা যাতায়াত করেছে যার ওপর নিকৃষ্টতম বৃষ্টি বর্ষণ করা হয়েছিল৷ তারা কি তার অবস্থা দেখে থাকেনি? কিন্তু তারা মৃত্যুর পরের জীবনের আশাই করে না৷৫৪ 

(

৫৪. অর্থাৎ যেহেতু তারা পরকাল বিশ্বাস করে না তাই নিছক একজন দর্শক হিসেবে এ ধ্বংসাবশেষ প্রত্যক্ষ করেছে। এ থেকে কোন শিক্ষা নেয়নি। এ থেকে জানা যায় , পরকাল বিশ্বাসী ও পরকাল অবিশ্বাসীর দৃষ্টির মধ্যে রয়েছে কত বড় ফারাক । একজন নিছক বা কীর্তিকলাপ দেখে অথবা বড়জোড় ইতিহাস রচনা করে। কিন্তু অন্যজন ঐসব জিনিস থেকেই নৈতিক শিক্ষা গ্রহণ করে এবং জীবনের অন্তরালে প্রচ্ছন্ন প্রকৃত সত্যের নাগাল পায়।)

দৃষ্টান্ত :

দেখুন : উ > উপমা।

(২৯-আনকাবুত:৪৩) মানুষকে উপদেশ দেবার জন্য আমি এ দৃষ্টান্তগুলো দিয়েছি কিন্তু এগুলো একমাত্র তারাই বুঝে যারা জ্ঞান সম্পন্ন৷

দৃঢ়তা :

আরো দেখুন : ধ > ধৈয্য, ম > মুনাফিকদের চরিত্র ।

দ্বীন প্রতিষ্ঠাকারী  দাওয়াতদানকারীদের দৃঢ়তা প্রয়োজন :

(২৮-ক্বাছাছ : ৫৪) তারা এমন লোক যাদেরকে দু'বার পারিশ্রমিক দেয়া হবে এমন অবিচলতার প্রতিদানে যা তারা দেখিয়েছে৷৭৫ তারা ভালো দিয়ে মন্দের মোকাবিলা করেছে৭৬ 

৭৫. অর্থাৎ তাদের এ দ্বিগুণ প্রতিদান লাভ করার কারণ হচ্ছে এই যে, তারা জাতীয় , বংশীয় ,দলীয় ও স্বদেশের স্বার্থপ্রীতি মুক্ত থেকে দ্বীনের উপর অবিচল ছিল এবং নতুন নবীর আগমনে যে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাতে প্রমাণ করে দিয়েছিল যে, আসলে তারা ঈসা পূজারী নয় বরং আল্লাহর পূজারী ছিল। তারা ব্যক্তি ঈসার ভক্ত-অনুরক্ত ছিল না বরং ছিল "ইসলামের" আনুগত্যকারী। একারণে ঈসার পর যখন অন্য নবী ঈসার মত সেই একই ইসলাম নিয়ে এলেন তখন তারা দ্বিধাহীন চিত্তে তাঁর নেতৃত্বে ইসলামের পথ অবলম্বন করলো এবং যারা খৃষ্টবাদের উপর অবিচল ছিল তাদের পথ পরিহার করলো।

৭৬. অর্থাৎ তারা মন্দের জবাব মন্দ দিয়ে নয় বরং ভালো দিয়ে দেয়। মিথ্যার মোকাবিলায় মিথ্যা নয় বরং সত্য নিয়ে আসে। জুলুমকে জুলুম দিয়ে নয় বরং ইনসাফ দিয়ে প্রতিরোধ করে। দুষ্টামির মুখোমুখি দুষ্টামির সাহায্যে নয় বরং ভদ্রতার সাহায্যে হয়।

(বিস্তারিত দেখুন : আ > আহলি কিতাব > আহলিকিতাবগণ ইসলাম গ্রহণ করলে মূলত: তাদের আসল ও মূল ধর্মেই ফিরে আসল। )

নবী রাসুলগণ সীরাতল মুস্তাক্বীমের উপর মজবুত ছিলেন, এটা আল্লাহরই দেওয়া অনুগ্রহের ফল :

(২৮-ক্বাছাছ : ১০) ওদিকে মূসার মায়ের মন অস্থির হয়ে পড়েছিল৷ সে তার রহস্য প্রকাশ করে দিতো যদি আমি তার মন সুদৃঢ় না করে দিতাম, যাতে সে (আমার অংগীকারের প্রতি) বিশ্বাস স্থাপনকারীদের একজন হয়৷  

(১২:২৪) মহিলাটি তার দিকে এগিয়ে এলো এবং ইউসুফও তার দিকে এগিয়ে যেতো যদি না তার রবের জ্বলন্ত প্রমাণ প্রত্যক্ষ করতো৷  এমনটিই হলো, যাতে আমি তার থেকে অসৎবৃত্তি ও অশ্লীলতা দূর করে দিতে পারি৷ আসলে সে ছিল আমার নির্বাচিত বান্দাদের অন্তরভুক্ত৷ 

(১৭:৭৪) আর যদি (হে মুহাম্মদ !) আমি তোমাকে মজবুত না রাখতাম তাহলে তোমার পক্ষে তাদের দিকে কিছু না কিছু ঝুঁকে পড়া অসম্ভব ব্যাপার ছিলো না৷৭৫) কিন্তু যদি তুমি এমনটি করতে তাহলে আমি এ দুনিয়ায় তোমাকে দ্বিগুণ শাস্তির মজা টের পাইয়ে দিতাম এবং আখেরাতেও, তারপর আমার মুকাবিলায় তুমি কোনো সাহায্যকারী পেতে না৷

( ব্যাখ্যা :  এক, যদি তুমি সত্যকে সত্য জানার পর মিথ্যার সাথে কোন আপোস করে নিতে তাহলে বিক্ষুব্ধ জাতি তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যেতো ঠিকই কিন্তু আল্লাহর গযব তোমার ওপর নেমে পড়তো এবং তোমাকে দুনিয়ায় ও আখেরাত উভয় স্থানেই দ্বিগুণ সাজা দেয়া হতো । দুই মানুষ নবী হলেও আল্লাহর সাহায্য ও সুযোগ - সুবিধা তার সহযোগী না হলে শুধুমাত্র নিজের শক্তির ওপর নির্ভর করে সে মিথ্যার তুফানের মোকাবিলা করতে পারে না । শুধুমাত্র আল্লাহ প্রদত্ত ধৈর্য ও অবিচলতার সাহায্যেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্য ও ন্যায়ের ওপর পাহাড়ের মতো অটল থাকেন এবং বিপদের সয়লাব স্রোত তাঁকে একচুলও স্থানচ্যুত করতে পারেনি ।)

সামান্য দু: কষ্টে বা বিপদে আপদে পড়লেই যারা আল্লাহর পথ থেকে দুরে সরে যায়  :ইবাদতের ক্ষেত্রে যারা ইস্তেক্বামাত / দৃঢ়তা অবলম্বন করে না : তাদের দুনিয়া আখিরাত উভয়ই বরবাদ :

(নুর:৪৯) তবে যদি সত্য তাদের অনুকূল থাকে, তাহলে বড়ই বিনীত হয়ে রসূলের কাছে আসে ৷৫০) তাদের মনে কি (মুনাফিকীর ) রোগ আছে ? না তারা সন্দেহের শিকার হয়েছে ? না তারা ভয় করছে আল্লাহ ও তাঁর রসূল তাদের প্রতি যুলুম করবেন ? আসলে তারা নিজেরাই যালেম ৷

(হাজ্ব:১১) আর মানুষের মধ্যে এমনও কেউ আছে, যে এক কিনারায় দাঁড়িয়ে আল্লাহর বন্দেগী করে,১৫ যদি তাতে তার উপকার হয় তাহলে নিশ্চিন্ত হয়ে যায় আর যদি কোনো বিপদ আসে তাহলে পিছনের দিকে ফিরে যায় ১৬ তার দুনিয়াও গেলো এবং আখেরাতও৷ এ হচ্ছে সুস্পষ্ট ক্ষতি৷১৭ ১২) তারপর সে আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদেরকে ডাকে যারা তার না ক্ষতি করতে পারে, না উপকার, এ হচ্ছে ভ্রষ্টতার চূড়ান্ত৷১৩) সে তাদেরকে ডাকে যাদের ক্ষতি তাদের উপকারের চাইতে নিকটতর১৮ নিকৃষ্ট তার অভিভাবক এবং নিকৃষ্ট তার সহযোগী৷১৯ ১৪) (পক্ষান্তরে) যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে ২০ আল্লাহ তাদেরকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত হবে; আল্লাহ যা চান তাই করেন৷২১ 

(১৫. অর্থাৎ দীনী বৃত্তের মধ্যখানে নয় বরং তার এক প্রান্তে বা কিনারায় অথবা অন্য কথায় কুফর ও ইসলামের সীমান্তে দাঁড়িয়ে বন্দেগী করে। যেমন কোন দো-মনা ব্যক্তি কোন সেনাবাহিনীর এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকে। যদি দেখে সেনাদল বিজয়লাভ করছে তাহলে তাদের সাথে মিলে যায় আর যদি দেখে পরাজিত হচ্ছে তাহলে আস্তে আস্তে কেটে পড়ে।

১৬. এখানে এমন সব লোকের কথা বলা হয়েছে যাদের মানসিক গঠন অপরিপক্ক, আকীদা-বিশ্বাস নড়বড়ে এবং যারা প্রবৃত্তির পূজা করে। তারা ইসলাম গ্রহণ করে লাভের শর্তে। তাদের ঈমান এ শর্তের সাথে জড়িত হয় যে, তাদের আকাংখা পূর্ণ হতে হবে, সব ধরণের নিশ্চিন্ততা অর্জিত হতে হবে, আল্লাহর দীন তাদের কাছে কোন স্বার্থ ত্যাগ দাবী করতে পারবে না এবং দুনিয়াতে তাদের কোন ইচ্ছা ও আশা অপূর্ণ থাকতে পারবে না। এসব হলে তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট এবং তার দীন তাদের কাছে খুবই ভালো। কিন্তু যখনই কোন আপদ বলাই নেমে আসে অথবা আল্লাহর পথে কোন বিপদ, কষ্ট ও ক্ষতির শিকার হতে হয় কিংবা কোন আকাংখা পূর্ণ হয় না তখনই আর আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতা, রসূলের রিসালাত ও দীনের সত্যতা কোনটাই ওপরই তারা নিশ্চিন্ত থাকে না। এরপর তারা এমন প্রতিটি বেদীমূলে মাথা নোয়াতে উদ্যেগী হয় যেখানে তাদের লাভের আশা ও লোকসান থেকে বেঁচে যাবার সম্ভাবনা থাকে।

১৭. এখানে একটি অনেক বড় সত্যকে কয়েকটি কথায় প্রকাশ করে দেয়া হয়েছে। আসলে দো-মনা মুসলমানের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ হয়। কাফের যখন নিজের রবের মুখাপেক্ষী না হয়ে এবং পরকাল থেকে বেপরোয়া ও আল্লাহর আইনের অনুগত্য মুক্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে বস্তুগত স্বার্থের পেচনে দৌঁড়াতে থাকে তখন সে নিজের পরকাল হারালেও দুনিয়ার স্বার্থ কিছু না কিছু হাসিল করেই নেয়। আর মু'মিন যখন পূর্ণ ধৈর্য, অবিচলতা, দৃঢ় সংকল্প ও স্থৈর্য সহকারে আল্লাহর দীনের আনুগত্য করে তখন যদিও পার্থিব সাফল্য শেষ পর্যন্ত তার পদ-চুম্বন করেই থাকে, তবুও যদি দুনিয়া একেবারেই তার নাগালের বাইরে চলে যেতেই থাকে, আখেরাতে তার সাফল্য সুনিশ্চিত হয়। কিন্তু এ দো-মনা মুসলমান নিজের দুনিয়ার স্বার্থ লাভ করতে পারে না এবং আখেরাতেও তার সাফল্যের কোন সম্ভবনা থাকে না। তার মন ও মস্তিষ্কের কোন এক প্রকোষ্ঠ আল্লাহ ও আখেরাতের অস্তিত্বের যে ধারণা রয়েছে এবং ইসলামের সাথে সম্পর্ক তার মধ্যে নৈতিক সীমারেখা কিছু না কিছু মেনে চলার যে প্রবণতা সৃষ্টি করেছে, দুনিয়ার দিকে দৌড়াতে থাকলে এগুলো তার হাত টেনে ধরে। ফলে নিছক দুনিয়াবী ও বৈষয়িক স্বার্থ অন্বেষার জন্য যে ধরনের দৃঢ়তা ও একনিষ্ঠতার প্রয়োজন তা একজন কাফেরের মতো তার মধ্যে সৃষ্টি হয় না। আখেরাতের কথা চিন্তা করলে দুনিয়ার লাভ ও স্বার্থের লোভ, ক্ষতির ভয় এবং প্রবৃত্তির কামনা বাসনাকে বিধিনিষেধের শৃংখলে বেঁধে রাখার ব্যাপারে মানসিক অস্বীকৃতি সেদিকে যেতে দেয় না বরং বৈষয়িক স্বার্থ পূজা তার বিশ্বাস ও কর্মকে এমনভাবে বিকৃত করে দেয় যে, আখেরাতে তার শাস্তি থেকে নিষ্কৃতিলাভের সম্ভাবনা থাকে না। এভাবে সে দুনিয়া ও আখেরাত দুটোই হারায়।

১৮. প্রথম আয়াতে আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য মাবুদদের উপকার ও ক্ষতি করার ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করা হয়েছে। কারণ, মূলত ও যথার্থই তাদের উপকার ও ক্ষতি করার কোন ক্ষমতা নেই। দ্বিতীয় আয়াতে তাদের ক্ষতিকে উপকারের চেয়ে নিকটতর বলা হয়েছে। কারণ, তাদের কাছে দোয়া চেয়ে এবং অভাব ও প্রয়োজন পূরণের জন্য তাদের সামনে হাত পাতার মাধ্যমে সে নিজের ঈমান সংগে সংগেই ও নিশ্চিতভাবেই হারিয়ে বসে। তবে যে লাভের আশায় সে তাদেরকে ডেকেছিল তা অর্জিত হবার ব্যাপারে বলা যায়, প্রকৃত সত্যের কথা বাদ দিলেও প্রকাশ্য অবস্থার দৃষ্টিতে সে নিজেও একথা স্বীকার করবে যে, তা অর্জিত হওয়াটা নিশ্চিত নয় এবং বাস্তবে তা সংঘটিত হবার নিকটতর সম্ভাবনাও নেই । হতে পারে, আল্লাহ তাতে আরো বেশী পরিক্ষার সম্মুখীন করার জন্য কোন আস্তানায় তার মনোবাঞ্চনা পূর্ণ করেছেন। আবার এও হতে পারে যে, সে আস্তানায় সে নিজের ঈমানও বিকিয়ে দিয়ে এসেছে এবং মনোবাঞ্চনা পূর্ণ হয়নি। 

১৯. অর্থাৎ মানুষ বা শয়তান যে-ই হোক না কেন, যে তাকে এ পথে এনেছে সে নিকৃষ্টতম কর্মসম্পাদক ও অভিভাবক এবং নিকৃষ্টতম বন্ধু ও সাথী। 

২০. অর্থাৎ যাদের অবস্থা উল্লেখিত মতলবী, ধান্দাবাজ, দো-মনা ও দৃঢ় বিশ্বাসহীন মুসলমানের মতো নয় বরং যারা ঠান্ডা মাথায় খুব ভালোভাবে ভেবে চিন্তে আল্লাহ, রসূল ও আখেরাতকে মেনে নেবার ফায়সালা করে তারপর ভালো মন্দ যে কোন অবস্থার সম্মুখীন হতে হোক এবং বিপদের পাহাড় মাথায় ভেঙে পড়ুক বা বৃষ্টিধারার মতো পুরস্কার ঝড়ে পড়ুক সবাবস্থায় দৃঢ়পদে সত্যের পথে এগিয়ে চলে। 

২১. অর্থাৎ আল্লাহ ক্ষমতা অসীম। দুনিয়ায় বা আখেরাতে অথবা উভয় স্থানে তিনি যাকে যা চান দিয়ে দেন এবং যার থেকে যা চান চিনিয়ে নেন। তিনি দিতে চাইলে বাধা দেবার কেউ নেই। না দিতে চাইলে আদায় করার ও কেউ নেই।)

আনন্দের সময় আল্লাহকে স্মরন করোনা, অথচ দু:খে পতিত হলে আল্লাহকে দোষারোপ কর :

(৩০-রূম: ৫১) আর আমি যদি এমন একটি বাতাস পাঠাই যার প্রভাবে তারা দেখে তাদের শস্য পীতবর্ণ ধারণ করেছে   তাহলে তো তারা কুফরী করতে থাকে৷

(অর্থাৎ তখন তারা আল্লাহর কুৎসা গাইতে এবং তাকে দোষারোপ করতে থাকে এই বলে যে, আমাদের ওপর এ কেমন বিপদ চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ যখন আল্লাহ তাদের ওপর তাঁর অনুগ্রহধারা বর্ষণ করে চলছিলেন তখন তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার পরিবর্তে তাঁর অমর্যাদা করেছিল। এখানে আবার এ বিষয়বস্তুর প্রতি একটি সূক্ষ্ণ ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে, যখন আল্লাহর রসূল তাঁর পক্ষ থেকে রহমতের পয়গাম নিয়ে আসেন তখন লোকেরা তাঁর কথা মেনে নেয় না এবং সেই নিয়ামত প্রত্যাখ্যান করে। তাঁরপর যখন তাদের কুফরীর কারণে জালেম ও স্বৈরাচারী একনায়কদেরকে তাদের ওপর চাপিয়ে দেন এবং তারা জুলুম- নিপীড়নের যাঁতাকলে তাদেরকে পিষ্ট করতে এবং মানবতাঁর নিকুচি করতে থাকে তখন তারাই আল্লাহকে গালি দিতে থাকে এবং তিনি এ কেমন জুলুমে পরিপূর্ণ দুনিয়া তৈরি করেছেন বলে দোষারোপও করতে থাকে। )

সমগ্র জীবন ব্যবস্থার উপর  জিহাদের ময়দানে উভয় স্থানেই ইস্তেক্বামাত অবলম্বন করার সঠিক পদ্ধতি :

 (৩০-রূম: ৬০) কাজেই ( হে নবী!) সবর করো, অবশ্যই আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য  এবং যারা বিশ্বাস করে না তারা যেন কখনোই তোমাকে গুরুত্বহীন মনে না করে৷ ৮৫  

৮৫ . অর্থাৎ শত্রুরা যেন তোমাদের এতই দুর্বল না পায় যে, তাদের হৈ চৈ ও শোরগোলে তোমরা দমিত হবে অথবা তাদের মিথ্যাচার ও দোষারোপ করার অভিযান দেখে তোমরা ভীত হয়ে যাও কিংবা হাসি-তামাসা ও ঠাট্টা-বিদ্রুপবাণে বিদ্ধ হয়ে তোমরা হিম্মত হারিয়ে ফেলো অথবা তাদের হুমকি-ধমকি ও শক্তির প্রকাশে এবং জুলুম নির্যাতনে তোমরা ভীত হয়ে যাও কিংবা তাদের ফেলা লালসার টোপে তোমরা আটকা পড়ে যাও অথবা জাতীয় স্বার্থের নামে তারা তোমাদের কাছে যে আবেদন জানাচ্ছে তাঁর ভিত্তিতে তোমরা তাদের সাথে সমঝোতা করে নিতে উদ্যত হও। এর পরিবর্তে তারা তোমাকে নিজেদের উদ্দেশ্য সচেতনতায় এত বেশি সতর্ক এবং নিজেদের বিশ্বাস ও ঈমানে এত বেশি পাকাপোক্ত এবং এ সংকল্পে এত বেশি দৃঢ়চেতা এবং নিজেদের চরিত্রে এতবেশি মজবুত পাবে যে, কোন ভয়ে তোমাদের ভীত করা যাবে না, কোন মূল্যে তোমাদের কেনা যাবে না, কোন প্রতারণার জালে তোমাদের আবদ্ধ করা যাবে না, কোন ক্ষতি, কষ্ট বা বিপদে ফেলে তোমাদেরকে পথ থেকে সরানো যাবে না এবং দীনের ব্যাপারে কোন প্রকার আপোষ বা লেনদেনের কারবারও তোমাদের সাথে করা যেতে পারে না। " অবিশ্বাসীরা যেন তোমাকে গুরুত্বহীন মনে না করে"- আল্লাহর এ ছোট্ট একটি বাণীর আলংকারিক বাক্য-বিন্যাসের মধ্যেই এ সমস্ত বিষয়বস্তুলুকিয়ে রাখা হয়েছে। আল্লাহ তাঁর শেষ নবীকে যেমন শক্তিশালী ও গুরুত্ববহ দেখতে চাচ্ছিলেন তিনি ঠিক তেমনটি হতে পেরেছিলেন কিনা এখন ইতিহাসই তা প্রমাণ করবে। তাঁর সাথে যে ব্যক্তিই যে ময়দানে শক্তি পরীক্ষা করেছে সেই ময়দানেই সে হেরে গেছে। শেষ পর্যন্ত এ মহান ব্যক্তিত্ব এমন বিপ্লব সৃষ্টি করেন যার পথরোধ করার জন্য আরবের কাফের ও মুশরিক সমাজ তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ ও সমস্ত কলা-কৌশল প্রয়োগ করেও পুরোপুরি ব্যর্থ হয়ে গেছে। 

জিহাদের ময়দানে দৃঢ়তা :

(৩৩-আহযাব : ২৩)   ঈমানদারদের মধ্যে এমন লোক আছে যারা আল্লাহর সাথে কৃত অংগীকার পূর্ণ করে দেখালো৷ তাদের কেউ নিজের নজরানা পূর্ণ করেছে এবং কেউ সময় আসার প্রতীক্ষায় আছে৷ ৩৯ তারা তাদের নীতি পরিবর্তন করেনি৷  

৩৯. অর্থাৎ কেউ আল্লাহর পথে প্রাণ উৎসর্গ করে দিয়েছে এবং কেউ তাঁর দীনের খাতিরে নিজের খুনের নজরানা পেশ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে রয়েছে

দরজা :

জাহান্নামের দরজা :

(১৬:২৯) এখন যাও, জাহান্নামের দরযা দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ো, ওখানেই তোমাদের থাকতে হবে চিরকাল৷  সত্য বলতে কি, অহংকারীদের এ ঠিকানা বড়ই নিকৃষ্ট৷

আকাশের দরজা :

(১৫:১৪) যদি আমি তাদের সামনে আকাশের কোনো দরজা খুলে দিতাম এবং তারা দিন দুপুরে তাতে আরোহণও করতে থাকতো৷১৫) তবুও তারা একথাই বলতো, আমাদের দৃষ্টি বিভ্রম হচ্ছে বরং আমাদের ওপর যাদু করা হয়েছে৷

দেখা :

আরো দেখুন : দ > দৃষ্টিশক্তি ।

(১0:১০১) তাদেরকে বলো, “পৃথিবী ও আকাশে যা কিছু আছে চোখ মেলে দেখো”৷ (আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করার জন্য এগুলোই যথেষ্ট)। ১০২) এখন তারা এছাড়া আর কিসের প্রতীক্ষায় আছে যে, তাদের আগে চলে যাওয়া লোকেরা যে দুঃসময় দেখেছে তারাও তাই দেখবে? তাদেরকে বলো, “ঠিক আছে, অপেক্ষা করো৷ আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষা করছি”৷

(২০:৩৫) (হে আল্লাহ) তুমি সব সময় আমাদের অবস্থার পর্যবেক্ষক”৷

আল্লাহকে প্রকাশ্যে দেখতে চাওয়া এবং তার পরিণাম :

(১৭:৯২) অথবা তুমি আকাশ ভেংগে টুকরো টুকরো করে তোমার হুমকি অনুযায়ী আমাদের ওপর ফেলে দেবে৷ অথবা আল্লাহ ও ফেরেশতাদেরকে আমাদের সামনে নিয়ে আসবে৷

২:৫৫, (মুসা আ: এর উম্মতের),

২:৫৬, ২১০,

৪:১৫৩

৬:১০৩, ১৫৮,

আল্লাহ এবং ফেরেশতাদেরকে যেসব অবিশ্বাসীরা দেখতে চায়, তারা অহংকারী এবং তাদের পরিণতি :

(ফুরকান:২১) যারা আমার সামনে হাজির হবার আশা করে না তারা বলে, “ কেন আমাদের কাছে ফেরেশতা পাঠানো হয় না ? অথবা আমরা আমাদের রবকে দেখি না কেন ? বড়ই অহংকার করে তারা নিজেদের মনে মনে  এবং সীমা অতিক্রম করে গেছে তারা অবাধ্যতায়৷২২) যেদিন তারা ফেরেশতাদের দেখবে সেটা অপরাধীদের জন্য কোন সুসংবাদের দিন হবে না৷  চিৎকার করে উঠবে তারা, “হে আল্লাহ ! বাচাও বাচাও” ২৩) এবং তাদের সমস্ত কৃতকর্ম নিয়ে আমি ধূলোর মতো উড়িয়ে দেবো৷

(এ একই বিষয়বস্তু সূরা আন'আমের ৮ আয়াতে এবং সূরা হিজরের ৭-৮ এবং ৫১-৬৪ আয়াতে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। এছাড়াও সূরা বনী ইসরাঈলের ৯০ থেকে ৯৫ পর্যন্ত আয়াতেও কাফেরদের অনেকগুলো অদ্ভুত এ অভিনব দাবীর সাথে এগুলোর উল্লেখ করে তার জবাব দেয়া হয়েছে। ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা ইবরাহীম ৩৫ ও ৩৬ টীকা।)

জ্ঞানী  জ্ঞানহীনদের দৃষ্টি শক্তির পার্থক্য :

(২৫.ফুরকান:৪০) আর সেই জনপদের ওপর দিয়ে তো তারা যাতায়াত করেছে যার ওপর নিকৃষ্টতম বৃষ্টি বর্ষণ করা হয়েছিল৷ তারা কি তার অবস্থা দেখে থাকেনি? কিন্তু তারা মৃত্যুর পরের জীবনের আশাই করে না৷৫৪ 

(

৫৪. অর্থাৎ যেহেতু তারা পরকাল বিশ্বাস করে না তাই নিছক একজন দর্শক হিসেবে এ ধ্বংসাবশেষ প্রত্যক্ষ করেছে। এ থেকে কোন শিক্ষা নেয়নি। এ থেকে জানা যায় , পরকাল বিশ্বাসী ও পরকাল অবিশ্বাসীর দৃষ্টির মধ্যে রয়েছে কত বড় ফারাক । একজন নিছক বা কীর্তিকলাপ দেখে অথবা বড়জোড় ইতিহাস রচনা করে। কিন্তু অন্যজন ঐসব জিনিস থেকেই নৈতিক শিক্ষা গ্রহণ করে এবং জীবনের অন্তরালে প্রচ্ছন্ন প্রকৃত সত্যের নাগাল পায়।)

        

দেখার  শুনার শক্তি আল্লাহর কতৃত্বে রয়েছে :

তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, ……..এই শুনার  দেখার শক্তি কার কর্তৃত্বে আছে ?........... তারা নিশ্চয়ই বলবে, আল্লাহ৷ বলো, তবুও কি তোমরা (সত্যের বিরোধী পথে চলার ব্যাপারে৷)সতর্ক হচ্ছো না? -১০:৩১,

(মু’মিনুন:৭৮) তিনিই আল্লাহ যিনি তোমাদের শোনার ও দেখার শক্তি দিয়েছেন এবং চিন্তা করার জন্য অন্তঃকরণ দিয়েছেন, কিন্তু তোমরা কমই কৃতজ্ঞ হয়ে থাকো ৷

আল্লাহ সবকিছু শোনেন  দেখেন: এর প্রকৃত স্বরূপ কি ? :

(৩১-লোকমান: ২৮) তোমাদের সমগ্র মানবজাতিকে সৃষ্টি করা এবং তারপর পুনর্বার তাদেরকে জীবিত করা (তার জন্য) নিছক একটিমাত্র প্রাণী (সৃষ্টি করা এবং তাকে পুনরুজ্জীবিত ) করার মতই ব্যাপার৷    (৩১-লোকমান: ২৮)..... আসলে আল্লাহ সবকিছুই শোনেন ও দেখেন৷ ৪৯  

৪৯ . অর্থাৎ তিনি একই সময় সমগ্র বিশ্ব-জাহানের আওয়াজ আলাদা আলাদাভাবে শুনছেন এবং কোন আওয়াজ তার শ্রবণেন্দ্রিয়কে এমনভাবে দখল করে বসে না যার ফলে একটি শুনতে গিয়ে অন্যগুলো শুনতে না পারেন। অনুরূপভাবে তিনি একই সময় সমগ্র বিশ্ব-জাহানকে তার প্রত্যেকটি জিনিস ও ঘটনা সহকারে বিস্তারিত আকারেও দেখছেন এবং কোন জিনিস দেখার ব্যাপারে তার দর্শনেন্দ্রিয় এমনভাবে ব্যস্ত হয়ে পড়ে না যে, একটিকে দেখতে গিয়ে তিনি অন্যগুলো দেখতে অপারগ হয়ে পড়েন। মানবকুলের সৃষ্টি এবং তাদের পুনরুজ্জীবনের ব্যাপারটিও ঠিক এই একই পর্যায়ের । সৃষ্টির প্রারম্ভকাল থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত যতগুলো মানুষ জন্ম নিয়েছে এবং আগামীতে কিয়ামত পর্যন্ত জন্ম নেবে তাদের সবাইকে তিনি আবার মাত্র এক মুহূর্তেই সৃষ্টি করতে পারেন। তার সৃষ্টিক্ষমতা একটি মানুষের সৃষ্টিতে এমনভাবে লিপ্ত হয়ে পড়ে না যে, সে একই সময়ে তিনি অন্য মানুষদের সৃষ্টি করতে অপরাগ হয়ে পড়েন। একজন মানুষ সৃষ্টি করা বা কোটি কোটি মানুষ সৃষ্টি করা দু' টোই তার জন্য সমান।


আল্লাহ তার বান্দাদের সমস্ত কার্যকলাপ দেখছেন এবং তা রেকর্ড হচ্ছে:

 হে নবী! তুমি যে অবস্থায়ই থাকো এবং কুরআন থেকে যা কিছুই শুনাতে থাকো৷ আর হে লোকরা ,তোমরাও যা কিছু করো সে সবের মধ্যে আমি তোমাদের দেখতে থাকি৷-১০:৬১,

(ফুরকান:২০) ...তোমাদের রব সবকিছু দেখেন৷

সমস্ত কিছুই আল্লাহর দৃষ্টির আওতার মধ্যে আছে

আকাশ  পৃথিবীর মধ্যে কোন অণুপরিমাণ বস্তুও এমন নেই, এবং তার চেয়ে ছোট বা বড় কোন জিনিস  নেই, যা তোমাদের রবের দৃষ্টিতে অগোচরে আছে এবং যা একটি সুষ্পষ্ট কিতাবে লেখা নেই৷-১০:৬১,

হে মুহাম্মদ তোমাকে আল্লাহ দেখছেন :  (তুমি নিজেকে একা অথবা অসহায় ভেবোনা):

(২৬.শুআরা:২১৭) আর সেই পরাক্রান্ত ও দয়াময়ের উপর নির্ভর করো ২১৮) যিনি তোমাকে দেখতে থাকেন যখন তুমি ওঠো । ২২০) তিনি সব কিছুই শোনেন ও জানেন৷২১৯) এবং সিজ্‌দাকারীদের মধ্যে তোমার ওঠা-বসা ও নড়া-চড়ার প্রতি দৃষ্টি রাখেন৷

দেশ  / দেশপ্রেম

দেশের আয়তন :

(১৩:৪১) এরা কি দেখে না আমি এ ভূখণ্ডের ওপর এগিয়ে চলছি এবং এর গণ্ডী চতুরদিক থেকে সংকুচিত করে আনছি ?  আল্লাহ রাজত্ব করছেন, তাঁর সিদ্ধান্ত পুনরবিবেচনা করার কেউ নেই

নির্বাসন / দেশান্তর  / দেশত্যাগ:

বর্তমানে যেমন স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী  কোন ব্যক্তিকে জেলে পুরে রাখে তার সত্যের দাওয়াত থেকে বিরত রাখার জন্য তেমনি প্রাচীন কালের শাসক গোস্ঠী দেশ থেকে সত্যের দাওয়াত প্রচারকারীদের দেশান্তর করে দিত বা দেশান্তরের ভয় দেখাত, দেশত্যাগে বাধ্য করতো :

(২৭.নমল:৫৬) কিন্তু সে জাতির এ ছাড়া আর কোন জবাব ছিলনা যে, তারা বলল “লূতের পরিবার বর্গকে তাদের নিজেদের জনপদ থেকে বের করে দাও, এরা বড় পাক পবিত্র সাজতে চাচ্ছে”৷

 (১৪:১৩) শেষ পর্যন্ত অস্বীকারকারীরা তাদের রসূলদের বলে দিল, “হয় তোমাদের ফিরে আসতে হবে আমাদের মিল্লাতে আর নয়তো আমরা তোমাদের বের করে দেবো আমাদের দেশ থেকে৷

দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ, কিন্তু দেশপ্রেমের সীমা কতটুকু ?

দেশ  জাতির ইবাদত বনাম আল্লাহর ইবাদত :

(২৯-আনকাবুত:৫৬) হে আমার বান্দারা, যারা ঈমান এনেছো! আমার যমীন প্রশস্ত , কাজেই তোমরা আমারই বন্দেগী করো৷ ৯৪  

৯৪ . এখানে হিজরতের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, যদি মক্কায় আল্লাহর বন্দেগী করা কঠিন হয়ে থাকে, তাহলে দেশ ছেড়ে অন্যত্র চলে যাও। আল্লাহর পৃথিবী সংকীর্ণ নয়। যেখানেই তোমরা আল্লাহর বান্দা হিসেবে বসবাস করতে পারো সেখানে চলে যাও। তোমাদের জাতি ও দেশের নয় বরং আল্লাহর বন্দেগী করা উচিত। এ থেকে জানা যায় , আসল জিনিস জাতি ও দেশ নয় বরং আল্লাহর বন্দেগী। যদি কখনো জাতি ও দেশ প্রেমের দাবী এবং আল্লাহর বন্দেগীর দাবীর মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে তাহলে সেটিই হয় মু'মিনের ঈমানের পরীক্ষার সময়। যে সাচ্চা মু'মিন হবে, সে আল্লাহর বন্দেগী করবে এবং দেশ ও জাতিকে পরিত্যাগ করবে। আর যে মিথ্যা ঈমানের দাবীদার হবে, সে ঈমান পরিত্যাগ করবে এবং নিজের দেশ ও জাতিকে আঁকড়ে ধরবে। এ আয়াতটি এ ব্যাপারে একেবারে সুস্পষ্ট যে, একজন সত্যিকার আল্লাহর অনুগত ব্যক্তি দেশ ও জাতি প্রেমিক হতে পারে কিন্তু দেশ ও জাতি পূজারী হতে পারে না। তার কাছে আল্লাহর বন্দেগী হয় সব জিনিসের চেয়ে প্রিয় এবং দুনিয়ার সমস্ত জিনিসকে সে এর কাছে বিকিয়ে দেয় কিন্তু দুনিয়ার কোন জিনিসের কাছে একে বিকিয়ে দেয় না।

দেয়াল :

ভগ্ন দেয়াল :

(১৮:৭৭) তারপর তারা সামনের দিকে চললো৷ চলতে চলতে একটি জনবসতিতে প্রবেশ করলো এবং সেখানে লোকদের কাছে খাবার চাইলো৷ কিন্তু তারা তাদের দুজনের মেহমানদারী করতে অস্বীকৃতি জানালো৷ সেখানে তারা একটি দেয়াল দেখলো, সেটি পড়ে যাবার উপক্রম হয়েছিল৷ সে দেয়ালটি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে দিল৷ মূসা বললো, “আপনি চাইলেএ কাজের পারিশ্রমিক নিতে পারতেন৷ ... (১৮:৮২) এবার থাকে সেই দেয়ালের ব্যাপারটি৷ সেটি হচ্ছে এ শহরে অবস্থানকারী দুটি এতীম বালকের৷ এ দেয়ালের নীচে তাদের জন্য সম্পদ লুকানো আছে এবং তাদের পিতা ছিলেন একজন সৎলোক৷ তাই তোমার রব চাইলেন এ কিশোর দুটি প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে যাক এবং তারা নিজেদের গুপ্তধন বের করে নিক৷ তোমার রবের দয়ার কারণে এটা করা হয়েছে৷ নিজ ক্ষমতা ও ইখতিয়ারে আমি এটা করিনি৷ তুমি যেসব ব্যাপারে সবর করতে পারোনি এ হচ্ছে তার ব্যাখ্যা৷

দেয়াল / প্রাচীর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে, ইয়াজুজ মাজুজ যেন সভ্য দুনিয়ায় না আসতে পারে :

বিস্তারিত দেখুন : ই > ইয়াজুজ মাজুজ

গলিত লোহা  তামার দ্বারা নির্মিত প্রাচীর :

(১৮:৯৬) আমাকে লোহার পাত এনে দাও৷” তারপর যখন দু পাহাড়ের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গা সে পূর্ণ করে দিল তখন লোকদের বললো, এবার আগুন জ্বালাও৷ এমনকি যখন এ (অগ্নি প্রাচীর) পুরোপুরি আগুনের মতো লাল হয়ে গেলো তখন সে বললো, “আনো, এবার আমি গলিত তামা এর উপর ঢেলে দেবো৷” ৯৭) (এ প্রাচীর এমন ছিল যে) ইয়াজুজ ও মাজুজ এটা অতিক্রম করেও আসতে পারতো না এবং এর গায়ে সুড়ংগ কাটাও তাদের জন্য আরো কঠিন ছিল৷ 

 বিস্তারিত দেখুন : ই > ইয়াজুজ মাজুজ

দেরী :

অপরাধীদেরকে / কাফিরদিগকে শাস্তি দিতে আল্লাহর দেরী হওয়ার কারণ কি ?

বিস্তারিত দেখুন : অ > অবকাশ ।

দেহ :

(২১:৮) সেই রসূলদেরকে আমি এমন দেহবিশিষ্ট করিনি যে, তারা খেতো না এবং তারা চিরজীবিও ছিল না৷ 

দোয়া / দোওয়া  :  আরো দেখুন:   >  ডাকা,  চ  >  চাওয়া ,

আারো দেখুন : ড > ডাকা > আল্লাহকে ডাকা।

(২৯-আনকাবুত:১৭).....আল্লাহর কাছে রিযিক চাও, তাঁরই বন্দেগী করো এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, তারই দিকে তোমাদের ফিরে যেতে হবে৷

দোয়া প্রার্থনার প্রয়োজনীয়তা :

(২৫.ফুরকান:৭৭) হে মুহাম্মদ! লোকদের বলো, “আমার রবের তোমাদের কি প্রয়োজন, যদি তোমারা তাকে না ডাকো৷৯৬ এখন যে তোমরা মিথ্যা আরোপ করেছো, শিগগীর এমন শাস্তি পাবে যে, তার হাত থেকে নিস্তার পাওয়া সম্ভব হবে না৷”  

(৯৬. অর্থাৎ যদি তোমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা না করো , তাঁর ইবাদাত না করো এবং নিজেদের প্রয়োজন ও অভাব পূরণের জন্য তাঁকে সাহায্যের জন্য না ডাকো , তাহলে আল্লাহর দৃষ্টিতে তোমাদের কোন গুরুত্বই নেই। এ কারণে তিনি নগণ্য তৃণখণ্ডের সমানও তোমাদের পরোয়া করবেন না। নিছক সৃষ্টি হবার দিক দিয়ে তোমাদের ও পাথরের মধ্যে কোন ফারাক নেই। আল্লাহর কোন প্রয়োজন পূরণ করতে হলে তোমাদের উপর নির্ভর করতে হয় না। তোমরা বন্দেগী না করলে তাঁর কোন কাজ ব্যাহত হবে না। তোমাদের তাঁর সামনে হাত পাতা এবং তাঁর কাছে প্রার্থনা করাই তাঁর দৃষ্টিকে তোমাদের প্রতি আকৃষ্ট করে। এ কাজ না করলে তোমরা নিক্ষিপ্ত হবে ময়লা আবর্জনার মতো।)

আল্লাহ দোয়া কবুল করেন, আল্লাহকে ডাকলে আল্লাহ শুনেন :

 আল্লাহ দোয়া কবুল করেন, আল্লাহকে ডাকলে আল্লাহ শুনেন : ১:১৮৬,

 (২১:৮৪) আমি তার দোয়া কবুল করেছিলাম, তার যে কষ্ট ছিল তার দূর করে দিয়েছিলাম। (বিস্তারিত দেখুন : ন > নবীদের জীবনের ঘটনাবলী > হযরত আইয়ুব আ: । )

তখন মূসা বললোঃ হে আমার রব! আমাকে ও আমার ভাইকে ক্ষমা করো এবং তোমার অনুগ্রহের মধ্যে আমাদের দাখিল করে নাও, তুমি সবচাইতে বেশী অনুগ্রহকারী-৭:১৫১

তুমিই তো আমাদের অভিভাবক৷ কাজেই আমাদের মাফ করে দাও এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করো৷ ক্ষমাশীলদের মধ্যে তুমিই শ্রেষ্ঠ-আর আমাদের জন্য এ দুনিয়ার কল্যাণ লিখে দাও এবং আখেরাতেরও , আমরা তোমার দিকে ফিরেছি-৭:১৫৫-১৫৭

ঈমানদারদের পরিচয় : তারা আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ডাকে না, আর কারো নিকট কিছু চায়  না:

(২৫.ফুরকান:৬৮) তারা আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্যকে ডাকে না..

আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ডেকোনা, কারণ ডাকে সাড়া দেবার ক্ষমতা তাদের নেই: এবং আল্লাহর মালিকানায় তাদের কোন অংশীদারিত্বও  নেই :

(৩৪-সাবা: ২২) (হে নবী! এ মুশরিকদেরকে) বল, আল্লাহকে বাদ দিয়ে যেসব মাবুদকে তোমরা নিজেদের উপাস্য মনে করে নিয়েছ তাদেরকে ডেকে দেখ৷ তারা না আকাশে কোন অনু পরিমাণ জিনিসের মালিক, না পৃথিবীতে৷ আকাশ ও পৃথিবীর মালিকানায় তারা শরীকও নয়৷ তাদের কেউ আল্লাহর সাহায্যকারীও নয়৷

আরো বিস্তারিত দেখুন : কারণ : কারণ : দোয়ায় সাড়া দেয়ার ক্ষমতা শরীকদের নেই

বিনয়ী লোকদের জন্য সুসংবাদ: আর বিনয়ী লোকদের পরিচয় হচ্ছে : আল্লাহর নাম স্মরণ করা হলে তাদের হৃদয় কেঁপে ওঠে:

(হাজ্ব:৩৪) ....আর হে নবী! সুসংবাদ দিয়ে দাও বিনয়ের নীতি অবলম্বন কারীদেরকে, (হাজ্ব:৩৫) যাদের অবস্থা এই যে, আল্লাহর নাম স্মরণ করা হলে তাদের হৃদয় কেঁপে ওঠে, যে বিপদই তাদের ওপর আসে তার ওপর তারা সবর করে, নামায কায়েম করে এবং যাকিছু রিযিক তাদেরকে আমি দিয়েছি তা থেকে খরচ করে৷

(বিস্তারিত: অ  > অন্তর )

তোমরা যেসব মিথ্যা অভিযোগ তৈরী করছো তার বিরুদ্ধে দয়াময় আল্লাহই সাহায্যকারী :

﴿قَالَ رَبِّ احْكُم بِالْحَقِّ ۗ وَرَبُّنَا الرَّحْمَٰنُ الْمُسْتَعَانُ عَلَىٰ مَا تَصِفُونَ﴾

(২১:১১২) (শেষে) রসূল বললো : হে আমার রব! তুমি ন্যায়ের সাথে ফায়সালা করে দাও৷ আর হে লোকেরা ! তোমরা যেসব কথা তৈরি করছো তার মুকাবিলায় আমাদের দয়াময় রবই আমাদের সাহায্যকারী সহায়ক৷” 

রিয়াদুস সালেহীন : আত্মসমালোচনা অধ্যায় ::

বই ১ :: হাদিস ৬২

হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বর্ণনা করেনঃ আমি একদিন রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে (কোন জানোয়ারের পিঠে) বসা ছিলাম। তখন তিনি আমায় বললেনঃ হে বৎস! আমি তোমায় কয়েকটি (গুরুত্বপূর্ণ) কথা শিখিয়ে দিচ্ছি। (খুব মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করো)। আল্লাহর নির্দেশাবলীর হেফাজত ও অনুসরণ করো, আল্লাহও তোমায় হেফাজত করবেন। আল্লাহর হক (সঠিকভাবে) আদায় করো। তাহলে তাঁকেও তোমার সঙ্গে পাবে। কখনও কোন জিনিস চাইতে হলে আল্লাহর কাছেই চাইবে। কোনো সাহায্যের প্রয়োজন হলেও আল্লাহরই কাছে চাইবে। জেনে রাখো, সমগ্র সৃষ্টিকূল এক সঙ্গে মিলেও যদি তোমার উপকার করতে চায় তবে আল্লাহ তোমার ভাগ্যে যা নির্ধারণ করে রেখেছেন, তারা তার বেশি কোনো উপকার করতে পারবে না। পক্ষান্তরে তারা যদি এক সঙ্গে মিলে তোমার কোন ক্ষতি (বা অপকার) করতে চায়, তবে আল্লাহ তোমার জন্য যা নির্ধারণ করে রেখেছেন, তার বেশি কোনো অপকার তারা করতে পারবে না। (জেনে রাখো কলম তুলে রাখা হয়েছে এবং কিতাবাদি শুকিয়ে গেছে। অর্থ্যাৎ তকদীর চুড়ান্তভাবে নির্ধারিত হয়ে গিয়েছে। তাতে আর কোনো পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের অবকাশ নেই।)

নবীদের দোওয়া কবুল হয় :  আরো দেখুন : দ > দোয়া > আল্লাহ দোয়া কবুল করেন।

(২০:৩৬) (আল্লাহ ) বললেন, “হে মূসা! তুমি যা চেয়েছো তা তোমাকে দেওয়া হলো৷৩৭) আমি আর একবার তোমার প্রতি অনুগ্রহ করলাম৷

(২১:৯০) ....সৎকাজে আপ্রাণ চেষ্টা করতো, আমাকে ডাকতো আশা ও ভীতি সহকারে এবং আমার সামনে ছিল অবনত হয়ে৷

আল্লাহর কাছে চেয়ে কেউ বিফল হয় না, যদি সে ঈমানদার হয় :

(১৯:৪) সে বললো, “হে আমার রব! আমার হাড়গুলো পর্যন্ত নরম হয়ে গেছে, মাথা বার্ধক্যে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে; হে পরোয়ারদিগার! আমি কখনো তোমার কাছে দোয়া চেয়ে ব্যর্থ হইনি৷

(১৯:৪৮) আমি আপনাদেরকে ত্যাগ করছি এবং আপনারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে ডাকেন তাদেরকেও, আমি তো আমার রবকেই ডাকবো৷ আশা করি আমি নিজের রবকে ডেকে ব্যর্থ হবো না”৷

দোয়া কবুল হওয়ার শর্তাবলী :

১। আল্লাহর বন্দেগী কর  ২। আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো :

(২৯-আনকাবুত:১৭).....আল্লাহর কাছে রিযিক চাও, তাঁরই বন্দেগী করো এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, তারই দিকে তোমাদের ফিরে যেতে হবে৷

দোয়া করার মাধ্যমে কি নবুওয়াত লাভ করা যায় ?

উত্তর : না, যায়না, তবে একজন নবীর দোয়ায় আরেকজনকে সহযোগী হিসেবে নবুওয়াত দান করা হয়েছে : তিনি হযরত হারুন :

বিস্তারিত দেখুন : ন > নবুওয়াত > দোয়া করার মাধ্যমে কি নবুওয়াত লাভ করা যায় ?

আল কুরআনে বর্ণিত দোয়াসমূহ :

২:৬৭, ১২৬,১২৭, ১২৮, ১২৯, ২০১, ২৫০, ২৮৬,

৩:৮, ১৬, ৩৮, ৫৩, ১৪৭, ১৯১, ১৯২,

৫:৮৩, ১১৪,

৬:৬৩, ৬৪,

৭:২৩,

(২৮-ক্বাছাছ : ২৪) মূসা একটি ছায়ায় গিয়ে বসলো এবং বললো, "হে আমার প্রতিপালক! যে কল্যাণই তুমি আমার প্রতি নাযিল করবে আমি তার মুখাপেক্ষী৷"  

(২১:১১২) (শেষে) রসূল বললো : হে আমার রব! তুমি ন্যায়ের সাথে ফায়সালা করে দাও৷ আর হে লোকেরা ! তোমরা যেসব কথা তৈরি করছো তার মুকাবিলায় আমাদের দয়াময় রবই আমাদের সাহায্যকারী সহায়ক৷” 

(মুমিনুন:৯৩) হে মুহাম্মাদ (সা) ! দোয়া করো, ‘‘হে আমার রব! এদেরকে যে আযাবের হুমকি দেয়া হচ্ছে, তুমি যদি আমার উপস্থিতিতে সে আযাব আনো  ৯৪) তাহলে হে পরওয়ারদিগার ! আমাকে এ জালেমদের অন্তরভুক্ত করো না ৷

(২৫.ফুরকান:৬৫) তারা দোয়া করতে থাকেঃ “হে আমাদের রব ! জাহান্নামের আযাব থেকে আমাদের বাঁচাও, তার আযাব তো সর্বনাশা৷৬৬) আশ্রয়স্থল ও আবাস হি্সেবে তা বড়ই নিকৃষ্ট জায়গা৷”

পরিবার পরিজনদের জন্য দোয়া :

(২৫.ফুরকান:৭৪) তারা প্রার্থনা করে থাকে, “ হে আমাদের রব ! আমাদের নিজেদের স্ত্রীদের ও নিজেদের সন্তানদেরকে নয়ন শীতলকারী বানাও এবং আমাদের করে দাও মুত্তাকীদের ইমাম৷”

লূত : এর দোয়া : সমাজের অসৎ নিয়ম নীতি  অভ্যাসের ছোয়া থেকে বেঁচে থাকার দোয়া :

(২৬.শুআরা:১৬৯) হে আমার রব! আমাকে ও আমার পরিবার পরিজন কে এদের কুকর্ম থেকে মুক্তি দাও৷

(এর এ অর্থও হতে পারে, তাদের খারাপ কাজের পরিণাম থেকে আমাদের বাঁচাও। আবার এ অর্থও হতে পারে, এই অসৎ লোকদের জনপদে যেসব নৈতিক আবর্জনা ছড়িয়ে রয়েছে আমাদের সন্তান-সন্ততিদের গায়ে যেন সেগুলোর স্পর্শ লেগে না যায়। ঈমানদারদের নিজেদের বংশধররা যেন নোংরা পরিবেশে প্রভাবিত না হয়ে পড়ে। কাজেই হে আমাদের রব! এ কলুষিত সমাজে জীবন যাপন করার ফলে আমরা যে সার্বক্ষণিক আযাবে লিপ্ত হচ্ছি তার হাত থেকে আমাদের বাঁচাও।)

নতুন স্থানে গমন / বিদেশ ভ্রমন / অবতরণের সময়ের দোয়া :

(মু’মিনুন:২৯) আর বলো,হে পরওয়ারদিগার ! আমাকে নামিয়ে দাও বরকতপূর্ণ স্থানে এবং তুমি সর্বোত্তম স্থান দানকারী৷’’ ৩১  

(৩১ . নামিয়ে দেয়া মানে নিছক দেয়া নয় বরং আরবী প্রবাদ অনুযায়ী এর মধ্যে ''আপ্যায়নের'' অর্থও রয়েছে। অন্য কথায় এ দোয়ার অর্থ হচ্ছে, হে আল্লাহ! এখন আমরা তোমার মেহমান এবং তুমিই আমাদের আপ্যায়নকারী মেজবান।)

২। মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের বিরুদ্ধে দোয়া :

(মুমিনুন:২৬) নূহ বললো, ‘‘হে পরওয়ারদিগার ! এরা যে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করছে এ জন্য তুমিই আমাকে সাহায্য করো৷’’ ২৮  

(২৮ . অর্থাৎ আমার প্রতি এভাবে মিথ্যা আরোপ করার প্রতিশোধ নাও। যেমন অন্যত্র বলা হয়েছেঃ 

''কাজেই নূহ নিজের রবকে ডেকে বললোঃ আমাকে দমিত করা হয়েছে, এমন তুমিই এর বদ্‌লা নাও।'' (আল কামার, ১০) 

সূরা নূহে বলা হয়েছেঃ 

''আর নূহ বললোঃ হে আমার পরওয়ারদিগার! এ পৃথিবীতে কাফেরদের মধ্য থেকে একজন অধিবাসীকেও ছেড়ে দিও না। যদি তুমি তাদেরকে থাকতে দাও তাহলে তারা তোমার বান্দাদেরকে গোমরাহ করে দেবে এবং তাদের বংশ থেকে কেবল দূষ্কৃতকারী ও সত্য অস্বীকারকারীরই জন্ম হবে।''´(২৭ আয়াত) )

দাওয়াতদানকারী  জিহাদকারীদের দোয়া :

তোমরা যেসব মিথ্যা অভিযোগ তৈরী করছো তার বিরুদ্ধে দয়াময় আল্লাহই আমার সাহায্যকারী :

﴿قَالَ رَبِّ احْكُم بِالْحَقِّ ۗ وَرَبُّنَا الرَّحْمَٰنُ الْمُسْتَعَانُ عَلَىٰ مَا تَصِفُونَ﴾

(২১:১১২) (শেষে) রসূল বললো : হে আমার রব! তুমি ন্যায়ের সাথে ফায়সালা করে দাও৷ আর হে লোকেরা ! তোমরা যেসব কথা তৈরি করছো তার মুকাবিলায় আমাদের দয়াময় রবই আমাদের সাহায্যকারী সহায়ক৷” 

ইসলাম বিরোধীদের বিপক্ষে নবীদের দোয়া সমূহ :

(২৯-আনকাবুত:৩০) লূত বললো , “ হে আমার রব! এ বিপর্যয় সৃষ্টিকারী লোকদের বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য করো৷”  

(২১:১১২) (শেষে) রসূল বললো : হে আমার রব! তুমি ন্যায়ের সাথে ফায়সালা করে দাও৷ আর হে লোকেরা ! তোমরা যেসব কথা তৈরি করছো তার মুকাবিলায় আমাদের দয়াময় রবই আমাদের সাহায্যকারী সহায়ক৷” 

আল্লাহর কাছে দোয়া করার / কিছু চাওয়ার পদ্ধতি :

১। আল্লাহকে ডাকো ভীতি  আশা সহকারে :

(৭:৫৫) তোমাদের রবকে ডাকো কান্নাজড়িত কণ্ঠে ও চুপে চুপে ৷ অবশ্যি তিনি সীমালংঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না৷

আল্লাহকেই ডাকো ভীতি ও আশা সহকারে- ৭:৫৬,    

হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সহযোগি হও :৯:১১৯,

(২১:৯০) কাজেই আমি তার দোয়া কবুল করেছিলাম ............. তারা সৎকাজে  আপ্রাণ চেষ্টা করতো, আমাকে ডাকতো আশা ও ভীতি সহকারে এবং আমার সামনে ছিল অবনত হয়ে৷

(৭:২০৫) হে নবী!তোমার রবকে স্মারণ করো সকাল-সাঁঝে মনে মনে কান্নাজড়িত স্বরে ও ভীতি বিহ্বল চিত্তে এবং অনুচ্চ কণ্ঠে৷

২। সৎকাজ করতে থাকো, সৎকাজকে ওসীলা বানাও :

(২১:৯০) কাজেই আমি তার দোয়া কবুল করেছিলাম ............. তারা সৎকাজে  আপ্রাণ চেষ্টা করতো, আমাকে ডাকতো আশা ও ভীতি সহকারে এবং আমার সামনে ছিল অবনত হয়ে৷

(২১:৮৬) এবং এদেরকে আমি নিজের অনুগ্রহের মধ্যে প্রবেশ করিয়েছিলাম, তারা ছিল সৎকর্মশীল৷ 

(৭:৫৬)......নিশ্চিতভাবেই আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীল লোকদের নিকবর্তী৷

৩। নিজের গুণাহ স্বীকার করে ক্ষমা চাও, অসৎ পথ থেকে ফিরে আসো :

(২১:৮৭) ...শেষে সে অন্ধকারের মধ্য থেকে ডেকে উঠলো :  “তুমি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই, পবিত্র তোমার সত্তা, অবশ্যই আমি অপরাধ করেছি৷ ৮৮) তখন আমি তার দোয়া কবুল করেছিলাম এবং দুঃখ থেকে তাকে মুক্তি দিয়েছিলাম, আর এভাবেই আমি মুমিনদেরকে উদ্ধার করে থাকি৷ 

(৩:১৩৫) আর যারা কখনো কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে অথবা কোন গোনাহের কাজ করে নিজেদের ওপর জুলুম করে বসলে আবার সংগে সংগে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়ে তাঁর কাছে নিজেদের গোনাহ খাতার জন্য মাফ চায় – কারণ আল্লাহ ছাড়া আর কে গোনাহ মাফ করতে পারেন – এবং জেনে বুঝে নিজেদের কৃতকর্মের ওপর জোর দেয় না, ১৩৬) এ ধরনের লোকদের যে প্রতিদান তাদের রবের কাছে আছে তা হচ্ছে এই যে, তিনি তাদের মাফ করে দেবেন এবং এমন বাগীচায় তাদের প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হবে, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে৷ সৎকাজ যারা করে তাদের জন্য কেমন চমৎকার প্রতিদান ! 

