Published using Google Docs
40 TALOBBO SHA
Updated automatically every 5 minutes

শ:

CONTENTS

শপথ :        

শত্রু :        

অপরাধীদের কে তাদের শত্রু দ্বারা শাস্তি প্রদান : শত্রুরা তাদের উপর বিজয় লাভ করে :        

প্রত্যেক নবীর জন্যই শত্রু রয়েছে, আর তারা হচ্ছে অপরাধী সম্প্রদায় :        

নবীর শত্রুর দ্বারাই শিশু নবীর প্রতিপালন :        

শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু : বিস্তারিত দেখুন :  > শয়তান।        

শয়তান  মানুষ পরস্পরের শত্রু :        

নবীর বিরুদ্ধে, কুরআনের বিরুদ্ধে শয়তানের ষড়যন্ত্র সফল হয় না :        

শব্দ :        

শস্য :        

(দেখুন :  > ফসল)        

দু:সংবাদ বাহী এমন বাতাস : যা শস্যকে বিনষ্ট করে দেয়:        

শ্বশুর / শ্বশুরালয় :        

হযরত শুআইব : কি হযরত মূসা : এর শ্বশুর ছিলেন :        

শ্রম :        

শ্রমের মজুরী / পারিশ্রমিক :        

কায়িক শ্রম :        

শাস্তি :        

শাস্তি  পুরস্কারের বিভিন্নতা হবে কয়েকটি বিষয়কে সামনে রেখে :        

১। ঈমান আনা কিন্তু সৎকাজে অবহেলা করা        

২। ঈমান আনা  সৎকাজ করা        

৩। ঈমান না আনা, তবে ইসলামের বিরোধীতা না করা        

৪। ঈমানও আনেনা, আবার ইসলামের বিরোধীতাও করে :        

৫। মুখে ঈমান আনা, কিছু আনুষ্ঠানিক ইবাদতও করা, কিন্তু ইসলাম ও কুরআন প্রতিষ্ঠায় বাধা দান করা        

আল্লাহ, মুহাম্মদ সা: এবং মুমিনদেরকে যারা কষ্ট দেয় তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি :        

দুনিয়ায় আল্লাহ কোন অপরাধীকে শাস্তি দিলে তাকে জিজ্ঞেস করে শাস্তি দেন না :        

কারূনের শাস্তি : মাটিতে পূতে ফেলার শাস্তি  :        

সমৃদ্ধশালী সাবা জাতিকে কুফরীর ও অকৃতজ্ঞতার কারণে যেভাবে  নি:শেষ করে দেওয়া হল :        

শাস্তি নাযিল হলে অপরাধীদের সাথে শাস্তির অন্তর্ভূক্ত না হওয়ার জন্য দোয়া :        

কুরআন ও নিদর্শন সমূহ অস্বীকারকারীদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর শাস্তি :        

কাফেরদেরকে অল্পকালেরজন্য দুনিয়া ভোগ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তারপর তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তদ শাস্তি:        

কুরআনের আয়াত সমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার শাস্তি :        

কুরআনের কথাকে যারা উল্টো অর্থে গ্রহণ করে তাদেরকে উল্টো করে ঝুলিয়ে জাহান্নামে শাস্তি দেওয়া হবে :        

ছোট শাস্তি  বড় শাস্তি :        

অপরাধীদেরকে / কাফিরদিগকে শাস্তি দিতে আল্লাহর দেরী হওয়ার কারণ কি ?        

অপরাধীদের শাস্তির স্বরুপ : তাদেরকে কাটা শস্যে পরিণত করা হবে :        

কুরআনের আয়াত শুনে যারা পিছনে ফিরে কেটে পড়ে তাদের শাস্তি :        

ঈমান না আনার দুনিয়াবী শাস্তি :        

জালিমদের জন্য একটি শাস্তি :পানিতে ডুবিয়ে মৃত্যু : তবে পানিতে ডুবে সকল মৃত্যুই শাস্তি নয়:        

সামেরীর শাস্তি : ধর্ম ব্যবসার শাস্তি :        

প্রবল বন্যার মাধ্যমে , বাঁধ ভেঙ্গে দেওয়ার মাধ্যমে সাবা জাতিকে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল :        

সাবা জাতির বিস্তারিত ইতিহাস দেখুন : কিভাবে একটি সমৃদ্ধশালী জাতিকে অকৃতজ্ঞতার কারণে নি:শেষ করে দেওয়া হয়েছিল :        

দুনিয়া  আখিরাত উভয় স্থানেই শাস্তি রয়েছে কাদের জন্য ?        

দুনিয়াবী শাস্তি থেকে পলায়ন করতে চাইবে অপরাধীরা  :        

দুনিয়াবী শাস্তির স্বরূপ : অপরাধী সম্প্রদায়কে কাটা শস্যে পরিণত করা হবে :        

কুরআন মেনে না চলার দুনিয়াবী  আখিরাতের শাস্তি : ১। দুনিয়ায় হবে সংকীর্ণ জীবন ও      ২। আখিরাতে উঠানো হবে অন্ধ করে :        

আসলে তোমাদের রবের শাস্তি ভয় করার মত :        

অন্যান্য শরীকরাও শাস্তির ভয়ে ভীত, আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে তোমরা মাবুদ বানিয়ে রেখেছো :        

আল্লাহ ক্ষমাশীল, কিন্তু তার আযাবও অত্যন্ত কঠিন :        

আল্লাহর শাস্তি কঠোর :        

অসৎকর্মীরা দুনিয়া  আখিরাত উভয় স্থানে শাস্তি পেয়ে থাকে:        

শিরককারীদের দুনিয়াবী শাস্তি :        

সৎকাজের আদেশ  অসৎকাজে নিষেধের কাজ যারা করতে থাকে তারা সামষ্টিক জাতীয় শাস্তি থেকে রেহাই পায় :        

অসৎ ও অনৈসলামিক রাষ্ট্রনায়কগণ  সমগ্র সমাজ ও রাষ্ট্রকেই আযাবের মুখে ঠেলে দেয় :        

অপরাধীদের কে তাদের শত্রু দ্বারা শাস্তি প্রদান : শত্রুরা তাদের উপর বিজয় লাভ করে :        

অপরাধের পুনরাবৃত্তি করলে ?        

কুরআন আখিরাত অস্বীকার কারীদের শাস্তির সংবাদ দেয় :        

আল্লাহর শাস্তি সম্পর্কে নির্ভীক হয়ে যাওয়া ?  (এ সাথে দেখুন : ভ > ভয়)        

দ্বিগুণ শাস্তি রয়েছে কাদের জন্য ?        

আলেম ওলামা সহ সমাজের যারা নেতা, যাদেরকে মানুষ অনুসরণ করে যাদের কথায় মানুষ চলে তাদের জন্য রয়েছে দ্বিগুণ শাস্তি :        

নবীর স্ত্রীও যদি অশ্লীল কাজ করে তবে তাদেরকেও কোন ছাড় দেওয়া হবেনা, বরং তাদের জন্য রয়েছে দ্বিগুণ  শাস্তি :        

অনুসারীরা নেতার জন্য দোয়া করবে : আমাদের নেতাকে দ্বিগুণ আযাব দাও :        

হযরত মূসা : এর শরীয়তে শিরক করার শাস্তি :        

একজনের পাপের শাস্তি আরেকজনকে দেওয়া হবে না :        

শাস্তি নাযিল করার জন্য নবীদেরকে কাফেরদের চ্যালেঞ্জ :        

তাগুতের শাস্তি :        

সাংস্কৃতিক তাগুত :        

শান্তি :        

ইসলাম শান্তি চায়, যুদ্ধ হলেও তাও শেষ অবলম্বন হিসেবে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই যুদ্ধ :        

জিহাদ অর্থ শুধুমাত্র যুদ্ধ নয়, বরং, শান্তি প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা :        

শাসক :  (বিস্তারিত দেখুন : র > রাষ্টক্ষমতা)        

আল্লাহ সবচেয়েক বড় শাসক:        

শাফায়াত :        

দেখুন : ‍ > সুপারিশ ,  > শিরক,        

শনিবার :        

শরীয়ত :        

শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপ দেখে ধৈর্যধারণ করা নবীর পক্ষে অসম্ভব :        

বিস্তারিত দেখুন :  > ধৈর্য         

ওয়াদা রক্ষা করার কারণে যদি দেখা শরীয়ত লংঘণ হয়ে যা্চ্ছে, তবে সে ওয়াদা ভঙ্গ করা ফরয :        

হযরত মূসা : এর শরীয়তে শিরক করার শাস্তি :        

প্রত্যেক রাসুলকে আলাদা শরীয়ত দেয়া হয়েছিল, তবে সর্বশেষ মুহাম্মদ সা: ব্যতীত সব শরীয়ত রহিত :        

শরীয়ত অনুযায়ী শাস্তি সমূহ :        

আল্লাহর সুন্নাতে কোন পরিবর্তন নেই :        

শহীদ :        

শহীদ হওয়া : আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করার জন্য জিহাদের ময়দানে দৃঢ়তা প্রদর্শন : আল্লাহর পথে প্রণোৎসর্গের জন্য সদ প্রস্তত থাকা:        

যারা আল্লাহর পথ শহীদ হয়, তারা কি জীবিত ?        

আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণ করা :        

মৃত্যু যখন হবেই , জীবন যখন যাবেই, তবে  মৃত্যুটা আল্লাহর পথেই হোক :        

শহীদদের জন্য রয়েছে অফুরন্ত রিযিক্ব ও খুশী :        

হিজরত,  জিহাদ ও আল্লাহর পথে প্রাণদানের প্রশ্নে রিজিক্বের জন্য ভেবনা :        

আল্লাহ কিছু লোককে শহীদ হিসেবে গ্রহণ করতে চান কেন ?        

দুনিয়ার জীবন একটা খেলা  মনভুলানো সামগ্রী মাত্র: আসল জীবন হচ্ছে পরকাল:        

শহীদ  জিহাদ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ দারস :        

শহীদ , জিহাদ, সশস্ত্র জিহাদ, ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধকারী, আল্লাহর পথে খরচ না করা ইত্যাদি :        

মন্তব্য : জিহাদের ময়দানে না গেলে মারা যেত না : উত্তর:        

এমন ঈমান আনা যার ফলে শহীদ হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায় :        

১। ফেরাউনের যাদুকরদের আনীত ঈমান, যে কোন সময়ের অসৎ সরকারের বিরুদ্ধে প্রকৃত ঈমানদারদের জন্য একটি বিশাল দৃষ্টান্ত :        

শহীদ  সিদ্দিক কারা :        

হাদীস :        

শক্তি :        

শক্তি কামনা করা :        

শক্তি বৃদ্ধির উপায় :        

শক্তিশালী :        

শক্তিশালী জাতিও পৃথিবী থেকে বিলীন হয়ে গেছে :        

যে জাতি পৃথিবীতে উন্নতির এত উচ্চ শিখরে আরোহন করলো, পরকালে তাদেরকে কোন যুক্তিতে  আজাব দেওয়া    হবে ?  (আরো দেখুন :  > অবকাশ > অবকাশ আল্লাহ কেন দেন?  এবং  > কুরআন  বিজ্ঞান )        

শোনা / শুনা  / শ্রবণ করা :        

আড়ি পেতে শোনা :        

শোনা কথা :        

সত্যের আহ্বান হৃদয়ের কান দিয়ে শুনতে হবে :        

তুমি মৃতদেরকে শুনাতে পারবেনা :        

কত জাতিকে তাদের নাফরমানীর কারণে ধ্বংস করা হয়েছে : বর্তমানে তাদের ক্ষীণতম আওয়াজ শুনতে পাওকি?        

যারা বলে আমরা শুনলাম, অথচ তারা শুনেনা :        

শুনলাম এবং মেনে নিলাম : মুমিনদের প্রকৃত গুণ :        

কোরআন শোনার আদব সমূহ :        

দেখুন :  > কুরআন > কুরআন শোনার আদব        

আল্লাহ সবকিছু শোনেন এবং জানেন :        

আল্লাহ সবকিছু শোনেন  দেখেন: এর প্রকৃত স্বরূপ কি ? :        

শোনার  দেখার শক্তি দিয়েছেন আল্লাহ :        

তুমি মৃতদেরকে শুনাতে পারোনা        

মুহাম্মদ সা: এর কথা না শোনার জন্য তাঁকে এড়িয়ে চলা, তাঁর কাছ থেকে দূরে সরে থাকা        

শাস্তি :        

শিকল :        

শিকলে হাত পা বাধা থাকবে :        

শিয়া  সম্প্রদায় / শি / শিয়ানে আলী :        

শিরক :        

হে মুহাম্মদ! আল্লাহর সাথে অন্য কোন মাবুদকে ডেকো না, নয়তো তুমিও শাস্তি লাভকারীদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে: এর অর্থ কি ?        

নিজের মনকে ইলাহ বানিয়ে নেয়া সবচেয়ে নিকৃষ্ট শির্ক :        

আল্লাহই সত্য এবং অন্যান্য শরীকরা মিথ্যা :        

মানুষের শিরকে লিপ্ত হবার কারণ সমূহ / শিরক উৎপত্তির কারণ সমূহ:        

১। সামান্য বিপদে আপদে দু:খে কষ্টে ধৈর্য ধারণ করতে পারে না, ফলে আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরে গিয়ে শিরকে লিপ্ত হয় : ইবাদতের ক্ষেত্রে ইস্তেক্বামাত অবলম্বন করতে পারে না : দোদুল্যমান ঈমান :        

২। সঠিক সূত্র থেকে জ্ঞান লাভ না করার কারণে মানুষ শির্ক- লিপ্ত হয় :        

৩। আল্লাহর পরিচয় পরিপূর্ণভাবে লাভ না করার কারণে : আল্লাহর পরিচয় সংক্রান্ত জ্ঞানের অভাবে :        

৪। সুপারিশ লাভ করার ভ্রান্ত আকীদা থেকেই শিরকের উৎপত্তি ঘটেছে :        

৫। বাপদাদার অন্ধ অনুসরণের কারণে মানুষ শিরকে লিপ্ত হয় :        

৬। জন্মগত ভাবেই শিরকী পরিবেশে লালিত পালিত হওয়া / বড় হওয়া :        

শিরক সম্পর্কিত আনুষ্ঠানিক ইবাদত : মানুষের মনগড়া ইলাহ সমূহের ইবাদত বনাম আল্লাহর ইবাদত :        

হযরত মূসা : এর শরীয়তে শিরক করার শাস্তি :        

শিরক মুক্ত ঈমান ও সৎকাজের পুরস্কার আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎলাভ  : সুতরাং আল্লাহর নৈকট্য অন্বেষণকারীদের সৎকাজ করতে হবে, এবং অবশ্যই থাকতে হবে শিরকমুক্ত ঈমান :        

আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে কর্ম সম্পাদনকারী বানিয়ে নেওয়া :        

শিরক এর প্রকার ভেদ সমূহ :        

সূর্য পূজা :        

শিরক শুধু মূর্তিপূজা নয় : আইন বিধান  শাসন পরিচালনাকারীর  ক্ষেত্রেও শিরকের অবকাশ রয়েছে :        

শিরক হচ্ছে ধ্বংস গহ্বর :        

শিরক করার দুনিয়াবী ক্ষতির উপমা :        

শিরককারীদের উপমা :  আকাশ থেকে ছিটকে পড়ে :        

মাছির উপমা  :        

শিরককারীদের মোটেই পরোয়া করো না :        

শিরককারীদের সাথে কোন সম্পর্ক নেই :        

সম্পদ  সন্তানসন্ততিতে শয়তানের শরীকানা :        

শিরককারীদের শিরক থেকে আল্লাহ অনেক উর্ধ্বে :        

শিরক করা উচিত নয় কেন ? শিরক একটি মিথ্যা মতবাদ : তার যুক্তি ও প্রমাণ সমূহ :        

১। গোলাম কখনো মুনিবের সম্পদে অংশীদার হতে পারেনা : এবং মুনিবের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে গিয়ে কেউ কখনো সেই মুনিবের গোলামের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না :        

২। শরীকরা সৃষ্টির ক্ষেত্রে কোন অংশীদারিত্ব রাখেনা, একমাত্র আল্লাহই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন , সুতরাং, ইবাদত একমাত্র আল্লাহই পেতে পারেন, অন্য কোন শরীক নয় :        

নাস্তিক  মুশরিকদের  নিকট প্র্রশ্ন :        

১।  বিশ্বব্যবস্থাপনা কিভাবে চলছে ?        

২। পৃথিবী নামক গ্রহটি কিভাবে বাসযোগ্য হয়েছে ?        

৩। চরম অসহায়ত্ব সৃষ্টি হলে কঠোর নাস্তিকরাও উর্ধ্বতন একজন সৃষ্টিকর্তাকে ডাকার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে :        

৪। আকাশের তারকাগুলোকে বিক্ষিপ্ত নয় বরং এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে যাতে নাবিকরা ঘন অন্ধকারেও তারকার সাহায্যে পথ খুজে পায় ?        

 জীবন কি ? জীবন এর সৃষ্টি  জীবনের পনরাবৃত্তি নিয়ে কোন চিন্তা ভাবনা করেছেন কি ?        

আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য শরীকদের প্রকৃত স্বরূপ :        

যারা শিরক করে তারা আন্দাজ অনুমানের ভিত্তিতেই শিরক করে :        

মানুষ শয়তানের প্ররোচনায়ই শিরক করে : এর কারণ হচ্ছে শয়তানের নেতৃত্ব স্বীকার করে নেয়া :        

রিজিক্ব এর ক্ষেত্রে আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করা :  শিরক করা :        

সন্তান লাভের পর অনেকে শিরকে লিপ্ত হয় :        

ওলী বুযুর্গ  নবীরা কাউকে সন্তান দিতে পারেন না, বরং তারাই সন্তান লাভের জন্য আল্লাহর নিকট হাত পাতেন :        

আল্লাহর দেয়া রিজিক্বে শরীকদের জন্য অংশ নির্ধারণ :        

আল্লাহর জন্য সন্তান নির্ধারণ করা  : মারাত্নক শিরক :        

নৌকা যখন ডুবতে আরম্ভ করে তখন সমস্ত শিরক বিদায় নেয়, কিন্তু আল্লাহ পাড়ে ভিড়িয়ে দিলিয়ে পুনরায় শিরক করতে আরম্ভ করে :        

বিপদ পড়লে আল্লাহকে ডাকে আর বিপদ কেটে গেলেই আল্লাহকে ভুলে যায়  শিরক করতে থাকে: ( বিস্তারিত দেখূন :  > বিপদ > বিপদে পড়লে আল্লাহকে ডাকে আর.. )        

আল্লাহ  ছাড়া আর যাদের ইবাদত করা হয়, সেই সমস্ত মাবুদদের  যারা ইবাদত করত তাদের উভয়কে জাহান্নামে প্রেরণ করা হবে, এর ব্যাখ্যা  :        

আরব বাসীদের শিরক এর স্বরূপ  এবং তার অন্তসার শূন্যতা :        

জিজ্ঞাসা : শিরককারী  শরীকদের প্রতি আল্লাহর পরকালীন জিজ্ঞাসা ও তাদের উত্তর :        

শিরককারীদের প্রতি আল্লাহর পরকালীন জিজ্ঞাসা : ‍ তোমাদের শরীকরা কোথায় ?        

শরীকদের উত্তর : আমরা আমাদের অনুসারীদের থেকে দায়মুক্ত, এরা তো আমাদের বন্দেগী করতোনা, এরা এদের প্রবৃত্তির বন্দেগী করতো :        

কিয়ামতের দিন শরীকদের মিথ্যা শরীকানা উধাও হয়ে যাবে :        

কিয়ামতের ময়দানে শিরককারী  শরীকদের পারস্পরিক কথাবার্তা :        

ইব্রাহীম মুশরিক ছিলেন না :        

আল্লাহকে বাদ দিয়ে মৃতদেরকে ডাকলে কি কোন লাভ হবে?        

শিরক করা উচিৎ নয় কেন?        

কারণ : দোয়ায় সাড়া দেয়ার ক্ষমতা শরীকদের নেই:        

কারণ আকাশ  পৃথিবীতে শরীকদের কোন মালিকানা নেই : এবং তারা আল্লাহর সাহায্যকারীও নয় :        

আল্লাহ যদি চাইতেন  তাহলে আমরা শিরক করতাম না :        

আল্লাহর হুকুম ছাড়া গাছের পাতাও নড়েনা, শুতরাং, আল্লাহ চাইলে আমরা শিরক করতাম না :        

শরীক (অর্থাৎ: যাদেরকে লোকেরা আল্লাহর সাথে শরীক করে : )        

১। আল্লাহ অন্যান্য শরীকদের জিজ্ঞাসা করবেন, আর শরীকরা তাদেরকে যে ইবাদত করা হয়েছে তা নাকচ করে দেবে :        

২। শরীকরা কিয়ামতের ময়দানে তাদের অনুসারীদেরকে এবং তাদেরকে শরীক সাব্যস্ত করার কথা  অস্বীকার করবে :        

২। এবং শরীকরা তাদের অনুসারীদের ব্যাপারে যে কোন ধরণের সুপারিশ করতে অস্বীকার করবে অথবা সুপারিশ করার ক্ষমতাই পাবে না :        

৪। আল্লাহই সত্যের দিকে পথনির্দেশ করেন, অথচ শরীকদেরকে পথ না দেখালে তারা পথ পায়না :        

৫। সৃষ্টির সূচনা  পুনরাবৃত্তি করেন আল্লাহ্, তাহলে মধ্যখানে শরীকদের ইবাদত কেন করা হবে?        

৬। আকাশ  পৃথিবীতে শরীকদের কোন মালিকানা নেই : এবং তারা আল্লাহর সাহায্যকারীও নয় :        

: কারণ : দোয়ায় সাড়া দেয়ার ক্ষমতা শরীকদের নেই:        

শিরক : কর্মগত শিরক :        

১। সার্বভৌমত্ব ক্ষমতায় আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে শরীক করা হলো কর্মগত শিরক :        

শিরক  মুশরিক :        

আমানততথা আল্লাহর খিলাফত- কে অস্বীকার কারী মুশরিক  :        

শিরক  পিতা মাতা :        

শিরক সবচেয়ে বড় পাপ : এমনকি পিতা মাতার অবাধ্য হতে হবে যদি পিতা মাতা শিরক করার জন্য বাধ্য করে : তখন পিতা মাতার কথা মান্য করা যাবে না :        

সূর্য পূজা / চন্দ্র পূজার অসারতা প্রমাণ :        

আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য গ্রহণ করা উচিত নয় কেন ? কারণ, আল্লাহ- সত্য, আর সমস্ত উপাস্য মিথ্যা :        

সমুদ্রে যখন নৌযান জাহাজ ইত্যাদি ডুবতে শুরু করে তখন কট্টর মুশরিকও বুঝে ফেলে আল্লাহ মাত্র একজনই:        

পিতা মাতা শিরক করার জন্য চাপ প্রয়োগ করলে তাদের কথা মানা যাবেনা, তবে তাদের সাথে ভালো ব্যবহার অক্ষুন্ন রাখতে হবে : অর্থাৎ, এমনকি পিতা মাতা যদি মুশরিকও হয় তবুও তাদের সাথে ভালো আচরণ করতে হবে:        

শীঘ্রই :        

শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে        

শয়তান :        

শয়তানের পদাংক অনুসরণ :        

শয়তানের উস্কানি থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইতে হবে :        

তোমরা কি জানো শয়তান কার উপর নাযিল হয় ?  (গণক ও মিথ্যাবাদীদের উপর):        

ইবলিশ শব্দের অর্থ “হতাশ” :        

ইবলিসকে সৃষ্টি করার কারণ কি ? কারণ আল্লাহ পরীক্ষা করে দেখতে চান কে মান্যকারী আর কে পরকালকে অবিশ্বাস করে : কারণ ইবলিস তাকেই ধোকা দিতে পারে যে পরকালের ব্যাপারে সন্দিহান        

ইবলিসকে  ক্ষমতা দেওয়া হয়নি যে জোর করে সে মানুষকে পথভ্রষ্ট করতে পারে, বরং সে শুধু অসৎ পথ  অসৎ কার্যাবলীকে সুন্দর করে দেখিয়ে বিভ্রান্ত করে : আর আখিরাতে অবিশ্বাসীরাই সবচেয়ে বেশী ইবলিসের ধোকায় পড়ে :        

শয়তানের কার্যাবলী সমূহ :        

কুরআন নিয়ে আসে শয়তান  : কাফেরদের অভিযোগ :        

শয়তান জ্বিন জাতির অন্তর্ভূক্ত :        

অসৎ লোকেরা শয়তানের সাথী হয়ে যায় :        

শয়তান হচ্ছে সবচেয়ে বড় প্রতারক ও বিশ্বাস ঘাতক :        

শয়তান হচ্ছে সবচেয়ে বড় প্রতারক :  কথার অর্থ কি ?        

দুনিয়ার জীবনের কার্যাবলী সম্পর্কে শয়তান আমাদেরকে  যে ভুল ধারণাগুলো দেয় তার তালিকা:        

দুনিয়ার জীবন প্রতারনা- এর অর্থ কি ? দুনিয়ার জীবন সম্পর্কে ভুল ধারাণা সমূহ :        

শয়তান কার পিছনে লেগে যায় ?        

শয়তান মানুষকে উত্তেজিত করে এবং তার প্রতিকার :        

শয়তান কাফেরদেরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে উস্কে দেয়:        

শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু :        

চিরন্তন জীবন লাভ করতে চাওয়া মানুষের একটি স্বভাবজাত বাসনা, আর বাসনার ফাদে ফেলেই শয়তান হযরত আদম ও হাওয়া আ: কে ধোকা দিতে সক্ষম হয়েছিল :        

শয়তান মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করে :        

মুখের কথা সর্বোত্তম হওয়া দরকার, নচেত মুখের কথার  লাগামহীনতা শয়তানের আক্রমনের কারণে হয়:        

শয়তান অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ ও  জরুরী কথা ভুলিয়ে দেয় :        

শয়তান পরকালে তার অনুসারীদেরকে যে জওয়াব দিবে :        

শয়তান জোরপূর্বক কাউকে বিপথে নেবার ক্ষমতা রাখেনা        

শয়তান নবীদের দাওয়াতী মিশনে / কুরআন প্রচারে  বিঘ্ন সৃষ্টি করে এবং এর কারণ :        

শয়তান নবীদের দাওয়াতী মিশনে বিঘ্ন সৃষ্টি করার সুযোগ দিয়েছেন দুটি কারণে :        

মুনাফিকদেরকে ঈমানদারদের দল থেকে ছেটে বের করার জন্য :        

২। ঈমানদারদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পায়, সরল পথে তারা মজবুত হয়ে চলতে পারে :        

শয়তান কোন ধরণের লোকদেরকে ধোকা দিতে পারে ?        

শয়তান কোন ধরণের লোকদেরকে ধোকা দিতে পারে না?        

শয়তান মানুষকে লোভ দেখিয়ে বিপথগামী করে :        

শয়তানের হস্তক্ষেপ থেকে আল্লাহর নিকট বান্দার আশ্রয় প্রার্থনা :        

জ্বিন শয়তানেরা কি গায়েবের সংবাদ বলতে পারে?        

শয়তানের অহংকার : ইবলীস শয়তান আদমকে কেন সিজদা করেনি ? (আরোদেখুন : স> সিজদা)        

শয়তানের সৃষ্টি কাহিনী : (আরো দেখুন : আদম আ: এর সৃষ্টি কাহিনী)        

শয়তানের চ্যালেঞ্জ- আমি মানুষকে পথভ্রষ্ট করে ছাড়বো :        

শয়তান অসৎপথ কে / অসৎ কাজ কে  সুশোভন করে দেখায় :        

জ্ঞানহীন বিতর্ক  মানুষকে শয়তানের পথে ধাবিত করে :        

মূর্তি এবং  সেগুলো নির্মাণের জন্য ব্যবহৃত বাশ ইট কাঠও জাহান্নামে আগুন জ্বালানোর কাজে ব্যবহার করা হবে  এবং        

এবং শয়তান, মূর্তি, শরীক ও শিরককারী সকলেই জাহান্নামে যাবে এর ব্যাখ্যা  :        

আল্লাহর পক্ষ থেকে জবাব :        

শয়তানের চালবাজী থেকে কারা রক্ষা পাবে ? উত্তর : আল্লাহর প্রকৃত ইবাদতগুজার বান্দারা :        

সূর্য উদয় হয়  অস্ত যায় শয়তানের দুই শিং এর মধ্য দিয়ে : হাদীসে একথা বলা হয়েছে সূর্যপূজারীদের জন্য :        

শিরক  জ্ঞানীদের উপদেশ :        

লোকমান হাকীম  তার নিজ পুত্রকে শিরক না করার জন্য উপদেশ দিলেন :        

শিরক অনেক বড় জুলুম :        

শনিবারের বিধান :        

সমুদ্র তীরের যে জনপদটি শনিবারের  বিধান লংঘণ করেছিল :        

শহরে প্রবেশ করা :        

শহীদ :        

শুক্রবিন্দু :        

মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে শুক্রবিন্দু থেকে :        

শুকর / শুয়োর :        

শুনার  দেখার শক্তি আল্লাহর কতৃত্বে রয়েছে :        

শূল :        

শূলে চড়ানো : ফেরাউন যাদুকরদেরকে ঈমান আনার অপরাধে শূলে চড়িয়েছে  হাত পা কেটে দিয়েছে:        

শিক্ষা ব্যবস্থা :        

কুরআনের জ্ঞান অর্জন করা মুমিনদের জন্য ফরজ :        

শিংগা / শিঙ্গা :        

শিংগায় ফুঁক দেওয়া :        

শ্রেষ্ঠ / শ্রেষ্ঠত্ব :        

শোকর :  / কৃতজ্ঞতা / শুকরিয়া :        

যে ব্যক্তি শোকরগুযারী করে তার শোকর তার নিজের জন্যই উপকারী :        

তোমরা খুব কমই শোকর আদায় কর :        

শোকর গুজার বান্দা :        

পিতা-মাতার শোকর আদায় কর:        

অপরাধ করার পরও আল্লাহ অনুগ্রহ করে তোমাদেরকে অবকাশ দিচ্ছেন, কিন্তু তারপরও তোমরা তার এ অবকাশ দেওয়ার শুকরিয়া আদায় করে সঠিক পথে ফিরে আসছো না :        

শোকর আদায় করলে নিয়ামত  আরো বাড়িয়ে দেওয়া হয় :        

শোকর আদায় না করার জন্য নিয়ামত ছিনিয়ে নেয়া হলো : সাবা জাতির ইতিহাস দেখুন : কিভাবে একটি সমৃদ্ধশালী জাতিকে অকৃতজ্ঞতার কারণে নি:শেষ করে দেওয়া হয়েছিল :        

ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে পারে তারাই যারা ধৈর্যশীল  শুকরিয়া আদায় করে থাকে :        

আল্লাহ তোমাদের চোখ কান  হৃদয় দিয়েছেন, যাতে তোমরা  শোকরগোজার হও :        

আল্লাহর নিয়ামত সমূহের শুকরিয়া আদায় করো :        

আল্লাহর নিদর্শন থেকে শিক্ষালাভ করতে পারে তারাই যারা ধৈর্যশীল  শোকরকারী :        

আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের পদ্ধতি সমূহ :        

আল্লাহ বড়ই অনুগ্রহ কারী : কিন্তু অধিকাংশ লোক শোকর গুজারি নয় :        

নূহ : কে শোকর আদায় করার নির্দেশ :        

অসৎ পথ থেকে সৎ পথে ফিরে আসাও শোকরগুজারীর একটা বড় অংশ : কারণ আল্লাহ অবকাশ দিয়েছেন বলেই সৎপথে ফিরে আসার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে :        

আল্লাহ মানুষের শত্রু নন, তিনি স্বভাবতই মানুষের প্রতি অনুগ্রহশীল: তাই অপরাধ করার পরও মানুষকে সাথে সাথে শাস্তি না দিয়ে অবকাশ দিয়ে থাকেন, যাতে মানুষ শোকর গুজার হয়ে সৎ পথে ফিরে আসে :        

শোআয়ব : এর ঘটনা :        

শৈশব /  শিশু :        

শিশুর কথা বলা :        

শিশুকে সিন্দুকে ভাসিয়ে দেওয়া :        

নবীর শত্রুর দ্বারাই শিশু নবীর প্রতিপালন :        

শিশুকে মূল প্রকৃতির উপর সৃষ্টি করা হয় : অত:পর তার পিতা মাতাই তাকে সঠিক অথবা বেঠিক রাস্তায় পরিচালিত করে :        

প্রকৃতি :        

নিজের চেহারা দ্বীনের দিকে স্থির নিবদ্ধ রাখো : আল্লাহর সৃষ্ট মূল প্রকৃতির উপর অটল থাকো,  দ্বীনের উপর অটল থাকো :        

শৈশব , যৌবন , বৃদ্ধ :        

শুভাকাংখী :        

মূসা : কে হত্যার পরিকল্পনা :        

1|   wkiK   2|   kqZvb  3|  ‡kvbv  4| kwbevi ৫। শাস্তি

শপথ :

৫:৮৯, ৭:২১,

(৩০-রূম: ৫৫) আর যখন সেই সময় শুরু হবে, যখন অপরাধীরা কসম খেয়ে খেয়ে বলবে , আমরা তো মুহূর্তকালের বেশি অবস্থান করিনি৷  এভাবে তারা দুনিয়ার জীবনে প্রতারিত হতো৷

(১২:৬৬) তাদের বাপ বললো, “আমি কখনোই তাকে তোমাদের সাথে পাঠাবো না যতক্ষণ না তোমরা আল্লাহর নামে আমার কাছে অংগীকার করবে৷  মর্মে যে তাকে নিশ্চয়ই আমার কাছে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে তবে হাঁ যদি কোথাও তোমরা ঘেরাও হয়ে যাও তাহলে ভিন্ন কথা৷যখন তারা তার কাছে অংগীকার করলো তখন সে বললো, “দেখো আল্লাহ আমাদের একথার রক্ষক৷

(নুর:৫৩) এ মুনাফিকরা আল্লাহর নামে শক্ত কসম খেয়ে, বলে, ‘‘ আপনি হুকুম দিলে আমরা অবশ্যই ঘর থেকে বের হয়ে পড়বো ৷ ’’ তাদেরকে বলো, ‘‘ কসম খেয়ো না , তোমাদের আনুগত্যের অবস্থা জানা আছে ৷ তোমাদের কার্যকালাপ সম্বন্ধে আল্লাহ বেখবর নন৷

মুনাফিকেরা মু’মিনদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য মু’মিনদের সামনে কসম খায়৷ অথচ যদি তারা যদি মুমিন হয়ে থাকে তাহলে তারা আল্লাহ  তাঁর রসূলকে সন্তুষ্ট করার কথা চিন্তা করবে, কারণ তারাই এর বেশী হকদার -৯:৬২

(১৬:৩৮) এরা আল্লাহর নামে শক্ত কসম খেয়ে বলে, “আল্লাহ কোনো মৃতকে পুনর্বার জীবিত করে উঠাবেন না৷”-কেন উঠাবেন না ? এতো একটি ওয়াদা, যেটি পুরা করা তিনি নিজের ওপর ওয়াজিব করে নিয়েছেন, কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না

(১৬:৯১) আল্লাহর অংগীকার পূর্ণ করো যখনই তোমরা তাঁর সাথে কোনো অংগীকার করো এবং নিজেদের কসম দৃঢ় করার পর আবার তা ভেঙে ফেলো না যখন তোমরা আল্লাহকে নিজের ওপর সাক্ষী বানিয়ে নিয়েছো৷ আল্লাহ তোমাদের সমস্ত কার্যকলাপ সম্পর্কে অবগত৷

(১৬:৯২) তোমরা নিজেদের কসমকে পারস্পরিক ব্যাপারে ধোঁকা ও প্রতারণার হাতিয়ারে পরিণত করে থাকো, যাতে এক দল অন্য দলের তুলনায় বেশী ফায়দা হাসিল করতে পারো৷ অথচ আল্লাহ এ অংগীকারের মাধ্যমে তোমাদেরকে পরীক্ষার মুখোমুখি করেন৷

(১৬:৯৪) (আর হে মুসলমানরা!) তোমরা নিজেদের কসমসমূহকে পরস্পরকে ধোঁকা দেবার মাধ্যমে পরিণত করো না৷

(নূর:৬) আর যারা নিজেদের স্ত্রীদেরকে অভিযোগ দেয় এবং তাদের কাছে তারা নিজেরা ছাড়া আর দ্বিতীয় কোন সাক্ষী থাকে না , তাদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তির সাক্ষ হচ্ছে (এই যে, সে) চার বার আল্লাহর নামে কসম খেয়ে সাক্ষ দেবে যে, সে (নিজের অভিযোগে) সত্যবাদী  ৭) এবং পঞ্চম বার বলবে, তার প্রতি আল্লাহর লা’নত হোক যদি সে (নিজের অভিযোগে) মিথ্যাবাদী হয়ে থাকে ৷৮) আর স্ত্রীর শাস্তি এভাবে রহিত হতে পারে যদি সে চার বার আল্লাহর নামে কসম খেয়ে সাক্ষ দেয় যে, এ ব্যক্তি(তার অভিযোগে) মিথ্যাবাদী৯) এবং পঞ্চমবার বলে, তার নিজের ওপর আল্লাহর গযব নেমে আসুক যদি এ ব্যক্তি (তার অভিযোগে) সত্যবাদী হয়৷

(বিস্তারিত দেখুন : ব > বিচার ব্যবস্থা)

শত্রু :

(২০:৮০) হে বনী ইসরাঈল! আমি তোমাদের শত্রুদের হাত থেকে তোমাদের মুক্তি দিয়েছি, এবং তূরের ডান পাশে  তোমাদের উপস্থিতির জন্য সময় নির্ধারণ করেছি আর তোমাদের প্রতি মান্না ও সালওয়া অবতীর্ণ করেছি

(হাজ্ব:৫৩)......এ জালেমরা শত্রুতায় অনেক দূরে পৌঁছে গেছে

অপরাধীদের কে তাদের শত্রু দ্বারা শাস্তি প্রদান : শত্রুরা তাদের উপর বিজয় লাভ করে :

(১৭:৫) শেষ পর্যন্ত যখন এদের মধ্য থেকে প্রথম বিদ্রোহের সময়টি এলো তখন হে বনী ইসরাঈল! আমি তোমাদের মুকাবিলায় নিজের এমন একদল বান্দার আবির্ভাব ঘটালাম, যারা ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী এবং তারা তোমাদের দেশে প্রবেশ করে সবদিকে ছড়িয়ে পড়ে৷ এক একটি প্রতিশ্রুতি ছিল, যা পূর্ণ হওয়াই ছিল অবধারিত৷

(১৬:৭)  ..... তারপর যখন পরবর্তী প্রতিশ্রুতির সময় এসেছে তখন আমি অন্য শত্রুদেরকে তোমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছি, যাতে তারা তোমাদের চেহারা বিকৃত করে দেয় এবং (বায়তুল মাকদিসের) মসজিদে এমনভাবে ঢুকে পড়ে যেমন প্রথমবার শত্রুরা ঢুকে পড়েছিল আর যে জিনিসের ওপরই তাদের হাত পড়ে তাকে ধ্বংস করে রেখে দেয়৷

প্রত্যেক নবীর জন্যই শত্রু রয়েছে, আর তারা হচ্ছে অপরাধী সম্প্রদায় :

(২৫.ফুরকান:৩১) হে মুহাম্মাদ! আমি তো এভাবে অপরাধীদেরকে প্রত্যেক নবীর শক্রতে পরিণত করেছি এবং তোমার জন্য তোমার রবই পথ দেখানোর ও সাহায্য দানের জন্য যথেষ্ট ৷

নবীর শত্রুর দ্বারাই শিশু নবীর প্রতিপালন :

(২০:৩৮) (হে মসা)  সে সময়ের কথা মনে করো যখন আমি তোমার মাকে ইশারা করেছিলাম, এমন ইশারা যা অহীর মাধ্যমে করা হয়, এই মর্মে এই এ শিশুকে সিন্দুকের মধ্যে রেখে দাও এবং সিন্দুকটি দরিয়ায় ভাসিয়ে দাও, দরিয়া তাকে তীরে নিক্ষেপ করবে এবং আমার শত্রু ও এ শিশুর শত্রু একে তুলে নেবে৷৩৯) আমি নিজের পক্ষ থেকে তোমার প্রতি ভালোবাসা সঞ্চার করেছিলাম এবং এমন ব্যবস্থা করেছিলাম যাতে তুমি আমার তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হও৷৪০) স্মরণ করো, যখন তোমার বোন চলছিল, তারপর গিয়ে বললো, “আমি কি তোমাদের তার সন্ধান দেবো যে এ শিশুকে ভালোভাবে লালন করবে?”এভাবে আমি তোমাকে আবার তোমার মায়ের কাছে পৌছিয়ে দিয়েছি, যাতে তার চোখ শীতল থাকে এবং সে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ না হয়৷ এবং (এটাও স্মরণ করো) তুমি একজনকে হত্যা করে ফেলেছিলে, আমি তোমাকে এ ফাঁদ থেকে বের করেছি এবং তোমাকে বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে এসেছি, আর তুমি মাদ্য়ানবাসীদের মধ্যে কয়েক বছর অবস্থান করেছিলে৷ তারপর এখন তুমি এখন তুমি ঠিক সময়েই এসে গেছো৷ হে মূসা!

শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু : বিস্তারিত দেখুন :  > শয়তান। 

শয়তান  মানুষ পরস্পরের শত্রু :

(২০:১২৩) আর বললেন, “তোমরা (উভয় পক্ষ অর্থাৎ মানুষ ও শয়তান) এখান থেকে নেমে যাও, তোমরা পরস্পরের শত্রু থাকবে৷

নবীর বিরুদ্ধে, কুরআনের বিরুদ্ধে শয়তানের ষড়যন্ত্র সফল হয় না :

(হাজ্ব:৫২)  আর হে মুহাম্মাদ! তোমার পূর্বে আমি এমন কোনো রসূল ও নবী পাঠাইনি   (যার সাথে এমন ঘটনা ঘটেনি যে) যখন সে তামান্না  (অর্থাৎ, ইচ্ছা আশা আকাংখা করেছে এবং কুরআন তেলাওয়াত ) করেছে  শয়তান তার তামান্নায় বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে৷  এভাবে শয়তান যাকিছু বিঘ্ন সৃষ্টি করে আল্লাহ তা দূর করে দেন এবং নিজের আয়াতসমূহকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন, আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়৷

শব্দ :

(১৯:৯৮) এদের পূর্বে আমি কত জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছি৷ আজ কি কোথাও তাদের নাম-নিশানা দেখতে পাও অথবা কোথাও শুনতে পাও তাদের ক্ষীণতম আওয়াজ?  

শস্য :

(দেখুন :  > ফসল)

দু:সংবাদ বাহী এমন বাতাস : যা শস্যকে বিনষ্ট করে দেয়:

(৩০-রূম: ৫১) আর আমি যদি এমন একটি বাতাস পাঠাই যার প্রভাবে তারা দেখে তাদের শস্য পীতবর্ণ ধারণ করেছে   তাহলে তো তারা কুফরী করতে থাকে৷

শ্বশুর / শ্বশুরালয় :

(২৫.ফুরকান:৫৪) আর তিনিই পানি থেকে একটি মানুষ তৈরি করেছেন, আবার তার থেকে বংশীয় ও শ্বশুরালয়ের দু’টি আলাদা ধারা চালিয়েছেন৷ তোমার রব বড়ই শক্তি সম্পন্ন৷

হযরত শুআইব : কি হযরত মূসা : এর শ্বশুর ছিলেন :

ক্লিক করুন : হযরত শুআইব আ: কি হযরত মূসা আ: এর শ্বশুর ছিলেন :

(২৮-ক্বাছাছ : ২৯) মূসা যখন মেয়াদ পূর্ণ করে দিল

৪০. হাসান ইবনে আলী ইবনে আবু তালেব রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, মূসা (আ) আট বছরের জায়গায় দশ বছরের মেয়াদ পুরা করেছিলেন। ইবনে আব্বাসের বর্ণনা মতে এ বক্তব্যটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, "মূসা আলাইহিস সালাম দু'টি মেয়াদের মধ্য থেকে যেটি বেশী পরিপূর্ণ এবং তাঁর শ্বশুরের জন্য বেশী সন্তোষজনক সেটি পূর্ণ করেছিলেন অর্থাৎ দশ বছর।"

শ্রম :

শ্রমের মজুরী / পারিশ্রমিক :

(১৮:৭৭) তারপর তারা সামনের দিকে চললো৷ চলতে চলতে একটি জনবসতিতে প্রবেশ করলো এবং সেখানে লোকদের কাছে খাবার চাইলো৷ কিন্তু তারা তাদের দুজনের মেহমানদারী করতে অস্বীকৃতি জানালো৷ সেখানে তারা একটি দেয়াল দেখলো, সেটি পড়ে যাবার উপক্রম হয়েছিল৷ সে দেয়ালটি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে দিল৷ মূসা বললো, “আপনি চাইলেএ কাজের পারিশ্রমিক নিতে পারতেন৷”  ..(১৮:৭২) তখন সে (খিজির আ: ) বললো, “আমি না তোমাকে বলেছিলাম, তুমি আমার সাথে সবর করতে পারবে না ?” 

কায়িক শ্রম :

(১৮:৯৫) সে (যুলকারনাইন) বললো, “আমার রব আমাকে যাকিছু দিয়ে রেখেছেন তাই যথেষ্ট৷ তোমরা শুধু শ্রম দিয়ে আমাকে সাহায্য করো, আমি তোমাদের ও তাদের মাঝখানে প্রাচীর নির্মাণ করে দিচ্ছি৷

শাস্তি :

(২৯-আনকাবুত:২৩) যারা আল্লাহর আয়াত এবং তার সাথে সাক্ষাত অস্বীকার করে , তারা আমার রহমত থেকে নিরাশ হয়ে গেছে  এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি৷

(২৯-আনকাবুত:২১)অবশ্যই আল্লাহ সব জিনিসের ওপর শক্তিশালী - যাকে চান শাস্তি দেন এবং যার প্রতি চান করুণা বর্ষণ করেন, তাঁরই দিকে তোমাদের ফিরে যেতে হবে৷

(২৫.ফুরকান:৬৮)....এসব যে-ই করে সে তার গোনাহের শাস্তি ভোগ করবে৷৬৯) কিয়ামতের দিন তাকে উপর্যুপরি শাস্তি দেয়া হবে এবং সেখানেই সে পড়ে থাকবে চিরকাল লাঞ্ছিত অবস্থায়৷

(ফুরকান:১৯) ..... এবং তোমাদের মধ্য থেকে যে-ই জুলুম করবে তাকে আমি কঠিন শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাবো৷

(নূর:২৩) যারা সতী সাধ্বী, সরলমনা  মু’মিন মহিলাদের প্রতি অপবাদ দেয় তারা দুনিয়ায় ও আখেরাতে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি ৷  ২৪) তারা যেন সেদিনের কথা ভুলে না যায় যেদিন তাদের নিজেদের কন্ঠ এবং তাদের নিজেদের হাত-পা তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ দেবে৷

(বিস্তারিত দেখুন : অ > অপবাদ > জ্বিনার অপবাদ। )

(মু’মিনুন:৭৭) তবে যখন অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যাবে যে, আমি তাদের জন্য কঠিন আযাবের দরজা খুলে দেবো তখন অকস্মাত তোমরা দেখবে যে, এ অবস্থায় তারা সকল প্রকার কল্যাণ থেকে হতাশ হয়ে পড়েছে ৷

আরো বিস্তারিত দেখুন : অ > অবকাশ > অপরাধীদিগকে অবকাশ দেওয়া হয় কেন?, আ > আযাব,

(হাজ্ব:৪৭) তারা আযাবের জন্য তাড়াহুড়ো করছে আল্লাহ কখনো তাঁর প্রতিশ্রুতি ভংগ করবেন না৷ কিন্তু তোমার রবের কাছের একটি দিন তোমাদের গণনার হাজার বছরের সমান হয়৷  (দেখুন : অ > অবকাশ)

(হাজ্ব:২৫) যারা কুফরী করেছে এবং যারা (আজ) আল্লাহর পথে চলতে বাধা দিচ্ছে আর সেই মসজিদে হারামের যিয়ারতে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে যাকে আমি তৈরি করেছি সব লোকের জন্য যাতে স্থানীয় বাসিন্দা ও বহিরাগতদের অধিকার সমান৷  (তাদের নীতি অবশ্যই শাস্তিযোগ্য) এখানে (মসজিদে হারামে) যে-ই সত্যতা থেকে সরে গিয়ে জুলুমের পথ অবলম্বন করবে  তাকেই আমি যন্ত্রণাদায়ক আযাবের স্বাদ আস্বাদান করাবো৷

 (২০:৭১) ফেরাউন বললো, “তোমারা ঈমান আনলে, আমি তোমাদের অনুমতি দেবার আগেই” দেখছি, এ তোমাদের গুরু, এ-ই তোমাদের যাদুবিদ্যা শিখিয়েছিল৷ এখন আমি তোমাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কাটাচ্ছি এবং খেজুর গাছের কাণ্ডে তোমাদের শুলিবিদ্ধ করছি এরপর তোমরা জানতে পারবে আমাদের দু’জনের মধ্যে কার শাস্তি কঠিন ও দীর্ঘস্থায়ী”৷ (অর্থাৎ আমি না মূসা, কে তোমাদের বেশী কঠিন শাস্তি দিতে পারে)৷

(২০:৬১) মূসা (যথা সময় পতিপক্ষ দলকে সম্বোধন করে) বললো, “দুর্ভাগ্য পীড়িতরা! আল্লাহর প্রতি মিথ্যা অপবাদ দিয়ো না,  অন্যথায় তিনি কঠিন আযাব দিয়ে তোমাদের ধ্বংস করে দেবেন৷ যে-ই মিথ্যা রটনা করেছে সে-ই ব্যর্থ হয়েছে”৷

(২০:৪৮) ... শাস্তি তার জন্য যে মিথ্যা আরোপ করে, ও মুখ ফিরিয়ে নেয়”৷

কাফের ও মুনাফিকদের যে ধন সম্পদ দেয়া হয়েছে তোমরা মু’মিনরা সেদিকে তাকিয়েও দেখোনা, কারণ এ ধন সম্পদ তাদেরকে দেয়া হয়েছে শাস্তি স্বরূপ : ৯:৫৫,

যারা আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয় তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি : ৯:৬১,

তোমাদের আচরণ যদি পূর্ববর্তী পথভ্রষ্টদের ন্যায় হয় তাহলে তোমরা পূর্ববর্তীদের ন্যায় একই শাস্তি লাভ করবে : ৯:৬৯ (তোমাদের আচরণ তোমাদের পূর্ববর্তীদের মতোই৷ তারা ছিল তোমাদের চাইতে বেশী শক্তিশালী এবং তোমাদের চাইতে বেশী সম্পদ  সন্তানের মালিক৷ তারপর তারা দুনিয়ায় নিজেদের অংশের স্বাদ উপভোগ করেছে এবং তোমরাও একইভাবে নিজেদের অংশের স্বাদ উপভোগ করেছো৷ যেমন তারা করেছিল এবং তারা যেমন অনর্থক বিতর্কে লিপ্ত ছিল তেমনি বিতর্কে তোমরাও লিপ্ত রয়েছো৷ কাজেই তাদের পরিণতি হয়েছে এই যে, দুনিয়ায়  আখেরাতে তাদের সমস্ত কাজকর্ম পণ্ড হয়ে গেছে এবং তারাই ক্ষতিগ্রস্ত),

আল্লাহ দুনিয়ায় ও আখিরাতে মুনাফিকদের কঠোর যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি দিবেন : ৯:৭৪(যদি তারা তওবা করে তাদের মুনাফিকী কার্যকলাপ বন্ধ না করে) ,  

এখন তারা এছাড়া আর কিসের প্রতীক্ষায় আছে যে, তাদের আগে চলে যাওয়া লোকেরা যে দুঃসময় দেখেছে তারাও তাই দেখবে? তাদেরকে বলো, “ঠিক আছে, অপেক্ষা করো৷ আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষা করছি”৷(১০:১০২)

 তবে যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে আমি তোমাদের ব্যাপারে একটি অতীব ভয়াবহ দিনের আযাবের ভয় করছি৷১১:৩।

 আর যদি আমি একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাদের শাস্তি পিছিয়ে দেই তাহলে তারা বলতে থাকে, কোন্‌ জিনিস শাস্তিটাকে আটকে রেখেছে ? শোনো! যেদিন সেই শাস্তির সময় এসে যাবে সেদিন কারো ফিরানোর প্রচেষ্টা তাকে ফিরাতে পারবে না এবং যা নিয়ে তারা বিদ্রূপ করছে তা-ই তাদেরকে ঘেরাও করে ফেলবে৷ -১১:৮,

(১১:২৬) তোমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারোর বন্দেগী করো না৷ নয়তো আমার আশংকা হচ্ছে তোমাদের ওপর একদিন যন্ত্রণাদায়ক আযাব আসবে৷

(১১:৪৮)আবার কিছু সম্প্রদায় এমনও আছে যাদেরকে আমি কিছুকাল জীবন উপকরণ দান করবো তারপর আমার পক্ষ থেকে তাদেরকে স্পর্শ করবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি৷” 

(১১:৫৮) তারপর যখন আমার হুকুম এসে গেলো তখন নিজের রহমতের সাহায্যে হূদও তার সাথে যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে আমি রক্ষা করলাম এবং একটি কঠিন আযাব থেকে বাঁচালাম৷  

(১৭:৫৪) তোমাদের রব তোমাদের অবস্থা সম্পর্কে বেশী জানেন৷ তিনি চাইলে তোমাদের প্রতি দয়া করেন এবং চাইলে তোমাদের শাস্তি দেন৷

(২১:৪৬) আর যদি তোমার রবের আযাব তাদেরকে সামান্য স্পর্শ করে যায়, তাহলে তারা তৎক্ষণাত চিৎকার দিয়ে উঠবে, হায়! আমাদের দুর্ভাগ্য, অবশ্যই আমরা অপরাধী ছিলাম৷ 

(মু’মিনুন:৫৪) ----বেশ, তাহলে ছেড়ে দাও তাদেরকে, ডুবে থাকুক নিজেদের গাফিলতির মধ্যে একটি বিশেষ সময় পর্যন্ত৷৫৫) তারা কি মনে করে, আমি যে তাদেরকে অর্থ ও সন্তান দিয়ে সাহায্য করে যাচ্ছি,  ৫৬) তা দ্বারা আমি তাদেরকে কল্যাণ দানে তৎপর রয়েছি ? না, আসল ব্যাপার সম্পর্কে তাদের কোন চেতনাই নেই৷ ............৬৪) অবশেষে যখন আমি তাদের বিলাসপ্রিয়দেরকে আযাবের মাধ্যমে পাকড়াও করবো তখন তারা আবার চিৎকার করতে থাকবে৬৫) ---এখন বন্ধ করো   তোমাদের আর্তচিৎকার আমার পক্ষ থেকে এখন কোন সাহায্য দেয়া হবে না ৷ ৬৬) আমার আয়াত তোমাদের শোনানো হতো, তোমরা তো (রসূলের আওয়াজ শুনতেই ) পিছন ফিরে কেটে পড়তে,৬৭) অহংকারের সাথে তা অগ্রাহ্য করতে, নিজেদের আড্ডায় বসে তার সম্পর্কে গল্প দিতে ও আজেবাজে কথা বলতে ৷

(ব্যাখ্যার জন্য দেখুন : স > সাফল্য ও ব্যর্থতার আসল মাপকাঠি কি ?)