৪। আল্লাহর কাছে নতযানু হয়ে যাও : আল্লাহর গুণাবলী বর্ণনা করে দোয়া কর :

(২১:৮৯) আর যাকারিয়ার কথা (স্মরণ করো), যখন সে তার রবকে ডেকে বলেছিল : “হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একাকী ছেড়ে দিয়ো না এবং সবচেয়ে ভালো উত্তরাধিকারী তো তুমিই৷” 

(২১:৮৩) ....স্মরণ করো, যখন সে ( আইয়ুব আ: )  তার রবকে ডাকলো, “আমি রোগগ্রস্ত হয়ে গেছি এবং তুমি করুণাকারীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ করুণাকারী৷৮৪) আমি তার দোয়া কবুল করেছিলাম, তার যে কষ্ট ছিল তার দূর করে দিয়েছিলাম ।

৫। ধৈয্য, নামায    সার্বক্ষণিক আল্লাহর জিকরের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা কর :

২:১৫৩, ২:৪৫,

(২১:৮৫) আর এ নিয়ামতই ইসমাঈল, ইদরিস ও যুলকিফ্‌লকে  দিয়েছিলাম, এরা সবাই সবরকারী ছিল 

(৭:২০৫) হে নবী!তোমার রবকে স্মারণ করো সকাল-সাঁঝে মনে মনে কান্নাজড়িত স্বরে ও ভীতি বিহ্বল চিত্তে এবং অনুচ্চ কণ্ঠে৷ তুমি তাদের অন্তরভুক্ত হয়ো না যারা গাফলতির মধ্যে ডুবে আছে৷

(স্মরণ করা অর্থ নামাযও এবং অন্যান্য ধরনের স্মরণ করাও। চাই মুখে মুখে বা মনে মনে যে কোনভাবেই তা হোক না কেন। সকাল -সাঝ বলতে নির্দিষ্টভাবে এ দুটি সময়ও বুঝানো হয়ে থাকতে পারে। আর এ দু সময়ে আল্লাহর স্মরণ বলতে বুঝানো হয়েছে নামাযকে। পক্ষান্তরে সকাল সাঁঝ কথাটা সর্বক্ষণ অর্থেও ব্যবহৃত হয়এবং তখন এর অর্থ হয় সবসময় আল্লাহর স্মরণে মশগুল থাকা। এ ভাষণটির উপসংহারে সর্বশেষ উপদেশ হিসেবে এটা বলা হয়েছে । এর উদ্দেশ্য বর্ণনা প্রসংগে বলা হয়েছে তোমাদের অবস্থা যেন গাফেলদের মত না হয়ে যায়। দুনিয়ায় যা কিছু গোমরাহী ছড়িয়েছে এবং মানুষের নৈতিক চরিত্রে ও কর্মকাণ্ডে যে বিপর্যয়ই সৃষ্টি হয়েছে তার একমাত্র কারণ হচ্ছে,মানুষ ভুলে যায় , আল্লাহ তার রব সে আল্লাহর বান্দা , দুনিয়ায় তাকে পরীক্ষা করার জন্যে পাঠানো হয়েছে এবং দুনিয়ার জীবন শেষ হবার পর তাকে তার রবের কাছে হিসেব দিতে হবে।কাজেই যে ব্যক্তি নিজেও সঠিক পথে চলতে চায় এবং দুনিয়ার অন্যান্য মানুষকেও তদনুসারে চালাতে চায় সে নিজে যেন কখনো এ ধরনের ভুল না করে, এ ব্যাপারে তাকে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এ জন্যেই নামায ও আল্লাহর যিকিরের মাধ্যমে সব সময় স্থায়ীভাবে আল্লাহর প্রতি আকৃষ্ট থাকার ও তাঁর সাথে সম্পর্ক রাখার জন্যে বার বার তাকীদ করা হয়েছে।)

নবীগণের দোয়া সমূহ :

হুদ : এর দোয়া :

(মু’মিনুন:৩৯) রসূল বললো, ‘‘হে আমার রব! এ লোকেরা যে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করলো এ ব্যাপারে এখন তুমিই আমাকে সাহায্য করো৷’’

হযরত ইব্রাহিম :  এর দোয়া সমূহ :

(২৬.শুআরা:৮৩) (এরপর ইবরাহীম দোয়া করলোঃ) "হে আমার রব! আমাকে প্রজ্ঞা দান কর৬০ এবং আমাকে সৎকর্মশীলদের সাথে শামিল কর৷৮৪) আর পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে আমার সত্যিকার খ্যাতি ছড়িয়ে দিও৮৫) এবং আমাকে নেয়ামতে পরিপূর্ণ জান্নাতের অধিকারীদের অন্তর্ভুক্ত করো৷ ৮৬) আর আমার বাপকে মাফ করে দিও, নিঃসন্দেহে তিনি পথভ্রষ্টদের দলভুক্ছিলেন  ৮৭) এবং সেদিন আমাকে লাঞ্ছিত করো না যেদিন সবাইকে জীবিত করে উঠানো হবে ৮৮) যেদিন অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোন কাজে লাগবে না,  ৮৯) তবে যে বিশুদ্ধ অন্তঃকরণ নিয়ে আল্লাহর সামনে হাজির হবে৷"

(৬০. "হুকুম" অর্থ এখানে নবুওয়াত গ্রহণ করা সঠিক হবে না। কারণ এটা যে সময়ের দোয়া সে সময় হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামকে নবুওয়াত দান করা হয়ে গিয়েছিল। আর ধরে নেয়া যাক যদি এ দোয়া তার আগেরও হয়ে থাকে, তাহলে নবুওয়াত কেউ চাইলে তাকে দান করা হয় না বরং এটি এমন একটি দান যা আল্লাহ নিজেই যাকে চান তাকে দান করেন। তাই এখানে 'হুকুম' অর্থ জ্ঞান, হিকমত, প্রজ্ঞা, সঠিক বুঝ-বিবেচন ও সিদ্ধান্ত করার শক্তি গ্রহণ করাই সঠিক অর্থ হবে। হযরত ইব্রাহীমের (আ) দোয়াটি প্রায় সেই একই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে যে অর্থে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এ দোয়া উদ্ধৃত হয়েছে। তিনি বলেছেন, اَرِنَا الاَشْيَاء كَمَاهِىَ অর্থাৎ আমাদের এমন যোগ্যতা দাও যাতে আমরা প্রত্যেকটি জিনিসকে তার যথার্থ স্বরূপে দেখতে পারি এবং প্রত্যেকটি বিষয় সম্পর্কে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারি যা তার প্রকৃত স্বরূপের প্রেক্ষিতে গ্রহণ করা উচিত।)

(আরো দেখুন : অ > অন্তর > বিশুদ্ধ অন্তর এর স্বরূপ)

হযরত ইব্রাহীম : এর তার পিতার জন্য দোয়া করার স্বরূপ :

বিস্তারিত দেখুন : ন > নবীদের জীবনী > হযরত ইব্রাহিম আ:।

হযরত মূসা : এর দোয়া সমূহ :

(২৮-ক্বাছাছ : ১৬) তারপর সে বলতে লাগলো, "হে আমার রব! আমি নিজের ওপর জুলুম করেছি, আমাকে ক্ষমা করে দাও? "২৩ তখন আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন তিনি ক্ষমাশীল মেহেরবান৷ ২৪ 

(২৩. মূল শব্দ হচ্ছে"মাগিফরাত" এর অর্থ ক্ষমা করা ও মাফ করে দেয়াও হয় আবার গোপনীয়তা রক্ষা করাও হয়। হযরত মূসা (আ:) দোয়ার অর্থ ছিল, আমার এ গোনাহ (যা তুমি জানো, আমি জেনে-বুঝে করিনি) তুমি মাফ করে দাও এবং এর ওপর আবরন দিয়ে ঢেকে দাও, যাতে শত্রুরা জানতে না পারে।

২৪. এরও দুই অর্থ এবং দুটিই এখানে প্রযোজ্য। অর্থাত আল্লাহ তাঁর এ ত্রুটি মাফ করে দেন এবং হজরত মূসার গোপনীয়তাও রক্ষা করেন। অর্থাত কিবতী জাতির কোন ব্যাক্তি এবং কিবতী সরকারের কোন লোকের সে সময় তাদের আশেপাশে বা ধারে কাছে গমনাগমন হয়নি। ফলে তারা কেউ এ হত্যাকান্ড দেখেনি। এভাবে হযরত মূসার পক্ষে নির্বিঘ্নে ঘটনাস্থল থেকে সরে পড়ার সুযোগ ঘটে।)

(২৮-ক্বাছাছ : ২১) এ খবর শুনতেই মূসা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বেরিয়ে পড়লো এবং সে দোয়া করলো, "হে আমার রব! আমাকে জালেমদের হাত থেকে বাঁচাও৷"  

বক্ষ প্রশস্ত করে দেওয়ার দোয়া :

(২০:২৫) মূসা বললো, “হে আমার রব!  ২৬) আমার বুক প্রশস্ত করে দাও৷২৭) আমার কাজ আমার জন্য সহজ করে দাও, ২৮) এবং আমার জিভের জড়তা দূর করে দাও, যাতে লোকেরা আমার কথা বুঝতে পারে৷

(বক্ষ প্রশস্ত করার অর্থ : অর্থাৎ আমার মনে এ মহান দায়িত্বভার বহন করার মতো হিম্মত সৃষ্টি করে দাও। আমার উৎসাহ-উদ্দীপনা বাড়িয়ে দাও। যেহেতু হযরত মূসাকে (আ) একটি অনেক বড় কাজের দায়িত্ব সোপর্দ করা হচ্ছিল যা করার জন্য দুরন্ত সাহসের প্রয়োজন তাই তিনি দোয়া করেন, আমাকে এমন ধৈর্য, দৃঢ়তা, সংযম, সহনশীলতা, নির্ভীকতা ও দুর্জয় সংকল্প দান করো যা এ কাজের জন্য প্রয়োজন।)

জ্ঞান লাভ করার জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া :  

(২০:১১৪).......এবং দোয়া করো, হে আমার পরওয়ারদিগার! আমাকে আরো জ্ঞান দাও৷

আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করার তৌফিক চেয়ে আল্লাহর নিকট দোয়া করা :

(২০:৩৩) যাতে আমরা খুব বেশী করে তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করতে পারি,  ৩৪) এবং খুব বেশী করে তোমার চর্চা করি৷  ৩৫) তুমি সব সময় আমাদের অবস্থার পর্যবেক্ষক”৷

গুহাবাসী যুবকদের দোয়া :

رَبَّنَا آتِنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً وَهَيِّئْ لَنَا مِنْ أَمْرِنَا رَشَدًا﴾

(১৮:১০) হে আমাদের রব ! তোমার বিশেষ রহমতের ধারায় আমাদের প্লাবিত করো এবং আমাদের ব্যাপার ঠিকঠাক করে দাও৷” 

দোয়া ইউনুছ :  আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই এ কথার স্বীকৃতি :

(২১:৮৭) আর মাছওয়ালাকেও আমি অনুগ্রহ ভাজন করেছিলাম৷ স্মরণ করো যখন সে রাগান্বিত হয়ে চলে গিয়েছিল এবং মনে করেছিল আমি তাকে পাকড়াও করবো না৷ শেষে সে অন্ধকারের মধ্য থেকে ডেকে উঠলো :  “তুমি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই, পবিত্র তোমার সত্তা, অবশ্যই আমি অপরাধ করেছি৷” ৮৮) তখন আমি তার দোয়া কবুল করেছিলাম এবং দুঃখ থেকে তাকে মুক্তি দিয়েছিলাম, আর এভাবেই আমি মুমিনদেরকে উদ্ধার করে থাকি৷ 

সন্তান লাভের  জন্য  হযরত যাকারিয়া : এর দোয়া :

(২১:৮৯) আর যাকারিয়ার কথা (স্মরণ করো), যখন সে তার রবকে ডেকে বলেছিল : “হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একাকী ছেড়ে দিয়ো না এবং সবচেয়ে ভালো উত্তরাধিকারী তো তুমিই৷” ৯০) কাজেই আমি তার দোয়া কবুল করেছিলাম এবং তাকে ইয়াহ্‌ইয়া দান করেছিলাম, আর তার স্ত্রীকে তার জন্য যোগ্য করে দিয়েছিলাম৷ তারা সৎকাজে আপ্রাণ চেষ্টা করতো, আমাকে ডাকতো আশা ও ভীতি সহকারে এবং আমার সামনে ছিল অবনত হয়ে৷

পিতা মাতার জন্য দোয়া :

(২৭.নামল:১৯)---- “হে আমার রব! আমাকে নিয়ন্ত্রণে রাখো,  আমি যেন তোমার এ অনুগ্রহের শোকর আদায় করতে থাকি যা তুমি আমার প্রতি ও আমার পিতা-মাতার প্রতি করেছো

সৎকাজ করার তৌফিক লাভের জন্য দোয়া : সৎ লোকদের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার জন্য দোয়া :

(২৭.নামল:১৯)---- “হে আমার রব!আমাক নিয়ন্ত্রণে রাখো, .....এবং আমাকে তৌফিক দাও যেন এমন সৎকাজ করি যা তুমি পছন্দ করো এবং নিজ অনুগ্রহে আমাকে তোমার সৎকর্মশীল বান্দাদের দলভুক্ত করো৷

(মূল শব্দ হচ্ছে رَبِّ أَوْزِعْنِي এখানে আরবী ভাষায় وزعٌ এর অর্থ হচ্ছে রুখে দেয়া। এ সময় হযরত সুলাইমানের একথা বলা اوْ زعنى ان اشكر نعملتك (আমাকে রুখে দাও, আমি তোমার অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবো)। আমাদের কাছে আসলে এ অর্থ প্রকাশ করে যে, হে আমার রব! তুমি আমাকে যে বিরাট শক্তি ও যোগ্যতা দান করেছো তা এমন যে, যদি আমি সামান্য গাফিল হয়ে যাই তাহলে নাজানি বন্দেগীর সীমানা থেকে বের হয়ে আমি নিজের অহংকারে মত্ত হয়ে কোথা থেকে কোথায় চলে যাই। তাই হে আমার পরওয়ারদিগার! তুমি আমাকে নিয়ন্ত্রণে রাখো, যাতে আমি অনুগ্রহ অস্বীকারকারীর পরিবর্তে অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারীতে পরিণত হতে পারি।

২৬. সৎকর্মশীল বান্দাদের দলভূক্ত করার অর্থ সম্ভবত এ হবে যে, আখেরাতে আমার পরিণতি যেন সৎকর্মশীল লোকদের সাথে হয় এবং আমি যেন তাদের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। কারণ মানুষ যখন সতকাজ করবে তখন সৎকর্মশীল তো সে আপনা আপনিই হয়ে যাবে। তবে আখেরাতে কারো জান্নাতে প্রবেশ করা নিছক তার সতকর্মের ভিত্তিতে হতে পারে না বরং এটি আল্লাহর রহমতের ওপর নির্ভর করে। হাদীসে বলা হয়েছে, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, لن يدخل احدكم الجنَّة عمله "তোমাদের কারো নিছক আমল তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে না।" বলা হলো, ولا انت يا رسول الله "আপনার বেলায়ও কি একথা খাটে৷" জবাব দিলেন, ولا انا الا ان يتغمدنى الله تعالى برحمته "হ্যাঁ, আমিও নিছক আমার আমলের জোরে জান্নাতে প্রবেশ করবো না, যতণ না আল্লাহ তাঁর রহমত দিয়ে আমাকে ঢেকে নেবেন।")

ইসলাম গ্রহণ করার পর সাবার রানীর দোয়া: (হযরত সুলাইমান : এর ঘটনায়):

(২৭-নমল:৪৪) ...“হে আমার রব! (আজ পর্যন্ত) আমি নিজের ওপর বড়ই জুলুম করে এসেছি এবং এখন আমি সুলাইমানের সাথে আল্লাহ্ রব্বুল আলামীনের আনুগত্য গ্রহণ করছি৷” 

দোয়ার বদৌলতে কি নবুওত লাভ করা যায় ?

(১৯:৫৩) আর নিজ অনুগ্রহে তার ভাই হারুণকে নবী বানিয়ে তাকে সাহায্যকারী হিসেবে দিলাম

ইনশাআল্লাহ বলতে ভুলে গেলে যে দোয়া পড়তে হবে :

عَسَىٰ أَن يَهْدِيَنِ رَبِّي لِأَقْرَبَ مِنْ هَٰذَا رَشَدًا﴾

(১৮:২৪ ) .. “আশা করা যায়, আমার রব এ ব্যাপারে সত্যের নিকটতর কথার দিকে আমাকে পথ দেখিয়ে দেবেন৷

আল্লাহ ব্যতীত অন্য  কারো নিকট কারো নিকট চাওয়া বা অন্য কাউকে ডাকার স্বরূপ  :

(১৭:৫৬) এদেরকে বলো, ডাক দিয়ে দেখো তোমাদের সেই মাবুদদেরকে, যাদেরকে তোমরা আল্লাহ ছাড়া (নিজেদের কার্যোদ্ধারকারী) মনে করো, তারা তোমাদের কোনো কষ্ট দূর করতে পারবে না এবং তা পরিবর্তন করতেও পারবে না৷ 

(রাআদ:১৪) একমাত্র তাঁকেই ডাকা সঠিক৷ ২৩ আর অন্যান্য সত্তাসমূহ, আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে এ লোকেরা ডাকে, তারা তাদের প্রার্থনায় কোন সাড়া দিতে পারে না৷ তাদেরকে ডাকা তো ঠিক এমনি ধরনের যেমন কোন ব্যক্তি পানির দিকে হাত বাড়িয়ে তার কাছে আবেদন জানায়, তুমি আমার মুখে পৌঁছে যাও, অথচ পানি তার মুখে পৌঁছতে সক্ষম নয়৷ ঠিক এমনিভাবে কাফেরদের দোয়াও একটি লক্ষভ্রষ্ট তীর ছাড়া আর কিছু নয়৷

২৩. ডাকা মানে নিজের অভাব পূরণের উদ্দেশ্যে সাহায্যের জন্য ডাকা। এর মানে হচ্ছে, অভাব ও প্রয়োজন পূর্ণ এবং সংকটমুক্ত করার সব ক্ষমতা একমাত্র তার হাতেই কেন্দ্রীভূত। তাই একমাত্র তার কাছেই প্রর্থনা করা সঠিক ও যথার্থ সত্য বলে বিবেচিত।

কাফেরদের দোয়া কি কবুল হবে ?

ঠিক এমনিভাবে কাফেরদের দোয়াও একটি লক্ষভ্রষ্ট তীর ছাড়া আর কিছু নয়৷  -১৩:১৪,

 আর অন্যান্য সত্তাসমূহ, আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে এ লোকেরা ডাকে, তারা তাদের প্রার্থনায় কোন সাড়া দিতে পারে না৷ তাদেরকে ডাকা তো ঠিক এমনি ধরনের যেমন কোন ব্যক্তি পানির দিকে হাত বাড়িয়ে তার কাছে আবেদন জানায়, তুমি আমার মুখে পৌঁছে যাও, অথচ পানি তার মুখে পৌঁছতে সক্ষম নয়৷-১৩:১৪,

আল্লাহর কাছে চেয়ে কেউ বিফল হয় না, যদি সে ঈমানদার হয় :

 (১৯:৪) সে বললো, “হে আমার রব! আমার হাড়গুলো পর্যন্ত নরম হয়ে গেছে, মাথা বার্ধক্যে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে; হে পরোয়ারদিগার! আমি কখনো তোমার কাছে দোয়া চেয়ে ব্যর্থ হইনি৷

বিপদ পড়লে আল্লাহকে ডাকে আর বিপদ কেটে গেলেই আল্লাহকে ভুলে যায় ও শিরক করতে থাকে: আরো দেখুন : বিপদ :  

(১৬:৫৩) তোমরা যে নিয়ামতই লাভ করেছো তাতো আল্লাহরই পক্ষ থেকে, তারপর যখন তোমরা কোনো কঠিন সময়ের মুখোমুখি হও তখন তোমরা নিজেরাই নিজেদের ফরিয়াদ নিয়ে তাঁরই দিকে দৌঁড়াতে থাকো৷৫৪) কিন্তু যখন আল্লাহ সেই সময়কে হটিয়ে দেন তখন সহসাই তোমাদের একটি দল নিজেদের রবের সাথে অন্যকে (এ অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে) শরীক করতে থাকে।

শয়তান আল্লাহর নিকট দোয়া করল এবং আল্লাহ শর্ত সাপেক্ষে সে দোয়া কবুল করে নিলেন :

(১৫:৩৬) সে আরয করলো, হে আমার রব ! যদি তাই হয়, তাহলে সেই দিন পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দাও যেদিন সকল মানুষকে পুনর্বার উঠানো হবে৷৩৭) বললেন, “ঠিক আছে, তোমাকে অবকাশ দেয়া হলো৷  

(ব্যাখ্যা: শয়তান আল্লাহর আদেশ অমান্য করার কারণে আল্লাহ তাকে অভিশাপ দেন, কিন্তু শয়তান তাতে অনুতপ্ত না হয়ে, ক্ষমা না চেয়ে বরং আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, যাতে তাকে কিয়ামত পরযন্ত অবকাশ দেয়া হয়, যাতে সে তার চিরশত্রু মানব সম্প্রদায়কে ধোকা  দিতে পারে, আল্লাহ তার দোয়া কবুল করে বললেন, তোমাকে কিয়ামত পরযন্ত তো অবকাশ দেয়া হলো, কিন্তু তুমি আমার প্রকৃত কোন বান্দাকে তো পথভ্রষ্ট করতে পারবেই না, বরং কোন ব্যক্তিকেই জোর পূর্বক পথভ্রষ্ট করবে সে ক্ষমতাও তোমাকে দেয়া হলোনা, বরং, যারা তোমাকে অনুসরণ করবে শুধুমাত্র তাদেরকেই তুমি পথভ্রষ্ট করতে পারবে। আসলে শয়তানের  দোয়া কবুলের মাধ্যমে আল্লাহ শয়তানকে আরো বেশী করে পাকাপোক্ত ভাবে ধ্বংসের মধ্যে ঠেলে দিলেন, তার বরবাদী থেকে উঠে আসার আর কোন সম্ভাবনাই রইল না, শয়তানে ধ্বংস অনিবারয হয়ে গেলো, অতএব, এবিষয়টিকে যদি কেউ  ‘আল্লাহর পক্ষ থেকে দোয়া কবুল’ এর মতো পবিত্র ও মহৎ বিষয়ের সাথে জুড়ে দিয়ে বিতর্ক করেন, তবে তার জ্ঞান ‍বুদ্ধির  দৈন্যতার জন্য দু:খ করা ছাড়া আর কিছু করার নেই -১৫:৩২-৪২)

.

চাইতে হবে শুধু আল্লাহর কাছেই :

(১২:৮৬) সে বললো, “আমি আমার পেরেশানি এবং আমার দুঃখের ফরিয়াদ আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে করছি না৷ আর আল্লাহর ব্যাপারে আমি যতটুকু জানি তোমরা ততটুকু জানো না৷

(আল্লাহ ছাড়া আর যাদেরকে তোমরা মা’বুদ বানিয়ে রেখেছো, ) যারা তাদের নিজেদের জন্যও কোন লাভ ও ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে না ? (১৩:১৬)

(আরো দেখুন : ড > ডাকা > আল্লাহ ছাড়া অপরকে ডাকা। )

আল্লাহ তার বান্দার ডাকে সাড়া দেন:

(১১:৬১) কাজেই তোমরা তাঁর কাছে ক্ষমা চাও এবং তাঁর দিকে ফিরে এসো৷ নিশ্চয়ই আমার রব নিকটে আছেন তিনি ডাকের জবাব দেন৷

 আসলে আমার রব নিশ্চয়ই দোয়া শোনেন৷(১৪:৩৯)   

(২১:৮৮) তখন আমি তার দোয়া কবুল করেছিলাম এবং দুঃখ থেকে তাকে মুক্তি দিয়েছিলাম, আর এভাবেই আমি মুমিনদেরকে উদ্ধার করে থাকি৷ 

(১০:১০৬) আর আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন কোন সত্তাকে ডেকো না, যে তোমার না কোন উপকার করতে না ক্ষতি করতে পারে৷ যদি তুমি এমনিটি করো তাহলে জালেমদের দলভুক্ত হবে৷  ১০৭) যদি আল্লাহ তোমাকে কোন বিপদে ফেলেন তাহলে তিনি ছাড়া আর কেউ নেই যে, এ বিপদ দুর করতে পারে ৷ আর যদি তিনি তোমার কোন মঙ্গল চান তাহলে তার অনুগ্রহ রদ করার ও কেউ নেই৷ তিনি তার বান্দাদের মধ্যে থেকে যাকে চান অনুগ্রহ করেন এবং তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু৷

(১২:৩৪) তার রব তার দোয়া কবুল করলেন এবং তাদের অপকৌশল থেকে তাকে রক্ষা করলেন৷ অবশ্যি তিনি সবার কথা শোনেন এবং সবকিছু জানেন । (আল্লাহ ইউসুফ আ: এর দোয়া কবুল করলেন ফলে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হলো)

(১৩:১৪) একমাত্র তাঁকেই ডাকা সঠিক৷

(১৩:১৪) আর অন্যান্য সত্তাসমূহ, আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে এ লোকেরা ডাকে, তারা তাদের প্রার্থনায় কোন সাড়া দিতে পারে না৷ তাদেরকে ডাকা তো ঠিক এমনি ধরনের যেমন কোন ব্যক্তি পানির দিকে হাত বাড়িয়ে তার কাছে আবেদন জানায়, তুমি আমার মুখে পৌঁছে যাও, অথচ পানি তার মুখে পৌঁছতে সক্ষম নয়৷ ঠিক এমনিভাবে কাফেরদের দোয়াও একটি লক্ষভ্রষ্ট তীর ছাড়া আর কিছু নয়৷  

(২১:৯০) কাজেই আমি তার দোয়া কবুল করেছিলাম এবং তাকে ইয়াহ্‌ইয়া দান করেছিলাম, আর তার স্ত্রীকে তার জন্য যোগ্য করে দিয়েছিলাম৷ তারা সৎকাজে আপ্রাণ চেষ্টা করতো, আমাকে ডাকতো আশা ও ভীতি সহকারে এবং আমার সামনে ছিল অবনত হয়ে৷

(আরো দেখুন : ড > ডাকা > আল্লাহ ছাড়া অপরকে ডাকা। )

আল কুরআনে বর্ণিত দোয়া সমূহ :

رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا فِتْنَةً لِّلْقَوْمِ الظَّالِمِينَ

وَنَجِّنَا بِرَحْمَتِكَ مِنَ الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ

হে আমাদের রব! আমাদেরকে জালেমদের নির্যাতনের শিকারে পরিণত করো না৷৮৬) এবং তোমার রহমতের সাহায্যে কাফেরদের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করো৷- ১০:৮৫-৮৬,

(১১:৪৭) নূহ তখনই বললো, “হে আমার রব! যে জিনিসের ব্যাপারে আমার জ্ঞান নেই তা তোমার কাছে চাইবো- এ থেকে আমি তোমার কাছে পানাহ চাচ্ছি৷ যদি তুমি আমাকে মাফ না করো এবং আমার প্রতি রহমত না করো তাহলে আমি ধ্বংস হয়ে যাবো৷

(১২:১০১) হে আমার রব! তুমি আমাকে রাষ্ট্র ক্ষমতা দান করেছো এবং আমাকে কথার গভীরে প্রবেশ করা শিখিয়েছো৷ হে আকাশ  পৃথিবীর স্রষ্টা! দুনিয়ায়  আখেরাতে তুমিই আমার অভিভাবক৷ ইসলামের ওপর আমাকে মৃত্যু দান করো এবং পরিণামে আমাকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তরভূক্ত করো৷

(১৪:৩৫) স্মরণ কর সেই সময়ের কথা যখন ইবরাহীম দোয়া করছিল, “হে আমার রব! এ শহরকে  নিরাপত্তার শহরে পরিণত করো এবং আমার ও আমার সন্তানদেরকে মূর্তিপূজা থেকে বাঁচাও৷

(১৪:৩৬) হে আমার রব! এ মূর্তিগুলো অনেককে ভ্রষ্টতার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে,  (হয়তো আমার সন্তানদেরকেও এরা পথভ্রষ্ট করতে পারে, তাই তাদের মধ্য থেকে) যে আমার পথে চলবে সে আমার অন্তরগত আর যে আমার বিপরীত পথ অবলম্বন করবে, সে ক্ষেত্রে অবশ্যি তুমি ক্ষমাশীল ও মেহেরবান৷

(১৪:৩৭) হে আমাদের রব! আমি একটি তৃণ পানিহীন উপত্যকায় নিজের বংশধরদের একটি অংশকে তোমার পবিত্র গৃহের কাছে এনে বসবাস করিয়েছি৷ পরওয়ারদিগার! এটা আমি এ জন্য করেছি যে, এরা এখানে নামায কায়েম করবে৷ কাজেই তুমি লোকদের মনকে এদের প্রতি আকৃষ্ট করো এবং ফলাদি দিয়ে এদের আহারের ব্যবস্থা করো,  হয়তো এরা শোকরগুজার হবে৷

(১৪:৩৮) হে পরওয়ারদিগার! তুমি জানো যা কিছু আমরা লুকাই এবং যা কিছু প্রকাশ করি৷” আর   যথার্থই আল্লাহর কাছে কিছুই গোপন নেই, না পৃথিবীতে না আকাশে  

(১৪:৩৯) শোকর সেই আল্লাহর, যিনি এ বৃদ্ধ বয়সে আমাকে ইসমাঈল ও ইসহাকের মতো পুত্র দিয়েছেন৷ আসলে আমার রব নিশ্চয়ই দোয়া শোনেন৷

(১৪:৪০) হে আমার রব আমাকে নামায প্রতিষ্ঠাকারী করো এবং আমার বংশধরদের থেকেও (এমন লোকদের উঠাও যারা এ কাজ করবে)৷ পরওয়ারদিগার! আমার দোয়া কবুল করো

(১৪:৪১) হে পরওয়াদিগার! যেদিন হিসেব কায়েম হবে সেদিন আমাকে, আমার পিতামাতাকে এবং সমস্ত মুমিনদেরকে মাফ করে দিয়ো৷

(মু’মিনুন:১০৯) ...হে আমাদের রব !আমরা ঈমান এনেছি,আমাদের মাফ করে দাও, আমাদের প্রতি করুনা করো, তুমি সকল করুণাশীলের চাইতে বড় করুণাশীল

রাব্বিগফির ওয়ারহাম :

(মু’মিনুন:১১৮) হে মুহাম্মাদ (সা) ! বলো, ‘‘হে আমার রব! ক্ষমা করো ও করুণা করো এবং তুমি সকল করুণাশীলের চাইতে বড় করুণাশীল৷’’

রাষ্ট্র ক্ষমতার সহায়তা অথবা রাষ্ট্র ক্ষমতা লাভের জন্য দোয়া :

(১৭:৮০) আর দোয়া করোঃ হে আমার পরওয়ারদিগার ! আমাকে যেখানেই তুমি নিয়ে যাও সত্যতার সাথে নিয়ে যাও এবং যেখান থেকেই বের করো সত্যতার সাথে বের করো৷ এবং তোমার পক্ষ থেকে একটি কর্তৃত্বশীল পরাক্রান্ত শক্তিকে আমার সাহায্যকারী বানিয়ে দাও৷

(ব্যাখ্যা :অর্থাৎ তুমি নিজেই আমাকে কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা দান করো অথবা কোন রাষ্ট্র ক্ষমতাকে আমার সাহায্যকারী বানিয়ে দাও, যাতে তার ক্ষমতা ব্যবহার করে আমি দুনিয়ার বিকৃত ব্যবস্থার পরিবর্তন সাধন করতে পারি, অশ্লীলতা ও পাপের সয়লাব রুখে দিতে পারি এবং তোমার ন্যায় বিধান জারি করতে সক্ষম হই । হাসান বাসরীও কাতাদাহ এ আয়াতের এ ব্যাখ্যাই করেছেন । ইবনে জারীর ও ইবনে কাসীরের ন্যায় মহান তাফসীরকারগণ এ ব্যাখ্যাই গ্রহণ করেছেন । নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিম্নোক্ত হাদীস থেকেও এরি সমর্থন পাওয়া যায়:

"আল্লাহ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বলে এমনসব জিনিসের উচ্ছেদ ঘটান কুরআনের মাধ্যমে যেগুলোর উচ্ছেদ ঘটান না" ।

এ থেকে জানা যায়, ইসলাম দুনিয়ায় যে সংশোধন চায় তা শুধু ওয়াজ নসিহতের মাধ্যমে হতে পারে না বরং তাকে কার্যকর করার জন্য রাজনৈতিক ক্ষমতারও প্রয়োজন হয় । তারপর আল্লাহ নিজেই যখন তাঁর নবীকে এ দোয়া শিখিয়েছেন তখন এ থেকে একথাও প্রমাণ হয় যে, দীন প্রতিষ্ঠা ও শরীয়তী আইন প্রবর্তন এবং আল্লাহ প্রদত্ত দণ্ডবিধি জারী করার জন্য রাষ্ট্র ক্ষমতা হাসিল করার প্রত্যাশা করা এবং এ জন্য প্রচেষ্টা চলানো শুধু জায়েযই নয় বরং কাংখিত ও প্রশংসিতও এবং অন্যদিকে যারা এ প্রচেষ্টা ও প্রত্যাশাকে বৈষয়িক স্বার্থ পূজা ও দুনিয়াদারী বলে আখ্যায়িত করে তারা ভুলের মধ্যে অবস্থান করছে । কোন ব্যক্তি যদি নিজের জন্য রাষ্ট্র ক্ষমতা লাভ করতে চায় তাহলে তাকে বৈষয়িক স্বার্থ পূজা বলা যায় । কিন্তু আল্লাহর দীনের জন্য রাষ্ট্র ক্ষমতা লাভের প্রত্যাশা করা বৈষয়িক স্বার্থ পূজা নয় বরং আল্লাহর আনুগত্যের প্রত্যক্ষ দাবী ।)

পিতা-মাতার জন্য দোয়া :

হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া করো, যেমন তারা দয়া, মায়া, মমতা সহকারে শৈশবে আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন৷- (১৭:২৪)

সন্তান লাভের জন্য দোয়া : আরো দেখুন :  > দোয়া :

(১৯:৫) আমি আমার পর নিজের স্বভাব-স্বগোত্রীয়দের অসদাচরণের আশংকা করি এবং আমার স্ত্রী বন্ধ্যা৷ (তথাপি) তুমি নিজের বিশেষ অনুগ্রহ বলে আমাকে একজন উত্তরাধিকারী দান করো,

(২১:৮৯) আর যাকারিয়ার কথা (স্মরণ করো), যখন সে তার রবকে ডেকে বলেছিল : “হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একাকী ছেড়ে দিয়ো না এবং সবচেয়ে ভালো উত্তরাধিকারী তো তুমিই৷” ৯০) কাজেই আমি তার দোয়া কবুল করেছিলাম এবং তাকে ইয়াহ্‌ইয়া দান করেছিলাম, আর তার স্ত্রীকে তার জন্য যোগ্য করে দিয়েছিলাম৷ ৮৬ তারা সৎকাজে আপ্রাণ চেষ্টা করতো, আমাকে ডাকতো আশা ও ভীতি সহকারে এবং আমার সামনে ছিল অবনত হয়ে৷৮৭ 

(৮৬. ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা আলে ইমরান ৩৭ থেকে ৪১ আয়াত টীকা সহ, সূরা মার্‌য়াম ২ থেকে ১৫ আয়াত টীকাসহ। স্ত্রীকে যোগ্য করে দেয়ার অর্থ হচ্ছে, তার বন্ধ্যাত্ব দূর করে দেয়া এবং বার্ধক্য সত্ত্বেও তাকে গর্ভধারণের উপযোগী করা। "সবচেয়ে ভালো উত্তরাধিকারী তুমিই" মানে হচ্ছে, তুমি সন্তান না দিলে কোন দুঃখ নেই। তোমার পবিত্র সত্তা-উত্তরাধিকারী হবার জন্য যথেষ্ট।

৮৭. এই প্রেক্ষাপটে যে উদ্দেশ্যে নবীদের উল্লেখ করা হয়েছে তা আবার স্মৃতিপটে জাগিয়ে তুলুন। হযরত যাকারিয়ার (আ) ঘটনা উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে একথা হৃদয়ংগম করানো যে, এসকল নবীই ছিলেন নিছক বান্দা ও মানুষ ইলাহী সার্বভৌমত্বের সামান্যতম গন্ধও তাদের মধ্যে ছিল না। তারা অন্যদেরকে সন্তান দান করতেন না বরং নিজেরাই আল্লাহর সামনে সন্তানের জন্য হাত পাততেন। হযরত ইউনুসের কথা এ জন্য বলা হয়েছে যে, একজন মহিমান্বিত নবী হওয়া সত্ত্বেও যখন তিনি ভুল করে বসলেন তখন তাকে পাকড়াও করা হলো এবং যখন তিনি নিজের রবের সামনে অবনত হলেন তখন তাঁর প্রতি অনুগ্রহও এমনভাবে করা হয়েছে যে, মাছের পেট থেকে তাঁকে জীবিত বের করে আনা হয়েছে। হযরত আইয়ুবের উল্লেখ এ জন্য করা হয়েছে যে, নবীর বিপদে পড়া কোন অভিনব ব্যাপার নয় এবং নবীও যখন বিপদে পড়েন তখন একমাত্র আল্লাহরই সামনে ত্রাণের জন্য হাত বাড়িয়ে দেন। তিনি অন্যের ত্রাণকারী নন বরং আল্লাহর কাছে ত্রাণ ভিক্ষাকারী। তারপর এসব কথার সাথে সাথে একদিকে এ সত্যটি মনে বদ্ধমূল করতে চাওয়া হয়েছে যে, এ সকল নবীই ছিলেন তাওহীদের প্রবক্তা এবং নিজেদের প্রয়োজন তাঁরা এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো সামনে পেশ করতেন না আবার অন্যদিকে একথাও বুঝিয়ে দেয়া কাম্য যে, আল্লাহ হামেশা অস্বাভাবিকভাবে নিজের নবীদেরকে সাহায্য করতে থেকেছেন। শুরুতে তাঁর যতই পরীক্ষার সম্মুখীন হোন না কেন শেষ পর্যন্ত অলৌকিক পদ্ধতিতে তাঁদের প্রার্থনা পূর্ণ হয়েছে।)

সৎ সন্তান লাভের জন্য দোয়া :

(১৯:৬) ... আর হে পরোয়ারদিগার! আমার সন্তানকে একজন পছন্দনীয় মানুষে পরিণত করো”৷

আল্লাহর পথে বাধা দানকারীদের জন্য নবীর বদদোয়া :

(১০: ৮৮) মুসা  দোয়া করলো, হে আমাদের রব! তুমি ফেরাউন ও তার সরদারদেরকে দুনিয়ার জীবনের শোভা -সৌন্দর্য  ও ধন-সম্পদ  দান করেছো৷ হে আমাদের রব! একি এ জন্য যে, তারা মনুষকে তোমার পথ থেকে বিপথে সরিয়ে দেবে? হে আমাদের রব! এদের ধন-সম্পদ ধ্বংস করে দাও এবং এদের অন্তরে এমনভাবে মোহর মেরে দাও যাতে মর্মন্তুদ শাস্তি ভোগ না করা পর্যন্ত যেন এরা ঈমান না আনে , ৮৯) আল্লাহ জবাবে বললেন, ,তোমাদের দুজনের দোয়া কবূল করা হলো৷ তোমরা দুজন অবিচল থাকো এবং মুর্খতাদের পথ কখনো অনুসরণ করো না৷

রাফ বাসীদের দোয়া :

৭:৪৭

জান্নাত বাসীদের দোয়া :

৭:৪৩

উত্তম ফায়সালা লাভের জন্য দোয়া 

হে আমাদের রব! আমাদের ও আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে যথাযথভাবে ফায়সালা করে দাও এবং তুমি সবচেয়ে ভাল ফায়সালাকারী৷”-৭:৮৯  

 

গর্ভস্থিত সন্তানের জন্য দোয়া :

৭:১৮৯,

 জিহাদকারীদের দোয়া :

হে আমাদের রব! আমাদের সবর দান করোএবং তোমার আনুগত্য থাকা অবস্থায় আমাদের দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নাও-৭:১২৩-১২৬

মৃত্যু যেন মুসলমান অবস্থায় হয় সে জন্য দোয়া :  

হে আমাদের রব! ...তোমার আনুগত্য থাকা অবস্থায় আমাদের দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নাও-৭:১২৬,

সবরের জন্য দোয়া :  

হে আমাদের রব! আমাদের সবর দান করো -৭:১২৬,    

 

কারাগারে যাওয়ার জন্য স্ব্প্রনোদিত দোয়া তবুও যাতে জ্বিনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়:

(১২:৩৩) ইউসুফ বললো, “হে আমার রব ! এরা আমাকে দিয়ে যে কাজ করাতে চাচ্ছে তার চাইতে কারাগারই আমার কাছে প্রিয়! আর যদি তুমি এদের চক্রান্ত থেকে আমাকে না বাঁচাও তাহলে আমি এদের ফাঁদে আটকে যাবো এবং অজ্ঞদের অন্তরভুক্ত হবে৷

নূহ : এর দোয়া :

(২৬.শুআরা:১১৭) নূহ দোয়া করলো, "হে আমার রব! আমার জাতি আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছে৷১১৮) এখন আমার ও তাদের মধ্যে সুস্পষ্ট ফায়সালা করে দাও এবং আমার সাথে যেসব মু’মিন আছে তাদেরকে রক্ষা করো৷

সূরা আনকাবুতে বলা হয়েছে, সাড়ে নয় শত বছর ধরে নূহ আ: তার জাতির মধ্যে দাওয়াতী কাজ করেন :

فلبث فيهم الف سنة الا خمسين عامًا -

"তারপর তিনি তাদের মধ্যে বসবাস করেন সাড়ে নয় শত বছর।" (১৪ আয়াত) 

এ দীর্ঘ সময়ে হযরত নূহ বংশ পরস্পরায় তাদের সামাজিক কার্যক্রম দেখে বুঝতে পারেন যে, কেবল তাদের মধ্যেই সত্যকে গ্রহণ করার যোগ্যতা খতম হয়ে যায়নি। বরং তাদের ভবিষ্যত বংশধরদের মধ্যেও সৎ ও ঈমানদার মানুষের জন্ম হবার আশা নেই। 

اِنَّكَ ان تذرهم يضلُّوا عبادك ولا يَلِدُوا الاَّ فاجِرًا كَفَّارًا -

"হে পরওয়ারদিগার! যদি তুমি তাদেরকে ছেড়ে দাও, তাহলে তারা তোমার বান্দাদেরকে গোমরাহ করবে এবং তাদের বংশে যে-ই জন্ম নেবে সে-ই হবে চরিত্রহীন ও কঠোর সত্য অস্বীকারকারী।" (নূহঃ ২৭ আয়াত) 

শেষ পর্যন্ত নূহ আ: আল্লাহর নিকট উপরোক্ত দোয়া করেন। যার ফল হলো :

(২৬.শুআরা:১২০) তারপর অবশিষ্ট লোকদেরকে ডুবিয়ে দিলাম৷

সুলায়মান : এর দোয়া সমূহ :

১। আল্লাহর অনুগ্রহের শোকর আদায় করার তৌফিক লাভের জন্য দোয়া :

২। পিতা মাতার জন্য দোয়া :

(২৭.নামল:১৯)---- “হে আমার রব! আমাকে নিয়ন্ত্রণে রাখো,  আমি যেন তোমার এ অনুগ্রহের শোকর আদায় করতে থাকি যা তুমি আমার প্রতি ও আমার পিতা-মাতার প্রতি করেছো এবং এমন সৎকাজ করি যা তুমি পছন্দ করো এবং নিজ অনুগ্রহে আমাকে তোমার সৎকর্মশীল বান্দাদের দলভুক্ত করো৷

দু: দুর্দশা :

আমি যখনই কোন জনপদে নবী পাঠিয়েছি, সেখানকার লোকেদেরকে প্রথমে অর্থকষ্ট ও দুঃখ -দুর্দশায় সম্মুখীন করেছি, একথা ভেবে যে, হয়তো তারা বিনম্র হবে ও নতি স্বীকার করবে৷ -৭:৯৪,

(২১:৮৮) তখন আমি তার দোয়া কবুল করেছিলাম এবং দুঃখ থেকে তাকে মুক্তি দিয়েছিলাম, আর এভাবেই আমি মুমিনদেরকে উদ্ধার করে থাকি৷ 

(আরো বিস্তারিত দেখুন :  দ > দাওয়াতী কাজ > দাওয়াতী কাজের ক্ষেত্রে আল্লাহর নিজের নীতি সমূহ। )

(মু’মিনুন:৭৬) তাদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, আমি তাদের দুঃখ-কষ্টে ফেলে দিয়েছি, তারপরও তারা নিজেদের রবের সামনে নত হয়নি এবং বিনয় ও দীনতাও অবলম্বন করে না ৷

অনেক সময় আল্লাহ মানুষের দু: দুর্দশা দুর করেন না, এটাও আল্লাহর করুনা স্বরূপ :

(মু’মিনুন:৭৫) যদি আমি তাদের প্রতি করুণা করি এবং বর্তমানে তারা যে দুঃখ-কষ্টে ভুগছে তা দূর করে দেই, তাহলে তারা নিজেদের অবাধ্যতার স্রোতে একেবারেই ভেসে যাবে৷

আনন্দের সময় আল্লাহকে স্মরন করোনা, অথচ দু:খে পতিত হলে আল্লাহকে দোষারোপ কর :

(৩০-রূম: ৫১) আর আমি যদি এমন একটি বাতাস পাঠাই যার প্রভাবে তারা দেখে তাদের শস্য পীতবর্ণ ধারণ করেছে   তাহলে তো তারা কুফরী করতে থাকে৷

(অর্থাৎ তখন তারা আল্লাহর কুৎসা গাইতে এবং তাকে দোষারোপ করতে থাকে এই বলে যে, আমাদের ওপর এ কেমন বিপদ চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ যখন আল্লাহ তাদের ওপর তাঁর অনুগ্রহধারা বর্ষণ করে চলছিলেন তখন তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার পরিবর্তে তাঁর অমর্যাদা করেছিল। এখানে আবার এ বিষয়বস্তুর প্রতি একটি সূক্ষ্ণ ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে, যখন আল্লাহর রসূল তাঁর পক্ষ থেকে রহমতের পয়গাম নিয়ে আসেন তখন লোকেরা তাঁর কথা মেনে নেয় না এবং সেই নিয়ামত প্রত্যাখ্যান করে। তাঁরপর যখন তাদের কুফরীর কারণে জালেম ও স্বৈরাচারী একনায়কদেরকে তাদের ওপর চাপিয়ে দেন এবং তারা জুলুম- নিপীড়নের যাঁতাকলে তাদেরকে পিষ্ট করতে এবং মানবতাঁর নিকুচি করতে থাকে তখন তারাই আল্লাহকে গালি দিতে থাকে এবং তিনি এ কেমন জুলুমে পরিপূর্ণ দুনিয়া তৈরি করেছেন বলে দোষারোপও করতে থাকে। )

যারা সামান্য দু: কষ্টে পতিত হলেই আল্লাহর পথ থেকে দুরে সরে যায় : ইস্তেক্বামাত অবলম্বন করে না :

দেখুন : দ > দৃঢ়তা।

দুর্ভিক্ষ :

(মু’মিনুন:৭৫) যদি আমি তাদের প্রতি করুণা করি এবং বর্তমানে তারা যে দুঃখ-কষ্টে ভুগছে তা দূর করে দেই, তাহলে তারা নিজেদের অবাধ্যতার স্রোতে একেবারেই ভেসে যাবে৷ ৭২  

(৭২ . দুর্ভিক্ষের কারণে আরববাসী যে কষ্ট ও বিপদের মধ্যে অবস্থান করছিল সেদিকে ইংগিত করা হয়েছে। এ দুর্ভিক্ষ সংক্রান্ত হাদীস উদ্ধৃত করতে গিয়ে কেউ কেউ দু'টি দুর্ভিক্ষকে এক সাথে মিশিয়ে ফেলেছন। এর ফলে একটি হিজরতের আগের না পরের ঘটনা তা বুঝা মানুষের পক্ষা কঠিন হয়ে যায়। আসল ঘটনা হচ্ছ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে মক্কাবাসীরা দুবার দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হয়। একবার নবোয়াতের সূচনার কিছুদিন পর। দ্বিতীয়বার হিজরাতের কয়েক বছর পর যখন সামামাহ ইবনে উসাল ইয়ামামাহ থেকে মক্কার দিকে খাদ্য শস্য রফতানী করা বন্ধা করে দিয়েছিল। এখানে দ্বিতীয় দুর্ভিক্ষটির নয় প্রথমটির কথা বলা হয়েছে। এ সম্পর্কে বুখারী ও মুসলিমে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদের (রা) এ বর্ণনা পাওয়া যায় যে, যখন কুরাইশরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াত অস্বীকার করতেই থাকলো এবং কঠোরভাবে বাধা দিতে শুরু করলো তখন তিনি দোয়া করলেনঃ

-----

''হে আল্লাহ! এদের মোকাবিলায় ইউসুফের আট বছরের দুর্ভিক্ষের মতো সাত বছরব্যাপী দুর্ভিক্ষ দিয়ে আমাকে সাহায্য করো।''

ফলে এমন ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে গেলো যে, মৃতের গোশ্‌ত খাওয়ার ঘটনাও ঘটলো। মক্কী সূরাগুলোতে বহু জায়গায় এ ঘটনার প্রতি ইংগিত করা হয়েছে। দৃষ্টান্ত স্বরূপ দেখুন সূরা আল আন'আম, ৪২ থেকে ৪৪; আল আ'রাফ, ৯৪ থেকে ৯; ইউনুস ১১, ১২, ২১; আন নহল, ১১২, ১১৩ ও আদ্‌ দুখান, ১০ থেকে ১৬ আয়াত এবং এ সংগে সংশ্লিষ্ট টীকাগুলোও।)