(২৫.ফুরকান:৭৭)...এখন যে তোমরা মিথ্যা আরোপ করেছো, শিগগীর এমন শাস্তি পাবে যে, তার হাত থেকে নিস্তার পাওয়া সম্ভব হবে না৷”  

শাস্তি  পুরস্কারের বিভিন্নতা হবে কয়েকটি বিষয়কে সামনে রেখে :

১। ঈমান আনা কিন্তু সৎকাজে অবহেলা করা 

২। ঈমান আনা  সৎকাজ করা 

৩। ঈমান না আনা, তবে ইসলামের বিরোধীতা না করা 

৪। ঈমানও আনেনা, আবার ইসলামের বিরোধীতাও করে :  

৫। মুখে ঈমান আনা, কিছু আনুষ্ঠানিক ইবাদতও করা, কিন্তু ইসলাম ও কুরআন প্রতিষ্ঠায় বাধা দান করা

(৩৪-সাবা: ৪) আর এ কিয়ামত এ জন্য আসবে যে, যারা ঈমাম এনেছে ও সৎকাজ করতে থেকেছে তাদেরকে আল্লাহ পুরস্কৃত করবেন, তাদের জন্য রয়েছে মাগফিরাত ও সম্মানজনক রিযিক৷ ৫) আর যারা আমার আয়াতকে ব্যর্থ করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে তাদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি৷ 

(৮. ওপরে আখেরাতের সম্ভাবনার যুক্তি পেশ করা হয়েছিল এবং এখানে তার অপরিহার্যতার যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছেএর অর্থ হচ্ছে, এমন একটি সময় অবশ্যই আসা উচিত যখন জালেমদেরকে তাদের জলুমের এবং সৎকর্মশীলদেরকে তাদের সৎকাজের প্রতিদান দেয়া হবেযে সৎকাজ করবে সে পুরস্কার পাবে এবং যে খারাপ কাজ করবে সে শাস্তি পারে, সাধারণ বিবেক বৃদ্ধি এটা চায় এবং এটা ইনসাফেরও দাবীএখন যদি তোমরা দেখো, বর্তমান জীবনে প্রত্যেকটি অসৎলোক তার অসৎকাজের পুরোপুরি সাজা পাচ্ছে নাএবং প্রত্যেকটি সৎলোক তার সৎকাজের যথার্থ পুরস্কার লাভ করছে না বরং অনেক সময় অৎসকাজ ও সৎকাজের উলটো ফলাফল পাওয়া যায়, তাহলে তোমাদের স্বীকার করে নিতে হবে যে, যুক্তি, বিবেক ও ইনসাফের এ অপরিহার্য দাবী একদিন অব্শ্যই পূর্ণ হতে হবেসেই দিনের নামই হচ্ছে কিয়ামত ও আখেরাততার আসা নয় বরং না আসাই বিবেক ও ইসসাফের বিরোধী 

এ প্রসংগে ওপরের আয়াত থেকে আর একটি বিষয়ও সুস্পষ্ট হয়ে যায়এখানে বলা হয়েছে, ঈমান ও সৎকাজের ফল হচ্ছে গোনাহের মার্জনা ও সম্মানজনক রিযিক লাভ এবং যারা আল্লাহর দীনকে হেয় করার জন্য বিদ্বিষ্ট ও শক্রতামূলক প্রচেষ্টা চালাবে তাদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্টমূলক শাস্তিএ থেকে আপনাআপনি একথা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, সাচ্চা দিলে যে ব্যক্তি ঈমান আনবে তার কাজের মধ্যে যদি কিছু গলদও থাকে তাহলে সে সম্মানজনক রিযিক না পেয়ে থাকলেও মাগফিরাত থেকে বঞ্চিত হবে নাআর যে ব্যক্তি কুফরী করবে কিন্তু আল্লাহর সত্য দীনের মোকাবিলায় বিদ্বেষমূলক ও বৈরী নীতি অবলম্বন করবে না সে শাস্তি থেকে রক্ষা পাবে না ঠিকই কিন্তু নিকৃষ্টমূলক শাস্তি তার জন্য নয়)

আল্লাহ, মুহাম্মদ সা: এবং মুমিনদেরকে যারা কষ্ট দেয় তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি :

(৩৩-আহযাব:৫৮) আর যারা মুমিন পুরুষ ও মহিলাদেরেক কোন অপরাধ ছাড়াই কষ্ট দেয় তারা একটি বড় অপবাদ১০৯ ও সুষ্পষ্ট গোনাহের বোঝা নিজেদের ঘাড়ে চাপিয়ে নিয়েছে৷  

বিস্তারিত দেখুন : ক > কষ্ট ।

ক্লিক করুন :  কষ্ট 

ক্লিক করুন : মুহাম্মদ সা: কে কষ্ট দেওয়া হারাম 

দুনিয়ায় আল্লাহ কোন অপরাধীকে শাস্তি দিলে তাকে জিজ্ঞেস করে শাস্তি দেন না :

وَلَا يُسْأَلُ عَن ذُنُوبِهِمُ الْمُجْرِمُونَ﴾

(২৮-ক্বাছাছ : 78)........ অপরাধীদেরকে তো তাদের গোনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় না৷৯৯ 

৯৯. অর্থাৎ অপরাধীরা তো এ দাবীই করে থাকে যে, তারা বড়ই ভালো লোক। তাদের কোন দোষ আছে এ কথা তারা কবেই বা স্বীকার করে। কিন্তু তাদের শাস্তি তাদের স্বীকারোক্তির উপর নির্ভর করে না। তাদেরকে যখন পাকড়াও করা হয় একথা জিজ্ঞেস করে পাকড়াও করা হয় না যে, তোমরা কি কি অপরাধ করেছ!

কারূনের শাস্তি : মাটিতে পূতে ফেলার শাস্তি  :

(২৮-ক্বাছাছ : ৮১) শেষ পর্যন্ত আমি তাকে ও তার গৃহকে ভূগর্ভে পুতে ফেললাম৷ তখন আল্লাহর মোকাবিলায় তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসার মতো সাহায্যকারীদের কোন দল ছিল না এবং সে নিজেও নিজেকে সাহায্য করতে পারলো না৷

সমৃদ্ধশালী সাবা জাতিকে কুফরীর ও অকৃতজ্ঞতার কারণে যেভাবে  নি:শেষ করে দেওয়া হল :

(৩৪-সাবা: ১৭)এ ছিল তাদের কুফরীর প্রতিদান যা আমি তাদেরকে দিয়েছি এবং অকৃতজ্ঞ মানুষ ছাড়া অন্য কাউকে আমি এহেন প্রতিদান দেই না৷ ৩৭.

বিস্তারিত দেখুন : স > সাবা জাতি > সাবা জাতির ইতিহাস।ক্লিক করুন :  ৩৭.

শাস্তি নাযিল হলে অপরাধীদের সাথে শাস্তির অন্তর্ভূক্ত না হওয়ার জন্য দোয়া :

(মুমিনুন:৯৩) হে মুহাম্মাদ (সা) ! দোয়া করো, ‘‘হে আমার রব! এদেরকে যে আযাবের হুমকি দেয়া হচ্ছে, তুমি যদি আমার উপস্থিতিতে সে আযাব আনো  ৯৪) তাহলে হে পরওয়ারদিগার ! আমাকে এ জালেমদের অন্তরভুক্ত করো না ৷

কুরআন ও নিদর্শন সমূহ অস্বীকারকারীদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর শাস্তি :

(হাজ্ব:৫৭) আর যারা কুফরী করে থাকবে এবং আমার আয়াতকে মিথ্যা বলে থাকবে তাদের জন্য হবে লাঞ্ছনাকর শাস্তি৷

কাফেরদেরকে অল্পকালেরজন্য দুনিয়া ভোগ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তারপর তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তদ শাস্তি:

(৩১-লোকমান: ২৪) আমি স্বল্পকাল তাদেরকে দুনিয়ায় ভোগ করার সুযোগ দিচ্ছি, তারপর তাদেরকে টেনে নিয়ে যাবো একটি কঠিন শাস্তির দিকে৷  

কুরআনের আয়াত সমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার শাস্তি :

(মুমিনুন:১০৪) আগুন তাদের মুখের চামড়া জ্বালিয়ে দেবে এবং তাদের চোয়াল বাইরে বের হয়ে আসবে ৷ ৯৭  ১০৫) ----‘‘তোমরা কি সেসব লোক নও যাদের কাছে আমার আয়াত শুনানো হলেই বলতে এটা মিথ্যা?’’

(৯৭ . মূলে-----শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। ----- আরবী ভায়ায় এমন চেহারাকে বলা হয় যার চামড়া আলাদা হয়ে গেছে এবং দাঁত বাইরে বের হয়ে এসেছে । যেমন খাশির ভুনা মাথা । আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদকে (রা) এক ব্যক্তি ''কালেহ''-এর অর্থ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন :---------------অর্থাৎ ''তুমি কি ভুনা খাশির কল্লা দেখোনি৷'')

কুরআনের কথাকে যারা উল্টো অর্থে গ্রহণ করে তাদেরকে উল্টো করে ঝুলিয়ে জাহান্নামে শাস্তি দেওয়া হবে :

(২৫.ফুরকান:৩৪) যাদেরকে উপুড় করে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেয়া হবে তাদের অবস্থান বড়ই খারাপ এবং তাদের পথ সীমাহীন ভ্রান্তীতে পরিপূর্ণ৷৪৭

(৪৭. অর্থাৎ যারা সোজা কথাকে উল্টোভাবে চিন্তা করে এবং উল্টো ফলাফল বের করে তাদের বুদ্ধি উল্টোমুখো হয়েছে। এ কারণেই তারা কুরআনের সত্যতা প্রমাণ পেশকারী প্রকৃত সত্যগুলোকে তাদের মিথ্যা হবার প্রমাণ গণ্য করছে। আর এজন্যই তাদেরকে নিম্নমুখী করে মুখের উপর জাহান্নামের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে। )

ছোট শাস্তি  বড় শাস্তি :

(৩২:২১) সেই বড় শাস্তির পূর্বে আমি এ দুনিয়াতেই (কোন না কোন ) ছোট শাস্তির স্বাদ তাদেরকে আস্বাদন করাতে থাকবো, হয়তো তারা (নিজেদের বিদ্রোহাত্মক নীতি থেকে ) বিরত হবে৷

 ("বড় শাস্তি" বলতে আখেরাতের শাস্তিকে বুঝানো হয়েছে। কুফরী ও ফাসেকীর অপরাধে এ শাস্তি দেয়া হবে। এর মোকাবিলায় "ছোট শাস্তি" শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে । এর অর্থ হচ্ছে এ দুনিয়ায় মানুষ যেসব কষ্ট পায় সেগুলো। যেমন ব্যক্তিগত জীবনে কঠিন রোগ, নিজের প্রিয়তম লোকদের মৃত্যু, ভয়াবহ দুর্ঘটনা, মারাত্মক ক্ষতি, ব্যর্থতা ইত্যাদি। সামাজিক জীবনে ঝড়-তুফান, ভূমিকম্প, বন্যা, মহামারী, দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গা, যুদ্ধ এবং আরো বহু আপদ-বিপদ, যা লাখো লাখো কোটি কোটি মানুষকে প্রভাবিত করে। এসব বিপদ অবতীর্ণ হওয়ার প্রয়োজন ও কল্যাণকর দিক বর্ণনা করে বলা হয়েছে, এর ফলে বড় শাস্তি ভোগ করার আগেই যেন মানুষ সচেতন হয়ে যায় এবং এমন চিন্তা ও অন্যকথায় এর অর্থ হবে , দুনিয়ায় আল্লাহ মানুষকে একেবারেই পরমানন্দে রাখেননি। নিশ্চিন্তে ও আরামে জীবনের গাড়ি চলতে থাকলে মানুষ এ ভুল ধারণায় লিপ্ত হয়ে পড়বে যে, তার চেয়ে বড় আর কোন শক্তি নেই যে, তার কোন ক্ষতি করতে পারে। বরং আল্লাহ এমন ব্যবস্থা করে রেখেছেন যার ফলে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন ব্যক্তি , জাতি ও দেশের ওপর এমন সব বিপদ-আপদ পাঠাতে থাকেন, যা তাদেরকে একদিকে নিজেদের অসহায়তা এবং অন্যদিকে নিজেদের চেয়ে বড় ও উর্ধ্বে একটি মহাপরাক্রমশালী সর্বব্যাপী শাসন ব্যবস্থার অনুভূতি দান করে। এ বিপদ প্রত্যেকটি ব্যক্তি, দল ও জাতিকে একথা স্মরণ করিয়ে দেয় যে, তোমাদের ভাগ্য ওপরে অন্য একজন নিয়ন্ত্রণ করছেন। সবকিছু তোমাদের হাতে দিয়ে দেয়া হয়নি। আসল ক্ষমতা রয়েছে তার হাতে যিনি কর্তৃত্ব সহকারে এসব কিছু করে চলছেন। তার পক্ষ থেকে যখনই কোন বিপদ তোমাদের ওপর আসে , তার বিরূদ্ধে কোন প্রতিরোধ তোমরা গড়ে তুলতে পারো না এবং কোন জিন, রূহ ,দেব-দেবী, নবী বা অলীর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেও তার পথ রোধ করতে সক্ষম ও না। 

এদিক দিয়ে বিচার করলে এ বিপদ নিছক বিপদ নয় বরং আল্লাহর সতর্ক সংকেত। মানুষকে সত্য জানাবার এবং তার বিভ্রান্তি দূর করার জন্য একে পাঠানো হয়। এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে যদি মানুষ দুনিয়াতেই নিজের বিশ্বাস ও কর্ম শুধরে নেয় তাহলে আখেরাতে আল্লাহর বড় শাস্তির মুখোমুখি হবার তার কোন প্রয়োজনই দেখা দেবে না।)

অপরাধীদেরকে / কাফিরদিগকে শাস্তি দিতে আল্লাহর দেরী হওয়ার কারণ কি ?

বিস্তারিত দেখুন : অ > অবকাশ ।

অপরাধীদের শাস্তির স্বরুপ : তাদেরকে কাটা শস্যে পরিণত করা হবে :

(২০:১৫) আর তারা এ আর্তনাদ করতেই থাকে যতক্ষণ আমি তাদেরকে কাটা শস্যে পরিণত না করি, জীবনের একটি স্ফুলিংগও তাদের মধ্যে থাকেনি৷

কুরআনের আয়াত শুনে যারা পিছনে ফিরে কেটে পড়ে তাদের শাস্তি : 

(মু’মিনুন:৬৬) আমার আয়াত তোমাদের শোনানো হতো, তোমরা তো (রসূলের আওয়াজ শুনতেই ) পিছন ফিরে কেটে পড়তে

(মু’মিনুন:৬৪) অবশেষে যখন আমি তাদের বিলাসপ্রিয়দেরকে আযাবের মাধ্যমে পাকড়াও করবো  তখন তারা আবার চিৎকার করতে থাকবে৬৫) ---এখন বন্ধ করো তোমাদের আর্তচিৎকার আমার পক্ষ থেকে এখন কোন সাহায্য দেয়া হবে না ৷

ঈমান না আনার দুনিয়াবী শাস্তি :

(২১:৬) অথচ এদের আগে আমি যেসব জনবসতিকে ধ্বংস করেছি, তাদের কেউ ঈমান আনেনি৷ এখন কি এরা ঈমান আনবে ?

(বিস্তারিত: ঈ > ঈমান) আরো দেখুন : ক্ষ > ক্ষতি, ধ> ধ্বংস, জ > জাতি।

(২১:১১) কত অত্যাচারী জনবসতিকে আমি বিধ্বস্ত করে দিয়েছি এবং তাদের পর উঠিয়েছি অন্য জাতিকে৷ ১২) যখন তারা আমার আযাব অনুভব করলো, পালাতে লাগলো সেখান থেকে৷ ১৩) (বলা হলো) “পালায়ো না, চলে যাও তোমাদের গৃহে ও ভোগ্য সামগ্রীর মধ্যে, যেগুলোর মধ্যে তোমরা আরাম করছিলে, হয়তো তোমাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে৷১৪) বলতে লাগলো, “হায়, আমাদের দুর্ভাগ্য! নিশ্চয়ই আমরা অপরাধী ছিলাম৷” ১৫) আর তারা এ আর্তনাদ করতেই থাকে যতক্ষণ আমি তাদেরকে কাটা শস্যে পরিণত না করি, জীবনের একটি স্ফুলিংগও তাদের মধ্যে থাকেনি৷ 

জালিমদের জন্য একটি শাস্তি :পানিতে ডুবিয়ে মৃত্যু : তবে পানিতে ডুবে সকল মৃত্যুই শাস্তি নয়:

১। পানিতে ডুবে যাওয়া : নূহ : এর পুত্র সহ তার জাতিকে :

(২১:৭৭) আর এমন সম্প্রদায়ের মুকাবিলায় তাকে সাহায্য করেছিলাম যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলেছিল৷ তারা খুবই খারাপ লোক ছিল, কাজেই আমি তাদের সবাইকে ডুবিয়ে দিয়েছিলাম৷

(মু’মিনুন:২৭) ...তাদের ছাড়া যাদের বিরুদ্ধে আগেই ফায়সালা হয়ে গেছে এবং জালেমদের ব্যাপারে আমাকে কিছুই বলো না, তারা এখন ডুবতে যাচ্ছে৷

(১১:৪৩) সে পালটা জবাব দিল, “আমি এখনই একটি পাহাড়ে চড়ে বসছি৷ তা আমাকে পানি থেকে বাঁচাবে৷” নূহ বললো, “আজ আল্লাহর হুকুম থেকে বাঁচাবার কেউ নেই, তবে যার প্রতি আল্লাহ রহমত করেন সে ছাড়া৷” এমন সময় একটি তরংগ উভয়ের মধ্যে আড়াল হয়ে গেলো এবং সেও নিমজ্জিতদের দলে শামিল হলো৷

২। ফেরাউন  তার দলবলকে পানিতে ডুবিয়ে মৃত্যু:

সামেরীর শাস্তি : ধর্ম ব্যবসার শাস্তি :

(২০:৯৭) মূসা বললো, “বেশ, তুই দুর হয়ে যা, এখন জীবনভর তুই শুধু একথাই বলতে থাকবি, আমাকে ছুঁয়ো না৷  আর তোর জন্য জবাবদিহির একটি সময় নির্ধারিত রয়েছে যা কখনোই তোর থেকে দূরে সরে যাবে না৷ আর দেখ, তোর এই ইলাহর প্রতি, যার পূজায় তুই মত্ত ছিলি, এখন আমরা তাকে জ্বালিয়ে দেবো এবং তার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশগুলো সাগরে ভাসিয়ে দেবো৷

প্রবল বন্যার মাধ্যমে , বাঁধ ভেঙ্গে দেওয়ার মাধ্যমে সাবা জাতিকে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল :

(৩৪-সাবা: ১৬) কিন্তু তারা মুখ ফিরালো৷২৮. শেষ পর্যন্ত আমি তাদের বিরুদ্ধে পাঠালাম বাঁধভাঙ্গা বন্যা৷২৯.  এবং তাদের আগের দুটি বাগানের জায়গায় অন্য দুটি বাগান তাদেরকে দিয়ে দিলাম যেখানে ছিল তিক্ত ও বিস্বাদ ফল এবং ঝাউগাছ ও সামান্য কিছু কুল৷৩০.

২৮. অর্থাৎ বন্দেগী ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার পরিবর্তে তারা নাফরমানি ও নিমকহারামির পথ অবলম্বন করে

২৯. মূলে বলা হয়েছে (.......) দক্ষিণ আরবের ভাষায় 'আরিম' শব্দটি উপত্তি হয়েছে 'আরিমন' থেকেএর অর্থ হচ্ছে "বাঁধ"ইয়ামনের প্রাচীন ধ্বংসাবশেষের মধ্যে সম্প্রতি যেসব প্রাচীন শিলালিপির সন্ধান পাওয়া গেছে সেগুলোতে এ শব্দটি এ অর্থে ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হয়েছেযেমন ৫৪২ বা ৫৪৩ খৃষ্টাব্দের একটি শিলালিপি সম্পর্কে বলা যায়ইয়ামনের হাবশী গভর্ণর আবরাহা "সাদ্দি মারিব" এর সংস্কার কাজ শেষ করার পর এটি স্থাপন করেনএতে তিনি বারবার এ শব্দটি বাঁধ অর্থে ব্যবহার করেনকাজেই "সাইলুল আরিম" মানে হচ্ছে বাঁধ ভেংগে যে বন্যা আসে

৩০. অর্থাৎ "সাইলুল আরিম" আসার ফলে সাবা এলাকা ধ্বংস হয়ে যায়সাবার অধিবাসীরা পাহাড়ের মধ্যে বাঁধ বেঁধে যেসব খাল ও পানি প্রবাহের সৃষ্টি করেছিল তা সব নষ্ট হয়ে যায় এবং পানি সেচের সমগ্র ব্যবস্থা বিধ্বস্ত হয়এরপর যে এলাকা এক সময় জান্নাত সদৃশ ছিল তা আগাছা ও জংগলে পরিপূর্ন হয়ে যায় এবং সেখানে নিছক বন্য কুল ছাড়া আর আহারযোগ্য কিছু থাকেনি

সাবা জাতির বিস্তারিত ইতিহাস দেখুন : কিভাবে একটি সমৃদ্ধশালী জাতিকে অকৃতজ্ঞতার কারণে নি:শেষ করে দেওয়া হয়েছিল :

 ক্লিক করুন : সাবা জাতি  :  ক্লিক করুন:  টিকা নং : ২৫   থেকে ৩৭.  পর্যন্ত।

দুনিয়া  আখিরাত উভয় স্থানেই শাস্তি রয়েছে কাদের জন্য ?

(১৮:৮৭) সে বললো, “তাদের মধ্য থেকে যে জুলুম করবে আমরা তাকে শাস্তি দেবো তারপর তাকে তার রবের দিকে ফিরিয়ে নেয়া হবে এবং তিনি তাকে অধিক কঠিন শাস্তি দেবেন৷ 

দুনিয়াবী শাস্তি থেকে পলায়ন করতে চাইবে অপরাধীরা  :

(২১:১১) কত অত্যাচারী জনবসতিকে আমি বিধ্বস্ত করে দিয়েছি এবং তাদের পর উঠিয়েছি অন্য জাতিকে৷ ১২) যখন তারা আমার আযাব অনুভব করলো, পালাতে লাগলো সেখান থেকে৷ ১৩) (বলা হলো) “পালায়ো না, চলে যাও তোমাদের গৃহে ও ভোগ্য সামগ্রীর মধ্যে, যেগুলোর মধ্যে তোমরা আরাম করছিলে, হয়তো তোমাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে৷

দুনিয়াবী শাস্তির স্বরূপ : অপরাধী সম্প্রদায়কে কাটা শস্যে পরিণত করা হবে :

(২১:১৪) বলতে লাগলো, “হায়, আমাদের দুর্ভাগ্য! নিশ্চয়ই আমরা অপরাধী ছিলাম৷” ১৫) আর তারা এ আর্তনাদ করতেই থাকে যতক্ষণ আমি তাদেরকে কাটা শস্যে পরিণত না করি, জীবনের একটি স্ফুলিংগও তাদের মধ্যে থাকেনি৷ 

কুরআন মেনে না চলার দুনিয়াবী  আখিরাতের শাস্তি : ১। দুনিয়ায় হবে সংকীর্ণ জীবন ও      ২। আখিরাতে উঠানো হবে অন্ধ করে :

(২০:১২৪) আর যে ব্যক্তি আমার “যিকির (উপদেশমালা) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে তার জন্য হবে দুনিয়ায় সংকীর্ণ জীবন এবং কিয়ামতের দিন আমি তাকে উঠাবো অন্ধ করে৷১২৫) -সে বলবে, “হে আমার রব! দুনিয়ায় তো আমি চক্ষুষ্মান ছিলাম কিন্তু এখানে আমাকে অন্ধ করে উঠালে কেন? ১২৬) আল্লাহ বললেন, “হাঁ, এভাবেই তো৷ আমার আয়াত যখন তোমার কাছে এসেছিল, তুমি তাকে ভুলে গিয়েছিলে এবং সেভাবেই আজ তোমাকেও ভুলে যাওয়া হচ্ছে৷১২৭) -এভাবেই আমি সীমা লংঘনকারী এবং নিজের রবের আয়াত অমান্যকারীকে (দুনিয়ায়) প্রতিফল দিয়ে থাকি এবং আখেরাতের আযাব বেশী কঠিন এবং বেশীক্ষণ স্থায়ী৷

আসলে তোমাদের রবের শাস্তি ভয় করার মত :

(১৭:৫৭) আসলে তোমার রবের শাস্তি ভয় করার মতো৷ 

(১৭:৫৮) আর এমন কোনো জনপদ নেই, যা আমি কিয়ামতের আগে ধ্বংস করে দেবো না  অথবা যাকে কঠোর শাস্তি দেবো না, আল্লাহর লিখনে এটা লেখা আছে৷ 

অন্যান্য শরীকরাও শাস্তির ভয়ে ভীত, আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে তোমরা মাবুদ বানিয়ে রেখেছো :

(১৭:৫৭) এরা যাদেরকে ডাকে তারা তো নিজেরাই নিজেদের রবের নৈকট্যলাভের উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছে যে, কে তাঁর নিকটতর হয়ে যাবে এবং এরা তাঁর রহমতের প্রত্যাশী এবং তাঁর শাস্তির ভয়ে ভীত৷

আল্লাহ ক্ষমাশীল, কিন্তু তার আযাবও অত্যন্ত কঠিন :

(১৫:৪৯) হে নবী ! আমার বান্দাদেরকে জানিয়ে দাও যে, আমি বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়৷৫০) কিন্তু এ সংগে আমার আযাবও ভয়ংকর যন্ত্রণাদায়ক৷

আল্লাহর শাস্তি কঠোর :

তাহলে দেখো আমার শাস্তি কেমন কঠোর ছিল৷-১৩:৩২,         আখেরাতের আযাব এর চেয়েও বেশী কঠিন৷-১৩:৩৪,

আর কঠিন ধ্বংসকর শাস্তি রয়েছে তাদের জন্য যারা সত্য গ্রহণ করতে অস্বীকার করে  -১৪:২,

.

আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা : ৮:২৫,

অসৎকর্মীরা দুনিয়া  আখিরাত উভয় স্থানে শাস্তি পেয়ে থাকে:

(১৩:৩৪) এ ধরনের লোকদের জন্য দুনিয়ার জীবনেই রয়েছে আযাব এবং আখেরাতের আযাব এর চেয়েও বেশী কঠিন৷ তাদেরকে আল্লাহর হাত থেকে বাঁচাবার কেউ নেই৷  

যদি জনপদের লোকেরা ঈমান আনতো এবং তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করতো, তাহলে আমি তাদের জন্য আকাশ ও পৃথিবীর রবকতসমূহের দুয়ার খুলে দিতাম৷ কিন্তু তারা তো প্রত্যাখ্যান করেছে৷ কাজেই তারা যে অসৎকাজ করে যাচ্ছিলো তার জন্যে আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি-৭:৯৬,  

সীমা অতিক্রমকারীদের জন্য তাদের কার্যক্রমকে তাদের দৃষ্টিতে সুশোভন করে দেয়া হয়েছে - ১০:১২,    

হে মানব জাতি! তোমাদের আগের জাতিদেরকে  (যারা তাদের নিজেদের যুগে উন্নতির উচ্চ শিখরে আরোহণ করেছিল) আমি ধ্বংস করে দিয়েছি -যখন তারা জুলুমের নীতি অবলম্বন করলো এবং তাদের রসূলগণ তাদের কাছে সুষ্পষ্ট নিশানী নিয়ে এলেন, কিন্তু তারা আদৌ ঈমান আনলো না৷এভাবে আমি অপরাধীদেরকে তাদের অপরাধের প্রতিফল দিয়ে থাকি- ১০:১৩,

শিরককারীদের দুনিয়াবী শাস্তি :

(১৮:৪২) শেষ পর্যন্ত তার সমস্ত ফসল বিনষ্ট হলো এবং সে নিজের আংগুর বাগান মাচানের ওপর লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে থাকতে দেখে নিজের নিয়োজিত পুঁজির জন্য আফসোস করতে থাকলো এবং বলতে লাগলো, “হায়! যদি আমি আমার রবের সাথে কাউকে শরীক না করতাম”৷ 

সৎকাজের আদেশ  অসৎকাজে নিষেধের কাজ যারা করতে থাকে তারা সামষ্টিক জাতীয় শাস্তি থেকে রেহাই পায় :

(১১:১১৬) তাহলে তোমাদের পূর্বে যেসব জাতি অতিক্রান্ত হয়েছে তাদের মধ্যে এমন সব লোক থাকলো না কেন যারা লোকদেরকে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টিতে বাধা দিতো ? এমন লোক থাকলেও অতি সামান্য সংখ্যক ছিল৷ তাদেরকে আমি ঐ জাতিদের থেকে বাঁচিয়ে নিয়েছি৷ নয়তো জালেমরা তো এমনি সব সুখৈশ্বর্যের পেছনে দৌঁড়াতে থেকেছে, যার সরঞ্জাম তাদেরকে প্রচুর পরিমাণে দেয়া হয়েছিল এবং তারা অপরাধী হয়েই গিয়েছিল৷ (১১:১১৭) তোমার রব এমন নন যে, তিনি জনবসতিসমূহ অন্যায়ভাবে ধ্বংস করবেন, অথচ তার অধিবাসীরা সংশোধনকারী৷

অসৎ ও অনৈসলামিক রাষ্ট্রনায়কগণ  সমগ্র সমাজ ও রাষ্ট্রকেই আযাবের মুখে ঠেলে দেয় :

(১৪:২৮) তুমি দেখেছো তাদেরকে, যারা আল্লাহর নিয়ামত লাভ করলো এবং তাকে কৃতজ্ঞতায় পরিণত করলো আর (নিজেদের সাথে) নিজেদের সম্প্রদায়কেও ধ্বংসের আবর্তে ঠেলে দিল২৯) অর্থাৎ জাহান্নাম, যার মধ্যে তাদরেকে ঝল্‌সানো হবে এবং তা নিকৃষ্টতম আবাস৷

অপরাধীদের কে তাদের শত্রু দ্বারা শাস্তি প্রদান : শত্রুরা তাদের উপর বিজয় লাভ করে :

(১৭:৫) শেষ পর্যন্ত যখন এদের মধ্য থেকে প্রথম বিদ্রোহের সময়টি এলো তখন হে বনী ইসরাঈল! আমি তোমাদের মুকাবিলায় নিজের এমন একদল বান্দার আবির্ভাব ঘটালাম, যারা ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী এবং তারা তোমাদের দেশে প্রবেশ করে সবদিকে ছড়িয়ে পড়ে৷ এক একটি প্রতিশ্রুতি ছিল, যা পূর্ণ হওয়াই ছিল অবধারিত৷

(১৬:৭)  ..... তারপর যখন পরবর্তী প্রতিশ্রুতির সময় এসেছে তখন আমি অন্য শত্রুদেরকে তোমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছি, যাতে তারা তোমাদের চেহারা বিকৃত করে দেয় এবং (বায়তুল মাকদিসের) মসজিদে এমনভাবে ঢুকে পড়ে যেমন প্রথমবার শত্রুরা ঢুকে পড়েছিল আর যে জিনিসের ওপরই তাদের হাত পড়ে তাকে ধ্বংস করে রেখে দেয়৷

অপরাধের পুনরাবৃত্তি করলে ?

(১৭:৮) এখন তোমাদের রব তোমাদের প্রতি করুণা করতে পারেন৷ কিন্তু যদি তোমরা আবার নিজেদের আগের আচরণের পুনরাবৃত্তি করো তাহলে আমিও আবার আমার শাস্তির পুনরাবৃত্তি করবো৷

কুরআন আখিরাত অস্বীকার কারীদের শাস্তির সংবাদ দেয় :

(১৭:১০) আর যারা আখেরাত মানে না তাদেরকে এ  (কুরআন) সংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য আমি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছি৷

আল্লাহর শাস্তি সম্পর্কে নির্ভীক হয়ে যাওয়া ?  (এ সাথে দেখুন : ভ > ভয়)

(১৭:৬৮) আচ্ছা, তাহলে তোমরা কি এ ব্যাপারে একেবারেই নির্ভীক যে, আল্লাহ কখনো স্থলদেশেই তোমাদেরকে যমীনের মধ্যে প্রোথিত করে দেবেন না অথবা তোমাদের ওপর পাথর বর্ষণকারী ঘূর্ণি পাঠাবেন না এবং তোমরা তার হাত থেকে বাঁচার জন্য কোনো সহায়ক পাবে না ?

দ্বিগুণ শাস্তি রয়েছে কাদের জন্য ?

আলেম ওলামা সহ সমাজের যারা নেতা, যাদেরকে মানুষ অনুসরণ করে যাদের কথায় মানুষ চলে তাদের জন্য রয়েছে দ্বিগুণ শাস্তি :

এবং : -

দুবার শাস্তি  দুবার পুরস্কারের তাৎপর্য কি ?

(৩৩-আহযাব: ৩০) হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ কোনো সুস্পষ্ট অশ্লীল কাজ করবে তাকে দ্বিগুন শাস্তিদেয়া হবে৷  আল্লাহর জন্য এটা খুবই সহজ কাজ৷ ৩১) আর তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ আল্লাহ  তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে এবং সৎকাজ করবে তাকে আমি দুবার প্রতিদান দেবো ৪৫ এবং আমি তার জন্য সম্মানজনক রিযিকের ব্যবস্থা করে রেখেছি৷  

৪৫. গোনাহর জন্য দু'বার শাস্তিও নেকীর জন্য দু'বার পুরস্কার দেবার কারণ হচ্ছে এই যে, আল্লাহ যাদেরকে মানুষের সমাজে কোন উন্নত মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেন তারা সাধারণত জনগণের নেতা হয়ে যায় এবং জনগণের বিরাট অংশ ভালো  মন্দ কাজে তাঁদেরকেই অনুসরণ করে চলে। তাঁদের খারাপ কাজ শুধুমাত্র তাঁদের একার খারাপ কাজ হয় না বরং একটি জাতির চরিত্র বিকৃতরি কারণও হয় এবং তাঁদের ভালো কাজ শুধুমাত্র তাদের নিজেদের ব্যক্তিগত ভালো কাজ হয় না বরং বহু লোকের কল্যাণ সাধনেরও কারণ হয়। তাই তারা যখন খারাপ কাজ করে তখন নিজেদের খারাপের সাথে সাথে অন্যদের খারাপেরও শাস্তি পায় এবং যখনি তারা সৎকাজ করে তখন নিজেদের সৎকাজের সাথে সাথে অন্যদেরকে তারা যে সৎপথ দেখিয়েছে তারও প্রতিদান লাভ করে। 

আলোচ্য আয়াত থেকে  মূলনীতিও স্থিরীকৃত হয়ে যে, যেখানে মর্যাদা যত বেশী হবে এবং যত বেশী বিশ্বস্ততার আশা করা হবে যেখানে মর্যাদাহানি  অবিশ্বস্ততার অপরাধ ততবেশী কঠোর হবে এবং  সংগে তার শাস্তি  হবে তত বেশী কঠিন। যেমন মসজিদে শরাব পান করা নিজ গৃহে শরাব পান করার চেয়ে বেশী ভয়াবহ অপরাধ এবং এর শাস্তি  বেশী কঠোর। মাহরাম নারীদের সাথে যিনা করা অন্য নারীদের সাথে যিনা করার তুলনায় বেশী গোনাহের কাজ এবং  জন্য শাস্তি  হবে বেশী কঠিন

(১৭:৭৪) আর যদি (হে মুহাম্মদ !) আমি তোমাকে মজবুত না রাখতাম তাহলে তোমার পক্ষে তাদের দিকে কিছু না কিছু ঝুঁকে পড়া অসম্ভব ব্যাপার ছিলো না৷৭৫) কিন্তু যদি তুমি এমনটি করতে তাহলে আমি এ দুনিয়ায় তোমাকে দ্বিগুণ শাস্তির মজা টের পাইয়ে দিতাম এবং আখেরাতেও, তারপর আমার মুকাবিলায় তুমি কোনো সাহায্যকারী পেতে না৷

( ব্যাখ্যা :  এক, যদি তুমি সত্যকে সত্য জানার পর মিথ্যার সাথে কোন আপোস করে নিতে তাহলে বিক্ষুব্ধ জাতি তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যেতো ঠিকই কিন্তু আল্লাহর গযব তোমার ওপর নেমে পড়তো এবং তোমাকে দুনিয়ায় ও আখেরাত উভয় স্থানেই দ্বিগুণ সাজা দেয়া হতো । দুই মানুষ নবী হলেও আল্লাহর সাহায্য ও সুযোগ - সুবিধা তার সহযোগী না হলে শুধুমাত্র নিজের শক্তির ওপর নির্ভর করে সে মিথ্যার তুফানের মোকাবিলা করতে পারে না । শুধুমাত্র আল্লাহ প্রদত্ত ধৈর্য ও অবিচলতার সাহায্যেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্য ও ন্যায়ের ওপর পাহাড়ের মতো অটল থাকেন এবং বিপদের সয়লাব স্রোত তাঁকে একচুলও স্থানচ্যুত করতে পারেনি ।)

 

নবীর স্ত্রীও যদি অশ্লীল কাজ করে তবে তাদেরকেও কোন ছাড় দেওয়া হবেনা, বরং তাদের জন্য রয়েছে দ্বিগুণ  শাস্তি :

(৩৩-আহযাব: ৩০) হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ কোনো সুস্পষ্ট অশ্লীল কাজ করবে তাকে দ্বিগুন শাস্তিদেয়া হবে৷ ৪৩ আল্লাহর জন্য এটা খুবই সহজ কাজ৷ ৪৪ 

৪৩. এর অর্থ  নয় যে, নাউযুবিল্লাহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র স্ত্রীদের থেকে কোন অশ্লীল কাজের আশংকা ছিল। বরং এর মাধ্যমে নবীর স্ত্রীগণকে  অনুভূতি দান করাই উদ্দেশ্য ছিল যে, ইসলামী সমাজে তাঁরা মেন উচ্চ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত আছেন সেই অনুযায়ী তাঁদের দায়িত্বও অনেক কঠিন। তাই তাঁদের নৈতিক চালচলন হতে হবে অত্যন্ত পবিত্র  পরিচ্ছন্ন। এটা ঠিক তেমনি যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করে মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী)" যদি তুমি শিরক করো তাহলে তোমার সমস্ত কৃতকর্ম বরবাদ হয়ে যাবে।" (আয যুমারঃ ৬৫) এর অর্থ  নয় যে, নাউযুবিল্লাহ নবী করীম (সা) থেকে কোন শিরকের আশংকা ছিল বরং নবী করীমকে এবং তাঁর মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে শিরক কত ভয়াবহ অপরপাধ এবং তাকে কঠোরভাবে এড়িয়ে চলা অপরিহার্য, সে কথা বুঝানোই ছিল উদ্দেশ্য

৪৪. অর্থাৎ তোমরা  ভুলের মধ্যে অবস্থান করো না যে, নবীর স্ত্রী হওয়ার কারণে তোমরা আল্লাহর পাকড়াও থেকে বেঁচে যাবে অথবা তোমাদের মর্যাদা এত বেশী উন্নত যে, সে কারণে তোমাদেরকে পাকড়াও করা আল্লাহর জন্য কঠিন হয়ে যেতে পারবে। 

অনুসারীরা নেতার জন্য দোয়া করবে : আমাদের নেতাকে দ্বিগুণ আযাব দাও :

(৩৩-আহযাব: ৬৬) যেদিন তাদের চেহারা আগুনে ওলট পালট করা হবে তখন তারা বলবে “হায়! যদি আমরা আল্লাহ ও তার রসূলের আনুগত্য করতাম”৷  ৬৭) আরো বলবে, “হে আমাদের রব! আমরা আমাদের সরদারদের ও বড়দের আনুগত্য করেছিলাম এবং তারা আমাদের সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করেছে৷  ৬৮) হে আমাদের রব!তাদেরকে দ্বিগুন আযাব দাও এবং তাদের প্রতি কঠোর লানত বর্ষণ করো১১৭ 

১১৭. এ বিষয়বস্তুটি কুরআন মজীদের বহুস্থানে বর্ণনা করা হয়েছেদৃষ্টান্ত স্বরূপ নিম্নলিখিত স্থানগুলো দেখুনঃ আল আ'রাফ ১৮৭ আন নাযি'আত ৪২ ও ৪৬ সাবা ৩ ও ৫, আল মুলক ২৪ ও ২৭ আল মুতাফফিফীন ১০ ও ১৭ আল হিজর ২ ও ৩ আল ফুরকান ২৭ ও ২৯ এবং হা-মীম আস সাজদাহ ২৬ ও ২৯ আয়াত 

হযরত মূসা : এর শরীয়তে শিরক করার শাস্তি :

(২০:৯৭) মূসা বললো, “বেশ, তুই দুর হয়ে যা, এখন জীবনভর তুই শুধু একথাই বলতে থাকবি, আমাকে ছুঁয়ো না৷ আর তোর জন্য জবাবদিহির একটি সময় নির্ধারিত রয়েছে যা কখনোই তোর থেকে দূরে সরে যাবে না৷ আর দেখ, তোর এই ইলাহর প্রতি, যার পূজায় তুই মত্ত ছিলি, এখন আমরা তাকে জ্বালিয়ে দেবো এবং তার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশগুলো সাগরে ভাসিয়ে দেবো৷

একজনের পাপের শাস্তি আরেকজনকে দেওয়া হবে না :

বিস্তারিত দেখুন : ব > বোঝা, প > পাপ, গ > গোণাহ।  

(নূর:১১)....যে এর মধ্যে যতটা অংশ নিয়েছে সে ততটাই গোনাহ কামাই করেছে আর যে ব্যক্তি এর দায়দায়িত্বের বড় অংশ নিজের মাথায় নিয়েছে তার জন্য তো রয়েছে মহাশাস্তি ৷

শাস্তি নাযিল করার জন্য নবীদেরকে কাফেরদের চ্যালেঞ্জ :

(২৯-আনকাবুত:২৯) ..... তারা (কাফেররা) লূত আ: কে বললো , “নিয়ে এসো আল্লাহর আযাব যদি তুমি সত্যবাদী হও” ৷

তাগুতের শাস্তি :

সাংস্কৃতিক তাগুত :

শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মাধ্যমেও মানুষকে ইসলামের পথ থেকে দুরে সরিয়ে রাখার প্রচেষ্টা করা হয়ে থাকে :

(৩১-লোকমান: ৬) আর মানুষদেরই মধ্যে এমনও কেউ আছে, ৫   যে মনোমুগ্ধকর কথা   কিনে আনে লোকদেরকে জ্ঞান ছাড়াই   আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য এবং এ পথের আহ্বানকে হাসি-ঠাট্টা করে উড়িয়ে দেয়৷   এ ধরনের লোকদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর আযাব৷ ৯  ৭) তাকে যখন আমার আয়াত শুনানো হয় তখন সে বড়ই দর্পভরে এমনভাবে মুখ ফিরিয়ে নেয় যেন সে তা শুনেইনি, যেন তার কান কালা৷ বেশ, সুখবর শুনিয়ে দাও তাকে একটি যন্ত্রণাদায়ক আযাবের৷  

(বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য দেখুন : ল > লাহওয়াল হাদীস) ।

শান্তি :

(১১:৪৮) হুকুম হলো, “হে নূহ! নেমে যাও, আমার পক্ষ থেকে শান্তি ও বরকত তোমার ওপর এবং তোমার সাথে যেসব সম্প্রদায় আছে তাদের ওপর৷ আবার কিছু সম্প্রদায় এমনও আছে যাদেরকে আমি কিছুকাল জীবন উপকরণ দান করবো তারপর আমার পক্ষ থেকে তাদেরকে স্পর্শ করবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি৷” 

(১৬:৩২) এমন মুত্তাকীদেরকে, যাদের পবিত্র থাকা অবস্থায় ফেরেশতারা যখন মৃত্যু ঘটায় তখন বলে, “তোমাদের প্রতি শান্তি, যাও নিজেদের কর্মকাণ্ডের বদৌলতে জান্নাতে প্রবেশ করো৷”  

(১৯:১৫) শান্তি তার প্রতি যেদিন সে জন্ম লাভ করে এবং যেদিন সে মৃত্যুবরণ করে আর যেদিন তাকে জীবিত করে উঠানো হবে৷ (এখানে হযরত যাকারিয়া আ: এর পুত্র হযরত ইয়াহইয়া আ: এর সম্পর্কে বলা হয়েছে। )

(১৯:৩৩) শান্তি আমার প্রতি যখন আমি জন্ম নিয়েছি ও যখন আমি মরবো এবং যখন আমাকে জীবিত করে উঠানো হবে”৷ (হযরত ঈসা আ: এর বক্তব্য ,  এ কথা তিনি শিশু অবস্থায় বলেছিলেন)

(২০:৪৭) ..এবং শান্তি তার জন্য যে সঠিক পথ অনুসরণ করে৷  

ইসলাম শান্তি চায়, যুদ্ধ হলেও তাও শেষ অবলম্বন হিসেবে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই যুদ্ধ :

জিহাদ অর্থ শুধুমাত্র যুদ্ধ নয়, বরং, শান্তি প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা :

কোনো মুশরিক যদি তোমাদের কাছ নিরাপত্তা চায়, তাহলে তাকে তা দেবে, যেন সে আল্লাহর বাণী শোনার সুযোগ পায়। তারপর তাকে একটা নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাবে। আসলে তারা এমন একটা জাতি, যাদের জ্ঞান নেই। [আত-তাওবাহ ৯:৬]

…যদি অমুসলিম আক্রমণকারিরা নিজেদেরকে উঠিয়ে নেয়, আর যুদ্ধ না করে, তোমাদের সাথে শান্তি করতে চায়, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে কোনোই সুযোগ দেননি তাদের বিরুদ্ধে কিছু করার। [আন-নিসা ৪:৯০]

অমুসলিমরা যা বলে, তা ধৈর্য ধরে শোনো। … [ত্বাহা ২০:১৩০]

ধর্মের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই। সত্য পথ মিথ্যা থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে।… [আল-বাক্বারাহ ২:২৫৬]

শাসক :  (বিস্তারিত দেখুন : র > রাষ্টক্ষমতা) 

আল্লাহ সবচেয়েক বড় শাসক:

(১১:৪৫) নূহ তার রবকে ডাকলো৷ -- তোমার প্রতিশ্রুতি সত্য আর তুমি সমস্ত শাসকদের মধ্যে সবেচেয়ে বড় ও উত্তম শাসক৷

(১২:৪০) শাসন কর্তৃত্ব আল্লাহ ছাড়া আর কারোর নেই৷ তাঁর হুকুম- তোমরা তাঁর ছাড়া আর কারোর বন্দেগী করবে না৷ এটিই সরল সঠিক জীবন পদ্ধতি, কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না৷

আরো দেখুন : স > সার্বভৌমত্ব।

শাফায়াত :

দেখুন : ‍ > সুপারিশ ,  > শিরক,

শনিবার :

শনিবারের বিধান লংঘনকারীদের দুনিয়ার শাস্তি স্বরূপ বানরে পরিণত করা হয় : ৭:১৬৬,

(১৬:১২৪) বাকী রইলো শনিবারের ব্যাপারটি, সেটি আসলে আমি এমনসব লোকের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিলাম যারা এর বিধানের মধ্যে মতবিরোধ করেছিল৷

শরীয়ত :

শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপ দেখে ধৈর্যধারণ করা নবীর পক্ষে অসম্ভব :

বিস্তারিত দেখুন :  > ধৈর্য  

ওয়াদা রক্ষা করার কারণে যদি দেখা শরীয়ত লংঘণ হয়ে যা্চ্ছে, তবে সে ওয়াদা ভঙ্গ করা ফরয :

(১৮:৭০) সে (খিজির আ: হযরত মুসা আ: কে ) বললো, আচ্ছা, যদি আপনি আমার সাথে চলেন তাহলে আমাকে কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করবেন না যতক্ষণ না আমি নিজে সে সম্পর্কে আপনাকে বলি৷ (১৮:৬৯) মূসা বললো, “ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে সবরকারী হিসেবেই পাবেন এবং কোনো ব্যাপারেই আমি আপনার হুকুম অমান্য করবো না৷...(১৮:৭১) ... মূসা বললো, “আপনি কি নৌকার সকল আরোহীকে ডুবিয়ে দেবার জন্য তাতে ছিদ্র করলেন ? এতো আপনি বড়ই মারাত্মক কাজ করলেন৷” ..(১৮:৭৪) ..... মূসা বললো, “আপনি এক নিরপরাধকে হত্যা করলেন অথচ সে কাউকে হত্যা করেনি ? এটা তো বড়ই খারাপ কাজ করলেন৷”  …(১৮: ৭২) সে (খিজির আ: হযরত মুসা আ: কে ) বললো, “আমি না তোমাকে বলেছিলাম, তুমি আমার সাথে সবর করতে পারবে না ?”  (১৮:৭৬) মূসা বললো, “এরপর যদি আমি আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করি তাহলে আপনি আমাকে আপনার সাথে রাখবেন না৷ এখন তো আমার পক্ষ থেকে আপনি ওজর পেয়ে গেছেন৷” (১৮:৭৭) তারপর তারা সামনের দিকে চললো৷ চলতে চলতে একটি জনবসতিতে প্রবেশ করলো এবং সেখানে লোকদের কাছে খাবার চাইলো৷ কিন্তু তারা তাদের দুজনের মেহমানদারী করতে অস্বীকৃতি জানালো৷ সেখানে তারা একটি দেয়াল দেখলো, সেটি পড়ে যাবার উপক্রম হয়েছিল৷ সে দেয়ালটি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে দিল৷ মূসা বললো, “আপনি চাইলেএ কাজের পারিশ্রমিক নিতে পারতেন৷”  ..(১৮:৭২) তখন সে (খিজির আ: ) বললো, “আমি না তোমাকে বলেছিলাম, তুমি আমার সাথে সবর করতে পারবে না ?” (১৮:৭৮) সে (খিজির আ: হযরত মুসা আ: কে )  বললো, “ব্যাস, তোমার ও আমার সংগ শেষ হয়ে গেলো৷

হযরত মূসা : এর শরীয়তে শিরক করার শাস্তি :

(২০:৯৭) মূসা বললো, “বেশ, তুই দুর হয়ে যা, এখন জীবনভর তুই শুধু একথাই বলতে থাকবি, আমাকে ছুঁয়ো না৷ আর তোর জন্য জবাবদিহির একটি সময় নির্ধারিত রয়েছে যা কখনোই তোর থেকে দূরে সরে যাবে না৷ আর দেখ, তোর এই ইলাহর প্রতি, যার পূজায় তুই মত্ত ছিলি, এখন আমরা তাকে জ্বালিয়ে দেবো এবং তার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশগুলো সাগরে ভাসিয়ে দেবো৷

প্রত্যেক রাসুলকে আলাদা শরীয়ত দেয়া হয়েছিল, তবে সর্বশেষ মুহাম্মদ সা: ব্যতীত সব শরীয়ত রহিত :

(হাজ্ব:৬৭) প্রত্যেক (নবীর) উম্মতের জন্য আমি একটি ইবাদাতের পদ্ধতি নির্দিষ্ট করেছি, যা তারা অনুসরণ করে; কাজেই হে মুহাম্মাদ! এ ব্যাপারে তারা (ঐ সব নবীর মিথ্যা অনুসরনকারীরা*) যেন তোমার সাথে ঝগড়া না করে৷ তুমি তোমার রবের দিকে দাওয়াত দাও৷ অবশ্যই তুমি সঠিক সরল পথে আছো৷

"আমি তোমাদের প্রত্যেকের জন্য একটি শরীয়াত ও কর্মপদ্ধতি নির্ধারিত করেছি।" (৪৮ আয়াত)

(*তারা যদি সত্যিকার অর্থে ঐ নবীর শিক্ষার অনুসরণ করতো  তবে অবশ্যই মুহাম্মদ সা: এর অনুসরণকারী হতো, কারণ পূর্ববর্তী সকল নবীই এ ভবিষ্যৎবানী করে গেছেন যে, পরবর্তীতে মুহাম্মদ সা: এর আগমন ঘটলে তোমরা তার অনুসরণ করবে । )

শরীয়ত অনুযায়ী শাস্তি সমূহ :  

দেখুন : ব > বিচার ব্যবস্থা > কুরআনে বর্ণিত বিভিন্ন প্রকার বিচার ব্যবস্থা , বিচার প্রক্রিয়া  শাস্তির ব্যবস্থা তথা হদ   

আল্লাহর সুন্নাতে কোন পরিবর্তন নেই :

(৩৩-আহযাব: ৬২) এটিই আল্লাহর সুন্নাত, এ ধরনের লোকদের ব্যাপারে পূর্ব থেকে এটিই চলে আসছে এবং তুমি আল্লাহর সুন্নাতে কোন পরিবর্তন পাবে না৷১১৫

 

১১৫. অর্থাৎ আল্লাহর শরীয়াতের একটি স্বতন্ত্র বিধান আছেসে বিধান হচ্ছে, একটি ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্রে এ ধরনের ফাসাদীদেরকে কখনো সমৃদ্ধি ও বিকাশ লাভের সুযোগ দেয়া হয় নাযখনই কোন সমাজ ও রাষ্ট্রর ব্যবস্থা আল্লাহর শরীয়াতের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হবে, সেখানে এ ধরনের লোকদেরকে পূর্বেই সতর্ক করে দেয়া হবে, যাতে তারা নিজেদের নীতি পরিবর্তন করে নেয় এবং তারপর তারা বিরত না হলে কঠোরভাবে তাদেরকে দমন করা হবে

(আরো দেখুন : স > সুন্নাত)

শহীদ :

রিয়াদুস সালেহীন : সত্যনিষ্ঠা অধ্যায় ::

বই ১ :: হাদিস ৫৭

বদরী সাহাবী সাহল ইবনে হুনাইফ (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট যথার্থই শাহাদাতের মৃত্যু চায়, সে নিজের বিছানায় মৃত্যুবরণ করলেও আল্লাহ তাকে শহীদের মর্যাদায় ভূষিত করেন।’ (মুসলিম)

শহীদ হওয়া : আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করার জন্য জিহাদের ময়দানে দৃঢ়তা প্রদর্শন : আল্লাহর পথে প্রণোৎসর্গের জন্য সদ প্রস্তত থাকা:  

(৩৩-আহযাব : ২৩)   ঈমানদারদের মধ্যে এমন লোক আছে যারা আল্লাহর সাথে কৃত অংগীকার পূর্ণ করে দেখালো৷ তাদের কেউ নিজের নজরানা পূর্ণ করেছে এবং কেউ সময় আসার প্রতীক্ষায় আছে৷ ৩৯ তারা তাদের নীতি পরিবর্তন করেনি৷  

৩৯. অর্থাৎ কেউ আল্লাহর পথে প্রাণ উৎসর্গ করে দিয়েছে এবং কেউ তাঁর দীনের খাতিরে নিজের খুনের নজরানা পেশ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে রয়েছে

যারা আল্লাহর পথ শহীদ হয়, তারা কি জীবিত ?