  

দুধ :

গবাদি পশুর মধ্যে দুধের সৃষ্টি, যা মানুষের পান করার জন্য আল্লাহ ব্যবস্থা করেছেন :

(মু’মিনুন:২১) আর প্রকৃতপক্ষে তোমাদের জন্য গবাদী পশুদের মধ্যেও একটি শিক্ষা রয়েছে৷ তাদের পেটের মধ্যে যাকিছু আছে তা থেকে একটি জিনিস আমি তোমাদের পান করাই এবং তোমাদের জন্যে তাদের মধ্যে আরো অনেক উপকারিতাও আছে, তাদেরকে তোমরা খেয়ে থাকো

(১৬:৬৬) আর তোমাদের জন্য গবাদি পশুর মধ্যেও একটি শিক্ষা রয়েছে৷ তাদের পেট থেকে গোবর ও রক্তের মাঝখানে বিদ্যমান একটি জিনিস আমি তোমাদের পান করাই, অর্থাৎ নির্ভেজাল দুধ, যা পানকারীদের জন্য বড়ই সুস্বাদু ও তৃপ্তিকর৷

বুকের দুধ :

বুকের দুধ খাওয়ানোর নিয়ম : ২:২৩৩,

(৩১-লোকমান: ১৪) -আর  প্রকৃতপক্ষে আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার হক চিনে নেবার জন্য নিজেই তাকিদ করেছি৷ তার মা দুর্বলতা সহ্য করে তাকে নিজের গর্ভে ধারণ করে এবং দু’বছর লাগে তার দুধ ছাড়তে ৷ ২৩   (এ জন্য আমি তাকে উপদেশ দিয়েছি) আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো এবং নিজের পিতা-মাতার প্রতিও, আমার দিকেই তোমাকে ফিরে আসতে হবে৷

২৩ . এ শব্দগুলো থেকে ইমাম শাফে'ঈ (র), ইমাম আহমাদ (র), ইমাম আবু ইউসুফ (র) ও ইমাম মুহাম্মাদ (র) এ অর্থ গ্রহণ করেছেন যে, শিশুর দুধ পান করার মেয়াদ ২ বছরে পূর্ণ হয়ে যায়। এ মেয়াদকালে কোন শিশু যদি কোন স্ত্রীলোকের দুধপান করে তাহলে দুধ পান করার "হুরমাত" (অর্থাৎ দুধপান করার কারণে স্ত্রীলোকটি তার মায়ের মর্যাদায় উন্নীত হয়ে যাওয়া এবং তার জন্য তার সাথে বিবাহ হারাম হয়ে যাওয়া ) প্রমাণিত হয়ে যাবে। অন্যথায় পরবর্তীকালে কোন প্রকার দুধ পান করার ফলে কোন "হুরমাত" প্রতিষ্ঠিত হবে না। এ উক্তির স্বপক্ষে ইমাম মালেকেরও একটি বর্ণনা রয়েছে। কিন্তু ইমাম আবু হানীফা (র) অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করার উদ্দেশ্যে এ মেয়াদকে বাড়িয়ে আড়াই বছর করার অভিমত ব্যক্ত করেন। এই সঙ্গে ইমাম সাহেব একথাও বলেন, যদি দু'বছর বা এর চেয়ে কম সময়ে শিশুর দুধ ছাড়িয়ে দেয়া হয় এবং খাদ্যের ব্যাপারে শিশু কেবল দুধের ওপর নির্ভরশীল না থাকে, তাহলে এরপর কোন স্ত্রীলোকের দুধ পান করার ফলে কোন দুধপান জনিত হুরমাত প্রমাণিত হবে না। তবে যদি শিশুর আসল খাদ্য দুধই হয়ে থাকে তাহলে অন্যান্য খাদ্য কম বেশি কিছু খেয়ে নিলেও এ সময়ের মধ্যে দুধ পানের কারণে হুরমাত প্রমাণিত হয়ে যাবে। কারণ শিশুকে অপরিহার্যভাবে দু'বছরেই দুধপান করাতে হবে, আয়াতের উদ্দেশ্য এটা নয়। সূরা বাকারায় বলা হয়েছে,

-----------------------

" মায়েরা শিশুদেরকে পুরো দু'বছর দুধ পান করাবে, তার জন্য যে দুধপান করার মেয়াদ পূর্ণ করতে চায় ।" (২৩৩ আয়াত )

ইবনে আব্বাস (রা) থেকে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন এবং উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে তার সাথে একমত হয়েছেন যে, গর্ভধারণের সর্বনিম্ন মেয়াদ ছ'মাস। কারণ কুরআনের অন্য এক জায়গায় বলা হয়েছে, "তার পেটের মধ্যে অবস্থান করা ও দুধ ছেড়ে দেয়ার কাজ হয় ৩০ মাসে। (আল আহকাফ, আয়াত ১৫) এটি একটি সূক্ষ্ণ আইনগত বিধান এবং এর ফলে বৈধ ও অবৈধ গর্ভের অনেক বিতর্কের অবসান ঘটে। 

(  আরো দেখুন :  > বুকের দুধ, স > স্তুন্যপান)

ধাত্রী প্রথা / স্তন্যপান করানোর জন্য সন্তান অন্য মহিলার নিকট সোপর্দ করা :

(২৮-ক্বাছাছ : ১২) আর আমি পূর্বেই শিশুর জন্য স্তন্য দানকারিনীদের স্তন পান হারাম করে রেখেছিলাম৷১৪ (এ অবস্থা দেখে) সে মেয়েটি তাদেরকে বললো, "আমি তোমাদের এমন পরিবারের সন্ধান দেবো যারা এর প্রতিপালনের দায়িত্ব নেবে এবং এর কল্যাণকামী হবে?"১৫ 

(১৪. অর্থাৎ ফেরাউনের স্ত্রী যে ধাত্রীকে স্তন্যদান করার জন্য ডাকতেন শিশু তার স্তনে মুখ লাগাতো না।

১৫. এ থেকে জানা যায়, ভাই ফেরাউনের মহলে পৌছে যাবার পর বোন ঘরে বসে থাকে নি। বরং সে একই প্রকার সতর্কতা ও বুদ্ধিমত্তা সহকারে মহলের আশে পাশে চক্কর দিতে থাকে। তারপর যখন জানতে পারে শিশু কারো স্তন মুখে নিচ্ছে না এবং বাদশাহ-বেগম শিশুর পছন্দনীয় ধাত্রীর সন্ধান লাভের জন্য পেরেশান হয়ে পড়েছে তখন সেই বুদ্ধিমতি মেয়ে সোজা রাজমহলে পৌছে যায়। সে ঘটনাস্থালে গিয়ে বলে আমি একজন ভাল ধাত্রীর সন্ধান দিতে পারি, যে বড়ই স্নেহ ও মমতা সহকারে এই শিশুর লালন-পালন করতে পারবে। 

এ প্রসংগে এ কথাও বুঝে নিতে হবে, প্রাচিন কালে বড় ও অভিজাত বংশীয় লোকেরা নিজেদের শিশু সন্তান নিজেদের কাছে রেখেই তাদের লালন পালন করার পরিবর্তে সাধারণত ধত্রীদের হাতে সোপর্দ করে দিতো এবং তারাই নিজেদের কাছে রেখেই তাদের লালন পালন করত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন কাহিনী এ কথার উল্লেখ আছে যে, মক্কার আসে পাশে মহিলারা মাঝে মাঝে মক্কায় আসতো ধনীর সেবা দান করার জন্য এবং সরদারদের সন্তানদেরকে মোটা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে দুধ পান করাবার জন্য নিয়ে যেতো। নবী সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও হালীমা সা‍দীয়ার গৃহে মরুভূমির বুকে প্রতিপালিত হয়েছেন। মিসরেও ছিল এই একই রেওয়াজ। একারনে হযরত মূসার বোন একথা বলেননি, "আমি একজন ভালো ধাত্রী এনে দিচ্ছি বরং বলেন, এমন গৃহের সন্ধান দিচ্ছি যার অধিবাসীরা এর প্রতিপালনের দায়িত্ব নেবে এবং তারা কল্যাণকামিতার সাথে একে লালন পালন করবে।")

কিয়ামতের দিনের ভয়বহতায় মা  তার দুধপানরত শিশুকে ভুলে যাবে :

(হাজ্ব:২) যেদিন তোমরা তা দেখবে, অবস্থা এমন হবে যে, প্রত্যেক দুধদানকারিনী নিজের দুধের বাচ্চাকে ভুলে যাবে, প্রত্যেক গর্ভবতীর গর্ভপাত হয়ে যাবে এবং মানুষকে তোমরা মাতাল দেখবে অথচ তারা নেশাগ্রস্ত হবে না৷ আসলে আল্লাহর আযাবই হবে এমনি কঠিন৷

(২. আয়াতে (আরবী) এর পরিবর্তে (আরবী) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আরবী ভাষার দিক দিয়ে উভয় শব্দের অর্থের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে এই যে, (আরবী) অর্থ হচ্ছে যে দুধ পান করায়। এবং (আরবী) এমন অবস্থাকে বলা হয় যখন কার্যত সে দুধ পান করাতে থাকে এবং শিশু তার স্তন মুখের মধ্যে নিয়ে থাকে। কাজেই এখানে যে চবিটি আঁকা হয়েছে সেটি হচ্ছে এই যে, যখন কিয়ামতের সে কম্পন শুরু হবে, মায়েরা নিজেদের শিশুসন্তানদেরকে দুধ পান করাতে করাতে ফেলে দিয়ে পালাতে থাকবে এবং নিজের কলিজার টুকরার কি হলো, একথা কোন মায়ের মনেও থাকবে না।)

দুনিয়া :

(১৭:৭৪) আর যদি (হে মুহাম্মদ !) আমি তোমাকে মজবুত না রাখতাম তাহলে তোমার পক্ষে তাদের দিকে কিছু না কিছু ঝুঁকে পড়া অসম্ভব ব্যাপার ছিলো না৷৭৫) কিন্তু যদি তুমি এমনটি করতে তাহলে আমি এ দুনিয়ায় তোমাকে দ্বিগুণ শাস্তির মজা টের পাইয়ে দিতাম এবং আখেরাতেও, তারপর আমার মুকাবিলায় তুমি কোনো সাহায্যকারী পেতে না৷

মানুষ দুনিয়ার কেবল বাহ্যিক দিকটাই দেখে :

(৩০-রূম: ৭) লোকেরা দুনিয়ায় কেবল বাহ্যিক দিকটাই জানে এবং আখেরাত থেকে তারা নিজেরাই গাফেল৷   

৪ . অর্থাৎ যদিও আখেরাতের প্রমাণ পেশ করার মত বহু সাক্ষ্য ও নিদর্শন রয়েছে এবং সেগুলো থেকে গাফিল হবার কোন যুক্তি সঙ্গত কারণ নেই। তবুও এরা নিজেরাই গাফিল থেকেছে। অন্য কথায় এটা তাদের নিজেদের ত্রুটি । দুনিয়ার জীবনের এই বাহ্যিক পর্দার উপর দৃষ্টি নিবন্ধ করে তারা বসে রয়েছে । এর পিছনে যা কিছু আসছে সে সম্পর্কে তারা কিছুই জানেনা। নয় তো আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদেরকে জানাবার ব্যাপারে কোন প্রকার ত্রুটি করা হয়নি।

দুনিয়ার জীবনে অপরের শোভা সৌন্দর্য  জাকজমক দেখে তা কামনা করা কতটুকু বৈধ?  :

(২৮-ক্বাছাছ : ৭৯) একদিন সে সম্প্রদায়ের সামনে বের হলো পূর্ণ জাঁকজমক সহকারে৷ যারা দুনিয়ার জীবনের ঐশ্বর্যের জন্য লালায়িত ছিল তারা তাকে দেখে বললো, "আহা! কারূনকে যা দেয়া হয়েছে তা যদি আমরাও পেতাম! সে তো বড়ই সৌভাগ্যবান৷"  ৮০) কিন্তু যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছিল তারা বলতে লাগলো, "তোমাদের ভাবগতিক দেখে আফসোস হয়৷ আল্লাহর সওয়াব তার জন্য ভালো যে ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, আর এ সম্পদ সবরকারীরা ছাড়া আর কেউ লাভ করে না৷৮১) শেষ পর্যন্ত আমি তাকে ও তার গৃহকে ভূগর্ভে পুতে ফেললাম৷ তখন আল্লাহর মোকাবিলায় তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসার মতো সাহায্যকারীদের কোন দল ছিল না এবং সে নিজেও নিজেকে সাহায্য করতে পারলো না৷  ৮২) যারা আগের দিন তার মতো মর্যাদালাভের আকাংখা পোষণ করছিল তারা বলতে লাগলো, "আফসোস, আমরা ভুলে গিয়েছিলাম যে, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা তার রিযিক প্রসারিত করেন এবং যাকে ইচ্ছা তাকে সীমিত রিযিক দেন৷১০১ যদি আল্লাহ আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করতেন, তাহলে আমাদেরও ভূগর্ভে পুতে ফেলতেন৷ আফসোস, আমাদের মনে ছিল না, কাফেররা সফলকাম হয় না১০২

 

১০১. অর্থাৎ আল্লাহর পক্ষ থেকে রিযিক প্রসারিত বা সংকুচিত করা যেটাই ঘটুক না কেন তা ঘটে তাঁর ইচ্ছাক্রমেই । এ ইচ্ছার মধ্যে তাঁর ভিন্নতর উদ্দেশ্য সক্রিয় থাকে। কাউকে বেশী রিযিক দেবার অর্থ নিশ্চিত ভাবে এ নয় যে, আল্লাহ তার প্রতি খুবই সন্তুষ্ট তাই তাকে পুরষ্কার দিচ্ছেন। অনেক সময় কোন ব্যক্তি হয় আল্লাহর কাছে বড়ই ঘৃণিত ও অভিশপ্ত কিন্তু তিনি তাকে বিপুল পরিমাণ ধন-দৌলত দিয়ে যেতে থাকেন। এমনকি এ ধন শেষ পর্যন্ত তার উপর আল্লাহর কঠিন আযাব নিয়ে আসে। পক্ষান্তরে যদি কারো রিযিক সংকুচিত হয়, তাহলে নিশ্চিতভাবে তার এ অর্থ হয় না যে, আল্লাহ তার প্রতি নারাজ হয়ে গেছেন এবং তাকে শাস্তি দিচ্ছেন। অধিকাংশ সৎলোক আল্লাহর প্রিয়পাত্র হওয়া সত্ত্বেও আর্থিক অভাব অনটনের মধ্যে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় এ অভাব অনটন তাঁদের জন্য আল্লাহর রহমতে পরিণত হয়েছে। এ সত্যটি না বোঝার ফলে যারা আসলে আল্লাহর গযবের অধিকারী হয় তাদের সমৃদ্ধিকে মানুষ ঈর্ষার দৃষ্টিতে দেখে।

১০২. "অর্থাৎ আমাদের এ ভুল ধারনা ছিল যে, পার্থিব সমৃদ্ধি ও ধনাঢ্যতাই সফলতা। এ কারনে আমরা মনে করে বসেছিলাম কারূন বড়ই সাফল্য অর্জন করে চলছে। কিন্তু এখন বুঝলাম, আসল সাফল্য অন্য কোন জিনিসের নাম এবং তা কাফেরদের ভাগ্যে জোটে না। কারূনের ঘটনার এ শিক্ষনীয় দিকটি কেবলমাত্র কুরআনেই বর্নিত হয়েছে। বাইবেলে ও তালমূদে এর কোন উল্লেখ নেই। তবে এ দু'টি কিতাবে যে বিস্তারিত বিবরণ এসেছে তা থেকে জানা যায়, বনী ইসরাঈল যখন মিশর থেকে বের হয় তখন এ ব্যক্তিও নিজের দলবল সহ তাদের সাথে বের হয়। তারপর সে হযরত মূসা ও হারূনের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র করে। আড়াইশ' লোক এ ষড়যন্ত্রে তার সাথে শরীক ছিল। শেষ পর্যন্ত তার উপর আল্লাহর গযব নাযিল হয় এবং সে নিজ গৃহ ও ধন-সম্পদসহ মাটির মধ্যে প্রোথিত হয়ে যায়।"

কাফেরদেরকে অল্পকালেরজন্য দুনিয়া ভোগ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তারপর তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তদ শাস্তি:

(৩১-লোকমান: ২৪) আমি স্বল্পকাল তাদেরকে দুনিয়ায় ভোগ করার সুযোগ দিচ্ছি, তারপর তাদেরকে টেনে নিয়ে যাবো একটি কঠিন শাস্তির দিকে৷  

দুনিয়া  আখিরাত : উভয়েরই প্রয়োজন রয়েছে : ইসলামে বৈরাগ্যবাদ তথা দুনিয়াত্যাগী হওয়া হারাম :

(২৮-ক্বাছাছ : ৭৭) আল্লাহ তোমাকে যে সম্পদ দিয়েছেন তা দিয়ে আখেরাতের ঘর তৈরি করার কথা চিন্তা করো এবং দুনিয়া থেকেও নিজের অংশ ভুলে যেয়ো না৷

(২-বাক্বারা: ২০১) হে পরওয়ারদেগার! আমাদিগকে দুনয়াতেও কল্যাণ দান কর এবং আখেরাতেও কল্যাণ দান কর এবং আমাদিগকে দোযখের আযাব থেকে রক্ষা কর। 

দুনিয়ার জীবন একটা খেলা  মনভুলানো সামগ্রী মাত্র, আসল জীবন হচ্ছে পরকাল:

(২৯-আনকাবুত:৬৪) আর এ দুনিয়ার জীবন একটি খেলা ও মন ভুলানোর সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়৷ ১০২  ৬৫) আসল জীবনের গৃহতো হচ্ছে পরকালীন গৃহ, হায়! যদি তারা জানতো৷ ১০৩  

১০২ . অর্থাৎ এর বাস্তবতা শুধুমাত্র এতটুকুই যেমন ছোট ছেলেরা কিছুক্ষণের জন্য নেচে গেয়ে আমোদ করে এবং তারপর যার যার ঘরে চলে যায়। এখানে যে রাজা হয়ে গেছে সে আসলে রাজা হয়ে যায়নি বরং শুধুমাত্র রাজার অভিনয় করছে। এক সময় তার এ খেলা শেষ হয়ে যায়। তখন সে ঠিক তেমনি দীনহীন অবস্থায় রাজ সিংহাসন থেকে বিদায় নেয় যেভাবে এ দুনিয়ার বুকে এসেছিল। অনুরূপভাবে জীবনের কোন একটি আকৃতিও এখানে স্থায়ী ও চিরন্তন নয়। যে যে অবস্থায়ই আছে সাময়িকভাবেএকটি সীমিত সময়কালের জন্যই আছে। মাত্র কয়েকদিনের জীবনের সাফল্যের জন্য যারা প্রাণপাত করে এবং এবং এরি জন্য বিবেক ও ঈমান বিকিয়ে দিয়ে সামান্য কিছু আয়েশ আরামের উপকরণ ও শক্তি- প্রতিপত্তির জৌলুস করায়ত্ত করে নেয়, তাদের এ সমস্ত কাজ মন ভুলানো ছাড়া আর কিছুই নয়। এসব খেলনার সাহায্যে তারা যদি দশ, বিশ বা ষাট সত্তর বছর মন ভুলানোর কাজ করে থাকে এবং তারপর শূন্য হাতে মৃত্যুর দরোজা অতিক্রম করে ভ্রমন জগতে পৌঁছে যায় সেখানকার স্থায়ী ও চিরন্তন জীবনে তাদের এ খেলা এক প্রতিপত্তিহীন রোগে পরিণত হয়, তাহলে এ ছেলে ভুলানোর লাভ কি ৷ 

১০৩ . অর্থাৎ যদি তারা একথা জানতো, এ দুনিয়ার জীবন একটি পরীক্ষার অবকাশ মাত্র এবং মানুষের জন্য আসল জীবন, যা চিরকাল স্থায়ী হবে, তা হচ্ছে আখেরাতের জীবন, তাহলে তারা এখানে পরীক্ষার সময় কালকে খেলা তামাশায় নষ্ট না করে এর প্রতিটি মুহূর্ত এমনসব কাজে ব্যবহার করতো যা সেই চিরন্তন জীবনের জন্য উৎকৃষ্ট ফলদায়ক হতো। 

(বিস্তারিত দেখুন : শ > শহীদ, জ > জিহাদ)

দুনিয়ার জীবন প্রতারনা- এর অর্থ কি ? দুনিয়ার জীবন সম্পর্কে ভুল ধারাণা সমূহ :

(৩১-লোকমান: ৩৩) ...কাজেই এ দুনিয়ার জীবন যেন তোমাদের প্রতারিত না করে ৬১  এবং প্রতারক যেন তোমাকে আল্লাহর ব্যাপারে প্রতারিত করতে সক্ষম না হয়৷ ৬২  

৬১ . দুনিয়ার জীবন স্থুলদর্শী লোকদেরকে নানা রকমের ভুল ধারণায় নিমজ্জিত করে। কেউ মনে করে, বাঁচা-মরা যা কিছু শুধুমাত্র এ দুনিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ, এরপর আর দ্বিতীয় কোন জীবন নেই। কাজেই যা কিছু করার এখানেই করে নাও। কেউ অর্থ, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি ও প্রাচুর্যের নেশায় মত্ত হয়ে নিজের মৃত্যুর কথা ভুলে যায় এবং এ ভুল ধারণা পোষণ করতে থাকে যে, তার এ আরাম-আয়েশ ও কর্তত্ব চিরস্থায়ী, এর ক্ষয় নেই। কেউ নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্য ভুলে গিয়ে কেবলমাত্র বৈষয়িক লাভ ও স্বাদ-আহলাদকে একমাত্র উদ্দেশ্য মনে করে নেয় এবং "জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন'' ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যকে কোন গুরুত্বই দেয় না। এর ফলে তার মনুষ্যত্বের মান যত নিচে নেমে যেতে থাকে না কেন তার কোন পরোয়াই সে করে না ।কেউ মনে করে বৈষয়িক সমৃদ্ধিই ন্যায়-অন্যায় সত্য-মিথ্যার আসল মানদণ্ড। এ সমৃদ্ধি যে পথেই অর্জিত হবে তাই সত্য এবং তার বিপরীত সবকিছুই মিথ্যা। কেউ এ সমৃদ্ধিকেই আল্লাহর দরবারে অনুগৃহীত হবার আলামত মনে করে। এর ফলে সে সাধারণভাবে মনে করতে থাকে, যদি দেখা যায় যে কোন উপায়েই হোক না কেন একজন লোক বিপুল সম্পদের অধিকারী হতে চলেছে, তাহলে সে আল্লাহর প্রিয়পাত্র এবং যার বৈষয়িক অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে, তা হক পথে থাকা ও সৎনীতি অবলম্বন করার কারণেই হোক না কেন তার পরকাল ঝরঝরে হয়ে গেছে। এ ধারণা এবং এ ধরনের যত প্রকার ভুল ধারণা আছে সবগুলোকেই মহান আল্লাহ এ আয়াতে " দুনিয়ার জীবনের প্রতারণা" বলে উল্লেখ করেছেন। 

৬২ . (----) প্রতারক শয়তানও হতে পারে আবার কোন মানুষ বা একদল মানুষও হতে পারে, মানুষের নিজের মন ও প্রবৃত্তিও হতে পারে এবং অন্য কোন জিনিসও হতে পারে। কোন বিশেষ ব্যক্তি বা বিশেষ বস্তু নির্ধারণ না করে এ বহুমুখী অর্থের অধিকারী শব্দটিকে তার সাধারণ ও সার্বজনীন অর্থে ব্যবহার করার কারণ হচ্ছে এই যে, বিভিন্ন লোকের কাছে প্রতারিত হবার মূল বিভিন্ন হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি বিশেষ করে যে উপায়েই এমন প্রতারণার শিকার হয়েছে যা সঠিক দিক থেকে ভুল দিকে তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। তা-ই তার জন্য "আল গারূর " তথা প্রতারক। 

"আল্লাহর ব্যাপারে প্রতারিত করা " শব্দ গুলো ব্যাপক অর্থের অধিকারী। বিভিন্ন ধরনের প্রতারনা এর অন্তরভুক্ত। কাউকে তার "প্রতারক" এ নিশ্চয়তা দেয় যে, আল্লাহ আদতেই নেই। কাউকে বুঝায়, আল্লাহ এ দুনিয়া সৃষ্টি করে হাত-পা গুটিয়ে বসে গেছেন এবং এখন এ দুনিয়া তিনি বান্দাদের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। কাউকে এ ভুল ধারণা দেয় যে, আল্লাহর এমন কিছু প্রিয়পাত্র আছে, যাদের নৈকট্য অর্জন করে নিলে তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে। তুমি নিশ্চিতভাবেই ক্ষমার অধিকারী হবে। কাউকে এভাবে প্রতারণা করে যে, আল্লাহ তো ক্ষমাশীল ও করুণাময় । তোমরা পাপ করতে থাকো, তিনি ক্ষমা করে যেতে থাকবেন। কাউকে বুঝায়, মানুষ তো নিছক একটা অক্ষম জীব ছাড়া আর কিছুই নয়। তার মনে ভুল ধারণা সৃষ্টি করে দেয় এই বলে যে, তোমাদের তো হাত-পা বাঁধা, যা কিছু খারাপ কাজ তোমরা করো সব আল্লাহই করান। ভালো কাজ থেকে তোমরা দূরে সরে যাও, কারণ আল্লাহ তা করার তাওফীক তোমাদের দেন না। না জানি আল্লাহর ব্যাপারে এমনিতর কত বিচিত্র প্রতারণার শিকার মানুষ প্রতিদিন হচ্ছে। যদি বিশ্লেষণ করে দেখা হয়, তাহলে শেষ পর্যন্ত প্রত্যেকটি গোমরাহী, গোনাহ ও অপরাধের মূল কারণ হিসেবে দেখা যাবে, মানুষ আল্লাহর ব্যাপারে কোন না কোন প্রতারণার শিকার হয়েছে এবং তার ফলেই তার বিশ্বাসে দেখা দিয়েছে বিভ্রান্তি অথবা সে নৈতিক চরিত্রহীনতার শিকার হয়েছে । 

দুনিয়ার জীবনে দীর্ঘ হায়াত পেয়ে কি কোন লাভ আছে, যদি ঈমান গ্রহণ না করা হয় ?  

(২৬.শুআরা:২০৪) এরা কি আমার আযাব ত্বরান্বিত করতে চাচ্ছে?  ২০৫) তুমি কি কিছু ভেবে দেখেছো, যদি আমি তাদেরকে বছরের পর বছর ভোগ বিলাসের অবকাশও দিই ২০৬) এবং তারপর আবার সেই একই জিনিস তাদের ওপর এসে পড়ে যায় যার ভয় তাদেরকে দেখানো হচ্ছে,  ২০৭) তাহলে জীবন যাপনের এ উপকরণগুলো যা তার এ যাবত পেয়ে আসছে এগুলো তাদের কোন কাজে লাগবে না?