(১৯:১৬৮) এরা নিজেরা বসে থাকলো এবং এদের ভাই –বন্ধু যারা লড়াই করতে গিয়ে মারা গিয়েছিল, তাদের সম্পর্কে বলেছিলঃ যদি তারা আমাদের কথা মেনে নিতো, তাহলে মারা যেতো না ৷ ওদের বলে দাও, তোমরা নিজেদের একথায় যদি সত্যবাদী হয়ে থাকো, তাহলে তোমাদের নিজেদের মৃত্যু যখন আসবে তখন তা থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করে দেখাও৷ ১৬৯) যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে মৃত মনে করো না৷ তারা আসলে জীবিত ৷   নিজেদের রবের কাছ থেকে তারা জীবিকা লাভ করছে৷ ১৭০) আল্লাহ নিজের অনুগ্রহ থেকে তাদেরকে যা কিছু দিয়েছেন তাতেই তারা আনন্দিত ও পরিতৃপ্ত  এবং যেসব ঈমানদার লোক তাদের পরে এ দুনিয়ায় রয়ে গেছে এবং এখনো সেখানে পৌঁছেনি, তাদের জন্যও কোন ভয় ও দুঃখের কারণ নেই, একথা জেনে তারা নিশ্চিন্ত হতে পেরেছে৷ ১৭১) তারা আল্লাহর পুরস্কার ও অনুগ্রহ লাভে আনন্দিত ও উল্লসিত এবং তারা জানতে পেরেছে যে, আল্লাহ মুমিনদের প্রতিদান নষ্ট করেন না৷ ১৭২) আহত হবার পরও যারা আল্লাহ ও রসূলের আহবানে সাড়া দিয়েছে, তাদের মধ্যে  যারা সৎ-নেককার ও মুত্তাকী তাদের জন্য রয়েছে বিরাট প্রতিদান৷ আর যাদেরকে ১৭৩) লোকেরা বললোঃ তোমাদের বিরুদ্ধে বিরাট সেনা সমাবেশ ঘটেছে৷ তাদেরকে ভয় করো, তা শুনে তাদের ঈমান আরো বেড়ে গেছে এবং তারা জবাবে বলেছেঃ আমাদের জন্য আল্লাহ যথেষ্ট এবং তিনি সবচেয়ে ভালো কার্য উদ্ধারকারী৷ ১৭৫) এখন তোমরা জেনে ফেলেছো, সে আসলে শয়তান ছিল, তার বন্ধুদের অনর্থক ভয় দেখাচ্ছিলে ৷ কাজেই আগামীতে তোমরা মানুষকে ভয় করো না, আমাকে ভয় করো, যদি তোমরা যথার্থ ঈমানদার হয়ে থাকো৷১৭৬) ( হে নবী !) যারা আজ কুফরীর পথে খুব বেশী দৌড়াদৌড়ি করছে তাদের তৎপরতা যেন তোমাকে মলিন বদন না করে৷ এরা আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না৷ আল্লাহ আখেরাতে এদের কোন অংশ দিতে চান না৷ আর সবশেষে তারা কঠোর শাস্তি পাবে৷ ১৭৭) যারা ঈমানকে ছেড়ে দিয়ে কুফরী কিনে নিয়েছে তারা নিসন্দেহে আল্লাহর কোন ক্ষতি করছে না৷ তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত রয়েছে৷ ১৭৮) কাফেরদের আমি যে ঢিল দিয়ে চলছি এটাকে যেন তারা নিজেদের জন্য ভালো মনে না করে ৷ আমি তাদেরকে এ জন্য ঢিল দিচ্ছি, যাতে তারা গোনাহের বোঝা ভারী করে নেয়, তারপর তাদের জন্য রয়েছে কঠিন অপমানকর শাস্তি৷ ১৭৯) তোমরা বর্তমানে যে অবস্থায় আছো আল্লাহ মুমিনদের কখনো সেই অবস্থায় থাকতে দেবেন না৷ পাক –পবিত্র লোকেদেরকে তিনি নাপাক ও অপবিত্র লোকদের থেকে আলাদা করেই ছাড়বেন৷ কিন্তু তোমাদেরকে গায়েবের খবর জানিয়ে দেয়া আল্লাহর রীতি নয়৷গায়েবের খবর জানাবার জন্য তিনি নিজের রসূলদের মধ্য থেকে যাকে চান বাছাই করে নেন৷ কাজেই ( গায়েবের ব্যাপারে) আল্লাহ ও তাঁর রসূলের ওপর ঈমান রাখো ৷ যদি তোমরা ঈমান ও আল্লাহকে ভয় করার নীতি অবলম্বন করো তাহলে বিরাট প্রতিদান পাবে৷ ১৮০) আল্লাহ যাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং তারপরও তারা কার্পণ্য করে, তারা যেন এই কৃপণতাকে নিজেদের জন্য ভালো মনে না করে ৷ না, এটা তাদের জন্য অত্যন্ত খারাপ ৷ কৃপণতা করে তারা যাকিছু জমাচ্ছে তাই কিয়ামতের দিন তাদের গলার বেড়ি হবে৷ পৃথিবী ও আকাশের স্বত্বাধিকার একমাত্র আল্লাহরই ৷ আর তোমরা যা কিছু করছো, আল্লাহ তা সবই জানেন৷ 

আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণ করা :

যারা নিজের জীবনকে আল্লাহর রাস্তায় বিলীন কর দেয় : ২:২০৭, ১৪১,

৩:১৪০, ১৫৭ (আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণ করা), ৩:১৬৯ (তোমরা তাদেরকে মৃত বলোনা, তারা জীবিত)

৪:১৭৪,

 (২০:৭২) যাদুকররা জবাব দিল, “সেই সত্তার কসম! যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, উজ্জ্বল সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী সামনে এসে যাওয়ার পরও আমরা (সত্যের ওপর) তোমাকে প্রাধান্য দেবো, এটা কখনো হতে পারে না৷ তুমি যা কিছু করতে চাও করো৷ তুমি বড় জোর এ দুনিয়ার জীবনের ফায়সালা করতে পারো  

(২৯-আনকাবুত:৫৯) - তাদের জন্য যারা সবর করেছে ৯৭   এবং যারা নিজেদের রবের প্রতি আস্থা রাখে৷ ৯৮  

৯৭ . অর্থাৎ যারা সব রকমের সমস্যা, সংকট, বিপদ- আপদ , ক্ষতি ও কষ্টের মোকাবিলায় ঈমানের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে। যারা ঈমান আনার বিপদ নিজের মাথায় তুলে নিয়েছে এবং মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। ঈমান ত্যাগ করার উপকারিতা ও মুনাফা যারা নিজের চোখে দেখেছে এবং এরপরও তার প্রতি সামান্যতমও ঝুঁকে পড়েনি। যারা কাফের ও ফাসেকদেরকে নিজেদের সামনে ফুলে ফেঁপে উঠতে দেখেছে এবং তাদের ধন্- দৌলত ও ক্ষমতা- প্রতিপত্তির দিকে ভুলেও নজর দেয়নি।

৯৮ . অর্থাৎ যারা নিজেদের সহায়- সম্পত্তি, কাজ- কারবার ও বংশ- পরিবারের ওপর ভরসা করেনি বরং নিজেদের রবের ওপর ভরসা করেছে। যারা দুনিয়াবী উপায়- উপাদানের দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে নিছক নিজেদের রবের ভরসায় ঈমানের খাতিরে প্রত্যেকটি বিপদ সহ্য করার এবং প্রয়োজনে প্রত্যেকটি শক্তির সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হবার জন্য তৈরি হয়ে যায় এবং সময় এলে বাড়িঘর ছেড়ে বের হয়ে পড়ে। যারা নিজেদের রবের প্রতি এতটুকু আস্থা রাখে যে, ঈমান ও নেকীর ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার প্রতিদান তার কাছে কখনো নষ্ট হবে না এবং বিশ্বাস রাখে যে, তিনি নিজের মু'মিন ও সৎকর্মশীল বান্দাদেরকে এ দুনিয়ায় সহায়তা দান করবেন এবং আখেরাতেও তাদের কার্যক্রমের সর্বোত্তম প্রতিদান দেবেন। 

মৃত্যু যখন হবেই , জীবন যখন যাবেই, তবে  মৃত্যুটা আল্লাহর পথেই হোক :  

(মু’মিনুন:১৫) .... তোমাদের অবশ্যই মরতে হবে

(২১:৩৫) প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে৷

(২৯-আনকাবুত:৫৭) প্রত্যেক জীবকেই মৃত্যুর স্বাদ পেতে হবে৷ তারপর তোমাদের সবাইকে আমার দিকে ফিরিয়ে আনা হবে ৯৫  

৯৫ . অর্থাৎ প্রাণের কথা ভেবো না। এ তো কখনো না কখনো চলে যাবেই। চিরকাল থাকার জন্য কেউই দুনিয়ায় আসেনি। কাজেই এ দুনিয়ায় কিভাবে প্রাণ বাঁচিয়ে চলতে হবে এটা তোমাদের জন্য কোন চিন্তাযোগ্য বিষয় নয়। বরং আসল চিন্তাযোগ্য বিষয় হচ্ছে, ঈমান কেমন করে বাঁচানো যাবে এবং আল্লাহর আনুগত্যের দাবী কিভাবে পূরণ করা যাবে। শেষ পর্যন্ত তোমাদের ফিরে আমার দিকে আসতে হবে। যদি দুনিয়ায় প্রাণ বাঁচাবার জন্য ঈমান হারিয়ে চলে আসো তাহলে এর ফল হবে ভিন্ন কিছু। আর ঈমান বাঁচাবার জন্য যদি প্রাণ হারিয়ে চলে আসো তাহলে এর পরিণাম হবে অন্য রকম। কাজেই আমার কাছে যখন ফিরে আসবে তখন কি নিয়ে ফিরে আসবে, কেবল একথাটিই চিন্তা করো। প্রাণের জন্য উৎসর্গীত ঈমান, না ঈমানের জন্য উৎসর্গীত প্রাণ নিয়ে ৷

শহীদদের জন্য রয়েছে অফুরন্ত রিযিক্ব ও খুশী :

(হাজ্ব:৫৮) আর যারা আল্লাহর পথে হিজরত করেছে তারপর নিহত হয়েছে বা মারা গেছে, আল্লাহ তাদেরকে ভালো জীবিকা দেবেন এবং নিশ্চয়ই আল্লাহই সবচেয়ে ভালো রিযিকদাতা৷৫৯) তিনি তাদেরকে এমন জায়গায় পৌঁছিয়ে দেবেন যা তাদেরকে খুশী করে দেবে, নিসন্দেহে আল্লাহ সবকিছু জানেন ও পরম ধৈর্যশীল৷

(২৯-আনকাবুত:৫৭) প্রত্যেক জীবকেই মৃত্যুর স্বাদ পেতে হবে৷ .......৫৮) যারা ঈমান এনেছে এবং যারা সৎকাজ করেছে তাদেরকে আমি জান্নাতের উঁচু ও উন্নত ইমারতের মধ্যে রাখবো, যেগুলোর নিচে দিয়ে নদী বয়ে যেতে থাকবে৷ সেখানে তারা থাকবে চিরকাল৷ কতই না উত্তম প্রতিদান কর্মশীলদের জন্য ৯৬  

৯৬ . অর্থাৎ ধরে নেয়া যাক যদি ঈমান ও নেকীর পথে চলে তোমরা দুনিয়ার সমস্ত নিয়ামত থেকে বঞ্চিত ও হয়ে যাও এবং পার্থিব দৃষ্টিকোন থেকে পুরোপুরি ব্যর্থতার মুত্যু বরণও করে থাকো তাহলে বিশ্বাস করো অবশ্যই এ ক্ষতিপূরণ হবে এবং নিছক ক্ষতিপূরণই হবে না বরং সর্বোত্তম প্রতিদানও পাওয়া যাবে। 

হিজরত,  জিহাদ ও আল্লাহর পথে প্রাণদানের প্রশ্নে রিজিক্বের জন্য ভেবনা :

(২৯-আনকাবুত:৬০) কত জীব- জানোয়ার আছে যারা নিজেদের জীবিকা বহন করে না৷ আল্লাহই তাদেরকে জীবিকা দেন এবং তোমাদের জীবিকাদাতাও তিনিই, তিনি সবকিছু শোনেন ও জানেন৷ ৯৯  

৯৯ . অর্থাৎ হিজরাত করার ব্যাপারে তোমাদের প্রাণের চিন্তার মতো জীবিকার চিন্তায়ও পেরেশান হওয়া উচিত নয়। তোমাদের চোখের সামনে এই যে অসংখ্য পশুপাখি ও জলজপ্রাণী জলে- স্থলে- অন্তরীক্ষে বিচরণ করে বেড়াচ্ছে , এদের মধ্য থেকে কে তার জীবিকা বহন করে ফিরছে ৷ আল্লাহই তো এদের সবাইকে প্রতিপালন করছেন। যেখানেই যায় আল্লাহর অনুগ্রহে এরা কোন না কোন প্রকারে জীবিকা লাভ করেই থাকে। কাজেই তোমরা একথা ভেবে সাহস হারিয়ে বসো না যে, যদি ঈমান রক্ষার জন্য বাড়িঘর ছেড়ে বের হয়ে পড়ি তাহলে খাবো কি ৷ আল্লাহ যেখান থেকে তার অসংখ্য সৃষ্টিকে রিযিক দিচ্ছেন সেখান থেকে তোমাদেরও দেবেন। ঠিক একথা সাইয়্যিদিনা মসীহ আলাইহিস সালাম তার সাথীদেরকে বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেনঃ " কেহই দুই কর্তার দাসত্ব করিতে পারে না, কেননা সে হয়ত একজনকে দ্বেষ করিবে, আর একজনকে প্রেম করিবে, নয়ত একজনের অনুরক্ত হইবে, আর একজনকে তুচ্ছ করিবে; তোমরা ঈশ্বর এবং ধন উভয়ের দাসত্ব করিতে পার না। এইজন্য আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, " কি ভোজন করিব, কি পান করিব' বলিয়া প্রাণের বিষয়ে , কিম্বা 'কি পরিব' বলে শরীরের বিষযে ভাবিত হইও না; ভক্ষ্য হতে প্রাণ ও বস্ত্র হতে শরীর কি বড় বিষয় নয় ৷ আকাশের পক্ষীদের প্রতি দৃষ্টিপাত কর ৷ তাহারা বুনেওনা, কাটেওনা, গোলাঘরে সঞ্চয়ও করো না, তথাপি তোমাদের স্বর্গীয় পিতা তাহাদিগকে আহার দিয়া থাকেন; তোমরা কি তাহাদের চেয়ে অধিক শ্রেষ্ঠ নও ৷ আর তোমাদের মধ্যে কে ভাবিত হয়ে আপন বয়স এক হস্ত মাত্র বৃদ্ধি করিতে পারে ৷ আর বস্ত্রের নিমিত্ত কেন ভাবিত হও ৷ ক্ষেত্রের কানুড় পুষ্পের বিষয়ে বিবেচনা কর, সেগুলি কেমন বাড়ে; সে সকল শ্রম করে না, সূতাও কাটেনা; তথাপি আমি তোমাদিগকে বলতেছি শলোমনও আপনার সমস্ত প্রতাপে ইহার একটির ন্যায় সুসজ্জিত ছিলেন না। ভাল ক্ষেত্রের যে তৃণ আজ আছে ও কাল চুলায় ফেলিয়া দেওয়া যাইবে, তা যদি ঈশ্বর এরূপ বিভূষিত করেন, তবে হে অল্প বিশ্বাসীরা, তোমাদিগকে কি আরও অধিক নিশ্চয় বিভূষিত করিবেন না ৷ অতএব ইহা বলিয়া ভাবিত হইও না যে, "কি ভোজন করিব ৷" বা "কি পান করিব" ৷ বা "কি পরিব ৷" কেননা পরজাতীয়েরাই এ সকল বিষয় চেষ্টা করিয়া থাকে; তোমাদের স্বর্গীয় পিতা- ত জানেন যে, এই সকল দ্রব্যে তোমাদের প্রয়োজন আছে। কিন্তু তোমরা প্রথমে তাহার রাজ্য ও তার ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর, তাহলে ঐ সকল দ্রব্যও তোমাদের দেওয়া হইবে। অতএব কল্যকার নিমিত্ত ভাবিত হইও না, কেননা কল্য আপনার বিষয় ভাবিত হইবে; দিনের কষ্ট দিনের জন্যই যথেষ্ঠ।" (মথি ৬ : ২৪-৩৪) 

কুরআন ও বাইবেলের এ উক্তিগুলোর পটভূমি অভিন্ন। সত্যের দাওয়াতের পথে এমন একটি পর্যায়ে এসে যায় যখন একজন সত্যপ্রিয় মানুষের জন্য উপকরণের জগতের সমস্ত সহায় ও নির্ভরতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নিছক আল্লাহর ওপর ভরসা করে প্রাণপণ প্রচেষ্টায় লিপ্ত হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। এ অবস্থায় যারা অংক কষে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বিচার করে এবং পা বাড়াবার আগে প্রাণরক্ষা ও জীবিকা উপার্জনের নিশ্চয়তা খুঁজে বেড়ায় তারা কিছুই করতে পারে না। আসলে এ ধরনের অবস্থা পরিবর্তিত হয় এমন সব লোকের শক্তির জোরে যারা প্রতিমুহূর্তে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং সব ধরনের বিপদ মাথা পেতে নেবার জন্য নির্দ্ধিধায় এগিয়ে যায়। তাদেরই ত্যাগ ও কুরবানীর ফলে শেষ পর্যন্ত এমন সময় আসে যখন আল্লাহর কালেমা বুলন্দ হয়ে যায় এবং তার মোকাবিলায় অন্য সমস্ত মত পথ অবনমিত হয়।

আল্লাহ কিছু লোককে শহীদ হিসেবে গ্রহণ করতে চান কেন ?

(৩৩-আহযাব: ২৪) (এসব কিছু হলো এজন্য) যাতে আল্লাহ সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যতার পুরস্কার দেন এবং মুনাফিকদেরকে চাইলে শাস্তি দেন এবং চাইলে তাদের তাওবা কবুল করে নেন৷ অবশ্যই আল্লাহ ক্ষমাশীল  করুণাময়৷  

দুনিয়ার জীবন একটা খেলা  মনভুলানো সামগ্রী মাত্র: আসল জীবন হচ্ছে পরকাল:

(২৯-আনকাবুত:৬৪) আর এ দুনিয়ার জীবন একটি খেলা ও মন ভুলানোর সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়৷ ১০২  ৬৫) আসল জীবনের গৃহতো হচ্ছে পরকালীন গৃহ, হায়! যদি তারা জানতো৷ ১০৩  

১০২ . অর্থাৎ এর বাস্তবতা শুধুমাত্র এতটুকুই যেমন ছোট ছেলেরা কিছুক্ষণের জন্য নেচে গেয়ে আমোদ করে এবং তারপর যার যার ঘরে চলে যায়। এখানে যে রাজা হয়ে গেছে সে আসলে রাজা হয়ে যায়নি বরং শুধুমাত্র রাজার অভিনয় করছে। এক সময় তার এ খেলা শেষ হয়ে যায়। তখন সে ঠিক তেমনি দীনহীন অবস্থায় রাজ সিংহাসন থেকে বিদায় নেয় যেভাবে এ দুনিয়ার বুকে এসেছিল। অনুরূপভাবে জীবনের কোন একটি আকৃতিও এখানে স্থায়ী ও চিরন্তন নয়। যে যে অবস্থায়ই আছে সাময়িকভাবেএকটি সীমিত সময়কালের জন্যই আছে। মাত্র কয়েকদিনের জীবনের সাফল্যের জন্য যারা প্রাণপাত করে এবং এবং এরি জন্য বিবেক ও ঈমান বিকিয়ে দিয়ে সামান্য কিছু আয়েশ আরামের উপকরণ ও শক্তি- প্রতিপত্তির জৌলুস করায়ত্ত করে নেয়, তাদের এ সমস্ত কাজ মন ভুলানো ছাড়া আর কিছুই নয়। এসব খেলনার সাহায্যে তারা যদি দশ, বিশ বা ষাট সত্তর বছর মন ভুলানোর কাজ করে থাকে এবং তারপর শূন্য হাতে মৃত্যুর দরোজা অতিক্রম করে ভ্রমন জগতে পৌঁছে যায় সেখানকার স্থায়ী ও চিরন্তন জীবনে তাদের এ খেলা এক প্রতিপত্তিহীন রোগে পরিণত হয়, তাহলে এ ছেলে ভুলানোর লাভ কি ৷ 

১০৩ . অর্থাৎ যদি তারা একথা জানতো, এ দুনিয়ার জীবন একটি পরীক্ষার অবকাশ মাত্র এবং মানুষের জন্য আসল জীবন, যা চিরকাল স্থায়ী হবে, তা হচ্ছে আখেরাতের জীবন, তাহলে তারা এখানে পরীক্ষার সময় কালকে খেলা তামাশায় নষ্ট না করে এর প্রতিটি মুহূর্ত এমনসব কাজে ব্যবহার করতো যা সেই চিরন্তন জীবনের জন্য উৎকৃষ্ট ফলদায়ক হতো। 

শহীদ  জিহাদ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ দারস :  

শহীদ , জিহাদ, সশস্ত্র জিহাদ, ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধকারী, আল্লাহর পথে খরচ না করা ইত্যাদি :

(১৯:১৬৮) এরা নিজেরা বসে থাকলো এবং এদের ভাই –বন্ধু যারা লড়াই করতে গিয়ে মারা গিয়েছিল, তাদের সম্পর্কে বলেছিলঃ যদি তারা আমাদের কথা মেনে নিতো, তাহলে মারা যেতো না ৷ ওদের বলে দাও, তোমরা নিজেদের একথায় যদি সত্যবাদী হয়ে থাকো, তাহলে তোমাদের নিজেদের মৃত্যু যখন আসবে তখন তা থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করে দেখাও৷ ১৬৯) যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে মৃত মনে করো না৷ তারা আসলে জীবিত ৷   নিজেদের রবের কাছ থেকে তারা জীবিকা লাভ করছে৷ ১৭০) আল্লাহ নিজের অনুগ্রহ থেকে তাদেরকে যা কিছু দিয়েছেন তাতেই তারা আনন্দিত ও পরিতৃপ্ত  এবং যেসব ঈমানদার লোক তাদের পরে এ দুনিয়ায় রয়ে গেছে এবং এখনো সেখানে পৌঁছেনি, তাদের জন্যও কোন ভয় ও দুঃখের কারণ নেই, একথা জেনে তারা নিশ্চিন্ত হতে পেরেছে৷ ১৭১) তারা আল্লাহর পুরস্কার ও অনুগ্রহ লাভে আনন্দিত ও উল্লসিত এবং তারা জানতে পেরেছে যে, আল্লাহ মুমিনদের প্রতিদান নষ্ট করেন না৷ ১৭২) আহত হবার পরও যারা আল্লাহ ও রসূলের আহবানে সাড়া দিয়েছে, তাদের মধ্যে  যারা সৎ-নেককার ও মুত্তাকী তাদের জন্য রয়েছে বিরাট প্রতিদান৷ আর যাদেরকে ১৭৩) লোকেরা বললোঃ তোমাদের বিরুদ্ধে বিরাট সেনা সমাবেশ ঘটেছে৷ তাদেরকে ভয় করো, তা শুনে তাদের ঈমান আরো বেড়ে গেছে এবং তারা জবাবে বলেছেঃ আমাদের জন্য আল্লাহ যথেষ্ট এবং তিনি সবচেয়ে ভালো কার্য উদ্ধারকারী৷ ১৭৫) এখন তোমরা জেনে ফেলেছো, সে আসলে শয়তান ছিল, তার বন্ধুদের অনর্থক ভয় দেখাচ্ছিলে ৷ কাজেই আগামীতে তোমরা মানুষকে ভয় করো না, আমাকে ভয় করো, যদি তোমরা যথার্থ ঈমানদার হয়ে থাকো৷১৭৬) ( হে নবী !) যারা আজ কুফরীর পথে খুব বেশী দৌড়াদৌড়ি করছে তাদের তৎপরতা যেন তোমাকে মলিন বদন না করে৷ এরা আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না৷ আল্লাহ আখেরাতে এদের কোন অংশ দিতে চান না৷ আর সবশেষে তারা কঠোর শাস্তি পাবে৷ ১৭৭) যারা ঈমানকে ছেড়ে দিয়ে কুফরী কিনে নিয়েছে তারা নিসন্দেহে আল্লাহর কোন ক্ষতি করছে না৷ তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত রয়েছে৷ ১৭৮) কাফেরদের আমি যে ঢিল দিয়ে চলছি এটাকে যেন তারা নিজেদের জন্য ভালো মনে না করে ৷ আমি তাদেরকে এ জন্য ঢিল দিচ্ছি, যাতে তারা গোনাহের বোঝা ভারী করে নেয়, তারপর তাদের জন্য রয়েছে কঠিন অপমানকর শাস্তি৷ ১৭৯) তোমরা বর্তমানে যে অবস্থায় আছো আল্লাহ মুমিনদের কখনো সেই অবস্থায় থাকতে দেবেন না৷ পাক –পবিত্র লোকেদেরকে তিনি নাপাক ও অপবিত্র লোকদের থেকে আলাদা করেই ছাড়বেন৷ কিন্তু তোমাদেরকে গায়েবের খবর জানিয়ে দেয়া আল্লাহর রীতি নয়৷গায়েবের খবর জানাবার জন্য তিনি নিজের রসূলদের মধ্য থেকে যাকে চান বাছাই করে নেন৷ কাজেই ( গায়েবের ব্যাপারে) আল্লাহ ও তাঁর রসূলের ওপর ঈমান রাখো ৷ যদি তোমরা ঈমান ও আল্লাহকে ভয় করার নীতি অবলম্বন করো তাহলে বিরাট প্রতিদান পাবে৷ ১৮০) আল্লাহ যাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং তারপরও তারা কার্পণ্য করে, তারা যেন এই কৃপণতাকে নিজেদের জন্য ভালো মনে না করে ৷ না, এটা তাদের জন্য অত্যন্ত খারাপ ৷ কৃপণতা করে তারা যাকিছু জমাচ্ছে তাই কিয়ামতের দিন তাদের গলার বেড়ি হবে৷ পৃথিবী ও আকাশের স্বত্বাধিকার একমাত্র আল্লাহরই ৷ আর তোমরা যা কিছু করছো, আল্লাহ তা সবই জানেন৷ 

মন্তব্য : জিহাদের ময়দানে না গেলে মারা যেত না : উত্তর:

(৩:১৫৬) হে ঈমানদারগণ ! কাফেরদের মতো কথা বলো না৷ তাদের আত্মীয়স্বজনরা কখনো সফরে গেলে অথবা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলে ( এবং সেখানে কোন দুর্ঘটনায় পতিত হলে) তারা বলে, যদি তারা আমাদের কাছে থাকতো তাহলে মারা যেতো না এবং নিহত হতো না ৷ এ ধরনের কথাকে আল্লাহ তাদের মানসিক খেদ ও আক্ষেপের কারণে পরিণত করেন ৷  নয়তো জীবন –মৃত্যু তো একমাত্র আল্লাহই দান করে থাকেন এবং তোমাদের সমস্ত কার্যকলাপের ওপর তিনি দৃষ্টি রাখেন

(:১৫৪) এ দুঃখের পর আল্লাহ তোমাদের কিছু লোককে আবার এমন প্রশান্তি দান করলেন যে, তারা তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লো ৷  কিন্তু আর একটি দল, নিজের স্বার্থই ছিল যার কাছে বেশী গুরুত্বপূর্ণ, আল্লাহ সম্পর্কে নানান ধরনের জাহেলী ধারণা পোষণ করতে থাকলো, যা ছিল একেবারেই সত্য বিরোধী ৷ তারা এখন বলেছে, এই কাজ পরিচালনার ব্যাপারে আমাদেরও কি কোন অংশ আছে ? তাদেরকে বলে দাও, “(কারো কোন অংশ নেই,) এ কাজেই সমস্ত ইখতিয়ার রয়েছে এক মাত্র আল্লাহর হাতে”৷ আসলে এরা নিজেদের মনের মধ্যে যে কথা লুকিয়ে রেখেছে তা তোমাদের সামনে প্রকাশ করে না৷ এদের আসল বক্তব্য হচ্ছে, যদি (নেতৃত্ব) ক্ষমতায় আমাদের কোন অংশ থাকতো, তাহলে আমরা মারা পড়তাম না৷ ওদেরকে বলে দাও , যদি তোমরা নিজেদের গৃহে অবস্থান করতে তাহলেও যাদের মৃত্যু লেখা হয়ে গিয়েছিল, তারা নিজেরাই নিজেদের বধ্যভূমির দিকে এগিয়ে আসতো৷ আর এই যে বিষয়টি সংঘটিত হলো, এটি এ জন্য ছিল যে, তোমাদের বুকের মধ্যে যা কিছু গোপন রয়েছে আল্লাহ তা পরীক্ষা করে নেবেন এবং তোমাদের মনের মধ্যে যে গলদ রয়েছে তা দূর করে দেবেন ৷ আল্লাহ মনের অবস্থা খুব ভালো করেই জানেন৷ ১৫৫) তোমাদের মধ্য থেকে যারা মোকাবিলার দিন পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছিল তাদের এ পদস্খলনের কারণ এই ছিল যে, তাদের কোন কোন দুর্বলতার কারণ শয়তান তাদের পা টলিয়ে দিয়েছিল ৷...।

এমন ঈমান আনা যার ফলে শহীদ হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায় :

১। ফেরাউনের যাদুকরদের আনীত ঈমান, যে কোন সময়ের অসৎ সরকারের বিরুদ্ধে প্রকৃত ঈমানদারদের জন্য একটি বিশাল দৃষ্টান্ত :

তারা জবাব দিলোঃ সে যাই হোক আমাদের রবের দিকেই তো আমাদের ফিরতে হবে৷ তুমি যে ব্যাপারে আমাদের ওপর প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছো, তা এ ছাড়া আর কিছুই নয় যে , আমাদের রবের নিদর্শসমূহ যখন আমাদের সামনে এসেছে তখন আমরা তা মেনে নিয়েছি৷ হে আমাদের রব! আমাদের সবর দান করোএবং তোমার আনুগত্য থাকা অবস্থায় আমাদের দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নাও৷”-৭:১২৫-১২৬,  

(২০:৭১) ফেরাউন বললো, “তোমারা ঈমান আনলে, আমি তোমাদের অনুমতি দেবার আগেই” দেখছি, এ তোমাদের গুরু, এ-ই তোমাদের যাদুবিদ্যা শিখিয়েছিল৷ এখন আমি তোমাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কাটাচ্ছি এবং খেজুর গাছের কাণ্ডে তোমাদের শুলিবিদ্ধ করছি এরপর তোমরা জানতে পারবে আমাদের দু’জনের মধ্যে কার শাস্তি কঠিন ও দীর্ঘস্থায়ী”৷ (অর্থাৎ আমি না মূসা, কে তোমাদের বেশী কঠিন শাস্তি দিতে পারে)৷

(পরিস্থিতি পাল্টে যেতে দেখে ফেরাউন তার শেষ চালটি চালালো। সে এই সমগ্র ব্যাপারটিকে হযরত মূসা(আ) ও যাদুকরদের ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করলো, তারপর যাদুকরদেরকে শারীরিক নির্যাতন ও হত্যার হুমকি দিয়ে তাদের থেকে নিজের এ দোষারুপের স্বীকৃতি আদায় করার চেষ্টা করলো। কিন্তু এবারে এ চালটিরও উল্টো ফল হলো। যাদুকররা নিজেদেরকে সব রকমের শাস্তির জন্যে পেশ করে একথা প্রমাণ করে দিল যে, মূসা (আ) কে সত্য বলে স্বীকার করা ও তাঁর ওপর তাদের ঈমান আনাটা কোন ষড়যন্ত্রের নয় বরং সত্যের অকুণ্ঠ স্বীকৃতির ফল। কাজেই তখন সত্য ও ইনসাফের যে প্রহসন সে সৃষ্টি করতে চাচ্ছিল তা পরিহার করে সোজাসুজি জুলূম ও নির্যাতনের পথে এগিয়ে আসা ছাড়া তার আর কোন গত্যন্তর ছিল না। 

এ প্রসংগে এ বিষয়টিও বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য যে, মাত্র কয়েক মুহূর্তের মধ্যে ঈমানের স্ফলিংগ যাদুকরদের চরিত্রের কি বিরাট পরিবর্তন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিল।মাত্র কিছুক্ষণ আগেই এ যাদুকরদের কী দাপট ছিল! নিজেদের পৈতৃক ধর্মের সাহায্যার্থে তারা নিজ নিজ গৃহ থেকে বের হয়ে এসেছিল। তারা ফেরাউনকে জিজ্ঞেস করছিল,আমরা যদি মূসার আক্রমণ থেকে নিজেদের ধর্মেকে রক্ষা করতে পারি তাহলে সরকারে আমাদের পুরস্কৃত করবে তো৷ আর এখন ঈমানের নিয়ামত লাভ করার পর তাদেরই সত্যপ্রীতি, সত্য নিষ্ঠা ও দৃঢ়ত এমন পর্যায়ে পৌছে গিয়েছিল যে, মাত্র কিছুক্ষণ আগে যে বাদশাহর সামনে তারা লোভীর মত দুহাত পেতে দিয়েছিল এখন তার প্রতাপ প্রতিপত্তি ও দর্পকে নির্ভয়ে পদাঘাত করতে লাগলো। সে যে ভয়াবহ শাস্তি দেবার হুমকি দিচ্ছিল তা বরদাশত করার জন্যে তারা তৈরী হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু যে সত্যের দরজা তাদের সামনে উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছিল প্রাণের বিনিময়ে ও তাকে পরিত্যাগ করতে তারা প্রস্তুত ছিল না।)

শহীদ  সিদ্দিক কারা :

 (৫৭: ১৯) যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান এনেছে  তারাই তাদের রবের কাছে ‘সিদ্দীক’  ও ‘শহীদ’   বলে গণ্য৷ তাদের জন্য তাদের পুরস্কার ও ‘নূর’ রয়েছে৷  আর যারা কুফরী করেছে এবং আমার আয়াতকে অস্বীকার করেছে তারাই দোযখের বাসিন্দা৷

হাদীস :

দ্বীনি কাজে প্রতিযোগিতা ও সদা তৎপরতা অধ্যায় ::

বই ১ :: হাদিস ৮৯, রিয়াদুস সালেহীন :

হযরত জাবির (রা) বর্ণনা করেনঃ একটি লোক ওহুদ যুদ্ধের দিন রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, ‘আমি যদি নিহত হই, তবে আমি কোথায় থাকব? রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ‘জান্নাতে’ তাৎক্ষনাৎ সে তার হাতের খেজুরগুলো ফেলে দিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং শেষ পর্যন্ত শহীদ হয়ে গেল। (বুখারী ও মুসলিম)

শক্তি :

শক্তি কামনা করা :

(১১:৮০) লূত বললোঃ “হায়! যদি আমার এতটা শক্তি থাকতো যা দিয়ে আমি তোমাদের সোজা করে দিতে পারতাম অথবা কোন শক্তিশালী আশ্রয় থাকতো সেখানে আশ্রয় নিতে পারতাম৷” 

শক্তি বৃদ্ধির উপায় :

(১১:৫২) আর হে আমার কওমের লোকেরা! মাফ চাও তোমাদের রবের কাছে তারপর তাঁর দিকেই ফিরে এসো৷ তিনি তোমাদের জন্য আকাশের মুখ খুলে দেবেন এবং তোমাদের বর্তমান শক্তির ওপর আরো শক্তি বৃদ্ধি করবেন৷ অপরাধীদের মতো মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না৷” 

শক্তিশালী :

(১৭:৫) শেষ পর্যন্ত যখন এদের মধ্য থেকে প্রথম বিদ্রোহের সময়টি এলো তখন হে বনী ইসরাঈল! আমি তোমাদের মুকাবিলায় নিজের এমন একদল বান্দার আবির্ভাব ঘটালাম, যারা ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী এবং তারা তোমাদের দেশে প্রবেশ করে সবদিকে ছড়িয়ে পড়ে৷ এক একটি প্রতিশ্রুতি ছিল, যা পূর্ণ হওয়াই ছিল অবধারিত৷

তোমাদের আচরণ যদি পূর্ববর্তী পথভ্রষ্টদের ন্যায় হয় তাহলে তোমরা পূর্ববর্তীদের ন্যায় একই শাস্তি লাভ করবে : ৯:৬৯ (তোমাদের আচরণ তোমাদের পূর্ববর্তীদের মতোই৷ তারা ছিল তোমাদের চাইতে বেশী শক্তিশালী এবং তোমাদের চাইতে বেশী সম্পদ  সন্তানের মালিক৷ তারপর তারা দুনিয়ায় নিজেদের অংশের স্বাদ উপভোগ করেছে এবং তোমরাও একইভাবে নিজেদের অংশের স্বাদ উপভোগ করেছো৷ যেমন তারা করেছিল এবং তারা যেমন অনর্থক বিতর্কে লিপ্ত ছিল তেমনি বিতর্কে তোমরাও লিপ্ত রয়েছো৷ কাজেই তাদের পরিণতি হয়েছে এই যে, দুনিয়ায়  আখেরাতে তাদের সমস্ত কাজকর্ম পণ্ড হয়ে গেছে এবং তারাই ক্ষতিগ্রস্ত),

(২৮-ক্বাছাছ : ২৬) মেয়ে দু'জনের একজন তার পিতাকে বললো, "আব্বাজান! একে চাকরিতে নিয়োগ করো, কর্মচারী হিসেবে ব্যক্তিই উত্তম হতে পারে যে বলশালী ও আমানতদার৷"(ব্যাখ্যার  জন্য দেখুন : চ > চাকুরী)

শক্তিশালী জাতিও পৃথিবী থেকে বিলীন হয়ে গেছে :

যে জাতি পৃথিবীতে উন্নতির এত উচ্চ শিখরে আরোহন করলো, পরকালে তাদেরকে কোন যুক্তিতে  আজাব দেওয়া    হবে ?  (আরো দেখুন :  > অবকাশ > অবকাশ আল্লাহ কেন দেন?  এবং  > কুরআন  বিজ্ঞান )

(৩০-রূম: ৯) ....তারা এদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী ছিল, তারা জমি কর্ষণ করেছিল খুব ভালো করে   এবং এত বেশি আবাদ করেছিল যতটা এরা করেনি৷ ১০  

৯ . মূল শব্দ হচ্ছে ''আসারুল আরদ'' কৃষিকাজ করার জন্য লাঙ্গল দেয়া অর্থেও এ শব্দের ব্যবহার হতে পারে আবার মাটি খুঁড়ে ভূগর্ভ থেকে পানি উঠানো, খাল খনন এবং খনিজ পদার্থ ইত্যাদি বের করাও হয়। 

১০ . যারা নিছক বস্তুগত উন্নতিকে একটি জাতির সৎ হবার আলামত মনে করে এখানে তাদের যুক্তির জবাব রয়েছে। তারা বলে যারা পৃথিবীর উপায়- উপকরণকে এত বিপুল পরিমাণে ব্যবহার (Exploit) করেছে তারা দুনিয়ার বিরাট উন্নয়নমূলক কাজ করেছে এবং একটি মহিমান্বিত সভ্যতাঁর জন্ম দিয়েছে। কাজেই মহান আল্লাহ তাদেরকে জাহান্নামের ইন্ধনে পরিণত করবেন এটা কেমন করে সম্ভব ! কুরআন এর জবাব এভাবে দিয়েছে "এমন উন্নয়নমূলক কাজ" পূর্বেও বহু জাতি বিরাট আকারে করেছে। তাঁরপর কি তোমরা দেখনি সে জাতিগুলো তাদের নিজেদের সভ্যতা- সংস্কৃতি সহকারে ধূলায় মিশে গেছে এবং তাদের "উন্নয়নের" আকাশচুম্বি প্রাসাদ ভুলুণ্ঠিত হয়েছে ৷ যে আল্লাহর আইন ইহজগতে সত্যের প্রতি বিশ্বাস ও সৎ চারিত্রিক গুণাবলী ছাড়া নিছক বস্তুগত নির্মাণের এরূপ মূল্য দিয়েছে সে একই আল্লাহর আইন কি কারণে পারলৌকিক জগতে তাকে জাহান্নামে স্থান দেবে না ৷

শোনা / শুনা  / শ্রবণ করা :

আড়ি পেতে শোনা :

(১৫:১৭) এবং প্রত্যেক অভিশপ্ত শয়তান থেকে সেগুলোকে সংরক্ষণ করেছি৷ কোনো শয়তান সেখানে অনুপ্রবেশ করতে পারে না৷১৮) তবে আড়ি পেতে বা চুরি করে কিছু শুনতে পারে৷ আর যখন সে চুরি করে শোনার চেষ্টা করে তখন একটি জ্বলন্ত অগ্নিশিখা তাকে ধাওয়া করে৷

শোনা কথা :

(২৬.শুআরা:২২১) হে লোকেরা! আমি তোমাদের জানাবো শয়তানরা কার উপর অবতীর্ণ হয়?  ২২২) তারা তো প্রত্যেক জালিয়াত বদকারের উপর অবতীর্ণ হয়৷২২৩) শোনা কথা কানে ঢুকিয়ে দেয় এবং এর বেশির ভাগই হয় মিথ্যা৷

(ব্যাখ্যার জন্য দেখুন : শ > শয়তান > তোমরা কি জানো শয়তান কার উপরে নাযিল হয় ?

সত্যের আহ্বান হৃদয়ের কান দিয়ে শুনতে হবে :

 (হাজ্ব:৪৬) তারা কি পৃথিবীর বুকে ভ্রমণ করেনি, যার ফলে তারা উপলব্ধিকারী হৃদয় ও শ্রবণকারী কানের অধিকারী হতো? আসল ব্যাপার হচ্ছে, চোখ অন্ধ হয় না বরং হৃদয় অন্ধ হয়ে যায়, যা বুকের মধ্যে আছে৷ 

তুমি মৃতদেরকে শুনাতে পারবেনা :

(৩০-রূম: ৫২) (হে নবী!) তুমি মৃতদেরকে শুনাতে পারো না,  এমন বধিরদেরকেও নিজের আহ্বান শুনাতে পারো না যারা মুখ ফিরিয়ে চলে যাচ্ছে ৫৩) এবং অন্ধদেরকেও তাদের ভ্রষ্টতা থেকে বের করে সঠিক পথ দেখাতে পারো না৷  তুমি তো একমাত্র তাদেরকেই শুনাতে পারো যারা আমার আয়াতের প্রতি ঈমান আনে এবং আনুগত্যের শির নত করে৷

কত জাতিকে তাদের নাফরমানীর কারণে ধ্বংস করা হয়েছে : বর্তমানে তাদের ক্ষীণতম আওয়াজ শুনতে পাওকি?

(১৯:৯৮) এদের পূর্বে আমি কত জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছি৷ আজ কি কোথাও তাদের নাম-নিশানা দেখতে পাও অথবা কোথাও শুনতে পাও তাদের ক্ষীণতম আওয়াজ?   (বিস্তারিত দেখুন : জ > জাতি > বিভিন্ন জাতির ধ্বংস)

(৩২- আস-সাজদা : ২৬) আর এরা কি (এসব ঐতিহাসিক ঘটনা থেকে ) কোন পথনির্দেশ পায়নি যে, এদের পূর্বে কত জাতিকে আমি ধ্বংস করেছি , যাদের আবাসভূমি তে আজ এরা চলাফেরা করছে ? ৩৯   এর মধ্যে রয়েছে বিরাট নিদর্শনাবলী , এরা কি শুনবে না ?  

৩৯ . যে জাতির মধ্যেই নবী এসেছে তার ভাগ্যের ফায়সালা সেই নবীর ব্যাপারে সে যে নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গি অবলম্বন করেছে তার ভিত্তিতেই হয়ে গেছে। রসূলকে প্রত্যাখ্যান করার পর আর কোন জাতি ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচতে পারেনি। তাদের মধ্যে থেকে যারা ঈমান এনেছে একমাত্র তারাই টিকে গেছে। প্রত্যাখ্যান কারীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি লাভ করে চিরকালের জন্য শিক্ষণীয় বস্তুতে পরিণত হয়ে গেছে। ইতিহাসের এ ধারাবাহিক অভিজ্ঞতা থেকে তারা কি কোন শিক্ষা লাভ করেনি ৷ 

যারা বলে আমরা শুনলাম, অথচ তারা শুনেনা :

তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা বলে “আমরা শুনলাম”, অথচ তারা শোনে না : ৮:২১

(নুর:৪৭) তারা বলে, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহ ও রসূলের প্রতি এবং আমরা আনুগত্য স্বীকার করেছি কিন্তু এরপর তাদের মধ্য থেকে একটি দল (আনুগত্য থেকে ) মুখ ফিরিয়ে নেয় ৷ এ ধরনের লোকেরা কখনোই মু’মিন নয় ৷৪৮) যখন তাদেরকে ডাকা হয় আল্লাহ ও তাঁর রসূলের দিকে, যাতে রসূল তাদের পরস্পররে মোকদ্দমার ফায়সালা করে দেন তখন তাদের মধ্যকার একটি দল পাশ কাটিয়ে যায় ৷৪৯) তবে যদি সত্য তাদের অনুকূল থাকে, তাহলে বড়ই বিনীত হয়ে রসূলের কাছে আসে ৷৫০) তাদের মনে কি (মুনাফিকীর ) রোগ আছে ? না তারা সন্দেহের শিকার হয়েছে ? না তারা ভয় করছে আল্লাহ ও তাঁর রসূল তাদের প্রতি যুলুম করবেন ? আসলে তারা নিজেরাই যালেম ৷

শুনলাম এবং মেনে নিলাম : মুমিনদের প্রকৃত গুণ :

(নুর:৫১) মু’মিনদের কাজই হচ্ছে, যখন তাদেরকে আল্লাহ ও রসূলের দিকে ডাকা হয়, যাতে রসূল তাদের মোকদ্দমার ফায়সালা করেন, তখন তারা বলেন, আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম৷ এ ধরনের লোকেরাই সফলকাম হবে ৷

কোরআন শোনার আদব সমূহ :

দেখুন :  > কুরআন > কুরআন শোনার আদব

আল্লাহ সবকিছু শোনেন এবং জানেন :

(২:৪) রসূল বললো, আমার রব এমন প্রত্যেকটি কথা জানেন যা আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে বলা হয়, তিনি সবকিছু শোনেন ও জানেন৷

(বিস্তারিত : আ > আল্লাহ > আল্লাহর গুণাবলী, ক্ষমতা ও কার্যাবলী )

আল্লাহ সবকিছু শোনেন  দেখেন: এর প্রকৃত স্বরূপ কি ? :

(৩১-লোকমান: ২৮) তোমাদের সমগ্র মানবজাতিকে সৃষ্টি করা এবং তারপর পুনর্বার তাদেরকে জীবিত করা (তার জন্য) নিছক একটিমাত্র প্রাণী (সৃষ্টি করা এবং তাকে পুনরুজ্জীবিত ) করার মতই ব্যাপার৷    (৩১-লোকমান: ২৮)..... আসলে আল্লাহ সবকিছুই শোনেন ও দেখেন৷ ৪৯  

৪৯ . অর্থাৎ তিনি একই সময় সমগ্র বিশ্ব-জাহানের আওয়াজ আলাদা আলাদাভাবে শুনছেন এবং কোন আওয়াজ তার শ্রবণেন্দ্রিয়কে এমনভাবে দখল করে বসে না যার ফলে একটি শুনতে গিয়ে অন্যগুলো শুনতে না পারেন। অনুরূপভাবে তিনি একই সময় সমগ্র বিশ্ব-জাহানকে তার প্রত্যেকটি জিনিস ও ঘটনা সহকারে বিস্তারিত আকারেও দেখছেন এবং কোন জিনিস দেখার ব্যাপারে তার দর্শনেন্দ্রিয় এমনভাবে ব্যস্ত হয়ে পড়ে না যে, একটিকে দেখতে গিয়ে তিনি অন্যগুলো দেখতে অপারগ হয়ে পড়েন। মানবকুলের সৃষ্টি এবং তাদের পুনরুজ্জীবনের ব্যাপারটিও ঠিক এই একই পর্যায়ের । সৃষ্টির প্রারম্ভকাল থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত যতগুলো মানুষ জন্ম নিয়েছে এবং আগামীতে কিয়ামত পর্যন্ত জন্ম নেবে তাদের সবাইকে তিনি আবার মাত্র এক মুহূর্তেই সৃষ্টি করতে পারেন। তার সৃষ্টিক্ষমতা একটি মানুষের সৃষ্টিতে এমনভাবে লিপ্ত হয়ে পড়ে না যে, সে একই সময়ে তিনি অন্য মানুষদের সৃষ্টি করতে অপরাগ হয়ে পড়েন। একজন মানুষ সৃষ্টি করা বা কোটি কোটি মানুষ সৃষ্টি করা দু' টোই তার জন্য সমান।

শোনার  দেখার শক্তি দিয়েছেন আল্লাহ :

(মু’মিনুন:৭৮) তিনিই আল্লাহ যিনি তোমাদের শোনার ও দেখার শক্তি দিয়েছেন এবং চিন্তা করার জন্য অন্তঃকরণ দিয়েছেন, কিন্তু তোমরা কমই কৃতজ্ঞ হয়ে থাকো ৷

তুমি মৃতদেরকে শুনাতে পারোনা 

(২৭-নমল:৮০) তুমি মৃতদেরকে শুনাতে পারোনা৷

মুহাম্মদ সা: এর কথা না শোনার জন্য তাঁকে এড়িয়ে চলা, তাঁর কাছ থেকে দূরে সরে থাকা 

দেখুন : ম > মুহাম্মদ সা: >  মুহাম্মদ সা: এর কথা না শোনার জন্য তাঁকে এড়িয়ে চলা, তাঁর কাছ থেকে দূরে সরে থাকা

ক্লিক করুন : মুহাম্মদ সা: এর কথা না শোনার জন্য তাঁকে এড়িয়ে চলা, তাঁর কাছ থেকে দূরে সরে থাকা

শাস্তি :

বিস্তারিত দেখুন : আ > আযাব।

কঠোর শাস্তি কাদের জন্য রয়েছে ?

যারা আল্লাহ ও রাসূলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে : ৮:১৩ (তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার হুকুম : ৮:৯-১৩)

শিকল :

শিকলে হাত পা বাধা থাকবে :

(১৪:৪৯) সেদিন তোমরা অপরাধীদের দেখবে, শিকলে তাদের হাত পা বাঁধা,  ৫০) আলকাতরার  পোশাক পরে থাকবে এবং আগুনের শিখা তাদের চেহারা ডেলে ফেলতে থাকবে৷  ৫১) এটা এ জন্য হবে যে, আল্লাহ প্রত্যেকে তার কৃতকর্মের বদলা দেবেন৷ হিসেব নিতে আল্লাহর একটুও দেরী হয় না৷

শিয়া  সম্প্রদায় / শি / শিয়ানে আলী :

(৩৩-আহযাব: ৬) নিসন্দেহে নবী ঈমানদারদের কাছে তাদের নিজেদের তুলনায় অগ্রাধিকারী, আর নবীদের স্ত্রীগণ তাদের মা৷১৩ 

১৩. ওপরে বর্ণিত এ একই বৈশিষ্টের ভিত্তিতেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এও একটি বৈশিষ্ট ছিল যে, মুসলমানদের নিজেদের পালক মতো কখনো কোন অর্থেই তাদের মা নয় কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রীগণ ঠিক তেমনিভাবে তাদের জন্য হারাম যেমন তাদের আসল মা তাদের জন্য হারাম। এ বিশেষ বিধানটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাড়া দুনিয়ার আর কোন মানুষের জন্য প্রযোজ্য নয়। 

এ প্রসংগে এ কথাও জেনে নেয়া প্রয়োজন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রীগণ শুধু মাত্র এ অর্থে মু'মিনদের মাতা যে, তাঁদেরকে সম্মান করা মুসলমানদের জন্য ওয়াজিব এবং তাঁদের সাথে কোন মুসলমানের বিয়ে হতে পারে না। বাদবাকি অন্যান্য বিষয়ে তাঁরা মায়ের মতো নন। যেমন তাদের প্রকৃত আত্মীয়গণ ছাড়া বাকি সমস্ত মুসলমান তাদের জন্য গায়ের মাহরাম ছিল এবং তাঁদের থেকে পর্দা করা ছিল ওয়াজিব। তাঁদের মেয়েরা মুসলমানদের জন্য বৈপিত্রেয় বোন ছিলেন না, যার ফলে তাদের সাথে মুসলমানদের বিয়ে নিষিদ্ধ হয়ে পরে। তাঁদের ভাই ও বোনেরা মুসলমানদের জন্য মামা ও খালার পর্যায়ভুক্ত ছিলেন না। কোন ব্যাক্তি নিজের মায়ের তরফ থেকে যে মীরাস লাভ করে তাঁদের তরফ থেকে কোন আত্মীয় মুসলমান সে ধরনের কোন মীরাস লাভ করে না।

এখানে আর একটি কথাও উল্লেখযোগ্য। কুরআন মাজীদের দৃষ্টিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সকল স্ত্রীই এই মর্যাদার অধিকারী। হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাও এর অন্তরভূক্ত। কিন্তু একটি দল যখন হযরত আলী ও ফাতেমা (রা) এর অন্তরভূক্ত। কিন্তু একটি দল যখন হযরত আলী ও ফাতেমা রাদিয়াল্লাহ আনহা এবং তাঁর সন্তানদেরকে দীনের কেন্দ্রে পরিণত করে সমগ্র ইসলামী জীবন ব্যবস্থাকে তাঁদের চারপাশে ঘোরাতে থাকে এবং এরি ভিত্তিতে অন্যান্য বহু সাহাবার সাথে হযরত আয়েশাকেও নিন্দাবাদ ও গালাগালির লক্ষ্য বস্তুতে পরিণত করে তখন কুরআন মজীদের এ আয়াত তাদের পথে প্রতিরোধ দাঁড় করায়। কারণ এ আয়াতের প্রেক্ষিতে যে ব্যক্তিই ঈমানের দাবীদার হবে সে-ই তাঁকে মা বলে স্বীকার করে নিতে বাধ্য। শেষমেষ এ সংকট থেকে রেহাই পাওয়ার উদ্দেশ্যে এ অদ্ভুত দাবী করা হয়েছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলীকে এ ইখতিয়ার দিয়েছিলেন যে, তাঁর ইন্তিকালের পর তিনি তাঁর পবিত্র স্ত্রীদের মধ্য থেকে যাঁকে চান তাঁর স্ত্রীর মর্যাদায় টিকিয়ে রাখতে পারেন এবং যাঁকে চান তাঁর পক্ষ থেকে তালাক দিতে পারেন। আবু মনসুর আহমাদ ইবনে আবু তালেব তাবরাসী কিতাবুল ইহ্‌তিজাজে যে কথা লিখেছেন এবং সুলাইমান ইবনে আবদুল্লাহ আলজিরানী যা উদ্ধৃত করেছেন তা হচ্ছে এই যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলীকে বলেন : 

---------------------

"হে আবুল হাসান ! এ মর্যাদা ততক্ষণ অক্ষুণ্ন থাকবে যতক্ষণ আমরা আল্লাহর আনুগত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবো। কাজেই আমার স্ত্রীদের মধ্য থেকে যে কেউ আমার পরে তোমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে আল্লাহর নাফরমানি করবে তাকে তুমি তালাক দিয়ে দেবে এবং তাদেরকে মু'মিনদের মায়ের মর্যাদা থেকে বহিস্কার করবে।" 

হাদীস বর্ণনার রীতি ও মূলনীতির দিক দিয়ে তো এ রেওয়ায়াতটি সম্পুর্ন ভিত্তিহীন। কিন্তু কোন ব্যক্তি যদি এ সূরার ২৮-২৯ এবং ৫১ ও ৫২ আয়াত ৪টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন তাহলে তিনি জানতে পারবেন যে, এ রেওয়ায়াতটি কুরআনেরও বিরোধী। কারণ ইখ্‌তিয়ার সম্পর্কিত আয়াতের পর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যে সকল স্ত্রী সর্বাবস্থায় তাঁর সাথে থাকা পছন্দ করেছিলেন তাঁদেরকে তালাক দেবার ইখ্‌তিয়ার আর রসুলের (সা) হাতে ছিল না। সামনের দিকে ৪২ ও ৯৩ টীকায় এ বিষয়ের বিস্তারিত আলোচনা আসছে।

এ ছাড়াও একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তি যদি শুধুমাত্র বুদ্ধিবৃত্তিই ব্যবহার করে এ রেওয়ায়াতটির বিষয়বস্তু সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করেন তাহলেও তিনি পরিস্কার দেখতে পাবেন এটি একটি চরম ভিত্তিহীন এবং রসূলে পাকের বিরুদ্ধে অত্যন্ত অবমাননাকর মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়। রসূল তো অতি উন্নত ও শ্রেষ্ঠতম মর্যাদার অধিকার, তাঁর কথাই আলাদা, এমন কি একজন সাধারণ ভদ্রলোকের কাছেও এ আশা করা যেতে পারে না যে, তিনি মারা যাবার পর তাঁর স্ত্রীকে তালাক দেবার কথা চিন্তা করবেন এবং দুনিয়া থেকে বিদায় নেবার সময় নিজের জামাতাকে এই ইখ্‌তিয়ার দিয়ে যাবেন যে, যদি কখনো তার সাথে তোমার ঝগড়া হয় তাহলে তুমি আমার পক্ষ থেকে তাকে তালাক দিয়ে দেবে।এ থেকে জানা যায়, যারা আহ্‌লে বায়তের প্রেমের দাবীদার তারা গৃহস্বামীর (সাহেবে বায়েত) ইজ্জত ও আবরুর কতোটা পরোয়া করেন। আর এরপর তারা মহান আল্লাহর বাণীর প্রতিও কতটুকু মর্যাদা প্রদর্শন করেন সেটিও দেখার বিষয়।

(আরো ব্যাখ্যার জন্য দেখুন : স > সম্পর্ক > মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে অসাল্লামের সাথে মু’মিনদের সম্পর্ক ।)

শিরক :

এ সাথে দেখুন : ম > মূর্তিপূজা

(২৮-ক্বাছাছ : 87)....নিজের রবের দিকে দাওয়াত দাও এবং কখনো মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না

(২৬.শুআরা:৭৫) এ কথায় ইবরাহীম বললো, "কখনো কি তোমরা (চোখ মেলে)  ৭৬) সেই জিনিসগুলো দেখেছো যাদের বন্দেগী তোমরা এবং তোমাদের অতীত পূর্বপুরুষেরা করতে অভ্যস্ত?৭৭) এরা তো সবাই আমার দুশমন - একমাত্র রাব্বুল আলামীন ছাড়া

.

(মু’মিনুন:৯২)...এরা যে শিরক নির্ধারণ করে তিনি তার ধরা ছোঁয়ার বাইরে৷

(মু’মিনুন:৫৯) যারা নিজেদের রবের সাথে কাউকে শরীক করে না

(নুর: ৫৫) আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঈমান আনবে ও সৎ কাজ করবে তাদেরকে তিনি পৃথিবীতে ঠিক তেমনিভাবে খিলাফত দান করবেন যেমন তাদের পূর্বে অতিক্রান্ত লোকদেরকে দান করেছিলেন, তাদের জন্য তাদের দীনকে মজবুত ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করে দেবেন, যাকে আল্লাহ তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তাদের (বর্তমান) ভয়-ভীতির অবস্থাকে নিরাপত্তায় পরিবর্তিত করে দেবেন ৷ তারা শুধু আমার বন্দেগী করুক এবং আমার সাথে কাউকে যেন শরীক না করে৷  আর যারা এরপর কুফরী করবে  তারাই ফাসেক ৷

(১৮:১০২) তাহলে কি যারা কুফরী অবলম্বন করেছে তারা একথা মনে করে যে, আমাকে বাদ দিয়ে আমার বান্দাদেরকে নিজেদের কর্মসম্পাদনকারী হিসেবে গ্রহণ করে নেবে ?  এ ধরনের কাফেরদের আপ্যায়নের জন্য আমি জাহান্নাম তৈরি করে রেখেছি৷ 

(১৮:৫২) তাহলে সেদিন এরা কি করবে যেদিন এদের রব এদেরকে বলবে, ডাকো সেই সব সত্তাকে যাদেরকে তোমরা আমার শরীক মনে করে বসেছিলে ?  এরা তাদেরকে ডাকবে কিন্তু তারা এদেরকে সাহায্য করতে আসবে না এবং আমি তাদের মাঝখানে একটি মাত্র ধ্বংস গহ্বর তাদের সবার জন্য বানিয়ে দেবো৷

(১৮:৫১) আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করার সময় আমি তাদেরকে ডাকিনি এবং তাদের নিজেদের সৃষ্টিতেও তাদেরকে শরীক করিনি৷  পথভ্রষ্টকারীদেরকে নিজের সাহায্যকারী করা আমার রীতি নয়৷ 

(১৭:১১১) আর বলো, সেই আল্লাহর প্রশংসা, যিনি কোনো পুত্রও গ্রহণ করেননি৷ তাঁর বাদশাহীতে কেউ শরীকও হয়নি এবং তিনি এমন অক্ষমও নন যে, কেউ তাঁর সাহায্যকারী ও নির্ভর হবে

(১৭:৩৯)আর দেখো, আল্লাহর সাথে অন্য কোনো মাবুদ স্থির করে নিয়ো না, অন্যথায় তোমাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে নিন্দিত এবং সব রকমের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত অবস্থায়৷

(১৭:৪২) হে মুহাম্মদ ! এদেরকে বলো, যদি আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহও থাকতো যেমন এরা বলে, তাহলে সে আরশের মালিকের জায়গায় পৌঁছে যাবার জন্য নিশ্চয়ই চেষ্টা করতো৷

(১৮:১৪) আমি সে সময় তাদের চিত্ত দৃঢ় করে দিলাম যখন তারা উঠলো এবং ঘোষণা করলোঃ “আমাদের রব তো কেবল তিনিই যিনি পৃথিবী ও আকাশের রব৷ আমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কোনো মাবুদকে ডাকবো না৷ যদি আমরা তাই করি তাহলে তা হবে একেবারেই অনর্থক৷” 

(১৮:১৫) তারপর তারা পরস্পরকে বললো: “এ আমাদের জাতি, এরা বিশ্বজাহানের রবকে বাদ দিয়ে অন্য ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে৷ এরা তাদের মাবুদ হবার সপক্ষে কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ আনছে না কেন ? যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হতে পারে ?

(হাজ্ব:২৬) স্মরণ করো সে সময়ের কথা যখন আমি ইবরাহীমের জন্য এ ঘরের (কাবাঘর) জায়গা নির্ধারণ করেছিলাম (এ নির্দেশনা সহকারে) যে, আমার সাথে কোনো জিনিসকে শরীক করবে না এবং আমার ঘরকে তাওয়াফকারী ও রুকূ’-সিজদা-কিয়ামকারীদের জন্য পবিত্র রাখো।

হে মুহাম্মদ! আল্লাহর সাথে অন্য কোন মাবুদকে ডেকো না, নয়তো তুমিও শাস্তি লাভকারীদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে: এর অর্থ কি ?

(২৬.শুআরা:২১৩) কাজেই হে মুহাম্মদ! আল্লাহর সাথে অন্য কোন মাবুদকে ডেকো না, নয়তো তুমিও শাস্তি লাভকারীদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে৷

(এর অর্থ এই নয়, নাউযুবিল্লাহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শিরকের অপরাধ সংঘটিত হবার ভয় ছিল এবং এ জন্য তাঁকে ধমক দিয়ে এ থেকে বিরত রাখা হয়েছে। আসলে কাফের ও মুশরিকদেরকে সতর্ক করাই এর উদ্দেশ্য। বক্তব্যের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে, কুরআন মজীদে যে শিক্ষা পেশ করা হচ্ছে তা যেহেতু বিশ্ব-জাহানের শাসনকর্তার পক্ষ থেকে নির্ভেজাল সত্য এবং তার মধ্যে শয়তানী মিশ্রণের সামান্যও দখল নেই, তাই এখানে সত্যের ব্যাপারে কাউকে কোন প্রকার সুযোগ-সুবিধা দেবার কোন প্রশ্নই দেখা দেয় না। সৃষ্টির মধ্যে আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় যদি কেউ হতে পারেন তবে তিনি হচ্ছেন তাঁর রসূল। কিন্তু ধরে নেয়া যাক যদি তিনিও বন্দেগীর পথ থেকে এক তিল পরিমাণ সরে যান এবং এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে মাবুদ হিসেবে ডাকেন তাহলে পাকড়াও থেকে বাঁচতে পারবেন না। এক্ষেত্রে অন্যরা তো ধর্তব্যের মধ্যে গণ্য নয়। এ ব্যাপারে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেই যখন কোন সুবিধা দেয়া হয়নি তখন আর কোন্ ব্যক্তি আছে যে আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতায় কাউকে শরীক করার পর আবার এ আশা করতে পারে যে, সে রক্ষা পেয়ে যাবে অথবা কেউ তাকে রক্ষা পেতে সাহায্য করবে।)

 নিজের মনকে ইলাহ বানিয়ে নেয়া সবচেয়ে নিকৃষ্ট শির্ক :  

(২৫.ফুরকান:৪৩) কখনো কি তুমি সেই ব্যক্তির অবস্থা ভেবে দেখেছো, যে তার নিজের প্রবৃত্তির কামনাকে প্রভু রূপে গ্রহণ করেছে? তুমি কি এহেন ব্যক্তিকে সঠিক পথে নিয়ে আসার দায়িত্ব নিতে পার৷

(প্রবৃত্তির কামনাকে মাবুদে পরিণত করার মানে হচ্ছে , তার পূজা করা। আসলে এটাও ঠিক মূর্তি পূজা করা বা কোন সৃষ্টিকে উপাস্য পরিণত করার মতই শির্ক । আবু উমামাহ রেওয়ায়াত করেছেন , রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : 

مَا تَحْتَ ظِلِّ السَّمَاءِ مِنْ إِلَهٍ يُعْبَدُ مِنْ دُونِ اللَّهِ، أَعْظَمُ مِنْ عِنْدِ اللَّهِ مِنْ هَوًى مُتَّبَعٍ

"এ আকাশের নীচে যতগুলো উপাস্যের উপাসনা করা হয়ে থাকে , তাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট উপাস্য হচ্ছে এমন প্রবৃত্তির কামনা করা যার অনুসরণ করা হয়।" (তাবরানী) [আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য দেখুন আল কাহ্ফ ৫০ টীকা।])

(বিস্তারিত দেখুন : অ > অনুসরণ > মনের কামনা বাসনার অনুসরণ)

আল্লাহই সত্য এবং অন্যান্য শরীকরা মিথ্যা :

(হাজ্ব:৬২) এসব এজন্য যে, আল্লাহই সত্য এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে এরা যাদেরকে ডাকে তারা সবাই মিথ্যা৷ 

মানুষের শিরকে লিপ্ত হবার কারণ সমূহ / শিরক উৎপত্তির কারণ সমূহ:

১। সামান্য বিপদে আপদে দু:খে কষ্টে ধৈর্য ধারণ করতে পারে না, ফলে আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরে গিয়ে শিরকে লিপ্ত হয় : ইবাদতের ক্ষেত্রে ইস্তেক্বামাত অবলম্বন করতে পারে না : দোদুল্যমান ঈমান :

(হাজ্ব:১১) আর মানুষের মধ্যে এমনও কেউ আছে, যে এক কিনারায় (অর্থাৎ ইসলামী সীমারেখার শেষ সীমানায়) দাঁড়িয়ে আল্লাহর বন্দেগী করে, যদি তাতে তার উপকার হয় তাহলে নিশ্চিন্ত হয়ে যায় আর যদি কোনো বিপদ আসে তাহলে পিছনের দিকে ফিরে যায় তার দুনিয়াও গেলো এবং আখেরাতও৷ এ হচ্ছে সুস্পষ্ট ক্ষতি৷ ১২) তারপর সে আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদেরকে ডাকে যারা তার না ক্ষতি করতে পারে, না উপকার, এ হচ্ছে ভ্রষ্টতার চূড়ান্ত৷  ১৩) সে তাদেরকে ডাকে যাদের ক্ষতি তাদের উপকারের চাইতে নিকটতর নিকৃষ্ট তার অভিভাবক এবং নিকৃষ্ট তার সহযোগী৷

২। সঠিক সূত্র থেকে জ্ঞান লাভ না করার কারণে মানুষ শির্ক- লিপ্ত হয় :

(হাজ্ব:৭১) তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন কিছুর ইবাদাত করে যাদের জন্য না তিনি কোনো প্রমাণ পত্র অবতীর্ণ করেছেন আর না তারা নিজেরাই তাদের ব্যাপারে কোনো জ্ঞান রাখে৷

৩। আল্লাহর পরিচয় পরিপূর্ণভাবে লাভ না করার কারণে : আল্লাহর পরিচয় সংক্রান্ত জ্ঞানের অভাবে :

(হাজ্ব:৭) .......সাহায্য প্রার্থীও দুর্বল এবং যার কাছে সাহায্য চাওয়া হচ্ছে সেও দুর্বল৷ (৭৪) তারা আল্লাহর কদরই বুঝলো না যেমন তা বুঝা উচিত৷ আসল ব্যাপার হচ্ছে, একমাত্র আল্লাহই শক্তিমান ও মর্যাদাসম্পন্ন৷

(২৭-নমল:২৫) (শয়তান তাদেরকে বিপথগামী করেছে এ জন্য ) যাতে তারা সেই আল্লাহকে সিজদা না করে যিনি আকাশ ও পৃথিবীর গোপন জিনিসসমূহ বের করেন৩৩ এবং সে সবকিছু জানেন যা তোমরা গোপন করো ও প্রকাশ করো৷৩৪ 

(৩৩. যিনি প্রতি মুহূর্তে এমন সব জিনিসের উদ্ভব ঘটাচ্ছেন যেগুলো জন্মের পূর্বে কোথায় কোথায় লুকিয়ে ছিল কেউ জানে না। ভূ-গর্ভ থেকে প্রতি মুহূর্তে অসংখ্য উদ্ভিদ এবং নানা ধরনের খনিজ পদার্থ বের করছেন। উর্ধ জগত থেকে প্রতিনিয়ত এমন সব জিনিসের আর্বিভাব ঘটাচ্ছেন, যার আর্বিভাব না ঘটলে মানুষের ধারণা ও কল্পনায়ও কোনদিন আসতে পারতো না। 

৩৪. অর্থাৎ সকল জিনিসই তাঁর জ্ঞানের আওতাধীন। তাঁর কাছে গোপন ও প্রকাশ্যে সব সমান। সবকিছুই তার সামনে সমুজ্জ্বল ও উন্মুক্ত। 

নমুনা হিসেবে মহান আল্লাহর এ দু'টি গুণ বর্ণনা করার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে এমন বুঝিয়ে দেয়া যে, যদি তারা শয়তানের প্রতারণার জালে আবদ্ধ না হতো তাহলে এ সোজা পথটি পরিষ্কার দেখতে পেতো যে, সূর্যনামের একটি জ্বলন্ত জড় পদার্থ, যার নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কেই কোন অনুভূতি নেই, সে কোন ইবাদাতের হকদার নয় বরং একমাত্র সর্বজ্ঞ ও সর্বদর্শী মহান সত্তা যাঁর অসীম শক্তি প্রতি মুহূর্তে নতুন নতুন অভাবনীয় কৃর্তির উদ্ভব ঘটাচ্ছেন, তিনিই এর হকদার।)

৪। সুপারিশ লাভ করার ভ্রান্ত আকীদা থেকেই শিরকের উৎপত্তি ঘটেছে :

(মুমিনুন:৯১) আল্লাহ কাউকে নিজের সন্তানে পরিণত করেননি এবং তাঁর সাথে অন্য কোন ইলাহও নেই৷ যদি থাকতো তাহলে প্রত্যেক ইলাহ নিজের সৃষ্টি নিয়ে আলাদা হয়ে যেতো ৷এবং তারপর একজন অন্যজনের ওপর চড়াও হতো৷ এরা যেসব কথা তৈরী করে তা থেকে আল্লাহ পাক-পবিত্র৷  

৯২) প্রকাশ্য ও গোপন সবকিছু তিনি জানেন ৷ ৮৬  এরা যে শিরক নির্ধারণ করে তিনি তার ধরা ছোঁয়ার বাইরে৷  

(৮৬ . কোন কোন সমাজে একটা বিশেষ ধরনের শিরক দেখতে পাওয়া যায় । এর প্রথামিক রূপ হলো শাফায়াত বা সুপারিশ করে পরকালের মুক্তি নিশ্চিত করার ক্ষমতা সংক্রান্ত মুশরিকা আকীদা । তারপর আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য কোন কোন সত্তার অদৃশ্য ও ভূত-ভবিষ্যতের জ্ঞান আছে বলে ধারণা করা। 

এখানে এ বিশেষ ধরনের শিরকের প্রতি একটি সূক্ষ্ম ইংগিত রয়েছে, আয়াতটি এ শিরকের উভয় দিককে খন্ডন করে। (ব্যাখ্যার জন্য দেখুন , তাফহীমুল কুরআন , ত্বা-হা , ৮৫ও ৮৬ এবং আল আম্বিয়া , ২৭ টীকা)।)

৫। বাপদাদার অন্ধ অনুসরণের কারণে মানুষ শিরকে লিপ্ত হয় :

(২৬.শুআরা:৬৯) আর তাদেরকে ইবরাহীমের কাহিনী শুনিয়ে দাও, ৭০) যখন সে তার বাপ ও তার সম্প্রদায়কে জিজ্ঞেস করেছিল, "তোমরা কিসের পূজা করো?"৭১) তারা বললো, "আমরা কতিপয় মূর্তির পূজা করি এবং তাদের সেবায় আমরা নিমগ্ন থাকি৷৭২) সে জিজ্ঞেস করলো, "তোমরা যখন তাদেরকে ডাকো তখন কি তারা তোমাদের কথা শোনে?  ৭৩) অথবা তোমাদের কি কিছু উপকার বা ক্ষতি করে?"৭৪) তারা জবাব দিল, "না, বরং আমরা নিজেদের বাপ-দাদাকে এমনটিই করতে দেখেছি৷"

(অর্থাৎ এরা আমাদের প্রার্থনা , মুনাজাত ও ফরিয়াদ শোনে অথবা আমাদের উপকার বা ক্ষতি করে মনে করে আমরা এদের পূজা করতে শুরু করেছি তা নয়। আমাদের এ পূজা-অর্চনার কারণ এটা নয়। বরং আমাদের এ পূজা-অর্চনার আসল কারণ হচ্ছে , আমাদের বাপ-দাদার আমল থেকে তা এভাবেই চলে আসছে। এভাবে তারা নিজেরাই একথা স্বীকার করে নিয়েছে যে , তাদের ধর্মের পেছনে তাদের পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুকরণ ছাড়া আর কোন প্রমাণ নেই। অন্য কথায় তারা যেন বলছিল , তুমি আমাদের কি এমন নতুন কথা বলবে ৷ আমরা নিজেরা দেখছি না এগুলো কাঠ ও পাথরের মূর্তি ৷ আমরা কি জানি না , কাঠ শোনে না এবং পাথর কারো ইচ্ছা পূর্ণ করতে বা ব্যর্থ করে দিতে পারে না ৷ কিন্তু আমাদের শ্রদ্ধেয় পূবপুরুষরা শত শত বছর ধরে বংশ পরস্পরায় এদের পূজা করে আসছে। তোমার মতে তারা সবাই কি বোকা ছিল ৷ তারা এসব নিস্প্রাণ মূর্তিগুলোর পূজা করতো , নিশ্চয়ই এর কোন কারণ থাকবে । কাজেই আমরাও তাদের প্রতি আস্থাশীল হয়ে এ কাজ করছি।) 

(বিস্তারিত দেখুন : অ > অনুসরণ > বাপদাদার অনুসরণ)

৬। জন্মগত ভাবেই শিরকী পরিবেশে লালিত পালিত হওয়া / বড় হওয়া :

(২৭-নমল:৪৩) আল্লাহর পরিবর্তে যেসব উপাস্যের সে (সাবা সম্রাজ্যের রানী) পূজা করতো তাদের পূজাই তাকে ঈমান আনা থেকে ঠেকিয়ে রেখেছিল৷ কারণ সে ছিল একটি কাফের জাতির অর্ন্তভুক্ত৷

(৫৪. এ বাক্যাংশটি আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর অবস্থান সুস্পষ্ট করার জন্য বলা হয়েছে। অর্থাৎ তাঁর মধ্যে জিদ ও একগুয়েমী ছিল না। শুধুমাত্র কাফের জাতির মধ্যে জন্ম নেয়ার কারণেই তিনি কখনো পর্যন্ত কাফের ছিলেন। সচেতন বুদ্ধিবৃত্তির অধিকারী হবার পর থেকেই যে জিনিসের সামনে সিজদানত হবার অভ্যাস তাঁর মধ্যে গড়ে উঠেছিল সেটিই ছিল তাঁর পথের প্রতিবন্ধক। সুলাইমানের (আ) মুখোমুখি হবার পর যখন তার চোখ খুলে তখন এ প্রতিবন্ধক দূর হতে এক মুহূর্তও দেরী হয়নি।)

শিরক সম্পর্কিত আনুষ্ঠানিক ইবাদত : মানুষের মনগড়া ইলাহ সমূহের ইবাদত বনাম আল্লাহর ইবাদত :

বিস্তারিত দেখুন : ই > ইবাদত > মানুষের মনগড়া ইলাহ সমূহের ইবাদত বনাম আল্লাহর ইবাদত  

হযরত মূসা : এর শরীয়তে শিরক করার শাস্তি :

(২০:৯৭) মূসা বললো, “বেশ, তুই দুর হয়ে যা, এখন জীবনভর তুই শুধু একথাই বলতে থাকবি, আমাকে ছুঁয়ো না৷ আর তোর জন্য জবাবদিহির একটি সময় নির্ধারিত রয়েছে যা কখনোই তোর থেকে দূরে সরে যাবে না৷ আর দেখ, তোর এই ইলাহর প্রতি, যার পূজায় তুই মত্ত ছিলি, এখন আমরা তাকে জ্বালিয়ে দেবো এবং তার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশগুলো সাগরে ভাসিয়ে দেবো৷

শিরক মুক্ত ঈমান ও সৎকাজের পুরস্কার আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎলাভ  : সুতরাং আল্লাহর নৈকট্য অন্বেষণকারীদের সৎকাজ করতে হবে, এবং অবশ্যই থাকতে হবে শিরকমুক্ত ঈমান :

(১৮:১১০) ...কাজেই যে তার রবের সাক্ষাতের প্রত্যাশী তার সৎকাজ করা উচিত এবং বন্দেগীর ক্ষেত্রে নিজের রবের সাথে কাউকে শরীক করা উচিত নয়৷ 

আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে কর্ম সম্পাদনকারী বানিয়ে নেওয়া :

(১৮:১০২) তাহলে কি  যারা কুফরী অবলম্বন করেছে তারা একথা মনে করে যে, আমাকে বাদ দিয়ে আমার বান্দাদেরকে নিজেদের কর্মসম্পাদনকারী হিসেবে গ্রহণ করে নেবে ?  এ ধরনের কাফেরদের আপ্যায়নের জন্য আমি জাহান্নাম তৈরি করে রেখেছি৷ 

শিরক এর প্রকার ভেদ সমূহ :

সূর্য পূজা :

(২৭-নমল:২৪) আমি তাকে ও তার জাতিকে আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যের সামনে সিজদা করতে দেখেছি৩০&nbsp--- শয়তান তাদের কার্যাবলী তাদের জন্য শোভন করে দিয়েছে এবং তাদেরকে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করে দিয়েছেন এ কারণে তারা সোজা পথ পায় না৷ 

(৩০. এ থেকে জানা যায়, সেকালে এ রানী বিলকিসের সাবা জাতিটি সূর্য দেবতার পূজা করতো। আরবের প্রাচীন বর্ণনাগুলো থেকেও এ জাতির এ একই ধর্মের কথা জানা যায়। ইবনে ইসহাক কুলজি বিজ্ঞান (Genenalogies) অভিজ্ঞদের উক্তি উদ্ধৃত করে বলেন, সাবা জাতির প্রাচীনতম পূর্ব পুরুষ হলো আব্দে শাম্স ( অর্থাত সূর্যের দাস বা সূর্য উপাসক) এবং উপাধি ছিল সাবা। বনী ইসরাঈলের বর্ণনাও এর সমর্থক। সেখানে বলা হয়েছে, হুদ্হুদ যখন সুলাইমানের (আ) পত্র নিয়ে পৌঁছে যায় সাবার রাণী তখন সূর্য দেবতার পূজা করতে যাচ্ছিলেন । হুদ্হুদ পথেই পত্রটি রাণীর সামনে ফেলে দেয়।)

.

শিরক শুধু মূর্তিপূজা নয় : আইন বিধান  শাসন পরিচালনাকারীর  ক্ষেত্রেও শিরকের অবকাশ রয়েছে :

(১৮:২৫) ....আকাশ ও পৃথিবীর যাবতীয় প্রচ্ছন্ন অবস্থা তিনিই জানেন, কেমন চমৎকার তিনি দ্রষ্টা ও শ্রোতা ! পৃথিবী ও আকাশের সকল সৃষ্টির তত্ত্বাবধানকারী তিনি ছাড়া আর কেউ নেই এবং নিজের শাসন কর্তৃত্ব তিনি কাউকে শরীক করেন না৷ 

(১৮:৩৮) আর আমার ব্যাপারে বলবো, আমার রব তো সেই আল্লাহই এবং আমি তার সাথে কাউকে শরীক করি না৷

শিরক হচ্ছে ধ্বংস গহ্বর :

(১৮:৫২) তাহলে সেদিন এরা কি করবে যেদিন এদের রব এদেরকে বলবে, ডাকো সেই সব সত্তাকে যাদেরকে তোমরা আমার শরীক মনে করে বসেছিলে ?  এরা তাদেরকে ডাকবে কিন্তু তারা এদেরকে সাহায্য করতে আসবে না এবং আমি তাদের মাঝখানে একটি মাত্র ধ্বংস গহ্বর তাদের সবার জন্য বানিয়ে দেবো৷

 

শিরক করার দুনিয়াবী ক্ষতির উপমা :

(১৮:৩২) হে মুহাম্মাদ! এদের সামনে একটি দৃষ্টান্ত পেশ করে দাও৷ দু ব্যক্তি ছিল৷ তাদের একজনকে আমি দুটি আংগুর বাগান দিয়েছিলাম এবং সেগুলোর চারদিকে খেজুর গাছের বেড়া দিয়েছিলাম আর তার মাঝখানে রেখেছিলাম কৃষি ক্ষেত৷৩৩) দুটি বাগানই ভালো ফলদান করতো এবং ফল উৎপাদনের ক্ষেত্রে তারা সামান্যও ত্রুটি করতো না৷ এ বাগান দুটির মধ্যে আমি একটি নহর প্রবাহিত করেছিলাম ৩৪) এবং সে খুব লাভবান হয়েছিল৷ এসব কিছু পেয়ে একদিন সে তার প্রতিবেশীর সাথে কথা প্রসংগে বললো, “আমি তোমার চেয়ে বেশী ধনশালী এবং আমার জনশক্তি তোমার চেয়ে বেশী৷” ৩৫) তারপর সে তার বাগানে প্রবেশ করলো  এবং নিজের প্রতি জালেম হয়ে বলতে লাগলোঃ “আমি মনে করি না এ সম্পদ কোনো দিন ধ্বংস হয়ে যাবে৷৩৬) এবং আমি আশা করি না কিয়ামতের সময় কখনো আসবে৷ তবুও যদি আমাকে কখনো আমার রবের সামনে ফিরিয়ে নেয়া হয় তাহলে নিশ্চয়ই আমি এর চেয়েও বেশী জাঁকালো জায়গা পাবো৷৩৭) তার প্রতিবেশী কথাবার্তার মধ্যে তাকে বললো, “তুমি কি কুফরী করছো সেই সত্তার যিনি তোমাকে মাটি থেকে তারপর শুক্র থেকে পয়দা করেছেন এবং তোমাকে একটি পূর্ণাবয়ব মানুষ বানিয়ে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন ? ৩৮) আর আমার ব্যাপারে বলবো, আমার রব তো সেই আল্লাহই এবং আমি তার সাথে কাউকে শরীক করি না৷ ৩৯) আর যখন তুমি নিজের বাগানে প্রবেশ করছিলে তখন তুমি কেন বললে না, “আল্লাহ যা চান তাই হয়, তাঁর প্রদত্ত শক্তি ছাড়া আর কোনো শক্তি নেই ? যদি তুমি সম্পদ ও সন্তানের দিক দিয়ে আমাকে তোমার চেয়ে কম পেয়ে থাকো ৪০) তাহলে অসম্ভব নয় আমার রব আমাকে তোমার বাগানের চেয়ে ভালো কিছু দেবেন এবং তোমার বাগানের ওপর আকাশ থেকে কোনো আপদ পাঠাবেন যার ফলে তা বৃক্ষলতাহীন প্রান্তরে পরিণত হবে৷ ৪১) অথবা তার পানি ভূগর্ভে নেমে যাবে এবং তুমি তাকে কোনোক্রমেই উঠাতে পারবে না৷৪২) শেষ পর্যন্ত তার সমস্ত ফসল বিনষ্ট হলো এবং সে নিজের আংগুর বাগান মাচানের ওপর লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে থাকতে দেখে নিজের নিয়োজিত পুঁজির জন্য আফসোস করতে থাকলো এবং বলতে লাগলো, “হায়! যদি আমি আমার রবের সাথে কাউকে শরীক না করতাম ৪৩) সে সময় আল্লাহ ছাড়া তাকে সাহায্য করার মতো কোনো গোষ্ঠীও ছিল না, আর সে নিজেও এ বিপদের মুকাবিলা করতে সক্ষম ছিল না৷৪৪) তখন জানা গেলো, কর্মসম্পাদনের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর হাতে ন্যস্ত, যিনি সত্য৷ আর পুরষ্কার সেটাই ভালো, যা তিনি দান করেন এবং পরিণতি সেটাই শ্রেয়, যা তিনি দেখান৷

শিরককারীদের উপমা :  আকাশ থেকে ছিটকে পড়ে :  

(হাজ্ব:৩১) একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর বান্দা হয়ে যাও, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করে সে যেন আকাশ থেকে পড়ে গেলো৷ এখন হয় তাকে পাখি ছোঁ মেরে নিয়ে যাবে অথবা বাতাস তাকে এমন জায়গায় নিয়ে গিয়ে ছুঁড়ে দেবে যেখানে সে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে৷ ৫৯ 

(৫৯. এ উপমায় আকাশ বলতে বুঝানো হয়েছে মানুষের স্বভাবিক অবস্থাকে । এ অবস্থায় সে এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো বান্দা হয় না এবং তার প্রকৃতি তাওহীদ ছাড়া অন্য কোন ধর্মকে চেনে না। মানুষ যদি নবী প্রদত্ত পথ-নির্দেশনা গ্রহণ করে তাহলে সে জ্ঞান ও অন্তরদৃষ্টি সহকারে এ প্রাকৃতিক অবস্থার ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। এবং পরবর্তী পর্যায়ে সে নিজের দিকে নয় বরং উপরের দিকে উঠতে থাকে। কিন্তু শিরক (এবং শুধুমাত্র শিরকই নয় বরং জড়বাদ ও নাস্তিক্যবাদও) গ্রহণ করার সাথে সাথেই সে নিজের প্রকৃতির আকাশ থেকে ধপাস করে নিচে পড়ে যায়। তখন সে অনিবার্যভাবে দু'টি অবস্থার যে কোনটির মুখোমুখি হয়। একটি অবস্থা হচ্ছে, শয়তান ও বিপথে পরিচালনাকারী মানুষ, যাদেরকে এ উপমায় শিকারী পাখির সাথে তুলনা করা হয়েছে, তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং প্রত্যেকে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা করে। আর দ্বিতীয় অবস্থাটি হচ্ছে, তার নিজের প্রবৃত্তির কামনা-বাসনা, তার আবেগ, অনুভূতি ও চিন্তাধারা, যাদরকে বাতাসের সাথে তুলনা করা হয়েছে, তাকে উড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় এবং শেষ পর্যন্ত কোন গভীর খাদে নিক্ষেপ করে। 

মূলে "সহীক" শব্দ বলা হয়েছে এটি 'সাহক' থেকে উৎপন্ন হয়েছে। "সাহক" এর আসল মানে হচ্ছে পিষ্ট করা। কোন জায়গাকে এমন অবস্থায় "সাহীক" বলা হয় যখন তা এতবেশী গভীর হয় যে, তার মধ্যে কোন জিনিস গেলে তা টুকরো টুকরো বা ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এখানে চিন্তা ও নৈতিক চরিত্রের অধোপতনকে এমন গভীর খাদের সাথে তুলনা করা হয়েছে যার মধ্যে পড়ে গিয়ে মানুষের সমস্ত কলকব্জা ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।)

মাছির উপমা  :

(হাজ্ব:৭৩) হে লোকেরা! একটি উপমা দেয়া হচ্ছে, মনোযোগ দিয়ে শোনো৷ আল্লাহকে বাদ দিয়ে যেসব উপাস্যকে তোমরা ডাকো তারা সবাই মিলে একটি মাছি সৃষ্টি করতে চাইলেও করতে পারবে না৷ বরং যদি মাছি তাদের কাছ থেকে কোনো জিনিস ছিনিয়ে নিয়ে যায় তাহলে তারা তা ছাড়িয়েও নিতে পারবে না৷ সাহায্য প্রার্থীও দুর্বল এবং যার কাছে সাহায্য চাওয়া হচ্ছে সেও দুর্বল৷

 শিরককারীদের মোটেই পরোয়া করো না :

(১৫:৯৪) এবং শিরককারীদের মোটেই পরোয়া করো না৷৯৫) যেসব বিদ্রূপকারী আল্লাহর সাথে অন্য কাউকেও ইলাহ বলে গণ্য করে৯৬) তোমাদের পক্ষ থেকে তাদের ব্যবস্থা করার জন্য আমিই যথেষ্ট৷ শীঘ্রই তারা জানতে পারবে৷

শিরককারীদের সাথে কোন সম্পর্ক নেই :

শিরককারীদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই৷-১২:১০৮,

 (১০:১০৫) আমাকে মুমিনদের অন্তরভুক্ত হবার জন্য হুকুম দেয়া হয়েছে৷ আর আমাকে বলা হয়েছে, তুমি একনিষ্ঠ হয়ে নিজেকে ঠিকভাবে এ দীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত কারো৷   এবং কখখোন মুশরিকদের অন্তরভুক্ত হয়ো না৷ ১০৬) আর আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন কোন সত্তাকে ডেকো না, যে তোমার না কোন উপকার করতে না ক্ষতি করতে পারে৷ যদি তুমি এমনিটি করো তাহলে জালেমদের দলভুক্ত হবে৷  

সম্পদ  সন্তানসন্ততিতে শয়তানের শরীকানা :

(১৭:৬৪) তুমি যাকে যাকে পারো তোমার দাওয়াতের মাধ্যমে পদস্খলিত করো,  তাদের ওপর অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনীর আক্রমণ চালাও, ধন-সম্পদে ও সন্তান-সন্ততিতে তাদের সাথে শরীক হয়ে যাও  

শিরককারীদের শিরক থেকে আল্লাহ অনেক উর্ধ্বে :

(১৬:১) পবিত্র তিনি এবং এরা যে শিরক করছে তার ঊর্ধে তিনি অবস্থান করেন৷

(১৬:৩)   তিনি আকাশ  পৃথিবীকে সত্য সহকারে সৃষ্টি করেছেন৷এরা যে শিরক করছে তাঁর অবস্থান তার অনেক ঊর্ধে

(২৮-ক্বাছাছ : ৬৮)...... আল্লাহ পবিত্র এবং তারা যে শিরক করে তার অনেক ঊর্ধ্বে৷  

শিরক করা উচিত নয় কেন ? শিরক একটি মিথ্যা মতবাদ : তার যুক্তি ও প্রমাণ সমূহ :

(রাআদ:১৪) একমাত্র তাঁকেই ডাকা সঠিক৷ আর অন্যান্য সত্তাসমূহ, আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে এ লোকেরা ডাকে, তারা তাদের প্রার্থনায় কোন সাড়া দিতে পারে না৷ তাদেরকে ডাকা তো ঠিক এমনি ধরনের যেমন কোন ব্যক্তি পানির দিকে হাত বাড়িয়ে তার কাছে আবেদন জানায়, তুমি আমার মুখে পৌঁছে যাও, অথচ পানি তার মুখে পৌঁছতে সক্ষম নয়৷ ঠিক এমনিভাবে কাফেরদের দোয়াও একটি লক্ষভ্রষ্ট তীর ছাড়া আর কিছু নয়৷

(৩০-রূম: ৪০) আল্লাহই   তোমাদের সৃষ্টি করেছেন, তাঁরপর তোমাদের রিযিক দিয়েছেন৷ তাঁরপর তিনি তো তোমাদের মৃত্যু দান করেন, এরপর তিনি তোমাদের জীবিত করবেন৷ তোমাদের বানানো শরীকদের মধ্যে কি এমন কেউ আছে যে এ কাজও করে ? ৬৩   পাক-পবিত্র তিনি এবং এরা যে শিরক করে তাঁর বহু উর্ধ্বে তাঁর অবস্থান৷

৬৩ . অর্থাৎ তোমাদের তৈরি করা উপাস্যদের মধ্যে কেউ কি সৃষ্টিকর্তা ও রিযিকদাতা ৷ জীবন ও মৃত্যু দান করা কি কারো ক্ষমতাঁর আওতাভুক্ত আছে ৷ অথবা মরার পর সে আবার কাউকে পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষমতা রাখে ৷ তাহলে তাদের কাজ কি ৷ তোমরা তাদেরকে উপাস্য বানিয়ে রেখেছো কেন ৷

(২৭.নামল:৫৯) ....(তাদেরকে জিজ্ঞাস কর) আল্লাহ ভাল অথবা সেই সব মাবুদরা ভাল যাদেরকে তারা তার শরিক করেছে?

(হাদীসে বলা হয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন আয়াতটি তেলাওয়াত করতেন তখন সংগে সংগেই এর জবাবে বলতেন : بل الله خير وَّابقى وَاَجَلُّ وَّاكرمُ –

"বরং আল্লাহই ভালো এবং তিনিই চিরস্থায়ী, মর্যাদাসম্পন্ন ও শ্রেষ্ঠ।" )

(২৭.নামল:৬০) . কে তিনি যিনি আকাশ সমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের জন্য আকশ থেকে পানি বর্ষণ করছেন তারপর তার সাহায্যে সদৃশ্য বাগান উৎপাদন করেছেন যার গাছপালাও উৎপন্ন করাও তোমাদের আয়াত্বধীন ছিল না? আল্লাহর সাথে কি (এসব কাজে অংশীদার) অন্য ইলাহও আছে?৭৩ (না,) বরং এরাই সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে এগিয়ে চলছে৷  

(৭৩. মুশরিকদের একজনও একথার জবাবে বলতে পারতো না, একাজ আল্লাহর নয়, অন্য কারো অথবা আল্লাহর সাথে অন্য কেউ তাঁর একাজে শরীক আছে। কুরআন মজীদে অন্যান্য স্থানে মক্কার কাফের সমাজ ও আরব মুশরিকদের সম্পর্কে বলা হয়েছে : 

وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ مَنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ لَيَقُولُنَّ خَلَقَهُنَّ الْعَزِيزُ الْعَلِيمُ –

"তুমি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, পৃথিবী ও আকাশসমূহ কে সৃষ্টি করেছে৷ তাহলে তারা নিশ্চয়ই বলবে, মহা পরাক্রান্ত মহাজ্ঞানী সত্তাই এসব সৃষ্টি করেছেন।" (আয্ যুখরুফ : ৯) 

وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ مَنْ خَلَقَهُمْ لَيَقُولُنَّ اللَّهُ–

"আর যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, তাদেরকে কে সৃষ্টি করেছে তাহলে তারা নিশ্চয়ই বলবে, আল্লাহ।" (আয্ যুখরুক- ৮৭) 

وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ مَنْ نَزَّلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَحْيَا بِهِ الْأَرْضَ مِنْ بَعْدِ مَوْتِهَا لَيَقُولُنَّ اللَّهُ -

"আর যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, কে আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছে এবং মৃত পতিত জমি কে জীবিত করেছে৷ তাহলে তারা নিশ্চয়ই বলবে আল্লাহ ।" (আনকাবুত : ৬৩ আয়াত) 

قُلْ مَنْ يَرْزُقُكُمْ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ ......... وَمَنْ يُدَبِّرُ الْأَمْرَ فَسَيَقُولُونَ اللَّهُ فَقُلْ أَفَلَا تَتَّقُونَ -

"তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, কে তোমাদের আকাশ ও পৃথিবী থেকে জীবিকা দান করেন৷ এ শ্রবণ ও দর্শনের শক্তি কার নিয়ন্ত্রণাধীন৷ কে সজীবকে নির্জীব এবং নির্জীবকে সজীব করেন৷ কে এ বিশ্ব ব্যবস্থা পরিচালনা করছেন৷ তারা নিশ্চয়ই বলবে আল্লাহ।" (ইউনুস : ৩১ আয়াত)

আরবের মুশরিকরা এবং সারা দুনিয়ার মুশরিকরা সাধারণত একথা স্বীকার করতো এবং আজো স্বীকার করে যে, আল্লাহই বিশ্ব-জাহানের স্রষ্টা এবং বিশ্বব্যবস্থা পরিচালনাকারী। তাই কুরআন মজীদের এ প্রশ্নের জবাবে তাদের মধ্য থেকে কোন ব্যক্তি নিতান্ত হঠকারিতা ও গোয়ার্তুমীর আশ্রয় নিয়েও নিছক বিতর্কের খাতিরেও বলতে পারতো না যে, আমাদের উপাস্য দেবতারা আল্লাহর সাথে এসব কাজে শরীক আছে। কারণ যদি তারা একথা বলতো তাহলে তাদের নিজেদের জাতির হাজার হাজার লোক তাদেরকে মিথ্যুক বলতো এবং তারা পরিষ্কার বলে দিতো, এটা আমাদের আকীদা নয়।

এ প্রশ্ন এবং এর পরবর্তী প্রশ্নগুলোতে শিরকই বাতিল করা হয়নি বরং নাস্তিক্যবাদকেও বাতিল করে দেয়া হয়েছে। যেমন এ প্রথম প্রশ্নেই জিজ্ঞেস করা হয়েছে : এই বৃষ্টি বর্ষণকারী এবং এর সাহায্যে সবরকম উদ্ভিদ উৎপাদনকারী কে৷ এখন চিন্তা করুন, অজস্র রকমের উদ্ভিদের জীবনের জন্য যে ধরনের উপাদান প্রয়োজন, ভূমিতে তার ঠিক উপরিভাগে অথবা উপরিভাগের কাছাকাছি এসব জিনিসের মজুত থাকা এবং পানির মধ্যে ঠিক এমন ধরনের গুণাবলী থাকা যা প্রাণী ও উদ্ভিদ জীবনের প্রয়োজন পূর্ণ করে এবং এ পানিকে অনবরত সমুদ্র থেকে উঠানো এবং জমির বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন সময় যথানিয়মে বর্ষণ করা আর মাটি, বাতাস, পানি ও তাপমাত্রা ইত্যাদি বিভিন্ন শক্তির মধ্যে এমন পর্যায়ের আনুপাতিক সহযোগিতা প্রতিষ্ঠা করা যার ফলে উদ্ভিদ জীবন বিকাশ লাভ করতে পারে এবং সব ধরনের জৈব জীবনের জন্য তার অসংখ্য প্রয়োজন পূর্ণ করতে সক্ষম হয়, এসব কিছু কি একজন জ্ঞানবান সত্তার পরিকল্পনা ও সুবিজ্ঞ ব্যবস্থাপনা এবং প্রবল শক্তি ও সংকল্প ছাড়াই আপনা আপনি হয়ে যেতে পারে৷ আর এ ধরনের আকস্মিক ঘটনা কি অনবরত হাজার বছর বরং লাখো কোটি বছর ধরে যথা নিয়মে ঘটে যাওয়া সম্ভবপর৷ প্রবল আক্রোশ ও বিদ্বেষে অন্ধ একজন চরম হঠকারী ব্যক্তিই কেবল একে একটি আকস্মিক ঘটনা বলতে পারে। কোন সত্যপ্রিয় বুদ্ধি ও বিবেকবান ব্যক্তির পক্ষে এ ধরনের অযৌক্তিক ও অর্থহীন দাবী করা এবং তা মেনে নেয়া সম্ভব নয়। )

(২৫.ফুরকান:৫৫) এক আল্লাহকে বাদ দিয়ে লোকেরা এমন সব সত্তার পূজা করছে যারা না তাদের উপকার করতে পারে, না অপকার৷ আবার অতিরিক্ত হচ্ছে এই যে, কাফের নিজের রবের মোকাবিলায় প্রত্যেক বিদ্রোহীর সাহায্যকারী হয়ে আছে৷

(ফুরকান :২)...তার সাথে রাজত্বে কেউ শরীক নেই,  যিনি প্রত্যেকটি জিনিস সৃষ্টি করেছেন তারপর তার একটি তাকদীর নির্ধারিত করে দিয়েছেন৷৩) লোকেরা তাঁকে বাদ দিয়ে এমন সব উপাস্য তৈরি করে নিয়েছে যারা কোন জিনিস সৃষ্টি করে না বরং নিজেরাই সৃষ্ট, যারা নিজেদের জন্যও কোন উপকার বা অপকার করার ক্ষমতা রাখে না, যারা না জীবন -মৃত্যু দান করতে পারে আর না মৃতদেরকে আবার জীবিত করতে পারে৷

(মু’মিনুন:১১৭) এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য কোন মাবুদকে ডাকে, যার পক্ষে তার কাছে কোন যুক্তি প্রমাণ নেই,  তার হিসেব রয়েছে তার রবের কাছে৷  এ ধরনের কাফের কখনো সফলকাম হতে পারে না ৷

(মু’মিনুন:৯১) আল্লাহ কাউকে নিজের সন্তানে পরিণত করেননি  এবং তাঁর সাথে অন্য কোন ইলাহও নেই৷ যদি থাকতো তাহলে প্রত্যেক ইলাহ নিজের সৃষ্টি নিয়ে আলাদা হয়ে যেতো ৷এবং তারপর একজন অন্যজনের ওপর চড়াও হতো৷  এরা যেসব কথা তৈরী করে তা থেকে আল্লাহ পাক-পবিত্র৷

(অর্থাৎ বিশ্ব-জাহানের বিভিন্ন শক্তির ও বিভিন্ন অংশের স্রষ্টা ও প্রভু হতো আলাদা আলাদা ইলাহ এবং এরপর তাদের মধ্যে পূর্ণ সহযোগীতা বজায় থাকতো যেমন তোমরা এ সমগ্র বিশ্ব ব্যবস্থার অসংখ্য শক্তি ও বস্তু এবং অগণিত গ্রহ-নক্ষত্রের মধ্যে দেখতে পাচ্ছো , এটা কোনক্রমেই সম্ভব ছিল না । বিশ্ব-জাহানের নিয়ম শৃংখলা ও তার বিভিন্ন অংশের পারস্পারিক একাত্মতা স্পষ্টতই প্রমাণ করছে যে, এর ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব একজন একক আল্লাহর হাতে কেন্দ্রীভূত । যদি কর্তৃত্ব বিভক্ত হতো তাহলে কর্তৃত্বশীলদের মধ্যে অনিবার্যভাবে মতবিরোধ সৃষ্টি হতো। আর এ মতবিরোধ তাদের মধ্যে সংঘর্ষ ও যুদ্ধ পর্যন্ত না পৌছে ছাড়তো না । এ বক্তব্যই সূরা আম্বিয়ায় এভাবে বর্ণিত হয়েছে : 

---------------

''যদি পৃথিবী ও আকাশে আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ থাকতো তাহলে এ উভয়ের ব্যবস্থা লন্ডভন্ড হয়ে যেতো ।'' (২২ আয়াত) 

সূরা বনী ইসরাঈলেও এ একই যুক্তির অবতারণা করা হয়েছে: --------------- ''যদি আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহও থাকতো , যেমন লোকেরা বলে, তাহলে নিশ্চয়ই তারা আরশের মালিকের স্থানে পৌছুবার চেষ্টা করতো ।''

(ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল করআন বনী ইসরাঈল, ৪৭ এবং আল আম্বিয়া , ২২ টীকা )

(হাজ্ব:১২) তারপর সে আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদেরকে ডাকে যারা তার না ক্ষতি করতে পারে, না উপকার, এ হচ্ছে ভ্রষ্টতার চূড়ান্ত৷  ১৩) সে তাদেরকে ডাকে যাদের ক্ষতি তাদের উপকারের চাইতে নিকটতর নিকৃষ্ট তার অভিভাবক এবং নিকৃষ্ট তার সহযোগী৷

(২০:৮৮) এবং আমরা স্রেফ সেগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলাম৷ তারপর  এভাবে সামেরীও কিছু ছুঁড়ে ফেললো এবং তাদের একটি বাছুরের মূর্তি বানিয়ে নিয়ে এলো, যার মধ্যে থেকে গরুর মতো আওয়াজ বের হতো৷ লোকেরা বলে উঠলো, “এ-ই তোমাদের ইলাহ এবং মূসারও ইলাহ, মূসা একে ভুলে গিয়েছে”৷৮৯) তারা কি দেখছিল না যে, সে তাদের কথারও জবাব দেয় না৷ এবং তাদের উপকার ও ক্ষতি করার কোন ক্ষমতাও রাখে না?