দুনিয়া সম্বন্ধে অবিশ্বাসীদের দৃষ্টি ভঙ্গি :

১। পরকাল অসম্ভব, দুনিয়ার জীবনেই আমরা মরি বাঁচি, সবকিছু এখানেই :

(মুমিনুন:৩৫) সে কি তোমাদেরকে একথা জানায় যে, যখন তোমরা সবার পরে মাটিতে মিশে যাবে এবং হাড়গোড়ে পরিণত হবে তখন তোমাদেরকে (কবর থেকে) বের করা হবে?  ৩৬) অসম্ভব, তোমাদের সাথে এই যে অংগীকার করা হচ্ছে এটা একেবারেই অসম্ভব৷৩৭) জীবন কিছুই নয়, ব্যস এ পার্থিব জীবনটি ছাড়া, এখানেই আমরা মরি-বাঁচি এবং আমাদের কখ্‌খনো পুরুজ্জীবিত করা হবে না৷  ৩৮) এ ব্যক্তি (নবী) আল্লাহর নামে নিছক মিথ্যা তৈরী করছে  এবং আমরা কখনো তার কথা মেনে নিতে প্রস্তুত নই৷’’   

দুনিয়াতেও প্রশংসা আল্লাহর, আখিরাতেও প্রশংসা আল্লাহর:

(২৮-ক্বাছাছ : ৭০) .............তাঁরই জন্য প্রশংসা দুনিয়ায়ও, আখেরাতেও৷ শাসন কর্তৃত্ব তাঁরই এবং তাঁরই দিকে তোমরা ফিরে যাবে৷

৩৪-সাবা: ১) সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আকাশ সমূহ ও পৃথিবীর প্রত্যেকটি জিনিসের মালিক   এবং আখেরাতে প্রশংসা তাঁরি জন্য৷  তিনি বিজ্ঞ ও সর্বজ্ঞ৷ 

(১. মূলে 'হামদ' শব্দ ব্যবহার করা হয়েছেআবরী ভাষায় এ শব্দটি প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয় এখানে এ দুটি অর্থই প্রযুক্তআল্লাহ যখন বিশ্ব-জাহানও এর সমস্ত জিনিসের মালিক তখন অব্শ্যই এ বিশ্ব-জাহানে সৌন্দর্য, পূর্ণতা, জ্ঞান, শক্তি, শিল্পকারিতা ও কারিগরির যে শোভা দৃষ্টিগোচর হয় এসবের জন্য একমাত্র তিনিই প্রশংসার অধিকারীআর এ বিশ্ব-জাহানে বসবাসকারী যে কেউ যে কোন জিসিন থেকে লাভবান হচ্ছে বা আনন্দ ও স্বাদ উপভোগ করছে সে জন্য তার আল্লাহর প্রতিই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিৎঅন্য কেউ যখন এসব জিনিসের মালিকানায় শরীফ নেই তখন প্রশংসা বা কৃতজ্ঞতা লাভ করার অধিকার ও অন্য কারো নেই

২. অর্থাৎ যেভাবে এ দুনিয়ার সমস্ত নিয়ামত তিনিই দান করেছেন, ঠিক তেমনি আখেরাতেও মানুষ যা কিছু পাবে তা তারই ভান্ডার থেকে এবং তারই দান হিসেবেই পারেতাই সেখানেও একমাত্র তিনিই হবেন প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা লাভের অধিকারী

৩. অর্থাৎ তার সমস্ত কাজই হয় পূর্ণজ্ঞান ও প্রজ্ঞা ভিত্তিকতিনি যা করেন একদম ঠিকই করেননিজের প্রত্যেকটি সৃষ্টি কোথায় আছে, কি অবস্থা আছে, তার প্রয়োজন কি, তার প্রয়োজনের জন্য কি উপযোগী, এ পর্যন্ত সে কি করেছে এবং সামনের দিকে আরো কি করবে এসব সম্পর্কে তিনি পূর্ণজ্ঞান রাখেননিজের তৈরি দুনিয়া সম্পর্কে তিনি বেখবর নন এবং প্রতিটি অণু পরমাণুর অবস্থাও তিনি পুরোপুরি জানেন)

দুনিয়ার তুলনায় আখিরাতকে প্রাধান্য দেয়া :

মুহাম্মদ সা: এর স্ত্রীগণ দুনিয়ার তুলনায় আখিরাতকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন :

(৩৩-আহযাব: ২৮) (হে নবী)! ৪১ তোমার স্ত্রীদেরকে বলো, যদি তোমরা দুনিয়া এবং তার ভূষণ চাও, তাহলে এসো আমি তোমাদের কিছু দিয়ে ভালোভাবে বিদায় করে দিই৷  ২৯) আর যদি তোমরা আল্লাহ, তাঁর রসূল  আখেরাতের প্রত্যাশী হও, তাহলে জেনে রাখো তোমাদের মধ্যে যারা সৎকর্মশীল তাদের জন্য আল্লাহ মহা প্রতিদানের ব্যবস্থা করে রেখেছেন৷৪২ 

বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য দেখুন : ম > মুহাম্মদ সা: > তাখঈর এর ঘটনা।

ক্লিক করুন :
১। তাখঈর এর ঘটনা :

দুনিয়া  আখিরাত উভয়ই বরবাদ যে ধরণের লোকের জন্য :

(২৮-ক্বাছাছ : ৪২) এ দুনিয়ায় আমি তাদের পেছনে লাগিয়ে দিয়েছি অভিসম্পাত এবং কিয়ামতের দিন তারা হবে বড়ই ঘৃণার্হ ও ধিকৃত৷ (ব্যাখ্যার জন্য দেখুন : ত > তাগুত > তাগুতের পরিণাম)

যারা দুনিয়াবী কল্যাণ পেলে আল্লাহর ইবাদত করতে থাকে আর দুনিয়াবী কল্যাণ না পেলে ইবাদত করা ছেড়ে দেয় :

(হাজ্ব:১১) আর মানুষের মধ্যে এমনও কেউ আছে, যে এক কিনারায় দাঁড়িয়ে আল্লাহর বন্দেগী করে,১৫ যদি তাতে তার উপকার হয় তাহলে নিশ্চিন্ত হয়ে যায় আর যদি কোনো বিপদ আসে তাহলে পিছনের দিকে ফিরে যায় ১৬ তার দুনিয়াও গেলো এবং আখেরাতও৷ এ হচ্ছে সুস্পষ্ট ক্ষতি৷১৭ 

(১৫. অর্থাৎ দীনী বৃত্তের মধ্যখানে নয় বরং তার এক প্রান্তে বা কিনারায় অথবা অন্য কথায় কুফর ও ইসলামের সীমান্তে দাঁড়িয়ে বন্দেগী করে। যেমন কোন দো-মনা ব্যক্তি কোন সেনাবাহিনীর এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকে। যদি দেখে সেনাদল বিজয়লাভ করছে তাহলে তাদের সাথে মিলে যায় আর যদি দেখে পরাজিত হচ্ছে তাহলে আস্তে আস্তে কেটে পড়ে।

১৬. এখানে এমন সব লোকের কথা বলা হয়েছে যাদের মানসিক গঠন অপরিপক্ক, আকীদা-বিশ্বাস নড়বড়ে এবং যারা প্রবৃত্তির পূজা করে। তারা ইসলাম গ্রহণ করে লাভের শর্তে। তাদের ঈমান এ শর্তের সাথে জড়িত হয় যে, তাদের আকাংখা পূর্ণ হতে হবে, সব ধরণের নিশ্চিন্ততা অর্জিত হতে হবে, আল্লাহর দীন তাদের কাছে কোন স্বার্থ ত্যাগ দাবী করতে পারবে না এবং দুনিয়াতে তাদের কোন ইচ্ছা ও আশা অপূর্ণ থাকতে পারবে না। এসব হলে তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট এবং তার দীন তাদের কাছে খুবই ভালো। কিন্তু যখনই কোন আপদ বলাই নেমে আসে অথবা আল্লাহর পথে কোন বিপদ, কষ্ট ও ক্ষতির শিকার হতে হয় কিংবা কোন আকাংখা পূর্ণ হয় না তখনই আর আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতা, রসূলের রিসালাত ও দীনের সত্যতা কোনটাই ওপরই তারা নিশ্চিন্ত থাকে না। এরপর তারা এমন প্রতিটি বেদীমূলে মাথা নোয়াতে উদ্যেগী হয় যেখানে তাদের লাভের আশা ও লোকসান থেকে বেঁচে যাবার সম্ভাবনা থাকে।

১৭. এখানে একটি অনেক বড় সত্যকে কয়েকটি কথায় প্রকাশ করে দেয়া হয়েছে। আসলে দো-মনা মুসলমানের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ হয়। কাফের যখন নিজের রবের মুখাপেক্ষী না হয়ে এবং পরকাল থেকে বেপরোয়া ও আল্লাহর আইনের অনুগত্য মুক্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে বস্তুগত স্বার্থের পেচনে দৌঁড়াতে থাকে তখন সে নিজের পরকাল হারালেও দুনিয়ার স্বার্থ কিছু না কিছু হাসিল করেই নেয়। আর মু'মিন যখন পূর্ণ ধৈর্য, অবিচলতা, দৃঢ় সংকল্প ও স্থৈর্য সহকারে আল্লাহর দীনের আনুগত্য করে তখন যদিও পার্থিব সাফল্য শেষ পর্যন্ত তার পদ-চুম্বন করেই থাকে, তবুও যদি দুনিয়া একেবারেই তার নাগালের বাইরে চলে যেতেই থাকে, আখেরাতে তার সাফল্য সুনিশ্চিত হয়। কিন্তু এ দো-মনা মুসলমান নিজের দুনিয়ার স্বার্থ লাভ করতে পারে না এবং আখেরাতেও তার সাফল্যের কোন সম্ভবনা থাকে না। তার মন ও মস্তিষ্কের কোন এক প্রকোষ্ঠ আল্লাহ ও আখেরাতের অস্তিত্বের যে ধারণা রয়েছে এবং ইসলামের সাথে সম্পর্ক তার মধ্যে নৈতিক সীমারেখা কিছু না কিছু মেনে চলার যে প্রবণতা সৃষ্টি করেছে, দুনিয়ার দিকে দৌড়াতে থাকলে এগুলো তার হাত টেনে ধরে। ফলে নিছক দুনিয়াবী ও বৈষয়িক স্বার্থ অন্বেষার জন্য যে ধরনের দৃঢ়তা ও একনিষ্ঠতার প্রয়োজন তা একজন কাফেরের মতো তার মধ্যে সৃষ্টি হয় না। আখেরাতের কথা চিন্তা করলে দুনিয়ার লাভ ও স্বার্থের লোভ, ক্ষতির ভয় এবং প্রবৃত্তির কামনা বাসনাকে বিধিনিষেধের শৃংখলে বেঁধে রাখার ব্যাপারে মানসিক অস্বীকৃতি সেদিকে যেতে দেয় না বরং বৈষয়িক স্বার্থ পূজা তার বিশ্বাস ও কর্মকে এমনভাবে বিকৃত করে দেয় যে, আখেরাতে তার শাস্তি থেকে নিষ্কৃতিলাভের সম্ভাবনা থাকে না। এভাবে সে দুনিয়া ও আখেরাত দুটোই হারায়।)

দুনিয়াবী জীবনের শান-শওকতের দিকে প্রকৃত মুমিনদের দৃষ্টি দেওয়া উচিত নয় : দুনিয়ার লালসা পরিত্যাজ্য :

(২০:১৩১) আর চোখ তুলেও তাকাবে না দুনিয়াবী জীবনের শান-শওকতের দিকে, যা আমি এদের মধ্য থেকে বিভিন্ন ধরনের লোকদেরকে দিয়ে রেখেছি৷ এসব তো আমি এদেরকে পরীক্ষার মুখোমুখি করার জন্য দিয়েছি এবং তোমার রবের দেয়া হালাল রিযিকই উত্তম ও অধিকতর স্থায়ী৷

নিষিদ্ধ গাছের ফল ভক্ষণ করার কারণেই হযরত আদম :  হাওয়া : কে দুনিয়ায় পাঠানো হয়েছিল,  ধারণা ভুল : বরং এ দুনিয়ার জীবন পরীক্ষা স্বরূপ :

(২০:১২২) তারপর তার রব তাকে নির্বাচিত করলেন,  তার তাওবা কবুল করলেন এবং তাকে পথ নির্দেশনা দান করলেন৷১২৩) আর বললেন, “তোমরা (উভয় পক্ষ অর্থাৎ মানুষ ও শয়তান) এখান থেকে নেমে যাও, তোমরা পরস্পরের শত্রু থাকবে৷ এখন যদি আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে কোন নির্দেশনামা পৌছে যায় তাহলে যে ব্যক্তি আমার সেই নির্দেশ মেনে চলবে সে বিভ্রান্তও হবে না, দুর্ভাগ্য পীড়িতও হবে না৷

মানব জাতিকে দুনিয়াতে প্রেরণ করা হয়েছে, শাস্তি স্বরূপ নয়, পরীক্ষা স্বরূপ : কিন্তু কী পরীক্ষা ?

(২০:১২৩) আর বললেন, “তোমরা (উভয় পক্ষ অর্থাৎ মানুষ ও শয়তান) এখান থেকে নেমে যাও, তোমরা পরস্পরের শত্রু থাকবে৷ এখন যদি আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে কোন নির্দেশনামা পৌছে যায় তাহলে যে ব্যক্তি আমার সেই নির্দেশ মেনে চলবে সে বিভ্রান্তও হবে না, দুর্ভাগ্য পীড়িতও হবে না৷ ১২৪) আর যে ব্যক্তি আমার “যিকির (উপদেশমালা) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে তার জন্য হবে দুনিয়ায় সংকীর্ণ জীবন এবং কিয়ামতের দিন আমি তাকে উঠাবো অন্ধ করে৷

দুনিয়াবী আগুন তথা হালাল রিজিক্ব / আছবাব সংগ্রহ করতে গিয়ে মুসা আ: আখেরাতের পথের সন্ধান লাভ তথা নবুওয়াত লাভ :

(২০:১০) যখন সে একটি আগুন দেখলো নিজের পরিবারের লোকদেরকে বললো, “একটু দাড়াও, আমি একটি আগুন দেখেছি, হয়তো তোমাদের জন্য এক আধটি অংগার আনতে পারবো অথবা এ আগুনের নিকট আমি পথের দিশা পাবো”

(২৮-ক্বাছাছ : ২৯) মূসা যখন মেয়াদ পূর্ণ করে দিল,  এবং নিজের পরিবার পরিজন নিয়ে চললো তখন তূর পাহাড়ের দিক থেকে একটি আগুন দেখতে পেলো সে তার পরিবারবর্গকে বললো, "থামো! আমি একটি আগুন দেখছি, হয়তো আমি সেখান থেকে কোন খবর আনতে পারি অথবা সেই আগুন থেকে কোন অংগারই নিয়ে আসতে পারি যাতে তোমরা আগুন পোহাতে পারো৷"  ৩০) সেখানে পৌঁছার পর উপত্যকার ডান কিনারায়  পবিত্র ভূখণ্ডে  একটি বৃক্ষ থেকে আহ্বান এলো, "হে মূসা! আমিই আল্লাহ৷ সমগ্র বিশ্বের অধিপতি৷"

(আরো দেখুন : আ > আগুন)

দুনিয়াতে মানুষের প্রথম পদার্পন :

২:৩৮, ৭:২৪, ২৫,

পরকালে অবিশ্বাসী ব্যক্তি পুনরায় দুনিয়াতে ফেরত আসতে চাইবে : এবং পরীক্ষার ক্ষেত্রে এটা অযৌক্তিক :

৬:২৬-২৮,

(২৬.শুআরা:১০০) এখন আমাদের কোন সুপারিশকারী নেই,১০১) এবং কোন অন্তরংগ বন্ধুও নেই৷১০২) হায় যদি আমাদের আবার একবার ফিরে যাওয়ার সুযোগ মিলতো, তাহলে আমরা মুমিন হয়ে যেতাম৷

(মু’মিনুন:৯৯) (এরা নিজেদের কৃতকর্ম থেকে বিরত হবে না) এমনকি যখন এদের কারোর মৃত্যু উপস্থিত হবে তখন বলতে থাকবে, ‘‘হে আমার রব ! যে দুনিয়াটা আমি ছেড়ে চলে এসেছি সেখানেই আমাকে ফেরত পাঠিয়ে দাও, ১০০) আশা করি এখন আমি সৎকাজ করবো৷ ৯০  কখনোই নয়, ৯১  এটা তার প্রলাপ ছাড়া আর কিছু আর নয়৷ ৯২  এখন এ মৃতদের পেছনে প্রতিবন্ধক হয়ে আছে একটি অন্তরবর্তীকালীন যুগ—বরযখ যা পরবর্তী জীবনের দিন পর্যন্ত থাকবে ৷ ৯৩  

(৯০ . কুরআন মজীদের বহু জায়গায় এ বক্তব্যটি উচ্চারিত হয়েছে। অপরাধীরা মৃত্যুর সীমানায় প্রবেশ করার সময় থেকে নিয়ে আখেরাতে প্রবেশ করে জাহান্নামে দাখিল হওয়া পর্যন্ত বরং তার পরও বারবার এ আবেদনই করতে থাকবেঃ আমাদের আর একবার মাত্র দুনিয়ায় পাঠিয়ে দেয়া হোক। এখন আমরা তাওবা করছি, আর কখনো নাফরমানি করবো না, এবার আমরা সোজা পথে চলবো। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, সূরা আল আন'আম, ২৭ ও ২৮; আল আ'রাফ, ৫৩; ইবরাহীম ৪৪ ও ৪৫; আল মু'মিনূন, ১০৫ থেকে ১১৫; আশ শু'আরা, ১০২; আস সাজ্‌দাহ, ১২ থেকে ১৪; ফাতের, ৩৭; আয‌ যুমার, ৫৮ ও ৫৯; আল মু'মিন, ১০ থেকে ১২ ও আশ্‌ শূরা, ৪৪ আয়াত এবং এ সংগে টীকাগুলোও)।

৯১ . অর্থাৎ ফেরত পাঠানো হবে না। নতুন করে কাজ শুরু করার জন্য তাকে আর দ্বিতীয় কোন সুযোগ দেয়া যেতে পারে না। এর কারণ হচ্ছে, মানুষকে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করার জন্য পুনরায় যদি এ দুনিয়ায় ফেরত পাঠানো হয় তাহলে অনিবার্যভাবে দু'টি অবস্থার মধ্য থেকে একটি অবলম্বন করতে হবে। মৃত্যুর পর সে যা কিছু করেছে সেসব তার স্মৃতি ও চেতনায় সংরক্ষিত করে রাখতে হবে। অথবা এসব কিছু নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে প্রথমবার যেমন স্মৃতির কোঠা শূণ্য করে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছিল ঠিক তেমনি অবস্থায় আবার তাকে সৃষ্টি করা হবে। উল্লেখিত প্রথম অবস্থায় পরীক্ষার উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে যায়। কারণ এ দুনিয়ায় মানুষ সত্যকে প্রত্যক্ষ না করে নিজেই বুদ্ধি-বিবেকের সাহায্যে সত্যকে জেনে তাকে মেনে নেয় কিনা এবং আনুগত্য ও অবাধ্যতা করার স্বাধীনতা লাভ করা সত্ত্বেও এ দু'টি পথের মধ্য থেকে কোন্‌টি অবলম্বন করে- এরি ভিত্তিতেই হচ্ছে তার পরীক্ষা। এখন যদি তাকে সত্য দেখিয়েও দেয়া হয় এবং গোনাহের পরিণাম বাস্তবে দেখিয়ে দিয়ে গোনাহকে নির্বাচন করার পথই তার জন্য বন্ধ করে দেয়া হয় তাহলে এরপর তাকে পরীক্ষাগৃহে পাঠানোই অর্থহীন হয়ে যায়। এরপর কে ঈমান আনবে না এবং কে আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারবে৷ আর দ্বিতীয় অবস্থাটি সম্পর্কে বলা যায় যে, এটি পরীক্ষিতকে আবার পরীক্ষা করার মতো অবস্থা । যে ব্যক্তি একবার এ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে তাকে আবার সে একই ধরনের আর একটি পরীক্ষায় পাঠানো নিরর্থক। কারণ সে আবার সেই আগের মতোই করবে। (আরো বেশী ব্যাখ্যা জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, সূরা আল বাকারাহ, ২২৮; আল আন'আম, ৬, ১৩৯ ও ১৪০ এবং ইউনুস, ২৬ টীকা)।

৯২ . এ অনুবাদও হতে পারে, ''এ তো এখন সে বলবেই''। এর অর্থ হচ্ছে, তার এ কথা ধর্তব্যের মধ্যে গণ্য নয়। সর্বনাশ হবার পর এখন সে একথা বলবে না তো আর কি বলবে। এ নিছক কথার কথা। ফিরে আসবে যখন তখন আবার সেসব কিছু করবে যা আগে করে এসেছে। কাজেই তাকে প্রলাপ বকতে দাও ফেরার দরজা তার জন্য খোলা যেতে পারে না।)

অসৎ পন্থায় দুনিয়াবী সৌন্দর্য কামনা করা :

(১৮:২৮) আর নিজের অন্তরকে তাদের সংগ লাভে নিশ্চিন্ত করো যারা নিজেদের রবের সন্তুষ্টির সন্ধানে সকাল-ঝাঁঝে তাঁকে ডাকে এবং কখনো তাদের দিক থেকে দৃষ্টি ফিরাবে না৷ তুমি কি পার্থিব সৌন্দর্য পছন্দ করো ?  এমন কোনো লোকের আনুগত্য করো না   যার অন্তরকে আমি আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি, যে নিজের প্রবৃত্তির কামনা বাসনার অনুসরণ করেছে এবং যার কর্মপদ্ধতি কখনো উগ্র, কখনো উদাসীন৷

দুনিয়ার সাজ সরঞ্জাম পরীক্ষার বস্তু :

(১৮:৭) আসলে পৃথিবীতে এ যাকিছু সাজ সরঞ্জামই আছে এগুলো দিয়ে আমি পৃথিবীর সৌন্দর্য বিধান করেছি তাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য যে, তাদের মধ্য থেকে কে ভালো কাজ করে৷৮) সবশেষে এসবকে আমি একটি বৃক্ষ-লতাহীন ময়দানে পরিণত করবো৷

দুনিয়াতে মুমিনরাই পরিচ্ছন্ন  পবিত্র জীবন লাভ করবে :

(১৬:৯৭) পুরুষ বা নারী যে-ই সৎকাজ করবে, সে যদি মুমিন হয়, তাহলে তাকে আমি দুনিয়ায় পবিত্র-পরিচ্ছন্ন জীবন দান করবে এবং (আখেরাতে) তাদের প্রতিদান দেবো তাদের সর্বোত্তম কাজ অনুসারে৷

দুনিয়া  আখিরাত উভয় জাহানের কল্যাণ চাও :

৭:১৫৫-১৫৬,

দুনিয়া  আখিরাতে উভয় জাহানে যারা কল্যাণ লাভ করবে :

(১৬:৪১) যারা জুলুম সহ্য করার পর আল্লাহর খাতিরে হিজরত করে গেছে তাদেরকে আমি দুনিয়াতেই ভালো আবাস দেবো এবং আখেরাতের পুরস্কার তো অনেক বড়৷

(১৬:১২২) দুনিয়ায় তাকে (হযরত ইব্রাহীম আ: কে) কল্যাণ দান করেন এবং আখেরাতের নিশ্চিতভাবেই সে সৎকর্মশীলদের অন্তরভুক্ত হবে৷

এদেরকেও (যারা দুনিয়ার জীবন কামনা করে) এবং ওদেরকেও (যারা আখিরাতের জীবন কামনা করে), দু দলকেই আমি (দুনিয়ায়) জীবন উপকরণ দিয়ে যাচ্ছি, এ হচ্ছে তোমার রবের দান এবং তোমার রবের দান রুখে দেবার কেউ নেই- (১৭:২০)

দুনিয়া পরিত্যাগ: দাওয়াতী কাজ করলে কি দুনিয়া পরিত্যাগ করতে হয় ? :

(১৭:৫৫) তোমার রব পৃথিবী ও আকাশের সৃষ্টিসমূহকে বেশী জানেন৷ আমি কতক নবীকে কতক নবীর ওপর মর্যাদা দিয়েছি *এবং আমি দাউদকে যাবুর দিয়েছিলাম৷**)

(ব্যাখ্যা : *এ বাক্যটি আসলে মক্কার কাফেরদেরকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে, যদিও আপাতদৃষ্টিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করা হয়েছে । যেমন সমকালীন লোকদের সাধারণ নিয়ম হয়ে থাকে ঠিক সেই একই নিয়মে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সমকালীন ও সমগোত্রীয় লোকেরা তাঁর মধ্যে কোন শ্রেষ্টত্ব ও মহত্ব দেখতে পাচ্ছিল না । তাঁর তাকে নিজেদের জনপদের একজন সাধারণ মানুষ মনে করছিল । আর যেসব খ্যাতনামা ব্যক্তি কয়েক শতাব্দী আগে অতীত হয়ে গিয়েছিলেন তাদের সম্পর্কে মনে করতো যে, শ্রেষ্টত্ব ও মহত্ব কেবল তাদের মধ্যেই ছিল । তাই তাঁর মুখে নবুওয়াতের দাবী শুনে তারা এ বলে আপত্তি জানাতো যে,এ লোকাটি তো বেশ লম্ফ ঝম্প মারছে । না জানি নিজেকে কী মনে করে বসেছে । বড় বড় পয়গম্বররা, যাদের শ্রেষ্ঠত্ব সারা দুনিয়ার লোকেরা মানে, তাদের সাথে এ ব্যক্তির কি কোন তুলানাই করা যেতে পারে৷ আল্লাহ এর সংক্ষিপ্ত জবাব দিয়ে বলছেন: পৃথিবী ও আকাশের সমস্ত সৃষ্টি আমার চোখের সামনে আছে । তোমরা জানো না তাদেরকে কোন পর্যায়ের এবং কে কোন ধরনের মর্যাদার অধিকারী । নিজের শ্রেষ্ঠত্বের মালিক আমি নিজেই এবং ইতিপূর্বেও আমি বহু নবী পয়দা করেছি যাদের একজন অন্যজনের চাইতে শ্রেষ্ঠ মর্যাদা সম্পন্ন ।