(১৭:৫৬) এদেরকে বলো, ডাক দিয়ে দেখো তোমাদের সেই মাবুদদেরকে, যাদেরকে তোমরা আল্লাহ ছাড়া (নিজেদের কার্যোদ্ধারকারী) মনে করো, তারা তোমাদের কোনো কষ্ট দূর করতে পারবে না এবং তা পরিবর্তন করতেও পারবে না৷ 

(১২:৩৯) হে জেলখানার সাথীরা! তোমারা নিজেরাই ভেবে দেখো, ভিন্ন ভিন্ন বহু সংখ্যক রব ভালো, না এক আল্লাহ, যিনি সবার ওপর বিজয়ী৷৪০) তাঁকে বাদ দিয়ে তোমরা যাদের বন্দেগী করছো তারা শুধুমাত্র কতকগুলো নাম ছাড়া আর কিছুই নয়, যে নামগুলো তোমরা  তোমাদের পিতৃ-পুরুষরা রেখেছো, আল্লাহ এগুলোর পক্ষে কোন প্রমাণ পাঠাননি৷ শাসন কর্তৃত্ব আল্লাহ ছাড়া আর কারোর নেই৷ তাঁর হুকুম- তোমরা তাঁর ছাড়া আর কারোর বন্দেগী করবে না৷ এটিই সরল সঠিক জীবন পদ্ধতি, কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না৷

 (১৩:১৪) একমাত্র তাঁকেই ডাকা সঠিক৷  আর অন্যান্য সত্তাসমূহ, আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে এ লোকেরা ডাকে, তারা তাদের প্রার্থনায় কোন সাড়া দিতে পারে না৷ তাদেরকে ডাকা তো ঠিক এমনি ধরনের যেমন কোন ব্যক্তি পানির দিকে হাত বাড়িয়ে তার কাছে আবেদন জানায়, তুমি আমার মুখে পৌঁছে যাও, অথচ পানি তার মুখে পৌঁছতে সক্ষম নয়৷ ঠিক এমনিভাবে কাফেরদের দোয়াও একটি লক্ষভ্রষ্ট তীর ছাড়া আর কিছু নয়৷  

(১৩:১৬) এদেরকে জিজ্ঞেস করো, আকাশ ও পৃথিবীর রব কে ? - বলো আল্লাহ!   তারপর এদেরকে জিজ্ঞেস করো, আসল ব্যাপার যখন এই তখন তোমরা কি তাঁকে বাদ দিয়ে এমন মাবুদদেরকে নিজেদের কার্যসম্পাদনকারী বানিয়ে নিয়েছো যারা তাদের নিজেদের জন্যও কোন লাভ ও ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে না ? বলো অন্ধ ও চক্ষুস্মান কি সমান হয়ে থাকে ?  আলো ও আঁধার কি এক রকম হয় ? যদি এমন না হয়, তাহলে তাদের বানানো শরীকরাও কি আল্লাহর মতো কিছু সৃষ্টি করেছে, যে কারণে তারাও সৃষ্টি ক্ষমতার অধিকারী বলে সন্দেহ হয়েছে ?  বলো, প্রত্যেকটি জিনিসের স্রষ্টা একমাত্র আল্লাহ৷ তিনি একক ও সবার ওপর পরাক্রমশালী৷

এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে৷ -১৩:৩৬,

(১৬:৭১) আর দেখো, আল্লাহ তোমাদের একজনকে আর একজনের ওপর রিযিকের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন৷ তারপর যাদেরকে এ শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে তারা এমন নয় যে নিজেদের রিযিক নিজেদের গোলামদের দিকে ফিরিয়ে দিয়ে থাকে, যাতে উভয় এ রিযিকে সমান অংশীদার হয়ে যায়৷ তাহলে কি এরা শুধু আল্লাহরই অনুগ্রহ মেনে নিতে অস্বীকার করে ?

(১৬:৭৩) আর তারা কি আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন সব সত্ত্বার পূজা করে যাদের না আকাশ থেকে তাদের কিছু রিযিক দেবার ক্ষমতা ও অধিকার আছে, না পৃথিবী থেকে ? ৭৪) কাজেই আল্লাহর জন্য সদৃশ তৈরি করো না, আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না৷  

(২১:২১) এদের তৈরি মাটির দেবতাগুলো কি এমন পর্যায়ের যে, তারা (প্রাণহীনকে প্রাণ দান করে) দাঁড় করিয়ে দিতে পারে ?

(২১:২২) যদি আকাশে ও পৃথিবীতে এক আল্লাহ ছাড়া দ্বিতীয় কোনো ইলাহ হতো তাহলে (পৃথিবী ও আকাশ) উভয়ের ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যেতো৷  কাজেই এরা যেসব কথা বলে বেড়াচ্ছে আরশের প্রভুব আল্লাহ  তা থেকে পাক-পবিত্র৷ 

(২৭.নমল:৫৯)(তাদেরকে জিজ্ঞাস কর) আল্লাহ ভাল অথবা সেই সব মাবুদরা ভাল যাদেরকে তারা তার শরিক করেছে?৭২ 

(৭২. আল্লাহ ভালো, না এসব মিথ্যা মাবুদ ভালো, এ প্রশ্নটি আপাতত দৃষ্টিতে বড়ই অদ্ভূত মনে হয়। প্রকৃতপক্ষে মিথ্যা উপাস্যদের মধ্যে তো আদৌ কোন ভালাই নেই যে, আল্লাহর সাথে তাদের তুলনা করা যেতে পারে। মুশরিকরাও আল্লাহর সাথে এ উপাস্যদের তুলনা করা যেতে পারে এমন কথা ভাবতো না। কিন্তু তারা যাতে নিজেদের ভুলের ব্যাপারে সতর্ক হয়, সেজন্য এ প্রশ্ন তাদের সামনে রাখা হয়েছে। একথা সুস্পষ্ট, কোন ব্যক্তি দুনিয়ায় ততক্ষণ পর্যন্ত কোন কাজ করে না যতক্ষণ না সে তার নিজের দৃষ্টিতে তার মধ্যে কোন কল্যাণ বা লাভের সন্ধান পায়। এখন এ মুশরিকরা আল্লাহর পরিবর্তে তাদের কাছে নিজেদের প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য দোয়া করতো এবং তাদের সামনে নজরানা পেশ করতো। অথচ ঐ উপাস্যদের মধ্যে যখন কোন কল্যাণ নেই তখন তাদের এসব করার কোন অর্থই ছিল না। তাই তাদের সামনে পরিষ্কার ভাষায় এ প্রশ্ন রাখা হয়েছে যে, বলো আল্লাহ ভালো না তোমাদের ঐসব উপাস্যরা৷ কারণ এ দ্ব্যর্থহীন প্রশ্নের সম্মুখীন হবার হিম্মত তাদের ছিল না। তাদের মধ্য থেকে সবচেয়ে কট্টর মুশরিকও একথা বলার সাহস করতে পারতো না যে, আমাদের উপাস্যরা ভালো। আর আল্লাহ ভালো একথা মেনে নেবার পর তাদের ধর্মের পুরো ভিত্তিটাই ধ্বসে পড়তো, কারণ এরপর ভালোকে বাদ দিয়ে মন্দকে গ্রহণ করা পুরোপুরি অযৌক্তিক হয়ে দাঁড়াতো। 

এভাবে কুরআন তার ভাষণের প্রথম বাক্যেই বিরোধীদেরকে লা জবাব ও অসহায় করে দিয়েছে। এরপর এখন আল্লাহর শক্তিমত্তা এবং তাঁর প্রতিটি সৃষ্টি বৈচিত্রের প্রতি অংগুলি নির্দেশ করে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে, এটা কার কাজ বলো৷ আল্লাহর সাথে বৈচিত্রের প্রতি কোন ইলাহও কি এ কাজে শরীক আছে৷ যদি না থেকে থাকে তাহলে তোমরা এই যাদেরকে উপাস্য করে রেখেছো এদের কি স্বার্থকতা আছে। 

হাদীসে বলা হয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন আয়াতটি তেলাওয়াত করতেন তখন সংগে সংগেই এর জবাবে বলতেন : بل الله خير وَّابقى وَاَجَلُّ وَّاكرمُ - 

"বরং আল্লাহই ভালো এবং তিনিই চিরস্থায়ী, মর্যাদাসম্পন্ন ও শ্রেষ্ঠ।" )

(২৮-ক্বাছাছ : ৬৮) তোমার রব যা চান সৃষ্টি করেন এবং (তিনি নিজেই নিজের কাজের জন্য যাকে চান) নির্বাচিত করে নেন৷ এ নির্বাচন তাদের কাজ নয়৷৯০ আল্লাহ পবিত্র এবং তারা যে শিরক করে তার অনেক ঊর্ধ্বে৷  

৯০. আসলে শির্ককে খণ্ডন করার উদ্দেশ্যে এ উক্তি করা হয়েছে। মুশরিকরা আল্লাহর অসংখ্য সৃষ্টিকে তাদের উপাস্য পরিণত করেছে। নিজেদের পক্ষ থেকে তাদেরকে বিভিন্ন মর্যাদা, পদ ও গুণাবলী দান করা করেছে। এর প্রতিবাদ করে আল্লাহ বলেছেন , আমার সৃষ্ট মানুষ, ফেরেশতা , জিন ও অন্যান্য বান্দাদের মধ্য থেকে আমি নিজেই যাকে যেমন চেয়েছি গুণাবলী , যোগ্যতা ও শক্তি দান করেছি এবং যার মাধ্যমে যে কাজ নিতে চাই নিয়ে থাকি। কাজেই আমার বান্দাদের মধ্য থেকে কাউকে নিজেদের ইচ্ছামতো বিপদ থেকে উদ্ধারকারী, অন্নদাতা ও ফরিয়াদ শ্রবণকারী ইত্যাদি মনে করার অধিকার মুশরিকরা কেমন করে ও কোথা থেকে লাভ করলো ৷ কিভাবে তারা যাকে ইচ্ছা তাকে বৃষ্টি বর্ষণ , রুজি-রোজগার ও সন্তান দান এবং রোগ ও রোগ নিরাময় করার ক্ষমতা অর্পণ করে ৷ কেমন করে তারা যাকে ইচ্ছা তাকে আমার সার্বভৌম কর্তৃত্বাধীন এলাকার একটি অংশের শাসনকর্তা নিয়োগ করে ৷ আমার ক্ষমতার মধ্য থেকে যা কিছু যাকে চায় তাকে তারা কেমন করে সোপর্দ করে। কেউ ফেরেশতা , জিন, নবী বা অলী যাই কিছু থাক আমার সৃষ্টির কারণেই আছে। যে গুণাবলীই যে কেউ লাভ করেছে তা আমারই দান। যাকে আমি যে কাজে লাগাতে চেয়েছি লাগিয়ে দিয়েছি। তাদেরকে বিভিন্ন কাজের জন্য এভাবে নির্বাচিত করার এ অর্থ কেমন করে হয়ে গেলো যে, এ বান্দাদেরকে বন্দেগীর স্থান থেকে উঠিয়ে খোদায়ী মর্যাদায় অভিষিক্ত করতে হবে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের সামনে আনুগত্যের শির নত করে দিতে হবে, তাদেরকে সাহায্য দান করার জন্য ডাকতে হবে, অভাব পূরণ করার জন্য তাদের কাছে আবেদন জানাতে হবে, তাদেরকে ভাগ্য ভাঙাগড়ার মালিক এবং আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বের গুণাবলী ও ক্ষমতার অধিকারী আখ্যায়িত করতে হবে 

১। গোলাম কখনো মুনিবের সম্পদে অংশীদার হতে পারেনা : এবং মুনিবের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে গিয়ে কেউ কখনো সেই মুনিবের গোলামের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না :

(৩০-রূম: ২৮) তিনি নিজেই তোমাদের জন্য  তোমাদের আপন সত্তা থেকে একটি দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন৷ তোমাদের যেসব গোলাম তোমাদের মালিকানাধীন আছে তাদের মধ্যে কি এমন কিছু গোলাম আছে যারা আমার দেয়া ধন- সম্পদে তোমাদের সাথে সমান অংশীদার এবং তোমরা তাদেরকে এমন ভয় করো যেমন পরস্পরের মধ্যে সমকক্ষদেরকে ভয় করে থাকে ? ৪০   - যারা বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করে তাদের জন্য আমি এভাবে আয়াতগুলো সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করি৷

৪০ . পৃথিবী ও আকাশ এবং তাদের মধ্যকার যাবতীয় জিনিসের স্রষ্টা ও মালিক হচ্ছেন আল্লাহ, মুশরিকরা একথা স্বীকার করার পর তাঁর সৃষ্টির মধ্য থেকে কাউকে আল্লাহর সার্বভৌম সত্ত্বার গুণাবলী ও ক্ষমতাঁর অংশীদার গণ্য করতো। তাদের কাছে প্রার্থনা করতো তাদের সামনে মানত ও নাযরানা পেশ করতো এবং বন্দেগী ও পূজার অনুষ্ঠান করতো। এসব বানোয়াট শরীকদের ব্যাপারে তাদের মূল আকীদার সন্ধান পাওয়া যায় তাদের কা'বা ঘর তাওয়াফ করার সময় পঠিত " তালবীয়াহ" থেকে । এসময় তারা বলতোঃ 

-------------------------

" আমি হাজির আছি, হে আমার আল্লাহ আমি হাজির আছি। তোমার কোন শরীক নেই তোমার নিজের শরীক ছাড়া । তুমি তাঁরও মালিক এবং যা কিছু তাঁর মালিকানায় আছে তাঁরও মালিক তুমি।" ( তাবারানীঃ ইবনে আব্বাস বর্ণিত) 

এ আয়াতটিতে মহান আল্লাহ এ শিরকটিই খণ্ডন করছেন। এখানে দৃষ্টান্তটির অর্থ হচ্ছে এই যে, আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদে কখনো আল্লাহরই সৃষ্টি যে মানুষ ঘটনাক্রমে তোমার দাসত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেছে তোমার অংশীদার গণ্য হতে পারে না।কিন্তু তোমরা অদ্ভূত ধান্দাবাজী শুরু করেছো, আল্লাহর সৃষ্ট বিশ্ব- জাহানে আল্লাহর সৃষ্টিকে নির্দ্ধিধায় তাঁর সাথে তাঁর সার্বভৌম কর্তৃত্বে শরীক গণ্য করছো। এ ধরনের নির্বোধ জনোচিত কথাগুলো চিন্তা করার সময় তোমাদের বুদ্ধি-জ্ঞান কি একেবারে বিনষ্ট হয়ে যায় ৷ (আরো বেশি ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন সূরা আন নাহল , ৬২ টীকা।)

(সূরা আন নাহল : ৭১) আর দেখো, আল্লাহ তোমাদের একজনকে আর একজনের ওপর রিযিকের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন৷ তারপর যাদেরকে এ শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে তারা এমন নয় যে নিজেদের রিযিক নিজেদের গোলামদের দিকে ফিরিয়ে দিয়ে থাকে, যাতে উভয় এ রিযিকে সমান অংশীদার হয়ে যায়৷ তাহলে কি এরা শুধু আল্লাহরই অনুগ্রহ মেনে নিতে অস্বীকার করে ?৬২ 

৬২. বর্তমানকালে এ আয়াত থেকে বড়ই অদ্ভূদ ও উদ্ভট অর্থ বের করা হয়েছে । কুরআনের আয়াতকে তার প্রেক্ষাপট ও পূর্বাপর সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করে এক একটি আয়াতের আলাদা আলাদা অর্থ করলে কেমন অন্তহীন অপব্যাখ্যার দরজা খুলে যায় এটা হচ্ছে তার একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ । এক শ্রেণীর পণ্ডিতেরা এ আয়াতটিকে ইসলামের অর্থনৈতিক দর্শনের বুনিয়াদ এবং অর্থনৈতিক বিধি - ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা গণ্য করেছেন । তাদের মতে আয়াতের বক্তব্য হচ্ছে, যাদেরকে আল্লাহ রিযিকের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন তাদের নিজেদের রিযিক নিজেদের গোলাম ও চাকর বাকরদের মধ্যে বিলিয়ে দেয়া উচিত । যদি বিলিয়ে দেয়া না হয় তাহলে তারা আল্লাহর নিয়ামত অস্বীকারকারী বলে গণ্য হবে । অথচ এ সমগ্র আলোচনার মধ্যে কোথাও অর্থনৈতিক বিধি ব্যবস্থা বর্ণনার আদৌ কোন সুযোগই নেই । প্রথম থেকে সমগ্র ভাষণটিই চলছে শিরককে মিথ্যা প্রতিপন্ন ও তাওহীদকে সত্য প্রমাণ করার জন্য এবং সামনের দিকেও এ একই বিষয়বস্তুই একের পর এক এগিয়ে চলছে । এ আলোচনার মাঝখানে হঠাৎ অর্থনৈতিক বিধি ব্যবস্থার একটি ধারা বর্ণনা করার কোন সুযোগই কি এখানে আছে ৷ আয়াতকে তার প্রেক্ষাপট ও পূর্বাপর আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে রেখে বিচার রেখে বিচার করলে পরিস্কার বুঝা যাবে যে, এখানে এর সম্পূর্ণ বিপরীত বিষয়বস্তুরই আলোচনা চলছে । এখানে একথা প্রমাণ করা হয়েছে যে, তোমরা নিজেদের ধন - সম্পদ যখন নিজেদের গোলাম ও চাকর বাকরদেরকে সমান মর্যাদা দাও না অথচ এ সম্পদ আল্লাহর দেয়া তখন তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে গিয়ে আল্লাহর সাথে তাঁর ক্ষমতাহীন গোলামদেরকেও শরীক করা এবং ক্ষমতা ও অধিকারের ক্ষেত্রে আল্লাহর এ গোলামদেরকেও তাঁর সাথে সমান অংশীদার গণ্য করাকে তোমরা কেমন করে সঠিক মনে করো ৷ 

সূরা রূমের ২৮ আয়াতে এ একই যুক্তি প্রদর্শন করা হয়েছে । সেখানে এর শব্দগুলো হচ্ছে: 

আরবী --------------------------------------------------------------------------------

" আল্লাহর তোমদের সামনে আরেকটি উপমা তোমদের সত্তা থেকেই পেশ করেন । আমি তোমাদের যে রিযিক দিয়েছি তাতে কি তোমাদের গোলাম তোমাদের সাথে শরীক আছে ৷ আর এভাবে শরীক বানিয়ে তোমরা ও তারা কি সমান সমান হয়ে গিয়েছে ৷ এবং তোমরা কি তাদেরকে ঠিক তেমনি ভয় পাও যেমন তোমাদের সমপর্যায়ের লোকদেরকে ভয় পাও ৷ এভাবে আল্লাহ খুলে খুলে নিশানী বর্ণনা করেন তাদের জন্য যারা বিবেক বুদ্ধিকে কাজে লাগায় । " 

দু'টি আয়াতের তুলনামূলক আলোচনা করলে পরিস্কার জানা যায়,উভয় স্থানেই একই উদ্দশ্য একই উপমা বা দৃষ্টান্ত প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে এবং এদের একটি অন্যটির ব্যাখ্যা করছে । 

সম্ভবত ( আরবী ---------------------------) বাক্যাংশ থেকেই ঐ বুদ্ধিজীবীরা বিভ্রান্ত হয়েছেন । উপমা বর্ণনার পর সাথে সাথেই এ বাক্যাংশটি দেখে তারা মনে করেছে নিশ্চয়ই এর অর্থ এই হবে যে অধীনস্থদের মধ্যে রিযিক বিলিয়ে না দেয়াটাই মূলত আল্লাহর নিয়ামতের অস্বীকৃতি । অথচ যে ব্যক্তি কুরআনে সামান্য পারদর্শিতাও রাখেন তিনিই জানেন যে আল্লাহর নিয়ামতের জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য সত্তাকে কৃতজ্ঞতা জানানো এ কিতাবের দৃষ্টিতে আল্লাহর নিয়ামতের অস্বীকৃতি ছাড়া আর কিছুই নয় । এ বিষয়টির কুরআনে এত বেশী পুনরাবৃত্তি হয়েছে যে, তিলাওয়াত ও চিন্তা গবেষণায় অভ্যস্ত লোকেরা এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ প্রকাশ করতে পারেন না । অবশ্যি সূচীপত্রের সাহায্যে নিজেদের প্রয়োজনীয় প্রবন্ধ রচনাকারীগণ এ ব্যাপারটি নাও জানতে পারেন । 

আল্লাহর নিয়ামত অস্বীকৃতির এই তাৎপর্যটি অনুধাবন করার পর এ বাক্যাংশের অর্থ পরিস্কার বুঝতে পারা যাচ্ছে যে, এরা যখন প্রভু ও গোলামের পার্থক্য ভাল করেই জানে এবং নিজেদের জীবনে সর্বক্ষণ এ পার্থক্যের দিকে নজর রাখে তখন একমাত্র আল্লাহর ব্যাপারেই কি এরা এত অবুঝ হয়ে গেছে যে, তাঁর বান্দাদেরকে তাঁর সাথে শরীক ও তাঁর সমকক্ষ মনে করার এবং তাঁর কাছে থেকে এরা যেসব নিয়ামত লাভ করেছে সেগুলোর জন্য তাঁর বান্দাদেরকে কৃতজ্ঞতা জানানোকে জরুরী মনে করে ৷ 

২। শরীকরা সৃষ্টির ক্ষেত্রে কোন অংশীদারিত্ব রাখেনা, একমাত্র আল্লাহই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন , সুতরাং, ইবাদত একমাত্র আল্লাহই পেতে পারেন, অন্য কোন শরীক নয় :

(৩১-লোকমান: ১১) এতো হচ্ছে আল্লাহর সৃষ্টি , এখন আমাকে একটু দেখাও তো দেখি অন্যেরা কি সৃষ্টি করেছে ? ১৫   - আসল কথা হচ্ছে এ জালেমরা সুস্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত রয়েছে৷

১৬ . অর্থাৎ যখন এরা এ বিশ্ব-জাহানে আল্লাহ ছাড়া আর কারো কোন সৃষ্টি চিহ্নিত করতে পারেনি এবং একথা সুস্পষ্ট যে, তারা তা করতে পারে না তখন তাদের যারা স্রষ্টা নয় এমন সত্ত্বাকে আল্লাহর একচ্ছত্র ও সার্বভৌম কর্তৃত্বে শরীক করা, তাদের সামনে আনুগত্যের শির নত করা এবং তাদের কাছে প্রার্থনা করা ও অভাব মোচন করার জন্য আবেদন জানানোকে সুস্পষ্ট নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কী বলা যেতে পারে। যতক্ষণ কোন ব্যক্তি একেবারেই উন্মাদ হয়ে না যায় ততক্ষণ সে এত বড় নির্বুদ্ধিতা করতে পারে না যে, সে কারো সামনে নিজেই নিজের উপাস্যদেরকে সৃষ্টিকর্মে অক্ষম বলে এবং একমাত্র আল্লাহকে স্রষ্টা বলে স্বীকার করে নেবার পরও তাদেরকে উপাস্য বলে মেনে নেবার জন্য জিদ ধরবে। যার ঘাটে একটুখানিও বুদ্ধি আছে সে কখনো চিন্তা করবে না, কোন জিনিস সৃষ্টি করার ক্ষমতাই যার নেই এবং পৃথিবী ও আকাশের কোন জিনিসের সৃষ্টিতে যার নামমাত্র অংশও নেই সে কেন আমাদের উপাস্য হবে ৷ কেন আমরা তার সামনে সিজদানত হবো ৷ অথবা তার পদচুম্বন করবো এবং তার আস্তানায় গিয়ে ষষ্ঠাংগ প্রণিপাত করবো ৷ আমাদের ফরিয়াদ শোনার এবং আমাদের অভাব পূরণ করার কী ক্ষমতা তার আছে ৷ তর্কের খাতিরে মেনে নিলাম, সে আমাদের প্রার্থনা শুনছে কিন্তু তার জবাবে সে নিজে কি পদক্ষেপ নিতে পারে, যখন তার নিজের কিছু করার ক্ষমতা নেই ৷ যে কিছু করতে পারে সে-ই তো কিছু ভেঙ্গে যাওয়া জিনিস গড়তে পারে কিন্তু যার আদতে করারই কোন ক্ষমতা নেই সে আবার কেমন করে ভেঙ্গে যাওয়া জিনিস গড়তে পারবে।

নাস্তিক  মুশরিকদের  নিকট প্র্রশ্ন :

১।  বিশ্বব্যবস্থাপনা কিভাবে চলছে ?

উত্তরের জন্য  দেখুন : ন > নাস্তিক > নাস্তিকদের নিকট প্রশ্ন।

২। পৃথিবী নামক গ্রহটি কিভাবে বাসযোগ্য হয়েছে ?

উত্তরের জন্য  দেখুন : ন > নাস্তিক > নাস্তিকদের নিকট প্রশ্ন।

৩। চরম অসহায়ত্ব সৃষ্টি হলে কঠোর নাস্তিকরাও উর্ধ্বতন একজন সৃষ্টিকর্তাকে ডাকার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে :

উত্তরের জন্য  দেখুন : ন > নাস্তিক > নাস্তিকদের নিকট প্রশ্ন।

৪। আকাশের তারকাগুলোকে বিক্ষিপ্ত নয় বরং এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে যাতে নাবিকরা ঘন অন্ধকারেও তারকার সাহায্যে পথ খুজে পায় ?

উত্তরের জন্য  দেখুন : ন > নাস্তিক > নাস্তিকদের নিকট প্রশ্ন।

 জীবন কি ? জীবন এর সৃষ্টি  জীবনের পনরাবৃত্তি নিয়ে কোন চিন্তা ভাবনা করেছেন কি ?

উত্তরের জন্য  দেখুন : ন > নাস্তিক > নাস্তিকদের নিকট প্রশ্ন।

আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য শরীকদের প্রকৃত স্বরূপ :

(১৭:৫৭) এরা যাদেরকে ডাকে তারা তো নিজেরাই নিজেদের রবের নৈকট্যলাভের উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছে যে, কে তাঁর নিকটতর হয়ে যাবে এবং এরা তাঁর রহমতের প্রত্যাশী এবং তাঁর শাস্তির ভয়ে ভীত৷

যারা শিরক করে তারা আন্দাজ অনুমানের ভিত্তিতেই শিরক করে :

জেনে রেখো, আকাশের অধিবাসী, হোক বা পৃথিবীর , সবাই আল্লাহর মালিকানাধীন৷ আর যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে (নিজেদের মনগড়া) কিছু শরীকদের ডাকছে তারা নিছক আন্দাজ  ধারণার অনুগামী এবং তারা শুধু অনুমানই করে৷-১০:৬৬,  

(১৩:৩৩) তবে কি যিনি প্রত্যেক ব্যক্তির উপার্জনের প্রতি নজর রাখেন  (তাঁরা মোকাবিলায় এ দুঃসাহস করা হচ্ছে যে) লোকেরা তাঁর কিছু শরীক ঠিক করে রেখেছে ? হে নবী ! এদেরকে বলো, (যদি তারা সত্যিই আল্লাহর বানানো শরীক হয়ে থাকে তাহলে) তাদের পরিচয় দাও, তারা কারা ? না কি তোমরা আল্লাহকে এমন একটি নতুন খবর দিচ্ছো যার অস্তিত্ব পৃথিবীতে তাঁর অজানাই রয়ে গেছে ? অথবা তোমরা এমনি যা মুখে আসে বলে দাও ?

মানুষ শয়তানের প্ররোচনায়ই শিরক করে : এর কারণ হচ্ছে শয়তানের নেতৃত্ব স্বীকার করে নেয়া :

(১৬:৬৩).... শয়তান তাদের খারাপ কার্যকলাপকে তাদের সামনে সুশোভন করে দেখিয়েছেসেই শয়তানই আজ এদেরও অভিভাবক সেজে বসে আছে এবং এরা মর্মন্তুদ শাস্তির উপযুক্ত হচ্ছে৷

(১৬:১০০) তার আধিপত্য ও প্রতিপত্তি চলে তাদের ওপর যারা তাকে নিজেদের অভিভাবক বানিয়ে নেয় এবং তার প্ররোচনায় শিরক করে৷

(১৫:৪২) .....তোমার জোর খাটবে শুধুমাত্র এমন বিপথগামীদের ওপর যারা তোমার অনুসরণ করবে

রিজিক্ব এর ক্ষেত্রে আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করা :  শিরক করা :

(১৬:৭২) আর আল্লাহই তোমাদের জন্য তোমাদের সমজাতীয় স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, তিনিই এ স্ত্রীদের থেকে তোমাদের পুত্র-পৌত্রাদি দান করেছেন এবং ভালো ভালো জিনিস তোমাদের খেতে দিয়েছেন৷ তারপর কি এরা (সবকিছু দেখার ও জানার পরও) বাতিলকে মেনে নেবে এবং আল্লাহর নিয়ামত অস্বীকার করে ?  

('বাতিলকে মেনে নেয় ' অর্থাৎ এ ভিত্তিহীন ও অসত্য বিশ্বাস পোষণ করে যে, তাদের ভাগ্য ভাঙা - গড়া, আশা - আকাংখা পূর্ণ করা, সন্তান দেয়া, রুজি রোজগার দেয়া বিচার আচার ও মামলা মোকদ্দমায় জয়লাভ করানো এবং রোগ শোক থেকে বাঁচানোর ব্যাপারটি কতিপয় দেব দেবী, জিন এবং অতীতের বা পরবর্তীকালের কোন মহাপুরুষের হাতে রয়েছে । -তাফহীমুল কুরআন)

সন্তান লাভের পর অনেকে শিরকে লিপ্ত হয় :

সন্তান লাভের পর অনেকে শিরকে লিপ্ত হয় : ৭:১৯০-১৯১ (আল্লাহর এ দান ও অনুগ্রহকে তারা অন্যের সাথে শরীক করতে থাকে)।

ওলী বুযুর্গ  নবীরা কাউকে সন্তান দিতে পারেন না, বরং তারাই সন্তান লাভের জন্য আল্লাহর নিকট হাত পাতেন :

(২১:৯০) ......আমাকে ডাকতো আশা ও ভীতি সহকারে এবং আমার সামনে ছিল অবনত হয়ে৷

(এই প্রেক্ষাপটে যে উদ্দেশ্যে নবীদের উল্লেখ করা হয়েছে তা আবার স্মৃতিপটে জাগিয়ে তুলুন। হযরত যাকারিয়ার (আ) ঘটনা উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে একথা হৃদয়ংগম করানো যে, এসকল নবীই ছিলেন নিছক বান্দা ও মানুষ ইলাহী সার্বভৌমত্বের সামান্যতম গন্ধও তাদের মধ্যে ছিল না। তারা অন্যদেরকে সন্তান দান করতেন না বরং নিজেরাই আল্লাহর সামনে সন্তানের জন্য হাত পাততেন। হযরত ইউনুসের কথা এ জন্য বলা হয়েছে যে, একজন মহিমান্বিত নবী হওয়া সত্ত্বেও যখন তিনি ভুল করে বসলেন তখন তাকে পাকড়াও করা হলো এবং যখন তিনি নিজের রবের সামনে অবনত হলেন তখন তাঁর প্রতি অনুগ্রহও এমনভাবে করা হয়েছে যে, মাছের পেট থেকে তাঁকে জীবিত বের করে আনা হয়েছে। হযরত আইয়ুবের উল্লেখ এ জন্য করা হয়েছে যে, নবীর বিপদে পড়া কোন অভিনব ব্যাপার নয় এবং নবীও যখন বিপদে পড়েন তখন একমাত্র আল্লাহরই সামনে ত্রাণের জন্য হাত বাড়িয়ে দেন। তিনি অন্যের ত্রাণকারী নন বরং আল্লাহর কাছে ত্রাণ ভিক্ষাকারী। তারপর এসব কথার সাথে সাথে একদিকে এ সত্যটি মনে বদ্ধমূল করতে চাওয়া হয়েছে যে, এ সকল নবীই ছিলেন তাওহীদের প্রবক্তা এবং নিজেদের প্রয়োজন তাঁরা এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো সামনে পেশ করতেন না আবার অন্যদিকে একথাও বুঝিয়ে দেয়া কাম্য যে, আল্লাহ হামেশা অস্বাভাবিকভাবে নিজের নবীদেরকে সাহায্য করতে থেকেছেন। শুরুতে তাঁর যতই পরীক্ষার সম্মুখীন হোন না কেন শেষ পর্যন্ত অলৌকিক পদ্ধতিতে তাঁদের প্রার্থনা পূর্ণ হয়েছে।)

আল্লাহর দেয়া রিজিক্বে শরীকদের জন্য অংশ নির্ধারণ :

(১৬:৫৬) এরা যাদের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে কিছুই জানে না, আমার দেয়া রিযিক থেকে তাদের অংশ নির্ধারণ করে আল্লাহর কসম, অবশ্যি তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, কেমন করে তোমরা এ মিথ্যা রচনা করেছিলে

 আল্লাহর জন্য সন্তান নির্ধারণ করা  : মারাত্নক শিরক :

(আরো দেখুন : স > সন্তান)

(১৯:৮৮) তারা বলে, রহমান কাউকে পুত্র গ্রহণ করেছেন-৮৯) মারাত্মক বাজে কথা যা তোমরা তৈরী করে এনেছো৷

(১৯:৯০) আকাশ ফেটে পড়ার, পৃথিবী বিদীর্ণ হবার এবং পাহাড় ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে ৯১) এজন্য যে, লোকেরা রহমানের জন্য সন্তান থাকার দাবী করেছে!  ৯২) কাউকে সন্তান গ্রহণ করা রহমানের জন্য শোভন নয়৷

(১৬:৫৭) এরা আল্লাহর জন্য নির্ধারণ করে কন্যা সন্তান,  সুবহানাল্লাহ ! এবং নিজেদের জন্য নির্ধারণ করে তাদের কাছে যা কাংখিত।  

(শিরক করার বেলায়ও মুশরিকরা স্বার্থবাদী, তারা আল্লাহর জন্য সন্তান নির্ধারণ করে, অথচ সন্তান নির্ধারণ করে কন্য সন্তান, যা তারা নিজেদের জন্য নির্ধারণ করে না, কারণ কারো কন্যা সন্তান হলে তাদেরকে তারা মাটিতে পুতে ফেলতে চায়)

(১৬:৫৮) যখন এদের কাউকে কন্যা সন্তান জন্মের সুখবর দেয়া হয় তখন তার চেহারা কালো হয়ে যায় এবং সে ভিতরে ভিতরে গুমরে মরতে থাকে৷৫৯) লোকদের থেকে লুকিয়ে ফিরতে থাকে, কারণ এ দুঃসংবাদের পর সে লোকদের মুখ দেখাবে কেমন করে৷ ভাবতে থাকে, অবমাননার সাথে মেয়েকে রেখে দেবে, না তাকে মাটিতে পুঁতে ফেলবে ? দেখো, কেমন খারাপ কথা যা এরা আল্লাহর ওপর আরোপ করে৷

(১৬:৬২) আজ এরা দুটি জিনিস আল্লাহর জন্য স্থির করছে যা এরা নিজেদের জন্য অপছন্দ করে৷ (একটা হলো আল্লাহর জন্য কন্যা সন্তান নির্ধারণ করা আরেকটি হলো আমরা অপরাধী হলে আল্লাহ আমাদের জন্য আযাব আসছে না কেন ?

(২১:২৬) এরা বলে, “করুণাময় সন্তান গ্রহণ করেন৷সুবহানাল্লাহ! তারা তো মর্যাদাশালী বান্দা৷ 

(এখানে আবার ফেরেশতাদেরই কথা বলা হয়েছে। আরবের মুশরিকরা তাদেরকে আল্লাহর মেয়ে গণ্য করতো। পরবর্তী ভাষণ থেকে একথা স্বতস্ফূর্তভাবে প্রকাশ হয়ে যায়।)

নৌকা যখন ডুবতে আরম্ভ করে তখন সমস্ত শিরক বিদায় নেয়, কিন্তু আল্লাহ পাড়ে ভিড়িয়ে দিলিয়ে পুনরায় শিরক করতে আরম্ভ করে :

(৩১-লোকমান: ৩২) আর যখন ( সমুদ্রে ) একটি তরঙ্গ তাদেরকে ছেয়ে ফেলে ছাউনির মতো তখন তারা আল্লাহকে ডাকে নিজেদের আনুগত্যকে একদম তাঁর জন্য একান্ত করে নিয়ে ৷ তারপর যখন তিনি তাদেরকে উদ্ধার করে স্থলদেশে পৌঁছিয়ে দেন তখন তাদের কেউ কেউ মাঝপথ বেছে নেয়,  আর প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতক ও অকৃতজ্ঞ ছাড়া আর কেউ আমার নিদর্শনাবলী অস্বীকার করে না৷ ৫৮  

৫৮ . এর আগের আয়াতে যে দুটি গুণের বর্ণনা এসেছে তার মোকাবিলায় এখানে এ দুটি দোষের উল্লেখ করা হয়েছে । বিশ্বাসঘাতক এমন এক ব্যক্তি যে মারাত্মক রকমের বেঈমানী করে এবং নিজের প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার পালন করে না। আর অকৃতজ্ঞ হচ্ছে এমন এক ব্যক্তি যার প্রতি যতই অনুগ্রহ করা হোক না কেন সে তা কখনোই স্বীকার করে না এবং নিজের অনুগ্রহকারীর প্রতি আগ্রাসী আচরণ করে। এসব দোষ যাদের মধ্যে পাওয়া যায় তারা বিপদ উত্তীর্ণ হবার পর নিসংকোচে নিজেদের কুফরী, নাস্তিকতা ও শিরকের দিকে ফিরে যায়। ঝড়-তুফানের সময় তারা আল্লাহর অস্তিত্বের এবং একক আল্লাহর অস্তিত্বের কিছু চিহ্ন ও নিদর্শন বাইরে ও নিজেদের মনের মধ্যেও পেয়েছিল এবং এ সত্যের স্বতস্ফুর্ত অনুভূতিই তাদেরকে আল্লাহর শরণাপন্ন হতে উদ্বুদ্ধ করেছিল একথা তারা মানতে চায় না। তাদের মধ্যে যারা নাস্তিক তারা তাদের এ কাজের যে ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে তা হচ্ছে এই যে, এ তো ছিল একটা দুর্বলতা। কঠিন বিপদের সময় অস্বাভাবিক অবস্থায় আমরা এ দুর্বলতার শিকার হয়েছিলাম। নয়তো আসলে আল্লাহ বলতে কিছুই নেই। ঝড়-তুফানের মুখ থেকে কোন আল্লাহ আমাদের বাঁচায়নি। অমুক অমুক কারণে ও উপায়ে আমরা বেঁচে গেছি। আর মুশরিকরা তো সাধারণভাবেই বলে থাকে, অমুক অমুক সাধুবাবা অথবা দেবী ও দেবতার ছায়া আমাদের মাথার ওপর ছিল। তাদের কল্যাণেই আমরা এ যাত্রায় রক্ষা পেয়েছি। কাজেই তীরে পৌঁছেই তারা নিজেদের মিথ্যা উপাস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে থাকে এবং তাদের দরজায় গিয়ে শিন্নী চড়াতে থাকে। তাদের মনে এ চিন্তার উদয়ই হয় না যে, যখন সবদিকের সব আশা-ভরসা-সহায় ছিন্ন ও নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল তখন একমাত্র এক লা-শরীক আল্লাহ ছাড়া আর কেউ ছিল না এবং তারই শরণাপন্ন তারা হয়েছিল।

বিস্তারিত দেখুন : ব > বিপদে পড়লে আল্লাহকে ডাকে আর বিপদ কেটে গেলেই আল্লাহকে ভুলে যায় ও শিরক করতে থাকে।

বিপদ পড়লে আল্লাহকে ডাকে আর বিপদ কেটে গেলেই আল্লাহকে ভুলে যায়  শিরক করতে থাকে: ( বিস্তারিত দেখূন :  > বিপদ > বিপদে পড়লে আল্লাহকে ডাকে আর.. )

(১৭:৬৭) যখন সাগরে তোমাদের ওপর বিপদ আসে তখন সেই একজন ছাড়া আর যাকে তোমরা ডাকো সবাই অন্তর্হিত হয়ে যায়৷ কিন্তু যখন তিনি তোমাদের রক্ষা করে স্থলদেশে পৌঁছিয়ে দেন তখন তোমরা তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে

(৩০-রূম: ৩৩) লোকদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, যখন তারা কোন কষ্ট পায় তখন নিজেদের রবের দিকে ফিরে তাকে ডাকতে থাকে ৫২   তাঁরপর যখন তিনি নিজের দয়ার কিছু স্বাদ তাদেরকে আস্বাদন করান তখন সহসা তাদের মধ্য থেকে কিছু লোক শিরকে লিপ্ত হয়ে যায়,৩৪) যাতে আমার অনুগ্রহের প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়৷ বেশ, ভোগ করে নাও, শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে৷  ৩৫) আমি কি তাদের কাছে কোন প্রমাণপত্র ও দলীল অবতীর্ণ করেছি, যা তাদের শিরকের সত্যতাঁর সাক্ষ্য দেয়৷ ৫৪  

৫২ . তাদের হৃদয়ের অভ্যন্তরে যে তাওহীদের প্রমাণ রয়ে গেছে একথাটিই তাঁর সুস্পষ্ট প্রমাণ। যেসব সহায়কের ভিত্তিতে আশার প্রাসাদ গড়ে উঠেছিল যখনই সেগুলো ভেঙে পড়তে থাকে তখনি তাদের অন্তর ভেতর থেকেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই বলে চিৎকার করতে থাকে যে, বিশ্ব-জাহানের মালিকই আসল শাসন কর্তৃত্বের অধিকারী এবং তাঁরই সাহায্যে তারা নিজেদের ধ্বংসরোধ ও ক্ষতিপূরণ করতে পারে। 

৫৩ . অর্থাৎ অন্যান্য উপাস্যদেরকে মানত ও নযরানা পেশ করার কাজ শুরু হয়ে যায়। এই সঙ্গে একথাও বলা হতে থাকে যে, ওমুক হযরতের বদৌলতে এবং ওমুক মাজারের অনুগ্রেহে এ বিপদ সরে গেছে। 

৫৪ . অর্থাৎ কোন যুক্তির ভিত্তিতে তারা একথা জানতে পারলো যে, আপদ-বিপদ থেকে আল্লাহ রক্ষা করেন না বরং এসব বানোয়াট উপাস্যরা রক্ষা করে থাকে৷ বুদ্ধিবৃত্তি কি এর সাক্ষ্য দেয়৷ অথবা আল্লাহর এমন কোন কিতাব আছে কি যার মধ্যে তিনি বলেছেন ,আমি আমার সাবর্ভৌম কর্তত্ব অমুক অমুক ব্যক্তিকে দিয়ে দিয়েছি, এখন থেকে তারাই তোমাদের সমস্ত কাজ করে দেবে ৷

আল্লাহ  ছাড়া আর যাদের ইবাদত করা হয়, সেই সমস্ত মাবুদদের  যারা ইবাদত করত তাদের উভয়কে জাহান্নামে প্রেরণ করা হবে, এর ব্যাখ্যা  :

(২১:৯৮) অবশ্যই তোমরা এবং তোমাদের যেসব মাবুদকে তোমরা পূজা করো, সবাই জাহান্নামের ইন্ধন, সেখানেই তোমাদের যেতে হবে৷৯৫ ৯৯) যদি তারা সত্যিই আল্লাহ হতো, তাহলে সেখানে যেতো না৷ এখন সবাইকে চিরদিন তারই মধ্যে থাকতে হবে৷১০০) সেখানে তারা হাঁসফাঁস করতে থাকবে  এবং তাদের অবস্থা এমন হবে যে, তারা কোনো কথা শুনতে পাবে না৷ 

(৯৫. হাদীসে বলা হয়েছে, এ আয়াতের ব্যাপারে আবদুল্লাহ ইবনুয যাবা'রা আপত্তি করে বলেন যে, এভাবে তো কোবলমাত্র আমাদেরই মাবুদরা জাহান্নামে যাবে না বরং ঈসা, উযাইর ও ফেরেশতারাও জাহান্নামে যাবে, কারণ দুনিয়ায় তাদেরও ইবাদাত করা হয়। এর জবাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

"হাঁ, এমন প্রত্যেক ব্যক্তি যে নিজে একথা পছন্দ করে যে, আল্লাহকে বাদ দিয়ে তার বন্দেগী করা হোক সে তাদেরকে সাথে হবে যারা তার বন্দেগী করেছে।"

এ থেকে জানা যায়, যারা দুনিয়ায় মানুষকে আল্লাহর বন্দেগী করার শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং লোকেরা তাদেরকেই উপাস্যে পরিণত করে অথবা যারা এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ বেখবর যে, দুনিয়ায় তাদের বন্দেগী ও পূজা করা হচ্ছে এবং এ কর্মে তাদের ইচ্ছা ও আকাংখার কোন দখল নেই, তাদের জাহান্নামে যাবার কোন কারণ নেই। কারণ, তারা এ শিরকের জন্য দায়ী নয়। তবে যারা নিজেরাই উপাস্য ও পূজনীয় হবার চেষ্টা করে এবং মানুষের এ শিরকে যাদের সত্যি সত্যিই দখল আছে তারা সবাই নিজেদের পূজারী ও উপাসকদের সাথে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অনুরূপভাবে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যকে মাবুদ হিসেবে দাঁড় করায় তারাও জাহান্নামে যাবে। কারণ, এ অবস্থায় তারাই মুশরিকদের আসল মাবুদ হিসেবে গণ্য হবে, এ দুর্বৃত্তরা বাহ্যত যাদেরকে মাবুদ হিসেবে দাঁড় করিয়েছিল তারা নয়। শয়তানও এর আওতায় এসে যায়। কারণ, তার উদ্যোগে যেসব সত্তাকে উপাস্যে পরিণত করা হয় আসল উপাস্য তারা হয় না। বরং আসল উপাস্য হয় শয়তান নিজেই। কারণ, তার হুকুমের আনুগত্য করে এ কাজটি করা হয়। এ ছাড়াও পাথর, কাঠের মূর্তি ও অন্যান্য পূজা সামগ্রীও মুশরিকদের সাথে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে যাতে তারা তাদের ওপর জাহান্নামের আগুন আরো বেশী করে জ্বালিয়ে দিতে সাহায্য করে। যাদের ব্যাপারে তারা আশা পোষণ করছিল যে, তারা তাদের সুপারিশকারী হবে, তারা উলটো তাদের আযাব কঠোরতর করার কারণে পরিণত হয়েছে দেখে তাদের কষ্ট আরো বেড়ে যাবে। আরো দেখুন : ম > মূর্তিপূজা, শ > শয়তান)

আরব বাসীদের শিরক এর স্বরূপ  এবং তার অন্তসার শূন্যতা :

(২৫.ফুরকান:৬৮) তারা আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্যকে ডাকে না, আল্লাহ যে প্রানকে হারাম করেছেন কেআন সংগত কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে নাএবং ব্যভিচার করে না৷ ৮৪ এসব যে-ই করে সে তার গোনাহের শাস্তি ভোগ করবে৷  

(৮৪. "অর্থাৎ আরববাসীরা যে তিনটি বড় গোনাহের সাথে বেশী করে জড়িত থাকে সেগুলো থেকে রহমানের বান্দারা দূরে থাকে। একটি হলো শির্ক, দ্বিতীয়টি অন্যায়ভাবে হত্যা করা এবং তৃতীয়টি যিনা। এ বিষয়বস্তুটিই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিপুল সংখ্যক হাদীসে বর্ণনা করেছেন। যেমন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বর্ণিত হাদীস। তাতে বলা হয়েছেঃ একবার নবীকে (সা) জিজ্ঞেস করা হলো, সবচেয়ে বড় গোনাহ কি৷ তিনি বললেন: أَنْ تَجْعَلَ لِلَّهِ نِدًّا وَهُوَ خَلَقَكَ "তুমি যদি কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ প্রতিদ্বন্দী দাঁড় করাও। অথচ আল্লাহই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।" জিজ্ঞেস করা হলো, তারপর৷ বললেন: َأَنْ تَقْتُلَ وَلَدَكَ تَخَافُ أَنْ يَطْعَمَ مَعَكَ"তুমি যদি তোমার সন্তানকে হত্যা কর এই ভয়ে যে সে তোমার সাথে আহারে অংশ নেবে।" জিজ্ঞেস করা হলো, তারপর৷ বললেন: أَنْ تُزَانِيَ حَلِيلَةَ جَارِكَ "তুমি যদি তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে যিনা কর।" (বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, নাসাঈ, আহমদ) যদিও আরো অনেক কবীরা গোনাহ আছে কিন্তু সেকালের আরব সমাজে এ তিনটি গোনাহই সবচেয়ে বেশী জেঁকে বসেছিল। তাই এক্ষেত্রে মুসলমানদের এ বৈশিষ্ট্য সুস্পষ্ট করে তুলে ধরা হয়েছিল যে, সমগ্র আরব সমাজে মাত্র এ গুটিকয় লোকই এ পাপগুলো থেকে মুক্ত আছে। 

এখানে প্রশ্ন করা যেতে পারে, মুশরিকদের দৃষ্টিতে তো শির্ক থেকে দূরে থাকা ছিল একটি মস্ত বড় দোষ, এক্ষেত্রে একে মুসলমানদের একটি প্রধান গুণ হিসেবে তাদের সামনে তুলে ধরার যৌক্তিকতা কি ছিল৷ এর জবাব হচ্ছে আরববাসীরা যদিও শিরকে লিপ্ত ছিল এবং এ ব্যাপারে তারা অত্যন্ত বিদ্বিষ্ট মনোভাবের অধিকারী ছিল কিন্তু আসলে এর শিকড় উপরিভাগেই সীমাবদ্ধ ছিল, গভীর তলদেশে পৌঁছেনি। দুনিয়ার কোথাও কখনো শিরকের শিকড় মানব প্রকৃতির গভীরে প্রবিষ্ট থাকে না। বরঞ্চ নির্ভেজাল আল্লাহ বিশ্বাসের মহত্ব তাদের মনের গভীরে শিকড় গেড়ে বসেছিল। তাকে উদ্দীপিত করার জন্য শুধুমাত্র উপরিভাগে একটুখানি আঁচড় কাটার প্রয়োজন ছিল। জাহেলিয়াতের ইতিহাসের বহুতর ঘটনাবলী এ দু'টি কথার সাক্ষ্য দিয়ে থাকে। যেমন আবরাহার হামলার সময় কুরাইশদের প্রত্যেকটি শিশুও জানতো যে, কাবাগৃহে রক্ষিত মূর্তিগুলো এ বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারবে না বরং একমাত্র এ গৃহের মালিক আল্লাহই এ বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারেন। হাতি সেনাদের ধ্বংসের পর সমকালীন কবিরা যে সব কবিতা ও কাসীদা পাঠ করেছিলেন এখনো সেগুলো সংরক্ষিত আছে। সেগুলোর প্রতিটি শব্দ সাক্ষ্য দিচ্ছে, তারা এ ঘটনাকে নিছক মহান আল্লাহর শক্তির প্রকাশ মনে করতো এবং এতে তাদের উপাস্যদের কোন কৃতিত্ব আছে বলে ভুলেও মনে করতো না। এ সময় কুরাইশ ও আরবের সমগ্র মুশরিক সমাজের সামনে শিরকের নিকৃষ্টতম পরাকাষ্ঠাও প্রদর্শিত হয়েছিল। আবরাহা মক্কা যাওয়ার পথে তায়েফের কাছাকাছি পৌঁছে গেলে তায়েফবাসীরা আবরাহা কর্তৃক তাদের "লাত" দেবতার মন্দির বিধ্বস্থ হওয়ার আশংকায় তাকে কাবা ধ্বংসের কাজে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছিল এবং পার্বত্য পথে তার সৈন্যদের নিরাপদে মক্কায় পৌঁছিয়ে দেবার জন্য পথ প্রদর্শকও দিয়েছিল। এ ঘটনার তিক্ত স্মৃতি কুরাইশদেরকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত মানসিকভাবে পীড়ন করতে থাকে এবং বছরের পর বছর তারা তায়েফের পথ প্রদর্শকের কবরে প্রস্তর নিক্ষেপ করতে থাকে। তাছাড়া কুরাইশ ও অন্যান্য আরববাসীরা নিজেদের দ্বীনকে হযরত ইবরাহীমের আনীত দ্বীন মনে করতো। নিজেদের বহু ধর্মীয় ও সামাজিক রীতিনীতি এবং বিশেষ করে হজ্জ্বের নিয়মকানুন ও রসম রেওয়াজকে ইবরাহীমের দ্বীনের অংশ গণ্য করতো। তারা একথাও মানতো যে, হযরত ইবরাহীম একমাত্র আল্লাহর বন্দেগী করতেন এবং তিনি কখনো মূর্তিপূজা করেননি। তাদের মধ্যে যেসব কথা ও কাহিনী প্রচলিত ছিল তাতে মূর্তি পূজার প্রচলন তাদের দেশে কবে থেকে শুরু হয়েছিল এবং কোন্ মূর্তিটি কে কবে কোথায় থেকে এনেছিলেন তার বিস্তারিত বিবরণ সংরক্ষিত ছিল। একজন সাধারণ আরবের মনে নিজের উপাস্য দেবতাদের প্রতি যে ধরনের ভক্তি-শ্রদ্ধা ছিল তা এভাবে অনুমান করা যেতে পারে যে, কখনো তার প্রার্থনা ও আশা-আকাংখা বিরোধী কোন ঘটনা ঘটে গেলে অনেক সময় নিজের উপাস্য দেবতাদেরকেই সে তিরষ্কার করতো, তাদেরকে অপমান করতো এবং তাদের সামনে নযরানা পেশ করতো না। একজন আরব নিজের পিতার হত্যাকারী থেকে প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছিল। 'যুল খালাসাহ' নামক ঠাকুরের আস্তানায় গিয়ে সে ধর্না দেয় এবং এ ব্যাপারে তার ভবিষ্যত কর্মপন্থা জানতে চায়। সেখান থেকে এ ধরনের কাজ না করার জবাব আসে। এত আরবটি ক্রুব্ধ হয়ে বলতে থাকে :

لو كنتَ يا ذا الخَلَص الموتورا ... مِثْلي وكان شيخُك المقبورا

لَمْ تنهَ عن قتل العُداة زُوراً ...

অর্থাৎ "হে যুল খালাস! তুমি যদি হতে আমার জায়গায় 
   
নিহত হতো যদি তোমার পিতা
   
তাহলে কখনো তুমি মিথ্যাচারী হতে না
 
বলতে না প্রতিশোধ নিয়ো না জালেমদের থেকে।"

অন্য একজন আরব তার উটের পাল নিয়ে যায় সা'দ নামক দেবতার আস্তানায় তাদের জন্য বরকত লাভ করার উদ্দেশ্যে। এটি ছিল একটি লম্বা ও দীর্ঘ মূর্তি। বলির পশুর চাপ চাপ রক্ত তার গায়ে লেপ্টেছিল। উটেরা তা দেখে লাফিয়ে ওঠে এবং চারিদিকে ছুটে পালিয়ে যেতে থাকে। আরবটি তার উটগুলো এভাবে চারিদিকে বিশৃংখলভাবে ছুটে যেতে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। সে মূর্তিটির গায়ে পাথর মারতে মারতে বলতে থাকে : "আল্লাহ তোর সর্বনাশ করুক। আমি এসেছিলাম বরকত নেবার জন্য কিন্তু তুই তো আমার এই বাকি উটগুলোকেও ভাগিয়ে দিয়েছিস।" অনেক মূর্তি ছিল যেগুলো সম্পকে বহু ন্যাক্কারজনক গল্প প্রচলিত ছিল। যেমন ছিল আসাফ ও নায়েলার ব্যাপার। এ দু'টি মূর্তি রতি ছিল সাফা ও মারওয়াও ওপর। এদের সম্পর্কে প্রচলিত ছিল যে, এরা দু'জন ছিল মূলত একজন পুরুষ ও একজন স্ত্রীলোক। এরা কাবাঘরের মধ্যে যিনা করে। ফলে আল্লাহ তাদেরকে পাথরে পরিণত করে দেন। যেসব দেবতার এ হচ্ছে আসল রূপ, তাদের পূজারী ও ভক্তদের মনে তাদের কোন যথার্থ মর্যাদা থাকতে পারে না। এসব দিক সামনে রাখলে এ কথা সহজে অনুধাবন করা যায় যে, আল্লাহর প্রতি নির্ভেজাল আনুগত্যের একটি সুগভীর মূল্যবোধ তাদের অন্তরের অন্তস্থলে বিরাজিত ছিল। কিন্তু একদিকে অন্ধ রক্ষণশীলতা তাকে দমিয়ে রেখেছিল এবং অন্যদিকে কুরাইশ পুরোহিতরা এর বিরুদ্ধে হিংসা ও বিদ্বেষ উদ্দীপিত করে তুলছিল। কারণ তারা আশংকা করছিল দেবতাদের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা খতম হয়ে গেলে আরবে তাদের যে কেন্দ্রীয় প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে তা খতম হয়ে যাবে এবং তাদের অর্থোপার্জনও বাধাগ্রস্থ হবে। এসব উপাদানের ভিত্তিতে যে মুশরিকী প্রতিষ্ঠিত ছিল তা তাওহীদের দাওয়াতের মোকাবিলায় কোন গুরুত্ব ও মর্যাদা সহকারে দাঁড়াতে পারতো না। তাই কুরআন নিজেই মুশরিদেরকে সম্বোধন করে উদাত্ত কণ্ঠে বলেছে : তোমাদের সমাজে যেসব কারণে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসারীরা শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে, তারা শির্কমুক্ত এবং নির্ভেজাল আল্লাহর বন্দেগী ও আনুগত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এদিক থেকে মুসলমানদের শ্রেষ্ঠত্বকে মুশরিকরা মুখে মেনে নিতে না চাইলেও মনে মনে তারা এর ভারীত্ব অনুভব করতো ।")

জিজ্ঞাসা : শিরককারী  শরীকদের প্রতি আল্লাহর পরকালীন জিজ্ঞাসা ও তাদের উত্তর :

শিরককারীদের প্রতি আল্লাহর পরকালীন জিজ্ঞাসা : ‍ তোমাদের শরীকরা কোথায় ?

(২৮-ক্বাছাছ : ৬২) আর (তারা যেন ভুলে না যায়) সে দিনটি যখন তিনি তাদেরকে ডাকবেন এবং জিজ্ঞেস করবেন, "কোথায় তারা যাদেরকে তোমরা আমার শরীক বলে মনে করতে?"

( আরো দেখুন : প > পরকাল > জিজ্ঞাসা। )

(১৬:২৭) তারপর কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন এবং তাদেরকে বলবেন, “বলো, এখন কোথায় গেলো আমার সেই শরীকরা যাদের জন্য তোমরা (সত্যপন্থীদের সাথে) ঝগড়া করতে  ?“

(২৮-ক্বাছাছ : ৭৪) .(তারা যেন স্মরণ রাখে) সেদিনে কথা যখন তিনি তাদেরকে ডাকবেন, তারপর তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, "কোথায় তারা যাদেরকে তোমরা আমার শরীক মনে করতে?

(২৮-ক্বাছাছ : ৭৫) আর আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্য থেকে একজন সাক্ষী বের করে আনবো তারপর শিরককারীদের বলবো, "আনো এবার তোমাদের প্রমাণগুলো৷"সেসময় তারা জানবে,সত্য রয়েছে আল্লাহর কাছে এবং তারা যা কিছু মিথ্যা বানিয়ে রেখেছিল তা সবই উধাও হয়ে যাবে৷

শরীকদের উত্তর : আমরা আমাদের অনুসারীদের থেকে দায়মুক্ত, এরা তো আমাদের বন্দেগী করতোনা, এরা এদের প্রবৃত্তির বন্দেগী করতো :

(২৮-ক্বাছাছ : ৬৩) এ উক্তি যাদের ওপর প্রযোজ্য হবে৮৬ তারা বলবে, "হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই এ লোকদেরকেই আমরা গোমরাহ করেছিলাম৷ এদেরকে ঠিক সেভাবেই গোমরাহ করেছিলাম যেভাবে আমরা নিজেরা গোমরাহ হয়েছিলাম৷ আমরা আপনার সামনে দায় মুক্তির কথা প্রকাশ করছি৷৮৭ এরা তো আমাদের বন্দেগী করতো না৷"৮৮ 

৮৬. এখানে জিন ও মানব জাতির শয়তানদের কথা বলা হয়েছে, যাদেরকে দুনিয়ায় আল্লাহর সাথে শরীক করা হয়েছিল, যাদের কথার মোকাবিলায় আল্লাহ ও রাসূলের কথা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল এবং যাদের ওপর ভরসা করে সরল সঠিক পথ পরিত্যাগ করে জীবনের ভুল পথ অবলম্বন করা হয়েছিল। এ ধরনের লোকদেরকে কেই ইলাহ ও রব বলুক বা না বলুক মোট কথা যখন তাদের আনুগত্য এমনভাবে করা হয়েছে যেমন আল্লাহর আনুগত্য হওয়া উচিত। তখন অবশ্যই তাদেরকে আল্লাহর সার্বভৌম কতৃর্ত্বে শরীক করা হয়েছে। (ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা আল কাহ্‌ফ ৫০ টীকা)

৮৭. আমরা জোর করে এদেরকে গোমরাহ করিনি। আমরা এদের দৃষ্টি ও শ্রবনশক্তি ছিনিয়ে নিইনি। এদের চিন্তা ও অনুধাবন শক্তিও কেড়ে নিইনি এবং এমন অবস্থারও সৃষ্টি করিনি যে, এরা সঠিক পথের দিকে যেতে চাচ্ছিল কিন্তু আমরা হাত ধরে টেনে জোর করে ভুল পথে নিয়ে গিয়েছিলাম। বরং আমরা যেমন স্বেচ্ছায় ভুলপথ অবলম্বন করেছিলাম, তেমনি এদের সামনেও আমরা ভুলপথ পেশ করেছিলাম এবং এরা স্বেচ্ছয় তা গ্রহন করেছিল। কাজেই আমরা এদের দায়িত্ব গ্রহন করছি না। আমরা নিজেদের কাজের জন্য দায়ী এবং এরা এদের নিজেদের কাজের জন্য দায়ী। 

এখানে একটি সূক্ষ্ম বিষয় প্রণিধানযোগ্য। সেটি হচ্ছে আল্লাহ যদিও প্রশ্ন করবেন যারা শরীক করতো তাদেরকে। কিন্তু তারা কিছু বলার আগেই জবাব দিতে আরম্ভ করবে তাদের সেই উপাসিতরা যাদেরকে শরীক করা হয়েছিল। এর কারণ হচ্ছে, যখন সাধারন মুশরিকদেরকে এ প্রশ্ন করা হবে তখন তাদের নেতৃবর্গ অনুভব করবে, এবার আমাদের সর্বনাশের পালা এসে গেছে এবং আমাদের সাবেক অনুসারীরা নিশ্চয়ই এবার বলতে শুরু করবে এরাই আমাদের পথভ্রষ্টতার জন্য মূলত দায়ী। তাই অনুসারীদের বলার আগেই তারা নিজেরাই এগিয়ে গিয়ে নিজেদের সাফাই পেশ করতে থাকবে।

৮৮. অর্থাৎ, এরা আমাদের নয় বরং এদের নিজেদেরই প্রবৃত্তির গোলাম হয়ে গিয়েছিল। 

(২৮-ক্বাছাছ : ৬৪) তারপর তাদেরকে বলা হবে, এবার তোমরা যাদেরকে শরীক বানিয়েছিলে তাদেরকে ডাকো৷ ৮৯ এরা তাদেরকে ডাকবে কিন্তু তারা এদের কোন জবাব দেবে না এবং এরা আযাব দেখে নেবে৷ হায়! এরা যদি হিদায়াত গ্রহণকারী হতো!  

৮৯. অর্থাৎ, তাদেরকে সাহায্যের জন্য ডাকো, দুনিয়ায় তোমরা তাদের প্রতি নির্ভর করে আমার কথা রদ করে দিয়েছিলে। এখন এখানে তাদেরকে আসতে, তোমাদের সাহায্য করতে বলো এবং তোমাদেরকে আযাব থেকে বাঁচাতে বলো।

কিয়ামতের দিন শরীকদের মিথ্যা শরীকানা উধাও হয়ে যাবে :

(২৮-ক্বাছাছ : ৭৫) ......এবং শিরককারীরা যা কিছু মিথ্যা বানিয়ে রেখেছিল তা সবই উধাও হয়ে যাবে৷

(বিস্তারিত দেখুন : উ > উধাও)

কিয়ামতের ময়দানে শিরককারী  শরীকদের পারস্পরিক কথাবার্তা :

(১৬:৮৬) আর দুনিয়ায় যারা শিরক করেছিল তারা যখন নিজেদের তৈরি করা শরীকদেরকে দেখবে তখন বলবে, “হে আমাদের রব ! এরাই হচ্ছে আমাদের তৈরি করা শরীক, যাদেরকে আমরা তোমাকে বাদ দিয়ে ডাকতাম৷” একথায় তাদের ঐ মাবুদরা তাদের পরিষ্কার জবাব দিয়ে বলবে, “তোমরা মিথ্যুক৷৮৭) সে সময় এরা সবাই আল্লাহর সামনে ঝুঁকে পড়বে এবং এদের সমস্ত মিথ্যা উদ্ভাবন হাওয়া হয়ে যাবে, যা এরা দুনিয়ায় করে বেড়াতো৷৮৮) যারা নিজেরাই কুফরীর পথ অবলম্বন করেছে এবং অন্যদেরকে আল্লাহর পথ থেকে ফিরিয়েছে তাদেরকে আমি আযাবের পর আযাব দেবো,  দুনিয়ায় তারা যে বিপর্যয় সৃষ্টি করতো তার বদলায়৷

(১৯:৮১) এরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজেদের কিছু খোদা বানিয়ে রেখেছে, যাতে যারা এদের পৃষ্ঠপোষক হয়৷৮২) কেউ পৃষ্ঠপোষক হবে না৷ তারা সবাই এদের ইবাদতের কথা অস্বীকার করবে এবং উল্টো এদের বিরোধী হয়ে পড়বে৷

সূরা মারয়ামে বলা হয়েছেঃ 

وَاتَخَذُوا من دون الله الهة لِّيَكُوْنوْا لهم عزََّ – كَلاًّ سَيَكفُرُون بعبَادتهِم وَيَكفرون عليهم ضدًا -

"তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে, যাতে তারা তাদের জন্য শক্তির মাধ্যম হয়। কখ্খনো না, শিগ্গিরই সে সময় আসবে যখন তারা তাদের পূজা-ইবাদত অস্বীকার করবে এবং উল্টো তাদের বিরোধী হয়ে যাবে।" (৮১-৮২ আয়াত) 

অর্থ কিয়ামতের দিন তারা তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে এবং পরিস্কার বলে দেবে, আমরা কখনো তাদেরকে আমাদের পূজা করতে বলিনি এবং তারা আমাদের পূজা করতো এ কথা আমরা জানিও না।

(২৮-ক্বাছাছ : ৬৪) তারপর তাদেরকে বলা হবে, এবার তোমরা যাদেরকে শরীক বানিয়েছিলে তাদেরকে ডাকো৷ ৮৯ এরা তাদেরকে ডাকবে কিন্তু তারা এদের কোন জবাব দেবে না এবং এরা আযাব দেখে নেবে৷ হায়! এরা যদি হিদায়াত গ্রহণকারী হতো!  

৮৯. অর্থাৎ, তাদেরকে সাহায্যের জন্য ডাকো, দুনিয়ায় তোমরা তাদের প্রতি নির্ভর করে আমার কথা রদ করে দিয়েছিলে। এখন এখানে তাদেরকে আসতে, তোমাদের সাহায্য করতে বলো এবং তোমাদেরকে আযাব থেকে বাঁচাতে বলো।

ইব্রাহীম মুশরিক ছিলেন না :

(১৬:১২০) প্রকৃতপক্ষে ইবরাহীম নিজেই ছিল একটি পরিপূর্ণ উম্মত, আল্লাহর হুকুমের অনুগত এবং একনিষ্ঠ৷ সে কখনো মুশরিক ছিল না৷

(১৬:১২৩) তারপর আমি তোমার কাছে এ মর্মে অহী পাঠাই যে, একাগ্র হয়ে ইবরাহীমের পথে চলো এবং সে মুশরিকদের দলভুক্ত ছিল না৷

আল্লাহকে বাদ দিয়ে মৃতদেরকে ডাকলে কি কোন লাভ হবে? 

(১৬:২০) আর আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য যেসব সত্তাকে লোকেরা ডাকে, তারা কোনো একটি জিনিসেরও স্রষ্টা নয় বরং তারা নিজেরাই সৃষ্টি৷২১) তারা মৃত, জীবিত নয় এবং তারা কিছুই জানে না তাদেরকে কবে (পুনর্বার জীবিত করে) উঠানো হবে৷

শিরক করা উচিৎ নয় কেন?

কারণ : দোয়ায় সাড়া দেয়ার ক্ষমতা শরীকদের নেই:

তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে ডাকো তারা তোমাদের মতই বান্দা : ৭:১৯৪,

দোয়ায় সাড়া দেয়ার ক্ষমতা শরীকদের নেই :৭:১৯৪

হেদায়েতের পথে ডাকলে শরীকরা ডাকে সাড়া দেয়না : ৭:১৯৩, ১৯৮

(৩৪-সাবা: ২২) (হে নবী! এ মুশরিকদেরকে) বল, আল্লাহকে বাদ দিয়ে যেসব মাবুদকে তোমরা নিজেদের উপাস্য মনে করে নিয়েছ তাদেরকে ডেকে দেখ৷ তারা না আকাশে কোন অনু পরিমাণ জিনিসের মালিক, না পৃথিবীতে৷ আকাশ ও পৃথিবীর মালিকানায় তারা শরীকও নয়৷ তাদের কেউ আল্লাহর সাহায্যকারীও নয়৷

মূর্তিরা তাদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলোও ব্যবহার করতে পারে না :৭:১৯৫, ১৯৮,

শরীকরা তোমাদেরকে সাহায্য করতে পারে না এমনকি নিজেরা নিজেদেরকেও সাহায্য করতে পারে না :৭:১৯৭, 

লোকেরা বলে, আল্লাহ কাউকে পুত্র বানিয়েছেন৷ সুবহানাল্লাহ -তিনি মহান-পবিত্র! তিনি তো অভাবমুক্ত৷ আকাশ  পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই তার মালিকানাধীন৷ একথার সপক্ষে তোমাদের কাছে কি প্রমাণ আছে? তোমরা কি আল্লাহর সপক্ষে এমন সব কথা বলো যা তোমাদের জানা নেই?  -১০:৬৮,

(২৬.শুআরা:৬৯) আর তাদেরকে ইবরাহীমের কাহিনী শুনিয়ে দাও, ৭০) যখন সে তার বাপ ও তার সম্প্রদায়কে জিজ্ঞেস করেছিল, "তোমরা কিসের পূজা করো?"৭১) তারা বললো, "আমরা কতিপয় মূর্তির পূজা করি এবং তাদের সেবায় আমরা নিমগ্ন থাকি৷৭২) সে জিজ্ঞেস করলো, "তোমরা যখন তাদেরকে ডাকো তখন কি তারা তোমাদের কথা শোনে?  ৭৩) অথবা তোমাদের কি কিছু উপকার বা ক্ষতি করে?"৭৪) তারা জবাব দিল, "না, বরং আমরা নিজেদের বাপ-দাদাকে এমনটিই করতে দেখেছি৷"

(২৬.শুআরা:৮২) তাঁর কাছে আমি আশা করি, প্রতিদান দিবসে তিনি আমার অপরাধ ক্ষমা করবেন৷"

(আল্লাহ ছাড়া অন্য কারে ইবাদাত যে ঠিক নয় এ হচ্ছে তার তৃতীয় কারণ। আল্লাহর সাথে মানুষের সম্পর্ক কেবলমাত্র এ দুনিয়া এবং এখানে সে যে জীবন যাপন করে তার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। অস্তিত্বের সীমানায় পা রাখার পর থেকে শুরু করে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার সাথে সাথেই তা খতম হয়ে যায় না। বরং এরপর তার পরিণামও পুরোপুরি ও পুরোপুরি আল্লাহরই হাতে আছে। আল্লাহই তাকে অস্তিত্ব দান করেছেন। সবশেষে তিনি তাকে দুনিয়া থেকে ফিরিয়ে নিয়ে যান। দুনিয়ায় এমন কোন শক্তি নেই যা মানুষের এ ফিরে যাওয়ার পথ রোধ করতে পারে । যে হাতটি মানুষকে এখান থেকে বের করে নিয়ে যায় আজ পর্যন্ত কোন ঔষধ , চিকিৎসক দেব-দেবীর হস্তক্ষেপ তাকে পাকড়াও করতে পারেনি। এমন কি মানুষের যে একদল মানুষকে উপাস্য বানিয়ে পূজা-আরাধনা করেছে তারা নিজেরাও নিজেদের মৃত্যুকে এড়াতে পারেনি। একমাত্র আল্লাহই ফায়সালা করেন, কোন ব্যক্তিকে কখন এ দুনিয়া থেকে ফিরিয়ে নেবেন এবং যখন যার তাঁর কাছ থেকে চলে যাবার সমন এসে যায় তখন ইচ্ছায় অনিচ্ছায় তাকে চলে যেতেই হয়। তারপর আল্লাহ একাই ফায়সালা করেন , দুনিয়ায় যেসব মানুষ জন্ম নিয়েছিল তাদের সবাইকে কখন পূর্ণবার জীবন দান করবেন এবং তাদের পৃথিবীর জীবনের কাজ-কারবারের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। তখনো মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবন থেকে কাউকে রেহাই দেয়া বা নিজে রেহাই পাওয়া কারো পক্ষে সম্ভব হবে না। প্রত্যেককে তাঁর হুকুমে উঠতেই হবে এবং তাঁর আদালতে হাজির হতেই হবে। তারপর সেই আল্লাহ একাই সেই আদালতের বিচারপতি হবেন। তাঁর ক্ষমতায় কেউ সামান্যতমও শরীক হবে না। শাস্তি দেয়া বা মাফ করা উভয়টিই হবে সম্পূর্ণ তাঁর ইখতিয়ারভুক্ত। তিনি যাকে শাস্তি দিতে চান কেউ তাকে ক্ষমা করার ক্ষমতা রাখে না। অথবা তিনি কাউকে ক্ষমা করতে চাইলে কেউ তাকে শাস্তি দিতে পারবে না। দুনিয়ায় যাদেরকে ক্ষমা করিয়ে নেবার ইখতিয়ার আছে বলে মনে করা হয় তারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষমার জন্য তাঁরই অনুগ্রহ ও দয়ার দুয়ারে ধর্ণা দিয়ে বসে থাকবে। এসব জাজ্বল্যমান সত্যের উপস্থিতিতে যে ব্যক্তি আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কারো বন্দেগী করে সে নিজেই নিজের অশুভ পরিণামের ব্যবস্থা করে। দুনিয়া থেকে নিয়ে আখেরাত পর্যন্ত মানুষের ভাগ্য পুরোপুরি ন্যস্ত থাকে আল্লাহর হাতে। আর সেই ভাগ্য গড়ার জন্য মানুষ এমন সব সত্তার আশ্রয় নেবে যাদের হাতে কিছুই নেই , এর চেয়ে বড় ভাগ্য বিপর্যয় আর কী হতে পারে । )

কারণ আকাশ  পৃথিবীতে শরীকদের কোন মালিকানা নেই : এবং তারা আল্লাহর সাহায্যকারীও নয় :  

(৩৪-সাবা: ২২) (হে নবী! এ মুশরিকদেরকে) বল, আল্লাহকে বাদ দিয়ে যেসব মাবুদকে তোমরা নিজেদের উপাস্য মনে করে নিয়েছ তাদেরকে ডেকে দেখ৷ তারা না আকাশে কোন অনু পরিমাণ জিনিসের মালিক, না পৃথিবীতে৷ আকাশ ও পৃথিবীর মালিকানায় তারা শরীকও নয়৷ তাদের কেউ আল্লাহর সাহায্যকারীও নয়৷

আল্লাহ যদি চাইতেন  তাহলে আমরা শিরক করতাম না :

আল্লাহর হুকুম ছাড়া গাছের পাতাও নড়েনা, শুতরাং, আল্লাহ চাইলে আমরা শিরক করতাম না :

(আনআম:১৪৮) এ মুশরিকরা (তোমাদের এসব কথার জবাবে) নিশ্চয়ই বলবে, যদি আল্লাহ চাইতেন তাহলে আমরা শিরকও করতাম না, আমাদের বাপ-দাদারাও শিরক করতো না৷ আর আমরা কোন জিনিসকে হারামও গণ্য করতাম না৷এ ধরনের উদ্ভট কথা তৈরী করে করে এদের পূর্ববর্তী লোকেরাও সত্যকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, এভাবে তারা অবশেষে আমার আযাবের স্বাদ গ্রহণ করেছে৷ এদেরকে বলে দাও, তোমাদের কাছে কোন জ্ঞান আছে কি ? থাকলে আমার কাছে পেশ করো৷ তোমরা তো নিছক অনুমানের ওপর চলছো এবং শুধুমাত্র ধারণা ও এ আন্দাজ করা ছাড়া তোমাদের কাছে আর কিছুই নেই ৷

(১৬:৩৫) এ মুশরিকরা বলে, “আল্লাহ চাইলে তাঁর ছাড়া আর কারো ইবাদাত আমরাও করতাম না, আমাদের বাপ-দাদারাও করতো না এবং তাঁর হুকুম ছাড়া কোনো জিনিসকে হারামও গণ্য করতো না৷” ৩০ এদের আগের লোকেরাও এমনি ধরনের বাহানাবাজীই চালিয়ে গেছে৷

(ব্যাখ্যা : এখানে প্রথম কথা বলা হয়েছে, নিজেদের অন্যায় কাজ ও গোমরাহীর জন্য আল্লাহর ইচ্ছাকে ওপর হিসেবে পেশ করা এবং এর বাহানা বানিয়ে সঠিক হেদায়াত ও পথনির্দেশ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানানো অপরাধীদের প্রাচীন রীতি হিসেবে চলে আসছে। এর পরিণামে দেখা গেছে অবশেষ তারা ধ্বংস হয়ে গেছে এবং সত্যের বিরুদ্ধে চলার অশুভ পরিণাম তারা স্বচক্ষে দেখে নিয়েছে। তারপর বলা হয়েছে, তোমরা যে ওযরটি পেশ করছো তার পেছনে প্রকৃত জ্ঞানগত ও তথ্যগত কোন ভিত্তি নেই। বরং আন্দাজ-অনুমানের ভিত্তিতে তোমরা এটি পেশ করছো। তোমরা নিছক কোথাও আল্লাহর ইচ্ছার কথা শুনতে পেয়েছো তারপর তার ওপর অনুমানের একটি বিরাট ইমারত দাঁড় করিয়ে দিয়েছো। মানুষের ব্যাপার আল্লাহর ইচ্ছা কি, একথা বুঝার চেষ্টাই তোমরা করোনি। তোমরা আল্লাহর ইচ্ছা বলতে মনে করছো, চোর যদি আল্লাহর ইচ্ছার অধীনে চুরি করেছে। অথচ মানুষের ব্যাপারে আল্লাহর ইচ্ছা হচ্ছে এই যে, সে কৃতজ্ঞতা ও কুফরী, হেদায়াত ও গোমরাহী এবং আনুগত্য ও অবাধ্যতার মধ্য থেকে যে পথটিই নিজের জন্য নির্বাচিত করবে, আল্লাহ তার জন্য সে পথটিই উন্মুক্ত করে দেবেন। তারপর মানুষ ন্যায়-অন্যায় ও ভুল-নির্ভুল যে কাজটিই করতে চাইবে, আল্লাহর নিজের বিশ্বব্যাপী কার্যক্রমের দৃষ্টিতে যতটুকু সংগত মনে করবেন তাকে সে কাজটি করার অনুমতি ও সুযোগ দান করবেন। কাজেই তোমরা ও তোমাদের বাপ-দাদারা আল্লাহর ইচ্ছার আওতাধীনে যদি শিরক ও পবিত্র জিনিসগুলোকে হারাম গণ্য করার সুযোগ লাভ করে থাকো তাহলে এর অর্থ কখনোই এ নয় যে, তোমরা নিজেদের এসব কাজের জন্য দায়ী নও এবং এর জন্য তোমাদের জওয়াবদিহি করতে হবে না। তোমরা নিজেরাই নিজেদের ভুল পথ নির্বাচন, ভুল সংকল্প গ্রহণ ও ভুল প্রচেষ্টার জন্য দায়ী।

সবশেষে একটি বাক্যের মধ্যে আসল কথাটি বলে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ বলা হয়েছে :

“যদি আল্লাহ চাইতেন তাহলে তোমাদের সবাইকে সঠিক পথ দেখাতেন৷”

নিজেদের ওযর পেশ করতে গিয়ে তোমরা এ মর্মে যে যুক্তিটির অবতারণা করেছো যে, "আল্লাহ চাইলে আমরা শির্‌ক করতাম না"। এর মাধ্যমে সম্পূর্ণ কথাটি ব্যক্ত হয়নি। সম্পূর্ণ কথাটি বলতে হলে এভাবে বলো: "আল্লাহ চাইলে তোমাদের সবাইকে হেদায়াত দান করতেন"। অন্য কথায় তোমরা নিজেরা নিজেদের নির্বাচনের মাধ্যমে সঠিক পথ গ্রহণ করতে প্রস্তুত নও। বরং তোমরা চাও, আল্লাহ যেভাবে ফেরেশতাদেরকে জন্মগতভাবে সত্যানুসারী বানিয়েছেন সেভাবে তোমাদেরকেও বানাতেন। মানুষের ব্যাপারে আল্লাহ এ ইচ্ছা করলে অবশ্যি করতে পারতেন। কিন্তু এটি তাঁর ইচ্ছা নয়। কাজেই নিজেদের জন্য তোমরা নিজেরাই যে গোমরাহীটি পছন্দ করে নিয়েছো আল্লাহ তার মধ্যেই তোমাদের ফেলে রাখবেন।)

শরীক (অর্থাৎ: যাদেরকে লোকেরা আল্লাহর সাথে শরীক করে : )

শরীকরা কোন কিছু সৃষ্টি করেনি, বরং তারা নিজেরাই সৃষ্ট : ৭:১৯১,

শরীকরা কাউকে সাহায্য করতে পারেনা, বরং তাদের নিজেদেরকেও সাহায্য করার ক্ষমতা তাদের নেই : ৭:১৯২,

১। আল্লাহ অন্যান্য শরীকদের জিজ্ঞাসা করবেন, আর শরীকরা তাদেরকে যে ইবাদত করা হয়েছে তা নাকচ করে দেবে :

(ফুরকান:১৭) আর সেইদিনই (তোমার রব) তাদেরও ঘিরে আনবেন এবং তাদের উপাস্যদেরও  আল্লাহকে বাদ দিয়ে আজ তারা যাদের পূজা করছে৷ তারপর তিনি তাদের জিজ্ঞেস করবেন, “তোমরা কি আমার এ বান্দাদের গোমরাহ করেছিলে? অথবা এরা নিজেরাই সহজ সরল সত্যপথ থেকে বিচ্যূত হয়ে পড়েছিল ?” ১৮) তারা বলবে, “পাক - পবিত্র আপনার সত্তা ! আপনাকে ছাড়া অন্য কাউকে আমাদের প্রভুরুপে গ্রহণ করার ক্ষমতাও তো আমাদের ছিল না কিন্তু আপনি এদের এবং এদের বাপ - দাদাদের খুব বেশী জীবনোপকরণ দিয়েছেন, এমকি এরা শিক্ষা ভুলে গিয়েছে এবং দুর্ভাগ্যপীড়িত হয়েছে৷১৯) এভাবে মিথ্যা সাব্যস্ত করবে তারা (তোমাদের উপাস্যরা) তোমাদের কথাগুলোকে যা আজ তোমরা বলছো, তারপর না তোমরা নিজেদের দুর্ভাগ্যকে ঠেকাতে পারবে , না পারবে কোথাও থেকে সাহায্য লাভ করতে এবং তোমাদের মধ্য থেকে যে-ই জুলুম করবে তাকে আমি কঠিন শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাবো৷

(২৮-ক্বাছাছ : ৬৩) এ উক্তি যাদের ওপর প্রযোজ্য হবে৮৬ তারা বলবে, "হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই এ লোকদেরকেই আমরা গোমরাহ করেছিলাম৷ এদেরকে ঠিক সেভাবেই গোমরাহ করেছিলাম যেভাবে আমরা নিজেরা গোমরাহ হয়েছিলাম৷ আমরা আপনার সামনে দায় মুক্তির কথা প্রকাশ করছি৷৮৭ এরা তো আমাদের বন্দেগী করতো না৷"৮৮   (ব্যাখ্যার জন্য দেখুন : ওপরে : শ > শরীকদের পরকালীন  চিত্র ও কথোপকথন) ৬৪) তারপর তাদেরকে বলা হবে, এবার তোমরা যাদেরকে শরীক বানিয়েছিলে তাদেরকে ডাকো৷ ৮৯ এরা তাদেরকে ডাকবে কিন্তু তারা এদের কোন জবাব দেবে না এবং এরা আযাব দেখে নেবে৷ হায়! এরা যদি হিদায়াত গ্রহণকারী হতো!  

৮৯. অর্থাৎ, তাদেরকে সাহায্যের জন্য ডাকো, দুনিয়ায় তোমরা তাদের প্রতি নির্ভর করে আমার কথা রদ করে দিয়েছিলে। এখন এখানে তাদেরকে আসতে, তোমাদের সাহায্য করতে বলো এবং তোমাদেরকে আযাব থেকে বাঁচাতে বলো।

২। শরীকরা কিয়ামতের ময়দানে তাদের অনুসারীদেরকে এবং তাদেরকে শরীক সাব্যস্ত করার কথা  অস্বীকার করবে :

আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের ইবাদত করা হয় সেই সমস্ত শরীকেরা কিয়ামতের ময়দানে বলবে “তোমরা আমাদের ইবাদত, করতে থাকলেও আমরা তোমাদের  ইবাদত সম্পর্কে কিছুই জানতাম না”-১০:২৮-২৯, শরীকরা তাদের অনুসারীদের ইবাদত সম্পর্কে অস্বীকার করবে । তাদের মধ্য থেকে অপরিচিতির পর্দা সরিয়ে দেয়া হবে। অর্থাৎ মুশরিকরা  তাদের উপাস্যরা সামনাসামনি অবস্থান করবে এবং উভয় দলের পরিচিতি উভয়ের কাছে সুষ্পষ্ট হয়ে যাবে। মুশরিকরা জানবে, এদেরকেই আমরা দুনিয়ায় মাবুদ বানিয়ে রেখেছিলাম। অন্যদিকে তাদের মাবুদরাও জানবে এরাই তাদেরকে মাবুদ বানিয়ে রেখেছিল -১০:২৮-২৯,

ইতিপূর্বে তোমরা যে আমাকে আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতা ও কতৃত্বের শরীক করেছিলে তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই, এ ধরনের জালেমদের জন্য তো যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি অবধারিত৷  -১৪:২২,

২। এবং শরীকরা তাদের অনুসারীদের ব্যাপারে যে কোন ধরণের সুপারিশ করতে অস্বীকার করবে অথবা সুপারিশ করার ক্ষমতাই পাবে না :

(৩০-রূম: ১৩) তাদের বানানো শরীকদের মধ্য থেকে কেউ তাদের সুপারিশ করবে না ১৬   এবং তারা নিজেদের শরীকদের অস্বীকার করবে৷ ১৭  

১৬ . তিন ধরনের সত্তার ওপর শরীক শব্দটির প্রয়োগ হয়। এক, ফেরেশতা, নবী , আউলিয়া , শহীদ ও পুণ্যবান লোক। মুশরিকরা বিভিন্ন যুগে এদেরকে আল্লাহর গুণাবলী ও ক্ষমতাঁর অধিকারী গণ্য করে এদের সামনে বন্দেগী ও পূজার যাবতীয় অনুষ্ঠান পালন করতো। কিয়ামতের দিন তারা পরিষ্কার বলে দেবে , এসব কিছু করেছো তোমরা আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বরং আমাদের শিক্ষা ও পথনির্দেশের সম্পূর্ণ বিরুদ্ধাচরণ করে। তাই তোমাদের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। তোমাদের শাফাআতের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে আমরা কিছূ আবেদন নিবেদন করবো, এ আশা আমাদের ব্যাপারে করো না। দুই, এমন সব জিনিস যেগুলোর চেতনা নেই অথবা প্রাণ নেই। যেমনঃ চাঁদ, সূর্য, তারকা, গাছ, পাথর ও পশু ইত্যাদি। মুশরিকরা তাদেরকে খোদায় পরিণত করে, এদের পূজা- উপাসনা করে এবং এদের কাছে প্রার্থনা নিবেদন করে।কিন্তু এই জড় ও নির্জীব জিনিসগুলো একথা জানতেই পারে না যে, আল্লাহর প্রতিনিধি মানুষ এসব নজরানা তাদের জন্য উৎসর্গ করছে। একথা সুস্পষ্ট যে, এদের মধ্যে একজনও তাদের সুপারিশের জন্য সামনে অগ্রসর হবে না। তিন, এমন সব বড় বড় অপরাধী যারা নিজেরাই চেষ্টা করে, ধোঁকা ও প্রতারণার পথ অবলম্বন করে, মিথ্যার জাল ছড়িয়ে দিয়ে অথবা শক্তি প্রয়োগ করে দুনিয়ায় আল্লাহর বান্দাদের থেকে নিজেদের বন্দেগী ও পূজা আদায় করে নিয়েছে। যেমন শয়তান, ভণ্ড ও ধর্মীয় নেতা এবং জালেম ও স্বৈরাচারী শাসনকর্তা ইত্যাদি। এরা সবাই সেখানে বিপদের শৃঙ্খলে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িতে থাকবে। নিজেদের এ ভক্তবৃন্দের সুপারিশের সামনে অগ্রসর হওয়া তো দূরের কথা বরং তারা নিজেদের আমলনামার বোঝা হালকা করার চেষ্টা করতে থাকবে। হাশরের ময়দানে তারা একথা প্রমাণ করার চেষ্টা করতে থাকবে যে, এদের অপরাধের জন্য এরা নিজেরাই দায়ী এবং এদের পথভ্রষ্টতাঁর জন্য আমাদের দুর্ভোগ পোহানো উচিত নয়। এভাবে মুশরিকরা সেখানে কোন দিক থেকে কোন প্রকার শাফাআত লাভ করতে সক্ষম হবে না।

১৭ . অর্থাৎ সে সময় মুশরিকরা একথা স্বীকার করবে যে, তাদেরকে আল্লাহর শরীক করে তারা ভুল করেছিল। প্রকৃতপক্ষে তাদের মধ্য থেকে কারো আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বে কোন অংশ নেই ,  সত্যটি তখন তাদের সামনে উন্মেচিত হয়ে যাবে। তাই দুনিয়ায় আজ তারা যে শিরকের ওপর টিকে থাকার জন্য চাপ দিচ্ছে আখেরাতে তাকেই অস্বীকার করবে।

৪। আল্লাহই সত্যের দিকে পথনির্দেশ করেন, অথচ শরীকদেরকে পথ না দেখালে তারা পথ পায়না :

তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, তোমাদের তৈরী করা শরীকদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি যে সত্যের দিকে পথনির্দেশ করে? বলো, একমাত্র আল্লাহই সত্যের দিকে পথনির্দেশ করেন, তাহলে বলো, যিনি সত্যের দিকে পথনির্দেশ করেন তিনি আনুগত্য লাভের বেশী হকদার না যাকে পথ না দেখলে পথ পায় না- সে বেশী হকদার? তোমাদের হয়েছে কি? কেমন উল্টো সিদ্ধান্ত করে বসছো?-১০:৩৫,   

৫। সৃষ্টির সূচনা  পুনরাবৃত্তি করেন আল্লাহ্, তাহলে মধ্যখানে শরীকদের ইবাদত কেন করা হবে?

তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, তোমাদের তৈরী করা, শরীকদের মধ্যে কেউ আছে কি যে সৃষ্টির সুচনা করে আবর তার পুনরাবৃত্তিও করে? -বলো, একমাত্র আল্লাহই সৃষ্টির সূচনা করেন এবং তার পুনরাবৃত্তির ঘটান, কাজেই তোমরা কোন উল্টো পথে চলে যাচ্ছো ? -১০:৩৪,

৬। আকাশ  পৃথিবীতে শরীকদের কোন মালিকানা নেই : এবং তারা আল্লাহর সাহায্যকারীও নয় :  

(৩৪-সাবা: ২২) (হে নবী! এ মুশরিকদেরকে) বল, আল্লাহকে বাদ দিয়ে যেসব মাবুদকে তোমরা নিজেদের উপাস্য মনে করে নিয়েছ তাদেরকে ডেকে দেখ৷ তারা না আকাশে কোন অনু পরিমাণ জিনিসের মালিক, না পৃথিবীতে৷ আকাশ ও পৃথিবীর মালিকানায় তারা শরীকও নয়৷ তাদের কেউ আল্লাহর সাহায্যকারীও নয়৷

: কারণ : দোয়ায় সাড়া দেয়ার ক্ষমতা শরীকদের নেই:

ক্লিক করুন : কারণ : দোয়ায় সাড়া দেয়ার ক্ষমতা শরীকদের নেই:

শিরক : কর্মগত শিরক :

১। সার্বভৌমত্ব ক্ষমতায় আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে শরীক করা হলো কর্মগত শিরক :

ইতিপূর্বে তোমরা যে আমাকে আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতা ও কতৃত্বের শরীক করেছিলে  তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই, এ ধরনের জালেমদের জন্য তো যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি অবধারিত৷- ১৪:২২,

(ব্যাখ্যা : এখানে আবার বিশ্বাসগত শিরকের মোকাবিলায় শিরকের একটি স্বতন্ত্র ধারা অর্থাৎ কর্মগত শিরকের অস্তিত্বের একটি প্রমাণ পাওয়া যায়। একথা সুস্পষ্ট, বিশ্বাসগত দিক গিয়ে শয়তানকে কেউই আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতা ও কর্তৃত্বে শরীক করে না এবং কেউ তার পূজা, আরাধনা ও বন্দেগী করে না। সবাই তাকে অভিশাপ দেয়। তবে তার আনুগত্য ও দাসত্ব এবং চোখ বুজে বা খুলে তার পদ্ধতির অনুসরণ অবশ্যি করা হচ্ছে। এটিকেই এখানে শিরক বলা হয়েছে। কেউ বলতে পারেন, এটা তো শয়তানের উক্তি, আল্লাহ এটা উদ্ধৃত করেছেন মাত্র। কিন্তু আমরা বলবো, প্রথমত তার বক্তব্য যদি ভুল হতো তাহলে আল্লাহ নিজেই তার প্রতিবাদ করতেন। দ্বিতীয়ত কুরআনে কর্মগত শিরকের শুধু এ একটিমাত্র দৃষ্টান্ত নেই বরং পূর্ববর্তী সূরাগুলোয় এর একাধিক প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং সামনের দিকে আরো পাওয়া যাবে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ইহুদী ও খৃস্টানদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগঃ তারা আল্লাহ ছাড়া নিজেদের "আহবার" (উলামা) ও "রাহিব"দেরকে (সংসার বিরাগী সন্যাসী) রব হিসেবে গ্রহণ করেছে। জাহেলিয়াতে আচার অনুষ্ঠান উদ্ভাবনকারীদের সম্পর্কে একথা বলাঃ তাদের অনুসারীরা তাদেরকে আল্লাহর সাথে শরীক করে নিয়েছে। [ আল আন' আমঃ ১৩৭ ] প্রবৃত্তির কামনা বাসনার পূজারীদের সম্পর্কে বলাঃ তারা নিজেদের প্রবৃত্তির কামনা বাসনাকে ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে। (আল ফুরকানঃ ৪৩) নাফরমান বান্দাদের সম্পর্কে এ উক্তিঃ তারা শয়তানের ইবাদাত করতে থেকেছে। (ইয়াসীনঃ ৬০) মানুষের গড়া আইন অনুযায়ী জীবন যাপন কারীদেরকে এ বলে র্ভৎসনা করাঃ আল্লাহর অনুমতি ছাড়া যারা তাদের জন্য শরীয়াত প্রণয়ন করেছে তারা হচ্ছে তাদের "শরীক"। (আশ-শূরাঃ ২১) এগুলো সব কি কর্মগত শিরকের নজীর নয়৷ এ নজীরগুলো থেকে একথা পরিষ্কার জানা যায় যে, কোন ব্যক্তি আকীদাগতভাবে কোন গাইরুল্লাহকে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব শরীক করলো, শিরকের শুধুমাত্র এ একটিই আকৃতি নেই এর আর একটি আকৃতিও আছে। সেটি হচ্ছে, আল্লাহর অনুমোদন ছাড়াই অথবা আল্লাহর বিধানের বিপরীত কোন গাইরুল্লাহর অনুসরণ ও আনুগত্য করতে থাকা। এ ধরনের অনুসারী বা আনুগত্যকারী যদি নিজের নেতার বা যার আনুগত্য করছে তার ওপর লানত বর্ষণ করা অবস্থায়ও কার্যত এ আনুগত্যের নীতি অবলম্বন করে তাহলে কুরআনের দৃষ্টিতে সে তাকে আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের শরীক করছে। শরীয়াতের দৃষ্টিতে আকীদাগত মুশরিকদের জন্য যে বিধান তাদের জন্য সেই একই বিধান না হলেও তাতে কিছু আসে যায় না। )

(৩০-রূম: ১৩)....এবং তারা নিজেদের শরীকদের অস্বীকার করবে৷ ১৭

১৭ . অর্থাৎ সে সময় মুশরিকরা একথা স্বীকার করবে যে, তাদেরকে আল্লাহর শরীক করে তারা ভুল করেছিল। প্রকৃতপক্ষে তাদের মধ্য থেকে কারো আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বে কোন অংশ নেই ,  সত্যটি তখন তাদের সামনে উন্মেচিত হয়ে যাবে। তাই দুনিয়ায় আজ তারা যে শিরকের ওপর টিকে থাকার জন্য চাপ দিচ্ছে আখেরাতে তাকেই অস্বীকার করবে। 

শিরক  মুশরিক :

(৩০-রূম: ৩১).............এমন মুশরিকদের অন্তরভুক্ত হয়ে যেয়ো না,   (৩০-রূম: ৩২) যারা নিজেদের আলাদা আলাদা দীন তৈরি করে নিয়েছে আর বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে ৷ প্রত্যেক দলের কাছে যা আছে তাতেই তারা মশগুল হয়ে আছে৷

(৩০-রূম: ৪২) (হে নবী !) তাদেরকে বলে দাও, পৃথিবীর বুকে পরিভ্রমণ করে দেখো পূর্ববর্তী লোকদের পরিণাম কি হয়েছে! তাদের অধিকাংশই মুশরিক ছিল৷

আমানততথা আল্লাহর খিলাফত- কে অস্বীকার কারী মুশরিক  :

(৩৩-আহযাব: ৭২) আমি এ আমানতকে আকাশসমূহ, পৃথিবী ও পর্বতরাজির ওপর পেশ করি, তারা একে বহন করতে রাজি হয়নি এবং তা থেকে ভীত হয়ে পড়ে৷ কিন্তু মানুষ একে বহন করেছে, নিসন্দেহে সে বড় জালেম ও অজ্ঞ৷১২০  ৭৩) এ আমানতের বোঝা উঠাবার অনির্বায ফল হচ্ছে এই যে, আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ ও নারী এবং মুশরিক পুরুষ ও নারীদেরকে সাজা দেবেন এবং মু’মিন পুরুষ ও নারীদের তাওবা কবুল করবেন, আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়৷  

(ব্যখ্যার জন্য দেখুন : আ >  আমানত  > আমনত কে খিলাফত বলা হয়েছে )

ক্লিক করুন : আমানতশব্দের অর্থ যেখানে খিলাফত 

 

শিরক  পিতা মাতা :

শিরক সবচেয়ে বড় পাপ : এমনকি পিতা মাতার অবাধ্য হতে হবে যদি পিতা মাতা শিরক করার জন্য বাধ্য করে : তখন পিতা মাতার কথা মান্য করা যাবে না :  

(২৯-আনকাবুত:৮) আমি মানুষকে নিজের পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছি৷ কিন্তু যদি তারা তোমার ওপর চাপ দেয় যে, তুমি এমন কোন (মা’বুদকে ) আমার সাথে শরীক করো যাকে তুমি (আমার শরীক হিসেবে)জানো না, তাহলে তাদের আনুগত্য করো না৷ ১১   আমার দিকেই তোমাদের সবাইকে ফিরে আসতে হবে, তখন আমি তোমাদের জানাবো তোমরা কি করছিলে ৷

১১ . এ আয়াতটি সম্পর্কে মুসলিম, তিরমিযী, আহমাদ, আবু দাউদ ও নাসাঈর বর্ণনা হচ্ছে, এটি হযরত সা'দ ইবনে আবি ওয়াককাস এর ব্যাপারে নাযিল হয়। তার বয়স যখন আঠারো উনিশ বছর তখন তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তার মা হামনা বিনতে সুফিয়ান (আবু সুফিয়ানের ভাইঝি) যখন জানতে পারে যে. তার ছেলে মুসলমান হয়ে গেছে তখন সে বলে, যতক্ষণ না তুমি মুহাম্মদকে অস্বীকার করবে ততক্ষণ আমি কিছুই পানাহার করবো না এবং ছায়াতেও বসবো না। মায়ের হক আদায় করা তো আল্লাহর হুকুম। কাজেই তুমি আমার কথা না মানলে আল্লাহরও নাফরমানী করবে। একথায় হযরত সা'দ অত্যন্ত পেরেশান হয়ে পড়েন। তিনি রসূলুল্লাহ (সা) এর দরবারে হাজির হয়ে নিজের ঘটনা বর্ণনা করেন। এ ঘটনায় এ আয়াত নাযিল হয়। মক্কা মুআযযামার প্রথম যুগে যেসব যুবক ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন হতে পারে তারাও একই ধরনের অবস্থার মুখোমুখি হয়েছিলেন। তাই সূরা লুকমানেও পূর্ণ শক্তিতে এ বক্তব্যটির পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে।

আলোচ্য সূরার ১৫ আয়াতের বলা হয়েছে, সৃষ্ট জীবের মধ্যে মানুষের মধ্যে মানুষের ওপর মা-বাপের হক হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু সেই মা- বাপই যদি মানুষকে শিরক করতে বাধ্য করে তাহলে তাদের কথা মেনে নেয়া উচিত নয়। কাজেই এ ক্ষেত্রে অন্য কারো কথায় মানুষের এ ধরনের শিরক করার কোন প্রশ্নই ওঠে না। তারপর শব্দগুলি হচ্ছেঃ 'ওয়া ইন জাহাদাকা' অর্থাৎ যদি তারা দু'জন তোমাকে বাধ্য করার জন্য তাদের পূর্ণশক্তি নিয়োগ করে । এ থেকে জানা গেল , কম পর্যায়ের চাপ প্রয়োগ বা বাপ-মায়ের মধ্য থেকে কোন একজনের চাপ প্রয়োগ আরো সহজে প্রত্যাখান করার যোগ্য। এই সঙ্গে -------"যাকে তুমি আমার শরীক হিসেবে জানো না" বাক্যাংশটিও অনুধাবনযোগ্য। এর মধ্যে তাদের কথা না মানার সপক্ষে একটি শক্তিশালী যুক্তি প্রদান করা হয়েছে। অবশ্যই এটা পিতা-মাতার অধিকার যে, ছেলেমেয়েরা তাদের সেবা করবে, তাদেরকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করবে এবং বৈধ বিষয়ে তাদের কথা মেনে চলবে। কিন্তু তাদেরকে এ অধিকার দেয়া হয়নি যে, মানুষ নিজের জ্ঞানের বিরুদ্ধে তাদের অন্ধ অনুসরণ করবে। শুধমাত্র বাপ-মায়ের ধর্ম বলেই তাদের ছেলে বা মেয়ের সেই ধর্ম মেনে চলার কোন কারণ নেই। সন্তান যদি এ জ্ঞান লাভ করে যে, তার বাপ-মায়ের ধর্ম ভুল ও মিথ্যা তাহলে তাদের ধর্ম পরিত্যাগ করে তার সঠিক ধর্ম গ্রহণ করা উচিত এবং তাদের চাপ প্রয়োগের পরও যে পথের ভ্রান্তি তার কাছে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে সে পথ অবলম্বন করা তার উচিত নয়। বাপ-মায়ের সাথে যখন এ ধরনের ব্যবহার করতে হবে তখন দুনিয়ার প্রত্যেক ব্যক্তির সাথেও এ ব্যবহার করা উচিত। যতক্ষণ না কোন ব্যক্তির সত্য পথে থাকা সম্পর্কে জানা যাবে ততক্ষণ তার অনুসরণ করা বৈধ নয়।

সূর্য পূজা / চন্দ্র পূজার অসারতা প্রমাণ :

বিস্তারিত দেখুন : স > সূর্য পূজা ।

আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য গ্রহণ করা উচিত নয় কেন ? কারণ, আল্লাহ- সত্য, আর সমস্ত উপাস্য মিথ্যা :

(৩১-লোকমান: ৩০) এ সবকিছু এ কারণে যে, আল্লাহই হচ্ছেন সত্য ৫২   এবং তাকে বাদ দিয়ে অন্য যেসব জিনিসকে এরা ডাকে তা সবই মিথ্যা, ৫৩   আর ( এ কারণে যে, ) আল্লাহই সমুচ্চ ও শ্রেষ্ঠ৷ ৫৪  

৫২ . অর্থাৎ প্রকৃত সার্বভৌম ক্ষমতাধর কর্তা , সৃষ্টি ও পরিচালনা ব্যবস্থাপনার আসল ও একচ্ছত্র মালিক। 

৫৩ . অর্থাৎ তারা সবাই নিছক তোমাদের কাল্পনিক খোদা। তোমরা কল্পনার জগতে বসে ধারণা করে নিয়েছো যে, অমুকজন আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতার অংশীদার এবং অমুক মহাত্মা সংকট নিরসন ও অভাব মোচন করার ক্ষমতা রাখেন। অথচ প্রকৃতপক্ষে তাদের কেউ কোন কিছুই করার ক্ষমতা রাখে না। 

৫৪ . অর্থাৎ প্রত্যেকটি জিনিসের উর্ধে এবং সবার শ্রেষ্ঠ । তার সামনে সব জিনিসই নিচু। প্রত্যেকের চেয়ে তিনি বড় এবং সবাই তার সামনে ছোট। 

(আরো দেখুন : স > সত্য > আল্লাহ হচ্ছেন সত্য। )

সমুদ্রে যখন নৌযান জাহাজ ইত্যাদি ডুবতে শুরু করে তখন কট্টর মুশরিকও বুঝে ফেলে আল্লাহ মাত্র একজনই:

(৩১-লোকমান: ৩১) তুমি কি দেখো না সমুদ্রে নৌযান চলে আল্লাহর অনুগ্রহে , যাতে তিনি তোমাদের দেখাতে পারেন তার কিছু নিদর্শন৷

৫৫ . অর্থাৎ এমন নিদর্শনাবলী দেখাতে চান যা থেকে জানা যায় একমাত্র সর্বশক্তিমান আল্লাহই সমস্ত ক্ষমতার মালিক। মানুষ যতই বিপুল ক্ষমতাসম্পন্ন ও সমুদ্র যাত্রার উপযোগী জাহাজ নির্মাণ করুক এবং জাহাজ পরিচালনা বিদ্যা ও তার সাথে সম্পর্কিত তথ্য জ্ঞান্তঅভিজ্ঞতায় যতই যতই পারদর্শী হোক না কেন সমুদ্রে তাকে যেসব ভয়ংকর শক্তির সম্মুখীন হতে হয় আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া সেগুলোর মোকাবিলায় সে একা নিজের দক্ষতা ও কৌশলের ভিত্তিতে নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে সফর করতে পারে না। তার অনুগ্রহ দৃষ্টি সরে যাবার সাথে সাথেই মানুষ জানতে পারে তার উপায়-উপকরণ ও কারিগরী পারদর্শিতা কতটা অর্থহীন ও অকেজো । অনুরূপভাবে নিরাপদ ও নিশ্চিত অবস্থায় মানুষ যতই কট্টর নাস্তিক ও মুশরিক হোক না কেন, সমুদ্রে তুফানে যখন তার নৌযান ডুবে যেতে থাকে তখন নাস্তিকও জানতে পারে আল্লাহ আছেন এবং মুশরিকও জেনে ফেলে আল্লাহ মাত্র একজনই।

পিতা মাতা শিরক করার জন্য চাপ প্রয়োগ করলে তাদের কথা মানা যাবেনা, তবে তাদের সাথে ভালো ব্যবহার অক্ষুন্ন রাখতে হবে : অর্থাৎ, এমনকি পিতা মাতা যদি মুশরিকও হয় তবুও তাদের সাথে ভালো আচরণ করতে হবে:

(৩১-লোকমান: ১৫) কিন্তু যদি তারা তোমার প্রতি আমার সাথে এমন কাউকে শরীক করার জন্য চাপ দেয় যাকে তুমি জানো না,   তাহলে তুমি তাদের কথা কখনোই মেনে নিয়ো না৷ দুনিয়ায় তাদের সাথে সদাচার করতে থাকো কিন্তু মেনে চলো সে ব্যক্তির পথ যে আমার দিকে ফিরে এসেছে৷ তারপর তোমাদের সবাইকে ফিরে আসতে হবে আমারই দিকে৷  সে সময় তোমরা কেমন কাজ করছিলে তা আমি তোমাদের জানিয়ে দেবো৷

শীঘ্রই :

শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে 

(১৬:৫৫).....বেশ, ভোগ করে নাও শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে৷

শয়তান :

(১৯:৬৮) তোমার রবের কসম আমি নিশ্চয়ই তাদেরকে এবং তাদের সাথে শয়তানদেরকেও ঘেরাও করে আনবো, তারপর তাদেরকে এনে জাহান্নামের চারদিকে নতজানু করে ফেলে দেবো৷  ৬৯) তারপর প্রত্যেক দলের মধ্যে যে ব্যক্তি করুণাময়ের বেশী অবাধ্য ও বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল তাকে ছেঁটে বের করে আনবো৷৬৯) তারপর প্রত্যেক দলের মধ্যে যে ব্যক্তি করুণাময়ের বেশী অবাধ্য ও বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল তাকে ছেঁটে বের করে আনবো৷৭০) তারপর আমি জানি তাদের মধ্য থেকে কারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবার বেশী হকদার৷

(১৯:৮৩) তুমি কি দেখো না আমি এ সত্য অস্বীকারকারীদের উপর শয়তানদের ছেড়ে রেখেছি, যারা এদেরকে (সত্য বিরোধিতায়) খুব বেশী করে প্ররোচনা দিচ্ছে?  