** এখানে বিশেষভাবে দাউদ আলাইহিস সালামকে যাবুর দান করার কথা সম্ভবত এ জন্য উল্লেখ করা হয়েছে যে, দাউদ আলাইহিস সালাম বাদশাহ ছিলেন এবং বাদশাহ সাধারণত আল্লাহর কাছ থেকে বেশী দূরে অবস্থান করে । নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সমকালীন লোকেরা যে কারণে তাঁর পয়গম্বরী ও আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার বিষয়টি মেনে নিতে অস্বীকার করতো তা তাদের নিজেদের বর্ণনা অনুযায়ী এ ছিল যে, সাধারণ মানুষের মতো তাঁর স্ত্রী - সন্তান ছিল, তিনি পানাহর করতেন, হাটে বাজারে চলাফেরা করে কেনাবেচা করতেন এবং একজন দুনিয়াদার ব্যক্তি নিজের দুনিয়াবী প্রয়োজনাদি পূরণ করার জন্য যেসব কাজ করতো তিনি তা সব করতেন । মক্কার কাফেরদের বক্তব্য ছিল, তুমি একজন দুনিয়াদার ব্যক্তি, আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার সাথে তোমার কি সম্পর্ক৷ আল্লাহর নৈকট্য লাভকারীরা তো হচ্ছে এমন সব লোক, নিজেদের দৈহিক ও মানসিক চাহিদার ব্যাপারে যাদের কোন জ্ঞান থাকে না । তারা তো একটি নির্জন জায়গায় বসে দিনরাত আল্লাহর ধ্যানে ও স্মরণে মশগুল থাকে । ঘর সংসারের চাল- ডালের কথা ভাববার সময় ও মানসিকতা তাদের কোথায় ! এর জবাবে বলা হচ্ছে, পুরোপুরি একটি রাজ্যের ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করার চাইতে বড় দুনিয়াদারী আর কি হতে পারে, কিন্তু এরপরও হযরত দাউদ আলাইহিস সালামকে নবুওয়াত ও কিতাবের নিয়ামত দান করা হয়োছিল । )

দুনিয়াতে কাফেরদেরও কিছুদিন সুখভোগ করার সুযোগ দেয়া হবে :

২:১২৬, ১১২,

৬:৯৪,

দুনিয়া জীবন ধোকা ছাড়া আর কিছুই নয়  :

৩:১৮৬, ৬:৯৪,

যারা শুধুমাত্র দুনিয়ার জীবন কামনা করে : তাদের পরিণাম :

২:২০০, ২০১, ৩:১৪৫, ৪:১৩৪ ।

(১১:১৫) যারা শুধুমাত্র এ দুনিয়ার জীবন এবং এর শোভা-সৌন্দর্য কামনা করে তাদের কৃতকর্মের সমুদয় ফল আমি এখানেই তাদেরকে দিয়ে দেই এবং এ ব্যাপারে তাদেরকে কম দেয়া হয় না৷ (১১: ১৬) কিন্তু এ ধরনের লোকদের জন্য আখেরাতে আগুন ছাড়া আর কিছুই নেই৷ (সেখানে তারা জানতে পারবে) যা কিছু তারা দুনিয়ায় বানিয়েছে সব বরবাদ হয়ে গেছে এবং এখন তাদের সমস্ত কৃতকর্ম ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে৷ 

(১৩:২৬) -- এরা দুনিয়ার জীবনে উল্লসিত, অথচ দুনিয়ার জীবন আখেরাতের তুলনায় সামান্য সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়৷  

( এ আয়াতের পটভূমি হচ্ছে, সাধারণ মূর্খ ও অজ্ঞদের মতো মক্কার কাফেররাও বিশ্বাস ও কর্মের সৌন্দর্য বা কদর্যতা দেখার পরিবর্তে ধনাঢ্যতা বা দারিদ্রের দৃষ্টিতে মানুষের মূল্য ও মর্যাদা নিরূপণ করতো। তাদের ধারণা ছিল, যারা দুনিয়ায় প্রচুর পরিমাণ আরাম আয়েশের সামগ্রী লাভ করছে তারা যতই পথভ্রষ্ট ও অসৎকর্মশীল হোক না কেন তারা আল্লাহর প্রিয়। আর অভাবী ও দারিদ্র পীড়িতরা যতই সৎ হোক না কেন তারা আল্লাহর অভিশপ্ত। এ নীতির ভিত্তিতে তারা কুরাইশ সরদারদেরকে নবী (সা) এর গরীব সাথীদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করতো এবং বলতো, আল্লাহর তার সাথে আছেন তোমরা দেখে নাও। এ ব্যাপারে তাদেরকে সতর্ক করে বলা হচ্ছে, রিযিক কমবেশী হবার ব্যাপারটা আল্লাহর অন্য আইনের সাথে সংশ্লিষ্ট। সেখানে অন্যান্য অসংখ্য প্রয়োজন ও কল্যাণ-অকল্যাণের প্রেক্ষিতে কাউকে বেশী ও কাউকে কম দেয়া হয়। এটা এমন কোন মানদণ্ড নয় যার ভিত্তিতে মানুষের নৈতিক ও মানসিক সৌন্দর্য ও কদর্যতার ফায়সালা করা যেতে পারে। মানুষের মধ্যে কে চিন্তা ও কর্মের সঠিক পথ অবলম্বন করেছে এবং কে ভুল পথ, কে উন্নত ও সৎগুণাবলী অর্জন করেছে এবং কে অসৎগুণাবলী-এরি ভিত্তিতে মানুষে মানুষে মর্যাদার মূল পার্থক্য নির্ণীত হয় এবং তাদের সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্যের আসল মানদণ্ড ও এটিই। কিন্তু মূর্খরা এর পরিবর্তে দেখে, কাকে ধন-দৌলত বেশী এবং কম দেয়া হয়েছে।)

যে কেউ আশু লাভের আকাঙ্ক্ষা করে, তাকে আমি এখানেই যাকিছু দিতে চাই দিয়ে দেই, তারপর তার ভাগে জাহান্নাম লিখে দেই, যার উত্তাপ সে ভুগবে নিন্দিত ও ধিকৃত হয়ে৷- (১৭:১৮)

দুনিয়াতে শাস্তি :

শনিবারের বিধান লংঘনকারীদের দুনিয়ার শাস্তি স্বরূপ বানরে পরিণত করা হয় : ৭:১৬৬,

তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেওয়া হয়, তারা সুপথ পায়না :

(১৬:১০৭) এটা এজন্য যে, তারা আখেরাতের মুকাবিলায় দুনিয়ার জীবন পছন্দ করে নিয়েছে এবং আল্লাহর নিয়ম হলো, তিনি এমনসব লোককে মুক্তির পথ দেখান না যারা তাঁর নিয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়৷১০৮) এরা হচ্ছে এমনসব লোক যাদের অন্তর, কান ও চোখের ওপর আল্লাহ মোহর মেরে দিয়েছেন৷ এরা গাফলতির মধ্যে ডুবে গেছে৷

দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের জীবনের উপর প্রাধান্য দেওয়া :

(১৪:৩) যারা দুনিয়ার জীবনকে আখেরাতের ওপর প্রাধান্য দেয়---ভ্রষ্টতায় এরা অনেক দূর এগিয়ে গেছে৷  

(১৬:১১২) ...তখন আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের স্বাদ আস্বাদন করালেন এভাবে যে, ক্ষুধা ও ভীতি তাদেরকে গ্রাস করলো৷

দুনিয়ার জীবনের উপমা :

(১৮:৪৬) এ ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের একটি সাময়িক সৌন্দর্য-শোভা মাত্র৷ আসলে তো স্থায়িত্ব লাভকারী সৎকাজগুলোই তোমার রবের কাছে ফলাফলের দিক দিয়ে উত্তম এবং এগুলোই উত্তম আশা-আকাঙ্ক্ষা সফল হবার মাধ্যম৷ 

(১৮:৪৫) আর হে নবী! দুনিয়ার জীবনের তাৎপর্য তাদেরকে এ উপমার মাধ্যমে বুঝাও যে, আজ আমি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করলাম, ফলে ভূ-পৃষ্ঠের উদ্ভিদ খুব ঘন হয়ে গেলো আবার কাল ও উদ্ভিদগুলোই শুকনো ভূষিতে পরিণত হলো, যাকে বাতাস উড়িয়ে নিয়ে যায়৷

(১০:২৪) দুনিয়ার  জীবন এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে, যেমন আকাশ থেকে আমি পানি বর্ষণ করলাম, তার ফলে যমীনের উৎপাদন, যা মানুষ  জীব-জন্তু খায়, ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে গেল৷ তারপর ঠিক এমন সময় যখন যমীনে তার ভরা বসন্তে পৌছে গেল এবং ক্ষেতগুলো শস্যশ্যামল হয়ে উঠলো৷ আর তার মালিকরা মনে করলো এবার তারা এগুলো ভোগ করতে সক্ষম হবে, এমন সময় অকস্মাত রাতে বা দিনে আমার হুকুম এসে গেলো৷ আমি তাকে এমনভাবে ধবংস করলাম যেন কাল সেখানে কিছুই ছিল না৷ এভাবে আমি বিশাদভাবে নিদর্শনাবলী বর্ণনা করে থাকি তাদের জন্য যারা চিন্তা ভাবনা করে৷-১০:২৪,    

 (তোমরা  অস্থায়ী জীবনের প্রতারণা জালে আবদ্ধ হচ্ছো) আর আল্লাহ তোমাদের শান্তির ভুবনের দিকে আহবান জানাচ্ছেন৷  (হেদায়াত তার ইখতিয়ারভুক্ত) যাকে তিনি চান সোজা পথ দেখান -১০:২৫,

(১১:৪৮) হুকুম হলো, “হে নূহ! নেমে যাও, আমার পক্ষ থেকে শান্তি ও বরকত তোমার ওপর এবং তোমার সাথে যেসব সম্প্রদায় আছে তাদের ওপর৷ আবার কিছু সম্প্রদায় এমনও আছে যাদেরকে আমি কিছুকাল জীবন উপকরণ দান করবো তারপর আমার পক্ষ থেকে তাদেরকে স্পর্শ করবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি৷” 

এদেরকেও (যারা দুনিয়ার জীবন কামনা করে) এবং ওদেরকেও (যারা আখিরাতের জীবন কামনা করে), দু দলকেই আমি (দুনিয়ায়) জীবন উপকরণ দিয়ে যাচ্ছি, এ হচ্ছে তোমার রবের দান এবং তোমার রবের দান রুখে দেবার কেউ নেই- (১৭:২০)

দুনিয়ার জীবন চিরন্তন নয় :

(২৬.শুআরা:১৪৬) এখানে যেসব জিনিস আছে সেগুলোর মাঝখানে কি তোমাদের এমনিই নিশ্চিন্তে থাকতে দেয়া হবে? ১৪৭) এসব উদ্যান ও প্রস্রবনের মধ্যে?  ১৪৮) এসব শস্য ক্ষেত ও রসালো গুচ্ছ বিশিষ্ট খেজুর বাগানের মধ্যে?১৪৯) তোমরা পাহাড় কেটে তার মধ্যে সগর্বে ইমারত নির্মান করছো৷

( অর্থাৎ তোমরা কি মনে করো, তোমাদের এ আয়েশ আরাম স্থায়ী ও চিরন্তন৷ এসব কোন দিন বিনষ্ট হবে না৷ তোমাদের থেকে কখনো এসব নিয়ামতের হিসাব নেয়া হবে না৷ তোমরা যেসব কাজ কারবার করে যাচ্ছো কখনো এগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না৷ )

দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী এবং তার স্বরূপ :

আরো দেখুন : আ > আফসোস ।

(আজ তারা দুনিয়ার জীবন নিয়ে মত্ত হয়ে আছে৷) আর যেদিন আল্লাহ তাদেরকে একত্র করবেন সেদিন৷ (এদুনিয়ার জীবন তাদের কাছে এমন ঠেকাবে) যেন মনে হবে তারা পরস্পরের মধ্যে পরিচয় লাভের উদ্দেশ্য নিছক একদণ্ডের জন্য অবস্থান করেছিল৷-১০:৪৫,

(১৭:৫২) যেদিন তিনি তোমাদের ডাকবেন, তোমরা তাঁর প্রশংসাবাণী উচ্চারণ করতে করতে তাঁর ডাকের জবাবে বের হয়ে আসবে এবং তখন তোমাদের এ ধারণা হবে যে, তোমরা অল্প কিছুক্ষণ মাত্র এ অবস্থায় কাটিয়েছ৷

 (ব্যাখ্যা : দুনিয়ায় মৃত্যুকাল থেকে নিয়ে কিয়ামতের দিনে উত্থান পর্যন্তকার সময়কালটা মাত্র কয়েক ঘন্টার বেশী বলে মনে হবে না । তোমরা তখন মনে করবে, আমরা সমান্য একটু সময় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তার মধ্যে হঠাৎ এ কিয়ামতের শোরগোল আমাদের জাগিয়ে দিয়েছে ।)

(২০:১০৩) তারা পরস্পর চুপিচুপি বলাবলি করবে, দুনিয়ায় বড়জোর তোমরা দশটা দিন অতিবাহিত করেছো”১০৪) –আমি ভালোভাবেই জানি তারা কিসব কথা বলবে, (আমি এও জানি) সে সময় তাদের মধ্যে যে সবচেয়ে বেশী সতর্ক অনুমানকারী হবে সে বলবে, না তোমাদের দুনিয়ার জীবনতো মাত্র একদিনের জীবন ছিল৷

(মু’মিনুন:১১২) তারপর আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, বলো,পৃথিবীতে তোমরা কত বছর থাকলে? ১১৩) তারা বলবে, ‘‘এক দিন বা দিনেরও কিছু অংশে আমরা সেখানে অবস্থান করেছিলাম, গণনাকারীদেরকে জিজ্ঞেস করে নিন৷’’১১৪) বলবেন, ‘‘অল্পক্ষণই অবস্থান করেছিলে,হায়!যদি তোমরা একথা সে সময় জানতে ৷ ১১৫) তোমরা কি মনে করেছিলে আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদের কখনো আমার দিকে ফিরে আসতে হবে না?’’

(৩০-রূম: ৫৫) আর যখন সেই সময় শুরু হবে,  যখন অপরাধীরা কসম খেয়ে খেয়ে বলবে , আমরা তো মুহূর্তকালের বেশি অবস্থান করিনি৷  এভাবে তারা দুনিয়ার জীবনে প্রতারিত হতো৷

৮২ . অর্থাৎ দুনিয়াতেও তারা এমনিই ভূল আন্দাজ- অনুমান করতো। সেখানেও সত্য অনুধাবন করতে পারতো না। এ জন্যই বলে বেড়াতো কোন কিয়ামত টিয়ামত হবে না, মরার পরে আর কোন জীবন নেই এবং কোন আল্লাহর সামনে হাজির হয়ে আমাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে না।

দুনিয়া  আখিরাতের জীবনের তুলনামূলক আলোচনা :

(২৮-ক্বাছাছ : ৬০) তোমাদের যা কিছুই দেয়া হয়েছে তা নিছক দুনিয়ার জীবনের সাজ-সরঞ্জাম এবং তার সৌন্দর্য-শোভা আর যা কিছু আল্লাহর কাছে আছে তা হচ্ছে তার চেয়ে ভালো এবং অধিকতর স্থায়ী৷ তোমার কি বিবেচনা করবে না?  ৬১) আচ্ছা, যাকে আমি উত্তম প্রতিশ্রুতি দিয়েছি এবং সে তা পেতে যাচ্ছে, সে ব্যক্তি কি কখনো এমন ব্যক্তির মতো হতে পারে, যাকে আমি কেবলমাত্র দুনিয়ার জীবনের সাজ-সরঞ্জাম দিয়েছি এবং তারপর কিয়ামতের দিনের শাস্তির জন্য তাকে হাজির করা হবে?

দুনিয়ার চাকচিক্য শ্রেষ্ঠত্বের  সততার মাপকাঠি নয় :

(১৯:৭৩) এদেরকে যখন আমার সুস্পষ্ট আয়াত শুনানো হয় তখন অস্বীকারকারীরা ঈমানদারদেরকে বলে, ”বলো, আমাদের দু’দলের মধ্যে কে ভালো অবস্থায় আছে এবং কার মজলিসগুলো বেশী জাঁকালো৭৪) অথচ এদের আগে আমি এমন কত জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছি যারা এদের চাইতে বেশী সাজ-সরঞ্জামের অধিকারী ছিল এরা বাহ্যিক শান শওকতের দিক দিয়েও ছিল এদের চেয়ে বেশী অগ্রসর৷(১৯:৭৫) এদেরকে বলো, যে ব্যক্তি গোমরাহীতে লিপ্ত হয় করুণাময় তাকে ঢিল দিতে থাকেন, এমনকি এ ধরনের লোকেরা যখন এমন জিনিস দেখে নেয় যার ওয়াদা তাদের সাথে করা হয়- তা আল্লাহর আযাব হোক বা কিয়ামতের সময় তখন তারা জানতে পারে, কার অবস্থা খারাপ এবং কার দল দুর্বল!

দুনিয়ার জীবন খেল তামাশা :

৬:৩২, ৭০, ৯৪,

 (৫৭:২০) ভালভাবে জেনে রাখো দুনিয়ার এ জীবন, একটা খেলা, হাসি তামাসা, বাহ্যিক চাকচিক্য, তোমাদের পারস্পরিক গৌরব ও অহংকার এবং সন্তান সন্তুতি ও অর্থ-সম্পদে পরস্পরকে অতিক্রম করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়৷ এর উপমা হচ্ছে, বৃষ্টি হয়ে গেল এবং তার ফলে উৎপন্ন উদ্ভিদরাজি দেখে কৃষক আনন্দে উৎফূল্ল হয়ে উঠলো৷ তারপর সে ফসল পেকে যায় এবং তোমরা দেখতে পাও যে, তা হলদে বর্ণ ধারণ করে এবং পরে তা ভূষিতে পরিণত হয়৷

দুনিয়ার জীবন প্রতারণার উপকরণ ছাড়া আর কিছুই নয় :

৬:১৩০ (দুনিয়ার জীবন প্রতারণা)

পার্থিব জীবন প্রতারণার উপকরণ ছাড়া আর কিছুই নয়-৫৭:২০।

দুনিয়ার সুখ স্বাচ্ছন্দের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়েই শয়তান মানুষকে পথভ্রষ্ট করবে, এটা শয়তানের চ্যালেঞ্জ :

(১৫:৩৯) সে বললো, “হে আমার রব! তুমি যেমন আমাকে বিপথগামী করলে ঠিক তেমনিভাবে আমি পৃথিবীতে এদের জন্য প্রলোভন সৃষ্টি করে এদের সবাইকে বিপথগামী করবো

(১৯:৭৩) এদেরকে যখন আমার সুস্পষ্ট আয়াত শুনানো হয় তখন অস্বীকারকারীরা ঈমানদারদেরকে বলে, ”বলো, আমাদের দু’দলের মধ্যে কে ভালো অবস্থায় আছে এবং কার মজলিসগুলো বেশী জাঁকালো

আল্লাহর পক্ষ থেকে শয়তানকে দেয়া জবাব :

(১৫:৪২) অবশ্যি যারা আমার প্রকৃত বান্দা হবে তাদের ওপর তোমার কোনো জোর খাটবে না৷ তোমার জোর খাটবে শুধুমাত্র এমন বিপথগামীদের ওপর যারা তোমার অনুসরণ করবে

দুনিয়ার জীবন দুদিনের :

 দুনিয়ার দুদিনের জীবন ভোগ করে নাও, তারপর আমার দিকে তাদের ফিরে আসতে হবে, তখন তারা যে কুফরী করছে তার প্রতিফল স্বরূপ তাদেরকে কঠোর শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাবো৷-১০:৭০, (আজ তারা দুনিয়ার জীবন নিয়ে মত্ত হয়ে আছে৷) আর যেদিন আল্লাহ তাদেরকে একত্র করবেন সেদিন৷ (এদুনিয়ার জীবন তাদের কাছে এমন ঠেকাবে) যেন মনে হবে তারা পরস্পরের মধ্যে পরিচয় লাভের উদ্দেশ্য নিছক একদণ্ডের জন্য অবস্থান করেছিল৷-১০:৪৫,

(১৬:১১৭) দুনিয়ার সুখ-সম্ভোগ মাত্র কয়েকদিনের এবং পরিশেষে তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি৷  

দুনিয়ার জীবনে কাফিরদের/ইসলামের দাওয়াতগ্রহণে অস্বীকারকারীদের আনন্দ উল্লাসের স্বরূপ :

(১৫:৩) ছেড়ে দাও এদেরকে, খানাপিনা করুক, আমোদ ফূর্তি করুক এবং মিথ্যা প্রত্যাশা এদেরকে ভুলিয়ে রাখুক৷ শিগ্‌গির এরা জানতে পারবে৷  

.

দুনিয়ায় সংকীর্ণ জীবন হবে কাদের ? যারা আল্লাহর হুকুম মানেনা :

(২০:১২৩) আর বললেন, “তোমরা (উভয় পক্ষ অর্থাৎ মানুষ ও শয়তান) এখান থেকে নেমে যাও, তোমরা পরস্পরের শত্রু থাকবে৷ এখন যদি আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে কোন নির্দেশনামা পৌছে যায় তাহলে যে ব্যক্তি আমার সেই নির্দেশ মেনে চলবে সে বিভ্রান্তও হবে না, দুর্ভাগ্য পীড়িতও হবে না৷ ১২৪) আর যে ব্যক্তি আমার “যিকির (উপদেশমালা) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে তার জন্য হবে দুনিয়ায় সংকীর্ণ জীবন এবং কিয়ামতের দিন আমি তাকে উঠাবো অন্ধ করে৷

দুনিয়াতে বিপর্যয় সৃষ্টির কারণ সমূহ : এবং বিপর্যয় সৃষ্টি না করার জন্য নির্দেশ :

তোমরা ঈমানদাররা যদি পরস্পরের বন্ধু না হও এবং পরস্পরকে সাহায্য সহযোগীতা না কর, তব দুনিয়াতে ফিতনা সৃষ্টি হবে ও বিপর্যয় দেখা দেবে : ৮:৭৩,

দুনিয়াতে বিপর্যয় সৃষ্টি করোনা : ৭:৫৬,

আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনকে প্রাধাণ্য দেয়া :

তোমাদেরকে যুদ্ধের জন্য বের হতে বললে মাটি কামড়ে পড়ে থাকো কেন ? তোমরা কি আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দিচ্ছো ? দুনিয়ার জিনিসপত্র গুলো আখিরাতে খুবই সামান্য বলে প্রমাণিত হবে : ৯:৩৮,

তোমাদেরকে যুদ্ধের জন্য বের হতে বললে মাটি কামড়ে পড়ে থাকো কেন ? তোমরা কি আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দিচ্ছো ? দুনিয়ার জিনিসপত্র গুলো আখিরাতে খুবই সামান্য বলে প্রমাণিত হবে : ৯:৩৮,

 কথা সত্য, যারা আমার সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না এবং পার্থিব জীবনেই পরিতৃপ্ত  নিশ্চিন্তে থাকে আর আমার নিদর্শনসমূহ থেকে গাফেল, তাদের শেষ আবাস হবে জাহান্নাম এমন সব অসৎকাজের কর্মফল হিসেবে যেগুলো তারা (নিজেদের ভুল আকীদা  ভূল কার্যধারার কারণে) ক্রমাগতভাবে আহরণ করতো:১০:৭-৮,

দুনিয়ার জীবন যাদেরকে প্রতারণায় নিক্ষেপ করে : ৭:৫১ (যারা আখিাত অস্বীকার করে),

দুনিয়াতে কাফেররা পুনরায় ফেরত আসতে চাইবে সৎকাজ করার জন্য : ৭:৫৩ (যারা আখিরাত অস্বীকার করে)।

জালিমরা কেবল দুনিয়াতেই শাস্তি দিতে পারে :

(২০:৭২) যাদুকররা জবাব দিল, “সেই সত্তার কসম! যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, উজ্জ্বল সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী সামনে এসে যাওয়ার পরও আমরা (সত্যের ওপর) তোমাকে প্রাধান্য দেবো, এটা কখনো হতে পারে না৷  তুমি যা কিছু করতে চাও করো৷ তুমি বড় জোর এ দুনিয়ার জীবনের ফায়সালা করতে পারো  

জান্নাতের অবস্থান কোথায় হবে ?  দুনিয়াটাকেই কি জান্নাতে পরিণত করা হবে ?

(২০:১০৫) -এ লোকেরা  তোমাকে জিজ্ঞেস করছে, সেদিন এ পাহাড়গুলো কোথায় চলে যাবে? বলো, আমার রব তাদেরকে ধূলি বানিয়ে উড়িয়ে দেবেন১০৬) এবং যমীনকে এমন সমতল প্রান্তরে পরিণত করে দেবেন যে,  ১০৭) তার মধ্যে তোমরা কোন উঁচু নিচু ও ভাঁজ দেখতে পাবে না৷

( পরকালীন জগতে পৃথিবী যে নতুন রূপ নেবে কুরআন মজীদের বিভিন্ন জায়গায় তা বর্ণনা করা হয়েছে। সূরা ইনশিকাকে বলা হয়েছে ()"যখন পৃথিবী বিস্তৃত করে দেয়া হবে"। সূরা ইনফিতারের বলা হয়েছে () "যখন সাগর চিরে ফেলা হবে"। এর অর্থ সম্ভবত এই যে, সমুদ্রের তলদেশ ফেটি যাবে এবং সমস্ত পানি পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগে চলে যাবে। সূরা তাকবীররে বলা হয়েছেঃ ()"যখন সমুদ্র ভরে দেয়া হবে বা সমান করে দেয়া হবে"। এখানে বলা হচ্ছে যে, পাহাড়গুলো ভেংগে গুঁড়ো গুঁড়ো করে সারা পৃথিবীকে একটি সমতল প্রান্তরে পরিণত করা হবে। মনের পাতায় এর যে আকৃতি গড়ে উঠে তা হচ্ছে এই যে, পরকালীন দুনিয়ায় সমস্ত সমুদ্র ভরাট করে, পাহাড়গুলো ভেংগে উঁচু নীচু সমান করে, বন-জংগল সাফ করে পুরোপুরি একটি বলের গাত্রাবরণের মতো সমান ও মসৃন করে দেয়া হবে। এ আকৃতি সম্পর্কে সূরা ইবরাহীমের ৪৮আয়াতে বলা হয়েছে () "এমন দিন যখন পৃথিবীকে পরিবর্তিত করে ভিন্ন কিছু করে দেয়া হবে"। এ আকৃতির পৃথিবীর ওপর হাশর প্রতিষ্ঠিত হবে এবং আল্লাহ সেখানে আদালত তথা ন্যায়বিচার কায়েম করবেন। তারপর সবশেষে তাকে যে আকৃতি দান করা হবে সূরা যুমারের ৭৪ আয়াতে তা এভাবে বলা হয়েছেঃ 

---------------------

অর্থাৎ মুত্তাকীরা "বলবে, সেই আল্লাহর শোকর যিনি আমাদের দ্বারা তাঁর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন এবং আমাদের পৃথিবীর উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিয়েছেন। আমরা এ জান্নাতে যেখানে ইচ্ছা নিজেদের জায়গা বানিয়ে নিতে পারি। কাজেই সৎকর্মশীলদের জন্য রয়েছে সর্বোত্তম প্রতিদান"। 

এ থেকে জানা যায়, সবশেষে এ সমগ্র পৃথিবীটিকেই জান্নাতে পরিণত করা হবে এবং আল্লাহর মুত্তাকী ও সৎকর্মশীল বান্দারা হবে এর উত্তরাধিকারী। সে সময় সারা পৃথিবী একটি দেশে পরিণত হবে। পাহাড়-পর্বত, সাগর, নদী, মরুভূমি আজ পৃথিবীকে অসংখ্য দেশে বিভক্ত করে রেখেছে এবং এ সাথে বিশ্বমানবতাকেও বিভক্ত করে দিয়েছে। এগুলোর সেদিন কোন অস্তিত্বই থাকবে না। (উল্লেখ্য, সাহাবা ও তাবেঈদের মধ্যে ইবনে আব্বাস (রা) ও কাতাদাহও এ মত পোষন করতেন যে জান্নাত এ পৃথিবীতেই প্রতিষ্ঠিত হবে। সূরা নাজম এর () আয়াতের ব্যাখ্যা তারা এভাবে করেন যে, এখানে এমন জান্নাতের কথা বলা হয়েছে যেখানে এখন শহীদদের রূহ রাখা হয়। )

দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা রয়েছে কাদের জন্য ?