শয়তানের পদাংক অনুসরণ :

(নূর:২১) হে ঈমানদানগণ ! শয়তানের পদাংক অনুসরণ করে চলো না ৷

শয়তানের উস্কানি থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইতে হবে :

(মু’মিনুন:৯৭) আর দোয়া করো, ‘‘হে আমার রব! আমি শয়তানদের উস্কানি থেকে তোমার আশ্রয় চাই৷  ৯৮) এমনকি হে ! পরওয়ারদিগার, সে আমার কাছে আসুক এ থেকেও তো আমি তোমার আশ্রয় চাই” ৷

(বিশেষ করে যারা দাওয়াতী কাজ করবেন, তখন সুন্দর বিতর্ক করার সময় এ বিষয়টি ভালো ভাবে খেয়াল রাখতে হবে, এবং শয়তানের উস্কানি থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইতে হবে। )

তোমরা কি জানো শয়তান কার উপর নাযিল হয় ?  (গণক ও মিথ্যাবাদীদের উপর):

(২৬.শুআরা:২২১) হে লোকেরা! আমি তোমাদের জানাবো শয়তানরা কার উপর অবতীর্ণ হয়?  ২২২) তারা তো প্রত্যেক জালিয়াত বদকারের উপর অবতীর্ণ হয়৷২২৩) শোনা কথা কানে ঢুকিয়ে দেয় এবং এর বেশির ভাগই হয় মিথ্যা৷

(একটি হাদীসে এর আলোচনা এসেছে। হাদীসটি বুখারী শরীফে আয়েশার (রা) বর্ণনায় উদ্ধৃত হয়েছে। তাতে আয়েশা (রা) বলেনঃ কোন কোন লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গণকদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। জবাবে তিনি বলেন ,ওসব কিছুই নয়। তারা বলে , হে আল্লাহর রসূল ! কখনো কখনো তারা তো আবার ঠিক সত্যি কথাই বলে দেয়। রসূলুল্লাহ (সা) বলেন, সত্যি কথাটা কখনো কখনো জিনেরা নিয়ে আসে এবং তাদের বন্ধুদের কানে ফুঁকে দেয় তারপর তারা তার সাথে নানা রকম মিথ্যার মিশ্রণ ঘটিয়ে একটি কাহিনী তৈরী করে।)

ইবলিশ শব্দের অর্থ “হতাশ” :  

(মু’মিনুন:৭৭) তবে যখন অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যাবে যে, আমি তাদের জন্য কঠিন আযাবের দরজা খুলে দেবো তখন অকস্মাত তোমরা দেখবে যে, এ অবস্থায় তারা সকল প্রকার কল্যাণ থেকে হতাশ হয়ে পড়েছে ৷ ৭৩  

(৭৩ . মূলে ----- শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। হতাশা শব্দটি এর পূর্ণ অর্থ প্রকশ করে না। ---------- শব্দের কয়েকটি অর্থ হয়। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাওয়া, ভয়ে ও আতংকে নিথর হয়ে যাওয়া, দুঃখে ও শোকে মনমরা হয়ে যাওয়া, সবদিক থেকে নিরাশ হয়ে সাহস হারিয়ে ফেলা এবং এরি একটি দিক হতাশা ও ব্যর্থতার ফলে মরিয়া (Desperate) হয়ে ওঠা। এ কারণেই শয়তানের নাম ইবিলস রাখা হয়েছে। এ নামের মধ্যে যে অর্থ প্রচ্ছন্ন রয়েছে তা হলো, হতাশা ও নিরাশার (Frustration) ফলে তার আহত অহমিকা এত বেশী উত্তেজিত হয়ে পড়ে যে, এখন সে প্রাণের মায়া ত্যাগ করে মরণ খেলায় নামতে এবং সব ধরণের অপরাধ অনুষ্ঠানে উদ্যত হয়েছে।) 

(৩৪-সাবা: ২০) তাদের ব্যাপারে ইবলিস তার ধারণা সঠিক পেয়েছে এবং একটি ক্ষুদ্র মুমিন দল ছাড়া বাকি সবাই তারই অনুসরণ করছে৩৫

ইবলিসকে সৃষ্টি করার কারণ কি ? কারণ আল্লাহ পরীক্ষা করে দেখতে চান কে মান্যকারী আর কে পরকালকে অবিশ্বাস করে : কারণ ইবলিস তাকেই ধোকা দিতে পারে যে পরকালের ব্যাপারে সন্দিহান

(৩৪-সাবা: ২১) তাদের ওপর ইবলিসের কোন কর্তৃত্ব ছিল না৷ কিন্তু যা কিছু হয়েছে যে, আমি দেখতে চাচ্ছিলাম কে পরকাল মান্যকারী এবং কে সে ব্যাপারে সন্ধিহান৷ ৩৬. তোমার রব সব জিনিসের তত্ত্বাবাধায়ক৷

ইবলিসকে  ক্ষমতা দেওয়া হয়নি যে জোর করে সে মানুষকে পথভ্রষ্ট করতে পারে, বরং সে শুধু অসৎ পথ  অসৎ কার্যাবলীকে সুন্দর করে দেখিয়ে বিভ্রান্ত করে : আর আখিরাতে অবিশ্বাসীরাই সবচেয়ে বেশী ইবলিসের ধোকায় পড়ে :

(৩৪-সাবা: ২১) তাদের ওপর ইবলিসের কোন কর্তৃত্ব ছিল না৷ কিন্তু যা কিছু হয়েছে যে, আমি দেখতে চাচ্ছিলাম কে পরকাল মান্যকারী এবং কে সে ব্যাপারে সন্ধিহান৷ ৩৬. তোমার রব সব জিনিসের তত্ত্বাবাধায়ক৷

শয়তানের কার্যাবলী সমূহ :

শয়তানের কার্যাবলী সমূহ : ৭:২০০-২০২,

(১৭:৬৪) তুমি যাকে যাকে পারো তোমার দাওয়াতের মাধ্যমে পদস্খলিত করো,  তাদের ওপর অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনীর আক্রমণ চালাও, ধন-সম্পদে ও সন্তান-সন্ততিতে তাদের সাথে শরীক হয়ে যাও  এবং তাদেরকে প্রতিশ্রুতির জালে আটকে ফেলো,  আর শয়তানের প্রতিশ্রুতি ধোঁকা ছাড়া আর কিছুই নয়, 

(১৯:৪৪) আব্বাজান!আপনি শয়তানের বন্দেগী করবেন না৷ শয়তান তো করুণাময়ের অবাধ্য৷  

কুরআন নিয়ে আসে শয়তান  : কাফেরদের অভিযোগ :

(২৬.শুআরা:২১০) এ (সুস্পষ্ট কিতাবটি) নিয়ে শয়তানরা অবতীর্ণ হয়নি৷২১১) এ কাজটি তাদের শোভাও পায় না৷ এবং তারা এমনটি করতেই পারে না৷২১২) তাদের কে তো এর শ্রবন থেকেও দূরে রাখা হয়েছে৷

মানুষ ও জীনরা মিলে চেষ্টা করলেও এ কিতাবের মতো কিছু একটা রচনা করে আনতে পারবে নাঃ (সূরা ইউনুসঃ ৩৮)

(বিস্তারিত দেখুন : ক > কুরআন > কুরআনের বিরুদ্ধে কাফিরদের অভিযোগ সমূহ এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে জবাব > অভিযোগ (১১) কুরআন নিয়ে আসে শয়তান।)

শয়তান জ্বিন জাতির অন্তর্ভূক্ত :

(১৮:৫০) ..সে (ইবলীস) ছিল জিনদের একজন, তাই তার রবের হুকুমের আনুগত্য থেকে বের হয়ে গেলো৷ 

শয়তানের বংশধর :

(১৮:৫০) ...এখন কি তোমরা আমাকে বাদ দিয়ে তাকে (ইবলসি শয়তানকে ) এবং তার বংশধরদেরকে নিজেদের অভিভাবক বানিয়ে নিচ্ছো অথচ তারা তোমাদের দুশমন ? বড়ই খারাপ বিনিময় জালেমরা গ্রহণ করছে

অসৎ লোকেরা শয়তানের সাথী হয়ে যায় :

(১৯:৪৫) আব্বাজান! আমার ভয় হয় আপনি করুণাময়ের আযাবের শিকার হন কি না এবং শয়তানের সাথী হয়ে যান কি না”৷

শয়তান হচ্ছে সবচেয়ে বড় প্রতারক ও বিশ্বাস ঘাতক :

(৫৭:১৪) তারা ঈমানদারদের ডেকে ডেকে বলবে আমরা কি তোমাদের সাথে ছিলাম না?  ঈমানদাররা জওয়াব দেবে হাঁ, তবে তোমরা নিজেরাই নিজেদেরকে ফিতনার মধ্যে নিক্ষেপ করেছিলে , সুযোগের সন্ধানে ছিলে, সন্দেহে নিপতিত ছিলে  এবং মিথ্যা আশা-আকাংখা তোমাদেরকে প্রতারিত করেছিলো৷ শেষ পর্যন্ত আল্লাহর ফায়সালা এসে হাজির হলো  এবং শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত সে বড় প্রতারক  আল্লাহর ব্যাপারে প্রতারণা করে চললো৷

(২৫.ফুরকান:২৯)....মানুষের জন্য শয়তান বড়ই বিশ্বাসঘাতক প্রমাণিত হয়েছে৷  

শয়তান হচ্ছে সবচেয়ে বড় প্রতারক :  কথার অর্থ কি ?

দুনিয়ার জীবনের কার্যাবলী সম্পর্কে শয়তান আমাদেরকে  যে ভুল ধারণাগুলো দেয় তার তালিকা:

দুনিয়ার জীবন প্রতারনা- এর অর্থ কি ? দুনিয়ার জীবন সম্পর্কে ভুল ধারাণা সমূহ :

(৩১-লোকমান: ৩৩).....কাজেই এ দুনিয়ার জীবন যেন তোমাদের প্রতারিত না করে ৬১  এবং প্রতারক যেন তোমাকে আল্লাহর ব্যাপারে প্রতারিত করতে সক্ষম না হয়৷ ৬২  

৬১ . দুনিয়ার জীবন স্থুলদর্শী লোকদেরকে নানা রকমের ভুল ধারণায় নিমজ্জিত করে। কেউ মনে করে, বাঁচা-মরা যা কিছু শুধুমাত্র এ দুনিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ, এরপর আর দ্বিতীয় কোন জীবন নেই। কাজেই যা কিছু করার এখানেই করে নাও। কেউ অর্থ, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি ও প্রাচুর্যের নেশায় মত্ত হয়ে নিজের মৃত্যুর কথা ভুলে যায় এবং এ ভুল ধারণা পোষণ করতে থাকে যে, তার এ আরাম-আয়েশ ও কর্তত্ব চিরস্থায়ী, এর ক্ষয় নেই। কেউ নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্য ভুলে গিয়ে কেবলমাত্র বৈষয়িক লাভ ও স্বাদ-আহলাদকে একমাত্র উদ্দেশ্য মনে করে নেয় এবং "জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন'' ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যকে কোন গুরুত্বই দেয় না। এর ফলে তার মনুষ্যত্বের মান যত নিচে নেমে যেতে থাকে না কেন তার কোন পরোয়াই সে করে না ।কেউ মনে করে বৈষয়িক সমৃদ্ধিই ন্যায়-অন্যায় সত্য-মিথ্যার আসল মানদণ্ড। এ সমৃদ্ধি যে পথেই অর্জিত হবে তাই সত্য এবং তার বিপরীত সবকিছুই মিথ্যা। কেউ এ সমৃদ্ধিকেই আল্লাহর দরবারে অনুগৃহীত হবার আলামত মনে করে। এর ফলে সে সাধারণভাবে মনে করতে থাকে, যদি দেখা যায় যে কোন উপায়েই হোক না কেন একজন লোক বিপুল সম্পদের অধিকারী হতে চলেছে, তাহলে সে আল্লাহর প্রিয়পাত্র এবং যার বৈষয়িক অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে, তা হক পথে থাকা ও সৎনীতি অবলম্বন করার কারণেই হোক না কেন তার পরকাল ঝরঝরে হয়ে গেছে। এ ধারণা এবং এ ধরনের যত প্রকার ভুল ধারণা আছে সবগুলোকেই মহান আল্লাহ এ আয়াতে " দুনিয়ার জীবনের প্রতারণা" বলে উল্লেখ করেছেন। 

৬২ . (----) প্রতারক শয়তানও হতে পারে আবার কোন মানুষ বা একদল মানুষও হতে পারে, মানুষের নিজের মন ও প্রবৃত্তিও হতে পারে এবং অন্য কোন জিনিসও হতে পারে। কোন বিশেষ ব্যক্তি বা বিশেষ বস্তু নির্ধারণ না করে এ বহুমুখী অর্থের অধিকারী শব্দটিকে তার সাধারণ ও সার্বজনীন অর্থে ব্যবহার করার কারণ হচ্ছে এই যে, বিভিন্ন লোকের কাছে প্রতারিত হবার মূল বিভিন্ন হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি বিশেষ করে যে উপায়েই এমন প্রতারণার শিকার হয়েছে যা সঠিক দিক থেকে ভুল দিকে তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। তা-ই তার জন্য "আল গারূর " তথা প্রতারক। 

"আল্লাহর ব্যাপারে প্রতারিত করা " শব্দ গুলো ব্যাপক অর্থের অধিকারী। বিভিন্ন ধরনের প্রতারনা এর অন্তরভুক্ত। কাউকে তার "প্রতারক" এ নিশ্চয়তা দেয় যে, আল্লাহ আদতেই নেই। কাউকে বুঝায়, আল্লাহ এ দুনিয়া সৃষ্টি করে হাত-পা গুটিয়ে বসে গেছেন এবং এখন এ দুনিয়া তিনি বান্দাদের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। কাউকে এ ভুল ধারণা দেয় যে, আল্লাহর এমন কিছু প্রিয়পাত্র আছে, যাদের নৈকট্য অর্জন করে নিলে তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে। তুমি নিশ্চিতভাবেই ক্ষমার অধিকারী হবে। কাউকে এভাবে প্রতারণা করে যে, আল্লাহ তো ক্ষমাশীল ও করুণাময় । তোমরা পাপ করতে থাকো, তিনি ক্ষমা করে যেতে থাকবেন। কাউকে বুঝায়, মানুষ তো নিছক একটা অক্ষম জীব ছাড়া আর কিছুই নয়। তার মনে ভুল ধারণা সৃষ্টি করে দেয় এই বলে যে, তোমাদের তো হাত-পা বাঁধা, যা কিছু খারাপ কাজ তোমরা করো সব আল্লাহই করান। ভালো কাজ থেকে তোমরা দূরে সরে যাও, কারণ আল্লাহ তা করার তাওফীক তোমাদের দেন না। না জানি আল্লাহর ব্যাপারে এমনিতর কত বিচিত্র প্রতারণার শিকার মানুষ প্রতিদিন হচ্ছে। যদি বিশ্লেষণ করে দেখা হয়, তাহলে শেষ পর্যন্ত প্রত্যেকটি গোমরাহী, গোনাহ ও অপরাধের মূল কারণ হিসেবে দেখা যাবে, মানুষ আল্লাহর ব্যাপারে কোন না কোন প্রতারণার শিকার হয়েছে এবং তার ফলেই তার বিশ্বাসে দেখা দিয়েছে বিভ্রান্তি অথবা সে নৈতিক চরিত্রহীনতার শিকার হয়েছে । 

শয়তান কার পিছনে লেগে যায় ?

কিতাবের জ্ঞান প্রাপ্ত ব্যক্তি যদি কিতাব মেনে না চলে তবে শয়তান তার পিছনে লেগে যায় এবং ঐ ব্যক্তি হয়ে যায় কুকুরের ন্যায় : ৭:১৭৫, ১৭৬, ১৬৯ ।

শয়তান মানুষকে উত্তেজিত করে এবং তার প্রতিকার :

শয়তান যদি তোমাকে উত্তেজিত করে তবে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও, তাহলে সঠিক পথ পরিস্কার ভাবে দেখতে পাবে : ৭:২০০, ২০১

শয়তান কাফেরদেরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে উস্কে দেয়:

শয়তান কাফেরদেরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে উস্কে দেয় এবং বলে তোমরাই বিজয়ী হবে এবং আমি তোমাদের সাথে আছি, কিন্তু যখন সম্মুখ সমর শুরু হয়, তখন শয়তান পালিয়ে যায় : ৮:৪৮।  

শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু :

(১২:৫) আসলে শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু 

(১৭:৫৩)  ..প্রকৃতপক্ষে শয়তান হচ্ছে মানুষের প্রকাশ্য শত্রু৷

(১৮:৫০) ...এখন কি তোমরা আমাকে বাদ দিয়ে তাকে (ইবলসি শয়তানকে ) এবং তার বংশধরদেরকে নিজেদের অভিভাবক বানিয়ে নিচ্ছো অথচ তারা তোমাদের দুশমন ? বড়ই খারাপ বিনিময় জালেমরা গ্রহণ করছে

(২০:১১৬) স্মরণ করো সে সময়ের কথা যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম, আদমকে সিজদা করো, তারা সবাই সিজদা করলো কিন্তু একমাত্র ইবলীস অস্বীকার করে বসলো৷১১৭) এ ঘটনায় আমি আদমকে বললাম, “দেখো,  এ তোমার ও তোমার স্ত্রীর শত্রু, এমন যেন না হয় যে, এ তোমাদেরকে জান্নাত থেকে বের করে দেয়  এবং তোমরা বিপদে পড়ে যাও৷

(২৮-ক্বাছাছ : ১৫) .(একদিন) সে শহরে এমন সময় প্রবেশ করলো যখন শহরবাসী উদাসীন ছিল৷ সেখানে সে দেখলো দু'জন লোক লড়াই করছে৷ একজন তার নিজের সম্প্রদায়ের এবং অন্যজন তার শত্রু সম্প্রদায়ের৷ তার সম্প্রদায়ের লোকটি শত্রু সম্প্রদায়ের লোকটির বিরুদ্ধে তাকে সাহায্য করার জন্য ডাক দিল৷ মূসা তাকে একটি ঘুষি মারলো এবং তাকে মেরে ফেললো৷ (এ কাণ্ড ঘটে যেতেই) মূসা বললো, "এটা শয়তানের কাজ, সে ভয়ংকর শত্রু এবং প্রকাশ্য পথভ্রষ্টকারী৷"

(ব্যাখ্যার জন্য দেখন : হ > হত্যা > মূসা আ: যে কিবতীকে হত্যা করেছিলেন সেটাকি তার পথভ্রষ্টতা ছিল ? )

চিরন্তন জীবন লাভ করতে চাওয়া মানুষের একটি স্বভাবজাত বাসনা, আর বাসনার ফাদে ফেলেই শয়তান হযরত আদম ও হাওয়া আ: কে ধোকা দিতে সক্ষম হয়েছিল :

(২০:১২০) কিন্তু শয়তান তাকে কুমন্ত্রণা দিল,  বলতে থাকলো, “হে আদম! তোমাকে কি এমন গাছের কথা বলে দেবো যা থেকে অনন্ত জীবন ও অক্ষয় রাজ্য লাভ করা যায়?১২১) শেষ পর্যন্ত দু’জন (স্বামী-স্ত্রী) সে গাছের ফল খেয়ে বসলো৷ ফলে তখনই তাদের লজ্জাস্থান পরস্পরের সামনে প্রকাশ হয়ে পড়লো এবং দু’জনাই জান্নাতের পাতা দিয়ে নিজেকে ঢাকতে লাগলো৷ আদম নিজের রবের নাফরমানী করলো এবং সে সঠিক পথ থেকে সরে গেল৷

শয়তান মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করে :

(১৭:৫৩) আর হে মুহাম্মাদ! আমার বান্দাদেরকে  বলে দাও, তারা যেন মুখে এমন কথা বলে যা সর্বোত্তম৷ আসলে শয়তান মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করে৷

মুখের কথা সর্বোত্তম হওয়া দরকার, নচেত মুখের কথার  লাগামহীনতা শয়তানের আক্রমনের কারণে হয়:

(১৭:৫৩) আর হে মুহাম্মাদ! আমার বান্দাদেরকে  বলে দাও, তারা যেন মুখে এমন কথা বলে যা সর্বোত্তম৷ আসলে শয়তান মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করে৷  

শয়তান অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ ও  জরুরী কথা ভুলিয়ে দেয় :

(১২:৪২) আবার তাদের মধ্য থেকে যার সম্পর্কে ধারণা ছিল যে, সে মুক্তি পাবে ইউসুফ তাকে বললো : “তোমার প্রভুকে (মিসরের বাদশাহ) আমার কথা বলো৷কিন্তু শয়তান তাকে এমন গাফেল করে দিল যে, সে তার প্রভুকে (মিসরের বাদাশাহ) তার কথা বলতে ভুলে গেলো৷ ফলে ইউসুফ কয়েক বছর কারাগারে পড়ে রইলো৷

(১৮:৬৩) খাদেম বললো, “আপনি কি দেখেছেন, কি ঘটে গেছে ? যখন আমরা সেই পাথরটার পাশে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম তখন আমার মাছের কথা মনে ছিল না এবং শয়তান আমাকে এমন গাফেল করে দিয়েছিল যে, আমি (আপনাকে) তার কথা বলতে ভুলে গেছি৷ মাছ তো অদ্ভূতভাবে বের হয়ে দরিয়ার মধ্যে চলে গেছে৷ 

শয়তান পরকালে তার অনুসারীদেরকে যে জওয়াব দিবে :

(১৪:২২) আর যখন সবকিছুর মীমাংসা হয়ে যাবে তখন শয়তান বলবে, “সত্যি বলতে কি আল্লাহ তোমাদের সাথে যে ওয়াদা করে ছিলেন তা সব সত্যি ছিল এবং আমি যেসব ওয়াদা করেছিলাম তার মধ্য থেকে একটিও পুরা করিনি৷ তোমাদের ওপর আমার তো কোন জোর ছিল না, আমি তোমাদের আমার পথের দিকে আহ্বান জানানো ছাড়া আর কিছুই করিনি এবং তোমরা আমার আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলে৷ এখন আমার নিন্দাবাদ করো না, নিজেরাই নিজেদের নিন্দাবাদ করো৷ এখানে না আমি তোমাদের অভিযোগের প্রতিকার করতে পারি আর না তোমরা আমার৷ ইতিপূর্বে তোমরা যে আমাকে আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতা ও কতৃত্বের শরীক করেছিলে  তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই, এ ধরনের জালেমদের জন্য তো যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি অবধারিত৷

(ব্যাখ্যা : অর্থাৎ, আপনারা যদি এ মর্মে কোন প্রমাণ দেখাতে পারেন যে, আপনারা নিজেরা সত্য-সঠিক পথে চলতে চাচ্ছিলেন এবং আমি জবরদস্তি আপনাদের হাত ধরে আপনাদেরকে ভুল পথ থেকে টেনে নিয়েছিলাম তাহলে অবশ্যি তা দেখান। এর যা শাস্তি হয় আমি মাথা পেতে নেবো। কিন্তু আপনারা নিজেরাও স্বীকার করবেন, আসল ঘটনা তা নয়। আমি হকের আহবানের মোকাবিলায় বাতিলের আহবান আপনাদের সামনে পেশ করেছি। সত্যের মোকাবিলায় মিথ্যার দিকে আপনাদেরকে ডেকেছি। সৎকাজের কিছুই করিনি। আমার কথা মানা না মানার পূর্ণ স্বাধীনতা আপনাদের ছিল। আপনাদেরকে বাধ্য করার কোন ক্ষমতা আমার ছিল না। এখন আমার এ দাওয়াতের জন্য নিসন্দেহে আমি নিজে দায়ী ছিলাম এবং এর শাস্তিও আমি পাচ্ছি। কিন্তু আপনারা যে এ দাওয়াতে সাড়া দিয়েছেন, এর দায়ভার কেমন করে আমার ঘাড়ে চাপাতে চাচ্ছেন৷ নিজেদের ভুল নির্বাচন এবং নিজেদের ক্ষমতার অসৎ ব্যবহারের দায়ভার পুরোপুরি আপনাদের বহন করতে হবে।

আর আল্লাহ সত্যবাদী ছিলেন এবং আমি ছিলাম মিথ্যেবাদী তোমাদের এতটুকুন অভিযোগ ও দোষারোপ যে পুরোপুরি সত্যি এতে কোন সন্দেহ নেই। একথা আমি অস্বীকার করছি না। তোমরা দেখতেই পাচ্ছো, আল্লাহর প্রত্যেকটি প্রতিশ্রুতি ও হুমকি অক্ষরে অক্ষরে সত্য প্রমাণিত হয়েছে। অন্যদিকে আমি তোমাদের যেসব আশ্বাস দিয়েছিলাম, যেসব লাভের লোভ দেখিয়েছিলাম, যেসব সুদৃশ্য আশা- আকাংখার জালে তোমাদের ফাঁসিয়েছিলাম এবং সর্বাগ্রে তোমাদের মনে যে বিশ্বাস স্থাপন করিয়েছিলাম যে, ওসব আখেরাত টাখেরাত বলে কিছুই নেই। এগুলো নিছক প্রতারণা ও গাল-গল্প, আর যদি সত্যিই কিছু থেকে থাকে, তাহলে অমুক বুযুর্গের বদৌলতে তোমরা সোজা উদ্ধার পেয়ে যাবে, কাজেই তাদের খেদমতে নযরানা ও অর্থ-উপাচারের উৎকোচ প্রদান করতে থাকো এবং তারপর যা মন চায় তাই করে যেতে থাকো আমি তোমাদের এই যেসব কথা নিজে এবং আমার এজেন্টদের মাধ্যমে বলেছিলাম, এগুলো সবই ছিল নিছক প্রতারণা।)

শয়তান জোরপূর্বক কাউকে বিপথে নেবার ক্ষমতা রাখেনা 

(১৫:৪২) অবশ্যি যারা আমার প্রকৃত বান্দা হবে তাদের ওপর তোমার কোনো জোর খাটবে না৷ তোমার জোর খাটবে শুধুমাত্র এমন বিপথগামীদের ওপর যারা তোমার অনুসরণ করবে

(১৭:৬৫) নিশ্চিতভাবেই আমার বান্দাদের ওপর তোমার কোনো কর্তৃত্ব অর্জিত হবে না

(এর দু'টি অর্থ । স্ব স্ব স্থানে দু'টি অর্থই সঠিক । একটি অর্থ হচ্ছে, আমার বান্দা অর্থাৎ মানুষের ওপর তুমি এমন কর্তৃত্ব লাভ করবে না, যার ফলে তুমি তাদেরকে জবরদস্তি নিজের পথে টেনে নিয়ে যেতে পারো । তুমি নিছক প্ররোচিত করতে ও ফুসলাতে এবং ভুল পরামর্শ দিতে ও মিথ্যা ওয়াদা করতে পারো । কিন্তু তোমার কথা গ্রহণ করা বা না করা হবে বান্দার নিজের কাজ । তারা তোমার পথে যেতে চাইলে বা না চাইলেও তুমি হাত দরে তাদেরকে নিজের পথে টেনে নিয়ে যাবে --- তোমার এমন ধরনের কোন কর্তৃত্ব তাদের ওপর থাকবে না । দ্বিতীয় অর্থটি হচ্ছে, আমার বিশেষ বান্দাদের অর্থাৎ নেক বান্দাদের ওপর তোমার কোন প্রভাব খাটাবে না । শক্তিহীন ও দুর্বল সংকল্পধারী লোকেরা নিশ্চয়ই তোমার প্রতিশ্রুতিতে প্রতারিত হবে, কিন্তু যারা আমার বন্দেগীতে অবিচল থাকবে তারা কখনো তোমার নিয়ন্ত্রণে আসবে না ।)

শয়তান নবীদের দাওয়াতী মিশনে / কুরআন প্রচারে  বিঘ্ন সৃষ্টি করে এবং এর কারণ :

(হাজ্ব:৫২) আর হে মুহাম্মাদ! তোমার পূর্বে আমি এমন কোনো রসূল ও নবী পাঠাইনি (যার সাথে এমন ঘটনা ঘটেনি যে) যখন সে তামান্না করেছে৷ শয়তান তার তামান্নায় বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে৷৯৮ এভাবে শয়তান যাকিছু বিঘ্ন সৃষ্টি করে আল্লাহ তা দূর করে দেন এবং নিজের আয়াতসমূহকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন, আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়৷

(৯৮. অর্থাৎ, যখনই নবী রাসুলগণ লোকদেরকে আল্লাহর বাণী শুনিয়েছেন তখনই শয়তান সে সম্পর্কে লোকদের মনে নানা সন্দেহ-সংশয় ও আপত্তি সৃষ্টি করে দিয়েছে, সেগুলোর অদ্ভুত অদ্ভুত অর্থ তাদের সামনে তুলে ধরেছে এবং একমাত্র সঠিক অর্থটি ছাড়া বাকি সব ধরনের উলটা-পালটা অর্থ লোকদেরকে বুঝিয়েছে।)

শয়তান নবীদের দাওয়াতী মিশনে বিঘ্ন সৃষ্টি করার সুযোগ দিয়েছেন দুটি কারণে :

মুনাফিকদেরকে ঈমানদারদের দল থেকে ছেটে বের করার জন্য :  

(হাজ্ব:৫৩) (তিনি এজন্য এমনটি হতে দেন) যাতে শয়তানের নিক্ষিপ্ত অনিষ্টকে পরীক্ষায় পরিণত করেন তাদের জন্য যাদের অন্তরে (মুনাফিকীর) রোগ রয়েছে এবং যাদের হৃদয়বৃত্তি মিথ্যা-কলূষিত-আসলে এ জালেমরা শত্রুতায় অনেক দূরে পৌঁছে গেছে

(হাজ্ব:৫৫) অস্বীকারকারীরা তো তার পক্ষ থেকে সন্দেহের মধ্যেই পড়ে থাকবে যতক্ষণ না তাদের ওপর কিয়ামত এসে পড়বে অকস্মাত অথবা নাযিল হয়ে যাবে একটি ভাগ্যাহত দিনের শাস্তি৷

২। ঈমানদারদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পায়, সরল পথে তারা মজবুত হয়ে চলতে পারে :

(হাজ্ব:৫৪) --এবং যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে তারা জেনে নেয় যে, তোমার রবের পক্ষ থেকে এটা সত্য এবং তারা এর প্রতি ঈমান আনে এবং এর সামনে তাদের অন্তর ঝুঁকে পড়ে; যারা ঈমান আনে তাদেরকে অবশ্যই আল্লাহ চিরকাল সত্য-সরল পথ দেখিয়ে থাকেন৷

শয়তান কোন ধরণের লোকদেরকে ধোকা দিতে পারে ?

(১৬:১০০) তার আধিপত্য ও প্রতিপত্তি চলে তাদের ওপর যারা তাকে নিজেদের অভিভাবক বানিয়ে নেয় এবং তার প্ররোচনায় শিরক করে৷

(১৫:৪২) .....তোমার জোর খাটবে শুধুমাত্র এমন বিপথগামীদের ওপর যারা তোমার অনুসরণ করবে

শয়তান কোন ধরণের লোকদেরকে ধোকা দিতে পারে না?

(১৬:৯৯) যারা ঈমান আনে এবং নিজেদের রবের প্রতি আস্থা রাখে তাদের ওপর তার কোনো আধিপত্য নেই৷  

(১৫:৪২) অবশ্যি যারা আমার প্রকৃত বান্দা হবে তাদের ওপর তোমার কোনো জোর খাটবে না৷

(১৭:৬৫) নিশ্চিতভাবেই আমার বান্দাদের ওপর তোমার কোনো কর্তৃত্ব অর্জিত হবে না  এবং ভরসা করার জন্য তোমার রবই যথেষ্ট৷

শয়তান মানুষকে লোভ দেখিয়ে বিপথগামী করে :

(১৫:৩৯) সে বললো, “হে আমার রব! তুমি যেমন আমাকে বিপথগামী করলে ঠিক তেমনিভাবে আমি পৃথিবীতে এদের জন্য প্রলোভন সৃষ্টি করে এদের সবাইকে বিপথগামী করবো

শয়তানের হস্তক্ষেপ থেকে আল্লাহর নিকট বান্দার আশ্রয় প্রার্থনা :

(১৬:৯৮) তারপর যখন তোমরা কুরআন পড়ো তখন অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর শরণ নিতে থাকো৷

 (কুরআন-ই হচ্ছে মানুষের হেদায়েরে একমাত্র উৎস, সুতরাং, সর্বক্ষেত্রে তো শয়তানের হস্তক্ষেপ থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইতে হবেই, সাথে সাথে কুরআন পড়ার সময় শয়তানের হস্তক্ষেপ থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইতে হবে আরো বেশী করে)

জ্বিন শয়তানেরা কি গায়েবের সংবাদ বলতে পারে?

(১৫:১৭) এবং প্রত্যেক অভিশপ্ত শয়তান থেকে সেগুলোকে সংরক্ষণ করেছি৷ কোনো শয়তান সেখানে অনুপ্রবেশ করতে পারে না৷১৮) তবে আড়ি পেতে বা চুরি করে কিছু শুনতে পারে৷ আর যখন সে চুরি করে শোনার চেষ্টা করে তখন একটি জ্বলন্ত অগ্নিশিখা তাকে ধাওয়া করে৷

শয়তানের অহংকার : ইবলীস শয়তান আদমকে কেন সিজদা করেনি ? (আরোদেখুন : স> সিজদা)

(১৫:৩৩) সে (ইবলীস শয়তান) জবাব দিল, “এমন একটি মানুষকে সিজদা করা আমার মনোপূত নয় যাকে তুমি শুকনো ঠন্‌ঠনে পচা মাটি থেকে সৃষ্টি করেছো৷”  

শয়তানের সৃষ্টি কাহিনী : (আরো দেখুন : আদম আ: এর সৃষ্টি কাহিনী)

(১৫:৩০) সেমতে সকল ফেরেশতা একযোগে তাকে সিজদা করলো,(১৫:৩১) ইবলীস ছাড়া, কারণ সে সিজদাকারীদের অন্তরভুক্ত হতে অস্বীকার করলো৷(১৫:৩২) আল্লাহ জিজ্ঞেস করলেন, “হে ইবলীস ! তোমার কি হলো, তুমি সিজদাকারীদের অন্তরভুক্ত হলে না ?”(১৫:৩৩) সে জবাব দিল, “এমন একটি মানুষকে সিজদা করা আমার মনোপূত নয় যাকে তুমি শুকনো ঠন্‌ঠনে পচা মাটি থেকে সৃষ্টি করেছো৷”(১৫:৩৪) আল্লাহ বললেন, “তবে তুমি বের হয়ে যাও এখান থেকে, কেননা তুমি ধিকৃত৷  (১৫:৩৫) আর এখন কর্মফল দিবস পর্যন্ত তোমার ওপর অভিসম্পাত !(১৫:৩৬) সে আরয করলো, হে আমার রব ! যদি তাই হয়, তাহলে সেই দিন পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দাও যেদিন সকল মানুষকে পুনর্বার উঠানো হবে। (১৫:৩৭) বললেন, “ঠিক আছে, তোমাকে অবকাশ দেয়া হলো৷(১৫:৩৮) সেদিন পর্যন্ত যার সময় আমার জানা আছে৷(১৫:৩৯) সে বললো, “হে আমার রব! তুমি যেমন আমাকে বিপথগামী করলে ঠিক তেমনিভাবে আমি পৃথিবীতে এদের জন্য প্রলোভন সৃষ্টি করে এদের সবাইকে বিপথগামী করবো(১৫:৪০) তবে এদের মধ্য থেকে তোমার যেসব বান্দাকে তুমি নিজের জন্য নির্বাচিত করে নিয়েছো তাদের ছাড়া৷(১:৪১) বললেন, এটিই আমার নিকট পৌঁছুবার সোজা পথ৷ (১৫:৪২) অবশ্যি যারা আমার প্রকৃত বান্দা হবে তাদের ওপর তোমার কোনো জোর খাটবে না৷ তোমার জোর খাটবে শুধুমাত্র এমন বিপথগামীদের ওপর যারা তোমার অনুসরণ করবে

শয়তানের চ্যালেঞ্জ- আমি মানুষকে পথভ্রষ্ট করে ছাড়বো :

(১৫:৩৯) সে বললো, “হে আমার রব! তুমি যেমন আমাকে বিপথগামী করলে ঠিক তেমনিভাবে আমি পৃথিবীতে এদের জন্য প্রলোভন সৃষ্টি করে এদের সবাইকে বিপথগামী করবো

(১৫:৪০) তবে এদের মধ্য থেকে তোমার যেসব বান্দাকে তুমি নিজের জন্য নির্বাচিত করে নিয়েছো তাদের ছাড়া৷

(১৭:৬২) ... যদি তুমি আমাকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত অবকাশ দাও তাহলে আমি তার সমস্ত সন্তান সন্ততির মূলোচ্ছেদ করে দেবো,   মাত্র সামান্য কজনই আমার হাত থেকে নিস্তার পাবে৷৬৩) আল্লাহ বললেন, ঠিক আছে, তুমি যাও, এদের মধ্য থেকে যারাই তোমার অনুসরণ করবে তুমিসহ তাদের সবার জন্য জাহান্নামই হবে পূর্ণ প্রতিদান৷ 

শয়তান অসৎপথ কে / অসৎ কাজ কে  সুশোভন করে দেখায় :

(১৬:৬৩).... শয়তান তাদের খারাপ কার্যকলাপকে তাদের সামনে সুশোভন করে দেখিয়েছেসেই শয়তানই আজ এদেরও অভিভাবক সেজে বসে আছে এবং এরা মর্মন্তুদ শাস্তির উপযুক্ত হচ্ছে৷

(২৭-নমল:২৪)--- শয়তান  তাদের কার্যাবলী তাদের জন্য শোভন করে দিয়েছে৩২ এবং তাদেরকে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করে দিয়েছেন এ কারণে তারা সোজা পথ পায় না৷ 

(৩২. অর্থাৎ দুনিয়ার ধন-সম্পদ উপার্জন এবং নিজের জীবনকে অত্যাধিক জাঁকালো ও বিলাসী করার যে কাজে তারা নিমগ্ন ছিল, শয়তান তাদেরকে বুঝিয়ে দেয় যে, বুদ্ধি ও চিন্তার এটিই একমাত্র নিয়োগ ক্ষেত্র এবং দৈহিক ও মানসিক শক্তিসমূহ প্রয়োগের একমাত্র উপযুক্ত স্থান। তাই এ পার্থিব জীবন ও তার আরাম আয়েশ ছাড়া আর কোন জিনিস সম্পর্কে গুরুত্ব সহকারে চিন্তা-ভাবনা করার দরকার নেই। এ আপাতদৃষ্ট পার্থিব জীবনের পিছনে কোন বাস্তব সত্য নিহিত রয়েছে এবং তোমাদের প্রচলিত ধর্ম, নৈতিকতা, সভ্যতা, সংস্কৃতি ও জীবন ব্যবস্থার ভিত্তিসমূহ এ সত্যের সাথে সামঞ্জস্য রাখে, না পুরোপুরি তার বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে সেসব নিয়ে অযথা মাথা ঘামাবার দরকার নেই বলে শয়তান তাদেরকে নিশ্চিন্ত করে দেয় যে, তোমরা যখন ধন-দৌলত, শক্তি-সামর্থ ও শান-শওকতের দিক দিয়ে দুনিয়ায় অগ্রসর হয়েই যাচ্ছো তখন আবার তোমাদের প্রচলিত আকিদা-বিশ্বাস ও মতবাদকে সঠিক কিনা, তা চিন্তা করার প্রয়োজনই বা কি! এসব সঠিক হবার স্বপে তো এই একটি প্রমাণই যথেষ্ট যে, তোমরা আরামে ও নিশ্চিন্তে অর্থ ও বিত্তের পাহাড় গড়ে তুলছো এবং আয়েশী জীবন যাপন করছো।)

(২৯-আনকাবুত:৩৮) আর আদ ও সামূদ কে আমি ধ্বংস করেছি ৷ তারা যেখানে থাকতো সেসব জায়গা তোমরা দেখেছো ৬৫   তাদের কার্যাবলীকে শয়তান তাদের জন্য সুদৃশ্য বানিয়ে দিল এবং তাদেরকে সোজা পথ থেকে বিচ্যুত করলো অথচ তারা ছিল বুদ্ধি সচেতন৷ (ব্যাখ্যার জন্য দেখুন : হ > হেদায়েত > হেদায়েত লাভের জন্য জ্ঞান বুদ্ধি প্রয়োজন, নাকি সত্যপ্রীতির প্রয়োজন ? )

 জ্ঞানহীন বিতর্ক  মানুষকে শয়তানের পথে ধাবিত করে :

(হাজ্ব:৩) কতক লোক এমন আছে যারা জ্ঞান ছাড়াই আল্লাহর ব্যাপারে বিতর্ক করে  এবং প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তানের অনুসরণ করতে থাকে৷  

মূর্তি এবং  সেগুলো নির্মাণের জন্য ব্যবহৃত বাশ ইট কাঠও জাহান্নামে আগুন জ্বালানোর কাজে ব্যবহার করা হবে  এবং

এবং শয়তান, মূর্তি, শরীক ও শিরককারী সকলেই জাহান্নামে যাবে এর ব্যাখ্যা  :

(২১:৯৮) অবশ্যই তোমরা এবং তোমাদের যেসব মাবুদকে তোমরা পূজা করো, সবাই জাহান্নামের ইন্ধন, সেখানেই তোমাদের যেতে হবে৷৯৫ ৯৯) যদি তারা সত্যিই আল্লাহ হতো, তাহলে সেখানে যেতো না৷ এখন সবাইকে চিরদিন তারই মধ্যে থাকতে হবে৷১০০) সেখানে তারা হাঁসফাঁস করতে থাকবে  এবং তাদের অবস্থা এমন হবে যে, তারা কোনো কথা শুনতে পাবে না৷ 

(৯৫. হাদীসে বলা হয়েছে, এ আয়াতের ব্যাপারে আবদুল্লাহ ইবনুয যাবা'রা আপত্তি করে বলেন যে, এভাবে তো কোবলমাত্র আমাদেরই মাবুদরা জাহান্নামে যাবে না বরং ঈসা, উযাইর ও ফেরেশতারাও জাহান্নামে যাবে, কারণ দুনিয়ায় তাদেরও ইবাদাত করা হয়। এর জবাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

"হাঁ, এমন প্রত্যেক ব্যক্তি যে নিজে একথা পছন্দ করে যে, আল্লাহকে বাদ দিয়ে তার বন্দেগী করা হোক সে তাদেরকে সাথে হবে যারা তার বন্দেগী করেছে।"

এ থেকে জানা যায়, যারা দুনিয়ায় মানুষকে আল্লাহর বন্দেগী করার শিক্ষা দিয়েছিলেন এবং লোকেরা তাদেরকেই উপাস্যে পরিণত করে অথবা যারা এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ বেখবর যে, দুনিয়ায় তাদের বন্দেগী ও পূজা করা হচ্ছে এবং এ কর্মে তাদের ইচ্ছা ও আকাংখার কোন দখল নেই, তাদের জাহান্নামে যাবার কোন কারণ নেই। কারণ, তারা এ শিরকের জন্য দায়ী নয়। তবে যারা নিজেরাই উপাস্য ও পূজনীয় হবার চেষ্টা করে এবং মানুষের এ শিরকে যাদের সত্যি সত্যিই দখল আছে তারা সবাই নিজেদের পূজারী ও উপাসকদের সাথে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অনুরূপভাবে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যকে মাবুদ হিসেবে দাঁড় করায় তারাও জাহান্নামে যাবে। কারণ, এ অবস্থায় তারাই মুশরিকদের আসল মাবুদ হিসেবে গণ্য হবে, এ দুর্বৃত্তরা বাহ্যত যাদেরকে মাবুদ হিসেবে দাঁড় করিয়েছিল তারা নয়। শয়তানও এর আওতায় এসে যায়। কারণ, তার উদ্যোগে যেসব সত্তাকে উপাস্যে পরিণত করা হয় আসল উপাস্য তারা হয় না। বরং আসল উপাস্য হয় শয়তান নিজেই। কারণ, তার হুকুমের আনুগত্য করে এ কাজটি করা হয়। এ ছাড়াও পাথর, কাঠের মূর্তি ও অন্যান্য পূজা সামগ্রীও মুশরিকদের সাথে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে যাতে তারা তাদের ওপর জাহান্নামের আগুন আরো বেশী করে জ্বালিয়ে দিতে সাহায্য করে। যাদের ব্যাপারে তারা আশা পোষণ করছিল যে, তারা তাদের সুপারিশকারী হবে, তারা উলটো তাদের আযাব কঠোরতর করার কারণে পরিণত হয়েছে দেখে তাদের কষ্ট আরো বেড়ে যাবে।)

আল্লাহর পক্ষ থেকে জবাব :

শয়তানের চালবাজী থেকে কারা রক্ষা পাবে ? উত্তর : আল্লাহর প্রকৃত ইবাদতগুজার বান্দারা :

(১:৪১) বললেন, এটিই আমার নিকট পৌঁছুবার সোজা পথ৷ (১৫:৪২) অবশ্যি যারা আমার প্রকৃত বান্দা হবে তাদের ওপর তোমার কোনো জোর খাটবে না৷ তোমার জোর খাটবে শুধুমাত্র এমন বিপথগামীদের ওপর যারা তোমার অনুসরণ করবে

সূর্য উদয় হয়  অস্ত যায় শয়তানের দুই শিং এর মধ্য দিয়ে : হাদীসে একথা বলা হয়েছে সূর্যপূজারীদের জন্য :

(১৭:৭৮) নামায কায়েম করো  সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে  নিয়ে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত  

(ব্যাখ্যা : মূলত: সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে শুরু করে  রাত অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকা (তথা সূর্য অস্তগামী থাকা) পর্যন্ত সময়ের মধ্যেই পাচ ওয়াক্ত নামাজ – এর মূল সময় নিহিত । সূর্যাদয়ের পর থেকে সূর্য ঢলে পড়ার আগ পর্যন্ত কোন ফরজ নামাজের ওয়াক্ত নাই।

নামাযের সময় নির্ধারণ করার সময় যেসব প্রয়োজনীয় দিকে নজর রাখা হয়েছে তার মধ্যে সূর্য পূজারীদের ইবাদাতের সময় থেকে দূরে থাকাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে । সকল যুগেই সূর্য মুশরিকদের সবচেয়ে বড় বা অনেক বড় মাবুদের স্থান দখল করেছে । সূর্য উদয় ও অস্তের সময়টায়ই তারা বিশেষ করে তার পূজা করে থাকে । তাই এসব সময় নামায পড়াকে হারাম করা হয়েছে । তাছাড়া সাধারণত সূর্য উদয়ের পর থেকে নিয়ে মধ্য গগণে পৌঁছার সময়ে তার পূজা করা হয়ে থাকে । কাজেই ইসলামে হুকুম দেয়া হয়েছে, দিনের বেলার নামাযগুলো সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে পড়া শুরু করতে হবে এবং সকালের নামায সূর্য হবার আগেই পড়ে ফেলতে হবে । এ প্রয়োজনীয় বিষয়টি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন হাদীসে বর্ণনা করেছেন । একটি হাদীসে হযরত আমর ইবনে আবাসাহ (রা) বর্ণনা করছেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নামাযের সময় জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন:

"ফজরের নামায পড়ো এবং সূর্য উদিত হতে থাকলে বিরত হও, সূর্য ওপরে উঠে যাওয়া পর্যন্ত । কারণ সূর্য যখন উদিত হয় তখন শয়তানের শিং দু'টির মাঝখানে দিয়ে বের হতে থাকে এবং এ সময় কাফেররা তাকে সিজদা কর ।

তারপর তিনি আসরের নামাযের উল্লেখ করার পর বললেন:

"তারপর নামায থেকে বিরত হও সূর্য ডুবে যাওয়া পর্যন্ত । কেননা, সূর্য শয়তানের শিং দু'টির মাঝখানে অস্ত যায় এবং এ সময় কাফেররা তার পূজা করে"। (মুসলিম)

এ হাদীসে সূর্যের শয়তানের শিংয়ের মাঝখানে দিয়ে উদয় হওয়া ও অস্ত যাওয়াকে একটা রূপক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে । এর মাধ্যমে এ ধারণা দেয়া হয়েছে যে সূর্যের উদয় ও অস্ত যাবার সময় শয়তান লোকদের জন্য একটি বিরাট বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে দেয় । লোকেরা যখন সূর্যের উদয় ও অস্ত যাবার সময় তার সামনে সিজদা করে তখন যেন মনে হয় শয়তান তাকে নিজের মাথায় করে এনেছে এবং মাথায় করে নিয়ে যাচ্ছে । রসূল (সা) তাঁর নিজের নিম্নোক্ত বাক্য দিয়ে এ রূপকের রহস্য ভেদ করেছেন "এ সময় কাফেররা তার পূজা করে"।– তাফহীমুল কুরআন)