কিছু লোক বিতর্ক করে যাতে লোকদেরকে  আল্লাহর পথ থেকে ভ্রষ্ট করা যায় :    

(হাজ্ব:৯) তারা আল্লাহর ব্যাপারে বিতর্ক করে, যাতে লোকদেরকে আল্লাহর পথ থেকে ভ্রষ্ট করা যায়৷  এমন ব্যক্তির জন্য রয়েছে দুনিয়ায় লাঞ্ছনা এবং কিয়ামতের দিন আমি তাকে আগুনের আযাবের জ্বালা আস্বাদন করাবো৷

(বিস্তারিত দেখুন : ল > লাঞ্ছনা রয়েছে কাদের জন্য ? )

যারা ধনসম্পদ  জনবলের অহংকারে ঈমান আনেনা বরং ইসলামের ক্ষতি সাধনে লিপ্ত :

(২৮-ক্বাছাছ : ৮১) শেষ পর্যন্ত আমি তাকে ও তার গৃহকে ভূগর্ভে পুতে ফেললাম৷ তখন আল্লাহর মোকাবিলায় তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসার মতো সাহায্যকারীদের কোন দল ছিল না এবং সে নিজেও নিজেকে সাহায্য করতে পারলো না৷  

(বিস্তারিত: ক > কারূন)

দুনিয়াবী  পুরস্কার :

সৎকর্মশীলদের দুনিয়াবী পুরস্কার:

১। আল্লাহর পক্ষ থেকে জমীনের খিলাফত লাভ :

দেখুন : প > পুরস্কার > দুনিয়াবী পুরস্কার।  ক্লিক করুন:  দুনিয়াবী  পুরস্কার 

২। হযরত ইব্রাহীম : এর দুনিয়াবী পুরস্কার : চার হাজার বছর ধরে দুনিয়ায় তার নাম উচ্চকিত ও উচ্চারিত হচ্ছে :

দেখুন : প > পুরস্কার > দুনিয়াবী পুরস্কার। ক্লিক করুন:  দুনিয়াবী  পুরস্কার 

৩। সততার দুনিয়াবী পুরস্কার : আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রকৃত হিকমত  জ্ঞান লাভ করা যায় :

দেখুন : প > পুরস্কার > দুনিয়াবী পুরস্কার। ক্লিক করুন:  দুনিয়াবী  পুরস্কার 

দুনিয়াতে পরিণাম : বিভিন্ন কাফের জাতির :

(১১:৬০) এ দুনিয়ায় তাদের পিছনে পিছনে লা’নত রয়েছে এবং কেয়ামতের দিনেও; জেনে রাখ, আদ জাতি তাদের পালনকর্তাকে অস্বীকার করেছে, হুদের জ্ঞাতি আদ জাতির প্রতি অভিসম্পাত রয়েছে জেনে রাখ।

(বিস্তারিত দেখূন : ন > নবীদের জীবনের ঘটনাবলী)  অথবা, হোম – কী ওয়াড > নবীদের জীবনের ঘটনাবলী

দুর্বল  / দুর্বলতা  :

(৩০-রূম: ৫৪) আল্লাহই দুর্বল অবস্থা থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেন তাঁরপর এ দুর্বলতাঁর পরে তোমাদের শক্তি দান করেন, এ শক্তির পরে তোমাদেরকে আবার দুর্বল ও বৃদ্ধ করে দেন, তিনি যা চান সৃষ্টি করেন৷ ৭৯   আর তিনি সবকিছু জানেন, সব জিনিসের ওপর তিনি শক্তিশালী৷

৭৯ . অর্থাৎ শৈশব, যৌবন ও বার্ধক্য। এসব অবস্থা তাঁরই সৃষ্ট। তিনি যাকে চান দুর্বল করে সৃষ্টি করেন, যাকে চান তাকে শক্তিশালী করেন, যাকে চান তাকে শৈশব থেকে যৌবনে পদার্পণ করতে দেন না, যাকে চান তাকে যৌবনে মৃত্যু দান করেন, যাকে চান তাকে দীর্ঘ বয়স দান করার পরও সুস্থ সবল রাখেন, যাকে চান তাকে গৌরবান্বিত যৌবনকালের পরে বার্ধক্যে এমন কষ্টকর পরিণতির দান করেন যার ফলে দুনিয়াবাসী শিক্ষালাভ করে, এসবই তাঁর ইচ্ছা। মানুষ নিজের জায়গায় বসে যতই অহংকারে মত্ত হয়ে উঠুক না কেন আল্লাহর শক্তির শৃঙ্খলে সে এমনভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা যে, আল্লাহ তাকে যে অবস্থায়ই রাখুন না কেন তাঁর মধ্যে কোন পরিবর্তন আনা তাঁর পক্ষে কোনক্রমেই সম্ভবপর নয়।

জিহাদের ময়দানে কোনরূপ দুর্বলতা দেখানো যাবে না : ইস্তেক্বামাত অবলম্বন করতে হবে :

(৩০-রূম: ৬০) কাজেই ( হে নবী!) সবর করো, অবশ্যই আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য  এবং যারা বিশ্বাস করে না তারা যেন কখনোই তোমাকে গুরুত্বহীন মনে না করে৷ ৮৫  

৮৫ . অর্থাৎ শত্রুরা যেন তোমাদের এতই দুর্বল না পায় যে, তাদের হৈ চৈ ও শোরগোলে তোমরা দমিত হবে অথবা তাদের মিথ্যাচার ও দোষারোপ করার অভিযান দেখে তোমরা ভীত হয়ে যাও কিংবা হাসি-তামাসা ও ঠাট্টা-বিদ্রুপবাণে বিদ্ধ হয়ে তোমরা হিম্মত হারিয়ে ফেলো অথবা তাদের হুমকি-ধমকি ও শক্তির প্রকাশে এবং জুলুম নির্যাতনে তোমরা ভীত হয়ে যাও কিংবা তাদের ফেলা লালসার টোপে তোমরা আটকা পড়ে যাও অথবা জাতীয় স্বার্থের নামে তারা তোমাদের কাছে যে আবেদন জানাচ্ছে তাঁর ভিত্তিতে তোমরা তাদের সাথে সমঝোতা করে নিতে উদ্যত হও। এর পরিবর্তে তারা তোমাকে নিজেদের উদ্দেশ্য সচেতনতায় এত বেশি সতর্ক এবং নিজেদের বিশ্বাস ও ঈমানে এত বেশি পাকাপোক্ত এবং এ সংকল্পে এত বেশি দৃঢ়চেতা এবং নিজেদের চরিত্রে এতবেশি মজবুত পাবে যে, কোন ভয়ে তোমাদের ভীত করা যাবে না, কোন মূল্যে তোমাদের কেনা যাবে না, কোন প্রতারণার জালে তোমাদের আবদ্ধ করা যাবে না, কোন ক্ষতি, কষ্ট বা বিপদে ফেলে তোমাদেরকে পথ থেকে সরানো যাবে না এবং দীনের ব্যাপারে কোন প্রকার আপোষ বা লেনদেনের কারবারও তোমাদের সাথে করা যেতে পারে না। " অবিশ্বাসীরা যেন তোমাকে গুরুত্বহীন মনে না করে"- আল্লাহর এ ছোট্ট একটি বাণীর আলংকারিক বাক্য-বিন্যাসের মধ্যেই এ সমস্ত বিষয়বস্তুলুকিয়ে রাখা হয়েছে। আল্লাহ তাঁর শেষ নবীকে যেমন শক্তিশালী ও গুরুত্ববহ দেখতে চাচ্ছিলেন তিনি ঠিক তেমনটি হতে পেরেছিলেন কিনা এখন ইতিহাসই তা প্রমাণ করবে। তাঁর সাথে যে ব্যক্তিই যে ময়দানে শক্তি পরীক্ষা করেছে সেই ময়দানেই সে হেরে গেছে। শেষ পর্যন্ত এ মহান ব্যক্তিত্ব এমন বিপ্লব সৃষ্টি করেন যার পথরোধ করার জন্য আরবের কাফের ও মুশরিক সমাজ তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ ও সমস্ত কলা-কৌশল প্রয়োগ করেও পুরোপুরি ব্যর্থ হয়ে গেছে। 

আত্মসমালোচনা অধ্যায় ::

বই ১ :: হাদিস ৬৬

আবু ইয়ালা শাদ্দাদ ইবনে আউস (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি যে তার নফসের প্রবৃত্তির হিসাব গ্রহণ করে এবং মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের জন্য কাজ করে। আর দুর্বল সেই ব্যক্তি, যে স্বীয় নফসের কু-প্রবৃত্তির অনুসরণ করে আবার আল্লাহর কাছেও (ভাল কিছু প্রাপ্তির) আকাংখা পোষণ করে।      

ঈমাম তিরমিযী এ হাদীসটি বর্ণনা প্রসঙ্গে একে ‘হাসান হাদীস’ আখ্যা দিয়েছেন।

হে মুমিনগণ! যখন তোমরা কোন নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে ঋনের আদান-প্রদান কর, তখন তা লিপিবদ্ধ করে নাও এবং তোমাদের মধ্যে কোন লেখক ন্যায়সঙ্গতভাবে তা লিখে দেবে; লেখক লিখতে অস্বীকার করবে না। আল্লাহ তাকে যেমন শিক্ষা দিয়েছেন, তার উচিত তা লিখে দেয়া। এবং ঋন গ্রহীতা যেন লেখার বিষয় বলে দেয় এবং সে যেন স্বীয় পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করে এবং লেখার মধ্যে বিন্দুমাত্রও বেশ কম না করে। অতঃপর ঋণগ্রহীতা যদি নির্বোধ হয় কিংবা দূর্বল হয় অথবা নিজে লেখার বিষয়বস্তু বলে দিতে অক্ষম হয়, তবে তার অভিভাবক ন্যায়সঙ্গতভাবে লিখাবে। দুজন সাক্ষী কর, তোমাদের পুরুষদের মধ্যে থেকে। যদি দুজন পুরুষ না হয়, তবে একজন পুরুষ ও দুজন মহিলা। ঐ সাক্ষীদের মধ্য থেকে যাদেরকে তোমরা পছন্দ কর যাতে একজন যদি ভুলে যায়, তবে একজন অন্যজনকে স্মরণ করিয়ে দেয়। যখন ডাকা হয়, তখন সাক্ষীদের অস্বীকার করা উচিত নয়। তোমরা এটা লিখতে অলসতা করোনা, তা ছোট হোক কিংবা বড়, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। এ লিপিবদ্ধ করণ আল্লাহর কাছে সুবিচারকে অধিক কায়েম রাখে, সাক্ষ্যকে অধিক সুসংহত রাখে এবং তোমাদের সন্দেহে পতিত না হওয়ার পক্ষে অধিক উপযুক্ত। কিন্তু যদি কারবার নগদ হয়, পরস্পর হাতে হাতে আদান-প্রদান কর, তবে তা না লিখলে তোমাদের প্রতি কোন অভিযোগ নেই। তোমরা ক্রয়-বিক্রয়ের সময় সাক্ষী রাখ। কোন লেখক ও সাক্ষীকে ক্ষতিগ্রস্ত করো না। যদি তোমরা এরূপ কর, তবে তা তোমাদের পক্ষে পাপের বিষয়। আল্লাহকে ভয় কর তিনি তোমাদেরকে শিক্ষা দেন। আল্লাহ সব কিছু জানেন। (২: ২৮২) 

(১১: ৯১) তারা জবাব দিল : “হে শোআয়েব! তোমার অনেক কথাই তো আমরা বুঝতে পারি না ১০২ আর আমরা দেখছি তুমি আমাদের মধ্যে একজন দুর্বল ব্যক্তি৷ তোমার ভ্রাতৃগোষ্ঠী না থাকলে আমরা কবেই তোমাকে পাথর নিক্ষেপে মেরে ফেলতাম৷ আমাদের ওপর প্রবল হবার মতো ক্ষমতা তোমার নেই৷

(1) তোমাদের কেউ পছন্দ করে যে, তার একটি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান হবে, এর তলদেশ দিয়ে নহর প্রবাহিত হবে, আর এতে সর্বপ্রকার ফল-ফসল থাকবে এবং সে বার্ধক্যে পৌছবে, তার দুর্বল সন্তান সন্ততিও থাকবে, এমতাবস্থায় এ বাগানের একটি ঘূর্ণিবায়ু আসবে, যাতে আগুন রয়েছে, অনন্তর বাগানটি ভষ্মীভূত হয়ে যাবে? এমনিভাবে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জন্যে নিদর্শনসমূহ বর্ননা করেন-যাতে তোমরা চিন্তা-ভাবনা কর। (Al-Baqara: 266) 

toggle(2) বস্তুতঃ আল্লাহ বদরের যুদ্ধে তোমাদের সাহায্য করেছেন, অথচ তোমরা ছিলে দুর্বল। কাজেই আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হতে পারো। (Aali Imraan: 123) 

toggle(3) তাদের ভয় করা উচিত, যারা নিজেদের পশ্চাতে দুর্বল অক্ষম সন্তান-সন্ততি ছেড়ে গেলে তাদের জন্যে তারাও আশঙ্কা করে; সুতরাং তারা যেন আল্লাহকে ভয় করে এবং সংগত কথা বলে। (An-Nisaa: 9) 

toggle(4) আল্লাহ তোমাদের বোঝা হালকা করতে চান। মানুষ দুর্বল সৃজিত হয়েছে। (An-Nisaa: 28) 

toggle(5) আর তোমাদের কি হল যে, তেমারা আল্লাহর রাহে লড়াই করছ না দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদিগকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা যে, অত্যাচারী! আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পক্ষালম্বনকারী নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও। (An-Nisaa: 75) 

toggle(6) যারা ঈমানদার তারা যে, জেহাদ করে আল্লাহর রাহেই। পক্ষান্তরে যারা কাফের তারা লড়াই করে শয়তানের পক্ষে সুতরাং তোমরা জেহাদ করতে থাক শয়তানের পক্ষালম্বনকারীদের বিরুদ্ধে, (দেখবে) শয়তানের চক্রান্ত একান্তই দুর্বল। (An-Nisaa: 76) 

toggle(7) আর যাদেরকে দুর্বল মনে করা হত তাদেরকেও আমি উত্তরাধিকার দান করেছি এ ভুখন্ডের পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলের যাতে আমি বরকত সন্নিহিত রেখেছি এবং পরিপূর্ণ হয়ে গেছে তোমার পালনকর্তার প্রতিশ্রুত কল্যাণ বনী-ইসরাঈলদের জন্য তাদের ধৈর্য্যধারণের দরুন। আর ধ্বংস করে দিয়েছে সে সবকিছু যা তৈরী করেছিল ফেরাউন ও তার সম্প্রদায় এবং ধ্বংস করেছি যা কিছু তারা সুউচ্চ নির্মাণ করেছিল। (Al-A'raaf: 137) 

toggle(8) তারপর যখন মূসা নিজ সম্প্রদায়ে ফিরে এলেন রাগাম্বিত ও অনুতপ্ত অবস্থায়, তখন বললেন, আমার অনুপস্থিতিতে তোমরা আমার কি নিকৃষ্ট প্রতিনিধিত্বটাই না করেছ। তোমরা নিজ পরওয়ারদেগারের হুকুম থেকে কি তাড়াহুড়া করে ফেললে এবং সে তখতীগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিলেন এবং নিজের ভাইয়ের মাথার চুল চেপে ধরে নিজের দিকে টানতে লাগলেন। ভাই বললেন, হে আমার মায়ের পুত্র, লোকগুলো যে আমাকে দুর্বল মনে করল এবং আমাকে যে মেরে ফেলার উপক্রম করেছিল। সুতরাং আমার উপর আর শত্রুদের হাসিও না। আর আমাকে জালিমদের সারিতে গন্য করো না। (Al-A'raaf: 150) 

toggle(9) সবাই আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হবে এবং দুর্বলেরা বড়দেরকে বলবেঃ আমরা তো তোমাদের অনুসারী ছিলাম-অতএব, তোমরা আল্লাহর আযাব থেকে আমাদেরকে কিছুমাত্র রক্ষা করবে কি? তারা বলবেঃ যদি আল্লাহ আমাদেরকে সৎপথ দেখাতেন, তবে আমরা অবশ্যই তোমাদের কে সৎপথ দেখাতাম। এখন তো আমাদের ধৈর্য্যচ্যুত হই কিংবা সবর করি-সবই আমাদের জন্যে সমান আমাদের রেহাই নেই। (Ibrahim: 21) 

toggle(10) যারা আল্লাহর পরিবর্তে অপরকে সাহায্যকারীরূপে গ্রহণ করে তাদের উদাহরণ মাকড়সা। সে ঘর বানায়। আর সব ঘরের মধ্যে মাকড়সার ঘরই তো অধিক দুর্বল, যদি তারা জানত। (Al-Ankaboot: 41) 

toggle(11) আল্লাহ তিনি দূর্বল অবস্থায় তোমাদের সৃষ্টি করেন অতঃপর দূর্বলতার পর শক্তিদান করেন, অতঃপর শক্তির পর দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান। (Ar-Room: 54) 

toggle(12) কাফেররা বলে, আমরা কখনও এ কোরআনে বিশ্বাস করব না এবং এর পূর্ববর্তী কিতাবেও নয়। আপনি যদি পাপিষ্ঠদেরকে দেখতেন, যখন তাদেরকে তাদের পালনকর্তার সামনে দাঁড় করানো হবে, , তখন তারা পরস্পর কথা কাটাকাটি করবে। যাদেরকে দুর্বল মনে করা হত, তারা অহংকারীদেরকে বলবে, তোমরা না থাকলে আমরা অবশ্যই মুমিন হতাম। (Saba: 31) 

toggle(13) অহংকারীরা দুর্বলকে বলবে, তোমাদের কাছে হেদায়েত আসার পর আমরা কি তোমাদেরকে বাধা দিয়েছিলাম? বরং তোমরাই তো ছিলে অপরাধী। (Saba: 32) 

toggle(14) দুর্বলরা অহংকারীদেরকে বলবে, বরং তোমরাই তো দিবারাত্রি চক্রান্ত করে আমাদেরকে নির্দেশ দিতে যেন আমরা আল্লাহকে না মানি এবং তাঁর অংশীদার সাব্যস্ত করি তারা যখন শাস্তি দেখবে, তখন মনের অনুতাপ মনেই রাখবে। বস্তুতঃ আমি কাফেরদের গলায় বেড়ী পরাব। তারা সে প্রতিফলই পেয়ে থাকে যা তারা করত। (Saba: 33) 

toggle(15) তারাই বলেঃ আমরা যদি মদীনায় প্রত্যাবর্তন করি তবে সেখান থেকে সবল অবশ্যই দুর্বলকে বহিস্কৃত করবে। শক্তি তো আল্লাহ তাঁর রসূল ও মুমিনদেরই কিন্তু মুনাফিকরা তা জানে না। (Al-Munaafiqoon: 8) 

দুর্ভাগ্য :

(ফুরকান:১৮) তারা বলবে, “পাক - পবিত্র আপনার সত্তা ! আপনাকে ছাড়া অন্য কাউকে আমাদের প্রভুরুপে গ্রহণ করার ক্ষমতাও তো আমাদের ছিল না কিন্তু আপনি এদের এবং এদের বাপ - দাদাদের খুব বেশী জীবনোপকরণ দিয়েছেন, এমকি এরা শিক্ষা ভুলে গিয়েছে এবং দুর্ভাগ্যপীড়িত হয়েছে৷১৯) এভাবে মিথ্যা সাব্যস্ত করবে তারা (তোমাদের উপাস্যরা) তোমাদের কথাগুলোকে যা আজ তোমরা বলছো, তারপর না তোমরা নিজেদের দুর্ভাগ্যকে ঠেকাতে পারবে , না পারবে কোথাও থেকে সাহায্য লাভ করতে এবং তোমাদের মধ্য থেকে যে-ই জুলুম করবে তাকে আমি কঠিন শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাবো৷  

আর আল্লাহ যখন কোন জাতিকে দুর্ভাগ্য কবলিত করার ফায়সালা করে ফেলেন তখন কারো রদ করায় তা রদ হতে পারে না এবং আল্লাহর মোকাবিলায় এমন জাতির কোন সহায় ও সাহায্যকারী হতে পারে না৷ -১৩:১১

(১৯:৩২) আর নিজের মায়ের হক আদায়কারী করেছেন,  এবং আমাকে অহংকারী ও হতভাগা করেননি৷  (হযরত ঈসা আ: এর বক্তব্য, যিনি শিশু অবস্থায় এ কথা গুলো বলেছিলেন )।

(২০:৬১) মূসা (যথা সময় পতিপক্ষ দলকে সম্বোধন করে) বললো, “দুর্ভাগ্য পীড়িতরা! আল্লাহর প্রতি মিথ্যা অপবাদ দিয়ো না,  অন্যথায় তিনি কঠিন আযাব দিয়ে তোমাদের ধ্বংস করে দেবেন৷ যে-ই মিথ্যা রটনা করেছে সে-ই ব্যর্থ হয়েছে”৷

(২০:১২৩) আর বললেন, “তোমরা (উভয় পক্ষ অর্থাৎ মানুষ ও শয়তান) এখান থেকে নেমে যাও, তোমরা পরস্পরের শত্রু থাকবে৷ এখন যদি আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে কোন নির্দেশনামা পৌছে যায় তাহলে যে ব্যক্তি আমার সেই নির্দেশ মেনে চলবে সে বিভ্রান্তও হবে না, দুর্ভাগ্য পীড়িতও হবে না৷ ১২৪) আর যে ব্যক্তি আমার “যিকির (উপদেশমালা) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে তার জন্য হবে দুনিয়ায় সংকীর্ণ জীবন এবং কিয়ামতের দিন আমি তাকে উঠাবো অন্ধ করে৷

দৌড়াও  / দৌড়ানো :  

(৫৭:২১) দৌড়াও এবং একে অপরের চেয়ে অগ্রগামী হওয়ার চেষ্টা করো,  তোমার রবের মাগফিরাতের দিকে এবং সে জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি আসমান ও যমীনের মত৷  তা প্রস্তুত রাখা হয়েছে সে লোকদের জন্য যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলদের প্রতি ঈমান এনেছে৷ এটা আল্লাহর অনুগ্রহ ৷ যাকে ইচ্ছা তিনি তা দান করেন৷ আল্লাহ বড়ই অনুগ্রহশীল৷

"দৌড়াও তোমাদের রবের মাগফিরাত ও সেই জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি গোটা বিশ্ব -জাহান জুড়ে, যা মুত্তাকীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। (আলে ইমরান : আয়াত ১৩৩) ।

(মু’মিনুন:৫৭) আসলে কল্যাণের দিকে দৌড়ে যাওয়া ও অগ্রসর হয়ে তা অর্জনকারী লোক  তো তারাই যারা নিজেদের রবের ভয়ে ভীত,৫৮) যারা নিজেদের রবের আয়াতের প্রতি ঈমান আনে,৫৯) যারা নিজেদের রবের সাথে কাউকে শরীক করে না৬০) এবং যাদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, যা কিছুই দেয় এমন অবস্থায় দেয় যে,  ৬১) তাদের অন্তর এ চিন্তায় কাঁপতে থাকে যে, তাদেরকে তাদের রবের কাছে ফিরে যেতে হবে৷৬২) আমি কোন ব্যক্তির ওপর, তার সাধ্যের বাইরে কোন দায়িত্ব অর্পণ করি না এবং আমার কাছে একটি কিতাব আছে যা (প্রত্যেকের অবস্থা) ঠিকমতো জানিয়ে দেয়  আর কোনক্রমেই লোকদের প্রতি জুলুম করা হবে না ৷

দৌড় প্রতিযোগিতা :

(১২:১৭) বললো, “আব্বাজান! আমরা দৌঁড় প্রতিযোগিতা করছিলাম এবং ইউসুফকে আমাদের জিনিসপত্রের কাছে রেখে গিয়েছিলাম, ইতিমধ্যে নেকড়েবাঘ এসে তাকে খেয়ে ফেলেছে৷ আপনি তো আমাদের কথা বিশ্বাস করবেন না, যদিও আমরা সত্যবাদী৷” 


`ywbqv‡Z wec`-Avc`, wech©q, aŸsm, kvw¯Í :

‡`Lyb : Rvwjg‡`i `ywbqv‡Z kvw¯Í 

‡`Lyb : Kvwdi‡`i `ywbqv‡Z kvw¯Í,  wewfbœ Kvwdi m¤úª`vq‡K †hme c×wZ‡Z aŸsm Kiv n‡q‡Q|

‡`Lyb : gybvwdK‡`i `ywbqv‡Z kvw¯Í

‡`Lyb : Amr K‡g©i kvw¯Í, `ywbqv‡Z wec` wech©q gvbyl‡`i Amr Kg© Øviv AwR©Z kvw¯Í      

‡`Lyb : gyÕwgb‡`i wec`-Avc` Avjøvni cÿ †_‡K cixÿv ¯^iƒc  

‡`Lyb : ebx BmivCj RvwZi `ywbqvex kvw¯Í 

‡`Lyb : cixÿv 

‡`Lyb : `vIqvZx Kv‡Ri †ÿ‡Î Avjøvni GKwU wbR¯^ bxwZ 


দুর্বল :

দুর্বলদেরকেও তাদের ঈমান  সৎকর্মের কারণে আল্লাহ জমিনে প্রতিষ্ঠিত করলেন এবং রাষ্ট্রক্ষমতা দান করলেন এবং সবলদেরকে তাদের বেঈমানির জন্য ক্ষমতাচ্যুত করলেন :

আর তাদের জায়গায় আমি প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম দুর্বল ও অধোপতিত করে রাখা মানব গোষ্ঠীকে৷ অতপর যে ভুখণ্ডে আমি প্রাচুর্যে ভরে দিয়েছিলাম , তার পূর্ব ও পশ্চিম অংশকে তাদেরই করতালগত করে দিয়েছিলাম৷  এভাবে বনী ইসরাঈলের ব্যাপারে তোমার রবের কল্যানের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হয়েছে৷ কারণ তারা সবর করেছিল৷ আর ফেরাউন ও তার জাতি যা কিছু তৈরী করেছিল ও উচূ করছিল তা সব ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে-৭:১৩৭,

দ্রুতকামী :

মানুষ বড়ই ত্বরা প্রবণ :

(১৭:১১) ... মানুষ বড়ই দ্রুতকামী৷

দালান  / দালান কোঠা / ইমারত :

(২৬.শুআরা:১২৮) তোমাদের এ কী অবস্থা, প্রত্যেক উঁচু জায়গায় অনর্থক একটি ইমারত বানিয়ে ফেলেছো১২৯) এবং বড় বড় প্রাসাদ নির্মান করছো, যেন তোমরা চিরকাল থাকবে?