শিরক  জ্ঞানীদের উপদেশ :

লোকমান হাকীম  তার নিজ পুত্রকে শিরক না করার জন্য উপদেশ দিলেন :

(৩১-লোকমান: ১৩) স্মরণ করো যখন লুকমান নিজের ছেলেকে উপদেশ দিচ্ছিল , সে বললো, “ হে পুত্র ! আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না৷ ২০  

২০ . লুকমানের পাণ্ডিত্যপূর্ণ উপদেশমালা থেকে এ বিশেষ উপদেশ বাণীটিকে এখানে উদ্ধৃত করা হয়েছে দুটি বিশেষ সম্পর্কের ভিত্তিতে। এক, তিনি নিজ পুত্রকে এ উপদেশটি দেন। আর একথা সুস্পষ্ট, মানুষ যদি দুনিয়ায় সবচেয়ে বেশি কারো ব্যাপারে আন্তরিক হতে পারে তাহলে সে হচ্ছে তার নিজের সন্তান। এক ব্যক্তি অন্যকে ধোঁকা দিতে পারে, তার সাথে মুনাফিকী আচরণ করতে পারে কিন্তু সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রকৃতির লোকটিও নিজ পুত্রকে এ নসীহত করা অকাট্যভাবে প্রমাণ করে যে, তার মতে শিরক যথার্থই একটি নিকৃষ্ট কাজ এবং এ জন্যই তিনি সর্বপ্রথম নিজের প্রাণাধিক পুত্র কে এ গোমরাহীটি থেকে দূরে থাকার উপদেশ দেন। দুই, মক্কার কাফেরদের অনেক পিতা-মাতা সে সময় নিজের সন্তানদেরকে শিরকী ধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার এবং মুহাম্মদ (সা) এর তাওহীদের দাওয়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবার জন্য বাধ্য করছিল। সামনের দিকের একথা বর্ণনা করা হয়েছে। তাই সেই অজ্ঞদেরকে শুনানো হচ্ছে, তোমাদের দেশেরই বহুল পরিচিতি জ্ঞানী পণ্ডিত তো তার নিজের পুত্রের মঙ্গল করার দায়িত্বটা তাকে শিরক থেকে দূরে থাকার নসিহত করার মাধ্যমেই পালন করেন। এখন তোমরা যে তোমাদের সন্তানদেরকে শিরক করতে বাধ্য করছো, এটা কি তাদের প্রতি শুভেচ্ছা না তাদের অমঙ্গল কামনা ৷

শিরক অনেক বড় জুলুম :

(৩১-লোকমান: ১৩) ......যথার্থই শিরক অনেক বড় জুলুম৷ ২১  

২১ . জুলুমের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে , কারো অধিকার হরণ করা এবং ইনসাফ বিরোধী কাজ করা। শিরক এ জন্য বৃহত্তর জুলুম যে, মানুষ এমন সব সত্তাকে তার নিজের স্রষ্টা, রিযিকদাতা ও নিয়ামতদানকারী হিসেবে বরণ করে নেয়, তার সৃষ্টিতে যাদের কোন অংশ নেই তাকে রিযিক দান করার ক্ষেত্রে যাদের কোন দখল নেই এবং মানুষ এ দুনিয়ায় যেসব নিয়ামত লাভে ধন্য হচ্ছে সেগুলো প্রদান করার ব্যাপারে যাদের কোন ভূমিকাই নেই। এটা এত অন্যায়, যার চেয়ে বড় কোন অন্যায়ের কথা চিন্তাই করা যায় না। তারপর মানুষ একমাত্র তার স্রষ্টারই বন্দেগী ও পূজা-অর্জনা করে তার অধিকার হরণ করে। তারপর স্রষ্টা ছাড়া অন্য সত্তার বন্দেগী ও পূজা করতে গিয়ে মানুষ যে কাজই করে তাতে সে নিজের দেহ ও মন থেকে শুরু করে পৃথিবী ও আকাশের বহু জিনিস ব্যবহার করে। অথচ এ সমস্ত জিনিস এক লা-শরীক আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন এবং এর মধ্যে কোন জিনিসকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো বন্দেগীতে ব্যবহার করার অধিকার তার নেই। তারপর মানুষ নিজেকে লাঞ্ছনা ও দুর্ভোগের মধ্যে ঠেলে দেবে না, তার নিজের ওপর এ অধিকার রয়েছে। কিন্তু সে স্রষ্টাকে বাদ দিয়ে সৃষ্টির বন্দেগী করে নিজেকে লাঞ্ছিত ও অপমানিতও করে এবং এই সঙ্গে শাস্তির যোগ্যও বানায়। এভাবে একজন মুশরিকের সমগ্র জীবন একটি সর্বমুখী ও সার্বক্ষণিক জুলুমে পরিণত হয়। তার কোন একটি মুহূর্তও জুলুমমুক্ত নয়।

শনিবারের বিধান :

 

সমুদ্র তীরের যে জনপদটি শনিবারের  বিধান লংঘণ করেছিল :

৭:১৬৩ (শনিবারেই মাছেরা ভেসে ভেসে তাদের কাছে আসতো)

শহরে প্রবেশ করা :

(১২:৬৭) তারপর সে বললো, “হে আমার সন্তানরা! মিসরের রাজধানীতে এক দরজা দিয়ে প্রবেশ করো না বরং বিভিন্ন দরজা দিয়ে প্রবেশ করো৷  কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা থেকে আমি তোমাদের বাঁচাতে পারি না৷ তাঁর ছাড়া আর কারোর হুকুম চলে না, তাঁর ওপরই আমি ভরসা করি এবং যার ভরসা করতে হয় তাঁর ওপরই করতে হবে৷

শহীদ :

(৫৭:১৯) যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান এনেছে  তারাই তাদের রবের কাছে ‘সিদ্দীক’ ও ‘শহীদ’   বলে গণ্য৷ তাদের জন্য তাদের পুরস্কার ও ‘নূর’ রয়েছে৷  আর যারা কুফরী করেছে এবং আমার আয়াতকে অস্বীকার করেছে তারাই দোযখের বাসিন্দা৷

শুক্রবিন্দু :

মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে শুক্রবিন্দু থেকে :

(১৬:৪) তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন ছোট্ট একটি ফোঁটা থেকে৷ তারপর দেখতে দেখতে সে এক কলহপ্রিয় ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছে৷

শুকর / শুয়োর :

(১৬:১১৫) আল্লাহ যাকিছু তোমাদের ওপর হারাম করেছেন তা হচ্ছে , মৃতদেহ, রক্ত, শূয়োরের গোশত এবং যে প্রাণীর ওপর আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর নাম নেয়া হয়েছে৷

শুনার  দেখার শক্তি আল্লাহর কতৃত্বে রয়েছে :

তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, ……..এই শুনার  দেখার শক্তি কার কর্তৃত্বে আছে ?........... তারা নিশ্চয়ই বলবে, আল্লাহ৷ বলো, তবুও কি তোমরা (সত্যের বিরোধী পথে চলার ব্যাপারে৷)সতর্ক হচ্ছো না? -১০:৩১,

শূল :

শূলে চড়ানো : ফেরাউন যাদুকরদেরকে ঈমান আনার অপরাধে শূলে চড়িয়েছে  হাত পা কেটে দিয়েছে:

(২০:৭১) ফেরাউন বললো, “তোমারা ঈমান আনলে, আমি তোমাদের অনুমতি দেবার আগেই” দেখছি, এ তোমাদের গুরু, এ-ই তোমাদের যাদুবিদ্যা শিখিয়েছিল৷ এখন আমি তোমাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কাটাচ্ছি এবং খেজুর গাছের কাণ্ডে তোমাদের শুলিবিদ্ধ করছি এরপর তোমরা জানতে পারবে আমাদের দু’জনের মধ্যে কার শাস্তি কঠিন ও দীর্ঘস্থায়ী”৷ (অর্থাৎ আমি না মূসা, কে তোমাদের বেশী কঠিন শাস্তি দিতে পারে)৷

শিক্ষা ব্যবস্থা :

শিক্ষা ব্যবস্থা হতে হবে ইসলাম মূখী যা একজন ব্যক্তিকে ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার বানাবার সাথে সাথে সৎ ও ইসলামী বিধিবিধান সম্পর্কে গভীর জ্ঞান দান করবে, এ লক্ষ্যে সমাজে একদল দ্বীন সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জনকারী  লোক অবশ্যই থাকতে হবে যারা দ্বীনের গভীর জ্ঞান অর্জন করবেন এবং লোকদেরকে সতর্ক করবেন: পারিভাষিক আলেম ‍উলামা মূল কথা নয়, মূল কথা হচ্ছে যিনি আল্লাহর দ্বীন সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করবেন :

 আর মুমিনদের সবার এক সাথে বের হয়ে পড়ার কোন দরকার ছিল না৷ কিন্তু তাদের জনবসতির প্রত্যেক অংশের কিছু লোক বেরিয়ে এলে ভাল হতো৷ তারা দীন সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করতো এবং ফিরে গিয়ে নিজের এলাকার লোকদের কে সতর্ক করতো, যাতে তারা (অমুসলমানী আচরণ থেকে ) বিরত থাকতো, এমনটি হলো না কেন? – ৯:১২২,

(১৮:৬৬) মূসা তাকে বললো, আমি কি আপনার সাথে থাকতে পারি, যাতে আপনাকে যে জ্ঞান শেখানো হয়েছে তা থেকে আমাকেও কিছু শেখাবেন ? 

(১৮:৭০) সে বললো, আচ্ছা, যদি আপনি আমার সাথে চলেন তাহলে আমাকে কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করবেন না যতক্ষণ না আমি নিজে সে সম্পর্কে আপনাকে বলি৷ 

কুরআনের জ্ঞান অর্জন করা মুমিনদের জন্য ফরজ : 

কিতাব ও হিকমত শিক্ষা করা মুসলমানদের একান্ত দায়িত্ব এবং কুরআন শিক্ষা করা ও শিক্ষা দেয়া উম্মতের দায়িত্ব এবং এটা নবীদের দায়িত্ব ছিল : ২:১২৯, ১৫১,

কুরআন বুঝে পাঠ করা :

আল্লাহর সাথে কথা বলা প্রসঙ্গে : আল্লাহর আয়াত সমূহ বুঝে পাঠ করাই আল্লাহর সাথে কথা বলা:

তারা বলে , আল্লাহ আমাদের সাথে কেন কথা বলেন না ? অথচ আল্লাহ সুষ্পষ্ট আয়াত সমূহ নাযিল করেছেন ২:১১৮, ২:২৫৩, (নবীদের সাথে কথা বলা ) , ৪:১৬৪,(মূসা আ: এর সাথে সরাসরি আল্লাহর কথা বলা )

কুরআন তেলাওয়াত করতে হবে, তবে কুরআন বুঝে পাঠ করার গুরুত্ব  প্রয়োজনীয়তা বেশী :

২:২২১, ৩:১০৮, ২:৭৮

কুরআনের জ্ঞান না থাকা : ২:৭৮

(বিস্তারিত দেখুন : ক > কুরআন > কুরআন পাঠ করা আদব)

শিংগা / শিঙ্গা :

শিংগায় ফুঁক দেওয়া :

(১৮:৯৯) আর সে দিন  আমি লোকদেরকে ছেড়ে দেবো, তারা (সাগর তরংগের মতো) পরস্পরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে আর শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে এবং আমি সব মানুষকে একত্র করবো৷ 

(২০:১০২) সেদিন যখন সিংগায় ফুঁক দেয়া হবে  এবং আমি অপরাধীদেরকে এমনভাবে ঘেরাও করে আনবো যে, তাদের চোখ (আতংকে) দৃষ্টিহীন হয়ে যাবে৷

(মু’মিনুন:১০১) তারপর যখনই শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, তখন তাদের মধ্যে আর কোন আত্মীয়তা বা সম্পর্কে থাকবে না এবং তারা পরস্পরকে জিজ্ঞেসও করবে না ৷

(২৭-নমল:৮৭) আর কি হবে সেদিন যেদিন সিংঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে এবং ভীত বিহবল হয়ে পড়বে আকাশ ও পৃথিবীতে যারা আছে তারা সবাই - তারা ছাড়া যাদেরকে আল্লাহ এ ভীতি বিহবলতা থেকে রক্ষা করতে চাইবেন - আর সবাই তার সামনে হাজির হবে কানচেপে ধরে৷ 

( শিংগার ফুৎকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা আন'আম ৪৭, সূরা ইবরাহীম ৫৭, সূরা ত্বা-হা ৭৮, সূরা হাজ্জ ১, সূরা ইয়াসীন ৪৬-৪৭ এবং সূরা যুমার ৭৯ টীকা। )

শ্রেষ্ঠ / শ্রেষ্ঠত্ব :

(১৬:৭১) আর দেখো, আল্লাহ তোমাদের একজনকে আর একজনের ওপর রিযিকের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন৷ তারপর যাদেরকে এ শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে তারা এমন নয় যে নিজেদের রিযিক নিজেদের গোলামদের দিকে ফিরিয়ে দিয়ে থাকে, যাতে উভয় এ রিযিকে সমান অংশীদার হয়ে যায়৷ তাহলে কি এরা শুধু আল্লাহরই অনুগ্রহ মেনে নিতে অস্বীকার করে ?

(২৭.নামল:১৫) (অন্যদিকে) আমি দাউদ ও সুলাইমানকে জ্ঞান দান করলাম  এবং তারা বললো, সেই আল্লাহর শোকর যিনি তাঁর বহু মু’মিন বান্দার ওপর আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন৷

শোকর :  / কৃতজ্ঞতা / শুকরিয়া :

(২৭-নমল:৪০)....এ আমার রবের অনুগ্রহ, আমি শোকরগুযারী করি না নাশোকরী করি তা তিনি পরীক্ষা করতে চান৷

 (২৯-আনকাবুত:১৭) ....আল্লাহর কাছে রিযিক চাও, তাঁরই বন্দেগী করো এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, তারই দিকে তোমাদের ফিরে যেতে হবে৷

যে ব্যক্তি শোকরগুযারী করে তার শোকর তার নিজের জন্যই উপকারী :

(২৭-নমল:৪০)....আর যে ব্যক্তি শোকরগুযারী করে তার শোকর তার নিজের জন্যই উপকারী৷ অন্যথায় কেউ অকৃতজ্ঞ হলে, আমার রব করো ধার ধারে না এবং তিনি আপন সত্তায় আপনি মহীয়ান৷

وَمَن يَشْكُرْ فَإِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهِ ۖ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ حَمِيدٌ﴾

(৩১-লোকমান: ১২) .....যে ব্যক্তি শোকর করবে /কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে তার  শোকর/কৃতজ্ঞতা হবে তার নিজেরই জন্য লাভজনক৷ আর যে ব্যক্তি কুফরী করবে, সে ক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ অমুখাপেক্ষী এবং নিজে নিজেই প্রশংসিত

তোমরা খুব কমই শোকর আদায় কর :

(৩২- আস-সাজদা : ৯) তারপর তাকে সর্বাঙ্গ সুন্দর করেছেন  এবং তার মধ্যে নিজের রূহ ফুঁকে দিয়েছেন আর তোমাদের কান, চোখ ও হৃদয় দিয়েছেন,  তোমরা খুব কমই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো৷ ১৮  

১৮ . অর্থাৎ এ মহান মর্যাদাসম্পন্ন মানবিক রূহ এত উন্নত পর্যায়ের গুণাবলী সহকারে তোমাকে তো এ জন্য দেয়া হয়নি যে, তুমি দুনিয়ায় পশুদের মতো অবস্থান করবে এবং পশুরা নিজেদের জীবনের যে চিত্র তৈরি করতে পারে তুমি তোমার জীবনের জন্য তেমনি ধরনের একটি চিত্র তৈরি করে নেবে। এ চোখ দু'টি তোমাকে দেয়া হয়েছিল অন্তরদৃষ্টি দিয়ে দেখার জন্য , অন্ধ হয়ে থাকার জন্য দেয়া হয়নি। এ কান দুটি তোমাকে দেয়া হয়েছিল পূর্ণ মনোযোগ সহকারে শোনার জন্য, বধির হয়ে বসে থাকার জন্য নয়। এ জন্য দেয়া হয়নি যে, তোমার সমস্ত যোগ্যতা কেবলমাত্র নিজের পাশবিক প্রবৃত্তি লালনের উপকরণ সংগ্রহে ব্যয় করবে এবং এর চাইতে যদি কিছুটা ওপরে ওঠো তাহলে নিজের স্রষ্টার বিরূদ্ধে বিদ্রোহের দর্শন ও কর্মসূচি তৈরি করতে লেগে যাবে। আল্লাহর কাছ থেকে এ মহামূল্যবান নিয়ামত লাভ করার পর যখন তুমি নাস্তিক্যবাদ বা শিরকের পথ অবলম্বন করো, যখন তুমি নিজেই খোদা বা অন্য খোদাদের বান্দা হয়ে বসো, যখন তুমি প্রবৃত্তির দাস হয়ে দেহ ও কামনার ভোগ-লালসায় ডুবে থাকো তখন যেন নিজের খোদাকে একথা বলো যে, আমি এসব নিয়ামতের যোগ্য ছিলাম না, আমাকে মানুষ সৃষ্টি না করে একটি বানর, নেকড়ে, কুমীর বা কাক হিসেবে সৃষ্টি করা উচিত ছিল। 

শোকর গুজার বান্দা :

(২৭.নামল:১৫) (অন্যদিকে) আমি দাউদ ও সুলাইমানকে জ্ঞান দান করলাম  এবং তারা বললো, সেই আল্লাহর শোকর যিনি তাঁর বহু মু’মিন বান্দার ওপর আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন৷

তারা তরংগ বেষ্টিতে হয়ে গেছে তখন সবাই নিজের আনুগত্যকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে তার কাছে দোয়া করতে থাকে এবং বলতে থাকে, “যদি তুমি আমাদের  বিপদ থেকে উদ্ধার করো তাহলে আমরা শোকরগুজার বান্দা হয়ে যাবো কিন্তু যখন তিনি তাদেরকে বিপদমুক্ত করেন তখন তারাই সত্য থেকে বিচ্যূত হয়ে পৃথিবীতে বিদ্রোহ করতে থাকে৷ – ১০:২১-২৩,

(ব্যাখ্যা : প্রত্যেক মানুষের অন্তরে রয়েছে তাওহিদের সত্যতার নিশানী। যতদিন উপায়-উপকরণ অনুকূল থাকে ততদিন মানুষ আল্লাহকে ভুলে পার্থিব জীবন নিয়ে অহংকারে মত্ত হয়ে থাকে। আর উপায় উপকরণ প্রতিকূল হয়ে গেলে এবং  সংগে যেসব সহায়ের ভিত্তিতে সে পৃথিবীতে বেঁচেছিল সেগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেলে তারপর কট্টর মুশরিক  নাস্তিকের মনেও  সাক্ষ ধ্বনিত হতে থাকে যে, কার্যকারণের  সমগ্র জগতের ওপর কোন আল্লাহর কর্তৃত্ব পরিব্যাপ্ত হয়ে আছে, তিনি একক আল্লাহ এবং তিনি শক্তিশালী  বিজয়ী )

আল্লাহ তো লোকদের প্রতি অনুগ্রহ পরায়ণ কিন্তু অধিকাংশ মানুষ শোকর গুজারী করে না-১০:৬০,

(১৪:৩৭) হে আমাদের রব! আমি একটি তৃণ পানিহীন উপত্যকায় নিজের বংশধরদের একটি অংশকে তোমার পবিত্র গৃহের কাছে এনে বসবাস করিয়েছি৷ পরওয়ারদিগার! এটা আমি এ জন্য করেছি যে, এরা এখানে নামায কায়েম করবে৷ কাজেই তুমি লোকদের মনকে এদের প্রতি আকৃষ্ট করো এবং ফলাদি দিয়ে এদের আহারের ব্যবস্থা করো,  হয়তো এরা শোকরগুজার হবে৷  

(১৬:১৪) এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকো৷

(১৬:১২০) প্রকৃতপক্ষে ইবরাহীম নিজেই ছিল একটি পরিপূর্ণ উম্মত, আল্লাহর হুকুমের অনুগত এবং একনিষ্ঠ৷ সে কখনো মুশরিক ছিল না৷১২১) সে ছিল আল্লাহর নিয়ামতের শোকরকারী৷

(১৭:৩) ..... এবং নূহ একজন কৃতজ্ঞ বান্দা ছিল৷

(২১:৮০) ........তাহলে কি তোমরা কৃতজ্ঞ হবে ?

(হাজ্ব:৩৬) ..এ পশুগুলোকে আমি এভাবেই তোমাদের জন্য বশীভূত করেছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো৷

(হাজ্ব:৩৭) ....তিনি তাদেরকে তো(গৃহপালিত পশুগুলিকে) তোমাদের জন্য এমনভাবে অনুগত করে দিয়েছেন যাতে তাঁর (আল্লাহর) দেয়া পথনির্দেশনার ভিত্তিতে তোমরা তাঁর (আল্লাহর)  শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো৷

(মু’মিনুন:৭৮) তিনিই আল্লাহ যিনি তোমাদের শোনার ও দেখার শক্তি দিয়েছেন এবং চিন্তা করার জন্য অন্তঃকরণ দিয়েছেন, কিন্তু তোমরা কমই কৃতজ্ঞ হয়ে থাকো ৷

(২৮-ক্বাছাছ : ৭৩) তাঁরই রহমত, যে তিনি তোমাদের জন্য তৈরী করেছেন রাত ও দিন, যাতে তোমরা (রাতে) শান্তি এবং (দিনে) নিজের রবের অনুগ্রহ সন্ধান করতে পারো, হয়তো তোমরা শোকরগুজার হবে৷  

পিতা-মাতার শোকর আদায় কর:

(৩১-লোকমান: ১৪) -আর  প্রকৃতপক্ষে আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার হক চিনে নেবার জন্য নিজেই তাকিদ করেছি৷ তার মা দুর্বলতা সহ্য করে তাকে নিজের গর্ভে ধারণ করে এবং দু’বছর লাগে তার দুধ ছাড়তে ৷  (এ জন্য আমি তাকে উপদেশ দিয়েছি) আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো এবং নিজের পিতা-মাতার প্রতিও, আমার দিকেই তোমাকে ফিরে আসতে হবে৷  

অপরাধ করার পরও আল্লাহ অনুগ্রহ করে তোমাদেরকে অবকাশ দিচ্ছেন, কিন্তু তারপরও তোমরা তার এ অবকাশ দেওয়ার শুকরিয়া আদায় করে সঠিক পথে ফিরে আসছো না :

(২৭.নামল:৭২) বল, বিচিত্র কি যে, আযাবের ব্যপারে তোমরা ত্বরান্বিত করতে চাচ্ছো তার একটি অংশ তোমাদের নিকটবর্তী হয়ে যাবে৷৭৩) .আসলে তোমার রব তো মানুষের প্রতি বড়ই অনুগ্রহ কারী৷ কিন্তু অধিকাংশ লোক শোকর গুজারি করে না

(অর্থাৎ লোকেরা দোষী সাব্যস্ত হওয়ার সাথে সাথেই আল্লাহ তাদেরকে পাকড়াও করেন না বরং তাদের সামলে নেবার সুযোগ দেন, এটা তো রব্বুল আলামীনের অনুগ্রহ। কিন্তু অধিকাংশ লোক এজন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এ সুযোগ ও অবকাশকে নিজেদের সংশোধনের জন্য ব্যবহার করে না। বরং পাকড়াও হতে দেরি হচ্ছে দেখে মনে করে এখানে কোন পাকড়াওকারী নেই, কাজেই যা মন চায় করে যেতে থাকো এবং যে বুঝাতে চায় তার কথা বুঝতে যেয়ো না। )

(বিস্তারিত দেখূন : আ > আযাব, অ > অবকাশ)

শোকর আদায় করলে নিয়ামত  আরো বাড়িয়ে দেওয়া হয় :

لَئِن شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ ۖ وَلَئِن كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ﴾

(১৪:৭) আর স্মরণ করো তোমাদের রব এই বলে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, যদি কৃতজ্ঞ থাকো, তাহলে আমি তোমাদের আরো বেশী দেবো আর যদি নিয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞ হও তাহলে আমার শাস্তি বড়ই কঠিন৷  

শোকর আদায় না করার জন্য নিয়ামত ছিনিয়ে নেয়া হলো : সাবা জাতির ইতিহাস দেখুন : কিভাবে একটি সমৃদ্ধশালী জাতিকে অকৃতজ্ঞতার কারণে নি:শেষ করে দেওয়া হয়েছিল :

 ক্লিক করুন : সাবা জাতি  :  ক্লিক করুন:  টিকা নং : ২৫   থেকে ৩৭.  পর্যন্ত।

ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে পারে তারাই যারা ধৈর্যশীল  শুকরিয়া আদায় করে থাকে :

(১৪:৫) ইতিহাসের  শিক্ষণীয় ঘটনাবলী শুনিয়ে উপদেশ দাও৷ এ ঘটনাবলীর মধ্যে বিরাট নির্দশণ  রয়েছে এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে সবর করে ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে৷

আল্লাহ তোমাদের চোখ কান  হৃদয় দিয়েছেন, যাতে তোমরা  শোকরগোজার হও :

(১৬:৭৮) আল্লাহ তোমাদের মায়ের পেট থেকে তোমাদের বের করেছেন এমন অবস্থায় যখন তোমরা কিছুই জানতে না৷ তিনি তোমাদের কান দিয়েছেন, চোখ দিয়েছেন, চিন্তা-ভাবনা করার মতো হৃদয় দিয়েছেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো৷

আল্লাহর নিয়ামত সমূহের শুকরিয়া আদায় করো :

(আরো দেখুন : অ > অনুগ্রহ)

আল্লাহর নিদর্শন থেকে শিক্ষালাভ করতে পারে তারাই যারা ধৈর্যশীল  শোকরকারী :

(৩১-লোকমান: ৩১) ...আসলে এর মধ্যে রয়েছে বহু নিদর্শন প্রত্যেক সবর ও শোকরকারীর জন্য৷ ৫৬  

৫৬ . অর্থাৎ যাদের মধ্যে এ দুটি গুণ পাওয়া যায় তারা যখন এ নিদর্শনগুলোর মাধ্যমে সত্যকে চিনতে পারে তখন তারা চিরকালের জন্য তাওহীদের শিক্ষা গ্রহণ করে তাকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরে। প্রথম গুণটি হচ্ছে , তাদের বড়ই সবরকারী (--) তথা অত্যন্ত ধৈর্যশীল হতে হবে। তারা অস্থিরমতি হবে না বরং তাদের পদক্ষেপে দৃঢ়তা থাকবে। সহনীয় ও অসহনীয় , কঠিন ও কোমল এবং ভালো ও মন্দ সকল অবস্থায় তারা একটি সৎ ও সুস্থ বিশ্বাসের ওপর অটল থাকবে। তাদের মধ্যে এ ধরনের কোন দুর্বলতা থাকবে না যে, দুঃসময়ের মুখোমুখি হলে আল্লাহর সামনে নতজানু হয়ে কান্নাকাটি করতে থাকবে আস সুসময় আসার সাথে সাথেই সবকিছু ভুলে যাবে। অথবা এর বিপরীত ভালো অবস্থায় আল্লাহকে মেনে চলতে থাকবে এবং বিপদের একটি আঘাতেই আল্লাহকে গালি দিতে শুরু করবে। দ্বিতীয় গুণটি হচ্ছে তাদেরকে বড়ই শোকরকারী (--) তথা অত্যন্ত কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী হতে হবে। তারা নিমকহারাম ও বিশ্বাসঘাতক হবে না, উপকারীর উপকার ভুলে যাবে না। বরং অনুগ্রহের কদর করবে এবং অনুগ্রহকারীর জন্য একটি স্বতন্ত্র কৃতজ্ঞতার অনুভূতি হর-হামেশা নিজের মনের মধ্যে জাগ্রত রাখবে।

আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের পদ্ধতি সমূহ :

১। অনুগ্রহ করো যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন

(২৮-ক্বাছাছ : ৭৭) ...অনুগ্রহ করো যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন

(আরো দেখুন : শ > শোকর)

২। সকৃতজ্ঞ চিত্তে আল্লাহর বন্দেগী কর :

(১৬:১১৪) কাজেই হে লোকেরা! আল্লাহ তোমাদের যা কিছু পাক-পবিত্র ও হালাল রিযিক দিয়েছেন তা খাও এবং আল্লাহর অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো,  যদি তোমরা সত্যিই তাঁর বন্দেগী করতে বদ্ধপরিকর হয়ে থাকো

আল্লাহ বড়ই অনুগ্রহ কারী : কিন্তু অধিকাংশ লোক শোকর গুজারি নয় :

(২৭.নামল:৭৩) .আসলে তোমার রব তো মানুষের প্রতি বড়ই অনুগ্রহ কারী৷ কিন্তু অধিকাংশ লোক শোকর গুজারি করে না৷

নূহ : কে শোকর আদায় করার নির্দেশ :

(মু’মিনুন:২৮) তারপর যখন তুমি নিজের সাথীদের নিয়ে নৌকায় আরোহণ করবে তখন বলবে, আল্লাহর শোকর, যিনি আমাদের উদ্ধার করেছেন জালেমদের হাত থেকে৷২৯) আর বলো,হে পরওয়ারদিগার ! আমাকে নামিয়ে দাও বরকতপূর্ণ স্থানে এবং তুমি সর্বোত্তম স্থান দানকারী৷’’

অসৎ পথ থেকে সৎ পথে ফিরে আসাও শোকরগুজারীর একটা বড় অংশ : কারণ আল্লাহ অবকাশ দিয়েছেন বলেই সৎপথে ফিরে আসার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে :

আল্লাহ মানুষের শত্রু নন, তিনি স্বভাবতই মানুষের প্রতি অনুগ্রহশীল: তাই অপরাধ করার পরও মানুষকে সাথে সাথে শাস্তি না দিয়ে অবকাশ দিয়ে থাকেন, যাতে মানুষ শোকর গুজার হয়ে সৎ পথে ফিরে আসে :

(২৭-নমল:৭৩) .আসলে তোমার রব তো মানুষের প্রতি বড়ই অনুগ্রহ কারী৷ কিন্তু অধিকাংশ লোক শোকর গুজারি করে না৷৯০ 

(৯০. অর্থাৎ লোকেরা দোষী সাব্যস্ত হওয়ার সাথে সাথেই আল্লাহ তাদেরকে পাকড়াও করেন না বরং তাদের সামলে নেবার সুযোগ দেন, এটা তো রব্বুল আলামীনের অনুগ্রহ। কিন্তু অধিকাংশ লোক এজন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এ সুযোগ ও অবকাশকে নিজেদের সংশোধনের জন্য ব্যবহার করে না। বরং পাকড়াও হতে দেরি হচ্ছে দেখে মনে করে এখানে কোন পাকড়াওকারী নেই, কাজেই যা মন চায় করে যেতে থাকো এবং যে বুঝাতে চায় তার কথা বুঝতে যেয়ো না। )

শোআয়ব : এর ঘটনা :

(১১:৮৪) আর মাদ্‌য়ানবাসীদের কাছে আমি তাদের ভাই শো’আয়েবকে পাঠালাম৷   সে বললো : “হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা! আল্লাহর বন্দেগী করো৷ তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই৷ আর মাপে ও ওজনে কম করো না৷ আর আমি তোমাদের ভালো অবস্থায় দেখছি কিন্তু আমার ভয় হয় কাল তোমাদের ওপর এমন দিন আসবে যার আযাব সবাইকে ঘেরাও করে ফেলবে৷

‡kvbv :

hviv m‡Z¨i AvnŸvb ïb‡Z cvqbv Zv‡`i AšÍ‡i ‡gvni gviv :

আর আমি তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেই৷ ফলে তার কিছুই শোনে না-7:100| KviY Zviv BwZnvm †_‡K wkÿ MÖnY K‡ibv ZvB Avjøvn Zv‡`i AšÍ‡i †gvni †g‡i †`b - পৃথিবীর পূর্ববর্তী অধিবাসীদের পর যারা তার উত্তরাধিকারী হয়, তারা কি এ বাস্তবতা থেকে ততটুকুও শেখেনি যে আমি চাইলে তাদের অপরাধের দরুন তাদেরকে পাকড়াও করতে পারি-7:100,

        

wkÿv MÖnY Kiv :

hviv BwZnvm †_‡K wkÿ MÖnY K‡ibv ZvB Avjøvn Zv‡`i AšÍ‡i †gvni †g‡i †`b - পৃথিবীর পূর্ববর্তী অধিবাসীদের পর যারা তার উত্তরাধিকারী হয়, তারা কি এ বাস্তবতা থেকে ততটুকুও শেখেনি যে আমি চাইলে তাদের অপরাধের দরুন তাদেরকে পাকড়াও করতে পারি-আর আমি তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেই৷ ফলে তার কিছুই শোনে না-7:100|  


‡kvKi / ïKwiqv :

Avjøvni †kvKi ‡MvRvi ev›`v :

7:58, কাজেই আমি তোমাকে যা কিছু দেই তা নিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো- 7-144,

Avjøvni †kvKi †MvRvi K‡i bv hviv:

Zviv AnsKvix :

কিন্তু তাদের এমনি অবস্থা ছিল যে, ভাল সময় এলে তারা বলতো এটা তো আমাদের প্রাপ্য৷-7:131,

kvw¯Í/Avhve :

Avjøvni Avhv‡ei e¨vcv‡i †Kej Kv‡di m¤úª`vqB wbwðšÍ n‡q e‡m _vK‡Z cv‡i : জনপদের লোকেরা কি এখন এ ব্যাপারে নির্ভয় হয়ে গেছে যে, আমার শাস্তি কখনো অকস্মাত রাত্রিকালে তাদের ওপর এসে পড়বে না, যখন তারা থাকবে নিদ্রামগ্ন? অথবা তারা নিশ্চিন্তে হয়ে গেছে যে, আমাদের মজবুত হাত কখনো দিনের বেলা তাদের ওপর এসে পড়বে না, যখন তারা খেলা ধুলায় মেতে থাকবে? এরা কি আল্লাহর কৌশলের ব্যাপারে নির্ভীক হয়ে গেছে?  অথচ যে সব সম্প্রায়ের ধ্বংস অবধারিত তারা ছাড়া আল্লাহর কৌশলের ব্যাপারে আর কেউ নির্ভীক হয় না-7:97-99,

kvw¯Í Avjøvn hv‡K Lywk w`‡eb, wKš‘ Zvui AbyMÖn me wRwb‡mi Dci cwie¨ß Avi Zv ZvivB cv‡e hviv Avjøvni  bvdigvbx †_‡K `~‡i _v‡K : 7:156,

Kv‡diiv ivm~jMY‡K P¨v‡jÄ K‡i ej‡Zv :   বেশ, যদি তুমি সত্যবাদী হও, তাহলে আমাদের যে আযাবের হুমকি দিচ্ছো, তা নিয়ে এসো৷” -7:70, “নিয়ে এসো সেই আযাব যার হুকমি তুমি আমাদের দিয়ে থাকো, যদি সত্যিই তুমি নবী হয়ে থাকো৷”  7:77,

nhiZ †kvAvBe Av: Ges gv`Bqvbevmx‡`i NUbv : 7:85,

nhiZ †kvAvBe Av: Gi RvwZ Cgv‡bi `vex`vi wQj, wKš‘ weK…Z gymjgvb wQj : 7:85,

ওজন ও পরিমাপ পুরোপুরি দাও, লোকদের পাওনা জিনিস কম করে দিয়ো না৷ ৭০  এবং পৃথিবী পরিশুদ্ধ হয়ে যাওয়ার পর তার মধ্যে আর বিপর্যয় সৃষ্টি করো না৷ ৭১  এরই মধ্যে রয়েছে তোমাদের কল্যাণ ,যদি তোমরা যথার্থ মুমিন হয়ে থাকো৷৭২ 

৬৯. মাদ্ইয়ানের (মাদায়েন) মূল এলাকটি হিজাযের উত্তর পশ্চিমে এবং ফিলিস্তিনের দক্ষিণে লোহিত সাগর ও আকাবা উপসাগরের উপকূলে অবস্থিত ছিল। তবে সাইনা (সিনাহ) উপদ্বীপের পূর্ব উপকূলেরও এর কিছুটা অংশ বিস্তৃত ছিল। এখানকার অধিবাসীরা ছিল একটি বিরাট ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। প্রাচীন যুগে যে বাণিজ্যিক সড়কটি লোহিত সাগরের উপকূল ধরে ইয়ামান থেকে মক্কা ও ইয়াম্বু হয়ে সিরিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল এবং দ্বিতীয় যে বাণিজ্যিক সড়কটি ইরাক থেকে মিসরের দিকে চলে যেতো তাদের ঠিক সন্ধিস্থলে এ জাতির জনপদগুলো অবস্থিত ছিল । এ কারণে আরবের ছোট বড় সবাই মাদ্ইয়ানী জাতি সম্পর্কে জানতো এবং এ জাতিটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার পরও সারা আরবে এর খ্যাতি অপরিবর্তিত থাকে।কারণ আরববাসীদের বাণিজ্যিক কাফেলা মিসর ও ইরাক যাবার পথে দিন রাত এর ধ্বংসাবশেষের ভেতর দিয়েই চলাচল করতো। 

মাদ্ইয়ানবাসীদের সম্পর্কে আর একটি প্রয়োজনীয় কথা ভালভাবে জেনে নিতে হবে। সেটি হচ্ছে, এ মাদ্ইয়ানের অধিবাসীরা হযরত ইবরাহীমের পুত্র মিদিয়ান এর সাথে বিভিন্ন রকমের সম্পর্ক বন্ধনে আবদ্ধ ছিল।মিদিয়ান ছিলেন হযরত ইবরাহীমের তৃতীয় স্ত্রীর কাতুরা এর গর্ভজাত সন্তান। প্রাচীন যুগের নিয়ম অনুযায়ী যারা কোন খ্যাতিমান পুরুষের সাথে সম্পর্কিত থাকতো তাদেরকে কালক্রমে ঐ ব্যক্তির সন্তান গণ্য করে অমুকের বংশধর বলা হতো। এ নিয়ম অনুযায়ী আরবের জনসংখ্যার বৃহত্তর অংশ বনী ইসমাঈল হিসেবে পরিচিত লাভ করে। অন্যদিকে ইয়াকূবের (অন্য নাম ইসরাঈল) সন্তানদের হাতে ইসলাম গ্রহণকারীদের সবাই বনী ইসরাঈল নামে অভিহিত হয়। অনুরূপ ভাবে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের পুত্র মিদিয়ানের প্রভাবিত মাদ্ইয়ানের অধিবাসীগণ বনী মিদিয়ান নামে পরিচিত হয় এবং তাদের দেশের নামই হয়ে যায় মাদ্ইয়ান বা মিদিয়ান। এ ঐতিহাসিক তথ্যটি জানার পর এ ক্ষেত্রে ধারণা করার আর কোন কারণই থাকে না যে, এ জাতিটি সর্বপ্রথম হযরত শোআইব আলাইহিস সালামের মধ্যমেই সত্য দীন তথা ইসলামের দাওয়াত পেয়েছিল। আবির্ভাবকালে এদের অবস্থা ছিল একটি বিকৃত মুসলিম মিল্লাতের মত, যেমন মূসা আলাইহিস সালামের আবির্ভাবকালে ছিল বনী ইসরাঈলের অবস্থা। হযরত ইবরাহীমের পরে ছয় সাত শো বছর পর্যন্ত এরা মুশরিক ও চরিত্রহীন জাতিদের মধ্যে বাসবাস করতে করতে শিরক ও নানা রকমের দুষ্কর্মে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু এ সত্ত্বেও এদের ঈমানের দাবী ও সে জন্যে অহংকার করার মনোবৃত্তি অপরিবর্তিত ছিল।

৭০. এ থেকে জানা যায়, এ জাতির দুটি বড় দোষ ছিল। একটি শিরক ও এবং অন্যটি ব্যবসায়িক লেন দেনে অসাধুতা। এ দুটি দোষ সংশোধন করার জন্যে হযরত শোআইব আলাইহিস সালামকে তাদের মধ্যে পাঠানো হয়েছিল।

৭১. এ বাক্যটির যথাযথ ব্যাখ্যা ইতিপূর্বে আরাফের ৪৪ও ৪৫নং টীকায় করা হয়েছে। এখানে হযরত শোআইব তাঁর এ উক্তিটির মাধ্যমে আভাসে ইংগিতে যে কথাটি বিশেষভাবে বলতে চেয়েছেন তা এই যে, পূর্ববর্তী নবীগণের বিধান ও পথনির্দেশনার ভিত্তিতে সত্য দ্বীন ও সৎ চারিত্রিক গুণাবলীতে ভুষিত যে জীবন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল, এখন তোমরা নিজেদের ভ্রান্ত বিশ্বাস ও নৈতিক দুষ্কৃতির মাধ্যমে তাকে বিনষ্ট করে দিয়ো না।

শৈশব /  শিশু :

(১৯:১২) “হে ইয়াহইয়া! আল্লাহর কিতাবকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো”৷  আমি তাকে শৈশবেই “হুকুম” দান করেছি

শিশুর কথা বলা :

(১৯:২৯) মারয়াম শিশুর প্রতি ইশারা করলো৷ লোকেরা বললো, “কোলের শিশুর সাথে আমরা কি কথা বলবো? ৩০) শিশু বলে উঠলো, “আমি আল্লাহর বান্দা, তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন ও নবী করেছেন ৩১) এবং রবকতময় করেছেন যেখানেই আমি থাকি না কেন আর যতদিন আমি বেঁচে থাকবো ততদিন নামায ও যাকাত আদায়ের হুকুম দিয়েছেন৷  ৩২) আর নিজের মায়ের হক আদায়কারী করেছেন, এবং আমাকে অহংকারী ও হতভাগা করেননি৷  ৩৩) শান্তি আমার প্রতি যখন আমি জন্ম নিয়েছি ও যখন আমি মরবো এবং যখন আমাকে জীবিত করে উঠানো হবে”৷

শিশুকে সিন্দুকে ভাসিয়ে দেওয়া :

(২০:৩৮) (হে মসা)  সে সময়ের কথা মনে করো যখন আমি তোমার মাকে ইশারা করেছিলাম, এমন ইশারা যা অহীর মাধ্যমে করা হয়, এই মর্মে এই এ শিশুকে সিন্দুকের মধ্যে রেখে দাও এবং সিন্দুকটি দরিয়ায় ভাসিয়ে দাও, দরিয়া তাকে তীরে নিক্ষেপ করবে এবং আমার শত্রু ও এ শিশুর শত্রু একে তুলে নেবে৷

নবীর শত্রুর দ্বারাই শিশু নবীর প্রতিপালন :

(২০:৩৮) (হে মসা)  সে সময়ের কথা মনে করো যখন আমি তোমার মাকে ইশারা করেছিলাম, এমন ইশারা যা অহীর মাধ্যমে করা হয়, এই মর্মে এই এ শিশুকে সিন্দুকের মধ্যে রেখে দাও এবং সিন্দুকটি দরিয়ায় ভাসিয়ে দাও, দরিয়া তাকে তীরে নিক্ষেপ করবে এবং আমার শত্রু ও এ শিশুর শত্রু একে তুলে নেবে৷৩৯) আমি নিজের পক্ষ থেকে তোমার প্রতি ভালোবাসা সঞ্চার করেছিলাম এবং এমন ব্যবস্থা করেছিলাম যাতে তুমি আমার তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হও৷৪০) স্মরণ করো, যখন তোমার বোন চলছিল, তারপর গিয়ে বললো, “আমি কি তোমাদের তার সন্ধান দেবো যে এ শিশুকে ভালোভাবে লালন করবে?”এভাবে আমি তোমাকে আবার তোমার মায়ের কাছে পৌছিয়ে দিয়েছি, যাতে তার চোখ শীতল থাকে এবং সে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ না হয়৷ এবং (এটাও স্মরণ করো) তুমি একজনকে হত্যা করে ফেলেছিলে, আমি তোমাকে এ ফাঁদ থেকে বের করেছি এবং তোমাকে বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে এসেছি, আর তুমি মাদ্য়ানবাসীদের মধ্যে কয়েক বছর অবস্থান করেছিলে৷ তারপর এখন তুমি ঠিক সময়েই এসে গেছো৷ হে মূসা!

শিশুকে মূল প্রকৃতির উপর সৃষ্টি করা হয় : অত:পর তার পিতা মাতাই তাকে সঠিক অথবা বেঠিক রাস্তায় পরিচালিত করে :

প্রকৃতি :

নিজের চেহারা দ্বীনের দিকে স্থির নিবদ্ধ রাখো : আল্লাহর সৃষ্ট মূল প্রকৃতির উপর অটল থাকো,  দ্বীনের উপর অটল থাকো :

(৩০-রূম: ৩০) কাজেই  ( হে নবী এবং নবীর অনুসারীবৃন্দ ) একনিষ্ঠ হয়ে নিজের চেহারা এ দীনের  দিকে স্থির নিবদ্ধ করে দাও৷   আল্লাহ মানুষকে যে প্রকৃতির ওপর সৃষ্টি করেছেন তাঁর ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাও৷ ৪৫   আল্লাহ তৈরি সৃষ্টি কাঠামো পরিবর্তন করা যেতে পারে না৷ ৪৬   এটিই পুরোপুরি সঠিক ও যথার্থ দীন৷ ৪৭   কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না৷

৪৫ . অর্থাৎ সমগ্র মানব জাতিকে এ প্রকৃতির ওপর সৃষ্টি করা হয়েছে যে, এক আল্লাহ ছাড়া তাদের আর কোন স্রষ্টা , রব, মাবুদ ও আনুগত্য গ্রহণকারী নেই। এ প্রকৃতির ওপর তোমাদের প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়া উচিত। যদি স্বেচ্ছাচারীভাবে চলার নীতি অবলম্বন করো তাহলে প্রকৃতির বিরুদ্ধাচরণ করবে। আর যদি অন্যের বন্দেগীর শিকল নিজের গলায় পরে নাও তাহলেও নিজের প্রকৃতির বিরুদ্ধে কাজ করবে। এ বিষয়টি নবী (সা) বহু হাদীসে সুস্পষ্ট করে বর্ণনা করেছেন। যেমনঃ 

--------------------------

" মাতৃগর্ভ থেকে জন্মলাভকারী প্রত্যেকটি শিশু আসলে মানবিক প্রকৃতির ওপরই জন্ম লাভ করে। তাঁরপর তাঁর মা-বাপই তাকে পরবর্তীকালে ইহুদী, খৃষ্টান ও অগ্নিপূজারী হিসেবে গড়ে তোলে।" 

এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে, যেমন প্রত্যেকটি পশুর পেট থেকে পুরোপুরি নিখুঁত ও সুস্থ পশুই বের হয়ে আসে। কোন একটা বাচ্চাও কান কাটা অবস্থায় বের হয়ে আসে না। পরে মুশরিকরা নিজেদের জাহিলী কুসংস্কারের কারণে তাঁর কান কেটে দেয়। 

মুসনাদে আহমাদ ও নাসায়ীতে আর একটি হাদীস আছে, তাতে বলা হয়েছেঃ এক যুদ্ধে মুসলমানরা শত্রুদের শিশু সন্তানদেরকেও হত্যা করে। নবী (সা) এর কাছে এ খবর পৌঁছে যায়। তিনি ভীষণ অসন্তুষ্ট হন এবং বলেনঃ

--------------------------

" লোকদের কি হয়ে গেছে, আজ তারা সীমা ছাড়িয়ে গেছে এবং শিশুদেরকেও হত্যা করেছে ৷ " 

একজন জিজ্ঞেস করলো, এরা কি মুশরিকদের সন্তান ছিল না। জবাবে তিনি বলেনঃ 

-----------------------------------------

"তোমাদের সর্বোত্ততম লোকেরা তো মুশরিকদেরই আওলাদ।" তাঁরপর বলেনঃ 

-----------------------

" প্রত্যেক প্রাণসত্তা প্রকৃতির ওপর জন্ম নেয়, এমনকি যখন কথা বলতে শেখে তখন তাঁর বাপ- মা তাকে ইহুদী খৃষ্টানে পরিণত করে।"

অন্য একটি হাদীসে ইমাম আহমাদ (রা) ঈযায ইবনে হিমার আল মুজাশি'য়ী থেকে উদ্ধৃত করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, একদিন নবী (সা) নিজের ভাষণের মাঝখানে বলেনঃ 

-------------------------------------

" আমার রব বলেন, আমার সমস্ত বান্দাদেরকে আমি একনিষ্ঠ সত্যপথাশ্রয়ী করে সৃষ্টি করেছিলাম, তাঁরপর শয়তানরা এসে তাদেরকে দ্বীন থেকে বিপথগামী করে এবং তাদের জন্য আমি যা কিছু হালাল করে দিয়েছিলাম সেগুলোকে হারাম করে নেয় এবং তাদেরকে হুকুম দেয়, আমার সাথে এ জিনিসগুলোকে শরীক গণ্য করো , যেগুলোকে শরীক করার জন্য আমি কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করিনি। "

৪৬ . অর্থাৎ আল্লাহ মানুষকে নিজের বান্দায় পরিণত করেছেন। কেউ চাইলেও এ কাঠামোয় কোন পরিবর্তন সাধন করতে পারে না। মানুষ বান্দা থেকে অ- বান্দা হতে পারে না এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ইলাহ বানিয়ে নিলেও প্রকৃতপক্ষে সে মানুষের ইলাহ হতে পারে না। মানুষ নিজের জন্য যতগুলো উপাস্য তৈরি করে নিক না কেন, মানুষ যে, এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো বান্দা নয় এ বাস্তব সত্যটি অকাট্য ও অবিচল রয়ে গেছে। মানুষ নিজের মূর্খতা ও অজ্ঞতাঁর কারণে যাকে ইচ্ছা আল্লাহর গুণাবলী ও ক্ষমতাঁর ধারক গণ্য করতে পারে এবং যাকে চায় তাকে নিজের ভাগ্য ভাঙা- গড়ার মালিক মনে করতে পারে।কিন্তু প্রকৃত ও বাস্তব সত্য এটিই যে, সার্বভৌম কর্তৃত্বের গুণাবলীর অধিকারী একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নয়। কেউ তাঁর মতো ক্ষমতাঁর অধিকারী নয় এবং মানুষের ভাগ্য ভাঙা-গড়ার শক্তিও আল্লাহ ছাড়া কারো নেই। 

এ আয়াতটির আর একটি অনুবাদ এও হতে পারেঃ " আল্লাহর তৈরি কাঠামোয় পরিবর্তন করা যাবে না।" অর্থাৎ আল্লাহ যে প্রকৃতির ওপর মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাকে বিকৃত করা ও ভেঙ্গে ফেলা উচিত নয়। 

৪৭ . অর্থাৎ শান্ত সমাহিত ভারসাম্যপূর্ণ প্রকৃতির ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকাই সঠিক ও সহজ পথ। 

শৈশব , যৌবন , বৃদ্ধ :

(৩০-রূম: ৫৪) আল্লাহই দুর্বল অবস্থা থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেন তাঁরপর এ দুর্বলতাঁর পরে তোমাদের শক্তি দান করেন, এ শক্তির পরে তোমাদেরকে আবার দুর্বল ও বৃদ্ধ করে দেন, তিনি যা চান সৃষ্টি করেন৷ ৭৯   আর তিনি সবকিছু জানেন, সব জিনিসের ওপর তিনি শক্তিশালী৷ 

 

৭৯ . অর্থাৎ শৈশব, যৌবন ও বার্ধক্য। এসব অবস্থা তাঁরই সৃষ্ট। তিনি যাকে চান দুর্বল করে সৃষ্টি করেন, যাকে চান তাকে শক্তিশালী করেন, যাকে চান তাকে শৈশব থেকে যৌবনে পদার্পণ করতে দেন না, যাকে চান তাকে যৌবনে মৃত্যু দান করেন, যাকে চান তাকে দীর্ঘ বয়স দান করার পরও সুস্থ সবল রাখেন, যাকে চান তাকে গৌরবান্বিত যৌবনকালের পরে বার্ধক্যে এমন কষ্টকর পরিণতির দান করেন যার ফলে দুনিয়াবাসী শিক্ষালাভ করে, এসবই তাঁর ইচ্ছা। মানুষ নিজের জায়গায় বসে যতই অহংকারে মত্ত হয়ে উঠুক না কেন আল্লাহর শক্তির শৃঙ্খলে সে এমনভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা যে, আল্লাহ তাকে যে অবস্থায়ই রাখুন না কেন তাঁর মধ্যে কোন পরিবর্তন আনা তাঁর পক্ষে কোনক্রমেই সম্ভবপর নয়। 

শুভাকাংখী :

মূসা : কে হত্যার পরিকল্পনা :

(২৮-ক্বাছাছ : ২০) এরপর এক ব্যক্তি নগরীর দূর প্রান্ত থেকে ছুটে এলো ৩০ এবং বললো, "হে মূসা! সরদারদের মধ্যে তোমাকে হত্যা করার পরামর্শ চলছে৷ এখান থেকে বের হয়ে যাও৷ আমি তোমার মঙ্গলাকাংখী৷"  

(৩০. অর্থাৎ এ দ্বিতীয় ঝগড়ার ফলে হত্যা রহস্য প্রকাশ হয়ে যাবার পর সংশ্লিষ্ট মিসরীয়টি যখন গিয়ে সরকারকে জানিয়ে দিল তখন এ পরামর্শের ঘটনা ঘটে।)